
প্রথমবারের মতো কোনো বৈদ্যুতিক যান বা ইভি হিসেবে বিশ্বের সর্বাধিক বিক্রীত গাড়ির তালিকার শীর্ষে উঠে এসেছে টেসলার মডেল ওয়াই। জ্যাটো ডাইনামিকসের তথ্য অনুসারে, ২০২৩ সালের প্রথম প্রান্তিকে টয়োটার আরএভি ৪ ও করোলাকে হটিয়ে টেসলার মডেল ওয়াই সবচেয়ে বেশি বিক্রীত গাড়ির রেকর্ড করেছে। মডেল ওয়াইয়ের দাম ৪৭ হাজার ৪৯০ মার্কিন ডলার। অপর দিকে করোলা ২০২৩ ও আরএভি ৪-এর দাম যথাক্রমে ২১ হাজার ৫৫০ মার্কিন ডলার ও ২৭ হাজার ৫৭৫ মার্কিন ডলার। দাম অপেক্ষাকৃত বেশি হওয়ার পরও বেশি বিক্রি হয়েছে টেসলার এই বৈদ্যুতিক গাড়ি।
জ্যাটো ডাইনামিকস বলছে, প্রথম প্রান্তিকে বিশ্বজুড়ে টেসলার মডেল ওয়াইয়ের ২ লাখ ৬৭ হাজার ২০০টি গাড়ি বিক্রি হয়েছে। একই সময়কালে করোলা বিক্রি হয়েছে ২ লাখ ৫৬ হাজার ৪০০টি ও আরএভি ৪ বিক্রি হয়েছে ২ লাখ ১৪ হাজার ৭০০টি। ফলে টেসলার মডেল ওয়াইয়ের বছরান্তে প্রবৃদ্ধি হয়েছে প্রায় ৬৯ শতাংশ। অবশ্য ২০১৬ সালে গাড়িটি বাজারে ছাড়ার আগেই এর সফলতা নিয়ে আশাবাদী ছিলেন ইলন মাস্ক। তখন তারা অনুমান করেছিলেন বছরে মডেল ওয়াই গাড়িটির চাহিদা হতে পারে ৫ লাখ থেকে ১০ লাখ ইউনিট।
এদিকে গাড়ি বিক্রি নিয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য টেসলার পক্ষ থেকে জানানো হয়নি। প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে, ২০২৩ সালের প্রথম প্রান্তিকে মডেল ওয়াই ও মডেল-৩ মিলিয়ে চার লাখের বেশি গাড়ি গ্রাহকদের সরবরাহ করা হয়েছে। গত কয়েক বছরে টেসলা মডেল ওয়াইসহ অন্যান্য গাড়ির দামও কমিয়েছে।
উল্লেখ্য, বৈদ্যুতিক গাড়ি মডেল ওয়াই চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে শীর্ষ বিক্রীত গাড়ি হলেও এখনো শীর্ষ গাড়ি প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানের প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে রয়েছে টেসলা। ভক্সওয়াগন, টয়োটা, জেনারেল মোটরস ও ফোর্ডের রাজস্ব আয় টেসলার তুলনায় অনেক বেশি। এমনকি কার লোগোসের তথ্য অনুসারে, ২০২২ সালে বৃহত্তম গাড়ি প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ ১০-এর তালিকায় জায়গা হয়নি টেসলার।
সূত্র: দ্য ভার্জ
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ফ্রান্সে গোপন মিশনে গিয়েছিলেন মার্কিন গুপ্তচর পিটার জে অরটিজ। ফ্রান্স তখন নাৎসিদের দখলে। শত্রু শিবিরের তথ্য সংগ্রহের পাশাপাশি মিত্র বাহিনীর হয়ে লড়াইয়ের নেতৃত্বে ছিলেন অরটিজ। ওই সময় একটি গোটা গ্রাম রক্ষা করেছিলেন তিনি। কীভাবে? লিখেছেন তৃষা বড়ুয়া
বিমান ভূপাতিত
১৯৪৪ সালের ৬ মে। রাত প্রায় পৌনে ২টা। নাৎসি অধিকৃত ফ্রান্সের ওপর দিয়ে উড়ে যাচ্ছিল একটি বিমান। সেটির পাইলট ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের বিমান বাহিনীর সেকেন্ড লেফটেন্যান্ট মারি এল সাইমন। ২৩ বছর বয়সী এই সেনা কর্মকর্তা ছিলেন আমেরিকান ইহুদি। বিমান বাহিনীর সাত সদস্যকে নিয়ে তিনি ওই রাতে গোপন মিশনে যাচ্ছিলেন। হঠাৎ জার্মানির এক যুদ্ধবিমান সাইমনের বিমানকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। সঙ্গে সঙ্গে বিমানটিতে আগুন ধরে যায়। সাইমনসহ সবাই এক এক করে প্যারাশুট নিয়ে লাফিয়ে পড়েন। সাইমনের প্যারাশুট একপর্যায়ে গাছে আটকে যায়। বিধ্বস্ত বিমানটিকে তখন জার্মান সেনারা তন্ন তন্ন করে খুঁজছিল। প্যারাশুট নিয়ে সাইমন নেমেছিলেন ফ্রান্সের মধ্যাঞ্চলে। তিনি ফরাসি ভাষা জানেন না। মিশনে যাওয়ার আগে তাকে একটি কাগজে কয়েকটি বাক্য লিখে দেওয়া হয়েছিল এবং বলা হয়েছিল ফরাসিদের হাতে ধরা পড়লে বাক্যগুলো পড়ে শোনাতে। আর যদি জার্মানরা তাকে ধরে তাহলে তো কথাই নেই। মারধর তো করবেই, মৃত্যুও অবধারিত কারণ নাৎসিরা তাকে গুপ্তচর ছাড়া অন্য কিছু ভাববে না। তাই মরিয়া হয়ে সাইমন ফরাসি প্রতিরোধ বাহিনীর আস্তানা খুঁজতে থাকেন। প্রায় এক সপ্তাহ একে তাকে জিজ্ঞেস করে ফ্রান্সের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় শহর ভেলেন্সে পৌঁছান সাইমন। সেখানে ফরাসি প্রতিরোধ যোদ্ধারা তার সঙ্গে ৩০ বছর বয়সী এক মার্কিন সামরিক কর্মকর্তার পরিচয় করিয়ে দেন। তার নাম মেজর পিটার জে অরটিজ। তিনি এর আগে মিত্রবাহিনীর বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা যাদের বিমান গুলি করে ভূপাতিত করা হয়েছিল, তাদের সীমান্ত দিয়ে পালাতে সহযোগিতা করেছিলেন। ইংরেজি, ফরাসি, জার্মান, স্প্যানিশ, রুশ ও আরবি ভাষার ওপর তার দখল অসাধারণ।
উদ্ধারকর্তা
সাইমনের বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার চার মাস আগে গোপন অভিযানে ফ্রান্সে গিয়েছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের সশস্ত্র বাহিনীর কর্মকর্তা মেজর অরটিজ। তিনি একা নন। তার সঙ্গে ছিলেন ব্রিটিশ স্পেশাল অপারেশনস এক্সিকিউটিভের (এসওই) একজন কর্মকর্তা ও ফরাসি আর্মি রেডিও অপারেটর। ১৯৪০ সালের জুনে প্যারিস পতনের পর মিত্রবাহিনীর হয়ে নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের ইউনিফর্ম পরে ফ্রান্সে প্রথম পা রাখা ব্যক্তি ছিলেন ওই তিন জন। অরটিজ সে সময় যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার (সিআইএ) আগের প্রতিষ্ঠান অফিস অব স্ট্র্যাটেজিক সার্ভিসেসে (ওএসএস) কর্মরত ছিলেন। ফ্রান্সে তাকে পাঠানো হয় গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ ও ফরাসি প্রতিরোধযুদ্ধকে সংগঠিত করার কাজে। সাইমন ভেলেন্সে পৌঁছার পরপরই তার মাথার দাম পাঁচ লাখ ফরাসি ফ্রাঙ্ক ঘোষণা করেছিল নাৎসিরা। তাই তাকে গোপনে ইংল্যান্ডে পাঠাতে যথেষ্ট বেগ পেতে হয় অরটিজকে এবং সময়ও অনেক লাগে। অরটিজের সহায়তায় ফ্রান্স থেকে ইংল্যান্ডে প্রায় এক মাস পর পৌঁছান সাইমন। সেখান থেকে নিউ ইয়র্কে পরিবারের কাছে চিঠিতে তিনি লেখেন, ‘আমি ভালো আছি। নিরাপদে আছি। চিন্তার কোনো কারণ নেই। আমার আগের ঠিকানায় চিঠি লিখো।’ ৬ মে রাতে ফ্রান্সে সাইমনের বিমান ভূপাতিত হওয়ার পর তার মা-বাবার কাছে একটি চিঠি পাঠানো হয়েছিল। তাতে বলা হয়, আপনাদের ছেলে নিখোঁজ। তার সম্পর্কে কোনো তথ্য পেলে দ্রুতই জানানো হবে। স্বাভাবিকভাবেই এক মাস পর সাইমনের চিঠি পেয়ে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে তার পরিবার।
জেমস বন্ড
১৯৮১ সালে ফুসফুসে ক্যানসারে মারা যান সাইমন। তার একটি স্ক্র্যাপবুক ছিল। তাতে তিনি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ সময়ের বিভিন্ন পত্রপত্রিকা ও ম্যাগাজিনে প্রকাশিত প্রতিবেদন কেটে রাখতেন। এমনই এক পেপারকাটিং ছিল অরটিজকে নিয়ে। প্রতিবেদনটি ছিল ১৯৪৬ সালের। ওই প্রতিবেদন ও তাকে ঘিরে আরও লেখা পড়লে বোঝা যায়, তিনি কেবল সাইমনের নয়, আরও অনেকের কাছে যুদ্ধকালে বীর ছিলেন। মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থায় কাজ করার আগে সার্কাসের পারফরমার, খামার ব্যবস্থাপক ও রেইসকার চালক হিসেবে কাজ করেছিলেন অরটিজ। যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা অফিস অব স্ট্র্যাটেজিক সার্ভিসেসে (ওএসএস) তিনি অনেকটাই বাস্তবের জেমস বন্ড ছিলেন যিনি ডেস্কের চেয়ে বাইরে কাজ করতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করতেন বেশি। ১৯১৩ সালে নিউ ইয়র্কে জন্ম হয় তার। বেড়ে ওঠেন ক্যালিফোর্নিয়া ও ফ্রান্সে। ছোটবেলা থেকে অস্থিরচিত্তের মানুষ ছিলেন তিনি। ১৫ বছর বয়সে ফরাসি বোর্ডিং স্কুল ছেড়ে জাহাজের খালাসি হন অরটিজ। তার ওই সিদ্ধান্তে মনঃক্ষুন্ন হন তার মা-বাবা, বিশেষ করে তার বাবা ফিলিপ অরটিজ যিনি ফ্যাশন ম্যাগাজিন প্যারিস ভোগ-এ কর্মরত ছিলেন। তিনি বুঝিয়ে-সুঝিয়ে ছেলেকে ফের স্কুলে যেতে রাজি করান। কিন্তু গ্রীষ্মে স্কুল ছুটির সময় দুঃসাহসিক কাজের সন্ধানে পুরো ইউরোপ চষে বেড়ানো থেকে ছেলেকে কখনো বিরত রাখতে পারেননি তিনি।
১৯৩২ সালে অরটিজ ফের স্কুলত্যাগ করেন এবং ফরাসি বিদেশি সেনাদলে যোগ দেন। ১৯৪০ সালে জার্মানদের হাতে ধরা পড়ার আগ পর্যন্ত ওই সেনাদলেই ছিলেন তিনি। জার্মানরা তাকে যুদ্ধবন্দি হিসেবে আটকে রেখেছিল। বন্দি অবস্থায় বেশ কয়েক বার পালাবার চেষ্টা করেন অরটিজ কিন্তু পারেননি। পরে ভিয়েনা হাসপাতালের এক নার্স তাকে ফ্রান্সে পালাতে সহায়তা করেন। সেখানে তিনি কিছুদিন প্রতিরোধ বাহিনীতে ছিলেন। পরে অরটিজ এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ‘জার্মানদের হাত থেকে পালানোর পর এক মাস প্যারিসে ছিলাম। নাৎসি জার্মানির গোপন পুলিশ বাহিনী গেস্টাপোর সদর দপ্তরে কোনোমতে একটি চাকরি নিয়ে ঢোকার চেষ্টা করেছিলাম কিন্তু পারিনি। পরে মনে হয়েছে, আমার যুক্তরাষ্ট্রে ফেরা উচিত এবং সরাসরি দেশের সেবা করা দরকার। ১৯৪১ সালের শেষে পার্ল হারবারে হামলার পর নিউ ইয়র্কে ফিরে যাই এবং দ্রুত নৌবাহিনীতে যোগ দিই।’
গোপন মিশন
সাইমনের বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার সময় অর্থাৎ ১৯৪৪ সালের মে মাসে ফ্রান্সে ইউনিয়ন ১ নামে গোপন মিশনে ছিলেন অরটিজ। ওই মিশন শেষে তিনি নিজেকে পরবর্তী মিশনের জন্য প্রস্তুত করছিলেন। ওই সময় ফ্রান্সের প্রতিরোধ যুদ্ধ সংগঠিত ও সাইমনের মতো আরও অনেক বিমান বাহিনীর সদস্যকে নিরাপদে সীমান্ত দিয়ে পালানোয় বীরত্বপূর্ণ অবদান রাখায় নেভি ক্রস পদক পান অরটিজ। ইউনিয়ন ১ মিশন শেষের মাসখানেক পর দ্বিতীয় মিশন শুরুর সবুজ সংকেত দেয় যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা অফিস অব স্ট্র্যাটেজিক সার্ভিসেস (ওএসএস) ও ব্রিটিশ স্পেশাল অপারেশনস এক্সিকিউটিভ (এসওই)। অরটিজ অল্প সময়ের মধ্যে তার দল গুছিয়ে ফেলেন। তার দলে ছিলেন ফ্রান্সিস এল কুলিজ নামে এক কর্মকর্তা যিনি উত্তর আফ্রিকায় বিদেশি সেনাদলে কর্মরত ছিলেন। পাশাপাশি ছিলেন ওই সময় ইংল্যান্ডে অবস্থান করা নৌবাহিনীর পাঁচ সদস্য। ১৯৪৪ সালের ১ আগস্ট অরটিজ ও তার দলের সদস্যরা ফ্রান্সের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় গিরিপথ কোল দি সিজিতে বিমান থেকে নামেন। ফরাসি প্রতিরোধ যোদ্ধারা তাদের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। ফরাসি গেরিলা যোদ্ধারা তখন পর্যন্ত প্যারিস পুনর্দখল করতে পারেননি। তবে তারা জার্মান সেনাবাহিনীকে চাপে রেখেছিলেন। পরিস্থিতি দেখা বোঝা যাচ্ছিল, স্বাধীনতা বেশি দূরে নয় কারণ ফরাসি নারী ও পুরুষরা দলে দলে প্রতিরোধ সংগ্রামে যোগ দেন। অরটিজ জার্মান বাহিনীর ওপর চাইলে তখনই হামলা চালাতে পারতেন কিন্তু তিনি উপযুক্ত সময়ের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। তার ধৈর্য ও বিচক্ষণতা দেখে মার্কিন নৌ-কর্মকর্তা জ্যাক আর রিজলার বলেছিলেন, ‘অরটিজের মধ্যে ভয় বলতে কিছু ছিল না। শুধু তাই নয়, জার্মানদের মতো চিন্তা করারও ক্ষমতা ছিল তার।’ আগস্টের ১২ তারিখে অরটিজ সিদ্ধান্ত নেন, আক্রমণের এখনই সময়। শুরু হয় দুই পক্ষের মধ্যে তুমুল লড়াই।
আত্মসমর্পণ
মিত্রবাহিনী ও ফরাসি প্রতিরোধ যোদ্ধাদের একের পর এক হামলায় জার্মানরা কোণঠাসা হয়ে পড়ে। তবে কোণঠাসা হলেও পাল্টা আক্রমণ তারা অব্যাহত রাখে। মন্তগিরোদ নামে এক শহরে নাৎসি বাহিনী আহত গেরিলা যোদ্ধাদের হত্যা করে, গির্জায় আগুন ধরিয়ে দেয় এবং শহর জ্বালিয়ে দেয়। লড়াইয়ের একপর্যায়ে মিত্রবাহিনী ও গেরিলা যোদ্ধারা জার্মানদের পাল্টা আক্রমণের মুখে পিছু হটতে বাধ্য হয়। সে সময় অরটিজসহ কয়েকজন যোদ্ধা সেন্ট্রন নামে একটি গ্রামে আশ্রয় নিয়েছিল। তাদের অবস্থান জানতে পারে জার্মান সেনারা। তারা গ্রামটিতে আক্রমণের জন্য প্রস্তুতি নেয়। অরটিজ ও তার সঙ্গীরা বুঝতে পারেন, পুরো গ্রাম জার্মানরা ঘিরে ফেলেছে এবং যেকোনো সময় হামলা হবে। সেক্ষেত্রে গ্রামটির বাসিন্দাদের বাঁচার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। জার্মানরা এর আগেও গোটা গ্রাম বা শহর জ্বালিয়ে দিতে বা গণহত্যা চালাতে পিছপা হয়নি। গ্রামবাসীরা অরটিজের কাছে অনুরোধ করেন, তারা যেন সেখান থেকে চলে যান। পরে ওই দিনের ঘটনা স্মরণ করে অরটিজ বলেছিলেন, ‘গ্রামের ওই বাসিন্দাদের প্রতি গভীর দায় সে সময় অনুভব করেছিলাম। তাই গ্রামবাসীদের ছেড়ে দেওয়ার শর্তে আমরা আত্মসমর্পণ করি। আমি জানতাম, আমার ওই সিদ্ধান্তের ফল কী হবে। শত্রুদের হাতে আমাদের নির্যাতিত হতে হবে এবং প্রাণ হারাতে হবে। আমাদের সাধারণ যুদ্ধবন্দি হিসেবে যে দেখা হবে না, আমি জানতাম। কিন্তু কিছু করার ছিল না। গ্রামের এতগুলো মানুষের জীবন আমাদের কারণে হুমকির মুখে পড়তে পারে না।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমার সঙ্গের দুজন মেরিন সার্জেন্ট রিজলার ও জন বোডনার হয়তো আমার সিদ্ধান্তের সঙ্গে শুরুতে একমত ছিলেন না। যুদ্ধক্ষেত্রে সেনারা মনে করেন, যতক্ষণ লড়াই চালিয়ে যাওয়া যায়, ততক্ষণ আত্মসমর্পণের প্রশ্নই ওঠে না। যাই হোক, আমি কেন আত্মসমর্পণের সিদ্ধান্ত নিয়েছি, তা বোডনার ও রিজলারকে ব্যাখ্যা করি। তাদের আমি পালিয়ে যাওয়ারও পরামর্শ দিই। কিন্তু তারা আমার পরামর্শ শোনেনি। আমি যা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, সেটাকেই সঠিক মনে করে তারা।’ আত্মসমর্পণের ঘোষণা শুনে জার্মানরা শুরুতে গুলি চালানো অব্যাহত রাখে। এরপর তারা থামে। ইয়োহান কোলব নামে জার্মান এক মেজরের সঙ্গে অরটিজের বাক্যবিনিময় হয়। অরটিজ ওই মেজরকে জানান, তার সঙ্গীরা সবাই আত্মসমর্পণ করবে। তবে এই নিশ্চয়তা দিতে হবে, কোনো গ্রামবাসীর গায়ে যেন আঁচড় না লাগে। কোলব কথা দেন। অরটিজ চিৎকার করে রিজলার ও বোডনারকে বের হয়ে আসতে বলেন। মেজর কোলবসহ বাকি জার্মানরা আশা করেছিলেন, কমপক্ষে ৪০ থেকে ৫০ জন সেনা বের হবে। কিন্তু তারা মাত্র দুজনকে দেখে ক্ষেপে যায়। সব মিলে মাত্র তিন সেনা ওই অঞ্চলে তাদের দুশ্চিন্তায় ফেলেছিল, এ যেন তারা মানতেই পারছিলেন না। বন্দি করার পর অরটিজ, রিজলার ও বোডনারকে জার্মানির উত্তরাঞ্চলে এক ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়া হয়। ১৯৪৫ সালের এপ্রিলে ব্রিটিশ সেনারা ক্যাম্পটিকে মুক্ত করেন এবং মিত্রবাহিনীর ওই তিন সদস্য যার যার দেশে ফিরে যান।
তীব্র তাপপ্রবাহে অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। এই সময়টা কী করবেন জেনে রাখুন
১. পানিশূন্যতা : গরমে ঘামে শরীর থেকে প্রচুর লবণপানি বের হয়ে যায় বলে শরীরে পানিশূন্যতা দেখা দেয়। সাধারণত এর ফলে শরীরের রক্তচাপ কমে যায়, দুর্বল লাগে, মাথা ঝিমঝিম করে। পানিস্বল্পতা গরমের খুবই সাধারণ সমস্যা হলেও অবহেলা করলে তা মারাত্মক হয়ে যেতে পারে। এ সময়ে শরীরের কোষ সজীব রাখতে প্রচুর পানি ও তরল খেতে হবে। লবণের অভাব পূরণ করতে খাওয়ার স্যালাইন খাওয়া যেতে পারে। শরীরে পানি কম হলে প্রস্রাব ঘন, হলুদ ও পরিমাণে কম হবে এবং জ্বালাপোড়া বা প্রস্রাবের সংক্রমণ হতে পারে। যে পর্যন্ত না প্রস্রাব স্বাভাবিক রং ফিরে পাবে, সে পর্যন্ত পর্যাপ্ত পানি ও পানীয় জাতীয় খাবার খেতে হবে। চা ও কফি যথাসম্ভব কম পান করা উচিত।
২. ডায়রিয়া : চারদিকে ভয়াবহ গরমে যখন গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে যায়, ঠিক এই সময় চোখের সামনে যে ঠা-া পানীয় পাক না কেন, তা দিয়ে গলা ভেজানোতেই মন অস্থির হয়ে যায়। এভাবে বিশুদ্ধ বা দূষিত পানি না জেনেই অনেকে পান করে ফেলেন। এভাবে এই খাদ্য ও পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন অনেকে। গরমে এই দূষিত খাবার খেয়েই অনেকে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে থাকেন। একটু সচেতন হলে এটি এড়ানো যায়। বাসি, পচা খাবার, হোটেলের খাবার, রাস্তার খাবার না খাওয়া ভালো। পাতলা পায়খানা শুরু হলে খাবার স্যালাইন খেতে হবে বারবার।
৩. সর্দিজ্বর : শিশুদের জ্বর হলে শরীরে সঞ্চিত শর্করা বেশি হারে খরচ হতে থাকে। এ সময় শরীর থেকে প্রচুর পানি, ঘাম ও প্রস্রাব বেরিয়ে যায়। এ অবস্থায় শিশুকে ফলের রস দিলে খাবারের রুচি বাড়বে এবং স্যুপ খাওয়ালে ক্ষুধা বাড়বে। ফলে শিশুরা খেতে আগ্রহী হবে।
৪. ছত্রাক সংক্রমণ : গরমে শরীরে ঘাম জমে ছত্রাক সংক্রমণ দেখা দিতে পারে। ঘাম শরীরের বিভিন্ন ভাঁজে বিশেষ করে কুঁচকিতে, আঙুলের ফাঁকে ও জননাঙ্গে জমা হয়ে সেখানে ছত্রাক সংক্রমণের পথ বিস্তার করে দেয়। তাই এ সময়ে ছত্রাক সংক্রমণ এড়াতে হলে শরীরের ভাঁজগুলোতে ঘাম জমতে দেওয়া যাবে না। প্রয়োজনে ছত্রাকবিরোধী পাউডার এসব স্থানে ছড়িয়ে দেওয়া যেতে পারে।
৫. হিটস্ট্রোক : হিটস্ট্রোক হলে ঘাম বন্ধ হয়ে অজ্ঞান হয়ে যেতে পারে। গরমে কেউ অজ্ঞান হলে কিংবা হিটস্ট্রোক করলে তার শরীরের তাপমাত্রা কমানোর চেষ্টা করুন। যথাসম্ভব কম তাপমাত্রার ছায়াযুক্ত স্থানে ও বাতাসের নিচে নিয়ে যান। জামাকাপড় আলগা করে দিন। পানি ও পানীয়জাতীয় খাবার খাওয়ানোর চেষ্টা করুন।
কাঁধে সবসময় ব্যথা হলে তাকে ফ্রোজেন শোল্ডার বা স্টিফ শোল্ডার বা এডহেসিব ক্যাপসুলাইটিস বলে। এই রোগে জয়েন্টের পর্দা বা ক্যাপসুলে প্রদাহ, সংকোচন ও স্ক্যার টিস্যু হয়। জোড়ার হাড়গুলোর মধ্যে এবং ক্যাপসুল ও ক্যাপসুলের বাইরের টিস্যুর মধ্যে জমানো বন্ধন তৈরি হয়। কাঁধ শিক্ত হয় বা জমে যায়। আবার জোড়ার ফ্লুইড বা পানি শুকিয়ে যাওয়ার জন্যও জয়েন্ট স্টিফ হয় এবং মুভমেন্ট সীমিত হয়। রোগী ৩টি অবস্থার মধ্যদিয়ে রোগকাল অতিক্রম করে। প্রথম অবস্থায় কাঁধে ব্যথা হয় এবং নড়াচড়া সীমিত হয়। সাধারণত ৬-১২ সপ্তাহ থাকে। মধ্য অবস্থায়, কাঁধ শক্ত বা জমে যায়। ব্যথার তীব্রতা কম। জমানো অবস্থা ৪-৬ মাস থাকে। শেষ অবস্থায়, স্টিফনেস আস্তে আস্তে কমে আসে ও ব্যথা কমে যায়। এক বছরের অধিক সময় চলতে থাকে।
ঝুঁকিপূর্ণ কারা? : ৪০ থেকে ৬০ বছর বয়সের মানুষ এবং পুরুষের তুলনায় মহিলারা দুইগুণ বেশি ভোগে। ডায়াবেটিক ও থাইরয়েড আক্রান্তদের জমানো কাঁধ বেশি হয়। হৃদরোগ, ফুসফুসের রোগ, স্ট্রোক, পারকিনসোনিসম ও আর্থ্রাইটিস রোগীদের জমানো কাঁধ হয়। মাথায় ও কাঁধে অপারেশন, কাঁধে আঘাত পেয়ে দীর্ঘদিন মুভমেন্ট না করলে হতে পারে। বার্সাইটিস, টেনডোনাইটিস এবং পেশির সমস্যা ও ইমপিঞ্জমেন্ট জমানো কাঁধ করে।
লক্ষণ : সব সময় কাঁধে ব্যথা থাকে- রাতে বেশি হয়। কাঁধ বা বাহুর নড়াচড়া সবদিকে সীমিত হয়। হাত দিয়ে কোনোকিছু তোলা বা হাত ওপরে ওঠানো যায় না। চুল আঁচড়ানো, জামা পরিধান বা বোতাম লাগানো কষ্টকর। স্টিফ কাঁধে কাত হয়ে ঘুমানো যায় না ব্যথার জন্য।
চিকিৎসা: প্রধান চিকিৎসা হলো ব্যায়াম। তবে পরীক্ষা, এক্স-রে, আলট্রাসনোগ্রাফি করে এর কারণ বের করে চিকিৎসা দিতে হবে। চিকিৎসা নিলে ৩-৬ মাস সময় লাগে ভালো হতে। ভালো না হলে আর্থ্রোস্কোপিক পদ্ধতিতে ছোট ছিদ্রের মাধ্যমে জোড়ায় আর্থ্রোস্কোপ প্রবেশ করিয়ে ক্যাপসুল রিলিজ ও স্যাব অ্যাকরোমিয়ন বিসঙ্কোচন করা হয়। আর্থ্রোস্কোপিক চিকিৎসা ব্যবস্থায় রোগী দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠবে।
আগামী চেস গিল্ড স্কুল দাবায় চ্যাম্পিয়ন হয়েছে আইয়ান রহমান ও মনন রেজা নীড়। একক ইভেন্টের প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণী ক্যাটাগরিতে আইয়ান ও ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণী ক্যাটাগরিতে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে নীড়। ৭ রাউন্ডের খেলায় আইয়ান ও নীড় দুজনই পেয়েছে সাড়ে ছয় পয়েন্ট করে।
বিটজ দলগত বিভাগে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে এলিগেন্ট চেস একাডেমি। এই দলে খেলেছে জারিফ হক আফনান, তাসরিক সায়হান, সিয়াম চৌধুরী ও নীলাভা চৌধুরী। আজ শনিবার দাবা ফেডারেশন কার্যালয়ে শেষ হয়েছে এই প্রতিযোগিতা।
আগামী চেস গিল্ডের আয়োজনে গত ২৮ সেপ্টেম্বর শুরু হয় ‘আমরা ৯২’ আগামী চেস গিল্ড স্কুল রেটিং টুর্নামেন্ট। সুইস লিগ পদ্ধতিতে হয়েছে খেলা। একক ও দলগত দুই বিভাগে অংশ নেয় ১৪৫ জন দাবাড়ু। টুর্নামেন্টে বিজয়ীরা ট্রফি, মেডেল ও সার্টিফিকেটের পাশাপাশি পেয়েছে ৭০ হাজার টাকা।
টুর্নামেন্ট শেষে বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন গ্র্যান্ডমাস্টার রিফাত বিন সাত্তার, আন্তর্জাতিক মহিলা মাস্টার রানী হামিদ। উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ দাবা ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ শাহাবুদ্দিন শামীম।
টানা ৬ ম্যাচ জিতে লা লিগার শীর্ষে উঠে এসেছিল জিরোনা। আগের রাতে সেভিয়াকে হারানো বার্সেলোনা সেই জিরোনাকে পেছনে ফেলে। আর রিয়াল মাদ্রিদ এবার উড়তে থাকা জিরোনাকে হারিয়ে লা লিগার কর্তৃত্ব পুনরুদ্ধার করেছে।
শনিবার মন্তিলিভি স্টেডিয়ামে জিরোনাকে ৩-০ গোলে হারিয়েছে কার্লো আনচেলত্তির দল। রিয়ালের হয়ে গোল তিনটি করেছেন জোসেলু, অঁরেলিয়ে চুয়ামেনি ও জুড বেলিংহাম।
আট ম্যাচের সাতটিতে জিতে রিয়ালের পয়েন্ট এখন ২১। সমান ম্যাচে ২০ পয়েন্ট নিয়ে দুইয়ে বার্সেলোনা। আর টানা ছয় জয়ের পর রিয়ালের কাছে হেরে যাওয়া জিরোনা ১৯ পয়েন্ট নিয়ে আছে তিনে।
সপ্তাহ খানেক আগেই আতলেতিকো মাদ্রিদে গিয়ে ৩-১ গোলে হেরেছিল রিয়াল। এবার জিরোনায় গিয়ে
প্রথমার্ধেই ২ গোলে এগিয়ে যায় আনচেলোত্তির শিষ্যরা। এর মধ্যে ১৭ মিনিটে বেলিংহামের ক্রস থেকে বল জালে পাঠান জোসেলু। আর ২২ মিনিটে টনি ক্রুসের কর্নার থেকে হেডে ব্যবধান দ্বিগুণ করেন চুয়ামেনি।
রিয়াল ব্যবধান ৩-০ করে ৭১ মিনিটে। জোসেলুর শট জিরোনা গোলরক্ষক প্রতিহত করলেও বিপদমুক্ত করতে পারেননি। নাগালে বল পেয়ে দারুণভাবে বল জালে পাঠান বেলিংহাম। এটি রিয়ালের হয়ে ৭ ম্যাচে তার অষ্টম গোল।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নিতে চায় তার পরিবার। ইতোমধ্যে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। এদিকে খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়ার বিষয়টি জানতে পেরেছেন জার্মান বিএনপি ও ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর বিএনপি নেতারা।
তারা বৃহস্পতিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে জার্মানিতে নেওয়ার কথা ছিল উন্নত চিকিৎসার জন্য। কিন্তু সে সময় শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়। এবার চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে আনার কথা শুনছি। জার্মানিতে খালেদা জিয়ার যে চিকিৎসা দরকার তার আধুনিক সকল সুযোগ সুবিধা জার্মানিতে রয়েছে। আমরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি যদি চেয়ারপারসনকে জার্মানিতে আনা হয় তাহলে আমরা তার জন্য কিছু করার সুযোগ পাব। জার্মানিতে তার ভালো চিকিৎসা হবে।’
এর অংশ হিসেবে গত মঙ্গলবার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল জার্মান দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স (সিডিএ) জান রল্ফ জানোস্কির সঙ্গে কথা বলেছেন। জবাবে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত জানোস্কি বলেছেন, ‘খালেদা জিয়া যে ধরনের সমস্যায় ভুগছেন তার সবচেয়ে ভালো চিকিৎসা বিশ্বের যে কয়েকটি দেশে সম্ভব জার্মানি তার অন্যতম। বাংলাদেশ সরকার অনুমতি দিলে জার্মানিতে তার সুচিকিৎসা হতে পারে।’
গত ৯ আগস্ট খালেদা জিয়াকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গত দেড় মাসের বেশি সময় ধরে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় খালেদা জিয়া ঢাকায় এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। মেডিকেল বোর্ডের পক্ষ থেকে অনেক দিন ধরে তার লিভার প্রতিস্থাপনের জন্য বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার পরামর্শ দিয়ে আসছে।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক এ জেড এম জাহিদ হোসেন সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, লিভার সিরোসিসের কারণে খালেদা জিয়ার হৃদ্যন্ত্র ও কিডনির জটিলতা বেড়েছে। তিনি হাসপাতালে কখনো কিছুটা ভালো থাকছেন, পরক্ষণেই তার স্বাস্থ্যের পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে। ফলে তাকে সার্বক্ষণিক চিকিৎসা দিতে হচ্ছে।
বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘লিভার সমস্যার কারণে ম্যাডামের শ্বাস কষ্ট হয়। ইতোমধ্যে তাকে দুইবার করোনারী কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) রাখা হয়েছিল। লিভার প্রতিস্থাপন করতে পারলে শ্বাসকষ্টটা হতো না।’
এদিকে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার উন্নতির লক্ষণ না থাকায় তার পরিবার ও বিএনপির পক্ষ থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশে পাঠানোর বিষয়টি এখন সামনে এসেছে।
খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়া হতে পারে এমন খবরে তার উন্নত চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি ও খোঁজখবর নিচ্ছেন জার্মান বিএনপি নেতারা।
জার্মান বিএনপির সভাপতি আকুল মিয়া বৃহস্পতিবার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘জার্মানিতে ম্যাডামকে উন্নত চিকিৎসার জন্য আনা হতে পারে বলে জানতে পেরেছি। আমরা খুবই খুশি। কারণ জার্মানিতে আসলে আমরা তার চিকিৎসার বিষয়ে আমাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করতে পারব। চেয়ারপারসনের যে চিকিৎসা দরকার তা সকল ব্যবস্থা জার্মানিতে রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা ম্যাডামের মুক্তি, তার উন্নত চিকিৎসা ও গণতন্ত্র ফেরাতে দেশে চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে জার্মানিতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছি। আগামী ৯ অক্টোবর আমাদের কর্মসূচি রয়েছে। জার্মান বিএনপির উদ্যোগে রোডমার্চ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করব জার্মান পার্লামেন্টের সামনে। ’
আকুল মিয়া বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে উন্নত চিকিৎসার জন্য যখন বিদেশে নেওয়ার আলোচনা চলছিল তখনও জার্মানিতে নেওয়ার কথা ভাবা হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়েছিল। সে সময় তারেক রহমানের সেবা করতে না পারলেও চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সেবা করতে পারব বলে আশা করছি। তার চিকিৎসা জার্মানিতে করতে পারলে আমরা ধন্য হবো।’
গত ২৫ সেপ্টেম্বর সোমবার খালেদা জিয়ার ছোট ভাই সাঈদ ইস্কান্দার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বরাবর আবেদন করেছেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইনি মতামত জানতে চেয়ে আবেদনের কপি আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার অনুমতি চেয়ে করা আবেদনটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। খালেদা জিয়ার ভাইয়ের আবেদনটি অল্প সময়ের মধ্যে যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে।’
গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী বা জড়িত অভিযোগে দেশের কিছু ব্যক্তির ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করার কথা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এ বিষয়টি নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিএনপি পাল্টা বক্তব্য দিতেও শুরু করেছে। এতে বিরোধীপক্ষেরই ঝুঁকি দেখছে আওয়ামী লীগ। কিন্তু সুষ্ঠু নির্বাচন করার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের এই সবপক্ষই চাপে পড়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
তারা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের এ অবস্থান নিয়ে রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি একে অন্যকে ঘায়েল করার চেষ্টা হলেও মূলত নির্বাচনী রাজনীতিতে এক ধরনের পরিবর্তন আসবে। একপক্ষ নির্বাচন প্রতিহত করার ঘোষণা দিলেও সেই পথ থেকে তাদেরও সরতে হবে। আবার সরকারপক্ষ যেনতেন নির্বাচন করে ক্ষমতায় বসে যাবে সেই সুযোগও থাকছে না। যে যাই বলুক নির্বাচনী রাজনীতিতে সামনের দিনগুলোতে এ পরিবর্তন আসতেই হবে।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সবপক্ষের জন্য। তাদের অবস্থানে বিএনপি উৎফুল্ল হয়ে যাবে, আর আওয়ামী লীগ ধরাশায়ী হয়ে যাবে ব্যাপারটা এমন নয়। বরং এতে এক ধরনের সমাধানের পথ খুলে যেতে পারে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের নির্দিষ্ট তারিখ না দিলেও জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে হবে এমন আভাস দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
কিন্তু গত বছর থেকেই যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন ধারাবাহিকভাবে বাংলাদেশে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের প্রত্যাশার কথা জানিয়ে আসছে। তাদের একাধিক প্রতিনিধি বাংলাদেশ সফর করে সরকার ও বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে কথা বলেছে। সুষ্ঠু নির্বাচনে সমর্থনের কথা জানিয়ে গত ২৪ মে বাংলাদেশের জন্য নতুন ভিসানীতি ঘোষণা করে যুক্তরাষ্ট্র। যার প্রয়োগের কথা জানানো হলো গত শুক্রবার।
এর আগে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে র্যাবের কয়েকজন কর্মকর্তা ও র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
ভিসানীতি প্রয়োগের প্রক্রিয়া শুরুর মধ্য দিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র তার অনড় অবস্থানের বিষয়টি আবার জানাল। দেশটির এ অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দেখছে দুভাবে। একটি হলো অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য সরকারের ওপর চাপ অব্যাহত রাখা। দ্বিতীয়টি হলো, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের এক দফা দাবিতে আন্দোলন করা বিএনপিকে নির্বাচনে আনা। এর বাইরে অন্য কোনো বিরূপ প্রভাব দেখছে না ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দলটির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, সরকার এত দিন যেটা চেয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র সেটাই আশা করছে।
তবে বিএনপি ভিসানীতির জন্য সরকারকে দায়ী করেছে এবং সেটা তাদের নেতাকর্মীদের এক দফা আন্দোলনে আরও উজ্জীবিত করবে, এমন দাবি করেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কারণে আগামী নির্বাচন যেনতেনভাবে হয়ে যাবে সেটি ভাবার কোনো সুযোগ নেই। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের প্রস্তুতি সবাইকে নিতে হবে। এর বাইরে কোনো রাজনৈতিক দল, গোষ্ঠী, বাহিনী ও সরকারি কর্মকর্তা যেই হোক শান্তিপূর্ণ নির্বাচনকে প্রভাবিত করা বা একপেশে করার চিন্তা বা পদক্ষেপ গ্রহণ করে এগিয়ে যেতে চাইলে, পড়তে হবে ভিসানীতির আওতায়। যুক্তরাষ্ট্রের অনড় অবস্থান এখন পর্যন্ত সেটাই ইঙ্গিত করে।’
সরকারের পদত্যাগ ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দাবি করে এক দফা দিয়ে আন্দোলনে আছে বিএনপি। অন্যদিকে সরকারি দল আওয়ামী লীগ বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচন করার জন্য এক দফা ঘোষণা করেছে। তারাও শান্তি-সমাবেশসহ নানা কর্মসূচি নিয়ে মাঠে আছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তার সরকারও সুষ্ঠু নির্বাচন চায়। সেটা নিশ্চিত করতে তারা অঙ্গীকারবদ্ধ। সেই সঙ্গে আওয়ামী লীগ এটাও বলে আসছে, তাদের সরকারের চাওয়া আর যুক্তরাষ্ট্রের চাওয়া একই।
নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দুভাবে দেখলেও দলটির বিভিন্ন পর্যায়ে নানা রকম কানাঘুষা রয়েছে। ভেতরে-ভেতরে ‘ভেঙে পড়লেও’ ওপরে শক্ত মনোভাব ধরে রাখার চেষ্টা করছেন নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা। ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কথা জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তি সম্পর্কে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতার কাছে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তারা বেশ বিরক্তি প্রকাশ করেন। তারা বলেন, সরকার ও আওয়ামী লীগের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নতুন কিছু নয়। দুপক্ষের অবস্থান একই বলেও দাবি করেন ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষস্থানীয় নেতারা।
সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নির্বাচনে বাধাদানকারীদের বিরুদ্ধে আমেরিকার যে অবস্থান তাতে বিএনপিরই ক্ষতি, কারণ তারা ঘোষণা দিয়েছে নির্বাচন হতে দেবে না।’ তিনি বলেন, সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা ও আমরা প্রথম থেকেই বলে আসছি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চায় সরকার। সেখানে সব দল নির্বাচনে আসুক সেই আহ্বানও জানানো হয়েছে।
শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলারের দেওয়া সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত এবং সহযোগিতা করার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ওই ব্যক্তিদের মধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, ক্ষমতাসীন দল ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্যরা রয়েছেন। শান্তিপূর্ণ উপায়ে বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সমর্থনে যুক্তরাষ্ট্র প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতারা জোরালোভাবে দাবি করেন, যুক্তরাষ্ট্র তো বিএনপির দাবি সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেনি। যুক্তরাষ্ট্রের যে অবস্থান সেখানে তো তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দিতে হবে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করতে হবে এসব বলা হয়নি। ফলে ভিসা বিধিনিষেধ আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করায় আওয়ামী লীগ বা সরকার কেন বেকায়দায় পড়বে? আমরা মনে করি, বিএনপিই তো বেকায়দায় রয়েছে। কারণ, তাদের দাবি অসাংবিধানিক। আর অসাংবিধানিক উপায় অবলম্বন করছে। তাদের দাবি, যুক্তরাষ্ট্রের এই অনড় অবস্থান বিএনপির বিরুদ্ধে গেছে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খানের দাবি, ‘যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নিয়ে শঙ্কিত বিএনপি। তারা তো বিএনপির একটা দাবির কথাও বলে নাই।’ সরকার বা আওয়ামী লীগ ভীত ও শঙ্কিত নয় জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আপনাদের উচিত বিএনপির প্রতিক্রিয়া জানা।’
আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক সম্পাদক শাম্মী আহমেদ বলেন, ‘আমরা যেমন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন চাই, আমেরিকারও একই রকম চাওয়া।’
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য মোহাম্মদ এ আরাফাত বলেন, ‘এটা আমাদের জন্য নতুন কিছু নয়। যুক্তরাষ্ট্র যে এমন কিছু করবে এটা প্রত্যাশিতই ছিল। এটা সিম্পল ব্যাপার আমাদের জন্য।’
ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় বিরোধী দল আছে বলে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে যে বক্তব্য এসেছে সে সম্পর্কে জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিবৃতিতে কোন বিরোধী দলের কথা বলা হয়েছে তা স্পষ্ট করা হয়নি। তাই এ বিষয়ে কিছু বলতে পারব না। তবে আজকে দেশে গণতন্ত্রের যে সংকট তার জন্য সরকার এককভাবে দায়ী। তা ছাড়া এর আগে বাইডেন প্রশাসন তাদের দেশে যে গণতন্ত্রের সম্মেলন করেছে তাতে বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানায়নি।’
ভিসানীতি প্রয়োগের জন্য সরকারকে দায়ী করে তিনি বলেন, ‘আজকে আওয়ামী লীগ বিগত দুটি বিতর্কিত সংসদ নির্বাচন করার পর আবারও আগামী নির্বাচন একতরফা করতে যে পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে সে কারণে যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা আরোপ করছে। এর দায় সম্পূর্ণভাবে আওয়ামী লীগকে নিতে হবে। আজকে বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপ আগের ঘোষণার ধারাবাহিকতা। প্রথমদিকে নিষেধাজ্ঞা ও ভিসানীতি বাংলাদেশের রাজনীতিতে, সাধারণ মানুষের ভেতর যে বড় ধাক্কা মনে হয়েছিল, ঘোষণা আসার পর সেটা মনে হয়নি। তবে কোনো একটা সমীকরণ থেকেই যুক্তরাষ্ট্র এই পদক্ষেপ নিয়েছে। এর প্রভাব কত দূর যাবে সেটা এখনো পরিষ্কার নয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও প্রশাসনে কী বার্তা যাবে সেটা পরিষ্কার নয়। তবে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা তাদের বৈশি^ক চর্চারই অংশ। মূল কথা হলো, এটা সবার জন্যই চাপ।’
বিশ্বকাপের দল ঘোষণা নিয়ে চলছে নানা নাটকীয়তা। রাতটা পোহালেই বাংলাদেশ দল উড়াল দেবে ভারতের গোয়াহাটিতে। তবে এখনও ঘোষণা করা হয়নি দল। বিসিবি জানিয়েছে, নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে চলমান তৃতীয় ওয়ানডের ম্যাচ শেষেই জানানো হবে বিশ্বকাপের দল।
প্রচুর আলোচনা ও জল্পনা–কল্পনার পর আজ বিশ্বকাপে নিজেদের স্কোয়াড ঘোষণা করবে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। বিসিবির ফেসবুক পেজে আজ দুপুর ১টা ২৮ মিনিটে একটি ভিডিও পোস্ট করা হয়। সেখানে দেখা যায় বিসিবির লোগোসংবলিত বক্সে করে গুরুত্বপুর্ণ কিছু নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ভিডিও–র শেষে প্রশ্ন করা হয়েছে, বলুন তো ভেতরে কি?
বিকেল ৫টা ৪৩ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় সন্ধ্যা পৌণে ৬টায় ঘোষণা করা হবে দল। কিন্তু ৫টা ৪০ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় তৃতীয় ওয়ানডের শেষেই দল ঘোষনা করা হবে।
তার নাম শেখ মোহাম্মদ আসলাম। একসময় সুইডেন ছিলেন বলে পরিচিত হয়ে ওঠেন স্ইুডেন আসলাম নামে। তেজগাঁও এলাকার এই শীর্ষ সন্ত্রাসী একসময় ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ড বা অপরাধ জগৎ কাঁপাতেন। ২৭ বছর ধরে আছেন কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কারাগারে। হত্যাসহ ১৭ মামলার একটি ছাড়া বাকিগুলোতে জামিন পেয়েছেন তিনি। কিন্তু বহু দিনের পুরনো প্রতিপক্ষের হাতে প্রাণ হারানোর শঙ্কায় জামিনের জন্য আবেদন করছেন না তিনি।
মোহাম্মদপুর এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমামুল হাসান হেলাল ওরফে পিচ্চি হেলালও জামিনের আবেদন করছেন না। প্রায় ২০ বছর ধরে কারাগারে থাকা হেলালের বিরুদ্ধে আছে অন্তত এক ডজন মামলা। বেশিরভাগ মামলায় জামিন হয়ে গেছে। এই দুজনের মতোই কারা হাজতে থাকা শীর্ষ সন্ত্রাসীরা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছেন না। এ ছাড়া তাদের বিরুদ্ধে কেউ সাক্ষ্যও দিতে আসেন না আদালতে। তারা বছরের পর বছর ধরে কারাগারে থাকলেও সমস্যা হচ্ছে না। অনেকেই অসুস্থ না হয়েও বছরের পর বছর হাসপাতালে আরামে
থাকছেন। বাইরে থাকা তাদের সহযোগীদের সঙ্গেও যোগাযোগ থাকছে। এই সহযোগীরাই তাদের হয়ে চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধ করছেন।
পুলিশের তালিকায় ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীর নাম আছে যাদের ধরিয়ে দিতে পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। অবশ্য এই তালিকায় সুইডেন আসলাম নেই। তালিকা করা হয় ২০০১ সালের ২৬ ডিসেম্বর। এদের মধ্যে ১৩ জন বিদেশে আত্মগোপন করে আছেন। কারাগারে আছেন ৬ জন, মারা গেছেন ৩ জন। একজনের কোনো হদিস নেই।
এই শীর্ষ সন্ত্রাসীদের আটজনকে ১ লাখ টাকা এবং ১৫ জনকে ৫০ হাজার টাকা পুরস্কারের ঘোষণা দেওয়া হয়। এর মধ্যে পিচ্চি হান্নান র্যাবের ক্রসফায়ার, গণপিটুনিতে আলাউদ্দিন ও কামাল পাশা ওরফে পাশা কারাগারে মারা গেছেন। কালা জাহাঙ্গীর বেঁচে আছেন নাকি আত্মগোপনে, কেউ বলতে পারছেন না। পিচ্চি হেলাল, টিটন, ফ্রিডম সোহেল ও কিলার আব্বাস কারাগারে আছেন। খোরশেদ আলম ওরফে রাশু কিছুদিন আগে ছাড়া পেলেও কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আবার আটক করেছে। মশিউর রহমান কচি, সুব্রত বাইন, আমিন রসুল সাগর. ইমাম হোসেন, প্রকাশ কুমার বিশ্বাস, মোল্লা মাসুদ, শামীম আহমেদ, হারিস আহমেদ, তানভিরুল ইসলাম জয়, জাব্বার মুন্না, জাফর আহমেদ, কামরুল হাসান হান্নান ওরফে ছোট হান্নান দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। তাদের ধরতে ইন্টারপোলের রেড নোটিস জারি করা আছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে আসার চেষ্টা করছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে তাদের ব্যবহার করার চেষ্টা চলছে। পাশাপাশি আন্ডারওয়ার্ল্ডে একে অপরকে ঘায়েল করার চেষ্টা চলছে। সম্প্রতি রাজধানীর তেজগাঁও এলাকায় শীর্ষ সন্ত্রাসী মামুনকে গাড়ি থামিয়ে গুলি করে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। ভাগ্যক্রমে তিনি প্রাণে বেঁচে গেলেও গুলিবিদ্ধ এক পথচারী সংকটাপন্ন অবস্থায় হাসপাতালে আছেন। এ ঘটনায় শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমন জড়িত বলে পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আন্ডারওয়ার্ল্ড উত্তপ্ত হওয়ার আশঙ্কা করছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোও। দেশের বাইরে থাকা সন্ত্রাসীরা নিজেদের সহযোগীদের মাধ্যমে নতুন করে আধিপত্য বিস্তারের জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। এমনকি কারাগারে থাকা সন্ত্রাসীরাও সহযোগীদের নানা বিষয়ে বার্তা দিচ্ছে। এর মধ্যে কেউ কেউ রাজনীতির সঙ্গেও যুক্ত হতে চাইছে। যে কারণে সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে পুলিশ সদর দপ্তর সব কটি ইউনিট, রেঞ্জ ডিআইজি ও জেলার এসপিদের বিশেষ বার্তা পাঠানো হয়েছে। তা ছাড়া আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলের সদর দপ্তরে আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীদের বিষয়ে নতুন করে চিঠি পাঠানো হয়েছে। কারাগার কর্তৃপক্ষকেও হাজতি ও বন্দি সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
জানা গেছে, যেসব সন্ত্রাসী দীর্ঘদিন ধরে কারাগারে আটক আছে, তাদের একটি তালিকা করেছে একটি সংস্থা। এ বিষয়ে বলা হয়েছে, আন্ডারওয়ার্ল্ডের সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে মামলা থাকলেও তারা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছে না। তারা কারাগারকেই নিরাপদ মনে করছে।
কারা সূত্র জানায়, শীর্ষ সন্ত্রাসী সুইডেন আসলাম একটি মামলায় জামিন না নেওয়ায় কারাগারে আছেন। বাকি সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। ২৭ বছরের কারাজীবনে তার দুইবার হার্ট অ্যাটাক হয়েছে। বেশিরভাগ সময় কেটে যাচ্ছে হাসপাতালে থেকেই। হুইলচেয়ারে করে চলাফেরা করেন সব সময়। মোবাইল ফোনে তিনি নিয়মিত যোগাযোগ করেন সহযোগীদের সঙ্গে। তার স্ত্রী আয়েশা নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন।
সুইডেন আসলামের বিষয়ে তার এক আত্মীয় দেশ রূপান্তরকে বলেন, এলাকায় তার যখন একক আধিপত্য ছিল, তখন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির একাধিক নেতার সঙ্গে সুসম্পর্ক ছিল। তারাই এখন তার বিরুদ্ধে। সুইডেন আসলাম বের হয়ে এলে প্রতিপক্ষরাই তাকে মেরে ফেলবে, এমন শঙ্কা আছে। এসব দিক বিবেচনা করেই তিনি বের হতে চাইছেন না। কারাগারেই তিনি ভালো আছেন।
জানা গেছে, সুইডেন আসলামের বিরুদ্ধে মামলাগুলোতে কোনো সাক্ষীও পাওয়া যায় না। ১৯৮৬ সালে তিনি অপরাধ জগতে যুক্ত হন। ওই বছর পূর্ব রাজাবাজারে স্কুলের সামনে কিশোর শাকিলকে গুলি করার অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। তারপর থেকে তার বিরুদ্ধে একের পর এক হত্যাকা-সহ নানা অপরাধের তথ্য বের হয়ে আসে। এরই মধ্যে নিজেকে রক্ষা করতে সুইডেন চলে যান। বছর পাঁচেক ওই দেশে থেকে আবার ফিরে আসেন দেশে। তারপর সুইডেন শব্দটি নামের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যায়। ১৯৯৭ সালের ২৩ মার্চ গালিব খুন হন। এ ঘটনায় আসলামসহ ২০ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়। ১৯৯৮ সালের ৮ এপ্রিল অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। ২৪ সাক্ষীর মধ্যে পুলিশ চারজনকে আদালতে হাজির করতে পেরেছে। বাকিরা আর আসেননি এবং এই মামলায় তিনি জামিনও নেননি।
দীর্ঘদিন কারাগারে থাকলেও আসলাম মোবাইল ফোনে সহযোগীদের সঙ্গে কথা বলতে পারছেন। স্ত্রী আয়েশা আকতার নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন। বলা চলে রাজার হালেই আছেন তিনি।
মিরপুর ও কাফরুল এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী কিলার আব্বাস ২২ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। তার বিরুদ্ধে থাকা ১১টি মামলার জামিন হয়েছে। একটি মামলার জামিন হতে বাকি আছে। তা ছাড়া কমিশনার নিউটন হত্যা মামলায় ফাঁসির আদেশ হলেও উচ্চ আদালতে খালাস পেয়েছেন তিনি। আরেকটি মামলার শুনানি চলছে উচ্চ আদালতে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কিলার আব্বাসের এক সহযোগী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ভাইয়ের সঙ্গে মাঝেমধ্যে কাশিমপুর কারাগারে গিয়ে দেখা করে আসি। দেশের পরিস্থিতি বিবেচনা করে তিনি কারাগার থেকে বের হতে চাচ্ছেন না। জামিন চাইলে তিনি জামিন পেয়ে যাবেন। কিন্তু ভাই তা করবেন না। কারণ প্রতিপক্ষ সক্রিয় আছে। তার প্রাণ শঙ্কা আছে। আমরা ইচ্ছা করলে যেকোনো সময় জামিন নিয়ে ভাইকে বের করে আনতে পারি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আরেক সন্ত্রাসী পিচ্চি হেলালেরও প্রায় সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। শুধু একটা মামলার জামিন বাকি আছে। তিনি যখন কারাগারে, তখন বিএনপি তার বিরুদ্ধে হুলিয়া জারি করেছিল। অথচ হেলাল বিএনপির রাজনীতি করেন। জেলে বসেই মোহাম্মদপুর, আদাবর ও ধানম-ি, মিরপুর এলাকার চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করছেন। মোহাম্মদপুরের বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ড দখল ও চাঁদাবাজি চালাচ্ছেন। তার সঙ্গে মিরপুরের শীর্ষ সন্ত্রাসী শাহাদতের ভালো যোগাযোগ। মোবাইল ফোনে নিয়মিত কথা বলেন তারা। তার আরেক সহযোগী হাবিবুর রহমান তাজ ১৩ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। মামলার সাক্ষীদের হাজির করতে পারছে না রাষ্ট্রপক্ষ। ইচ্ছে করে জামিনও নিচ্ছেন না তাজ। গ্রেপ্তারের আগে দীর্ঘদিন ভারত পালিয়ে ছিলেন। ২০০৮ সালে ভারতে গ্রেপ্তার হওয়ার কয়েক মাস পর তাকে দেশে ফিরিয়ে এনে রাজধানীর কাফরুলে ইলেকট্রিক মিস্ত্রি ইসমাইল হোসেনকে হত্যা করার অভিযোগে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। তা ছাড়া কলেজছাত্র কামরুল ইসলাম ওরফে মোমিন হত্যার সঙ্গেও জড়িত তাজ। মতিঝিল থানার সাবেক ওসি এ কে এম রফিকুল ইসলামের আশ্রয়-প্রশয়ে থাকতেন তিনি। কয়েক বছর আগে ওসি রফিক মারা যান।’
মতিঝিলে একটি গোয়েন্দা সংস্থার দুই কর্মকর্তাকে হত্যা করে আলোচনায় আসে আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী ঈদুল। প্রায় ১৫ বছর ধরে কাশিমপুর কারাগারে আটক আছেন তিনি। একবার পঙ্গু হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে তাকে আটক করে ফেলে পুলিশ। তার বিরুদ্ধে আটটি মামলা থাকলেও দুটি মামলা বাদে সব কটিতে জামিন পেয়েছেন। বাকি মামলাগুলোতে ইচ্ছা করে জামিন নিচ্ছেন না বলে তার এক স্বজন জানিয়েছেন।
সেভেন স্টার গ্রুপের একসময়ের সদস্য ফ্রিডম সোহেল ধানম-ি ৩২ নম্বরে গ্রেনেড হামলা মামলায় যাবজ্জীবন সাজার আসামি। সাজা কমিয়ে কারাগারেই থাকার চেষ্টা করছেন সোহেল। তার বিরুদ্ধে ১১টি মামলা আছে। ৯টি মামলায় জামিন পেয়েছেন। একটি মামলায় সাজা হয়েছে। আরেকটি মামলায় জামিন নিচ্ছেন না।
তার সহযোগী পুরস্কারঘোষিত সন্ত্রাসী রাশু কিছুদিন আগে কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আটক করে। তার এক স্বজন দেশ রূপান্তরকে জানান, মাস দুয়েক আগে সর্বশেষ মামলায় জামিন হয় রাশুর। তার কোনো ইচ্ছা ছিল না কারাগার থেকে বের হওয়ার। আর এ কারণে ইচ্ছা করেই একটি সংস্থাকে কারাগার থেকে বের হওয়ার তথ্য দিয়ে আবার গ্রেপ্তার হন। কারণ তিনি বের হলে প্রতিপক্ষের লোকজন তাকে মেরে ফেলবে এমন আশঙ্কা ছিল। আরেক সন্ত্রাসী লম্বু সেলিম একটি মামলা বাদে সব মামলায় জামিনে আছেন। ভারতের কলকাতা থেকে তাকে পুশব্যাক করা হয়েছিল। প্রায় আট বছর ধরে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আছেন। বেশিরভাগ সময় হাসপাতালে থাকেন। নিরাপত্তাহীনতার কারণে জেল থেকে বের হচ্ছেন না তিনি।
জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, সন্ত্রাসীদের কর্মকা- রোধ করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নানা কৌশলে কাজ করছে। তারা সরগরম হলেও কাজ হবে না। যারা দেশের বাইরে আছে, তাদের চিহ্নিত করে ইন্টারপোলের মাধ্যমে ধরার চেষ্টা চলছে। যারা দেশে আছে, তাদেরও আইনের আওতায় আনতে পুলিশ-র্যাব কাজ করছে। তবে আন্ডারওয়ার্ল্ডের কেউ বিশ্ঙ্খৃলা তৈরি করতে পারবে না। তিনি বলেন, ‘কোনো সন্ত্রাসী জামিন না নিলে এটা আমাদের করার কিছু নেই। তবে তাদের বিরুদ্ধে থাকা মামলাগুলো যাতে দ্রুত নিষ্পত্তি হয়, সেদিকে নজর দেওয়া হচ্ছে।’
পুলিশ সূত্র জানায়, দীর্ঘদিন ধরেই আন্ডারওয়ার্ল্ডের শীর্ষ সন্ত্রাসী, জঙ্গি, চোরাকারবারিসহ ভিন্ন ধরনের অপরাধীরা দুবাই, মালয়েশিয়া, ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আত্মগোপন করে আছেন। তাদের সহযোগীরা বাংলাদেশে অবস্থান করে অপরাধমূলক কর্মকা- চালিয়ে আসছেন। তাদের নির্দেশে হত্যাকান্ডের মতো ঘটনাও ঘটাচ্ছেন তারা। মতিঝিলে আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম টিপু হত্যাকান্ডের পেছনে বিদেশ কানেকশন।
২০০৩ সালে মালিবাগের সানরাইজ হোটেলে ডিবি পুলিশের দুই সদস্যকে হত্যার পর পালিয়ে যাওয়া শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান দুবাইয়ে আত্মগোপন করে আছেন। টিপু হত্যাকান্ডের পর তিনি আলোচনায় এসেছিলেন। দুবাইয়ে থাকলেও ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ডে সবচেয়ে বেশি প্রভাব তার। জিসানের সহযোগী জাফর আহমেদ মানিক ওরফে ফ্রিডম মানিক ভারতে পালিয়ে আছেন। কিন্তু দেশে তার দখলবাজি, টেন্ডারবাণিজ্য ও চাঁদাবাজিতে নিয়ন্ত্রণ এখনো আছে। মোল্লা মাসুদ ও সুব্রত বাইন ভারতে থেকে সক্রিয় আছেন। তানভীর ইসলাম জয়ও সক্রিয় আছেন। কলকাতা, মালয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা ঘুরে তার অবস্থান এখন থাইল্যান্ডে। সেখানে বসেই তিনি কলকাঠি নাড়ছেন।
লাক্সারিয়াস জীবন পাওয়ার জন্য এখন মানুষ দিনরাত শুধুই কাজ করে চলেছেন। যার মধ্যে অফিস ডেস্কে বসে কাজ করেন এমন মানুষের সংখ্যা একেবারে কম নয়। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চেয়ারে বসে ল্যাপটপের সামনে তাকিয়ে থাকা রীতিমতো যন্ত্রণাদায়ক।
শুধু তাই নয়, এটা স্বাস্থ্যের জন্যও ক্ষতিকর। যারা অফিসে ডেস্কে কাজ করেন তাদের মোটা হওয়ার সম্ভাবনাও বেড়ে যায়।
সারাদিন যারা ডেস্কে বসে কাজ করেন তাদের অন্যতম অভিযোগও এটি। তারা বলে থাকেন, চেয়ারে বসে কাজ করে মোটা হয়ে যাচ্ছি! তবে এই অজুহাতকে একেবারে সত্য বলার সুযোগ নেই। কারণ ডেস্কে বসে কাজ করেও স্লিম ও ফিট থাকা সম্ভব। এজন্য মেনে চলুন পাঁচটি টিপস।
হাঁটুনফিট ও কর্মক্ষম থাকতে নিয়মিত হাঁটুন। দিনের পর দিন দীর্ঘ সময় বসে থাকলে হৃদরোগ ও ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ে। সুস্থ থাকতে প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটার অভ্যাস করুন। এমনকি কাজের ফাঁকেও ১০ মিনিটের ব্রেক নিয়ে হেঁটে আসতে পারেন।
সোজা হয়ে বসুনচেয়ারে মেরুদণ্ড সোজা রেখে বসুন। মেরুদণ্ডের ডিস্কগুলোতে অনেক চাপ পড়ে, সেই সঙ্গে চাপ পড়ে মেরুদণ্ডের পাশের মাংসপেশি ও লিগামেন্টের ওপর। কম্পিউটার ব্যবহার করার সময় মনিটরটি চোখের সমান স্তরে রাখুন। মাউস ব্যবহার করার সময় শুধু আপনার কব্জি নয় পুরো হাত ব্যবহার করুন।
চাপ এড়িয়ে চলুনএটা খুব কঠিন কাজ, চাপমুক্ত থাকা। বিশেষ করে যখন চারপাশ থেকে নানা ধরনের চাপ আসতে থাকে। তবে মানসিক স্থিরতা ধরে রাখুন, নিজেকে মোটিভেট করুন। কোনও চাপই বেশি দিন থাকে না, এগুলো নিয়ে ভেবে সময় নষ্ট না করে নিজের কাজে মনোযোগ বাড়ান। এক্ষেত্রে মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে আনতে অনলাইনে কিছু যোগা শিখে অভ্যাস করুন।
চোখের যত্নকম্পিউটারে কাজ করার সময় স্ক্রিনে একটানা ১০-১৫ মিনিটের বেশি তাকিয়ে থাকবেন না। নিয়মিত চোখের পাতা ফেলুন। স্ক্রিনে পর্যাপ্ত আলো রাখুন, যেন চোখের ওপর বাড়তি চাপ না পড়ে।
হাড়ের যত্ন বসে থাকার ফলে হাড় দুর্বল হয়ে যেতে পারে। ক্যালসিয়ামের ঘাটতিও হতে পারে। এজন্য নজর দিতে হবে প্রতিদিনের খাবারে স্বাভাবিক খাবারের সঙ্গে নিয়মিত ডিম, দুধ, দই ও বাদাম রাখুন।