
পশ্চিমা ধ্রুপদি সংগীত বললেই যার নাম নক্ষত্রের মতো জ¦লজ¦ল করে, তিনি সংগীতস্রষ্টা ভোলফগাং আমাদেউস মোৎসার্ট। তার স্ত্রী ছিলেন কনস্টানজে মোৎসার্ট। প্রতিষ্ঠিত এই সংগীতশিল্পী সুরের এই জাদুকরের জীবনীকার ও অমর সৃষ্টির অনুপ্রেরণা। লিখেছেন নাসরিন শওকত
হৃদয়ের প্রিয়তমা
আমার হৃদয়ের প্রিয়তমা ছোট্ট স্ত্রী! তোমার কাছ থেকে যদি একটি চিঠি পেতাম তবে সবকিছু ঠিক হয়ে যেত... এরপর নিজেকে কবিতার কাছে পুরোপুরি সমর্পন করে সুরস্রষ্টা বলেন, আমি তোমার সঙ্গে আবার থাকতে পারব, এ কথা ভাবতেই শিশুর মতো উত্তেজিত হয়ে পড়ছি। যদি সবাই আমার হৃদয়ের এই অবস্থা দেখতে পেত, লজ্জাতেই পড়তে হতো আমাকে। তুমি ছাড়া বাকি সব কিছু আমাকে বরফের মতো শীতল করে দেয়। হায়! যদি তুমি আজ আমার পাশে থাকতে, তাহলে আমি হয়তো দেখতে পেতাম যে, এই সৌজন্য দেখানো মানুষেরাই আমাকে কত বেশি মনোযোগ দিচ্ছে। কিন্তু বরাবরের মতোই, সবকিছু শূন্য মনে হয়; বিদায়- আমার প্রিয়তমা- আমি চিরকালই তোমার। পুরো অন্তর দিয়ে ভালোবাসার তোমার মোৎসার্ট চিঠির এই কথাগুলো কনস্টানজে ওয়েবকে উদ্দেশ্য করে লেখা। এই নামটি হয়তো চট করে অনেকেই চিনে উঠতে পারবেন না। কিন্তু তিনি পশ্চিমা ধ্রুপদী সংগীত জগতের এমন একজনের স্ত্রী, যার নাম জানে না এমন লোক খুঁজে পাওয়া মুশকিল। আঠার শতকের কিংবদন্তি সেই সংগীতস্রষ্টা আর কেউ নন, ভোলফগাং আমাদেউস মোৎসার্ট। অমর এই ধ্রুপদী শিল্পীর মাত্র ৩৬ বছর বয়সে অকালমৃত্যু হয়। মৃত্যুর এক বছর আগে ১৭৯০ সালের সেপ্টেম্বরে ফ্রাঙ্কফুর্ট থেকে মোৎসার্ট তার প্রিয়তমা স্ত্রী কনস্টানজেকে চিঠিটি লিখেছিলেন।
মোৎসার্ট ও তার স্ত্রী কনস্টানজের মধ্যকার সম্পর্ক নিয়ে নানা গবেষণা ও জীবনী লেখা হয়েছে, যার বেশির ভাগ অংশেই কনস্টানজেকে বিতর্কিতভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। তবে কেউ কেউ তাকে একজন আলোকিত ও শাস্ত্রীয় সংগীতের দক্ষ গায়িকা ও সুকণ্ঠের অধিকারী হিসেবে দেখাতে চেয়েছেন, যিনি প্রতিভাবান সুরকার মোৎসার্টকে সংগীতের মধ্য দিয়ে অতীন্দ্রিয় এক সুরলোক সৃষ্টিতে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছেন। দুর্ভাগ্যবশত মোৎসার্টের অসামান্য কাজকে মূল্যায়নে কনস্টানজের অবদানের অবমূল্যায়ন করা হয়েছে। তাকে অজ্ঞ, তুচ্ছ, বস্তুবাদী এবং মোৎসার্টের প্রতিভাকে উপলব্ধি করতে অক্ষম হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে। বলা হয়েছে, দাম্পত্য জীবনে আর্থিক বিষয় ছাড়া স্বামীর সঙ্গে কোনো বিষয়েই খুব একটা মতের মিল ছিল না তার। তবে সুখের বিষয় হলো, এমন সব অকাট্য দাবি সত্ত্বেও মোৎসার্ট তার জীবনে প্রাণপ্রিয় স্ত্রী কনস্টানজের গুরুত্ব স্বীকার করেছেন এবং একমাত্র দাম্পত্য জীবনের অমø-মধুর ৯টি বছর কাটিয়েছেন তার সঙ্গেই। বিখ্যাত এই সংগীতকার ও সুরকারের মৃত্যুর পর স্বামী মোৎসার্টের খ্যাতিকে চিরস্থায়ী রূপ দিতে লিখেছেন তার জীবনী।
কনস্টানজের শৈশব
১৭৬২ সালের ৫ জানুয়ারি। দক্ষিণ-পশ্চিম জার্মানির জেল ইম উইজেন্টালের প্রখ্যাত এক দরিদ্র সংগীত পরিবারে এদিন জন্ম নেন কনস্টানজে ওয়েবার। পুরো নাম মারিয়া কনস্টানজে ক্যাসিলিয়া জোসেফা জোহান্না আলয়সিয়া মোৎসার্ট। তার বাবা ফ্রিডোলিন ওয়েবার ছিলেন অর্কেস্ট্রার একজন সফল ভায়োলিন বাদক, সুরকার ও প্রম্পটার। আর মা ক্যাসিলিয়া গৃহিণী। কনস্টানজের ছিল তিন বোন। দুই বোন বড় আর একজন ছোট। এই চার বোনই ছিলেন শাস্ত্রীয় সংগীতের তালিমপ্রাপ্ত অসাধারণ গায়িকা। কনস্টানজের বড় দুই বোন জোসেফা ও আলয়সিয়া সংগীত জগতে সফল ছিলেন ।
ছোটবেলা থেকেই বাড়িতে গান-বাজনার পরিবেশের মধ্যে বেড়ে ওঠেন কনস্টানজে। পিয়ানো বাজানো শিখলেও আনুষ্ঠানিক পড়াশোনায় ছিলেন পিছিয়ে। তবে তার শৈশবের বেশিরভাগ সময় কাটে নানাবাড়িতে। সাংস্কৃতিক, বুদ্ধিবৃত্তিক ও সংগীতের প্রাণকেন্দ্র হিসেবে বিখ্যাত শহর মেনহাইমে। ১৭৭৭ সাল দিকে, ২১ বছরের তরুণ মোৎসার্ট কাজের সন্ধানে মেনহাইমে আসেন মাকে সঙ্গে নিয়ে এবং যথারীতি বিখ্যাত ওয়েবার সংগীত পরিবারের সঙ্গে গাঢ় সম্পর্ক গড়ে তোলেন। তরুণ মোৎসার্ট তখন তার প্রতিভা চর্চার চেয়ে বরং নিজের ব্যক্তিগত সম্পর্কের বিষয়ে মনোযোগী হয়ে ওঠেন। বছরের শেষ দিকে তিনি কানস্টানজের বড় বোন আলয়সিয়ার প্রেমে পড়েন। কানস্টানজের বয়স তখন মাত্র ১৫। ওই বছরই মোৎসার্ট মাকে হারান। এর পরই আলয়সিয়ার কাছে প্রত্যাখ্যাত হয়ে ভাঙা মন নিয়ে সালজবুর্গে, বাড়ি ফেরেন।
ভিয়েনায় চলে আসা
১৭৭৯ সাল। ওয়েবার পরিবার বড় দুই গায়িকা মেয়ের ক্যারিয়ার গড়ার স্বপ্ন নিয়ে ভিয়েনায় চলে আসে। এর ঠিক এক মাসের মাথায় কনস্টানজের বাবা ফ্রিডোলিন মারা যান। ওয়েবার পরিবার যেন অথৈ সাগরে পড়ে যায়। উপায় না পেয়ে পয়সা রোজগারের আশায় বাড়িতেই বোর্ডিং দেওয়া শুরু করেন কনস্টনাজের মা ক্যাসিলিয়া। এর দু বছরের মাথায় ভিয়েনায় ফেরেন মোৎসার্ট, কিন্তু এরই মধ্যে সেখানে শুধুমাত্র সেরা পিয়ানো বাদকই নয় একজন প্রতিশ্রুতিশীল তরুণ সুরকার হিসেবেও নাম-ডাক হয় তার। ১৭৮১ সালের মে’তে কনস্টানজেদের বাড়িতে ওঠেন। এক পর্যায়ে ১৯ বছরের কনস্টানজের প্রেমে পড়েন। তার মা ক্যাসিলিয়া দুজনার প্রেমের বিষয়টি জেনে ফেলেন এবং মোৎসার্টকে বাড়ি ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য করেন। সেপ্টেম্বরে কনস্টানজের বাড়ি ছেড়ে চলে আসেন তিনি। তবে এর পর থেকে এক ছাদের নিচে না থাকলেও মোৎসার্ট ও কনস্টানজের প্রেমে বড় ছেদ পড়েনি। তবে অনেক ভাঙাগড়ার মধ্য দিয়ে প্রেমের পরীক্ষা চলে তাদের। পরের বছরই তারা বিয়ের সিদ্ধান্ত নেন।
বাবার অস্বীকৃতি
কনস্টানজে সুশিক্ষিত ছিলেন। সংগীতে প্রতিভাধর হওয়ার পাশাপাশি ফরাসি, ইতালীয় এবং স্থানীয় জার্মান ভাষায় চমৎকার কথা বলতে পারতেন। এইসব গুণ বিচারে মোৎসার্ট আন্তরিকভাবে বিশ^াস করতেন যে, একজন সুরকারের আদর্শ স্ত্রী হওয়ার যোগ্য কনস্টানজে। কিন্তু বেঁকে বসলেন মোৎসার্টের বাবা লিওপোল্ড। কনস্টানজেকে কিছুতেই তার ছেলের যোগ্য স্ত্রী বলে মানতে রাজি নন তিনি এবং সম্পর্কটি যাতে বিয়ে পর্যন্ত না গড়ায় অনবরত সেই চেষ্টাই করতে থাকলেন। এ নিয়ে ছেলে-বাবার মধ্যে চিঠি চালাচালিও কম হলো না। প্রায় চিঠিতেই মোৎসার্ট যেখানে তার প্রেমিকার প্রতিভার নানা গুণগান করেন, তো বাবা লিওপোল্ড জবাবে কঠোর থেকে আরও কঠোর হন এবং একদিন ছেলের মন ফিরবে সেই আশায় বুক বাঁধেন। কিন্তু নাছোড়বান্দা মোৎসার্ট বাবার মন গলাতে এক চিঠিতে লেখেন, ‘আমার প্রিয় কনস্টানজের চরিত্রের সঙ্গে আপনাকে আরও ভালোভাবে পরিচিত করাতে চাই। তার সব সৌন্দর্যের আধার হলো তার ভ্রমরকালো ওই দুটি চোখ... খুব স্মার্ট না হলেও সে পরিষ্কার ও পরিপাটিভাবে পোশাক পরতে পছন্দ করে। একজন নারী হিসেবে যা করা প্রয়োজন, তার সবকিছুই সে নিজে করতে পারে... আমি তাকে এবং সেও আমাকে হৃদয় উজাড় করে ভালোবাসে। তার চেয়ে আর ভালো বউ কি আমি পাব, বলুন?’
অমতের বিয়ে
বিষয়টি শেষ পর্যন্ত এমন দাঁড়ায় যে, সবাই যেন মোৎসার্ট ও কনস্টানজের প্রেমের প্রতিপক্ষ হয়ে উঠল। তাই শেষ পর্যন্ত সবার অমতের বিরুদ্ধে গিয়েই ১৭৮২ সালের ৪ আগস্ট, ভালোবাসার ঘর বাঁধেন মোৎসার্ট ও কনস্টানজে। এদিকে মার্কিন সংগীতবিদ ও ক্যালিফোর্নিয়ার বার্কলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগীতের অধ্যাপক ড্যানিয়েল হার্টজ জানান যে, সময়ের সঙ্গে লড়তে লড়তে বিপর্যস্ত কনস্টানজে একপর্যায়ে বিয়ের আগেই মোৎসার্টের কাছে চলে আসেন। ১৭৮২ সালেরই ৩১ জুলাই মোৎসার্ট বাবার কাছে একটি চিঠিতে লেখেন, ‘আপনার পাঠানো সব ভালো ও সৎ পরামর্শ এমন একজন মানুষের ক্ষেত্রে সমাধান দিতে ব্যর্থ হয়েছে, যে এরইমধ্যে একটি মেয়ের সঙ্গে ভীষণভাবে জড়িয়ে গেছে। এরপরও এই সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে আসার আর কোনো প্রশ্নই আসে না।’ এর ঠিক পাঁচ দিন পর এই যুগল ভিয়েনার সেন্ট স্টিফেন ক্যাথেড্রালে ছোট অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে বিয়ে করেন। বিয়ের সময় পর্যন্ত মোৎসার্ট ও কনস্টানজের ঘরে ছয়টি সন্তানের জন্ম হয়। কিন্তু তাদের মধ্যে মাত্র দুটি সন্তান শিশু অবস্থা পর্যন্ত বেঁচে ছিল। এতে পরবর্তী জীবনে শারীরিকভাবে দুর্বল হয়ে নানা অসুস্থতায় ভোগেন কনস্টানজে।
মোৎসার্টের সংগীতের অনুপ্রেরণা
কনস্টানজে শাস্ত্রীয় সংগীতে একজন দক্ষ ও প্রতিভাবান শিল্পী ছিলেন। তাই অনেকেই বিশ্বাস করেন যে, তিনি তার স্বামী ও কিংবদন্তি সুরস্রষ্টা মোৎসার্টের সংগীতজীবনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন। সে সময় কনস্টানজে তার শিল্পীসত্তার চর্চা করতেন স্বচ্ছন্দে। গান গাওয়া, পিয়ানো বাজানোর পাশাপাশি নাট্যপরিবেশেও নিজেকে মানিয়ে নিতেন বেশ। স্বামী মোৎসার্টের সঙ্গে সংগীত জীবনকে খুব আনন্দের সঙ্গেই ভাগ করে নিতেন তিনি। মোৎসার্ট তার প্রিয়তম স্ত্রী কনস্টানজেকে উৎসর্গ করে বেশ কটি সুরও লিখেছেন। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, মোৎসার্ট গ্রেট মাসের সি মাইনরের একক গান লিখেছিলেন তার প্রিয়তমা স্ত্রী কনস্টানজের জন্য। ১৭৮৩ সালে মোৎসার্টে সালজবুর্গের প্রিমিয়ারে সেই গান গেয়েছিলেন কনস্টানজে। আরও উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, শিল্পী মহলে মোৎসার্টের বন্ধুদের মধ্যে ব্যারন ভন সুইটেন ছিলেন অন্যতম। তিনিই মোৎসার্টকে তার বাখ ও হ্যান্ডেলের সংগীত ঘরানার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন। বারোক ঘরানার নানা সুরের কারুকাজ ভালোবাসতেন কনস্টানজে। তাই প্রিয়তমার ভালোবাসায় অনুপ্রাণিত হয়েই পরে মোৎসার্ট বেশ কয়েকটি বারোক রীতির সংগীত রচনা করেন।
মোৎসার্টের জীবনীকার
সংগীতের ভুবনে ডুবে থাকা মোৎসার্ট বিলাসবহুল ও বেহিসাবী জীবনযাপন করতেন। তাই জীবনের শেষ মুহূর্তেও নিজের ও পরিবারের জন্য তেমন কোনো সঞ্চয় রেখে যেতে পারেননি তিনি। ১৭৮৭ সালের শেষ দিকে ভিয়েনায় রাজকীয় দরবারের সুরকার হিসেবে যোগ দেন। এতে তার আয়ের অন্য সব পথ বন্ধ হয়ে যায়। বেতন খুব কম পেতেন। ফলে তার আর্থিক অবস্থার দিন দিন অবনতি হতে থাকে। এ সময় তিনি ধনী বন্ধুদের কাছ থেকে ধারাবাহিকভাবে ঋণ নিতে থাকেন। এই ঋণগ্রস্ত জীবনের শেষের দিকে তার মন ও স্বাস্থ্য একবারে ভেঙে পড়ে। এই অনটনে অর্থ উপার্জনের আশায় তিনি কখনো প্রাগে, কখনো ভিয়েনায় আবার কখনো বা বার্লিনে অনুষ্ঠান করে বেড়ান।
১৭৯০ সালের আগস্টের মাঝামাঝি। প্রাগে থাকা সেই সময়েই মোৎসার্টকে মৃত্যুচিন্তা পেয়ে বসে এবং এক ভ্রান্ত ধারণা গ্রাস করে যে, কেউ যেন তাকে বিষপ্রয়োগ করেছে। ১৭৯১ সালের ৬ সেপ্টেম্বর । প্রাগে ‘লা ক্লেমেনজা দি টিটো’ অপেরা উন্মোচনের প্রস্তুতি চলছিল। তখন হঠাৎ গুরুতরভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েন মোৎসার্ট। এর পরে ভিয়েনায় ফিরেও আসেন। তখন কনস্টানজে তার বোনদেরকে সঙ্গে নিয়ে তার সেবা-শুশ্রুষা করেন। পরে ১৭৯১ সালের ৫ ডিসেম্বর রাতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন মহান এই সুরকার। কিন্তু শারীরিকভাবে অসুস্থ হওয়ায় মোৎসার্টের শেষকৃত্যে উপস্থিত থাকতে পারেননি কনস্টানজে। বলা হয়ে থাকে, তিনি বাতজ¦রে ভুগে মারা যান। তবে তার অসুস্থতার সঠিক কারণ আজও রহস্য হয়েই রয়ে গেছে।
দুর্ভাগ্যজনকভাবে মোৎসার্ট যেদিন মারা যান, সেদিনও তার স্ত্রী কনস্টানজের কাছে কোনো টাকা-পয়সা ছিল না। তাই খুব করুণভাবে মৃত্যু হয়েছিল সুরের এই মহান জাদুকরের। বড় আকারের ওই ঋণ পরিশোধ করতে যেয়ে কনস্টানজে বিপদে পড়েন। তবে এই সময়েই সম্রাটের কাছ থেকে পেনশন পেতে শুরু করেন তিনি। পাশাপাশি মোৎসার্টের স্মরণে কিছু কনসার্টের আয়োজন করতেও সফল হন। আর স্বামীর অমর সব কাজেরও প্রচারণা চালিয়ে যেতে থাকেন। এতে কনস্টানজে আর্থিকভাবে সচ্ছল হয়ে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে ধনীও হয়ে ওঠেন।
কনস্টানজে পরে ওস্তাদ ফ্রাঞ্জ জাভার নেইমশেকের সঙ্গে থেকে সহকারী হিসেবে স্বামী ভোলফগাং আমাদেউস মোৎসার্টের পুরো জীবনী লেখেন । ১৭৯৭ সালে কনস্টানজের জীবনের দ্বিতীয় অধ্যায় শুরু হয়। এ সময় ঘটনাচক্রে তার ডেনমার্কের কূটনীতিক জর্জ নিকোলাস ভন নিসেনের সঙ্গে পরিচয় হয়। এই যুগল ১৮০৯ সালে বিয়ে করেন এবং তারা দুজনে মিলে মোৎসার্টের সম্পূর্ণ জীবনী প্রকাশ করেন। এর দু’বছর পার না হতেই কনস্টানজের দ্বিতীয় স্বামী নিসেনও মারা যান। ১৮৪২ সালে সালজবুর্গে মারা যান কিংবদন্তি সুরকার মোৎসার্টের স্ত্রী কনস্টানজে।
হোয়াটসঅ্যাপে (WhatsApp) ) এবার আপনার হয়ে টেক্সটের উত্তর দিয়ে দেবে চ্যাটজিপিটি (ChatGPT)। এতে অবাক হওয়ার কিছুই নেই। নানা কাজের চাপে বা ক্লান্তিতে অনেক সময় হোয়াটসঅ্যাপের সব মেসেজের উত্তর দিতে পারেন না অনেকেই। এবার চ্যাটজিপিটি আপনার হয়ে হোয়াটসঅ্যাপের টেক্সট-এর উত্তর দিয়ে দেবে।
অর্থাৎ হোয়াটসঅ্যাপের মেসেজের উত্তর দেওয়ার সব দায়িত্ব বুঝে নেবে এআই বা আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স। এটি এমনভাবে উত্তর দেবে যে, অপর প্রান্তে থাকা কেউ বুঝেই উঠতে পারবেন না, এটি কোনো এআই-এর টেক্সট। তিনি ভাববেন, আপনিই হয়তো টেক্সট দেখে তার মেসেজের উত্তর দিলেন।
যেভাবে কাজ করবে
ড্যানিয়েল গ্রস নামে এক অ্যাপ ডেভেলপার এমন একটি পাইথন স্ক্রিপ্ট তৈরি করেছেন, যা চ্যাটজিপিটি ও হোয়াটসঅ্যাপে যুক্ত করা যাবে। এর ফলে বন্ধুদের সঙ্গে হোয়াটসঅ্যাপে চ্যাট করার প্রয়োজন হলে, আপনার হয়ে চ্যাট চালিয়ে যাবে চ্যাটজিপিটি। বন্ধুরা ভাববেন আপনিই চ্যাট করছেন।
ব্যবহার করবেন কীভাবে
পাইথন স্ক্রিপ্টটি ব্যবহার করতে হলে এক্ষেত্রে আপনাকে কোনো ওয়েবপেজ থেকে একটি ল্যাঙ্গুয়েজ লাইব্রেরি ডাউনলোড করতে হবে। ল্যাঙ্গুয়েজ লাইব্রেরি ডাউনলোডের পর খুলবেন হোয়াটসঅ্যাপ-জিটিপি-মেইন (WhatsApp-gpt-main) ফাইল। এরপর সার্ভার ডটপাই server.py) ডকুমেন্ট এগজিকিউট করতে হবে। এরপরই আপনার চ্যাটজিপিটি ও হোয়াটসঅ্যাপ সংযুক্ত হয়ে যাবে।
সার্ভার চলা অবস্থায় তখন আপনাকে টাইপ করতে হবে ‘ইজ’ (Is, তারপর এন্টার। এবার ‘পাইথন সার্ভার ডট পাই’ (python server.py) -এ ক্লিক করুন। এতে আপনার ফোন নম্বর স্বয়ংক্রিয়ভাবেই ‘ওপেন এআই’ (OpenAI) চ্যাট পেজের সঙ্গে সংযুক্ত হয়ে যাবে।
তারপর ক্লিক করুন ‘কনফার্ম’ ও ‘অ্যাম এ হিউম্যান’ Confirm I am a human), যাতে বোঝা যাবে, আপনি রোবোট নন। এটি করার পরেই দেখতে পাবেন আপনার হোয়াটসঅ্যাপ অ্যাকাউন্টে ওপেন এআই চ্যাটজিপিটি (OpenAI ChatGPT) চলে এসেছে। ব্যস এবার চ্যাট শুরু। আপনার হয়ে চ্যাট করে দেবে চ্যাটজিপিটি।
শীত চলে গেছে। এই সময়ে নানা রকম শারীরিক সমস্যা জাঁকিয়ে বসে শরীরে। বাড়ির শিশুদের প্রতি বাড়তি নজর না দিলে মুশকিল, কারণ শিশুদের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকে। সবসময় রোগের সঙ্গে লড়াই করতে তারা পারে না। ফলে একটু অনিয়মেই খারাপ হয়ে পড়ে শরীর। যে কোনো রকম শারীরিক অসুস্থতা থেকে শিশুকে দূরে রাখতে খাওয়া-দাওয়ায় বদল আনা জরুরি। শাকসবজি, ফলমূল সন্তানের রোজের পাতে রাখতে ভুলবেন না। কারণ এগুলোতে থাকা উপকারী উপাদান রোগের সঙ্গে লড়াই করার শক্তি জোগায় শরীরে। এমন কিছু খাবার রয়েছে, যেগুলো খালি পেটে শিশুকে খাওয়ালে শরীর চাঙ্গা থাকবে, ঝিমিয়ে থাকবে না তারা।
কাঠবাদাম : প্রোটিন, আয়রন, ফাইবার, ভিটামিন ই-সমৃদ্ধ কাঠবাদাম শরীরের জন্য কতটা উপকারী, তা আলাদা করে বলার অপেক্ষা রাখে না। রোজ সকালে খালি পেটে শিশুকে একটি করে কাঠবাদাম খাওয়াতে পারলে ভালো। এই বাদাম শিশুর স্মৃতিশক্তি বাড়াবে। হাড়ের যতœ নেওয়ার পাশাপাশি তৈরি করতে পারে প্রতিরোধ ক্ষমতাও।
কলা : সাধারণভাবে ভরা পেটে ফল খাওয়ার কথা প্রচলিত। তবে খালি পেটে অনায়াসে কলা খাওয়া যেতে পারে। শিশুর রোজের সকালের খাবারে রাখুন আয়রন, কার্বোহাইড্রেট, জিঙ্ক, সোডিয়ামের মতো কিছু উপকারী উপাদান।
আপেল : শিশুদের রোজ একটি করে আপেল খাওয়ানোর কথা বলেন পুষ্টিবিদরা। কারণ এই ফলে রয়েছে পটাশিয়াম, ক্যালশিয়াম, জিঙ্কের মতো উপাদান, যেগুলো শিশুর দৃষ্টিশক্তির উন্নতি ঘটাবে। হাড়ের যত্ন নেবে। দিনের যে কোনো সময়ে খাওয়া যেতে পারে এই ফল। তবে খালি পেটে খেলে বাড়তি সুবিধা পাওয়া যাবে।
নানা কারণ মানুষ নানা ধরনের ক্যানসারে আক্রান্ত হয়। এর মধ্যে মুখের ক্যানসারের অনেকগুলো কারণ আছে। মুখ বলতে বোঝায় ঠোঁট, চোয়াল, তালু, জিহ্বা, দাঁত, মাড়ি, মুখের তলদেশ, টনসিল ও পাশের এলাকা। মুখের ক্যানসার হওয়ার কারণ ধূমপান এবং তামাক, পান, চুন ও জর্দা সেবন। আমাদের দেশে পান, চুন ও জর্দা বা সাদাপাতা সেবন খুব জনপ্রিয়। অনুষ্ঠান, মেজবানে পানের খিলি থাকা অত্যাবশ্যক। জর্দা, সাদাপাতা ছাড়াও তামাকের আছে অনেক ব্যবহার। যেমন : নস্যি, খৈনি, চরস ও গুল ব্যবহারে অনেকে অভ্যস্ত। এগুলোয় নিকোটিন থাকায় সাময়িক উত্তেজনা সৃষ্টি করে এবং একটি সুখবোধ অনুভূত হয়। কিন্তু এর সঙ্গে আছে কার্সিনোজেন। এটি ক্যানসার সৃষ্টি করতে পারে। ধোঁয়াবিহীন তামাকের মধ্যে থাকে ২৪টি কার্সিনোজেন ও তামাকের ধোঁয়ার মধ্যে থাকে প্রায় ৩৫টি কার্সিনোজেন। তামাকের কার্সিনোজেন হলো এক ধরনের কেমিক্যাল। তা ক্যানসার সৃষ্টি করে বা করতে চায়।
ধূমপানের কারণে মুখ ছাড়াও ফুসফুস স্বরনালি, গলনালি, পাকস্থলী, অগ্ন্যাশয়, কিডনি, ব্লাডার ও জরায়ু মুখের ক্যানসার হতে পারে। মুখের ক্যানসারের অন্য কারণগুলো হলো অসমান বা অমসৃণ দাঁত। তা মুখে ক্ষতের সৃষ্টি করে। মুখ নিয়মিত পরীক্ষা না করা, ভাইরাসের পুনঃপুন সংক্রমণ ও সুষম খাবার গ্রহণ না করা, লিউকেপিকিয়া থাকা, মদ্যপান করা ইত্যাদি কারণে ক্যানসার হতে পারে।
উপসর্গ
দীর্ঘদিনের স্থায়ী ক্ষত, যা কোনো চিকিৎসায় সারছে না এবং ব্যথা, খাবার চিবাতে ও গিলতে অসুবিধা, জিহ্বার সামনের মুক্ত অংশের মার্জিনে হলে সহজে দেখা যায়, মুখগহ্বরের তলদেশে হলে ব্যথা বেশি হয়, মাড়িতে হলে ব্যথা হতে পারে এবং খাবার চিবাতে সমস্যা হয়, গলায় লিম্পনোড ফুলে যায়।
রোগ নির্ণয়
ক্যানসার যত আগে নির্ণয় করা যাবে, আরোগ্য তত সহজ হবে। নিশ্চিতভাবে ক্যানসার নির্ণয়ের জন্য বায়োপসি করে প্যাথলজি টেস্ট করাতে হয়। মুখের ক্যানসার নির্ণয়ে খুব সহজেই বায়োপসি করা যায়।
চিকিৎসা
চিকিৎসা নির্ভর করে রোগের পর্যায়ের নিরাময় সম্ভব। দ্বিতীয় পর্যায়ে গলগ্রন্থ দেখা দিলে বা আশপাশে ছড়িয়ে পড়লে সার্জারি করে নিরাময় সম্ভব। কেমোথেরাপি ও রেডিওথেরাপি দেওয়া আবশ্যক হয়ে পড়ে। দ্বিতীয় ও তৃতীয় পর্যায়ে রোগ নিরাময় কিছু সম্ভব হলেও রোগটি চতুর্থ পর্যায়ে চলে গেলে আর নিরাময় সম্ভব নয়। তখন ব্যথা উপশম করা ও রোগীর পুষ্টি জোগান দেওয়া ছাড়া আর কিছুই করার থাকে না। মুখের ক্যানসার প্রাথমিক পর্যায় থেকে চতুর্থ পর্যায় যেতে ২ থেকে ৩ বছর লাগে। এর মধ্যে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিলে নিরাময় হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
প্রতিরোধ
‘প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধ উত্তম’ কথাটি মনীষীদের। ব্যক্তিগত কু-অভ্যাস থেকে বিরত থাকা ও নিয়মিত মুখ পরিষ্কার করার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। মুখে কোনো ক্ষত দেখা দিলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
বাংলাদেশ নারী জাতীয় ফুটবল দলের রক্ষণভাগের অন্যতম সেরা আঁখি খাতুন। সেই ছোট থেকেই গড়ন, উচ্চতা ও লড়াকু ফুটবল দিয়ে আলাদাভাবে নজর কেড়েছেন। মেয়েদের ফুটবলে বাংলাদেশের প্রায় সব সাফল্যেই ছিলেন অগ্রনায়ক হয়ে। সম্প্রতি তিনিও জাতীয় দলের ক্যাম্প ছেড়েছেন। তবে সতীর্থ সিরাত জাহান স্বপ্নার মতো অবসরের সিদ্ধান্ত নেননি। বরং নিজেকে আরও উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন বাস্তবায়নে বাফুফের বন্দী জীবনকে বিদায় জানিয়েছেন।
সম্প্রতি চীনের বন্দরনগরী হাইকোউ শহরের একটি ফুটবল অ্যাকাডেমিতে খেলার পাশাপাশি পড়ালেখার প্রস্তাব পেয়েছেন আঁখি। এখন চলছে চীনের ভিসা নেওয়ার প্রক্রিয়া। সবকিছু ঠিক থাকলে আসছে ঈদের পর দেশ ছাড়বেন তিনি। বিষয়টি দেশ রূপান্তরকে নিশ্চিত করেছেন আঁখি।
তিনি যে আর দশজন ফুটবলারের মতো নন, তা আগেই বুঝিয়েছেন আঁখি। সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা জয়ের পর বিশ্ব ফুটবলের নজর কাড়েন দীর্ঘদেহী এই ডিফেন্ডার। তার নির্ভীক ফুটবল বড্ড মনে ধরে সুইডেনের শীর্ষ লিগের একটি ক্লাবের। সাফে বাংলাদেশ মাত্র একটি গোল হজম করেছিল।
এই কৃতিত্বের বড় দাবীদার সেন্টারব্যাক আঁখি। তাই সুইডিশ ক্লাবটি তাকে দলে নেওয়ার প্রস্তাবও দেয়। প্রথম নারী ফুটবলার হিসেবে ইউরোপের কোন দেশের শীর্ষ লিগে খেলার প্রস্তাবে আঁখি দেখতে শুরু করেছিলেন বড় মঞ্চে নিজেকে প্রমাণের স্বপ্ন। তবে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের হঠকারি সিদ্ধান্তে সুইডেনে খেলতে যাওয়া হয়নি। জাতীয় দলের খেলা থাকবে বলে সুইডেনের দরজা বন্ধ করে দেয় বাফুফে। পরে অবশ্য অর্থ সঙ্কটসহ নানা অযুহাতে জাতীয় দলকে সিঙ্গাপুরে ফিফা ফ্রেন্ডলি ও মিয়ানমারে অলিম্পিক বাছাইপর্ব খেলতে পাঠানো হয়নি।
বিষয়টা ভীষণ কষ্ট দিয়েছিল সদ্য এইচএসসি পাস করা আঁখিকে। অভিমানে কিছুদিন ক্যাম্প ছেড়েও চলে গিয়েছিলেন। পরে অবশ্য ক্যাম্পে যোগ দেন। তবে হতাশা একটুও কমেনি। দিনের পর দিন লক্ষ্যহীণ পথ চলতে কারই বা ভালো লাগে? দেশের ফুটবলের যে ভবিষ্যত নেই ঢের বুঝতে পেরেছিলেন। তাই চীনের প্রস্তাবটাকে লুফে নেন আঁখি।
দেশ রূপান্তরের কাছে ক্যাম্প ছাড়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, 'আমি ওখান থেকে চলে এসেছি ঠিক, তবে ফুটবলেই থাকবো। চীনে ভাল অ্যাকাডেমিতে অনুশীলন ও লিগ খেলার সুযোগ পাচ্ছি। তাই ওইখানে যাবো। এখন ভিসা নিয়ে কাজ করছি। আমার জন্য দোয়া করবেন।'
গত ফেব্রুয়ারিতে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় ৪.৫০ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছেন সিরাজগঞ্জের গর্ব আঁখি। দেশে সুযোগ ছিল বেসরকারী একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার। তবে তিনি যে স্বপ্ন বুনেছেন চীনে লেখাপড়া করার, ‘মূলত আমি ওখানে পড়াশোনা ও খেলা এক সঙ্গে করবো। এখানে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়েছিলাম। তবে ভর্তি হইনি।’
তার এই সিদ্ধান্ত বাফুফেকে জানিয়েই নেওয়া। তবে জাতীয় দলের প্রয়োজনে যেখানেই থাকেন না কেন, চলে আসবেন, 'আমি পল স্যারকে (বাফুফের টেকনিক্যাল ডিরেক্টর পল স্মলি) জানিয়েই ক্যাম্প ছেড়েছি। তাকে এটাও বলেছি আমি যেখানেই থাকি, জাতীয় দলের প্রয়োজন হলে চলে আসবো।'
সম্প্রতি মেয়েদের ক্যাম্পে লেগেছে দ্রোহের আগুন। তিনদিন আগে অভিমানে অবসরের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন দলের অন্যতম স্ট্রাইকার স্বপ্না। একই দিনে মেয়েদের ফুটবলের সকল সাফল্যের রূপকার অভিজ্ঞ কোচ গোলাম রব্বানী ছোটন। মূলত বাফুফের গঞ্জনার শিকার হয়েই ছোটনের এই সিদ্ধান্ত। তাতেই হুলস্থুল লেগে গেছে ফুটবল অঙ্গনে। সালাউদ্দিন-কিরণের হাতে বন্দী নারী ফুটবল নিয়ে উঠেছে সমালোচনার ঝড়। প্রিয় কোচ ছোটনের জন্য ভীষণ মন খারাপ আঁখির, 'সত্যি খুব খারাপ লাগছে স্যারের সরে যাওয়ার কথা শুনে।'
তাকে সুইডেনে খেলতে যেতে দেওয়া হয়নি। স্বপ্নাকেও ভারতের লোভনীয় প্রস্তাব ফিরিয়ে দিতে হয়েছে। আঁখি অবশ্য এই অপ্রিয় বিষয়গুলো এড়িয়েই যেতে চাইলেন। শুধু বলেছেন, 'স্বপ্না আপুর ভারতে খেলার সুযোগ ছিল। তার সঙ্গে কী হয়েছে, সেটা সবার জানা। আমার সঙ্গেও একই ঘটনা ঘটেছে।'
শেষটায় আঁখি যা বলেছেন, তা দিয়েই নারী ফুটবলের ভেতরের চিত্রটা ফুটে উঠেছে। তারা দেশকে অসংখ্য সাফল্য এনে দিয়েছেন। গোটা দেশের কাছে তারা একেকজন খেলার মাঠের বীর সেনানী। তবে তাতে তাদের ভাগ্যের কোন পরিবর্তন ঘটেনি। বাফুফের চতুর্থ তলায় গাদাগাদি করে থাকতে হয়। মাস শেষে জুটে নামকোয়াস্তে পারিশ্রমিক। সেটা বাড়ানোর দাবী করলেই নাম কাটা যায় গুডবুক থেকে। আঁখির কথায়, 'ভাইয়া, আমরা তো মেয়ে। আর কত কষ্ট করবো যদি ঠিকভাবে পারিশ্রমিকই না পাই?'
দক্ষিণ এশিয়ার সেরা দল হওয়ার পরও আঁখিদের আকাশ ঢেকে আছে নিকশ কালো অন্ধকারে। এর দায় কী এড়াতে পারবেন, বছরের পর বছর মসনদ আঁকড়ে রাখা ফুটবল কর্তারা?
হার দিয়ে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ শেষ করলো চ্যাম্পিয়ন ম্যানচেস্টার সিটি। অন্যদিকে ৫-০ গোলের দাপুটে জয়ে শেষ করেছে দ্বিতীয় স্থানের আর্সেনাল। জিতেছে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড। আর ৪-৪ গোলে ড্র করেছে লিভারপুল। সাউদাম্পটনের অবনমন আগেই নিশ্চিত হয়েছিল। রবিবার তাদের সঙ্গে নেমে গেছে লিস্টার ও লিডস। লিডস ১-৪ গোলে হেরে গেছে টটেনহ্যাম হটস্পারের কাছে। আর ২-১ গোলে ওয়েস্টহ্যামকে হারিয়েও লাভ হয়নি লিস্টারের। বেন্টফোর্ডের মাঠে হালান্ড-গুনদোয়ানসহ প্রথমসারির কয়েকজনকে খেলানইনি পেপ গার্দিওলা। সামনে ছিলেন আলভারেজ, মাহরেজ, তাদের পেছেন ফোডেন। ৮৫ মিনিট পর্যন্ত অরক্ষিত রেখেছিল সিটি তাদের গোল। ঠিক ওই সময়ে ব্রেন্টফোর্ডের ইথান পিনোক। পঞ্চম হার দিয়ে লিগ শেষ করে সিটি।
নগর প্রতিদ্বন্দ্বি ম্যানইউ ঘরের মাঠে জেডন সানচো ও ব্রুনো ফার্নান্দেজের দ্বিতীয়ার্ধের দুগোলে ফুলহ্যামকে হারিয়ে তৃতীয় হয়েছে। চেলসির সঙ্গে নিউক্যাসলে ১-১ গোলে ড্র করায় চতুর্থ স্থান নিয়ে শেষ করলো সৌদি যুবরাজের মালিকানধীন নিউক্যাসল। সাউদাম্পটনের সঙ্গে ২-০ গোলে এগিয়ে গিয়েও একপর্যায়ে ৪-২ গোলে পিছিয়ে পড়ে হারের শঙ্কায় পড়েছিল লিভারপুল। ৭২ ও ৭৩ মিনিটে কোডি গাকপো ও ডিয়েগো জোতার গোল ড্র নিয়ে মাঠ ছাড়ে ইয়ুর্গেন ক্লপের শিষ্যরা। ৬৭ পয়েন্ট নিয়ে পঞ্চম হয়েছে লিভারপুল। ব্রাইটন হয়েছে ষষ্ঠ। ঘরে মাঠে জাকার দুই ও সাকার এক গোলে উলভসের বিপক্ষে প্রথমার্ধেই ৩-০তে এগিয়ে যায় গানার্সরা। দ্বিতীয়ার্ধে জেসুস ও কিইয়োর আরো দুই গোল করলে বড় জয়ের স্বস্তিতে মৌসুম শেষ করে একসময় শিরোপা লড়াইয়ে থাকা আর্সেনাল।
নতুন পে-স্কেল কিংবা মহার্ঘ ভাতা নয়, সরকারি কর্মচারীদের বেতন বাড়বে বার্ষিক বেতন বৃদ্ধি বা ইনক্রিমেন্ট অনুযায়ী। তাদের বেতন প্রতি বছর যতটা বাড়ার কথা এবার তার চেয়ে বেশি বাড়বে। আর তা চলতি বছরের মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সমন্বয় করে বাড়ানো হবে। অর্থাৎ আগামী অর্থবছরে সরকারি কর্মকর্তাদের নিয়মিত ইনক্রিমেন্ট ৫ শতাংশের বাইরে বাড়ানো হবে বলে অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে।
এ বিষয়ে পলিসি রিচার্স ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর দেশ রূপান্তরকে বলেন, গত প্রায় এক বছর ধরে দ্রব্যমূল্য বাড়ার কারণে সাধারণ মানুষ কষ্টে আছেন। সরকারি কর্মকর্তাদের বেশিরভাগের একমাত্র আয় বেতন-ভাতা। বৈশি^ক মন্দার কারণে সরকারও খানিকটা সংকটে আছে। এ পরিস্থিতিতে পে-স্কেল দেওয়ার মতো বড় ধরনের ব্যয় বাড়ানো সরকারের পক্ষে কঠিন হবে। ইনক্রিমেন্ট দেওয়া হলে সরকারের ওপর চাপ বেশি হবে না।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে সরকারি কর্মরতদের খানিকটা স্বস্তি দিতে কোন খাতে কী পদক্ষেপ নেওয়া যায় এমন প্রস্তাব চাওয়া হয়। একই সঙ্গে বাজেটবিষয়ক বিভিন্ন বৈঠকে সরকারি নীতিনির্ধারকরাও এ বিষয়ে আলোচনা করেন। অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে যাচাই-বাছাই করে মহার্ঘ ভাতা দেওয়ার প্রস্তাব করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে উপস্থাপন করে। চলতি মাসে গণভবনে অনুষ্ঠিত বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে অর্থমন্ত্রী, পরিকল্পনামন্ত্রী এ বিষয়ে ইতিবাচক মন্তব্য করে নিজেদের মতামত তুলে ধরেন। প্রধানমন্ত্রী ওই বৈঠকে মহার্ঘ ভাতা দেওয়া হলে কত বাড়তি ব্যয় হবে তা হিসাব করে পরের বৈঠকে উপস্থাপন করতে নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বড় ধরনের ব্যয় না বাড়িয়ে একটা উপায় বের করতেও বলেন। শেষ পর্যন্ত ইনক্রিমেন্ট বাড়ানো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যা চলতি মাসে প্রধানমন্ত্রীর সর্বশেষ সংবাদ সম্মেলনে নিজেই জানিয়েছেন।
বর্তমানে সরকারি কর্মচারীরা ২০১৫ সালের বেতন কমিশন অনুযায়ী বেতন-ভাতা পাচ্ছেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিনের নেতৃত্বে গঠিত কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী এ বেতন কমিশন প্রণীত হয়েছিল। এ কমিশনের সুপারিশে বলা হয়, আর নতুন বেতন কমিশন গঠন করা হবে না। প্রতি বছর ৫ শতাংশ হারে ইনক্রিমেন্ট বা বেতন বাড়ানো হবে। এ কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী তা হয়ে আসছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একটি হিসাব অনুযায়ী, দেশে সরকারি কর্মচারী ১৪ লাখ। বিভিন্ন করপোরেশন এবং এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের নিয়ে হিসাব করলে প্রায় ২২ লাখ।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, আগামী অর্থবছরের বাজেটে নিয়মিত ইনক্রিমেন্টের বাইরে আরও কতটা বাড়ানো যায় তা হিসাব করে নির্ধারণ করা হবে। এ কাজ করতে বাজেট প্রস্তাব পেশ করার পর আলাদা কমিটি গঠন করা হবে। এ কমিটি মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সমন্বয় করে যাচাই-বাছাই শেষে ইনক্রিমেন্টের হার সুপারিশ করবে। এ ক্ষেত্রে মূল্যস্ফীতির হার বিবেচনা করে বিদ্যমান ৫ শতাংশ ইনক্রিমেন্টের সঙ্গে প্রতি মাসে বেতন বাড়ানো হবে, নাকি গড় মূল্যস্ফীতির হার বিবেচনা করে ইনক্রিমেন্টের হার বাড়ানো হবে, তা খতিয়ে দেখা হবে। ২০তম গ্রেড থেকে প্রথম গ্রেড পর্যন্ত সবার জন্য একই হারে বেতন বাড়নো হবে কি না, তা আরও খতিয়ে দেখা হবে। চূড়ান্ত হিসাব অর্থমন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের পর দাপ্তরিক প্রক্রিয়া শেষে প্রকাশ করা হবে। যে তারিখেই প্রকাশ করা হোক না কেন, আগামী ১ জুলাই থেকে কার্যকরী ধরা হবে।
এখানে মহার্ঘ ভাতা ১০ শতাংশ দেওয়া হলে এ হিসাবে ৪ হাজার কোটি টাকা যোগ করতে হবে। ১৫ শতাংশ দেওয়া হলে ৬ হাজার কোটি এবং ২০ শতাংশ দেওয়া হলে ৮ হাজার কোটি টাকা যোগ করতে হবে। অর্থাৎ মহার্ঘ ভাতা দেওয়া হলে আগামী অর্থবছরে সরকারের ব্যয় বাড়বে। আর এতে সরকার ব্যয় কমিয়েও সরকারি কর্মকর্তাদের সন্তুষ্টিতে ইনক্রিমেন্ট বাড়ানো পথে হেঁটেছে।
চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটের আকার ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারি কর্মরতদের বেতন-ভাতা বাবদ রাখা হয়েছে ছিল ৭৪ হাজার ২৬৬ কোটি টাকা। খরচ না হওয়ায় সংশোধিত বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ ১ হাজার ৯৩ কোটি টাকা কমানো হয়েছে। আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৬১ হাজার ৯৯২ কোটি টাকা বাজেট হওয়ার কথা আছে। এ বাজেট সরকারি কর্মরতদের বেতন-ভাতার জন্য বরাদ্দ ৭৭ হাজার কোটি টাকা রাখা হতে পারে। সরকারি কর্মকর্তাদের অনেক পদ এখনো খালি আছে। এতে ইনক্রিমেন্ট বাড়ানো হলেও সরকারের ব্যয়ে বড় ধরনের চাপ বাড়বে না।
গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে বেসরকারিভাবে বিজয়ী হয়েছেন জায়েদা খাতুন।
তিনি ঘড়ি প্রতীকে মোট ২ লাখ ৩৮ হাজার ৯৩৪ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। তার নিকটতম আওয়ামী লীগ মনোনিত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আজমত উল্লা খান পেয়েছেন ২ লাখ ২২ হাজার ৭৩৭ ভোট।
বৃহস্পতিবার সকাল ৮টায় এ সিটির ৪৮০টি কেন্দ্রে ইভিএমে ভোটগ্রহণ শুরু হয়, যা একটানা বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলে।
বৃহস্পতিবার (২৫ মে) রাতে রির্টানিং কর্মকর্তা স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুনকে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত ঘোষণা করেন।
নির্বাচনের অন্য মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে লাঙ্গল প্রতীকে জাতীয় পার্টির প্রার্থী এম এম নিয়াজ উদ্দিন ১৬ হাজার ৩৬২ ভোট, গোলাপ ফুল প্রতীকে জাকের পার্টির মো. রাজু আহাম্মেদ ৭ হাজার ২০৬ ভোট, মাছ প্রতীকে গণফ্রন্টের প্রার্থী আতিকুল ইসলাম ১৬ হাজার ৯৭৪ ভোট, স্বতন্ত্রপ্রার্থী ঘোড়া প্রতীকের মো. হারুন-অর-রশীদ ২ হাজার ৪২৬ ভোট এবং হাতি প্রতীকের সরকার শাহনূর ইসলাম ২৩ হাজার ২৬৫ ভোট পেয়েছেন।
নির্বাচন কমিশনের তথ্যানুযায়ী, গাজীপুর সিটিতে মোট ভোটার ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৭৬ জন। তাদের মধ্যে ৫ লাখ ৯২ হাজার ৭৬২ জন পুরুষ, ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৬৯৬ জন নারী ও ১৮ জন হিজড়া। এই সিটিতে ৫৭টি সাধারণ ও ১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড আছে। মোট ভোটকেন্দ্র ৪৮০টি, মোট ভোটকক্ষ ৩ হাজার ৪৯৭টি।
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে বাংলাদেশ টেলিভিশনে (বিটিভি) নির্মিত হয়েছে বিশেষ কবিতা আবৃত্তির অনুষ্ঠান ‘ও ভোরের পাখি’। ঈমাম হোসাইনের প্রযোজনায় এটি উপস্থাপনা করেছেন তামান্ন তিথি। অনুষ্ঠানটিতে আবৃত্তি করেছেন আশরাফুল আলম, মীর বরকত, রফিকুল ইসলাম, পলি পারভিন, শাকিলা মতিন মৃদুলা, মাসকুর-এ সাত্তার কল্লোল, আসলাম শিশির, সংগীতা চৌধুরী, আহসান উল্লাহ তমাল। প্রচারিত হয় ২৫ মে সকাল সাড়ে ৯টায়।
এছাড়াও নির্মিত হয়েছে বিশেষ অনুষ্ঠান ‘আমারে দেবো না ভুলিতে’। অনুষ্ঠানটিতে গান, কবিতা ও আলোচনার সমন্বয়ে কবিকে সামগ্রিকভাবে তুলে ধরা হয়েছে। জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী ও বাচিকশিল্পীদের অংশগ্রহণ অনুষ্ঠানটিতে ভিন্নমাত্রা যোগ করেছে। ইয়াসমিন মুসতারী, সালাউদ্দিন আহমেদ, শেলু বড়ুয়া, ছন্দা চক্রবর্ত্তী ও ভাস্বর বন্দ্যোপাধ্যায়ের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা করেছেন প্রফেসর মুন্সী আবু সাইফ। মনিরুল হাসানের প্রযোজনায় অনুষ্ঠানটি প্রচারিত হচ্ছে ২৫ মে দুপুর ১ টা ০৫ মিনিটে। আরও প্রচারিত হবে সংগীতানুষ্ঠান ‘দোলনচাঁপা’ ও ‘সন্ধ্যামালতী’। রাত ৯টায় প্রচারিত হবে নাটক ‘বনের পাপিয়া’ (পুনপ্রচার)।
গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ভোট শেষ হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার সকাল ৮টায় এ সিটির ৪৮০টি কেন্দ্রে ইভিএমে ভোটগ্রহণ শুরু হয়, যা একটানা বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলে।
দায়িত্বশীল সূত্র থেকে এখন পর্যন্ত ৪৫০টি কেন্দ্রের প্রাথমিক ফল পাওয়া গেছে। এর মধ্যে নৌকা প্রতীকে আজমত উল্লা খান পেয়েছেন ১ লাখ ৮৫ হাজার ৩৭৯ ভোট এবং টেবিলঘড়ি প্রতীকে জায়েদা খাতুন পেয়েছেন ২ লাখ ৫ হাজার ৪১৩ ভোট।
নির্বাচন কমিশনের তথ্যানুযায়ী, গাজীপুর সিটিতে মোট ভোটার ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৭৬ জন। তাদের মধ্যে ৫ লাখ ৯২ হাজার ৭৬২ জন পুরুষ, ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৬৯৬ জন নারী ও ১৮ জন হিজড়া। এই সিটিতে ৫৭টি সাধারণ ও ১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড আছে। মোট ভোটকেন্দ্র ৪৮০টি, মোট ভোটকক্ষ ৩ হাজার ৪৯৭টি।
গাজীপুর সিটিতে মেয়র পদে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হচ্ছে আওয়ামী লীগের আজমত উল্লা খান এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুনের মধ্যে। দুজনই জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী। অপরদিকে ভোটের পরিবেশ ভালো বলে জানান আরেক স্বতন্ত্র প্রার্থী শাহনূর ইসলাম রনি।
কোটা পদ্ধতি তুলে দেওয়ার পরও বিসিএস পরীক্ষায় নারীদের চাকরি পাওয়ার হার প্রায় একই রয়েছে। ১০ শতাংশ কোটা থাকা অবস্থায় তারা যে পরিমাণ চাকরি পাচ্ছিলেন, কোটা তুলে দেওয়ার পরও প্রায় একই হারে চাকরি পাচ্ছেন। সাধারণ ক্যাডার বা কারিগরি ক্যাডারে পিছিয়ে পড়লেও শিক্ষার মতো পেশাগত ক্যাডারগুলোতে এগিয়ে গিয়ে বিসিএসে মোট চাকরি পাওয়ার হারে প্রায় একই অবস্থান ধরে রেখেছেন নারীরা।
অথচ কোটাবিরোধী আন্দোলনের সময় বলা হয়েছিল, কোটা তুলে দিলে চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে নারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। প্রশাসনে নারীর অংশগ্রহণের গ্রাফ নিম্নমুখী হবে। আসলে তা হয়নি। কোটা তুলে দেওয়ার পরও তারা প্রায় সমানতালে এগিয়ে চলছেন।
৪০তম বিসিএস দিয়ে চাকরিতে ঢুকে বর্তমানে ঢাকা বিভাগে কর্মরত একজন নারী কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, যে বয়সে ছেলেরা চাকরির জন্য প্রতিযোগিতা করে সেই বয়সে অধিকাংশ নারীকেই বিবাহিত জীবনে প্রবেশ করতে হয়। সংসার করে, সন্তান লালনপালন করে নারীরা ভালো প্রস্তুতি নিতে পারে না। ফলে অনেক মেধাবী নারী প্রতিযোগিতায় উতরে যেতে পারেন না। অনেক নারী পারিবারিক কারণে বিয়ের পর চাকরির আবেদনই করেন না। বিয়ের পর পরীক্ষায় অংশ নিতে বাধা আসে। এসব কাটিয়ে উঠে চাকরিতে প্রবেশ করা কঠিন। আর বিসিএসের চাকরি মানেই বদলিযোগ্য। সংসার-সন্তান রেখে বদলিকৃত পদে যোগ দেওয়া কঠিন বিষয়। সবকিছু মিলিয়ে নারীদের জন্য এ চাকরি সহজ নয়। একজন পুরুষ বেকার নারী বিয়ে করে, কিন্তু একজন নারী বেকার পুরুষ বিয়ে করে না। এ বিষয়টাও ছেলেদের প্রস্তুত হতে সাহায্য করে। এ বাস্তবতা থেকেও পুরুষ প্রতিযোগী বেশি হয়। অন্যদিকে যোগ্য হলেও অনেক নারী প্রতিযোগিতাই করে না।
একজন নারী ইউএনও বলেন, পরীক্ষার হলে বা মৌখিক পরীক্ষার সময় অনেক নারীকে দুগ্ধপোষ্য সন্তানকে সঙ্গে আনতে হয়। এগুলোও অনেক সময় নারীকে চাকরির ক্ষেত্রে নিরুৎসাহিত করে। ঘরে ঘরে বাধা পায় নারীর অগ্রযাত্রার নানা চেষ্টা। নগর-জীবনে নারীর অস্তিত্ব অনেকটা স্বচ্ছন্দের। কিন্তু নগরসভ্যতার বাইরে বিশাল বিস্তৃত গ্রামীণ জনজীবনে পুরুষতন্ত্রের নানা ধরনের অনাকাক্সিক্ষত বেষ্টনী এখনো নারীকে ধরাশায়ী করে রাখে। হাজার হাজার বছর ধরে পৃথিবীর পথ হাঁটছে নারী-পুরুষ। তবু তাদের মধ্যে ভারসাম্য নেই।
কোটা না থাকার পরও নারীরা তাদের অবস্থান কীভাবে ধরে রাখলেন জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. সৈয়দ শাইখ ইমতিয়াজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নারী শিক্ষায় বাংলাদেশের অর্জন বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত। প্রাথমিকের পর মাধ্যমিকেও মেয়েরা অনেক এগিয়েছে। উচ্চশিক্ষায়ও মেয়েদের অংশগ্রহণের হার বেড়েছে। সবকিছু মিলে বিসিএসে এর প্রতিফল ঘটেছে। যে পরিমাণ মেয়ে উচ্চশিক্ষা নিচ্ছে, সেই তুলনায় চাকরিতে প্রবেশের হার বেশি। উচ্চশিক্ষায় যায় হয়তো ৮০ ভাগ ছেলে। আর মেয়েদের মধ্যে উচ্চশিক্ষায় যাওয়ার হার ৩০ বা ৩৫ শতাংশ। তাদের মধ্যে ২৬ বা ২৭ শতাংশ মেয়ে বিসিএস দিয়ে চাকরি পাচ্ছে। এদিক দিয়ে চিন্তা করলে মেয়েরা অনেক ভালো করছে।’
এক প্রশ্নের জবাব ড. ইমতিয়াজ বলেন, ‘মেয়েদের কাছে শিক্ষা এখনো অপরচুনিটি (সুযোগ) আর ছেলেদের কাছে অধিকার। মেয়েরা যখন এ সুযোগটা পায় অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তা কাজে লাগাতে চায়।’ তিনি আরও বলেন, ‘পরিবারের ছেলেসন্তানের জন্য যে বিনিয়োগ, মেয়েসন্তানের জন্য এখনো তার চেয়ে অনেক কম। এখনো মনে করা হয় মেয়ে তো অন্যের ঘরে চলে যাবে। অথচ মজার বিষয় হচ্ছে, পরিবারের দায়িত্ব উচ্চশিক্ষিত ছেলের তুলনায় উচ্চশিক্ষিত মেয়ে অনেক বেশি বহন করে। এসব প্রতিবন্ধকতা হাজার বছরে তৈরি হয়েছে। এগুলো দূর হতে আরও সময় লাগবে।’
অন্যান্য কোটার মতো প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে নারীদের জন্য ১০ শতাংশ কোটা ছিল। নারীরা যোগ্যতা অনুযায়ী মেধা কোটায়ও নিয়োগ পেতেন। তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির চাকরিতে মেধাভিত্তিক জেলা কোটার পাশাপাশি ১৫ শতাংশ নারী কোটা রয়েছে এখনো। প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে মেধাভিত্তিক জেলা কোটার পাশাপাশি ৬০ শতাংশ নারী কোটা সংরক্ষিত রেখে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। এভাবে নারীরা সরকারি চাকরিতে পুরুষ প্রার্থীর সঙ্গে মেধা কোটায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে নিয়োগ লাভের পাশাপাশি সংরক্ষিত কোটায়ও নিয়োগ লাভের সুবিধা পেয়ে থাকেন।
শিক্ষার বিভিন্ন স্তরে ছাত্রীর হার বাড়ছে। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে এক দশকের বেশি সময় ধরে ছাত্রের চেয়ে ছাত্রীর হার বেশি। কলেজ পর্যায়ে ছাত্র ও ছাত্রীর হার প্রায় সমান। বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রীর হার ৩৬ শতাংশের বেশি।
বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে ২০১৮ সালে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির চাকরিতে কোটা পদ্ধতি বাতিল করে সরকার। ৪০তম সাধারণ বিসিএস হচ্ছে কোটামুক্ত প্রথম বিসিএস। ধাপে ধাপে বাছাই করে গত বছর ৩০ মার্চ এই বিসিএসের চূড়ান্ত সুপারিশ করে বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি)। প্রায় ১৩ মাস পর গত মাসে সেই সুপারিশের বিশ্লেষণ প্রকাশ করেছে পিএসসি। সেখানে বলা হয়েছে, ৪০তম বিসিএসে মোট ২৬ দশমিক ০৩ শতাংশ নারী চূড়ান্তভাবে সুপারিশ পেয়েছেন। যা কোটাযুক্ত ৩৮তম বিসিএসে ২৬ দশমিক ৯১ ও ৩৭তমে ২৪ দশমিক ৬০ শতাংশ ছিল। গত ১ নভেম্বর এ বিসিএসের কর্মকর্তারা চাকরিতে যোগ দিয়েছেন।
পিএসসির একজন সাবেক চেয়ারম্যান বলেছেন, কোটামুক্ত একটি সাধারণ বিসিএসে ২৬ দশমিক ০৩ শতাংশ নারী চূড়ান্তভাবে সুপারিশ পেয়েছেন এটা প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় নারীদের শক্ত সক্ষমতা প্রকাশ করে। কারণ এর আগে কোটাযুক্ত ৩৮তম বিসিএসের তুলনায় মাত্র দশমিক ৮৮ শতাংশ কম। অর্থাৎ কোটা তুলে দেওয়ার পরও নারীরা ১ শতাংশও পিছিয়ে পড়েননি। আরেকটি বিষয় লক্ষণীয় যে, প্রত্যেক বিসিএসে নারীদের আবেদনের হার অর্থাৎ প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের হার পুরুষের তুলনায় কম অর্থাৎ গড় হার কম। পরীক্ষা কেন্দ্রগুলোতেও নারী প্রার্থীদের পুরুষের তুলনায় অনেক কম চোখে পড়ে। এমনকি কোনো কোনো কক্ষে নারী প্রার্থী থাকেই না। একই সঙ্গে প্রতিযোগিতায় ধাপগুলো অতিক্রম করার ক্ষেত্রে নারীদের অনুত্তীর্ণ হওয়ার পরিমাণ বেশি থাকে। ৪০তম বিসিএসে যোগ্য আবেদনকারী নারী ছিলেন ৩৮ দশমিক ৩৮ শতাংশ। তাদের মধ্যে ১৯ দশমিক ১৯ শতাংশ নারী প্রিলিমিনারিতে উত্তীর্ণ হন। অথচ পুরুষদের ক্ষেত্রে ভিন্ন চিত্র। যোগ্য আবেদনকারী পুরুষ ছিলেন ৬১ দশমিক ৬২ শতাংশ। প্রিলিমিনারিতে উত্তীর্ণ পুরুষের হার ৮০ দশমিক ৮১ শতাংশ।
৪০তম বিসিএসের সাধারণ ক্যাডারে ২১ দশমিক ০৮ শতাংশ নারী সুপারিশ পেয়েছেন। এই হার ৩৮ ও ৩৭তম বিসিএসে ছিল যথাক্রমে ২৪ দশমিক ১৪ ও ২৩ দশমিক ৯ শতাংশ।
৪০তম বিসিএসের কারিগরি ক্যাডারে ২৭ দশমিক ৭৫ শতাংশ নারী সুপারিশ পেয়েছেন। এই হার ৩৮ ও ৩৭তম বিসিএসে ছিল যথাক্রমে ২৯ দশমিক ৫৩ ও ২৫ দশমিক ২ শতাংশ।
সাধারণ এবং কারিগরি ক্যাডারে নারীরা পিছিয়ে পড়লেও শিক্ষার মতো পেশাগত ক্যাডারে এগিয়েছেন। ৪০তম বিসিএসে ২৮ দশমিক ৩৪ শতাংশ নারী সুপারিশ পেয়েছেন। যা ৩৮তমে ২৬ দশমিক ৩০ এবং ৩৭তমে ২৫ দশমিক ২ শতাংশ ছিল।
পুরোপুরি মেধার ভিত্তিতে নেওয়া ৪০তম বিসিএসে প্রশাসন ক্যাডারেও নারীরা পিছিয়েছেন। জেলা কোটাও না থাকায় নাটোর, ভোলা, বান্দরবান ও খাগড়াছড়ি থেকে প্রশাসন ক্যাডারে কেউ সুপারিশ পাননি।
গত বছর প্রকাশিত জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সরকারি চাকরিজীবীদের তথ্যসংক্রান্ত ‘স্ট্যাটিসটিকস অব সিভিল অফিসার্স অ্যান্ড স্টাফস’ প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, সিভিল প্রশাসনের ১৪ লাখ সরকারি কর্মচারীর মধ্যে ২৬ শতাংশ নারী। সরকারি দপ্তরের মধ্যে বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে কাজ করেন সবচেয়ে কমসংখ্যক নারী। মন্ত্রণালয়ের মোট জনবলের ১৯, অধিদপ্তরের ৩১, বিভাগীয় কমিশনার ও ডেপুটি কমিশনারের কার্যালয়ের ১২ এবং আধাসরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের ১২ শতাংশ কর্মী নারী।