
হোয়াটসঅ্যাপে যোগ হয়েছে মেসেজ ডিলিট করার অপশন। এর ফলে মেসেজ পাঠানোর নির্দিষ্ট সময়ের জন্য সেই মেসেজ ডিলিট করা সম্ভব। ব্যক্তিগত চ্যাট ও গ্রুপ চ্যাটে সবার জন্যই মেসেজ ডিলিট করা সম্ভব। যদিও এমন অনেক সময় আসে যখন মনে হয় ডিলিট হওয়া সেই মেসেজ যদি পড়া যেত।
তবে একবার মেসেজ ডিলিট হলে হোয়াটসঅ্যাপ অফিশিয়াল অ্যাপ থেকে সেই মেসেজ পড়ার কোনো উপায় থাকে না। যদিও থার্ড পার্টি অ্যাপ ব্যবহার করে অ্যান্ড্রয়েড গ্রাহকরা হোয়াটসঅ্যাপে ডিলিট হওয়া মেসেজ পড়তে পারবেন। ডিলিট হওয়া মেসেজ পড়ার জন্য প্রথমে প্লে-স্টোর থেকে ডাউনলোড করুন নোটিসেভ অ্যাপ। এই অ্যাপ ডাউনলোড করে নির্দিষ্ট কিছু ধাপ অনুসরণ করলেই হোয়াটসঅ্যাপের ডিলিট হওয়া মেসেজ পড়া যাবে। শুধু টেক্সট মেসেজ নয়, নোটিসেভ অ্যাপ ব্যবহার করে ডিলিট হওয়া ছবি ও ভিডিও দেখে নেওয়া যাবে। এবার ডিলিট হওয়া হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজ পড়া যাবে কীভাবে তা দেখা নেওয়া যাক।
হোয়াটসঅ্যাপে ডিলিট হওয়া মেসেজ পড়বেন যেভাবে
ধাপ-১ : প্লে-স্টোর থেকে নোটিসেভ অ্যাপ ডাউনলোড করুন। শুধু অ্যান্ড্রয়েড গ্রাহকরাই এই অ্যাপ ব্যবহার করতে পারবেন।
ধাপ-২ : নোটিসেভ ইনস্টল করে লগ ইন করুন।
ধাপ-৩ : লগ ইন করে নোটিসেভ অ্যাপের হোম স্ক্রিন ওপেন করুন।
ধাপ-৪ : এবার হোয়াটসঅ্যাপ আইকন সিলেক্ট করলে আপনি সব ডিলিট হওয়া মেসেজ দেখতে পাবেন।
ধাপ-৫ : নির্দিষ্ট কোনো ব্যক্তির পাঠানো হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজ দেখতে হলে কন্টাক্ট ফিল্টার ব্যবহার করুন।
যদিও বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, এই অ্যাপ ডাউনলোড করলে ফোনের সুরক্ষার বিষয়টির সঙ্গে আপনাকে আপস করতে হতে পারে। কারণ এ ধরনের থার্ড পার্টি অ্যাপ থেকে ফোনে ম্যালওয়্যার প্রবেশ করতে পারে। তাই নিজে ঝুঁকি নিয়ে এই অ্যাপ ব্যবহার করুন।
নব্বই দশকের শেষের দিকে প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফকে সরিয়ে পাকিস্তানের ক্ষমতায় বসেন জেনারেল পারভেজ মোশাররফ। তার আমলে কম রক্তপাত দেখেনি পাকিস্তান। এ কারণে বিদায়ের সময় জাতির কাছে ক্ষমাও চেয়েছিলেন তিনি। লিখেছেন তৃষা বড়ুয়া
জেনারেল পারভেজ মোশাররফ। পাকিস্তানের সাবেক সেনাপ্রধান ও দশম প্রেসিডেন্ট। দীর্ঘদিন রোগে ভুগে ৫ ফেব্রুয়ারি দুবাইয়ে এক হাসপাতালে ৭৯ বছর বয়সে তিনি মারা যান। ২০০১ সালের ২০ জুন পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন মোশাররফ। ছিলেন ২০০৮ সালের ১৮ আগস্ট পর্যন্ত। পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ তার ওপর ক্ষুব্ধ ছিলেন কারণ সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ১৯৯৯ সালে মোশাররফ তাকে ক্ষমতাচ্যুত করেন। নওয়াজ শরিফ ফের ক্ষমতায় আসার পর পাকিস্তানের ওই সামরিক শাসকের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগ ওঠে। পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে মোশাররফের সহকর্মীরা তাকে সাহসী ও স্পষ্টভাষী হিসেবে দেখতেন। তবে এসব গুণের কোনোটিই মোশাররফের দেশ পরিচালনার ক্ষেত্রে দেখা যায়নি। বরং পাকিস্তানের সাবেক এই প্রেসিডেন্টকে বিভেদ সৃষ্টিকারী, সংবিধান পরোয়া না করা এক সামরিক শাসক হিসেবেই ইতিহাস মনে রাখবে, যিনি দক্ষিণ এশিয়ার দেশটিকে তার শাসনামলে কয়েক দশক পেছনে নিয়ে যান।
শৈশব
১৯৪৩ সালের ১১ আগস্ট দিল্লিতে এক উর্দুভাষী পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন মোশাররফ। তার বাবার নাম সৈয়দ মোশাররফ উদ্দিন আর মায়ের নাম বেগম জারিন মোশাররফ। মোশাররফ ও জারিনের তিন ছেলে। পারভেজ মোশাররফ তাদের দ্বিতীয় সন্তান। বড় ছেলে অর্থনীতিবিদ জাভেদ মোশাররফ রোমে থাকেন। তিনি আন্তর্জাতিক আর্থিক সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ফান্ড ফর এগ্রিকালচারাল ডেভেলপমেন্টের পরিচালক ছিলেন। যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী ছোট ছেলে নাভেদ মোশাররফ একজন অ্যানেস্থেসিওলজিস্ট। ছোটবেলায় পারভেজ মোশাররফ দিল্লিতে যে বাড়িতে বড় হন, তার নাম নেহার ওয়ালি হাভেলি। ওই বাড়ির পাশে থাকতেন ঊনবিংশ শতাব্দীতে ভারতের রাজনীতিবিদ, শিক্ষাবিদ ও সংস্কারক স্যার সৈয়দ আহমদের পরিবার। ভারতে মুসলমান জাতীয়বাদের অগ্রদূত এই ব্যক্তিকে দ্বিজাতিতত্ত্বের জনক বলা হয়।
১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্ট ভারত স্বাধীন হয়। সে সময় মোশাররফের বয়স ছিল চার। ১৫ আগস্টের কয়েক দিন আগে তার পরিবার ভারত ছেড়ে পাকিস্তানে চলে যায়। সেখানে তার বাবা সৈয়দ মোশাররফ পাকিস্তান সিভিল সার্ভিসে যোগ দেন। বছরখানেক পর তিনি দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে কাজ করা শুরু করেন। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ১৯৪৯ সালে তাকে তুরস্কে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিলে তিনি সপরিবারে তুরস্কের রাজধানী আঙ্কারায় থাকা শুরু করেন। আঙ্কারায় ছোট্ট পারভেজ মোশাররফ ১৯৫৬ সাল পর্যন্ত ছিলেন। পরের বছর তিনি মা-বাবা ও ভাইদের সঙ্গে করাচিতে ফিরে আসেন। দেশে ফেরার পর তার মা-বাবা তাকে সেন্ট প্যাট্রিকস স্কুলে ভর্তি করান। পরে তিনি লাহোরে ফোরম্যান ক্রিশ্চিয়ান কলেজ ইউনিভার্সিটিতে পড়াশোনা করেন। ছাত্র জীবনে গণিত ছিল মোশাররফের প্রিয় বিষয়। পরে তার অর্থনীতির প্রতি আগ্রহ জন্মায়। ১৮ বছর বয়সে পাকিস্তান মিলিটারি অ্যাকাডেমিতে যোগ দেন মোশাররফ।
কারগিল যুদ্ধ
পাকিস্তানের স্পেশাল সার্ভিস কমান্ডো গ্রুপে সাত বছর ছিলেন মোশাররফ। জেনারেল পদে পদোন্নতির পর ১৯৯৮ সালে দেশটির তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ তাকে সেনাপ্রধান করেন। ১৯৯৯ সালের গ্রীষ্মে ভারত-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর অনুপ্রবেশের চেষ্টার ঘটনায় জেনারেল মোশাররফের হাত ছিল বলে ধারণা করা হয়। ওই অনুপ্রবেশের কারণে কারগিল যুদ্ধের সূচনা হয়। জম্মু ও কাশ্মীরের কারগিল জেলায় ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যকার ওই যুদ্ধ ১৯৯৯ সালের মে মাসে শুরু হয়ে শেষ হয় একই বছরের জুলাইয়ে। যুদ্ধে ৫২৭ জনের মৃত্যু হয় বলে দাবি করে ভারত সরকার। অন্যদিকে পাকিস্তানের তৎকালীন সেনাপ্রধান জেনারেল মোশাররফের দাবি, যুদ্ধে ১ হাজার ৬০০ মানুষের প্রাণহানি হয়। কারগিল : দ্য হাইটস অব ব্রেভারি বইয়ের লেখক, প্রতিরক্ষা ও পররাষ্ট্রনীতিবিষয়ক বিশ্লেষক আজাদ সিং রাঠোর বলেন, ‘ওই সময় সেনাপ্রধান মোশাররফ পাকিস্তান সরকারের কাছে একটি পরিকল্পনা হাজির করে। ভারত-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে উত্তেজনা সৃষ্টি করা গেলে সেখানকার পাকিস্তানপন্থি দলের পাকিস্তানের আরও সমর্থন ও যোদ্ধার দরকার পড়বে। পাকিস্তান সরকার ও জেনারেল মোশাররফ ভেবেছিলেন, ভারত সে ক্ষেত্রে বদলা নিতে পারবে না কারণ তারা জানে পাকিস্তানের পারমাণবিক অস্ত্র আছে।’ নওয়াজ শরিফ ও মোশাররফের এই ভাবনা যে ভুল ছিল, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। যুদ্ধে কোনো কিছু অর্জিত না হওয়ায় উল্টো প্রাণহানিসহ ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতি হওয়ায় ও আন্তর্জাতিক চাপের কারণে একপর্যায়ে নওয়াজ শরিফ তার সেনাদের কাশ্মীরের পাকিস্তান-নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলে ফিরে যাওয়ার নির্দেশ দেন। কারগিল যুদ্ধের পর শরিফ তার সেনাপ্রধান মোশাররফকে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন। বিপদ আসন্ন বুঝতে পেরে রক্তপাতহীন তবে নাটকীয় অভ্যুত্থানের মাধ্যমে শরিফকে গদিচ্যুত করেন মোশাররফ।
নাটকীয় অভ্যুত্থান
প্রশ্ন উঠতে পারে, মোশাররফের উত্থান নাটকীয় কেন? ১৯৯৯ সালের ১২ অক্টোবরের ঘটনা। নওয়াজ শরিফ সেনাপ্রধান মোশাররফকে বরখাস্ত করেন। নতুন সেনাপ্রধান হিসেবে নিয়োগ পান লেফটেন্যান্ট জেনারেল জিয়াউদ্দীন বাট। যে মুহূর্তে এই নিয়োগের ঘোষণা দেওয়া হয়, ঠিক তখন শ্রীলঙ্কার রাজধানী কলম্বো থেকে উড়োজাহাজে করে করাচিতে ফিরছিলেন পারভেজ মোশাররফ। উড়োজাহাজটির ককপিট থেকে করাচি বিমানবন্দরের কন্ট্রোল রুমে দায়িত্বরত ব্যক্তিকে তিনি প্রশ্ন করেন, ‘আপনি কি আমার কুকুরদের নাম বলতে পারবেন? উত্তর আসে, ‘ডট আর বাডি, স্যার।’ উত্তরদাতা ছিলেন করাচির এক আর্মি ডিভিশনের কমান্ডার মেজর জেনারেল মালিক ইফতিখার আলি খান। বলা বাহুল্য, পারভেজকে দেওয়া উত্তর ছিল গোপন পাসওয়ার্ড। মোশাররফকে সরিয়ে নতুন সেনাপ্রধান নিয়োগের সময় নওয়াজ শরিফ পাকিস্তানের বেসামরিক বিমান চলাচল কর্র্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছিলেন, মোশাররফকে বহনকারী উড়োজাহাজটি যেন করাচিতে কোনোভাবে অবতরণ না করে। ওই সময় পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে মোশাররফ সমর্থিত গ্রুপের দায়িত্ব ছিল, যেকোনোভাবে বিমানটির অবতরণ নিশ্চিত করা এবং করাচি বিমানবন্দরের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেওয়া। এসব কাজ গ্রুপটি তার উড়োজাহাজে থাকার সময় করতে পেরেছিল কি না, তা নিশ্চিত হওয়ার জন্য ককপিট থেকে ওই প্রশ্ন ছুড়েছিলেন মোশাররফ। ১২ অক্টোবর একদিকে নওয়াজ শরিফ মোশাররফকে সেনাপ্রধানের দায়িত্ব থেকে অপসারণের আয়োজন করছিলেন, অন্যদিকে তাকে ক্ষমতা থেকে সরানোর আয়োজন প্রায় শেষ করে ফেলেছিল মোশাররফপন্থি গ্রুপ। শেষ পর্যন্ত মোশাররফসহ ১৯৮ যাত্রী নিয়ে করাচি বিমানবন্দরে অবতরণ করে বিমানটি এবং ক্ষমতা থেকে ওইদিনই বিদায় নিতে বাধ্য হন নওয়াজ।
মোশাররফের শাসন
মোশাররফের চুরুট ও বিদেশি হুইস্কির প্রতি আসক্তি এবং মুসলমানদের প্রতি যুক্তিসংগত সংযমের আহ্বান পশ্চিমাদের মুগ্ধ করেছিল। বিশেষ করে নিউ ইয়র্কে ৯/১১ হামলার পর তার প্রতি পশ্চিমা দেশের নেতাদের মুগ্ধতা বেড়ে যায়। ওই হামলা নিয়ে আত্মজীবনীতে মোশাররফ বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র নিশ্চিতভাবেই আহত ভালুকের মতো হিংস্র প্রতিক্রিয়া জানাবে যদি তারা নিশ্চিত হয় ৯/১১ হামলার জন্য আল-কায়েদা দায়ী। আহত ভালুক তখন ক্ষিপ্ত হয়ে আমাদের দিকে তেড়ে আসবে।’ হামলার কয়েক দিন পর যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী কলিন পাওয়েল মোশাররফকে বলেছিলেন, ‘পাকিস্তান চাইলে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে থাকতে পারে অথবা বিপক্ষেও যেতে পারে।’ মোশাররফ আত্মজীবনীতে বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের এক কর্মকর্তা তাকে সে সময় হুমকি দিয়ে বলেছিলেন, যদি পাকিস্তান যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে দাঁড়ায়, তাহলে বোমা মেরে দেশটিকে প্রস্তর যুগে পাঠিয়ে দেওয়া হবে।’ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে নিতান্ত বাধ্য হয়ে সামরিক শাসক জেনারেল পারভেজ মোশাররফ সুসম্পর্ক বজায় রেখেছিলেন, এমনটা ভাবার অবশ্য কোনো কারণ নেই। মার্কিন প্রশাসনের সঙ্গে পাকিস্তানের নিবিড় সম্পর্ক ঐতিহাসিক ও সর্বজনবিদিত।
নারী অধিকারের পক্ষে আইন প্রণয়ন করে ও পাকিস্তানের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো বেসরকারি নিউজ চ্যানেলকে লাইসেন্সের অনুমতি দিয়ে মধ্যপন্থি শাসক হিসেবে পরিচিতি পান মোশাররফ। তার সময়ে পাকিস্তানে বিদেশি বিনিয়োগ আগের চেয়ে বৃদ্ধি পায়। এ ছাড়া ২০০১ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত প্রেসিডেন্ট থাকাকালে প্রতিবেশী দেশ ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার বিষয়ে আগ্রহ দেখান মোশাররফ। ২০০৪ সালে ইসলামাবাদে সার্কের সম্মেলন চলাকালে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারি বাজপেয়ি ও পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট মোশাররফ যৌথ বিবৃতি দেন। ওই বিবৃতিতে উভয় দেশের নেতা কাশ্মীর, সন্ত্রাসবাদসহ আট বিষয়ে আলাপ-আলোচনা শুরু করতে রাজি হয়েছিলেন।
পদত্যাগের কারণ
২০০৮ সালে মোশাররফের ক্ষমতা থেকে বিদায় একটি কারণে হয়নি। কারণ ছিল বহুবিধ। পাকিস্তানের সাবেক প্রধান বিচারপতি ইফতিখার মুহাম্মদ চৌধুরীকে মোশাররফ বরখাস্ত করলে দেশটির আইনজীবীরা ক্ষোভে ফেটে পড়েন। এ ছাড়া ২০০৭ সালের ৩ নভেম্বর তিনি জরুরি অবস্থা জারি করলে তার বিরুদ্ধে দেশ-বিদেশে সমালোচনার ঝড় ওঠে। পাশাপাশি ২০০৮ সালে নির্বাচনের সপ্তাহ কয়েক আগে নির্বাচনী প্রচারণায় পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেনজির ভুট্টো হত্যার পেছনে মোশাররফের হাত ছিল বলে বিভিন্ন মহল থেকে অভিযোগ ওঠে। এসব ঘটনা মোশাররফের পতনের পেছনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করলেও অনেক রাজনৈতিক বিশ্লেষক মনে করেন, ওই সামরিক শাসকের গদিচ্যুতির পেছনে প্রধান কারণ ছিল ২০০৭ সালে ইসলামাবাদের লাল মসজিদে তার নির্দেশে সামরিক অভিযান পরিচালনা। ওই ঘটনা শুধু মোশাররফের গদিই নড়বড়ে করেনি, ইসলামি জঙ্গিবাদের সঙ্গে পাকিস্তান রাষ্ট্রের সম্পর্কেরও পরিবর্তন ঘটায়। লাল মসজিদে অভিযানের কারণেই পাকিস্তানে জঙ্গি সংগঠন তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তান (টিটিপি) বা পাকিস্তানি তালেবানের উত্থান ঘটে।
১৯৬৫ সালে ইসলামাবাদে লাল মসজিদ নির্মাণ করা হয়। শুরু থেকে এটি চরমপন্থি মতাদর্শ প্রচারের ক্ষেত্র হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছিল। মসজিদটির প্রতিষ্ঠাতা মুহাম্মদ আবদুল্লাহ গাজি জিহাদের পক্ষে প্রচারণা চালাতেন। আফগানিস্তান সোভিয়েত ইউনিয়ন দখল করলে ওই মসজিদ থেকে নিয়মিত যোদ্ধা দেশটিতে পাঠানো হতো রেড আর্মির বিরুদ্ধে লড়াই করতে। যুদ্ধের পর লাল মসজিদ চরমপন্থি মতাদর্শ প্রচারের পাশাপাশি আশপাশের মাদ্রাসায় হাজার হাজার শিক্ষার্থীর থাকার ব্যবস্থা করে। ১৯৯৮ সালে গাজি নিহত হলে তার ছেলে আবদুল আজিজ ও আবদুল রশিদ মসজিদটি পরিচালনা করেন। এই দুজনের সঙ্গে ওসামা বিন লাদেনসহ আল-কায়েদার বেশ কয়েকজন নেতার সম্পর্ক ছিল বলে অভিযোগ আছে। ৯/১১ হামলার পর মোশাররফ যুক্তরাষ্ট্রের ওয়ার অন টেররের পক্ষে সমর্থন দিলে লাল মসজিদের নেতা ও শিক্ষার্থীরা প্রকাশ্যে কঠোর নিন্দা জানান। ২০০৭ সালের জুনে পরিস্থিতি ঘোলাটে হয়। ওই সময় লাল মসজিদের ছাত্রছাত্রীরা পতিতালয়ের অভিযোগ তুলে ইসলামাবাদের একটি মাসাজ পার্লারে হামলা চালায় এবং সেখানে কর্মরত নয়জনকে অপহরণ করে। এদের মধ্যে সাতজন চীনের নাগরিক ছিলেন। পরের দিন তাদের ছেড়ে দেওয়া হলেও অপরাধীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে চীন সরকার পাকিস্তানকে চাপ দিতে থাকে। লাল মসজিদের নেতা-শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে কয়েক মাস দ্বিধান্বিত ছিল মোশাররফ সরকার।
অবশেষে ২০০৭ সালের ৩ জুলাই মোশাররফের নির্দেশে ট্যাংক ও গোলা-বারুদ নিয়ে লাল মসজিদ ঘিরে ফেলে পাকিস্তান সেনাবাহিনী। দুই পক্ষের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। তিন দিন পর সেনাবাহিনী মসজিদ প্রাঙ্গণে প্রবেশ করে লস্কর-ই-তৈয়বা, জইশ-ই-মুহাম্মদ, হরকাতুল জিহাদসহ বিভিন্ন সংগঠনের জিনিসপত্রের পাশাপাশি কালাশনিকভ রাইফেল, হ্যান্ড গ্রেনেড, পেট্রোলবোমা ও রকেট লঞ্চার উদ্ধার করে। অভিযানে সেনাবাহিনীর কমান্ডোসহ একশর বেশি মানুষ নিহত হন। ওই ঘটনার পর চরমপন্থিরা মোশাররফের বিপক্ষে অবস্থান নেয়। লাল মসজিদের ঘটনা মোশাররফকে কোণঠাসা করে। ক্ষমতাসীন জোট অভিশংসনের সিদ্ধান্ত নিলে পদত্যাগে বাধ্য হন তিনি। পদত্যাগের ঘোষণার সময় মোশাররফ বলেছিলেন, ‘আশা করি, এক দিন দেশ ও দেশের মানুষ আমার ভুলগুলো মাফ করবেন।’
শজনে ডাঁটা ছাড়া শুক্তো, পাঁচমিশালি তরকারি বা মাছের ঝোল, কোনো তরকারির স্বাদ তেমন খোলতাই হয় না। অনেকেই ডাঁটা খেতে ভালোবাসেন। আবার ছোটরা একেবারেই ডাঁটা চিবোতে চায় না দাঁতে ব্যথা হওয়ার ভয়ে। কিন্তু আবহাওয়া পরিবর্তনের সময়গুলোতে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তুলতে সেই প্রাচীনকাল থেকে শজনে খাওয়ার চল। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, অ্যান্টি পক্স এবং অ্যান্টি ইনফ্লেমেটরি যৌগের জন্য চিকিৎসকরাও এই সবজি বেশি করে খেতে বলেন। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ছাড়াও আর কোন কোন উপকারে লাগে ডাঁটা?
শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ : শর্করা বাড়তে পারে এমন খাবার না খাওয়া এবং শরীরচর্চা ছাড়াও প্রতিদিন খাবার পাতে ডাঁটা রাখলে কিন্তু ডায়াবেটিস রোগীদের রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে।
হজমে সহায়তা : শজনে ডাঁটায় রয়েছে নিয়াসিন, রাইবোফ্ল্যাবিন এবং ভিটামিন-বি-১২-এর মতো গুরুত্বপূর্ণ কিছু যৌগ। শরীরে এই যৌগগুলোর ঘাটতি মেটাতে পারে শজনে ডাঁটা। এ ছাড়াও গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা থাকলে, তা-ও দূর করে।
শ্বাসযন্ত্র ভালো রাখে : এ সময় বাতাসে দূষণের মাত্রা বেড়ে যায়। তাই সর্দি-কাশি, ফুসফুসে নানা সংক্রমণজনিত ব্যাধি বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। নিয়মিত ডাঁটা খেলে এ সমস্যা অনেকটাই কমে।
হাড়ের স্বাস্থ্য ভালো রাখে : একটা বয়সের পর হাড়ের জোর কমে যাওয়া স্বাভাবিক। বাইরে থেকে ক্যালসিয়ামের ওষুধ না খেয়ে পাতে রাখতে পারেন শজনে ডাঁটা। এতে আছে উচ্চমাত্রায় ক্যালসিয়াম, যা হাড়ের ক্ষয় রোধ করতে সাহায্য করে।
কিডনি ভালো রাখে : কিডনি বা মূত্রাশয়ে পাথর জমার সম্ভাবনা অনেকটা কমিয়ে দেয় ডাঁটা। অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের ভরপুর এই সবজি শরীর থেকে টক্সিন দূর করতে সাহায্য করে।
করোনা সংক্রমণের মধ্যে ডেঙ্গু রোগীও বাড়ছে। শিশুরাও ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হচ্ছে। শিশুদের ডেঙ্গুজ্বরে নানা জটিলতা হওয়ার ঝুঁকি আছে। অন্যান্য বছর ডেঙ্গু ভাইরাসের ডেন-১ বা ডেন-২ ধরনের সংক্রমণ দেখা গেছে। কিন্তু এবার এই ভাইরাসের ডেন-৩ ও ডেন-৪ ধরনের সংক্রমণ দেখা যাচ্ছে। এ কারণে জটিলতাও বেশি হচ্ছে। রক্তের প্লাটিলেট দ্রুত কমে যাওয়ার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। আক্রান্ত রোগীদের অনেকেরই যকৃৎ আক্রান্ত হতে দেখা যাচ্ছে, কিডনির কার্যকারিতায়ও বিশৃঙ্খলা দেখা যাচ্ছে। পানি আসছে বুকে ও পেটে এবং মাঝে মাঝে নিউমোনিয়া দেখা যাচ্ছে। কারও কারও ক্ষেত্রে ঘাম, হাত-পা ঠান্ডা হয়ে আসা, রক্তচাপ কমে যাওয়ার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। এবার তাই জ্বর হলেই করোনার পাশাপাশি ডেঙ্গুর কথাও মাথায় রাখতে হবে। বিশেষ করে শিশুদের ক্ষেত্রে অবহেলার কোনো সুযোগ নেই।
পরীক্ষা : যেকোনো জ্বরের রোগীরই ডেঙ্গু অ্যান্টিজেন পরীক্ষা করানো উচিত হবে। তবে জ্বর যদি পাঁচ দিনের বেশি থাকে, তাহলে ডেঙ্গু অ্যান্টিবডি পরীক্ষা করাতে হবে। পরীক্ষায় ডেঙ্গু ধরা পড়লে আনুষঙ্গিক অন্যান্য পরীক্ষা করাতে হবে। এর মধ্যে কমপ্লিট ব্লাড কাউন্ট অন্যতম। এই পরীক্ষায় প্লাটিলেট পরিমাণ সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। পাশাপাশি শিশুর রক্তের গ্রুপ জেনে নিন। ডেঙ্গুর পরীক্ষার পাশাপাশি করোনার পরীক্ষাও করাতে হবে। কারণ, কোনো কোনো রোগীর ক্ষেত্রে এখন দুটি সংক্রমণ একসঙ্গেই হতে দেখা যাচ্ছে।
করণীয় : জ্বর, মাথাব্যথা, শরীর ব্যথা ইত্যাদি হলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। ডেঙ্গু ধরা পড়লে শিশুকে বিশ্রামে রাখুন, প্রচুর পানি বা তরল খেতে দিন। জ্বর থাকলে প্যারাসিটামল সিরাপ বা বড়ি ৪ থেকে ৬ ঘণ্টা পরপর খেতে দিন। ডেঙ্গুতে ২-৩ দিন পর যখন জ্বর কমে যায়, তখনই জটিলতা দেখা দেওয়ার সময়। এ সময় প্রায় প্রতিদিন রক্তের অণুচক্রিকার পরিমাণ দেখা উচিত।
অণুচক্রিকার সংখ্যা কমতে থাকলে শিশু বারবার বমি করলে, খেতে না পারলে, পেটে ব্যথা হলে, শিশুর মধ্যে অতি অস্থিরতা বা নিস্তেজ ভাব দেখা দিলে, মুখ-দাঁত-নাক দিয়ে রক্তপাত হলে কিংবা কালো পায়খানা অথবা কালো রক্তবমি কিংবা রক্তের মতো প্রস্রাব করলে অবশ্যই হাসপাতালে নিন। মুখ-চোখ ফ্যাকাশে মনে হলে, হাত-পা অতিরিক্ত ঠা-া মনে হলে, ৪ থেকে ৬ ঘণ্টার মধ্যে প্রস্রাব না করলে শিশুকে হাসপাতালে ভর্তি করাতে হবে।
প্রতিরোধ : মশার কামড় থেকে বাঁচাতে শিশুদের সাদা বা হালকা রঙের ফুলহাতা পোশাক পরান। হাতে-পায়ে মশানিরোধক মলম লাগাতে পারেন। বাড়িতে নেট ও মশারি ব্যবহার করুন। বাসার আশপাশ ও বারান্দা, টবে যেন পানি জমে না থাকে। নিয়মিত বাসার আশপাশে স্প্রে করুন। মনে রাখতে হবে, সবার সার্বিক প্রচেষ্টা ছাড়া ডেঙ্গু মশার বিস্তার রোধ করা সম্ভব নয়। তাই সচেতনতা তৈরি করা উচিত।
ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈলে জেলেখা বেগম নামে এক বৃদ্ধাকে মৃত দেখিয়ে তার বয়স্ক ভাতার কার্ড বাতিল করা হয়েছে। বিগত ৫ মাস যাবৎ তিনি বয়স্ক ভাতা বঞ্চিত রয়েছেন বলে জানা গেছে। অপরদিকে তার নাম পরিবর্তন করে আমিনা নামে অন্যজনকে বয়স্ক ভাতার কার্ড বরাদ্দ দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় মেম্বার বাদশার বিরুদ্ধে।
রানীশংকৈল উপজেলার নন্দুয়ার ইউনিয়নের সাতঘরিয়া গ্রাম এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, জেলেখা বেগম নন্দুয়ার ইউনিয়নের সাতঘরিয়া গ্রামের আ. রহিমের স্ত্রী। পূর্বের চেয়ারম্যান ওই বৃদ্ধার নামে বয়স্ক ভাতার কার্ড করে দেন।
ভুক্তভোগী বলেন, আমি ভাতার কার্ড পাওয়ার পর থেকে প্রতি তিন মাস অন্তর ১৫০০ টাকা করে পেয়েছিলাম। কিন্তু গত তারিখে আমার টাকার কোনো মেসেজ না আসায় আমি উপজেলা সমাজসেবা অফিসে গিয়ে জানতে পারি আমাকে মৃত দেখিয়ে আমিনা নামে ভাতার কার্ড করে দিয়েছেন মেম্বার বাদশাহ।
ইউনিয়ন পরিষদে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মৃত্যুর নিবন্ধন বইয়ের ২০২১ সালের রেজিস্ট্রারে বৃদ্ধার মৃত্যু নিবন্ধিত নেই। ইউনিয়ন পরিষদ থেকে এমন একটি সনদ দেওয়ায় তার ভাতাটি বন্ধ করে দেওয়া হয়।
তিনি এ বিষয়ে আরও বলেন, আমি জীবিত থাকার পরও মেম্বার বাদশাহ আমাকে মৃত দেখিয়ে আরেকজনের নামে কিভাবে টাকা খেয়ে ভাতার টাকা পরিবর্তন করে দেয়! আমি জীবিত থাকার পরও মেম্বার আমাকে মৃত দেখাল। আমি গরিব মানুষ। আমার কোনো ছেলেমেয়ে নাই। এই টাকা দিয়ে ওষুধ খেয়ে বেঁচে আছি। আমি এর বিচার চাই।
মেম্বার বাদশাহ বলেন, প্রথমবারের মতো এমন ভুল করেছি। সামনের দিকে সর্তকতার সাথে কাজ করব।
নন্দুয়ার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল বারী বলেন, জীবিত মানুষ মৃত দেখিয়ে ভাতার কার্ড পরিবর্তনের বিষয়ে আমি কিছু জানি না। তবে মেম্বার যদি করে থাকেন তাহলে খুবই খারাপ করেছেন।
উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা আব্দুর রহিম বলেন, ইউপি চেয়ারম্যানের স্বাক্ষরিত একটি প্রত্যয়নপত্রের ভিত্তিতে জানতে পারি, জেলেখা বেগম ৭ ডিসেম্বর ২০২১ এ মৃত্যু বরণ করেন। তাই ভাতাটি বন্ধ করা হয়েছে। কিন্তু ওয়েবসাইটে মৃত্যু সনদ যাচাই ছাড়া সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তর কাউকে মৃত দেখাতে পারবে না- সাংবাদিকের এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আমাদের এভাবেই হয়। আমরা এভাবেই করে থাকি, প্রত্যায়নপত্র দেখে প্রতিস্থাপন করে থাকি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সমাজসেবা অফিসে প্রেরিত প্রত্যায়নটির কোনো তথ্য ইউনিয়ন পরিষদের ফাইলে সংরক্ষণ করা হয়নি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সোহেল সুলতান জুলকার নাইন কবির বলেন, এটি সংশোধনের কার্যক্রম চলমান। তদন্ত করে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জেলা প্রশাসক মাহবুবুর রহমান বলেন, এটি একটি গুরুতর অভিযোগ। আমরা তদন্ত করে আইনি ব্যবস্থা নেব।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের পদত্যাগ, সংসদ বিলুপ্ত করা, নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠাসহ ১০ দফা দাবি আদায়ে আজ রোববার ঢাকা ছাড়া সব মহানগরে পদযাত্রা কর্মসূচি করবে বিএনপি। আজকের পদযাত্রা কর্মসূচির মাধ্যমে সপ্তাহব্যাপী সরকারবিরোধী কর্মসূচির প্রথম ধাপ শেষ হচ্ছে দলটির।
এর আগে, গত ২৩ মে দেশের ১১টি মহানগরে ‘পদযাত্রা’ করে বিএনপি। ঢাকার বাইরে মহানগরগুলোতে দলের কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত থাকবেন।
সরকারবিরোধী যুগপৎ আন্দোলনের ১০ দফাসহ দলীয় নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার, হয়রানি, নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদ ও অন্যান্য জনগুরুত্বপূর্ণ দাবিতে এই কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছে দলটি।
সরকারের পদত্যাগ, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে নির্বাচন ও সংবিধান সংস্কারসহ ১৪ দফা দাবিতে আজ রোববার (২৮ মে) পদযাত্রা করবে ৬ দলীয় জোট (দল ও সংগঠন) গণতন্ত্র মঞ্চ। এদিন বেলা ১১টায় রাজধানীর মালিবাগ থেকে এই পদযাত্রা শুরু হবে, যা শেষ হবে বাড্ডায়।
গণতন্ত্র মঞ্চের পক্ষ থেকে জানানো হয়, রোববার ১১টায় রাজধানীর মালিবাগ রেলগেট থেকে বাড্ডা পর্যন্ত গণতন্ত্র মঞ্চের ঢাকা উত্তরের পদযাত্রা শুরু হবে। অবৈধ সরকারের পদত্যাগ, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে নির্বাচন ও সংবিধান সংস্কারসহ ১৪ দফা দাবিতে এ পদযাত্রা অনুষ্ঠিত হবে। মালিবাগ রেলগেটে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যের মধ্য দিয়ে পদযাত্রা শেষ হবে।
পদযাত্রায় অংশ নেবেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি, ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক অ্যাডভোকেট হাসনাত কাইয়ুম, জেএসডির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক কামাল উদ্দিন পাটোয়ারীসহ গণতন্ত্র মঞ্চের কেন্দ্রীয় নেতারা।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিশ্ব শান্তির পক্ষে সোচ্চার ছিলেন এবং মানুষের ন্যায্য অধিকার আদায়ে আজীবন সংগ্রাম করে গেছেন।
বঙ্গবন্ধুর জুলিও কুরি পদক প্রাপ্তির ৫০ বছর পূর্তি উদযাপন উপলক্ষে সোশ্যাল মিডিয়ায় দেওয়া এক ভিডিও বার্তায় তিনি এ কথা বলেন।
ড. মোমেন বলেন, বঙ্গবন্ধুর জুলিও কুরি পদক প্রাপ্তির ৫০ বছর পূর্তি উৎসব আমাদের বিদেশস্থ সকল মিশনে উদযাপন করছি। জুলিও কুরি পদক ছিল জাতির পিতার কর্মের স্বীকৃতি এবং বাংলাদেশের জন্য প্রথম আন্তর্জাতিক সম্মান।
তিনি বলেন, বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে কারাবরণ করেন বঙ্গবন্ধু। পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে বৈষম্য, সংখ্যাগরিষ্ঠ বাঙালির ওপর নির্যাতন ও নিপীড়ন বঙ্গবন্ধু মেনে নিতে পারেননি। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চের ভাষণে বঙ্গবন্ধু বাংলার নিপীড়িত, শোষিত, বঞ্চিত মানুষের ন্যায্য অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে স্বাধীনতার ডাক দেন। বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে বাংলার মানুষ দীর্ঘ নয় মাস যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পর “সবার সাথে বন্ধুত্ব, কারো প্রতি বৈরীতা নয়”- এই বৈদেশিক নীতি ঘোষণা করেন।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু আজ আমাদের মধ্যে নেই, কিন্তু তার শান্তির বার্তা নিয়ে বাংলাদেশ বিশ্বে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে জাতিসংঘে এক নম্বর শান্তিরক্ষী দেশের মর্যাদা পেয়েছে। দেশে দেশে টেকসই শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্যে ‘শান্তির সংস্কৃতি’ চালু করেছে।
‘বঙ্গবন্ধুর জুলিও কুরি পদক প্রাপ্তির ৫০ বছর পূর্তি উদযাপনে আমাদের অঙ্গীকার হবে বিশ্বে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্যে কাজ করে যাওয়া। তাহলেই বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন অর্জিত হবে’।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ১৯৭৩ সালের ২৩ মে বিশ্ব শান্তি পরিষদ ‘জুলিও কুরি’ শান্তি পদকে ভূষিত করে।
অপারেশন ছাড়াই সিরাজগঞ্জের বেলকুচি উপজেলায় আব্দুল মোতালেব হোসেন (৩৫) নামের এক মানসিক রোগীর পেট থেকে ১৫টি কলম বের করেছেন চিকিৎসক।
এ কাজ করে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন সিরাজগঞ্জের শহীদ এম.মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের দুই চিকিৎসক। তাদের এই সাফল্যে রীতিমত হৈচৈ পড়ে গেছে নেট দুনিয়ায়।
এ বিষয়ে আব্দুল মোতালেবের মা লাইলী খাতুন বলেন, তার ছেলে মোতালেব খুব ভাল ছাত্র ছিল। ২টি লেটার মার্ক নিয়ে এসএসসি পাস করে কলেজে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হয়। এরপর খারাপ সঙ্গদোষে সে আস্তে আস্তে মাদকাসক্ত হয়ে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে। এরপর থেকে পথে ঘাটে ঘুরে বেড়ানোর সময় কুড়িয়ে পাওয়া কলমগুলি খাদ্য মনে করে খেয়ে ফেলে। বিষয়টি আমাদের জানা ছিল না। গত এক বছর ধরে তার শরীরে জ্বর ও পেটে ব্যথা শুরু হয়। অনেক চিকিৎসার পরও তা ভালো হচ্ছিল না। অবশেষে গত ১৬ মে তাকে সিরাজগঞ্জের শহীদ এম. মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এনে ভর্তি করি। এখানে অনেক পরীক্ষা নিরীক্ষার পর তার অসুখের কারণ ধরা পড়ে। পরে চিকিৎসকরা তার পেটের ভিতর থেকে বিনা অপারেশনে কলমগুলো বের করে।
এ বিষয়ে সিরাজগঞ্জ শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কনসালটেন্ট ডা. আমিনুল ইসলাম খান বলেন, মোতালেব হোসেন প্রথমে পেটে ব্যথা নিয়ে মেডিসিন ওয়ার্ডে ভর্তি হয়। মেডিসিন ওয়ার্ডের চিকিৎসকরা এক্সরে ও আল্ট্রাসনোগ্রাম করেও পেটে কি সমস্যা সেটা শনাক্ত করতে পারছিলেন না। ফলে রোগীটিকে আমার কাছে রেফার্ড করেন। এন্ডোস্কপির মাধ্যমে পরীক্ষা করে তার পেটের ভেতর ১৫টি কলম দেখে প্রথমে চমকে যাই। এটা কীভাবে সম্ভব। পরে এন্ডোস্কপির মাধ্যমেই অপারেশন ছাড়াই আমরা কলমগুলো বের করার সিদ্ধান্ত নেই। তিনি আরও বলেন, কাজটি আমাদের জন্য দারুণ চ্যালেঞ্জিং ছিল। কলমগুলো একে একে পাকস্থলীতে সেট হয়ে গিয়েছিল। কলমগুলো বের করতে আমাদের প্রথমে মাথায় চিন্তা ছিল যেন, কলমগুলোর কারণে কোনোভাবেই শ্বাসনালিতে গিয়ে শ্বাস-প্রশ্বাস বন্ধ না হয়ে যায়। এছাড়াও রক্তক্ষরণের একটা চিন্তাও মাথায় ছিল। অতঃপর প্রায় তিন ঘণ্টার চেষ্টায় আমরা কলমগুলো বের করে নিয়ে আসতে সক্ষম হই।
শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের প্রধান ডা. জাহিদুল ইসলাম বলেন, এন্ডোস্কপি করা ব্যক্তি মানসিক অসুস্থ হওয়ায় তার কলম খাওয়ার অভ্যাস ছিল। এভাবে খেতে খেতে সে অনেক কলম খেয়ে ফেলে। কলমগুলো তার পেটের মধ্যে জমা হয়েছিল। আমরা পরীক্ষা-নিরীক্ষার পরে তার পেটের ভিতর ১৫টি কলম থাকার বিষয়টি নিশ্চিত হই। এবং অপারেশন ছাড়াই এন্ডোস্কপির মাধ্যমে তার পেটের ভেতর থেকে একে একে ১৫টি আস্ত কলম বের করে আনি। বর্তমানে রোগীটি সার্জারি বিভাগের চিকিৎসকদের অধীনে চিকিৎসা নিচ্ছেন এবং সুস্থ আছেন।
তিনি আরও বলেন, এন্ডোস্কপির মাধ্যমে মানুষের পেট থেকে কলম বের করার মতো ঘটনা বাংলাদেশে এটাই প্রথম। তাও আবার একটি-দু‘টি নয় ১৫টি কলম। এর আগে ঢাকা মেডিকেলে এক ব্যক্তির পেট থেকে এন্ডোসকপির মাধ্যমে একটি মোবাইল বের করেছেন চিকিৎসকরা।
এ বিষয়ে শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতালের পরিচালক সাইফুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশে এমন সাফল্য এটাই প্রথম। আমরা অত্যাধুনিক ভিডিও এন্ডোস্কপি মেশিনের মাধ্যমে এবং আমাদের দক্ষ ডাক্তার দ্বারা অপারেশন ছাড়াই শুধু এন্ডোস্কপির মাধ্যমে একজন মানসিক ভারসাম্যহীন মানুষের পেট থেকে ১৫টি কলম বের করে আনতে সক্ষম হয়েছি। শুধু এটাই নয়, আমরা বিনা অপারেশনে পেটের পাথর, কিডনিতে পাথর থেকে শুরু করে অনেক কিছুই অপারেশন ছাড়াই সেগুলো অপসারণের কাজ করে যাচ্ছি।
বিরতি কাটিয়ে আবারও আন্তর্জাতিক ফুটবলে ফিরছে আর্জেন্টিনা। গত মার্চে ঘরের মাঠে সবশেষ আকাশী-নীলদের দেখা গিয়েছিল তিন মাস পর আগামী জুনে তারা আসছে এশিয়া সফরে। সফরকালে ইন্দোনেশিয়া ও অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে দুটি প্রীতি ম্যাচও খেলবেন লিওনেল মেসিরা।
আগামী ১৫ জুন বেইজিংয়ে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে খেলতে নামবে আর্জেন্টিনা। চারদিন পর ১৯ জুন জাকার্তায় ইন্দোনেশিয়ার মুখোমুখি হবেন তারা। সেই ম্যাচ দুটিকে সামনে রেখে আজ দল ঘোষণা করেছেন দেশটির কোচ লিওনেল স্কালোনি। লিওনেল মেসিকে অধিনায়ক করে ২৭ সদস্যের দল ঘোষণা করা হয়েছে।
বিশ্বকাপজয়ী খেলোয়াড়দের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে নতুন কিছু নাম। এই দলে এই দলে চমক হিসেবে রয়েছে আলেজান্দ্রো গার্নাচো। যিনি বিশ্বকাপের পর আর্জেন্টিনার প্রথম প্রীতি ম্যাচের দলে ছিলেন। তবে চোটের কারণে অভিষেকের সুযোগ হাতছাড়া হয়ে যায়।
ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের হয়ে আলো ছড়িয়েছেন গার্নাচো। গত বছরের জুলাইয়ে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের মূল দলে জায়গা হয় তার। এখন পর্যন্ত ক্লাবটির হয়ে ৩৫ ম্যাচ খেলেছেন এই লেফট উইঙ্গার। এখন পর্যন্ত নিজে করেছেন ছয়টি গোল, করিয়েছেন আরও ছয়টি। এমন পারফরম্যান্স নজর এড়ায়নি স্কালোনির। তাই জাতীয় দলে জায়গা পেতে বেগ পেতে হয়নি।
দলের তৃতীয় গোলকিপার হিসেবে জায়গা পেয়েছেন ওয়াল্টার বেতিনেজ। এছাড়া বেশ কয়েক বছর পর দলে ফিরেছেন লিওনার্দো বলের্দি। ফরাসি ক্লাব মার্সেইয়ের হয়ে চলতি মৌসুমে তিনি দুর্দান্ত খেলছেন। তবে স্কোয়াডের মাঝ মাঠের ফুটবলারদের নিয়ে কোনো চমক নেই।
তবে এই স্কোয়াডে নেই লাউতারো মার্তিনেজের নাম। গোড়ালির চোটের কারণে এই দুই প্রীতি ম্যাচে তাকে পাচ্ছে না আর্জেন্টিনা। তবে তার জায়গায় মাঠ মাতাতে দেখা যাবে জিওভানি সিমিওনেকে।
আর্জেন্টিনার ২৭ সদস্যের দল
গোলরক্ষক:
এমিলিয়ানো মার্টিনেজ (অ্যাস্টন ভিলা), জেরনিমো রুলি (আয়াক্স), ওয়াল্টার বেনিটেজ (পিএসভি)।
ডিফেন্ডার:
নাহুয়েল মোলিনা (অ্যাথলেটিকো মাদ্রিদ), গঞ্জালো মন্তিয়েল (সেভিয়া), জার্মান পেজেল্লা (রিয়েল বেটিস), ক্রিশ্চিয়ান রোমেরো (টটেনহ্যাম হটস্পার), লিওনার্দো বলের্দি (অলিম্পিক মার্সেই), নিকোলাস ওতামেন্ডি (বেনফিকা), ফ্যাকুন্ডো মদিনা (আরসি লেন্স), নিকোলাস তাগলিয়াফিকো (লিয়ন), মার্কোস অ্যাকুনা (সেভিলা)।
মিডফিল্ডার:
লিয়ান্দ্রো পেরেদেস (জুভেন্তাস), এনজো ফার্নান্দেজ (চেলসি), গুইডো রদ্রিগেজ (রিয়েল বেটিস), রদ্রিগো ডি পল (অ্যাথলেটিকো মাদ্রিদ), এজেকিয়েল পালাসিওস (বেয়ার লেভারকুসেন), অ্যালেক্সিস ম্যাক অ্যালিস্টার (ব্রাইটন), থিয়াগো আলমাদা (আটলান্টা ইউনাইটেড), জিওভানি লো সেলসো (ভিলারিয়াল)।
ফরোয়ার্ড:
লুকাস ওকাম্পোস (সেভিয়া), অ্যাঞ্জেল ডি মারিয়া (জুভেন্তাস), লিওনেল মেসি (পিএসজি), জুলিয়ান আলভারেজ (ম্যানচেস্টার সিটি), জিওভানি সিমিওনে (নাপোলি), আলেজান্দ্রো গার্নাচো (ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড), নিকোলাস গঞ্জালেজ (ফিওরেন্টিনা)।
নতুন পে-স্কেল কিংবা মহার্ঘ ভাতা নয়, সরকারি কর্মচারীদের বেতন বাড়বে বার্ষিক বেতন বৃদ্ধি বা ইনক্রিমেন্ট অনুযায়ী। তাদের বেতন প্রতি বছর যতটা বাড়ার কথা এবার তার চেয়ে বেশি বাড়বে। আর তা চলতি বছরের মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সমন্বয় করে বাড়ানো হবে। অর্থাৎ আগামী অর্থবছরে সরকারি কর্মকর্তাদের নিয়মিত ইনক্রিমেন্ট ৫ শতাংশের বাইরে বাড়ানো হবে বলে অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে।
এ বিষয়ে পলিসি রিচার্স ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর দেশ রূপান্তরকে বলেন, গত প্রায় এক বছর ধরে দ্রব্যমূল্য বাড়ার কারণে সাধারণ মানুষ কষ্টে আছেন। সরকারি কর্মকর্তাদের বেশিরভাগের একমাত্র আয় বেতন-ভাতা। বৈশি^ক মন্দার কারণে সরকারও খানিকটা সংকটে আছে। এ পরিস্থিতিতে পে-স্কেল দেওয়ার মতো বড় ধরনের ব্যয় বাড়ানো সরকারের পক্ষে কঠিন হবে। ইনক্রিমেন্ট দেওয়া হলে সরকারের ওপর চাপ বেশি হবে না।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে সরকারি কর্মরতদের খানিকটা স্বস্তি দিতে কোন খাতে কী পদক্ষেপ নেওয়া যায় এমন প্রস্তাব চাওয়া হয়। একই সঙ্গে বাজেটবিষয়ক বিভিন্ন বৈঠকে সরকারি নীতিনির্ধারকরাও এ বিষয়ে আলোচনা করেন। অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে যাচাই-বাছাই করে মহার্ঘ ভাতা দেওয়ার প্রস্তাব করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে উপস্থাপন করে। চলতি মাসে গণভবনে অনুষ্ঠিত বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে অর্থমন্ত্রী, পরিকল্পনামন্ত্রী এ বিষয়ে ইতিবাচক মন্তব্য করে নিজেদের মতামত তুলে ধরেন। প্রধানমন্ত্রী ওই বৈঠকে মহার্ঘ ভাতা দেওয়া হলে কত বাড়তি ব্যয় হবে তা হিসাব করে পরের বৈঠকে উপস্থাপন করতে নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বড় ধরনের ব্যয় না বাড়িয়ে একটা উপায় বের করতেও বলেন। শেষ পর্যন্ত ইনক্রিমেন্ট বাড়ানো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যা চলতি মাসে প্রধানমন্ত্রীর সর্বশেষ সংবাদ সম্মেলনে নিজেই জানিয়েছেন।
বর্তমানে সরকারি কর্মচারীরা ২০১৫ সালের বেতন কমিশন অনুযায়ী বেতন-ভাতা পাচ্ছেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিনের নেতৃত্বে গঠিত কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী এ বেতন কমিশন প্রণীত হয়েছিল। এ কমিশনের সুপারিশে বলা হয়, আর নতুন বেতন কমিশন গঠন করা হবে না। প্রতি বছর ৫ শতাংশ হারে ইনক্রিমেন্ট বা বেতন বাড়ানো হবে। এ কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী তা হয়ে আসছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একটি হিসাব অনুযায়ী, দেশে সরকারি কর্মচারী ১৪ লাখ। বিভিন্ন করপোরেশন এবং এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের নিয়ে হিসাব করলে প্রায় ২২ লাখ।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, আগামী অর্থবছরের বাজেটে নিয়মিত ইনক্রিমেন্টের বাইরে আরও কতটা বাড়ানো যায় তা হিসাব করে নির্ধারণ করা হবে। এ কাজ করতে বাজেট প্রস্তাব পেশ করার পর আলাদা কমিটি গঠন করা হবে। এ কমিটি মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সমন্বয় করে যাচাই-বাছাই শেষে ইনক্রিমেন্টের হার সুপারিশ করবে। এ ক্ষেত্রে মূল্যস্ফীতির হার বিবেচনা করে বিদ্যমান ৫ শতাংশ ইনক্রিমেন্টের সঙ্গে প্রতি মাসে বেতন বাড়ানো হবে, নাকি গড় মূল্যস্ফীতির হার বিবেচনা করে ইনক্রিমেন্টের হার বাড়ানো হবে, তা খতিয়ে দেখা হবে। ২০তম গ্রেড থেকে প্রথম গ্রেড পর্যন্ত সবার জন্য একই হারে বেতন বাড়নো হবে কি না, তা আরও খতিয়ে দেখা হবে। চূড়ান্ত হিসাব অর্থমন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের পর দাপ্তরিক প্রক্রিয়া শেষে প্রকাশ করা হবে। যে তারিখেই প্রকাশ করা হোক না কেন, আগামী ১ জুলাই থেকে কার্যকরী ধরা হবে।
এখানে মহার্ঘ ভাতা ১০ শতাংশ দেওয়া হলে এ হিসাবে ৪ হাজার কোটি টাকা যোগ করতে হবে। ১৫ শতাংশ দেওয়া হলে ৬ হাজার কোটি এবং ২০ শতাংশ দেওয়া হলে ৮ হাজার কোটি টাকা যোগ করতে হবে। অর্থাৎ মহার্ঘ ভাতা দেওয়া হলে আগামী অর্থবছরে সরকারের ব্যয় বাড়বে। আর এতে সরকার ব্যয় কমিয়েও সরকারি কর্মকর্তাদের সন্তুষ্টিতে ইনক্রিমেন্ট বাড়ানো পথে হেঁটেছে।
চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটের আকার ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারি কর্মরতদের বেতন-ভাতা বাবদ রাখা হয়েছে ছিল ৭৪ হাজার ২৬৬ কোটি টাকা। খরচ না হওয়ায় সংশোধিত বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ ১ হাজার ৯৩ কোটি টাকা কমানো হয়েছে। আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৬১ হাজার ৯৯২ কোটি টাকা বাজেট হওয়ার কথা আছে। এ বাজেট সরকারি কর্মরতদের বেতন-ভাতার জন্য বরাদ্দ ৭৭ হাজার কোটি টাকা রাখা হতে পারে। সরকারি কর্মকর্তাদের অনেক পদ এখনো খালি আছে। এতে ইনক্রিমেন্ট বাড়ানো হলেও সরকারের ব্যয়ে বড় ধরনের চাপ বাড়বে না।
গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে বেসরকারিভাবে বিজয়ী হয়েছেন জায়েদা খাতুন।
তিনি ঘড়ি প্রতীকে মোট ২ লাখ ৩৮ হাজার ৯৩৪ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। তার নিকটতম আওয়ামী লীগ মনোনিত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আজমত উল্লা খান পেয়েছেন ২ লাখ ২২ হাজার ৭৩৭ ভোট।
বৃহস্পতিবার সকাল ৮টায় এ সিটির ৪৮০টি কেন্দ্রে ইভিএমে ভোটগ্রহণ শুরু হয়, যা একটানা বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলে।
বৃহস্পতিবার (২৫ মে) রাতে রির্টানিং কর্মকর্তা স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুনকে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত ঘোষণা করেন।
নির্বাচনের অন্য মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে লাঙ্গল প্রতীকে জাতীয় পার্টির প্রার্থী এম এম নিয়াজ উদ্দিন ১৬ হাজার ৩৬২ ভোট, গোলাপ ফুল প্রতীকে জাকের পার্টির মো. রাজু আহাম্মেদ ৭ হাজার ২০৬ ভোট, মাছ প্রতীকে গণফ্রন্টের প্রার্থী আতিকুল ইসলাম ১৬ হাজার ৯৭৪ ভোট, স্বতন্ত্রপ্রার্থী ঘোড়া প্রতীকের মো. হারুন-অর-রশীদ ২ হাজার ৪২৬ ভোট এবং হাতি প্রতীকের সরকার শাহনূর ইসলাম ২৩ হাজার ২৬৫ ভোট পেয়েছেন।
নির্বাচন কমিশনের তথ্যানুযায়ী, গাজীপুর সিটিতে মোট ভোটার ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৭৬ জন। তাদের মধ্যে ৫ লাখ ৯২ হাজার ৭৬২ জন পুরুষ, ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৬৯৬ জন নারী ও ১৮ জন হিজড়া। এই সিটিতে ৫৭টি সাধারণ ও ১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড আছে। মোট ভোটকেন্দ্র ৪৮০টি, মোট ভোটকক্ষ ৩ হাজার ৪৯৭টি।
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে বাংলাদেশ টেলিভিশনে (বিটিভি) নির্মিত হয়েছে বিশেষ কবিতা আবৃত্তির অনুষ্ঠান ‘ও ভোরের পাখি’। ঈমাম হোসাইনের প্রযোজনায় এটি উপস্থাপনা করেছেন তামান্ন তিথি। অনুষ্ঠানটিতে আবৃত্তি করেছেন আশরাফুল আলম, মীর বরকত, রফিকুল ইসলাম, পলি পারভিন, শাকিলা মতিন মৃদুলা, মাসকুর-এ সাত্তার কল্লোল, আসলাম শিশির, সংগীতা চৌধুরী, আহসান উল্লাহ তমাল। প্রচারিত হয় ২৫ মে সকাল সাড়ে ৯টায়।
এছাড়াও নির্মিত হয়েছে বিশেষ অনুষ্ঠান ‘আমারে দেবো না ভুলিতে’। অনুষ্ঠানটিতে গান, কবিতা ও আলোচনার সমন্বয়ে কবিকে সামগ্রিকভাবে তুলে ধরা হয়েছে। জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী ও বাচিকশিল্পীদের অংশগ্রহণ অনুষ্ঠানটিতে ভিন্নমাত্রা যোগ করেছে। ইয়াসমিন মুসতারী, সালাউদ্দিন আহমেদ, শেলু বড়ুয়া, ছন্দা চক্রবর্ত্তী ও ভাস্বর বন্দ্যোপাধ্যায়ের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা করেছেন প্রফেসর মুন্সী আবু সাইফ। মনিরুল হাসানের প্রযোজনায় অনুষ্ঠানটি প্রচারিত হচ্ছে ২৫ মে দুপুর ১ টা ০৫ মিনিটে। আরও প্রচারিত হবে সংগীতানুষ্ঠান ‘দোলনচাঁপা’ ও ‘সন্ধ্যামালতী’। রাত ৯টায় প্রচারিত হবে নাটক ‘বনের পাপিয়া’ (পুনপ্রচার)।
গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ভোট শেষ হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার সকাল ৮টায় এ সিটির ৪৮০টি কেন্দ্রে ইভিএমে ভোটগ্রহণ শুরু হয়, যা একটানা বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলে।
দায়িত্বশীল সূত্র থেকে এখন পর্যন্ত ৪৫০টি কেন্দ্রের প্রাথমিক ফল পাওয়া গেছে। এর মধ্যে নৌকা প্রতীকে আজমত উল্লা খান পেয়েছেন ১ লাখ ৮৫ হাজার ৩৭৯ ভোট এবং টেবিলঘড়ি প্রতীকে জায়েদা খাতুন পেয়েছেন ২ লাখ ৫ হাজার ৪১৩ ভোট।
নির্বাচন কমিশনের তথ্যানুযায়ী, গাজীপুর সিটিতে মোট ভোটার ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৭৬ জন। তাদের মধ্যে ৫ লাখ ৯২ হাজার ৭৬২ জন পুরুষ, ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৬৯৬ জন নারী ও ১৮ জন হিজড়া। এই সিটিতে ৫৭টি সাধারণ ও ১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড আছে। মোট ভোটকেন্দ্র ৪৮০টি, মোট ভোটকক্ষ ৩ হাজার ৪৯৭টি।
গাজীপুর সিটিতে মেয়র পদে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হচ্ছে আওয়ামী লীগের আজমত উল্লা খান এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুনের মধ্যে। দুজনই জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী। অপরদিকে ভোটের পরিবেশ ভালো বলে জানান আরেক স্বতন্ত্র প্রার্থী শাহনূর ইসলাম রনি।
কোটা পদ্ধতি তুলে দেওয়ার পরও বিসিএস পরীক্ষায় নারীদের চাকরি পাওয়ার হার প্রায় একই রয়েছে। ১০ শতাংশ কোটা থাকা অবস্থায় তারা যে পরিমাণ চাকরি পাচ্ছিলেন, কোটা তুলে দেওয়ার পরও প্রায় একই হারে চাকরি পাচ্ছেন। সাধারণ ক্যাডার বা কারিগরি ক্যাডারে পিছিয়ে পড়লেও শিক্ষার মতো পেশাগত ক্যাডারগুলোতে এগিয়ে গিয়ে বিসিএসে মোট চাকরি পাওয়ার হারে প্রায় একই অবস্থান ধরে রেখেছেন নারীরা।
অথচ কোটাবিরোধী আন্দোলনের সময় বলা হয়েছিল, কোটা তুলে দিলে চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে নারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। প্রশাসনে নারীর অংশগ্রহণের গ্রাফ নিম্নমুখী হবে। আসলে তা হয়নি। কোটা তুলে দেওয়ার পরও তারা প্রায় সমানতালে এগিয়ে চলছেন।
৪০তম বিসিএস দিয়ে চাকরিতে ঢুকে বর্তমানে ঢাকা বিভাগে কর্মরত একজন নারী কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, যে বয়সে ছেলেরা চাকরির জন্য প্রতিযোগিতা করে সেই বয়সে অধিকাংশ নারীকেই বিবাহিত জীবনে প্রবেশ করতে হয়। সংসার করে, সন্তান লালনপালন করে নারীরা ভালো প্রস্তুতি নিতে পারে না। ফলে অনেক মেধাবী নারী প্রতিযোগিতায় উতরে যেতে পারেন না। অনেক নারী পারিবারিক কারণে বিয়ের পর চাকরির আবেদনই করেন না। বিয়ের পর পরীক্ষায় অংশ নিতে বাধা আসে। এসব কাটিয়ে উঠে চাকরিতে প্রবেশ করা কঠিন। আর বিসিএসের চাকরি মানেই বদলিযোগ্য। সংসার-সন্তান রেখে বদলিকৃত পদে যোগ দেওয়া কঠিন বিষয়। সবকিছু মিলিয়ে নারীদের জন্য এ চাকরি সহজ নয়। একজন পুরুষ বেকার নারী বিয়ে করে, কিন্তু একজন নারী বেকার পুরুষ বিয়ে করে না। এ বিষয়টাও ছেলেদের প্রস্তুত হতে সাহায্য করে। এ বাস্তবতা থেকেও পুরুষ প্রতিযোগী বেশি হয়। অন্যদিকে যোগ্য হলেও অনেক নারী প্রতিযোগিতাই করে না।
একজন নারী ইউএনও বলেন, পরীক্ষার হলে বা মৌখিক পরীক্ষার সময় অনেক নারীকে দুগ্ধপোষ্য সন্তানকে সঙ্গে আনতে হয়। এগুলোও অনেক সময় নারীকে চাকরির ক্ষেত্রে নিরুৎসাহিত করে। ঘরে ঘরে বাধা পায় নারীর অগ্রযাত্রার নানা চেষ্টা। নগর-জীবনে নারীর অস্তিত্ব অনেকটা স্বচ্ছন্দের। কিন্তু নগরসভ্যতার বাইরে বিশাল বিস্তৃত গ্রামীণ জনজীবনে পুরুষতন্ত্রের নানা ধরনের অনাকাক্সিক্ষত বেষ্টনী এখনো নারীকে ধরাশায়ী করে রাখে। হাজার হাজার বছর ধরে পৃথিবীর পথ হাঁটছে নারী-পুরুষ। তবু তাদের মধ্যে ভারসাম্য নেই।
কোটা না থাকার পরও নারীরা তাদের অবস্থান কীভাবে ধরে রাখলেন জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. সৈয়দ শাইখ ইমতিয়াজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নারী শিক্ষায় বাংলাদেশের অর্জন বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত। প্রাথমিকের পর মাধ্যমিকেও মেয়েরা অনেক এগিয়েছে। উচ্চশিক্ষায়ও মেয়েদের অংশগ্রহণের হার বেড়েছে। সবকিছু মিলে বিসিএসে এর প্রতিফল ঘটেছে। যে পরিমাণ মেয়ে উচ্চশিক্ষা নিচ্ছে, সেই তুলনায় চাকরিতে প্রবেশের হার বেশি। উচ্চশিক্ষায় যায় হয়তো ৮০ ভাগ ছেলে। আর মেয়েদের মধ্যে উচ্চশিক্ষায় যাওয়ার হার ৩০ বা ৩৫ শতাংশ। তাদের মধ্যে ২৬ বা ২৭ শতাংশ মেয়ে বিসিএস দিয়ে চাকরি পাচ্ছে। এদিক দিয়ে চিন্তা করলে মেয়েরা অনেক ভালো করছে।’
এক প্রশ্নের জবাব ড. ইমতিয়াজ বলেন, ‘মেয়েদের কাছে শিক্ষা এখনো অপরচুনিটি (সুযোগ) আর ছেলেদের কাছে অধিকার। মেয়েরা যখন এ সুযোগটা পায় অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তা কাজে লাগাতে চায়।’ তিনি আরও বলেন, ‘পরিবারের ছেলেসন্তানের জন্য যে বিনিয়োগ, মেয়েসন্তানের জন্য এখনো তার চেয়ে অনেক কম। এখনো মনে করা হয় মেয়ে তো অন্যের ঘরে চলে যাবে। অথচ মজার বিষয় হচ্ছে, পরিবারের দায়িত্ব উচ্চশিক্ষিত ছেলের তুলনায় উচ্চশিক্ষিত মেয়ে অনেক বেশি বহন করে। এসব প্রতিবন্ধকতা হাজার বছরে তৈরি হয়েছে। এগুলো দূর হতে আরও সময় লাগবে।’
অন্যান্য কোটার মতো প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে নারীদের জন্য ১০ শতাংশ কোটা ছিল। নারীরা যোগ্যতা অনুযায়ী মেধা কোটায়ও নিয়োগ পেতেন। তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির চাকরিতে মেধাভিত্তিক জেলা কোটার পাশাপাশি ১৫ শতাংশ নারী কোটা রয়েছে এখনো। প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে মেধাভিত্তিক জেলা কোটার পাশাপাশি ৬০ শতাংশ নারী কোটা সংরক্ষিত রেখে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। এভাবে নারীরা সরকারি চাকরিতে পুরুষ প্রার্থীর সঙ্গে মেধা কোটায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে নিয়োগ লাভের পাশাপাশি সংরক্ষিত কোটায়ও নিয়োগ লাভের সুবিধা পেয়ে থাকেন।
শিক্ষার বিভিন্ন স্তরে ছাত্রীর হার বাড়ছে। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে এক দশকের বেশি সময় ধরে ছাত্রের চেয়ে ছাত্রীর হার বেশি। কলেজ পর্যায়ে ছাত্র ও ছাত্রীর হার প্রায় সমান। বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রীর হার ৩৬ শতাংশের বেশি।
বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে ২০১৮ সালে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির চাকরিতে কোটা পদ্ধতি বাতিল করে সরকার। ৪০তম সাধারণ বিসিএস হচ্ছে কোটামুক্ত প্রথম বিসিএস। ধাপে ধাপে বাছাই করে গত বছর ৩০ মার্চ এই বিসিএসের চূড়ান্ত সুপারিশ করে বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি)। প্রায় ১৩ মাস পর গত মাসে সেই সুপারিশের বিশ্লেষণ প্রকাশ করেছে পিএসসি। সেখানে বলা হয়েছে, ৪০তম বিসিএসে মোট ২৬ দশমিক ০৩ শতাংশ নারী চূড়ান্তভাবে সুপারিশ পেয়েছেন। যা কোটাযুক্ত ৩৮তম বিসিএসে ২৬ দশমিক ৯১ ও ৩৭তমে ২৪ দশমিক ৬০ শতাংশ ছিল। গত ১ নভেম্বর এ বিসিএসের কর্মকর্তারা চাকরিতে যোগ দিয়েছেন।
পিএসসির একজন সাবেক চেয়ারম্যান বলেছেন, কোটামুক্ত একটি সাধারণ বিসিএসে ২৬ দশমিক ০৩ শতাংশ নারী চূড়ান্তভাবে সুপারিশ পেয়েছেন এটা প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় নারীদের শক্ত সক্ষমতা প্রকাশ করে। কারণ এর আগে কোটাযুক্ত ৩৮তম বিসিএসের তুলনায় মাত্র দশমিক ৮৮ শতাংশ কম। অর্থাৎ কোটা তুলে দেওয়ার পরও নারীরা ১ শতাংশও পিছিয়ে পড়েননি। আরেকটি বিষয় লক্ষণীয় যে, প্রত্যেক বিসিএসে নারীদের আবেদনের হার অর্থাৎ প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের হার পুরুষের তুলনায় কম অর্থাৎ গড় হার কম। পরীক্ষা কেন্দ্রগুলোতেও নারী প্রার্থীদের পুরুষের তুলনায় অনেক কম চোখে পড়ে। এমনকি কোনো কোনো কক্ষে নারী প্রার্থী থাকেই না। একই সঙ্গে প্রতিযোগিতায় ধাপগুলো অতিক্রম করার ক্ষেত্রে নারীদের অনুত্তীর্ণ হওয়ার পরিমাণ বেশি থাকে। ৪০তম বিসিএসে যোগ্য আবেদনকারী নারী ছিলেন ৩৮ দশমিক ৩৮ শতাংশ। তাদের মধ্যে ১৯ দশমিক ১৯ শতাংশ নারী প্রিলিমিনারিতে উত্তীর্ণ হন। অথচ পুরুষদের ক্ষেত্রে ভিন্ন চিত্র। যোগ্য আবেদনকারী পুরুষ ছিলেন ৬১ দশমিক ৬২ শতাংশ। প্রিলিমিনারিতে উত্তীর্ণ পুরুষের হার ৮০ দশমিক ৮১ শতাংশ।
৪০তম বিসিএসের সাধারণ ক্যাডারে ২১ দশমিক ০৮ শতাংশ নারী সুপারিশ পেয়েছেন। এই হার ৩৮ ও ৩৭তম বিসিএসে ছিল যথাক্রমে ২৪ দশমিক ১৪ ও ২৩ দশমিক ৯ শতাংশ।
৪০তম বিসিএসের কারিগরি ক্যাডারে ২৭ দশমিক ৭৫ শতাংশ নারী সুপারিশ পেয়েছেন। এই হার ৩৮ ও ৩৭তম বিসিএসে ছিল যথাক্রমে ২৯ দশমিক ৫৩ ও ২৫ দশমিক ২ শতাংশ।
সাধারণ এবং কারিগরি ক্যাডারে নারীরা পিছিয়ে পড়লেও শিক্ষার মতো পেশাগত ক্যাডারে এগিয়েছেন। ৪০তম বিসিএসে ২৮ দশমিক ৩৪ শতাংশ নারী সুপারিশ পেয়েছেন। যা ৩৮তমে ২৬ দশমিক ৩০ এবং ৩৭তমে ২৫ দশমিক ২ শতাংশ ছিল।
পুরোপুরি মেধার ভিত্তিতে নেওয়া ৪০তম বিসিএসে প্রশাসন ক্যাডারেও নারীরা পিছিয়েছেন। জেলা কোটাও না থাকায় নাটোর, ভোলা, বান্দরবান ও খাগড়াছড়ি থেকে প্রশাসন ক্যাডারে কেউ সুপারিশ পাননি।
গত বছর প্রকাশিত জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সরকারি চাকরিজীবীদের তথ্যসংক্রান্ত ‘স্ট্যাটিসটিকস অব সিভিল অফিসার্স অ্যান্ড স্টাফস’ প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, সিভিল প্রশাসনের ১৪ লাখ সরকারি কর্মচারীর মধ্যে ২৬ শতাংশ নারী। সরকারি দপ্তরের মধ্যে বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে কাজ করেন সবচেয়ে কমসংখ্যক নারী। মন্ত্রণালয়ের মোট জনবলের ১৯, অধিদপ্তরের ৩১, বিভাগীয় কমিশনার ও ডেপুটি কমিশনারের কার্যালয়ের ১২ এবং আধাসরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের ১২ শতাংশ কর্মী নারী।