
ডায়াবেটিস, উচ্চ কোলেস্টেরল, হরমোনের প্রভাব, শুষ্ক ত্বক, চোখে বারবার হাত দিয়ে রগড়ানো বা চুলকালে অঞ্জনির ঝুঁকি বেড়ে যায়। মানবদেহের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ হচ্ছে চোখ। চোখের পাতায় দুই ধরনের গ্রন্থি বিদ্যমান। একধরনের গ্রন্থি ঘাম নিঃসৃত করে এবং অন্যগুলো তৈলাক্ত রস নিঃসৃত করে। এখন কোনো কারণে এই গ্রন্থির মুখ বন্ধ হয়ে গেলে ঘাম ও তৈলাক্ত রস সেবাম গ্রন্থির অভ্যন্তরে আটকে যায়। এতে গ্রন্থিতে ইনফেকশন বা প্রদাহের সৃষ্টি হয়। ঘর্মগ্রন্থিগুলোয় কোনো কারণে সংক্রমণ হলে পাপড়ির থলি বা ল্যাশ ফলিকুলে পুঁজ জমা হয়ে ফুলে যায়। লালচে বর্ণ ধারণ করে ও ব্যথা হয়। এটিই অঞ্জনি।
কারণ
প্রশ্ন হলো, কেন সবার অঞ্জনি হয় না, আবার কারও কারও কিছুদিন পরপরই হয়। বিভিন্ন কারণে এই সংক্রমণ বা প্রদাহের ঝুঁকি বাড়ে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো চোখের পাতায় খুশকি বা ব্লেফারাইটিস, ত্বকের সমস্যা যেমন সেবোরিক ডার্মাটাইটিস, রসাসিয়া একনি ইত্যাদি। এ ছাড়া ডায়াবেটিস, উচ্চ কোলেস্টেরল, হরমোনের প্রভাব, শুষ্ক ত্বক, চোখের স্ট্রেসÑ যেমন রাত জাগা বা দীর্ঘ সময় স্ক্রিনে কাজ করা, চোখে বারবার হাত দিয়ে রগড়ানো বা চুলকানো ইত্যাদি কারণে অঞ্জনির ঝুঁকি বেড়ে যায়। প্রসাধনীর কারণেও ঝুঁকি বাড়তে পারে।
উপসর্গ
পাপড়ির গোড়ায় ছোট ছোট ফুসকুড়ির মতো দেখা দেয়। ব্যথা থাকে ও স্পর্শ করলে ব্যথা অনুভূত হয়। অনেক সময় লালচে ভাব পরিলক্ষিত হয়। পাপড়ির গোড়ায় ক্রাস্ট বা শক্ত ময়লা বিশেষ জমতে পারে। অঞ্জনির মতো আরও একটি সমস্যা হলো কেলাজিয়ন। এটি হলো মেবোমিয়ান গ্রন্থির প্রদাহ। এটি কোনো সংক্রমণ নয়। তাই এতে কোনো ব্যথা থাকে না। অঞ্জনি এক থেকে দুই সপ্তাহে সেরে গেলেও কেলাজিয়ন অনেক সময় কয়েক মাস বা তারও বেশি সময় একই রকম থাকতে দেখা যায়।
চিকিৎসা
হট কমপ্রেসন বা গরম সেঁক দিলে অনেক সময় উপকার পাওয়া যায়। অ্যান্টিবায়োটিক ড্রপ ডোজ মেনে ব্যবহার করতে হবে। প্রয়োজনে ড্রপের পাশাপাশি অ্যান্টিবায়োটিক সেবন করতে হবে।
করণীয়
চোখের পাতার পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিত করা। বিশেষ করে যাদের ব্লেফারাইটিস বা খুশকির সমস্যা আছে, তাদের চোখের পাতা বেবি শ্যাম্পু দিয়ে নিয়মিত পরিষ্কার রাখতে হবে। আর মাথায় খুশকি থাকলেও তা নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। হালকা গরম পানিতে কাপড় ভিজিয়ে চিপে চোখের পাতার ওপর কয়েক মিনিট ধরে রাখতে হবে। দৃষ্টির সমস্যা থাকলে পরীক্ষা করে প্রয়োজনে চশমা ব্যবহার করতে হবে। রাত জেগে কাজ করার অভ্যাস বাদ দিতে হবে। প্রসাধনীর ব্যবহারে সতর্ক থাকা। মুখের ত্বক সবসময় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। বিশেষ করে চোখের পাতা ভালো করে পরিষ্কার করতে হবে। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা।
এছাড়া চোখের যে কোনো উপসর্গ দেখা দিলেই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে।
উত্তর কোরিয়া সফল ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা চালালে তা নিয়ে আলোচনার ঝড় ওঠে। তবে সম্প্রতি দেশটির ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা নয়, সর্বোচ্চ নেতা কিম জং-উনের মেয়েকে নিয়ে বিশ্লেষকরা নানা ধরনের আলোচনায় মশগুল। লিখেছেন তৃষা বড়ুয়া
বাবার পাশে ছোট্ট মেয়ে
কিম ইল-সাং। উত্তর কোরিয়ার প্রতিষ্ঠাতা। তার নেতৃত্বে ১৯৩২ সালের ২৫ এপ্রিল গড়ে তোলা হয় জাপানবিরোধী গেরিলা বাহিনী কোরিয়ান পিপলস রেভল্যুশনারি আর্মি। পরে ১৯৪৮ সালে ওই আর্মি নিয়মিত সেনাবাহিনীতে রূপান্তরিত হয়। নতুন সেনাবাহিনীর নাম দেওয়া হয় কোরিয়ান পিপলস আর্মি। ৮ ফেব্রুয়ারি ছিল কোরিয়ান পিপলস আর্মির ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। এ উপলক্ষে রাজধানী পিয়ংইয়ং-য়ের কিম ইল-সাং স্কয়ারে বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানের আয়োজন করে কোরিয়ান পিপলস আর্মি। কুচকাওয়াজে অংশ নেয় ৩০ হাজারের বেশি সেনা। কিম ইল-সাং স্কয়ারে আন্তঃমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র, ট্যাংক, অস্ত্র ও গোলাবারুদ প্রদর্শন করে উত্তর কোরিয়া তার সামরিক শক্তি বিশ্বকে ফের জানান দেয়। দেশটির রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর একাধিক ছবি প্রকাশ করে। সেসব ছবিতে একজনকে দেখে অনেকে বিস্মিত হন। তিনি আর কেউ নন, উত্তর কোরিয়ার শাসক কিম জং-উনের ১০ বছর বয়সী মেয়ে কিম জু-এ। দেশটির রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম জানায়, ‘ওয়ার্কার্স পার্টি অব কোরিয়ার সাধারণ সম্পাদক ও ডেমোক্রেটিক পিপলস রিপাবলিক অব কোরিয়ার স্টেট অ্যাফেয়ার্সের প্রেসিডেন্ট কিম জং-উন তার প্রাণপ্রিয় মেয়ে কিম জু-এ ও স্ত্রী রি সল জুকে নিয়ে কিম ইল-সাং স্কয়ারে উপস্থিত হন।’ সেদিন কিম জু-এর পরনে ছিল সোনার বোতাম লাগানো কালো পশমের কোট, হাতে চামড়ার দস্তানা আর মাথায় কালো টুপি। এ নিয়ে কয়েক মাসের মধ্যে জনসম্মুখে বাবার সঙ্গে পাঁচবার হাজির হয় কিম জু-এ। ৮ ফেব্রুয়ারি প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আগের দিন এক সেনানিবাসে মা-বাবার সঙ্গে জমকালো ভোজে অংশ নেয় সে। উত্তর কোরিয়ার সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত ভোজের ছবিতে দেখা যায়, কিম জু-একে ঘিরে আছেন দেশটির উচ্চপর্যায়ের সামরিক কর্মকর্তারা।
কিমের উত্তরসূরি?
কোরিয়ান পিপলস আর্মির ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর দিন কিম জং-উনের মেয়ের উপস্থিতি স্বভাবতই রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের নজর কাড়ে। বিশেষ করে ওইদিন উত্তর কোরিয়ার রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম কিমের মেয়ে সম্পর্কে বলার সময় যেসব শব্দ ব্যবহার করে, তা নিয়ে রীতিমতো ব্যবচ্ছেদ শুরু হয়ে যায়। একজন রাষ্ট্রনায়কের সন্তানকে রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম কীভাবে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছে, কোন শব্দ ব্যবহার করছে, তা হয়তো অন্য দেশের শাসকের সন্তানের ক্ষেত্রে সেভাবে কেউ খেয়াল করতেন না। কিন্তু উত্তর কোরিয়ার শাসক কিম আলাদা। তার পরিবার নিয়ে কেউ খুব বেশি কিছু জানেন না। বলা ভালো, জানতে দেওয়া হয় না। উত্তর কোরিয়ার সংবাদমাধ্যম কিমের ছেলেমেয়ে নিয়ে দীর্ঘদিন মুখ খোলেনি। এমনকি কিমের ১৩, ১০ ও ৬ বছর বয়সী তিনটি ছেলেমেয়ে আছে বলে দক্ষিণ কোরিয়ার গোয়েন্দা সংস্থা গত বছর দাবি করলেও চুপ করেছিল উত্তর কোরিয়া। এর আগে কিমের সন্তানসন্ততির অস্তিত্ব সম্পর্কে মানুষ প্রথম জানতে পারে ২০১৩ সালে। ওই বছর যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক পেশাদার বাস্কেটবল খেলোয়াড় ডেনিস রডম্যান উত্তর কোরিয়া গিয়েছিলেন। তিনি সে সময় দাবি করেছিলেন, কিমের মেয়ে কিম জু-একে দেখেছেন তিনি। উত্তর কোরিয়া সফর শেষে ব্রিটিশ পত্রিকা দ্য গার্ডিয়ানকে রডম্যান বলেছিলেন, কিমের পরিবারের সঙ্গে সাগরের ধারে অবসর সময় কাটিয়েছেন তিনি। কিমের ছোট্ট শিশুকন্যা কিম জু-একে কোলে নেওয়ার সৌভাগ্য হয় তার।
দক্ষিণ কোরিয়া বা ডেনিস রডম্যান কিমের সন্তানদের নিয়ে কথা বললেও তাদের নিয়ে উত্তর কোরিয়ার সংবাদমাধ্যম মৌনব্রত ভাঙেনি। এ কারণে দেশটির সর্বোচ্চ নেতার ছেলেমেয়ে সম্পর্কে সবাই কম-বেশি অন্ধকারে আছেন। ধারণা করা হয়, কিম জু-এ তার দ্বিতীয় সন্তান। ২০১৩ সালে তার জন্ম। কিম জু-এর দুই ভাইবোন আছে। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর দিন কিম জু-এর ছবি প্রকাশ করে তাকে কিমের ‘সবচেয়ে প্রাণপ্রিয়’ও ‘মূল্যবান সন্তান’ হিসেবে উল্লেখ করে উত্তর কোরিয়ার সংবাদমাধ্যম। এসব শব্দ চয়নের মধ্য দিয়ে ১০ বছর বয়সী কিম জু-এর প্রতি বিশেষ সম্মান প্রদর্শন করা হয়। একই সঙ্গে শব্দগুলো রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের ভাবতে বাধ্য করছে কিমের দ্বিতীয় সন্তানই কি হতে যাচ্ছে তার উত্তরসূরি?
উত্তর কোরিয়ার গবেষক ও পর্যবেক্ষকদের কাছে উত্তরাধিকার বিষয়টি বরাবরই বেশ গুরুত্বপূর্ণ। এ নিয়ে তাদের জল্পনা-কল্পনার শেষ নেই। তিন মাস আগে কিম জং-উনের মেয়ে কিম জু-এর ছবি প্রথম প্রকাশ করে দেশটির সংবাদমাধ্যম। উত্তর কোরিয়ায় মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নেই। এ কারণে দেশটির গবেষক ও পর্যবেক্ষকরা সতর্কতা অবলম্বন করছেন। নয়তো তারা হয়তো এরই মধ্যে সরাসরি বলেই ফেলতেন, কিম জু-এর প্রকাশ্যে আসার অর্থ, সে-ই হচ্ছে তার বাবার উত্তরাধিকারী। কিম জং-উনের সময় কী ঘটেছিল, তা এ ক্ষেত্রে উল্লেখ করা যেতে পারে। ২০১১ সালে কিম জং-উনের বাবা উত্তর কোরিয়ার সাবেক সর্বোচ্চ নেতা কিম জং-ইল ৭০ বছর বয়সে মারা যান। তিনি ছিলেন উত্তর কোরিয়ার দ্বিতীয় সর্বোচ্চ নেতা। ১৯৯৪ থেকে ২০১১ সালে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত দেশকে নেতৃত্ব দেন কিম জং-ইল। তার মৃত্যুর মাত্র এক বছর আগে সবাই জানতে পারেন, তার সাত ছেলেমেয়ের মধ্যে কিম জং-উনই হচ্ছেন তার উত্তরাধিকার। উত্তর কোরিয়ার গবেষকরা বিশ্বাস করেন, কিম জং-উনের বয়স যখন মাত্র আট, তখনই তাকে উত্তরাধিকার করার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করে ফেলেন তার বাবা এবং এটি সে সময় শুধু দেশটির সেনাবাহিনীর শীর্ষ নেতারাই জানতেন। কিম জং-উনের দ্বিতীয় সন্তান কিম জু-এ আগামীতে দেশের নেতৃত্ব দেবে, এ নিয়ে গবেষকদের বড় অংশ পরোক্ষ ইঙ্গিত দিলেও কেউ কেউ অবশ্য এও মনে করছেন, কিম জং-উনের উত্তরাধিকার নিয়ে আলোচনা বা জল্পনা-কল্পনা করার সময় এখনো আসেনি, যেখানে বর্তমান শাসকের বয়স মাত্র ৩৯।
নারী নেতৃত্ব
উত্তর কোরিয়ার সমাজ মূলত পিতৃতান্ত্রিক। দেশটির রাজনীতিতে নারী প্রতিনিধিত্বের হারের দিকে তাকালে বিষয়টি আরও স্পষ্ট হয়। তবে উত্তর কোরিয়ার উচ্চপর্যায়ের নেতৃত্বে কয়েকজন নারী গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন। এদের মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত ব্যক্তি হলেন কিম জং-উনের ৩৫ বছর বয়সী বোন কিম ইয়ো-জং। তিনি একসঙ্গে দেশটির একাধিক গুরুত্বপূর্ণ পদে আছেন। উত্তর কোরিয়ার প্রভাবশালী কূটনীতিক ছাড়াও তিনি ওয়ার্কার্স পার্টি অব কোরিয়ার পাবলিসিটি অ্যান্ড ইনফরমেশন ডিপার্টমেন্টের ডেপুটি ডিপার্টমেন্ট ডিরেক্টর। পাশাপাশি কিম ইয়ো-জং দেশটির শক্তিশালী স্টেট অ্যাফেয়ার্স কমিশনের একমাত্র নারী সদস্য। উত্তর কোরিয়ার বিশেষজ্ঞদের একাংশ মনে করেন, শাসনকাঠামোয় নারীদের উপস্থিতি সেভাবে দেখা না গেলেও দেশের সর্বোচ্চ ক্ষমতায় একজন নারীকে কল্পনা করা ভবিষ্যতে খুব কষ্টকর নাও হতে পারে। উত্তর কোরিয়ার ক্ষমতা ও কিম জং-উনের পরিবার অঙ্গাঙ্গিভাবে যুক্ত। সেই হিসেবে ওই পরিবারের মেয়ে কিম জু-এ এরই মধ্যে একধাপে এগিয়ে আছে। তাকে অল্প বয়সে জনসম্মুখে হাজির করার সম্ভাব্য কারণ হতে পারে, সেনাবাহিনী ও জনগণের মধ্যে তাকে ঘিরে এক ধরনের গ্রহণযোগ্যতার বাতাবরণ সৃষ্টি করা, যাতে করে ভবিষ্যতে যখন কিম জং-উনের উত্তরাধিকার নিয়ে আলোচনা উঠবে, তখন উত্তর কোরিয়ার সর্বোচ্চ পদে কিম জু-একে বসানো অসম্ভব হয়ে না পড়ে। অবশ্য এ বিষয়ে ভিন্নমত পোষণ করেন টোকিওর ওয়াসেদা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও কিম রাজবংশ নিয়ে বইয়ের লেখক তোশিমিতসু শিগেমুরা। তিনি বলেন, ‘কিম জু-এ বাবার উত্তরসূরি হবে, এটা আমার পক্ষে বিশ্বাস করা কঠিন কারণ সে মেয়ে। উত্তর কোরিয়ার সমাজ অত্যন্ত রক্ষণশীল। কিম জু-এর পক্ষে বাবার উত্তরাধিকার হওয়া প্রায় অসম্ভব। আমি মনে করি, যখন সময় আসবে, কিম জং-উন দেশশাসনের দায়িত্ব ছেলেকেই দেবেন। তিনি চান, তার পরিবারের কেউ দেশের নেতা হবেন, অন্য কেউ নন। এই পদ যাতে হাতছাড়া না হয়, তার জন্য তিনি সর্বোচ্চ চেষ্টা করবেন।’এ বিষয়ে বিবিসির সিওল প্রতিনিধি জিন ম্যাকেঞ্জি বলেন, ‘কিম জং-উনের মেয়ের প্রকাশ্যে আসার ঘটনা উত্তর কোরিয়ার রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মনোযোগ কেড়েছে, এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। তাদের অনেকের কাছে ৮ ফেব্রুয়ারির ঘটনা যুক্তরাষ্ট্রকে আঘাত করতে সক্ষম উত্তর কোরিয়ার সবচেয়ে শক্তিশালী আন্তঃমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের সফল পরীক্ষার চেয়েও বেশি কিছু ছিল। কোরিয়ান পিপলস আর্মির ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর দিন কিম জু-এর উপস্থিতি আমাদের কয়েকটি প্রশ্নের মুখোমুখি করেছে। প্রথমত, কিমের এই মেয়েই কি তার উত্তরাধিকার হতে যাচ্ছে? এটি হওয়া অসম্ভব নয়। কিমের পারিবারিক ঐতিহ্য তাই বলে। কিম তার পরিবারের তৃতীয় প্রজন্মের সদস্য। এই পরিবার ৭০ বছরের বেশি সময় উত্তর কোরিয়া শাসন করছে। কিম চাইবেনই তার সন্তানদের একজন দেশের সর্বোচ্চ নেতা হোক। দ্বিতীয়ত, কিম জু-এর বয়স মাত্র ১০। কেন এখন তাকে সামনে আনা হচ্ছে? কিম যদি এত অল্প বয়সী মেয়েকে এখনই দেশের নেতা হওয়ার জন্য প্রস্তুত করা শুরু করেন, এর অর্থ কি ৩৯ বছর বয়সী এই শাসক জটিল শারীরিক সমস্যায় ভুগছেন? কিম অসুস্থ, এমনটা শোনা যাচ্ছে। এ কারণে কি তিনি মেয়েকে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে নিয়ে যাচ্ছেন? তাকে পরিবেশের সঙ্গে অভ্যস্ত করাচ্ছেন? তৃতীয়ত, উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক অস্ত্র কর্মসূচি ও কিমের মেয়ের উপস্থিতির মধ্যে কোনো ধরনের যোগাযোগ আছে কি? আমি মনে করি, সেনাবাহিনীর গুরুত্বপূর্ণ দিবসে কিমের মেয়েকে হাজির করার মধ্য দিয়ে এই ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে যে, ভবিষ্যতে দেশ পরিচালনার ক্ষমতা পাওয়ার পর কিম জু-এ পারমাণবিক অস্ত্র কর্মসূচি আরও উন্নত করতে ভূমিকা রাখবে। সম্প্রতি কিম জং-উন বলেছেন, কোনো অবস্থাতেই পারমাণবিক অস্ত্র কর্মসূচি থেকে তিনি সরে আসবেন না। সশস্ত্র বাহিনীর অনুষ্ঠান থেকে শুরু করে সেনানিবাসে আয়োজিত ভোজে মেয়েকে নিয়ে গিয়ে তিনি হয়তো বিশ্বনেতাদের এই বার্তাই দিতে চেয়েছেন, পারমাণবিক অস্ত্র কর্মসূচি তার উত্তরসূরি বন্ধ তো করবেই না, বরং আরও এগিয়ে নিয়ে যাবে।’
দক্ষিণ কোরিয়ার রাজনৈতিক বিশ্লেষক চিয়ং সিয়ং-চ্যাং বলেন, ‘কিম যদি মনে করেন, তার ছেলের মধ্যে নেতৃত্বের ক্ষমতা নেই, তাহলে তিনি তাকে উত্তরসূরি করবেন না। পরিবারের চতুর্থ প্রজন্মের প্রতিনিধি কিম জু-একে শাসনভার দিলে উত্তর কোরিয়ার সমাজ এ নিয়ে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া দেখাতে পারে। হয়তো এ কারণে কিম জং-উন তার মেয়েকে সেসব বিশেষ অনুষ্ঠানে নিয়ে যাচ্ছেন, যেখানে গেলে মানুষ শুধু তার প্রতিই আনুগত্য দেখাবে না, কিম জং-এর প্রতিও অনুগত থাকবে, বর্তমানে এবং ভবিষ্যতেও। একজন রাজার যখন একাধিক সন্তান থাকে, তখন তিনি তার সবচেয়ে আদরের সন্তানকে উত্তরাধিকার করবেন, এটাই স্বাভাবিক। ধারণা করা হচ্ছে, এখন থেকে কিম জু-একে মাঝেমধ্যেই তার বাবার পাশে দেখা যাবে এবং এর মধ্য দিয়ে তাকে যোগ্য উত্তরাধিকার হিসেবে গড়ে তোলা হবে।’
এবার চীনে পা রাখতে পারে মার্ক জাকারবার্গের সংস্থা মেটা। তবে তা সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে নয়। এবার ভার্চুয়াল রিয়্যালিটির হেডসেট চীনে সরবরাহের ভাবনাচিন্তা রয়েছে মেটার। এরই মধ্যে বিষয়টি নিয়ে চীনা সংস্থা টেনসেন্ট হোল্ডিংসের সঙ্গে কথাবার্তাও বলেছে মেটা।
এরই মধ্যে ভার্চুয়াল রিয়্যালিটির জগতে পা রেখেছে ফেসবুকের প্রধান সংস্থা মেটা। বাজারে এসেছে মেটাভার্স। তাদের ভার্চুয়াল রিয়্যালিটির হেডসেট মেটা কোয়েস্ট সিরিজ এনেছে তারা। জানা যায়, আর এই হেডসেট নিয়ে গত বছর থেকেই বেশ কয়েকবার কথা হয়েছে সংস্থা দুটির। নতুন বছরেও টেনসেন্টের সঙ্গে বেশ কটি মিটিং করেছে মেটা।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ভালো নয় চীনের। ফলে অন্য বেশ কিছু মার্কিন সংস্থার মতোই চীনে নিষিদ্ধ ফেসবুকও। সত্যি এ বছর পর যদি এই চুক্তি সম্ভব হয়, তাহলে প্রথমবার নিজেদের পণ্য নিয়ে চীনে পা রাখবে মেটা। তবে সূত্রের পক্ষ থেকে জানা গেছে, এ বিষয়ে এখনো আনুষ্ঠানিক কোনো কথা হয়নি।
বিশে^র অন্যতম বড় ভিডিও গেম পাবলিশার টেনসেন্ট। বহুদিন ধরেই ভার্চুয়াল রিয়্যালিটি নিয়ে কাজ করে আসছে তারা। ভার্চুয়াল রিয়্যালিটির সফটওয়্যার ও হার্ডওয়ার দুটোকে মিলিয়ে এক্সটেনডেড রিয়্যালিটির একটি এক্সআর ইউনিট গত বছরের জুনে চালু করে সংস্থাটি। তবে লাভ না হওয়ায় সম্প্রতি এক্সআর ইউনিট তৈরির বিষয়টি স্থগিত রেখেছে টেনসেন্ট। চীনে সংস্থাটির সবচেয়ে বড় প্রতিদ্বন্দ্বী বাইটডান্সের টিকটক। ২০২১ সালে পিকো নামে একটি হেডসেট ম্যানুফ্যাকচারার সংস্থাকে অধিগ্রহণ করে বাইটডান্স। তখন অধিগ্রহণের এ লড়াই থেকে কার্যত ছিটকে যায় টেনসেন্ট।
তাই টিকটকের সঙ্গে পাল্লা দিতে কোনো প্রভাবশালী সংস্থাকে পাশে চাইছে টেনসেন্ট। এদিকে ২০১২ সালে ভিআর হেডসেট তৈরির জগতে পা রাখে মেটা। প্রথমে ‘অকুলাস’ নাম নিয়ে যাত্রা শুরু করলেও পরে তাদের ভিআর হেডসেট সিরিজের নাম রাখা হয় মেটা কোয়েস্ট।
তবে শেষ শেষ পর্যন্ত টেনসেন্টের সঙ্গে মেটার কাক্সিক্ষত চুক্তিটি সই হয় কি না সেদিকেই তাকিয়ে সবাই।
স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার পাশাপাশি শরীর সুস্থ রাখার অন্যতম শর্ত হলো পর্যাপ্ত ঘুম। যেকোনো শারীরিক সমস্যা থেকে দূরে থাকতে ঘুম অত্যন্ত জরুরি। সারা দিনে ৭-৮ ঘণ্টা ঘুমানো বাধ্যতামূলক। কিডনি, লিভার, মানসিক অবসাদ, ডিমেনশিয়া, আর্থরাইটিসের মতো হাজার সমস্যার সমাধান লুকিয়ে আছে ঘুমেই। শুধু শারীরিক সমস্যা থেকে বাঁচতে নয়, কাজের গতি বাড়াতে এবং শরীর চনমনে রাখতেও জরুরি ঘুম। কমপক্ষে যদি ছয় ঘণ্টাও টানা ঘুম না হয়, তাহলে নানান সমস্যা দেখা দিতে পারে।
কম ঘুম মানসিক অবসাদ বাড়িয়ে তোলে। অনিদ্রা আর মানসিক অবসাদ পরস্পর এতটাই নিবিড় সম্পর্কযুক্ত যে, একটি আক্রান্তকে অন্যটির দিকে টেনে নিয়ে যায়। অবসাদের লক্ষণগুলো রোগীর ঘুমিয়ে পড়ার ক্ষমতাকেও প্রভাবিত করতে পারে।
শার্প ওয়েভ রিপালস নামে পরিচিত মস্তিষ্কের একটি ক্রিয়া স্মৃতিকে একত্র করতে সাহায্য করে। মস্তিষ্কের নিওকর্টেক্স ও হিপ্পোক্যাম্পাসের সহায়তায় এই স্মৃতি স্থায়ী জ্ঞানে রূপান্তরিত হয়। গভীর ঘুমের মধ্যে এই প্রক্রিয়াটি সবচেয়ে ভালো হয়। সুতরাং দেরি করে ঘুমোতে গেলে এই প্রক্রিয়াটি সঠিকভাবে সম্পন্ন হয় না। ফলে ভুলে যাওয়ার সমস্যা দেখা যায়।
ঘুম কম হলে বেশ কিছু দীর্ঘস্থায়ী রোগ হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়। চিকিৎসকদের মতে, ৯০ শতাংশ ক্ষেত্রে দেখা যায় যে, যারা অনিদ্রায় ভুগছেন, তারা অন্য একটি দীর্ঘস্থায়ী স্বাস্থ্যসংকটেও ভুগছেন। ডায়াবেটিস, স্ট্রোক, অনিয়মিত হৃৎস্পন্দন, হৃদরোগ বা উচ্চ রক্তচাপের মতো দীর্ঘস্থায়ী রোগ ঘুমের অভাবের সঙ্গে জন্ম নেয়।
রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে পাঁচটি চ্যাম্পিয়নস লিগ শিরোপা জিতেছেন গ্যারেথ বেল। তাই এই টুর্নামেন্টের ফাইনাল সম্পর্কে ভালো ধারণা আছে ওয়েলসের সাবেক অধিনায়কের। আজ রাতে চ্যাম্পিয়নস লিগ ফাইনালে মুখোমুখি হবে ম্যানচেস্টার সিটি ও ইন্তার মিলান। বেলের বাজি সিটির পক্ষে।
ইংলিশ ক্লাব সাউদাম্পটন ও টটেনহামে খেলার সময় ম্যানসিটির বিপক্ষে খেলেছেন বেল। আজ রাতে চ্যাম্পিয়নস লিগ ফাইনালের ফলাফলের সঙ্গে ম্যাচসেরা কে হবেন সেই মতামতও দিয়েছেন বেল। ইন্সটাগ্রামে বেল বলেন, 'ম্যানসিটি ৫-০ তে হারাবে ইন্তার মিলানকে।’
বেলের মতে, ম্যাচসেরা হবেন সিটি মিডফিল্ডার কেভিন ডি ব্রুইনে। চলতি বছরের জানুয়ারিতে ৩৩ বছর বয়সে পেশাদার ফুটবল থেকে অবসর নেন বেল। তার আগে কাতার বিশ্বকাপে খেলে বিশ্ব ফুটবল মঞ্চে খেলার অভিজ্ঞতা নিয়ে গেছেন।
মৌসুমে প্রিমিয়ার লিগ ও এফএ কাপ শিরোপা জিতেছে পেপ গার্দিওলার দল। আজ চ্যাম্পিয়নস লিগ জিতলে ট্রেবল হবে তাদের। ২০২১ এ চ্যাম্পিয়নস লিগ ফাইনালে চেলসির কাছে হেরেছিল ম্যানসিটি।
দ্বিতীয় ইনিংসের শুরুটা প্রত্যাশামতো পায়নি অস্ট্রেলিয়া। তবে মিডল অর্ডাররা দিয়েছেন আস্থার প্রতিদান। তাতে ভারতকে ৪৪৪ রানের লক্ষ্য দেয় অসিরা। এই রান তাড়া করলেই বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের নতুন শিরোপাজয়ী হবে ভারত। রান টপকালে শুধু জয়ই হবে না, হবে রেকর্ডও। তাই শেষ দিনে বিরাট কোহলি ও অজিঙ্কা রাহানের পানে তাকিয়ে থাকবে ভারত।
টেস্ট চ্যাম্পিয়ন হতে হলে বিশ্বরেকর্ডটাই করতে হবে ভারতকে। করতে হবে টেস্টের সর্বোচ্চ রান তাড়ার রেকর্ড। আর না হলে ড্রয়ের জন্য মরিয়া হয়ে ওভালে পঞ্চম দিনের পিচে মাটি কামড়ে পড়ে থাকতে হবে কোহলি-রাহানেদের। এ ছাড়া আর কোনো পথ খোলা নেই ভারতের সামনে।
রেকর্ড গড়ার লক্ষ্যে নেমে লন্ডনের ওভালে আজ চতুর্থ দিন শেষে ভারত তুলেছে ৩ উইকেটে ১৬৪ রান। দুই বছরের জন্য টেস্ট শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট পেতে রবিবার পঞ্চম তথা শেষ দিনে ভারতের দরকার ২৮০ রান, অস্ট্রেলিয়ার চাই ৭ উইকেট। শেষ দিনের শুরুটা করবেন অজিঙ্কা রাহানে (২০*), সঙ্গে বিরাট কোহলি (৪৪*)।
টেস্টের শেষ ইনিংসে ব্যাট করা সবসময়ই কঠিন। ২০০৩ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৪১৮ রানের লক্ষ্য তাড়া করে উইন্ডিজের ওই জয় এখনো সাদা পোশাকে সর্বোচ্চ রান তাড়ার রেকর্ড। সে হিসেবে ওভালে ভারতের চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পথটা অনেক কঠিন।
রেকর্ড গড়ার লক্ষ্যে ভারতের শুরুটা হয়েছিল ওয়ানডে মেজাজে। প্রথম ৭ ওভারে দুই ওপেনার রোহিত শর্মা ও শুবমান গিল করেন ৪১ রান। গ্রিনের বিতর্কিত এক ক্যাচে বোল্যান্ডের বলে গিল আউট হলেও খেলার ধরন পাল্টাননি রোহিতরা।
১৯ ওভারে ৯১ রান তোলা ভারত ২০তম ওভারে হারায় রোহিতকে। এই ইনিংস খেলার পথে ওপেনার হিসেবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ১৩ হাজার রানের মাইলফলক ছুঁয়েছেন রোহিত।
রোহিতের আউটের পর যখন সবাই ভাবছিলেন, উইকেটে থাকা চেতেশ্বর পূজারা তাঁর চিরাচরিত ধরন মেনে রয়েসয়ে ব্যাটিং করবেন। তবে পূজারা আউট হন নিজের চরিত্রের বাইরে গিয়ে কামিন্সের বলে আপার কাট খেলতে গিয়ে।
এর আগে ৪ উইকেটে ১২৩ রান তুলে গতকাল তৃতীয় দিনের খেলা শেষ করে অস্ট্রেলিয়া। আজ চতুর্থ দিন সকালটা দুর্দান্ত শুরু করেন ভারতের পেসাররা। কাল ৪১ রানে অপরাজিত থাকা লাবুশেন চতুর্থ দিনে কোনো রান যোগ না করেই আউট হন উমেশ যাদবের দলে। স্লিপে চেতেশ্বর পূজারার হাতে ক্যাচ দেওয়ার আগে ১২৬ বলে ৪ চারে ৪১ রান করেছেন লাবুশেন। অ্যালেক্স ক্যারি (৬৬*) ও বোলার মিচেল স্টার্কের (৪১) ৯৩ রানের জুটিতে দারুণ পুঁজি গড়ে ফেলে অজিরা। সুবাদে ৮ উইকেটে ২৭০ রান করে দ্বিতীয় ইনিংস ঘোষণা করা সহজ হয় দলটির। হয়তো জয়ের পথটাও তৈরি হলো ওই জুটিতে।
সর্বকালের অন্যতম সেরা ফুটবলার লিওনেল মেসি আর্জেন্টিনার হয়ে খেলেন বলেই লাতিন দেশটিকে নিয়ে বাংলাদেশের মানুষের যত উৎসাহ–উদ্দীপনা। এর আগেও বাংলাদেশের মানুষ ম্যারাডোনা–প্রীতি থেকে আর্জেন্টিনার প্রতি ভালোবাসা দেখিয়েছেন। কিন্তু এবার কাতার বিশ্বকাপে অতীতের সেই ভালোবাসা বা উদ্দীপনাকে চরমভাবে হার মানিয়েছে। আর এর কারণ ওই একটাই, মেসি।
মেসি যে ইউরোপের ফুটবলের পাট চুকিয়ে মেজর লিগ সকারের দল ইন্টার মায়ামিতে যাচ্ছেন, সেই ঘোষণা আসে গত বুধবার। এখনও নাম লেখাননি, কবে থেকে মায়ামির হয়ে মাঠে নামবেন, সেটাও নিশ্চিত নয়। শুধু মেসি ইন্টার মায়ামিতে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। এরপরই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ইন্টার মায়ামির অনুসারীর সংখ্যা বাড়ছে হু হু করে।
গুগলে ফ্লোরিডাভিত্তিক এই ক্লাবটিকে খোঁজা শুরু করে সারা বিশ্বের মেসি–সমর্থকেরা। গুগলে গত ৭ দিনে সবচেয়ে বেশি মায়ামিকে খোঁজা হয়েছে বাংলাদেশ থেকেই। গুগলে এই খোঁজার দিক থেকে বাংলাদেশ এগিয়ে মেসির নিজের দেশ আর্জেন্টিনার চেয়েও। কেউ কেউ বলতে পারেন, বাংলাদেশের জনসংখ্যা আর্জেন্টিনার চেয়ে বেশি ১৪ কোটি। সেই বিবেচনায় এটাই তো হওয়ার কথা।
মূলত গুগল ট্রেন্ডে কোনো ওয়েব সার্চের সর্বোচ্চ জনপ্রিয়তার মানদণ্ড হচ্ছে ১০০। বাংলাদেশ এখানে পেয়েছে এক শই। শনিবার বিকেল ৫টা ১৫ মিনিট পর্যন্ত আর্জেন্টিনা পেয়েছে ৮৪।
গুগল ট্রেন্ডের এই তালিকায় বাংলাদেশ আর্জেন্টিনার পরের নামটা নেপালের। তারা পেয়েছে ৮২। চার নম্বরে আছে হাইতি (৮১), আর পাঁচে আইভরি কোস্ট (৭৩)। এই তালিকায় সেরা দশে আছে ইরাক, ইয়েমেন, কঙ্গো, হন্ডুরাস, নিকারাগুয়া। মেসিকে নিজেদের লিগে নিতে চাওয়া সৌদি আরব আছে এই তালিকার ১৪ নম্বরে।
যুক্তরাষ্ট্র আছে ৫১ নম্বরে। এতে অবশ্য অবাক হওয়ার কিছু নেই। কারণ নিজেদের দেশের ক্লাব সম্পর্কে যুক্তরাষ্ট্রের মানুষের ভালোই জানাশোনা থাকার কথা। তা ইন্টার মায়ামি ক্লাব হিসেবে যতই নতুন হোক না কেন।
ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে ১২ বছরে ৭ বারই চ্যাম্পিয়ন ম্যানচেস্টার সিটি। পেপ গার্দিওলার অধীনেই ৫ বার। কিন্তু ইউরোপের শ্রেষ্ঠত্বের লড়াইয়ে বারবার ব্যর্থ হয়েছে তারা। দুবছর আগে ফাইনালে উঠলেও পারেনি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জিততে। অবশেষে গেঁরো খুলতে পারল তারা। ইন্তার মিলানকে হারিয়ে ইউরোপের সর্বোচ্চ ক্লাব আসরের শিরোপা জিতেছে তারা।
ইস্তানবুলের ফাইনালে ইতালীয় ক্লাবকে ১-০ গোলে হারিয়ে এই আসরের নতুন চ্যাম্পিয়ন হয়েছে তারা। একমাত্র গোলটি করেছেন ৬৮ মিনিটে স্প্যানিশ মিডফিল্ডার রদ্রি।
প্রথমবার চ্যাম্পিয়ন্স লিগ শিরোপা জিতে এবারের মৌসুমে ট্রেবলও পূরণ করে নিল সিটি। এর আগে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ ও এফএ কাপের শিরোপা জিতেছিল তারা। তাদের আগে একমাত্র ইংলিশ ক্লাব হিসেবে ট্রেবল জিতেছিল তাদের নগর প্রতিদ্বন্দ্বী ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড। আর কোচ হিসেবে দুবার ট্রেবল জয়ের নতুন রেকর্ডও গড়লেন গার্দিওলা। এর আগে বার্সেলোনার কোচ হিসেবে প্রথমবার ট্রেবল জিতেছিলেন তিনি।
২০২১-র ফাইনালে রদ্রিকে না খেলানো নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা হয়েছিল গার্দিওলার। দুই বছর পর আরেকটি ফাইনালে সিটির জয়ের মূলনায়ক সেই রদ্রি। ডিফেন্সিভ এই মিডফিল্ডার গোল নিয়ে অতো ভাবেন না। চ্যাম্পিয়ন্স লিগে ১১ ম্যাচ খেলে একটা গোল ছিল তারা। সেটি ছিল এবারের আসরের কোয়ার্টার ফাইনালে ঘরের মাঠে বায়ার্ন মিউনিখকে ৩-০ গোলে হারানো ম্যাচের প্রথমটি। সেই গোলের পেছনে অবদান ছিল যার সেই বার্নার্দ সিলভা ইস্তানবুলে গোলশূণ্য প্রথমার্ধের পর ৬৮ মিনিটে ইন্তার গোললাইনের কাছ থেকে বল ফিরিয়ে দেন বক্সের মাথায়। অরক্ষতি রদ্রির কথা কেউ ভাবেইনি। ডান পায়ের চতুর শটে দুই ডিফেন্ডারের পা এড়িয়ে ডান দিকে জালে জড়ায় বল (১-০)।
এর পরপরই সমতা ফেরানোর সম্ভাবনা তৈরি করেছিল ইন্তার। কিন্তু দুর্ভাগ্য তাদের, দিমারকোর হেড বাধা পায় পোস্টে। ২০২১'র ফাইনালে মতো এবারো চোটে পড়ে মাঠ ছাড়েন সিটির মধ্যমাঠের প্রাণ ডি ব্রুইনে। ৩৬ মিনিটেই মাঠে নামা ফিল ফোডেন ইন্তারের আক্রমণ ভাগে বার বার হানা দিয়েছেন। তবে সিটির আর গোল পায়নি। বরং গোল খেতে পারতো তারা। কিন্তু গোলরক্ষক এডারসনের দক্ষতায় দুবার নিশ্চিত বেচে যায়। রবিন গোসেনের ক্রস থেকে একেবারে ফাঁকায় থেকে হেড নেওয়ার সুযোগ পান লুকাকু। কিন্তু নেন গোলরক্ষক বরাবর। কোনো মতে পা দিয়ে ঠেকিয়ে সে যাত্রা দলকে রক্ষা করেন এডারসন।
ম্যাচের অন্তিম মুহূর্তে এডারসনের আরও একটি দুর্দান্ত সেভ। কর্নার থেকে গোসেনের নেওয়া হেড ঝাঁপিয়ে ঠেকান তিনি। এরপর রেফারি শেষ বাঁশি বাজালে উল্লাসে মাতে সিটিজেনরা।
সাধারণত প্রাথমিক স্তরে একটি দেশে এক ধরনের শিক্ষাব্যবস্থাই চালু থাকে। তবে কোনো কোনো দেশে এক শিক্ষাব্যবস্থার মধ্যেও পাঠক্রমে (কারিকুলামে) ভিন্নতা থাকে সেটা সর্বোচ্চ দুই বা তিন ধরনের হয়ে থাকে। অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত প্রাথমিক শিক্ষা শেষে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানই ঠিক করে দেয় শিক্ষার্থীরা কী ধরনের শিক্ষাগ্রহণ করবে।
বাংলাদেশে প্রথম শ্রেণি থেকেই হরেক রকমের শিক্ষাব্যবস্থা এবং হরেক পরীক্ষা চালু আছে। এসএসসি বা সমমানের পরীক্ষা ১২ রকমে দেওয়া যায়। ফলে এক সনদের জন্য ১২ রকমের শিক্ষাগ্রহণের সুযোগ রয়েছে। এতে করে শিক্ষার্থীদের মধ্যে বৈষম্য বাড়ছে। আর শিক্ষা-প্রশাসনের পক্ষে শৃঙ্খলা রক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়ছে।
প্রচলিত বা সাধারণ স্কুলগুলোতে যারা পড়ালেখা করে তারা ‘সাধারণ’ এসএসসি পরীক্ষা দিয়ে থাকে। আর মাদ্রাসায় যারা পড়ে তারা দেয় দাখিল পরীক্ষা। দাখিল ভোকেশনাল নামেও একটি পরীক্ষা দেওয়া যায়। কারিগরিতে যারা পড়ে তারা দেয় এসএসসি (ভোকেশনাল) পরীক্ষা। এসএসসি পরীক্ষা উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের মাধ্যমেও দেওয়া যায়। প্রাইভেট এসএসসি পরীক্ষা দেওয়ার ব্যবস্থাও আছে। মাধ্যমিকে যেসব বিদ্যালয়ে ইংরেজি ভার্সন রয়েছে, সেখানে ইংরেজি ভাষায় এসএসসি পরীক্ষা দেওয়া যায়।
ইংলিশ মিডিয়ামে (ইংরেজি ভার্সন নয়) যারা পড়ে, তাদের এসএসসি সমমানের পরীক্ষার নাম ‘ও’ লেভেল। সে ব্যবস্থাতেও এডেক্সেল ও কেমব্রিজ কারিকুলামের স্কুলে পৃথক পড়ালেখা। আর সারা দেশেই ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে কওমি মাদ্রাসা; এ শিক্ষাকেও সরকার স্বীকৃতি দিয়েছে। কওমি শিক্ষাব্যবস্থা থেকে দাওরায়ে হাদিস পাস করা শিক্ষার্থীদের মাস্টার্সের সমমান দেওয়া হয়েছে। কওমিতে হাফেজি ও মাওলানা (টাইটেল) ধারায় পড়ালেখার সুযোগ রয়েছে।
ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক এম তারিক আহসান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘শিক্ষায় বিভিন্ন ধারা থাকা অস্বাভাবিক নয়। তবে এ ধারাগুলো যদি একটা ফ্রেমওয়ার্ক ও মনিটরিংয়ে না থাকে, তাহলে বিশৃঙ্খলা হবে। নতুন শিক্ষাক্রমের রূপরেখায় বিভিন্ন ধারাকে একটা ফ্রেমওয়ার্কে নিয়ে আসার চেষ্টা করা হয়েছে; অর্থাৎ সবার জন্য নির্দিষ্ট কিছু বিষয় রাখা হয়েছে। নতুন শিক্ষাক্রম অনুযায়ী পাঠদান ও মূল্যায়ন করা হচ্ছে কি না তা শিক্ষার সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোকে মনিটরিং করতে হবে।’
তারিক আহসান বলেন, ‘কওমিতে অনেক শিক্ষার্থী পড়ালেখা করে, এটা ঠিক। তবে সরকার তাদের কিছু ডিগ্রিকে সাধারণ শিক্ষার সমমান দিচ্ছে। এই শিক্ষাকেও একটা প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে মূল ধারায় নিয়ে আসতে হবে।’
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, সাধারণ এসএসসি ও ইংরেজি ভার্সনের এসএসসি পরীক্ষা নেওয়ার জন্য আছে ৯টি শিক্ষা বোর্ড। মাদ্রাসায় দুই ধরনের দাখিলের জন্য রয়েছে মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড। কারিগরি শিক্ষার জন্য আছে কারিগরি শিক্ষা বোর্ড। উন্মুক্ত বিশ^বিদ্যালয়ের মাধ্যমেও দেওয়া যায় এসএসসি পরীক্ষা। শিক্ষা বোর্ডগুলোর অধীনেই প্রাইভেট এসএসসি দেওয়ার সুযোগ রয়েছে।
ইদানীং ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের দৌরাত্ম্য বাড়ছে। বিভাগীয় এবং জেলা শহরেও ছড়িয়ে পড়েছে ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল। এসবের বেশিরভাগের নিবন্ধন নেই। তারা এডেক্সেল ও কেমব্রিজ কারিকুলামে পরীক্ষা দিলেও তাদের কোনো নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ নেই। শিক্ষা বোর্ডগুলো তাদের নিয়ন্ত্রণ করে না।
অনেক আগে থেকেই আমাদের দেশে কওমি মাদ্রাসার শিক্ষা চালু রয়েছে। করোনার পর দেশে সাধারণ স্কুলের সংখ্যা কমলেও কওমি মাদ্রাসার সংখ্যা বেড়েছে। শিক্ষার্থীদের একটা বড় অংশ কওমি মাদ্রাসায় লেখাপড়া করে। তাদের পরীক্ষার জন্য তারা নিজেরাই একাধিক বোর্ড বানিয়েছে। এগুলোতে সরকারের তেমন নিয়ন্ত্রণ নেই।
জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের সদস্য (শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক মো. মশিউজ্জামান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বেসিক বিষয়গুলো সবাই অনুসরণ করে। কারিগরি ও মাদ্রাসায় আলাদা কিছু বিষয় যুক্ত রয়েছে। আমি বলব, বিভিন্ন ধারা বলে কিছু নেই। তবে ব্যতিক্রম ইংলিশ মিডিয়াম। আমাদের দেশের ইংলিশ মিডিয়ামে সাধারণত ব্রিটিশ কারিকুলামে পড়ানো হয়। সেখানেও আমরা বাংলাদেশ স্টাডিজ নামে একটি বিষয় যুক্ত করেছি। ওই কারিকুলামের শিক্ষার্থীরা যেন দেশপ্রেম ভুলে না যায় এবং নিজের ভাষা-সংস্কৃতির প্রতি বিরূপ মনোভাবের না হয়। আরেকটি বড় ব্যতিক্রম কওমি মাদ্রাসা। সেটা রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের বিষয়।’
যারা খুব দরিদ্র তারা সাধারণত কওমি শিক্ষায় যায়। সেখানে পড়ালেখার পাশাপাশি থাকা-খাওয়ারও ব্যবস্থা থাকে। যারা নিম্নমধ্যবিত্ত বা মধ্যবিত্ত তারা সাধারণ স্কুলে লেখাপড়া করে। উচ্চবিত্তরা সাধারণত তাদের সন্তানদের ইংলিংশ মিডিয়াম স্কুলে পড়ালেখা করান। ইদানীং মধ্যবিত্তরাও ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল ও ইংরেজি ভার্সনের স্কুলে ঝুকছে। যারা পড়ালেখায় পিছিয়ে তারা সাধারণত কারিগরি শিক্ষায় যায়। আর যেসব অভিভাবক ধর্মীয় ও সাধারণ শিক্ষার মিশ্রণ চান, তারা সাধারণত তাদের সন্তানদের আলিয়া মাদ্রাসায় পাঠান।
শিক্ষাবিদরা বলছেন, দেশে একাধিক শিক্ষাব্যবস্থা চালু থাকায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে বৈষম্য বাড়ছে। আবার শিক্ষাকাঠামোর নিয়ন্ত্রণ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের হাতে থাকছে না। অনেক মেধাবী শিক্ষার্থী তার পছন্দের বাইরের শিক্ষাব্যবস্থায় পড়ালেখা করতে বাধ্য হচ্ছে। এতে শিক্ষার্থীদের আগ্রহ কমে যাচ্ছে। ফলে মাধ্যমিকে ঝরেপড়া কমছে না। আবার উচ্চশিক্ষায় গিয়েও অনেকে তাল মেলাতে পারছে না। অনেকে তার উচ্চমাধ্যমিক পর্যন্ত পড়ালেখা তেমন কাজে লাগাতে পারছে না।
ব্রিটেনে সাধারণত অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত সবার একই রকমের শিক্ষা। এরপর শিক্ষার্থীদের দুই ভাগে ভাগ করা হয়। একদল যায় কারিগরি শিক্ষায়। অন্যদল যায় সাধারণ শিক্ষায়। যদিও দুই ভাগেই কিছু ট্রেড কোর্স থাকে। কে কোন ধরনের শিক্ষায় যাবে তাতে অভিভাবকদের কিছু বলার নেই। শিক্ষকরাই বিবেচনা করে শিক্ষার্থীর জন্য শিক্ষাব্যবস্থা নির্ধারণ করেন।
কোনো দেশের উন্নয়নের মূল হচ্ছে কারিগরি শিক্ষার প্রসার। এ ক্ষেত্রে আমরা অনেক পিছিয়ে। কারিগরিতে এখনো মেধাবী শিক্ষার্থীরা যাচ্ছে না। সরকার ১৪ থেকে ১৬ শতাংশ শিক্ষার্থীকে কারিগরিতে নিতে পেরেছে বললেও তাতে নানা ফাঁকি রয়েছে। কওমি মাদ্রাসা ও ইংলিশ মিডিয়ামে শিক্ষার্থী বাড়লেও কারিগরিতে সেভাবে শিক্ষার্থী বাড়ছে না।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, বিশে^র বেশিরভাগ দেশেই শিক্ষাব্যবস্থা চলে রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনায়। অর্থাৎ উচ্চমাধ্যমিক পর্যায় পর্যন্ত একজন শিক্ষার্থীর পড়ালেখার দায়িত্ব রাষ্ট্রের। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা স্কুলেই সময় কাটায়। আমাদের দেশের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত বিনামূল্যে পড়ালেখা করা যায়। তবে টিউশন ফি ও বই ছাড়াও শিক্ষার্থীদের নানা খরচ থাকে, যা পরিবারকে বহন করতে হয়। মাধ্যমিক থেকে পুরোপুরিই পড়তে হয় অভিভাবকদের খরচে। ফলে অভিভাবকদের পছন্দে ও বাণিজ্যিক কারণে নানা ধরনের শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে উঠেছে। এর থেকে সরকার কোনোভাবেই বের হতে পারছে না। বের হওয়ার পরিকল্পনাও দেখা যাচ্ছে না।
জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০ প্রণয়ন কমিটির সদস্য অধ্যক্ষ কাজী ফারুক আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘২০১০ সালের শিক্ষানীতিতে দেশি-বিদেশি শিক্ষাকে এক প্ল্যাটফর্মে নিয়ে আসার কথা বলা হয়েছিল; অর্থাৎ সবাইকে কিছু কোর সাবজেক্ট পড়তে হবে। কিন্তু সেটা হয়নি। সবাই দলীয় দৃষ্টিভঙ্গিতে আচ্ছন্ন। মতভেদও রয়েছে। আমাদের বুঝতে হবে, মাদ্রাসায় শিক্ষার্থীরা যায়, কারণ সেখানে পড়তে পয়সা লাগে না। আমাদের হাজার হাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আছে। আমরা প্রতিষ্ঠানগুলোর সরকারীকরণ করেছি। কিন্তু রাষ্ট্র শিক্ষার্থীদের পুরো দায়িত্ব নিচ্ছে না। যত দিন রাষ্ট্র দায়িত্ব নেবে না, তত দিন সব ধরনের শিক্ষাকে এক প্ল্যাটফরমে আনা কঠিন।’
একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবিরের মেয়ে অর্পিতা শাহরিয়ার কবির মুমুর (৪১) ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। মৃত্যুর আগে তিনি চিরকুট লিখে গেছেন। তবে সেখানে কি লেখা আছে তা নিশ্চিত করে জানা যায়নি।
বৃহস্পতিবার রাতে রাজধানীর মহাখালীর আমতলী এলাকার বাসা থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়। রাতেই পরিবারের দাবির প্রেক্ষিতে ময়নাতদন্ত ছাড়ায় মরদেহ হস্তান্তর করেছে পুলিশ। বিষয়টি দেশ রূপান্তরকে নিশ্চিত করেছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গুলশান বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) মো. জাহাঙ্গীর আলম। পুলিশের ধারণা, অর্পিতা গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন।
গুলশান বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মো. শহীদুল্লাহ সাংবাদিকদের বলেন, খবর পেয়ে পুলিশ বাসা থেকে লাশটি উদ্ধার করে। পরে স্বজনের অনুরোধে ময়নাতদন্ত ছাড়াই লাশ দাফনের অনুমতি দেওয়া হয়।
জানা গেছে, লন্ডনে আইন বিষয়ে পড়ালেখা করতেন অর্পিতা। ২০২০ সালের জানুয়ারিতে মা ফাতেমা কবিরের মৃত্যুর কারণে তিনি দেশে আসেন। এরপর দেশেই ছিলেন। মায়ের মৃত্যুর পর মানসিকভাবে অবসাদগ্রস্থ ছিলেন তিনি। বৃহস্পতিবার তার লণ্ডনে ফেরার কথা ছিল। মৃত্যুর আগে লিখে যাওয়া একটি চিরকুটে (সুইসাইড নোট) তিনি আত্মহত্যার বিষয়টি উল্লেখ করেছেন।
মেয়ের মৃত্যুতে শোকে বিবহবল লেখক–কলামিস্ট শাহরিয়ার কবির গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে পারেননি। তবে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সাধারণ সম্পাদক কাজী মুকুল বলেন, রাজধানীর মিরপুরের শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে অর্পিতাকে তাঁর মায়ের কবরে দাফন করা হয়েছে। রবিবার তাঁর কুলখানি অনুষ্ঠিত হবে।
বাসায় তেলাপোকা মারার ওষুধ দেওয়ার পর বিষক্রিয়ায় মারা গেছে রাজধানীর বারিধারা এলাকার ব্যবসায়ী মোবারক হোসেন তুষারের দুই ছেলে। তার মেয়ে এখনো অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি। গত শনিবার ‘ডিসিএস অরগানাইজেন লিমিটেড’ নামের একটি পেস্ট কন্ট্রোল কোম্পানিকে দায়িত্ব দিয়েছিলেন ওই ব্যবসায়ী। প্রতিষ্ঠানটির কর্মীরা বাসায় ওষুধ দিয়ে ছয় ঘণ্টা পরে ঢুকে ঘর পরিষ্কার করতে বলেছিলেন। পরিবারটি ৯ ঘণ্টা পরে বাসায় ঢুকে বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হয়। এ সময় তাদের সবারই পেট খারাপ, বমির মতো উপসর্গ দেখা দেয়।
ওই পরিবারের বরাত দিয়ে পুলিশ জানিয়েছে, সেই পেস্ট কন্ট্রোল কোম্পানি পোকামাকড় নিধনের জন্য অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট (গ্যাস ট্যাবলেট) ব্যবহার করেছিল, যেটা থেকে বিষাক্ত গ্যাস তৈরি হয়। সেই গ্যাসের বিষক্রিয়াতেই তাদের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় মামলা হওয়ার পর ওই প্রতিষ্ঠানের ৫ কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
এদিকে রাজধানীতে গত পাঁচ বছরে এই বিষক্রিয়ায় বেশ কয়েকজন মানুষের মৃত্যু হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, উচ্চমাত্রার এই কীটনাশক বাসায় ব্যবহার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। অথচ বিভিন্নভাবে সাধারণ কীটনাশক হিসেবে দেদার বিক্রি হচ্ছে সারা দেশে।
সূত্র বলছে, রাজধানীসহ সারা দেশে কয়েক শতাধিক পেস্ট কন্ট্রোল প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব কোম্পানির প্রায় ৯৫ ভাগের কোনো অনুমোদন নেই। কৃষি ও পরিবেশ অধিদপ্তরের এসব দেখভাল করার কথা থাকলেও তারাও খুব একটা গুরুত্ব দিচ্ছে না।
পেস্ট কন্ট্রোল সার্ভিস প্রতিষ্ঠান সেবা নিন প্ল্যাটফর্ম লি.-এর চেয়ারম্যান শামসুল আলম বলেন, দেশে ব্যাঙের ছাতার মতো পেস্ট কন্ট্রোল প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠছে। অধিক মুনাফার আশায় তারা এক ধরনের নিষিদ্ধ ট্যাবলেট ব্যবহার করে। আবার অনেকে লিকুইড কেমিক্যাল ব্যবহার করে। কিন্তু কোন মাত্রায় এসব ব্যবহার করতে হয় তার প্রশিক্ষণ নেই। সরকারের পক্ষ থেকে এসব প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে আরও বেশি সতর্ক হওয়া উচিত।
রাজধানীর বেশ কিছু বাজার ঘুরে দেখা যায় অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট যত্রতত্র বিক্রি হচ্ছে। ফুটপাত থেকে শুরু করে দেয়াল লিখন ও অনলাইনের মাধ্যমে দেওয়া হচ্ছে চটকদার বিজ্ঞাপন। অথচ চাষাবাদ ছাড়া অন্য কাজে যার ব্যবহার নিষিদ্ধ। বদ্ধ ঘরে এই ধরনের কীটনাশক ব্যবহার করলে যে কারও বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
গতকাল রাজধানীর কারওয়ান বাজারে মাইকিং করে এসব কীটনাশক বিক্রি করছিলেন কাঞ্চন মিয়া। এ ধরনের কীটনাশক বিক্রির অনুমতি তার আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের অনুমতি লাগে না। দশ বছর ধরে এই ব্যবসা করি। কেউ তো কিছু বলে না। কোথা থেকে এসব পণ্য সংগ্রহ করা হয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, বেশিরভাগ পুরান ঢাকা থেকে সংগ্রহ করি। গাজীপুর সাভার থেকেও এসে দিয়ে যায়। এসব ব্যবহারে মানুষের মৃত্যুর ঝুঁকি রয়েছে তা জানেন না বলে জানান তিনি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন কীটনাশক জাতীয় একপ্রকার ওষুধের জেনেটিক বা গ্রুপ নাম হলো অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড। বাজারে অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট আকারে ফসটক্সিন, সেলফস, কুইকফস, কুইকফিউম, ডেসিয়াগ্যাস এক্সটি ইত্যাদি নামে পাওয়া যায়। অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট গ্যাস ট্যাবলেট নামেও পরিচিত। বাতাসের সংস্পর্শে এসে জীবনবিনাশী ভয়াবহ টক্সিক গ্যাস ফসফিন উৎপাদন করে। এই ট্যাবলেট সাধারণত গুদামজাত শস্যের পোকা দমন, ধান ক্ষেতের পোকা দমন, কলাগাছের পোকা দমন ও ইঁদুর দমনে ব্যবহার হয়ে থাকে। গত এক দশকে দেশে এই বিষাক্ত কীটনাশক মানুষের বাসাবাড়িতে ব্যবহার বাড়ছে। দেশের বাজারে ট্যাবলেট আকারে সহজলভ্য। রাজধানীতে ছারপোকা দমনে প্রায় যথেচ্ছ ব্যবহার হচ্ছে এই ট্যাবলেট।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে বালাইনাশক গ্রহণ করলে সেটা দ্রুত ফুসফুসে শোষিত হয় এবং রক্তে মিশে যায়। যদি পর্যাপ্ত পরিমাণ বালাইনাশক শ্বাসের মাধ্যমে গ্রহণ করা হয় তাহলে নাক, গলা ও ফুসফুস মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সরকারের যে দায়িত্বশীল প্রতিষ্ঠান রয়েছে এসব বিষয়ে তাদের পক্ষ থেকে কোন কোন কীটনাশক কোন মাত্রায় কোন কোন কীটপতঙ্গের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হবে সেটি নির্দিষ্ট করে নিশ্চিত করতে হবে। আমদানির সময়ও বিষয়টি খেয়াল রাখতে হবে। অথবা দেশেই যদি তৈরি করতে হয় তাহলে যথাযথ কর্র্তৃপক্ষের লাইসেন্স নিয়ে উৎপাদন করতে হবে। এটির গুণগত মান থাকছে কি না তারও পরীক্ষা করতে হবে।
পরিবেশ গবেষক পাভেল পার্থ বলেন, আমরা বিভিন্ন মাধ্যমে শুনেছি ওই বাসায় পেস্ট কন্ট্রোল প্রতিষ্ঠানটি অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ব্যবহার করেছে। যদিও আমরা এ বিষয়ে নিশ্চিত না। আমার মতে এটা আরও বেশি তদন্ত করা উচিত। সরকারের যে প্রতিষ্ঠান এসব বিক্রির অনুমোদন দেয় তাদের এই তদন্ত করে জানানো দরকার কী ধরনের কেমিক্যাল সেখানে ব্যবহার করা হয়েছিল। কারণ পেস্ট কন্ট্রোলের নামে কী ধরনের কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয় এটা জানাটা জরুরি।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে কোন ধরনের কীটনাশক কীভাবে ব্যবহার করা হবে তার কোনো নীতিমালা নেই। কীটনাশকগুলো সাধারণ কৃষিজমিতে ব্যবহৃত হয়। ঢাকা শহরে এরকম বিষ ব্যবহার নিষিদ্ধ করা উচিত। তাছাড়া রাস্তাঘাটে এসব জিনিস অহরহ বিক্রি হচ্ছে। এসবও তদন্তের আওতায় আনতে হবে।
আরও এক কর্মী গ্রেপ্তার : দুই শিশুর মৃত্যুর ঘটনায় টিটু মোল্লা নামে একজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তিনি বালাইনাশক কোম্পানিটির কর্মকর্তা। গত সোমবার রাতে তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ভাটারা থানার ওসি আবুল বাসার মুহাম্মদ আসাদুজ্জামান জানান, ওই ঘটনায় করা মামলায় এখন পর্যন্ত তিনজনকে গ্রেপ্তার করে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ।
একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবিরের মেয়ে অর্পিতা শাহরিয়ার কবির মুমুর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ।
বৃহস্পতিবার (৮ জুন) রাতে বনানীর বাসা থেকে ঝুলন্ত অবস্থায় মরদেহটি উদ্ধার করা হয়। রাতেই পরিবারের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করেছে পুলিশ।
তবে কী কারণে তিনি আত্মহত্যা করেছেন সে বিষয়ে কিছু জানা যায়নি।
শুক্রবার সকালে বনানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তাফিজুর রহমান জানান, বনানীর একটি বাসা থেকে অর্পিতা শাহরিয়ার কবির মুমুর মরদেহ উদ্ধার করা হয়, যা ঝুলন্ত অবস্থায় ছিল। পরে রাতেই পরিবারের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করা হয়েছে।
এর আগে, ২০২০ সালের জানুয়ারিতে স্ত্রী হারান শাহরিয়ার কবির।
নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান ও আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের সঙ্গে গতকাল মঙ্গলবার সকালে বৈঠক করেছেন ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস। এরপর দুপুরে বৈঠক করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে। এই বৈঠকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মহাপরিচালক উপস্থিত ছিলেন বলে জানা গেছে।
সরকারের গুরুত্বপূর্ণ তিন প্রতিনিধির সঙ্গে বৈঠকের বিষয়টি বেশ আলোচনার জন্ম দিয়েছে। এখানে মূলত আগামী নির্বাচনের ব্যাপারে দেশের রাজনীতিতে যে উত্তাপ দেখা দিয়েছে তা নিয়েই আলোচনা হয়েছে বলে জানা গেছে। তবে আনিসুল হক গণমাধ্যমে বলেছেন, তাদের এ বৈঠকে মার্কিন রাষ্ট্রদূত মূলত শ্রম আইন নিয়ে আলোচনা করেছেন। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের শ্রম আইন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের একটি পরামর্শ ছিল। বৈঠকে সেসব বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। একটি সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) অনুষ্ঠানে যোগ দিতে এ মাসেই জেনেভা যাওয়ার কথা রয়েছে।
পরে বেলা ১টা ১০ মিনিটে মার্কিন দূতাবাসে প্রবেশ করেন বিএনপি মহাসচিব। এরপর বেলা আড়াইটার দিকে তিনি দূতাবাস থেকে বের হন। রাতে মির্জা ফখরুল দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠান সামনে রেখে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যে ভিসানীতি ঘোষণা করেছে তার ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এই নীতি দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে সহায়ক হবে আমরা মনে করি বলে রাষ্ট্রদূতকে জানিয়েছি।’ তিনি বলেন, ‘রাষ্ট্রদূতকে আমি জানিয়েছি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে ছাড়া আওয়ামী লীগের অধীনে দেশে নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হবে না। দেশের জনগণও তাই মনে করে। এ ছাড়া নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার নিয়ে রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে আমাদের কোনো আলাপ হয়নি।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সম্প্রতি আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক বলেছিলেন, “নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করার আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করবেন।” তার এমন বক্তব্য নিয়ে আলোচনার ঝড় উঠলে পরে গণমাধ্যমে বিবৃতি দেয় আইন মন্ত্রণালয়। এরপর গতকাল মঙ্গলবার সকালে সচিবালয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক এবং প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের সঙ্গে বৈঠক করেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাড়া কীভাবে নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করা যায়, তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। দেশের সংবিধানে কী আছে তা-ও জানতে চেয়েছেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত।’
আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন ঘিরে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সরকারের দূরত্ব প্রকাশ্যে চলে এসেছে। কোনো ধরনের রাখঢাক ছাড়াই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ সরকারের মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ নেতারা যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনা করছেন। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আরও বেশি দৌড়ঝাঁপ শুরু করছেন। ফলে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ক্ষমতাসীনদের দূরত্ব এখন স্পষ্ট। আলোচনা আছে, সরকারবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে পশ্চিমা এ দেশটি হঠাৎ আরও ঘনিষ্ঠ হতে শুরু করেছে।
জানা গেছে, সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে এতদিন যুক্তরাষ্ট্রের মতপার্থক্য ছিল না। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন প্রত্যাশা করছে দেশটি। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগও এ নিয়ে কোনো দ্বিমত করেনি। এরই মধ্যে, ভিসানীতি ঘোষণা করে সরকারকে বড় চাপ দেওয়ার পূর্বাভাস দেয় যুক্তরাষ্ট্র। বিষয়টি নিয়ে সরকারি দল আওয়ামী লীগ ও মাঠের বিরোধী দল বিএনপি একে অন্যকে ঘায়েল করার চেষ্টা করে। তবে ভিসানীতি যে সরকারের ও আওয়ামী লীগের ওপরই বেশি চাপ তৈরি করেছে, সেটা ভেতরে-বাইরে আলোচনা আছে।
আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায় ও কূটনীতি-সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্র দেশ রূপান্তরকে জানিয়েছে, বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র তাদের অবস্থান পাল্টে নির্বাচনের স্বার্থে প্রয়োজনে সংবিধানের বাইরে যেতে হবে সরকারকে এমন প্রস্তাব দিতে চলেছে। ওই সূত্রগুলো দাবি করেছে, গত মাসের শেষের দিকে অথবা চলতি সপ্তাহে বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাস আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের বাসভবনে তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। পিটার হাস ওই বৈঠকে রাজনৈতিক সমঝোতায় না আসলে সব দলের অংশগ্রহণে জাতীয় সরকারের আদলে একটা কিছু করার বিকল্প প্রস্তাব দিয়েছেন। তা না হলে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের স্বার্থে সংবিধানসম্মত করে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের পদক্ষেপ নেওয়ার প্রস্তাব করেন। এ প্রস্তাব সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানেও দেওয়া হয়েছে। আনিসুল হকের সঙ্গে শ্রম আইন নিয়েও দীর্ঘ আলাপ করেন এ রাষ্ট্রদূত।
আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকজন নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, পিটার হাসের ওই প্রস্তাব নিয়ে সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ে গেলে তাতে বড় আপত্তি তোলা হয়। শুধু তাই নয়, যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা পাওয়া যাবে না এটা ধরেই দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরুর বার্তা দেওয়া হয়েছে সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে। তারা স্বীকার করেন যে, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান ক্রমেই আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে চলে যাচ্ছে। তবে নির্বাচনে যুক্তরাষ্ট্রের অসহযোগিতা করবে ধরে নিয়েই সরকারি দল আওয়ামী লীগ প্রস্তুতি নিচ্ছে।
পিটার হাস সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের ও মাঠের বিরোধী দল বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে একান্তে বৈঠক করেছেন। গুরুত্বপূর্ণ ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গেও নির্ধারিত-অনির্ধারিত বৈঠক করা শুরু করেছেন। গত সোমবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ব্রিফিংয়ে পিটার হাসকে উদ্দেশ্য করে প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেছেন, রাষ্ট্রদূতরা সীমা লঙ্ঘন করলে আইনি ব্যবস্থা নেবে সরকার।
আগামী নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সক্রিয় হয়ে ওঠার প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে জানিয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, পিটার হাসের দৌড়ঝাঁপ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘নাহি ছাড়ি’ অবস্থান আওয়ামী লীগের বিভিন্ন স্তরে দুশ্চিন্তা তৈরি হয়েছে।
সরকারের দুই মন্ত্রীও দেশ রূপান্তরের কাছে স্বীকার করেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সরকারের বিপক্ষে যেতে শুরু করেছে। ‘অন্যায় হস্তক্ষেপ’ বেড়েছে পিটার হাসের।
আওয়ামী লীগের কূটনীতিসম্পৃক্ত এক নেতা বলেন, সরকার বিকল্প হিসেবে শক্তিশালী দেশের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নে কাজ করে চলেছে। বিকল্প দেশের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে উঠলে নির্বাচন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রকে মাইনাস করে চলার এক ধরনের কৌশল গ্রহণ করা হবে। এ কৌশলে নির্বাচন সম্পন্ন হয়ে গেলে যুক্তরাষ্ট্রর সঙ্গে সম্পর্ক ঝালাই করা হবে নতুন পরিকল্পনা অনুযায়ী।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর আরেক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, ভিসানীতি মূলত সরকারের বিভিন্ন ক্ষেত্রে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। অনেকেই ভিসানীতিকে সব গেল বলে ধরে নিয়ে অবস্থান টলমলে করে তুলতে চায়। এরকম অবস্থা আওয়ামী লীগকে একটু চিন্তায় ফেলে দিয়েছে। দলের নেতাকর্মীরা যেন সাহস হারিয়ে না ফেলে, সেজন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনা করার কৌশল গ্রহণ করেছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগ নেতাদের সমালোচনা নিয়ে গুঞ্জন শুরু হয়েছে। এমন কথা শোনা যাচ্ছে যে, আওয়ামী লীগ কি তাদের অবস্থান থেকে সরতে শুরু করবে? আবার প্রশ্নও আছে যে, নির্বাচন কি হবে? জাতীয় সরকার আসবে খুব শিগগিরই, এমন গুঞ্জনও রয়েছে জোরালোভাবে। শুধু তাই নয়, বাতিল হওয়া নির্বাচন পদ্ধতি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনেই আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে এমন গুঞ্জনও শুরু হয়েছে। যদিও এসবে কোনো ভিত্তি রয়েছে মনে করেন না আওয়ামী লীগ নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা। তারা দাবি করেন, সংবিধান অনুযায়ীই নির্বাচন হবে। এ ইস্যুতে কোনো শক্তির সঙ্গেই আপস করবেন না আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে দলটির সভাপতিম-লীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, কোনো দেশের চাওয়ায় বাংলাদেশে আগামী নির্বাচন হবে না। দেশের মানুষের চাওয়া অনুযায়ী সংবিধানসম্মতভাবে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন হবে। তিনি বলেন, সবার মতো করেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য করতে বদ্ধপরিকর।
কূটনীতিসম্পৃক্ত আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের আরেক নেতা বলেন, দৃশ্যত যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সরকারের সঙ্গে দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে মনে করা হলেও সেপ্টেম্বরের আগে পশ্চিমা এ দেশটি তার চূড়ান্ত অবস্থান পরিষ্কার করবে না বলে তারা মনে করছেন। ওই নেতা বলেন, সেপ্টেম্বরে ভারত সফর রয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। মূলত সেই সফরেই বোঝা যাবে সরকার কোনদিকে যাবে। এ নেতা আরও বলেন, ‘আমাদের ডিপ্লোম্যাসি (পররাষ্ট্রনীতি) পরস্পরের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের নীতি। কূটনীতিতে প্রধানমন্ত্রী দেশি-বিদেশি অনেক নেতাকে ছাড়িয়ে গেছেন। সেই আস্থা-বিশ্বাসও প্রধানমন্ত্রীর ওপর আমাদের রয়েছে।’
এতদিন যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান পরিষ্কার হয়ে না ওঠায় সরকার ও আওয়ামী লীগ নেতারা দাবি করতেন, দেশটিকে তারা বোঝাতে পেরেছেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে সমালোচনা প্রমাণ করে না যে, ক্ষমতাধর দেশটির সঙ্গে আওয়ামী লীগের বোঝাপড়া ঠিক আছে। যুক্তরাষ্ট্র ভিসানীতি ঘোষণার পরই দেশটির অবস্থান আওয়ামী লীগের পক্ষে আছে এমন কথা কেউ আর বিশ্বাস করছে না।
আওয়ামী লীগের একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, আমেরিকাকে মাইনাস ধরেই এগিয়ে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দলটির শীর্ষ পর্যায়ের দুই নেতা আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান আগের চেয়ে বেশি স্পষ্ট হয়ে ওঠায় রাজনীতিতে তারা ‘ব্যাকফুটে’ চলে যাচ্ছেন কি না, তা নিয়ে আলোচনা চলছে দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের মধ্যে।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমি একটাই বুঝি, একটাই জানি, আগামী নির্বাচন সংবিধানসম্মতভাবেই হবে। এ জায়গা থেকে একটুও নড়বে না সরকার।’