তানভিরের নয় গলদ শুধু গোড়াতেই
মোহাম্মদ খাইরুল আমিন | ২৪ ডিসেম্বর, ২০১৮ ০০:০০
আম্পায়ার তানভির আহমেদ এটাকে স্রেফ একটা বাজে দিন বলতে পারেন। বলতে পারেন, আন্তর্জাতিকে নতুন তিনি এবং ভুল হতেই পারে। ঘুরে দাঁড়াবেন। কিন্তু শনিবার রাতে মিরপুরে তার কারণে যে কেলেঙ্কারি হলো বাংলাদেশ-ওয়েস্ট ইন্ডিজ তৃতীয় টি-টুয়েন্টি ম্যাচে তা এই দেশের আম্পায়ারিংকেই বড় এক প্রশ্নের মুখে ফেলে দিয়েছে। বাংলাদেশের সাবেক অধিনায়ক গাজী আশরাফ হোসেন লিপু বলছেন, কাউকে এমন দায়িত্বে পাঠানোর আগে সে যোগ্য কি না তা আগে দেখে নেওয়া দরকার। আরেক সাবেক অধিনায়ক খালেদ মাসুদ পাইলট তো এই ঘটনায় দেশের আম্পায়ারদের নিরঙ্কুশ স্বাধীনতা দাবি করে বসলেন।
ঘরোয়া ক্রিকেটের অভিজ্ঞ আম্পায়ার তানভিরের আন্তর্জাতিক অভিষেক এই সিরিজেই। টানা তিন ম্যাচে অনফিল্ড আম্পায়ার ছিলেন। বিপত্তি বাধালেন শেষ ম্যাচে পরপর দুটি বলে না হওয়া ‘নো’ ডেকে। পরের ঘটনায় আউট পায়নি উইন্ডিজ। তাদের প্রতিবাদে খেলা বন্ধ ছিল ৮ মিনিট। পরে অন্যায় মেনেও খেলায় ফিরে সিরিজ জিতে নেয় ক্যারিবিয়ানরা।
আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় তানভিরের এমন ভুলের কারণে শিরোনাম হচ্ছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের ক্রিকেটের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা লিপুর মনে হচ্ছে, একজন আম্পায়ার সত্যি আন্তর্জাতিক ক্রিকেট পরিচালনার জন্য পরিণত হয়েছেন কি না তা ভেবে দেখার ব্যাপার আছে। বলছিলেন, ‘একটা হচ্ছে আম্পায়ারিং করার সক্ষমতা। অন্যটা সিদ্ধান্ত গ্রহণের। আরেকটা হচ্ছে কমিউনিকেশন স্কিল। কারণ, যেহেতু রেফারেলের ব্যাপারগুলো আছে তাই একটা কমিউনিকেশন স্কিলের ঘাটতি সত্যি চোখে পড়েছে। সবকিছুই নজরে আনার ব্যাপার আছে।’
ঘরোয়া লিগে আম্পায়ারের সিদ্ধান্ত অনেক সময় প্রভাবমুক্ত নয়। পক্ষপাতদুষ্ট। ক্ষমতাবানরা আম্পায়ারদের দিয়ে ফল পক্ষে নেন। এটা ওপেন সিক্রেট। সম্প্রতি নতুন করে কয়েকটা সংবাদপত্রে বড় করেও এসেছে এসব। সেই প্রসঙ্গ টেনেই লিপু বলছিলেন, ‘এটা তো খুবই দুঃখজনক। আমার মনে হয় এভাবে কোনো দল জিততে চায় না। তবে (আম্পায়ার) চাপ মোকাবেলা করতে পেরেছে কি না সেটা ব্যাপার। অন্য কোনো চাপ ছিল বলে আমার মনে হয় না।’ লিগে এমন হয় এবং ঘটনাক্রমে এটা তার প্রভাব নয়তো? ‘সেটাও একদম উড়িয়ে দেওয়া যায় না। কারণ, দিক নির্দেশিত হয়ে আম্পায়ারিং করার অভ্যাসের বশবর্তী হয়ে কেউ কিছু করে থাকলে সেটা অবশ্যই দুঃখজনক। কেননা সারা পৃথিবী এটা দেখেছে। আর এটা এখানে আশা করা যায় না। কিন্তু একটা কথা হলো ‘অভ্যাস’। সেটা অনেক সময় ভুল জায়গাতেও অপপ্রয়োগ অনেক সময় হয়ে যেতে পারে।’
আরেক সাবেক অধিনায়ক পাইলট সাফ বলে দিচ্ছেন, ‘আমাদের দেশের আম্পায়ারিংয়ের মান তো এমনি খারাপ হয়নি, কারণে হয়েছে। একজন রিকশাচালকও খুব ভালো আম্পায়ারিং করতে পারবেন যদি তাকে স্বাধীনতা দেন। ভালো ও সৎ আম্পায়াররা কিন্তু আস্তে আস্তে এখান থেকে চলে যাচ্ছে। এই বিভাগটাই আসলে খারাপ হয়ে যাচ্ছে।’
এখন কোচিংয়ে পাইলট। খুব কাছ থেকে নিয়মিত মাঠের আম্পায়ারিং দেখেন। সেই অভিজ্ঞতা তাকে দিয়ে বলিয়ে নেয়, ‘যারা অন্যায় করে বা অন্যায়কে প্রশ্রয় দেয় তাদের কারণে এই বিভাগটা কলুষিত হয়ে যাচ্ছে। এই বিভাগে সৎ, নিরপেক্ষ, ভালো মানুষ নিয়ে আসা দরকার। দুয়েকটা ভুল তো হবেই। তা শুধরে বিভাগটাকেই ভালো করে তুলতে হবে।’ তার আক্ষেপ, ‘এই বিভাগটা আগে হয়তো খুব ভালো ছিল কিন্তু এখন...। একটা উদাহরণ দিই, এনসিএল বা বিসিএলে কিন্তু কেউ আম্পায়ারের দিকে আঙুল তোলে না। ওখানে কোনো লেনদেনের ব্যাপার নেই। পক্ষপাত হয় না।’
মূলে চোখ না দিলে সামনে অপেক্ষায় আরো লজ্জা! পাইলট তাই বিশ্বাস করেন, ‘সবচেয়ে দরকার স্বাধীন একটা ডিপার্টমেন্ট তৈরি করা যেখানে কেউ হস্তক্ষেপ করতে পারবে না। বোর্ডের ডিরেক্টর বলেন বা কেউ।’ সঙ্গে তার সংযুক্তি, ‘যদিও কাজটা কঠিন।’
শেয়ার করুন
মোহাম্মদ খাইরুল আমিন | ২৪ ডিসেম্বর, ২০১৮ ০০:০০

আম্পায়ার তানভির আহমেদ এটাকে স্রেফ একটা বাজে দিন বলতে পারেন। বলতে পারেন, আন্তর্জাতিকে নতুন তিনি এবং ভুল হতেই পারে। ঘুরে দাঁড়াবেন। কিন্তু শনিবার রাতে মিরপুরে তার কারণে যে কেলেঙ্কারি হলো বাংলাদেশ-ওয়েস্ট ইন্ডিজ তৃতীয় টি-টুয়েন্টি ম্যাচে তা এই দেশের আম্পায়ারিংকেই বড় এক প্রশ্নের মুখে ফেলে দিয়েছে। বাংলাদেশের সাবেক অধিনায়ক গাজী আশরাফ হোসেন লিপু বলছেন, কাউকে এমন দায়িত্বে পাঠানোর আগে সে যোগ্য কি না তা আগে দেখে নেওয়া দরকার। আরেক সাবেক অধিনায়ক খালেদ মাসুদ পাইলট তো এই ঘটনায় দেশের আম্পায়ারদের নিরঙ্কুশ স্বাধীনতা দাবি করে বসলেন।
ঘরোয়া ক্রিকেটের অভিজ্ঞ আম্পায়ার তানভিরের আন্তর্জাতিক অভিষেক এই সিরিজেই। টানা তিন ম্যাচে অনফিল্ড আম্পায়ার ছিলেন। বিপত্তি বাধালেন শেষ ম্যাচে পরপর দুটি বলে না হওয়া ‘নো’ ডেকে। পরের ঘটনায় আউট পায়নি উইন্ডিজ। তাদের প্রতিবাদে খেলা বন্ধ ছিল ৮ মিনিট। পরে অন্যায় মেনেও খেলায় ফিরে সিরিজ জিতে নেয় ক্যারিবিয়ানরা।
আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় তানভিরের এমন ভুলের কারণে শিরোনাম হচ্ছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের ক্রিকেটের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা লিপুর মনে হচ্ছে, একজন আম্পায়ার সত্যি আন্তর্জাতিক ক্রিকেট পরিচালনার জন্য পরিণত হয়েছেন কি না তা ভেবে দেখার ব্যাপার আছে। বলছিলেন, ‘একটা হচ্ছে আম্পায়ারিং করার সক্ষমতা। অন্যটা সিদ্ধান্ত গ্রহণের। আরেকটা হচ্ছে কমিউনিকেশন স্কিল। কারণ, যেহেতু রেফারেলের ব্যাপারগুলো আছে তাই একটা কমিউনিকেশন স্কিলের ঘাটতি সত্যি চোখে পড়েছে। সবকিছুই নজরে আনার ব্যাপার আছে।’
ঘরোয়া লিগে আম্পায়ারের সিদ্ধান্ত অনেক সময় প্রভাবমুক্ত নয়। পক্ষপাতদুষ্ট। ক্ষমতাবানরা আম্পায়ারদের দিয়ে ফল পক্ষে নেন। এটা ওপেন সিক্রেট। সম্প্রতি নতুন করে কয়েকটা সংবাদপত্রে বড় করেও এসেছে এসব। সেই প্রসঙ্গ টেনেই লিপু বলছিলেন, ‘এটা তো খুবই দুঃখজনক। আমার মনে হয় এভাবে কোনো দল জিততে চায় না। তবে (আম্পায়ার) চাপ মোকাবেলা করতে পেরেছে কি না সেটা ব্যাপার। অন্য কোনো চাপ ছিল বলে আমার মনে হয় না।’ লিগে এমন হয় এবং ঘটনাক্রমে এটা তার প্রভাব নয়তো? ‘সেটাও একদম উড়িয়ে দেওয়া যায় না। কারণ, দিক নির্দেশিত হয়ে আম্পায়ারিং করার অভ্যাসের বশবর্তী হয়ে কেউ কিছু করে থাকলে সেটা অবশ্যই দুঃখজনক। কেননা সারা পৃথিবী এটা দেখেছে। আর এটা এখানে আশা করা যায় না। কিন্তু একটা কথা হলো ‘অভ্যাস’। সেটা অনেক সময় ভুল জায়গাতেও অপপ্রয়োগ অনেক সময় হয়ে যেতে পারে।’
আরেক সাবেক অধিনায়ক পাইলট সাফ বলে দিচ্ছেন, ‘আমাদের দেশের আম্পায়ারিংয়ের মান তো এমনি খারাপ হয়নি, কারণে হয়েছে। একজন রিকশাচালকও খুব ভালো আম্পায়ারিং করতে পারবেন যদি তাকে স্বাধীনতা দেন। ভালো ও সৎ আম্পায়াররা কিন্তু আস্তে আস্তে এখান থেকে চলে যাচ্ছে। এই বিভাগটাই আসলে খারাপ হয়ে যাচ্ছে।’
এখন কোচিংয়ে পাইলট। খুব কাছ থেকে নিয়মিত মাঠের আম্পায়ারিং দেখেন। সেই অভিজ্ঞতা তাকে দিয়ে বলিয়ে নেয়, ‘যারা অন্যায় করে বা অন্যায়কে প্রশ্রয় দেয় তাদের কারণে এই বিভাগটা কলুষিত হয়ে যাচ্ছে। এই বিভাগে সৎ, নিরপেক্ষ, ভালো মানুষ নিয়ে আসা দরকার। দুয়েকটা ভুল তো হবেই। তা শুধরে বিভাগটাকেই ভালো করে তুলতে হবে।’ তার আক্ষেপ, ‘এই বিভাগটা আগে হয়তো খুব ভালো ছিল কিন্তু এখন...। একটা উদাহরণ দিই, এনসিএল বা বিসিএলে কিন্তু কেউ আম্পায়ারের দিকে আঙুল তোলে না। ওখানে কোনো লেনদেনের ব্যাপার নেই। পক্ষপাত হয় না।’
মূলে চোখ না দিলে সামনে অপেক্ষায় আরো লজ্জা! পাইলট তাই বিশ্বাস করেন, ‘সবচেয়ে দরকার স্বাধীন একটা ডিপার্টমেন্ট তৈরি করা যেখানে কেউ হস্তক্ষেপ করতে পারবে না। বোর্ডের ডিরেক্টর বলেন বা কেউ।’ সঙ্গে তার সংযুক্তি, ‘যদিও কাজটা কঠিন।’