
হোয়াটসঅ্যাপে (WhatsApp) ) এবার আপনার হয়ে টেক্সটের উত্তর দিয়ে দেবে চ্যাটজিপিটি (ChatGPT)। এতে অবাক হওয়ার কিছুই নেই। নানা কাজের চাপে বা ক্লান্তিতে অনেক সময় হোয়াটসঅ্যাপের সব মেসেজের উত্তর দিতে পারেন না অনেকেই। এবার চ্যাটজিপিটি আপনার হয়ে হোয়াটসঅ্যাপের টেক্সট-এর উত্তর দিয়ে দেবে।
অর্থাৎ হোয়াটসঅ্যাপের মেসেজের উত্তর দেওয়ার সব দায়িত্ব বুঝে নেবে এআই বা আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স। এটি এমনভাবে উত্তর দেবে যে, অপর প্রান্তে থাকা কেউ বুঝেই উঠতে পারবেন না, এটি কোনো এআই-এর টেক্সট। তিনি ভাববেন, আপনিই হয়তো টেক্সট দেখে তার মেসেজের উত্তর দিলেন।
যেভাবে কাজ করবে
ড্যানিয়েল গ্রস নামে এক অ্যাপ ডেভেলপার এমন একটি পাইথন স্ক্রিপ্ট তৈরি করেছেন, যা চ্যাটজিপিটি ও হোয়াটসঅ্যাপে যুক্ত করা যাবে। এর ফলে বন্ধুদের সঙ্গে হোয়াটসঅ্যাপে চ্যাট করার প্রয়োজন হলে, আপনার হয়ে চ্যাট চালিয়ে যাবে চ্যাটজিপিটি। বন্ধুরা ভাববেন আপনিই চ্যাট করছেন।
ব্যবহার করবেন কীভাবে
পাইথন স্ক্রিপ্টটি ব্যবহার করতে হলে এক্ষেত্রে আপনাকে কোনো ওয়েবপেজ থেকে একটি ল্যাঙ্গুয়েজ লাইব্রেরি ডাউনলোড করতে হবে। ল্যাঙ্গুয়েজ লাইব্রেরি ডাউনলোডের পর খুলবেন হোয়াটসঅ্যাপ-জিটিপি-মেইন (WhatsApp-gpt-main) ফাইল। এরপর সার্ভার ডটপাই server.py) ডকুমেন্ট এগজিকিউট করতে হবে। এরপরই আপনার চ্যাটজিপিটি ও হোয়াটসঅ্যাপ সংযুক্ত হয়ে যাবে।
সার্ভার চলা অবস্থায় তখন আপনাকে টাইপ করতে হবে ‘ইজ’ (Is, তারপর এন্টার। এবার ‘পাইথন সার্ভার ডট পাই’ (python server.py) -এ ক্লিক করুন। এতে আপনার ফোন নম্বর স্বয়ংক্রিয়ভাবেই ‘ওপেন এআই’ (OpenAI) চ্যাট পেজের সঙ্গে সংযুক্ত হয়ে যাবে।
তারপর ক্লিক করুন ‘কনফার্ম’ ও ‘অ্যাম এ হিউম্যান’ Confirm I am a human), যাতে বোঝা যাবে, আপনি রোবোট নন। এটি করার পরেই দেখতে পাবেন আপনার হোয়াটসঅ্যাপ অ্যাকাউন্টে ওপেন এআই চ্যাটজিপিটি (OpenAI ChatGPT) চলে এসেছে। ব্যস এবার চ্যাট শুরু। আপনার হয়ে চ্যাট করে দেবে চ্যাটজিপিটি।
পশ্চিমা ধ্রুপদি সংগীত বললেই যার নাম নক্ষত্রের মতো জ¦লজ¦ল করে, তিনি সংগীতস্রষ্টা ভোলফগাং আমাদেউস মোৎসার্ট। তার স্ত্রী ছিলেন কনস্টানজে মোৎসার্ট। প্রতিষ্ঠিত এই সংগীতশিল্পী সুরের এই জাদুকরের জীবনীকার ও অমর সৃষ্টির অনুপ্রেরণা। লিখেছেন নাসরিন শওকত
হৃদয়ের প্রিয়তমা
আমার হৃদয়ের প্রিয়তমা ছোট্ট স্ত্রী! তোমার কাছ থেকে যদি একটি চিঠি পেতাম তবে সবকিছু ঠিক হয়ে যেত... এরপর নিজেকে কবিতার কাছে পুরোপুরি সমর্পন করে সুরস্রষ্টা বলেন, আমি তোমার সঙ্গে আবার থাকতে পারব, এ কথা ভাবতেই শিশুর মতো উত্তেজিত হয়ে পড়ছি। যদি সবাই আমার হৃদয়ের এই অবস্থা দেখতে পেত, লজ্জাতেই পড়তে হতো আমাকে। তুমি ছাড়া বাকি সব কিছু আমাকে বরফের মতো শীতল করে দেয়। হায়! যদি তুমি আজ আমার পাশে থাকতে, তাহলে আমি হয়তো দেখতে পেতাম যে, এই সৌজন্য দেখানো মানুষেরাই আমাকে কত বেশি মনোযোগ দিচ্ছে। কিন্তু বরাবরের মতোই, সবকিছু শূন্য মনে হয়; বিদায়- আমার প্রিয়তমা- আমি চিরকালই তোমার। পুরো অন্তর দিয়ে ভালোবাসার তোমার মোৎসার্ট চিঠির এই কথাগুলো কনস্টানজে ওয়েবকে উদ্দেশ্য করে লেখা। এই নামটি হয়তো চট করে অনেকেই চিনে উঠতে পারবেন না। কিন্তু তিনি পশ্চিমা ধ্রুপদী সংগীত জগতের এমন একজনের স্ত্রী, যার নাম জানে না এমন লোক খুঁজে পাওয়া মুশকিল। আঠার শতকের কিংবদন্তি সেই সংগীতস্রষ্টা আর কেউ নন, ভোলফগাং আমাদেউস মোৎসার্ট। অমর এই ধ্রুপদী শিল্পীর মাত্র ৩৬ বছর বয়সে অকালমৃত্যু হয়। মৃত্যুর এক বছর আগে ১৭৯০ সালের সেপ্টেম্বরে ফ্রাঙ্কফুর্ট থেকে মোৎসার্ট তার প্রিয়তমা স্ত্রী কনস্টানজেকে চিঠিটি লিখেছিলেন।
মোৎসার্ট ও তার স্ত্রী কনস্টানজের মধ্যকার সম্পর্ক নিয়ে নানা গবেষণা ও জীবনী লেখা হয়েছে, যার বেশির ভাগ অংশেই কনস্টানজেকে বিতর্কিতভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। তবে কেউ কেউ তাকে একজন আলোকিত ও শাস্ত্রীয় সংগীতের দক্ষ গায়িকা ও সুকণ্ঠের অধিকারী হিসেবে দেখাতে চেয়েছেন, যিনি প্রতিভাবান সুরকার মোৎসার্টকে সংগীতের মধ্য দিয়ে অতীন্দ্রিয় এক সুরলোক সৃষ্টিতে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছেন। দুর্ভাগ্যবশত মোৎসার্টের অসামান্য কাজকে মূল্যায়নে কনস্টানজের অবদানের অবমূল্যায়ন করা হয়েছে। তাকে অজ্ঞ, তুচ্ছ, বস্তুবাদী এবং মোৎসার্টের প্রতিভাকে উপলব্ধি করতে অক্ষম হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে। বলা হয়েছে, দাম্পত্য জীবনে আর্থিক বিষয় ছাড়া স্বামীর সঙ্গে কোনো বিষয়েই খুব একটা মতের মিল ছিল না তার। তবে সুখের বিষয় হলো, এমন সব অকাট্য দাবি সত্ত্বেও মোৎসার্ট তার জীবনে প্রাণপ্রিয় স্ত্রী কনস্টানজের গুরুত্ব স্বীকার করেছেন এবং একমাত্র দাম্পত্য জীবনের অমø-মধুর ৯টি বছর কাটিয়েছেন তার সঙ্গেই। বিখ্যাত এই সংগীতকার ও সুরকারের মৃত্যুর পর স্বামী মোৎসার্টের খ্যাতিকে চিরস্থায়ী রূপ দিতে লিখেছেন তার জীবনী।
কনস্টানজের শৈশব
১৭৬২ সালের ৫ জানুয়ারি। দক্ষিণ-পশ্চিম জার্মানির জেল ইম উইজেন্টালের প্রখ্যাত এক দরিদ্র সংগীত পরিবারে এদিন জন্ম নেন কনস্টানজে ওয়েবার। পুরো নাম মারিয়া কনস্টানজে ক্যাসিলিয়া জোসেফা জোহান্না আলয়সিয়া মোৎসার্ট। তার বাবা ফ্রিডোলিন ওয়েবার ছিলেন অর্কেস্ট্রার একজন সফল ভায়োলিন বাদক, সুরকার ও প্রম্পটার। আর মা ক্যাসিলিয়া গৃহিণী। কনস্টানজের ছিল তিন বোন। দুই বোন বড় আর একজন ছোট। এই চার বোনই ছিলেন শাস্ত্রীয় সংগীতের তালিমপ্রাপ্ত অসাধারণ গায়িকা। কনস্টানজের বড় দুই বোন জোসেফা ও আলয়সিয়া সংগীত জগতে সফল ছিলেন ।
ছোটবেলা থেকেই বাড়িতে গান-বাজনার পরিবেশের মধ্যে বেড়ে ওঠেন কনস্টানজে। পিয়ানো বাজানো শিখলেও আনুষ্ঠানিক পড়াশোনায় ছিলেন পিছিয়ে। তবে তার শৈশবের বেশিরভাগ সময় কাটে নানাবাড়িতে। সাংস্কৃতিক, বুদ্ধিবৃত্তিক ও সংগীতের প্রাণকেন্দ্র হিসেবে বিখ্যাত শহর মেনহাইমে। ১৭৭৭ সাল দিকে, ২১ বছরের তরুণ মোৎসার্ট কাজের সন্ধানে মেনহাইমে আসেন মাকে সঙ্গে নিয়ে এবং যথারীতি বিখ্যাত ওয়েবার সংগীত পরিবারের সঙ্গে গাঢ় সম্পর্ক গড়ে তোলেন। তরুণ মোৎসার্ট তখন তার প্রতিভা চর্চার চেয়ে বরং নিজের ব্যক্তিগত সম্পর্কের বিষয়ে মনোযোগী হয়ে ওঠেন। বছরের শেষ দিকে তিনি কানস্টানজের বড় বোন আলয়সিয়ার প্রেমে পড়েন। কানস্টানজের বয়স তখন মাত্র ১৫। ওই বছরই মোৎসার্ট মাকে হারান। এর পরই আলয়সিয়ার কাছে প্রত্যাখ্যাত হয়ে ভাঙা মন নিয়ে সালজবুর্গে, বাড়ি ফেরেন।
ভিয়েনায় চলে আসা
১৭৭৯ সাল। ওয়েবার পরিবার বড় দুই গায়িকা মেয়ের ক্যারিয়ার গড়ার স্বপ্ন নিয়ে ভিয়েনায় চলে আসে। এর ঠিক এক মাসের মাথায় কনস্টানজের বাবা ফ্রিডোলিন মারা যান। ওয়েবার পরিবার যেন অথৈ সাগরে পড়ে যায়। উপায় না পেয়ে পয়সা রোজগারের আশায় বাড়িতেই বোর্ডিং দেওয়া শুরু করেন কনস্টনাজের মা ক্যাসিলিয়া। এর দু বছরের মাথায় ভিয়েনায় ফেরেন মোৎসার্ট, কিন্তু এরই মধ্যে সেখানে শুধুমাত্র সেরা পিয়ানো বাদকই নয় একজন প্রতিশ্রুতিশীল তরুণ সুরকার হিসেবেও নাম-ডাক হয় তার। ১৭৮১ সালের মে’তে কনস্টানজেদের বাড়িতে ওঠেন। এক পর্যায়ে ১৯ বছরের কনস্টানজের প্রেমে পড়েন। তার মা ক্যাসিলিয়া দুজনার প্রেমের বিষয়টি জেনে ফেলেন এবং মোৎসার্টকে বাড়ি ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য করেন। সেপ্টেম্বরে কনস্টানজের বাড়ি ছেড়ে চলে আসেন তিনি। তবে এর পর থেকে এক ছাদের নিচে না থাকলেও মোৎসার্ট ও কনস্টানজের প্রেমে বড় ছেদ পড়েনি। তবে অনেক ভাঙাগড়ার মধ্য দিয়ে প্রেমের পরীক্ষা চলে তাদের। পরের বছরই তারা বিয়ের সিদ্ধান্ত নেন।
বাবার অস্বীকৃতি
কনস্টানজে সুশিক্ষিত ছিলেন। সংগীতে প্রতিভাধর হওয়ার পাশাপাশি ফরাসি, ইতালীয় এবং স্থানীয় জার্মান ভাষায় চমৎকার কথা বলতে পারতেন। এইসব গুণ বিচারে মোৎসার্ট আন্তরিকভাবে বিশ^াস করতেন যে, একজন সুরকারের আদর্শ স্ত্রী হওয়ার যোগ্য কনস্টানজে। কিন্তু বেঁকে বসলেন মোৎসার্টের বাবা লিওপোল্ড। কনস্টানজেকে কিছুতেই তার ছেলের যোগ্য স্ত্রী বলে মানতে রাজি নন তিনি এবং সম্পর্কটি যাতে বিয়ে পর্যন্ত না গড়ায় অনবরত সেই চেষ্টাই করতে থাকলেন। এ নিয়ে ছেলে-বাবার মধ্যে চিঠি চালাচালিও কম হলো না। প্রায় চিঠিতেই মোৎসার্ট যেখানে তার প্রেমিকার প্রতিভার নানা গুণগান করেন, তো বাবা লিওপোল্ড জবাবে কঠোর থেকে আরও কঠোর হন এবং একদিন ছেলের মন ফিরবে সেই আশায় বুক বাঁধেন। কিন্তু নাছোড়বান্দা মোৎসার্ট বাবার মন গলাতে এক চিঠিতে লেখেন, ‘আমার প্রিয় কনস্টানজের চরিত্রের সঙ্গে আপনাকে আরও ভালোভাবে পরিচিত করাতে চাই। তার সব সৌন্দর্যের আধার হলো তার ভ্রমরকালো ওই দুটি চোখ... খুব স্মার্ট না হলেও সে পরিষ্কার ও পরিপাটিভাবে পোশাক পরতে পছন্দ করে। একজন নারী হিসেবে যা করা প্রয়োজন, তার সবকিছুই সে নিজে করতে পারে... আমি তাকে এবং সেও আমাকে হৃদয় উজাড় করে ভালোবাসে। তার চেয়ে আর ভালো বউ কি আমি পাব, বলুন?’
অমতের বিয়ে
বিষয়টি শেষ পর্যন্ত এমন দাঁড়ায় যে, সবাই যেন মোৎসার্ট ও কনস্টানজের প্রেমের প্রতিপক্ষ হয়ে উঠল। তাই শেষ পর্যন্ত সবার অমতের বিরুদ্ধে গিয়েই ১৭৮২ সালের ৪ আগস্ট, ভালোবাসার ঘর বাঁধেন মোৎসার্ট ও কনস্টানজে। এদিকে মার্কিন সংগীতবিদ ও ক্যালিফোর্নিয়ার বার্কলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগীতের অধ্যাপক ড্যানিয়েল হার্টজ জানান যে, সময়ের সঙ্গে লড়তে লড়তে বিপর্যস্ত কনস্টানজে একপর্যায়ে বিয়ের আগেই মোৎসার্টের কাছে চলে আসেন। ১৭৮২ সালেরই ৩১ জুলাই মোৎসার্ট বাবার কাছে একটি চিঠিতে লেখেন, ‘আপনার পাঠানো সব ভালো ও সৎ পরামর্শ এমন একজন মানুষের ক্ষেত্রে সমাধান দিতে ব্যর্থ হয়েছে, যে এরইমধ্যে একটি মেয়ের সঙ্গে ভীষণভাবে জড়িয়ে গেছে। এরপরও এই সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে আসার আর কোনো প্রশ্নই আসে না।’ এর ঠিক পাঁচ দিন পর এই যুগল ভিয়েনার সেন্ট স্টিফেন ক্যাথেড্রালে ছোট অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে বিয়ে করেন। বিয়ের সময় পর্যন্ত মোৎসার্ট ও কনস্টানজের ঘরে ছয়টি সন্তানের জন্ম হয়। কিন্তু তাদের মধ্যে মাত্র দুটি সন্তান শিশু অবস্থা পর্যন্ত বেঁচে ছিল। এতে পরবর্তী জীবনে শারীরিকভাবে দুর্বল হয়ে নানা অসুস্থতায় ভোগেন কনস্টানজে।
মোৎসার্টের সংগীতের অনুপ্রেরণা
কনস্টানজে শাস্ত্রীয় সংগীতে একজন দক্ষ ও প্রতিভাবান শিল্পী ছিলেন। তাই অনেকেই বিশ্বাস করেন যে, তিনি তার স্বামী ও কিংবদন্তি সুরস্রষ্টা মোৎসার্টের সংগীতজীবনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন। সে সময় কনস্টানজে তার শিল্পীসত্তার চর্চা করতেন স্বচ্ছন্দে। গান গাওয়া, পিয়ানো বাজানোর পাশাপাশি নাট্যপরিবেশেও নিজেকে মানিয়ে নিতেন বেশ। স্বামী মোৎসার্টের সঙ্গে সংগীত জীবনকে খুব আনন্দের সঙ্গেই ভাগ করে নিতেন তিনি। মোৎসার্ট তার প্রিয়তম স্ত্রী কনস্টানজেকে উৎসর্গ করে বেশ কটি সুরও লিখেছেন। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, মোৎসার্ট গ্রেট মাসের সি মাইনরের একক গান লিখেছিলেন তার প্রিয়তমা স্ত্রী কনস্টানজের জন্য। ১৭৮৩ সালে মোৎসার্টে সালজবুর্গের প্রিমিয়ারে সেই গান গেয়েছিলেন কনস্টানজে। আরও উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, শিল্পী মহলে মোৎসার্টের বন্ধুদের মধ্যে ব্যারন ভন সুইটেন ছিলেন অন্যতম। তিনিই মোৎসার্টকে তার বাখ ও হ্যান্ডেলের সংগীত ঘরানার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন। বারোক ঘরানার নানা সুরের কারুকাজ ভালোবাসতেন কনস্টানজে। তাই প্রিয়তমার ভালোবাসায় অনুপ্রাণিত হয়েই পরে মোৎসার্ট বেশ কয়েকটি বারোক রীতির সংগীত রচনা করেন।
মোৎসার্টের জীবনীকার
সংগীতের ভুবনে ডুবে থাকা মোৎসার্ট বিলাসবহুল ও বেহিসাবী জীবনযাপন করতেন। তাই জীবনের শেষ মুহূর্তেও নিজের ও পরিবারের জন্য তেমন কোনো সঞ্চয় রেখে যেতে পারেননি তিনি। ১৭৮৭ সালের শেষ দিকে ভিয়েনায় রাজকীয় দরবারের সুরকার হিসেবে যোগ দেন। এতে তার আয়ের অন্য সব পথ বন্ধ হয়ে যায়। বেতন খুব কম পেতেন। ফলে তার আর্থিক অবস্থার দিন দিন অবনতি হতে থাকে। এ সময় তিনি ধনী বন্ধুদের কাছ থেকে ধারাবাহিকভাবে ঋণ নিতে থাকেন। এই ঋণগ্রস্ত জীবনের শেষের দিকে তার মন ও স্বাস্থ্য একবারে ভেঙে পড়ে। এই অনটনে অর্থ উপার্জনের আশায় তিনি কখনো প্রাগে, কখনো ভিয়েনায় আবার কখনো বা বার্লিনে অনুষ্ঠান করে বেড়ান।
১৭৯০ সালের আগস্টের মাঝামাঝি। প্রাগে থাকা সেই সময়েই মোৎসার্টকে মৃত্যুচিন্তা পেয়ে বসে এবং এক ভ্রান্ত ধারণা গ্রাস করে যে, কেউ যেন তাকে বিষপ্রয়োগ করেছে। ১৭৯১ সালের ৬ সেপ্টেম্বর । প্রাগে ‘লা ক্লেমেনজা দি টিটো’ অপেরা উন্মোচনের প্রস্তুতি চলছিল। তখন হঠাৎ গুরুতরভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েন মোৎসার্ট। এর পরে ভিয়েনায় ফিরেও আসেন। তখন কনস্টানজে তার বোনদেরকে সঙ্গে নিয়ে তার সেবা-শুশ্রুষা করেন। পরে ১৭৯১ সালের ৫ ডিসেম্বর রাতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন মহান এই সুরকার। কিন্তু শারীরিকভাবে অসুস্থ হওয়ায় মোৎসার্টের শেষকৃত্যে উপস্থিত থাকতে পারেননি কনস্টানজে। বলা হয়ে থাকে, তিনি বাতজ¦রে ভুগে মারা যান। তবে তার অসুস্থতার সঠিক কারণ আজও রহস্য হয়েই রয়ে গেছে।
দুর্ভাগ্যজনকভাবে মোৎসার্ট যেদিন মারা যান, সেদিনও তার স্ত্রী কনস্টানজের কাছে কোনো টাকা-পয়সা ছিল না। তাই খুব করুণভাবে মৃত্যু হয়েছিল সুরের এই মহান জাদুকরের। বড় আকারের ওই ঋণ পরিশোধ করতে যেয়ে কনস্টানজে বিপদে পড়েন। তবে এই সময়েই সম্রাটের কাছ থেকে পেনশন পেতে শুরু করেন তিনি। পাশাপাশি মোৎসার্টের স্মরণে কিছু কনসার্টের আয়োজন করতেও সফল হন। আর স্বামীর অমর সব কাজেরও প্রচারণা চালিয়ে যেতে থাকেন। এতে কনস্টানজে আর্থিকভাবে সচ্ছল হয়ে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে ধনীও হয়ে ওঠেন।
কনস্টানজে পরে ওস্তাদ ফ্রাঞ্জ জাভার নেইমশেকের সঙ্গে থেকে সহকারী হিসেবে স্বামী ভোলফগাং আমাদেউস মোৎসার্টের পুরো জীবনী লেখেন । ১৭৯৭ সালে কনস্টানজের জীবনের দ্বিতীয় অধ্যায় শুরু হয়। এ সময় ঘটনাচক্রে তার ডেনমার্কের কূটনীতিক জর্জ নিকোলাস ভন নিসেনের সঙ্গে পরিচয় হয়। এই যুগল ১৮০৯ সালে বিয়ে করেন এবং তারা দুজনে মিলে মোৎসার্টের সম্পূর্ণ জীবনী প্রকাশ করেন। এর দু’বছর পার না হতেই কনস্টানজের দ্বিতীয় স্বামী নিসেনও মারা যান। ১৮৪২ সালে সালজবুর্গে মারা যান কিংবদন্তি সুরকার মোৎসার্টের স্ত্রী কনস্টানজে।
শীত চলে গেছে। এই সময়ে নানা রকম শারীরিক সমস্যা জাঁকিয়ে বসে শরীরে। বাড়ির শিশুদের প্রতি বাড়তি নজর না দিলে মুশকিল, কারণ শিশুদের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকে। সবসময় রোগের সঙ্গে লড়াই করতে তারা পারে না। ফলে একটু অনিয়মেই খারাপ হয়ে পড়ে শরীর। যে কোনো রকম শারীরিক অসুস্থতা থেকে শিশুকে দূরে রাখতে খাওয়া-দাওয়ায় বদল আনা জরুরি। শাকসবজি, ফলমূল সন্তানের রোজের পাতে রাখতে ভুলবেন না। কারণ এগুলোতে থাকা উপকারী উপাদান রোগের সঙ্গে লড়াই করার শক্তি জোগায় শরীরে। এমন কিছু খাবার রয়েছে, যেগুলো খালি পেটে শিশুকে খাওয়ালে শরীর চাঙ্গা থাকবে, ঝিমিয়ে থাকবে না তারা।
কাঠবাদাম : প্রোটিন, আয়রন, ফাইবার, ভিটামিন ই-সমৃদ্ধ কাঠবাদাম শরীরের জন্য কতটা উপকারী, তা আলাদা করে বলার অপেক্ষা রাখে না। রোজ সকালে খালি পেটে শিশুকে একটি করে কাঠবাদাম খাওয়াতে পারলে ভালো। এই বাদাম শিশুর স্মৃতিশক্তি বাড়াবে। হাড়ের যতœ নেওয়ার পাশাপাশি তৈরি করতে পারে প্রতিরোধ ক্ষমতাও।
কলা : সাধারণভাবে ভরা পেটে ফল খাওয়ার কথা প্রচলিত। তবে খালি পেটে অনায়াসে কলা খাওয়া যেতে পারে। শিশুর রোজের সকালের খাবারে রাখুন আয়রন, কার্বোহাইড্রেট, জিঙ্ক, সোডিয়ামের মতো কিছু উপকারী উপাদান।
আপেল : শিশুদের রোজ একটি করে আপেল খাওয়ানোর কথা বলেন পুষ্টিবিদরা। কারণ এই ফলে রয়েছে পটাশিয়াম, ক্যালশিয়াম, জিঙ্কের মতো উপাদান, যেগুলো শিশুর দৃষ্টিশক্তির উন্নতি ঘটাবে। হাড়ের যত্ন নেবে। দিনের যে কোনো সময়ে খাওয়া যেতে পারে এই ফল। তবে খালি পেটে খেলে বাড়তি সুবিধা পাওয়া যাবে।
নানা কারণ মানুষ নানা ধরনের ক্যানসারে আক্রান্ত হয়। এর মধ্যে মুখের ক্যানসারের অনেকগুলো কারণ আছে। মুখ বলতে বোঝায় ঠোঁট, চোয়াল, তালু, জিহ্বা, দাঁত, মাড়ি, মুখের তলদেশ, টনসিল ও পাশের এলাকা। মুখের ক্যানসার হওয়ার কারণ ধূমপান এবং তামাক, পান, চুন ও জর্দা সেবন। আমাদের দেশে পান, চুন ও জর্দা বা সাদাপাতা সেবন খুব জনপ্রিয়। অনুষ্ঠান, মেজবানে পানের খিলি থাকা অত্যাবশ্যক। জর্দা, সাদাপাতা ছাড়াও তামাকের আছে অনেক ব্যবহার। যেমন : নস্যি, খৈনি, চরস ও গুল ব্যবহারে অনেকে অভ্যস্ত। এগুলোয় নিকোটিন থাকায় সাময়িক উত্তেজনা সৃষ্টি করে এবং একটি সুখবোধ অনুভূত হয়। কিন্তু এর সঙ্গে আছে কার্সিনোজেন। এটি ক্যানসার সৃষ্টি করতে পারে। ধোঁয়াবিহীন তামাকের মধ্যে থাকে ২৪টি কার্সিনোজেন ও তামাকের ধোঁয়ার মধ্যে থাকে প্রায় ৩৫টি কার্সিনোজেন। তামাকের কার্সিনোজেন হলো এক ধরনের কেমিক্যাল। তা ক্যানসার সৃষ্টি করে বা করতে চায়।
ধূমপানের কারণে মুখ ছাড়াও ফুসফুস স্বরনালি, গলনালি, পাকস্থলী, অগ্ন্যাশয়, কিডনি, ব্লাডার ও জরায়ু মুখের ক্যানসার হতে পারে। মুখের ক্যানসারের অন্য কারণগুলো হলো অসমান বা অমসৃণ দাঁত। তা মুখে ক্ষতের সৃষ্টি করে। মুখ নিয়মিত পরীক্ষা না করা, ভাইরাসের পুনঃপুন সংক্রমণ ও সুষম খাবার গ্রহণ না করা, লিউকেপিকিয়া থাকা, মদ্যপান করা ইত্যাদি কারণে ক্যানসার হতে পারে।
উপসর্গ
দীর্ঘদিনের স্থায়ী ক্ষত, যা কোনো চিকিৎসায় সারছে না এবং ব্যথা, খাবার চিবাতে ও গিলতে অসুবিধা, জিহ্বার সামনের মুক্ত অংশের মার্জিনে হলে সহজে দেখা যায়, মুখগহ্বরের তলদেশে হলে ব্যথা বেশি হয়, মাড়িতে হলে ব্যথা হতে পারে এবং খাবার চিবাতে সমস্যা হয়, গলায় লিম্পনোড ফুলে যায়।
রোগ নির্ণয়
ক্যানসার যত আগে নির্ণয় করা যাবে, আরোগ্য তত সহজ হবে। নিশ্চিতভাবে ক্যানসার নির্ণয়ের জন্য বায়োপসি করে প্যাথলজি টেস্ট করাতে হয়। মুখের ক্যানসার নির্ণয়ে খুব সহজেই বায়োপসি করা যায়।
চিকিৎসা
চিকিৎসা নির্ভর করে রোগের পর্যায়ের নিরাময় সম্ভব। দ্বিতীয় পর্যায়ে গলগ্রন্থ দেখা দিলে বা আশপাশে ছড়িয়ে পড়লে সার্জারি করে নিরাময় সম্ভব। কেমোথেরাপি ও রেডিওথেরাপি দেওয়া আবশ্যক হয়ে পড়ে। দ্বিতীয় ও তৃতীয় পর্যায়ে রোগ নিরাময় কিছু সম্ভব হলেও রোগটি চতুর্থ পর্যায়ে চলে গেলে আর নিরাময় সম্ভব নয়। তখন ব্যথা উপশম করা ও রোগীর পুষ্টি জোগান দেওয়া ছাড়া আর কিছুই করার থাকে না। মুখের ক্যানসার প্রাথমিক পর্যায় থেকে চতুর্থ পর্যায় যেতে ২ থেকে ৩ বছর লাগে। এর মধ্যে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিলে নিরাময় হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
প্রতিরোধ
‘প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধ উত্তম’ কথাটি মনীষীদের। ব্যক্তিগত কু-অভ্যাস থেকে বিরত থাকা ও নিয়মিত মুখ পরিষ্কার করার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। মুখে কোনো ক্ষত দেখা দিলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে পাঁচটি চ্যাম্পিয়নস লিগ শিরোপা জিতেছেন গ্যারেথ বেল। তাই এই টুর্নামেন্টের ফাইনাল সম্পর্কে ভালো ধারণা আছে ওয়েলসের সাবেক অধিনায়কের। আজ রাতে চ্যাম্পিয়নস লিগ ফাইনালে মুখোমুখি হবে ম্যানচেস্টার সিটি ও ইন্তার মিলান। বেলের বাজি সিটির পক্ষে।
ইংলিশ ক্লাব সাউদাম্পটন ও টটেনহামে খেলার সময় ম্যানসিটির বিপক্ষে খেলেছেন বেল। আজ রাতে চ্যাম্পিয়নস লিগ ফাইনালের ফলাফলের সঙ্গে ম্যাচসেরা কে হবেন সেই মতামতও দিয়েছেন বেল। ইন্সটাগ্রামে বেল বলেন, 'ম্যানসিটি ৫-০ তে হারাবে ইন্তার মিলানকে।’
বেলের মতে, ম্যাচসেরা হবেন সিটি মিডফিল্ডার কেভিন ডি ব্রুইনে। চলতি বছরের জানুয়ারিতে ৩৩ বছর বয়সে পেশাদার ফুটবল থেকে অবসর নেন বেল। তার আগে কাতার বিশ্বকাপে খেলে বিশ্ব ফুটবল মঞ্চে খেলার অভিজ্ঞতা নিয়ে গেছেন।
মৌসুমে প্রিমিয়ার লিগ ও এফএ কাপ শিরোপা জিতেছে পেপ গার্দিওলার দল। আজ চ্যাম্পিয়নস লিগ জিতলে ট্রেবল হবে তাদের। ২০২১ এ চ্যাম্পিয়নস লিগ ফাইনালে চেলসির কাছে হেরেছিল ম্যানসিটি।
দ্বিতীয় ইনিংসের শুরুটা প্রত্যাশামতো পায়নি অস্ট্রেলিয়া। তবে মিডল অর্ডাররা দিয়েছেন আস্থার প্রতিদান। তাতে ভারতকে ৪৪৪ রানের লক্ষ্য দেয় অসিরা। এই রান তাড়া করলেই বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের নতুন শিরোপাজয়ী হবে ভারত। রান টপকালে শুধু জয়ই হবে না, হবে রেকর্ডও। তাই শেষ দিনে বিরাট কোহলি ও অজিঙ্কা রাহানের পানে তাকিয়ে থাকবে ভারত।
টেস্ট চ্যাম্পিয়ন হতে হলে বিশ্বরেকর্ডটাই করতে হবে ভারতকে। করতে হবে টেস্টের সর্বোচ্চ রান তাড়ার রেকর্ড। আর না হলে ড্রয়ের জন্য মরিয়া হয়ে ওভালে পঞ্চম দিনের পিচে মাটি কামড়ে পড়ে থাকতে হবে কোহলি-রাহানেদের। এ ছাড়া আর কোনো পথ খোলা নেই ভারতের সামনে।
রেকর্ড গড়ার লক্ষ্যে নেমে লন্ডনের ওভালে আজ চতুর্থ দিন শেষে ভারত তুলেছে ৩ উইকেটে ১৬৪ রান। দুই বছরের জন্য টেস্ট শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট পেতে রবিবার পঞ্চম তথা শেষ দিনে ভারতের দরকার ২৮০ রান, অস্ট্রেলিয়ার চাই ৭ উইকেট। শেষ দিনের শুরুটা করবেন অজিঙ্কা রাহানে (২০*), সঙ্গে বিরাট কোহলি (৪৪*)।
টেস্টের শেষ ইনিংসে ব্যাট করা সবসময়ই কঠিন। ২০০৩ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৪১৮ রানের লক্ষ্য তাড়া করে উইন্ডিজের ওই জয় এখনো সাদা পোশাকে সর্বোচ্চ রান তাড়ার রেকর্ড। সে হিসেবে ওভালে ভারতের চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পথটা অনেক কঠিন।
রেকর্ড গড়ার লক্ষ্যে ভারতের শুরুটা হয়েছিল ওয়ানডে মেজাজে। প্রথম ৭ ওভারে দুই ওপেনার রোহিত শর্মা ও শুবমান গিল করেন ৪১ রান। গ্রিনের বিতর্কিত এক ক্যাচে বোল্যান্ডের বলে গিল আউট হলেও খেলার ধরন পাল্টাননি রোহিতরা।
১৯ ওভারে ৯১ রান তোলা ভারত ২০তম ওভারে হারায় রোহিতকে। এই ইনিংস খেলার পথে ওপেনার হিসেবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ১৩ হাজার রানের মাইলফলক ছুঁয়েছেন রোহিত।
রোহিতের আউটের পর যখন সবাই ভাবছিলেন, উইকেটে থাকা চেতেশ্বর পূজারা তাঁর চিরাচরিত ধরন মেনে রয়েসয়ে ব্যাটিং করবেন। তবে পূজারা আউট হন নিজের চরিত্রের বাইরে গিয়ে কামিন্সের বলে আপার কাট খেলতে গিয়ে।
এর আগে ৪ উইকেটে ১২৩ রান তুলে গতকাল তৃতীয় দিনের খেলা শেষ করে অস্ট্রেলিয়া। আজ চতুর্থ দিন সকালটা দুর্দান্ত শুরু করেন ভারতের পেসাররা। কাল ৪১ রানে অপরাজিত থাকা লাবুশেন চতুর্থ দিনে কোনো রান যোগ না করেই আউট হন উমেশ যাদবের দলে। স্লিপে চেতেশ্বর পূজারার হাতে ক্যাচ দেওয়ার আগে ১২৬ বলে ৪ চারে ৪১ রান করেছেন লাবুশেন। অ্যালেক্স ক্যারি (৬৬*) ও বোলার মিচেল স্টার্কের (৪১) ৯৩ রানের জুটিতে দারুণ পুঁজি গড়ে ফেলে অজিরা। সুবাদে ৮ উইকেটে ২৭০ রান করে দ্বিতীয় ইনিংস ঘোষণা করা সহজ হয় দলটির। হয়তো জয়ের পথটাও তৈরি হলো ওই জুটিতে।
সর্বকালের অন্যতম সেরা ফুটবলার লিওনেল মেসি আর্জেন্টিনার হয়ে খেলেন বলেই লাতিন দেশটিকে নিয়ে বাংলাদেশের মানুষের যত উৎসাহ–উদ্দীপনা। এর আগেও বাংলাদেশের মানুষ ম্যারাডোনা–প্রীতি থেকে আর্জেন্টিনার প্রতি ভালোবাসা দেখিয়েছেন। কিন্তু এবার কাতার বিশ্বকাপে অতীতের সেই ভালোবাসা বা উদ্দীপনাকে চরমভাবে হার মানিয়েছে। আর এর কারণ ওই একটাই, মেসি।
মেসি যে ইউরোপের ফুটবলের পাট চুকিয়ে মেজর লিগ সকারের দল ইন্টার মায়ামিতে যাচ্ছেন, সেই ঘোষণা আসে গত বুধবার। এখনও নাম লেখাননি, কবে থেকে মায়ামির হয়ে মাঠে নামবেন, সেটাও নিশ্চিত নয়। শুধু মেসি ইন্টার মায়ামিতে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। এরপরই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ইন্টার মায়ামির অনুসারীর সংখ্যা বাড়ছে হু হু করে।
গুগলে ফ্লোরিডাভিত্তিক এই ক্লাবটিকে খোঁজা শুরু করে সারা বিশ্বের মেসি–সমর্থকেরা। গুগলে গত ৭ দিনে সবচেয়ে বেশি মায়ামিকে খোঁজা হয়েছে বাংলাদেশ থেকেই। গুগলে এই খোঁজার দিক থেকে বাংলাদেশ এগিয়ে মেসির নিজের দেশ আর্জেন্টিনার চেয়েও। কেউ কেউ বলতে পারেন, বাংলাদেশের জনসংখ্যা আর্জেন্টিনার চেয়ে বেশি ১৪ কোটি। সেই বিবেচনায় এটাই তো হওয়ার কথা।
মূলত গুগল ট্রেন্ডে কোনো ওয়েব সার্চের সর্বোচ্চ জনপ্রিয়তার মানদণ্ড হচ্ছে ১০০। বাংলাদেশ এখানে পেয়েছে এক শই। শনিবার বিকেল ৫টা ১৫ মিনিট পর্যন্ত আর্জেন্টিনা পেয়েছে ৮৪।
গুগল ট্রেন্ডের এই তালিকায় বাংলাদেশ আর্জেন্টিনার পরের নামটা নেপালের। তারা পেয়েছে ৮২। চার নম্বরে আছে হাইতি (৮১), আর পাঁচে আইভরি কোস্ট (৭৩)। এই তালিকায় সেরা দশে আছে ইরাক, ইয়েমেন, কঙ্গো, হন্ডুরাস, নিকারাগুয়া। মেসিকে নিজেদের লিগে নিতে চাওয়া সৌদি আরব আছে এই তালিকার ১৪ নম্বরে।
যুক্তরাষ্ট্র আছে ৫১ নম্বরে। এতে অবশ্য অবাক হওয়ার কিছু নেই। কারণ নিজেদের দেশের ক্লাব সম্পর্কে যুক্তরাষ্ট্রের মানুষের ভালোই জানাশোনা থাকার কথা। তা ইন্টার মায়ামি ক্লাব হিসেবে যতই নতুন হোক না কেন।
ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে ১২ বছরে ৭ বারই চ্যাম্পিয়ন ম্যানচেস্টার সিটি। পেপ গার্দিওলার অধীনেই ৫ বার। কিন্তু ইউরোপের শ্রেষ্ঠত্বের লড়াইয়ে বারবার ব্যর্থ হয়েছে তারা। দুবছর আগে ফাইনালে উঠলেও পারেনি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জিততে। অবশেষে গেঁরো খুলতে পারল তারা। ইন্তার মিলানকে হারিয়ে ইউরোপের সর্বোচ্চ ক্লাব আসরের শিরোপা জিতেছে তারা।
ইস্তানবুলের ফাইনালে ইতালীয় ক্লাবকে ১-০ গোলে হারিয়ে এই আসরের নতুন চ্যাম্পিয়ন হয়েছে তারা। একমাত্র গোলটি করেছেন ৬৮ মিনিটে স্প্যানিশ মিডফিল্ডার রদ্রি।
প্রথমবার চ্যাম্পিয়ন্স লিগ শিরোপা জিতে এবারের মৌসুমে ট্রেবলও পূরণ করে নিল সিটি। এর আগে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ ও এফএ কাপের শিরোপা জিতেছিল তারা। তাদের আগে একমাত্র ইংলিশ ক্লাব হিসেবে ট্রেবল জিতেছিল তাদের নগর প্রতিদ্বন্দ্বী ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড। আর কোচ হিসেবে দুবার ট্রেবল জয়ের নতুন রেকর্ডও গড়লেন গার্দিওলা। এর আগে বার্সেলোনার কোচ হিসেবে প্রথমবার ট্রেবল জিতেছিলেন তিনি।
২০২১-র ফাইনালে রদ্রিকে না খেলানো নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা হয়েছিল গার্দিওলার। দুই বছর পর আরেকটি ফাইনালে সিটির জয়ের মূলনায়ক সেই রদ্রি। ডিফেন্সিভ এই মিডফিল্ডার গোল নিয়ে অতো ভাবেন না। চ্যাম্পিয়ন্স লিগে ১১ ম্যাচ খেলে একটা গোল ছিল তারা। সেটি ছিল এবারের আসরের কোয়ার্টার ফাইনালে ঘরের মাঠে বায়ার্ন মিউনিখকে ৩-০ গোলে হারানো ম্যাচের প্রথমটি। সেই গোলের পেছনে অবদান ছিল যার সেই বার্নার্দ সিলভা ইস্তানবুলে গোলশূণ্য প্রথমার্ধের পর ৬৮ মিনিটে ইন্তার গোললাইনের কাছ থেকে বল ফিরিয়ে দেন বক্সের মাথায়। অরক্ষতি রদ্রির কথা কেউ ভাবেইনি। ডান পায়ের চতুর শটে দুই ডিফেন্ডারের পা এড়িয়ে ডান দিকে জালে জড়ায় বল (১-০)।
এর পরপরই সমতা ফেরানোর সম্ভাবনা তৈরি করেছিল ইন্তার। কিন্তু দুর্ভাগ্য তাদের, দিমারকোর হেড বাধা পায় পোস্টে। ২০২১'র ফাইনালে মতো এবারো চোটে পড়ে মাঠ ছাড়েন সিটির মধ্যমাঠের প্রাণ ডি ব্রুইনে। ৩৬ মিনিটেই মাঠে নামা ফিল ফোডেন ইন্তারের আক্রমণ ভাগে বার বার হানা দিয়েছেন। তবে সিটির আর গোল পায়নি। বরং গোল খেতে পারতো তারা। কিন্তু গোলরক্ষক এডারসনের দক্ষতায় দুবার নিশ্চিত বেচে যায়। রবিন গোসেনের ক্রস থেকে একেবারে ফাঁকায় থেকে হেড নেওয়ার সুযোগ পান লুকাকু। কিন্তু নেন গোলরক্ষক বরাবর। কোনো মতে পা দিয়ে ঠেকিয়ে সে যাত্রা দলকে রক্ষা করেন এডারসন।
ম্যাচের অন্তিম মুহূর্তে এডারসনের আরও একটি দুর্দান্ত সেভ। কর্নার থেকে গোসেনের নেওয়া হেড ঝাঁপিয়ে ঠেকান তিনি। এরপর রেফারি শেষ বাঁশি বাজালে উল্লাসে মাতে সিটিজেনরা।
সাধারণত প্রাথমিক স্তরে একটি দেশে এক ধরনের শিক্ষাব্যবস্থাই চালু থাকে। তবে কোনো কোনো দেশে এক শিক্ষাব্যবস্থার মধ্যেও পাঠক্রমে (কারিকুলামে) ভিন্নতা থাকে সেটা সর্বোচ্চ দুই বা তিন ধরনের হয়ে থাকে। অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত প্রাথমিক শিক্ষা শেষে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানই ঠিক করে দেয় শিক্ষার্থীরা কী ধরনের শিক্ষাগ্রহণ করবে।
বাংলাদেশে প্রথম শ্রেণি থেকেই হরেক রকমের শিক্ষাব্যবস্থা এবং হরেক পরীক্ষা চালু আছে। এসএসসি বা সমমানের পরীক্ষা ১২ রকমে দেওয়া যায়। ফলে এক সনদের জন্য ১২ রকমের শিক্ষাগ্রহণের সুযোগ রয়েছে। এতে করে শিক্ষার্থীদের মধ্যে বৈষম্য বাড়ছে। আর শিক্ষা-প্রশাসনের পক্ষে শৃঙ্খলা রক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়ছে।
প্রচলিত বা সাধারণ স্কুলগুলোতে যারা পড়ালেখা করে তারা ‘সাধারণ’ এসএসসি পরীক্ষা দিয়ে থাকে। আর মাদ্রাসায় যারা পড়ে তারা দেয় দাখিল পরীক্ষা। দাখিল ভোকেশনাল নামেও একটি পরীক্ষা দেওয়া যায়। কারিগরিতে যারা পড়ে তারা দেয় এসএসসি (ভোকেশনাল) পরীক্ষা। এসএসসি পরীক্ষা উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের মাধ্যমেও দেওয়া যায়। প্রাইভেট এসএসসি পরীক্ষা দেওয়ার ব্যবস্থাও আছে। মাধ্যমিকে যেসব বিদ্যালয়ে ইংরেজি ভার্সন রয়েছে, সেখানে ইংরেজি ভাষায় এসএসসি পরীক্ষা দেওয়া যায়।
ইংলিশ মিডিয়ামে (ইংরেজি ভার্সন নয়) যারা পড়ে, তাদের এসএসসি সমমানের পরীক্ষার নাম ‘ও’ লেভেল। সে ব্যবস্থাতেও এডেক্সেল ও কেমব্রিজ কারিকুলামের স্কুলে পৃথক পড়ালেখা। আর সারা দেশেই ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে কওমি মাদ্রাসা; এ শিক্ষাকেও সরকার স্বীকৃতি দিয়েছে। কওমি শিক্ষাব্যবস্থা থেকে দাওরায়ে হাদিস পাস করা শিক্ষার্থীদের মাস্টার্সের সমমান দেওয়া হয়েছে। কওমিতে হাফেজি ও মাওলানা (টাইটেল) ধারায় পড়ালেখার সুযোগ রয়েছে।
ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক এম তারিক আহসান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘শিক্ষায় বিভিন্ন ধারা থাকা অস্বাভাবিক নয়। তবে এ ধারাগুলো যদি একটা ফ্রেমওয়ার্ক ও মনিটরিংয়ে না থাকে, তাহলে বিশৃঙ্খলা হবে। নতুন শিক্ষাক্রমের রূপরেখায় বিভিন্ন ধারাকে একটা ফ্রেমওয়ার্কে নিয়ে আসার চেষ্টা করা হয়েছে; অর্থাৎ সবার জন্য নির্দিষ্ট কিছু বিষয় রাখা হয়েছে। নতুন শিক্ষাক্রম অনুযায়ী পাঠদান ও মূল্যায়ন করা হচ্ছে কি না তা শিক্ষার সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোকে মনিটরিং করতে হবে।’
তারিক আহসান বলেন, ‘কওমিতে অনেক শিক্ষার্থী পড়ালেখা করে, এটা ঠিক। তবে সরকার তাদের কিছু ডিগ্রিকে সাধারণ শিক্ষার সমমান দিচ্ছে। এই শিক্ষাকেও একটা প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে মূল ধারায় নিয়ে আসতে হবে।’
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, সাধারণ এসএসসি ও ইংরেজি ভার্সনের এসএসসি পরীক্ষা নেওয়ার জন্য আছে ৯টি শিক্ষা বোর্ড। মাদ্রাসায় দুই ধরনের দাখিলের জন্য রয়েছে মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড। কারিগরি শিক্ষার জন্য আছে কারিগরি শিক্ষা বোর্ড। উন্মুক্ত বিশ^বিদ্যালয়ের মাধ্যমেও দেওয়া যায় এসএসসি পরীক্ষা। শিক্ষা বোর্ডগুলোর অধীনেই প্রাইভেট এসএসসি দেওয়ার সুযোগ রয়েছে।
ইদানীং ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের দৌরাত্ম্য বাড়ছে। বিভাগীয় এবং জেলা শহরেও ছড়িয়ে পড়েছে ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল। এসবের বেশিরভাগের নিবন্ধন নেই। তারা এডেক্সেল ও কেমব্রিজ কারিকুলামে পরীক্ষা দিলেও তাদের কোনো নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ নেই। শিক্ষা বোর্ডগুলো তাদের নিয়ন্ত্রণ করে না।
অনেক আগে থেকেই আমাদের দেশে কওমি মাদ্রাসার শিক্ষা চালু রয়েছে। করোনার পর দেশে সাধারণ স্কুলের সংখ্যা কমলেও কওমি মাদ্রাসার সংখ্যা বেড়েছে। শিক্ষার্থীদের একটা বড় অংশ কওমি মাদ্রাসায় লেখাপড়া করে। তাদের পরীক্ষার জন্য তারা নিজেরাই একাধিক বোর্ড বানিয়েছে। এগুলোতে সরকারের তেমন নিয়ন্ত্রণ নেই।
জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের সদস্য (শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক মো. মশিউজ্জামান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বেসিক বিষয়গুলো সবাই অনুসরণ করে। কারিগরি ও মাদ্রাসায় আলাদা কিছু বিষয় যুক্ত রয়েছে। আমি বলব, বিভিন্ন ধারা বলে কিছু নেই। তবে ব্যতিক্রম ইংলিশ মিডিয়াম। আমাদের দেশের ইংলিশ মিডিয়ামে সাধারণত ব্রিটিশ কারিকুলামে পড়ানো হয়। সেখানেও আমরা বাংলাদেশ স্টাডিজ নামে একটি বিষয় যুক্ত করেছি। ওই কারিকুলামের শিক্ষার্থীরা যেন দেশপ্রেম ভুলে না যায় এবং নিজের ভাষা-সংস্কৃতির প্রতি বিরূপ মনোভাবের না হয়। আরেকটি বড় ব্যতিক্রম কওমি মাদ্রাসা। সেটা রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের বিষয়।’
যারা খুব দরিদ্র তারা সাধারণত কওমি শিক্ষায় যায়। সেখানে পড়ালেখার পাশাপাশি থাকা-খাওয়ারও ব্যবস্থা থাকে। যারা নিম্নমধ্যবিত্ত বা মধ্যবিত্ত তারা সাধারণ স্কুলে লেখাপড়া করে। উচ্চবিত্তরা সাধারণত তাদের সন্তানদের ইংলিংশ মিডিয়াম স্কুলে পড়ালেখা করান। ইদানীং মধ্যবিত্তরাও ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল ও ইংরেজি ভার্সনের স্কুলে ঝুকছে। যারা পড়ালেখায় পিছিয়ে তারা সাধারণত কারিগরি শিক্ষায় যায়। আর যেসব অভিভাবক ধর্মীয় ও সাধারণ শিক্ষার মিশ্রণ চান, তারা সাধারণত তাদের সন্তানদের আলিয়া মাদ্রাসায় পাঠান।
শিক্ষাবিদরা বলছেন, দেশে একাধিক শিক্ষাব্যবস্থা চালু থাকায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে বৈষম্য বাড়ছে। আবার শিক্ষাকাঠামোর নিয়ন্ত্রণ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের হাতে থাকছে না। অনেক মেধাবী শিক্ষার্থী তার পছন্দের বাইরের শিক্ষাব্যবস্থায় পড়ালেখা করতে বাধ্য হচ্ছে। এতে শিক্ষার্থীদের আগ্রহ কমে যাচ্ছে। ফলে মাধ্যমিকে ঝরেপড়া কমছে না। আবার উচ্চশিক্ষায় গিয়েও অনেকে তাল মেলাতে পারছে না। অনেকে তার উচ্চমাধ্যমিক পর্যন্ত পড়ালেখা তেমন কাজে লাগাতে পারছে না।
ব্রিটেনে সাধারণত অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত সবার একই রকমের শিক্ষা। এরপর শিক্ষার্থীদের দুই ভাগে ভাগ করা হয়। একদল যায় কারিগরি শিক্ষায়। অন্যদল যায় সাধারণ শিক্ষায়। যদিও দুই ভাগেই কিছু ট্রেড কোর্স থাকে। কে কোন ধরনের শিক্ষায় যাবে তাতে অভিভাবকদের কিছু বলার নেই। শিক্ষকরাই বিবেচনা করে শিক্ষার্থীর জন্য শিক্ষাব্যবস্থা নির্ধারণ করেন।
কোনো দেশের উন্নয়নের মূল হচ্ছে কারিগরি শিক্ষার প্রসার। এ ক্ষেত্রে আমরা অনেক পিছিয়ে। কারিগরিতে এখনো মেধাবী শিক্ষার্থীরা যাচ্ছে না। সরকার ১৪ থেকে ১৬ শতাংশ শিক্ষার্থীকে কারিগরিতে নিতে পেরেছে বললেও তাতে নানা ফাঁকি রয়েছে। কওমি মাদ্রাসা ও ইংলিশ মিডিয়ামে শিক্ষার্থী বাড়লেও কারিগরিতে সেভাবে শিক্ষার্থী বাড়ছে না।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, বিশে^র বেশিরভাগ দেশেই শিক্ষাব্যবস্থা চলে রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনায়। অর্থাৎ উচ্চমাধ্যমিক পর্যায় পর্যন্ত একজন শিক্ষার্থীর পড়ালেখার দায়িত্ব রাষ্ট্রের। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা স্কুলেই সময় কাটায়। আমাদের দেশের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত বিনামূল্যে পড়ালেখা করা যায়। তবে টিউশন ফি ও বই ছাড়াও শিক্ষার্থীদের নানা খরচ থাকে, যা পরিবারকে বহন করতে হয়। মাধ্যমিক থেকে পুরোপুরিই পড়তে হয় অভিভাবকদের খরচে। ফলে অভিভাবকদের পছন্দে ও বাণিজ্যিক কারণে নানা ধরনের শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে উঠেছে। এর থেকে সরকার কোনোভাবেই বের হতে পারছে না। বের হওয়ার পরিকল্পনাও দেখা যাচ্ছে না।
জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০ প্রণয়ন কমিটির সদস্য অধ্যক্ষ কাজী ফারুক আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘২০১০ সালের শিক্ষানীতিতে দেশি-বিদেশি শিক্ষাকে এক প্ল্যাটফর্মে নিয়ে আসার কথা বলা হয়েছিল; অর্থাৎ সবাইকে কিছু কোর সাবজেক্ট পড়তে হবে। কিন্তু সেটা হয়নি। সবাই দলীয় দৃষ্টিভঙ্গিতে আচ্ছন্ন। মতভেদও রয়েছে। আমাদের বুঝতে হবে, মাদ্রাসায় শিক্ষার্থীরা যায়, কারণ সেখানে পড়তে পয়সা লাগে না। আমাদের হাজার হাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আছে। আমরা প্রতিষ্ঠানগুলোর সরকারীকরণ করেছি। কিন্তু রাষ্ট্র শিক্ষার্থীদের পুরো দায়িত্ব নিচ্ছে না। যত দিন রাষ্ট্র দায়িত্ব নেবে না, তত দিন সব ধরনের শিক্ষাকে এক প্ল্যাটফরমে আনা কঠিন।’
একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবিরের মেয়ে অর্পিতা শাহরিয়ার কবির মুমুর (৪১) ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। মৃত্যুর আগে তিনি চিরকুট লিখে গেছেন। তবে সেখানে কি লেখা আছে তা নিশ্চিত করে জানা যায়নি।
বৃহস্পতিবার রাতে রাজধানীর মহাখালীর আমতলী এলাকার বাসা থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়। রাতেই পরিবারের দাবির প্রেক্ষিতে ময়নাতদন্ত ছাড়ায় মরদেহ হস্তান্তর করেছে পুলিশ। বিষয়টি দেশ রূপান্তরকে নিশ্চিত করেছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গুলশান বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) মো. জাহাঙ্গীর আলম। পুলিশের ধারণা, অর্পিতা গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন।
গুলশান বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মো. শহীদুল্লাহ সাংবাদিকদের বলেন, খবর পেয়ে পুলিশ বাসা থেকে লাশটি উদ্ধার করে। পরে স্বজনের অনুরোধে ময়নাতদন্ত ছাড়াই লাশ দাফনের অনুমতি দেওয়া হয়।
জানা গেছে, লন্ডনে আইন বিষয়ে পড়ালেখা করতেন অর্পিতা। ২০২০ সালের জানুয়ারিতে মা ফাতেমা কবিরের মৃত্যুর কারণে তিনি দেশে আসেন। এরপর দেশেই ছিলেন। মায়ের মৃত্যুর পর মানসিকভাবে অবসাদগ্রস্থ ছিলেন তিনি। বৃহস্পতিবার তার লণ্ডনে ফেরার কথা ছিল। মৃত্যুর আগে লিখে যাওয়া একটি চিরকুটে (সুইসাইড নোট) তিনি আত্মহত্যার বিষয়টি উল্লেখ করেছেন।
মেয়ের মৃত্যুতে শোকে বিবহবল লেখক–কলামিস্ট শাহরিয়ার কবির গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে পারেননি। তবে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সাধারণ সম্পাদক কাজী মুকুল বলেন, রাজধানীর মিরপুরের শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে অর্পিতাকে তাঁর মায়ের কবরে দাফন করা হয়েছে। রবিবার তাঁর কুলখানি অনুষ্ঠিত হবে।
বাসায় তেলাপোকা মারার ওষুধ দেওয়ার পর বিষক্রিয়ায় মারা গেছে রাজধানীর বারিধারা এলাকার ব্যবসায়ী মোবারক হোসেন তুষারের দুই ছেলে। তার মেয়ে এখনো অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি। গত শনিবার ‘ডিসিএস অরগানাইজেন লিমিটেড’ নামের একটি পেস্ট কন্ট্রোল কোম্পানিকে দায়িত্ব দিয়েছিলেন ওই ব্যবসায়ী। প্রতিষ্ঠানটির কর্মীরা বাসায় ওষুধ দিয়ে ছয় ঘণ্টা পরে ঢুকে ঘর পরিষ্কার করতে বলেছিলেন। পরিবারটি ৯ ঘণ্টা পরে বাসায় ঢুকে বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হয়। এ সময় তাদের সবারই পেট খারাপ, বমির মতো উপসর্গ দেখা দেয়।
ওই পরিবারের বরাত দিয়ে পুলিশ জানিয়েছে, সেই পেস্ট কন্ট্রোল কোম্পানি পোকামাকড় নিধনের জন্য অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট (গ্যাস ট্যাবলেট) ব্যবহার করেছিল, যেটা থেকে বিষাক্ত গ্যাস তৈরি হয়। সেই গ্যাসের বিষক্রিয়াতেই তাদের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় মামলা হওয়ার পর ওই প্রতিষ্ঠানের ৫ কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
এদিকে রাজধানীতে গত পাঁচ বছরে এই বিষক্রিয়ায় বেশ কয়েকজন মানুষের মৃত্যু হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, উচ্চমাত্রার এই কীটনাশক বাসায় ব্যবহার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। অথচ বিভিন্নভাবে সাধারণ কীটনাশক হিসেবে দেদার বিক্রি হচ্ছে সারা দেশে।
সূত্র বলছে, রাজধানীসহ সারা দেশে কয়েক শতাধিক পেস্ট কন্ট্রোল প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব কোম্পানির প্রায় ৯৫ ভাগের কোনো অনুমোদন নেই। কৃষি ও পরিবেশ অধিদপ্তরের এসব দেখভাল করার কথা থাকলেও তারাও খুব একটা গুরুত্ব দিচ্ছে না।
পেস্ট কন্ট্রোল সার্ভিস প্রতিষ্ঠান সেবা নিন প্ল্যাটফর্ম লি.-এর চেয়ারম্যান শামসুল আলম বলেন, দেশে ব্যাঙের ছাতার মতো পেস্ট কন্ট্রোল প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠছে। অধিক মুনাফার আশায় তারা এক ধরনের নিষিদ্ধ ট্যাবলেট ব্যবহার করে। আবার অনেকে লিকুইড কেমিক্যাল ব্যবহার করে। কিন্তু কোন মাত্রায় এসব ব্যবহার করতে হয় তার প্রশিক্ষণ নেই। সরকারের পক্ষ থেকে এসব প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে আরও বেশি সতর্ক হওয়া উচিত।
রাজধানীর বেশ কিছু বাজার ঘুরে দেখা যায় অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট যত্রতত্র বিক্রি হচ্ছে। ফুটপাত থেকে শুরু করে দেয়াল লিখন ও অনলাইনের মাধ্যমে দেওয়া হচ্ছে চটকদার বিজ্ঞাপন। অথচ চাষাবাদ ছাড়া অন্য কাজে যার ব্যবহার নিষিদ্ধ। বদ্ধ ঘরে এই ধরনের কীটনাশক ব্যবহার করলে যে কারও বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
গতকাল রাজধানীর কারওয়ান বাজারে মাইকিং করে এসব কীটনাশক বিক্রি করছিলেন কাঞ্চন মিয়া। এ ধরনের কীটনাশক বিক্রির অনুমতি তার আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের অনুমতি লাগে না। দশ বছর ধরে এই ব্যবসা করি। কেউ তো কিছু বলে না। কোথা থেকে এসব পণ্য সংগ্রহ করা হয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, বেশিরভাগ পুরান ঢাকা থেকে সংগ্রহ করি। গাজীপুর সাভার থেকেও এসে দিয়ে যায়। এসব ব্যবহারে মানুষের মৃত্যুর ঝুঁকি রয়েছে তা জানেন না বলে জানান তিনি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন কীটনাশক জাতীয় একপ্রকার ওষুধের জেনেটিক বা গ্রুপ নাম হলো অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড। বাজারে অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট আকারে ফসটক্সিন, সেলফস, কুইকফস, কুইকফিউম, ডেসিয়াগ্যাস এক্সটি ইত্যাদি নামে পাওয়া যায়। অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট গ্যাস ট্যাবলেট নামেও পরিচিত। বাতাসের সংস্পর্শে এসে জীবনবিনাশী ভয়াবহ টক্সিক গ্যাস ফসফিন উৎপাদন করে। এই ট্যাবলেট সাধারণত গুদামজাত শস্যের পোকা দমন, ধান ক্ষেতের পোকা দমন, কলাগাছের পোকা দমন ও ইঁদুর দমনে ব্যবহার হয়ে থাকে। গত এক দশকে দেশে এই বিষাক্ত কীটনাশক মানুষের বাসাবাড়িতে ব্যবহার বাড়ছে। দেশের বাজারে ট্যাবলেট আকারে সহজলভ্য। রাজধানীতে ছারপোকা দমনে প্রায় যথেচ্ছ ব্যবহার হচ্ছে এই ট্যাবলেট।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে বালাইনাশক গ্রহণ করলে সেটা দ্রুত ফুসফুসে শোষিত হয় এবং রক্তে মিশে যায়। যদি পর্যাপ্ত পরিমাণ বালাইনাশক শ্বাসের মাধ্যমে গ্রহণ করা হয় তাহলে নাক, গলা ও ফুসফুস মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সরকারের যে দায়িত্বশীল প্রতিষ্ঠান রয়েছে এসব বিষয়ে তাদের পক্ষ থেকে কোন কোন কীটনাশক কোন মাত্রায় কোন কোন কীটপতঙ্গের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হবে সেটি নির্দিষ্ট করে নিশ্চিত করতে হবে। আমদানির সময়ও বিষয়টি খেয়াল রাখতে হবে। অথবা দেশেই যদি তৈরি করতে হয় তাহলে যথাযথ কর্র্তৃপক্ষের লাইসেন্স নিয়ে উৎপাদন করতে হবে। এটির গুণগত মান থাকছে কি না তারও পরীক্ষা করতে হবে।
পরিবেশ গবেষক পাভেল পার্থ বলেন, আমরা বিভিন্ন মাধ্যমে শুনেছি ওই বাসায় পেস্ট কন্ট্রোল প্রতিষ্ঠানটি অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ব্যবহার করেছে। যদিও আমরা এ বিষয়ে নিশ্চিত না। আমার মতে এটা আরও বেশি তদন্ত করা উচিত। সরকারের যে প্রতিষ্ঠান এসব বিক্রির অনুমোদন দেয় তাদের এই তদন্ত করে জানানো দরকার কী ধরনের কেমিক্যাল সেখানে ব্যবহার করা হয়েছিল। কারণ পেস্ট কন্ট্রোলের নামে কী ধরনের কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয় এটা জানাটা জরুরি।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে কোন ধরনের কীটনাশক কীভাবে ব্যবহার করা হবে তার কোনো নীতিমালা নেই। কীটনাশকগুলো সাধারণ কৃষিজমিতে ব্যবহৃত হয়। ঢাকা শহরে এরকম বিষ ব্যবহার নিষিদ্ধ করা উচিত। তাছাড়া রাস্তাঘাটে এসব জিনিস অহরহ বিক্রি হচ্ছে। এসবও তদন্তের আওতায় আনতে হবে।
আরও এক কর্মী গ্রেপ্তার : দুই শিশুর মৃত্যুর ঘটনায় টিটু মোল্লা নামে একজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তিনি বালাইনাশক কোম্পানিটির কর্মকর্তা। গত সোমবার রাতে তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ভাটারা থানার ওসি আবুল বাসার মুহাম্মদ আসাদুজ্জামান জানান, ওই ঘটনায় করা মামলায় এখন পর্যন্ত তিনজনকে গ্রেপ্তার করে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ।
একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবিরের মেয়ে অর্পিতা শাহরিয়ার কবির মুমুর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ।
বৃহস্পতিবার (৮ জুন) রাতে বনানীর বাসা থেকে ঝুলন্ত অবস্থায় মরদেহটি উদ্ধার করা হয়। রাতেই পরিবারের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করেছে পুলিশ।
তবে কী কারণে তিনি আত্মহত্যা করেছেন সে বিষয়ে কিছু জানা যায়নি।
শুক্রবার সকালে বনানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তাফিজুর রহমান জানান, বনানীর একটি বাসা থেকে অর্পিতা শাহরিয়ার কবির মুমুর মরদেহ উদ্ধার করা হয়, যা ঝুলন্ত অবস্থায় ছিল। পরে রাতেই পরিবারের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করা হয়েছে।
এর আগে, ২০২০ সালের জানুয়ারিতে স্ত্রী হারান শাহরিয়ার কবির।
নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান ও আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের সঙ্গে গতকাল মঙ্গলবার সকালে বৈঠক করেছেন ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস। এরপর দুপুরে বৈঠক করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে। এই বৈঠকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মহাপরিচালক উপস্থিত ছিলেন বলে জানা গেছে।
সরকারের গুরুত্বপূর্ণ তিন প্রতিনিধির সঙ্গে বৈঠকের বিষয়টি বেশ আলোচনার জন্ম দিয়েছে। এখানে মূলত আগামী নির্বাচনের ব্যাপারে দেশের রাজনীতিতে যে উত্তাপ দেখা দিয়েছে তা নিয়েই আলোচনা হয়েছে বলে জানা গেছে। তবে আনিসুল হক গণমাধ্যমে বলেছেন, তাদের এ বৈঠকে মার্কিন রাষ্ট্রদূত মূলত শ্রম আইন নিয়ে আলোচনা করেছেন। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের শ্রম আইন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের একটি পরামর্শ ছিল। বৈঠকে সেসব বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। একটি সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) অনুষ্ঠানে যোগ দিতে এ মাসেই জেনেভা যাওয়ার কথা রয়েছে।
পরে বেলা ১টা ১০ মিনিটে মার্কিন দূতাবাসে প্রবেশ করেন বিএনপি মহাসচিব। এরপর বেলা আড়াইটার দিকে তিনি দূতাবাস থেকে বের হন। রাতে মির্জা ফখরুল দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠান সামনে রেখে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যে ভিসানীতি ঘোষণা করেছে তার ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এই নীতি দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে সহায়ক হবে আমরা মনে করি বলে রাষ্ট্রদূতকে জানিয়েছি।’ তিনি বলেন, ‘রাষ্ট্রদূতকে আমি জানিয়েছি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে ছাড়া আওয়ামী লীগের অধীনে দেশে নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হবে না। দেশের জনগণও তাই মনে করে। এ ছাড়া নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার নিয়ে রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে আমাদের কোনো আলাপ হয়নি।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সম্প্রতি আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক বলেছিলেন, “নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করার আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করবেন।” তার এমন বক্তব্য নিয়ে আলোচনার ঝড় উঠলে পরে গণমাধ্যমে বিবৃতি দেয় আইন মন্ত্রণালয়। এরপর গতকাল মঙ্গলবার সকালে সচিবালয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক এবং প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের সঙ্গে বৈঠক করেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাড়া কীভাবে নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করা যায়, তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। দেশের সংবিধানে কী আছে তা-ও জানতে চেয়েছেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত।’
আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন ঘিরে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সরকারের দূরত্ব প্রকাশ্যে চলে এসেছে। কোনো ধরনের রাখঢাক ছাড়াই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ সরকারের মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ নেতারা যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনা করছেন। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আরও বেশি দৌড়ঝাঁপ শুরু করছেন। ফলে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ক্ষমতাসীনদের দূরত্ব এখন স্পষ্ট। আলোচনা আছে, সরকারবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে পশ্চিমা এ দেশটি হঠাৎ আরও ঘনিষ্ঠ হতে শুরু করেছে।
জানা গেছে, সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে এতদিন যুক্তরাষ্ট্রের মতপার্থক্য ছিল না। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন প্রত্যাশা করছে দেশটি। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগও এ নিয়ে কোনো দ্বিমত করেনি। এরই মধ্যে, ভিসানীতি ঘোষণা করে সরকারকে বড় চাপ দেওয়ার পূর্বাভাস দেয় যুক্তরাষ্ট্র। বিষয়টি নিয়ে সরকারি দল আওয়ামী লীগ ও মাঠের বিরোধী দল বিএনপি একে অন্যকে ঘায়েল করার চেষ্টা করে। তবে ভিসানীতি যে সরকারের ও আওয়ামী লীগের ওপরই বেশি চাপ তৈরি করেছে, সেটা ভেতরে-বাইরে আলোচনা আছে।
আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায় ও কূটনীতি-সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্র দেশ রূপান্তরকে জানিয়েছে, বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র তাদের অবস্থান পাল্টে নির্বাচনের স্বার্থে প্রয়োজনে সংবিধানের বাইরে যেতে হবে সরকারকে এমন প্রস্তাব দিতে চলেছে। ওই সূত্রগুলো দাবি করেছে, গত মাসের শেষের দিকে অথবা চলতি সপ্তাহে বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাস আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের বাসভবনে তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। পিটার হাস ওই বৈঠকে রাজনৈতিক সমঝোতায় না আসলে সব দলের অংশগ্রহণে জাতীয় সরকারের আদলে একটা কিছু করার বিকল্প প্রস্তাব দিয়েছেন। তা না হলে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের স্বার্থে সংবিধানসম্মত করে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের পদক্ষেপ নেওয়ার প্রস্তাব করেন। এ প্রস্তাব সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানেও দেওয়া হয়েছে। আনিসুল হকের সঙ্গে শ্রম আইন নিয়েও দীর্ঘ আলাপ করেন এ রাষ্ট্রদূত।
আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকজন নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, পিটার হাসের ওই প্রস্তাব নিয়ে সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ে গেলে তাতে বড় আপত্তি তোলা হয়। শুধু তাই নয়, যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা পাওয়া যাবে না এটা ধরেই দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরুর বার্তা দেওয়া হয়েছে সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে। তারা স্বীকার করেন যে, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান ক্রমেই আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে চলে যাচ্ছে। তবে নির্বাচনে যুক্তরাষ্ট্রের অসহযোগিতা করবে ধরে নিয়েই সরকারি দল আওয়ামী লীগ প্রস্তুতি নিচ্ছে।
পিটার হাস সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের ও মাঠের বিরোধী দল বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে একান্তে বৈঠক করেছেন। গুরুত্বপূর্ণ ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গেও নির্ধারিত-অনির্ধারিত বৈঠক করা শুরু করেছেন। গত সোমবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ব্রিফিংয়ে পিটার হাসকে উদ্দেশ্য করে প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেছেন, রাষ্ট্রদূতরা সীমা লঙ্ঘন করলে আইনি ব্যবস্থা নেবে সরকার।
আগামী নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সক্রিয় হয়ে ওঠার প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে জানিয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, পিটার হাসের দৌড়ঝাঁপ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘নাহি ছাড়ি’ অবস্থান আওয়ামী লীগের বিভিন্ন স্তরে দুশ্চিন্তা তৈরি হয়েছে।
সরকারের দুই মন্ত্রীও দেশ রূপান্তরের কাছে স্বীকার করেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সরকারের বিপক্ষে যেতে শুরু করেছে। ‘অন্যায় হস্তক্ষেপ’ বেড়েছে পিটার হাসের।
আওয়ামী লীগের কূটনীতিসম্পৃক্ত এক নেতা বলেন, সরকার বিকল্প হিসেবে শক্তিশালী দেশের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নে কাজ করে চলেছে। বিকল্প দেশের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে উঠলে নির্বাচন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রকে মাইনাস করে চলার এক ধরনের কৌশল গ্রহণ করা হবে। এ কৌশলে নির্বাচন সম্পন্ন হয়ে গেলে যুক্তরাষ্ট্রর সঙ্গে সম্পর্ক ঝালাই করা হবে নতুন পরিকল্পনা অনুযায়ী।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর আরেক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, ভিসানীতি মূলত সরকারের বিভিন্ন ক্ষেত্রে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। অনেকেই ভিসানীতিকে সব গেল বলে ধরে নিয়ে অবস্থান টলমলে করে তুলতে চায়। এরকম অবস্থা আওয়ামী লীগকে একটু চিন্তায় ফেলে দিয়েছে। দলের নেতাকর্মীরা যেন সাহস হারিয়ে না ফেলে, সেজন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনা করার কৌশল গ্রহণ করেছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগ নেতাদের সমালোচনা নিয়ে গুঞ্জন শুরু হয়েছে। এমন কথা শোনা যাচ্ছে যে, আওয়ামী লীগ কি তাদের অবস্থান থেকে সরতে শুরু করবে? আবার প্রশ্নও আছে যে, নির্বাচন কি হবে? জাতীয় সরকার আসবে খুব শিগগিরই, এমন গুঞ্জনও রয়েছে জোরালোভাবে। শুধু তাই নয়, বাতিল হওয়া নির্বাচন পদ্ধতি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনেই আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে এমন গুঞ্জনও শুরু হয়েছে। যদিও এসবে কোনো ভিত্তি রয়েছে মনে করেন না আওয়ামী লীগ নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা। তারা দাবি করেন, সংবিধান অনুযায়ীই নির্বাচন হবে। এ ইস্যুতে কোনো শক্তির সঙ্গেই আপস করবেন না আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে দলটির সভাপতিম-লীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, কোনো দেশের চাওয়ায় বাংলাদেশে আগামী নির্বাচন হবে না। দেশের মানুষের চাওয়া অনুযায়ী সংবিধানসম্মতভাবে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন হবে। তিনি বলেন, সবার মতো করেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য করতে বদ্ধপরিকর।
কূটনীতিসম্পৃক্ত আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের আরেক নেতা বলেন, দৃশ্যত যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সরকারের সঙ্গে দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে মনে করা হলেও সেপ্টেম্বরের আগে পশ্চিমা এ দেশটি তার চূড়ান্ত অবস্থান পরিষ্কার করবে না বলে তারা মনে করছেন। ওই নেতা বলেন, সেপ্টেম্বরে ভারত সফর রয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। মূলত সেই সফরেই বোঝা যাবে সরকার কোনদিকে যাবে। এ নেতা আরও বলেন, ‘আমাদের ডিপ্লোম্যাসি (পররাষ্ট্রনীতি) পরস্পরের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের নীতি। কূটনীতিতে প্রধানমন্ত্রী দেশি-বিদেশি অনেক নেতাকে ছাড়িয়ে গেছেন। সেই আস্থা-বিশ্বাসও প্রধানমন্ত্রীর ওপর আমাদের রয়েছে।’
এতদিন যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান পরিষ্কার হয়ে না ওঠায় সরকার ও আওয়ামী লীগ নেতারা দাবি করতেন, দেশটিকে তারা বোঝাতে পেরেছেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে সমালোচনা প্রমাণ করে না যে, ক্ষমতাধর দেশটির সঙ্গে আওয়ামী লীগের বোঝাপড়া ঠিক আছে। যুক্তরাষ্ট্র ভিসানীতি ঘোষণার পরই দেশটির অবস্থান আওয়ামী লীগের পক্ষে আছে এমন কথা কেউ আর বিশ্বাস করছে না।
আওয়ামী লীগের একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, আমেরিকাকে মাইনাস ধরেই এগিয়ে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দলটির শীর্ষ পর্যায়ের দুই নেতা আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান আগের চেয়ে বেশি স্পষ্ট হয়ে ওঠায় রাজনীতিতে তারা ‘ব্যাকফুটে’ চলে যাচ্ছেন কি না, তা নিয়ে আলোচনা চলছে দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের মধ্যে।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমি একটাই বুঝি, একটাই জানি, আগামী নির্বাচন সংবিধানসম্মতভাবেই হবে। এ জায়গা থেকে একটুও নড়বে না সরকার।’