
পুতিনের একসময়ের ঘনিষ্ঠ মিত্র ভাগনারপ্রধান প্রিগোজিনের মৃত্যুতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে খুব বেশি বিচলিত হতে দেখা যায়নি। এ যেন অনিবার্যই ছিল। পুতিনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণার পর দুই মাস তিনি যে বেঁচেছিলেন, এটাই অনেকের কাছে আশ্চর্যের ছিল। লিখেছেন তৃষা বড়ুয়া
ভাগনারপ্রধানের মৃত্যু
চলতি বছরের জুনে রাশিয়ার ভাড়াটে যোদ্ধা সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান ভাগনার গ্রুপের বিদ্রোহের পরপরই তাদের ৩৫ কমান্ডারকে এক বৈঠকে ডাকেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন। ওই ৩৫ জনের মধ্যে ভাগনারের নেতা ও অর্থদাতা ইয়েভগেনি প্রিগোজিনও ছিলেন। বৈঠকের পর পুতিন বলেছিলেন, ইউক্রেনে যাতে ভাগনারের যোদ্ধারা যুদ্ধ চালিয়ে যান, সে সুযোগ তিনি তাদের দিতে চেয়েছিলেন কিন্তু প্রিগোজিন সেই প্রস্তাবে সাড়া দেননি। পুতিনের দাবি, ভাগনারের কমান্ডারদের অনেকে তার প্রস্তাবে মাথা নেড়ে সম্মতি জানিয়েছিলেন। তাদের সেই প্রতিক্রিয়া প্রিগোজিন দেখেননি। না দেখেই তিনি বলে বসলেন, তার কমান্ডাররা পুতিনের প্রস্তাবে সম্মত নয়। দুই মাস পর আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম জানায়, প্রিগোজিন মারা গেছেন। সম্ভবত তাকে হত্যা করা হয়েছে। একসময়ের অত্যন্ত বিশ্বাসভাজন ও ঘনিষ্ঠ মিত্রের মৃত্যু নিয়ে তাৎক্ষণিক কোনো প্রতিক্রিয়া দেখাননি রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিন। প্রায় একদিন নীরব থাকার পর গত বৃহস্পতিবার তিনি প্রিগোজিনের মৃত্যু নিশ্চিত করেন। রুশদের প্রশ্ন, পুতিনের আজ্ঞা পালনে অস্বীকৃতি জানানো প্রিগোজিন এতদিন কীভাবে বেঁচেছিলেন। রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জুন মাসে ভাগনারের ভাড়াটে যোদ্ধাদের দেশটির সেনাবাহিনীর অধীনে কাজ করার আল্টিমেটাম দিয়েছিল, যা মানেননি প্রিগোজিন। এই অবাধ্যতার মধ্য দিয়ে রাশিয়া রাষ্ট্রের দিকে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছিলেন তিনি। এ ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখে রাষ্ট্রটি শেষ পড়েছিল ১৯৯৩ সালে যখন তৎকালীন রুশ প্রেসিডেন্ট বরিস ইয়েলৎসিন সাংবিধানিক সংকটের একপর্যায়ে তার সেনাবাহিনীকে মস্কোর হোয়াইট হাউজে গোলাবর্ষণের নির্দেশ দেন। রুশ রাজনৈতিক পরামর্শদাতা ও পুতিনের সাবেক বক্তৃতা লেখক আব্বাস গালিয়ামভ বলেন, ‘বিদ্রোহের ডাক দিয়ে পুতিনকে দেশে-বিদেশে অপমান করেছিলেন প্রিগোজিন। রুশ প্রেসিডেন্টের কাছে বিরাট এক সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন তিনি। দুই মাস ধরে রাশিয়ায় সবকিছু ওলট-পালট ছিল। পুতিনের বিরুদ্ধে এখানে কেউ কিছু করে টিকতে পারে না।’
বিদ্রোহ-পরবর্তী সময়ে প্রিগোজিনকে আগের মতো দৃঢ়চিত্তের মানুষ মনে হয়নি। তবে তিনি রাজনীতির মাঠ ছেড়ে যানওনি। বেলারুশে অবস্থানের সময় এক ভিডিও বার্তায় তিনি তার যোদ্ধাদের বলেন, ইউক্রেনে যুদ্ধ যেভাবে পরিচালনা করা হচ্ছে, তা অসম্মানজনক। রাশিয়া-আফ্রিকা সম্মেলনের সময় তার ছবি প্রকাশ করা হয়। এরপর গত সপ্তাহে আফ্রিকার কোনো এক দেশে অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে প্রিগোজিন জানান, রাশিয়াকে তিনি আরও শক্তিশালী করছেন। লক্ষণীয় বিষয় হলো, বিদ্রোহের পর প্রিগোজিনের বিরুদ্ধে কোনো মামলা হয়নি। তার ক্যাটারিং কোম্পানিগুলো আগের মতোই মিলিয়ন ডলারের চুক্তি পাচ্ছিল। নিজের জেট বিমানে চড়ে আফ্রিকা, বেলারুশ ও রাশিয়া ভ্রমণ করছিলেন। গত বুধবার ওই জেটে অবস্থানের সময় প্রাণ হারান প্রিগোজিন। রাজনৈতিক পরামর্শদাতা গালিয়ামভ বলেন, ‘এই দুই মাসে প্রিগোজিনের কর্মকাণ্ড দেখে মনে হচ্ছিল, পুতিনের বিরুদ্ধে যাওয়া অনুমোদনযোগ্য। সবকিছু একটা সময় পর ঠিক হয়ে যাবে।’
অতিমাত্রায় আত্মবিশ্বাসী
অনেকের মনে হয়েছিল, প্রিগোজিনের কিছুই হবে না, তা সম্ভব নয়। যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার (সিআইএ) প্রধান উইলিয়াম বার্নস ভাগনার নেতা প্রিগোজিনকে সতর্ক করে বলেছিলেন, তিনি যেন তার ফুড টেস্টারকে (খাবারের মান পরীক্ষক) চাকরিচ্যুত না করেন। বিদ্রোহের পর প্রিগোজিনের ধারণা ছিল, এ যাত্রায় তিনি বেঁচে গেছেন। ইউক্রেন থেকে বিতাড়িত হওয়ার পর আফ্রিকায় ভাগনারের লাভজনক কর্মকাণ্ডে মনোনিবেশ করেন তিনি। পশ্চিমাদের সঙ্গে দুর্বল সম্পর্ক থাকা লিবিয়া, সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিক, মালি, সুদানসহ আফ্রিকার অন্যান্য দেশে ভাগনারের যোদ্ধারা দীর্ঘদিন ধরে অত্যন্ত সক্রিয়। ভাগনারের সাবেক কমান্ডার ও প্রিগোজিনের সাবেক সহকারী মারাত গাবিদুলিন বলেন, ‘গোটা আফ্রিকান প্রকল্প প্রিগোজিনের ওপর পুরোপুরি নির্ভরশীল ছিল। তিনি শেষ দিন পর্যন্ত অত্যন্ত উচ্চাকাক্সক্ষী ছিলেন। তিনি হয়তো ভেবেছিলেন, পুতিনের তাকে দরকার। তাকে ছাড়া রুশ প্রেসিডেন্টের চলবে না। অতিমাত্রায় আত্মবিশ্বাসী হওয়া নিশ্চিতভাবে তার অনেক ভুলের একটি।’ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রাশিয়ার এক সাবেক প্রতিরক্ষা কর্মকর্তা বলেন, ‘সম্ভবত বিদ্রোহের পরপরই প্রিগোজিনকে হত্যার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল।
গত বুধবার প্রিগোজিনের মৃত্যুর খবর সংবাদমাধ্যমগুলো যখন প্রকাশ করে, সে সময় কুর্স্কের যুদ্ধের ৮০তম বার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত কনসার্টে সংগীত উপভোগ করছিলেন পুতিন। এত এত মিউজিশিয়ানের পাশে রুশ প্রেসিডেন্টের ছবি দেখে কারও কারও মনে একটি চিন্তা উঁকি দেয়। ভাগনার যোদ্ধাদের ডাকনাম মিউজিশিয়ান। মিউজিশিয়ানদের নেতা প্রিগোজিনের যখন মৃত্যু হয়, সে সময় পুতিন মিউজিশিয়ানদের মাঝেই ছিলেন, তাদের সংগীতসুধা আকণ্ঠ পান করছিলেন।
ভিন্নমতাবলম্বীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, কয়েক সপ্তাহ ধরে বোঝা যাচ্ছিল, প্রিগোজিন ছাড়াও যারা বিভিন্ন সময়ে ইউক্রেন যুদ্ধের সমালোচনা বা বিরোধিতা করেছেন, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে যাচ্ছে ক্রেমলিন। গত মাসে পুতিন ও রাশিয়ার ইউক্রেন অভিযানের ক্রমাগত সমালোচনা করা সাবেক রুশ কমান্ডার ইগর গারকিনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ ছাড়া প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ে প্রিগোজিনের শক্তিশালী মিত্র জেনারেল সার্গেই সুরোভাইকিনকে বিদ্রোহের পর কারও সঙ্গে যোগাযোগ করতে নিষেধ করা হয়। রুশ সাংবাদিক ও নিরাপত্তা সেবার বিষয়ে বিশেষজ্ঞ আন্দ্রেই সলদাতভ বলেন, ‘ক্ষতির মাত্রা বুঝতে পুতিন সময় নিচ্ছিলেন। বিদ্রোহকে অজুহাত হিসেবে দেখিয়ে তিনি তার ও যুদ্ধের সমালোচনাকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।’ প্রিগোজিনের মৃত্যু ক্রেমলিনের বাইরে রাশিয়ার উচ্চপদস্থ সেনা কর্মকর্তাদের মধ্যকার ক্ষোভ প্রশমনে সহায়তা করতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। বিশেষ করে দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী সার্গেই শোইগু ও সেনাপ্রধান ভ্যালেরি গেরাসিমভের মধ্যে চলমান উত্তেজনা লাঘব হতে পারে ভাগনারপ্রধানের মৃত্যুতে। রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক সূত্র জানিয়েছে, বর্তমান সরকার ও সেনাবাহিনীর কর্মকাণ্ড স্থিতিশীল করতে প্রিগোজিনবধ জরুরি ছিল।
সেনাবাহিনীর অবস্থান
প্রিগোজিনকে হত্যা করার পেছনে রুশ সেনাবাহিনীর একাধিক উদ্দেশ্য ছিল। তার যোদ্ধারা জুনে বিদ্রোহের সময় বহু হেলিকপ্টার ও বিমান গুলি করে ভূপাতিত করে। এতে ১৫ জন রুশ পাইলট ও ক্রু মারা যান। একই সঙ্গে গোলাবারুদ নিয়ে সেনাবাহিনী ও ভাগনারের ঝগড়া-বিবাদ এমন পর্যায়ে চলে গিয়েছিল যে, যেকোনো মুহূর্তে তাদের মধ্যে ছোটখাটো যুদ্ধ বেঁধে যাওয়া অস্বাভাবিক কোনো ঘটনা ছিল না। একসময় ভাগনার যোদ্ধাদের হাতে অপহৃত হওয়া রাশিয়ার সেনাবাহিনীর এক সাবেক কমান্ডার প্রিগোজিনের মৃত্যুতে সন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, ‘লজ্জার দাগ অবশেষে মুছে ফেলা হয়েছে।’ রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সূত্রটি বলে, ‘জুনে প্রিগোজিনের বিদ্রোহ ব্যর্থ হওয়ার পরমুহূর্তেই পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছিল, ভাগনারপ্রধানকে বাঁচিয়ে রাখা হবে না। তবে ব্যক্তিগতভাবে আমার মনে হয়েছিল, তাকে হয়তো আফ্রিকার কোথাও পাঠিয়ে দেওয়া হবে, দেশে আসতে দেওয়া হবে না। প্রিগোজিনকে চুপিসারে মেরে ফেলা যেত। কিন্তু তা হয়নি। এর কারণ ক্রেমলিন সবাইকে শক্তিশালী বার্তা দিতে চেয়েছিল।’ রুশ শিল্প সংগ্রাহক ও বিরোধী দলের নেতা ম্যারেট গেলমান বলেন, ‘প্রিগোজিনকে হত্যার মধ্য দিয়ে রাশিয়ার শক্তিশালী ব্যক্তিদের স্পষ্ট বার্তা দেওয়া হয়েছে। কেউ ইউক্রেন যুদ্ধের বিরোধিতা করতে পারবে না। পুতিনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের ডাকও দিতে পারবে না। সাবেক রুশ কমান্ডার ইগর গারকিন ও ভাগনারপ্রধান প্রিগোজিন একসময় পুতিনের চেয়েও বেশি ইউক্রেন যুদ্ধের পক্ষে ছিলেন। তাদের দুজনকেই শাস্তি পেতে হয়েছে।’
প্রিগোজিনের মৃত্যু নিয়ে রাশিয়ায় তীব্র প্রতিক্রিয়া হবে বলে মনে করছেন না বিশ্লেষকরা। তবে তার মৃত্যু দেশটির জাতীয়তাবাদী নেতা ও যুদ্ধবাজদের চাপে ফেলতে বাধ্য। রাশিয়ার সেন্ট পিটার্সবার্গ শহরে এক যোদ্ধাকে প্রিগোজিন ও দিমিত্রি আতকিনের অস্থায়ী স্মৃতিসৌধের সামনে হাঁটু গেড়ে বসে কাঁদতে দেখা গেছে। দিমিত্রি আতকিন ছিলেন ভাগনারের আরেক নেতা। বুধবার প্রিগোজিনের সঙ্গে বিমানে তিনিও ছিলেন। ওই যোদ্ধা ছাড়া আরও অনেকে তাদের স্মৃতিসৌধের সামনে শোক প্রকাশ করেন। রাশিয়ার বিরোধী দলের নেতা ম্যারেট গেলমান বলেন, ‘লড়াইয়ের ব্যাপারে যারা খুব আবেগী ও উৎসাহী, তাদের মনোবলে আঘাত হেনেছে গত বুধবারের হত্যাকাণ্ড।’ রাশিয়ার আলোচিত যুদ্ধবাজ ও জাতীয়তাবাদী লেখক জাখার প্রিলেপিনের মতো আরও অনেকে যে ওই হত্যাকাণ্ডে ক্ষুব্ধ, তা জানান গেলমান। তিনি বলেন, ‘যোদ্ধারা বড় ধরনের ধাক্কা খেয়েছেন। তারা সবাই যুদ্ধশিশু। তাদের মনোবল ফিরিয়ে আনা পুতিনের জন্য এখন কঠিন হবে।’
ভাগনারের ভবিষ্যৎ
প্রিগোজিনের মৃত্যুর পর আফ্রিকায় ভাগনারের ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, সম্ভবত ক্রেমলিন, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বা আগ্রহী অন্য খেলোয়াড়রা ওই মহাদেশে ভাগনারের লাভজনক ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার চেষ্টা করতে পারে। ভাগনার নিয়ে বই লিখছেন স্বাধীন গবেষক জন লেচনার। তিনি বলেন, ‘ভাগনারের যোদ্ধাদের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। তারা আমাকে বলেছেন, তারা তাদের কাজ চালিয়ে যাবেন। মনে রাখা জরুরি, প্রিগোজিন আর নেই। এ অবস্থায় রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ভাগনারের নিয়ন্ত্রণ নিতে পারবে কি না, এ নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। ভাগনারের দুই গুরুত্বপূর্ণ নেতা ইয়েভগেনি প্রিগোজিন ও দিমিত্রি আতকিনের মৃত্যুর পর বিষয়টি সহজ হবে না। সমস্যার সমাধান রাতারাতি হবে, এমনটা ভাবার কারণ নেই।’ বিদ্রোহের পর ভাগনার যোদ্ধাদের কাছ থেকে ভারী অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে নেওয়া হয়েছে। তারা এখন ক্রেমলিনের জন্য তেমন একটা হুমকি নয়। তারপরও প্রশ্ন থেকে যায়, ভাগনার যোদ্ধারা তাদের আনুগত্যে পরিবর্তন আনবেন কি না। ভাগনারের সাবেক কমান্ডার মারাত গাবিদুলিন বলেন, ‘যোদ্ধারা এ মুহূর্তে বুঝতে পারছেন না, তারা কী করবেন। যোদ্ধারা সবাই স্তম্ভিত। পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হওয়ার পর তাদের ভাবতে হবে, আগামী দিনে করণীয় কী।’ এ বিষয়ে যুক্তরাজ্যভিত্তিক নিরাপত্তাবিষয়ক গবেষণা সংস্থা রয়্যাল ইউনাইটেড সার্ভিসেস ইনস্টিটিউটের সিনিয়র রিসার্চ ফেলো ড. জোয়ানা ডি ডিউজ পেরেইরা বলেন, ‘প্রিগোজিনের মৃত্যুর পর ভাগনারকে পুনর্গঠন করা হতে পারে। ভাগনারের ক্রিয়াকলাপ প্রিগোজিনের নেতৃত্বে যেমন ছিল, সম্ভবত তেমনই থাকবে। ভবিষ্যতে ভাড়াটে যোদ্ধা সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানটির নাম হয়তো পরিবর্তন করা হবে। ভাগনার ইতিমধ্যে প্রমাণ করেছে, পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে তারা খাপ খাইয়ে নিতে জানে। ভাগনারকে আমাদের উচিত কোনো একক ব্যক্তি হিসেবে না দেখা। বরং প্রতিষ্ঠানটিকে আমাদের একটি বাস্তুতন্ত্র হিসেবে দেখা উচিত। হাইড্রার যেমন অনেক মাথা আছে, ঠিক তেমনি আফ্রিকায় ভাগনারের স্বার্থও বহুবিধ।’
নতুন একটি ফিচার যুক্ত করতে যাচ্ছে গুগল। এর মাধ্যমে ক্রোমের ওয়েবস্টোর থেকে কোনো এক্সটেনশন মুছে গেলে তা ব্যবহারকারীকে সচেতনভাবে সতর্ক করা হবে। নতুন ফিচারটিকে ক্রোম ১১৭-এর একটি অংশ হিসেবে যুক্ত করা হবে। এটি এক্সটেনশনের ওপর থেকে দেখাবে যে, এক্সটেনশনটি ডেভেলপার নিজেই রিমুভ করেছে কি না অথবা এটি ক্রোম স্টোরের পলিসি ভঙ্গ করেছে কি না। এটি কোনো ম্যালওয়্যার কি না, তা-ও জানিয়ে দেবে।
ক্রোমের একজন ডেভেলপার বলেন, এই ক্যাটাগরিতে পড়া এক্সটেনশনগুলো ক্রোম সেফটি চেক সেকশনে রাখবে। এটি ক্রোম সেটিংসের প্রাইভেসি অ্যান্ড সিকিউরিটির ভেতরে পাওয়া যাবে। এরপর ব্যবহারকারী রিভিউতে ক্লিক করে সিদ্ধান্ত নিতে পারবে তারা সেই এক্সটেনশনকে রিমুভ করে দেবে, নাকি সেটাকে আগের মতোই ইনস্টল রেখে সতর্ক বার্তাকে সরিয়ে দেবে।
ওই ডেভেলপার বলেন, আগের সংস্করণে কোনো ম্যালওয়্যারকে ক্রোম আপনা-আপনিই ডিজেবল করে দিত। আরেকটি সিকিউরিটি আপগ্রেডের ভেতরে থাকছে সব ‘http://’কে গুগল আপনা-আপনিই ‘http://’-এ রূপান্তর করে দেবে, যেহেতু এটি বেশি নিরাপদ।
গুগল থেকে জানানো হয়, কোনো অনিরাপদ সংযোগে উচ্চ বিপজ্জনক ফাইল ডাউনলোড করার সময় সতর্কতা দেখানোর ফিচারও খুব শিগগিরই চালু করা হবে। এটি সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি চালু করা হতে পারে বলে জানিয়েছে প্রযুক্তিবিষয়ক সাইট দ্য ভার্জ।
কোলেস্টেরলের সমস্যা এখন প্রায় ঘরে ঘরে। ট্রু কোলেস্টেরল, ট্রাইগ্লিসারাইড, এইচডিএল, এলডিএল এই চারটি মিলেই মূলত তৈরি হয় কোলেস্টেরলের পরিবার। অনেকের ধারণা, চর্বি জাতীয় খাবার বেশি খেলেই কোলেস্টেরলের মাত্রা বেড়ে যায়। সব ক্ষেত্রে এ ধারণা ঠিক নয়। আসলে কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়বে কি না, তা নির্ভর করে প্রত্যেকের শরীরের বিপাক হারের ওপর। কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে চর্বিজাতীয় খাবার, চিপ্স, ভাজাভুজি, শর্করাযুক্ত পানীয় এড়িয়ে চলা উচিত। সেই সঙ্গে খাদ্যতালিকায় কিছু পানীয় রাখলেও এই রোগের হাত থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। প্রতিদিনকার খাবারে ৫ পানীয় থাকলে কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে থাকবে।
টমেটোর রস : টমেটোতে উপস্থিত লাইকোপিন শরীরে লিপিডের মাত্রা বাড়াতে এবং লাইপোপ্রোটিনের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে। এতে নিয়াসিন ও কোলেস্টেরল কমানোর জন্য প্রয়োজনীয় ফাইবারও থাকে। রোজ আধা কাপ করে টমেটোর রস খেতে পারলে কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব।
গ্রিন টি : অ্যান্টি-অক্সিডেন্টসমৃদ্ধ গ্রিন টিতে থাকা ‘ক্যাটাচিন’ শরীরে খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে। গবেষণায় প্রমাণিত ১২ সপ্তাহ ধরে নিয়মিত গ্রিন টি খেলে শরীরে লাইপোপ্রোটিনের মাত্রা প্রায় ১৬ শতাংশ কমে যায়।
ওটসের দুধ : রোজের খাদ্যতালিকায় ওটসের দুধ থাকলে নিয়ন্ত্রণে থাকবে কোলেস্টেরল। ওটসের দুধে রয়েছে বিটা গ্লুকোন। তা শরীরে খারাপ কোলেস্টেরলের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে রাখে।
সয়া দুধ : এই দুধে স্যাচুরেটেড ফ্যাটের পরিমাণ খুবই কম। একেবারে নেই বললেই চলে। দীর্ঘদিন ধরে উচ্চ কোলেস্টেরলের সমস্যায় ভুগে থাকলে শরীর সুস্থ রাখতে রোজের খাদ্যতালিকায় অনায়াসে রাখতে পারেন সয়া দুধ। শুধু কোলেস্টেরল নয়, হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতেও সাহায্য করে এই পানীয়।
রেড ওয়াইন : কোলেস্টেরলের সমস্যা থাকলে অন্যান্য অ্যালকোহল থেকে দূরে থাকার পরামর্শ দেন চিকিৎসকরা। তবে পরিমিত পরিমাণে রেড ওয়াইন খেলে কোলেস্টেরলের মাত্রা বিপদসীমার নিচে থাকে। এতে অনেক ধরনের অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট থাকে। নিয়ম মেনে খাওয়া গেলে হৃদযন্ত্রের স্বাস্থ্যরক্ষাও করে এই পানীয়।
প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ জীবনের কোনো না কোনো সময় কোমর ব্যথায় ভোগেন। কোমর ব্যথা তিন ধরনের : স্বল্পমেয়াদি, মাঝারি মেয়াদি ও দীর্ঘমেয়াদি।
কারণ : ডিস্ক প্রল্যাপ্স বা PLIDঅথবা হাড়ক্ষয় বা spondolysis-এর কারণে কোমর ব্যথা হয়। বাস্তবে এমআরআই বা এক্স-রে ফিল্ম ও রিপোর্ট বিশ্লেষণ করে দেখা যায় বেশির ভাগ দীর্ঘমেয়াদি কোমর ব্যথার রোগীর এমআরআই বা এক্স-রে রিপোর্ট ভালো। এ ধরনের রোগীদের হাড় বা হাড়ের ডিস্কে উল্লেখযোগ্য কোনো সমস্যা নেই। শারীরিক পরীক্ষা করেও বড় ধরনের কোনো মাংসপেশির টান বা অন্য কিছু পাওয়া যায় না। বলা হয়ে থাকে, এই ব্যথার উৎপত্তি অজ্ঞাত। বিজ্ঞানীরা এই ব্যথার নাম দিয়েছেন নন স্পেসিফিক ক্রনিক লো ব্যাক পেইন, সংক্ষেপে NSCLBP. . রোগ নির্ণয় : মানসিক ও আর্থ-সামাজিক অবস্থা থেকে শুরু করে সামান্য হাড়ক্ষয়, বা নিম্নমাত্রার পিএলআইডি ইত্যাদির সমন্বিত ফলাফল হতে পারে দীর্ঘমেয়াদি কোমর ব্যথা। সমস্যা নির্ণয়ে রোগীর জীবনাচরণের ইতিহাস জানা প্রয়োজন, কিছু প্যাথলজিক্যাল ও রেডিওলজিক্যাল টেস্টও দরকার।
চিকিৎসা : দীর্ঘমেয়াদি কোমর ব্যথায় ওষুধ তেমন কোনো ভূমিকা রাখতে পারে না। একইভাবে সাধারণ ফিজিওথেরাপি যেমন : শর্ট ওয়েভ, মাইক্রোওয়েভ, ট্র্যাকশন বা আলট্রাসাউন্ড দিয়েও ভালো ফল পাওয়া যায় না। এ ধরনের রোগীর চিকিৎসার শুরুতেই দেখে নিতে হবে রোগীর কোনো রেড বা ইয়েলো ফ্ল্যাগ সাইন আছে কিনা। রোগীর কোনো জটিল রোগ, যেমন : ক্যানসার আছে কিনা। যদি এ ধরনের সমস্যা না থাকে তবে তাকে মাল্টিডিসিপ্লিনারি চিকিৎসা হতে হবে সুনির্দিষ্ট। তবেই ভালো ফল পাওয়া যাবে।
উপদেশ : প্রথমত, ক্রনিক লো ব্যাক পেইনের রোগীরা অর্থোটিকস বা কোমরের বেল্ট ব্যবহার করবেন না। পূর্ণ বিশ্রামে থাকারও প্রয়োজন নেই, কর্মচঞ্চল থাকবেন, নিয়মিত হাঁটবেন, সাঁতার কাটবেন।
জুলাইয়ে আফগানিস্তানের বিপক্ষে সিরিজ হারে বাংলাদেশ দল। যে সিরিজে চট্টগ্রামে ঘরের মাঠে টাইগাররা ২-১ ব্যবধানে পরাজিত হয়েছিল। আর এই সিরিজে পরাজয়ের পেছনে বড় কারণ অধিনায়ক তামিম ইকবাল! এমনটাই মনে করেন বাংলাদেশ দলের বর্তমান অধিনায়ক সাকিব আল হাসান।
আফগানদের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচ শেষে অবসর নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তামিম। একদিন পরে অবশ্য অবসর ভাঙলেও সেই সিরিজ আর খেলেননি তিনি। একটি টিভি চ্যানেলকে দেওয়া সাক্ষাৎকারের দ্বিতীয় কিস্তিতে সাকিব সেই সিরিজ হারের দায় দিলেন তামিমের ওপরই।
'আফগানিস্তানের সঙ্গে সিরিজ হারটা আমি পুরোপুরি একজনকে দায় দেব, অধিনায়ক। এক ম্যাচ পরে আমাদের হাতে আরও দুই ম্যাচ ছিল। আমরা তৃতীয় ম্যাচে ঠিকই কামব্যাক করেছি কিন্তু একটা ম্যাচ সময় লেগেছে আমাদের। সুতরাং এটা আর কারো দায় নয়, পুরো সিরিজটায় দায় একজনের ওপর। বিশ্বের কোথাও অন্তত দেখিনি যে এক ম্যাচ পরেই এরকম অধিনায়ক এসে ইমোশনালি বলে ফেলেন যে আমি ভাই খেলব না আর ক্রিকেট।’
সাকিব বলেন, 'আমার ধারণা যদি কোনো অধিনায়কের দায়িত্ববোধ থাকত, সে এটা করতে পারত না। আমার কাছে মনে হয়, এটা দলকে অনেক বাজে একটা পরিস্থিতিতে ফেলে দিয়েছে এবং আমার মনে হয় ওইটাই এখনো রিকভার করতে সময় লাগছে, যেটা আমি অনুভব করি।’
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নিতে চায় তার পরিবার। ইতোমধ্যে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। এদিকে খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়ার বিষয়টি জানতে পেরেছেন জার্মান বিএনপি ও ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর বিএনপি নেতারা।
তারা বৃহস্পতিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে জার্মানিতে নেওয়ার কথা ছিল উন্নত চিকিৎসার জন্য। কিন্তু সে সময় শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়। এবার চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে আনার কথা শুনছি। জার্মানিতে খালেদা জিয়ার যে চিকিৎসা দরকার তার আধুনিক সকল সুযোগ সুবিধা জার্মানিতে রয়েছে। আমরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি যদি চেয়ারপারসনকে জার্মানিতে আনা হয় তাহলে আমরা তার জন্য কিছু করার সুযোগ পাব। জার্মানিতে তার ভালো চিকিৎসা হবে।’
এর অংশ হিসেবে গত মঙ্গলবার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল জার্মান দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স (সিডিএ) জান রল্ফ জানোস্কির সঙ্গে কথা বলেছেন। জবাবে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত জানোস্কি বলেছেন, ‘খালেদা জিয়া যে ধরনের সমস্যায় ভুগছেন তার সবচেয়ে ভালো চিকিৎসা বিশ্বের যে কয়েকটি দেশে সম্ভব জার্মানি তার অন্যতম। বাংলাদেশ সরকার অনুমতি দিলে জার্মানিতে তার সুচিকিৎসা হতে পারে।’
গত ৯ আগস্ট খালেদা জিয়াকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গত দেড় মাসের বেশি সময় ধরে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় খালেদা জিয়া ঢাকায় এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। মেডিকেল বোর্ডের পক্ষ থেকে অনেক দিন ধরে তার লিভার প্রতিস্থাপনের জন্য বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার পরামর্শ দিয়ে আসছে।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক এ জেড এম জাহিদ হোসেন সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, লিভার সিরোসিসের কারণে খালেদা জিয়ার হৃদ্যন্ত্র ও কিডনির জটিলতা বেড়েছে। তিনি হাসপাতালে কখনো কিছুটা ভালো থাকছেন, পরক্ষণেই তার স্বাস্থ্যের পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে। ফলে তাকে সার্বক্ষণিক চিকিৎসা দিতে হচ্ছে।
বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘লিভার সমস্যার কারণে ম্যাডামের শ্বাস কষ্ট হয়। ইতোমধ্যে তাকে দুইবার করোনারী কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) রাখা হয়েছিল। লিভার প্রতিস্থাপন করতে পারলে শ্বাসকষ্টটা হতো না।’
এদিকে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার উন্নতির লক্ষণ না থাকায় তার পরিবার ও বিএনপির পক্ষ থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশে পাঠানোর বিষয়টি এখন সামনে এসেছে।
খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়া হতে পারে এমন খবরে তার উন্নত চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি ও খোঁজখবর নিচ্ছেন জার্মান বিএনপি নেতারা।
জার্মান বিএনপির সভাপতি আকুল মিয়া বৃহস্পতিবার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘জার্মানিতে ম্যাডামকে উন্নত চিকিৎসার জন্য আনা হতে পারে বলে জানতে পেরেছি। আমরা খুবই খুশি। কারণ জার্মানিতে আসলে আমরা তার চিকিৎসার বিষয়ে আমাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করতে পারব। চেয়ারপারসনের যে চিকিৎসা দরকার তা সকল ব্যবস্থা জার্মানিতে রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা ম্যাডামের মুক্তি, তার উন্নত চিকিৎসা ও গণতন্ত্র ফেরাতে দেশে চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে জার্মানিতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছি। আগামী ৯ অক্টোবর আমাদের কর্মসূচি রয়েছে। জার্মান বিএনপির উদ্যোগে রোডমার্চ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করব জার্মান পার্লামেন্টের সামনে। ’
আকুল মিয়া বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে উন্নত চিকিৎসার জন্য যখন বিদেশে নেওয়ার আলোচনা চলছিল তখনও জার্মানিতে নেওয়ার কথা ভাবা হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়েছিল। সে সময় তারেক রহমানের সেবা করতে না পারলেও চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সেবা করতে পারব বলে আশা করছি। তার চিকিৎসা জার্মানিতে করতে পারলে আমরা ধন্য হবো।’
গত ২৫ সেপ্টেম্বর সোমবার খালেদা জিয়ার ছোট ভাই সাঈদ ইস্কান্দার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বরাবর আবেদন করেছেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইনি মতামত জানতে চেয়ে আবেদনের কপি আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার অনুমতি চেয়ে করা আবেদনটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। খালেদা জিয়ার ভাইয়ের আবেদনটি অল্প সময়ের মধ্যে যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে।’
বাংলাদেশের কিছু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, ক্ষমতাসীন দলের সদস্য ও রাজনৈতিক বিরোধীদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র বলে জানিয়েছেন ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসের মুখপাত্র ব্রায়ান শিলার।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর আজ শুক্রবার (২২ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনপ্রক্রিয়ায় বাধাদানকারী ব্যক্তিদের ভিসা প্রদানে বিধিনিষেধ আরোপের পদক্ষেপ নেওয়া শুরু করার ঘোষণা পর তিনি এ তথ্য জানান। তবে কতজনের ওপর এই বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে, তা তিনি জানাননি ।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের মুখপাত্র ব্রায়ান শিলার বলেছেন, ‘আমরা যখন এই ভিসা নীতি ঘোষণা করেছি, তখন থেকেই যুক্তরাষ্ট্র সরকার ঘটনাবলির ওপর গভীর দৃষ্টি রাখছে। সতর্কতার সঙ্গে তথ্য-প্রমাণ পর্যালোচনার পর আমরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, ক্ষমতাসীন দলের সদস্য ও রাজনৈতিক বিরোধীদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করেছি।’
মার্কিন দূতাবাসের মুখপাত্রকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় আসা ব্যক্তিদের নাম যুক্তরাষ্ট্র প্রকাশ করবে কি না। জবাবে তিনি বলেন, ‘না, এসব ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় আসা ব্যক্তিদের নাম আমরা প্রকাশ করব না।’ কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের আইনে ভিসা রেকর্ড গোপনীয়।
ব্রায়ান শিলার এই কথা বলার ঘণ্টাখানেক আগে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের ওয়েবসাইটে এ বিষয়ে একটি বিবৃতি প্রকাশ করা হয়। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলারের ওই বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আজ (শুক্রবার) স্টেট ডিপার্টমেন্ট বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ক্ষুণ্ন করার জন্য দায়ী বা জড়িত থাকা বাংলাদেশি ব্যক্তিদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করার পদক্ষেপ নিচ্ছে। এ ব্যক্তিদের মধ্যে আইন প্রয়োগকারী, ক্ষমতাসীন দল এবং রাজনৈতিক বিরোধী দলের সদস্য রয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন যাতে শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয় তার সমর্থনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘এই ব্যক্তি এবং তাদের পরিবারের সদস্যরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের জন্য অযোগ্য বলে বিবেচিত হতে পারে। বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ক্ষুণ্ন করার জন্য দায়ী বা জড়িত বলে প্রমাণিত অতিরিক্ত ব্যক্তিরাও ভবিষ্যতে এই নীতির অধীনে মার্কিন ভিসার জন্য অযোগ্য বলে বিবেচিত হতে পারে। এর মধ্যে বর্তমান এবং প্রাক্তন বাংলাদেশী কর্মকর্তা, বিরোধী ও ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের সদস্য এবং আইন প্রয়োগকারী, বিচার বিভাগ এবং নিরাপত্তা পরিষেবার সদস্যরা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।’
যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বলা হয়, ‘আমাদের আজকের পদক্ষেপগুলি শান্তিপূর্ণভাবে অবাধ ও নিরপেক্ষ জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের বাংলাদেশের লক্ষ্যকে সমর্থন করার জন্য এবং বিশ্বব্যাপী গণতন্ত্রকে এগিয়ে নিতে চায় তাদের সমর্থন করার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অব্যাহত প্রতিশ্রুতি প্রতিফলিত করে।’
মে মাসে বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ জাতীয় নির্বাচনের স্বার্থে ভিসানীতির ঘোষণা দেয় যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ্যান্থনি ব্লিংকেন ওই ঘোষণা দেন।
গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী বা জড়িত অভিযোগে দেশের কিছু ব্যক্তির ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করার কথা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এ বিষয়টি নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিএনপি পাল্টা বক্তব্য দিতেও শুরু করেছে। এতে বিরোধীপক্ষেরই ঝুঁকি দেখছে আওয়ামী লীগ। কিন্তু সুষ্ঠু নির্বাচন করার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের এই সবপক্ষই চাপে পড়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
তারা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের এ অবস্থান নিয়ে রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি একে অন্যকে ঘায়েল করার চেষ্টা হলেও মূলত নির্বাচনী রাজনীতিতে এক ধরনের পরিবর্তন আসবে। একপক্ষ নির্বাচন প্রতিহত করার ঘোষণা দিলেও সেই পথ থেকে তাদেরও সরতে হবে। আবার সরকারপক্ষ যেনতেন নির্বাচন করে ক্ষমতায় বসে যাবে সেই সুযোগও থাকছে না। যে যাই বলুক নির্বাচনী রাজনীতিতে সামনের দিনগুলোতে এ পরিবর্তন আসতেই হবে।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সবপক্ষের জন্য। তাদের অবস্থানে বিএনপি উৎফুল্ল হয়ে যাবে, আর আওয়ামী লীগ ধরাশায়ী হয়ে যাবে ব্যাপারটা এমন নয়। বরং এতে এক ধরনের সমাধানের পথ খুলে যেতে পারে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের নির্দিষ্ট তারিখ না দিলেও জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে হবে এমন আভাস দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
কিন্তু গত বছর থেকেই যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন ধারাবাহিকভাবে বাংলাদেশে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের প্রত্যাশার কথা জানিয়ে আসছে। তাদের একাধিক প্রতিনিধি বাংলাদেশ সফর করে সরকার ও বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে কথা বলেছে। সুষ্ঠু নির্বাচনে সমর্থনের কথা জানিয়ে গত ২৪ মে বাংলাদেশের জন্য নতুন ভিসানীতি ঘোষণা করে যুক্তরাষ্ট্র। যার প্রয়োগের কথা জানানো হলো গত শুক্রবার।
এর আগে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে র্যাবের কয়েকজন কর্মকর্তা ও র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
ভিসানীতি প্রয়োগের প্রক্রিয়া শুরুর মধ্য দিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র তার অনড় অবস্থানের বিষয়টি আবার জানাল। দেশটির এ অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দেখছে দুভাবে। একটি হলো অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য সরকারের ওপর চাপ অব্যাহত রাখা। দ্বিতীয়টি হলো, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের এক দফা দাবিতে আন্দোলন করা বিএনপিকে নির্বাচনে আনা। এর বাইরে অন্য কোনো বিরূপ প্রভাব দেখছে না ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দলটির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, সরকার এত দিন যেটা চেয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র সেটাই আশা করছে।
তবে বিএনপি ভিসানীতির জন্য সরকারকে দায়ী করেছে এবং সেটা তাদের নেতাকর্মীদের এক দফা আন্দোলনে আরও উজ্জীবিত করবে, এমন দাবি করেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কারণে আগামী নির্বাচন যেনতেনভাবে হয়ে যাবে সেটি ভাবার কোনো সুযোগ নেই। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের প্রস্তুতি সবাইকে নিতে হবে। এর বাইরে কোনো রাজনৈতিক দল, গোষ্ঠী, বাহিনী ও সরকারি কর্মকর্তা যেই হোক শান্তিপূর্ণ নির্বাচনকে প্রভাবিত করা বা একপেশে করার চিন্তা বা পদক্ষেপ গ্রহণ করে এগিয়ে যেতে চাইলে, পড়তে হবে ভিসানীতির আওতায়। যুক্তরাষ্ট্রের অনড় অবস্থান এখন পর্যন্ত সেটাই ইঙ্গিত করে।’
সরকারের পদত্যাগ ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দাবি করে এক দফা দিয়ে আন্দোলনে আছে বিএনপি। অন্যদিকে সরকারি দল আওয়ামী লীগ বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচন করার জন্য এক দফা ঘোষণা করেছে। তারাও শান্তি-সমাবেশসহ নানা কর্মসূচি নিয়ে মাঠে আছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তার সরকারও সুষ্ঠু নির্বাচন চায়। সেটা নিশ্চিত করতে তারা অঙ্গীকারবদ্ধ। সেই সঙ্গে আওয়ামী লীগ এটাও বলে আসছে, তাদের সরকারের চাওয়া আর যুক্তরাষ্ট্রের চাওয়া একই।
নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দুভাবে দেখলেও দলটির বিভিন্ন পর্যায়ে নানা রকম কানাঘুষা রয়েছে। ভেতরে-ভেতরে ‘ভেঙে পড়লেও’ ওপরে শক্ত মনোভাব ধরে রাখার চেষ্টা করছেন নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা। ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কথা জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তি সম্পর্কে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতার কাছে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তারা বেশ বিরক্তি প্রকাশ করেন। তারা বলেন, সরকার ও আওয়ামী লীগের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নতুন কিছু নয়। দুপক্ষের অবস্থান একই বলেও দাবি করেন ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষস্থানীয় নেতারা।
সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নির্বাচনে বাধাদানকারীদের বিরুদ্ধে আমেরিকার যে অবস্থান তাতে বিএনপিরই ক্ষতি, কারণ তারা ঘোষণা দিয়েছে নির্বাচন হতে দেবে না।’ তিনি বলেন, সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা ও আমরা প্রথম থেকেই বলে আসছি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চায় সরকার। সেখানে সব দল নির্বাচনে আসুক সেই আহ্বানও জানানো হয়েছে।
শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলারের দেওয়া সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত এবং সহযোগিতা করার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ওই ব্যক্তিদের মধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, ক্ষমতাসীন দল ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্যরা রয়েছেন। শান্তিপূর্ণ উপায়ে বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সমর্থনে যুক্তরাষ্ট্র প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতারা জোরালোভাবে দাবি করেন, যুক্তরাষ্ট্র তো বিএনপির দাবি সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেনি। যুক্তরাষ্ট্রের যে অবস্থান সেখানে তো তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দিতে হবে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করতে হবে এসব বলা হয়নি। ফলে ভিসা বিধিনিষেধ আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করায় আওয়ামী লীগ বা সরকার কেন বেকায়দায় পড়বে? আমরা মনে করি, বিএনপিই তো বেকায়দায় রয়েছে। কারণ, তাদের দাবি অসাংবিধানিক। আর অসাংবিধানিক উপায় অবলম্বন করছে। তাদের দাবি, যুক্তরাষ্ট্রের এই অনড় অবস্থান বিএনপির বিরুদ্ধে গেছে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খানের দাবি, ‘যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নিয়ে শঙ্কিত বিএনপি। তারা তো বিএনপির একটা দাবির কথাও বলে নাই।’ সরকার বা আওয়ামী লীগ ভীত ও শঙ্কিত নয় জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আপনাদের উচিত বিএনপির প্রতিক্রিয়া জানা।’
আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক সম্পাদক শাম্মী আহমেদ বলেন, ‘আমরা যেমন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন চাই, আমেরিকারও একই রকম চাওয়া।’
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য মোহাম্মদ এ আরাফাত বলেন, ‘এটা আমাদের জন্য নতুন কিছু নয়। যুক্তরাষ্ট্র যে এমন কিছু করবে এটা প্রত্যাশিতই ছিল। এটা সিম্পল ব্যাপার আমাদের জন্য।’
ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় বিরোধী দল আছে বলে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে যে বক্তব্য এসেছে সে সম্পর্কে জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিবৃতিতে কোন বিরোধী দলের কথা বলা হয়েছে তা স্পষ্ট করা হয়নি। তাই এ বিষয়ে কিছু বলতে পারব না। তবে আজকে দেশে গণতন্ত্রের যে সংকট তার জন্য সরকার এককভাবে দায়ী। তা ছাড়া এর আগে বাইডেন প্রশাসন তাদের দেশে যে গণতন্ত্রের সম্মেলন করেছে তাতে বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানায়নি।’
ভিসানীতি প্রয়োগের জন্য সরকারকে দায়ী করে তিনি বলেন, ‘আজকে আওয়ামী লীগ বিগত দুটি বিতর্কিত সংসদ নির্বাচন করার পর আবারও আগামী নির্বাচন একতরফা করতে যে পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে সে কারণে যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা আরোপ করছে। এর দায় সম্পূর্ণভাবে আওয়ামী লীগকে নিতে হবে। আজকে বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপ আগের ঘোষণার ধারাবাহিকতা। প্রথমদিকে নিষেধাজ্ঞা ও ভিসানীতি বাংলাদেশের রাজনীতিতে, সাধারণ মানুষের ভেতর যে বড় ধাক্কা মনে হয়েছিল, ঘোষণা আসার পর সেটা মনে হয়নি। তবে কোনো একটা সমীকরণ থেকেই যুক্তরাষ্ট্র এই পদক্ষেপ নিয়েছে। এর প্রভাব কত দূর যাবে সেটা এখনো পরিষ্কার নয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও প্রশাসনে কী বার্তা যাবে সেটা পরিষ্কার নয়। তবে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা তাদের বৈশি^ক চর্চারই অংশ। মূল কথা হলো, এটা সবার জন্যই চাপ।’
বিশ্বকাপের দল ঘোষণা নিয়ে চলছে নানা নাটকীয়তা। রাতটা পোহালেই বাংলাদেশ দল উড়াল দেবে ভারতের গোয়াহাটিতে। তবে এখনও ঘোষণা করা হয়নি দল। বিসিবি জানিয়েছে, নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে চলমান তৃতীয় ওয়ানডের ম্যাচ শেষেই জানানো হবে বিশ্বকাপের দল।
প্রচুর আলোচনা ও জল্পনা–কল্পনার পর আজ বিশ্বকাপে নিজেদের স্কোয়াড ঘোষণা করবে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। বিসিবির ফেসবুক পেজে আজ দুপুর ১টা ২৮ মিনিটে একটি ভিডিও পোস্ট করা হয়। সেখানে দেখা যায় বিসিবির লোগোসংবলিত বক্সে করে গুরুত্বপুর্ণ কিছু নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ভিডিও–র শেষে প্রশ্ন করা হয়েছে, বলুন তো ভেতরে কি?
বিকেল ৫টা ৪৩ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় সন্ধ্যা পৌণে ৬টায় ঘোষণা করা হবে দল। কিন্তু ৫টা ৪০ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় তৃতীয় ওয়ানডের শেষেই দল ঘোষনা করা হবে।
তার নাম শেখ মোহাম্মদ আসলাম। একসময় সুইডেন ছিলেন বলে পরিচিত হয়ে ওঠেন স্ইুডেন আসলাম নামে। তেজগাঁও এলাকার এই শীর্ষ সন্ত্রাসী একসময় ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ড বা অপরাধ জগৎ কাঁপাতেন। ২৭ বছর ধরে আছেন কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কারাগারে। হত্যাসহ ১৭ মামলার একটি ছাড়া বাকিগুলোতে জামিন পেয়েছেন তিনি। কিন্তু বহু দিনের পুরনো প্রতিপক্ষের হাতে প্রাণ হারানোর শঙ্কায় জামিনের জন্য আবেদন করছেন না তিনি।
মোহাম্মদপুর এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমামুল হাসান হেলাল ওরফে পিচ্চি হেলালও জামিনের আবেদন করছেন না। প্রায় ২০ বছর ধরে কারাগারে থাকা হেলালের বিরুদ্ধে আছে অন্তত এক ডজন মামলা। বেশিরভাগ মামলায় জামিন হয়ে গেছে। এই দুজনের মতোই কারা হাজতে থাকা শীর্ষ সন্ত্রাসীরা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছেন না। এ ছাড়া তাদের বিরুদ্ধে কেউ সাক্ষ্যও দিতে আসেন না আদালতে। তারা বছরের পর বছর ধরে কারাগারে থাকলেও সমস্যা হচ্ছে না। অনেকেই অসুস্থ না হয়েও বছরের পর বছর হাসপাতালে আরামে
থাকছেন। বাইরে থাকা তাদের সহযোগীদের সঙ্গেও যোগাযোগ থাকছে। এই সহযোগীরাই তাদের হয়ে চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধ করছেন।
পুলিশের তালিকায় ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীর নাম আছে যাদের ধরিয়ে দিতে পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। অবশ্য এই তালিকায় সুইডেন আসলাম নেই। তালিকা করা হয় ২০০১ সালের ২৬ ডিসেম্বর। এদের মধ্যে ১৩ জন বিদেশে আত্মগোপন করে আছেন। কারাগারে আছেন ৬ জন, মারা গেছেন ৩ জন। একজনের কোনো হদিস নেই।
এই শীর্ষ সন্ত্রাসীদের আটজনকে ১ লাখ টাকা এবং ১৫ জনকে ৫০ হাজার টাকা পুরস্কারের ঘোষণা দেওয়া হয়। এর মধ্যে পিচ্চি হান্নান র্যাবের ক্রসফায়ার, গণপিটুনিতে আলাউদ্দিন ও কামাল পাশা ওরফে পাশা কারাগারে মারা গেছেন। কালা জাহাঙ্গীর বেঁচে আছেন নাকি আত্মগোপনে, কেউ বলতে পারছেন না। পিচ্চি হেলাল, টিটন, ফ্রিডম সোহেল ও কিলার আব্বাস কারাগারে আছেন। খোরশেদ আলম ওরফে রাশু কিছুদিন আগে ছাড়া পেলেও কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আবার আটক করেছে। মশিউর রহমান কচি, সুব্রত বাইন, আমিন রসুল সাগর. ইমাম হোসেন, প্রকাশ কুমার বিশ্বাস, মোল্লা মাসুদ, শামীম আহমেদ, হারিস আহমেদ, তানভিরুল ইসলাম জয়, জাব্বার মুন্না, জাফর আহমেদ, কামরুল হাসান হান্নান ওরফে ছোট হান্নান দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। তাদের ধরতে ইন্টারপোলের রেড নোটিস জারি করা আছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে আসার চেষ্টা করছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে তাদের ব্যবহার করার চেষ্টা চলছে। পাশাপাশি আন্ডারওয়ার্ল্ডে একে অপরকে ঘায়েল করার চেষ্টা চলছে। সম্প্রতি রাজধানীর তেজগাঁও এলাকায় শীর্ষ সন্ত্রাসী মামুনকে গাড়ি থামিয়ে গুলি করে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। ভাগ্যক্রমে তিনি প্রাণে বেঁচে গেলেও গুলিবিদ্ধ এক পথচারী সংকটাপন্ন অবস্থায় হাসপাতালে আছেন। এ ঘটনায় শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমন জড়িত বলে পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আন্ডারওয়ার্ল্ড উত্তপ্ত হওয়ার আশঙ্কা করছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোও। দেশের বাইরে থাকা সন্ত্রাসীরা নিজেদের সহযোগীদের মাধ্যমে নতুন করে আধিপত্য বিস্তারের জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। এমনকি কারাগারে থাকা সন্ত্রাসীরাও সহযোগীদের নানা বিষয়ে বার্তা দিচ্ছে। এর মধ্যে কেউ কেউ রাজনীতির সঙ্গেও যুক্ত হতে চাইছে। যে কারণে সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে পুলিশ সদর দপ্তর সব কটি ইউনিট, রেঞ্জ ডিআইজি ও জেলার এসপিদের বিশেষ বার্তা পাঠানো হয়েছে। তা ছাড়া আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলের সদর দপ্তরে আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীদের বিষয়ে নতুন করে চিঠি পাঠানো হয়েছে। কারাগার কর্তৃপক্ষকেও হাজতি ও বন্দি সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
জানা গেছে, যেসব সন্ত্রাসী দীর্ঘদিন ধরে কারাগারে আটক আছে, তাদের একটি তালিকা করেছে একটি সংস্থা। এ বিষয়ে বলা হয়েছে, আন্ডারওয়ার্ল্ডের সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে মামলা থাকলেও তারা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছে না। তারা কারাগারকেই নিরাপদ মনে করছে।
কারা সূত্র জানায়, শীর্ষ সন্ত্রাসী সুইডেন আসলাম একটি মামলায় জামিন না নেওয়ায় কারাগারে আছেন। বাকি সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। ২৭ বছরের কারাজীবনে তার দুইবার হার্ট অ্যাটাক হয়েছে। বেশিরভাগ সময় কেটে যাচ্ছে হাসপাতালে থেকেই। হুইলচেয়ারে করে চলাফেরা করেন সব সময়। মোবাইল ফোনে তিনি নিয়মিত যোগাযোগ করেন সহযোগীদের সঙ্গে। তার স্ত্রী আয়েশা নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন।
সুইডেন আসলামের বিষয়ে তার এক আত্মীয় দেশ রূপান্তরকে বলেন, এলাকায় তার যখন একক আধিপত্য ছিল, তখন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির একাধিক নেতার সঙ্গে সুসম্পর্ক ছিল। তারাই এখন তার বিরুদ্ধে। সুইডেন আসলাম বের হয়ে এলে প্রতিপক্ষরাই তাকে মেরে ফেলবে, এমন শঙ্কা আছে। এসব দিক বিবেচনা করেই তিনি বের হতে চাইছেন না। কারাগারেই তিনি ভালো আছেন।
জানা গেছে, সুইডেন আসলামের বিরুদ্ধে মামলাগুলোতে কোনো সাক্ষীও পাওয়া যায় না। ১৯৮৬ সালে তিনি অপরাধ জগতে যুক্ত হন। ওই বছর পূর্ব রাজাবাজারে স্কুলের সামনে কিশোর শাকিলকে গুলি করার অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। তারপর থেকে তার বিরুদ্ধে একের পর এক হত্যাকা-সহ নানা অপরাধের তথ্য বের হয়ে আসে। এরই মধ্যে নিজেকে রক্ষা করতে সুইডেন চলে যান। বছর পাঁচেক ওই দেশে থেকে আবার ফিরে আসেন দেশে। তারপর সুইডেন শব্দটি নামের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যায়। ১৯৯৭ সালের ২৩ মার্চ গালিব খুন হন। এ ঘটনায় আসলামসহ ২০ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়। ১৯৯৮ সালের ৮ এপ্রিল অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। ২৪ সাক্ষীর মধ্যে পুলিশ চারজনকে আদালতে হাজির করতে পেরেছে। বাকিরা আর আসেননি এবং এই মামলায় তিনি জামিনও নেননি।
দীর্ঘদিন কারাগারে থাকলেও আসলাম মোবাইল ফোনে সহযোগীদের সঙ্গে কথা বলতে পারছেন। স্ত্রী আয়েশা আকতার নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন। বলা চলে রাজার হালেই আছেন তিনি।
মিরপুর ও কাফরুল এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী কিলার আব্বাস ২২ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। তার বিরুদ্ধে থাকা ১১টি মামলার জামিন হয়েছে। একটি মামলার জামিন হতে বাকি আছে। তা ছাড়া কমিশনার নিউটন হত্যা মামলায় ফাঁসির আদেশ হলেও উচ্চ আদালতে খালাস পেয়েছেন তিনি। আরেকটি মামলার শুনানি চলছে উচ্চ আদালতে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কিলার আব্বাসের এক সহযোগী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ভাইয়ের সঙ্গে মাঝেমধ্যে কাশিমপুর কারাগারে গিয়ে দেখা করে আসি। দেশের পরিস্থিতি বিবেচনা করে তিনি কারাগার থেকে বের হতে চাচ্ছেন না। জামিন চাইলে তিনি জামিন পেয়ে যাবেন। কিন্তু ভাই তা করবেন না। কারণ প্রতিপক্ষ সক্রিয় আছে। তার প্রাণ শঙ্কা আছে। আমরা ইচ্ছা করলে যেকোনো সময় জামিন নিয়ে ভাইকে বের করে আনতে পারি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আরেক সন্ত্রাসী পিচ্চি হেলালেরও প্রায় সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। শুধু একটা মামলার জামিন বাকি আছে। তিনি যখন কারাগারে, তখন বিএনপি তার বিরুদ্ধে হুলিয়া জারি করেছিল। অথচ হেলাল বিএনপির রাজনীতি করেন। জেলে বসেই মোহাম্মদপুর, আদাবর ও ধানম-ি, মিরপুর এলাকার চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করছেন। মোহাম্মদপুরের বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ড দখল ও চাঁদাবাজি চালাচ্ছেন। তার সঙ্গে মিরপুরের শীর্ষ সন্ত্রাসী শাহাদতের ভালো যোগাযোগ। মোবাইল ফোনে নিয়মিত কথা বলেন তারা। তার আরেক সহযোগী হাবিবুর রহমান তাজ ১৩ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। মামলার সাক্ষীদের হাজির করতে পারছে না রাষ্ট্রপক্ষ। ইচ্ছে করে জামিনও নিচ্ছেন না তাজ। গ্রেপ্তারের আগে দীর্ঘদিন ভারত পালিয়ে ছিলেন। ২০০৮ সালে ভারতে গ্রেপ্তার হওয়ার কয়েক মাস পর তাকে দেশে ফিরিয়ে এনে রাজধানীর কাফরুলে ইলেকট্রিক মিস্ত্রি ইসমাইল হোসেনকে হত্যা করার অভিযোগে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। তা ছাড়া কলেজছাত্র কামরুল ইসলাম ওরফে মোমিন হত্যার সঙ্গেও জড়িত তাজ। মতিঝিল থানার সাবেক ওসি এ কে এম রফিকুল ইসলামের আশ্রয়-প্রশয়ে থাকতেন তিনি। কয়েক বছর আগে ওসি রফিক মারা যান।’
মতিঝিলে একটি গোয়েন্দা সংস্থার দুই কর্মকর্তাকে হত্যা করে আলোচনায় আসে আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী ঈদুল। প্রায় ১৫ বছর ধরে কাশিমপুর কারাগারে আটক আছেন তিনি। একবার পঙ্গু হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে তাকে আটক করে ফেলে পুলিশ। তার বিরুদ্ধে আটটি মামলা থাকলেও দুটি মামলা বাদে সব কটিতে জামিন পেয়েছেন। বাকি মামলাগুলোতে ইচ্ছা করে জামিন নিচ্ছেন না বলে তার এক স্বজন জানিয়েছেন।
সেভেন স্টার গ্রুপের একসময়ের সদস্য ফ্রিডম সোহেল ধানম-ি ৩২ নম্বরে গ্রেনেড হামলা মামলায় যাবজ্জীবন সাজার আসামি। সাজা কমিয়ে কারাগারেই থাকার চেষ্টা করছেন সোহেল। তার বিরুদ্ধে ১১টি মামলা আছে। ৯টি মামলায় জামিন পেয়েছেন। একটি মামলায় সাজা হয়েছে। আরেকটি মামলায় জামিন নিচ্ছেন না।
তার সহযোগী পুরস্কারঘোষিত সন্ত্রাসী রাশু কিছুদিন আগে কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আটক করে। তার এক স্বজন দেশ রূপান্তরকে জানান, মাস দুয়েক আগে সর্বশেষ মামলায় জামিন হয় রাশুর। তার কোনো ইচ্ছা ছিল না কারাগার থেকে বের হওয়ার। আর এ কারণে ইচ্ছা করেই একটি সংস্থাকে কারাগার থেকে বের হওয়ার তথ্য দিয়ে আবার গ্রেপ্তার হন। কারণ তিনি বের হলে প্রতিপক্ষের লোকজন তাকে মেরে ফেলবে এমন আশঙ্কা ছিল। আরেক সন্ত্রাসী লম্বু সেলিম একটি মামলা বাদে সব মামলায় জামিনে আছেন। ভারতের কলকাতা থেকে তাকে পুশব্যাক করা হয়েছিল। প্রায় আট বছর ধরে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আছেন। বেশিরভাগ সময় হাসপাতালে থাকেন। নিরাপত্তাহীনতার কারণে জেল থেকে বের হচ্ছেন না তিনি।
জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, সন্ত্রাসীদের কর্মকা- রোধ করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নানা কৌশলে কাজ করছে। তারা সরগরম হলেও কাজ হবে না। যারা দেশের বাইরে আছে, তাদের চিহ্নিত করে ইন্টারপোলের মাধ্যমে ধরার চেষ্টা চলছে। যারা দেশে আছে, তাদেরও আইনের আওতায় আনতে পুলিশ-র্যাব কাজ করছে। তবে আন্ডারওয়ার্ল্ডের কেউ বিশ্ঙ্খৃলা তৈরি করতে পারবে না। তিনি বলেন, ‘কোনো সন্ত্রাসী জামিন না নিলে এটা আমাদের করার কিছু নেই। তবে তাদের বিরুদ্ধে থাকা মামলাগুলো যাতে দ্রুত নিষ্পত্তি হয়, সেদিকে নজর দেওয়া হচ্ছে।’
পুলিশ সূত্র জানায়, দীর্ঘদিন ধরেই আন্ডারওয়ার্ল্ডের শীর্ষ সন্ত্রাসী, জঙ্গি, চোরাকারবারিসহ ভিন্ন ধরনের অপরাধীরা দুবাই, মালয়েশিয়া, ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আত্মগোপন করে আছেন। তাদের সহযোগীরা বাংলাদেশে অবস্থান করে অপরাধমূলক কর্মকা- চালিয়ে আসছেন। তাদের নির্দেশে হত্যাকান্ডের মতো ঘটনাও ঘটাচ্ছেন তারা। মতিঝিলে আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম টিপু হত্যাকান্ডের পেছনে বিদেশ কানেকশন।
২০০৩ সালে মালিবাগের সানরাইজ হোটেলে ডিবি পুলিশের দুই সদস্যকে হত্যার পর পালিয়ে যাওয়া শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান দুবাইয়ে আত্মগোপন করে আছেন। টিপু হত্যাকান্ডের পর তিনি আলোচনায় এসেছিলেন। দুবাইয়ে থাকলেও ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ডে সবচেয়ে বেশি প্রভাব তার। জিসানের সহযোগী জাফর আহমেদ মানিক ওরফে ফ্রিডম মানিক ভারতে পালিয়ে আছেন। কিন্তু দেশে তার দখলবাজি, টেন্ডারবাণিজ্য ও চাঁদাবাজিতে নিয়ন্ত্রণ এখনো আছে। মোল্লা মাসুদ ও সুব্রত বাইন ভারতে থেকে সক্রিয় আছেন। তানভীর ইসলাম জয়ও সক্রিয় আছেন। কলকাতা, মালয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা ঘুরে তার অবস্থান এখন থাইল্যান্ডে। সেখানে বসেই তিনি কলকাঠি নাড়ছেন।