
কেউ বলেন চোখের খিদে, কেউ বলেন তারা নাকি খাদ্যরসিক। আসল কারণটা কিন্তু এসব কিছুই নয়। যাদের মুখ ২৪ ঘণ্টা চলছে, মনে তাদের বাসা বেঁধেছে অন্য অসুখ। আমরা যখনই কোনো ভালো খাবার খাই, আমাদের মস্তিষ্কে ডোপামিন নামে এক ধরনের ‘সুখী’ হরমোন ক্ষরিত হয়। শুধু খাওয়া নয়, যে কোনো কাজ যা মনকে তৃপ্তি দেয়, তা এই হরমোন ক্ষরণে সাহায্য করে। যখন কেউ পুষ্টির প্রয়োজন বা খিদে মেটানোর পরও খেয়ে যান, তখন বুঝতে হবে এর পেছনে অন্য কারণ আছে। কী কী কারণে এমনটা হয়?
প্রোটিনের ঘাটতি : খিদে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য শরীরে পর্যাপ্ত মাত্রায় প্রোটিন থাকা জরুরি। প্রোটিনের খিদে কমানোর ক্ষমতা থাকে। ডায়েটে পর্যাপ্ত মাত্রায় প্রোটিন থাকলে আপনার মনে কম খাওয়ার ইচ্ছা তৈরি হয়। আপনার পেট ভরা থাকবে, তাই শরীরে কম ক্যালরি যাবে।
ঘুমের ঘাটতি : সুস্বাস্থ্যের জন্য দিনে অন্তত সাত থেকে আট ঘণ্টার ঘুমের প্রয়োজন। মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বাড়াতে, শরীরের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে ও ক্রনিক অসুখের হাত থেকে রেহাই পেতে পর্যাপ্ত ঘুমের ভীষণ প্রয়োজন। এর পাশাপাশি খিদে নিয়ন্ত্রণ করার জন্যও ঘুমের প্রয়োজন। ঘুমোনোর ফলে মস্তিষ্কে ঘ্রেলিন হরমোনের ক্ষরণ হয়। এই হরমোন খিদে নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে।
পানি কম খাওয়া : শরীরের বিভিন্ন অঙ্গের কার্যকারিতা বাড়াতে পানি ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ। ত্বকের স্বাস্থ্যের জন্য পানি যেমন গুরুত্বপূর্ণ তেমনই হজম ক্ষমতা বাড়াতেও বেশি মাত্রায় জল খাওয়াতে হবে। শরীরে জলের ভারসাম্য ঠিক থাকলে খিদেও কম পায়।
সবচেয়ে আলোচিত চ্যাটবট চ্যাটজিটিপি (ঈযধঃএচঞ) শেষ পর্যন্ত হেরে গেল ভারতে। গত শনিবার গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়, ওপেনএআইয়ের তৈরি আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের (এআই) এই চ্যাটবটটি ভারতের ইউনিয়ন পাবলিক সার্ভিস কমিশন (ইউপিএসসি) পরিচালিত ভারতীয় সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে ব্যর্থ হয়েছে।
ভারতের কঠিনতম পরীক্ষাগুলোর মধ্যে একটি ইউপিএসসি। প্রতি বছর অসংখ্য মানুষ এই পরীক্ষায় বসেন। কৃতকার্যও হন। সম্প্রতি বেঙ্গালুরুভিত্তিক অ্যানালিটিকস ইন্ডিয়া ম্যাগাজিন নামে একটি সংস্থা চ্যাটজিপিটির সামনে হাজির করে ইন্ডিয়ান পাবলিক সার্ভিস কমিশনের পরীক্ষার সেট ‘এ’ প্রশ্নপত্র। যেখানে ভূগোল, অর্থনীতি, ইতিহাস, বাস্তুবিদ্যা, বিজ্ঞান, সাধারণ বিজ্ঞান এবং বর্তমান বিষয়গুলোর মতো বিষয়গুলো ওপরে ১০০টি প্রশ্ন করা হয়েছিল চ্যাটজিটিপিকে। ২০২২ সালের ইউপিএসসি প্রিলিমিনারির প্রশ্ন ছিল সেটি। তবে সেই পরীক্ষায় নাকি ডাহা ফেল করে বসেছে এই চ্যাটবটটি। অ্যানালিটিকস ইন্ডিয়ার প্রতিবেদন অনুসারে, ‘১০০টি প্রশ্নের মধ্যে শুধুমাত্র ৫৪টি প্রশ্নের উত্তর সঠিকভাবে দিয়েছে চ্যাটজিটিপি।’
যদিও ইউপিএসসি পরীক্ষার ফলাফলের বিষয়ে একপ্রকার নিশ্চিত ছিল চ্যাটজিপিটি। কিন্তু তার প্রতিফলন দেখা যায়নি উত্তরপত্রে। ভাষার মডেল হিসেবে তার কাছে ইউপিএসসি সম্পর্কে বিশাল জ্ঞানভা-ার থাকলেও ইউপিএসসি পাস করতে যে দক্ষতা ও কৌশলগত চিন্তাশক্তির দক্ষতা লাগে, তা নেই চ্যাটজিপিটির। বর্তমানের জনপ্রিয় এই চ্যাটবটটির জ্ঞান ২০২১-এর সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সীমাবদ্ধ। তাই তার পক্ষে বর্তমান সময়ের ঘটনাক্রম সংক্রান্ত প্রশ্নের সঠিক উত্তর দেওয়া সম্ভব হয়নি। যদিও চ্যাটজিটিপি সময় নির্দিষ্ট নয় এমন বিষয় যেমন অর্থনীতি ও ভূগোলের প্রশ্নের ক্ষেত্রেও ভুল উত্তর দিয়েছে। তবে ওপেনএআই-এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা স্যাম অল্টম্যানের মতে, ‘চ্যাটজিপিটি অবিশ্বাস্যভাবে সীমিত, কিন্তু কিছু কিছু বিষয়ে শ্রেষ্ঠত্বের একটি বিভ্রান্তিকর ছাপ তৈরি করতে পারদর্শী।’
চ্যাটজিপিটি আসন্ন শব্দ অনুক্রমের পূর্বাভাস দিয়ে মানুষের মতো লেখা তৈরি করার জন্য নকশা করা হয়েছে। নতুন এই চ্যাটবটটি ইন্টারনেট অনুসন্ধান করতে পারে না। এখানেই সে বেশিরভাগ চ্যাটবটের থেকে আলাদা। এর পরিবর্তে এটি তার অভ্যন্তরীণ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে শব্দের পূর্বাভাস ব্যবহার করে লেখা তৈরি করে। জানা গেছে, ইউপিএসসি পরীক্ষার আগে চ্যাটজিটিপি সিঙ্গাপুরে ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য পরিকল্পিত একটি পরীক্ষায় ভয়ংকরভাবে ব্যর্থ হয়েছে।
চিলির সামরিক শাসক আগুস্ত পিনোচে ক্ষমতা দখলের কয়েকদিন পর পাবলো নেরুদার মৃত্যু হয়। তার মৃত্যুর জন্য পিনোচেকে দায়ী করা হলেও প্রমাণ পাওয়া যায়নি। সম্প্রতি গবেষকরা নেরুদার দেহাবশেষের ফরেনসিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছেন। লিখেছেন তৃষা বড়ুয়া
স্বৈরশাসক পিনোচে
পাবলো নেরুদা। প্রথিতযশা কবি ও বামপন্থি রাজনীতিক। ১৯৭১ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পান। দুই বছর পর ১৯৭৩ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর চিলির রাজধানী সান্তিয়াগোর সান্তা মারিয়া ক্লিনিকে ৬৯ বছর বয়সে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। নেরুদা চার বছর ধরে প্রোস্টেট ক্যানসারে ভুগছিলেন। এ রোগ তার মৃত্যুর কারণ বলে সে সময় চিলির জান্তা সরকার দাবি করে। তাদের দাবি অবশ্য দেশটির জনগণ মেনে নেননি। নেরুদার বন্ধু ও রাজনৈতিক মিত্র চিলির সাবেক প্রেসিডেন্ট সালভাদর আয়েন্দের সমাজতান্ত্রিক সরকারকে জেনারেল আগুস্ত পিনোচের নেতৃত্বে সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে উৎখাত করার দুই সপ্তাহের ভেতর বিংশ শতাব্দীর অন্যতম সেরা এই কবির মৃত্যু ঘটে। যুক্তরাষ্ট্রের মদদে পিনোচের অনুগত সেনারা চিলির প্রেসিডেন্ট প্রাসাদে হানা দিলে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট আয়েন্দে নিজেকে গুলি করে হত্যা করেন। লাতিন আমেরিকার প্রথম মার্কসবাদী প্রেসিডেন্টের মৃত্যু নেরুদাকে মর্মাহত করে। তিনি বুঝতে পারেন, দেশে থাকলে তার একই পরিণতি হবে। তিনি মেক্সিকোতে পালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন এবং সেখান থেকে পিনোচে সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার পরিকল্পনা করেন। কিন্তু দেশত্যাগের ঠিক আগের দিন অসুস্থ নেরুদাকে অ্যাম্বুলেন্সে করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে তার আর বেঁচে ফেরা হয়নি। নেরুদার মৃত্যুর বহু বছর পর তার গাড়িচালক ও ব্যক্তিগত সহকারী ম্যানুয়েল আরায়া জানান, মারা যাওয়ার কয়েক ঘণ্টা আগে তাকে ডেকে নেরুদা উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছিলেন, তাকে পেটে একটি ইনজেকশন দেওয়া হয়েছে। ম্যানুয়েল আরায়ার বক্তব্য নিয়ে চিলিজুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি হয়। নেরুদাকে স্বৈরাচার পিনোচে হত্যা করেছে, এ অভিযোগ ফের ওঠে। পাবলো নেরুদার মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানতে তদন্ত শুরু করে চিলি সরকার। কবর খুঁড়ে নেরুদার দেহাবশেষ বিভিন্ন দেশে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়। একদল আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞ তার দেহাবশেষ পরীক্ষার পর গত মাসের মাঝামাঝি সময়ে ফরেনসিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেন। ১৪ ফেব্রুয়ারি নেরুদার ভাতিজা রোদোলফো রেয়েস স্প্যানিশ সংবাদ সংস্থা ইএফইকে জানান, ফরেনসিক পরীক্ষায় কবি নেরুদাকে বিষপ্রয়োগের আলামত পাওয়া গেছে। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংবাদ সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস রোদোলফোর বরাত দিয়ে জানায়, ডেনমার্ক ও কানাডার গবেষণাগারে ওই পরীক্ষা হয়। পরীক্ষায় নেরুদার দেহে অত্যধিক পরিমাণে ক্লোস্ট্রিডিয়াম বোটুলিনাম নামে ব্যাকটেরিয়া পাওয়া যায়। যেখানে অক্সিজেনের পরিমাণ কম থাকে, সেখানে ওই ব্যাকটেরিয়া মারাত্মক টক্সিন (বোটুলিনাম টক্সিন) উৎপাদন করে। এই শক্তিশালী টক্সিনের কারণে মানবদেহের নার্ভাস সিস্টেমে পক্ষাঘাত হতে পারে এবং মানুষকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিতে পারে। ১৬ ফেব্রুয়ারি ওই প্রতিবেদনের একটি সারাংশ নিউ ইয়র্ক টাইমসের হাতে আসে। তাতে স্পষ্ট উল্লেখ করা হয়, মৃত্যুর সময় নেরুদার দেহে ক্লোস্ট্রিডিয়াম বোটুলিনাম ব্যাকটেরিয়া ছিল। তবে বিশেষজ্ঞরা কয়েকটি বিষয়ে নিশ্চিত হতে পারেননি। দূষিত খাবার খাওয়ার কারণে কবির দেহে ব্যাকটেরিয়াটি প্রবেশ করেছিল নাকি তার দেহে সেটি ইনজেকশন করা হয়েছিল, তা নিয়ে তারা দ্বিধান্বিত। এছাড়া নেরুদার দেহে যে ব্যাকটেরিয়া পাওয়া গেছে, সেটি ক্লোস্ট্রিডিয়াম বোটুলিনাম ব্যাকটেরিয়ার টক্সিন ধরন ছিল কি না, তাও তারা নিশ্চিত নন। ১৯৭৩ সালে কবি ও রাজনীতিক নেরুদাকে হত্যা করা হয়েছিল নাকি প্রোস্টেট ক্যানসারে তার মৃত্যু হয়, কানাডা ও ডেনমার্কের গবেষণাগার থেকে প্রাপ্ত সাম্প্রতিক ফরেনসিক প্রতিবেদন সেই প্রশ্ন আবার সামনে নিয়ে এলো।
অবস্থানের পরিবর্তন
পাবলো নেরুদার দেহাবশেষের নমুনা বিশ্লেষণের জন্য চারটি দেশে পাঠানো হয়। ২০১৫ সালে চিলি সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়, কবির মৃত্যুর জন্য থার্ড পার্টি দায়ী থাকার সম্ভাবনা প্রবল। দুই বছর পর আন্তর্জাতিক বিজ্ঞানীদের একটি দল জানায়, তারা শতভাগ নিশ্চিত, প্রোস্টেট ক্যানসারে পাবলো নেরুদার মৃত্যু হয়নি। নতুন ফরেনসিক প্রতিবেদনের ভিত্তিতে গত মাসে তার ভাতিজা রোদোলফো সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘বিজ্ঞানীরা পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে আমার চাচার দেহে ক্লোস্ট্রিডিয়াম বোটুলিনামের উপস্থিতি পেয়েছেন। তার হাড়ে এই ব্যাকটেরিয়া ছিল না। এর অর্থ ১৯৭৩ সালে অভ্যুত্থানের ১২ দিনের মাথায় সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপে তাকে হত্যা করা হয়।’ ২০১৭ সালে পাবলো নেরুদার একটি দাঁতে প্রথম প্রাণঘাতী ক্লোস্ট্রিডিয়াম বোটুলিনাম ব্যাকটেরিয়া পান বিজ্ঞানীরা। চিলিয়ান বংশোদ্ভূত আমেরিকান লেখক ও ঔপন্যাসিক অ্যারিয়েল ডরফম্যান বলেন, ‘আমার দীর্ঘদিনের ধারণা ছিল, পাবলো নেরুদা প্রোস্টেট ক্যানসারে মারা গেছেন। নেরুদার স্ত্রী মাতিলদে উরুতিয়া আমাকে একবার বলেছিলেন, ক্যানসার তার স্বামীর মৃত্যুর জন্য দায়ী। অবশ্য তিনি এও বলেন, চিলিতে গণতন্ত্রের মৃত্যু তার প্রস্থানকে দ্রুত করে। জেনারেল আগুস্ত পিনোচের গোপন পুলিশের এজেন্ট নেরুদাকে হত্যা করেছে, এমন গুজব আমার কানে এলেও আমি বহুদিন তাতে কান দিইনি। কারণ সবসময় আমার মনে হয়েছিল, চিলির সামরিক শাসক জেনারেল পিনোচে চার বছর ধরে ক্যানসারে আক্রান্ত একজন মৃত্যুপথযাত্রীকে কেন হত্যা করতে যাবেন? এই ঘৃণ্য কাজ করে কেন তিনি দেশে ও দেশের বাইরে নিজের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ করবেন? কিন্তু ২০১১ সালে নেরুদার মৃত্যুকে ঘিরে আমার অবস্থান পরিবর্তিত হতে শুরু করে। এর কারণ তার গাড়িচালক ম্যানুয়েল আরায়া। ওই বছর আরায়া জানান, কবিকে বিষপ্রয়োগে হত্যা করা হয়েছে বলে নিশ্চিত তিনি। চিলির কমিউনিস্ট পার্টি যার সদস্য নেরুদা ছিলেন সেই পার্টি তদন্তের দাবি জানালে দুই বছর পর নেরুদার কবর খোঁড়া হয়। প্রথম প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রোস্টেট ক্যানসারেই কবির মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু ২০১৭ সালে একদল বিশেষজ্ঞ ওই প্রতিবেদনকে উড়িয়ে দেন। তারা জানান, ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ চিলির ওই কবির মৃত্যুর জন্য দায়ী। ছয় বছর পর আজ নেরুদার ভাতিজা রোদোলফো বলছেন, কানাডার ম্যাকমাস্টার বিশ্ববিদ্যালয় ও ডেনমার্কের কোপেনহেগেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষজ্ঞ প্যানেলের প্রতিবেদন তিনি পড়েছেন। তাতে বলা আছে, ক্লোস্ট্রিডিয়াম বোটুলিনাম ব্যাকটেরিয়ার ইনজেকশন নেরুদার মৃত্যুর কারণ হতে পারে। বিশেষজ্ঞদের প্রতিবেদন চিলির বিচারক পাওলা প্লাজা গনজালেজের কাছে পাঠানো হয়েছে। প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে তদন্ত করার নির্দেশ দেবেন তিনি। অপরাধীদের বিচারের কাঠগোড়ায় দাঁড় করানো হবে এমনটা মনে হয় না আমার। আমার ধারণা যদি সত্য হয়, তাহলে এটি চিলির জন্য অত্যন্ত লজ্জাজনক ঘটনা হবে। আগামী ২৩ সেপ্টেম্বর নেরুদার ৫০তম মৃত্যুবার্ষিকী। নেরুদার মৃত্যুর রাষ্ট্রীয় বয়ান অর্ধ শতাব্দী পর পাল্টে দিয়েছে সাম্প্রতিক প্রতিবেদন।’ নতুন প্রতিবেদন সম্পর্কে কানাডার ম্যাকমাস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক হেনড্রিক ও ডেবি পইনার বলেন, ‘নেরুদার ভেতরের দিকের একটি দাঁতে প্রাণঘাতী ব্যাকটেরিয়া আমরা পেয়েছি। নেরুদার মৃত্যুর সময় ওই ব্যাকটেরিয়া দাঁতের ওই অংশে ছিল। এটি সেখানে কীভাবে প্রবেশ করেছে, তা আমরা এখন পর্যন্ত জানি না। আমরা কেবল এতটুকুই জানি, ব্যাকটেরিয়াটি সেখানে থাকার কথা ছিল না।’
রহস্যের জট
সামরিক শাসক পিনোচে ১৭ বছর লাতিন আমেরিকার দেশ চিলির ক্ষমতা আঁকড়ে ছিলেন। তার সময়ে তিন হাজারের বেশি বামপন্থি কর্মী ও বিরোধীদের হত্যা করা হয়। ২০০৬ সালে ৯১ বছর বয়সে এই স্বৈরাচারের মৃত্যু হয়। হত্যাসহ অন্যান্য অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের জন্য তাকে কখনো শাস্তি পেতে হয়নি। নেরুদার দাঁতে সম্প্রতি বিজ্ঞানীরা যে ব্যাকটেরিয়া পেয়েছেন, ঠিক একই ব্যাকটেরিয়া দেহে প্রবেশ করিয়ে পিনোচের আমলে ১৯৮১ সালে চিলির রাজনৈতিক বন্দিদের হত্যা করা হয়। এ কারণে আলোচিত কবি নেরুদার মৃত্যুর প্রকৃত কারণ নিয়ে চাপে আছে চিলি সরকার। আন্তর্জাতিক বিজ্ঞানীদের মধ্যে এখন পর্যন্ত অবশ্য কেউ নিশ্চিত করে বলতে পারছেন না, নেরুদাকেও চিলির বামপন্থি কর্মীদের মতো বিষপ্রয়োগে হত্যা করা হয়েছিল। বোটুলিজম (ক্লোস্ট্রিডিয়াম বোটুলিনাম ব্যাকটেরিয়া থেকে সৃষ্ট প্রাণঘাতী রোগ) বিশেষজ্ঞ জন অস্টিন বলেন, ‘কানাডা ও ডেনমার্কের বিজ্ঞানীদের সিদ্ধান্ত বিশ্বাসযোগ্য মনে হচ্ছে। তাদের ডিএনএ সিকোয়েন্সিং সঠিক।’ তবে অস্টিনসহ নেরুদার দেহাবশেষ নিয়ে গবেষণা পরিচালনা করা বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, ওই ব্যাকটেরিয়া নেরুদার দাঁতে কীভাবে প্রবেশ করেছিল সেটি যেমন তাদের গবেষণার মাধ্যমে জানা যাচ্ছে না, ঠিক তেমনি বোটুলিজমের কারণে তার মৃত্যু ঘটে, তা জোর গলায় বলা সম্ভব হচ্ছে না। অস্টিন বলেন, ‘ক্লোস্ট্রিডিয়াম বোটুলিনাম ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতি মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর নয়। ক্ষতিকর তখনই যখন ওই ব্যাকটেরিয়া বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে টক্সিন উৎপাদিত হয়। যখন একজন ব্যক্তির মৃত্যু হয়, তখন তার দেহে ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যা বৃদ্ধি পায় পচন প্রক্রিয়ার জন্য। হতে পারে, নেরুদার মুখে অল্প সংখ্যক ক্লোস্ট্রিডিয়াম বোটুলিনাম ব্যাকটেরিয়া আগে থেকে ছিল, যেগুলো ক্ষতিকর নয়। তার মৃত্যুর পর সেসব ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধি ঘটে।’ গবেষকরা বলেন, ‘রহস্যের জট খোলার একটা উপায় হতে পারে, নেরুদার দাঁতে পাওয়া ক্লোস্ট্রিডিয়াম বোটুলিনাম ব্যাকটেরিয়ার ধরনের সঙ্গে ১৯৮১ সালে চিলির রাজনৈতিক বন্দিদের দেহাবশেষের ব্যাকটেরিয়ার ধরনের তুলনা করা। তাহলে নিশ্চিত হওয়া যেতে পারে, নেরুদার মৃত্যু বিষপ্রয়োগে হয়েছিল কি না। তবে ওই রাজনৈতিক বন্দিদের দেহাবশেষ পাওয়া যাবে কি না, আমরা তা জানি না। যদি পাওয়া যায়, আমরা এ নিয়ে আরও পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালিয়ে যেতে চাই।’
সাম্প্রতিক ফরেনসিক প্রতিবেদন নিয়ে বিশেষজ্ঞদের কাছে এখনো অনেক কিছু অস্পষ্ট। বোটুলিজম বিশেষজ্ঞ অস্টিন বলেন, ‘নেরুদার মুখে ক্লোস্ট্রিডিয়াম বোটুলিনাম ব্যাকটেরিয়া পাওয়া গেলেও এর অর্থ এই নয়, তাকে ওই ব্যাকটেরিয়ার মাধ্যমে হত্যা করা হয়েছিল। কাউকে বোটুলিনাম টক্সিন ইনজেকশনের মাধ্যমে হত্যা করা হলে তার দাঁতে ক্লোস্ট্রিডিয়াম বোটুলিনামের ডিএনএ উপস্থিত থাকবেই, এমন কোনো কথা নেই।’ আরেক বোটুলিজম বিশেষজ্ঞ ফ্যাব্রিজিও অ্যানিবালি বলেন, ‘ফরেনসিক প্রতিবেদনের যতটুকু এখন পর্যন্ত জনসম্মুখে প্রকাশ করা হয়েছে, তাতে আমার মনে হয় না, পাবলো নেরুদা ব্যাকটেরিয়ার কারণে মারা গেছেন। আমি জেনেছি, হাসপাতালে থাকার সময় তাকে পেটে একটি ইনজেকশন দেওয়া হয় এবং এর ঠিক ছয় ঘণ্টা পর তার মৃত্যু হয়। ক্লোস্ট্রিডিয়াম বোটুলিনাম ব্যাকটেরিয়া প্রাণ সংহারক রূপ নিতে এত অল্প সময় নেয় না, ছয় ঘণ্টা সময় তো খুবই কম। মৃত্যুর আগে নেরুদার শরীরে কী কী উপসর্গ দেখা গিয়েছিল, তা জানলে হয়তো তার মৃত্যুতে ব্যাকটেরিয়াটির ভূমিকা সম্পর্কে জানা যাবে।’ এ বিষয়ে গবেষক ডেবি পইনার বলেন, ‘মৃত্যুর ঠিক আগে কবির শারীরিক অবস্থা সম্পর্কিত সঠিক তথ্য জানা কঠিন। চিলিতে যারা নেরুদার মৃত্যু নিয়ে কাজ করছেন, তারা হয়তো এ বিষয়ে আলোকপাত করতে পারেন।’
রাজধানীর সরকারি কবি নজরুল সরকারি কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি এম ওয়াসিম রানার (৩০) লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। তিনি গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন বলে জানিয়েছেন তার বন্ধুরা। শুক্রবার (০২ জুন) রাত সাড়ে ১২টার দিকে চানখারপুলের একটি বাসায় তার বন্ধুরা তাকে দরজা ভেঙে ঝুলন্ত অবস্থায় উদ্ধার করে।
অচেতন অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। ঢামেক হাসপাতাল পুলিশ ফাড়ির ইনচার্জ পরিদর্শক মো. বাচ্চু মিয়া মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
রানার বন্ধু ইমরান হোসেন বাবু জানান, 'রানা কলেজের ইসলামের ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী ছিলেন। তার গ্রামের বাড়ি বাগেরহাট জেলার চিতলমারী উপজেলায়। কয়েক দিন যাবৎ রানার খু্ব মন খারাপ ছিল। একাকী থাকতে চাইত। চুপচাপ থাকত। তবে কী চিন্তা করত সে ব্যাপারে কিছু বলত না। তাই আমি তাকে বলেছিলাম- বন্ধু, তুমি কিছুদিনের জন্য কক্সবাজার ঘুরে আস।'
ঘটনার পরপরই রানার স্ত্রী পরিচয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গের সামনে রাত দেড়টার সময় সানজিদা নামে এক মেয়েকে আহাজারি করতে দেখা যায়। সানজিদা আক্তার (জান্নাতি) কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সাবেক কমিটির ছাত্রী বিষয়ক সম্পাদক ছিলেন।
সানজিদা আক্তারের প্রতিবেশী মাইদুল ইসলাম জানান, 'সানজিদা আপুকে আমরা জান্নাতি আপু বলে ডাকি। রানা ভাইয়ের সঙ্গে তার বিয়ে হয়েছে অনেকদিন আগে। রাজনৈতিক কারণে বিষয়টি জানাজানি হয়নি। জান্নাতি আপু ডেমরা রূপগঞ্জের তারাবো এলাকায় একটি বাসায় থাকতেন।'
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সাবেক এক সহসভাপতি বলেন, 'আমরা জানতাম, সানজিদার সঙ্গে প্রেম ছিল। বিয়ে হয়েছিল কি-না তা সঠিক জানি না।' মৃত্যুর কারণ যা-ই হোক, সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে আসল রহস্য উন্মোচন করে বিচারের দাবি জানান তিনি।
রানার মৃত্যুর খবরে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটিসহ বিভিন্ন ইউনিটের নেতাকর্মীরা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ছুটে আসেন এবং তারা শোক জানান। আজ (০৩ জুন) শনিবার সকাল সাড়ে ৮টায় কবি নজরুল সরকারি কলেজ মাঠে তার জানাজা অনুষ্ঠিত হবে।
টেস্ট ক্রিকেটে সিলেটের পথচলা শুরু হয়েছিল ২০১৮ সালে। অভিজাত সংস্করণে যা ছিল দেশের অষ্টম ভেন্যু। জিম্বাবুয়ের সঙ্গে ম্যাচ দিয়ে সাদা পোশাকের ক্রিকেটে পা রাখে দেশের সবচেয়ে সুন্দর এই স্টেডিয়ামটি। তবে মাঠের অভিষেক ম্যাচেই হেরে যায় বাংলাদেশ। তারপর আর কোনো পাঁচ দিনের খেলা গড়ায়নি এই মাঠে। এ নিয়ে স্থানীয়দের আক্ষেপের শেষ নেই।
অবশেষে অপেক্ষার প্রহর ফুরাচ্ছে। পাঁচ বছর পর আবারও টেস্ট ক্রিকেট অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের পরিচালক ও সিলেট বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল।
ক্রিকবাজের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেছেন, ‘আগামী নভেম্বর-ডিসেম্বরে আমরা নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে দুই ম্যাচের সিরিজের প্রথম টেস্ট আয়োজন করতে পারব বলে আশা করছি। এটি আমাদের জন্য খুব একটি উপলক্ষ হবে। কারণ পাঁচ বছর পর সিলেটের মাঠে টেস্ট ক্রিকেট ফিরবে।’
সম্প্রতি নিউজিল্যান্ড ক্রিকেটের প্রতিনিধি দল সিলেট সফর করেছে। তারা সেখানকার মাঠসহ সব সুযোগ সুবিধা পরিদর্শন করেছেন। পাশাপাশি নিরাপত্তার বিষয়ে স্থানীয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারি বাহিনীর সঙ্গেও বৈঠক করেছেন। সবকিছু দেখে তারা এখানে আরও বেশি ম্যাচ আয়োজনের জন্য উন্মুখ বলে জানিয়েছেন বিসিবির নারী উইংয়ের চেয়ারম্যান নাদেল।
তিনি যোগ করেছেন, ‘নিউজিল্যান্ড ক্রিকেটের প্রতিনিধি দল আমাদের সুযোগ-সুবিধা নিয়ে বেশ মুগ্ধ। তাদের প্রতিক্রিয়া দেখে মনে হয়েছে আমরা তাদের সব প্রত্যাশা ও প্রয়োজনীয়তা পূরণ করতে পারব।’
এফটিপি সূচি অনুযায়ী চলতি বছর বাংলাদেশের বিপক্ষে তিন ওয়ানডে ও দুই টেস্ট ম্যাচের সিরিজে খেলার কথা নিউজিল্যান্ডের। তবে সিরিজটি হবে দুই ভাগে। প্রথম ভাগে সেপ্টেম্বরের শেষভাগে বাংলাদেশের সঙ্গে ওয়ানডে খেলবে কিউইরা। এই সিরিজ খেলেই বিশ্বকাপ খেলতে ভারতে যাবে দুই দল।
বিশ্বকাপের পর হবে দুই দলের টেস্ট সিরিজ। নভেম্বরের শেষ দিকে আবারও বাংলাদেশে আসবে কিউইরা। বিসিবি প্রস্তাবিত সূচি অনুযায়ী ২১ নভেম্বর ঢাকায় পা রাখার কথা সফরকারীদের। এরপর একটি প্রস্তুতি ম্যাচও খেলবে দলটি। ২৮ নভেম্বর থেকে ২ ডিসেম্বর হবে বাংলাদেশ ও নিউজিল্যান্ডের মধ্যকার সিরিজের প্রথম টেস্ট।
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ৩০০ আসনের সীমানা নির্ধারণ করে চূড়ান্ত গেজেট প্রকাশ করেছে নির্বাচন কমিশন। প্রকাশিত গেজেটে কয়েকটি আসনে পরিবর্তন এসেছে।
গত বৃহস্পতিবার ইসি সচিব মো. জাহাংগীর আলম স্বাক্ষরিত এ সংক্রান্ত গেজেট শনিবার (৩ জুন)বিজি প্রেসের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, নির্বাচন কমিশন কর্তৃক জাতীয় সংসদের নির্বাচনী এলাকার সীমানা নির্ধারণ আইন, ২০২১-এর ধারা ৬-এর উপধারা (৩)-এর অধীনে সংসদের পুনর্নির্ধারিত নির্বাচনী এলাকার প্রাথমিক তালিকা গত ২৬ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ গেজেটের অতিরিক্ত সংখ্যায় প্রকাশিত হয় এবং ওই বিজ্ঞপ্তির অনুচ্ছেদ ৩-এর অধীন পুনর্নির্ধারিত নির্বাচনী এলাকার বিষয়ে দাবি/আপত্তি/সুপারিশ/মতামত আহ্বান করা হয়।
আরও বলা হয়, পরে নির্ধারিত সময়সূচি মোতাবেক প্রাপ্ত দাবি/আপত্তি/সুপারিশ/মতামতের ওপর কমিশন কর্তৃক প্রকাশ্য শুনানি গ্রহণ করা হয়। নির্বাচন কমিশন উক্ত আইনের ধারা ৬-এর উপধারা (৪) অনুযায়ী দাবি/আপত্তি/সুপারিশ/মতামত পর্যালোচনা করে প্রাথমিক তালিকায় প্রকাশিত নির্বাচনী এলাকার প্রয়োজনীয় সংশোধন করে সংযুক্ত তপশিল মোতাবেক জাতীয় সংসদের ৩০০ আসনের পুনর্নির্ধারিত সীমানার চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করল।
চারপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে চাপ চাপ রক্ত, ছেঁড়া জামাকাপড়, খাবার, ব্যাগপত্র, রক্তমাখা দেহ। এসবের মাঝেই ভাঙা লাইনের উপর পাওয়া গেলো ছোপ ছোপ রক্তমাখা একটি কবিতার খাতা।
খাতায় লেখা বিভিন্ন রকমের ভালোবাসার কবিতা, মাঝে মাঝে আবার নকশাও আঁকা। হাতে নিয়ে পাতা উল্টাতেই চোখে পড়ল,
‘‘অল্প অল্প মেঘ থেকে হালকা হালকা বৃষ্টি হয়, ছোট্ট ছোট্ট গল্প থেকে ভালোবাসা সৃষ্টি হয়....’’
পাতা উল্টাতেই চোখে পড়ল আরও একটি কবিতা। তার শুরুতে লেখা,
‘ভালোবাসা এই মন তোকে চায় সারাক্ষণ,
আছিস তুই মনের মাঝে
পাশে থাকিস সকাল সাঁঝে।
কী করে তোকে ভুলবে এই মন,
তুই যে আমার জীবন...’
কবিতাটি লেখক কে, কার জন্য এই কবিতা লিখা, তা জানার উপায় নেই। সম্ভবত, কবিতার খাতার মালিক দুর্ঘটনাগ্রস্ত ট্রেনটিতেই ছিলেন। দুর্ঘটনার ভয়াবহতা এতটাই বেশি ছিল যে, সেই কবিতার খাতা ছিটকে এসে পড়েছে ভাঙা লাইনে।
কবিতার খাতার মালিক সুস্থ, আহত না মৃত, তাও জানা সম্ভব হয়নি। যিনি লিখেছেন, তিনি পুরুষ না মহিলা তা-ও জানা সম্ভব হয়নি। তবে লেখা পড়ে বোঝা যায়, কবিতাটি প্রিয় কারও উদ্দেশে লেখা। যাঁর উদ্দেশে এই কবিতা লেখা, এই কবিতার খাতা কি তাঁর কাছেও কোনও দিন পৌঁছাবে! তাও জানার উপায় নেই।
ভারতের ওড়িশার বালেশ্বরে ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনাস্থলে এই কবিতার খাতা হাতে পায় আনন্দবাজারের প্রতিনিধি। এভাবেই এক প্রতিবেদনে বর্ণনা তুলে ধরে ভারতীয় গণমাধ্যম আনন্দবাজার।
ভারতীয় গণমাধ্যম এনডিটিভির তথ্যমতে, শনিবার ভোর পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা ২৩৩। আহত ৯০০ জনের বেশি। ভেতরে এখনও আটকে আছে অনেক মানুষ।
প্রথম দুই সেটই গড়িয়েছে টাইব্রেকারে। প্রথমটি নিষ্পত্তি হয়েছে ৮৫ মিনিটে। দ্বিতীয়টিও টাইব্রেকারে। সেটির নিষ্পত্তি ঘণ্টার ওপরে। দুটোতেই জয় নোভাক জকোভিচের। তারপরেরটিও জিতে যান এই সার্বিয়ান। ১৪তম ফ্রেঞ্চ ওপেনের খেলায় স্পেনের আলেজান্দ্রো ফোকিনার সঙ্গে ৩-০ সেটে জয়লাভ করেন তিনি। যে জয়ে মধুর প্রতিশোধ নিয়ে শেষ ষোলো নিশ্চিত করেছেন তিনি।
৩৬ বছর বয়সী এই নাম্বার ওয়ান টেনিস তারকা প্রথম সেটে কিছুটা ছন্দহীন ছিলেন। তবে চ্যাম্পিয়নদের ঘুরে দাঁড়াতে তো সময় বেশি লাগে না। জকোভিচও ঘুরে দাঁড়িয়েছেন। তারপর ফোকিনাকে কোনো সেট জিততে না দিয়েই ম্যাচ শেষ করেন তিনি।
প্রায় ৪ ঘণ্টাব্যাপী চলা এই ম্যাচটিতে এক পেশে জয় হলেও প্রতিটি সেটেই উত্তেজনার পারদ ছড়িয়েছেন দুজন। সমর্থকেরাও বারবার হয়েছেন রোমাঞ্চিত। তবে শেষ পর্যন্ত নোভাক জকোভিচের সমর্থকেরাই হাসি নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন। আগামী সোমবার জকোভিচ শেষ ষোলোর ম্যাচ খেলতে নামবেন। সেখানে প্রতিপক্ষ হিসেবে কার্লোস আলকারাজকে পেতে পারেন তিনি।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতিতে জোর করে হারানো হয়েছে।
গতকাল রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
এই নিয়ে ঘনিষ্ঠ অনেকের কাছে জানতে চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। ভিন্ন কোনো জটিলতার সৃষ্টি হলে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে গাজীপুরের যেকোনো আসন থেকে মনোনয়ন পাবেন তিনি। সে ক্ষেত্রে গাজীপুর সিটির ভোটে যে সংসদ সদস্য দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে কাজ করার তথ্য মিলবে তাকেই বাদ দেওয়া হবে। এ সিটি ভোটে হারের কারণ জানতে প্রধানমন্ত্রী নিজস্ব একটি সংস্থাকে নির্ভুল তথ্য দিতে নির্দেশ দিয়েছেন।
নির্বাচনকালীন সরকারে মন্ত্রীর দায়িত্বও পেতে পারেন আজমত, ওই সূত্র দাবি করে। সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
নানা অব্যবস্থাপনায় এগোচ্ছে না প্রাথমিক শিক্ষা। প্রায় শতভাগ শিশু ভর্তির আওতায় এসেছে অনেক আগে। এরপর মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতের কাজ অনেকটাই আটকে আছে। খোদ সরকারি সংস্থার গবেষণায় উঠে এসেছে প্রাথমিকে চরম দুরবস্থার কথা। গবেষয়ণা প্রতিবেদন অনুযায়ী, কাক্সিক্ষত মানের চেয়ে শিশুরা অনেক পিছিয়ে আছে। কিছু শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু কাজ করার চেষ্টা করলেও কথায় কথায় তাদের ওপর নেমে আসছে শাস্তির খড়গ। মানের উন্নয়ন না হলেও ঠিকই অধিদপ্তরে বসে ছড়ি ঘোরাচ্ছেন কর্মকর্তারা।
প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের শিখন ঘাটতি নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহায়তায় সম্প্রতি এই গবেষণা করেছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। সেখানে দেখা যায়, করোনা সংক্রমণের আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা গড়ে ইংরেজি বিষয়ে যতটা শিখত, করোনাকালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের ফলে তা সাড়ে ১২ শতাংশ কমে গেছে। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের হার কমেছে প্রায় সাড়ে ১৬ শতাংশ। আর তৃতীয় শ্রেণির বাংলায় কমেছে ১৫ শতাংশের মতো।
গবেষণার তথ্য বলছে, করোনার আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ইংরেজিতে শিখন অর্জনের গড় হার ছিল প্রায় ৪৯ শতাংশ। করোনাকালে বন্ধের প্রভাবে এই হার কমে দাঁড়িয়েছে ৩৬ শতাংশ। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ^পরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের গড় হার ৫১ শতাংশের বেশি, যা আগে ছিল ৬৮ শতাংশের মতো। পঞ্চম শ্রেণির বাংলা, গণিত ও বিজ্ঞানেও ক্ষতি বেড়েছে।
এনসিটিবির সদস্য (প্রাথমিক শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক ড. এ কে এম রিয়াজুল হাসান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রাথমিক শিক্ষার ঘাটতি পূরণে এ ধরনের গবেষণার দরকার ছিল। আন্তর্জাতিক মানদ- বজায় রেখেই তা করা হয়েছে। আমরা এই গবেষণা প্রতিবেদন দু-এক দিনের মধ্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠাব। আমরা অন্তত এক বছরের জন্য রেমিডিয়াল ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেছি। মন্ত্রণালয় সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ নিচ্ছে।’
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, প্রাথমিক শিক্ষা দিন দিন পিছিয়ে পড়লেও সেদিকে তেমন একটা নজর নেই প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের। তারা ব্যস্ত আছে লাখ লাখ শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের বদলি-পদায়ন নিয়ে। কেউ কথা বললেই তার ওপর নেমে আসছে শাস্তি। ফলে শিক্ষকরাও দিন দিন তাদের আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন; কোনো রকমে দিন পার করছেন।
জানা যায়, প্রাথমিক শিক্ষায় উদ্ভাবনী ও অনন্য অবদানের জন্য ২০১৯ সালে সারা দেশের মধ্যে শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষক নির্বাচিত হন রাজবাড়ী জেলার স্বাবলম্বী ইসলামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. শফিকুল ইসলাম। একই বছর রাজধানীর মোহাম্মদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক খায়রুন নাহার লিপি শ্রেষ্ঠ সহকারী শিক্ষিক নির্বাচিত হন। সাধারণত আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী এসব শিক্ষকের হাতে পদক তুলে দেন। শিক্ষকদের পাশাপাশি সেরা শিক্ষার্থীদের পদক দেওয়া হয় একই অনুষ্ঠানে। কিন্তু করোনাকালে তাদের হাতে জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষক পদক তুলে দেওয়া যায়নি। গত ১২ মার্চ রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে তাদের হাতে এ পদক তুলে দেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন। তাই অনুষ্ঠানের কয়েক দিন আগে স্বাভাবিকভাবে তারা দাবি তুলেছিলেন, দেরি হলেও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে তারা পদক নেবেন; যা তাদের সারা জীবনের স্বপ্ন পূরণ করবে। কিন্তু সেটা না হওয়ায় তারা প্রতিমন্ত্রীর হাত থেকে ঠিকই পদক নেন। তবে এর ৬৮ দিনের মাথায় এই শ্রেষ্ঠ শিক্ষকদের প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবি তোলায় চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। একই ঘটনায় জয়পুরহাটের হিন্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. মাহবুবুর রহমানকেও সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। কারণ তার বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী এ পদক নিতে ১১ মার্চ ঢাকা এসেছিল। ওই শিক্ষকও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবিকে সমর্থন করেছিলেন। সাময়িক বরখাস্ত করা হলেও তাদের কাউকে শোকজ করা হয়নি; যা বিধিবহির্ভূত বলছেন শিক্ষকরা।
জানতে চাইলে ঢাকা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. আবদুল আজিজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সাময়িক বরখাস্তের পরবর্তী যে প্রক্রিয়া আছে, সেদিকেই আমরা যাব।’ এর বেশি কিছু তিনি বলতে রাজি হননি। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াতের সঙ্গে এসব ব্যাপারে কথা বলার জন্য গতকাল একাধিকবার চেষ্টা করলেও তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি।
বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক শিক্ষা গবেষণা পরিষদের সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে পদক নেওয়া একজন শিক্ষকের জীবনে সেরা প্রাপ্তি। এ জন্য শিক্ষকদের দাবি থাকতেই পারে, প্রত্যাশা থাকতেই পারে। তবে সবচেয়ে বড় কথা হলো, আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে কাউকে শাস্তি দেওয়া যায় না। শিক্ষকদের যেভাবে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে, তা মোটেও ঠিক হয়নি বলে আমার মনে হয়। এর প্রভাব অন্যান্য শিক্ষকের মধ্যেও পড়বে, এটাই স্বাভাবিক।’
শুধু তা-ই নয়, করোনাকালে বন্ধ থাকা প্রাথমিক শিক্ষা চালু রাখতে কিছু শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু অনলাইন প্ল্যাটফর্ম চালু করেন; যাতে অনলাইন ক্লাস, শিক্ষকদের মধ্যে আলোচনাসহ নানা কাজ করা হয়। এতে প্রতিটি ফেসবুক গ্রুপে লাখ থেকে হাজারো শিক্ষক যুক্ত হয়েছেন। এখনো সেসব গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে। কিন্তু সেই গ্রুপগুলোকেই এখন শায়েস্তা করার হাতিয়ার হিসেবে বেছে নিয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অপব্যবহারের অজুহাত দেখিয়ে অনলাইনে যুক্ত থাকা অনেক শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাকেই দেওয়া হচ্ছে কারণ দর্শানো নোটিস (শোকজ)। সরকার যেখানে শিক্ষকদের ডিজিটালি আপডেট হওয়ার কথা বলছে, সেখানে প্রায় অনেকটাই উল্টো পথে হাঁটছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।
শিক্ষকরা জানান, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে দীর্ঘদিন ধরে আসন গেড়ে বসেছেন কিছু কর্মকর্তা। অনেকেই ৬ থেকে ১২ বছর ধরে একই দপ্তরে চাকরি করছেন। তাদের যে দায়িত্বই থাক না কেন যত লাভজনক কাজ আছে, সেগুলোতেই তারা হাত দিচ্ছেন। যোগ্য কর্মকর্তাকে অধিদপ্তরে আনলে তাদের সরে যেতে হবে, এ জন্য তারা নানাভাবে ঊর্ধ্বতনদের ভুল বুঝিয়ে মাঠপর্যায়ে শাস্তি দিয়ে সবাইকে ভীত করে তুলছেন। এতে পিছিয়ে পড়ছে প্রাথমিক শিক্ষার মান।
প্রায় দুই বছর বন্ধ থাকার পর গত মার্চ-এপ্রিলে অনলাইনে প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলি করা হয়। যদিও নিয়ম ছিল, অনলাইনে নির্দিষ্ট মানদন্ড পূরণ ছাড়া কেউ বদলি হতে পারবেন না। কিন্তু তা মানেনি প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। ঢাকা ও ঢাকার বাইরে নিয়ম ভেঙে কয়েক শো শিক্ষকের বদলির আদেশ জারি করা হয়। আর এই বদলি-পদায়নে বড় অঙ্কের অর্থ লেনদেন হয়েছে বলে দাবি শিক্ষকদের; যা ভাগ-বাটোয়ারা হয়েছে মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের মধ্যে। আবার অনেক জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও থানা শিক্ষা কর্মকর্তাদের বদলিতেও সমন্বয়হীনতা দেখা দিচ্ছে। কাউকে ক্ষোভের বশবর্তী হয়েও অনেক দূরে বদলি করে দেওয়া হচ্ছে। এতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়ন।
জানা যায়, চলতি বছর থেকে প্রথম শ্রেণিতে চালু হয়েছে নতুন শিক্ষাক্রম। আর আগামী বছর থেকে দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণিতে এবং ২০২৫ সাল থেকে চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম চালু হবে। কিন্তু তা পড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নেই অধিদপ্তরের। শিক্ষকদের নামমাত্র প্রশিক্ষণেই দায়িত্ব শেষ করা হয়েছে। আসলে এই শিক্ষাক্রম শিক্ষার্থীরা কতটুকু আত্মস্থ করতে পারছে বা এ জন্য আর কী করা প্রয়োজন, সে ব্যাপারে তেমন নজর নেই।
এ ছাড়া এখনো প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষকরা বেতন পান ১১তম গ্রেডে ও সহকারী শিক্ষকরা পান ১৩তম গ্রেডে। দুই ধরনের প্রায় চার লাখ শিক্ষকই ১০ম গ্রেডে বেতনের দাবি করে আসছেন। এ ছাড়া সহকারী থানা শিক্ষা অফিসার ও সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসারাও দীর্ঘদিন ধরে নবম গ্রেডের দাবি করছেন। আর মাঠে কাজ করা এসব শিক্ষক ও কর্মকর্তার পদোন্নতিও নেই বললেই চলে। কিন্তু এগুলো সমাধানেও তেমন কোনো উদ্যোগ নেই মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের; যা প্রাথমিকের মান উন্নীতের ক্ষেত্রে বড় অন্তরায় বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
প্রবীণ শিক্ষক নেতা মো. সিদ্দিকুর রহমান আরও বলেন, ‘এখনো মফস্বলে বা দুর্গম অঞ্চলের অনেক স্কুলেই এক-দুজন শিক্ষক। অনেক স্কুলে শিক্ষকের পদ তিন-চার বছর ধরে শূন্য। শিক্ষক না থাকলে এর প্রভাব শিক্ষার্থীদের ওপরও পড়ে। এ ছাড়া সরকারি প্রাথমিকে সাধারণত দরিদ্র পরিবারের শিক্ষার্থীরা আসে। তাদের একটু আলাদা যতœ নেওয়া প্রয়োজন। সেগুলোও হচ্ছে না। শিক্ষকরাও তাদের বেতন-ভাতায় সন্তুষ্ট নন। সব মিলিয়ে আমরা প্রাথমিক শিক্ষায় কাক্সিক্ষত মান অর্জন করতে পারছি না।’
ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে গাজীপুর সিটি নির্বাচনে হেরে যাওয়া প্রার্থী আজমত উল্লা খানকে।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে থাইল্যান্ডের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতি জোর করে হারানো হয়েছে।
গত রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন তেমনি যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
দুই দশকেরও বেশি ক্যারিয়ারে অসংখ্য নাটক-টেলিছবি নির্মাণ করেছেন শিহাব শাহীন, উপহার দিয়েছেন হিট প্রোডাকশন। নিজেকে শুধু রোমান্টিক জনরায় আটকে না রেখে কাজ করেছেন বহুমাত্রিক ঘরানায়। নিজেকে প্রমাণ করেছেন সব্যসাচী নির্মাতা হিসেবে। নিজেকে শুধু টেলিভিশনেই আটকে রাখেননি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তিনিও পাল্টেছেন প্লাটফর্ম এবং সেখানেও দেখিয়েছেন নিজের মুন্সিয়ানা।
সর্বশেষ গেল ঈদে তুমুল সাড়া ফেলেছে তার নির্মিত স্পিন অফ সিরিজ ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’। সাফল্যের পর কিছুদিন আগেই অনুষ্ঠিত হয়ে গেল এর সাকসেস পার্টি যেখানে উপস্থিত ছিলেন টিমের কলাকুশলী থেকে শুরু করে অন্যান্য নির্মাতা ও শিল্পীরা। সেই ধারাবাহিকতায় এবার তিনি নিয়ে আসছেন সিরিজটির সিক্যুয়াল। শুধু তাই নয়, একসঙ্গে একাধিক সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে আসছেন জনপ্রিয় নির্মাতা।
শিহাব শাহীন বলেন, ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’ নিয়ে এতটা প্রত্যাশা ছিল না কিন্তু সে সাড়া পেয়েছি তা প্রত্যাশার চেয়েও বেশি। দর্শকরাই কাজটিকে গ্রহণ করেছেন আর তাই এখন এর সিক্যুয়াল নিয়ে আসার পরিকল্পনা করছি। স্পিন অফে দেখিয়েছি অ্যালেন স্বপনের পেছনের গল্প। সিন্ডিকেটে তাকে আমরা দেখিয়েছিলাম ২০২২ সালে, সে ঢাকায় আসার পর এর মাঝের সময়টার গল্পই থাকবে সিক্যুয়ালে। যেটার সংযোগ থাকতে পারে ‘সিন্ডিকেট ২’-তে। ঈদের পরপর এটার শুট করার সম্ভাবনা রয়েছে।
এই সিক্যুয়াল ছাড়াও আরও বেশ কিছু সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে সবকিছু চূড়ান্ত হয়েছে বলেও জানান এ নির্মাতা। তিনি বলেন, মোস্তফা সরয়ার ফারুকির তত্ত্বাবধানে ওটিটি প্লাটফর্ম চরকির ‘মিনিস্ট্রি অফ লাভ’ সিরিজের একটা কনটেন্ট করবো। এখনও কাস্টিং চূড়ান্ত হয়নি। এছাড়া হইচইয়ের একটি সিরিজ ও বিঞ্জের একটি ফিল্ম করা হবে। নাম চূড়ান্ত হয়নি। তবে দুটোতেই জিয়াউল ফারুক অপূর্ব থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
মাঝে শোনা গিয়েছিল, আফরান নিশোকে নিয়ে ‘সিন্ডিকেট ২’ নাকি হবে না, এটা কতটুকু সত্য? এমন প্রশ্নে শিহাব শাহীন বলেন, এটা ভূয়া তথ্য। ডিসেম্বরের শেষ দিকে ‘সিন্ডিকেট ২’ করবো তার আগে সেপ্টেম্বরে শুরু করবো ‘রসু খাঁ’।
জানা গেছে, আগামী সপ্তাহে অস্ট্রেলিয়া পাড়ি জমাচ্ছেন শিহাব শাহীন। দেশে ফিরবেন মাসের শেষ নাগাদ এরপর কাজে নামবেন।
নতুন অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে ১৩ ধরনের জ্বালানি তেল ও পেট্রোলিয়াম পণ্যের ওপর থেকে বিদ্যমান ৫ শতাংশ আগাম কর প্রত্যাহারের পরিকল্পনা করেছে সরকার। অন্যদিকে উৎপাদন পর্যায়ে তরল করা পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) ভ্যাট ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে সাড়ে ৭ শতাংশ করা হয়েছে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে পেট্রোল, অকটেন ও ডিজেল আমদানিতে প্রতি লিটারে ১৩ দশমিক ৭৫ টাকা করে শুল্ক আরোপ করার প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এ ছাড়া অন্যান্য জ্বালানি জেট ফুয়েল, ফার্নেস অয়েল, লুব বেইজ অয়েল, কেরোসিনের ক্ষেত্রে প্রতি টনে ২৫ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। এত দিন এসব জ্বালানি তেল আমদানির ক্ষেত্রে ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ ছিল।
আমদানি করা পণ্যের যথাযথ মূল্য নির্ধারণে ২০২২-২৩ অর্থবছরে পণ্যের ট্যারিফ মূল্য ও ন্যূনতম মূল্য নির্ধারণ-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনে পেট্রোলিয়াম ও এর উপজাত দুটি হেডিংয়ের আওতায় ১২টি এইচএস কোডের বিপরীতে ট্যারিফ মূল্য এবং একটি হেডিংয়ের আওতায় একটি এইচএস কোডের বিপরীতে ন্যূনতম মূল্য বহাল আছে।
পেট্রোলিয়াম ও এর উপজাতগুলোর মূল্য আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিনিয়ত ওঠানামা করার কারণে অতি প্রয়োজনীয় এই পণ্যের মূল্য স্থিতিশীল রাখতে এ সুপারিশ করা হয়েছে।
এলপিজি সিলিন্ডারের বিষয়ে বাজেট বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী বলেন, এলপিজি সিলিন্ডার তৈরির কাঁচামাল ইস্পাতের পাত (স্টিল শিট) ও ওয়েল্ডিংয়ের তার আমদানির করছাড় সুবিধা তুলে নেওয়া হয়েছে। এলপিজি সিলিন্ডার উৎপাদনকারীরা কাঁচামালে শুল্ককর ছাড় ১২ বছর ধরে ভোগ করে আসছে। তাই রাজস্ব আহরণের স্বার্থে শুধু দুটি উপকরণে ছাড় তুলে নেওয়া হয়েছে। তবে অন্যান্য করছাড়ের মেয়াদ ২০২৫ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত বহাল থাকবে বলে।
পেট্রোলিয়াম তেল এবং বিটুমিনাস খনিজ থেকে প্রাপ্ত তেলের ওপর বিদ্যমান শুল্ক ৫ শতাংশ। নতুন বাজেট অনুযায়ী এসবের প্রতি ব্যারেলের দাম ১ হাজার ১১৭ টাকা (লিটার প্রতি ৭.০২ টাকা) হতে পারে। প্রতি টন ফার্নেস অয়েলের সুনির্দিষ্ট শুল্ক ৯ হাজার ১০৮ টাকা (লিটার প্রতি ৯.১০ টাকা) করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।