
থাকসিন সিনাওয়াত্রা দেশের মাটিতে পা রাখার কয়েক ঘণ্টা পর জানা গেল, তার দল ক্ষমতায় যাচ্ছে। তাকে জেলে পাঠানো কি পূর্বপরিকল্পিত ছিল, যা তার সম্মতিতে হয়েছে? তার দল ফিউ থাই পার্টি ও অন্যরা কি পিটাকে ভয় পাচ্ছে, যে কারণে বিশ্বাসঘাতকতার আশ্রয় নেওয়া হলো? লিখেছেন তৃষা বড়ুয়া
স্বদেশ প্রত্যাবর্তন
থাকসিন সিনাওয়াত্রা। থাইল্যান্ডের লোকরঞ্জনবাদী সাবেক প্রধানমন্ত্রী। টানা ১৫ বছর নির্বাসিত জীবন কাটিয়ে গত মঙ্গলবার সকালে সিঙ্গাপুরে ব্যক্তিগত জেট বিমানে উঠে ব্যাংককের ডন মুয়াং বিমানবন্দরে নামেন। বিমানবন্দরের টার্মিনালের গেটে থাইল্যান্ডের রাজা-রানীর ছবির সামনে দাঁড়িয়ে তাদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করেন ৭৪ বছর বয়সী থাকসিন। আগের দিন অর্থাৎ সোমবার বিকেল থেকে বিমানবন্দরের বাইরে জড়ো হচ্ছিলেন থাকসিনের সমর্থকরা, যাদের বেশির ভাগই বয়স্ক। তাদের ব্যানারে লেখা ছিল, ‘জনগণের প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগতম।’ পরদিন থাকসিনের দেশের মাটিতে পা রাখার খবরে উল্লসিত হয়ে সমর্থকরা চিৎকার করে বলেন, ‘আমরা থাকসিনকে ভালোবাসি। আমাদের স্বপ্ন সত্যি হয়েছে।’ ৬২ বছর বয়সী থাই নারী সানসুক টার্মস্রিসুক বলেন, ‘আজকের দিনের জন্য অপেক্ষা করছিলাম। যখনই এই দিনটির কথা বলতাম, আমার কান্না পেয়ে যেত। আমি মনে করি, থাকসিন যখন ক্ষমতায় ছিলেন, তখন থাইল্যান্ডের অর্থনীতি আজকের চেয়ে অনেক ভালো ছিল। প্রয়োজনীয় সবকিছু কিনতে পারতাম। এখন পরিস্থিতি পাল্টেছে। বিক্রেতা হিসেবে জীবনযাত্রার ব্যয় মেটানো কঠিন হয়ে পড়েছে।’ ৬৩ বছরের আনকানা নাট্টাকিট বলেন, ‘আমরা যেন ভালো থাকি, তার জন্য সবসময় চেষ্টা করতেন থাকসিন। থাইল্যান্ডের অন্য কোনো প্রধানমন্ত্রী আমাদের জন্য তার ধারে কাছে কিছু করেননি। থাকসিন তৃণমূল মানুষের প্রধানমন্ত্রী।’ এদিকে থাকসিনের মেয়ে পেটংটার্ন সিনাওয়াত্রা ইনস্টাগ্রামে পারিবারিক ছবি পোস্ট করে বলেন, ‘থাইল্যান্ডে প্রত্যাবর্তনে স্বাগতম, বাবা।’ ব্যাংককের বিমানবন্দরে অবতরণের অল্প কিছুক্ষণ পর থাকসিনকে পুলিশি পাহারায় সুপ্রিম কোর্টে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। সুপ্রিম কোর্টের এক বিবৃতিতে বলা হয়, থাকসিনকে মোট আট বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। ক্ষমতার অপব্যবহার, দুর্নীতিসহ বেশ কয়েকটি অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের অভিযোগ ছিল থাকসিনের বিরুদ্ধে। এসব অভিযোগকে বরাবরই রাজনৈতিকভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হিসেবে অভিহিত করেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী।
কাকতালীয় কী
থাইল্যান্ডের ব্যাপক প্রভাবশালী ও বিভেদ সৃষ্টিকারী রাজনীতিবিদ থাকসিন দেশে ফেরার কয়েক ঘণ্টা পর তার দল ফিউ থাই পার্টির নেতা স্রেথা থাভিসিন প্রধানমন্ত্রী পদের জন্য পার্লামেন্টে পর্যাপ্ত ভোট পান। তার নেতৃত্বে জোট সরকার দেশ পরিচালনা করবে। যেহেতু নিজের দল এখন ক্ষমতায়, থাকসিনকে পুরো আট বছর জেলে নাও থাকতে হতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, থাকসিন থাই রাজার কাছে ক্ষমা চাইবেন। সেক্ষেত্রে তার সাজা কমতে পারে বা তাকে একেবারে মুক্তি দেওয়া হতে পারে। ১৫ বছর পর থাকসিনের দেশে প্রত্যাবর্তন ও তার কয়েক ঘণ্টা পর স্রেথার প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হওয়াÑ এই দুই ঘটনার মধ্যে কোনো সম্পর্ক নেই বলে জোর দিয়ে বলা হচ্ছে ফিউ থাই পার্টির পক্ষ থেকে। তবে খুব কম মানুষই তা বিশ্বাস করছে। ঘটনা দুটিকে তারা কাকতালীয় মনে করছে না।
মিশ্র প্রতিক্রিয়া
স্রেথা এখন যে জোট সরকার গঠন করবেন, তাতে রাজতন্ত্রপন্থি সেনাবাহিনী সমর্থিত দল থাকবে। চলতি বছরের ১৪ মে থাইল্যান্ডের প্রতিনিধি পরিষদের ৫০০ আসনে ভোট হয়। ভোটে তরুণ নেতা পিটা লিমজারোয়েনরাত নেতৃত্বাধীন সংস্থারপন্থি নতুন দল মুভ ফরোয়ার্ড পার্টি ৫০০ আসনের মধ্যে ১৫২টিতে জয় পায়। পরের অবস্থানে ছিল থাকসিন প্রতিষ্ঠিত ফিউ থাই পার্টি। তারা ১৪১টি আসনে জেতে। প্রতিনিধি পরিষদে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেলেও তা পিটার প্রধানমন্ত্রী হওয়ার জন্য যথেষ্ট ছিল না। থাইল্যান্ডের একজন প্রধানমন্ত্রী প্রার্থীকে ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলির উচ্চ ও নিম্ন উভয় কক্ষে সম্মিলিত ভোটে জিততে হয়। অর্থাৎ ৭৫০ সদস্যের (৫০০ এমপি ও ২৫০ সিনেটর) মধ্যে কমপক্ষে ৩৭৬ সদস্যের সমর্থন পেতে হতো পিটাকে। থাইল্যান্ডের প্রতিনিধি পরিষদের ৫০০ এমপি সরাসরি জনগণের ভোটে নির্বাচিত হলেও উচ্চকক্ষ সিনেটের ২৫০ সদস্যকে নিয়োগ দেয় দেশটির সেনাবাহিনী। সেনাসমর্থিত এই সিনেটররা স্বাভাবিকভাবেই পিটার মতো রাজনীতিবিদ যিনি নির্বাচনী প্রচারণায় রাজনীতিতে সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপ বন্ধের প্রতিজ্ঞা করেছিলেন, তাকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেখতে চাইবেন না। পার্লামেন্টে তাদের বাধার কারণে শেষ পর্যন্ত পিটার প্রধানমন্ত্রী হওয়া হয়নি।
এদিকে সেনাসমর্থিত দলগুলোর সঙ্গে জোট করা নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে ফিউ থাই পার্টির কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে। ২০১০ সালে দলটির কর্মী-সমর্থকদের বিক্ষোভ কঠোরভাবে দমন করে সেনাবাহিনী। ৯০ জনের বেশি কর্মী-সমর্থক সে সময় প্রাণ হারায়। ফিউ থাই পার্টির সমর্থকদের অনেকে এখন মনে করছেন, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ থেকে সরে এসেছে দলটি। তারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন, ‘সেনাসমর্থিত প্রতিদ্বন্দ্বী দলগুলোর সঙ্গে ফিউ থাই পার্টি জোট করার সিদ্ধান্ত নিতে পারে, তা বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে। আমরা তাহলে কীসের জন্য লড়াই করলাম?’ অনেক সমর্থক অবশ্য থাকসিন এক যুগের বেশি সময় পর দেশে ফিরেছেন, তাতেই খুশি। কাদের সঙ্গে দল জোট করতে যাচ্ছে, এ নিয়ে তারা চিন্তিত নন। থাকসিনকে একনজর দেখতে থাইল্যান্ডের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় সুরিন প্রদেশ থেকে রাজধানীতে ছুটে যান ৬৩ বছর বয়সী সামনিয়াং কংপলপার্ন। তিনি বলেন, ‘আমরা যতজন প্রধানমন্ত্রী পেয়েছি, তাদের মধ্যে থাকসিন সর্বশ্রেষ্ঠ। ফিউ থাই পার্টি ও সেনাসমর্থিত দলগুলোর পুনরায় সম্পর্ক প্রতিষ্ঠায় আমি কোনো সমস্যা দেখি না। নয়তো অনির্বাচিত সিনেটরদের মধ্যে আটকে থাকতে হবে আমাদের, যা আমরা চাই না।’ এদিকে ফিউ থাই পার্টির ভাষ্য, সেনাবাহিনীর সমর্থনে গড়ে ওঠা দলগুলোর সঙ্গে জোট করার সিদ্ধান্ত জরুরি ছিল। এটি না হলে প্রধানমন্ত্রী পদের জন্য পার্লামেন্টে স্রেথার পর্যাপ্ত ভোট আদায় কঠিন হয়ে পড়ত। সেক্ষেত্রে অর্থনীতি, জীবিকাসহ গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু মোকাবিলা করা সম্ভব হতো না।
থাকসিনের জনপ্রিয়তা
দেশে দীর্ঘদিন না থাকলেও থাইল্যান্ডের রাজনীতিতে থাকসিন আজও গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি। তার ছোট মেয়ে ৩৭ বছর বয়সী পেটংটার্ন সিনাওয়াত্রা এখন ফিউ থাই পার্টির সামনের সারির নেতা। ধারণা করা হচ্ছে, দেশটির নতুন জোট সরকারে তিনি নেতৃস্থানীয় ভূমিকা পালন করবেন। থাইল্যান্ডের ইতিহাসে থাকসিনই প্রথম নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী যিনি তার মেয়াদ পূর্ণ করেছিলেন। গ্রামীণ দরিদ্র জনগোষ্ঠীর মধ্যে অত্যন্ত জনপ্রিয় ছিলেন থাকসিন। অন্যদিকে ব্যাংককের ধনী অভিজাত শ্রেণি তাকে পছন্দ করত না। ক্ষমতায় পাঁচ বছরের বেশি সময় থাকার পর দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগে ২০০৬ সালের সেপ্টেম্বরে এক সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে তাকে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে সরানো হয়। তখনই তিনি স্বেচ্ছা নির্বাসনে চলে যান। ১৫ বছরের মধ্যে বেশির ভাগ সময় তার কাটে লন্ডন বা দুবাইয়ে। টেলিযোগাযোগে বিনিয়োগ করে বিলিয়ন ডলার আয় করেন থাকসিন। পেশাদার ইংলিশ ফুটবল ক্লাব ম্যানচেস্টার সিটিরও শেয়ার কিনেছিলেন তিনি। ২০০৯ সালে থাই কর্র্তৃপক্ষ দুর্নীতির অভিযোগে থাকসিনের সম্পদ বাজেয়াপ্ত করলে ক্লাবটির শেয়ার বিক্রি করতে বাধ্য হন তিনি। ২০০৬ সালে থাকসিন ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর ১৭ বছর কেটে গেছে। এ সময় ১০ জন প্রধানমন্ত্রী পেয়েছে থাই জনগণ। তবে তাদের হৃদয়ে থাকসিনের অবস্থান বরাবরই বিশেষ ছিল। ক্যারিশম্যাটিক এই নেতা ক্যারিয়ার শুরু করেছিলেন পুলিশ কর্মকর্তা হিসেবে। ১৯৭৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রে ক্রিমিনাল জাস্টিসে মাস্টার্স করার জন্য সরকারি বৃত্তি পান থাকসিন। দেশে ফিরে তিনি ব্যবসা শুরু করেন এবং আশির দশকের শেষের দিকে টেলিযোগাযোগ টাইকুনে পরিণত হন। ১৯৯৮ সালে থাই রাক থাই নামে রাজনৈতিক দল গঠন করেন থাকসিন। অল্প সময়ের মধ্যে দলটির ব্যাপক গ্রহণযোগ্যতা থাই রাজনীতি পাল্টে দেয়। ২০০১ সালে ২৩তম প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নির্বাচিত হন থাকসিন।
থাইল্যান্ডের গ্রামীণ ও শহুরে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর মধ্যে থাকসিনের ব্যাপক জনপ্রিয়তার কারণ তার আর্থিক ও সামাজিক কল্যাণ নীতি। এ বিষয়ে দেশটির সানপাটং গ্রামের বাসিন্দা আদিভিন মানসং বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী হিসেবে কাজ শুরুর কিছুদিন পর গ্রামাঞ্চলে ঋণ কর্মসূচি শুরু করেন থাকসিন। ওই সময় ৪০০ ডলার ঋণ নিয়ে শূকর লালন-পালন শুরু করি। তিন বছর পর শূকরের ব্যবসা থেকে লাভ আসতে শুরু করে। ঋণ পাওয়ার আগে আমি দিনমজুর ছিলাম। মজুরি যা পেতাম, তাতে সংসার চালানো কঠিন ছিল। পেট ভরে খেতে পারতাম না। থাকসিনের ঋণ কর্মসূচি আমার পরিবারকে ভালো রাখে। দুই ছেলেমেয়েকে শহরের স্কুলে পড়াতে পারি। থাকসিন ছাড়া এসব কোনোটাই সম্ভব হতো না।’ থাকসিন ক্ষমতায় থাকাকালে দুর্নীতি করেছিলেন বলে অভিযোগ আছে, এ বিষয়ে মতামত জানতে চাওয়া হলে আদিভিন বলেন, ‘দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে আমি ভাবি না। প্রত্যেক সরকারই দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত। থাকসিন অন্তত দরিদ্র মানুষদের জন্য কাজ করেছিলেন, যা দেশের অন্য সরকারপ্রধান বা রাজনীতিবিদদের করতে দেখা যায় না।’
রাজনীতির হিসাবনিকাশ
থাকসিনকে কারাগারে পাঠানোর পর সবার মনে ঘুরেফিরে একটি প্রশ্ন উঁকি দেয়। সেটি হলো, থাকসিন আসলে কতদিন বন্দি থাকবেন? সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে কারাগারে পাঠানোর পরদিন থাই কর্র্তৃপক্ষ জানায়, হৃৎযন্ত্রের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করতে থাকসিনকে বেসামরিক এক হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তিনি ব্যক্তিগত কক্ষে আছেন। হাসপাতালে অবস্থানের সময় থাকসিন আট বছরের সাজা মওকুফের জন্য থাই রাজা মহা ভাজিরালংকর্নের কাছে আবেদন করবেন। অর্থাৎ সব মিলে ১২ ঘণ্টার একটু বেশি ব্যাংককের কারাগারে ছিলেন থাকসিন। বিশেষজ্ঞদের ভাষ্য, থাকসিনের ১৫ বছরের নির্বাসিত জীবনের ইতি কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। থাইল্যান্ডের টেলিযোগাযোগ খাতের শক্তিশালী এই ব্যক্তি ও তার দল ফিউ থাই পার্টির সঙ্গে দেশটির রক্ষণশীল রাজনৈতিক দল যাদের সঙ্গে সামরিক বাহিনী ও রাজতন্ত্রের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক আছে, এই দুপক্ষের দীর্ঘদিনের লড়াইয়ের সম্প্রতি অবসান ঘটেছে। এর পুরো কৃতিত্ব থাইল্যান্ডের তরুণ নেতা পিটা লিমজারোয়েনরাত নেতৃত্বাধীন প্রগতিশীল দল মুভ ফরোয়ার্ড পার্টির। মাত্র তিন বছর আগে প্রতিষ্ঠিত প্রগতিশীল এই দলের নেতাকর্মীরা থাইল্যান্ডের রাজনৈতিক অঙ্গনকে সাম্প্রতিক নির্বাচনের মাধ্যমে কাঁপিয়ে দেন। মে মাসের নির্বাচনে মুভ ফরোয়ার্ড পার্টি সর্বোচ্চ ভোট পায়। থাই জনগণ মনে করছেন, পিটার নেতৃত্বে মুভ ফরোয়ার্ড পার্টি জনগণের জন্য কাজ করবে, রাজতন্ত্র বা সেনাবাহিনীর হয়ে কাজ করবে না। নতুন দলটির প্রতি তাদের এই আস্থা থাইল্যান্ডের জীর্ণ, সেকেলে রাজনৈতিক কাঠামোর ভিতকে নাড়িয়ে দিয়েছে। মুভ ফরোয়ার্ড পার্টির তরুণ নেতৃত্বকে অস্তিত্বের জন্য হুমকি হিসেবে দেখছে এই কাঠামো। এ কারণে ফিউ থাই পার্টি ও সামরিক-রাজতন্ত্র সমর্থনপুষ্ট দলগুলো নিজেদের মধ্যে বিভেদ আপাতত সরিয়ে মুভ ফরোয়ার্ড পার্টিকে কোণঠাসা করতে চাইছে। থাকসিনের দেশে ফেরা ও কারাগারে যাওয়া তাদের পরিকল্পনারই অংশ। রাজার কাছ থেকে তিনি ক্ষমাও পেয়ে যাবেন। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, ফিউ থাই পার্টি পিটার মুভ ফরোয়ার্ড পার্টির সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে কারণ থাকসিনের দলটি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, মুভ ফরোয়ার্ড পার্টির নেতৃত্বাধীন জোট সরকারে তারা যোগ দেবে। প্রতিশ্রুতি রাখা হয়নি।
থাকসিনের দল আদতে মুভ ফরোয়ার্ড পার্টি নয়, থাই জনগণের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে কারণ তারা নির্বাচনে ভোট দিয়ে পিটার দলকে জয়যুক্ত করেছিল। থাইল্যান্ডের মানুষ এখন একই সঙ্গে হতাশ ও আশান্বিত। মুভ ফরোয়ার্ড পার্টি এবার ক্ষমতায় যেতে না পারলেও তাদের বিশ্বাস, আগামী নির্বাচনে দলটি ভূমিধস বিজয় ছিনিয়ে আনবে।
প্রেগনেন্সির ফার্স্ট টাইমিস্টার হচ্ছে প্রেগনেন্সির প্রথমবার (১২) সপ্তাহ। এই প্রথম বারো সপ্তাহে দুটি স্ক্যান গুরুত্বপূর্ণ। প্রথমটি হলো Viability and dating scan এবং দ্বিতীয়টি NT scan। ৯ থেকে ১০ সপ্তাহে মানব শিশুর আকৃতি ধারণ করতে শুরু করে। যখন বারো সপ্তাহ পূর্ণ হয় তখন তা ছোট্ট মানব শিশুতে পরিণত হয়। এই ধারাবাহিক পরিবর্তনগুলো দেখার একমাত্র সহজ ও নির্ভরযোগ্য পরীক্ষাটি হচ্ছে আলট্রাসনোগ্রাম। ফার্স্ট Trimester যেসব আলট্রাসনোগ্রাম করা হয় : Viability and Dating Scan।
কখন করা উচিত : ৬ থেকে ১০ সপ্তাহের মধ্যে এই আলট্রাসনোগ্রাম করতে হবে।
যা জানা যাবে :গর্ভাবস্থায় নিশ্চিত করে বলা।জরায়ুর মধ্যে গর্ভ থলি এবং ভ্রুণের যথাযথ অবস্থান।ভ্রুণের সংখ্যাHeartbea-এর উপস্থিতিGestational ageঅর্থাৎ গর্ভাবস্থার বয়স এবং ঊউউ জরায়ু এবং ডিম্বাশয় টিউমার অথবা সিস্ট থাকলে পর্যবেক্ষণ করা সম্ভব।NT scan১১ থেকে ১৩ সপ্তাহ ছয় দিনের মধ্যে করতে হবে।
NT scan আসলে কী : এর মাধ্যমে শিশুর ঘাড়ের পেছনের ফ্লুইড ফিল্ড স্পেস অর্থাৎ পানি ভর্তি যে স্থান রয়েছে তার থিকনেস মাপা হয়। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, যেসব বেবির chromosomal abnormality যেমন ডাউন সিনড্রোমের ঝুঁকি রয়েছে তাদের ক্ষেত্রে এই থিকনেস স্বাভাবিক থেকে অনেক বেড়ে যায়।
কেন এই স্ক্যানটি তেরো সপ্তাহ ছয় দিনের মধ্যেই করা উচিত?
১৪ সপ্তাহের পরে ঘাড়ের পেছনের পরিষ্কার এই স্থানটি অদৃশ্য হয়ে যায়। তাই রিপোর্ট ভুল হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
NT scan যেসব তথ্য পাওয়া সম্ভব :গর্ভস্থ শিশুর নাকের হাড়ের উপস্থিতি (নাকের হাড়ের অনুপস্থিতি ও খুব পুরু ঘঞ থিকনেস ডাউন সিনড্রোমের ঝুঁকি নির্দেশ করে)।ভ্রুণের মধ্যে হার্টবিটের উপস্থিতি।গর্ভাবস্থার বয়স এবং flowগর্ভফুলের অবস্থান।মেরুদন্ডের হাড়ের অস্বাভাবিকতাDuctusvenosus hv যা বিশেষ রক্তনালি, যার অস্বাভাবিক ব্লাড ভষড়ি হার্টের ত্রুটি বলে দিতে সক্ষম।হার্টের রক্ত চলাচলের গতি দেখা হয়।
যাদের পূর্বের বেবির ডাউন সিনড্রোমের ইতিহাস আছে, যারা ডায়াবেটিস এবং হাইপারটেনসিভ তাদের জন্য এ স্ক্যানটি খুবই জরুরি।
আইফোন ফটোগ্রাফি অ্যাওয়ার্ডস-২৪ এর আবেদন নেওয়া শুরু করে দিয়েছে অ্যাপেল। ২০০৭ সাল থেকে আইফোন ফটোগ্রাফি প্রতিযোগিতা (ওচচঅ) আয়োজন করে আসছে অ্যাপেল। ইউজাররা তাদের সেরা সৃষ্টিশীল ছবি দিয়ে এই প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে পারেন। কীভাবে আইফোন ফটোগ্রাফি অ্যাওয়ার্ডসে অংশ নেবেন এবং কী কী শর্ত রয়েছে চলুন জেনে নেওয়া যাক।
অংশগ্রহণের শর্ত ও পুরস্কার
নাম শুনেই আশা করি বুঝতে পারছেন এই ছবি তুলতে হবে আইফোন দিয়ে। অন্য কোনো স্মার্টফোন দিয়ে তোলা ছবি গ্রহণ করা হবে না। পাশাপাশি ছবি আকর্ষণীয় করে তুলতে অনেকেই ফটোশপের ব্যবহার করেন। কিন্তু এই প্রতিযোগিতায় তা করা যাবে না। তবে ছবির গুণমান বাড়াতে আইফোন অ্যাড অন লেন্স ব্যবহার করতে পারবেন। সংস্থা জানিয়েছে, এই ছবি যেকোনো কিছুর হতে পারে। যেমন জীবজন্তু, স্থাপত্য, সিটি লাইফ, সিটিস্কেপ, ল্যান্ডস্কেপ, লাইফস্টাইল, প্রকৃতি, মানুষ, শিশু, পোট্রেট সিরিজ (৩টি ছবি), স্টিল লাইফ, ট্রাভেল ইত্যাদি। প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়ার জন্য প্রতি ছবি পিছু দিতে হবে নির্দিষ্ট এন্ট্রি ফি। যা রাখা হয়েছে ৫.৫০ ডলার (১টি ছবি), ১২.৫০ ডলার (৩টি ছবি), ১৮.৫০ ডলার (৫টি ছবি) এবং সর্বোচ্চ ১৩৫.৫০ ডলার (৫০টি ছবি)। আগামী ৩১ মার্চ ২০২৪ পর্যন্ত নিজের নাম লেখাতে পারবেন। ইচ্ছুক মানুষ রঢ়ঢ়ধধিৎফং.পড়স ওয়েবসাইটে ভিজিট করে অংশ নিতে পারেন। ওই ওয়েবসাইটে এন্ট্রি ফি সংক্রান্ত নানা তথ্য জানতে পারবেন। প্রথম তিনে যারা থাকবেন তারা পাবেন অ্যাপেল ওয়াচ সিরিজ ৩। আর যিনি প্রথম হবেন তাকে দেওয়া হবে ১ কেজি সোনার বার। দ্বিতীয় এবং তৃতীয় বিজয়ী পাবেন ১ কেজি প্ল্যাটিনাম বার।
দুধ খেতে অনেকেরই অনীহা। দুধ হলো ক্যালসিয়ামের সবচেয়ে বড় উৎস। হাড় ও দাঁত মজবুত রাখার মূল উপাদান হলো এই ক্যালসিয়াম। এ ছাড়াও পেশি সচল রাখা, স্নায়ুতন্ত্রকে কার্যকর রাখতেও ক্যালসিয়ামের গুরুত্ব অপরিসীম। অথচ শরীরের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় উপাদান ক্যালসিয়াম। যারা দুধ খেতে চান না। তারা ক্যালসিয়ামের ঘাটতি মেটাতে খেতে পারেন নিচের পাঁচটি খাবার। যেসব খাবারের মধ্যে দুধের গুণাগুণ পাবেন।
পনির : পনিরে রয়েছে ভরপুর প্রোটিন। এ ছাড়া সোডিয়াম, আয়রন, ম্যাগনেশিয়াম, ক্যালসিয়াম, প্রোটিন, জিঙ্ক, ভিটামিন-এ রয়েছে প্রচুর পরিমাণে। নিয়মিত পনির খেলে শরীরে ক্যালসিয়ামের ঘাটতি পূরণ হয়। দাঁত এবং হাড়ের গঠন মজবুত হয়। তা ছাড়া, এতে থাকা ম্যাগনেসিয়াম হার্ট ভালো রাখে। রক্তচাপও নিয়ন্ত্রণ করে এই দুগ্ধজাত খাবারটি।
আমন্ড : সকালে উঠে খালি পেটে ভেজানো আমন্ড খাওয়ার উপকারিতা অনেক। ভিটামিন, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ফাইবার এবং প্রোটিনে ভরপুর এই বাদাম। প্রতিদিন এক মুঠো আমন্ড খাওয়া আমাদের শরীরে ক্যালসিয়ামের চাহিদা মেটায়, হাড় মজবুত রাখে, পাচনতন্ত্র সুস্থ রাখে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
দই : ক্যালসিয়ামের ভালো উৎস। প্রতিদিন দই খেলে শরীরে দৈনিক ক্যালসিয়ামের চাহিদা পূরণ হয়, হাড় মজবুত থাকে এবং ভালো হজমেও সাহায্য করে।
সয়া দুধ : ক্যালসিয়ামের চাহিদা পূরণে সয়া দুধ দুর্দান্ত বিকল্প। এতে রয়েছে ভরপুর প্রোটিন এবং ফাইবার। সয়া দুধ রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রাও বৃদ্ধি করে। যাদের ল্যাকটোজ-ইনটলারেন্স আছে তাদের জন্য খুবই উপকারী এই দুধ।
পালং শাক : পালং শাকের মতো সবুজ শাকসবজি পুষ্টির পাওয়ার হাউস। ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম, আয়রন এবং ভিটামিন সি প্রচুর পরিমাণে থাকে এতে। এই ধরনের শাকসবজি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা শক্তিশালী করে, শরীরে ক্যালসিয়ামের ঘাটতি মেটায়, হাড় ও পেশি মজবুত রাখে। সুস্বাস্থ্য বজায় রাখতে প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় অবশ্যই রাখুন সবুজ শাকসবজি।
জুলাইয়ে আফগানিস্তানের বিপক্ষে সিরিজ হারে বাংলাদেশ দল। যে সিরিজে চট্টগ্রামে ঘরের মাঠে টাইগাররা ২-১ ব্যবধানে পরাজিত হয়েছিল। আর এই সিরিজে পরাজয়ের পেছনে বড় কারণ অধিনায়ক তামিম ইকবাল! এমনটাই মনে করেন বাংলাদেশ দলের বর্তমান অধিনায়ক সাকিব আল হাসান।
আফগানদের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচ শেষে অবসর নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তামিম। একদিন পরে অবশ্য অবসর ভাঙলেও সেই সিরিজ আর খেলেননি তিনি। একটি টিভি চ্যানেলকে দেওয়া সাক্ষাৎকারের দ্বিতীয় কিস্তিতে সাকিব সেই সিরিজ হারের দায় দিলেন তামিমের ওপরই।
'আফগানিস্তানের সঙ্গে সিরিজ হারটা আমি পুরোপুরি একজনকে দায় দেব, অধিনায়ক। এক ম্যাচ পরে আমাদের হাতে আরও দুই ম্যাচ ছিল। আমরা তৃতীয় ম্যাচে ঠিকই কামব্যাক করেছি কিন্তু একটা ম্যাচ সময় লেগেছে আমাদের। সুতরাং এটা আর কারো দায় নয়, পুরো সিরিজটায় দায় একজনের ওপর। বিশ্বের কোথাও অন্তত দেখিনি যে এক ম্যাচ পরেই এরকম অধিনায়ক এসে ইমোশনালি বলে ফেলেন যে আমি ভাই খেলব না আর ক্রিকেট।’
সাকিব বলেন, 'আমার ধারণা যদি কোনো অধিনায়কের দায়িত্ববোধ থাকত, সে এটা করতে পারত না। আমার কাছে মনে হয়, এটা দলকে অনেক বাজে একটা পরিস্থিতিতে ফেলে দিয়েছে এবং আমার মনে হয় ওইটাই এখনো রিকভার করতে সময় লাগছে, যেটা আমি অনুভব করি।’
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নিতে চায় তার পরিবার। ইতোমধ্যে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। এদিকে খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়ার বিষয়টি জানতে পেরেছেন জার্মান বিএনপি ও ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর বিএনপি নেতারা।
তারা বৃহস্পতিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে জার্মানিতে নেওয়ার কথা ছিল উন্নত চিকিৎসার জন্য। কিন্তু সে সময় শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়। এবার চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে আনার কথা শুনছি। জার্মানিতে খালেদা জিয়ার যে চিকিৎসা দরকার তার আধুনিক সকল সুযোগ সুবিধা জার্মানিতে রয়েছে। আমরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি যদি চেয়ারপারসনকে জার্মানিতে আনা হয় তাহলে আমরা তার জন্য কিছু করার সুযোগ পাব। জার্মানিতে তার ভালো চিকিৎসা হবে।’
এর অংশ হিসেবে গত মঙ্গলবার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল জার্মান দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স (সিডিএ) জান রল্ফ জানোস্কির সঙ্গে কথা বলেছেন। জবাবে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত জানোস্কি বলেছেন, ‘খালেদা জিয়া যে ধরনের সমস্যায় ভুগছেন তার সবচেয়ে ভালো চিকিৎসা বিশ্বের যে কয়েকটি দেশে সম্ভব জার্মানি তার অন্যতম। বাংলাদেশ সরকার অনুমতি দিলে জার্মানিতে তার সুচিকিৎসা হতে পারে।’
গত ৯ আগস্ট খালেদা জিয়াকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গত দেড় মাসের বেশি সময় ধরে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় খালেদা জিয়া ঢাকায় এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। মেডিকেল বোর্ডের পক্ষ থেকে অনেক দিন ধরে তার লিভার প্রতিস্থাপনের জন্য বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার পরামর্শ দিয়ে আসছে।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক এ জেড এম জাহিদ হোসেন সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, লিভার সিরোসিসের কারণে খালেদা জিয়ার হৃদ্যন্ত্র ও কিডনির জটিলতা বেড়েছে। তিনি হাসপাতালে কখনো কিছুটা ভালো থাকছেন, পরক্ষণেই তার স্বাস্থ্যের পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে। ফলে তাকে সার্বক্ষণিক চিকিৎসা দিতে হচ্ছে।
বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘লিভার সমস্যার কারণে ম্যাডামের শ্বাস কষ্ট হয়। ইতোমধ্যে তাকে দুইবার করোনারী কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) রাখা হয়েছিল। লিভার প্রতিস্থাপন করতে পারলে শ্বাসকষ্টটা হতো না।’
এদিকে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার উন্নতির লক্ষণ না থাকায় তার পরিবার ও বিএনপির পক্ষ থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশে পাঠানোর বিষয়টি এখন সামনে এসেছে।
খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়া হতে পারে এমন খবরে তার উন্নত চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি ও খোঁজখবর নিচ্ছেন জার্মান বিএনপি নেতারা।
জার্মান বিএনপির সভাপতি আকুল মিয়া বৃহস্পতিবার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘জার্মানিতে ম্যাডামকে উন্নত চিকিৎসার জন্য আনা হতে পারে বলে জানতে পেরেছি। আমরা খুবই খুশি। কারণ জার্মানিতে আসলে আমরা তার চিকিৎসার বিষয়ে আমাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করতে পারব। চেয়ারপারসনের যে চিকিৎসা দরকার তা সকল ব্যবস্থা জার্মানিতে রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা ম্যাডামের মুক্তি, তার উন্নত চিকিৎসা ও গণতন্ত্র ফেরাতে দেশে চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে জার্মানিতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছি। আগামী ৯ অক্টোবর আমাদের কর্মসূচি রয়েছে। জার্মান বিএনপির উদ্যোগে রোডমার্চ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করব জার্মান পার্লামেন্টের সামনে। ’
আকুল মিয়া বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে উন্নত চিকিৎসার জন্য যখন বিদেশে নেওয়ার আলোচনা চলছিল তখনও জার্মানিতে নেওয়ার কথা ভাবা হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়েছিল। সে সময় তারেক রহমানের সেবা করতে না পারলেও চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সেবা করতে পারব বলে আশা করছি। তার চিকিৎসা জার্মানিতে করতে পারলে আমরা ধন্য হবো।’
গত ২৫ সেপ্টেম্বর সোমবার খালেদা জিয়ার ছোট ভাই সাঈদ ইস্কান্দার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বরাবর আবেদন করেছেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইনি মতামত জানতে চেয়ে আবেদনের কপি আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার অনুমতি চেয়ে করা আবেদনটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। খালেদা জিয়ার ভাইয়ের আবেদনটি অল্প সময়ের মধ্যে যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে।’
বাংলাদেশের কিছু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, ক্ষমতাসীন দলের সদস্য ও রাজনৈতিক বিরোধীদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র বলে জানিয়েছেন ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসের মুখপাত্র ব্রায়ান শিলার।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর আজ শুক্রবার (২২ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনপ্রক্রিয়ায় বাধাদানকারী ব্যক্তিদের ভিসা প্রদানে বিধিনিষেধ আরোপের পদক্ষেপ নেওয়া শুরু করার ঘোষণা পর তিনি এ তথ্য জানান। তবে কতজনের ওপর এই বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে, তা তিনি জানাননি ।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের মুখপাত্র ব্রায়ান শিলার বলেছেন, ‘আমরা যখন এই ভিসা নীতি ঘোষণা করেছি, তখন থেকেই যুক্তরাষ্ট্র সরকার ঘটনাবলির ওপর গভীর দৃষ্টি রাখছে। সতর্কতার সঙ্গে তথ্য-প্রমাণ পর্যালোচনার পর আমরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, ক্ষমতাসীন দলের সদস্য ও রাজনৈতিক বিরোধীদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করেছি।’
মার্কিন দূতাবাসের মুখপাত্রকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় আসা ব্যক্তিদের নাম যুক্তরাষ্ট্র প্রকাশ করবে কি না। জবাবে তিনি বলেন, ‘না, এসব ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় আসা ব্যক্তিদের নাম আমরা প্রকাশ করব না।’ কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের আইনে ভিসা রেকর্ড গোপনীয়।
ব্রায়ান শিলার এই কথা বলার ঘণ্টাখানেক আগে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের ওয়েবসাইটে এ বিষয়ে একটি বিবৃতি প্রকাশ করা হয়। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলারের ওই বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আজ (শুক্রবার) স্টেট ডিপার্টমেন্ট বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ক্ষুণ্ন করার জন্য দায়ী বা জড়িত থাকা বাংলাদেশি ব্যক্তিদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করার পদক্ষেপ নিচ্ছে। এ ব্যক্তিদের মধ্যে আইন প্রয়োগকারী, ক্ষমতাসীন দল এবং রাজনৈতিক বিরোধী দলের সদস্য রয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন যাতে শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয় তার সমর্থনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘এই ব্যক্তি এবং তাদের পরিবারের সদস্যরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের জন্য অযোগ্য বলে বিবেচিত হতে পারে। বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ক্ষুণ্ন করার জন্য দায়ী বা জড়িত বলে প্রমাণিত অতিরিক্ত ব্যক্তিরাও ভবিষ্যতে এই নীতির অধীনে মার্কিন ভিসার জন্য অযোগ্য বলে বিবেচিত হতে পারে। এর মধ্যে বর্তমান এবং প্রাক্তন বাংলাদেশী কর্মকর্তা, বিরোধী ও ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের সদস্য এবং আইন প্রয়োগকারী, বিচার বিভাগ এবং নিরাপত্তা পরিষেবার সদস্যরা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।’
যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বলা হয়, ‘আমাদের আজকের পদক্ষেপগুলি শান্তিপূর্ণভাবে অবাধ ও নিরপেক্ষ জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের বাংলাদেশের লক্ষ্যকে সমর্থন করার জন্য এবং বিশ্বব্যাপী গণতন্ত্রকে এগিয়ে নিতে চায় তাদের সমর্থন করার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অব্যাহত প্রতিশ্রুতি প্রতিফলিত করে।’
মে মাসে বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ জাতীয় নির্বাচনের স্বার্থে ভিসানীতির ঘোষণা দেয় যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ্যান্থনি ব্লিংকেন ওই ঘোষণা দেন।
গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী বা জড়িত অভিযোগে দেশের কিছু ব্যক্তির ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করার কথা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এ বিষয়টি নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিএনপি পাল্টা বক্তব্য দিতেও শুরু করেছে। এতে বিরোধীপক্ষেরই ঝুঁকি দেখছে আওয়ামী লীগ। কিন্তু সুষ্ঠু নির্বাচন করার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের এই সবপক্ষই চাপে পড়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
তারা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের এ অবস্থান নিয়ে রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি একে অন্যকে ঘায়েল করার চেষ্টা হলেও মূলত নির্বাচনী রাজনীতিতে এক ধরনের পরিবর্তন আসবে। একপক্ষ নির্বাচন প্রতিহত করার ঘোষণা দিলেও সেই পথ থেকে তাদেরও সরতে হবে। আবার সরকারপক্ষ যেনতেন নির্বাচন করে ক্ষমতায় বসে যাবে সেই সুযোগও থাকছে না। যে যাই বলুক নির্বাচনী রাজনীতিতে সামনের দিনগুলোতে এ পরিবর্তন আসতেই হবে।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সবপক্ষের জন্য। তাদের অবস্থানে বিএনপি উৎফুল্ল হয়ে যাবে, আর আওয়ামী লীগ ধরাশায়ী হয়ে যাবে ব্যাপারটা এমন নয়। বরং এতে এক ধরনের সমাধানের পথ খুলে যেতে পারে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের নির্দিষ্ট তারিখ না দিলেও জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে হবে এমন আভাস দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
কিন্তু গত বছর থেকেই যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন ধারাবাহিকভাবে বাংলাদেশে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের প্রত্যাশার কথা জানিয়ে আসছে। তাদের একাধিক প্রতিনিধি বাংলাদেশ সফর করে সরকার ও বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে কথা বলেছে। সুষ্ঠু নির্বাচনে সমর্থনের কথা জানিয়ে গত ২৪ মে বাংলাদেশের জন্য নতুন ভিসানীতি ঘোষণা করে যুক্তরাষ্ট্র। যার প্রয়োগের কথা জানানো হলো গত শুক্রবার।
এর আগে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে র্যাবের কয়েকজন কর্মকর্তা ও র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
ভিসানীতি প্রয়োগের প্রক্রিয়া শুরুর মধ্য দিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র তার অনড় অবস্থানের বিষয়টি আবার জানাল। দেশটির এ অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দেখছে দুভাবে। একটি হলো অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য সরকারের ওপর চাপ অব্যাহত রাখা। দ্বিতীয়টি হলো, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের এক দফা দাবিতে আন্দোলন করা বিএনপিকে নির্বাচনে আনা। এর বাইরে অন্য কোনো বিরূপ প্রভাব দেখছে না ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দলটির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, সরকার এত দিন যেটা চেয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র সেটাই আশা করছে।
তবে বিএনপি ভিসানীতির জন্য সরকারকে দায়ী করেছে এবং সেটা তাদের নেতাকর্মীদের এক দফা আন্দোলনে আরও উজ্জীবিত করবে, এমন দাবি করেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কারণে আগামী নির্বাচন যেনতেনভাবে হয়ে যাবে সেটি ভাবার কোনো সুযোগ নেই। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের প্রস্তুতি সবাইকে নিতে হবে। এর বাইরে কোনো রাজনৈতিক দল, গোষ্ঠী, বাহিনী ও সরকারি কর্মকর্তা যেই হোক শান্তিপূর্ণ নির্বাচনকে প্রভাবিত করা বা একপেশে করার চিন্তা বা পদক্ষেপ গ্রহণ করে এগিয়ে যেতে চাইলে, পড়তে হবে ভিসানীতির আওতায়। যুক্তরাষ্ট্রের অনড় অবস্থান এখন পর্যন্ত সেটাই ইঙ্গিত করে।’
সরকারের পদত্যাগ ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দাবি করে এক দফা দিয়ে আন্দোলনে আছে বিএনপি। অন্যদিকে সরকারি দল আওয়ামী লীগ বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচন করার জন্য এক দফা ঘোষণা করেছে। তারাও শান্তি-সমাবেশসহ নানা কর্মসূচি নিয়ে মাঠে আছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তার সরকারও সুষ্ঠু নির্বাচন চায়। সেটা নিশ্চিত করতে তারা অঙ্গীকারবদ্ধ। সেই সঙ্গে আওয়ামী লীগ এটাও বলে আসছে, তাদের সরকারের চাওয়া আর যুক্তরাষ্ট্রের চাওয়া একই।
নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দুভাবে দেখলেও দলটির বিভিন্ন পর্যায়ে নানা রকম কানাঘুষা রয়েছে। ভেতরে-ভেতরে ‘ভেঙে পড়লেও’ ওপরে শক্ত মনোভাব ধরে রাখার চেষ্টা করছেন নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা। ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কথা জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তি সম্পর্কে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতার কাছে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তারা বেশ বিরক্তি প্রকাশ করেন। তারা বলেন, সরকার ও আওয়ামী লীগের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নতুন কিছু নয়। দুপক্ষের অবস্থান একই বলেও দাবি করেন ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষস্থানীয় নেতারা।
সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নির্বাচনে বাধাদানকারীদের বিরুদ্ধে আমেরিকার যে অবস্থান তাতে বিএনপিরই ক্ষতি, কারণ তারা ঘোষণা দিয়েছে নির্বাচন হতে দেবে না।’ তিনি বলেন, সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা ও আমরা প্রথম থেকেই বলে আসছি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চায় সরকার। সেখানে সব দল নির্বাচনে আসুক সেই আহ্বানও জানানো হয়েছে।
শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলারের দেওয়া সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত এবং সহযোগিতা করার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ওই ব্যক্তিদের মধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, ক্ষমতাসীন দল ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্যরা রয়েছেন। শান্তিপূর্ণ উপায়ে বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সমর্থনে যুক্তরাষ্ট্র প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতারা জোরালোভাবে দাবি করেন, যুক্তরাষ্ট্র তো বিএনপির দাবি সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেনি। যুক্তরাষ্ট্রের যে অবস্থান সেখানে তো তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দিতে হবে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করতে হবে এসব বলা হয়নি। ফলে ভিসা বিধিনিষেধ আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করায় আওয়ামী লীগ বা সরকার কেন বেকায়দায় পড়বে? আমরা মনে করি, বিএনপিই তো বেকায়দায় রয়েছে। কারণ, তাদের দাবি অসাংবিধানিক। আর অসাংবিধানিক উপায় অবলম্বন করছে। তাদের দাবি, যুক্তরাষ্ট্রের এই অনড় অবস্থান বিএনপির বিরুদ্ধে গেছে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খানের দাবি, ‘যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নিয়ে শঙ্কিত বিএনপি। তারা তো বিএনপির একটা দাবির কথাও বলে নাই।’ সরকার বা আওয়ামী লীগ ভীত ও শঙ্কিত নয় জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আপনাদের উচিত বিএনপির প্রতিক্রিয়া জানা।’
আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক সম্পাদক শাম্মী আহমেদ বলেন, ‘আমরা যেমন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন চাই, আমেরিকারও একই রকম চাওয়া।’
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য মোহাম্মদ এ আরাফাত বলেন, ‘এটা আমাদের জন্য নতুন কিছু নয়। যুক্তরাষ্ট্র যে এমন কিছু করবে এটা প্রত্যাশিতই ছিল। এটা সিম্পল ব্যাপার আমাদের জন্য।’
ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় বিরোধী দল আছে বলে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে যে বক্তব্য এসেছে সে সম্পর্কে জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিবৃতিতে কোন বিরোধী দলের কথা বলা হয়েছে তা স্পষ্ট করা হয়নি। তাই এ বিষয়ে কিছু বলতে পারব না। তবে আজকে দেশে গণতন্ত্রের যে সংকট তার জন্য সরকার এককভাবে দায়ী। তা ছাড়া এর আগে বাইডেন প্রশাসন তাদের দেশে যে গণতন্ত্রের সম্মেলন করেছে তাতে বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানায়নি।’
ভিসানীতি প্রয়োগের জন্য সরকারকে দায়ী করে তিনি বলেন, ‘আজকে আওয়ামী লীগ বিগত দুটি বিতর্কিত সংসদ নির্বাচন করার পর আবারও আগামী নির্বাচন একতরফা করতে যে পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে সে কারণে যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা আরোপ করছে। এর দায় সম্পূর্ণভাবে আওয়ামী লীগকে নিতে হবে। আজকে বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপ আগের ঘোষণার ধারাবাহিকতা। প্রথমদিকে নিষেধাজ্ঞা ও ভিসানীতি বাংলাদেশের রাজনীতিতে, সাধারণ মানুষের ভেতর যে বড় ধাক্কা মনে হয়েছিল, ঘোষণা আসার পর সেটা মনে হয়নি। তবে কোনো একটা সমীকরণ থেকেই যুক্তরাষ্ট্র এই পদক্ষেপ নিয়েছে। এর প্রভাব কত দূর যাবে সেটা এখনো পরিষ্কার নয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও প্রশাসনে কী বার্তা যাবে সেটা পরিষ্কার নয়। তবে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা তাদের বৈশি^ক চর্চারই অংশ। মূল কথা হলো, এটা সবার জন্যই চাপ।’
বিশ্বকাপের দল ঘোষণা নিয়ে চলছে নানা নাটকীয়তা। রাতটা পোহালেই বাংলাদেশ দল উড়াল দেবে ভারতের গোয়াহাটিতে। তবে এখনও ঘোষণা করা হয়নি দল। বিসিবি জানিয়েছে, নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে চলমান তৃতীয় ওয়ানডের ম্যাচ শেষেই জানানো হবে বিশ্বকাপের দল।
প্রচুর আলোচনা ও জল্পনা–কল্পনার পর আজ বিশ্বকাপে নিজেদের স্কোয়াড ঘোষণা করবে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। বিসিবির ফেসবুক পেজে আজ দুপুর ১টা ২৮ মিনিটে একটি ভিডিও পোস্ট করা হয়। সেখানে দেখা যায় বিসিবির লোগোসংবলিত বক্সে করে গুরুত্বপুর্ণ কিছু নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ভিডিও–র শেষে প্রশ্ন করা হয়েছে, বলুন তো ভেতরে কি?
বিকেল ৫টা ৪৩ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় সন্ধ্যা পৌণে ৬টায় ঘোষণা করা হবে দল। কিন্তু ৫টা ৪০ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় তৃতীয় ওয়ানডের শেষেই দল ঘোষনা করা হবে।
তার নাম শেখ মোহাম্মদ আসলাম। একসময় সুইডেন ছিলেন বলে পরিচিত হয়ে ওঠেন স্ইুডেন আসলাম নামে। তেজগাঁও এলাকার এই শীর্ষ সন্ত্রাসী একসময় ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ড বা অপরাধ জগৎ কাঁপাতেন। ২৭ বছর ধরে আছেন কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কারাগারে। হত্যাসহ ১৭ মামলার একটি ছাড়া বাকিগুলোতে জামিন পেয়েছেন তিনি। কিন্তু বহু দিনের পুরনো প্রতিপক্ষের হাতে প্রাণ হারানোর শঙ্কায় জামিনের জন্য আবেদন করছেন না তিনি।
মোহাম্মদপুর এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমামুল হাসান হেলাল ওরফে পিচ্চি হেলালও জামিনের আবেদন করছেন না। প্রায় ২০ বছর ধরে কারাগারে থাকা হেলালের বিরুদ্ধে আছে অন্তত এক ডজন মামলা। বেশিরভাগ মামলায় জামিন হয়ে গেছে। এই দুজনের মতোই কারা হাজতে থাকা শীর্ষ সন্ত্রাসীরা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছেন না। এ ছাড়া তাদের বিরুদ্ধে কেউ সাক্ষ্যও দিতে আসেন না আদালতে। তারা বছরের পর বছর ধরে কারাগারে থাকলেও সমস্যা হচ্ছে না। অনেকেই অসুস্থ না হয়েও বছরের পর বছর হাসপাতালে আরামে
থাকছেন। বাইরে থাকা তাদের সহযোগীদের সঙ্গেও যোগাযোগ থাকছে। এই সহযোগীরাই তাদের হয়ে চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধ করছেন।
পুলিশের তালিকায় ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীর নাম আছে যাদের ধরিয়ে দিতে পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। অবশ্য এই তালিকায় সুইডেন আসলাম নেই। তালিকা করা হয় ২০০১ সালের ২৬ ডিসেম্বর। এদের মধ্যে ১৩ জন বিদেশে আত্মগোপন করে আছেন। কারাগারে আছেন ৬ জন, মারা গেছেন ৩ জন। একজনের কোনো হদিস নেই।
এই শীর্ষ সন্ত্রাসীদের আটজনকে ১ লাখ টাকা এবং ১৫ জনকে ৫০ হাজার টাকা পুরস্কারের ঘোষণা দেওয়া হয়। এর মধ্যে পিচ্চি হান্নান র্যাবের ক্রসফায়ার, গণপিটুনিতে আলাউদ্দিন ও কামাল পাশা ওরফে পাশা কারাগারে মারা গেছেন। কালা জাহাঙ্গীর বেঁচে আছেন নাকি আত্মগোপনে, কেউ বলতে পারছেন না। পিচ্চি হেলাল, টিটন, ফ্রিডম সোহেল ও কিলার আব্বাস কারাগারে আছেন। খোরশেদ আলম ওরফে রাশু কিছুদিন আগে ছাড়া পেলেও কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আবার আটক করেছে। মশিউর রহমান কচি, সুব্রত বাইন, আমিন রসুল সাগর. ইমাম হোসেন, প্রকাশ কুমার বিশ্বাস, মোল্লা মাসুদ, শামীম আহমেদ, হারিস আহমেদ, তানভিরুল ইসলাম জয়, জাব্বার মুন্না, জাফর আহমেদ, কামরুল হাসান হান্নান ওরফে ছোট হান্নান দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। তাদের ধরতে ইন্টারপোলের রেড নোটিস জারি করা আছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে আসার চেষ্টা করছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে তাদের ব্যবহার করার চেষ্টা চলছে। পাশাপাশি আন্ডারওয়ার্ল্ডে একে অপরকে ঘায়েল করার চেষ্টা চলছে। সম্প্রতি রাজধানীর তেজগাঁও এলাকায় শীর্ষ সন্ত্রাসী মামুনকে গাড়ি থামিয়ে গুলি করে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। ভাগ্যক্রমে তিনি প্রাণে বেঁচে গেলেও গুলিবিদ্ধ এক পথচারী সংকটাপন্ন অবস্থায় হাসপাতালে আছেন। এ ঘটনায় শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমন জড়িত বলে পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আন্ডারওয়ার্ল্ড উত্তপ্ত হওয়ার আশঙ্কা করছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোও। দেশের বাইরে থাকা সন্ত্রাসীরা নিজেদের সহযোগীদের মাধ্যমে নতুন করে আধিপত্য বিস্তারের জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। এমনকি কারাগারে থাকা সন্ত্রাসীরাও সহযোগীদের নানা বিষয়ে বার্তা দিচ্ছে। এর মধ্যে কেউ কেউ রাজনীতির সঙ্গেও যুক্ত হতে চাইছে। যে কারণে সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে পুলিশ সদর দপ্তর সব কটি ইউনিট, রেঞ্জ ডিআইজি ও জেলার এসপিদের বিশেষ বার্তা পাঠানো হয়েছে। তা ছাড়া আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলের সদর দপ্তরে আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীদের বিষয়ে নতুন করে চিঠি পাঠানো হয়েছে। কারাগার কর্তৃপক্ষকেও হাজতি ও বন্দি সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
জানা গেছে, যেসব সন্ত্রাসী দীর্ঘদিন ধরে কারাগারে আটক আছে, তাদের একটি তালিকা করেছে একটি সংস্থা। এ বিষয়ে বলা হয়েছে, আন্ডারওয়ার্ল্ডের সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে মামলা থাকলেও তারা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছে না। তারা কারাগারকেই নিরাপদ মনে করছে।
কারা সূত্র জানায়, শীর্ষ সন্ত্রাসী সুইডেন আসলাম একটি মামলায় জামিন না নেওয়ায় কারাগারে আছেন। বাকি সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। ২৭ বছরের কারাজীবনে তার দুইবার হার্ট অ্যাটাক হয়েছে। বেশিরভাগ সময় কেটে যাচ্ছে হাসপাতালে থেকেই। হুইলচেয়ারে করে চলাফেরা করেন সব সময়। মোবাইল ফোনে তিনি নিয়মিত যোগাযোগ করেন সহযোগীদের সঙ্গে। তার স্ত্রী আয়েশা নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন।
সুইডেন আসলামের বিষয়ে তার এক আত্মীয় দেশ রূপান্তরকে বলেন, এলাকায় তার যখন একক আধিপত্য ছিল, তখন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির একাধিক নেতার সঙ্গে সুসম্পর্ক ছিল। তারাই এখন তার বিরুদ্ধে। সুইডেন আসলাম বের হয়ে এলে প্রতিপক্ষরাই তাকে মেরে ফেলবে, এমন শঙ্কা আছে। এসব দিক বিবেচনা করেই তিনি বের হতে চাইছেন না। কারাগারেই তিনি ভালো আছেন।
জানা গেছে, সুইডেন আসলামের বিরুদ্ধে মামলাগুলোতে কোনো সাক্ষীও পাওয়া যায় না। ১৯৮৬ সালে তিনি অপরাধ জগতে যুক্ত হন। ওই বছর পূর্ব রাজাবাজারে স্কুলের সামনে কিশোর শাকিলকে গুলি করার অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। তারপর থেকে তার বিরুদ্ধে একের পর এক হত্যাকা-সহ নানা অপরাধের তথ্য বের হয়ে আসে। এরই মধ্যে নিজেকে রক্ষা করতে সুইডেন চলে যান। বছর পাঁচেক ওই দেশে থেকে আবার ফিরে আসেন দেশে। তারপর সুইডেন শব্দটি নামের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যায়। ১৯৯৭ সালের ২৩ মার্চ গালিব খুন হন। এ ঘটনায় আসলামসহ ২০ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়। ১৯৯৮ সালের ৮ এপ্রিল অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। ২৪ সাক্ষীর মধ্যে পুলিশ চারজনকে আদালতে হাজির করতে পেরেছে। বাকিরা আর আসেননি এবং এই মামলায় তিনি জামিনও নেননি।
দীর্ঘদিন কারাগারে থাকলেও আসলাম মোবাইল ফোনে সহযোগীদের সঙ্গে কথা বলতে পারছেন। স্ত্রী আয়েশা আকতার নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন। বলা চলে রাজার হালেই আছেন তিনি।
মিরপুর ও কাফরুল এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী কিলার আব্বাস ২২ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। তার বিরুদ্ধে থাকা ১১টি মামলার জামিন হয়েছে। একটি মামলার জামিন হতে বাকি আছে। তা ছাড়া কমিশনার নিউটন হত্যা মামলায় ফাঁসির আদেশ হলেও উচ্চ আদালতে খালাস পেয়েছেন তিনি। আরেকটি মামলার শুনানি চলছে উচ্চ আদালতে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কিলার আব্বাসের এক সহযোগী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ভাইয়ের সঙ্গে মাঝেমধ্যে কাশিমপুর কারাগারে গিয়ে দেখা করে আসি। দেশের পরিস্থিতি বিবেচনা করে তিনি কারাগার থেকে বের হতে চাচ্ছেন না। জামিন চাইলে তিনি জামিন পেয়ে যাবেন। কিন্তু ভাই তা করবেন না। কারণ প্রতিপক্ষ সক্রিয় আছে। তার প্রাণ শঙ্কা আছে। আমরা ইচ্ছা করলে যেকোনো সময় জামিন নিয়ে ভাইকে বের করে আনতে পারি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আরেক সন্ত্রাসী পিচ্চি হেলালেরও প্রায় সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। শুধু একটা মামলার জামিন বাকি আছে। তিনি যখন কারাগারে, তখন বিএনপি তার বিরুদ্ধে হুলিয়া জারি করেছিল। অথচ হেলাল বিএনপির রাজনীতি করেন। জেলে বসেই মোহাম্মদপুর, আদাবর ও ধানম-ি, মিরপুর এলাকার চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করছেন। মোহাম্মদপুরের বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ড দখল ও চাঁদাবাজি চালাচ্ছেন। তার সঙ্গে মিরপুরের শীর্ষ সন্ত্রাসী শাহাদতের ভালো যোগাযোগ। মোবাইল ফোনে নিয়মিত কথা বলেন তারা। তার আরেক সহযোগী হাবিবুর রহমান তাজ ১৩ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। মামলার সাক্ষীদের হাজির করতে পারছে না রাষ্ট্রপক্ষ। ইচ্ছে করে জামিনও নিচ্ছেন না তাজ। গ্রেপ্তারের আগে দীর্ঘদিন ভারত পালিয়ে ছিলেন। ২০০৮ সালে ভারতে গ্রেপ্তার হওয়ার কয়েক মাস পর তাকে দেশে ফিরিয়ে এনে রাজধানীর কাফরুলে ইলেকট্রিক মিস্ত্রি ইসমাইল হোসেনকে হত্যা করার অভিযোগে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। তা ছাড়া কলেজছাত্র কামরুল ইসলাম ওরফে মোমিন হত্যার সঙ্গেও জড়িত তাজ। মতিঝিল থানার সাবেক ওসি এ কে এম রফিকুল ইসলামের আশ্রয়-প্রশয়ে থাকতেন তিনি। কয়েক বছর আগে ওসি রফিক মারা যান।’
মতিঝিলে একটি গোয়েন্দা সংস্থার দুই কর্মকর্তাকে হত্যা করে আলোচনায় আসে আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী ঈদুল। প্রায় ১৫ বছর ধরে কাশিমপুর কারাগারে আটক আছেন তিনি। একবার পঙ্গু হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে তাকে আটক করে ফেলে পুলিশ। তার বিরুদ্ধে আটটি মামলা থাকলেও দুটি মামলা বাদে সব কটিতে জামিন পেয়েছেন। বাকি মামলাগুলোতে ইচ্ছা করে জামিন নিচ্ছেন না বলে তার এক স্বজন জানিয়েছেন।
সেভেন স্টার গ্রুপের একসময়ের সদস্য ফ্রিডম সোহেল ধানম-ি ৩২ নম্বরে গ্রেনেড হামলা মামলায় যাবজ্জীবন সাজার আসামি। সাজা কমিয়ে কারাগারেই থাকার চেষ্টা করছেন সোহেল। তার বিরুদ্ধে ১১টি মামলা আছে। ৯টি মামলায় জামিন পেয়েছেন। একটি মামলায় সাজা হয়েছে। আরেকটি মামলায় জামিন নিচ্ছেন না।
তার সহযোগী পুরস্কারঘোষিত সন্ত্রাসী রাশু কিছুদিন আগে কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আটক করে। তার এক স্বজন দেশ রূপান্তরকে জানান, মাস দুয়েক আগে সর্বশেষ মামলায় জামিন হয় রাশুর। তার কোনো ইচ্ছা ছিল না কারাগার থেকে বের হওয়ার। আর এ কারণে ইচ্ছা করেই একটি সংস্থাকে কারাগার থেকে বের হওয়ার তথ্য দিয়ে আবার গ্রেপ্তার হন। কারণ তিনি বের হলে প্রতিপক্ষের লোকজন তাকে মেরে ফেলবে এমন আশঙ্কা ছিল। আরেক সন্ত্রাসী লম্বু সেলিম একটি মামলা বাদে সব মামলায় জামিনে আছেন। ভারতের কলকাতা থেকে তাকে পুশব্যাক করা হয়েছিল। প্রায় আট বছর ধরে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আছেন। বেশিরভাগ সময় হাসপাতালে থাকেন। নিরাপত্তাহীনতার কারণে জেল থেকে বের হচ্ছেন না তিনি।
জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, সন্ত্রাসীদের কর্মকা- রোধ করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নানা কৌশলে কাজ করছে। তারা সরগরম হলেও কাজ হবে না। যারা দেশের বাইরে আছে, তাদের চিহ্নিত করে ইন্টারপোলের মাধ্যমে ধরার চেষ্টা চলছে। যারা দেশে আছে, তাদেরও আইনের আওতায় আনতে পুলিশ-র্যাব কাজ করছে। তবে আন্ডারওয়ার্ল্ডের কেউ বিশ্ঙ্খৃলা তৈরি করতে পারবে না। তিনি বলেন, ‘কোনো সন্ত্রাসী জামিন না নিলে এটা আমাদের করার কিছু নেই। তবে তাদের বিরুদ্ধে থাকা মামলাগুলো যাতে দ্রুত নিষ্পত্তি হয়, সেদিকে নজর দেওয়া হচ্ছে।’
পুলিশ সূত্র জানায়, দীর্ঘদিন ধরেই আন্ডারওয়ার্ল্ডের শীর্ষ সন্ত্রাসী, জঙ্গি, চোরাকারবারিসহ ভিন্ন ধরনের অপরাধীরা দুবাই, মালয়েশিয়া, ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আত্মগোপন করে আছেন। তাদের সহযোগীরা বাংলাদেশে অবস্থান করে অপরাধমূলক কর্মকা- চালিয়ে আসছেন। তাদের নির্দেশে হত্যাকান্ডের মতো ঘটনাও ঘটাচ্ছেন তারা। মতিঝিলে আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম টিপু হত্যাকান্ডের পেছনে বিদেশ কানেকশন।
২০০৩ সালে মালিবাগের সানরাইজ হোটেলে ডিবি পুলিশের দুই সদস্যকে হত্যার পর পালিয়ে যাওয়া শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান দুবাইয়ে আত্মগোপন করে আছেন। টিপু হত্যাকান্ডের পর তিনি আলোচনায় এসেছিলেন। দুবাইয়ে থাকলেও ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ডে সবচেয়ে বেশি প্রভাব তার। জিসানের সহযোগী জাফর আহমেদ মানিক ওরফে ফ্রিডম মানিক ভারতে পালিয়ে আছেন। কিন্তু দেশে তার দখলবাজি, টেন্ডারবাণিজ্য ও চাঁদাবাজিতে নিয়ন্ত্রণ এখনো আছে। মোল্লা মাসুদ ও সুব্রত বাইন ভারতে থেকে সক্রিয় আছেন। তানভীর ইসলাম জয়ও সক্রিয় আছেন। কলকাতা, মালয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা ঘুরে তার অবস্থান এখন থাইল্যান্ডে। সেখানে বসেই তিনি কলকাঠি নাড়ছেন।