
শীত চলে গেছে। এই সময়ে নানা রকম শারীরিক সমস্যা জাঁকিয়ে বসে শরীরে। বাড়ির শিশুদের প্রতি বাড়তি নজর না দিলে মুশকিল, কারণ শিশুদের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকে। সবসময় রোগের সঙ্গে লড়াই করতে তারা পারে না। ফলে একটু অনিয়মেই খারাপ হয়ে পড়ে শরীর। যে কোনো রকম শারীরিক অসুস্থতা থেকে শিশুকে দূরে রাখতে খাওয়া-দাওয়ায় বদল আনা জরুরি। শাকসবজি, ফলমূল সন্তানের রোজের পাতে রাখতে ভুলবেন না। কারণ এগুলোতে থাকা উপকারী উপাদান রোগের সঙ্গে লড়াই করার শক্তি জোগায় শরীরে। এমন কিছু খাবার রয়েছে, যেগুলো খালি পেটে শিশুকে খাওয়ালে শরীর চাঙ্গা থাকবে, ঝিমিয়ে থাকবে না তারা।
কাঠবাদাম : প্রোটিন, আয়রন, ফাইবার, ভিটামিন ই-সমৃদ্ধ কাঠবাদাম শরীরের জন্য কতটা উপকারী, তা আলাদা করে বলার অপেক্ষা রাখে না। রোজ সকালে খালি পেটে শিশুকে একটি করে কাঠবাদাম খাওয়াতে পারলে ভালো। এই বাদাম শিশুর স্মৃতিশক্তি বাড়াবে। হাড়ের যতœ নেওয়ার পাশাপাশি তৈরি করতে পারে প্রতিরোধ ক্ষমতাও।
কলা : সাধারণভাবে ভরা পেটে ফল খাওয়ার কথা প্রচলিত। তবে খালি পেটে অনায়াসে কলা খাওয়া যেতে পারে। শিশুর রোজের সকালের খাবারে রাখুন আয়রন, কার্বোহাইড্রেট, জিঙ্ক, সোডিয়ামের মতো কিছু উপকারী উপাদান।
আপেল : শিশুদের রোজ একটি করে আপেল খাওয়ানোর কথা বলেন পুষ্টিবিদরা। কারণ এই ফলে রয়েছে পটাশিয়াম, ক্যালশিয়াম, জিঙ্কের মতো উপাদান, যেগুলো শিশুর দৃষ্টিশক্তির উন্নতি ঘটাবে। হাড়ের যত্ন নেবে। দিনের যে কোনো সময়ে খাওয়া যেতে পারে এই ফল। তবে খালি পেটে খেলে বাড়তি সুবিধা পাওয়া যাবে।
পশ্চিমা ধ্রুপদি সংগীত বললেই যার নাম নক্ষত্রের মতো জ¦লজ¦ল করে, তিনি সংগীতস্রষ্টা ভোলফগাং আমাদেউস মোৎসার্ট। তার স্ত্রী ছিলেন কনস্টানজে মোৎসার্ট। প্রতিষ্ঠিত এই সংগীতশিল্পী সুরের এই জাদুকরের জীবনীকার ও অমর সৃষ্টির অনুপ্রেরণা। লিখেছেন নাসরিন শওকত
হৃদয়ের প্রিয়তমা
আমার হৃদয়ের প্রিয়তমা ছোট্ট স্ত্রী! তোমার কাছ থেকে যদি একটি চিঠি পেতাম তবে সবকিছু ঠিক হয়ে যেত... এরপর নিজেকে কবিতার কাছে পুরোপুরি সমর্পন করে সুরস্রষ্টা বলেন, আমি তোমার সঙ্গে আবার থাকতে পারব, এ কথা ভাবতেই শিশুর মতো উত্তেজিত হয়ে পড়ছি। যদি সবাই আমার হৃদয়ের এই অবস্থা দেখতে পেত, লজ্জাতেই পড়তে হতো আমাকে। তুমি ছাড়া বাকি সব কিছু আমাকে বরফের মতো শীতল করে দেয়। হায়! যদি তুমি আজ আমার পাশে থাকতে, তাহলে আমি হয়তো দেখতে পেতাম যে, এই সৌজন্য দেখানো মানুষেরাই আমাকে কত বেশি মনোযোগ দিচ্ছে। কিন্তু বরাবরের মতোই, সবকিছু শূন্য মনে হয়; বিদায়- আমার প্রিয়তমা- আমি চিরকালই তোমার। পুরো অন্তর দিয়ে ভালোবাসার তোমার মোৎসার্ট চিঠির এই কথাগুলো কনস্টানজে ওয়েবকে উদ্দেশ্য করে লেখা। এই নামটি হয়তো চট করে অনেকেই চিনে উঠতে পারবেন না। কিন্তু তিনি পশ্চিমা ধ্রুপদী সংগীত জগতের এমন একজনের স্ত্রী, যার নাম জানে না এমন লোক খুঁজে পাওয়া মুশকিল। আঠার শতকের কিংবদন্তি সেই সংগীতস্রষ্টা আর কেউ নন, ভোলফগাং আমাদেউস মোৎসার্ট। অমর এই ধ্রুপদী শিল্পীর মাত্র ৩৬ বছর বয়সে অকালমৃত্যু হয়। মৃত্যুর এক বছর আগে ১৭৯০ সালের সেপ্টেম্বরে ফ্রাঙ্কফুর্ট থেকে মোৎসার্ট তার প্রিয়তমা স্ত্রী কনস্টানজেকে চিঠিটি লিখেছিলেন।
মোৎসার্ট ও তার স্ত্রী কনস্টানজের মধ্যকার সম্পর্ক নিয়ে নানা গবেষণা ও জীবনী লেখা হয়েছে, যার বেশির ভাগ অংশেই কনস্টানজেকে বিতর্কিতভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। তবে কেউ কেউ তাকে একজন আলোকিত ও শাস্ত্রীয় সংগীতের দক্ষ গায়িকা ও সুকণ্ঠের অধিকারী হিসেবে দেখাতে চেয়েছেন, যিনি প্রতিভাবান সুরকার মোৎসার্টকে সংগীতের মধ্য দিয়ে অতীন্দ্রিয় এক সুরলোক সৃষ্টিতে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছেন। দুর্ভাগ্যবশত মোৎসার্টের অসামান্য কাজকে মূল্যায়নে কনস্টানজের অবদানের অবমূল্যায়ন করা হয়েছে। তাকে অজ্ঞ, তুচ্ছ, বস্তুবাদী এবং মোৎসার্টের প্রতিভাকে উপলব্ধি করতে অক্ষম হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে। বলা হয়েছে, দাম্পত্য জীবনে আর্থিক বিষয় ছাড়া স্বামীর সঙ্গে কোনো বিষয়েই খুব একটা মতের মিল ছিল না তার। তবে সুখের বিষয় হলো, এমন সব অকাট্য দাবি সত্ত্বেও মোৎসার্ট তার জীবনে প্রাণপ্রিয় স্ত্রী কনস্টানজের গুরুত্ব স্বীকার করেছেন এবং একমাত্র দাম্পত্য জীবনের অমø-মধুর ৯টি বছর কাটিয়েছেন তার সঙ্গেই। বিখ্যাত এই সংগীতকার ও সুরকারের মৃত্যুর পর স্বামী মোৎসার্টের খ্যাতিকে চিরস্থায়ী রূপ দিতে লিখেছেন তার জীবনী।
কনস্টানজের শৈশব
১৭৬২ সালের ৫ জানুয়ারি। দক্ষিণ-পশ্চিম জার্মানির জেল ইম উইজেন্টালের প্রখ্যাত এক দরিদ্র সংগীত পরিবারে এদিন জন্ম নেন কনস্টানজে ওয়েবার। পুরো নাম মারিয়া কনস্টানজে ক্যাসিলিয়া জোসেফা জোহান্না আলয়সিয়া মোৎসার্ট। তার বাবা ফ্রিডোলিন ওয়েবার ছিলেন অর্কেস্ট্রার একজন সফল ভায়োলিন বাদক, সুরকার ও প্রম্পটার। আর মা ক্যাসিলিয়া গৃহিণী। কনস্টানজের ছিল তিন বোন। দুই বোন বড় আর একজন ছোট। এই চার বোনই ছিলেন শাস্ত্রীয় সংগীতের তালিমপ্রাপ্ত অসাধারণ গায়িকা। কনস্টানজের বড় দুই বোন জোসেফা ও আলয়সিয়া সংগীত জগতে সফল ছিলেন ।
ছোটবেলা থেকেই বাড়িতে গান-বাজনার পরিবেশের মধ্যে বেড়ে ওঠেন কনস্টানজে। পিয়ানো বাজানো শিখলেও আনুষ্ঠানিক পড়াশোনায় ছিলেন পিছিয়ে। তবে তার শৈশবের বেশিরভাগ সময় কাটে নানাবাড়িতে। সাংস্কৃতিক, বুদ্ধিবৃত্তিক ও সংগীতের প্রাণকেন্দ্র হিসেবে বিখ্যাত শহর মেনহাইমে। ১৭৭৭ সাল দিকে, ২১ বছরের তরুণ মোৎসার্ট কাজের সন্ধানে মেনহাইমে আসেন মাকে সঙ্গে নিয়ে এবং যথারীতি বিখ্যাত ওয়েবার সংগীত পরিবারের সঙ্গে গাঢ় সম্পর্ক গড়ে তোলেন। তরুণ মোৎসার্ট তখন তার প্রতিভা চর্চার চেয়ে বরং নিজের ব্যক্তিগত সম্পর্কের বিষয়ে মনোযোগী হয়ে ওঠেন। বছরের শেষ দিকে তিনি কানস্টানজের বড় বোন আলয়সিয়ার প্রেমে পড়েন। কানস্টানজের বয়স তখন মাত্র ১৫। ওই বছরই মোৎসার্ট মাকে হারান। এর পরই আলয়সিয়ার কাছে প্রত্যাখ্যাত হয়ে ভাঙা মন নিয়ে সালজবুর্গে, বাড়ি ফেরেন।
ভিয়েনায় চলে আসা
১৭৭৯ সাল। ওয়েবার পরিবার বড় দুই গায়িকা মেয়ের ক্যারিয়ার গড়ার স্বপ্ন নিয়ে ভিয়েনায় চলে আসে। এর ঠিক এক মাসের মাথায় কনস্টানজের বাবা ফ্রিডোলিন মারা যান। ওয়েবার পরিবার যেন অথৈ সাগরে পড়ে যায়। উপায় না পেয়ে পয়সা রোজগারের আশায় বাড়িতেই বোর্ডিং দেওয়া শুরু করেন কনস্টনাজের মা ক্যাসিলিয়া। এর দু বছরের মাথায় ভিয়েনায় ফেরেন মোৎসার্ট, কিন্তু এরই মধ্যে সেখানে শুধুমাত্র সেরা পিয়ানো বাদকই নয় একজন প্রতিশ্রুতিশীল তরুণ সুরকার হিসেবেও নাম-ডাক হয় তার। ১৭৮১ সালের মে’তে কনস্টানজেদের বাড়িতে ওঠেন। এক পর্যায়ে ১৯ বছরের কনস্টানজের প্রেমে পড়েন। তার মা ক্যাসিলিয়া দুজনার প্রেমের বিষয়টি জেনে ফেলেন এবং মোৎসার্টকে বাড়ি ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য করেন। সেপ্টেম্বরে কনস্টানজের বাড়ি ছেড়ে চলে আসেন তিনি। তবে এর পর থেকে এক ছাদের নিচে না থাকলেও মোৎসার্ট ও কনস্টানজের প্রেমে বড় ছেদ পড়েনি। তবে অনেক ভাঙাগড়ার মধ্য দিয়ে প্রেমের পরীক্ষা চলে তাদের। পরের বছরই তারা বিয়ের সিদ্ধান্ত নেন।
বাবার অস্বীকৃতি
কনস্টানজে সুশিক্ষিত ছিলেন। সংগীতে প্রতিভাধর হওয়ার পাশাপাশি ফরাসি, ইতালীয় এবং স্থানীয় জার্মান ভাষায় চমৎকার কথা বলতে পারতেন। এইসব গুণ বিচারে মোৎসার্ট আন্তরিকভাবে বিশ^াস করতেন যে, একজন সুরকারের আদর্শ স্ত্রী হওয়ার যোগ্য কনস্টানজে। কিন্তু বেঁকে বসলেন মোৎসার্টের বাবা লিওপোল্ড। কনস্টানজেকে কিছুতেই তার ছেলের যোগ্য স্ত্রী বলে মানতে রাজি নন তিনি এবং সম্পর্কটি যাতে বিয়ে পর্যন্ত না গড়ায় অনবরত সেই চেষ্টাই করতে থাকলেন। এ নিয়ে ছেলে-বাবার মধ্যে চিঠি চালাচালিও কম হলো না। প্রায় চিঠিতেই মোৎসার্ট যেখানে তার প্রেমিকার প্রতিভার নানা গুণগান করেন, তো বাবা লিওপোল্ড জবাবে কঠোর থেকে আরও কঠোর হন এবং একদিন ছেলের মন ফিরবে সেই আশায় বুক বাঁধেন। কিন্তু নাছোড়বান্দা মোৎসার্ট বাবার মন গলাতে এক চিঠিতে লেখেন, ‘আমার প্রিয় কনস্টানজের চরিত্রের সঙ্গে আপনাকে আরও ভালোভাবে পরিচিত করাতে চাই। তার সব সৌন্দর্যের আধার হলো তার ভ্রমরকালো ওই দুটি চোখ... খুব স্মার্ট না হলেও সে পরিষ্কার ও পরিপাটিভাবে পোশাক পরতে পছন্দ করে। একজন নারী হিসেবে যা করা প্রয়োজন, তার সবকিছুই সে নিজে করতে পারে... আমি তাকে এবং সেও আমাকে হৃদয় উজাড় করে ভালোবাসে। তার চেয়ে আর ভালো বউ কি আমি পাব, বলুন?’
অমতের বিয়ে
বিষয়টি শেষ পর্যন্ত এমন দাঁড়ায় যে, সবাই যেন মোৎসার্ট ও কনস্টানজের প্রেমের প্রতিপক্ষ হয়ে উঠল। তাই শেষ পর্যন্ত সবার অমতের বিরুদ্ধে গিয়েই ১৭৮২ সালের ৪ আগস্ট, ভালোবাসার ঘর বাঁধেন মোৎসার্ট ও কনস্টানজে। এদিকে মার্কিন সংগীতবিদ ও ক্যালিফোর্নিয়ার বার্কলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগীতের অধ্যাপক ড্যানিয়েল হার্টজ জানান যে, সময়ের সঙ্গে লড়তে লড়তে বিপর্যস্ত কনস্টানজে একপর্যায়ে বিয়ের আগেই মোৎসার্টের কাছে চলে আসেন। ১৭৮২ সালেরই ৩১ জুলাই মোৎসার্ট বাবার কাছে একটি চিঠিতে লেখেন, ‘আপনার পাঠানো সব ভালো ও সৎ পরামর্শ এমন একজন মানুষের ক্ষেত্রে সমাধান দিতে ব্যর্থ হয়েছে, যে এরইমধ্যে একটি মেয়ের সঙ্গে ভীষণভাবে জড়িয়ে গেছে। এরপরও এই সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে আসার আর কোনো প্রশ্নই আসে না।’ এর ঠিক পাঁচ দিন পর এই যুগল ভিয়েনার সেন্ট স্টিফেন ক্যাথেড্রালে ছোট অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে বিয়ে করেন। বিয়ের সময় পর্যন্ত মোৎসার্ট ও কনস্টানজের ঘরে ছয়টি সন্তানের জন্ম হয়। কিন্তু তাদের মধ্যে মাত্র দুটি সন্তান শিশু অবস্থা পর্যন্ত বেঁচে ছিল। এতে পরবর্তী জীবনে শারীরিকভাবে দুর্বল হয়ে নানা অসুস্থতায় ভোগেন কনস্টানজে।
মোৎসার্টের সংগীতের অনুপ্রেরণা
কনস্টানজে শাস্ত্রীয় সংগীতে একজন দক্ষ ও প্রতিভাবান শিল্পী ছিলেন। তাই অনেকেই বিশ্বাস করেন যে, তিনি তার স্বামী ও কিংবদন্তি সুরস্রষ্টা মোৎসার্টের সংগীতজীবনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন। সে সময় কনস্টানজে তার শিল্পীসত্তার চর্চা করতেন স্বচ্ছন্দে। গান গাওয়া, পিয়ানো বাজানোর পাশাপাশি নাট্যপরিবেশেও নিজেকে মানিয়ে নিতেন বেশ। স্বামী মোৎসার্টের সঙ্গে সংগীত জীবনকে খুব আনন্দের সঙ্গেই ভাগ করে নিতেন তিনি। মোৎসার্ট তার প্রিয়তম স্ত্রী কনস্টানজেকে উৎসর্গ করে বেশ কটি সুরও লিখেছেন। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, মোৎসার্ট গ্রেট মাসের সি মাইনরের একক গান লিখেছিলেন তার প্রিয়তমা স্ত্রী কনস্টানজের জন্য। ১৭৮৩ সালে মোৎসার্টে সালজবুর্গের প্রিমিয়ারে সেই গান গেয়েছিলেন কনস্টানজে। আরও উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, শিল্পী মহলে মোৎসার্টের বন্ধুদের মধ্যে ব্যারন ভন সুইটেন ছিলেন অন্যতম। তিনিই মোৎসার্টকে তার বাখ ও হ্যান্ডেলের সংগীত ঘরানার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন। বারোক ঘরানার নানা সুরের কারুকাজ ভালোবাসতেন কনস্টানজে। তাই প্রিয়তমার ভালোবাসায় অনুপ্রাণিত হয়েই পরে মোৎসার্ট বেশ কয়েকটি বারোক রীতির সংগীত রচনা করেন।
মোৎসার্টের জীবনীকার
সংগীতের ভুবনে ডুবে থাকা মোৎসার্ট বিলাসবহুল ও বেহিসাবী জীবনযাপন করতেন। তাই জীবনের শেষ মুহূর্তেও নিজের ও পরিবারের জন্য তেমন কোনো সঞ্চয় রেখে যেতে পারেননি তিনি। ১৭৮৭ সালের শেষ দিকে ভিয়েনায় রাজকীয় দরবারের সুরকার হিসেবে যোগ দেন। এতে তার আয়ের অন্য সব পথ বন্ধ হয়ে যায়। বেতন খুব কম পেতেন। ফলে তার আর্থিক অবস্থার দিন দিন অবনতি হতে থাকে। এ সময় তিনি ধনী বন্ধুদের কাছ থেকে ধারাবাহিকভাবে ঋণ নিতে থাকেন। এই ঋণগ্রস্ত জীবনের শেষের দিকে তার মন ও স্বাস্থ্য একবারে ভেঙে পড়ে। এই অনটনে অর্থ উপার্জনের আশায় তিনি কখনো প্রাগে, কখনো ভিয়েনায় আবার কখনো বা বার্লিনে অনুষ্ঠান করে বেড়ান।
১৭৯০ সালের আগস্টের মাঝামাঝি। প্রাগে থাকা সেই সময়েই মোৎসার্টকে মৃত্যুচিন্তা পেয়ে বসে এবং এক ভ্রান্ত ধারণা গ্রাস করে যে, কেউ যেন তাকে বিষপ্রয়োগ করেছে। ১৭৯১ সালের ৬ সেপ্টেম্বর । প্রাগে ‘লা ক্লেমেনজা দি টিটো’ অপেরা উন্মোচনের প্রস্তুতি চলছিল। তখন হঠাৎ গুরুতরভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েন মোৎসার্ট। এর পরে ভিয়েনায় ফিরেও আসেন। তখন কনস্টানজে তার বোনদেরকে সঙ্গে নিয়ে তার সেবা-শুশ্রুষা করেন। পরে ১৭৯১ সালের ৫ ডিসেম্বর রাতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন মহান এই সুরকার। কিন্তু শারীরিকভাবে অসুস্থ হওয়ায় মোৎসার্টের শেষকৃত্যে উপস্থিত থাকতে পারেননি কনস্টানজে। বলা হয়ে থাকে, তিনি বাতজ¦রে ভুগে মারা যান। তবে তার অসুস্থতার সঠিক কারণ আজও রহস্য হয়েই রয়ে গেছে।
দুর্ভাগ্যজনকভাবে মোৎসার্ট যেদিন মারা যান, সেদিনও তার স্ত্রী কনস্টানজের কাছে কোনো টাকা-পয়সা ছিল না। তাই খুব করুণভাবে মৃত্যু হয়েছিল সুরের এই মহান জাদুকরের। বড় আকারের ওই ঋণ পরিশোধ করতে যেয়ে কনস্টানজে বিপদে পড়েন। তবে এই সময়েই সম্রাটের কাছ থেকে পেনশন পেতে শুরু করেন তিনি। পাশাপাশি মোৎসার্টের স্মরণে কিছু কনসার্টের আয়োজন করতেও সফল হন। আর স্বামীর অমর সব কাজেরও প্রচারণা চালিয়ে যেতে থাকেন। এতে কনস্টানজে আর্থিকভাবে সচ্ছল হয়ে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে ধনীও হয়ে ওঠেন।
কনস্টানজে পরে ওস্তাদ ফ্রাঞ্জ জাভার নেইমশেকের সঙ্গে থেকে সহকারী হিসেবে স্বামী ভোলফগাং আমাদেউস মোৎসার্টের পুরো জীবনী লেখেন । ১৭৯৭ সালে কনস্টানজের জীবনের দ্বিতীয় অধ্যায় শুরু হয়। এ সময় ঘটনাচক্রে তার ডেনমার্কের কূটনীতিক জর্জ নিকোলাস ভন নিসেনের সঙ্গে পরিচয় হয়। এই যুগল ১৮০৯ সালে বিয়ে করেন এবং তারা দুজনে মিলে মোৎসার্টের সম্পূর্ণ জীবনী প্রকাশ করেন। এর দু’বছর পার না হতেই কনস্টানজের দ্বিতীয় স্বামী নিসেনও মারা যান। ১৮৪২ সালে সালজবুর্গে মারা যান কিংবদন্তি সুরকার মোৎসার্টের স্ত্রী কনস্টানজে।
হোয়াটসঅ্যাপে (WhatsApp) ) এবার আপনার হয়ে টেক্সটের উত্তর দিয়ে দেবে চ্যাটজিপিটি (ChatGPT)। এতে অবাক হওয়ার কিছুই নেই। নানা কাজের চাপে বা ক্লান্তিতে অনেক সময় হোয়াটসঅ্যাপের সব মেসেজের উত্তর দিতে পারেন না অনেকেই। এবার চ্যাটজিপিটি আপনার হয়ে হোয়াটসঅ্যাপের টেক্সট-এর উত্তর দিয়ে দেবে।
অর্থাৎ হোয়াটসঅ্যাপের মেসেজের উত্তর দেওয়ার সব দায়িত্ব বুঝে নেবে এআই বা আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স। এটি এমনভাবে উত্তর দেবে যে, অপর প্রান্তে থাকা কেউ বুঝেই উঠতে পারবেন না, এটি কোনো এআই-এর টেক্সট। তিনি ভাববেন, আপনিই হয়তো টেক্সট দেখে তার মেসেজের উত্তর দিলেন।
যেভাবে কাজ করবে
ড্যানিয়েল গ্রস নামে এক অ্যাপ ডেভেলপার এমন একটি পাইথন স্ক্রিপ্ট তৈরি করেছেন, যা চ্যাটজিপিটি ও হোয়াটসঅ্যাপে যুক্ত করা যাবে। এর ফলে বন্ধুদের সঙ্গে হোয়াটসঅ্যাপে চ্যাট করার প্রয়োজন হলে, আপনার হয়ে চ্যাট চালিয়ে যাবে চ্যাটজিপিটি। বন্ধুরা ভাববেন আপনিই চ্যাট করছেন।
ব্যবহার করবেন কীভাবে
পাইথন স্ক্রিপ্টটি ব্যবহার করতে হলে এক্ষেত্রে আপনাকে কোনো ওয়েবপেজ থেকে একটি ল্যাঙ্গুয়েজ লাইব্রেরি ডাউনলোড করতে হবে। ল্যাঙ্গুয়েজ লাইব্রেরি ডাউনলোডের পর খুলবেন হোয়াটসঅ্যাপ-জিটিপি-মেইন (WhatsApp-gpt-main) ফাইল। এরপর সার্ভার ডটপাই server.py) ডকুমেন্ট এগজিকিউট করতে হবে। এরপরই আপনার চ্যাটজিপিটি ও হোয়াটসঅ্যাপ সংযুক্ত হয়ে যাবে।
সার্ভার চলা অবস্থায় তখন আপনাকে টাইপ করতে হবে ‘ইজ’ (Is, তারপর এন্টার। এবার ‘পাইথন সার্ভার ডট পাই’ (python server.py) -এ ক্লিক করুন। এতে আপনার ফোন নম্বর স্বয়ংক্রিয়ভাবেই ‘ওপেন এআই’ (OpenAI) চ্যাট পেজের সঙ্গে সংযুক্ত হয়ে যাবে।
তারপর ক্লিক করুন ‘কনফার্ম’ ও ‘অ্যাম এ হিউম্যান’ Confirm I am a human), যাতে বোঝা যাবে, আপনি রোবোট নন। এটি করার পরেই দেখতে পাবেন আপনার হোয়াটসঅ্যাপ অ্যাকাউন্টে ওপেন এআই চ্যাটজিপিটি (OpenAI ChatGPT) চলে এসেছে। ব্যস এবার চ্যাট শুরু। আপনার হয়ে চ্যাট করে দেবে চ্যাটজিপিটি।
নানা কারণ মানুষ নানা ধরনের ক্যানসারে আক্রান্ত হয়। এর মধ্যে মুখের ক্যানসারের অনেকগুলো কারণ আছে। মুখ বলতে বোঝায় ঠোঁট, চোয়াল, তালু, জিহ্বা, দাঁত, মাড়ি, মুখের তলদেশ, টনসিল ও পাশের এলাকা। মুখের ক্যানসার হওয়ার কারণ ধূমপান এবং তামাক, পান, চুন ও জর্দা সেবন। আমাদের দেশে পান, চুন ও জর্দা বা সাদাপাতা সেবন খুব জনপ্রিয়। অনুষ্ঠান, মেজবানে পানের খিলি থাকা অত্যাবশ্যক। জর্দা, সাদাপাতা ছাড়াও তামাকের আছে অনেক ব্যবহার। যেমন : নস্যি, খৈনি, চরস ও গুল ব্যবহারে অনেকে অভ্যস্ত। এগুলোয় নিকোটিন থাকায় সাময়িক উত্তেজনা সৃষ্টি করে এবং একটি সুখবোধ অনুভূত হয়। কিন্তু এর সঙ্গে আছে কার্সিনোজেন। এটি ক্যানসার সৃষ্টি করতে পারে। ধোঁয়াবিহীন তামাকের মধ্যে থাকে ২৪টি কার্সিনোজেন ও তামাকের ধোঁয়ার মধ্যে থাকে প্রায় ৩৫টি কার্সিনোজেন। তামাকের কার্সিনোজেন হলো এক ধরনের কেমিক্যাল। তা ক্যানসার সৃষ্টি করে বা করতে চায়।
ধূমপানের কারণে মুখ ছাড়াও ফুসফুস স্বরনালি, গলনালি, পাকস্থলী, অগ্ন্যাশয়, কিডনি, ব্লাডার ও জরায়ু মুখের ক্যানসার হতে পারে। মুখের ক্যানসারের অন্য কারণগুলো হলো অসমান বা অমসৃণ দাঁত। তা মুখে ক্ষতের সৃষ্টি করে। মুখ নিয়মিত পরীক্ষা না করা, ভাইরাসের পুনঃপুন সংক্রমণ ও সুষম খাবার গ্রহণ না করা, লিউকেপিকিয়া থাকা, মদ্যপান করা ইত্যাদি কারণে ক্যানসার হতে পারে।
উপসর্গ
দীর্ঘদিনের স্থায়ী ক্ষত, যা কোনো চিকিৎসায় সারছে না এবং ব্যথা, খাবার চিবাতে ও গিলতে অসুবিধা, জিহ্বার সামনের মুক্ত অংশের মার্জিনে হলে সহজে দেখা যায়, মুখগহ্বরের তলদেশে হলে ব্যথা বেশি হয়, মাড়িতে হলে ব্যথা হতে পারে এবং খাবার চিবাতে সমস্যা হয়, গলায় লিম্পনোড ফুলে যায়।
রোগ নির্ণয়
ক্যানসার যত আগে নির্ণয় করা যাবে, আরোগ্য তত সহজ হবে। নিশ্চিতভাবে ক্যানসার নির্ণয়ের জন্য বায়োপসি করে প্যাথলজি টেস্ট করাতে হয়। মুখের ক্যানসার নির্ণয়ে খুব সহজেই বায়োপসি করা যায়।
চিকিৎসা
চিকিৎসা নির্ভর করে রোগের পর্যায়ের নিরাময় সম্ভব। দ্বিতীয় পর্যায়ে গলগ্রন্থ দেখা দিলে বা আশপাশে ছড়িয়ে পড়লে সার্জারি করে নিরাময় সম্ভব। কেমোথেরাপি ও রেডিওথেরাপি দেওয়া আবশ্যক হয়ে পড়ে। দ্বিতীয় ও তৃতীয় পর্যায়ে রোগ নিরাময় কিছু সম্ভব হলেও রোগটি চতুর্থ পর্যায়ে চলে গেলে আর নিরাময় সম্ভব নয়। তখন ব্যথা উপশম করা ও রোগীর পুষ্টি জোগান দেওয়া ছাড়া আর কিছুই করার থাকে না। মুখের ক্যানসার প্রাথমিক পর্যায় থেকে চতুর্থ পর্যায় যেতে ২ থেকে ৩ বছর লাগে। এর মধ্যে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিলে নিরাময় হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
প্রতিরোধ
‘প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধ উত্তম’ কথাটি মনীষীদের। ব্যক্তিগত কু-অভ্যাস থেকে বিরত থাকা ও নিয়মিত মুখ পরিষ্কার করার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। মুখে কোনো ক্ষত দেখা দিলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) হলের আসন দখল করে রাখার বিরুদ্ধে অনশনরত ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের শিক্ষার্থী সামিউল ইসলাম প্রত্যয়সহ তাকে সমর্থন দেওয়া কয়েকজনের ওপর হামলা চালিয়েছে ছাত্রলীগ।
মঙ্গলবার রাত ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মোশাররফ হোসেন হলের সামনে এ ঘটনা ঘটে বলে জানিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা।তারা বলেন, ওই স্থানে গত বুধবার রাত থেকে অনশনে ছিলেন প্রত্যয়। তাকে মারধরের পর অ্যাম্বুলেন্সে করে বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্রে নিয়ে যায় হামলায় জড়িতরা। এ সময় প্রত্যয়ের দাবির সঙ্গে সংহতি জানানো প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনগুলোর নেতাকর্মীদের ওপরও হামলা হয়।
জানা গেছে, তিন দাবিতে গত বুধবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মশাররফ হোসেন হলের সামনের খেলার মাঠে অনশনে বসেন প্রত্যয়। তিনি ওই হলের আবাসিক ছাত্র। তার অন্য দুটি দাবি ছিল, বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হল থেকে অছাত্রদের বের করা ও হলের গণরুমে অবস্থান করা বৈধ ছাত্রদের আসন নিশ্চিত করা।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে মীর মোশাররফ হোসেন হলের সামনে ছাত্রলীগের নেতাকর্মী এবং নবীন শিক্ষার্থীরা অবস্থান করছিলেন। ওই সময় ক্যাম্পাসে লোডশেডিং চলছিল। হঠাৎ করেই প্রত্যয়সহ তার সঙ্গে থাকা অন্যদের ওপর হামলা চালায় ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা।
হামলায় জাহাঙ্গীরনগর সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি সৌমিক বাগচী, মার্কেটিং বিভাগের ৪৭তম ব্যাচের সৃষ্টি, চারুকলা বিভাগের ৪৭তম ব্যাচের মনিকা, বঙ্গবন্ধু তুলনামূলক সাহিত্য ও সংস্কৃতি ইনস্টিটিউটের ৪৮তম ব্যাচের সুরসহ আরও কয়েকজন আহত হন বলে জানা গেছে।
প্রত্যক্ষদর্শীদের তথ্যমতে, হামলায় ৩০ থেকে ৪০ জন অংশ নিয়েছিলেন। তাদের মধ্যে বেশ কয়েকজনের নাম পাওয়া গেছে। অভিযুক্তদের কয়েকজন হলেন ছাত্রলীগ নেতা ও রসায়ন বিভাগের ৪৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থী গৌতম কুমার দাস, তুষার, ফেরদৌস, নোবেল, গোলাম রাব্বি, মুরসালিন, মুরাদ, সোহেল, তানভীর, রায়হান, রাহাত, সৌমিক, তারেক মীর, সজীব ও নাফিস।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক শিক্ষার্থী জানান, আমরা যারা প্রত্যয়ের সঙ্গে ছিলাম তাদের অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করা হয়েছে। বিদ্যুৎ চলে যাওয়ার পর প্রত্যয়কে দেখতে চিকিৎসক এসেছিলেন। তখন তারা অ্যাম্বুলেন্সের ওপর হামলা করে সেটি ফিরিয়ে দেয়। প্রক্টরকে ফোন দেওয়া হলেও তিনি আসেননি। একাধিক ছাত্রীর দিকেও চড়াও হয় ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্রে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মীর মশাররফ হোসেন হলের এক শিক্ষার্থী অসুস্থ এমন একটি ফোনকল পেয়ে তারা অ্যাম্বুলেন্স পাঠায়। তবে কে কল দিয়েছিল সে সম্পর্কে চিকিৎসা কেন্দ্রের কেউ বলতে পারেননি।
তবে যে ফোন নাম্বার থেকে কল দেওয়া হয়েছিল সেটিতে যোগাযোগ করে দেখা যায় নাম্বারটি শাখা ছাত্রলীগের নেতা গৌতম কুমার দাসের।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আ স ম ফিরোজ-উল-হাসান বলেন, ১৫ হাজার শিক্ষার্থীকে নিরাপত্তা দেওয়া আমাদের পক্ষে সম্ভব না। দরকার হলে আমি পদত্যাগ করব।
এদিকে হামলার প্রতিবাদে বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্র থেকে রাতেই বিক্ষোভ মিছিল শুরু করেন প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীরা। মিছিল নিয়ে তারা এ রাত পৌনে ১টায় প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান করছেন।
তবে অনশনরত শিক্ষার্থী সামিউলের ওপর হামলারে পেছনে ছাত্রলীগের কোনো হাত নেই বলে দাবি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি আক্তারুজ্জামান সোহেলের। তিনি বলেন, ‘আমি শুনেছি, মীর মশাররফ হোসেন হলের অনশনরত ওই শিক্ষার্থীর ওপর হামলা হয়েছে। তবে সেটা সাধারণ শিক্ষার্থীরা করেছে। সেখানে ছাত্রলীগের একজনও জড়িত নয়।’
অসুস্হ সাবেক ফুটলার মোহাম্মদ মহসীনের পাশে দাড়িয়েছেন তার সাবেক সতীর্থরা। মোহামেডান ক্লাবের সাবেক ফুটবলার ও সোনালী অতীত ক্লাবের সদস্যরা বিকেলে বসে এই সিদ্ধান্ত নেন। পরে মহসীনের বাসায় যান তার সংগে দেখা করতে।সাবেক ফুটবলারদের মধ্যে ছিলেন আব্দুল গাফফার, জোসী, বাবলু, জনি, সাব্বির, রিয়াজ।
এসময় গাফফার জানান, মহসীনের চিকিৎসার জন্য বিসিবি সভাপতির উদ্যোগে বুধবার সকালে অসুস্হ ফুটবলারকে হাসপাতালে ভর্তি করবে।
হাসপাতাল থেকে সুস্থ ও স্বাভাবিক হয়ে ফেরার পর মহসীন কানাডায় ফিরে যেতে চাইলে সাবেক ফুটবলাররা সহায়তা করবে। মহসীন কানাডা থেকে দেশে ফিরেছেন মায়ের পাশে থাকতে। প্রায় নব্বই ছুই ছুই মহসিনের মায়ের পায়ে ব্যথা। মহসীনের পাশাপাশি তার মায়ের চিকিৎসার ব্যাপারেও সাবেক ফুটবলাররা পাশে থাকবেন বলে জানান আবদুল গাফফার।
রাজধানীর বনানীর একটি রেস্তোরাঁ থেকে জামায়াতে ইসলামীর বনানী শাখার ১০ নেতাকর্মীকে আটক করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
তাদের মধ্যে বনানী থানা জামায়াতের আমির তাজুল ইসলাম এবং সেক্রেটারি আব্দুর রাফি রয়েছেন।
বনানী থানার ওসি মোস্তাফিজুর রহমান জানান, মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে ওয়ারলেস গেটে অবস্থিত নবাবী রেস্টুরেন্টে গোপন মিটিং করাকালে বনানী থানা জামায়াতে ইসলামী আমির তাজুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক মাওলানা রাফিসহ ১০ নেতাকর্মীকে আটক করা হয়েছে।
আটক ১০ জনের মধ্যে ইসলামী ছাত্রশিবিরের নেতাও রয়েছেন।
প্রথম সেটে হেরে পিছিয়ে পড়েছিলেন। তবে পরের সেটেই ঘুরে দাঁড়ান। ৩ ঘণ্টা ৩৮ মিনিটের লড়াইয়ের পর কোয়ার্টার ফাইনালটা জিতে নিলেন নোভাক জকোভিচ। কারেন খাচানভকে ৪-৬, ৭-৬, ৬-২, ৬-৪ ব্যবধানে পরাজিত করে ফ্রেঞ্চ ওপেনের সেমিফাইনালে উঠলেন এই সার্বিয়ান।
কোয়ার্টার ফাইনালের শুরুটা দেখে মনে হচ্ছিল, দিনটা বোধহয় জকোভিচের নয়। তবে মাথা ঠান্ডা রেখেছিলেন তিনি। খাচানভ প্রথম সেট জিতে নেওয়ার পর দ্বিতীয় সেটেও সমানে সমানে লড়াই করেন। যদিও টাইব্রেকারে জোকোর সামনে দাঁড়াতে পারেননি তিনি।
ম্যাচে সমতা ফেরানোর পর এক বার লকার রুমে ফিরে যান জোকোভিচ। তার পর শুধু কোর্টেই ফিরলেন না। নিজের চেনা ছন্দেও ফিরলেন। তৃতীয় এবং চতুর্থ সেটে আর শুরুর মতো লড়াই করতে পারলেন না প্রতিযোগিতার ১১ নম্বর বাছাই।
ফ্রেঞ্চ ওপেনের কোয়ার্টার ফাইনালে মঙ্গলবার প্রতিযোগিতার প্রথম সেট হারলেন জোকোভিচ। হেরে যেতে পারেন এমন মনে না হলেও এ দিন ছন্দ পেতে কিছু সময় লেগেছে তার। ৩৬ বছরের জোকোভিচ কি সর্বোচ্চ পর্যায়ের টেনিসের ধকল আগের মতো সামলাতে পারছেন না আর?
এমন প্রশ্ন যখন উঁকি দিতে শুরু করছে, তখনই নিজের চেনা ছন্দে দেখা দিয়েছেন। কোয়ার্টার ফাইনালে খাচানভের বিরুদ্ধে সময় পেয়েছেন। সুযোগ পেয়েছেন। সেমিফাইনাল বা ফাইনালের প্রতিপক্ষরা কি ছন্দে ফেরার সময় বা সুযোগ দেবেন তাঁকে?
টেনিসপ্রেমীদের মনে এই প্রশ্ন রেখেই ফ্রেঞ্চ ওপেনের শেষ চারে পৌঁছে গেলেন দু’বারের চ্যাম্পিয়ন। পাশাপাশি কিছুটা হয়তো উদ্বেগেও রাখলেন। সেমিফাইনালে জায়গা নিশ্চিত করার পর জোকার স্বীকারও করে নিয়েছেন, কোয়ার্টার ফাইনালে প্রথম দু’টি সেট তার থেকে ভাল খেলেছেন রুশ প্রতিপক্ষ।
এদিকে ওপর কোয়ার্টার ফাইনালে জয় পেয়েছেন কার্লোস আলকারাজ। সিৎসিপাসের বিপক্ষে তিনি ৩-০ (৬-২, ৬-১, ৭-৬) সেটে জিতে সেমিফাইনাল নিশ্চিত করেছেন এই স্পেনিশ টেনিস তারকা।
আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন ঘিরে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সরকারের দূরত্ব প্রকাশ্যে চলে এসেছে। কোনো ধরনের রাখঢাক ছাড়াই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ সরকারের মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ নেতারা যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনা করছেন। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আরও বেশি দৌড়ঝাঁপ শুরু করছেন। ফলে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ক্ষমতাসীনদের দূরত্ব এখন স্পষ্ট। আলোচনা আছে, সরকারবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে পশ্চিমা এ দেশটি হঠাৎ আরও ঘনিষ্ঠ হতে শুরু করেছে।
জানা গেছে, সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে এতদিন যুক্তরাষ্ট্রের মতপার্থক্য ছিল না। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন প্রত্যাশা করছে দেশটি। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগও এ নিয়ে কোনো দ্বিমত করেনি। এরই মধ্যে, ভিসানীতি ঘোষণা করে সরকারকে বড় চাপ দেওয়ার পূর্বাভাস দেয় যুক্তরাষ্ট্র। বিষয়টি নিয়ে সরকারি দল আওয়ামী লীগ ও মাঠের বিরোধী দল বিএনপি একে অন্যকে ঘায়েল করার চেষ্টা করে। তবে ভিসানীতি যে সরকারের ও আওয়ামী লীগের ওপরই বেশি চাপ তৈরি করেছে, সেটা ভেতরে-বাইরে আলোচনা আছে।
আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায় ও কূটনীতি-সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্র দেশ রূপান্তরকে জানিয়েছে, বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র তাদের অবস্থান পাল্টে নির্বাচনের স্বার্থে প্রয়োজনে সংবিধানের বাইরে যেতে হবে সরকারকে এমন প্রস্তাব দিতে চলেছে। ওই সূত্রগুলো দাবি করেছে, গত মাসের শেষের দিকে অথবা চলতি সপ্তাহে বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাস আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের বাসভবনে তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। পিটার হাস ওই বৈঠকে রাজনৈতিক সমঝোতায় না আসলে সব দলের অংশগ্রহণে জাতীয় সরকারের আদলে একটা কিছু করার বিকল্প প্রস্তাব দিয়েছেন। তা না হলে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের স্বার্থে সংবিধানসম্মত করে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের পদক্ষেপ নেওয়ার প্রস্তাব করেন। এ প্রস্তাব সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানেও দেওয়া হয়েছে। আনিসুল হকের সঙ্গে শ্রম আইন নিয়েও দীর্ঘ আলাপ করেন এ রাষ্ট্রদূত।
আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকজন নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, পিটার হাসের ওই প্রস্তাব নিয়ে সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ে গেলে তাতে বড় আপত্তি তোলা হয়। শুধু তাই নয়, যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা পাওয়া যাবে না এটা ধরেই দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরুর বার্তা দেওয়া হয়েছে সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে। তারা স্বীকার করেন যে, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান ক্রমেই আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে চলে যাচ্ছে। তবে নির্বাচনে যুক্তরাষ্ট্রের অসহযোগিতা করবে ধরে নিয়েই সরকারি দল আওয়ামী লীগ প্রস্তুতি নিচ্ছে।
পিটার হাস সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের ও মাঠের বিরোধী দল বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে একান্তে বৈঠক করেছেন। গুরুত্বপূর্ণ ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গেও নির্ধারিত-অনির্ধারিত বৈঠক করা শুরু করেছেন। গত সোমবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ব্রিফিংয়ে পিটার হাসকে উদ্দেশ্য করে প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেছেন, রাষ্ট্রদূতরা সীমা লঙ্ঘন করলে আইনি ব্যবস্থা নেবে সরকার।
আগামী নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সক্রিয় হয়ে ওঠার প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে জানিয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, পিটার হাসের দৌড়ঝাঁপ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘নাহি ছাড়ি’ অবস্থান আওয়ামী লীগের বিভিন্ন স্তরে দুশ্চিন্তা তৈরি হয়েছে।
সরকারের দুই মন্ত্রীও দেশ রূপান্তরের কাছে স্বীকার করেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সরকারের বিপক্ষে যেতে শুরু করেছে। ‘অন্যায় হস্তক্ষেপ’ বেড়েছে পিটার হাসের।
আওয়ামী লীগের কূটনীতিসম্পৃক্ত এক নেতা বলেন, সরকার বিকল্প হিসেবে শক্তিশালী দেশের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নে কাজ করে চলেছে। বিকল্প দেশের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে উঠলে নির্বাচন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রকে মাইনাস করে চলার এক ধরনের কৌশল গ্রহণ করা হবে। এ কৌশলে নির্বাচন সম্পন্ন হয়ে গেলে যুক্তরাষ্ট্রর সঙ্গে সম্পর্ক ঝালাই করা হবে নতুন পরিকল্পনা অনুযায়ী।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর আরেক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, ভিসানীতি মূলত সরকারের বিভিন্ন ক্ষেত্রে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। অনেকেই ভিসানীতিকে সব গেল বলে ধরে নিয়ে অবস্থান টলমলে করে তুলতে চায়। এরকম অবস্থা আওয়ামী লীগকে একটু চিন্তায় ফেলে দিয়েছে। দলের নেতাকর্মীরা যেন সাহস হারিয়ে না ফেলে, সেজন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনা করার কৌশল গ্রহণ করেছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগ নেতাদের সমালোচনা নিয়ে গুঞ্জন শুরু হয়েছে। এমন কথা শোনা যাচ্ছে যে, আওয়ামী লীগ কি তাদের অবস্থান থেকে সরতে শুরু করবে? আবার প্রশ্নও আছে যে, নির্বাচন কি হবে? জাতীয় সরকার আসবে খুব শিগগিরই, এমন গুঞ্জনও রয়েছে জোরালোভাবে। শুধু তাই নয়, বাতিল হওয়া নির্বাচন পদ্ধতি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনেই আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে এমন গুঞ্জনও শুরু হয়েছে। যদিও এসবে কোনো ভিত্তি রয়েছে মনে করেন না আওয়ামী লীগ নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা। তারা দাবি করেন, সংবিধান অনুযায়ীই নির্বাচন হবে। এ ইস্যুতে কোনো শক্তির সঙ্গেই আপস করবেন না আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে দলটির সভাপতিম-লীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, কোনো দেশের চাওয়ায় বাংলাদেশে আগামী নির্বাচন হবে না। দেশের মানুষের চাওয়া অনুযায়ী সংবিধানসম্মতভাবে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন হবে। তিনি বলেন, সবার মতো করেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য করতে বদ্ধপরিকর।
কূটনীতিসম্পৃক্ত আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের আরেক নেতা বলেন, দৃশ্যত যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সরকারের সঙ্গে দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে মনে করা হলেও সেপ্টেম্বরের আগে পশ্চিমা এ দেশটি তার চূড়ান্ত অবস্থান পরিষ্কার করবে না বলে তারা মনে করছেন। ওই নেতা বলেন, সেপ্টেম্বরে ভারত সফর রয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। মূলত সেই সফরেই বোঝা যাবে সরকার কোনদিকে যাবে। এ নেতা আরও বলেন, ‘আমাদের ডিপ্লোম্যাসি (পররাষ্ট্রনীতি) পরস্পরের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের নীতি। কূটনীতিতে প্রধানমন্ত্রী দেশি-বিদেশি অনেক নেতাকে ছাড়িয়ে গেছেন। সেই আস্থা-বিশ্বাসও প্রধানমন্ত্রীর ওপর আমাদের রয়েছে।’
এতদিন যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান পরিষ্কার হয়ে না ওঠায় সরকার ও আওয়ামী লীগ নেতারা দাবি করতেন, দেশটিকে তারা বোঝাতে পেরেছেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে সমালোচনা প্রমাণ করে না যে, ক্ষমতাধর দেশটির সঙ্গে আওয়ামী লীগের বোঝাপড়া ঠিক আছে। যুক্তরাষ্ট্র ভিসানীতি ঘোষণার পরই দেশটির অবস্থান আওয়ামী লীগের পক্ষে আছে এমন কথা কেউ আর বিশ্বাস করছে না।
আওয়ামী লীগের একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, আমেরিকাকে মাইনাস ধরেই এগিয়ে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দলটির শীর্ষ পর্যায়ের দুই নেতা আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান আগের চেয়ে বেশি স্পষ্ট হয়ে ওঠায় রাজনীতিতে তারা ‘ব্যাকফুটে’ চলে যাচ্ছেন কি না, তা নিয়ে আলোচনা চলছে দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের মধ্যে।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমি একটাই বুঝি, একটাই জানি, আগামী নির্বাচন সংবিধানসম্মতভাবেই হবে। এ জায়গা থেকে একটুও নড়বে না সরকার।’
নতুন অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে ১৩ ধরনের জ্বালানি তেল ও পেট্রোলিয়াম পণ্যের ওপর থেকে বিদ্যমান ৫ শতাংশ আগাম কর প্রত্যাহারের পরিকল্পনা করেছে সরকার। অন্যদিকে উৎপাদন পর্যায়ে তরল করা পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) ভ্যাট ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে সাড়ে ৭ শতাংশ করা হয়েছে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে পেট্রোল, অকটেন ও ডিজেল আমদানিতে প্রতি লিটারে ১৩ দশমিক ৭৫ টাকা করে শুল্ক আরোপ করার প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এ ছাড়া অন্যান্য জ্বালানি জেট ফুয়েল, ফার্নেস অয়েল, লুব বেইজ অয়েল, কেরোসিনের ক্ষেত্রে প্রতি টনে ২৫ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। এত দিন এসব জ্বালানি তেল আমদানির ক্ষেত্রে ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ ছিল।
আমদানি করা পণ্যের যথাযথ মূল্য নির্ধারণে ২০২২-২৩ অর্থবছরে পণ্যের ট্যারিফ মূল্য ও ন্যূনতম মূল্য নির্ধারণ-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনে পেট্রোলিয়াম ও এর উপজাত দুটি হেডিংয়ের আওতায় ১২টি এইচএস কোডের বিপরীতে ট্যারিফ মূল্য এবং একটি হেডিংয়ের আওতায় একটি এইচএস কোডের বিপরীতে ন্যূনতম মূল্য বহাল আছে।
পেট্রোলিয়াম ও এর উপজাতগুলোর মূল্য আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিনিয়ত ওঠানামা করার কারণে অতি প্রয়োজনীয় এই পণ্যের মূল্য স্থিতিশীল রাখতে এ সুপারিশ করা হয়েছে।
এলপিজি সিলিন্ডারের বিষয়ে বাজেট বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী বলেন, এলপিজি সিলিন্ডার তৈরির কাঁচামাল ইস্পাতের পাত (স্টিল শিট) ও ওয়েল্ডিংয়ের তার আমদানির করছাড় সুবিধা তুলে নেওয়া হয়েছে। এলপিজি সিলিন্ডার উৎপাদনকারীরা কাঁচামালে শুল্ককর ছাড় ১২ বছর ধরে ভোগ করে আসছে। তাই রাজস্ব আহরণের স্বার্থে শুধু দুটি উপকরণে ছাড় তুলে নেওয়া হয়েছে। তবে অন্যান্য করছাড়ের মেয়াদ ২০২৫ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত বহাল থাকবে বলে।
পেট্রোলিয়াম তেল এবং বিটুমিনাস খনিজ থেকে প্রাপ্ত তেলের ওপর বিদ্যমান শুল্ক ৫ শতাংশ। নতুন বাজেট অনুযায়ী এসবের প্রতি ব্যারেলের দাম ১ হাজার ১১৭ টাকা (লিটার প্রতি ৭.০২ টাকা) হতে পারে। প্রতি টন ফার্নেস অয়েলের সুনির্দিষ্ট শুল্ক ৯ হাজার ১০৮ টাকা (লিটার প্রতি ৯.১০ টাকা) করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের জন্য নতুন অর্থবছরে (২০২৩-২৪) ৩৪ হাজার ৮১৯ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। এর মধ্যে বিদ্যুৎ খাতে ৩৩ হাজার ৮২৫ কোটি ১০ লাখ টাকা এবং জ্বালানি খাতে ৯৯৪ কোটি ৩১ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করা নতুন বাজেটে এই বরাদ্দের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
চলতি অর্থবছরে (২০২২-২৩) বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতে বরাদ্দ ছিল ২৬ হাজার ৬৬ কোটি টাকা। পরবর্তী সময়ে সংশোধিত বাজেটে তা বেড়ে দাঁড়ায় ২৭ হাজার ৮৯ কোটি টাকা। অর্থাৎ নতুন অর্থবছরে এ খাতে বরাদ্দ বাড়ছে ৭ হাজার ৭৩০ কোটি টাকা।
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তাফা কামাল বাজেট বক্তৃতায় বলেন, উৎপাদন ও বিতরণ সক্ষমতা সম্প্রসারণের ফলে দেশের শতভাগ জনগোষ্ঠী বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় এসেছে। বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ২০০৯ সালে ৪ হাজার ৯৪২ মেগাওয়াট থেকে বর্তমানে ২৬ হাজার ৭০০ মেগাওয়াটে উন্নীত হয়েছে। জ্বালানির ব্যবহার বহুমুখীকরণের জন্য গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পাশাপাশি কয়লা, তরল জ্বালানি, দ্বৈত জ্বালানি, পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানিভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, রামপালে কয়লাভিত্তিক ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রকল্পের প্রথম ইউনিট ও পায়রা ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রকল্পে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হয়েছে। মাতারবাড়ীতে ১২০০ মেগাওয়াট আল্ট্রা-সুপার ক্রিটিক্যাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের কাজ চলছে। সরকারি-বেসরকারি যৌথ উদ্যোগে মোট ১২ হাজার ৯৪ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ৩৩টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণাধীন এবং ২ হাজার ৪১৬ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ১৭টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের চুক্তি প্রক্রিয়াধীন আছে। এছাড়া, ১০ হাজার ৪৪৩ মেগাওয়াট ক্ষমতার আরও ৩৪টি বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে।
মুস্তফা কামাল বলেন, ‘২০৪১ সালের মধ্যে পাশর্^বর্তী দেশগুলো থেকে প্রায় ৯ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির পরিকল্পনা রয়েছে। বর্তমানে ভারত থেকে ১১৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির পাশাপাশি ঝাড়খ-ে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ৭৪৮ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হয়েছে। নেপালের জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির চুক্তি চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। ভুটান থেকে বিদ্যুৎ আমদানির জন্য বাংলাদেশ, ভুটান ও ভারতের মধ্যে একটি ত্রিপক্ষীয় সমঝোতা স্মারক সই হতে যাচ্ছে শিগগিরই। তিনি বলেন, ‘সব মিলিয়ে আমরা ২০৩০ সালের মধ্যে ৪০ হাজার মেগাওয়াট এবং ২০৪১ সালের মধ্যে ৬০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন নিশ্চিত করতে পারব বলে আশা করছি।’
অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘সরকার ২০৩০ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ১০ শতাংশ নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। এছাড়া ২০৪১ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ৪০ শতাংশ পরিচ্ছন্ন জ্বালানি থেকে সংগ্রহ করতে চাই। এরসঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে, ৬০ লাখ সোলার সিস্টেম স্থাপনের মাধ্যমে অফ গ্রিড এলাকায় বসবাসকারী জনগণকে বিদ্যুৎ সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। কার্বন নিঃসরণ কমাতে ডিজেলচালিত পাম্পের জায়গায় সৌরচালিত পাম্প স্থাপন করার অংশ হিসেবে সেচকাজে ইতিমধ্যে ২ হাজার ৫৭০টি পাম্প স্থাপন করা হয়েছে। বর্তমানে নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে ৮৯৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে। সর্বোপরি, রাশিয়ার সহায়তায় রূপপুরে ২৪০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে।’
উৎপাদিত বিদ্যুৎ জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে গত ১৪ বছরে ৬ হাজার ৬৪৪ সার্কিট কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন স্থাপন করা হয়েছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, সঞ্চালন লাইন ১৪ হাজার ৬৪৪ কিলোমিটারে উন্নীত হয়েছে। এছাড়া বিতরণ লাইন ৩ লাখ ৬৯ হাজার থেকে ৬ লাখ ৬৯ হাজার কিলোমিটারে বৃদ্ধি করা হয়েছে। বিদ্যুতের সিস্টেমলস ১৪ শতাংশ থেকে নেমে এসেছে ৭ দশমিক ৭ শতাংশে। ২০৩০ সালের মধ্যে সঞ্চালন লাইনের পরিমাণ ২৮ হাজার কিলোমিটারে সম্প্রসারিত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিদ্যুতের অপব্যবহার রোধের লক্ষ্যে গত ৫ বছরে প্রায় ৫৩ লাখ প্রি-পেইড স্মার্ট মিটার স্থাপন করা হয়েছে।
অর্থমন্ত্রী কামাল বলেন, ২০০৯ সালের তুলনায়, জ্বালানি তেলের মজুদ ক্ষমতা ৮ লাখ ৯৪ হাজার মেট্রিক টন থেকে বৃদ্ধি করে ২০২১-২২ অর্থবছরে ১৩ লাখ ৬০ হাজার টন করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে এই মজুদ ক্ষমতা ৩০ দিনের পরিবর্তে ৬০ দিনে বাড়ানোর বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি উদ্বোধন করা ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী পাইপলাইনের মাধ্যমে আমদানি করা জ্বালানি তেল (ডিজেল) দেশের উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলায় এবং সৈয়দপুরে ১৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রে সরবরাহ করা সম্ভব হবে।
তিনি বলেন, ‘একমাত্র তেল শোধনাগার ইস্টার্ন রিফাইনারির পরিশোধন ক্ষমতা ১৫ লাখ টন থেকে ৪৫ লাখ টনে উন্নীত করার চেষ্টা চলছে। পায়রা সমুদ্রবন্দর এলাকায় একটি বৃহৎ সমন্বিত তেল শোধনাগার স্টোরেজ ট্যাংক নির্মাণের সিদ্ধান্ত আছে। সম্প্রতি ভোলার ইলিশা গ্যাসক্ষেত্রে প্রায় ২০০ বিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের মজুদ আবিষ্কৃত হয়েছে। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার সময় প্রতিদিন গ্যাসের উৎপাদন ছিল ১ হাজার ৭৪৪ মিলিয়ন ঘনফুট, যা বেড়ে হয়েছে প্রায় ২ হাজার ৩০০ মিলিয়ন ঘনফুট। তেল ও গ্যাস অনুসন্ধান কোম্পানি বাপেক্সের সক্ষমতা বাড়ানোর পর দৈনিক গ্যাস উৎপাদন ৯৮৪ মিলিয়ন ঘনফুট বেড়েছে। ২০২৪ সালের মধ্যে আরও ৪৬টি কূপ খনন করা হবে। এতে অতিরিক্ত ৬১৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস জাতীয় গ্রিডে যোগ হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
মুস্তাফা কামাল বলেন, ‘সমুদ্রে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য বিপুল বিনিয়োগ প্রয়োজন হওয়ায় আমরা বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিচ্ছি। ক্রমবর্ধমান জ্বালানির চাহিদা মেটাতে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস আমদানি এবং স্পট মার্কেট থেকেও কেনা হচ্ছে। এছাড়া কক্সবাজারের মাতারবাড়ীতে প্রতিদিন ১ হাজার মিলিয়ন ঘনফুট ক্ষমতাসম্পন্ন ল্যান্ড বেইজড এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।’
বাজেট বক্তৃতায় আরও বলা হয়, ২০০৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত ১ হাজার ১৫৮ কিলোমিটার গ্যাস সঞ্চালন পাইপলাইন নির্মাণ করা হয়েছে। বর্তমানে দেশের উত্তরাঞ্চল ও অন্যান্য এলাকায় ২১৪ কিলোমিটার পাইপলাইন নির্মাণের কাজ চলছে। ২০২৬ সালের মধ্যে পায়রা ও ভোলা থেকে গ্যাস সঞ্চালনের জন্য আরও ৪২৫ কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। গ্যাসের সরবরাহ বাড়ানোর পাশাপাশি অপচয় রোধে প্রি-পেইড মিটার স্থাপনের কাজও চলছে।
চলতি অর্থবছরের চেয়ে আগামী অর্থবছরের সামগ্রিক বাজেট আকারে ১২ দশমিক ৩৪ শতাংশ বড় হলেও আগামী বছরের শিক্ষা-বাজেট দশমিক ৪৪ শতাংশ কমেছে। তবে টাকার অঙ্কে শিক্ষার দুই মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দ ৬ হাজার ৭১৩ কোটি টাকা বেড়েছে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরে শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাতে মোট বাজেটের ১৩ দশমিক ৭ শতাংশ বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। শুধু শিক্ষা খাত হিসাব করলে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা এবং মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষায় বরাদ্দ ১১ দশমিক ৫৭ শতাংশ। টাকার অঙ্কে তা ৮৮ হাজার ১৬২ কোটি। চলতি অর্থবছরে শিক্ষায় বরাদ্দ ছিল ১২ দশমিক ০১ শতাংশ বা ৮১ হাজার ৪৪৯ কোটি টাকা।
ইউনেস্কো, শিক্ষাবিদ বা অংশীজনরা অনেক দিন ধরেই শিক্ষায় জিডিপির কমপক্ষে ৪ শতাংশ বরাদ্দের কথা বলছেন। এটাকে তারা বরাদ্দ হিসেবে না দেখে আগামী দিনের বিনিয়োগ হিসেবে দেখতে বলছেন। গত কয়েক বছর ধরে শিক্ষায় বরাদ্দ ১২ শতাংশের আশপাশে ঘুরপাক খাচ্ছিল। জিডিপির হিসাবে তা ছিল ২ শতাংশের কাছাকাছি। চলতি অর্থবছরে শিক্ষা খাতে মোট বরাদ্দ জিডিপির ১ দশমিক ৮৩ শতাংশ, ২০২১-২২ অর্থবছরে ছিল ২ দশমিক ০৮ শতাংশ। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে তা কমে দাঁড়াচ্ছে জিডিপির ১ দশমিক ৭৬ শতাংশ।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধূরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আগামী বাজেটে যে লক্ষ্য ধরা হয়েছে, তার সঙ্গে শিক্ষায় বরাদ্দের সংগতি নেই। বাজেটে স্মার্ট বাংলাদেশের কথা বলা হয়েছে। এজন্য দক্ষ ও শিক্ষিত জনগোষ্ঠী প্রয়োজন। কিন্তু এ জনগোষ্ঠী তৈরির জন্য প্রয়োজন শিক্ষা খাতে বিনিয়োগ। বরাবরের মতো এবারও শুভংকরের ফাঁকি লক্ষ করছি। শিক্ষার সঙ্গে প্রযুক্তি মিলিয়ে আকার বড় করা হলেও চলতি অর্থবছরের চেয়েও বরাদ্দ কমেছে। নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নেও বাজেটে দিকনির্দেশনা দেখছি না।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ড. ছিদ্দিকুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘শিক্ষায় জিডিপির ২ শতাংশের নিচে বরাদ্দ কাক্সিক্ষত নয়। আগামী অর্থবছরে অন্তত ১৪ থেকে ১৫ শতাংশ বরাদ্দ দিলে ভালো হতো। কারিগরি ও ভোকেশনাল শিক্ষায় আরও বেশি নজর দেওয়া উচিত ছিল। সেটা আগামী অর্থবছরের বাজেটে দেখা যায়নি।’
তিনি বলেন, ‘আগামী বছরের বাজেটে মিড ডে মিলের জন্য বরাদ্দ রাখার কথা বলা হয়েছে, যা খুবই ভালো। যোগ্য শিক্ষক নিয়োগ ও তাদের যথাযথ প্রশিক্ষণে জোর দিতে হবে। শিক্ষায় বরাদ্দের সঠিক ব্যবহারের বিষয়ে গুরুত্ব দিতে হবে।’
আগামী অর্থবছরে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জন্য ৩৪ হাজার ৭২২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরে তা ছিল ৩১ হাজার ৭৬১ কোটি টাকা। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের জন্য ৪২ হাজার ৮৩৮ কোটি এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের জন্য ১০ হাজার ৬০২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের জন্য ৩৯ হাজার ৯৬১ কোটি এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের জন্য ৯ হাজার ৭২৭ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছিল সরকার।
বাজেট ঘিরে প্রতি বছরই বেসরকারি শিক্ষকদের অন্যতম দাবি থাকে শিক্ষাব্যবস্থার জাতীয়করণ, এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের পূর্ণাঙ্গ বাড়ি ভাড়া ও শতভাগ উৎসব-ভাতা প্রদান। নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তকরণের প্রক্রিয়া চলমান রাখাও তাদের অন্যতম দাবি। কিন্তু সেসব বিষয়ে বাজেটে স্পষ্ট কিছু উল্লেখ নেই। তবে এমপিওভুক্তির জন্য মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগে আগামী অর্থবছরে ৩০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে বলে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।
দুই দশকেরও বেশি ক্যারিয়ারে অসংখ্য নাটক-টেলিছবি নির্মাণ করেছেন শিহাব শাহীন, উপহার দিয়েছেন হিট প্রোডাকশন। নিজেকে শুধু রোমান্টিক জনরায় আটকে না রেখে কাজ করেছেন বহুমাত্রিক ঘরানায়। নিজেকে প্রমাণ করেছেন সব্যসাচী নির্মাতা হিসেবে। নিজেকে শুধু টেলিভিশনেই আটকে রাখেননি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তিনিও পাল্টেছেন প্লাটফর্ম এবং সেখানেও দেখিয়েছেন নিজের মুন্সিয়ানা।
সর্বশেষ গেল ঈদে তুমুল সাড়া ফেলেছে তার নির্মিত স্পিন অফ সিরিজ ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’। সাফল্যের পর কিছুদিন আগেই অনুষ্ঠিত হয়ে গেল এর সাকসেস পার্টি যেখানে উপস্থিত ছিলেন টিমের কলাকুশলী থেকে শুরু করে অন্যান্য নির্মাতা ও শিল্পীরা। সেই ধারাবাহিকতায় এবার তিনি নিয়ে আসছেন সিরিজটির সিক্যুয়াল। শুধু তাই নয়, একসঙ্গে একাধিক সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে আসছেন জনপ্রিয় নির্মাতা।
শিহাব শাহীন বলেন, ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’ নিয়ে এতটা প্রত্যাশা ছিল না কিন্তু সে সাড়া পেয়েছি তা প্রত্যাশার চেয়েও বেশি। দর্শকরাই কাজটিকে গ্রহণ করেছেন আর তাই এখন এর সিক্যুয়াল নিয়ে আসার পরিকল্পনা করছি। স্পিন অফে দেখিয়েছি অ্যালেন স্বপনের পেছনের গল্প। সিন্ডিকেটে তাকে আমরা দেখিয়েছিলাম ২০২২ সালে, সে ঢাকায় আসার পর এর মাঝের সময়টার গল্পই থাকবে সিক্যুয়ালে। যেটার সংযোগ থাকতে পারে ‘সিন্ডিকেট ২’-তে। ঈদের পরপর এটার শুট করার সম্ভাবনা রয়েছে।
এই সিক্যুয়াল ছাড়াও আরও বেশ কিছু সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে সবকিছু চূড়ান্ত হয়েছে বলেও জানান এ নির্মাতা। তিনি বলেন, মোস্তফা সরয়ার ফারুকির তত্ত্বাবধানে ওটিটি প্লাটফর্ম চরকির ‘মিনিস্ট্রি অফ লাভ’ সিরিজের একটা কনটেন্ট করবো। এখনও কাস্টিং চূড়ান্ত হয়নি। এছাড়া হইচইয়ের একটি সিরিজ ও বিঞ্জের একটি ফিল্ম করা হবে। নাম চূড়ান্ত হয়নি। তবে দুটোতেই জিয়াউল ফারুক অপূর্ব থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
মাঝে শোনা গিয়েছিল, আফরান নিশোকে নিয়ে ‘সিন্ডিকেট ২’ নাকি হবে না, এটা কতটুকু সত্য? এমন প্রশ্নে শিহাব শাহীন বলেন, এটা ভূয়া তথ্য। ডিসেম্বরের শেষ দিকে ‘সিন্ডিকেট ২’ করবো তার আগে সেপ্টেম্বরে শুরু করবো ‘রসু খাঁ’।
জানা গেছে, আগামী সপ্তাহে অস্ট্রেলিয়া পাড়ি জমাচ্ছেন শিহাব শাহীন। দেশে ফিরবেন মাসের শেষ নাগাদ এরপর কাজে নামবেন।
স্বাস্থ্য খাতে চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটের চেয়ে আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে বরাদ্দ বেড়েছে। প্রস্তাবিত বাজেটে এই খাতে এবার বরাদ্দ ১ হাজার ১৮৯ কোটি টাকা বা ৩ দশমিক ২২ শতাংশ বাড়লেও মোট বাজেটের তুলনায় তা কমেছে শূন্য দশমিক ৪ শতাংশ। চলতি অর্থবছরে খাতটিতে বরাদ্দ ছিল মোট বাজেটের ৫ দশমিক ৪ শতাংশ। আগামী বাজেটে তা ৫ শতাংশে নেমে এসেছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে জাতীয় সংসদে ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেট পেশ করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। বাজেটে স্বাস্থ্যসেবা এবং স্বাস্থ্য-শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ খাতে ৩৮ হাজার ৫২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করেন। ২০২২-২৩ অর্থবছরে সংশোধিত বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ ছিল ৩৬ হাজার ৮৬৩ কোটি টাকা।
প্রস্তাবিত বাজেটে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে ২৯ হাজার ৪৩১ কোটি টাকা, যা আগের বছরের তুলনায় মাত্র ১৫০ কোটি টাকা বেশি। এর মধ্যে পরিচালন ব্যয় ১৭ হাজার ২২১ কোটি টাকা ও উন্নয়ন ব্যয় ১২ হাজার ২১০ কোটি টাকা। এছাড়া স্বাস্থ্য-শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটে ৮ হাজার ৬২১ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এই বরাদ্দ থেকেই নতুন মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠার ব্যয় নির্বাহ করা হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক সৈয়দ আবদুল হামিদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, এবার টাকার অঙ্কে গত বছরের তুলনায় (বর্তমান ২০২২-২৩ অর্থবছর) ১ হাজার একশ কোটির মতো বেড়েছে। কিন্তু বাজেট শেয়ারে সেটা কমেছে। সামগ্রিক বাজেটের গ্রোথ বা বৃদ্ধি ১২ শতাংশ, কিন্তু স্বাস্থ্যের বাজেটের বৃদ্ধি ৩ শতাংশ। তারমানে রাষ্ট্রীয় বাজেটে স্বাস্থ্য খাতের গুরুত্ব কমেছে। সেই কারণে ৫ দশমিক ৪ শতাংশ থেকে ৫ শতাংশে নেমে এসেছে।
এই স্বাস্থ্য অর্থনীতিবিদ বলেন, এবার কমার যৌক্তিক কারণ আছে। সেটা হলো স্বাস্থ্য বিভাগের সেক্টর প্রোগ্রামে উন্নয়ন বাজেট থেকে অর্থ আসে। সেই সেক্টর প্রোগ্রাম এই অর্থবছরে শেষ হয়ে প্রস্তাবিত অর্থবছর থেকে নতুন সেক্টর প্রোগ্রাম শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু চলমান সেক্টর প্রোগ্রাম সময়মতো বাস্তবায়ন করতে না পারায় সেটার সময় আরও এক বছর বাড়ানো হয়েছে। এই এক বছরের জন্য নতুন বাজেট থাকে না, পুরনো বাজেট থেকেই ব্যয় করতে হয়। ফলে বরাদ্দ না বাড়িয়ে পাঁচ বছরের বাজেট যদি ছয় বছরে গিয়ে ঠেকে, তাহলে প্রতি বছর টাকা কমে যায়। মূলত এ কারণে এবার টাকা কমে গেছে।
সরকার স্বাস্থ্য খাতে এবারও কিছু থোক বরাদ্দ রাখতে পারত বলে মনে করেন স্বাস্থ্য অর্থনীতির এই শিক্ষক। তিনি বলেন, কভিড ছাড়াও আমাদের অনেক জরুরি খাত আছে। এখন ডেঙ্গু চলছে। এটি ইমার্জেন্সি হয়ে যাবে। ফলে এটার জন্য যে ফান্ড দেওয়া আছে হাসপাতালে, রোগী বাড়লে সেটা দিয়ে হবে না। এরকম ইমার্জেন্সি আরও আসতে পারে। এরকম একটা থোক বরাদ্দ রাখলে স্বাস্থ্যের ইমার্জেন্সিতে সেখান থেকে ব্যয় করা যেত। কিন্তু সেটাও নেই। তার মানে কভিডের শিক্ষা থেকে আমরা কিছুই শিখিনি। প্রস্তাবিত বাজেটে সেটার প্রতিফলন নেই।
সামগ্রিকভাবে বাজেটে রোগীদের স্বাস্থ্যসেবার খরচ বেড়ে যাবে বলেও মনে করছেন এই স্বাস্থ্য অর্থনীতিবিদ। তিনি বলেন, এতে স্বাস্থ্যসেবা ও ওষুধসহ সামগ্রিকভাবে স্বাস্থ্য খাত নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার যথেষ্ট কারণ আছে।
যদিও এবারের বাজেটে ওষুধ, চিকিৎসাসামগ্রী ও স্বাস্থ্য সুরক্ষাসামগ্রী উৎপাদনে প্রয়োজনীয় কাঁচামাল আমদানিতে বিদ্যমান রেয়াতি সুবিধা অব্যাহত রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। এ ছাড়া ক্যানসার রোগীদের চিকিৎসা আরও সুলভ করার জন্য ক্যানসার চিকিৎসায় ব্যবহৃত ওষুধ, আইভি ক্যানুলা উৎপাদনের অন্যতম প্রধান উপাদান সিলিকন টিউবসহ আরও কিছু বিদ্যমান ওষুধের কাঁচামাল আমদানিতে রেয়াতি সুবিধা অব্যাহত রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। তামাক জাতীয় পণ্য যেমন তরল নিকোটিন, ট্রান্সডারমাল ইউস নিকোটিন পণ্যের বিপরীতে ১৫০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপ করার প্রস্তাব করা হয়েছে।