
পথনাটকের প্রসঙ্গ উঠলে যে নাম সবার প্রথমে আসবে সেটি সফদার হাশমি। সত্তর-আশির দশকে তার নির্দেশিত পথনাটক ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল। এই নাট্যকারকে নিয়ে লিখেছেন তৃষা বড়ুয়া
পথনাটকের অগ্রদূত
মৃত্যু কখনো কখনো জীবনের চেয়ে অনেক গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। ভগৎ সিং, চে গুয়েভারা বা গৌরি লঙ্কেশের মতো মানুষ কী করেছিলেন, তার বিস্তারিত অনেকে হয়তো জানেন না। তবে এটা অন্তত সবাই জানেন, এই ব্যক্তিরা এমন কিছুর জন্য জীবন দিয়েছিলেন যা তারা বিশ্বাস করতেন, অন্তরে ধারণ করতেন। মৃত্যুর মধ্য দিয়ে তারা এমন এক উচ্চতায় পৌঁছেছিলেন যা তাদের অর্জনকে ছাড়িয়ে যায়। চে গুয়েভারা বা ভগৎ সিংকে যেমন তাদের রাজনৈতিক মতাদর্শের জন্য জীবন দিতে হয়, আশির দশকে ভারতের এক নাট্যশিল্পীকেও তার মতাদর্শিক অবস্থানের জন্য মাত্র ৩৪ বছর বয়সে পৃথিবী থেকে বিদায় নিতে হয়। তার নাম সফদার হাশমি। ১৯৮৯ সালের ১ জানুয়ারি দিল্লির উপকণ্ঠে হাল্লা বোল নামে পথনাটকে অভিনয়ের সময় তার ওপর হামলা হয়। পরের দিন হাসপাতালে ওই নাট্যকারের মৃত্যু হয়। ৩ জানুয়ারি সফদারের শেষকৃত্যের মিছিলে অংশ নেন ১৫ হাজার শিল্পী, বুদ্ধিজীবী, রাজনৈতিক কর্মী, শ্রমিকসহ অনেকে। কোনো নাট্যশিল্পীর শেষযাত্রায় এত বিপুলসংখ্যক মানুষের অংশগ্রহণ দিল্লির ইতিহাসে সম্ভবত ওই প্রথম এবং ওই শেষ। ৪ জানুয়ারি সফদারের মৃত্যুর ৪৮ ঘণ্টা পার হয়নি, তার স্ত্রী, সহ-অভিনেতা ও কমরেড মলয়াশ্রী হাশমি তার দল নিয়ে ঠিক হামলার জায়গাতেই অসমাপ্ত হাল্লা বোল নাটকটি শেষ করেন। ওই বছরের ১২ এপ্রিল সফদারের জন্মদিন ভারতজুড়ে উদযাপন করা হয়। দেশটির বিভিন্ন প্রান্তে সফদারের স্মরণে সেদিন প্রায় ৩০ হাজার পথনাটক মঞ্চস্থ হয়। তার মৃত্যুর আগে যেসব পথনাটক দল ঝিমিয়ে পড়েছিল, তারাও সেদিন ঘরে বসে থাকেনি। শত শত নতুন দলের আবির্ভাব ঘটে ওই সময়ে। সফদারের মৃত্যু সত্যিকার অর্থে ভারতের স্ট্রিট থিয়েটারকে উজ্জীবিত করেছিল। এই সফদার হাশমি কে, যার শেষযাত্রায় হাজার হাজার মানুষ শামিল হয়? পথনাটকে তার ভূমিকা কী? তিনি কি কেবলই একজন রোমান্টিক তরুণ ছিলেন যিনি অল্প বয়সে জনগণের নায়ক হয়ে উঠেছিলেন? ভারতের নাট্যশিল্পী সুধনভো দেশপান্ডে বলেন, ‘সফদার হাশমি ততটুকুই রোমান্টিক ছিলেন যতটা একজন বিপ্লবীকে হতে হয়। আর্জেন্টিনার মার্ক্সবাদী বিপ্লবী চে গুয়েভারা বলেছিলেন, অসীম ভালোবাসার অনুভূতি সত্যিকারের বিপ্লবীর পথপ্রদর্শক। ভালোবাসার ক্ষমতা ব্যতীত কারও পক্ষে প্রকৃত বিপ্লবী হওয়া সম্ভব নয়। সফদার রাজনৈতিক কর্মী ছিলেন, কমিউনিস্ট ছিলেন। তিনি বিশ্বাস করতেন, শিল্পীদের সমাজের প্রতি দায়-দায়িত্ব আছে। তার এই দায়িত্ববোধই তাকে মার্ক্সবাদের প্রতি আকৃষ্ট করে।’
শৈশব ও রাজনীতি
১৯৫৪ সালের ১২ এপ্রিল দিল্লিতে এক বামপন্থি পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন সফদার। দিল্লির সেন্ট স্টিফেনস কলেজ থেকে ইংরেজি সাহিত্যে স্নাতক করেন তিনি। এরপর দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে একই বিষয়ে মাস্টার্স করেন সফদার। ছাত্রাবস্থাতেই কমিউনিস্ট পার্টি অব ইন্ডিয়ার (মার্ক্সবাদী) ছাত্র সংগঠন স্টুডেন্টস ফেডারেশন অব ইন্ডিয়ার (এসএফআই) সাংস্কৃতিক ফ্রন্টের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন তিনি। পরে সফদার ভারতের নাট্যকর্মীদের সংগঠন ইন্ডিয়ান পিপলস থিয়েটার অ্যাসোসিয়েশনে (আইপিটিএ) যোগ দেন। স্নাতক পাসের আগে ও পরে কিমলেশ, দেখতে লেনাসহ আইপিটিএর বেশ কয়েকটি প্রযোজনায় কাজ করেন তিনি। ১৯৭৩ সালে জন নাট্য মঞ্চ নামে নয়াদিল্লিতে একটি নাটকের দল প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯ বছর বয়সী সফদার ছিলেন ওই দলের আহ্বায়ক। জন নাট্য মঞ্চের বেশির ভাগ সদস্য ছিলেন অপেশাদার থিয়েটারকর্মী। সত্তরের দশকে ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর বিরুদ্ধে নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ উঠলে কুরসি, কুরসি, কুরসি (চেয়ার, চেয়ার, চেয়ার) নামে নাটক জনসম্মুখে নিয়ে আসেন সফদার। নাটকটিতে এক রাজার গল্প বলা হয় যিনি নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিকে তার সিংহাসনে বসানোর চেষ্টা করলেও সিংহাসনটি তার পিছু ছাড়ে না। এই নাটক সে সময়ে নয়াদিল্লির রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের কেন্দ্রস্থল বোট ক্লাবে টানা সাত দিন প্রচুর দর্শক উপভোগ করেন। কুরসি, কুরসি, কুরসির সাফল্য জন নাট্য মঞ্চের জন্য একটি টার্নিং পয়েন্ট ছিল। ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত নাটকটি উন্মুক্তই পরিবেশন করে সফদারের দল। ওই বছরের ২৫ জুন ইন্দিরা গান্ধী জরুরি অবস্থা ঘোষণা করলে জন নাট্য মঞ্চের পক্ষে নাটক প্রদর্শন কঠিন হয়ে পড়ে। জরুরি অবস্থার সময় নাট্যদলে কাজ করতে না পারায় দিল্লি, কাশ্মীর ও উত্তরাখণ্ডের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি সাহিত্যের প্রভাষক হিসেবে যোগ দেন সফদার।
১৯৭৭ সালে জরুরি অবস্থা তুলে নেওয়া হলে ফের সক্রিয় হয়ে ওঠে জন নাট্য মঞ্চ। ১৯৭৮ সালের ২০ নভেম্বর ভারতের এক শ্রমিক সংগঠনের সমাবেশে দুই লাখ মানুষের সামনে মেশিন নামে নাটক নিয়ে হাজির হয় জন নাট্য মঞ্চ। বাইসাইকেল রাখার জায়গা ও খাবার গরম দেওয়ার জন্য ছোট চুলার দাবিতে আন্দোলন করছিলেন উত্তর প্রদেশ রাজ্যের গাজিয়াবাদ শহরের এক কারখানার শ্রমিকরা। তাদের আন্দোলনে গুলি চালানো হলে ছয় শ্রমিকের মৃত্যু হয়। ওই শ্রমিক আন্দোলনের ওপর ভিত্তি করে নাট্যদলটি মেশিন মঞ্চস্থ করে। মাত্র ১৩ মিনিটের ওই নাটক শ্রমিকদের মধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলে। এরপর ক্ষুদ্র কৃষকদের বঞ্চনা নিয়ে গাও সে শাহার তাক, বেকারত্ব নিয়ে তিন ক্রোর, নারীর প্রতি সহিংসতা নিয়ে অওরাত ও মূল্যস্ফীতি নিয়ে ডিটিসি কি ধুন্ধলি পরিবেশন করে জন নাট্য মঞ্চ। সে সময় এসব নাটকের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার পাশাপাশি দূরদর্শনের জন্য বেশ কয়েকটি প্রামাণ্য চিত্র ও টিভি সিরিয়ালও প্রযোজনা করেন সফদার। লেখেন শিশুদের জন্য বই। ভারতীয় মঞ্চনাটকের সমালোচনাও সে সময় তাকে করতে দেখা যায়। জন নাট্য মঞ্চের কার্যত নির্দেশক ছিলেন সফদার। তার মৃত্যুর আগ পর্যন্ত দলটির ২৪টি নাটকের প্রায় চার হাজার প্রদর্শনী হয়। এসব নাটক মূলত শ্রমিক শ্রেণির এলাকা ও কারখানায় দেখানো হতো। ১৯৭৯ সালে মঞ্চ অভিনেত্রী ও বাম রাজনৈতিক কর্মী মলয়াশ্রীর সঙ্গে সফদারের বিয়ে হয়। বিয়ের পর প্রেস ট্রাস্ট অব ইন্ডিয়া (পিটিআই) ও দ্য ইকোনমিক টাইমসে সাংবাদিক হিসেবে কাজ করেন সফদার। তিনি পশ্চিমবঙ্গ সরকারের প্রেস ইনফরমেশন অফিসারও ছিলেন। ১৯৮৪ সালে চাকরিতে ইস্তফা দিয়ে নাট্যচর্চায় পুরোপুরি মনোনিবেশ করেন সফদার।
পথনাটকের যাত্রা
জরুরি অবস্থা জারির আগে জন নাট্য মঞ্চের নাটক আয়োজন করত ভারতের কিষান সভা ও বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠন। জরুরি অবস্থা তুলে নেওয়ার পর দলটির সদস্যরা বড় ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হন। তারা বুঝতে পারেন, তাদের নাটক ধারাবাহিক আয়োজন করার মতো অর্থ এসব সংগঠনের নেই। উন্মুক্ত স্থানে মঞ্চ তৈরি, লাইট ও সাউন্ড টেকনিশিয়ান ভাড়া করতে ওই আমলে কমপক্ষে পাঁচ হাজার রুপি খরচ হতো। প্রতিবার এত টাকা জোগাড় করা শ্রমিক সংগঠনগুলোর জন্য কঠিন ছিল। একটা উপায় হতে পারত, অন্যসব নাট্যদলের মতো দিল্লির প্রতিষ্ঠিত অডিটোরিয়ামে জন নাট্য মঞ্চ তাদের নাটক পরিবেশন করে যাবে, শ্রমিক-কৃষকরা সেখানে গিয়ে নাটক উপভোগ করবে। সফদার হাশমির এই বিকল্প মনঃপূত ছিল না। তার বক্তব্য ছিল পরিষ্কার। শ্রমিক সংগঠনগুলোর কাছে যদি দেড়/দুই ঘণ্টার নাটক আয়োজন করার মতো অর্থ না থাকে, তাহলে এত দীর্ঘ সময়ের নাটক বানানোর দরকার নেই, স্বল্প দৈর্ঘ্যরে নাটক তাদের কাছে নিয়ে যাওয়া হবে। সে ক্ষেত্রে মঞ্চেরও দরকার পড়বে না। তার এই চিন্তা ও আবেগ থেকেই জন নাট্য মঞ্চের পথনাটকের যাত্রা শুরু হয়। ভারতজুড়ে এখন অনেক পথনাটক পরিবেশন করা হয় কিন্তু সত্তরের দশকে জন নাট্য মঞ্চের তরুণ অপেশাদার নাট্যকর্মীদের ধারণা ছিল না, তারা কীসের সূত্রপাত ঘটাতে যাচ্ছেন। ওই সময় তাদের চারপাশে পথনাটকের কোনো প্রতিষ্ঠিত মডেল ছিল না, যেখান থেকে তারা কিছু শিখতে পারবেন। প্রথম দিকে জন নাট্য মঞ্চের কর্মীরা বিভিন্ন লেখকের ছোট নাটক পড়া শুরু করেন কিন্তু খুব দ্রুতই তারা বুঝতে পারেন, নাটকের মাধ্যমে জনগণকে যে বার্তা তারা দিতে চাইছেন, তা ওইসব নাটকের মাধ্যমে সম্ভব নয়। তখন কর্মীরা নিজেরাই নাটক লেখা শুরু করেন। জরুরি অবস্থার আগে সফদার হাশমি কখনো নাটক লেখেননি। শুধু তিনি নন, জন নাট্য মঞ্চের কারোরই নাটক লেখার অভিজ্ঞতা ছিল না। ১৯৭৮ সালে উত্তর প্রদেশের গাজিয়াবাদ শহরে আন্দোলন চলাকালে ছয় শ্রমিক নিহত হওয়ার ঘটনা প্রবলভাবে নাড়া দেয় জন নাট্য মঞ্চের কর্মীদের। সফদারসহ অন্যরা বুঝতে পারেন, নাটকের বিষয়বস্তু তারা পেয়ে গেছেন। সফদার দলের সদস্য রাকেশ সাক্সেনাকে নিয়ে মেশিনের চিত্রনাট্য লিখে ফেলেন। দলের অন্য সদস্যরাও নাটকটি দাঁড় করাতে তাদের মতামত দিয়েছিলেন। মেশিন বিপুলসংখ্যক দর্শককে মুগ্ধ করে। তারা এর আগে এ ধরনের নাটক দেখেনি। মেশিনের সাফল্য নিয়ে পরে সফদার বলেছিলেন, ‘নাটকটির শেষ গান গাওয়ার পর শ্রমিক সংগঠনের প্রতিনিধিরা আমাদের তাদের কাঁধে তুলে নেন। আমরা এক দিনেই নায়ক হয়ে গিয়েছিলাম। পরের দিন ২১ নভেম্বর নয়াদিল্লির বোট ক্লাবে প্রায় ১ লাখ ৬০ হাজার শ্রমিকের সামনে আমরা নাটকটি ফের পরিবেশন করি। অনেক মানুষ সেদিন মেশিনের প্রশংসা করেছিলেন। অনেকে নাটকটি রেকর্ডও করেন। মাসখানেক পর আমরা জানতে পারি, ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষ তাদের ভাষায় মেশিন পরিবেশন করছেন।’ মেশিনের এক হাজার প্রদর্শনীর পর সফদার বলেছিলেন, ‘নাটকটির প্রতি শ্রমিকদের এত ভালোবাসা দেখে শুরুতে অবাক হয়ে যেতাম। এটি এত জনপ্রিয় হওয়ার কারণ বুঝে উঠতে পারতাম না। পরে বুঝতে পারি, মেশিন সফল হওয়ার কারণ প্রথমত এটির সংলাপ, যা গীতিধর্মী, গদ্য কবিতার কাছাকাছি। দ্বিতীয়ত, বিমূর্ততার মধ্যেই মেশিন প্রকৃত সত্য তুলে ধরে এবং এর ফলে বিমূর্ততা ও বাস্তবতার মধ্যে দর্শক স্বচ্ছন্দে সংযোগ ঘটাতে পারেন।
তৃতীয়ত, অল্প সময়ের ভেতরে সংলাপে সঠিক শব্দের প্রয়োগ নাটকটির বক্তব্য সহজ করে তোলে, যা বুঝতে দর্শকদের সমস্যা হয় না।’
অমরত্বের পথে
১৯৮৯ সালে নতুন বছরের প্রথম দিন উত্তর প্রদেশের ঝান্দাপুর গ্রামের শাহিবাবাদ এলাকায় হাল্লা বোল নামে পথনাটক পরিবেশন করছিলেন জন নাট্য মঞ্চের কর্মীরা। হঠাৎ একদল ব্যক্তি তাদের ওপর রড-লাঠিসোঁটা নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে। সফদারের মাথায় লোহার রড দিয়ে তারা ২০ বারের বেশি আঘাত করে। সফদারের ওপর হামলার ঘটনা পরের দিন ভারতের অনেক পত্রিকা প্রথম পাতায় ছাপে। অভিযোগের আঙুল ওঠে তৎকালীন ক্ষমতাসীন কংগ্রেস সরকারের দিকে। রাজীব গান্ধী সে সময় ছিলেন প্রধানমন্ত্রী আর স্থানীয় নেতা সবাই ছিলেন কংগ্রেসের। সফদারকে দেখতে ভারতের তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও কংগ্রেস নেতা বুটা সিং হাসপাতালে গেলে তাকে আইসিইউতে ঢুকতে দেয়নি ক্ষুব্ধ জনতা। সফদারের পথচলা সেদিন শাসকশ্রেণি থামিয়ে দিলেও তার কীর্তি মুছে ফেলতে পারেনি। এ কারণে তার গান ও কবিতার লাইন আজও ভারতের আন্দোলন-সংগ্রামে শোনা যায়। ২০২০ সালে শাহীনবাগ আন্দোলনেও সফদারের ছবি হাতে দাঁড়াতে দেখা যায় লোকজনকে। সফদার মানুষের লড়াইয়ে বেঁচে আছেন, বেঁচে থাকবেন ঠিক যেমনটা আছেন চে গুয়েভারা, ভগৎ সিংরা।
মোবাইল ফোনে আজকাল হাত বাড়ালেই ডেটা। প্রায় সব টেলিকম সংস্থাই দিচ্ছে আনলিমিটেড ডেটা অফার/প্ল্যান। তবে শুনতে আনলিমিটেড হলেও তার ভেতরেই লুকানো থাকে ছোট্ট কিন্তু। অর্থাৎ শুনতে আপডেট হলেও মাসিক বা দৈনিক হিসেবে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ ডেটা। আর সেই ডেটা লিমিট শেষ করে ফেললে নেট কানেকশন বন্ধ হয় না বটে, তবে তা এত কম স্পিডে নেমে আসে যে ব্যবহার করা কঠিন হয়ে পড়ে।
শুধু কাজকর্মই নয়, বিনোদনের জন্যও ব্যবহার হয় এই ডেটা। একটা সিনেমা বা সিরিজ দেখলেন তাতেই নিঃশেষ হয়ে গেল অর্ধেক ডেটা। আর গেম খেলার অভ্যাস থাকলে তো কথাই নেই। বিনোদন বজায় রাখতে হলে গুনতে হবে প্ল্যানের বাইরে মাশুল। যদি প্রিপেড প্ল্যান ব্যবহার করেন তাহলে রিচার্জ করে পেতে হবে অতিরিক্ত ডেটা। পোস্টপেড হলে তো আরও সমস্যা। অতিরিক্ত ডেটার জন্য গুনতে হতে পারে অতিরিক্ত মাশুল। সিরিজ দেখা বা গেম খেলার বাইরেও কিন্তু মোবাইলে ডেটা পুড়তে থাকে। তবে মোবাইল থেকেই নিয়ন্ত্রণ করা যায় ডেটা খরচার পরিমাণ।
আসুন, জেনে নিই কীভাবে Android ফোনে ডেটা খরচ নিয়ন্ত্রণ করা যাবে সহজেই
প্রথমেই চলে যান Settings-এ। সেখানে গিয়ে Network/ SIM/ Internet অপশনে গিয়ে বেছে নিন Data or Data Saver অপশন। সার্চ বারে সার্চও করতে পারেন এই নামে।
এবার Internet অপশনের মধ্যেই পাবেন Data warning & limit.
সেখানে গিয়ে Mobile data usage cycle-এ গেলেই আপনি ডেটা সাইকেলের ডিউরেশন সেট করতে পারবেন।
এবার Set data limit-এ গিয়ে পছন্দসই ডেটা লিমিট লিখে দিন। তবে সেই লিমিটের বাইরে ডেটা খরচ করতে গেলেই মোবাইলের পক্ষ থেকে আপনি পাবেন সতর্কবার্তা।
এ ছাড়া প্রচুর অ্যাপই অনেক বেশি পরিমাণ ডেটা খেতে থাকে ভেতরে ভেতরে। সেই অ্যাপগুলোকে শনাক্ত করে আনইনস্টল করে দিতে পারলেই বাঁচবে আপনার ডেটাও। পাশাপাশি বাঁচবে মোবাইলের চার্জও।
দূষণের কারণে শীত-গ্রীষ্ম-বর্ষা সারা বছরই ত্বকের সমস্যা থাকে। তবে শীতকালে সমস্যা যেন একটু বেশিই হয়। ত্বকের বহিঃস্তর বা এপিডারমিসে এ সময়ে জলীয় ভাব কমে যাওয়ায় শুষ্কতা বাড়ে। পাশাপাশি শীতকালে পানি খাওয়ার পরিমাণ কমে যায়। ফলে ত্বকের শুষ্কতা বাড়ে। সব মিলিয়ে হাত-পা-ঠোঁট ফেটে যাওয়া বা চামড়া ওঠা খুব সাধারণ ঘটনা হয়ে দাঁড়ায়।
কী করবেন : ঠোঁট শুকোতে শুরু করলে গ্লিসারিন, নারকেল তেল ইত্যাদি ব্যবহার করা যেতে পারে। দুপুরে খাওয়ার পরে এবং রাতে শোয়ার আগে ঠোঁটে নারকেল তেল বা পেট্রোলিয়াম জেলি লাগালে উপকার পাওয়া যাবে। এ ছাড়া গরম পানিতে একটু লবণ ফেলে পাঁচ-সাত মিনিট হাত বা পা ডুবিয়ে রেখে তারপর শুকনো করে মুছে ক্রিম বা ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করতে হবে। প্রয়োজন হলে ত্বকবিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিয়ে ইউরিয়া ক্রিম ব্যবহার করা যেতে পারে।
একজিমা ও তার চিকিৎসা : শীতকালে ত্বকের এপিডারমিসের কেরাটিন স্তর থেকে জলকণা বেশি পরিমাণে বেরিয়ে গেলে স্তরটি শুষ্ক হয়ে ফেটে যায়। জায়গায় জায়গায় লাল হয়ে ফুলে ওঠে। শুরু হয় চুলকানি, রসও গড়াতে পারে। একপর্যায়ে জায়গাটি শক্ত হয়ে যায়। একে প্রাথমিকভাবে একজিমা বলা হয়। একজিমা হলে বেশ কিছু সাবধানতা অবলম্বন করতে হয়। ডিটারজেন্ট, সাবান, আনাজের রস ইত্যাদি আক্রান্ত স্থানে লাগানো যায় না। একজিমার চিকিৎসায় খাওয়ার জন্য হিস্টামিন-জাতীয় ওষুধ ও মাখার জন্য স্টেরয়েড ক্রিম ব্যবহার করা হয়। মারাত্মক একজিমা দেখা দিলে অ্যান্টিবায়োটিকও খেতে হতে পারে।
শীতে হাঁপানি বা অ্যাজমার রোগের প্রকোপ বৃদ্ধি পায়। হাঁপানি দীর্ঘমেয়াদি রোগ, যার লক্ষণ কাশি, শ্বাসকষ্ট, বুকে চাপবোধ হওয়া এবং শ্বাস-প্রশ্বাসের সময় গলা-বুকে শোঁ শোঁ শব্দ হওয়া। কিছু ক্ষেত্রে কাশি ছাড়া অন্য লক্ষণগুলো তখন থাকে না, বিশেষ করে কাফ ভেরিয়েন্ট অ্যাজমা থাকলে। হাঁপানির সুনির্দিষ্ট কারণ নেই। বংশগত ও পরিবেশের কারণে হাঁপানি বাড়ে।
অ্যাজমা রোগীর শ্বাসনালিতে দীর্ঘমেয়াদি প্রদাহ হয়ে থাকে। একই পরিবেশে একজনের অ্যাজমা অ্যাটাক হচ্ছে কিন্তু অন্য জনের হচ্ছে না। এর কারণ ওই আবহাওয়ায় এমন কিছু জিনিস আছে, যার অ্যাজমা অ্যাটাক হলো তার শ্বাসনালি ওই জিনিসের প্রতি সংবেদনশীল। একে বলা হয় এজমা ট্রিগার বা অ্যালার্জেন। অ্যালার্জেন ব্যক্তিভেদে ভিন্ন হয়। কারও একটা-দুটো, কারও পাঁচ-সাতটাও থাকতে পারে। অ্যাজমা অ্যাটাক থেকে বাঁচার জন্য অবশ্যই ধরন অনুযায়ী এগুলো থেকে দূরে থাকতে হবে। ভাইরাসের সংক্রমণ, ঠা-া আবহাওয়া, বিভিন্ন প্রাকৃতিক পরিবেশগত কারণ, মানসিক চাপ, মাত্রাতিরিক্ত শারীরিক পরিশ্রম ও কিছু নির্দিষ্ট ওষুধ হাঁপানির সমস্যাকে আরও বাড়িয়ে দিতে পারে। নির্দিষ্ট কোনো অ্যালার্জি-জাতীয় খাবারের কারণেও অ্যাজমা বাড়ে। রোগীর অসুস্থতার ইতিহাস ও ফুসফুসের পরীক্ষা-পালমোনারি ফাংশন টেস্ট/স্পাইরোমেট্রির সাহায্যে হাঁপানি রোগ নির্ণয় করা সম্ভব। অ্যাজমা চিকিৎসা করা হয় এই রোগের তীব্র আক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়া এবং দীর্ঘ সময় এই রোগের স্থায়িত্ব রোধ করতে।
ক. দ্রুত ত্রাণ বা উদ্ধারকারী ওষুধ : বিটা-অ্যাগোনিস্ট যেমনসালবিউটামল বা লেভো সালবিউটামলএগুলো শ্বাসনালিকে দ্রুত শিথিল করে এবং নিঃশ্বাস স্বাভাবিক করে।
খ. দীর্ঘমেয়াদি নিয়ন্ত্রণ বা প্রতিরোধকারী : ইনহেলড কর্টিকোস্টেরয়েডস : যেমনফ্লুটিকাসন, বুডিসোনাইড, বিক্লোমিথাসোন ইত্যাদি। মিথাইলজ্যান্থিন : যেমনডক্সোফাইলিন, এমাইনোফাইলিন বাথিয়োফাইলিন। ইমিউনোথেরাপি : যেমনওমালিজুমাব, রেসলিজুমাব ইত্যাদি। দীর্ঘকাল-কার্যকর এন্টিকোলিনারজিকস : যেমনটিওট্রোপিয়াম ও ইপ্রাট্রোপিয়াম। লিউকোট্রাইন রিসেপ্টর এন্টাগনিস্ট বা লিউকোট্রাইন মডিফায়ার্স : যেমনমন্টেলুকাস্ট, জাফিরলুকাস্ট ইত্যাদি। মাস্ট-সেল স্থিতিশীলকারক : যেমনক্রোমোলিন সোডিয়াম।
গ. ব্রঙ্কিয়াল থার্মোপ্লাস্টি : যাদের অ্যাজমা সমস্যা গুরুতর এবং এই থেরাপি নেওয়ার মতো শারীরিক অবস্থা রয়েছে এফডিএ দ্বারা তাদের চিকিৎসা করা হয়।
আধুনিক চিকিৎসায় মুখে খাবার ওষুধের চেয়ে ইনহেলারের মাধ্যমে চিকিৎসা করা হয়। কারণ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই, কম পরিমাণ ওষুধ লাগে। ইনহেলার অ্যাজমা রোগীর এমন চিকিৎসা পদ্ধতি, যা রোগী শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে টেনে নেওয়াও ওষুধ শ্বাসনালিতে পৌঁছায়। হাঁপানি বা শ্বাসকষ্টের প্রথম ও দ্রুত চিকিৎসা হচ্ছে ইনহেলার। ইনহেলার শ্বাসকষ্ট লাঘবে খুব দ্রুত কাজ করে, যেখানে সেবনযোগ্য ওষুধ খেলে পরিত্রাণে বেশি সময় লাগে, পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও বেশি। অ্যাজমা রোগীর বক্ষব্যাধি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসা ও ফলোআপ একান্ত জরুরি।
বাংলাদেশ নারী জাতীয় ফুটবল দলের রক্ষণভাগের অন্যতম সেরা আঁখি খাতুন। সেই ছোট থেকেই গড়ন, উচ্চতা ও লড়াকু ফুটবল দিয়ে আলাদাভাবে নজর কেড়েছেন। মেয়েদের ফুটবলে বাংলাদেশের প্রায় সব সাফল্যেই ছিলেন অগ্রনায়ক হয়ে। সম্প্রতি তিনিও জাতীয় দলের ক্যাম্প ছেড়েছেন। তবে সতীর্থ সিরাত জাহান স্বপ্নার মতো অবসরের সিদ্ধান্ত নেননি। বরং নিজেকে আরও উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন বাস্তবায়নে বাফুফের বন্দী জীবনকে বিদায় জানিয়েছেন।
সম্প্রতি চীনের বন্দরনগরী হাইকোউ শহরের একটি ফুটবল অ্যাকাডেমিতে খেলার পাশাপাশি পড়ালেখার প্রস্তাব পেয়েছেন আঁখি। এখন চলছে চীনের ভিসা নেওয়ার প্রক্রিয়া। সবকিছু ঠিক থাকলে আসছে ঈদের পর দেশ ছাড়বেন তিনি। বিষয়টি দেশ রূপান্তরকে নিশ্চিত করেছেন আঁখি।
তিনি যে আর দশজন ফুটবলারের মতো নন, তা আগেই বুঝিয়েছেন আঁখি। সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা জয়ের পর বিশ্ব ফুটবলের নজর কাড়েন দীর্ঘদেহী এই ডিফেন্ডার। তার নির্ভীক ফুটবল বড্ড মনে ধরে সুইডেনের শীর্ষ লিগের একটি ক্লাবের। সাফে বাংলাদেশ মাত্র একটি গোল হজম করেছিল।
এই কৃতিত্বের বড় দাবীদার সেন্টারব্যাক আঁখি। তাই সুইডিশ ক্লাবটি তাকে দলে নেওয়ার প্রস্তাবও দেয়। প্রথম নারী ফুটবলার হিসেবে ইউরোপের কোন দেশের শীর্ষ লিগে খেলার প্রস্তাবে আঁখি দেখতে শুরু করেছিলেন বড় মঞ্চে নিজেকে প্রমাণের স্বপ্ন। তবে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের হঠকারি সিদ্ধান্তে সুইডেনে খেলতে যাওয়া হয়নি। জাতীয় দলের খেলা থাকবে বলে সুইডেনের দরজা বন্ধ করে দেয় বাফুফে। পরে অবশ্য অর্থ সঙ্কটসহ নানা অযুহাতে জাতীয় দলকে সিঙ্গাপুরে ফিফা ফ্রেন্ডলি ও মিয়ানমারে অলিম্পিক বাছাইপর্ব খেলতে পাঠানো হয়নি।
বিষয়টা ভীষণ কষ্ট দিয়েছিল সদ্য এইচএসসি পাস করা আঁখিকে। অভিমানে কিছুদিন ক্যাম্প ছেড়েও চলে গিয়েছিলেন। পরে অবশ্য ক্যাম্পে যোগ দেন। তবে হতাশা একটুও কমেনি। দিনের পর দিন লক্ষ্যহীণ পথ চলতে কারই বা ভালো লাগে? দেশের ফুটবলের যে ভবিষ্যত নেই ঢের বুঝতে পেরেছিলেন। তাই চীনের প্রস্তাবটাকে লুফে নেন আঁখি।
দেশ রূপান্তরের কাছে ক্যাম্প ছাড়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, 'আমি ওখান থেকে চলে এসেছি ঠিক, তবে ফুটবলেই থাকবো। চীনে ভাল অ্যাকাডেমিতে অনুশীলন ও লিগ খেলার সুযোগ পাচ্ছি। তাই ওইখানে যাবো। এখন ভিসা নিয়ে কাজ করছি। আমার জন্য দোয়া করবেন।'
গত ফেব্রুয়ারিতে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় ৪.৫০ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছেন সিরাজগঞ্জের গর্ব আঁখি। দেশে সুযোগ ছিল বেসরকারী একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার। তবে তিনি যে স্বপ্ন বুনেছেন চীনে লেখাপড়া করার, ‘মূলত আমি ওখানে পড়াশোনা ও খেলা এক সঙ্গে করবো। এখানে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়েছিলাম। তবে ভর্তি হইনি।’
তার এই সিদ্ধান্ত বাফুফেকে জানিয়েই নেওয়া। তবে জাতীয় দলের প্রয়োজনে যেখানেই থাকেন না কেন, চলে আসবেন, 'আমি পল স্যারকে (বাফুফের টেকনিক্যাল ডিরেক্টর পল স্মলি) জানিয়েই ক্যাম্প ছেড়েছি। তাকে এটাও বলেছি আমি যেখানেই থাকি, জাতীয় দলের প্রয়োজন হলে চলে আসবো।'
সম্প্রতি মেয়েদের ক্যাম্পে লেগেছে দ্রোহের আগুন। তিনদিন আগে অভিমানে অবসরের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন দলের অন্যতম স্ট্রাইকার স্বপ্না। একই দিনে মেয়েদের ফুটবলের সকল সাফল্যের রূপকার অভিজ্ঞ কোচ গোলাম রব্বানী ছোটন। মূলত বাফুফের গঞ্জনার শিকার হয়েই ছোটনের এই সিদ্ধান্ত। তাতেই হুলস্থুল লেগে গেছে ফুটবল অঙ্গনে। সালাউদ্দিন-কিরণের হাতে বন্দী নারী ফুটবল নিয়ে উঠেছে সমালোচনার ঝড়। প্রিয় কোচ ছোটনের জন্য ভীষণ মন খারাপ আঁখির, 'সত্যি খুব খারাপ লাগছে স্যারের সরে যাওয়ার কথা শুনে।'
তাকে সুইডেনে খেলতে যেতে দেওয়া হয়নি। স্বপ্নাকেও ভারতের লোভনীয় প্রস্তাব ফিরিয়ে দিতে হয়েছে। আঁখি অবশ্য এই অপ্রিয় বিষয়গুলো এড়িয়েই যেতে চাইলেন। শুধু বলেছেন, 'স্বপ্না আপুর ভারতে খেলার সুযোগ ছিল। তার সঙ্গে কী হয়েছে, সেটা সবার জানা। আমার সঙ্গেও একই ঘটনা ঘটেছে।'
শেষটায় আঁখি যা বলেছেন, তা দিয়েই নারী ফুটবলের ভেতরের চিত্রটা ফুটে উঠেছে। তারা দেশকে অসংখ্য সাফল্য এনে দিয়েছেন। গোটা দেশের কাছে তারা একেকজন খেলার মাঠের বীর সেনানী। তবে তাতে তাদের ভাগ্যের কোন পরিবর্তন ঘটেনি। বাফুফের চতুর্থ তলায় গাদাগাদি করে থাকতে হয়। মাস শেষে জুটে নামকোয়াস্তে পারিশ্রমিক। সেটা বাড়ানোর দাবী করলেই নাম কাটা যায় গুডবুক থেকে। আঁখির কথায়, 'ভাইয়া, আমরা তো মেয়ে। আর কত কষ্ট করবো যদি ঠিকভাবে পারিশ্রমিকই না পাই?'
দক্ষিণ এশিয়ার সেরা দল হওয়ার পরও আঁখিদের আকাশ ঢেকে আছে নিকশ কালো অন্ধকারে। এর দায় কী এড়াতে পারবেন, বছরের পর বছর মসনদ আঁকড়ে রাখা ফুটবল কর্তারা?
হার দিয়ে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ শেষ করলো চ্যাম্পিয়ন ম্যানচেস্টার সিটি। অন্যদিকে ৫-০ গোলের দাপুটে জয়ে শেষ করেছে দ্বিতীয় স্থানের আর্সেনাল। জিতেছে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড। আর ৪-৪ গোলে ড্র করেছে লিভারপুল। সাউদাম্পটনের অবনমন আগেই নিশ্চিত হয়েছিল। রবিবার তাদের সঙ্গে নেমে গেছে লিস্টার ও লিডস। লিডস ১-৪ গোলে হেরে গেছে টটেনহ্যাম হটস্পারের কাছে। আর ২-১ গোলে ওয়েস্টহ্যামকে হারিয়েও লাভ হয়নি লিস্টারের। বেন্টফোর্ডের মাঠে হালান্ড-গুনদোয়ানসহ প্রথমসারির কয়েকজনকে খেলানইনি পেপ গার্দিওলা। সামনে ছিলেন আলভারেজ, মাহরেজ, তাদের পেছেন ফোডেন। ৮৫ মিনিট পর্যন্ত অরক্ষিত রেখেছিল সিটি তাদের গোল। ঠিক ওই সময়ে ব্রেন্টফোর্ডের ইথান পিনোক। পঞ্চম হার দিয়ে লিগ শেষ করে সিটি।
নগর প্রতিদ্বন্দ্বি ম্যানইউ ঘরের মাঠে জেডন সানচো ও ব্রুনো ফার্নান্দেজের দ্বিতীয়ার্ধের দুগোলে ফুলহ্যামকে হারিয়ে তৃতীয় হয়েছে। চেলসির সঙ্গে নিউক্যাসলে ১-১ গোলে ড্র করায় চতুর্থ স্থান নিয়ে শেষ করলো সৌদি যুবরাজের মালিকানধীন নিউক্যাসল। সাউদাম্পটনের সঙ্গে ২-০ গোলে এগিয়ে গিয়েও একপর্যায়ে ৪-২ গোলে পিছিয়ে পড়ে হারের শঙ্কায় পড়েছিল লিভারপুল। ৭২ ও ৭৩ মিনিটে কোডি গাকপো ও ডিয়েগো জোতার গোল ড্র নিয়ে মাঠ ছাড়ে ইয়ুর্গেন ক্লপের শিষ্যরা। ৬৭ পয়েন্ট নিয়ে পঞ্চম হয়েছে লিভারপুল। ব্রাইটন হয়েছে ষষ্ঠ। ঘরে মাঠে জাকার দুই ও সাকার এক গোলে উলভসের বিপক্ষে প্রথমার্ধেই ৩-০তে এগিয়ে যায় গানার্সরা। দ্বিতীয়ার্ধে জেসুস ও কিইয়োর আরো দুই গোল করলে বড় জয়ের স্বস্তিতে মৌসুম শেষ করে একসময় শিরোপা লড়াইয়ে থাকা আর্সেনাল।
নতুন পে-স্কেল কিংবা মহার্ঘ ভাতা নয়, সরকারি কর্মচারীদের বেতন বাড়বে বার্ষিক বেতন বৃদ্ধি বা ইনক্রিমেন্ট অনুযায়ী। তাদের বেতন প্রতি বছর যতটা বাড়ার কথা এবার তার চেয়ে বেশি বাড়বে। আর তা চলতি বছরের মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সমন্বয় করে বাড়ানো হবে। অর্থাৎ আগামী অর্থবছরে সরকারি কর্মকর্তাদের নিয়মিত ইনক্রিমেন্ট ৫ শতাংশের বাইরে বাড়ানো হবে বলে অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে।
এ বিষয়ে পলিসি রিচার্স ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর দেশ রূপান্তরকে বলেন, গত প্রায় এক বছর ধরে দ্রব্যমূল্য বাড়ার কারণে সাধারণ মানুষ কষ্টে আছেন। সরকারি কর্মকর্তাদের বেশিরভাগের একমাত্র আয় বেতন-ভাতা। বৈশি^ক মন্দার কারণে সরকারও খানিকটা সংকটে আছে। এ পরিস্থিতিতে পে-স্কেল দেওয়ার মতো বড় ধরনের ব্যয় বাড়ানো সরকারের পক্ষে কঠিন হবে। ইনক্রিমেন্ট দেওয়া হলে সরকারের ওপর চাপ বেশি হবে না।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে সরকারি কর্মরতদের খানিকটা স্বস্তি দিতে কোন খাতে কী পদক্ষেপ নেওয়া যায় এমন প্রস্তাব চাওয়া হয়। একই সঙ্গে বাজেটবিষয়ক বিভিন্ন বৈঠকে সরকারি নীতিনির্ধারকরাও এ বিষয়ে আলোচনা করেন। অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে যাচাই-বাছাই করে মহার্ঘ ভাতা দেওয়ার প্রস্তাব করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে উপস্থাপন করে। চলতি মাসে গণভবনে অনুষ্ঠিত বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে অর্থমন্ত্রী, পরিকল্পনামন্ত্রী এ বিষয়ে ইতিবাচক মন্তব্য করে নিজেদের মতামত তুলে ধরেন। প্রধানমন্ত্রী ওই বৈঠকে মহার্ঘ ভাতা দেওয়া হলে কত বাড়তি ব্যয় হবে তা হিসাব করে পরের বৈঠকে উপস্থাপন করতে নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বড় ধরনের ব্যয় না বাড়িয়ে একটা উপায় বের করতেও বলেন। শেষ পর্যন্ত ইনক্রিমেন্ট বাড়ানো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যা চলতি মাসে প্রধানমন্ত্রীর সর্বশেষ সংবাদ সম্মেলনে নিজেই জানিয়েছেন।
বর্তমানে সরকারি কর্মচারীরা ২০১৫ সালের বেতন কমিশন অনুযায়ী বেতন-ভাতা পাচ্ছেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিনের নেতৃত্বে গঠিত কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী এ বেতন কমিশন প্রণীত হয়েছিল। এ কমিশনের সুপারিশে বলা হয়, আর নতুন বেতন কমিশন গঠন করা হবে না। প্রতি বছর ৫ শতাংশ হারে ইনক্রিমেন্ট বা বেতন বাড়ানো হবে। এ কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী তা হয়ে আসছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একটি হিসাব অনুযায়ী, দেশে সরকারি কর্মচারী ১৪ লাখ। বিভিন্ন করপোরেশন এবং এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের নিয়ে হিসাব করলে প্রায় ২২ লাখ।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, আগামী অর্থবছরের বাজেটে নিয়মিত ইনক্রিমেন্টের বাইরে আরও কতটা বাড়ানো যায় তা হিসাব করে নির্ধারণ করা হবে। এ কাজ করতে বাজেট প্রস্তাব পেশ করার পর আলাদা কমিটি গঠন করা হবে। এ কমিটি মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সমন্বয় করে যাচাই-বাছাই শেষে ইনক্রিমেন্টের হার সুপারিশ করবে। এ ক্ষেত্রে মূল্যস্ফীতির হার বিবেচনা করে বিদ্যমান ৫ শতাংশ ইনক্রিমেন্টের সঙ্গে প্রতি মাসে বেতন বাড়ানো হবে, নাকি গড় মূল্যস্ফীতির হার বিবেচনা করে ইনক্রিমেন্টের হার বাড়ানো হবে, তা খতিয়ে দেখা হবে। ২০তম গ্রেড থেকে প্রথম গ্রেড পর্যন্ত সবার জন্য একই হারে বেতন বাড়নো হবে কি না, তা আরও খতিয়ে দেখা হবে। চূড়ান্ত হিসাব অর্থমন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের পর দাপ্তরিক প্রক্রিয়া শেষে প্রকাশ করা হবে। যে তারিখেই প্রকাশ করা হোক না কেন, আগামী ১ জুলাই থেকে কার্যকরী ধরা হবে।
এখানে মহার্ঘ ভাতা ১০ শতাংশ দেওয়া হলে এ হিসাবে ৪ হাজার কোটি টাকা যোগ করতে হবে। ১৫ শতাংশ দেওয়া হলে ৬ হাজার কোটি এবং ২০ শতাংশ দেওয়া হলে ৮ হাজার কোটি টাকা যোগ করতে হবে। অর্থাৎ মহার্ঘ ভাতা দেওয়া হলে আগামী অর্থবছরে সরকারের ব্যয় বাড়বে। আর এতে সরকার ব্যয় কমিয়েও সরকারি কর্মকর্তাদের সন্তুষ্টিতে ইনক্রিমেন্ট বাড়ানো পথে হেঁটেছে।
চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটের আকার ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারি কর্মরতদের বেতন-ভাতা বাবদ রাখা হয়েছে ছিল ৭৪ হাজার ২৬৬ কোটি টাকা। খরচ না হওয়ায় সংশোধিত বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ ১ হাজার ৯৩ কোটি টাকা কমানো হয়েছে। আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৬১ হাজার ৯৯২ কোটি টাকা বাজেট হওয়ার কথা আছে। এ বাজেট সরকারি কর্মরতদের বেতন-ভাতার জন্য বরাদ্দ ৭৭ হাজার কোটি টাকা রাখা হতে পারে। সরকারি কর্মকর্তাদের অনেক পদ এখনো খালি আছে। এতে ইনক্রিমেন্ট বাড়ানো হলেও সরকারের ব্যয়ে বড় ধরনের চাপ বাড়বে না।
গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে বেসরকারিভাবে বিজয়ী হয়েছেন জায়েদা খাতুন।
তিনি ঘড়ি প্রতীকে মোট ২ লাখ ৩৮ হাজার ৯৩৪ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। তার নিকটতম আওয়ামী লীগ মনোনিত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আজমত উল্লা খান পেয়েছেন ২ লাখ ২২ হাজার ৭৩৭ ভোট।
বৃহস্পতিবার সকাল ৮টায় এ সিটির ৪৮০টি কেন্দ্রে ইভিএমে ভোটগ্রহণ শুরু হয়, যা একটানা বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলে।
বৃহস্পতিবার (২৫ মে) রাতে রির্টানিং কর্মকর্তা স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুনকে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত ঘোষণা করেন।
নির্বাচনের অন্য মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে লাঙ্গল প্রতীকে জাতীয় পার্টির প্রার্থী এম এম নিয়াজ উদ্দিন ১৬ হাজার ৩৬২ ভোট, গোলাপ ফুল প্রতীকে জাকের পার্টির মো. রাজু আহাম্মেদ ৭ হাজার ২০৬ ভোট, মাছ প্রতীকে গণফ্রন্টের প্রার্থী আতিকুল ইসলাম ১৬ হাজার ৯৭৪ ভোট, স্বতন্ত্রপ্রার্থী ঘোড়া প্রতীকের মো. হারুন-অর-রশীদ ২ হাজার ৪২৬ ভোট এবং হাতি প্রতীকের সরকার শাহনূর ইসলাম ২৩ হাজার ২৬৫ ভোট পেয়েছেন।
নির্বাচন কমিশনের তথ্যানুযায়ী, গাজীপুর সিটিতে মোট ভোটার ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৭৬ জন। তাদের মধ্যে ৫ লাখ ৯২ হাজার ৭৬২ জন পুরুষ, ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৬৯৬ জন নারী ও ১৮ জন হিজড়া। এই সিটিতে ৫৭টি সাধারণ ও ১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড আছে। মোট ভোটকেন্দ্র ৪৮০টি, মোট ভোটকক্ষ ৩ হাজার ৪৯৭টি।
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে বাংলাদেশ টেলিভিশনে (বিটিভি) নির্মিত হয়েছে বিশেষ কবিতা আবৃত্তির অনুষ্ঠান ‘ও ভোরের পাখি’। ঈমাম হোসাইনের প্রযোজনায় এটি উপস্থাপনা করেছেন তামান্ন তিথি। অনুষ্ঠানটিতে আবৃত্তি করেছেন আশরাফুল আলম, মীর বরকত, রফিকুল ইসলাম, পলি পারভিন, শাকিলা মতিন মৃদুলা, মাসকুর-এ সাত্তার কল্লোল, আসলাম শিশির, সংগীতা চৌধুরী, আহসান উল্লাহ তমাল। প্রচারিত হয় ২৫ মে সকাল সাড়ে ৯টায়।
এছাড়াও নির্মিত হয়েছে বিশেষ অনুষ্ঠান ‘আমারে দেবো না ভুলিতে’। অনুষ্ঠানটিতে গান, কবিতা ও আলোচনার সমন্বয়ে কবিকে সামগ্রিকভাবে তুলে ধরা হয়েছে। জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী ও বাচিকশিল্পীদের অংশগ্রহণ অনুষ্ঠানটিতে ভিন্নমাত্রা যোগ করেছে। ইয়াসমিন মুসতারী, সালাউদ্দিন আহমেদ, শেলু বড়ুয়া, ছন্দা চক্রবর্ত্তী ও ভাস্বর বন্দ্যোপাধ্যায়ের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা করেছেন প্রফেসর মুন্সী আবু সাইফ। মনিরুল হাসানের প্রযোজনায় অনুষ্ঠানটি প্রচারিত হচ্ছে ২৫ মে দুপুর ১ টা ০৫ মিনিটে। আরও প্রচারিত হবে সংগীতানুষ্ঠান ‘দোলনচাঁপা’ ও ‘সন্ধ্যামালতী’। রাত ৯টায় প্রচারিত হবে নাটক ‘বনের পাপিয়া’ (পুনপ্রচার)।
গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ভোট শেষ হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার সকাল ৮টায় এ সিটির ৪৮০টি কেন্দ্রে ইভিএমে ভোটগ্রহণ শুরু হয়, যা একটানা বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলে।
দায়িত্বশীল সূত্র থেকে এখন পর্যন্ত ৪৫০টি কেন্দ্রের প্রাথমিক ফল পাওয়া গেছে। এর মধ্যে নৌকা প্রতীকে আজমত উল্লা খান পেয়েছেন ১ লাখ ৮৫ হাজার ৩৭৯ ভোট এবং টেবিলঘড়ি প্রতীকে জায়েদা খাতুন পেয়েছেন ২ লাখ ৫ হাজার ৪১৩ ভোট।
নির্বাচন কমিশনের তথ্যানুযায়ী, গাজীপুর সিটিতে মোট ভোটার ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৭৬ জন। তাদের মধ্যে ৫ লাখ ৯২ হাজার ৭৬২ জন পুরুষ, ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৬৯৬ জন নারী ও ১৮ জন হিজড়া। এই সিটিতে ৫৭টি সাধারণ ও ১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড আছে। মোট ভোটকেন্দ্র ৪৮০টি, মোট ভোটকক্ষ ৩ হাজার ৪৯৭টি।
গাজীপুর সিটিতে মেয়র পদে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হচ্ছে আওয়ামী লীগের আজমত উল্লা খান এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুনের মধ্যে। দুজনই জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী। অপরদিকে ভোটের পরিবেশ ভালো বলে জানান আরেক স্বতন্ত্র প্রার্থী শাহনূর ইসলাম রনি।
কোটা পদ্ধতি তুলে দেওয়ার পরও বিসিএস পরীক্ষায় নারীদের চাকরি পাওয়ার হার প্রায় একই রয়েছে। ১০ শতাংশ কোটা থাকা অবস্থায় তারা যে পরিমাণ চাকরি পাচ্ছিলেন, কোটা তুলে দেওয়ার পরও প্রায় একই হারে চাকরি পাচ্ছেন। সাধারণ ক্যাডার বা কারিগরি ক্যাডারে পিছিয়ে পড়লেও শিক্ষার মতো পেশাগত ক্যাডারগুলোতে এগিয়ে গিয়ে বিসিএসে মোট চাকরি পাওয়ার হারে প্রায় একই অবস্থান ধরে রেখেছেন নারীরা।
অথচ কোটাবিরোধী আন্দোলনের সময় বলা হয়েছিল, কোটা তুলে দিলে চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে নারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। প্রশাসনে নারীর অংশগ্রহণের গ্রাফ নিম্নমুখী হবে। আসলে তা হয়নি। কোটা তুলে দেওয়ার পরও তারা প্রায় সমানতালে এগিয়ে চলছেন।
৪০তম বিসিএস দিয়ে চাকরিতে ঢুকে বর্তমানে ঢাকা বিভাগে কর্মরত একজন নারী কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, যে বয়সে ছেলেরা চাকরির জন্য প্রতিযোগিতা করে সেই বয়সে অধিকাংশ নারীকেই বিবাহিত জীবনে প্রবেশ করতে হয়। সংসার করে, সন্তান লালনপালন করে নারীরা ভালো প্রস্তুতি নিতে পারে না। ফলে অনেক মেধাবী নারী প্রতিযোগিতায় উতরে যেতে পারেন না। অনেক নারী পারিবারিক কারণে বিয়ের পর চাকরির আবেদনই করেন না। বিয়ের পর পরীক্ষায় অংশ নিতে বাধা আসে। এসব কাটিয়ে উঠে চাকরিতে প্রবেশ করা কঠিন। আর বিসিএসের চাকরি মানেই বদলিযোগ্য। সংসার-সন্তান রেখে বদলিকৃত পদে যোগ দেওয়া কঠিন বিষয়। সবকিছু মিলিয়ে নারীদের জন্য এ চাকরি সহজ নয়। একজন পুরুষ বেকার নারী বিয়ে করে, কিন্তু একজন নারী বেকার পুরুষ বিয়ে করে না। এ বিষয়টাও ছেলেদের প্রস্তুত হতে সাহায্য করে। এ বাস্তবতা থেকেও পুরুষ প্রতিযোগী বেশি হয়। অন্যদিকে যোগ্য হলেও অনেক নারী প্রতিযোগিতাই করে না।
একজন নারী ইউএনও বলেন, পরীক্ষার হলে বা মৌখিক পরীক্ষার সময় অনেক নারীকে দুগ্ধপোষ্য সন্তানকে সঙ্গে আনতে হয়। এগুলোও অনেক সময় নারীকে চাকরির ক্ষেত্রে নিরুৎসাহিত করে। ঘরে ঘরে বাধা পায় নারীর অগ্রযাত্রার নানা চেষ্টা। নগর-জীবনে নারীর অস্তিত্ব অনেকটা স্বচ্ছন্দের। কিন্তু নগরসভ্যতার বাইরে বিশাল বিস্তৃত গ্রামীণ জনজীবনে পুরুষতন্ত্রের নানা ধরনের অনাকাক্সিক্ষত বেষ্টনী এখনো নারীকে ধরাশায়ী করে রাখে। হাজার হাজার বছর ধরে পৃথিবীর পথ হাঁটছে নারী-পুরুষ। তবু তাদের মধ্যে ভারসাম্য নেই।
কোটা না থাকার পরও নারীরা তাদের অবস্থান কীভাবে ধরে রাখলেন জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. সৈয়দ শাইখ ইমতিয়াজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নারী শিক্ষায় বাংলাদেশের অর্জন বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত। প্রাথমিকের পর মাধ্যমিকেও মেয়েরা অনেক এগিয়েছে। উচ্চশিক্ষায়ও মেয়েদের অংশগ্রহণের হার বেড়েছে। সবকিছু মিলে বিসিএসে এর প্রতিফল ঘটেছে। যে পরিমাণ মেয়ে উচ্চশিক্ষা নিচ্ছে, সেই তুলনায় চাকরিতে প্রবেশের হার বেশি। উচ্চশিক্ষায় যায় হয়তো ৮০ ভাগ ছেলে। আর মেয়েদের মধ্যে উচ্চশিক্ষায় যাওয়ার হার ৩০ বা ৩৫ শতাংশ। তাদের মধ্যে ২৬ বা ২৭ শতাংশ মেয়ে বিসিএস দিয়ে চাকরি পাচ্ছে। এদিক দিয়ে চিন্তা করলে মেয়েরা অনেক ভালো করছে।’
এক প্রশ্নের জবাব ড. ইমতিয়াজ বলেন, ‘মেয়েদের কাছে শিক্ষা এখনো অপরচুনিটি (সুযোগ) আর ছেলেদের কাছে অধিকার। মেয়েরা যখন এ সুযোগটা পায় অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তা কাজে লাগাতে চায়।’ তিনি আরও বলেন, ‘পরিবারের ছেলেসন্তানের জন্য যে বিনিয়োগ, মেয়েসন্তানের জন্য এখনো তার চেয়ে অনেক কম। এখনো মনে করা হয় মেয়ে তো অন্যের ঘরে চলে যাবে। অথচ মজার বিষয় হচ্ছে, পরিবারের দায়িত্ব উচ্চশিক্ষিত ছেলের তুলনায় উচ্চশিক্ষিত মেয়ে অনেক বেশি বহন করে। এসব প্রতিবন্ধকতা হাজার বছরে তৈরি হয়েছে। এগুলো দূর হতে আরও সময় লাগবে।’
অন্যান্য কোটার মতো প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে নারীদের জন্য ১০ শতাংশ কোটা ছিল। নারীরা যোগ্যতা অনুযায়ী মেধা কোটায়ও নিয়োগ পেতেন। তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির চাকরিতে মেধাভিত্তিক জেলা কোটার পাশাপাশি ১৫ শতাংশ নারী কোটা রয়েছে এখনো। প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে মেধাভিত্তিক জেলা কোটার পাশাপাশি ৬০ শতাংশ নারী কোটা সংরক্ষিত রেখে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। এভাবে নারীরা সরকারি চাকরিতে পুরুষ প্রার্থীর সঙ্গে মেধা কোটায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে নিয়োগ লাভের পাশাপাশি সংরক্ষিত কোটায়ও নিয়োগ লাভের সুবিধা পেয়ে থাকেন।
শিক্ষার বিভিন্ন স্তরে ছাত্রীর হার বাড়ছে। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে এক দশকের বেশি সময় ধরে ছাত্রের চেয়ে ছাত্রীর হার বেশি। কলেজ পর্যায়ে ছাত্র ও ছাত্রীর হার প্রায় সমান। বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রীর হার ৩৬ শতাংশের বেশি।
বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে ২০১৮ সালে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির চাকরিতে কোটা পদ্ধতি বাতিল করে সরকার। ৪০তম সাধারণ বিসিএস হচ্ছে কোটামুক্ত প্রথম বিসিএস। ধাপে ধাপে বাছাই করে গত বছর ৩০ মার্চ এই বিসিএসের চূড়ান্ত সুপারিশ করে বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি)। প্রায় ১৩ মাস পর গত মাসে সেই সুপারিশের বিশ্লেষণ প্রকাশ করেছে পিএসসি। সেখানে বলা হয়েছে, ৪০তম বিসিএসে মোট ২৬ দশমিক ০৩ শতাংশ নারী চূড়ান্তভাবে সুপারিশ পেয়েছেন। যা কোটাযুক্ত ৩৮তম বিসিএসে ২৬ দশমিক ৯১ ও ৩৭তমে ২৪ দশমিক ৬০ শতাংশ ছিল। গত ১ নভেম্বর এ বিসিএসের কর্মকর্তারা চাকরিতে যোগ দিয়েছেন।
পিএসসির একজন সাবেক চেয়ারম্যান বলেছেন, কোটামুক্ত একটি সাধারণ বিসিএসে ২৬ দশমিক ০৩ শতাংশ নারী চূড়ান্তভাবে সুপারিশ পেয়েছেন এটা প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় নারীদের শক্ত সক্ষমতা প্রকাশ করে। কারণ এর আগে কোটাযুক্ত ৩৮তম বিসিএসের তুলনায় মাত্র দশমিক ৮৮ শতাংশ কম। অর্থাৎ কোটা তুলে দেওয়ার পরও নারীরা ১ শতাংশও পিছিয়ে পড়েননি। আরেকটি বিষয় লক্ষণীয় যে, প্রত্যেক বিসিএসে নারীদের আবেদনের হার অর্থাৎ প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের হার পুরুষের তুলনায় কম অর্থাৎ গড় হার কম। পরীক্ষা কেন্দ্রগুলোতেও নারী প্রার্থীদের পুরুষের তুলনায় অনেক কম চোখে পড়ে। এমনকি কোনো কোনো কক্ষে নারী প্রার্থী থাকেই না। একই সঙ্গে প্রতিযোগিতায় ধাপগুলো অতিক্রম করার ক্ষেত্রে নারীদের অনুত্তীর্ণ হওয়ার পরিমাণ বেশি থাকে। ৪০তম বিসিএসে যোগ্য আবেদনকারী নারী ছিলেন ৩৮ দশমিক ৩৮ শতাংশ। তাদের মধ্যে ১৯ দশমিক ১৯ শতাংশ নারী প্রিলিমিনারিতে উত্তীর্ণ হন। অথচ পুরুষদের ক্ষেত্রে ভিন্ন চিত্র। যোগ্য আবেদনকারী পুরুষ ছিলেন ৬১ দশমিক ৬২ শতাংশ। প্রিলিমিনারিতে উত্তীর্ণ পুরুষের হার ৮০ দশমিক ৮১ শতাংশ।
৪০তম বিসিএসের সাধারণ ক্যাডারে ২১ দশমিক ০৮ শতাংশ নারী সুপারিশ পেয়েছেন। এই হার ৩৮ ও ৩৭তম বিসিএসে ছিল যথাক্রমে ২৪ দশমিক ১৪ ও ২৩ দশমিক ৯ শতাংশ।
৪০তম বিসিএসের কারিগরি ক্যাডারে ২৭ দশমিক ৭৫ শতাংশ নারী সুপারিশ পেয়েছেন। এই হার ৩৮ ও ৩৭তম বিসিএসে ছিল যথাক্রমে ২৯ দশমিক ৫৩ ও ২৫ দশমিক ২ শতাংশ।
সাধারণ এবং কারিগরি ক্যাডারে নারীরা পিছিয়ে পড়লেও শিক্ষার মতো পেশাগত ক্যাডারে এগিয়েছেন। ৪০তম বিসিএসে ২৮ দশমিক ৩৪ শতাংশ নারী সুপারিশ পেয়েছেন। যা ৩৮তমে ২৬ দশমিক ৩০ এবং ৩৭তমে ২৫ দশমিক ২ শতাংশ ছিল।
পুরোপুরি মেধার ভিত্তিতে নেওয়া ৪০তম বিসিএসে প্রশাসন ক্যাডারেও নারীরা পিছিয়েছেন। জেলা কোটাও না থাকায় নাটোর, ভোলা, বান্দরবান ও খাগড়াছড়ি থেকে প্রশাসন ক্যাডারে কেউ সুপারিশ পাননি।
গত বছর প্রকাশিত জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সরকারি চাকরিজীবীদের তথ্যসংক্রান্ত ‘স্ট্যাটিসটিকস অব সিভিল অফিসার্স অ্যান্ড স্টাফস’ প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, সিভিল প্রশাসনের ১৪ লাখ সরকারি কর্মচারীর মধ্যে ২৬ শতাংশ নারী। সরকারি দপ্তরের মধ্যে বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে কাজ করেন সবচেয়ে কমসংখ্যক নারী। মন্ত্রণালয়ের মোট জনবলের ১৯, অধিদপ্তরের ৩১, বিভাগীয় কমিশনার ও ডেপুটি কমিশনারের কার্যালয়ের ১২ এবং আধাসরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের ১২ শতাংশ কর্মী নারী।