
ঘাড়ের কাছে নিঃশ্বাস ফেলছে ডেডলাইন। ঠিক এ সময় বেঁকে বসল কম্পিউটার বা ল্যাপটপ। হঠাৎ করেই স্লো হয়ে গেল ব্রাউজার। এমন সমস্যার মুখোমুখি বোধহয় আমরা সবাই কমবেশি হয়ে থাকি।
আসলে সারা দিন বিভিন্ন সাইটে ঘুরে বেড়ানো, হাজার রকম তথ্যের ভিড়, পাসওয়ার্ড মনে রাখার ঝক্কি সামলাতে সামলাতে ক্লান্ত হয়ে পড়ে আমাদের কম্পিউটার বা ল্যাপটপের ব্রাউজারগুলোও। আমরা যে সাইটেই ঢুকি না কেন, বহু তথ্য, ডেটা এবং কুকিজ সব সময় ডাউনলোড হতে থাকে। তা ডাউনলোড ফোল্ডারে জমা হয় না বটে। তবে ব্রাউজারের ইন্টারনাল স্টোরেজকে ভর্তি করতে থাকে সেসব ডেটা। যাকে অনেক সময় ঈধপযব-ও বলে থাকি আমরা। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এই ঈধপযব, কুকি ও ব্রাউজিং হিস্ট্রি পরিষ্কার করাই একমাত্র উপায় ব্রাউজারকে ফাস্ট রাখার। অর্থাৎ সময়ে সময়ে ব্রাউজারের ঘাড় থেকে তথ্যের বোঝা খানিকটা কমিয়ে না নিলে, তার গতি বজায় রাখা বেশ কঠিন। প্রত্যেক ব্রাউজারেই থাকে ঈধপযব, কুকি ও ব্রাউজিং হিস্ট্রি পরিষ্কার করার জায়গা। আর ক্লিনিং কিন্তু আমাদের ল্যাপটপ বা ডেস্কটপের স্টোরেজকেও খানিকটা বুস্ট করেএমনটাই জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞেরা।
বহু সাইটেই ঢোকার আগে তাদের পড়ড়শরব পাঠানোর অনুমতি দিতে হয়। এজন্য একটি পপ আপ বার্তা ফুটে ওঠে স্ক্রিনজুড়ে। আর সেই অনুমতি দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই আমাদের ব্রাউজারের ইন্টারনাল স্টোরেজে জমা হতে শুরু করে ওয়েবসাইটের বিভিন্ন ডেটা, যা পরবর্তীকালে ওই ওয়েবসাইটে আপনার চলাচলকে সহজ করে, কিন্তু ভারী করে তোলে আপনার ব্রাউজারের স্টোরেজকে। নির্দিষ্ট পেজের ইমেজ ফাইলসহ বেশ কিছু তথ্য মনে রেখে সেসব জমা করে রাখে ব্রাউজারের পধপযব। কোন কোন ব্রাউজারে সারা দিন ঘুরলেন, সেসব তথ্যের জন্যও খরচ হয় বেশ খানিকটা করে ইন্টারনাল স্টোরেজ। ক্রমেই এসব জমতে জমতেই সেøা হয়ে যায় আমাদের ল্যাপটপ।
গুজরাটের এক ধনী হীরা ব্যবসায়ীর মেয়ে দেবাংশী সাঙ্ঘভি। যে বয়সে ছোট্ট দেবাংশীর পুতুল খেলার কথা, সে বয়সেই বাবার বিশাল হীরা ব্যবসার উত্তরাধিকার ছেড়ে সন্ন্যাসব্রত বেছে নেন। সাদা থান পরে ভিক্ষার পাত্র হাতে খালি পায়ে ঘুরছেন দ্বারে দ্বারে। লিখেছেন নাসরিন শওকত
জৈন ধর্ম
বিশ্বের প্রাচীনতম ধর্মের একটি জৈন ধর্ম। জৈন ধর্মাবলম্বীরা জিন অর্থাৎ ‘বিজয়ী’দের অনুসারী, যাদের আধ্যাত্মিক লক্ষ্য হলো পুনর্জন্মের অন্তহীন চক্র থেকে মুক্ত হওয়া এবং ‘মোক্ষ’ লাভের মাধ্যমে সর্বজ্ঞ অবস্থা অর্জন করা। যা অহিংস জীবনযাপনের মাধ্যমে অর্জন করা সম্ভব। এই ধর্মের অনুসারীরা কঠোর ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলেন। আত্মশুদ্ধি, ধ্যান, অহিংসা, কঠোরভাবে নিরামিষ খাবার খাওয়া এবং ছোট-বড় সব প্রাণীর প্রতি ভালোবাসা প্রর্দশন জৈন ধর্মের আদর্শ।
কমপক্ষে আড়াই হাজার বছর আগে উত্তর ভারতে এই ধর্মের উৎপত্তি হয়। পরবর্তীতে দক্ষিণের দূরবর্তী অঞ্চলগুলোতে ধীরে ধীরে ছড়িয়ে পড়ে। ঐতিহ্য অনুসারে, ২৪ জন তীর্থঙ্কর বা শিক্ষক উত্তরাধিকার সূত্রে এ অঞ্চলে জৈন ধর্মের বিস্তার ঘটান। এদের মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত ও সবশেষ তীর্থঙ্কর ছিলেন বর্ধমানের মহাবীর। যিনি মহামতী বুদ্ধের সমসাময়িক ছিলেন। ভারতে জৈন ধর্ম একটা সময় উল্লেখযোগ্য প্রসার পায়। ফলে বৃহৎ একটি জনগোষ্ঠীর ধর্মীয় চিন্তা ও সংস্কৃতির ওপর প্রভাব বিস্তার করে। পরে ভারতে হিন্দু ধর্ম শক্তিশালী অবস্থান নেয় ও মুসলিম শাসকরা বিজয় লাভ করতে থাকলে ইসলাম ধর্মের প্রসার ঘটে। ফলে অনেক অঞ্চলে এই ধর্মের প্রভাব ধীরে ধীরে কমতে থাকে। পঞ্চম থেকে দ্বাদশ শতাব্দী পর্যন্ত ভারতের পশ্চিম থেকে দক্ষিণে বিস্তার লাভ করা এই ধর্ম এভাবে তার গৌরব হারায়। কিন্তু এখনো ভারতে জৈন ধর্মের প্রভাব রয়েছে। জৈন ধর্মাবলম্বীরা তাদের শিক্ষা, সামাজিক অবস্থান, প্রতিপত্তি ও সম্পত্তির জন্য ভারতের সমাজে যথেষ্ট প্রভাব বিস্তার করে আছে।
সাঙ্ঘভি পরিবার
ভারতের পশ্চিম উপকূলের রাজ্য গুজরাট। কাঠিয়াওয়ার উপদ্বীপের তীরে অবস্থিত রাজ্যটি ভারতের গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য কেন্দ্রও। এ রাজ্যের সবচেয়ে বড় শহর সুরাট। তাপি নদীর তীরবর্তী এই শহরটি এক সময় রেশম বুননের জন্য বিখ্যাত ছিল। সুরাটে বিখ্যাত ও প্রভাবশালী পরিবারগুলোর একটি হলো সাঙ্ঘভি পরিবার। হীরা কোম্পানি ‘সাঙ্ঘভি অ্যান্ড সন্স’ সাঙ্ঘভি পরিবারের পারিবারিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। ১৯৮১ সালে প্রয়াত তারাচাঁদ সাঙ্ঘভি, মোহন সাঙ্ঘভি ও ললিত সাঙ্ঘভি সাঙ্ঘভি পরিবারের এই তিন ভাই মিলে এই কোম্পানিটি প্রতিষ্ঠা করেন, যা বংশপরম্পরায় পরিচালিত হয়ে আসছে। বিশ্বের অন্যতম প্রাচীন হীরা কোম্পানিগুলোর একটি সাঙ্ঘভি অ্যান্ড সন্স। ভারতের হীরার জগতেও রয়েছে যার সুখ্যাতি। হীরা প্রস্তুত ও বিপণনকারী এই সংস্থাটি তিন দশক ধরে হীরা পোলিশ ও সুরাট থেকে হীরা রপ্তানি করে আসছে।
দেবাংশী সাঙ্ঘভি
স্থানীয় বাসিন্দাদের বরাত দিয়ে সংবাদ মাধ্যম বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, এই সাঙ্ঘভি পরিবারের ছেলে ধানেশ সাঙ্ঘভি, গুজরাটের সুরাট শহরের প্রখ্যাত হীরা ব্যবসায়ী। যিনি সাঙ্ঘভি অ্যান্ড সন্স কোম্পানির পরিচালক ও একজন অংশীদার। সাঙ্ঘভি পরিবার জৈন ধর্মের অনুসারী। ধানেশ মোহন সাঙ্ঘভির একমাত্র ছেলে। তার স্ত্রী অমি সাঙ্ঘভি। ধানেশ ও অমি সাঙ্ঘভি দম্পতির দুই মেয়ে। বড় মেয়ে দেবাংশী সঙ্ঘভি। সাঙ্ঘভি পরিবারের বিপুল ঐশ্বর্যের মধ্যেই বেড়ে ওঠার কথা ছিল তার। কিন্তু পুতুল খেলার এই বয়সেই দেবাংশী ‘জৈন সাধ্বী’ (সন্ন্যাসিনী ) হওয়ার জন্য জাগতিক সুখ স্বাচ্ছন্দ্য ও বিলাসী জীবনের সঙ্গে সব সম্পর্ক ছিন্ন করেছে। মাত্র আট বছর বয়সে সে সন্ন্যাসজীবনের পথ বেছে নিয়ে রীতিমতো তাক লাগিয়ে দিয়েছেন সবাইকে। এ বছরের ১৮ জানুয়ারি জৈন সন্ন্যাসিনী হিসেবে ‘দীক্ষা’ নিয়ে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের শিরোনাম হয়ে উঠেছে দেবাংশী। ভারতের ক্রেডিট রেটিং সংস্থা আইসিআরএ-এর তথ্য মতে, দেবাংশীর পারিবারিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ‘সাঙ্ঘভি অ্যান্ড সন্স-এর মোট সম্পদের মূল্য পাঁচ বিলিয়ন রুপি (৬১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার)। প্রাপ্তবয়স্ক হলে সে বাবার এই কোটি কোটি রুপির হীরা ব্যবসার উত্তরাধিকার হতো।
সাধারণ জীবনযাপন
বিবিসি’র এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ভারতের এ পর্যন্ত ৪৫ লাখ জৈন ধর্মাবলম্বী বাস করেন। যাদের মধ্যে অনেকেই ঐতিহ্যবাহী ও ধনী ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের অংশ। এদের মধ্যে সাঙ্ঘভী পরিবারও একটি। গুজরাটের পশ্চিমের শহর সুরাট, যা ‘হীরার শহর’ নামে পরিচিত। এই শহরে জৈন সম্প্রদায়ের মধ্যে দেবাংশীর বাবা-মা ভীষণ ‘ধার্মিক’ হিসেবে পরিচিত। তাই বাবা-মায়ের আকাক্সক্ষা পূরণ করতে সে সন্ন্যাস জীবনের পথকেই বেছে নিয়েছে। আর তাকে সন্ন্যাস জীবনের উপযোগী করে গড়ে তুলতে বাবা ধানেশ ও মা অমি সব সময় থেকেছেন পাশে।
সুরাটের অন্যতম ধনী পরিবারের সন্তান হয়েও দেবাংশী একেবারে শৈশব থেকেই যাপন করেছে সাধারণ জীবন। দেবাংশীর পরিবারের সদস্যদের তথ্য মতে, ‘এই ৮ বছরের মধ্যে দেবাংশী কখনোই টেলিভিশন বা সিনেমা দেখেনি। কখনো হোটেল বা রেস্তোরাঁতেও খেতে যায়নি । এমনকি শপিংমল বা কোনো বিয়ের অনুষ্ঠানেও যায়নি কখনো। শৈশব থেকে সে দিনে তিনবার করে প্রার্থনা করে আসছে। এমনকি তার বয়স যখন দুই, তখন থেকে উপবাসও করে আসছে।’ অদ্ভুত শোনালেও, মাত্র ৮ বছর বয়সেই দেবাংশী জৈন ধর্মের ৩৬৭টি দীক্ষা অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছে। এর পরই সে জৈন সাধ্বী হওয়ার পরিকল্পনা করে, যা তাকে জাগতিক জীবনের মোহমায়া ত্যাগ করতে উৎসাহ জোগায়। সাঙ্ঘভি পরিবারের এক ঘনিষ্ঠ বন্ধু নিরব শাহ বলেছেন, দেবাংশী সাঙ্ঘভি পরিবারের বড় মেয়ে। তার চার বছরের ছোট একটি বোন আছে। ‘একেবারে শিশু বয়স থেকেই দেবাংশীর আধ্যাত্মিক জীবনযাপনের প্রতি এক ধরনের ঝোঁক ছিল। সে সময় থেকেই তপস্বীর জীবন পালন করে আসছে। সন্ন্যাসিনী হওয়ার দীক্ষা নেওয়ার আগে সে অন্য সন্ন্যাসীদের সঙ্গে প্রায় ৭শ’ কিলোমিটার পথ পর্যন্ত হেঁটেছে, যার মধ্য দিয়ে সন্ন্যাসজীবনের আত্মত্যাগের উপলব্ধি অর্জনের চেষ্টা করেছে সে।’ ভারতীয় গণমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুসারে, ‘দেবাংশী রীতিমতো ওস্তাদের কাছে তালিম নিয়ে গান শিখেছে। আবার ভরতনাট্যমেও সে পারদর্শী। পাঁচ পাঁচটি ভাষার ওপর দখল রয়েছে তার। যেমনÑ হিন্দি, গুজরাটি, সংস্কৃত, ইংরেজি ও মারোয়ারি।
মহাসমারোহের দীক্ষা গ্রহণ
জৈন ধর্মে চারটি গোত্র আছে। যাদের মধ্যে সবাই শিশু সন্ন্যাসের দীক্ষা নিতে পারে না। এর মধ্যে একটি মাত্র গোত্রেই শিশুদের সন্ন্যাসব্রত নেওয়ার সুযোগ রয়েছে। সেই গোত্রে জন্ম হওয়ায় দেবাংশী শিশু হয়েও সন্ন্যাসিনী হতে পেরেছে। বাকি তিন গোত্র থেকে সন্ন্যাসের দীক্ষা নিতে হলে প্রাপ্তবয়স্ক হতে হয়। জৈন ধর্মের ঐতিহ্য অনুসারে, জৈন সন্ন্যাসী বা সন্ন্যাসিনীদের কঠোর আচার অনুষ্ঠান পালনের মধ্য দিয়ে দীক্ষা অর্জন করতে হয়। দীক্ষা নেওয়ার পর নারী সন্ন্যাসীকে বলা হয় ‘সাধ্বী’ (সন্ন্যাসিনী)। দেবাংশীর সন্ন্যাসব্রত অনুষ্ঠানে জাঁকজমক ও আড়ম্বরের কোনো কমতি ছিল না। টানা চার দিনের ঐতিহ্যবাহী নানা রীতি-রেওয়াজ পালনের মধ্য দিয়ে মহা সমারোহে চলে এ অনুষ্ঠান। এ উপলক্ষে তার পরিবার দীক্ষা নেওয়ার আগের দিন এক মহা-শোভাযাত্রার আয়োজন করে সুরাট শহরে। উট, ঘোড়া, ষাঁড়ের গাড়ি, ঢোলবাদক, পাগড়ি পরা উল্লসিত জৈন ধর্মানুসারীরা সড়কের এই শোভাযাত্রায় অংশ নেয়। নাচ, গান ও ঢাকঢোলের তালে তালে তাদের সঙ্গে কয়েক হাজার দর্শক উপভোগ করে সেদিনের এই দৃশ্য। হাতির পিঠে বিশেষ আসনে বসা ছিল দেবাংশী। তার সঙ্গে ছিল বাবা-মাসহ পরিবারের সদস্যরা। এ সময় চারপাশে থাকা উৎসুক জনতা তাদের গাড়ি লক্ষ্য করে গোলাপ ফুলের পাপড়ি ছিটিয়ে তাকে বরণ করছিল। এ যেন সেলুলয়েডের পর্দায় দেখা পৌরাণিক কোনো চলচ্চিত্রের আধুনিক সংস্করণ।
দেবাংশী দীক্ষা নেয় ১৮ জানুয়ারি। সেদিনও একইরকম আনুষ্ঠানিকতার আয়োজন করা হয়। মোটর শোভাযাত্রায় সুরাটের মন্দিরে বাবা-মায়ের সঙ্গে উপস্থিত হয় দেবাংশী। তাদের পরিবারের ঘনিষ্ঠ সূত্র জানায়, সেদিন সুরাটের ভেসু এলাকায় জৈন সম্প্রদায়ের সাধু আচার্য বিজয় কীর্তিয়াশসুরী ও কয়েকশ’ মানুষের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত হয় তার সন্ন্যাস নেওয়ার পর্ব ‘দীক্ষা’। সে সময় তার পরনে ছিল দামি সিল্ক দিয়ে তৈরি কাপড়। শরীরজুড়ে ছিল পারিবারিক ঐতিহ্যবাহী নানা দামি অলংকার। তার মাথায় ছিল হীরার একটি মুকুট। জৈন রীতির বেশ কিছু প্রথা পালনের মধ্য দিয়ে সন্ন্যাস দীক্ষা নেওয়া শেষ হয়। এবার একেবারে ভিন্নরূপের এক দেবাংশী জৈন সন্ন্যাসিনীদের পাশে এসে দাঁড়ায়। তখন নিরাভরণ দেবাংশীর পরনে ছিল সাদা রঙের একটি শাড়ি। মাথার সব চুল ফেলে দেওয়ায় শাড়ি দিয়ে সে ন্যাড়া মাথা ঢেকে রেখেছে। চলার পথে কীটপতঙ্গের মৃত্যু এড়াতে হাতে একটি ঝাড়ু রাখা তার। এভাবেই দীক্ষা গ্রহণ শেষ হয় তার । এরপর থেকে দেবাংশী থাকছে জৈন ধর্মের সন্ন্যাসীদের আশ্রমে ‘উপাশ্রয়া’য় (মঠ)। সন্ন্যাসজীবন গ্রহণ করায় এখন থেকে দেবাংশী হবে ‘সাধ্বী’ বা দিগন্থপ্রজ্ঞাশ্রীজী’।
দেবাংশীর বাবা ধানেশের ব্যবসায়িক ও পারিবারিক বন্ধু সুরাটের কীর্তি শাহ। ক্ষমতাসীন দল ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) স্থানীয় নেতা কীর্তি শাহ দেবাংশীর সন্ন্যাসজীবন নেওয়া প্রসঙ্গে বলেছেন, ‘সে (দেবাংশী) আর বাড়িতে থাকতে পারবে না, তার মা-বাবা আর এখন আর তার মা-বাবা নন। সে এখন একজন সাধ্বী (সন্ন্যাসিনী)।’ সন্ন্যাসী জীবনের রীতির বর্ণনা দিয়ে কীর্তি শাহ আরও বলেন, ‘জৈন ধর্মের সন্ন্যাসিনীদের কঠোর নিয়ম পালনের মধ্য দিয়ে জীবনযাপন করতে হয়। এখন থেকে সে আর গাড়িতে চড়তে পারবে না। তাকে সব জায়গায় পায়ে হেঁটে যেতে হবে। মেঝেতে একটি সাদা কাপড়ের ওপর শুয়ে ঘুমাতে হবে এবং সূর্যাস্তের পর আর খাবারও খেতে পারবে না।’
সমালোচনা
ভারতে জৈন সম্প্রদায় সন্ন্যাস প্রথাকে নৈতিক সমর্থন দিয়ে থাকে। তবে কঠোর ধর্মীয় রীতির কারণে জৈন ধর্ম মাঝে মাঝেই সমালোচনার মুখে পড়ে। দেবাংশীর বেলায়ও যার ব্যতিক্রম ঘটেনি। তার সন্ন্যাসজীবন নেওয়ার বিষয়টি বেশ বিতর্ক ও সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। সংবাদমাধ্যম বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, ধনী পরিবারের ৮ বছর বয়সী এই শিশুর (দেবাংশীর) সন্ন্যাসজীবন গ্রহণের খবর দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে চারদিকে। তারপর থেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেবাংশীর পরিবার (মা-বাবা) শিশু অধিকার লঙ্ঘন করেছে বলে চলছে তীব্র সমালোচনা। দেবাংশীর দীক্ষাগ্রহণ অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত অতিথিদের একজন ছিলেন কীর্তি শাহ। সেদিন অনুষ্ঠানে যোগ না দেওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করে কীর্তি শাহ বলেছেন, একজন শিশুকে এভাবে সন্ন্যাসে দীক্ষিত করার বিষয়টি তিনি মানতে পারেন না। তার মতে, কোনো ধর্মেই শিশুদের সন্ন্যাস হতে দেওয়া উচিত নয়। বিবিসিকে মুম্বাইয়ে শিশু সুরক্ষা পরামর্শক নিলিমা মেহতা জানান, দেবাংশীকে নিদারুণ কঠিন জীবন পার করতে হবে। জৈন সন্ন্যাসিনীর জীবন ভয়ানক কঠিন। এদিকে ধর্মীয় প-িতরা বলেছেন, জৈন ধর্মের অনুসারীদের মধ্যে সংসারজীবন ত্যাগ করে সন্ন্যাসজীবন বেছে নেওয়া একটি স্বাভাবিক ঘটনা। শেষ কয়েক বছরে সন্ন্যাস নেওয়ার এ হার দ্রুত বাড়তে দেখা যাচ্ছে। তবে দেবাংশীর মতো এমন ধনী পরিবারের শিশুসন্তানের সন্ন্যাসিনী হওয়া বিরল ঘটনা।
অসাবধানতায় আপনার হাত ফসকে কখনো কি মোবাইল ফোন পানিতে পড়েছে? অনেকেরই এ রকমটা হয়ে থাকে। কখনো আবার বিছানার ওপর রাখা পানির গ্লাসটি উল্টে গিয়েছে মোবাইলের ওপর। এমন ঘটনারও সাক্ষী হয়েছেন অনেকে। আর হলে মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়া ছাড়া কিছু করার থাকে না। তবে ফোনটি আইসিইউতে যাওয়ার আগেই চটজলদি ঘরোয়া টোটকায় সারাতে পারেন।
যা করা যাবে না
ড্রায়ার দিয়ে ফোন শুকোনোর চেষ্টা করেন অনেকে। এই ভুল করবেন না। পানি আরও ফোনের মধ্যে ঢুকে যাবে। আর গরম হাওয়ায় ফোনের ক্ষতিও হবে।
ভেজা ফোনটি কখনো চার্জারের পয়েন্টের সঙ্গে যুক্ত করবেন না। এতে ফোন ব্লাস্ট হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
অনেকে আটা কিংবা চালের ড্রামে ফোন ঢুকিয়ে রাখেন, এতে কোনো লাভ হয় না, বরং ফোনে ধুলো ঢুকে ফোন নষ্ট হয়ে যায়।
যা করা যাবে
ফোনে পানি ঢুকলে সবার আগে ফোনের ব্যাটারি, সিম ট্রে ও মেমোরি কার্ড খুলে শুকোতে দিতে হবে। একটা তোয়ালেতে ফোনটি ভালো করে মুড়ে সেটি বাইরে ছায়ায় রাখুন। ভুলেও রোদে রাখবেন না।
পানি ঢোকার সঙ্গে সঙ্গে ফোন সুইচ্ড অফ করে দিন। খুব ভালো হয় যদি সারা রাত ফোনটি বন্ধ করে রাখতে পারেন।
সব থেকে ভালো উপায় হলো, বন্ধ ফোনটি মোজায় ভরে নিয়ে সেই মোজার মধ্যে ভ্যাকিউম ক্লিনারের হাওয়া দিন। এই পন্থা মেনে চললে ভ্যাকিউম ক্লিনার ফোনের সব পানি টেনে নেবে।
টেস্ট ক্রিকেটে সিলেটের পথচলা শুরু হয়েছিল ২০১৮ সালে। অভিজাত সংস্করণে যা ছিল দেশের অষ্টম ভেন্যু। জিম্বাবুয়ের সঙ্গে ম্যাচ দিয়ে সাদা পোশাকের ক্রিকেটে পা রাখে দেশের সবচেয়ে সুন্দর এই স্টেডিয়ামটি। তবে মাঠের অভিষেক ম্যাচেই হেরে যায় বাংলাদেশ। তারপর আর কোনো পাঁচ দিনের খেলা গড়ায়নি এই মাঠে। এ নিয়ে স্থানীয়দের আক্ষেপের শেষ নেই।
অবশেষে অপেক্ষার প্রহর ফুরাচ্ছে। পাঁচ বছর পর আবারও টেস্ট ক্রিকেট অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের পরিচালক ও সিলেট বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল।
ক্রিকবাজের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেছেন, ‘আগামী নভেম্বর-ডিসেম্বরে আমরা নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে দুই ম্যাচের সিরিজের প্রথম টেস্ট আয়োজন করতে পারব বলে আশা করছি। এটি আমাদের জন্য খুব একটি উপলক্ষ হবে। কারণ পাঁচ বছর পর সিলেটের মাঠে টেস্ট ক্রিকেট ফিরবে।’
সম্প্রতি নিউজিল্যান্ড ক্রিকেটের প্রতিনিধি দল সিলেট সফর করেছে। তারা সেখানকার মাঠসহ সব সুযোগ সুবিধা পরিদর্শন করেছেন। পাশাপাশি নিরাপত্তার বিষয়ে স্থানীয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারি বাহিনীর সঙ্গেও বৈঠক করেছেন। সবকিছু দেখে তারা এখানে আরও বেশি ম্যাচ আয়োজনের জন্য উন্মুখ বলে জানিয়েছেন বিসিবির নারী উইংয়ের চেয়ারম্যান নাদেল।
তিনি যোগ করেছেন, ‘নিউজিল্যান্ড ক্রিকেটের প্রতিনিধি দল আমাদের সুযোগ-সুবিধা নিয়ে বেশ মুগ্ধ। তাদের প্রতিক্রিয়া দেখে মনে হয়েছে আমরা তাদের সব প্রত্যাশা ও প্রয়োজনীয়তা পূরণ করতে পারব।’
এফটিপি সূচি অনুযায়ী চলতি বছর বাংলাদেশের বিপক্ষে তিন ওয়ানডে ও দুই টেস্ট ম্যাচের সিরিজে খেলার কথা নিউজিল্যান্ডের। তবে সিরিজটি হবে দুই ভাগে। প্রথম ভাগে সেপ্টেম্বরের শেষভাগে বাংলাদেশের সঙ্গে ওয়ানডে খেলবে কিউইরা। এই সিরিজ খেলেই বিশ্বকাপ খেলতে ভারতে যাবে দুই দল।
বিশ্বকাপের পর হবে দুই দলের টেস্ট সিরিজ। নভেম্বরের শেষ দিকে আবারও বাংলাদেশে আসবে কিউইরা। বিসিবি প্রস্তাবিত সূচি অনুযায়ী ২১ নভেম্বর ঢাকায় পা রাখার কথা সফরকারীদের। এরপর একটি প্রস্তুতি ম্যাচও খেলবে দলটি। ২৮ নভেম্বর থেকে ২ ডিসেম্বর হবে বাংলাদেশ ও নিউজিল্যান্ডের মধ্যকার সিরিজের প্রথম টেস্ট।
প্রথম দুই সেটই গড়িয়েছে টাইব্রেকারে। প্রথমটি নিষ্পত্তি হয়েছে ৮৫ মিনিটে। দ্বিতীয়টিও টাইব্রেকারে। সেটির নিষ্পত্তি ঘণ্টার ওপরে। দুটোতেই জয় নোভাক জকোভিচের। তারপরেরটিও জিতে যান এই সার্বিয়ান। ১৪তম ফ্রেঞ্চ ওপেনের খেলায় স্পেনের আলেজান্দ্রো ফোকিনার সঙ্গে ৩-০ সেটে জয়লাভ করেন তিনি। যে জয়ে মধুর প্রতিশোধ নিয়ে শেষ ষোলো নিশ্চিত করেছেন তিনি।
৩৬ বছর বয়সী এই নাম্বার ওয়ান টেনিস তারকা প্রথম সেটে কিছুটা ছন্দহীন ছিলেন। তবে চ্যাম্পিয়নদের ঘুরে দাঁড়াতে তো সময় বেশি লাগে না। জকোভিচও ঘুরে দাঁড়িয়েছেন। তারপর ফোকিনাকে কোনো সেট জিততে না দিয়েই ম্যাচ শেষ করেন তিনি।
প্রায় ৪ ঘণ্টাব্যাপী চলা এই ম্যাচটিতে এক পেশে জয় হলেও প্রতিটি সেটেই উত্তেজনার পারদ ছড়িয়েছেন দুজন। সমর্থকেরাও বারবার হয়েছেন রোমাঞ্চিত। তবে শেষ পর্যন্ত নোভাক জকোভিচের সমর্থকেরাই হাসি নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন। আগামী সোমবার জকোভিচ শেষ ষোলোর ম্যাচ খেলতে নামবেন। সেখানে প্রতিপক্ষ হিসেবে কার্লোস আলকারাজকে পেতে পারেন তিনি।
স্পোর্টস ম্যানেজমেন্ট কো-স্পোর্টস যতটা না তাদের কর্মগুণে সমাদৃত, তার চেয়ে বেশি আলোচিত নানা নেতিবাচক কারণে। একটা সময় কে-স্পোর্টস ও এর প্রধান নির্বাহী ফাহাদ করিমে আস্থা রেখেছিল বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড। বড় বড় সব চুক্তিও সে সময় হয়েছিল দুই পক্ষের। তবে চুক্তির নানা শর্ত ভঙ্গ করে বিসিবির গুড বুক থেকে কাটা গেছে তাদের নাম।
বিসিবিতে সুবিধা করে উঠতে না পেরে গেল কয়েক বছর ফাহাদ করিম সওয়ার হয়েছেন বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের সভাপতি কাজী সালাউদ্দিনে। বাফুফের এই আলোচিত সভাপতি একটা সময় বড় গলায় ভারতীয় ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ, বিসিবির বিপিএলের কঠোর সমালোচনা করে বলেছিলেন, ফুটবলকে জনপ্রিয় করতে ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগের মতো সস্তা আয়োজনের প্রয়োজন নেই।
অথচ ফাহাদের পাল্লায় পড়ে সেই সালাউদ্দিনই নিজের বলা কথা ভুলে গেছেন। তৎপর হয়েছেন নারী ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ আয়োজনে। যদিও এমন আয়োজনের জন্য কোনো রকম পূর্বপ্রস্তুতি ছিল না কে-স্পোর্টসের। যার জ্বলন্ত উদাহরণ ফ্র্যাঞ্চাইজি চূড়ান্ত না করেই আসর মাঠে গড়ানোর তারিখ ঘোষণা করা এবং অনুমিতভাবেই ঘোষিত তারিখে খেলা শুরু করতে না পারা।
কে-স্পোর্টসের সিইও ফাহাদ করিমের সঙ্গে সালাউদ্দিনের দহরম মহরম বেশ কয়েক বছর আগে থেকে। সেটা কখনো কখনো ফুটবলের স্বার্থ ছাড়িয়ে চলে যায় ব্যক্তিস্বার্থে। সাফল্যপ্রসবা নারী ফুটবলে বেশি আগ্রহ সালাউদ্দিনের। ক্রীড়া-বেনিয়া ফাহাদও সালাউদ্দিনের নারী ফুটবলের প্রতি বাড়তি অনুরাগটা ধরে ফেলে ২০১৯ সালে বাফুফেতে প্রবেশ করেন ঢাকায় অনূর্ধ্ব-১৯ আন্তর্জাতিক নারী টুর্নামেন্ট আয়োজনের মধ্য দিয়ে।
এর পরের বছর টিভি সম্প্রচারস্বত্ব পাইয়ে দিতে বাফুফের সঙ্গে তিন বছরের বড় অঙ্কের চুক্তি করে কে-স্পোর্টস। চুক্তি অনুযায়ী বাফুফেকে ফি-বছর আড়াই কোটি টাকা করে দেওয়ার কথা কে-স্পোর্টসের। সেই অর্থ বুঝে না পেয়ে সম্প্রতি ফাহাদ করিমকে চিঠি দেয় বাফুফে।
বিষয়টি সমাধান না হলে নারী ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ নিয়ে চুক্তি না করার ইঙ্গিতও দেওয়া হয়েছিল চিঠিতে। তবে এই চিঠি দেওয়া যে শুধুই আনুষ্ঠানিকতার, তা সালাউদ্দিন-ফাহাদ করিমের হাবভাবেই বোঝা যায়। চুক্তির বিষয়টাকে এক পাশে রেখে আসলে তাদের বড় দুর্ভাবনা নারী ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ।
পাঁচ তারকা হোটেলে সাবিনা খাতুন, কৃষ্ণা রানীদের নিয়ে দেশ-বিদেশ থেকে নামীদামি নায়ক-নায়িকা-মডেল ভাড়া করে এনে ফাহাদ করিম এর মধ্যেই আসরের লোগো, ট্রফি ও বল উন্মোচন করেছেন একাধিক অনুষ্ঠানে। ১ মে হওয়ার কথা ছিল আসরের প্লেয়ার্স ড্রাফটস। সেদিন ড্রাফটসের জায়গায় হয়েছে ট্রফি ও বল উন্মোচন অনুষ্ঠান। কে-স্পোর্টস যে ফ্র্যাঞ্চাইজিও চূড়ান্ত করতে পারেনি, প্লেয়ার ড্রাফটসটা হবেই বা কাদের নিয়ে?
এই অবস্থা এখনো চলমান। ১৫ মে শুরু হওয়ার কথা ছিল খেলা। সেই তারিখও ভেস্তে গেছে। আসলে অনিয়ম-জালিয়াতির আখড়ায় রূপ নেওয়া বাফুফের প্রতি আস্থা হারিয়েছে করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো। যেচে কেউই চায় না ফাহাদ-সালাউদ্দিনের দেওয়া টোপ গিলতে। এমনকি ফুটবলের সঙ্গে গভীর সম্পর্ক আছে এমন কোম্পানিগুলোও মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে।
শুরুতে এ আসরটি ছয় দল নিয়ে আয়োজনের ঘোষণা দিয়েছিল কে-স্পোর্টস। পরে ফ্র্যাঞ্চাইজিদের কাছ থেকে প্রত্যাশিত সাড়া না পেয়ে দলসংখ্যা নামিয়ে আনা হয় চারে। জানা গেছে, বাফুফেকে পৃষ্ঠপোষকতা করা বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানে বারবার গিয়েও খেলতে রাজি করাতে পারেননি ফাহাদ। অথচ তারপরও এই ফাহাদে সালাউদ্দিনের আস্থা টলেনি।
সম্প্রতি সালাউদ্দিন, বাফুফের সিনিয়র সহসভাপতি সালাম মুর্শেদী ও বাফুফের নারী কমিটির প্রধান মাহফুজা আক্তারের সঙ্গে দীর্ঘ সভা করেন। বৈঠক শেষে বাফুফে ভবন ছাড়ার সময় ফাহাদ করিম যা বলেছিলেন, তাতে পরিষ্কার নারী ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগের কোনো অগ্রগতিই হয়নি।
দেশ রূপান্তরকে ফাহাদ বলেছেন, ‘দুটি ফ্র্যাঞ্চাইজি চূড়ান্ত হয়েছে। বাকিগুলো শিগগিরই হয়ে যাবে। বড় কোনো অগ্রগতি হলে আমি সবাইকে ডেকে জানাব।’
গত সোমবার বাফুফের জরুরি সভা শেষে কাজী সালাউদ্দিন নতুন করে লিগ শুরুর তারিখ ঘোষণা করেন। পরে গণমাধ্যমকে তিনি বলেন, ‘ওমেন্স ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ ১০ জুন থেকে শুরু হবে। ১২ দিনে হবে ১৩ টি ম্যাচ। এটা এখন বলা দরকার যে, ফিফা উইন্ডোতে লিগ করছি। যেন বিদেশি খেলোয়াড় আসতে পারে। না হলে আসতে পারবে না।’
নতুন তারিখ ঘোষণা করেছেন ঠিকই। তবে আদৌ নির্ধারিত তারিখে খেলা হবে কি না, তা নিয়ে রয়েছে যথেষ্ট শঙ্কা।
গত বছর নেপালে সাফ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর থেকেই মাঠে ফেরার দিন গুনছেন বাংলাদেশ নারী ফুটবল দলের খেলোয়াড়রা। সাফ জয়ের পর সালাউদ্দিন শুনিয়েছিলেন গালভরা বুলি। সাবিনাদের নিয়মিত খেলার ব্যবস্থা করবেন। অথচ লিগের কিছু ম্যাচ ছাড়া আর খেলারই সুযোগ আসেনি। অথচ অর্থ সংকটের খোঁড়া অজুহাত দেখিয়ে বাফুফে মেয়েদের মিয়ানমারে পাঠায়নি অলিম্পিক বাছাই খেলতে।
ফিফা উইন্ডোতেও বাফুফে পারেনি দলের জন্য প্রতিপক্ষ জোগাতে। পাঁচ তারকা হোটেলের চোখ ঝলসানো মায়াবী আলো আর সুরের মূর্ছনায় ফাহাদ করিম আয়োজন করেছিলেন লোগো, ট্রফি উন্মোচন অনুষ্ঠান। সেখানে গিয়ে সাবিনারাও দেখেছিলেন বাড়তি কিছু উপার্জনের রঙিন স্বপ্ন। তবে বাফুফের অদূরদর্শী সভাপতি অপ্রস্তুত এক ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের হাতে ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ আয়োজনের দায়িত্ব তুলে দিয়ে যেন সাবিনাদের স্বপ্নটাকেই আরেকবার গলাটিপে ধরতে চাইছেন।
জার্মানির ফুটবল দলে বায়ার্ন মিউনিখের আধিপত্যটা পুরনো। পেপ গার্দিওলা ক্লাবটির কোচ হওয়ার পর ২০১৪ সালে দেশটি বিশ্বকাপ জিতে। সেসময় দলে ভারি ছিল মিউনিখের এই ক্লাবটি। এই ক্লাবের কোচ ছিলেন হ্যান্সি ফ্লিক। তার অধীনেই সবশেষ চ্যাম্পিয়ন্স লিগ শিরোপা জিতেছে দলটি।
মিউনিখ মিশন শেষে এখন জার্মান জাতীয় ফুটবল দলকে সামলাচ্ছেন ফ্লিক। প্রাক্তন ক্লাবের প্রতি বাড়তি দরদ কাজ করাটা স্বাভাবিক। ক্লাবসহ সমর্থকদেরও প্রত্যাশা তাই থাকে। তবে পেশাদারিত্ব অনেক নিষ্ঠুর যে! আবেগকে নয়, বরং পারফরম্যান্সকে মূল্যায়ন করতে হয়। সেটাই প্রকাশ পেয়েছে ঘোষিত স্কোয়াডে।
আগামী ১২ জুন (সোমবার) প্রীতি ম্যাচ ইউক্রেনের সঙ্গে মুখোমুখি হচ্ছে জার্মানি। সেই ম্যাচের আগে ২৬ সদস্যের দল ঘোষণা করেছেন হ্যান্সি ফ্লিক। সেখানে ফ্লিকের প্রাক্তন ক্লাব বায়ার্ন থেকে আছেন মাত্র ৪ জন খেলোয়াড়। ঘোষিত এই দলে নেই থমাস মুলার ও সার্জিও গিনাব্রের নাম। তাছাড়া চোটের কারণে দলে নেই নিয়মিত অধিনায়ক ম্যানুয়েল নয়্যার।
বায়ার্ন থেকে নেওয়া ৪ ফুটবলারও অবশ্য নিয়মিত মুখ। তারা হলেন মিডফিল্ডার জশুয়া কিমিচ, লিওন গোরেটজকা, ফরোয়র্ড লেরয় সানে ও জামাল মুসিয়ালা।
ঘোষিত সেই দলে আছেন-
গোলরক্ষক : বার্ন্ড লেনো, মার্ক-আন্দ্রে টের স্টেগেন, কেভিন ট্র্যাপ। ডিফেন্স : ম্যাথিয়াস জিন্টার, রবিন গোসেনস, বেঞ্জামিন হেনরিকস, থিলো কেহরের, লুকাস ক্লোস্টারম্যান, ডেভিড রাউম, আন্তোনিও রুডিগার, নিকো শ্লোটারবেক, ম্যালিক থিয়াও, মারিয়াস উলফ। মিডফিল্ড/আক্রমণ : জুলিয়ান ব্র্যান্ডট, এমরে ক্যান, নিকলাস ফুলক্রুগ, লিওন গোরেটজকা, ইকাই গুনদোয়ান, কাই হেভার্টেজ, জোনাস হফম্যান, জোশুয়া কিমিচ, জামাল মুসিয়ালা, লেরয় সানে, কেভিন শেড, টিমো ওয়ার্নার, ফ্লোরিয়ান উইর্টজ।
ইউক্রেন মিশন শেষে চলতি মাসে আরও দুটি প্রীতি ম্যাচ খেলবে জার্মানি। বাকি আগামী ১৭ জুন পোল্যান্ডের বিপক্ষে এবং ২১ জুন কলোম্বিয়ার বিপক্ষে খেলতে নামবে জার্মানি।
টানা চার দিন ধরে বাড়ছে তাপমাত্রা। গরমের কারণে বিদ্যুতের চাহিদা বেড়েছে। কিন্তু বিদ্যুতের উৎপাদন সে তুলনায় না বাড়ায় লোডশেডিং ক্রমে বাড়ছে। এ অবস্থার মধ্যে দেশের সবচেয়ে বড় বিদ্যুৎকেন্দ্র পায়রা কয়লার অভাবে এক-দুই দিনের মধ্যে পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। এমনটা হলে লোডশেডিং চরমে পৌঁছানোর আশঙ্কা সংশ্লিষ্টদের।
আগে রাজধানী ঢাকায় লোডশেডিং তেমন না হলেও এখন বিভিন্ন এলাকায় চার-পাঁচবার করে পাঁচ-সাত ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকে না। ঢাকার বাইরের শহরে এবং গ্রামাঞ্চলে ভয়াবহ লোডশেডিং হচ্ছে। কোথাও কোথাও ১২ থেকে ১৫ ঘণ্টা লোডশেডিংয়ের খবর পাওয়া গেছে।
তীব্র গরমে বিদ্যুৎ না থাকায় শিশু ও বয়স্কদের অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়ছে। বিদ্যুতের অভাবে কারখানার উৎপাদন, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে এবং অফিস-আদালতে কাজের ব্যাঘাত হচ্ছে। লোডশেডিংয়ে ব্যাটারিচালিত ভ্যানের চালক ও অটোচালকরা ঠিকমতো চার্জ দিতে না পারায় তাদের আয় কমে গেছে। শিক্ষার্থীদের পড়ালেখায়ও মারাত্মক বিঘ্ন ঘটছে। মোটকথা জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে গেছে। আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, গরম থেকে আপাতত নিস্তার নেই। ৮ বা ৯ জুন বিচ্ছিন্নভাবে বৃষ্টি হতে পারে। অর্থাৎ ৭ জুন পর্যন্ত দেশে তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকার শঙ্কা রয়েছে। আগামী এক মাসের আবহাওয়ার পূর্বাভাস অনুযায়ী, চলতি মাসে স্বাভাবিকের চেয়ে কম বৃষ্টি হতে পারে।
বিদ্যুতের চাহিদা পূরণে বড় ভূমিকা রাখছিল পটুয়াখালীর পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্র। কিন্তু কয়লার অভাবে ১৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতার কেন্দ্রটির দুটি ইউনিটের একটি গত ২৫ মে বন্ধ করা হয়। ৬৬০ মেগাওয়াট ক্ষমতার অন্য ইউনিটটি থেকে ৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদিত হলেও সেটিও এক-দুই দিনের মধ্যে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে কয়লা কেনার অর্থের অভাবে।
বিল বকেয়া থাকায় পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রের কয়লা সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে চীনা কোম্পানি সিএমসি। কয়লা আমদানি বাবদ বর্তমানে পায়রার ২৯ কোটি ৮০ লাখ ডলার বকেয়া আছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, আপাতত ১০০ মিলিয়ন ডলার সংস্থান করা গেলেও কেন্দ্রটির জন্য নতুন করে কয়লা আমদানি করা যাবে। কিন্তু এখন পর্যন্ত ৮৮ মিলিয়ন ডলার পাওয়া গেছে। বাকি অর্থ এ সপ্তাহে পাওয়ার কথা রয়েছে। এরপর কয়লা আমদানির জন্য এলসি ওপেন করা হবে। এলসি খোলার পর কয়লা আসতে অন্তত ২৫ দিন সময় লাগবে। কয়লা এলেও সঙ্গে সঙ্গে বন্ধ কেন্দ্র পুরোদমে চালু করা যাবে না। দ্রুত অর্থ সংস্থান হলেও অন্তত এক মাস এটি বন্ধ থাকবে বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
কর্মকর্তারা বলছেন, সক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও জ্বালানির অভাবে চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যাচ্ছে না। ফলে লোডশেডিং দিতে হচ্ছে। ডলার সংকটে জ্বালানি তেল, এলএনজি ও কয়লা আমদানি কমায় বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোতে চাইলেও উৎপাদন বাড়ানো যাচ্ছে না। সংকট সামলাতে এখন আবহাওয়া পরিস্থিতির উন্নতির অপেক্ষা করছে কর্তৃপক্ষ। তারা আশা করছে, এ সপ্তাহ শেষে গরম অনেকটা কমবে। গরম কমলে বিদ্যুতের চাহিদাও কমবে।
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ মনে করেন, বৈশ্বিক কারণে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত চ্যালেঞ্জের মধ্যে পড়েছে। তিনি বলেন, ‘সঞ্চালন ও বিতরণ ব্যবস্থা পরিকল্পনা মাফিক চললেও প্রাথমিক জ্বালানির সরবরাহের ধারাবাহিকতা চ্যালেঞ্জে পড়েছে। কভিড ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব বিশ্বের সব দেশের মতো বাংলাদেশেও পড়েছে। তবে দেশে কয়লা নিয়ে যে সংকট চলছে সেটা থাকবে না। আমরা চেষ্টা করছি; সে সঙ্গে আশা করছি দ্রুত পরিস্থিতির উন্নতি হবে। বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রের যে বকেয়া রয়েছে তা তারা পাবে। তবে একটু ধৈর্য ধরতে হবে।’
জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. এম শামসুল আলম বলেন, ‘আজকের এ পরিস্থিতির জন্য বৈশ্বিক পরিস্থিতির চেয়ে সরকার বেশি দায়ী। ভুলনীতির কারণে প্রাথমিক জ্বালানির সংস্থান না করে সরকার বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা বাড়িয়ে চলেছে। অপ্রয়োজনীয় ব্যয় বাড়ছে। ফলে বিদ্যুতের দাম বেড়েছে দফায় দফায়। অতিরিক্ত দাম দিয়েও মানুষ বিদ্যুৎ পাচ্ছে না। সামনে লোডশেডিং আরও বাড়বে।’
জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. ইজাজ হোসেন বলেন, ‘আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানির দাম এখন অনেক কম। তারপরও জ্বালানি নিয়ে আমাদের দেশে কেন এ দুরবস্থা তা বোধগম্য নয়।’
পিডিবি সূত্রমতে, বর্তমানে চাহিদার বিপরীতে বিদ্যুতের ঘাটতি দেড় থেকে দুই হাজার মেগাওয়াট। তবে বিদ্যুৎ বিভাগ ও বিতরণ কোম্পানিগুলোর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বাস্তবে বিদ্যুতের ঘাটতি প্রায় তিন হাজার মেগাওয়াট।
এখন বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ২৩ হাজার ৩৭০ মেগাওয়াট। জ্বালানির অভাবে গড়ে প্রতিদিন ৪ হাজার ৩০০ মেগাওয়াটের সক্ষমতা ব্যবহার করা যায় না। নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণের জন্য আরও প্রায় দুই হাজার মেগাওয়াটের উৎপাদন বন্ধ রাখতে হয়। মোট বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতার ৪৭ শতাংশ গ্যাসভিত্তিক। পিডিবির হিসাবে গ্যাসভিত্তিক কেন্দ্রগুলোর উৎপাদন ক্ষমতা ১১ হাজার ৩৯ মেগাওয়াট। গড়ে উৎপাদন করা হচ্ছে ৬ হাজার ২২১ মেগাওয়াট। ফার্নেস অয়েল ও ডিজেল থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা ৭ হাজার মেগাওয়াটের বেশি। কিন্তু উৎপাদন করা হচ্ছে দৈনিক ৩ হাজার ৮০৬ মেগাওয়াট। কয়লা থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা ৩ হাজার ৪৪০ মেগাওয়াট। উৎপাদিত হচ্ছে ২ হাজার ২২৬ মেগাওয়াট।
প্রাথমিক জ্বালানিকে সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া না হলে বিদ্যুৎ সংকটের সমাধান হবে না বলে মনে করেন বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের সাবেক সদস্য মো. মকবুল-ই-ইলাহী চৌধুরী।
বিদ্যুৎ উৎপাদন বাবদ বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর ১৮ হাজার কোটি টাকার বিল বকেয়া হয়ে আছে। সরকার এ বকেয়া কমিয়ে না আনলে কয়েকটি কেন্দ্রে উৎপাদন বন্ধ হয়ে যেতে পারে। ইতিমধ্যে কয়েকটিতে উৎপাদন কমেছে।
গ্যাস সরবরাহে ঘাটতি এবং লোডশেডিংয়ের কারণে অধিকাংশ শিল্পে ৩০-৪০ শতাংশ উৎপাদন কমে গেছে বলে জানিয়েছেন শিল্পমালিকরা। ডিজেলচালিত জেনারেটর দিয়ে অনেক কারখানায় উৎপাদন ঠিক রাখতে গিয়ে খরচ বাড়ছে। তারা বলছেন, অনেক সম্ভাবনা থাকলেও কারখানার চাকা ঠিক রাখতে না পারায় ব্যবসা গুটিয়েছেন বা উৎপাদনের পরিমাণ কমাচ্ছেন অনেক উদ্যোক্তা।
ডলার সংকটে পেট্রোবাংলা এলএনজি আমদানির বিল, এলএনজি টার্মিনালের চার্জ এবং বহুজাতিক তেল-গ্যাস কোম্পানির (আইওসি) বিল দিতে পারছে না। সময়মতো বিল দিতে না পারায় জরিমানা গুনতে হচ্ছে রাষ্ট্রীয় সংস্থাটিকে। পেট্রোবাংলার মোট বকেয়া প্রায় ২৫ কোটি ডলার।
একই কারণে আমদানিকৃত জ্বালানির মূল্য পরিশোধ করতে পারছে না বিপিসি। আন্তর্জাতিক কোম্পানিগুলো বাংলাদেশে তেলবাহী কার্গো না পাঠানোর হুমকি দিয়েছে। গত ১১ মে পর্যন্ত বিপিসির কাছে সরবরাহকারী আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানগুলোর পাওনা হয়েছে প্রায় ৩০ কোটি ডলার।
বিপিসি জানিয়েছে, বকেয়া পরিশোধ না করায় ৩০ হাজার টনের একটি ডিজেল কার্গো বাতিল করেছে ভিটল সিঙ্গাপুর। আন্তর্জাতিক তেল সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলো বলেছে, এ মাসে তারা ১৫০ হাজার টন ডিজেল, ৫০ হাজার টন ফার্নেস অয়েল সরবরাহ করবে না। বিপিসি জ্বালানি বিভাগকে জানিয়েছে, এ ধারা অব্যাহত থাকলে জ্বালানি সরবরাহ অব্যাহত রাখা কঠিন হবে। জ্বালানি সরবরাহ ব্যবস্থা ভেঙে পড়তে পারে।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতিতে জোর করে হারানো হয়েছে।
গতকাল রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
এই নিয়ে ঘনিষ্ঠ অনেকের কাছে জানতে চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। ভিন্ন কোনো জটিলতার সৃষ্টি হলে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে গাজীপুরের যেকোনো আসন থেকে মনোনয়ন পাবেন তিনি। সে ক্ষেত্রে গাজীপুর সিটির ভোটে যে সংসদ সদস্য দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে কাজ করার তথ্য মিলবে তাকেই বাদ দেওয়া হবে। এ সিটি ভোটে হারের কারণ জানতে প্রধানমন্ত্রী নিজস্ব একটি সংস্থাকে নির্ভুল তথ্য দিতে নির্দেশ দিয়েছেন।
নির্বাচনকালীন সরকারে মন্ত্রীর দায়িত্বও পেতে পারেন আজমত, ওই সূত্র দাবি করে। সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
নানা অব্যবস্থাপনায় এগোচ্ছে না প্রাথমিক শিক্ষা। প্রায় শতভাগ শিশু ভর্তির আওতায় এসেছে অনেক আগে। এরপর মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতের কাজ অনেকটাই আটকে আছে। খোদ সরকারি সংস্থার গবেষণায় উঠে এসেছে প্রাথমিকে চরম দুরবস্থার কথা। গবেষয়ণা প্রতিবেদন অনুযায়ী, কাক্সিক্ষত মানের চেয়ে শিশুরা অনেক পিছিয়ে আছে। কিছু শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু কাজ করার চেষ্টা করলেও কথায় কথায় তাদের ওপর নেমে আসছে শাস্তির খড়গ। মানের উন্নয়ন না হলেও ঠিকই অধিদপ্তরে বসে ছড়ি ঘোরাচ্ছেন কর্মকর্তারা।
প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের শিখন ঘাটতি নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহায়তায় সম্প্রতি এই গবেষণা করেছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। সেখানে দেখা যায়, করোনা সংক্রমণের আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা গড়ে ইংরেজি বিষয়ে যতটা শিখত, করোনাকালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের ফলে তা সাড়ে ১২ শতাংশ কমে গেছে। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের হার কমেছে প্রায় সাড়ে ১৬ শতাংশ। আর তৃতীয় শ্রেণির বাংলায় কমেছে ১৫ শতাংশের মতো।
গবেষণার তথ্য বলছে, করোনার আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ইংরেজিতে শিখন অর্জনের গড় হার ছিল প্রায় ৪৯ শতাংশ। করোনাকালে বন্ধের প্রভাবে এই হার কমে দাঁড়িয়েছে ৩৬ শতাংশ। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ^পরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের গড় হার ৫১ শতাংশের বেশি, যা আগে ছিল ৬৮ শতাংশের মতো। পঞ্চম শ্রেণির বাংলা, গণিত ও বিজ্ঞানেও ক্ষতি বেড়েছে।
এনসিটিবির সদস্য (প্রাথমিক শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক ড. এ কে এম রিয়াজুল হাসান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রাথমিক শিক্ষার ঘাটতি পূরণে এ ধরনের গবেষণার দরকার ছিল। আন্তর্জাতিক মানদ- বজায় রেখেই তা করা হয়েছে। আমরা এই গবেষণা প্রতিবেদন দু-এক দিনের মধ্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠাব। আমরা অন্তত এক বছরের জন্য রেমিডিয়াল ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেছি। মন্ত্রণালয় সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ নিচ্ছে।’
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, প্রাথমিক শিক্ষা দিন দিন পিছিয়ে পড়লেও সেদিকে তেমন একটা নজর নেই প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের। তারা ব্যস্ত আছে লাখ লাখ শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের বদলি-পদায়ন নিয়ে। কেউ কথা বললেই তার ওপর নেমে আসছে শাস্তি। ফলে শিক্ষকরাও দিন দিন তাদের আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন; কোনো রকমে দিন পার করছেন।
জানা যায়, প্রাথমিক শিক্ষায় উদ্ভাবনী ও অনন্য অবদানের জন্য ২০১৯ সালে সারা দেশের মধ্যে শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষক নির্বাচিত হন রাজবাড়ী জেলার স্বাবলম্বী ইসলামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. শফিকুল ইসলাম। একই বছর রাজধানীর মোহাম্মদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক খায়রুন নাহার লিপি শ্রেষ্ঠ সহকারী শিক্ষিক নির্বাচিত হন। সাধারণত আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী এসব শিক্ষকের হাতে পদক তুলে দেন। শিক্ষকদের পাশাপাশি সেরা শিক্ষার্থীদের পদক দেওয়া হয় একই অনুষ্ঠানে। কিন্তু করোনাকালে তাদের হাতে জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষক পদক তুলে দেওয়া যায়নি। গত ১২ মার্চ রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে তাদের হাতে এ পদক তুলে দেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন। তাই অনুষ্ঠানের কয়েক দিন আগে স্বাভাবিকভাবে তারা দাবি তুলেছিলেন, দেরি হলেও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে তারা পদক নেবেন; যা তাদের সারা জীবনের স্বপ্ন পূরণ করবে। কিন্তু সেটা না হওয়ায় তারা প্রতিমন্ত্রীর হাত থেকে ঠিকই পদক নেন। তবে এর ৬৮ দিনের মাথায় এই শ্রেষ্ঠ শিক্ষকদের প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবি তোলায় চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। একই ঘটনায় জয়পুরহাটের হিন্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. মাহবুবুর রহমানকেও সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। কারণ তার বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী এ পদক নিতে ১১ মার্চ ঢাকা এসেছিল। ওই শিক্ষকও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবিকে সমর্থন করেছিলেন। সাময়িক বরখাস্ত করা হলেও তাদের কাউকে শোকজ করা হয়নি; যা বিধিবহির্ভূত বলছেন শিক্ষকরা।
জানতে চাইলে ঢাকা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. আবদুল আজিজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সাময়িক বরখাস্তের পরবর্তী যে প্রক্রিয়া আছে, সেদিকেই আমরা যাব।’ এর বেশি কিছু তিনি বলতে রাজি হননি। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াতের সঙ্গে এসব ব্যাপারে কথা বলার জন্য গতকাল একাধিকবার চেষ্টা করলেও তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি।
বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক শিক্ষা গবেষণা পরিষদের সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে পদক নেওয়া একজন শিক্ষকের জীবনে সেরা প্রাপ্তি। এ জন্য শিক্ষকদের দাবি থাকতেই পারে, প্রত্যাশা থাকতেই পারে। তবে সবচেয়ে বড় কথা হলো, আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে কাউকে শাস্তি দেওয়া যায় না। শিক্ষকদের যেভাবে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে, তা মোটেও ঠিক হয়নি বলে আমার মনে হয়। এর প্রভাব অন্যান্য শিক্ষকের মধ্যেও পড়বে, এটাই স্বাভাবিক।’
শুধু তা-ই নয়, করোনাকালে বন্ধ থাকা প্রাথমিক শিক্ষা চালু রাখতে কিছু শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু অনলাইন প্ল্যাটফর্ম চালু করেন; যাতে অনলাইন ক্লাস, শিক্ষকদের মধ্যে আলোচনাসহ নানা কাজ করা হয়। এতে প্রতিটি ফেসবুক গ্রুপে লাখ থেকে হাজারো শিক্ষক যুক্ত হয়েছেন। এখনো সেসব গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে। কিন্তু সেই গ্রুপগুলোকেই এখন শায়েস্তা করার হাতিয়ার হিসেবে বেছে নিয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অপব্যবহারের অজুহাত দেখিয়ে অনলাইনে যুক্ত থাকা অনেক শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাকেই দেওয়া হচ্ছে কারণ দর্শানো নোটিস (শোকজ)। সরকার যেখানে শিক্ষকদের ডিজিটালি আপডেট হওয়ার কথা বলছে, সেখানে প্রায় অনেকটাই উল্টো পথে হাঁটছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।
শিক্ষকরা জানান, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে দীর্ঘদিন ধরে আসন গেড়ে বসেছেন কিছু কর্মকর্তা। অনেকেই ৬ থেকে ১২ বছর ধরে একই দপ্তরে চাকরি করছেন। তাদের যে দায়িত্বই থাক না কেন যত লাভজনক কাজ আছে, সেগুলোতেই তারা হাত দিচ্ছেন। যোগ্য কর্মকর্তাকে অধিদপ্তরে আনলে তাদের সরে যেতে হবে, এ জন্য তারা নানাভাবে ঊর্ধ্বতনদের ভুল বুঝিয়ে মাঠপর্যায়ে শাস্তি দিয়ে সবাইকে ভীত করে তুলছেন। এতে পিছিয়ে পড়ছে প্রাথমিক শিক্ষার মান।
প্রায় দুই বছর বন্ধ থাকার পর গত মার্চ-এপ্রিলে অনলাইনে প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলি করা হয়। যদিও নিয়ম ছিল, অনলাইনে নির্দিষ্ট মানদন্ড পূরণ ছাড়া কেউ বদলি হতে পারবেন না। কিন্তু তা মানেনি প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। ঢাকা ও ঢাকার বাইরে নিয়ম ভেঙে কয়েক শো শিক্ষকের বদলির আদেশ জারি করা হয়। আর এই বদলি-পদায়নে বড় অঙ্কের অর্থ লেনদেন হয়েছে বলে দাবি শিক্ষকদের; যা ভাগ-বাটোয়ারা হয়েছে মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের মধ্যে। আবার অনেক জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও থানা শিক্ষা কর্মকর্তাদের বদলিতেও সমন্বয়হীনতা দেখা দিচ্ছে। কাউকে ক্ষোভের বশবর্তী হয়েও অনেক দূরে বদলি করে দেওয়া হচ্ছে। এতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়ন।
জানা যায়, চলতি বছর থেকে প্রথম শ্রেণিতে চালু হয়েছে নতুন শিক্ষাক্রম। আর আগামী বছর থেকে দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণিতে এবং ২০২৫ সাল থেকে চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম চালু হবে। কিন্তু তা পড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নেই অধিদপ্তরের। শিক্ষকদের নামমাত্র প্রশিক্ষণেই দায়িত্ব শেষ করা হয়েছে। আসলে এই শিক্ষাক্রম শিক্ষার্থীরা কতটুকু আত্মস্থ করতে পারছে বা এ জন্য আর কী করা প্রয়োজন, সে ব্যাপারে তেমন নজর নেই।
এ ছাড়া এখনো প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষকরা বেতন পান ১১তম গ্রেডে ও সহকারী শিক্ষকরা পান ১৩তম গ্রেডে। দুই ধরনের প্রায় চার লাখ শিক্ষকই ১০ম গ্রেডে বেতনের দাবি করে আসছেন। এ ছাড়া সহকারী থানা শিক্ষা অফিসার ও সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসারাও দীর্ঘদিন ধরে নবম গ্রেডের দাবি করছেন। আর মাঠে কাজ করা এসব শিক্ষক ও কর্মকর্তার পদোন্নতিও নেই বললেই চলে। কিন্তু এগুলো সমাধানেও তেমন কোনো উদ্যোগ নেই মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের; যা প্রাথমিকের মান উন্নীতের ক্ষেত্রে বড় অন্তরায় বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
প্রবীণ শিক্ষক নেতা মো. সিদ্দিকুর রহমান আরও বলেন, ‘এখনো মফস্বলে বা দুর্গম অঞ্চলের অনেক স্কুলেই এক-দুজন শিক্ষক। অনেক স্কুলে শিক্ষকের পদ তিন-চার বছর ধরে শূন্য। শিক্ষক না থাকলে এর প্রভাব শিক্ষার্থীদের ওপরও পড়ে। এ ছাড়া সরকারি প্রাথমিকে সাধারণত দরিদ্র পরিবারের শিক্ষার্থীরা আসে। তাদের একটু আলাদা যতœ নেওয়া প্রয়োজন। সেগুলোও হচ্ছে না। শিক্ষকরাও তাদের বেতন-ভাতায় সন্তুষ্ট নন। সব মিলিয়ে আমরা প্রাথমিক শিক্ষায় কাক্সিক্ষত মান অর্জন করতে পারছি না।’
ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে গাজীপুর সিটি নির্বাচনে হেরে যাওয়া প্রার্থী আজমত উল্লা খানকে।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে থাইল্যান্ডের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতি জোর করে হারানো হয়েছে।
গত রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন তেমনি যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
দুই দশকেরও বেশি ক্যারিয়ারে অসংখ্য নাটক-টেলিছবি নির্মাণ করেছেন শিহাব শাহীন, উপহার দিয়েছেন হিট প্রোডাকশন। নিজেকে শুধু রোমান্টিক জনরায় আটকে না রেখে কাজ করেছেন বহুমাত্রিক ঘরানায়। নিজেকে প্রমাণ করেছেন সব্যসাচী নির্মাতা হিসেবে। নিজেকে শুধু টেলিভিশনেই আটকে রাখেননি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তিনিও পাল্টেছেন প্লাটফর্ম এবং সেখানেও দেখিয়েছেন নিজের মুন্সিয়ানা।
সর্বশেষ গেল ঈদে তুমুল সাড়া ফেলেছে তার নির্মিত স্পিন অফ সিরিজ ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’। সাফল্যের পর কিছুদিন আগেই অনুষ্ঠিত হয়ে গেল এর সাকসেস পার্টি যেখানে উপস্থিত ছিলেন টিমের কলাকুশলী থেকে শুরু করে অন্যান্য নির্মাতা ও শিল্পীরা। সেই ধারাবাহিকতায় এবার তিনি নিয়ে আসছেন সিরিজটির সিক্যুয়াল। শুধু তাই নয়, একসঙ্গে একাধিক সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে আসছেন জনপ্রিয় নির্মাতা।
শিহাব শাহীন বলেন, ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’ নিয়ে এতটা প্রত্যাশা ছিল না কিন্তু সে সাড়া পেয়েছি তা প্রত্যাশার চেয়েও বেশি। দর্শকরাই কাজটিকে গ্রহণ করেছেন আর তাই এখন এর সিক্যুয়াল নিয়ে আসার পরিকল্পনা করছি। স্পিন অফে দেখিয়েছি অ্যালেন স্বপনের পেছনের গল্প। সিন্ডিকেটে তাকে আমরা দেখিয়েছিলাম ২০২২ সালে, সে ঢাকায় আসার পর এর মাঝের সময়টার গল্পই থাকবে সিক্যুয়ালে। যেটার সংযোগ থাকতে পারে ‘সিন্ডিকেট ২’-তে। ঈদের পরপর এটার শুট করার সম্ভাবনা রয়েছে।
এই সিক্যুয়াল ছাড়াও আরও বেশ কিছু সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে সবকিছু চূড়ান্ত হয়েছে বলেও জানান এ নির্মাতা। তিনি বলেন, মোস্তফা সরয়ার ফারুকির তত্ত্বাবধানে ওটিটি প্লাটফর্ম চরকির ‘মিনিস্ট্রি অফ লাভ’ সিরিজের একটা কনটেন্ট করবো। এখনও কাস্টিং চূড়ান্ত হয়নি। এছাড়া হইচইয়ের একটি সিরিজ ও বিঞ্জের একটি ফিল্ম করা হবে। নাম চূড়ান্ত হয়নি। তবে দুটোতেই জিয়াউল ফারুক অপূর্ব থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
মাঝে শোনা গিয়েছিল, আফরান নিশোকে নিয়ে ‘সিন্ডিকেট ২’ নাকি হবে না, এটা কতটুকু সত্য? এমন প্রশ্নে শিহাব শাহীন বলেন, এটা ভূয়া তথ্য। ডিসেম্বরের শেষ দিকে ‘সিন্ডিকেট ২’ করবো তার আগে সেপ্টেম্বরে শুরু করবো ‘রসু খাঁ’।
জানা গেছে, আগামী সপ্তাহে অস্ট্রেলিয়া পাড়ি জমাচ্ছেন শিহাব শাহীন। দেশে ফিরবেন মাসের শেষ নাগাদ এরপর কাজে নামবেন।
দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী আবাহনী লিমিটেড ও মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের মধ্যকার ফেডারেশন কাপ ফুটবলের ফাইনাল দেখতে কুমিল্লায় উড়ে গেছেন বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন।
কুমিল্লার শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত স্টেডিয়ামে আজ বেলা ৩টা ১৫ মিনিটে শুরু হয়েছে ম্যাচটি। সালাউদ্দিন ম্যাচ শুরুর ঘণ্টা খানেক আগে কুমিল্লায় পৌঁছান।
ঢাকা থেকে সড়ক পথে কুমিল্লায় পাড়ি দিতে মাত্র দুই ঘণ্টা সময় লাগে। তবে সালাউদ্দিন দূরত্বটা পাড়ি দিয়েছেন হেলিকপ্টারে করে। যা আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
টাকার অভাবে কদিন আগে নারী ফুটবলারদের অলিম্পিক বাছাইয়ে পাঠায়নি বাফুফে। অথচ ঢাকা থেকে কুমিল্লায় যেতে বাফুফে সভাপতি বেছে নিলেন হেলিকপ্টার।
হেলিকপ্টারে ঢাকা থেকে কুমিল্লার এই যাত্রায় বাফুফে সভাপতির সঙ্গী হয়েছেন সংস্থার নারী উইংয়ের চেয়ারম্যান মাহফুজা আক্তার কিরণ।