
‘অর্গানয়েড ইন্টেলিজেন্স’ বা কৃত্রিম অঙ্গসদৃশ বুদ্ধিমত্তা কাজে লাগিয়ে তৈরি হবে জৈব কম্পিউটার। যুগান্তকারী এই আবিষ্কারের পথে হাঁটছেন বিজ্ঞানীরা, যা কম্পিউটার প্রযুক্তির ভবিষ্যৎকে বদলে দিতে পারে। লিখেছেন নাসরিন শওকত
একুশ শতক যেন আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই) বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার শতক। প্রায় তিন-চার দশক আগেও এমন বুদ্ধিমত্তার বিষয়টি ভাবাই যেত না। কিন্তু আজ বলা হচ্ছে, মানুষের মস্তিষ্কের কোষের শক্তিতে চলবে কম্পিউটার। যা এত দিন শুধুমাত্র বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনিতেই শোনা যেত। কিন্তু একদল মার্কিন গবেষক কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার যন্ত্র তৈরির গবেষণা শুরু করেছেন। তারা এই গবেষণার নাম দিয়েছেন ‘অর্গানয়েড ইনটেলিজেন্স’ বা মানব মস্তিষ্ক থেকে সৃষ্ট কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা। এই বুদ্ধিমত্তা কাজে লাগিয়ে তারা ‘বায়োকম্পিউটার’ বা ‘জৈব কম্পিউটার’ তৈরির পরিকল্পনা করেছেন, যার কাজ চলছে । গবেষকরা দাবি করেছেন, তাদের এই গবেষণা কম্পিউটার প্রযুক্তির ভবিষ্যৎ বদলে দিতে পারে। যুগান্তকারী এই কম্পিউটার তৈরির পরিকল্পনায় গত দুই দশক ধরে বিজ্ঞানীরা কাজ করছেন। আর তাদের পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করছেন সমাজের নীতিবিদ ও সাধারণ জনগণের প্রতিনিধিরা।
‘অর্গানয়েড ইন্টেলিজেন্স’
অর্গানয়েড হলো অঙ্গসদৃশ কোষ বা টিস্যু যা গবেষণাগারে কৃত্রিমভাবে তৈরি হয়। ত্রিমাত্রিক গঠনাকৃতির এই কোষগুলো সাধারণত স্টেম সেল নামের বিশেষ কোষ থেকে তৈরি করা হয়। গত দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে গবেষণাগারগুলোতে স্টেম সেল থেকে এই কোষ তৈরির কাজ করছেন গবেষকরা। এ লক্ষ্যে তারা বিকল্প কিডনি, লাং ও অন্য সব অঙ্গের ওপর পরীক্ষা চালিয়েছেন। যার ফলে তারা মানুষ বা প্রাণীর ওপর ক্ষতিকর পরীক্ষা এড়াতে সক্ষম হয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রের জন হপকিন্স ব্লুমবার্গ স্কুল অব পাবলিক হেলথের গবেষকরা বলছেন, কৃত্রিমভাবে তৈরি মস্তিষ্কের অর্গানয়েডের সঙ্গে মানুষের মস্তিষ্কের মিল খুবই কম। এই অর্গানয়েড মানুষের মস্তিষ্কের কোষের মতো নয়। এই মস্তিষ্কের আকারে খুবই ছোট। দেখতে অনেকটা কলমের নিবের বিন্দুর সমান। এই কোষে থাকা নিউরন মানুষের মস্তিষ্কের মতো কাজ করতে ও বহুমাত্রিক যোগাযোগ স্থাপনে সক্ষম। বিজ্ঞানীরা এই আবিষ্কারের ঘটনাকে ‘একটি পাত্রে সৃষ্ট বুদ্ধিমত্তা’ বলে অভিহিত করেছেন।
জন হপকিন্স ব্লুমবার্গ স্কুল অব পাবলিক হেলথ এবং বাল্টিমোরের হোয়াইটিনিং স্কুল অব ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের পরিবেশগত স্বাস্থ্য ও প্রকৌশলবিদ্যার অধ্যাপক ড. থমাস হারতং ২০১২ সাল থেকে মানুষের ত্বক থেকে নমুনা সংগ্রহ শুরু করেন। এরপর সেগুলোকে বিকল্প উপায়ে ব্রেইন অর্গানয়েডের কোষে রূপান্তর করার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছেন। অধ্যাপক হারতং সহকর্মী বিজ্ঞানীদের সঙ্গে নিয়ে মস্তিষ্কের অর্গানয়েড থেকে এক ধরনের জৈবিক হার্ডওয়ার তৈরির পরিকল্পনা করছেন। তাদের ধারণা, এই নেটওয়ার্ক সুপার কম্পিউটারের চেয়েও বেশি শক্তিসাশ্রয়ী ও শক্তিশালী হবে। তাই তারা একে ‘বায়োকম্পিউটার’ বা জৈব কম্পিউটার নাম দেন, যা আলঝেইমারের মতো রোগের ওষুধ পরীক্ষায় যুগান্তকারী বিপ্লব ঘটাবে। নতুন এই আবিষ্কার একদিকে মানুষের মস্তিষ্কের উপলব্ধি বা চিন্তাকে আরও তীক্ষè করে তুলতে সহায়তা করবে, অন্যদিকে মানুষের মস্তিষ্কের বিভিন্ন কার্যক্রম সম্পর্কে তথ্য দেবে, যা ভবিষ্যতে কম্পিউটারের ধারণা পরিবর্তন করে দিতে পারে।
মানব মস্তিষ্ক বনাম কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সাধারণত মানুষের চিন্তা প্রক্রিয়ার মাধ্যমে অনুপ্রাণিত হয়। তবে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, এই প্রযুক্তি মানুষের মস্তিষ্কের সব সক্ষমতাকে পুরোপুরি অনুকরণ করতে পারে না। মানুষের সঙ্গে কম্পিউটারের সুনির্দিষ্ট এই ব্যবধান থাকায়, মানুষ একটি চিত্র বা বার্তাভিত্তিক ক্যাপচা (সিএটিসিএইচএ) ব্যবহার করতে পারে। অথবা স্বয়ংক্রিয় পাবলিক টুরিং পরীক্ষার মাধ্যমে প্রমাণ করা যায় যে, কম্পিউটার ও মানুষ সম্পূর্ণ আলাদা। কম্পিউটারের ভাষায় টুরিং পরীক্ষা কৃত্রিম খেলা হিসেবেও পরিচিত। ১৯৫৯ সালে ব্রিটিশ গণিতবিদ ও কম্পিউটার বিজ্ঞানী অ্যালান টুরিং এই পরীক্ষা তৈরি করেন। যার মধ্য দিয়ে এটি মূল্যায়ন করার চেষ্টা করা হয়েছিল যে, মানুষের মতো করেই কীভাবে মেশিন বুদ্ধিবৃত্তিক আচরণ প্রকাশ করে। কিন্তু কীভাবে একটি কম্পিউটার সত্যিকার অর্থেই মানুষের মস্তিষ্কের বিরুদ্ধে জট পাকায়?
একটি সুপার কম্পিউটার একজন মানুষের তুলনায় অনেক দ্রুত সংখ্যা গণনা করতে পারে। অন্যদিকে শক্তির বিবেচনায় মানুষের মস্তিষ্ক আরও বেশি কার্যকর। জ্ঞান অর্জন এবং জটিল ও যৌক্তিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে কম্পিউটারের চেয়েও শ্রেষ্ঠতর। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, মানুষের মস্তিষ্ক কাজ করে বলেই একজন মানুষ খুব সহজেই আরেকজনের সঙ্গে কথা বলতে পারে, যা কম্পিউটার পারে না। জুনের তথ্য অনুযায়ী, ‘সুপার কম্পিউটার মিশনের কম্পিউটার ব্যবহারের সক্ষমতা একজন মানুষের মস্তিষ্ককেও ছাড়িয়ে গেছে। কিন্তু কম্পিউটারটি এক মিলিয়ন গুণ বেশি শক্তি ব্যবহার করেছে। গবেষক হারতং বলেছেন, ‘যদিও আধুনিক কম্পিউটারের সঙ্গে এখনো মানুষের মস্তিষ্কের তেমন সামঞ্জস্য তৈরি হয়নি, তারপরও মস্তিষ্কের তথ্য সংরক্ষণ করার আশ্চর্য ক্ষমতা রয়েছে। মানব মস্তিষ্ক আনুমানিক আড়াই হাজার (টেরাবাইট) তথ্য সংরক্ষণ করতে পারে।
বায়োকম্পিউটারের সক্ষমতা
স্টেম সেলের পথপ্রদর্শক জন বি গার্ডন ও শিনিয়া ইয়ামানাকা। ২০১২ সালে এই দুই বিজ্ঞানী যৌথভাবে নোবেল পুরস্কার পেয়েছিলেন। তারা মানুষের ত্বক থেকে টিস্যুর মতোই কোষগুলোকে সম্পূর্ণরূপে বিকশিত হওয়ার কৌশল আবিষ্কার করার অবদান হিসেবে এই পুরষ্কার পান। যুগান্তকারী এই গবেষণাটিই হারতংয়ের মতো বিজ্ঞানীদের মস্তিষ্কের অর্গানয়েড তৈরি করতে অনুপ্রাণিত করেছে। গবেষক হারতং ও তার সহকর্মীদের অর্গানয়েড বুদ্ধিমত্তার পরিকল্পনার গবেষণাসংক্রান্ত একটি নিবন্ধ বিজ্ঞান সাময়িকী ফন্টিয়ার্সে গত ২৮ ফেব্রুয়ারি প্রকাশিত হয়। যেখানে এই নিবন্ধের জ্যেষ্ঠ লেখক হারতং বলেছেন, ‘কম্পিউটারের ব্যবহার ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তিক্ষেত্রে অবিস্মরণীয় বিপ্লব তৈরি করেছে, যা এখন অনন্য উচ্চতায় পৌঁছছে।’ তবে নতুন এই আবিষ্কার মস্তিষ্কের স্বাস্থ্যের ঝুঁকির সম্ভাবনাও রয়েছে।
এই গবেষণার শুরুর দিকের কথা স্মরণ করে হারতং বলেছেন, ‘গবেষণায় যুক্ত অন্য গবেষকরা আমার কাছে জানতে চেয়েছিলেন যে, মস্তিষ্কের এই কৃত্রিম কোষগুলো চিন্তা করতে বা প্রাণ অর্জনে সক্ষম কিনা? যুগান্তকারী বায়োকম্পিউটার আবিষ্কারের প্রধান গবেষক হারতং বলেছেন, ‘এই উৎসাহ থেকেই আমরা মানুষের মস্তিষ্ক কীভাবে কাজ করে তার গবেষণার শুরু করি। কারণ আপনি চাইলেই ব্যবস্থাটিকে বিতর্কিতভাবে শুরু করতে পারেন। এমন কিছু করতে পারেন, যা মানব মস্তিষ্কের বেলায় করা অনৈতিক।’
অর্গানয়েড বুদ্ধিমত্তাকে হারতং সংজ্ঞায়িত করেছেন গবেষণাগারে তৈরি মানব মস্তিষ্কের মডেল হিসেবে, যা পুনরুৎপাদনশীল জ্ঞানভিত্তিক কাজের একটি অংশ। এর সঙ্গে জড়িত রয়েছে শিক্ষণ ও সংবেদনশীল প্রক্রিয়া। হারতং সম্প্রতি মস্তিষ্কের অর্গানয়েড হিসেবে যে কোষগুলোকে ব্যবহার করেছেন, সেগুলোকে অর্গানয়েড ইন্টেলিজেন্স (ওআই) হিসেবে আনুপাতিক হারে বাড়াতে হবে। প্রতিটি অর্গানয়েডের একাধিক কোষ রয়েছে, যা একটি ফল মাছির স্নায়ুতন্ত্রে খুঁজে পাওয়া যায়। একটি একক অর্গানয়েডের আকার মানব মস্তিষ্কের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ লাখো ভাগের সমান। যার মানে এটি একটি কম্পিউটারের স্মৃতি সংরক্ষণাগারের প্রায় ৮০০ মেগাবাইটের সমান। তিনি আরও বলেন, ‘অর্গানয়েড অতিক্ষুদ্র। যার প্রত্যেকটিতে প্রায় ৫০ হাজার কোষ রয়েছে। অর্গানয়েড ইন্টেলিজেন্সের ক্ষেত্রে আমাদের এই সংখ্যা বাড়িয়ে ১০ লাখে আনতে হবে।’
এ ক্ষেত্রে গবেষকদের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, অর্গানয়েডগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করার উপায় বের করা। যাতে সেগুলোর কাছে তথ্য পাঠানো যায় এবং ওই কোষগুলো ‘কী ভাবছে’ তার সচিত্র রেকর্ডও নেওয়া যায়। এই গবেষণাটির লেখকরা মিলে একটি পরিকল্পনা তৈরি করেছেন। যেখানে নতুন এই আবিষ্কারের সঙ্গে টুল হিসেবে বায়োইঞ্জিনিয়ারিং ও যন্ত্রসংক্রান্ত শিক্ষা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। গবেষক হারতং বলেছেন, ‘আমরা একটি মস্তিষ্ক চালিত কম্পিউটারের ইন্টারফেস ডিভাইস তৈরি করেছি, যা অর্গানয়েডের জন্য এক ধরনের ইইজি (ইলেক্টেরোয়েন্সফালোগ্রাম) ক্যাপ। গত আগস্টে প্রকাশিত একটি নিবন্ধনে যা আমরা উপস্থাপন করেছি। এটি বাঁকানো যায় এমন একটি শেল, যা ঘনভাবে ক্ষুদ্র ইলেট্রিক তার দিয়ে ঢাকা। এই শেল একই সঙ্গে অর্গানয়েড থেকে সংকেত নিতেও পারে আবার ওতে সংকেত পাঠাতেও পারে।’ হারতংয়ের আশা, এমন একদিন আসবে যখন আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা এআই (কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা) ও অর্গানয়েড ইন্টেলিজেন্সের (ওআই) মধ্যে একটি সুবিধাজনক যোগাযোগের চ্যানেল তৈরি হবে। ‘যখন এই দুই বুদ্ধিমত্তা একে অপরকে নিজেদের সক্ষমতা খুঁজে নেওয়ার সুযোগ করে দেবে।’
এদিকে গত ছয় বছরে মস্তিষ্কের কোষ তৈরির প্রক্রিয়ায় বিপ্লব ঘটেছে, যা ঐতিহ্যগত মসৃণ মনোলেয়ার প্রক্রিয়া থেকে আরও উন্নত হয়ে অঙ্গসদৃশ ত্রিমাত্রিক গঠনাকৃতির (3D) অর্গানয়েডে রূপ নিয়েছে। ২০১৬ সালে পিআই (PI) গোষ্ঠীর মানুষ প্রণোদিত প্লারিপোটেন্ট স্টেম সেল (Pamies et al., 2017) থেকে প্রথমবারের মতো উন্নত ও প্রচুর পরিমাণে মস্তিষ্ক অর্গানয়েড উৎপন্ন করেছে।
ওআই ব্যবহারের উপায়
গবেষকরা বলেছেন, অর্গানয়েড বুদ্ধিমত্তার সবচেয়ে প্রভাবশালী অবদান রাখতে পারে চিকিৎসাবিজ্ঞানে। স্নায়ুজনিত রোগে আক্রান্ত রোগীদের ত্বকের নমুনা থেকেও মস্তিষ্কের অর্গানয়েডগুলো তৈরি করা যেতে পারে। এই আবিষ্কারের বিভিন্ন ধরনের ওষুধ ও অন্য সব বিষয় অর্গানয়েডগুলোর ওপর কী প্রভাব ফেলে তা বিজ্ঞানীদের পরীক্ষা করার সুযোগ করে দিয়েছে। এএদিকে জন হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশগত স্বাস্থ্য ও প্রকৌশল বিষয়ের সহকারী অধ্যাপক লেনা স্মিরনোভা এক বিবৃতিতে বলেছেন, আমরা সাধারণত বৈশিষ্ট্যপূর্ণ দাতাদের কাছ থেকে তৈরি করা মস্তিষ্কের অর্গানয়েডের সঙ্গে অটিজম থাকা দাতাদের কাছ থেকে পাওয়া মস্তিষ্কের অর্গানয়েডের তুলনা করে দেখতে চাই। লেনা গবেষণাপত্রটির সহ-লেখক ও সহ-গবেষকও।
মস্তিষ্কের অর্গানয়েড ব্যবহার করে অর্গানয়েড বুদ্ধিমত্তা তৈরি এখনো প্রাথমিক পর্যায়েই রয়েছে। কারণ এটি নিয়ে গবেষকরা দুই দশকের বেশি সময় ধরে পরীক্ষাগারে কাজ করছেন। হারতং বলেছেন, কম্পিউটারের তুলনায় অর্গানয়েড বুদ্ধিমত্তা দিয়ে মস্তিষ্কের শক্তিচালিত মাউস তৈরি করতে এখনো কয়েক দশক সময় লেগে যেতে পারে। কিন্তু এরই মধ্যে এমন সম্ভাবনার প্রতিশ্রুতিশীল ফলাফলও পাওয়া গেছে। তবে অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্নের কর্টিক্যাল গবেষণাগারের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. ব্রেট কাগান ও তার গবেষণা দল সম্প্রতি দেখিয়েছে, মস্তিষ্কের কোষ ভিডিও গেম পং খেলতে সক্ষম। ব্রেট কাগান গবেষণাটির আরেক সহকারী লেখকও। অর্গানয়েড বুদ্ধিমত্তার অগ্রগতির কথা জানিয়ে গবেষক হারতং বলেছেন ‘ব্রেট কাগান ও তার দল এখন মস্তিষ্কের অর্গানয়েডের ওপর এই পরীক্ষা চালাচ্ছেন এবং আমি বলব যে, অর্গানয়েডের সঙ্গে এই পরীক্ষাটির প্রতিলিপি করা এরই মধ্যে ওআইর মৌলিক সংজ্ঞা পূরণ করেছে। এখন ওআইর পুরো সম্ভাবনা উপলব্ধি করার জন্য শুধু এর সম্প্রদায়, সরঞ্জাম এবং প্রযুক্তিগুলোর উন্নয়ন করা সময়ের ব্যাপার মাত্র।’
অর্গানয়েডের নৈতিকতা
জ্ঞান সম্পর্কিত কর্মকা-ের ক্ষেত্রে মস্তিষ্কের অর্গানয়েডগুলোর সক্ষমতা কেমন হবে তা নিয়ে অসংখ্য প্রশ্নের মুখে পড়েছে এই গবেষণা ও আবিষ্কার। নৈতিক উদ্বেগ থেকে ওঠা এই প্রশ্নগুলো সম্পর্কে হারতং বলেছেন, ‘ওআইর উন্নয়ন ঘটানোর ক্ষেত্রে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গির একটি মূল অংশ ছিল নৈতিক ও সামাজিকভাবে দায়িত্বশীল একটি পদ্ধতি অনুসরণ করা। এ কারণেই একটি ‘সুনির্দিষ্ট নীতিগত’ পদ্ধতি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে আমরা এই গবেষণার প্রাথমিক পর্যায় থেকেই নীতিবিদদের সঙ্গে অংশীদারিত্বের সঙ্গে কাজ করছি। গবেষণাটির বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে বিজ্ঞানী, নীতিবিদ ও সাধারণ জনগণের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে গঠিত দল ধারাবাহিকভাবে সব নৈতিক বিষয় মূল্যায়ন করবেন।
প্রস্টেট ক্যানসারে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েই চলছে। পুরুষদের প্রস্টেট গ্রন্থির ক্যানসারকেই প্রস্টেট ক্যানসার বলে। পুরুষদের মধ্যে এ ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার হার অনেক বেশি। সাধারণত ৫০ বছরের বেশি বয়স হলে পুরুষদের মধ্যে এ ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়তে থাকে। প্রাথমিক পর্যায়ে এ ক্যানসার শনাক্ত হলে এবং সঠিক চিকিৎসা করলে পুরোপুরি মুক্তি পাওয়া সম্ভব।
লক্ষণ : প্রস্টেট ক্যানসারের লক্ষণগুলো সাধারণত প্রাথমিক পর্যায়ে বোঝা যায় না। শরীরের অন্যান্য অঙ্গের ক্যানসার কিছুটা হলেও বোঝা যায়। তবে প্রাথমিক পর্যায়ে প্রস্টেট ক্যানসারের কোনো লক্ষণ প্রকাশ পায় না। যখন লক্ষণ প্রকাশ পায়, তখন অনেক দেরি হয়ে যায়। এ জন্য বয়স ৫০ বছর পার হলেই প্রত্যেক পুরুষের প্রস্টেট ক্যানসারের জন্য স্ক্রিনিং করা প্রয়োজন।
তবে যে লক্ষণগুলো প্রকাশ পেলে আপনি ধরে নিতে পারেন আপনার প্রস্টেট ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। যেমন: ঘনঘন প্রস্রাব, প্রস্রাব ধরে রাখতে না পারা, রাতে প্রস্রাবের জন্য ঘুম ভেঙে যাওয়া, কখনো কখনো প্রস্রাবের সঙ্গে রক্ত যাওয়ার মতো লক্ষণ । এর যেকোনো একটি প্রকাশ পেলে অবশ্যই প্রস্টেট ক্যানসার স্ক্রিনিং করতে হবে। যদিও এগুলো শুধুমাত্র প্রস্টেট ক্যানসার নয়, প্রস্টেট ক্যানসারের সঙ্গে প্রস্টেটের অন্যান্য যেসব রোগ বা বিনাইন প্রস্টেটিক এনলার্জমেন্ট, সে ক্ষেত্রে বেশি হয়।
আবার যে লক্ষণগুলো দেখা দিলে অবশ্যই ডাক্তারের কাছে যাবেন তাহলো- মূত্রত্যাগ, দুর্বল বা ব্যাহত প্রস্রাব প্রবাহে ড্রিবলিং বা রক্তাক্ত প্রস্রাবের অসুবিধা, রক্তাক্ত বীর্য, ইরেক্টাইল সমস্যা, যেমন ইরেক্টাইল ডিসঅংশানশন বা বেদনাদায়ক বীর্যপাত, পায়ে ফোলাভাব, মলদ্বারে চাপ বা ব্যথা । দুর্বলতা বা পায়ে অসাড়তা বোধ করা, মূত্রাশয় বা অন্ত্র নিয়ন্ত্রণ কমে যাওয়া । অপ্রচলিত ওজন হ্রাস । অবসাদে ভোগা।
প্রতিরোধ : প্রোস্টেট ক্যানসার প্রতিরোধে স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন গুরুত্বপূর্ণ। অতিরিক্ত ওজন যেন না হয়। শারীরিক পরিশ্রম অনুযায়ী বিশ্রাম নেওয়া। প্রতিদিনকার ডায়েটে প্রোস্টেট ক্যানসার প্রতিরোধী খাবার অন্তর্ভুক্ত করা। চর্বিযুক্ত মাছ রাখা। বিশেষত সালমন মাছ যাতে ওমেগা-৩ আছে। রান্না করা টমেটো খাওয়া। লাইকোপিন ধারণ করে যা স্বাস্থ্যকর রক্ত সরবরাহের সঙ্গে ক্যানসার রোধ করে। ব্রকোলি খেতে হবে। ক্রুসিফেরাস শাকসবজিতে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্টস এবং ফাইটোকেমিক্যাল রয়েছে যা ক্যানসার কোষকে মেরে ফেলতে পারে এবং কোষের পরিবর্তন প্রতিরোধ করে। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ গ্রিন-টি পান করা। ব্রাজিল বাদাম, আখরোট, কফি, গাজর, ডালিমের রস এবং মটরশুঁটি প্রস্টেট ক্যানসার প্রতিরোধের করে।
সচেতনতা : ধূমপান, অতিরিক্ত মদ ড্রিকংস না করা, রেডমিট, উচ্চ ফ্যাটযুক্ত দুধ ও প্রচুর চর্বি, ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া বাদ দিতে হবে। কেমিক্যাল, টক্সিন, সূর্যালোক থেকে দূরে থাকাও দরকার। তবে কোনো ধরনের শারীরিক সমস্যা দেখা দিলেই দ্রুত ক্যানসার চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় একটি পানীয় হলো দুধ। ক্যালশিয়াম, জিঙ্ক, ম্যাগনেশিয়াম, ভিটামিন বি১২, ভিটামিন ডি-এর মতো যৌগে ভরপুর এই পানীয় বাচ্চাদের তো বটেই, বড়দের জন্যও সমান উপকারী। কিন্তু মেদ ঝরিয়ে ছিপছিপে হতে গিয়ে অনেকে ডায়েট থেকে দুধ একেবারে বাদ দিয়ে ফেলেন। পুষ্টিবিদদের একাংশ মনে করেন, দুধ দিয়ে তৈরি এমন কিছু পানীয় আছে, যা ভাত, রুটির বদলে খাওয়া যায়। অতএব বাড়তি ক্যালোরি নিয়ে চিন্তাও থাকে না। কীভাবে বানাবেন সেই পানীয়? দুধ দিয়ে বানানো যায়, এমন দুটি পানীয়ের হদিস রইল এখানে।
দারুচিনি গুঁড়া এবং দুধ
উপকরণ : দুধ ১ কাপ, দারুচিনির ডাল ১টি, দারুচিনি গুঁড়া এক চিমটে।
প্রণালি : একটি পাত্রে দুধ ফুটতে দিন। এর মধ্যে গোটা একটি দারুচিনির ডাল দিন। ভালো করে ফুটিয়ে নিয়ে ঢাকনা দিয়ে রাখুন কিছুক্ষণ। এবার দুধ থেকে দারুচিনির ডাল তুলে নিয়ে গ্লাসে ঢেলে ফেলুন। ওপর থেকে সামান্য দারুচিনির গুঁড়া ছড়িয়ে দিন। ব্যস, তৈরি হয়ে গেল মেদ ঝরাতে সক্ষম একটি পুষ্টিকর পানীয়।
ছাতুর মিল্কশেক
উপকরণ : গুড় ৩ টেবিল চামচ, ছোট এলাচ আধ চা চামচ, কাজুবাদাম ৫টি, কাঠবাদাম ৫টি, ছোলার ছাতু ১ কাপ, দুধ ৫০০ মিলি।
প্রণালি : প্রথমে ব্লেন্ডারে দুধ, ছাতু, ছোট এলাচ গুঁড়া এবং গুড় একসঙ্গে মিশিয়ে নিন। এরপর গ্লাসে ঢেলে ওপর থেকে ছড়িয়ে দিন কাজু এবং কাঠবাদামের কুচি।
নিজের মাইক্রোব্লগিং সাইটে রীতিমতো ‘সক্রিয়’ ইলন মাস্ক। মাঝেমধ্যেই নানা ধরনের টুইট করে থাকেন টেসলা প্রধান। কখনো নিজের সারাদিনের কাজকর্ম শেয়ার করছেন, তো কখনো কোনো মিম। এ কারণে বেশিরভাগ সময়েই নেটমাধ্যমে বেশ চর্চাতেও থাকেন ইলন।
টুইট পোস্টের সৌজন্যে আরও একবার ভাইরাল হলেন টুইটার কর্তা। এবার রেসলারের ভূমিকায় ইলনকে দেখে চমকে গেল নেটদুনিয়া। তবে এবার পোস্টটি করেছেন অন্য কোনো টুইটার ব্যবহারকারী। যেখানে বেশ বিরল এক ভূমিকায় দেখা গিয়েছে টেসলা প্রধানকে। সম্প্রতি ডোগেডিজাইনার নামে এক টুইটার ব্যবহারকারী শেয়ার করেছেন ইলনের একটি পুরনো ছবি। যেখানে কুস্তিগিরের ভূমিকায় দেখা গিয়েছে টুইটারের সিইওকে। তার বিপরীতে কুস্তি লড়ছেন এক বিরাটবপু কুস্তিগির। সুমো রেসলারের সঙ্গে লড়ছেন ইলন মাস্ক, এই ক্যাপশন দিয়ে ছবিটি পোস্ট করেছেন তিনি। আর সেই ছবিটি ইলনকে ট্যাগ করতেও ভোলেননি ওই ব্যক্তি।
ছবিটিতে ইলনের পোশাক থেকে শুরু করে ভঙ্গি সবটাই পেশাদার রেসলারের মতো। আর সেই ছবি মুহূর্তে ভাইরাল হয়ে যায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। লাইক ও কমেন্টে ভেসে যায় টুইটার। ছবিটির নিচে কমেন্ট করেছেন খোদ ইলনও। নিজস্ব ভঙ্গিতে উত্তর দিয়েছেন, ক্রাশড ডিস্কের ফলে আট বছর ধরে যন্ত্রণা সহ্য করে চলেছেন তিনি। প্রায় পাঁচ দিন আগে পোস্টটি শেয়ার করা হয়েছে টুইটারে। এরই মধ্যে ১৯ হাজারেরও বেশি লাইক পড়েছে। কমেন্টের বন্যাতে ভেসেছে টুইটার। কেউ ইলনকে জিজ্ঞেস করেছেন, তিনি সত্যিই সুমো রেসলারের মতো লড়েন কিনা? কেউ বলেছেন, দেখেই কোমর টনটন করছে। কেউ কেউ আবার হতবাক হওয়ার ইমোজিতে ভরিয়েছেন টুইটার।
টুইটার কেনার পর থেকেই বেশ সমস্যায় রয়েছেন ইলন। সংস্থার খরচ সামলাতে রীতিমতো হিমশিম খেতে হচ্ছে তাকে। এদিকে ওপেন এআইকে টক্কর দিতে চ্যাটজিপিটির বিকল্প গড়ে তোলার পরিকল্পনাতেও রয়েছেন তিনি। সে জন্য এরই মধ্যে এআই বিশেষজ্ঞদের নিয়ে দল গড়ার কাজও শুরু করেছেন দিয়েছেন। এ কারণে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সব সময় আলোচনার থাকেন তিনি। তবে এবার সম্পূর্ণ নতুন অবতারে ধরা পড়লেন ইলন।
রোমাঞ্চকর ফাইনালে মোহামেডানকে ১৪ বছর পর ফেডারেশন কাপ শিরোপা এনে দেওয়ার অন্যতম নায়ক আহসান আহমেদ বিপু। দীর্ঘদিন সাদা-কালোদের হয়ে খেলা এই গোলরক্ষক কাল দেশ রূপান্তরের শিহাব উদ্দিনকে জানালেন আবাহনীর বিপক্ষে উত্তেজনার ম্যাচে চাপ মাথায় নিয়ে নামা ও পেনাল্টি ভাগ্যে জয়ী হওয়ার পেছনের গল্প…
এত বড় ফাইনালে হঠাৎ করে বদলি হিসেবে নামলেন। এটা কি আপনার জন্য চাপ হয়েছিল?
বিপু : চাপ তো অবশ্যই। গোল আর গোল, ফাইনাল, প্রতিপক্ষ আবাহনী। মানসম্মানের ব্যাপার। এটা কিন্তু একটা ফাইনাল না শুধু, সম্মানেরও ব্যাপার। চাপ তো অবশ্যই ছিল।
তো এই চাপটা সামলালেন কীভাবে?
বিপু : সত্যি বলতে আল্লাহর প্রতি অগাধ বিশ্বাস ছিল যে আমরা কামব্যাক করতে পারব। শুধু আমি একা না পুরো দল, হাফটাইমে যখন ২ গোল হয়, আমরা ডাগআউটে একজনও হতাশার কথা বলিনি। আমরা চরম বিশ্বাসী ছিলাম যে এখান থেকে ম্যাচ ঘুরানো সম্ভব। আমাদের অধিনায়ক দিয়াবাতে আত্মবিশ্বাসী ছিল যে ম্যাচে ফেরা সম্ভব।
কিন্তু নামার পরপরই তো একটা গোল হজম করলেন। তাতে কি চাপ বাড়েনি?
বিপু : না বাড়েনি কারণ গতকাল যে ৮টা গোল হয়েছিল তার মধ্যে সবচেয়ে সেরা গোল ছিল ওটা। গোলটা সত্যি বলব আমি নিজের ভুলে হজম করেছি। হাতেও লেগেছিল কিন্তু আটকাতে পারিনি।
পরে তো পেনাল্টি মানে ভাগ্য পরীক্ষাতেও নামতে হলো? তার মানে আপনার ওপর সবার বিশ্বাস ছিল?
বিপু : ওটা জানি না, এটুক বলতে পারি আমাদের কোচিং স্টাফ আমার ওপর বিশ্বাস রেখেছিল। যেহেতু ফাইনাল, পেনাল্টির একটা সম্ভাবনা তো থাকেই। তো আমাদের আগে থেকেই প্রস্তুতি নেওয়া ছিল, গোলরক্ষক কোচ কানন ভাই আমাদের নিয়ে পেনাল্টির আলাদা কাজ করেছিলেন। কিছু বিষয় যেমন শুট নেওয়ার আগ মুহূর্ত মানে শেষ পর্যন্ত অপেক্ষা করা। আর নিজেও একটু চিন্তাভাবনা রেখেছিলাম। তো প্রস্তুতি আগে থেকেই ছিল। চাপ নেওয়ার ব্যাপারটা আসলে আমি স্বাভাবিক ছিলাম। বেশি কিছু চিন্তা করিনি। এমন সময়গুলোতে বেশি চিন্তা করলে উল্টো চাপে পড়ে যেতে হয়।
পেনাল্টি নিয়ে প্রস্তুতির কথা বলছিলেন। আগে থেকেই কি পেনাল্টির প্রস্তুতি ছিল?
বিপু : সে রকম না। কারণ ফাইনালে আগে থেকেই তো বলা যায় না যে পেনাল্টি হবেই। তবে আমাকে খেলার আগে থেকেই মানে ফাইনালের আগেই বলা হয়েছিল যে খেলা যদি ড্রয়ের দিকে যায় তাহলে নামতে হতে পারে। সেই প্রস্তুতি নেওয়া ছিল। তবে পেনাল্টির একটু আগে নামতে হয়েছিল আরকি।
পেনাল্টিতে দুটো সেভ করলেন। এটা কীভাবে সম্ভব হলো। কী ভাবছিলেন ডাইভ দেওয়ার আগে?
বিপু : সত্যি বলছি আমার কোনো চিন্তাই ছিল না। হয়ে গেছে। আল্লাহ মিলিয়ে দিয়েছেন, এখানে আমার কিছু নেই।
বিশ্বকাপ ফাইনালেও তো পেনাল্টি হয়েছিল। তা তো দেখেছেন। নিজের পেনাল্টি মুখোমুখি হওয়ার সময় ওই রকম কিছু মনে হচ্ছিল?
বিপু : না, ওরকম কিছু না। আমি আল্লাহর ওপর বিশ্বাস রেখেছিলাম। আর মনে মনে ভাবছিলাম যে দলের জন্য কিছু করতেই হবে। আমি বলতে পারি এই দলটার মধ্যে সবচেয়ে পুরনো খেলোয়াড় কিন্তু আমি। আমি দীর্ঘদিন মোহামেডানে খেলেছি। মোহামেডান থেকে সুপার কাপ জিতেছি, স্বাধীনতা কাপ জিতেছি। তো ক্লাবের জন্য কিছু করার তাগিদটা ছিল।
পেনাল্টিতে প্রথম সেভ করার পর আপনার সাহস কি বেড়ে গিয়েছিল?
বিপু : সাহস তো বেড়েছেই। প্রথম সেভটা যখন করি তখন আমার টিম মেটরাও মানসিকভাবে এগিয়ে গেছে। এরপর আমাদের অধিনায়ক গোল করল। প্রথম গোল করা মানে মানসিকভাবে এগিয়ে থাকা। রাফায়েল কিন্তু আবাহনীর অনেক বড় ব্র্যান্ড। হতে পারে কলিনদ্রেস নামের বিচারে ভারী কিন্তু রাফায়েল এগিয়ে।
প্রথমটা তো সেভ করলেন দ্বিতীয় পেনাল্টি সেভের আগে কী ভাবনা হচ্ছিল আপনার। দ্বিতীয়টা সহজ হয় না কঠিন?
বিপু : ওটা ফিফটি-ফিফটি ছিল। কলিনদ্রেস একটু অপেক্ষা করছিল মারার সময় তাই আমিও ওয়েট করলাম। আর সফল হই। কলিনদ্রেসের শটটা কিন্তু যথেষ্ট পাওয়ারফুল ছিল। আমি সঠিক দিকে ঝাঁপিয়ে পড়েছি। আর রাফায়েল একটু স্লো শট নেয় সবসময়। আর সবসময় একটু জার্ক করে বাঁদিকে শট নেয়, কাল নিয়েছিল ডানদিকে। আমি অপেক্ষা করায় সঠিক দিকে ডাইভ দিতে পেরেছি।
আচ্ছা আপনার পছন্দের গোলকিপার কে?
বিপু : পিওতর চেক।
বিশেষ কোনো কারণ আছে ওকে পছন্দ করার?
বিপু : ঠিক কেন সেটা বলতে পারব না। তবে ওর সেভগুলো আমার ভালো লাগে। এখন অনেক গোলরক্ষক থাকতে পারে, চেক আমার কাছে এখনো সেরা। বিশেষ করে একটা সেভ দেখেছিলাম ও মাটিতে পড়ে গিয়েও কীভাবে যেন হাত দিয়ে বল ফিরিয়েছিল। চেলসিতে থাকা অবস্থায় সম্ভবত। এছাড়া শুধু একটা না আরও অনেক সেভ করেছে সে। আর একটা ব্যাপার হলো তার ইনজুরির পরও যেভাবে সে খেলা চালিয়ে গেছে এটা আমাকে উজ্জীবিত করে। আমিও ইনজুরির পর খেলছি, ২০১৮-১৯ এ বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে বসুন্ধরার সঙ্গে ফেডারেশন কাপের ম্যাচ খেলার সময় আমার হাত ভেঙেছিল। এখনো হাতে প্লেট লাগানো আছে।
নিজেকে কোথায় দেখতে চান?
বিপু : আমার কোনো নিজস্ব লক্ষ্য নেই। আমি খেলে যেতে চাই। কোচরা জানেন আমাকে কোথায় খেলাবেন। জাতীয় দলে খেলার ইচ্ছা তো সবারই থাকে কিন্তু আমি সেই লক্ষ্য নিয়ে আগাতে চাই না। হলে এমনিতেই হবে।
অনেক বছর পর মোহামেডান শিরোপা জিতল। এই ধারা অব্যাহত রেখে সামনেরবার কী লক্ষ্য রাখছেন?
বিপু : গত বছর আমরা সেমিফাইনাল থেকে বাদ পড়ে গিয়েছিলাম সেখানে রেফারিংয়ের কিছু ব্যাপার ছিল আপনারা সবাই দেখেছেন। ইনশাআল্লাহ এই ধারা অব্যাহত থাকবে। আমাদের ফল তো আগের থেকে ভালো হচ্ছে। এটা বড় আত্মবিশ্বাসের কারণ।
নির্ধারিত সময় পেরিয়েছে। ১০ জনের ব্রাজিল। তবুও এগিয়ে ২-০ গোলে। খেলা গড়ায় ইঞ্জুরি টাইমে। তখনই যেন বেড়ে যায় সেলেসাওদের গতি। মিনিট কয়েকের মুহূর্তে ব্যবধান দাঁড়ায় ৪-০ গোলে। তবে প্রতিপক্ষ তিউনিশিয়াও কম যায় না। হাল ছাড়েনি তারা। শেষ মুহূর্ত অবধি লড়ে গেছে। তাতে আদায় করেছে একটি গোল। যদিও সেই গোল তাদের নিয়ে যেতে পারেনি পরের ধাপে।
যুব বিশ্বকাপে আন্দ্রে সান্তোসের জোড়া গোলে ম্যারাডোনার মাঠে উত্তর আফ্রিকার দেশ তিউনিশিয়ার বিপক্ষে ৪-০ গোলের জয় পেয়েছে ব্রাজিল। এতে কোয়ার্টার ফাইনাল নিশ্চিত করেছে সেলেসাওরা।
ডিয়েগো আরমান্দো ম্যারাডোনা মাল্টি পারপাস স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত শেষ ষোলোর খেলার পুরোটা সময় বলের দখলটা বেশি ছিল তিউনিশিয়ার পায়েই। আক্রমণের ধারও ছিল ভালো। গোলের সুযোগও অনেকগুলো সৃষ্টি হয়েছিল। তবু ফিনিশারদের ছিল ব্যর্থতা। আর সেটা কাজে লাগিয়েছেন ব্রাজিলের যুবারা। শুরুটা অবশ্য তিউনিশিয়ার কল্যাণেই।
খেলার ১১ মিনিটে পেনালটি পেয়ে যায় ব্রাজিল যুবারা। সেখান থেকে গোল আদায় করে নেন মার্কোস লিওনার্দো। ৩১ মিনিটে এই লিওনার্দো ফের দলকে এগিয়ে দেন। তবে এবার আর তিনি গোল করেননি, তবে করিয়েছেন। তার পাস থেকে পায়ে বল নিয়ে তিউনিশিয়ার জালে জড়ান আন্দ্রে সান্তোস।
২-০ গোলের ব্যবধান পেয়ে হৈ হৈ করতে করতে বিরতিতে যেতে পারত ব্রাজিল। কিন্তু প্রথমার্ধের শেষ বাঁশিটা বাজার আগ মুহূর্তেই লাল কার্ড দেখেন রবার্ট রেনান। তার এমন কাণ্ডে ১০ জনের দলে পরিণত হয় ব্রাজিল।
তাতে অবশ্য পরের অর্ধের নির্ধারিত সময়ে কোনো ছাপ পড়তে দেখা যায়নি। ব্যবধানটা যে তখনও ২-০ তেই ছিল। তবে ৯১ মিনিটে ফের গোল আদায় করে ফেলে ব্রাজিল। এবার ম্যাথুস মার্টিনস। তার ৯ মিনিট পর আন্দ্রে সান্তোস নিজের দ্বিতীয় গোল আদায় করে নেন। চার গোলে এগিয়ে থেকে ব্রাজিল যখন জয়ের অপেক্ষা করছিল, ঠিক তখনই ১০৩ মিনিটের সময় প্রথম গোলটি হজম করে সেলেসাওরা।
দেশের সর্বোচ্চ আদালতের রায়কে ফরমায়েশি বলে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বক্তব্য দেশের আইন ও আদালত অবমাননার শামিল বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, ‘দুর্নীতির মামলায় এর আগে বিএনপির দুই নেতাকে নিম্ন আদালতের দেওয়া সাজা বহাল রেখে দেশের উচ্চ আদালত যে রায় দিয়েছে, সে সম্পর্কে বিএনপি মহাসচিবের দায়িত্বজ্ঞানহীন বক্তব্য দেশবাসীকে হতাশ করেছে।’
গতকাল বুধবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে ওবায়দুল কাদের এসব কথা বলেন। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বক্তব্যের নিন্দা ও প্রতিবাদে জানিয়ে এ বিবৃতি দেওয়া হয়।
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক মনে করেন, মার্কিন নতুন ভিসানীতি ঘোষণা করার পর বিএনপি তাদের বিদেশি প্রভুদের কাছ থেকে করুণা প্রাপ্তির আশায় সরকারের বিরুদ্ধে নানা ধরনের অপপ্রচারে লিপ্ত রয়েছে। উচ্চ আদালতের রায়কে ফরমায়েশি বলা তাদের সেই চলমান ষড়যন্ত্রেরই অংশ। বিএনপির এ দুই নেতার আজকের পরিণতি তাদের ধারাবাহিক অপরাজনীতিরই ফসল বলে মন্তব্য করেন সেতুমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘বিএনপি-জামায়াত জোট শাসন আমলে হাওয়া ভবন খুলে তারা দুর্নীতি ও লুটপাটের মহোৎসবে মেতে উঠেছিল, যার পরিণতিতে বাংলাদেশ দুর্নীতিতে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল। সে সময় হাওয়া ভবনের কর্ণধার জিয়াপুত্র তারেক রহমানের দুর্নীতির খতিয়ান বিশ^ গণমাধ্যম ও বিশ^খ্যাত গোপন নথি প্রকাশকারী সংস্থা উইকিলিকসে বিস্তারিত প্রকাশিত হয়েছে।’
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, সাজাপ্রাপ্ত বিএনপি দুই নেতার দুর্নীতির মামলার সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের কোনো যোগসূত্র নেই। ২০০৭ সালে তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার দুর্নীতির সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে তাদের বিরুদ্ধে মামলা করে এবং তাদের অপরাধ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ার পর নিম্ন আদালত সাজা দিয়ে রায় দেয়। প্রায় ১৬ বছর বিচারিক প্রক্রিয়া শেষ করে আদালত তাদের সাজা দিয়েছে।
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘দেশের পবিত্র সংবিধান অনুযায়ী সব নাগরিক আইনের দৃষ্টিতে সমান, কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নয়। যার কারণে আওয়ামী লীগ সরকারের মন্ত্রী, এমপি ও গুরুত্বপূর্ণ নেতারাও আইন ও বিচারের মুখোমুখি হয়েছেন। এমনকি বিশ্বজিৎ হত্যাকা- এবং বুয়েটের শিক্ষার্থী আবরার হত্যা মামলায়ও ছাত্রলীগের নেতারা দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ভোগ করছেন।’ তিনি বলেন, বিএনপি দুর্নীতিকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে তাদের দলীয় গঠনতন্ত্র পরিবর্তন করেছে এবং দলের চিহ্নিত শীর্ষ দুর্নীতিবাজদের সুরক্ষা দিয়েছে।
বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনের প্রসঙ্গ উঠলেই আলোচনায় আসেন সাবেক সিটি মেয়র শওকত হোসেন হিরণ। নগরীর লোকেরা বলে, তার মতো নগর পিতা দরকার। এবার আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী খোকন সেরনিয়াবাত নগরবাসীকে কথা দিয়েছেন, হিরণের মতো করে নগরী গড়বেন তিনি। শওকত হোসেন হিরণের মৃত্যুর এক দশক পেরিয়ে গেছে, তবু তিনি আলোচনায়; শুধু বরিশালে নয়, সারা দেশে।
সংশ্লিষ্ট লোকজন বলে, হিরণের কর্মফলই তাকে বাঁচিয়ে রেখেছে। একসময় সব ক্ষেত্রে বরিশাল সিটির মানুষ অবহেলিত ছিল। সেসব অবহেলার কারণ ঘুচিয়ে এবং মানুষের ইচ্ছা অনুযায়ী নগরীকে আধুনিক করার অঙ্গীকার নিয়ে হাজির হন হিরণ। মেয়র নির্বাচিত হয়ে পাঁচ বছরের মধ্যে নগরীর রূপ পাল্টে দেন তিনি। বরিশালকে সাজান আধুনিক রূপে।
অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ সদস্য আবদুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘হিরণ ছিলেন আদর্শ নেতা। মানুষকে বোঝার চেষ্টা করতেন। দক্ষ ও বিচক্ষণ এবং সৃজনশীল মানুষ। তিনি নগরীর উন্নয়ন নিয়ে যেমন ভেবেছেন, ঠিক তেমনি মানুষের কল্যাণের জন্য কাজ করেছেন। তাই মানুষ ভুলতে পারে না তাকে।’
বিসিক শিল্পনগরীসংলগ্ন চায়ের দোকানদার মো. হালিম বলেন, ‘হিরণ সবসময় মানুষের মন জয় করার চেষ্টা করতেন। সাধারণ পোশাকে চলতেন। দলমত নির্বিশেষ সবাইকে ভালোবাসতেন।’
নগরীর ৩০ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা সমির বলেন, ‘মেয়র হিরণ আমাদের জন্য রাস্তাঘাট, সড়কে বাতির ব্যবস্থাসহ অনেক কিছু করেছেন। তার কাজগুলোই কোনোমতে অনুসরণ করেছে অন্যরা। যে কাজ করে তাকেই তো মনে রাখব আমরা, তাই হিরণকে মনে রেখেছি।’
রিকশাচালক মো. হারুন বলেন, ‘এ নগরীর রাস্তাঘাট চলাচলের অযোগ্য ছিল। রাতে অন্ধকারে ডুবে থাকত। চুরি-ডাকাতি নিত্যখবর ছিল। কিন্তু হিরণ মেয়র হওয়ার পর রাতারাতি নগরী বদলে গেল। অনেক মানুষকে সিটি করপোরেশনে চাকরি দিয়েছেন তিনি। নগরীর গরিব মানুষকে এক টাকা করে হলেও সাহায্য করেছেন। সবার মন জয় করেছেন। আজ তার মতো একজন মানুষ থাকলে আমরা শান্তিতে নিঃশ্বাস নিতে পারতাম।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অবসারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘যাকে হারিয়েছি তাকে তো আর ফিরে পাব না। কিন্তু তার কর্ম, মানুষের প্রতি তার সম্মান এবং ভালোবাসা তাকে বাঁচিয়ে রেখেছে। তিনি বিদ্যালয়ে এলে কখনো রাজনৈতিক আলাপ করতেন না। সবসময় শিক্ষার্থীদের আদর্শ মানুষ হওয়ার জন্য বলতেন, গল্প শোনাতেন।’
একজন ব্যবসায়ী (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘হিরণ সাহেব থাকাকালে ব্যবসা করতে গিয়ে কখনো হেনস্তার শিকার হইনি। তিনি নিজেও ব্যবসায়ী ছিলেন। আমাদের ব্যবসায়ীদের কষ্ট তিনি বুঝতেন। কিন্তু নগরীর একদল মানুষ তার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। তাকে নির্বাচনে হারিয়ে দিয়েছে। তারপর হিরণ সাহেব দুর্বল হয়ে পড়েছিলেন।’
বিএম কলেজের সাবেক ভিপি ও শওকত হোসেন হিরণের ঘনিষ্ঠ মঈন তুষার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘হিরণ সাহেব প্রত্যেক নেতাকর্মীর নাম জানতেন। তিনি যার সাঙ্গে কথা বলতেন, সেই মানুষটিকে ভুলতেন না। এজন্য মানুষ তার প্রতি এত দুর্বল এবং আকৃষ্ট। নগরীর জন্য তিনি মাস্টারপ্ল্যান করে কাজ করেছেন। তার সঙ্গে মানুষ সরাসরি কথা বলতে পারত এবং দেখা করত। এখনো মানুষ তাকে ভালোবাসে এবং মনে রেখেছে।’
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান সোহেল রানা বলেন, ‘সাবেক মেয়র শওকত হোসেন হিরণ বরিশালকে আধুনিক নগরীতে রূপান্তরিত করে গেছেন। উন্নয়ন-আন্তরিকতা ও ব্যবস্থাপনার দক্ষতার সমন্বয় ঘটিয়ে তিনি একজন আইকনিক সিটি মেয়র ছিলেন। আন্তরিকতাই একজন প্রশাসকের মূল সূচক। তাই তিনি সাধারণ মানুষের হৃদয়ে গেঁথে আছেন।’
মেয়র হিরণ ব্যক্তিগত জীবনে কেমন ছিলেন এ প্রশ্নের উত্তরে তার সহধর্মিণী ও সাবেক সংসদ সদস্য জেবুন্নেসা আফরোজ হিরণ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘২৬ বছর আমি তাকে দেখেছি। তিনি কারও ভাই ছিলেন, একজন স্বামী ছিলেন এবং সন্তানদের বাবা ছিলেন। পরিবারভক্ত একজন মানুষ। মানবিক গুণাবলি ছিল। তার মা-ভক্তির খুব নাম আছে বরিশাল শহরে। স্বজন-সন্তান ও পরিবারের প্রতি যতœ নেওয়ায় কোনো কমতি ছিল না। স্ত্রী হিসেবে তাকে অসাধারণ কর্তব্যপরায়ণ একজন মানুষ হিসেবে দেখেছি আমি।’
তিনি বলেন, ‘উনি রাজনৈতিক মহলে অত্যন্ত বিচক্ষণ একজন ব্যক্তি ছিলেন। কর্মী ও সহযোদ্ধাদের প্রতি ভালোবাসা ছিল; নেতাদের প্রতি সম্মানে কোনো ঘাটতি ছিল না তার। ২০০১ সালের জামায়াত-বিএনপি যখন ক্ষমতায় আসে, তখন কর্মীদের কীভাবে বুকে আগলে রাখতে হয় আমি তা পাশে থেকে দেখেছি। রাজনীতি এবং নগর উন্নয়নÑ দুই ক্ষেত্রেই তিনি সফল।’
প্রসঙ্গত, শওকত হোসেন হিরণ এলএলবি পাস করার পর জাসদ ছাত্রলীগে যোগ দেন। ১৯৮৬ সালে এরশাদের জাতীয় পার্টিতে যোগ দেন এবং ১৯৮৮ সালে ২২ বছর বয়সে বরিশাল সদর উপজেলা থেকে বাংলাদেশের সর্বকনিষ্ঠ উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। এরপর আলোচনায় আসেন তিনি। ১৯৯৬ সালে জাতীয় পার্টির মনোনীত প্রার্থী হিসেবে বরিশাল সদর আসনের সংসদ সদস্য পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। রাজনীতিতে আরেক দফা পরিবর্তন আসে ১৯৯৬ সালের পর। স্থানীয় নেতাদের সঙ্গে ভালো সখ্য থাকায় আওয়ামী লীগে যোগ দেন হিরণ। তার রাজনৈতিক সক্রিয়তা ও সাংগঠনিক দক্ষতা বিবেচনা করে ২০০৩ সালে কেন্দ্রীয় কমিটি তাকে বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক মনোনীত করে। ২০০৮ সালের ৪ আগস্ট তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র নির্বাচিত হন। বরিশাল মহানগরীকে আধুনিক সাজে সাজান। স্থানীয় মানুষ ও তার অনুসারীদের কাছে আরও জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন তিনি। ২০১২ সালে বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন। ২০১৩ সালের সিটি নির্বাচনে বিএনপি নেতা আহসান হাবিব কামালের কাছে পরাজিত হন। গুঞ্জন রয়েছে, তার দলীয় লোকেরাই তার পরাজয়ের কারণ। হিরণের মন ভাঙলেও তিনি থেমে যাননি। ২০১৪ সালে বরিশাল সদর আসন থেকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। একই বছর ৯ এপ্রিল তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
ব্রহ্মপুত্র নদের ভাঙনের মুখে থাকা কুড়িগ্রামের চর ভগপতিপুর সরকারি কমিউনিটি ক্লিনিকটি অবশেষে বিলীন হয়ে গেছে। ক্লিনিকটি সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়নের দুর্গম চরাঞ্চলের চর ভগপতিপুর এলাকায় ছিল।
গত মঙ্গলবার সন্ধ্যার দিকে চর ভগপতিপুর সরকারি কমিউনিটি ক্লিনিকটি ব্রহ্মপুত্রের গর্ভে বিলীন হয়। এর আগে ওই এলাকার একটি স্কুলও ভাঙনের শিকার হয়। এ ছাড়াও সরিয়ে নেওয়া হয়েছে একটি মসজিদ ও আবাসন প্রকল্পের বাসিন্দাদের। ভাঙন আতঙ্কে দিন পার করছে ব্রহ্মপুত্র নদসহ অন্যান্য নদী তীরবর্তী এলাকার বাসিন্দারা।
সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. আব্দুল গফুর বলেন, স্বাস্থ্য বিভাগের গাফিলতির কারণে ক্লিনিকটি নিলামে বিক্রি করা সম্ভব হয়নি।
কুড়িগ্রাম সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. নজরুল ইসলাম বলেন, অনেক চেষ্টা করেও ক্লিনিকটি রক্ষা করা গেল না।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতিতে জোর করে হারানো হয়েছে।
গতকাল রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
এই নিয়ে ঘনিষ্ঠ অনেকের কাছে জানতে চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। ভিন্ন কোনো জটিলতার সৃষ্টি হলে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে গাজীপুরের যেকোনো আসন থেকে মনোনয়ন পাবেন তিনি। সে ক্ষেত্রে গাজীপুর সিটির ভোটে যে সংসদ সদস্য দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে কাজ করার তথ্য মিলবে তাকেই বাদ দেওয়া হবে। এ সিটি ভোটে হারের কারণ জানতে প্রধানমন্ত্রী নিজস্ব একটি সংস্থাকে নির্ভুল তথ্য দিতে নির্দেশ দিয়েছেন।
নির্বাচনকালীন সরকারে মন্ত্রীর দায়িত্বও পেতে পারেন আজমত, ওই সূত্র দাবি করে। সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
নানা অব্যবস্থাপনায় এগোচ্ছে না প্রাথমিক শিক্ষা। প্রায় শতভাগ শিশু ভর্তির আওতায় এসেছে অনেক আগে। এরপর মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতের কাজ অনেকটাই আটকে আছে। খোদ সরকারি সংস্থার গবেষণায় উঠে এসেছে প্রাথমিকে চরম দুরবস্থার কথা। গবেষয়ণা প্রতিবেদন অনুযায়ী, কাক্সিক্ষত মানের চেয়ে শিশুরা অনেক পিছিয়ে আছে। কিছু শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু কাজ করার চেষ্টা করলেও কথায় কথায় তাদের ওপর নেমে আসছে শাস্তির খড়গ। মানের উন্নয়ন না হলেও ঠিকই অধিদপ্তরে বসে ছড়ি ঘোরাচ্ছেন কর্মকর্তারা।
প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের শিখন ঘাটতি নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহায়তায় সম্প্রতি এই গবেষণা করেছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। সেখানে দেখা যায়, করোনা সংক্রমণের আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা গড়ে ইংরেজি বিষয়ে যতটা শিখত, করোনাকালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের ফলে তা সাড়ে ১২ শতাংশ কমে গেছে। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের হার কমেছে প্রায় সাড়ে ১৬ শতাংশ। আর তৃতীয় শ্রেণির বাংলায় কমেছে ১৫ শতাংশের মতো।
গবেষণার তথ্য বলছে, করোনার আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ইংরেজিতে শিখন অর্জনের গড় হার ছিল প্রায় ৪৯ শতাংশ। করোনাকালে বন্ধের প্রভাবে এই হার কমে দাঁড়িয়েছে ৩৬ শতাংশ। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ^পরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের গড় হার ৫১ শতাংশের বেশি, যা আগে ছিল ৬৮ শতাংশের মতো। পঞ্চম শ্রেণির বাংলা, গণিত ও বিজ্ঞানেও ক্ষতি বেড়েছে।
এনসিটিবির সদস্য (প্রাথমিক শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক ড. এ কে এম রিয়াজুল হাসান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রাথমিক শিক্ষার ঘাটতি পূরণে এ ধরনের গবেষণার দরকার ছিল। আন্তর্জাতিক মানদ- বজায় রেখেই তা করা হয়েছে। আমরা এই গবেষণা প্রতিবেদন দু-এক দিনের মধ্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠাব। আমরা অন্তত এক বছরের জন্য রেমিডিয়াল ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেছি। মন্ত্রণালয় সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ নিচ্ছে।’
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, প্রাথমিক শিক্ষা দিন দিন পিছিয়ে পড়লেও সেদিকে তেমন একটা নজর নেই প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের। তারা ব্যস্ত আছে লাখ লাখ শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের বদলি-পদায়ন নিয়ে। কেউ কথা বললেই তার ওপর নেমে আসছে শাস্তি। ফলে শিক্ষকরাও দিন দিন তাদের আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন; কোনো রকমে দিন পার করছেন।
জানা যায়, প্রাথমিক শিক্ষায় উদ্ভাবনী ও অনন্য অবদানের জন্য ২০১৯ সালে সারা দেশের মধ্যে শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষক নির্বাচিত হন রাজবাড়ী জেলার স্বাবলম্বী ইসলামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. শফিকুল ইসলাম। একই বছর রাজধানীর মোহাম্মদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক খায়রুন নাহার লিপি শ্রেষ্ঠ সহকারী শিক্ষিক নির্বাচিত হন। সাধারণত আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী এসব শিক্ষকের হাতে পদক তুলে দেন। শিক্ষকদের পাশাপাশি সেরা শিক্ষার্থীদের পদক দেওয়া হয় একই অনুষ্ঠানে। কিন্তু করোনাকালে তাদের হাতে জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষক পদক তুলে দেওয়া যায়নি। গত ১২ মার্চ রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে তাদের হাতে এ পদক তুলে দেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন। তাই অনুষ্ঠানের কয়েক দিন আগে স্বাভাবিকভাবে তারা দাবি তুলেছিলেন, দেরি হলেও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে তারা পদক নেবেন; যা তাদের সারা জীবনের স্বপ্ন পূরণ করবে। কিন্তু সেটা না হওয়ায় তারা প্রতিমন্ত্রীর হাত থেকে ঠিকই পদক নেন। তবে এর ৬৮ দিনের মাথায় এই শ্রেষ্ঠ শিক্ষকদের প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবি তোলায় চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। একই ঘটনায় জয়পুরহাটের হিন্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. মাহবুবুর রহমানকেও সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। কারণ তার বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী এ পদক নিতে ১১ মার্চ ঢাকা এসেছিল। ওই শিক্ষকও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবিকে সমর্থন করেছিলেন। সাময়িক বরখাস্ত করা হলেও তাদের কাউকে শোকজ করা হয়নি; যা বিধিবহির্ভূত বলছেন শিক্ষকরা।
জানতে চাইলে ঢাকা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. আবদুল আজিজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সাময়িক বরখাস্তের পরবর্তী যে প্রক্রিয়া আছে, সেদিকেই আমরা যাব।’ এর বেশি কিছু তিনি বলতে রাজি হননি। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াতের সঙ্গে এসব ব্যাপারে কথা বলার জন্য গতকাল একাধিকবার চেষ্টা করলেও তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি।
বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক শিক্ষা গবেষণা পরিষদের সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে পদক নেওয়া একজন শিক্ষকের জীবনে সেরা প্রাপ্তি। এ জন্য শিক্ষকদের দাবি থাকতেই পারে, প্রত্যাশা থাকতেই পারে। তবে সবচেয়ে বড় কথা হলো, আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে কাউকে শাস্তি দেওয়া যায় না। শিক্ষকদের যেভাবে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে, তা মোটেও ঠিক হয়নি বলে আমার মনে হয়। এর প্রভাব অন্যান্য শিক্ষকের মধ্যেও পড়বে, এটাই স্বাভাবিক।’
শুধু তা-ই নয়, করোনাকালে বন্ধ থাকা প্রাথমিক শিক্ষা চালু রাখতে কিছু শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু অনলাইন প্ল্যাটফর্ম চালু করেন; যাতে অনলাইন ক্লাস, শিক্ষকদের মধ্যে আলোচনাসহ নানা কাজ করা হয়। এতে প্রতিটি ফেসবুক গ্রুপে লাখ থেকে হাজারো শিক্ষক যুক্ত হয়েছেন। এখনো সেসব গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে। কিন্তু সেই গ্রুপগুলোকেই এখন শায়েস্তা করার হাতিয়ার হিসেবে বেছে নিয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অপব্যবহারের অজুহাত দেখিয়ে অনলাইনে যুক্ত থাকা অনেক শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাকেই দেওয়া হচ্ছে কারণ দর্শানো নোটিস (শোকজ)। সরকার যেখানে শিক্ষকদের ডিজিটালি আপডেট হওয়ার কথা বলছে, সেখানে প্রায় অনেকটাই উল্টো পথে হাঁটছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।
শিক্ষকরা জানান, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে দীর্ঘদিন ধরে আসন গেড়ে বসেছেন কিছু কর্মকর্তা। অনেকেই ৬ থেকে ১২ বছর ধরে একই দপ্তরে চাকরি করছেন। তাদের যে দায়িত্বই থাক না কেন যত লাভজনক কাজ আছে, সেগুলোতেই তারা হাত দিচ্ছেন। যোগ্য কর্মকর্তাকে অধিদপ্তরে আনলে তাদের সরে যেতে হবে, এ জন্য তারা নানাভাবে ঊর্ধ্বতনদের ভুল বুঝিয়ে মাঠপর্যায়ে শাস্তি দিয়ে সবাইকে ভীত করে তুলছেন। এতে পিছিয়ে পড়ছে প্রাথমিক শিক্ষার মান।
প্রায় দুই বছর বন্ধ থাকার পর গত মার্চ-এপ্রিলে অনলাইনে প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলি করা হয়। যদিও নিয়ম ছিল, অনলাইনে নির্দিষ্ট মানদন্ড পূরণ ছাড়া কেউ বদলি হতে পারবেন না। কিন্তু তা মানেনি প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। ঢাকা ও ঢাকার বাইরে নিয়ম ভেঙে কয়েক শো শিক্ষকের বদলির আদেশ জারি করা হয়। আর এই বদলি-পদায়নে বড় অঙ্কের অর্থ লেনদেন হয়েছে বলে দাবি শিক্ষকদের; যা ভাগ-বাটোয়ারা হয়েছে মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের মধ্যে। আবার অনেক জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও থানা শিক্ষা কর্মকর্তাদের বদলিতেও সমন্বয়হীনতা দেখা দিচ্ছে। কাউকে ক্ষোভের বশবর্তী হয়েও অনেক দূরে বদলি করে দেওয়া হচ্ছে। এতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়ন।
জানা যায়, চলতি বছর থেকে প্রথম শ্রেণিতে চালু হয়েছে নতুন শিক্ষাক্রম। আর আগামী বছর থেকে দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণিতে এবং ২০২৫ সাল থেকে চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম চালু হবে। কিন্তু তা পড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নেই অধিদপ্তরের। শিক্ষকদের নামমাত্র প্রশিক্ষণেই দায়িত্ব শেষ করা হয়েছে। আসলে এই শিক্ষাক্রম শিক্ষার্থীরা কতটুকু আত্মস্থ করতে পারছে বা এ জন্য আর কী করা প্রয়োজন, সে ব্যাপারে তেমন নজর নেই।
এ ছাড়া এখনো প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষকরা বেতন পান ১১তম গ্রেডে ও সহকারী শিক্ষকরা পান ১৩তম গ্রেডে। দুই ধরনের প্রায় চার লাখ শিক্ষকই ১০ম গ্রেডে বেতনের দাবি করে আসছেন। এ ছাড়া সহকারী থানা শিক্ষা অফিসার ও সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসারাও দীর্ঘদিন ধরে নবম গ্রেডের দাবি করছেন। আর মাঠে কাজ করা এসব শিক্ষক ও কর্মকর্তার পদোন্নতিও নেই বললেই চলে। কিন্তু এগুলো সমাধানেও তেমন কোনো উদ্যোগ নেই মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের; যা প্রাথমিকের মান উন্নীতের ক্ষেত্রে বড় অন্তরায় বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
প্রবীণ শিক্ষক নেতা মো. সিদ্দিকুর রহমান আরও বলেন, ‘এখনো মফস্বলে বা দুর্গম অঞ্চলের অনেক স্কুলেই এক-দুজন শিক্ষক। অনেক স্কুলে শিক্ষকের পদ তিন-চার বছর ধরে শূন্য। শিক্ষক না থাকলে এর প্রভাব শিক্ষার্থীদের ওপরও পড়ে। এ ছাড়া সরকারি প্রাথমিকে সাধারণত দরিদ্র পরিবারের শিক্ষার্থীরা আসে। তাদের একটু আলাদা যতœ নেওয়া প্রয়োজন। সেগুলোও হচ্ছে না। শিক্ষকরাও তাদের বেতন-ভাতায় সন্তুষ্ট নন। সব মিলিয়ে আমরা প্রাথমিক শিক্ষায় কাক্সিক্ষত মান অর্জন করতে পারছি না।’
ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে গাজীপুর সিটি নির্বাচনে হেরে যাওয়া প্রার্থী আজমত উল্লা খানকে।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে থাইল্যান্ডের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতি জোর করে হারানো হয়েছে।
গত রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন তেমনি যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে বেসরকারিভাবে বিজয়ী হয়েছেন জায়েদা খাতুন।
তিনি ঘড়ি প্রতীকে মোট ২ লাখ ৩৮ হাজার ৯৩৪ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। তার নিকটতম আওয়ামী লীগ মনোনিত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আজমত উল্লা খান পেয়েছেন ২ লাখ ২২ হাজার ৭৩৭ ভোট।
বৃহস্পতিবার সকাল ৮টায় এ সিটির ৪৮০টি কেন্দ্রে ইভিএমে ভোটগ্রহণ শুরু হয়, যা একটানা বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলে।
বৃহস্পতিবার (২৫ মে) রাতে রির্টানিং কর্মকর্তা স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুনকে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত ঘোষণা করেন।
নির্বাচনের অন্য মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে লাঙ্গল প্রতীকে জাতীয় পার্টির প্রার্থী এম এম নিয়াজ উদ্দিন ১৬ হাজার ৩৬২ ভোট, গোলাপ ফুল প্রতীকে জাকের পার্টির মো. রাজু আহাম্মেদ ৭ হাজার ২০৬ ভোট, মাছ প্রতীকে গণফ্রন্টের প্রার্থী আতিকুল ইসলাম ১৬ হাজার ৯৭৪ ভোট, স্বতন্ত্রপ্রার্থী ঘোড়া প্রতীকের মো. হারুন-অর-রশীদ ২ হাজার ৪২৬ ভোট এবং হাতি প্রতীকের সরকার শাহনূর ইসলাম ২৩ হাজার ২৬৫ ভোট পেয়েছেন।
নির্বাচন কমিশনের তথ্যানুযায়ী, গাজীপুর সিটিতে মোট ভোটার ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৭৬ জন। তাদের মধ্যে ৫ লাখ ৯২ হাজার ৭৬২ জন পুরুষ, ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৬৯৬ জন নারী ও ১৮ জন হিজড়া। এই সিটিতে ৫৭টি সাধারণ ও ১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড আছে। মোট ভোটকেন্দ্র ৪৮০টি, মোট ভোটকক্ষ ৩ হাজার ৪৯৭টি।
দুই দশকেরও বেশি ক্যারিয়ারে অসংখ্য নাটক-টেলিছবি নির্মাণ করেছেন শিহাব শাহীন, উপহার দিয়েছেন হিট প্রোডাকশন। নিজেকে শুধু রোমান্টিক জনরায় আটকে না রেখে কাজ করেছেন বহুমাত্রিক ঘরানায়। নিজেকে প্রমাণ করেছেন সব্যসাচী নির্মাতা হিসেবে। নিজেকে শুধু টেলিভিশনেই আটকে রাখেননি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তিনিও পাল্টেছেন প্লাটফর্ম এবং সেখানেও দেখিয়েছেন নিজের মুন্সিয়ানা।
সর্বশেষ গেল ঈদে তুমুল সাড়া ফেলেছে তার নির্মিত স্পিন অফ সিরিজ ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’। সাফল্যের পর কিছুদিন আগেই অনুষ্ঠিত হয়ে গেল এর সাকসেস পার্টি যেখানে উপস্থিত ছিলেন টিমের কলাকুশলী থেকে শুরু করে অন্যান্য নির্মাতা ও শিল্পীরা। সেই ধারাবাহিকতায় এবার তিনি নিয়ে আসছেন সিরিজটির সিক্যুয়াল। শুধু তাই নয়, একসঙ্গে একাধিক সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে আসছেন জনপ্রিয় নির্মাতা।
শিহাব শাহীন বলেন, ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’ নিয়ে এতটা প্রত্যাশা ছিল না কিন্তু সে সাড়া পেয়েছি তা প্রত্যাশার চেয়েও বেশি। দর্শকরাই কাজটিকে গ্রহণ করেছেন আর তাই এখন এর সিক্যুয়াল নিয়ে আসার পরিকল্পনা করছি। স্পিন অফে দেখিয়েছি অ্যালেন স্বপনের পেছনের গল্প। সিন্ডিকেটে তাকে আমরা দেখিয়েছিলাম ২০২২ সালে, সে ঢাকায় আসার পর এর মাঝের সময়টার গল্পই থাকবে সিক্যুয়ালে। যেটার সংযোগ থাকতে পারে ‘সিন্ডিকেট ২’-তে। ঈদের পরপর এটার শুট করার সম্ভাবনা রয়েছে।
এই সিক্যুয়াল ছাড়াও আরও বেশ কিছু সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে সবকিছু চূড়ান্ত হয়েছে বলেও জানান এ নির্মাতা। তিনি বলেন, মোস্তফা সরয়ার ফারুকির তত্ত্বাবধানে ওটিটি প্লাটফর্ম চরকির ‘মিনিস্ট্রি অফ লাভ’ সিরিজের একটা কনটেন্ট করবো। এখনও কাস্টিং চূড়ান্ত হয়নি। এছাড়া হইচইয়ের একটি সিরিজ ও বিঞ্জের একটি ফিল্ম করা হবে। নাম চূড়ান্ত হয়নি। তবে দুটোতেই জিয়াউল ফারুক অপূর্ব থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
মাঝে শোনা গিয়েছিল, আফরান নিশোকে নিয়ে ‘সিন্ডিকেট ২’ নাকি হবে না, এটা কতটুকু সত্য? এমন প্রশ্নে শিহাব শাহীন বলেন, এটা ভূয়া তথ্য। ডিসেম্বরের শেষ দিকে ‘সিন্ডিকেট ২’ করবো তার আগে সেপ্টেম্বরে শুরু করবো ‘রসু খাঁ’।
জানা গেছে, আগামী সপ্তাহে অস্ট্রেলিয়া পাড়ি জমাচ্ছেন শিহাব শাহীন। দেশে ফিরবেন মাসের শেষ নাগাদ এরপর কাজে নামবেন।