
কর্মক্ষেত্রে বা ব্যক্তিগত জীবনে মানসিক অবসাদ ও উদ্বেগের মুখোমুখি হয়েছেন, এমন মানুষের সংখ্যা নেহাত কম নয়। সাধারণ কিছু লক্ষণ যা দেখে প্রাথমিকভাবে ক্লান্তি মনে হলেও পরে সেখান থেকে গভীর সমস্যার সূত্রপাত হতে পারে।
মনোবিদদের মতে, ক্লান্তি বাহ্যিক বিষয় হলেও উদ্বেগ পুরোপুরি মনের জটিল সমস্যা। দুটি ক্ষেত্রেই লক্ষণগুলো অনেকটা এক রকম। তাই চটজলদি বুঝে ওঠা সম্ভব নয়। বাহ্যিক কিছু সমস্যা ছাড়াও শরীরে পুষ্টির অভাব থাকলে উদ্বেগ বাড়তে পারে। শরীরে কোন কোন পুষ্টির অভাবে বাড়তে পারে উদ্বেগ?
ভিটামিন-ডি এবং কে : ভিটামিন-ডি এবং ভিটামিন-কে-এর অভাবে বাড়তে পারে মানসিক চাপ। প্রাকৃতিকভাবে এই দুই ভিটামিন তৈরির উৎস হলো সূর্যের আলো। পর্যাপ্ত রোদ গায়ে না লাগলে এই দুই ভিটামিন স্বাভাবিকভাবে শরীরে তৈরি হতে পারে না।
জিংক এবং তামা : জিংক এবং তামার মতো দুটি যৌগ মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য ভীষণভাবে প্রয়োজনীয়। উদ্বেগ নিয়ন্ত্রণে এই দুটি যৌগের ভূমিকাও কম নয়। শরীরে এই দুটি যৌগের মাত্রা ঠিক আছে কি না, তা জানার জন্য নিয়মিত রক্ত পরীক্ষা করার পরামর্শ দেন চিকিৎসকরা।
ম্যাগনেশিয়াম : মানসিক অবসাদের আরও একটি কারণ হতে পারে শরীরে ম্যাগনেশিয়ামের ঘাটতি। কুমড়োর বীজ, সূর্যমুখী ফুলের বীজ, তিসির বীজ ছাড়াও প্রতিদিন বিভিন্ন রকমের বাদাম খেলেও পর্যাপ্ত ম্যাগনেশিয়াম পাওয়া যায়।
ওমেগা ৩ ফ্যাটি অ্যাসিড
মনোবিদদের মতে, শরীরে এই যৌগের অভাব থাকলে আত্মহত্যা করার প্রবণতা বাড়তে পারে। তাই প্রতিদিন খাবারের তালিকায় সামুদ্রিক মাছ, বিভিন্ন রকমের বাদাম রাখতেই হবে।
পারস্যে আঠারো শতকের শেষ দিকে কাজার রাজবংশের উত্থান যেমন আকস্মিক, তেমনি তার পতনও। এই শাসকদের স্বৈরাচারী মনোভাব ও বিদেশিদের সঙ্গে অতিমাত্রার সখ্য শেষ পর্যন্ত এই বংশের পতনের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। লিখেছেন নাসরিন শওকত
কাজার বংশ ও সাম্রাজ্য
পারস্যের রাজতন্ত্রের ইতিহাস আড়াই হাজার বছরের পুরনো। ইতিহাসে কাজার বংশের উত্থান একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা। এই রাজবংশ ১৭৮৫ থেকে ১৯২৫ সাল পর্যন্ত পারস্য (বর্তমানের ইরান) শাসন করেছিল। কাজাররা ছিল ইরানীয় রাজপরিবার। যারা মূলত ওঘুজ তুর্কি বংশোদ্ভূত একটি যাযাবর উপজাতি। এই পরিবারের প্রথম শাসক ছিলেন কাজার গোত্রের নেতা মোহাম্মদ আগা খান। যিনি পারস্যে কাজার রাজবংশ প্রতিষ্ঠা করে ইরানকে আবার একতাবদ্ধ করতে চেয়েছিলেন।
কাজাররা ছিল পারস্যের সাফাভিদ বংশের মিত্র কিজিল বংশের একটি গোত্র। ইরানে মুঘল শাসন চলাকালে কাজাররা ইরানে চলে আসেন। আর্মেনিয়া এলাকায় বসবাস করতে শুরু করেন । শাহ ইসমাইল সাফাভিদ ইরানে সাফাভি রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা। তখন যে যাযাবর গোত্রগুলো তাকে সহায়তা করেছিল, কাজাররা ছিলেন তাদের অন্যতম। পরে কাজাররা কিজিল বাকাদের গোত্রে যোগ দেন। পাহলভী রাজবংশ শাসন করার আগে ইরান শাসন করেছে যথাক্রমে সাফাভিদ রাজবংশ ও কাজার রাজবংশ। ইরানের রাজনীতিতে এই দুই রাজবংশের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। সাফাভিদ বংশের প্রথম রাজা ইসমাইল ইরানের রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে শিয়া ইসলামের নাম ঘোষণা করেন। পরে কাজার রাজবংশ ক্ষমতায় এসে আলেম সম্প্রদায়কে রাজনৈতিক ক্ষমতা প্রদান করে। বংশ পরম্পরায় কাজার রাজবংশের সাতজন শাহ ইরানের সিংহাসনে অধিষ্ঠিত হয়ে রাজত্ব করেন।
কাজার রাজবংশ দীর্ঘ প্রায় দেড়শ (১৪০) বছর পারস্য শাসন করেছিল। দীর্ঘ এ সময়ের মধ্যে তারা যেমন নতুন ভূখন্ড জয় করেছিল, তেমনি আবার অনেক ভূখন্ডের ওপর থেকে নিয়ন্ত্রণও হারিয়েছিল।১৯ শতকে এসে রাশিয়ার কাছে তাদের নিয়ন্ত্রণ হারানো ভূখন্ডের মধ্যে ছিল ককেশাস ও মধ্য এশিয়ার বিশাল এলাকা। যে এলাকাজুড়ে রাশিয়ার সাম্রাজ্যের ব্যাপক বিস্তৃতি ঘটে। কাজার রাজত্বের সে সময়েই গ্রেট ব্রিটেনের সঙ্গে রাশিয়ার দীর্ঘদিনের সংঘাত চলছিল। নিজেদের বিশাল দুটি অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ হারানো সত্ত্বেও কাজার রাজবংশ রাশিয়া ও ব্রিটেনের মধ্যকার উত্তেজনাকে নিজেদের সুবিধামতো কাজে লাগাতে সক্ষম হয়। যার মধ্য দিয়ে এই রাজবংশের শেষ দিকে এসে কাজার রাজত্বের ব্যাপক আধুনিকায়ন ঘটে। ফলে কাজার সাম্রাজ্যে শিক্ষা ক্ষেত্রে ব্যাপক সংস্কার হয়। সেই সঙ্গে পাশ্চাত্যের সঙ্গে বাড়তে থাকে সুসম্পর্ক, যা কাজার ভূখন্ডের চিত্রকে চিরতরে পাল্টে দেয়। আনুষ্ঠানিকভাবে ১৯২৫ সালে কাজার রাজবংশের পতন ঘটে, যা গুপ্তহত্যা, যুদ্ধ এবং সবশেষ একটি অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে সংঘটিত হয়। কাজার রাজবংশের এই পতন মধ্যপ্রাচ্যের মানচিত্রকে পুরোপুরি পাল্টে দেয়।
ইরানকে একত্র করা
ইরানের দক্ষিণাঞ্চল শাসন করত জান্দ রাজবংশ। এই রাজবংশের শেষ শাসক ছিলেন মোহাম্মদ করিম খান জান্দ। ১৭৭৯ সালে করিম খান জান্দের মৃত্যু হয়। এরপর তুর্কমেন কাজার গোত্রের নেতা আগা খান মোহাম্মদ সামনের দিকে অগ্রসর হন। তার লক্ষ্য ছিল শত্রুদের উৎখাত করা ও ইরানকে আবার একত্র করা। ১৭৮৫ সালে আগা খান জান্দ রাজবংশকে ক্ষমতা থেকে অপসারণ করে ময়ূর সিংহাসন দখল করেন। এর তিন বছর পর ১৭৮৯ সালে আগা খান ইরানের রাজা হিসেবে সিংহাসনে বসেন। এর মধ্য দিয়েই ইরানে কাজার রাজবংশের শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়। কিন্তু আগা খান সিংহাসনে আরোহণ করলেও আনুষ্ঠানিকভাবে তাকে শাহ বা সম্রাট হিসেবে মুকুট পরানো হয়নি তখনো।
আগা খানের শাসনামল নির্মম ছিল। ১৭৯৪ সালে প্রায় ক্ষমতাচ্যুত জান্দ বংশের সাবেক শাসক লুৎফ আলি খানকে কারমান শহরে আশ্রয় দেওয়া হয়। দীর্ঘ লড়াইয়ের পর আগা খান কারমান শহর দখল করেন। এরপরই তার শত্রুকে শহরটিতে আশ্রয় দেওয়ার জন্য এর বাসিন্দাদের নির্মম শাস্তির মুখোমুখি হতে হয়। এই শাস্তির অংশ হিসেবে কারমান শহরের সব পুরুষের দুই চোখ ওপরে ফেলা হয়।
জানা যায়, সে সময় কারমান শহরের ২০ হাজার উপড়ে ফেলা চোখ আগা খানের সামনে এনে জড়ো করা হয়েছিল। এদিকে নারী ও শিশুদের দাস বানিয়ে কারমান শহরকে একেবারে ধ্বংস করে ফেলা হয়। ওই বছরই আগা খান তার সব প্রতিদ্বন্দ্বীকে নিশ্চিহ্ন করে ফেলেন। সেই সঙ্গে ইরানের সাবেক অঞ্চল জর্জিয়া ও ককেশাসে নির্মম হাতে ইরানের সার্বভৌমত্বও প্রতিষ্ঠা করেছিলেন তিনি। এদিকে শহরের রাজধানী স্থাপন করেন তেহরানে। এর মধ্য দিয়েই পুরো ইরানের ওপর নিয়ন্ত্রণ নিতে সক্ষম হয় কাজার রাজবংশ। দুই বছর পর ১৭৯৬ সালে মোহাম্মদ আগা খানকে আনুষ্ঠানিকভাবে পারস্য সাম্রাজ্যের সম্রাট হিসেবে শাহ উপাধিতে মুকুট পরানো হয়। কিন্তু এরপরের বছরই ঘটে যায় সেই নির্মম ঘটনা। ১৭৯৭ সালে কাজার রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা শাসক আগা খান নির্মম হত্যাকান্ডের শিকার হন।
রাশিয়ার আগ্রাসন
মোহাম্মদ আগা খানের যখন মাত্র ছয় বছর বয়স, তখন তাকে নির্বাসনে পাঠানো হয়েছিল। তার কোনো পুত্রসন্তান ছিল না। তাই আগা খানের মৃত্যুর পর সিংহাসনে ‘শাহেনশাহ’ (রাজাদের রাজা) হিসেবে তার স্থলাভিষিক্ত হন তার ভাগনে ফতেহ আলি শাহ। সিংহাসনে বসেই তিনি ইরানের সাম্রাজ্যকে বাড়ানোর দিকে মনোযোগ দেন এবং নতুন অঞ্চলকে সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত করেন। ফতেহ আলিকে কাজার বংশের শ্রেষ্ঠ শাসক বলা হয়ে থাকে। এ সময় ককেশাস অঞ্চলে রাশিয়ার অনুপ্রবেশ ঠেকাতে পরপর দুটি যুদ্ধ পরিচালনা করেন ফতেহ আলি। রুশ-পার্সিয়ান নামের প্রথম দফার ওই দুটি যুদ্ধ অনুষ্ঠিত হয়েছিল যথাক্রমে ১৮০৪ ও ১৮১৩ সালে। তখন ঐতিহ্যগতভাবে ককেশাস অঞ্চলটি ইরানের নিয়ন্ত্রণে ছিল। কিন্তু যুদ্ধ দুটি কাজারদের জন্য ভয়াবহ পরিণতি ডেকে আনে। ১৮১৩ সালের যুদ্ধের ফলে রুশ বাহিনীর সঙ্গে কাজার বাহিনীর গুলিস্তান নামের এক চুক্তি সম্পাদিত হয়। যে চুক্তির শর্তানুযায়ী কাজার শাসকদের আজারবাইজান, দাগেস্তান ও জর্জিয়া রাশিয়ার রোমান জারের হাতে তুলে দিতে হয়েছিল। পরে দ্বিতীয় দফায় রুশ-পার্সিয়ান আরও একটি যুদ্ধ অনুষ্ঠিত হয়েছিল। ১৮২৬ ও ১৮২৮ সালের ওই দুই যুদ্ধও ভয়াবহ পরাজয়ের মধ্য দিয়ে শেষ হয়। যার পরিণতিতে দক্ষিণ ককেশাসের বাকি অংশও রাশিয়ার হাতে তুলে দিতে হয় ইরানকে।
পশ্চিমাদের সঙ্গে সম্পর্ক
ফতেহ আলির শাসনামলের ঠিক ওই সময়েই ইরানের সঙ্গে পশ্চিমাদের কূটনৈতিক সম্পর্কের শুরু। যার ফলে ইরানের ভূখন্ড নিয়ে ইউরোপীয়দের মধ্যে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা দেখা দেয়। এরই মধ্যে কেটে যায় পাঁচ বছর। ১৮৩৪ সালে ফতেহ আলির স্থলাভিষিক্ত হন তার নাতি মোহাম্মেদ শাহ। তিনি রুশ নিয়ন্ত্রণে থাকা হেরাত দখলের দুটি চেষ্টা চালিয়ে ব্যর্থ হন। এর দেড় যুগ পর ১৮৪৮ সালে মোহাম্মেদ শাহের মৃত্যু হয়। বাবার মৃত্যুর পর এবার কাজার সিংহাসনে বসেন শাহের ছেলে নাসের আল-দীন।
আধুনিকায়নের শুরু
কাজার শাহ নাসের আল-দীনের শাসনামল মূলত উল্লেখযোগ্য অবকাঠামোগত উন্নয়ন এবং আধুনিক বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও শিক্ষা পদ্ধতি চালু করার জন্য সুপরিচিত হয়ে ওঠে। বিশাল এই উন্নয়ন ও আধুনিকায়ন সম্ভবপর হয়েছিল নাসের দীনের অত্যন্ত দক্ষ উপদেষ্টা ও কনস্টেবল মির্জা তাঘী খান আমির কবিরের জন্য। ১৯ শতকের মধ্যবর্তী ওই সময় থেকেই ইরান আধুনিক যুগে প্রবেশ করে ও পরে যার ধারা অব্যাহত থাকে। কাজার রাজবংশের এই শাসনামলেই ইরানে টেলিগ্রাফ লাইন, একটি আধুনিক ডাক পরিষেবা, পশ্চিমা ধাঁচের স্কুল ও প্রথম সংবাদপত্র চালু হয়েছিল। নাসের দীন তার রাজত্বেই ধর্মনিরপেক্ষতা বজায় রাখতে মোটামুটি কঠোর হাতে শিয়া মুসলিম আলেমদের ক্ষমতা সীমিত করেন। বলা হয়, কাজার শাসকদের মধ্যে তিনিই প্রথম বিলাসিতায় গা ভাসান। ইউরোপে ব্যয়বহুল ব্যক্তিগত ভ্রমণে যাওয়ার জন্য বিশাল অঙ্কের বিদেশি ঋণ নেওয়ার অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। তিনিই প্রথমবারের মতো ইরানে রেলপথ ও সেচ খাল নির্মাণ এবং তামাক প্রক্রিয়াজাতকরণ ও বিক্রির জন্য বিদেশি হিসেবে ব্রিটিশদের ছাড় দেন। তার এসব পদক্ষেপ ইরানজুড়ে এক নব জাতীয়তাবাদের জন্ম দেয়। শেষ পর্যন্ত ফতোয়ার মাধ্যমে নতুন নিয়ম জারি হলে দেশব্যাপী তামাকজাত দ্রব্য বয়কট হয়, যা নাসের দীনকে তার নীতি থেকে পিছু হটতে বাধ্য করে।
যদিও নাসের দীন ইরানের স্বাধীনতা রক্ষার জন্য ব্রিটেন ও রাশিয়ার মধ্যকার পারস্পরিক অবিশ্বাসকে পুঁজি করতে চান, কিন্তু তার এই কূটকৌশলই বাস্তবে হীতে বিপরীত ফল বয়ে আনে তার জন্য। কারণ তার শাসনামলেই ইরানে বিদেশি হস্তক্ষেপ ও আঞ্চলিক দখল উভয়ই বৃদ্ধি পায়। যার পরিণতিতে ১৮৮১ সালের মধ্যে রাশিয়া বর্তমানের তুর্কমেনিস্তান ও উজবেকিস্তানকে নিজেদের নিয়ন্ত্রণ নেয়। এদিকে ব্রিটেনও একইভাবে আফগানিস্তান সৃষ্টির পক্ষে সমর্থন জানিয়ে অনুপ্রবেশ করে এশিয়ায়। ১৯ শতকের শেষ দিকে এসে অনেক ইরানিই বিশ্বাস করতে শুরু করেন যে, তাদের দেশ ও শাসকদের একটি বড় অংশ বিদেশিদের স্বার্থে অন্ধ।
উল্লেøখযোগ্য সংস্কার
১৮৯৬ সালে নাসের আল-দীনকে হত্যা করা হয়। এবার উত্তরাধিকার সূত্রে কাজার শাসনক্ষমতায় বসেন তার ছেলে মোজাফ্ফর আদ-দীন। বাবার মতো তারও ভোগবিলাসের প্রতি দুর্বলতা ছিল। অযৌক্তিক খরচ ও বিলাসী জীবনযাপনের জন্য তিনি দ্রুতই অজনপ্রিয় ও অযোগ্য শাসক হয়ে ওঠেন। ইরানের রাজকীয় ক্ষমতার ওপর নিয়ন্ত্রণ ও আইনের প্রকৃত শাসন প্রতিষ্ঠার দাবিতে ১৯০৬ সালে ইরানি জনগণ কাজার রাজবংশের বিরুদ্ধে সশস্ত্র বিপ্লব শুরু করে। যার ফলে মোজাফ্ফর শাহ সংবিধান প্রণয়ন করে আইনসভা প্রতিষ্ঠা করতে বাধ্য হন। ফলে কার্যকরভাবে রাজা হিসেবে তার ক্ষমতা হ্রাস পায়। ইরানের রাজনীতিতে এই গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার আসার পরের বছরই ইরানের সঙ্গে অ্যাংলো-রাশিয়ান চুক্তি সম্পাদিত হয়, যা ছিল ইরানের ওপর শেষ ধাক্কা। এই চুক্তির মধ্য দিয়ে ইরানের ওপর রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণ পাকাপোক্ত হয়।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধ ও কাজারদের পতন
প্রথম বিশ্বযুদ্ধ কাজার রাজবংশকে উল্লেখযোগ্যভাবে দুর্বল করে দিয়েছিল। তখন ইরানের শাসনক্ষমতায় ছিলেন নাসের দীনের আরেক ছেলে মোহাম্মদ আলি শাহ। যিনি রাশিয়ার সমর্থন নিয়ে সংসদীয় সরকার পদ্ধতির সংবিধানকে বাতিল করার চেষ্টা করেন। এর ফলে তীব্র বিরোধিতার মুখে পড়েন এবং শেষ পর্যন্ত ১৯০৯ সালে ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হন আলি শাহ। এ সময় তার ১১ বছর বয়সী ছেলে আহমাদ শাহ তার স্থলাভিষিক্ত হন। কিন্তু বিলাসী ও উচ্ছৃঙ্খল জীবনযাপনের জন্য বাবার মতো তিনিও অজনপ্রিয় শাসক হয়ে ওঠেন।
এদিকে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের এ সময়েই ব্রিটেন, রাশিয়া ও অটোমান সাম্রাজ্য ইরান দখল করা শুরু করে, যা পারস্যের রাজতন্ত্রের জন্য একটি বড় ধাক্কা ছিল। এই দখলদারিত্ব থেকে ইরান আর কখনোই বেরিয়ে আসতে পারেনি। এই যুদ্ধের পর মধ্যপ্রাচ্যে তেল আবিষ্কৃত হয়। ফলে ইরানকে নিয়ে ইউরোপীয় দেশগুলোর মধ্যে নতুন করে প্রতিযোগিতা বেড়ে যায়। এবার তেলের বাজার দখল করতে মরিয়া হয়ে ওঠে ব্রিটিশরা। তারা প্রতিষ্ঠা করে ‘অ্যাংলো ইরানিয়ান অয়েল কোম্পানি’। ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, এই তেল কোম্পানিকে সুসংহত করতেই গোয়েন্দা বাহিনীর মাধ্যমে তারা ১৯২১ সালে ইরানে একটি সামরিক অভ্যুত্থান ঘটিয়েছিল। এবার তাদের সহায়তায় পারস্যের সামরিক বাহিনী কোসাক ব্রিগেডের কমান্ডার রেজা খান পাহলভী ইরানের শাসনক্ষমতায় বসেন। পরে গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব হয়ে ওঠা এই রেজা শাহ পাহলভীই ইরানে পাহলভী রাজবংশ প্রতিষ্ঠা করেন। সাবেক এই সামরিক শাসক ক্ষমতায় বসেই রেজা খান থেকে রেজা শাহ নামে নিজেকে পরিচিত করে তোলেন।
তখনো পশ্চিম এশিয়ায় অবস্থিত মধ্যপ্রাচ্যের এই ভূখন্ডটি ‘পারস্য’ নামে পরিচিত ছিল। রেজা শাহ পাহলভী একে ইরান নামে নামকরণ করেন। এরপর পশ্চিমাদের অনুকরণে তিনি ইরানকে ধর্মনিরপেক্ষ ও আধুনিক এক রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তুলতে মনোযোগ দেন। এরই মধ্যে আসে ১৯২৫ সাল। ইউরোপে আহমাদ শাহের অনুপস্থিতিতে ইরানের সংসদীয় পরিষদ কাজার রাজবংশের অবসানের ঘোষণা দেয়। এভাবেই ইরানের প্রায় দেড়শ বছরের প্রভাবশালী কাজার রাজবংশের পতন ঘটে। তবে আজও কাজার রাজ পরিবারের অস্তিত্ব থাকলেও নির্বাসিত জীবন কাটায় তারা।
হোয়াটসঅ্যাপে মেসেজ ফরওয়ার্ড করেন প্রায় সবাই। সকাল-বিকেল শুভেচ্ছা পাঠানো থেকে অন্য যেকোনো ছবি, ভিডিও অথবা টেক্সট, হোয়াটসঅ্যাপে প্রায় প্রতিদিনই মেসেজ ফরওয়ার্ড করেন সবাই। এক চ্যাটের মেসেজ অন্য কাউকে পাঠানোর জন্য এই ফিচারের জনপ্রিয়তা আকাশছোঁয়া। এবার মেসেজ ফরওয়ার্ড করার জন্য নতুন ফিচার যুক্ত হলো এই জনপ্রিয় অ্যাপে। ধরুন আপনাকে কেউ একটা ছবি অথবা ভিডিও পাঠিয়েছেন, যেখানে মিডিয়া ফাইলের সঙ্গে রয়েছে ক্যাপশন। কিন্তু আপনি ক্যাপশন ছাড়া শুধু ছবি অথবা ভিডিওটি ফরওয়ার্ড করতে চান। এত দিন হোয়াটসঅ্যাপে মেসেজ ফরওয়ার্ড করার সময় ক্যাপশন লেখা অথবা ডিলিট করার অপশন পাওয়া যেত না। তবে নতুন ফিচারে এ সমস্যার সমাধান রয়েছে। অ্যান্ড্রয়েড গ্রাহকরা যেকোনো ছবি অথবা ভিডিও ফরওয়ার্ড করার সময় ক্যাপশন ডিলিট করার সুযোগ পাবেন। চাইলে ছবি অথবা ভিডিওর সঙ্গে যে ক্যাপশন লেখা রয়েছে তা ডিলিট করেও মেসেজ ফরওয়ার্ড করতে পারবেন। ছবি, ভিডিও ছাড়াও ডকুমেন্ট ও এওঋ ফরওয়ার্ড করার সময় নতুন এই ফিচার ব্যবহার করা যাবে। গত মাসে রচযড়হব গ্রাহকদের ফোনে মেসেজ ফরওয়ার্ড ক্যাপশন ফিচার এনেছিল হোয়াটসঅ্যাপ। এবার অ্যান্ড্রয়েড গ্রাহকদের ফোনে এই ফিচার পাঠাল মার্কিন সংস্থাটি। মেসেজ ফরওয়ার্ড করার সময় ক্যাপশন ডিলিট করার সুযোগ পেলে সুবিধা হবে ব্যবহারকারীদের।
কীভাবে ব্যবহার করবেন এই ফিচার
হোয়াটসঅ্যাপ ওপেন করুন।
এবার যেকোনো চ্যাট ওপেন করুন।
যে ছবি অথবা ভিডিও ফরওয়ার্ড করবেন সেটা সিলেক্ট করুন।
এবার ফরওয়ার্ড বাটনে ট্যাপ করুন।
এবার ছবির ক্যাপশন ডিলিট করার অপশন সিলেক্ট করুন।
অথবা ক্যাপশন ছাড়াও পাঠাতে পারবেন ছবি।
শীতকালে এমনিতেই বাতাসের আর্দ্রতা কমে যায়। ফলে বায়ুমন্ডল ত্বক থেকে পানি শুষে নেয়। এই শুষে নেওয়ার কারণে ত্বক, ঠোঁট ও পায়ের তালু ফাটতে থাকে। আমাদের ত্বকে থাকে ঘর্মগ্রন্থি, থাকে তেলগ্রন্থি, যেখান থেকে অনবরত তেল আর ঘাম বের হয়। এ ঘাম আর তেল মিলে দেহের ওপর তেল ও পানির মিশ্রণ বা আবরণী তৈরি করে, যা দেহ শীতল করে রাখে এবং ত্বক শুষ্কতা থেকে রক্ষা করে, ত্বকের ফাটা ভাব প্রতিরোধ করে।
ইকথায়োসিস : শীতকালে এই রোগটি দেখা যায়। বিশেষ করে শিশুদের মধ্যে এই রোগটি দেখা যায়। এ রোগে আক্রান্তদের হাত ও পায়ের ত্বক ফাটা ফাটা এবং ছোট ছোট গুঁড়ি গুঁড়ি মরা চামড়া বা আঁশ পায়ের সামনের অংশে বা হাতের চামড়ায় ফুটে ওঠে। অথচ হাত ও পায়ের ভাঁজযুক্ত স্থানে থাকবে স্বাভাবিক। শীত এলেই প্রতি বছর এর ব্যাপকতা বাড়ে। আক্রান্তদের হাতের রেখাগুলো খুব স্পষ্ট ও মোটা হয়, যা সাধারণ লোকের দেখা যায় না। একই সঙ্গে অ্যালাজিও দেখা দেয়। এ ধরনের রোগীর কারও কারও নাক দিয়ে পানিঝরা অর্থাৎ সর্দি-সর্দি ভাব থাকে। পরিবারে যাদের অ্যালার্জির সমস্যা আছে তাদের বেশি হয়। এ রোগ কখনো ভালো হয় না। তবে নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। শীত এলে বেশি বেশি তৈলাক্ত পদার্থ মাখলে ত্বক ভালো থাকে এবং ফাটা ভাব থাকে না। তবে যাদের ফাটা অবস্থা বেশি, তাদের ক্ষেত্রে আলফা হাইড্রোক্সি অ্যাসিড মাখলে খুবই ভালো ফল পাওয়া যায়। এটি পেতে অসুবিধা হলে গ্লিসারিনের সঙ্গে সমপরিমাণ পানি মিশিয়ে ত্বকে মাখলে ভালো ফল পাওয়া যায়।
অ্যালার্জি : হাঁপানির সঙ্গে অ্যালার্জির গভীর সংযোগ রয়েছে। ফুলের পরাগ, দূষিত বাতাস, ধোঁয়া, কাঁচা রঙের গন্ধ, চুনকাম, ঘরের ধুলা, পুরনো ফাইলের ধুলা দেহে অ্যালার্জিক বিক্রিয়া করে হাঁপানি রোগের সৃষ্টি করে। যারা হাঁপানিতে ভুগছেন, তাদের এগুলোর সংস্পর্শ ত্যাগ করতে হবে। ছত্রাক দেহে অ্যালার্জি তথা হাঁপানি সৃষ্টি করে। পনির ছত্রাক মিশিয়ে তৈরি হয়। কোনো কোনো পাউরুটি এবং কেক তৈরি করতেও ইস্টজাতীয় ছত্রাক ব্যবহার করা হয়। আলু, পেঁয়াজও ছত্রাক দ্বারা দূষিত হয়। এ ছত্রাকও অ্যালার্জি তথা হাঁপানি সৃষ্টির অন্যতম কারণ। ঘরের ধুলা হাঁপানিজনিত অ্যালার্জির অন্যতম কারণ। ঘরের ধুলায় একটি ক্ষুদ্র জীবাণু থাকে, যা ‘মাইট’ নামে পরিচিত। প্রায় ৬০ শতাংশ ক্ষেত্রে অ্যালার্জি সৃষ্টির জন্য এ ‘মাইট’ দায়ী। এজন্য ঘরের আসবাবপত্র, কম্বল, পর্দা, তোশক, বালিশে যে ধুলা জমে থাকে, তা পরিষ্কার করার সময় দূরে সরে থাকতে হবে। খাদ্যে অ্যালার্জির আশঙ্কা থাকে। যেমন : দুধে অ্যালার্জি থাকে। গম, ডিম ও মাছে অ্যালার্জি হতে দেখা যায়। আরও অনেক খাবার, পশুপ্রাণী ও কামড় থেকে অ্যালার্জি হতে পারে। ওষুধও হতে পারে অ্যালার্জির কারণ। যেসব অ্যালার্জির কারণ হবে, তা থেকে দূরে থাকলে আক্রান্ত হওয়ার আর আশঙ্কা থাকে না। প্রচুর পরিমাণ পানিজাতীয় খাবার খেতে হবে। প্রয়োজনে ত্বকের যত্ন নিতে ত্বক বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) হলের আসন দখল করে রাখার বিরুদ্ধে অনশনরত ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের শিক্ষার্থী সামিউল ইসলাম প্রত্যয়সহ তাকে সমর্থন দেওয়া কয়েকজনের ওপর হামলা চালিয়েছে ছাত্রলীগ।
মঙ্গলবার রাত ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মোশাররফ হোসেন হলের সামনে এ ঘটনা ঘটে বলে জানিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা।তারা বলেন, ওই স্থানে গত বুধবার রাত থেকে অনশনে ছিলেন প্রত্যয়। তাকে মারধরের পর অ্যাম্বুলেন্সে করে বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্রে নিয়ে যায় হামলায় জড়িতরা। এ সময় প্রত্যয়ের দাবির সঙ্গে সংহতি জানানো প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনগুলোর নেতাকর্মীদের ওপরও হামলা হয়।
জানা গেছে, তিন দাবিতে গত বুধবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মশাররফ হোসেন হলের সামনের খেলার মাঠে অনশনে বসেন প্রত্যয়। তিনি ওই হলের আবাসিক ছাত্র। তার অন্য দুটি দাবি ছিল, বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হল থেকে অছাত্রদের বের করা ও হলের গণরুমে অবস্থান করা বৈধ ছাত্রদের আসন নিশ্চিত করা।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে মীর মোশাররফ হোসেন হলের সামনে ছাত্রলীগের নেতাকর্মী এবং নবীন শিক্ষার্থীরা অবস্থান করছিলেন। ওই সময় ক্যাম্পাসে লোডশেডিং চলছিল। হঠাৎ করেই প্রত্যয়সহ তার সঙ্গে থাকা অন্যদের ওপর হামলা চালায় ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা।
হামলায় জাহাঙ্গীরনগর সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি সৌমিক বাগচী, মার্কেটিং বিভাগের ৪৭তম ব্যাচের সৃষ্টি, চারুকলা বিভাগের ৪৭তম ব্যাচের মনিকা, বঙ্গবন্ধু তুলনামূলক সাহিত্য ও সংস্কৃতি ইনস্টিটিউটের ৪৮তম ব্যাচের সুরসহ আরও কয়েকজন আহত হন বলে জানা গেছে।
প্রত্যক্ষদর্শীদের তথ্যমতে, হামলায় ৩০ থেকে ৪০ জন অংশ নিয়েছিলেন। তাদের মধ্যে বেশ কয়েকজনের নাম পাওয়া গেছে। অভিযুক্তদের কয়েকজন হলেন ছাত্রলীগ নেতা ও রসায়ন বিভাগের ৪৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থী গৌতম কুমার দাস, তুষার, ফেরদৌস, নোবেল, গোলাম রাব্বি, মুরসালিন, মুরাদ, সোহেল, তানভীর, রায়হান, রাহাত, সৌমিক, তারেক মীর, সজীব ও নাফিস।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক শিক্ষার্থী জানান, আমরা যারা প্রত্যয়ের সঙ্গে ছিলাম তাদের অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করা হয়েছে। বিদ্যুৎ চলে যাওয়ার পর প্রত্যয়কে দেখতে চিকিৎসক এসেছিলেন। তখন তারা অ্যাম্বুলেন্সের ওপর হামলা করে সেটি ফিরিয়ে দেয়। প্রক্টরকে ফোন দেওয়া হলেও তিনি আসেননি। একাধিক ছাত্রীর দিকেও চড়াও হয় ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্রে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মীর মশাররফ হোসেন হলের এক শিক্ষার্থী অসুস্থ এমন একটি ফোনকল পেয়ে তারা অ্যাম্বুলেন্স পাঠায়। তবে কে কল দিয়েছিল সে সম্পর্কে চিকিৎসা কেন্দ্রের কেউ বলতে পারেননি।
তবে যে ফোন নাম্বার থেকে কল দেওয়া হয়েছিল সেটিতে যোগাযোগ করে দেখা যায় নাম্বারটি শাখা ছাত্রলীগের নেতা গৌতম কুমার দাসের।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আ স ম ফিরোজ-উল-হাসান বলেন, ১৫ হাজার শিক্ষার্থীকে নিরাপত্তা দেওয়া আমাদের পক্ষে সম্ভব না। দরকার হলে আমি পদত্যাগ করব।
এদিকে হামলার প্রতিবাদে বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্র থেকে রাতেই বিক্ষোভ মিছিল শুরু করেন প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীরা। মিছিল নিয়ে তারা এ রাত পৌনে ১টায় প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান করছেন।
তবে অনশনরত শিক্ষার্থী সামিউলের ওপর হামলারে পেছনে ছাত্রলীগের কোনো হাত নেই বলে দাবি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি আক্তারুজ্জামান সোহেলের। তিনি বলেন, ‘আমি শুনেছি, মীর মশাররফ হোসেন হলের অনশনরত ওই শিক্ষার্থীর ওপর হামলা হয়েছে। তবে সেটা সাধারণ শিক্ষার্থীরা করেছে। সেখানে ছাত্রলীগের একজনও জড়িত নয়।’
অসুস্হ সাবেক ফুটলার মোহাম্মদ মহসীনের পাশে দাড়িয়েছেন তার সাবেক সতীর্থরা। মোহামেডান ক্লাবের সাবেক ফুটবলার ও সোনালী অতীত ক্লাবের সদস্যরা বিকেলে বসে এই সিদ্ধান্ত নেন। পরে মহসীনের বাসায় যান তার সংগে দেখা করতে।সাবেক ফুটবলারদের মধ্যে ছিলেন আব্দুল গাফফার, জোসী, বাবলু, জনি, সাব্বির, রিয়াজ।
এসময় গাফফার জানান, মহসীনের চিকিৎসার জন্য বিসিবি সভাপতির উদ্যোগে বুধবার সকালে অসুস্হ ফুটবলারকে হাসপাতালে ভর্তি করবে।
হাসপাতাল থেকে সুস্থ ও স্বাভাবিক হয়ে ফেরার পর মহসীন কানাডায় ফিরে যেতে চাইলে সাবেক ফুটবলাররা সহায়তা করবে। মহসীন কানাডা থেকে দেশে ফিরেছেন মায়ের পাশে থাকতে। প্রায় নব্বই ছুই ছুই মহসিনের মায়ের পায়ে ব্যথা। মহসীনের পাশাপাশি তার মায়ের চিকিৎসার ব্যাপারেও সাবেক ফুটবলাররা পাশে থাকবেন বলে জানান আবদুল গাফফার।
রাজধানীর বনানীর একটি রেস্তোরাঁ থেকে জামায়াতে ইসলামীর বনানী শাখার ১০ নেতাকর্মীকে আটক করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
তাদের মধ্যে বনানী থানা জামায়াতের আমির তাজুল ইসলাম এবং সেক্রেটারি আব্দুর রাফি রয়েছেন।
বনানী থানার ওসি মোস্তাফিজুর রহমান জানান, মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে ওয়ারলেস গেটে অবস্থিত নবাবী রেস্টুরেন্টে গোপন মিটিং করাকালে বনানী থানা জামায়াতে ইসলামী আমির তাজুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক মাওলানা রাফিসহ ১০ নেতাকর্মীকে আটক করা হয়েছে।
আটক ১০ জনের মধ্যে ইসলামী ছাত্রশিবিরের নেতাও রয়েছেন।
প্রথম সেটে হেরে পিছিয়ে পড়েছিলেন। তবে পরের সেটেই ঘুরে দাঁড়ান। ৩ ঘণ্টা ৩৮ মিনিটের লড়াইয়ের পর কোয়ার্টার ফাইনালটা জিতে নিলেন নোভাক জকোভিচ। কারেন খাচানভকে ৪-৬, ৭-৬, ৬-২, ৬-৪ ব্যবধানে পরাজিত করে ফ্রেঞ্চ ওপেনের সেমিফাইনালে উঠলেন এই সার্বিয়ান।
কোয়ার্টার ফাইনালের শুরুটা দেখে মনে হচ্ছিল, দিনটা বোধহয় জকোভিচের নয়। তবে মাথা ঠান্ডা রেখেছিলেন তিনি। খাচানভ প্রথম সেট জিতে নেওয়ার পর দ্বিতীয় সেটেও সমানে সমানে লড়াই করেন। যদিও টাইব্রেকারে জোকোর সামনে দাঁড়াতে পারেননি তিনি।
ম্যাচে সমতা ফেরানোর পর এক বার লকার রুমে ফিরে যান জোকোভিচ। তার পর শুধু কোর্টেই ফিরলেন না। নিজের চেনা ছন্দেও ফিরলেন। তৃতীয় এবং চতুর্থ সেটে আর শুরুর মতো লড়াই করতে পারলেন না প্রতিযোগিতার ১১ নম্বর বাছাই।
ফ্রেঞ্চ ওপেনের কোয়ার্টার ফাইনালে মঙ্গলবার প্রতিযোগিতার প্রথম সেট হারলেন জোকোভিচ। হেরে যেতে পারেন এমন মনে না হলেও এ দিন ছন্দ পেতে কিছু সময় লেগেছে তার। ৩৬ বছরের জোকোভিচ কি সর্বোচ্চ পর্যায়ের টেনিসের ধকল আগের মতো সামলাতে পারছেন না আর?
এমন প্রশ্ন যখন উঁকি দিতে শুরু করছে, তখনই নিজের চেনা ছন্দে দেখা দিয়েছেন। কোয়ার্টার ফাইনালে খাচানভের বিরুদ্ধে সময় পেয়েছেন। সুযোগ পেয়েছেন। সেমিফাইনাল বা ফাইনালের প্রতিপক্ষরা কি ছন্দে ফেরার সময় বা সুযোগ দেবেন তাঁকে?
টেনিসপ্রেমীদের মনে এই প্রশ্ন রেখেই ফ্রেঞ্চ ওপেনের শেষ চারে পৌঁছে গেলেন দু’বারের চ্যাম্পিয়ন। পাশাপাশি কিছুটা হয়তো উদ্বেগেও রাখলেন। সেমিফাইনালে জায়গা নিশ্চিত করার পর জোকার স্বীকারও করে নিয়েছেন, কোয়ার্টার ফাইনালে প্রথম দু’টি সেট তার থেকে ভাল খেলেছেন রুশ প্রতিপক্ষ।
এদিকে ওপর কোয়ার্টার ফাইনালে জয় পেয়েছেন কার্লোস আলকারাজ। সিৎসিপাসের বিপক্ষে তিনি ৩-০ (৬-২, ৬-১, ৭-৬) সেটে জিতে সেমিফাইনাল নিশ্চিত করেছেন এই স্পেনিশ টেনিস তারকা।
আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন ঘিরে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সরকারের দূরত্ব প্রকাশ্যে চলে এসেছে। কোনো ধরনের রাখঢাক ছাড়াই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ সরকারের মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ নেতারা যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনা করছেন। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আরও বেশি দৌড়ঝাঁপ শুরু করছেন। ফলে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ক্ষমতাসীনদের দূরত্ব এখন স্পষ্ট। আলোচনা আছে, সরকারবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে পশ্চিমা এ দেশটি হঠাৎ আরও ঘনিষ্ঠ হতে শুরু করেছে।
জানা গেছে, সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে এতদিন যুক্তরাষ্ট্রের মতপার্থক্য ছিল না। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন প্রত্যাশা করছে দেশটি। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগও এ নিয়ে কোনো দ্বিমত করেনি। এরই মধ্যে, ভিসানীতি ঘোষণা করে সরকারকে বড় চাপ দেওয়ার পূর্বাভাস দেয় যুক্তরাষ্ট্র। বিষয়টি নিয়ে সরকারি দল আওয়ামী লীগ ও মাঠের বিরোধী দল বিএনপি একে অন্যকে ঘায়েল করার চেষ্টা করে। তবে ভিসানীতি যে সরকারের ও আওয়ামী লীগের ওপরই বেশি চাপ তৈরি করেছে, সেটা ভেতরে-বাইরে আলোচনা আছে।
আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায় ও কূটনীতি-সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্র দেশ রূপান্তরকে জানিয়েছে, বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র তাদের অবস্থান পাল্টে নির্বাচনের স্বার্থে প্রয়োজনে সংবিধানের বাইরে যেতে হবে সরকারকে এমন প্রস্তাব দিতে চলেছে। ওই সূত্রগুলো দাবি করেছে, গত মাসের শেষের দিকে অথবা চলতি সপ্তাহে বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাস আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের বাসভবনে তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। পিটার হাস ওই বৈঠকে রাজনৈতিক সমঝোতায় না আসলে সব দলের অংশগ্রহণে জাতীয় সরকারের আদলে একটা কিছু করার বিকল্প প্রস্তাব দিয়েছেন। তা না হলে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের স্বার্থে সংবিধানসম্মত করে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের পদক্ষেপ নেওয়ার প্রস্তাব করেন। এ প্রস্তাব সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানেও দেওয়া হয়েছে। আনিসুল হকের সঙ্গে শ্রম আইন নিয়েও দীর্ঘ আলাপ করেন এ রাষ্ট্রদূত।
আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকজন নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, পিটার হাসের ওই প্রস্তাব নিয়ে সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ে গেলে তাতে বড় আপত্তি তোলা হয়। শুধু তাই নয়, যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা পাওয়া যাবে না এটা ধরেই দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরুর বার্তা দেওয়া হয়েছে সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে। তারা স্বীকার করেন যে, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান ক্রমেই আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে চলে যাচ্ছে। তবে নির্বাচনে যুক্তরাষ্ট্রের অসহযোগিতা করবে ধরে নিয়েই সরকারি দল আওয়ামী লীগ প্রস্তুতি নিচ্ছে।
পিটার হাস সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের ও মাঠের বিরোধী দল বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে একান্তে বৈঠক করেছেন। গুরুত্বপূর্ণ ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গেও নির্ধারিত-অনির্ধারিত বৈঠক করা শুরু করেছেন। গত সোমবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ব্রিফিংয়ে পিটার হাসকে উদ্দেশ্য করে প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেছেন, রাষ্ট্রদূতরা সীমা লঙ্ঘন করলে আইনি ব্যবস্থা নেবে সরকার।
আগামী নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সক্রিয় হয়ে ওঠার প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে জানিয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, পিটার হাসের দৌড়ঝাঁপ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘নাহি ছাড়ি’ অবস্থান আওয়ামী লীগের বিভিন্ন স্তরে দুশ্চিন্তা তৈরি হয়েছে।
সরকারের দুই মন্ত্রীও দেশ রূপান্তরের কাছে স্বীকার করেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সরকারের বিপক্ষে যেতে শুরু করেছে। ‘অন্যায় হস্তক্ষেপ’ বেড়েছে পিটার হাসের।
আওয়ামী লীগের কূটনীতিসম্পৃক্ত এক নেতা বলেন, সরকার বিকল্প হিসেবে শক্তিশালী দেশের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নে কাজ করে চলেছে। বিকল্প দেশের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে উঠলে নির্বাচন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রকে মাইনাস করে চলার এক ধরনের কৌশল গ্রহণ করা হবে। এ কৌশলে নির্বাচন সম্পন্ন হয়ে গেলে যুক্তরাষ্ট্রর সঙ্গে সম্পর্ক ঝালাই করা হবে নতুন পরিকল্পনা অনুযায়ী।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর আরেক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, ভিসানীতি মূলত সরকারের বিভিন্ন ক্ষেত্রে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। অনেকেই ভিসানীতিকে সব গেল বলে ধরে নিয়ে অবস্থান টলমলে করে তুলতে চায়। এরকম অবস্থা আওয়ামী লীগকে একটু চিন্তায় ফেলে দিয়েছে। দলের নেতাকর্মীরা যেন সাহস হারিয়ে না ফেলে, সেজন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনা করার কৌশল গ্রহণ করেছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগ নেতাদের সমালোচনা নিয়ে গুঞ্জন শুরু হয়েছে। এমন কথা শোনা যাচ্ছে যে, আওয়ামী লীগ কি তাদের অবস্থান থেকে সরতে শুরু করবে? আবার প্রশ্নও আছে যে, নির্বাচন কি হবে? জাতীয় সরকার আসবে খুব শিগগিরই, এমন গুঞ্জনও রয়েছে জোরালোভাবে। শুধু তাই নয়, বাতিল হওয়া নির্বাচন পদ্ধতি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনেই আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে এমন গুঞ্জনও শুরু হয়েছে। যদিও এসবে কোনো ভিত্তি রয়েছে মনে করেন না আওয়ামী লীগ নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা। তারা দাবি করেন, সংবিধান অনুযায়ীই নির্বাচন হবে। এ ইস্যুতে কোনো শক্তির সঙ্গেই আপস করবেন না আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে দলটির সভাপতিম-লীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, কোনো দেশের চাওয়ায় বাংলাদেশে আগামী নির্বাচন হবে না। দেশের মানুষের চাওয়া অনুযায়ী সংবিধানসম্মতভাবে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন হবে। তিনি বলেন, সবার মতো করেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য করতে বদ্ধপরিকর।
কূটনীতিসম্পৃক্ত আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের আরেক নেতা বলেন, দৃশ্যত যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সরকারের সঙ্গে দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে মনে করা হলেও সেপ্টেম্বরের আগে পশ্চিমা এ দেশটি তার চূড়ান্ত অবস্থান পরিষ্কার করবে না বলে তারা মনে করছেন। ওই নেতা বলেন, সেপ্টেম্বরে ভারত সফর রয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। মূলত সেই সফরেই বোঝা যাবে সরকার কোনদিকে যাবে। এ নেতা আরও বলেন, ‘আমাদের ডিপ্লোম্যাসি (পররাষ্ট্রনীতি) পরস্পরের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের নীতি। কূটনীতিতে প্রধানমন্ত্রী দেশি-বিদেশি অনেক নেতাকে ছাড়িয়ে গেছেন। সেই আস্থা-বিশ্বাসও প্রধানমন্ত্রীর ওপর আমাদের রয়েছে।’
এতদিন যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান পরিষ্কার হয়ে না ওঠায় সরকার ও আওয়ামী লীগ নেতারা দাবি করতেন, দেশটিকে তারা বোঝাতে পেরেছেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে সমালোচনা প্রমাণ করে না যে, ক্ষমতাধর দেশটির সঙ্গে আওয়ামী লীগের বোঝাপড়া ঠিক আছে। যুক্তরাষ্ট্র ভিসানীতি ঘোষণার পরই দেশটির অবস্থান আওয়ামী লীগের পক্ষে আছে এমন কথা কেউ আর বিশ্বাস করছে না।
আওয়ামী লীগের একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, আমেরিকাকে মাইনাস ধরেই এগিয়ে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দলটির শীর্ষ পর্যায়ের দুই নেতা আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান আগের চেয়ে বেশি স্পষ্ট হয়ে ওঠায় রাজনীতিতে তারা ‘ব্যাকফুটে’ চলে যাচ্ছেন কি না, তা নিয়ে আলোচনা চলছে দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের মধ্যে।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমি একটাই বুঝি, একটাই জানি, আগামী নির্বাচন সংবিধানসম্মতভাবেই হবে। এ জায়গা থেকে একটুও নড়বে না সরকার।’
নতুন অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে ১৩ ধরনের জ্বালানি তেল ও পেট্রোলিয়াম পণ্যের ওপর থেকে বিদ্যমান ৫ শতাংশ আগাম কর প্রত্যাহারের পরিকল্পনা করেছে সরকার। অন্যদিকে উৎপাদন পর্যায়ে তরল করা পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) ভ্যাট ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে সাড়ে ৭ শতাংশ করা হয়েছে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে পেট্রোল, অকটেন ও ডিজেল আমদানিতে প্রতি লিটারে ১৩ দশমিক ৭৫ টাকা করে শুল্ক আরোপ করার প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এ ছাড়া অন্যান্য জ্বালানি জেট ফুয়েল, ফার্নেস অয়েল, লুব বেইজ অয়েল, কেরোসিনের ক্ষেত্রে প্রতি টনে ২৫ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। এত দিন এসব জ্বালানি তেল আমদানির ক্ষেত্রে ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ ছিল।
আমদানি করা পণ্যের যথাযথ মূল্য নির্ধারণে ২০২২-২৩ অর্থবছরে পণ্যের ট্যারিফ মূল্য ও ন্যূনতম মূল্য নির্ধারণ-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনে পেট্রোলিয়াম ও এর উপজাত দুটি হেডিংয়ের আওতায় ১২টি এইচএস কোডের বিপরীতে ট্যারিফ মূল্য এবং একটি হেডিংয়ের আওতায় একটি এইচএস কোডের বিপরীতে ন্যূনতম মূল্য বহাল আছে।
পেট্রোলিয়াম ও এর উপজাতগুলোর মূল্য আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিনিয়ত ওঠানামা করার কারণে অতি প্রয়োজনীয় এই পণ্যের মূল্য স্থিতিশীল রাখতে এ সুপারিশ করা হয়েছে।
এলপিজি সিলিন্ডারের বিষয়ে বাজেট বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী বলেন, এলপিজি সিলিন্ডার তৈরির কাঁচামাল ইস্পাতের পাত (স্টিল শিট) ও ওয়েল্ডিংয়ের তার আমদানির করছাড় সুবিধা তুলে নেওয়া হয়েছে। এলপিজি সিলিন্ডার উৎপাদনকারীরা কাঁচামালে শুল্ককর ছাড় ১২ বছর ধরে ভোগ করে আসছে। তাই রাজস্ব আহরণের স্বার্থে শুধু দুটি উপকরণে ছাড় তুলে নেওয়া হয়েছে। তবে অন্যান্য করছাড়ের মেয়াদ ২০২৫ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত বহাল থাকবে বলে।
পেট্রোলিয়াম তেল এবং বিটুমিনাস খনিজ থেকে প্রাপ্ত তেলের ওপর বিদ্যমান শুল্ক ৫ শতাংশ। নতুন বাজেট অনুযায়ী এসবের প্রতি ব্যারেলের দাম ১ হাজার ১১৭ টাকা (লিটার প্রতি ৭.০২ টাকা) হতে পারে। প্রতি টন ফার্নেস অয়েলের সুনির্দিষ্ট শুল্ক ৯ হাজার ১০৮ টাকা (লিটার প্রতি ৯.১০ টাকা) করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের জন্য নতুন অর্থবছরে (২০২৩-২৪) ৩৪ হাজার ৮১৯ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। এর মধ্যে বিদ্যুৎ খাতে ৩৩ হাজার ৮২৫ কোটি ১০ লাখ টাকা এবং জ্বালানি খাতে ৯৯৪ কোটি ৩১ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করা নতুন বাজেটে এই বরাদ্দের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
চলতি অর্থবছরে (২০২২-২৩) বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতে বরাদ্দ ছিল ২৬ হাজার ৬৬ কোটি টাকা। পরবর্তী সময়ে সংশোধিত বাজেটে তা বেড়ে দাঁড়ায় ২৭ হাজার ৮৯ কোটি টাকা। অর্থাৎ নতুন অর্থবছরে এ খাতে বরাদ্দ বাড়ছে ৭ হাজার ৭৩০ কোটি টাকা।
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তাফা কামাল বাজেট বক্তৃতায় বলেন, উৎপাদন ও বিতরণ সক্ষমতা সম্প্রসারণের ফলে দেশের শতভাগ জনগোষ্ঠী বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় এসেছে। বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ২০০৯ সালে ৪ হাজার ৯৪২ মেগাওয়াট থেকে বর্তমানে ২৬ হাজার ৭০০ মেগাওয়াটে উন্নীত হয়েছে। জ্বালানির ব্যবহার বহুমুখীকরণের জন্য গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পাশাপাশি কয়লা, তরল জ্বালানি, দ্বৈত জ্বালানি, পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানিভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, রামপালে কয়লাভিত্তিক ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রকল্পের প্রথম ইউনিট ও পায়রা ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রকল্পে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হয়েছে। মাতারবাড়ীতে ১২০০ মেগাওয়াট আল্ট্রা-সুপার ক্রিটিক্যাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের কাজ চলছে। সরকারি-বেসরকারি যৌথ উদ্যোগে মোট ১২ হাজার ৯৪ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ৩৩টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণাধীন এবং ২ হাজার ৪১৬ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ১৭টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের চুক্তি প্রক্রিয়াধীন আছে। এছাড়া, ১০ হাজার ৪৪৩ মেগাওয়াট ক্ষমতার আরও ৩৪টি বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে।
মুস্তফা কামাল বলেন, ‘২০৪১ সালের মধ্যে পাশর্^বর্তী দেশগুলো থেকে প্রায় ৯ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির পরিকল্পনা রয়েছে। বর্তমানে ভারত থেকে ১১৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির পাশাপাশি ঝাড়খ-ে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ৭৪৮ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হয়েছে। নেপালের জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির চুক্তি চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। ভুটান থেকে বিদ্যুৎ আমদানির জন্য বাংলাদেশ, ভুটান ও ভারতের মধ্যে একটি ত্রিপক্ষীয় সমঝোতা স্মারক সই হতে যাচ্ছে শিগগিরই। তিনি বলেন, ‘সব মিলিয়ে আমরা ২০৩০ সালের মধ্যে ৪০ হাজার মেগাওয়াট এবং ২০৪১ সালের মধ্যে ৬০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন নিশ্চিত করতে পারব বলে আশা করছি।’
অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘সরকার ২০৩০ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ১০ শতাংশ নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। এছাড়া ২০৪১ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ৪০ শতাংশ পরিচ্ছন্ন জ্বালানি থেকে সংগ্রহ করতে চাই। এরসঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে, ৬০ লাখ সোলার সিস্টেম স্থাপনের মাধ্যমে অফ গ্রিড এলাকায় বসবাসকারী জনগণকে বিদ্যুৎ সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। কার্বন নিঃসরণ কমাতে ডিজেলচালিত পাম্পের জায়গায় সৌরচালিত পাম্প স্থাপন করার অংশ হিসেবে সেচকাজে ইতিমধ্যে ২ হাজার ৫৭০টি পাম্প স্থাপন করা হয়েছে। বর্তমানে নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে ৮৯৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে। সর্বোপরি, রাশিয়ার সহায়তায় রূপপুরে ২৪০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে।’
উৎপাদিত বিদ্যুৎ জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে গত ১৪ বছরে ৬ হাজার ৬৪৪ সার্কিট কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন স্থাপন করা হয়েছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, সঞ্চালন লাইন ১৪ হাজার ৬৪৪ কিলোমিটারে উন্নীত হয়েছে। এছাড়া বিতরণ লাইন ৩ লাখ ৬৯ হাজার থেকে ৬ লাখ ৬৯ হাজার কিলোমিটারে বৃদ্ধি করা হয়েছে। বিদ্যুতের সিস্টেমলস ১৪ শতাংশ থেকে নেমে এসেছে ৭ দশমিক ৭ শতাংশে। ২০৩০ সালের মধ্যে সঞ্চালন লাইনের পরিমাণ ২৮ হাজার কিলোমিটারে সম্প্রসারিত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিদ্যুতের অপব্যবহার রোধের লক্ষ্যে গত ৫ বছরে প্রায় ৫৩ লাখ প্রি-পেইড স্মার্ট মিটার স্থাপন করা হয়েছে।
অর্থমন্ত্রী কামাল বলেন, ২০০৯ সালের তুলনায়, জ্বালানি তেলের মজুদ ক্ষমতা ৮ লাখ ৯৪ হাজার মেট্রিক টন থেকে বৃদ্ধি করে ২০২১-২২ অর্থবছরে ১৩ লাখ ৬০ হাজার টন করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে এই মজুদ ক্ষমতা ৩০ দিনের পরিবর্তে ৬০ দিনে বাড়ানোর বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি উদ্বোধন করা ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী পাইপলাইনের মাধ্যমে আমদানি করা জ্বালানি তেল (ডিজেল) দেশের উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলায় এবং সৈয়দপুরে ১৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রে সরবরাহ করা সম্ভব হবে।
তিনি বলেন, ‘একমাত্র তেল শোধনাগার ইস্টার্ন রিফাইনারির পরিশোধন ক্ষমতা ১৫ লাখ টন থেকে ৪৫ লাখ টনে উন্নীত করার চেষ্টা চলছে। পায়রা সমুদ্রবন্দর এলাকায় একটি বৃহৎ সমন্বিত তেল শোধনাগার স্টোরেজ ট্যাংক নির্মাণের সিদ্ধান্ত আছে। সম্প্রতি ভোলার ইলিশা গ্যাসক্ষেত্রে প্রায় ২০০ বিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের মজুদ আবিষ্কৃত হয়েছে। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার সময় প্রতিদিন গ্যাসের উৎপাদন ছিল ১ হাজার ৭৪৪ মিলিয়ন ঘনফুট, যা বেড়ে হয়েছে প্রায় ২ হাজার ৩০০ মিলিয়ন ঘনফুট। তেল ও গ্যাস অনুসন্ধান কোম্পানি বাপেক্সের সক্ষমতা বাড়ানোর পর দৈনিক গ্যাস উৎপাদন ৯৮৪ মিলিয়ন ঘনফুট বেড়েছে। ২০২৪ সালের মধ্যে আরও ৪৬টি কূপ খনন করা হবে। এতে অতিরিক্ত ৬১৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস জাতীয় গ্রিডে যোগ হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
মুস্তাফা কামাল বলেন, ‘সমুদ্রে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য বিপুল বিনিয়োগ প্রয়োজন হওয়ায় আমরা বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিচ্ছি। ক্রমবর্ধমান জ্বালানির চাহিদা মেটাতে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস আমদানি এবং স্পট মার্কেট থেকেও কেনা হচ্ছে। এছাড়া কক্সবাজারের মাতারবাড়ীতে প্রতিদিন ১ হাজার মিলিয়ন ঘনফুট ক্ষমতাসম্পন্ন ল্যান্ড বেইজড এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।’
বাজেট বক্তৃতায় আরও বলা হয়, ২০০৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত ১ হাজার ১৫৮ কিলোমিটার গ্যাস সঞ্চালন পাইপলাইন নির্মাণ করা হয়েছে। বর্তমানে দেশের উত্তরাঞ্চল ও অন্যান্য এলাকায় ২১৪ কিলোমিটার পাইপলাইন নির্মাণের কাজ চলছে। ২০২৬ সালের মধ্যে পায়রা ও ভোলা থেকে গ্যাস সঞ্চালনের জন্য আরও ৪২৫ কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। গ্যাসের সরবরাহ বাড়ানোর পাশাপাশি অপচয় রোধে প্রি-পেইড মিটার স্থাপনের কাজও চলছে।
চলতি অর্থবছরের চেয়ে আগামী অর্থবছরের সামগ্রিক বাজেট আকারে ১২ দশমিক ৩৪ শতাংশ বড় হলেও আগামী বছরের শিক্ষা-বাজেট দশমিক ৪৪ শতাংশ কমেছে। তবে টাকার অঙ্কে শিক্ষার দুই মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দ ৬ হাজার ৭১৩ কোটি টাকা বেড়েছে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরে শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাতে মোট বাজেটের ১৩ দশমিক ৭ শতাংশ বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। শুধু শিক্ষা খাত হিসাব করলে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা এবং মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষায় বরাদ্দ ১১ দশমিক ৫৭ শতাংশ। টাকার অঙ্কে তা ৮৮ হাজার ১৬২ কোটি। চলতি অর্থবছরে শিক্ষায় বরাদ্দ ছিল ১২ দশমিক ০১ শতাংশ বা ৮১ হাজার ৪৪৯ কোটি টাকা।
ইউনেস্কো, শিক্ষাবিদ বা অংশীজনরা অনেক দিন ধরেই শিক্ষায় জিডিপির কমপক্ষে ৪ শতাংশ বরাদ্দের কথা বলছেন। এটাকে তারা বরাদ্দ হিসেবে না দেখে আগামী দিনের বিনিয়োগ হিসেবে দেখতে বলছেন। গত কয়েক বছর ধরে শিক্ষায় বরাদ্দ ১২ শতাংশের আশপাশে ঘুরপাক খাচ্ছিল। জিডিপির হিসাবে তা ছিল ২ শতাংশের কাছাকাছি। চলতি অর্থবছরে শিক্ষা খাতে মোট বরাদ্দ জিডিপির ১ দশমিক ৮৩ শতাংশ, ২০২১-২২ অর্থবছরে ছিল ২ দশমিক ০৮ শতাংশ। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে তা কমে দাঁড়াচ্ছে জিডিপির ১ দশমিক ৭৬ শতাংশ।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধূরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আগামী বাজেটে যে লক্ষ্য ধরা হয়েছে, তার সঙ্গে শিক্ষায় বরাদ্দের সংগতি নেই। বাজেটে স্মার্ট বাংলাদেশের কথা বলা হয়েছে। এজন্য দক্ষ ও শিক্ষিত জনগোষ্ঠী প্রয়োজন। কিন্তু এ জনগোষ্ঠী তৈরির জন্য প্রয়োজন শিক্ষা খাতে বিনিয়োগ। বরাবরের মতো এবারও শুভংকরের ফাঁকি লক্ষ করছি। শিক্ষার সঙ্গে প্রযুক্তি মিলিয়ে আকার বড় করা হলেও চলতি অর্থবছরের চেয়েও বরাদ্দ কমেছে। নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নেও বাজেটে দিকনির্দেশনা দেখছি না।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ড. ছিদ্দিকুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘শিক্ষায় জিডিপির ২ শতাংশের নিচে বরাদ্দ কাক্সিক্ষত নয়। আগামী অর্থবছরে অন্তত ১৪ থেকে ১৫ শতাংশ বরাদ্দ দিলে ভালো হতো। কারিগরি ও ভোকেশনাল শিক্ষায় আরও বেশি নজর দেওয়া উচিত ছিল। সেটা আগামী অর্থবছরের বাজেটে দেখা যায়নি।’
তিনি বলেন, ‘আগামী বছরের বাজেটে মিড ডে মিলের জন্য বরাদ্দ রাখার কথা বলা হয়েছে, যা খুবই ভালো। যোগ্য শিক্ষক নিয়োগ ও তাদের যথাযথ প্রশিক্ষণে জোর দিতে হবে। শিক্ষায় বরাদ্দের সঠিক ব্যবহারের বিষয়ে গুরুত্ব দিতে হবে।’
আগামী অর্থবছরে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জন্য ৩৪ হাজার ৭২২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরে তা ছিল ৩১ হাজার ৭৬১ কোটি টাকা। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের জন্য ৪২ হাজার ৮৩৮ কোটি এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের জন্য ১০ হাজার ৬০২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের জন্য ৩৯ হাজার ৯৬১ কোটি এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের জন্য ৯ হাজার ৭২৭ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছিল সরকার।
বাজেট ঘিরে প্রতি বছরই বেসরকারি শিক্ষকদের অন্যতম দাবি থাকে শিক্ষাব্যবস্থার জাতীয়করণ, এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের পূর্ণাঙ্গ বাড়ি ভাড়া ও শতভাগ উৎসব-ভাতা প্রদান। নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তকরণের প্রক্রিয়া চলমান রাখাও তাদের অন্যতম দাবি। কিন্তু সেসব বিষয়ে বাজেটে স্পষ্ট কিছু উল্লেখ নেই। তবে এমপিওভুক্তির জন্য মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগে আগামী অর্থবছরে ৩০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে বলে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।
দুই দশকেরও বেশি ক্যারিয়ারে অসংখ্য নাটক-টেলিছবি নির্মাণ করেছেন শিহাব শাহীন, উপহার দিয়েছেন হিট প্রোডাকশন। নিজেকে শুধু রোমান্টিক জনরায় আটকে না রেখে কাজ করেছেন বহুমাত্রিক ঘরানায়। নিজেকে প্রমাণ করেছেন সব্যসাচী নির্মাতা হিসেবে। নিজেকে শুধু টেলিভিশনেই আটকে রাখেননি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তিনিও পাল্টেছেন প্লাটফর্ম এবং সেখানেও দেখিয়েছেন নিজের মুন্সিয়ানা।
সর্বশেষ গেল ঈদে তুমুল সাড়া ফেলেছে তার নির্মিত স্পিন অফ সিরিজ ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’। সাফল্যের পর কিছুদিন আগেই অনুষ্ঠিত হয়ে গেল এর সাকসেস পার্টি যেখানে উপস্থিত ছিলেন টিমের কলাকুশলী থেকে শুরু করে অন্যান্য নির্মাতা ও শিল্পীরা। সেই ধারাবাহিকতায় এবার তিনি নিয়ে আসছেন সিরিজটির সিক্যুয়াল। শুধু তাই নয়, একসঙ্গে একাধিক সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে আসছেন জনপ্রিয় নির্মাতা।
শিহাব শাহীন বলেন, ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’ নিয়ে এতটা প্রত্যাশা ছিল না কিন্তু সে সাড়া পেয়েছি তা প্রত্যাশার চেয়েও বেশি। দর্শকরাই কাজটিকে গ্রহণ করেছেন আর তাই এখন এর সিক্যুয়াল নিয়ে আসার পরিকল্পনা করছি। স্পিন অফে দেখিয়েছি অ্যালেন স্বপনের পেছনের গল্প। সিন্ডিকেটে তাকে আমরা দেখিয়েছিলাম ২০২২ সালে, সে ঢাকায় আসার পর এর মাঝের সময়টার গল্পই থাকবে সিক্যুয়ালে। যেটার সংযোগ থাকতে পারে ‘সিন্ডিকেট ২’-তে। ঈদের পরপর এটার শুট করার সম্ভাবনা রয়েছে।
এই সিক্যুয়াল ছাড়াও আরও বেশ কিছু সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে সবকিছু চূড়ান্ত হয়েছে বলেও জানান এ নির্মাতা। তিনি বলেন, মোস্তফা সরয়ার ফারুকির তত্ত্বাবধানে ওটিটি প্লাটফর্ম চরকির ‘মিনিস্ট্রি অফ লাভ’ সিরিজের একটা কনটেন্ট করবো। এখনও কাস্টিং চূড়ান্ত হয়নি। এছাড়া হইচইয়ের একটি সিরিজ ও বিঞ্জের একটি ফিল্ম করা হবে। নাম চূড়ান্ত হয়নি। তবে দুটোতেই জিয়াউল ফারুক অপূর্ব থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
মাঝে শোনা গিয়েছিল, আফরান নিশোকে নিয়ে ‘সিন্ডিকেট ২’ নাকি হবে না, এটা কতটুকু সত্য? এমন প্রশ্নে শিহাব শাহীন বলেন, এটা ভূয়া তথ্য। ডিসেম্বরের শেষ দিকে ‘সিন্ডিকেট ২’ করবো তার আগে সেপ্টেম্বরে শুরু করবো ‘রসু খাঁ’।
জানা গেছে, আগামী সপ্তাহে অস্ট্রেলিয়া পাড়ি জমাচ্ছেন শিহাব শাহীন। দেশে ফিরবেন মাসের শেষ নাগাদ এরপর কাজে নামবেন।
স্বাস্থ্য খাতে চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটের চেয়ে আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে বরাদ্দ বেড়েছে। প্রস্তাবিত বাজেটে এই খাতে এবার বরাদ্দ ১ হাজার ১৮৯ কোটি টাকা বা ৩ দশমিক ২২ শতাংশ বাড়লেও মোট বাজেটের তুলনায় তা কমেছে শূন্য দশমিক ৪ শতাংশ। চলতি অর্থবছরে খাতটিতে বরাদ্দ ছিল মোট বাজেটের ৫ দশমিক ৪ শতাংশ। আগামী বাজেটে তা ৫ শতাংশে নেমে এসেছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে জাতীয় সংসদে ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেট পেশ করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। বাজেটে স্বাস্থ্যসেবা এবং স্বাস্থ্য-শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ খাতে ৩৮ হাজার ৫২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করেন। ২০২২-২৩ অর্থবছরে সংশোধিত বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ ছিল ৩৬ হাজার ৮৬৩ কোটি টাকা।
প্রস্তাবিত বাজেটে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে ২৯ হাজার ৪৩১ কোটি টাকা, যা আগের বছরের তুলনায় মাত্র ১৫০ কোটি টাকা বেশি। এর মধ্যে পরিচালন ব্যয় ১৭ হাজার ২২১ কোটি টাকা ও উন্নয়ন ব্যয় ১২ হাজার ২১০ কোটি টাকা। এছাড়া স্বাস্থ্য-শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটে ৮ হাজার ৬২১ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এই বরাদ্দ থেকেই নতুন মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠার ব্যয় নির্বাহ করা হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক সৈয়দ আবদুল হামিদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, এবার টাকার অঙ্কে গত বছরের তুলনায় (বর্তমান ২০২২-২৩ অর্থবছর) ১ হাজার একশ কোটির মতো বেড়েছে। কিন্তু বাজেট শেয়ারে সেটা কমেছে। সামগ্রিক বাজেটের গ্রোথ বা বৃদ্ধি ১২ শতাংশ, কিন্তু স্বাস্থ্যের বাজেটের বৃদ্ধি ৩ শতাংশ। তারমানে রাষ্ট্রীয় বাজেটে স্বাস্থ্য খাতের গুরুত্ব কমেছে। সেই কারণে ৫ দশমিক ৪ শতাংশ থেকে ৫ শতাংশে নেমে এসেছে।
এই স্বাস্থ্য অর্থনীতিবিদ বলেন, এবার কমার যৌক্তিক কারণ আছে। সেটা হলো স্বাস্থ্য বিভাগের সেক্টর প্রোগ্রামে উন্নয়ন বাজেট থেকে অর্থ আসে। সেই সেক্টর প্রোগ্রাম এই অর্থবছরে শেষ হয়ে প্রস্তাবিত অর্থবছর থেকে নতুন সেক্টর প্রোগ্রাম শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু চলমান সেক্টর প্রোগ্রাম সময়মতো বাস্তবায়ন করতে না পারায় সেটার সময় আরও এক বছর বাড়ানো হয়েছে। এই এক বছরের জন্য নতুন বাজেট থাকে না, পুরনো বাজেট থেকেই ব্যয় করতে হয়। ফলে বরাদ্দ না বাড়িয়ে পাঁচ বছরের বাজেট যদি ছয় বছরে গিয়ে ঠেকে, তাহলে প্রতি বছর টাকা কমে যায়। মূলত এ কারণে এবার টাকা কমে গেছে।
সরকার স্বাস্থ্য খাতে এবারও কিছু থোক বরাদ্দ রাখতে পারত বলে মনে করেন স্বাস্থ্য অর্থনীতির এই শিক্ষক। তিনি বলেন, কভিড ছাড়াও আমাদের অনেক জরুরি খাত আছে। এখন ডেঙ্গু চলছে। এটি ইমার্জেন্সি হয়ে যাবে। ফলে এটার জন্য যে ফান্ড দেওয়া আছে হাসপাতালে, রোগী বাড়লে সেটা দিয়ে হবে না। এরকম ইমার্জেন্সি আরও আসতে পারে। এরকম একটা থোক বরাদ্দ রাখলে স্বাস্থ্যের ইমার্জেন্সিতে সেখান থেকে ব্যয় করা যেত। কিন্তু সেটাও নেই। তার মানে কভিডের শিক্ষা থেকে আমরা কিছুই শিখিনি। প্রস্তাবিত বাজেটে সেটার প্রতিফলন নেই।
সামগ্রিকভাবে বাজেটে রোগীদের স্বাস্থ্যসেবার খরচ বেড়ে যাবে বলেও মনে করছেন এই স্বাস্থ্য অর্থনীতিবিদ। তিনি বলেন, এতে স্বাস্থ্যসেবা ও ওষুধসহ সামগ্রিকভাবে স্বাস্থ্য খাত নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার যথেষ্ট কারণ আছে।
যদিও এবারের বাজেটে ওষুধ, চিকিৎসাসামগ্রী ও স্বাস্থ্য সুরক্ষাসামগ্রী উৎপাদনে প্রয়োজনীয় কাঁচামাল আমদানিতে বিদ্যমান রেয়াতি সুবিধা অব্যাহত রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। এ ছাড়া ক্যানসার রোগীদের চিকিৎসা আরও সুলভ করার জন্য ক্যানসার চিকিৎসায় ব্যবহৃত ওষুধ, আইভি ক্যানুলা উৎপাদনের অন্যতম প্রধান উপাদান সিলিকন টিউবসহ আরও কিছু বিদ্যমান ওষুধের কাঁচামাল আমদানিতে রেয়াতি সুবিধা অব্যাহত রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। তামাক জাতীয় পণ্য যেমন তরল নিকোটিন, ট্রান্সডারমাল ইউস নিকোটিন পণ্যের বিপরীতে ১৫০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপ করার প্রস্তাব করা হয়েছে।