
পৃথিবীর সবচেয়ে ছোট ফুল সুজিপানা (ওলফিয়া আরিজাহ)।
এর বৈজ্ঞানিক নাম Wolffia Arrhiza
এটি একবীজপত্রী উদ্ভিদ বর্গের Lemnaceae গোত্রের অন্তর্গত অবাধ ভাসমান জলজ সপুষ্পক উদ্ভিদ। পানিতে চরে বেড়ানো পাখিদের প্রিয়খাদ্য।
দ্রুত বংশবৃদ্ধিতে অন্যান্য গাছগাছালিকে সহজেই ছাড়িয়ে যায় এবং খরা, ঠান্ডা, খাদ্যাভাব ইত্যাদি পরিবেশগত দুর্যোগেও টিকে থাকতে পারে।
সপুষ্পক হলেও সুজিপানায় দৈবাৎ ফুল ফোটে, বংশবৃদ্ধি মূলত অঙ্গজ-মুকুলে। এগুলো বাংলাদেশ এবং পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে আছে গত এক শতক ধরে।
এ ক্ষুদ্রতম ফুল উৎপাদনকারী উদ্ভিদটি থ্যালাস (যে উদ্ভিদ পাতা, শাখা-প্রশাখা এবং মূলে বিন্যস্ত নয়) প্রজাতির উদ্ভিদ।
সবুজ বা হলুদাভ সবুজ বর্ণের এই উদ্ভিদটির কোনো মূল নেই।
উদ্ভিদটির দৈর্ঘ্য ১ থেকে ৫ মিমি পর্যন্ত হয়ে থাকে। এর কোনো স্বতন্ত্র কান্ড ও পাতা নেই। গোটা উদ্ভিদটিই আসলে চ্যাপ্টা ছোট একটি পত্রকল্প কাঠামো বা ফ্রন্ড (frond)। এ ফ্রন্ড নিচে ঝুলন্ত এক বা একাধিক কৈশিক মূলসহ একক বা দলবদ্ধ থাকে।
ফুল সাধারণত উদ্ভিদটির ওপরের স্তরে জন্মে থাকে। এর একটি করে পুংকেশর ও গর্ভকেশর থাকে। এর সম্পূর্ণ পুষ্পবিন্যাসের দৈর্ঘ্য সর্বোচ্চ ১ মিমি হয়ে থাকে। ওলফিয়া শতকরা ৮০ ভাগ প্রোটিনসমৃদ্ধ একটি উদ্ভিদ। আদর্শ পরিবেশে এগুলোর জীবসত্তা ২৪ ঘণ্টার মধ্যে দ্বিগুণ হয়।
সালাদ হিসেবে খাদ্যযোগ্য ওলফিয়া প্রোটিন, ভিটামিন ‘এ’ এবং ‘বি’ সমৃদ্ধ।
সিরিয়া ও ইয়েমেনে ছায়াযুদ্ধে লিপ্ত সৌদি আরব ও ইরান। আঞ্চলিক নানা বিষয়ে উভয় দেশের মতানৈক্য চরমে। তা সত্ত্বেও দেশ দুটি সম্প্রতি কূটনৈতিক সম্পর্ক পুনঃপ্রতিষ্ঠায় চুক্তি করেছে। এই পদক্ষেপের কারণ কী? লিখেছেন তৃষা বড়ুয়া
ঐতিহাসিক পদক্ষেপ
মধ্যপ্রাচ্যের দুই শক্তিশালী দেশ সৌদি আরব ও ইরান। আঞ্চলিক নানা ইস্যু নিয়ে দীর্ঘ সময় ধরে দেশ দুটির মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে। এই উত্তেজনার মধ্যেই সৌদি আরব ও ইরানকে এক টেবিলে বসিয়েছে চীন। শুধু তাই নয়, মধ্যপ্রাচ্যের দেশ দুটির মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষরেও ভূমিকা রেখেছে দেশটি। এতে স্বাভাবিকভাবেই বিস্মিত হয়েছেন বিশ্বনেতারা। বিশেষ করে, যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল এমন পদক্ষেপের জন্য একেবারেই প্রস্তুত ছিল না। চীনের রাজধানী বেইজিংয়ে টানা চার দিন অপ্রকাশিত বৈঠকের পর চলতি মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে ইরান ও সৌদি আরব তাদের কূটনৈতিক সম্পর্ক পুনঃপ্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেয়। তাদের ওই ঘোষণা, পশ্চিম এশিয়া পুনর্বিন্যাসে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। একই সঙ্গে দেশ দুটির কূটনৈতিক সম্পর্ক পুনঃপ্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত ভূরাজনীতিতে যুক্তরাষ্ট্রের জন্য বড় ধরনের হুমকি হিসেবেও দেখছেন তারা। আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম জানায়, নিরাপত্তা সহযোগিতা চুক্তি, দুই মাসের মধ্যে নিজ নিজ দেশে দূতাবাস পুনরায় চালু এবং বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও সাংস্কৃতিক আদান-প্রদান পুনরুজ্জীবিত করার মধ্য দিয়ে সাত বছরের বৈরী সম্পর্ক থেকে বের হয়ে আসতে সম্মত হয়েছে ইরান ও সৌদি আরব।
ইরান বিশ্বের প্রধান শিয়ারাষ্ট্র। অন্যদিকে, সৌদি আরবকে সুন্নিদের দেশ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ধর্মীয় বিশ্বাসকে কেন্দ্র করে এই দুই সম্প্রদায়ের মধ্যকার টানাপড়েন থেকে মুক্ত নয় মধ্যপ্রাচ্য। ইরাক, লেবানন, সিরিয়া ও সবচেয়ে বিধ্বংসীভাবে ইয়েমেনে বহুবার পরস্পরের বিরুদ্ধে প্রক্সি ওয়ার বা ছায়াযুদ্ধে অংশ নেয় সৌদি আরব ও ইরান। ইয়েমেনে ইরানসমর্থিত বিদ্রোহীদের পরাজিত করতে বোমা হামলা করে বহু বেসামরিক মানুষ হত্যা করে সৌদি আরব। ওই বিদ্রোহীরা প্রতিশোধ নিতে সৌদি আরবের বিভিন্ন শহর ও তেলকেন্দ্রে অত্যাধুনিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ ও সশস্ত্র ড্রোন হামলা করে। ইয়েমেন গৃহযুদ্ধে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে অংশ নেওয়া সব পক্ষই বারবার মানবাধিকার লঙ্ঘনের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক মানবিক আইনও ভঙ্গ করে। ২০২০ সালে জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৪ সালে ইয়েমেনে গৃহযুদ্ধ শুরুর পর থেকে ২ লাখ ৩৩ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়। এদের মধ্যে ১ লাখ ৩১ হাজার ইয়েমেনির মৃত্যু হয় খাদ্য, স্বাস্থ্যসেবা ও অবকাঠামোর অভাবে। সৌদি আরব ও ইরান তাদের কূটনৈতিক সম্পর্ক পুনঃপ্রতিষ্ঠার যে উদ্যোগ সম্প্রতি নিয়েছে, তাকে স্বাগত জানিয়েছেন অনেকে। তারা মনে করছেন, এই পদক্ষেপের ফলে যুদ্ধবিধ্বস্ত ইয়েমেনে বেসামরিক মানুষের ওপর বোমা বা ক্ষেপণাস্ত্র হামলার আগে কিছুটা হলেও ভাববে উভয় দেশ। এতে কমবে রক্তপাত ও অপুষ্টিতে ভোগা শিশুর সংখ্যা। অবশ্য কূটনৈতিক সম্পর্ক ফের গড়লে দেশ দুটির মধ্যকার উত্তেজনা একেবারে থেমে যাবে, এতটা আশাবাদী কেউ নয়।
সৌদি-ইরান স্বার্থ
ধর্মীয় বিশ্বাসসহ আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক ইস্যুতে সৌদি আরব ও ইরানের মধ্যে প্রবল মতানৈক্য থাকা সত্ত্বেও সম্প্রতি কী এমন হলো যে, দেশ দুটি দীর্ঘদিনের বৈরিতা দূর করার উদ্যোগ নিল?
চীন একটি গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর, সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। দেশটি মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের জায়গা নিতে চাইছে, তা ইউক্রেন যুদ্ধের পর অনেক বেশি স্পষ্ট। চীন ছাড়া সৌদি-ইরানের সাম্প্রতিক পদক্ষেপের আর কী কারণ থাকতে পারে? এমন প্রশ্নের জবাবে বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, সৌদি আরবের যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান (এমবিএস) গত কয়েক বছরে কূটনীতি ও অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন এনেছেন। তার ভিশন ২০৩০ সৌদি আরবের তেলনির্ভর অর্থনীতি ঢেলে সাজিয়ে পর্যটনশিল্প ও বিদেশি বিনিয়োগের ওপর জোর দিয়েছে। সালমানের এই পরিকল্পনায় আকৃষ্ট হয়ে লাখ লাখ প্রবাসী সৌদি আরবে ভিড় করে, সেটিকে বাণিজ্য ও সংস্কৃতির এক বৈশ্বিক কেন্দ্রস্থলে পরিণত করেছে। এই রূপান্তর সৌদি আরবের পরিবর্তনশীল কূটনৈতিক অবস্থানের ভিত্তি। ভিশন ২০৩০ সফল করতে আঞ্চলিক শান্তি বজায় রাখা সৌদিদের জন্য খুবই জরুরি। এই লক্ষ্যে মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে শক্তিশালী দেশগুলোর সঙ্গে দীর্ঘদিনের শত্রুতা অবসানের চেষ্টা করছেন সৌদি যুবরাজ সালমান। ইরানের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক পুনরায় প্রতিষ্ঠার পদক্ষেপ ওই পরিকল্পনারই অংশ। এ ছাড়া এসব পদক্ষেপের মাধ্যমে সৌদি আরবের পররাষ্ট্রনীতিতে যুক্তরাষ্ট্রের একক প্রভাব খর্ব করতে চাইছেন সালমান। যুক্তরাষ্ট্র এখনো সৌদি আরবের বৃহত্তম সামরিক অস্ত্রের জোগানদার হলেও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে মার্কিন সরকারের প্রতিপক্ষ রাশিয়া ও চীনের সঙ্গে সম্পর্ক মজবুতের উদ্যোগ নেয় রিয়াদ।
এবার তাকানো যাক ইরানের দিকে। দেশটি কেন সৌদি আরবের সঙ্গে সম্পর্ক পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে চাইছে? ১৯৭৯ সালে ইরানে ইসলামি বিপ্লবের পর, সম্ভবত সবচেয়ে খারাপ সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে ইরান। গত বছরের ১৩ সেপ্টেম্বর, হিজাব না পরার অভিযোগে ‘মাসা আমিনি’ নামে ২২ বছরের এক তরুণীকে গ্রেপ্তার করে ইরান পুলিশ। এর তিন দিন পর ১৬ তারিখে হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়। মাসা আমিনির পরিবারের অভিযোগ, পুলিশি হেফাজতে তিনি ভয়াবহ নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন এবং সেটিই তার মৃত্যুর কারণ। এরপর বিক্ষোভে ফেটে পড়ে ইরানের জনগণ। মাসা আমিনি হত্যার বিচারের দাবিতে রাজপথে বিক্ষোভে নামে লাখো মানুষ। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও বহু মানুষ ইরান সরকারের কর্মকাণ্ডের কঠোর সমালোচনা করে। লক্ষণীয় বিষয় হলো, ন্যায়বিচারের দাবিতে ওই বিক্ষোভের নেতৃত্বে ছিলেন ইরানের নারীরা। মাসের পর মাস ধরে চলমান বিক্ষোভে পুলিশ গুলি চালিয়ে হত্যা করে শত শত ইরানিকে। ইরান সরকার ২০০ মানুষের মৃত্যুর দাবি করলেও অধিকারকর্মীদের ধারণা, এই সংখ্যা এর চেয়ে আরও অনেক বেশি। বিক্ষোভ দমনে ইরান সরকার সর্বোচ্চ শক্তি প্রয়োগ করে। কারাদণ্ডের পাশাপাশি বিক্ষোভকারীদের মৃত্যুদণ্ডও কার্যকর করে তারা। মাসা আমিনির মৃত্যুকে ঘিরে গত সেপ্টেম্বর থেকে ইরান সরকারের কর্মকাণ্ডে ক্ষুব্ধ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়। পশ্চিমা দেশ ও মানবাধিকার সংস্থার দিক থেকে চাপে আছে ইরান। ১৯৮৯ সাল থেকে ইরানের সর্বোচ্চ নেতার দায়িত্ব পালন করা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি ও প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক নানামুখী চাপে মধ্যপ্রাচ্যে এমন এক মিত্র খুঁজছেন, যে কি না এই বিপদে তাদের পাশে দাঁড়াবে। সেই জায়গা থেকে খামেনি ও রাইসির মনে হয়েছে, সৌদিদের সঙ্গে সম্পর্কের পুনর্নির্মাণ হলে চাপ কিছুটা হলেও কমবে।
চ্যালেঞ্জগুলো
বিশেষজ্ঞদের ভাষ্য, সৌদি আরব ও ইরানের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক নতুন করে প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেওয়া হলেও দেশ দুটিকে পরস্পরের কাছে আসতে হলে গুরুত্বপূর্ণ কিছু বিষয়ে ফয়সালা করা দরকার। শিয়া ও সুন্নিদের মধ্যকার উত্তেজনা প্রশমন সবচেয়ে জরুরি। একটি কূটনৈতিক চুক্তির এক্ষেত্রে খুব বেশি কিছু করার নেই। এর বাইরে নির্দিষ্ট কিছু ভূরাজনৈতিক ইস্যু রয়েছে, যেগুলোর সমাধান কীভাবে করা হবে, তা নিয়ে দেশ দুটি এখন পর্যন্ত কোনো বক্তব্য দেয়নি। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, ইয়েমেন ও সিরিয়ায় গৃহযুদ্ধের কথা। এই দুই যুদ্ধে ইরান ও সৌদি আরবের অবস্থান বিপরীতমুখী। ইয়েমেন ও সিরিয়ায় গৃহযুদ্ধে দেশ দুটির এই অবস্থান আগামী দিনে তাদের মধ্যে শত্রুতা বাড়াবে বৈ কমাবে না। এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সৌদি আরবের ঘনিষ্ঠতার কড়া সমালোচক ইরান। দশকের পর দশক ধরে ইরানের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা মধ্যপ্রাচ্যের দেশটির অর্থনীতিকে নাজুক করে দিয়েছে। অন্যদিকে, পশ্চিম এশিয়াজুড়ে বিভিন্ন সশস্ত্র সংগঠনকে সমর্থন ও অর্থ সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে ইরান। দেশটির এসব কর্মকাণ্ডকে নিজের সার্বভৌমত্বের জন্য হুমকি হিসেবে দেখে সৌদি আরব। মোটা দাগে, এসব বিষয়ে মীমাংসা না হলে ইরান ও সৌদি আরবের মধ্যে কোনো ধরনের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক হওয়া বাস্তবিক অর্থেই কঠিন। অবশ্য কূটনৈতিক সম্পর্ক পুনর্নির্মাণের সাম্প্রতিক পদক্ষেপ দেশ দুটির মধ্যে আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন অমীমাংসিত ইস্যু নিয়ে আলোচনার স্টার্টিং পয়েন্ট হতে পারে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
চীনের অবস্থান
পশ্চিম এশিয়ায় দীর্ঘদিন ধরে যুক্তরাষ্ট্র প্রভাব বিস্তার করে আসছে। ইরান ও সৌদি আরবের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক পুনঃস্থাপনে চীনের মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা ইঙ্গিত দিচ্ছে, মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব আগের মতো নেই। সৌদি আরব ও ইরানের সঙ্গে চীনের সুসম্পর্ক ঐতিহাসিক। মধ্যপ্রাচ্যে চীনের ক্রমবর্ধমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক প্রভাব বিস্তারের আকাক্সক্ষা সাম্প্রতিক ইরান-সৌদি ইস্যুতে আরও স্পষ্ট হয়েছে। এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গবেষণা সংস্থা আটলান্টিক কাউন্সিল অব ইউনাইটেড স্টেটসের মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক কর্মসূচির জ্যেষ্ঠ ফেলো জোনাথন ফুলটন বলেন, ‘চীন মধ্যপ্রাচ্যে স্থিতিশীলতা চায়। কারণ উপসাগরীয় অঞ্চল থেকে নিজেদের চাহিদার ৪০ শতাংশের বেশি জ্বালানি আমদানি করে দেশটি। সৌদি আরব ও ইরানের মধ্যে উত্তেজনা চলমান থাকলে বা বাড়লে তা চীনের স্বার্থের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াবে।’ যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার শীর্ষ কূটনীতিক ড্যানিয়েল রুজেল বলেন, ‘সৌদি আরব ও ইরানের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক পুনঃপ্রতিষ্ঠায় মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা পালন করা চীনের জন্য অস্বাভাবিক। কারণ মধ্যপ্রাচ্যের দেশ দুটির মধ্যকার দ্বন্দ্বে চীন কোনো পক্ষই নয়। তারপরও দেশটি ওই কাজ করেছে। এর অর্থ, বিশ্বমঞ্চে আরও বড় কূটনীতিকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে চাইছে চীন।’
যুক্তরাষ্ট্র-ইসরায়েলের অবস্থান
চীনের মধ্যস্থতায় সৌদি আরব ও ইরানের মধ্যে সম্পর্ক পুনঃপ্রতিষ্ঠার উদ্যোগ স্বভাবতই যুক্তরাষ্ট্রের জন্য সুখবর নয়। বেলজিয়ামভিত্তিক গবেষণা সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের ইরানবিষয়ক জ্যেষ্ঠ বিশ্লেষক নায়সান রাফাতি বলেন, ‘ঘটনাটি এমন সময় ঘটল যখন যুক্তরাষ্ট্র ও তার পশ্চিমা মিত্ররা ইরান সরকারের সাম্প্রতিক দমন-পীড়নমূলক কর্মকাণ্ডের সমালোচনা করে দেশটির ওপর চাপ প্রয়োগ বৃদ্ধি করেছে। ইরানের সংকটকালে চীনের এগিয়ে আসা ও সৌদি আরবের সঙ্গে সম্পর্ক পুনর্নির্মাণের ঘটনা তেহরানকে আত্মবিশ্বাসী করবে এই ভেবে যে, পশ্চিমারা চাইলেও তাকে বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন করতে পারবে না।’ যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গবেষণা সংস্থা ফাউন্ডেশন ফর ডিফেন্স অব ডেমোক্র্যাসিসের প্রধান নির্বাহী মার্ক ডুবোভিৎজ বলেন, ‘সৌদি-ইরান ঘনিষ্ঠ হলে যুক্তরাষ্ট্র এ কূল, ও কূল দুকূলই হারাতে পারে। সৌদি আরব যুক্তরাষ্ট্রের ওপর আস্থা রাখতে পারছে না, তা এই ঘটনার মাধ্যমে স্পষ্ট হলো। মধ্যপ্রাচ্যে ক্ষমতার রাজনীতিতে চীন যুক্তরাষ্ট্রকে হটিয়ে বড় খেলোয়াড় হয়ে উঠছে।’
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের পাশাপাশি সৌদি আরব ও ইরানের সাম্প্রতিক চুক্তি বিস্মিত করেছে ইসরায়েলকে। সৌদি-ইরান কারোর সঙ্গে ইসরায়েলের আনুষ্ঠানিক কোনো কূটনৈতিক সম্পর্ক নেই। তা সত্ত্বেও ইসরায়েলি নেতারা ইরানকে শত্রু দেশ হিসেবে বিবেচনা করে আসছে বহু বছর ধরে এবং সৌদি আরবকে মনে করে সম্ভাব্য অংশীদার। সৌদি-ইরানের সাম্প্রতিক পদক্ষেপ ইসরায়েলকে কেবল অবাকই করেনি, একই সঙ্গে উদ্বিগ্নও করেছে। তারা আশা করেছিল, ইরানের সঙ্গে সৌদি আরবের দূরত্ব তাদের লাভবান করবে এবং সৌদি আরবকে ইসরায়েলের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠায় বাধ্য করবে। ইসারায়েলের বিরোধী দলের নেতা ইয়ার লাপিদ ক্ষোভ প্রকাশ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লেখেন, ‘সৌদি আরব ও ইরানের মধ্যে কূটনৈতিক চুক্তি ইসরায়েল সরকারের ব্যর্থ পররাষ্ট্রনীতির ফল।’ ইসরায়েলি বিশেষজ্ঞদের ভাষ্য, সৌদি-ইরানের সম্পর্ক পুনঃপ্রতিষ্ঠার খবর অপ্রত্যাশিত ছিল না। ওই পদক্ষেপ ইসরায়েলিদের স্বার্থে খুব বেশি আঘাত হানবে, এমনটা নাও হতে পারে।
আমাদের দেশে মাথায় আঘাতের বড় কারণ হলো সড়ক দুর্ঘটনা। এ ছাড়া নানা কারণে মাথায় আঘাত লাগতে পারে। এর মধ্যে ওপর থেকে পড়ে যাওয়া, খেলাধুলা, কেউ আঘাত করলে, কাজ করতে গিয়ে পড়ে যাওয়া ইত্যাদি। মাথায় আঘাত পেলে খুলির ভেতর থাকা মস্তিষ্ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। মস্তিষ্কের আঘাত দুই ধরনেরÑ ফোকাল ও ডিফিউজ। মস্তিষ্কের ক্ষতি প্রাইমারি বা সেকেন্ডারি হয়ে থাকে। সরাসরি মাথায় আঘাতের জন্য যে ক্ষতি হয়, তা হলো প্রাইমারি ইনজুরি। মাথায় আঘাতের পর মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণের ফলে পরে মস্তিষ্ক ঝুলে নেমে আসে (হার্নিয়েশন) বা পানি জমে ফুলে যায় (ইডিমা)। এটাকে তখন সেকেন্ডারি ইনজুরি বলে।
তীব্রতা অনুসারে মস্তিষ্কে আঘাত সামান্য, মাঝারি ও মারাত্মক হতে পারে। আঘাতে মস্তিষ্কের সম্পূর্ণ অংশ যদি ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তাহলে তাকে ‘ডিফিউজ এক্সোনাল ইনজুরি’ বলে। মাথায় আঘাত পেলে অবশ্যই যত দ্রুত সম্ভব রোগীকে হাসপাতালে নিতে হবে। রোগ চেনার জন্য রোগীর আঘাতের হিস্ট্রি নিতে হবে, ক্লিনিক্যাল এক্সামিনেশন করতে হবে। রোগ নির্ণয়ের জন্য সিটিস্ক্যান অব ব্রেন ও ঘাড়ের আঘাত দেখার জন্য সার্ভিক্যাল মেরুদ-ের এক্স-রেও প্রয়োজন হয়।
লক্ষণ
মাথায় আঘাতের পর রোগীর অজ্ঞান হয়ে যাওয়া, বমি হওয়া, নাক দিয়ে রক্ত বা পানি আসা, কান দিয়ে রক্ত বা পানি আসা ইত্যাদি হলো মারাত্মক আঘাতের লক্ষণ।
আঘাত পেলে করণীয়
মাথায় আঘাত পাওয়া যেকোনো রোগীর ক্ষেত্রেই সবার প্রথমে দেখতে হবে রোগী শ্বাস-প্রশ্বাস ঠিকমতো নিচ্ছে কি না। যদি শ্বাস-প্রশ্বাস ঠিক না থাকে সে ক্ষেত্রে দেখতে হবে নাকে-মুখে কোনো বাধা আছে কি না, থাকলে সরিয়ে ফেলতে হবে। শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক হওয়ার জন্য দরকার হলে কৃত্রিমভাবে মুখে মুখ দিয়ে শ্বাস দেওয়া যেতে পারে। মাথায় আঘাত পাওয়া রোগীর সঙ্গে অন্য আঘাতও থাকতে পারে। যেমনÑ তার ঘাড়ে সারভাইক্যাল ইনজুরি থাকতে পারে। সে ক্ষেত্রে তার নড়াচড়া হতে হবে খুবই সীমিত। কারণ, যদি বেশি টানাটানি করা হয় তাহলে হয়তো ঘাড়ে আঘাত পেয়ে যেতে পারে। সেই অবস্থায় তাকে আস্তে করে তুলে তাকে হাসপাতালে নিতে হবে। রক্তক্ষরণ থাকলে তা বন্ধ করতে হবে। বড় ধরনের কাটা থাকলে সেলাই করতে হবে এবং প্রয়োজন হলে সিটিস্ক্যান করে দেখতে হবে মস্তিষ্কের ভেতরে কোনো রক্তক্ষরণ হয়েছে কি না।
কখন হাসপাতালে নেবেন
যদি রোগীর খুব ঘুম আসে। অস্বাভাবিক আচরণ করে। মারাত্মক মাথাব্যথা কিংবা ঘাড় শক্ত হয়ে যায়। যদি দুই চোখের মণি দুই রকম হয়ে যায়। রোগীর হাত বা পা শক্ত হয়ে যায়। জ্ঞান হারিয়ে ফেললে। একবারের বেশি বমি হলে। যদি রোগীর শ্বাস-প্রশ্বাস ও হৃৎস্পন্দন ঠিক থাকে কিন্তু রোগী অজ্ঞান থাকে তাহলে বুঝতে হবে তার স্পাইনাল ইনজুরি হয়েছে।
করণীয়
মাথায় আঘাত পেয়ে রোগী অজ্ঞান হলে রোগীকে হাসপাতালে নিতে হবে। পরে নিউরোসার্জারি বিভাগে সুচিকিৎসার জন্য পাঠাতে হবে। ব্রেনে বেশি রক্তক্ষরণ হলে অপারেশন করানোর প্রয়োজন হতে পারে।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) হলের আসন দখল করে রাখার বিরুদ্ধে অনশনরত ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের শিক্ষার্থী সামিউল ইসলাম প্রত্যয়সহ তাকে সমর্থন দেওয়া কয়েকজনের ওপর হামলা চালিয়েছে ছাত্রলীগ।
মঙ্গলবার রাত ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মোশাররফ হোসেন হলের সামনে এ ঘটনা ঘটে বলে জানিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা।তারা বলেন, ওই স্থানে গত বুধবার রাত থেকে অনশনে ছিলেন প্রত্যয়। তাকে মারধরের পর অ্যাম্বুলেন্সে করে বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্রে নিয়ে যায় হামলায় জড়িতরা। এ সময় প্রত্যয়ের দাবির সঙ্গে সংহতি জানানো প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনগুলোর নেতাকর্মীদের ওপরও হামলা হয়।
জানা গেছে, তিন দাবিতে গত বুধবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মশাররফ হোসেন হলের সামনের খেলার মাঠে অনশনে বসেন প্রত্যয়। তিনি ওই হলের আবাসিক ছাত্র। তার অন্য দুটি দাবি ছিল, বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হল থেকে অছাত্রদের বের করা ও হলের গণরুমে অবস্থান করা বৈধ ছাত্রদের আসন নিশ্চিত করা।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে মীর মোশাররফ হোসেন হলের সামনে ছাত্রলীগের নেতাকর্মী এবং নবীন শিক্ষার্থীরা অবস্থান করছিলেন। ওই সময় ক্যাম্পাসে লোডশেডিং চলছিল। হঠাৎ করেই প্রত্যয়সহ তার সঙ্গে থাকা অন্যদের ওপর হামলা চালায় ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা।
হামলায় জাহাঙ্গীরনগর সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি সৌমিক বাগচী, মার্কেটিং বিভাগের ৪৭তম ব্যাচের সৃষ্টি, চারুকলা বিভাগের ৪৭তম ব্যাচের মনিকা, বঙ্গবন্ধু তুলনামূলক সাহিত্য ও সংস্কৃতি ইনস্টিটিউটের ৪৮তম ব্যাচের সুরসহ আরও কয়েকজন আহত হন বলে জানা গেছে।
প্রত্যক্ষদর্শীদের তথ্যমতে, হামলায় ৩০ থেকে ৪০ জন অংশ নিয়েছিলেন। তাদের মধ্যে বেশ কয়েকজনের নাম পাওয়া গেছে। অভিযুক্তদের কয়েকজন হলেন ছাত্রলীগ নেতা ও রসায়ন বিভাগের ৪৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থী গৌতম কুমার দাস, তুষার, ফেরদৌস, নোবেল, গোলাম রাব্বি, মুরসালিন, মুরাদ, সোহেল, তানভীর, রায়হান, রাহাত, সৌমিক, তারেক মীর, সজীব ও নাফিস।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক শিক্ষার্থী জানান, আমরা যারা প্রত্যয়ের সঙ্গে ছিলাম তাদের অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করা হয়েছে। বিদ্যুৎ চলে যাওয়ার পর প্রত্যয়কে দেখতে চিকিৎসক এসেছিলেন। তখন তারা অ্যাম্বুলেন্সের ওপর হামলা করে সেটি ফিরিয়ে দেয়। প্রক্টরকে ফোন দেওয়া হলেও তিনি আসেননি। একাধিক ছাত্রীর দিকেও চড়াও হয় ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্রে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মীর মশাররফ হোসেন হলের এক শিক্ষার্থী অসুস্থ এমন একটি ফোনকল পেয়ে তারা অ্যাম্বুলেন্স পাঠায়। তবে কে কল দিয়েছিল সে সম্পর্কে চিকিৎসা কেন্দ্রের কেউ বলতে পারেননি।
তবে যে ফোন নাম্বার থেকে কল দেওয়া হয়েছিল সেটিতে যোগাযোগ করে দেখা যায় নাম্বারটি শাখা ছাত্রলীগের নেতা গৌতম কুমার দাসের।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আ স ম ফিরোজ-উল-হাসান বলেন, ১৫ হাজার শিক্ষার্থীকে নিরাপত্তা দেওয়া আমাদের পক্ষে সম্ভব না। দরকার হলে আমি পদত্যাগ করব।
এদিকে হামলার প্রতিবাদে বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্র থেকে রাতেই বিক্ষোভ মিছিল শুরু করেন প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীরা। মিছিল নিয়ে তারা এ রাত পৌনে ১টায় প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান করছেন।
তবে অনশনরত শিক্ষার্থী সামিউলের ওপর হামলারে পেছনে ছাত্রলীগের কোনো হাত নেই বলে দাবি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি আক্তারুজ্জামান সোহেলের। তিনি বলেন, ‘আমি শুনেছি, মীর মশাররফ হোসেন হলের অনশনরত ওই শিক্ষার্থীর ওপর হামলা হয়েছে। তবে সেটা সাধারণ শিক্ষার্থীরা করেছে। সেখানে ছাত্রলীগের একজনও জড়িত নয়।’
অসুস্হ সাবেক ফুটলার মোহাম্মদ মহসীনের পাশে দাড়িয়েছেন তার সাবেক সতীর্থরা। মোহামেডান ক্লাবের সাবেক ফুটবলার ও সোনালী অতীত ক্লাবের সদস্যরা বিকেলে বসে এই সিদ্ধান্ত নেন। পরে মহসীনের বাসায় যান তার সংগে দেখা করতে।সাবেক ফুটবলারদের মধ্যে ছিলেন আব্দুল গাফফার, জোসী, বাবলু, জনি, সাব্বির, রিয়াজ।
এসময় গাফফার জানান, মহসীনের চিকিৎসার জন্য বিসিবি সভাপতির উদ্যোগে বুধবার সকালে অসুস্হ ফুটবলারকে হাসপাতালে ভর্তি করবে।
হাসপাতাল থেকে সুস্থ ও স্বাভাবিক হয়ে ফেরার পর মহসীন কানাডায় ফিরে যেতে চাইলে সাবেক ফুটবলাররা সহায়তা করবে। মহসীন কানাডা থেকে দেশে ফিরেছেন মায়ের পাশে থাকতে। প্রায় নব্বই ছুই ছুই মহসিনের মায়ের পায়ে ব্যথা। মহসীনের পাশাপাশি তার মায়ের চিকিৎসার ব্যাপারেও সাবেক ফুটবলাররা পাশে থাকবেন বলে জানান আবদুল গাফফার।
রাজধানীর বনানীর একটি রেস্তোরাঁ থেকে জামায়াতে ইসলামীর বনানী শাখার ১০ নেতাকর্মীকে আটক করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
তাদের মধ্যে বনানী থানা জামায়াতের আমির তাজুল ইসলাম এবং সেক্রেটারি আব্দুর রাফি রয়েছেন।
বনানী থানার ওসি মোস্তাফিজুর রহমান জানান, মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে ওয়ারলেস গেটে অবস্থিত নবাবী রেস্টুরেন্টে গোপন মিটিং করাকালে বনানী থানা জামায়াতে ইসলামী আমির তাজুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক মাওলানা রাফিসহ ১০ নেতাকর্মীকে আটক করা হয়েছে।
আটক ১০ জনের মধ্যে ইসলামী ছাত্রশিবিরের নেতাও রয়েছেন।
নতুন অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে ১৩ ধরনের জ্বালানি তেল ও পেট্রোলিয়াম পণ্যের ওপর থেকে বিদ্যমান ৫ শতাংশ আগাম কর প্রত্যাহারের পরিকল্পনা করেছে সরকার। অন্যদিকে উৎপাদন পর্যায়ে তরল করা পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) ভ্যাট ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে সাড়ে ৭ শতাংশ করা হয়েছে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে পেট্রোল, অকটেন ও ডিজেল আমদানিতে প্রতি লিটারে ১৩ দশমিক ৭৫ টাকা করে শুল্ক আরোপ করার প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এ ছাড়া অন্যান্য জ্বালানি জেট ফুয়েল, ফার্নেস অয়েল, লুব বেইজ অয়েল, কেরোসিনের ক্ষেত্রে প্রতি টনে ২৫ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। এত দিন এসব জ্বালানি তেল আমদানির ক্ষেত্রে ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ ছিল।
আমদানি করা পণ্যের যথাযথ মূল্য নির্ধারণে ২০২২-২৩ অর্থবছরে পণ্যের ট্যারিফ মূল্য ও ন্যূনতম মূল্য নির্ধারণ-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনে পেট্রোলিয়াম ও এর উপজাত দুটি হেডিংয়ের আওতায় ১২টি এইচএস কোডের বিপরীতে ট্যারিফ মূল্য এবং একটি হেডিংয়ের আওতায় একটি এইচএস কোডের বিপরীতে ন্যূনতম মূল্য বহাল আছে।
পেট্রোলিয়াম ও এর উপজাতগুলোর মূল্য আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিনিয়ত ওঠানামা করার কারণে অতি প্রয়োজনীয় এই পণ্যের মূল্য স্থিতিশীল রাখতে এ সুপারিশ করা হয়েছে।
এলপিজি সিলিন্ডারের বিষয়ে বাজেট বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী বলেন, এলপিজি সিলিন্ডার তৈরির কাঁচামাল ইস্পাতের পাত (স্টিল শিট) ও ওয়েল্ডিংয়ের তার আমদানির করছাড় সুবিধা তুলে নেওয়া হয়েছে। এলপিজি সিলিন্ডার উৎপাদনকারীরা কাঁচামালে শুল্ককর ছাড় ১২ বছর ধরে ভোগ করে আসছে। তাই রাজস্ব আহরণের স্বার্থে শুধু দুটি উপকরণে ছাড় তুলে নেওয়া হয়েছে। তবে অন্যান্য করছাড়ের মেয়াদ ২০২৫ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত বহাল থাকবে বলে।
পেট্রোলিয়াম তেল এবং বিটুমিনাস খনিজ থেকে প্রাপ্ত তেলের ওপর বিদ্যমান শুল্ক ৫ শতাংশ। নতুন বাজেট অনুযায়ী এসবের প্রতি ব্যারেলের দাম ১ হাজার ১১৭ টাকা (লিটার প্রতি ৭.০২ টাকা) হতে পারে। প্রতি টন ফার্নেস অয়েলের সুনির্দিষ্ট শুল্ক ৯ হাজার ১০৮ টাকা (লিটার প্রতি ৯.১০ টাকা) করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের জন্য নতুন অর্থবছরে (২০২৩-২৪) ৩৪ হাজার ৮১৯ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। এর মধ্যে বিদ্যুৎ খাতে ৩৩ হাজার ৮২৫ কোটি ১০ লাখ টাকা এবং জ্বালানি খাতে ৯৯৪ কোটি ৩১ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করা নতুন বাজেটে এই বরাদ্দের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
চলতি অর্থবছরে (২০২২-২৩) বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতে বরাদ্দ ছিল ২৬ হাজার ৬৬ কোটি টাকা। পরবর্তী সময়ে সংশোধিত বাজেটে তা বেড়ে দাঁড়ায় ২৭ হাজার ৮৯ কোটি টাকা। অর্থাৎ নতুন অর্থবছরে এ খাতে বরাদ্দ বাড়ছে ৭ হাজার ৭৩০ কোটি টাকা।
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তাফা কামাল বাজেট বক্তৃতায় বলেন, উৎপাদন ও বিতরণ সক্ষমতা সম্প্রসারণের ফলে দেশের শতভাগ জনগোষ্ঠী বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় এসেছে। বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ২০০৯ সালে ৪ হাজার ৯৪২ মেগাওয়াট থেকে বর্তমানে ২৬ হাজার ৭০০ মেগাওয়াটে উন্নীত হয়েছে। জ্বালানির ব্যবহার বহুমুখীকরণের জন্য গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পাশাপাশি কয়লা, তরল জ্বালানি, দ্বৈত জ্বালানি, পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানিভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, রামপালে কয়লাভিত্তিক ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রকল্পের প্রথম ইউনিট ও পায়রা ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রকল্পে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হয়েছে। মাতারবাড়ীতে ১২০০ মেগাওয়াট আল্ট্রা-সুপার ক্রিটিক্যাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের কাজ চলছে। সরকারি-বেসরকারি যৌথ উদ্যোগে মোট ১২ হাজার ৯৪ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ৩৩টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণাধীন এবং ২ হাজার ৪১৬ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ১৭টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের চুক্তি প্রক্রিয়াধীন আছে। এছাড়া, ১০ হাজার ৪৪৩ মেগাওয়াট ক্ষমতার আরও ৩৪টি বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে।
মুস্তফা কামাল বলেন, ‘২০৪১ সালের মধ্যে পাশর্^বর্তী দেশগুলো থেকে প্রায় ৯ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির পরিকল্পনা রয়েছে। বর্তমানে ভারত থেকে ১১৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির পাশাপাশি ঝাড়খ-ে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ৭৪৮ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হয়েছে। নেপালের জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির চুক্তি চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। ভুটান থেকে বিদ্যুৎ আমদানির জন্য বাংলাদেশ, ভুটান ও ভারতের মধ্যে একটি ত্রিপক্ষীয় সমঝোতা স্মারক সই হতে যাচ্ছে শিগগিরই। তিনি বলেন, ‘সব মিলিয়ে আমরা ২০৩০ সালের মধ্যে ৪০ হাজার মেগাওয়াট এবং ২০৪১ সালের মধ্যে ৬০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন নিশ্চিত করতে পারব বলে আশা করছি।’
অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘সরকার ২০৩০ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ১০ শতাংশ নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। এছাড়া ২০৪১ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ৪০ শতাংশ পরিচ্ছন্ন জ্বালানি থেকে সংগ্রহ করতে চাই। এরসঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে, ৬০ লাখ সোলার সিস্টেম স্থাপনের মাধ্যমে অফ গ্রিড এলাকায় বসবাসকারী জনগণকে বিদ্যুৎ সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। কার্বন নিঃসরণ কমাতে ডিজেলচালিত পাম্পের জায়গায় সৌরচালিত পাম্প স্থাপন করার অংশ হিসেবে সেচকাজে ইতিমধ্যে ২ হাজার ৫৭০টি পাম্প স্থাপন করা হয়েছে। বর্তমানে নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে ৮৯৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে। সর্বোপরি, রাশিয়ার সহায়তায় রূপপুরে ২৪০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে।’
উৎপাদিত বিদ্যুৎ জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে গত ১৪ বছরে ৬ হাজার ৬৪৪ সার্কিট কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন স্থাপন করা হয়েছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, সঞ্চালন লাইন ১৪ হাজার ৬৪৪ কিলোমিটারে উন্নীত হয়েছে। এছাড়া বিতরণ লাইন ৩ লাখ ৬৯ হাজার থেকে ৬ লাখ ৬৯ হাজার কিলোমিটারে বৃদ্ধি করা হয়েছে। বিদ্যুতের সিস্টেমলস ১৪ শতাংশ থেকে নেমে এসেছে ৭ দশমিক ৭ শতাংশে। ২০৩০ সালের মধ্যে সঞ্চালন লাইনের পরিমাণ ২৮ হাজার কিলোমিটারে সম্প্রসারিত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিদ্যুতের অপব্যবহার রোধের লক্ষ্যে গত ৫ বছরে প্রায় ৫৩ লাখ প্রি-পেইড স্মার্ট মিটার স্থাপন করা হয়েছে।
অর্থমন্ত্রী কামাল বলেন, ২০০৯ সালের তুলনায়, জ্বালানি তেলের মজুদ ক্ষমতা ৮ লাখ ৯৪ হাজার মেট্রিক টন থেকে বৃদ্ধি করে ২০২১-২২ অর্থবছরে ১৩ লাখ ৬০ হাজার টন করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে এই মজুদ ক্ষমতা ৩০ দিনের পরিবর্তে ৬০ দিনে বাড়ানোর বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি উদ্বোধন করা ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী পাইপলাইনের মাধ্যমে আমদানি করা জ্বালানি তেল (ডিজেল) দেশের উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলায় এবং সৈয়দপুরে ১৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রে সরবরাহ করা সম্ভব হবে।
তিনি বলেন, ‘একমাত্র তেল শোধনাগার ইস্টার্ন রিফাইনারির পরিশোধন ক্ষমতা ১৫ লাখ টন থেকে ৪৫ লাখ টনে উন্নীত করার চেষ্টা চলছে। পায়রা সমুদ্রবন্দর এলাকায় একটি বৃহৎ সমন্বিত তেল শোধনাগার স্টোরেজ ট্যাংক নির্মাণের সিদ্ধান্ত আছে। সম্প্রতি ভোলার ইলিশা গ্যাসক্ষেত্রে প্রায় ২০০ বিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের মজুদ আবিষ্কৃত হয়েছে। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার সময় প্রতিদিন গ্যাসের উৎপাদন ছিল ১ হাজার ৭৪৪ মিলিয়ন ঘনফুট, যা বেড়ে হয়েছে প্রায় ২ হাজার ৩০০ মিলিয়ন ঘনফুট। তেল ও গ্যাস অনুসন্ধান কোম্পানি বাপেক্সের সক্ষমতা বাড়ানোর পর দৈনিক গ্যাস উৎপাদন ৯৮৪ মিলিয়ন ঘনফুট বেড়েছে। ২০২৪ সালের মধ্যে আরও ৪৬টি কূপ খনন করা হবে। এতে অতিরিক্ত ৬১৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস জাতীয় গ্রিডে যোগ হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
মুস্তাফা কামাল বলেন, ‘সমুদ্রে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য বিপুল বিনিয়োগ প্রয়োজন হওয়ায় আমরা বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিচ্ছি। ক্রমবর্ধমান জ্বালানির চাহিদা মেটাতে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস আমদানি এবং স্পট মার্কেট থেকেও কেনা হচ্ছে। এছাড়া কক্সবাজারের মাতারবাড়ীতে প্রতিদিন ১ হাজার মিলিয়ন ঘনফুট ক্ষমতাসম্পন্ন ল্যান্ড বেইজড এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।’
বাজেট বক্তৃতায় আরও বলা হয়, ২০০৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত ১ হাজার ১৫৮ কিলোমিটার গ্যাস সঞ্চালন পাইপলাইন নির্মাণ করা হয়েছে। বর্তমানে দেশের উত্তরাঞ্চল ও অন্যান্য এলাকায় ২১৪ কিলোমিটার পাইপলাইন নির্মাণের কাজ চলছে। ২০২৬ সালের মধ্যে পায়রা ও ভোলা থেকে গ্যাস সঞ্চালনের জন্য আরও ৪২৫ কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। গ্যাসের সরবরাহ বাড়ানোর পাশাপাশি অপচয় রোধে প্রি-পেইড মিটার স্থাপনের কাজও চলছে।
চলতি অর্থবছরের চেয়ে আগামী অর্থবছরের সামগ্রিক বাজেট আকারে ১২ দশমিক ৩৪ শতাংশ বড় হলেও আগামী বছরের শিক্ষা-বাজেট দশমিক ৪৪ শতাংশ কমেছে। তবে টাকার অঙ্কে শিক্ষার দুই মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দ ৬ হাজার ৭১৩ কোটি টাকা বেড়েছে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরে শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাতে মোট বাজেটের ১৩ দশমিক ৭ শতাংশ বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। শুধু শিক্ষা খাত হিসাব করলে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা এবং মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষায় বরাদ্দ ১১ দশমিক ৫৭ শতাংশ। টাকার অঙ্কে তা ৮৮ হাজার ১৬২ কোটি। চলতি অর্থবছরে শিক্ষায় বরাদ্দ ছিল ১২ দশমিক ০১ শতাংশ বা ৮১ হাজার ৪৪৯ কোটি টাকা।
ইউনেস্কো, শিক্ষাবিদ বা অংশীজনরা অনেক দিন ধরেই শিক্ষায় জিডিপির কমপক্ষে ৪ শতাংশ বরাদ্দের কথা বলছেন। এটাকে তারা বরাদ্দ হিসেবে না দেখে আগামী দিনের বিনিয়োগ হিসেবে দেখতে বলছেন। গত কয়েক বছর ধরে শিক্ষায় বরাদ্দ ১২ শতাংশের আশপাশে ঘুরপাক খাচ্ছিল। জিডিপির হিসাবে তা ছিল ২ শতাংশের কাছাকাছি। চলতি অর্থবছরে শিক্ষা খাতে মোট বরাদ্দ জিডিপির ১ দশমিক ৮৩ শতাংশ, ২০২১-২২ অর্থবছরে ছিল ২ দশমিক ০৮ শতাংশ। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে তা কমে দাঁড়াচ্ছে জিডিপির ১ দশমিক ৭৬ শতাংশ।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধূরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আগামী বাজেটে যে লক্ষ্য ধরা হয়েছে, তার সঙ্গে শিক্ষায় বরাদ্দের সংগতি নেই। বাজেটে স্মার্ট বাংলাদেশের কথা বলা হয়েছে। এজন্য দক্ষ ও শিক্ষিত জনগোষ্ঠী প্রয়োজন। কিন্তু এ জনগোষ্ঠী তৈরির জন্য প্রয়োজন শিক্ষা খাতে বিনিয়োগ। বরাবরের মতো এবারও শুভংকরের ফাঁকি লক্ষ করছি। শিক্ষার সঙ্গে প্রযুক্তি মিলিয়ে আকার বড় করা হলেও চলতি অর্থবছরের চেয়েও বরাদ্দ কমেছে। নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নেও বাজেটে দিকনির্দেশনা দেখছি না।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ড. ছিদ্দিকুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘শিক্ষায় জিডিপির ২ শতাংশের নিচে বরাদ্দ কাক্সিক্ষত নয়। আগামী অর্থবছরে অন্তত ১৪ থেকে ১৫ শতাংশ বরাদ্দ দিলে ভালো হতো। কারিগরি ও ভোকেশনাল শিক্ষায় আরও বেশি নজর দেওয়া উচিত ছিল। সেটা আগামী অর্থবছরের বাজেটে দেখা যায়নি।’
তিনি বলেন, ‘আগামী বছরের বাজেটে মিড ডে মিলের জন্য বরাদ্দ রাখার কথা বলা হয়েছে, যা খুবই ভালো। যোগ্য শিক্ষক নিয়োগ ও তাদের যথাযথ প্রশিক্ষণে জোর দিতে হবে। শিক্ষায় বরাদ্দের সঠিক ব্যবহারের বিষয়ে গুরুত্ব দিতে হবে।’
আগামী অর্থবছরে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জন্য ৩৪ হাজার ৭২২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরে তা ছিল ৩১ হাজার ৭৬১ কোটি টাকা। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের জন্য ৪২ হাজার ৮৩৮ কোটি এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের জন্য ১০ হাজার ৬০২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের জন্য ৩৯ হাজার ৯৬১ কোটি এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের জন্য ৯ হাজার ৭২৭ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছিল সরকার।
বাজেট ঘিরে প্রতি বছরই বেসরকারি শিক্ষকদের অন্যতম দাবি থাকে শিক্ষাব্যবস্থার জাতীয়করণ, এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের পূর্ণাঙ্গ বাড়ি ভাড়া ও শতভাগ উৎসব-ভাতা প্রদান। নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তকরণের প্রক্রিয়া চলমান রাখাও তাদের অন্যতম দাবি। কিন্তু সেসব বিষয়ে বাজেটে স্পষ্ট কিছু উল্লেখ নেই। তবে এমপিওভুক্তির জন্য মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগে আগামী অর্থবছরে ৩০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে বলে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।
দুই দশকেরও বেশি ক্যারিয়ারে অসংখ্য নাটক-টেলিছবি নির্মাণ করেছেন শিহাব শাহীন, উপহার দিয়েছেন হিট প্রোডাকশন। নিজেকে শুধু রোমান্টিক জনরায় আটকে না রেখে কাজ করেছেন বহুমাত্রিক ঘরানায়। নিজেকে প্রমাণ করেছেন সব্যসাচী নির্মাতা হিসেবে। নিজেকে শুধু টেলিভিশনেই আটকে রাখেননি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তিনিও পাল্টেছেন প্লাটফর্ম এবং সেখানেও দেখিয়েছেন নিজের মুন্সিয়ানা।
সর্বশেষ গেল ঈদে তুমুল সাড়া ফেলেছে তার নির্মিত স্পিন অফ সিরিজ ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’। সাফল্যের পর কিছুদিন আগেই অনুষ্ঠিত হয়ে গেল এর সাকসেস পার্টি যেখানে উপস্থিত ছিলেন টিমের কলাকুশলী থেকে শুরু করে অন্যান্য নির্মাতা ও শিল্পীরা। সেই ধারাবাহিকতায় এবার তিনি নিয়ে আসছেন সিরিজটির সিক্যুয়াল। শুধু তাই নয়, একসঙ্গে একাধিক সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে আসছেন জনপ্রিয় নির্মাতা।
শিহাব শাহীন বলেন, ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’ নিয়ে এতটা প্রত্যাশা ছিল না কিন্তু সে সাড়া পেয়েছি তা প্রত্যাশার চেয়েও বেশি। দর্শকরাই কাজটিকে গ্রহণ করেছেন আর তাই এখন এর সিক্যুয়াল নিয়ে আসার পরিকল্পনা করছি। স্পিন অফে দেখিয়েছি অ্যালেন স্বপনের পেছনের গল্প। সিন্ডিকেটে তাকে আমরা দেখিয়েছিলাম ২০২২ সালে, সে ঢাকায় আসার পর এর মাঝের সময়টার গল্পই থাকবে সিক্যুয়ালে। যেটার সংযোগ থাকতে পারে ‘সিন্ডিকেট ২’-তে। ঈদের পরপর এটার শুট করার সম্ভাবনা রয়েছে।
এই সিক্যুয়াল ছাড়াও আরও বেশ কিছু সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে সবকিছু চূড়ান্ত হয়েছে বলেও জানান এ নির্মাতা। তিনি বলেন, মোস্তফা সরয়ার ফারুকির তত্ত্বাবধানে ওটিটি প্লাটফর্ম চরকির ‘মিনিস্ট্রি অফ লাভ’ সিরিজের একটা কনটেন্ট করবো। এখনও কাস্টিং চূড়ান্ত হয়নি। এছাড়া হইচইয়ের একটি সিরিজ ও বিঞ্জের একটি ফিল্ম করা হবে। নাম চূড়ান্ত হয়নি। তবে দুটোতেই জিয়াউল ফারুক অপূর্ব থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
মাঝে শোনা গিয়েছিল, আফরান নিশোকে নিয়ে ‘সিন্ডিকেট ২’ নাকি হবে না, এটা কতটুকু সত্য? এমন প্রশ্নে শিহাব শাহীন বলেন, এটা ভূয়া তথ্য। ডিসেম্বরের শেষ দিকে ‘সিন্ডিকেট ২’ করবো তার আগে সেপ্টেম্বরে শুরু করবো ‘রসু খাঁ’।
জানা গেছে, আগামী সপ্তাহে অস্ট্রেলিয়া পাড়ি জমাচ্ছেন শিহাব শাহীন। দেশে ফিরবেন মাসের শেষ নাগাদ এরপর কাজে নামবেন।
স্বাস্থ্য খাতে চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটের চেয়ে আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে বরাদ্দ বেড়েছে। প্রস্তাবিত বাজেটে এই খাতে এবার বরাদ্দ ১ হাজার ১৮৯ কোটি টাকা বা ৩ দশমিক ২২ শতাংশ বাড়লেও মোট বাজেটের তুলনায় তা কমেছে শূন্য দশমিক ৪ শতাংশ। চলতি অর্থবছরে খাতটিতে বরাদ্দ ছিল মোট বাজেটের ৫ দশমিক ৪ শতাংশ। আগামী বাজেটে তা ৫ শতাংশে নেমে এসেছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে জাতীয় সংসদে ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেট পেশ করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। বাজেটে স্বাস্থ্যসেবা এবং স্বাস্থ্য-শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ খাতে ৩৮ হাজার ৫২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করেন। ২০২২-২৩ অর্থবছরে সংশোধিত বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ ছিল ৩৬ হাজার ৮৬৩ কোটি টাকা।
প্রস্তাবিত বাজেটে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে ২৯ হাজার ৪৩১ কোটি টাকা, যা আগের বছরের তুলনায় মাত্র ১৫০ কোটি টাকা বেশি। এর মধ্যে পরিচালন ব্যয় ১৭ হাজার ২২১ কোটি টাকা ও উন্নয়ন ব্যয় ১২ হাজার ২১০ কোটি টাকা। এছাড়া স্বাস্থ্য-শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটে ৮ হাজার ৬২১ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এই বরাদ্দ থেকেই নতুন মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠার ব্যয় নির্বাহ করা হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক সৈয়দ আবদুল হামিদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, এবার টাকার অঙ্কে গত বছরের তুলনায় (বর্তমান ২০২২-২৩ অর্থবছর) ১ হাজার একশ কোটির মতো বেড়েছে। কিন্তু বাজেট শেয়ারে সেটা কমেছে। সামগ্রিক বাজেটের গ্রোথ বা বৃদ্ধি ১২ শতাংশ, কিন্তু স্বাস্থ্যের বাজেটের বৃদ্ধি ৩ শতাংশ। তারমানে রাষ্ট্রীয় বাজেটে স্বাস্থ্য খাতের গুরুত্ব কমেছে। সেই কারণে ৫ দশমিক ৪ শতাংশ থেকে ৫ শতাংশে নেমে এসেছে।
এই স্বাস্থ্য অর্থনীতিবিদ বলেন, এবার কমার যৌক্তিক কারণ আছে। সেটা হলো স্বাস্থ্য বিভাগের সেক্টর প্রোগ্রামে উন্নয়ন বাজেট থেকে অর্থ আসে। সেই সেক্টর প্রোগ্রাম এই অর্থবছরে শেষ হয়ে প্রস্তাবিত অর্থবছর থেকে নতুন সেক্টর প্রোগ্রাম শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু চলমান সেক্টর প্রোগ্রাম সময়মতো বাস্তবায়ন করতে না পারায় সেটার সময় আরও এক বছর বাড়ানো হয়েছে। এই এক বছরের জন্য নতুন বাজেট থাকে না, পুরনো বাজেট থেকেই ব্যয় করতে হয়। ফলে বরাদ্দ না বাড়িয়ে পাঁচ বছরের বাজেট যদি ছয় বছরে গিয়ে ঠেকে, তাহলে প্রতি বছর টাকা কমে যায়। মূলত এ কারণে এবার টাকা কমে গেছে।
সরকার স্বাস্থ্য খাতে এবারও কিছু থোক বরাদ্দ রাখতে পারত বলে মনে করেন স্বাস্থ্য অর্থনীতির এই শিক্ষক। তিনি বলেন, কভিড ছাড়াও আমাদের অনেক জরুরি খাত আছে। এখন ডেঙ্গু চলছে। এটি ইমার্জেন্সি হয়ে যাবে। ফলে এটার জন্য যে ফান্ড দেওয়া আছে হাসপাতালে, রোগী বাড়লে সেটা দিয়ে হবে না। এরকম ইমার্জেন্সি আরও আসতে পারে। এরকম একটা থোক বরাদ্দ রাখলে স্বাস্থ্যের ইমার্জেন্সিতে সেখান থেকে ব্যয় করা যেত। কিন্তু সেটাও নেই। তার মানে কভিডের শিক্ষা থেকে আমরা কিছুই শিখিনি। প্রস্তাবিত বাজেটে সেটার প্রতিফলন নেই।
সামগ্রিকভাবে বাজেটে রোগীদের স্বাস্থ্যসেবার খরচ বেড়ে যাবে বলেও মনে করছেন এই স্বাস্থ্য অর্থনীতিবিদ। তিনি বলেন, এতে স্বাস্থ্যসেবা ও ওষুধসহ সামগ্রিকভাবে স্বাস্থ্য খাত নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার যথেষ্ট কারণ আছে।
যদিও এবারের বাজেটে ওষুধ, চিকিৎসাসামগ্রী ও স্বাস্থ্য সুরক্ষাসামগ্রী উৎপাদনে প্রয়োজনীয় কাঁচামাল আমদানিতে বিদ্যমান রেয়াতি সুবিধা অব্যাহত রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। এ ছাড়া ক্যানসার রোগীদের চিকিৎসা আরও সুলভ করার জন্য ক্যানসার চিকিৎসায় ব্যবহৃত ওষুধ, আইভি ক্যানুলা উৎপাদনের অন্যতম প্রধান উপাদান সিলিকন টিউবসহ আরও কিছু বিদ্যমান ওষুধের কাঁচামাল আমদানিতে রেয়াতি সুবিধা অব্যাহত রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। তামাক জাতীয় পণ্য যেমন তরল নিকোটিন, ট্রান্সডারমাল ইউস নিকোটিন পণ্যের বিপরীতে ১৫০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপ করার প্রস্তাব করা হয়েছে।