বিশ্বকাপে চোখ রেখে ফিরছেন ‘ফিনিশার’
মোহাম্মদ খাইরুল আমিন | ২৫ ডিসেম্বর, ২০১৮ ০০:০০
তার অকপট স্বীকারোক্তি। এমন কঠিন সময় আগে আসেনি। সেটাকে পেছনে ফেলে আবার ছোটার প্রস্তুতির শেষটায় চলে এসেছেন নাসির হোসেন। ভক্তরা যাকে আদর করে ‘ফিনিশার’ ডাকেন। পায়ের গুরুতর ইনজুরি প্রায় নয়টি মহামূল্যবান মাস কেড়ে নিয়েছে। এখন ফেরার মঞ্চ বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ (বিপিএল)। তবে চোখ থাকছে মে-জুলাইয়ে ইংল্যান্ডে অনুষ্ঠেয় বিশ্বকাপে।
গতকাল সোমবার দুপুরে মিরপুরে একাডেমির জিমে নাসিরের পায়ের স্ট্রেন্থ টেস্ট নিচ্ছিলেন বিসিবি ট্রেনার। এক পায়ে লাফ। উৎসাহ দিতে ট্রেনার রেকর্ড মার্ক দেখান। ‘আমার পাসমার্ক পেলেই চলে। আমরা তো আর গোল্ডেন পাওয়া ছাত্র না!’ হালকা রসিকতায় জবাব ছুড়ে হাসতে হাসতে নিজের মার্কে ফেরেন নাসির। কথাতেই স্পষ্ট, ২৭ বছরের ব্যাটসম্যান প্রতিযোগিতায় ফিরতে কতটা মরিয়া।
গেল এপ্রিলে ডান পায়ের লিগামেন্ট ছিঁড়ল। খেলার বাইরের ঘটনায়। সিরাজগঞ্জে ফুটবল খেলতে গিয়ে। যদিও আনুষ্ঠানিক বিবৃতিতে প্র্যাকটিসে চোটের কথা বলা হয়েছিল। দুই মাস লেগে যায় অস্ট্রেলিয়ায় গিয়ে অস্ত্রোপচার করাতে। পরিচিত নাম শল্য চিকিৎসক ডেভিড ইয়াং তার দুই পায়েই অস্ত্রোপচার চালান। নাসিরই মনে করিয়ে দিলেন, ‘আমার তো দুই পায়েই অপারেশন হয়েছে। একটা থেকে ভেইন নিয়েছে। বাঁ পা থেকে রগ নিয়ে ডান পায়ে লাগিয়েছে। এখনো ডান পা একটু দুর্বল আছে। চেষ্টা করছি ওটার শক্তি ফিরিয়ে আনতে।’
শেষ টেস্ট খেলেছেন ২০১৭-তে। ২০১৬ সালের পর টি-টোয়েন্টি খেলা হয়নি। তবে ইনজুরির আগে জানুয়ারিতে মিরপুরের ত্রিদেশীয় সিরিজে খেলেছেন। নাসিরের মতো একজনকে এখনো দলে প্রয়োজন। অবশ্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা অনেক।
নাসির চ্যালেঞ্জটা নিতে চান, ‘জাতীয় দলে প্রতিদ্বন্দ্বিতা বেশি হওয়া একদিক দিয়ে ভালো। যারা জাতীয় দলের দরজায় নক করছে তারা নিশ্চয়ই আরো বেশি করে প্র্যাকটিস করবে বা পাইপলাইন থেকে আরো বেশি বেশি খেলোয়াড় আসবে।’
কিন্তু তার নিজের অবস্থাটা এখন কেমন? ৫ জানুয়ারি শুরু হয়ে যাচ্ছে বিপিএল। ‘যত দিন যাচ্ছে তত আত্মবিশ্বাস বাড়ছে আসলে। আর আল্লাহর রহমতে ম্যাচ তো খেললাম তিনটা। এখনো শক্তি পুরোপুরি ফেরেনি। সাধারণত লিগামেন্ট ইনজুরিতে দেখেছি ছয় মাসেই ফিরে আসা যায়। আমার তো অপারেশন প্রায় সাত মাসের মতো হয়ে গেছে। ইনশাআল্লাহ আমি সামনের মাসে মাঠে ব্যাক করব।’
বিসিবি ফিজিও বায়েজিদুল ইসলামও ভরসার হাত রাখেন পিঠে, ‘ওকে বিপিএলে খেলার জন্য তৈরি বলা যায়। তারপরও রানিং টেস্টটা হলে আমরা তাকে বাকি কাজ করার অনুমতি দেব। যেমন ব্যাটিং, বোলিং, ফিল্ডিং। এমনিতে অল্প-স্বল্প ব্যাটিং, বোলিং করছিল। তখন আনুষ্ঠানিকভাবে ম্যাচ খেলার জন্য বলব।’ ওটা হবে অফিশিয়াল অনুমতি। কয়েক দিন আগে প্রাথমিক ফিটনেস টেস্ট হয়েছে। গত দুদিন হলো স্ট্রেন্থ টেস্ট। রানিং টেস্ট বাকি থাকলেও বায়েজিদ মৌখিকভাবে ফিটনেস সার্টিফিকেট দিয়ে দিলেন, ‘ও পাস করে গেছে।’
এই ‘পাস’ করাটাই চাই নাসিরের। স্ট্রেন্থ ট্রেনিংয়ের সময়ই বলছিলেন, ‘আমাকে বলেন আমি পাস করে গেছি, তাহলে আত্মবিশ্বাস বাড়বে।’ ট্রেনার তা না বললেও কাজগুলো ঠিক করলেন অলরাউন্ডার। এই টেস্টের আগেই রংপুর ও ঢাকায় তিনটি অনানুষ্ঠানিক ম্যাচ খেলে নিজের অবস্থাটা বুঝে নিয়েছেন। তাতে বুঝেছেন ‘এখনো পুরোপুরি ম্যাচ ফিট নন’। তবে ‘বিপিএলের এখনো ১২-১৫ দিন আছে। ইনশাআল্লাহ ঠিক হয়ে যাব’ বলে হাসেন নাসির।
সিলেট সিক্সার্সও তাই হাসতে পারে। তাদের ভরসার ক্রিকেটারকে শুরু থেকেই পাওয়ার সম্ভাবনা। কিন্তু একজন ক্রিকেটারের সবচেয়ে বড় জায়গা তো জাতীয় দল। আর বিশ্বকাপ স্বপ্নের মতো। যদিও বলা হচ্ছে, শেষ সিরিজে যে ১৬ জন জাতীয় দলে ছিলেন তারাই ইংল্যান্ডে যাওয়ার বড় দাবিদার।
দীর্ঘ ইনজুরি আর যাই করুক নাসিরের ভেতরের বিশ্বাসে চিড় ধরাতে পারেনি এত্তটুকুন। ‘জাতীয় দল সবার জন্য উন্মুক্ত বলেই আমি বিশ্বাস করি। আমি যদি পারফর্ম করি...। টিম না দেওয়া পর্যন্ত কে (বিশ্বকাপে) খেলবে না খেলবে তা তো বলা মুশকিল। এটা নিয়ে আমি চিন্তা করি না।’ তাহলে সম্ভব? ‘অসম্ভবের কিছুই নেই। আমি যদি পারফর্ম করতে পারি তাহলে অবশ্যই বিশ্বকাপে খেলতে পারব’-ফিনিশিং দেন ‘ফিনিশার’।
শেয়ার করুন
মোহাম্মদ খাইরুল আমিন | ২৫ ডিসেম্বর, ২০১৮ ০০:০০

তার অকপট স্বীকারোক্তি। এমন কঠিন সময় আগে আসেনি। সেটাকে পেছনে ফেলে আবার ছোটার প্রস্তুতির শেষটায় চলে এসেছেন নাসির হোসেন। ভক্তরা যাকে আদর করে ‘ফিনিশার’ ডাকেন। পায়ের গুরুতর ইনজুরি প্রায় নয়টি মহামূল্যবান মাস কেড়ে নিয়েছে। এখন ফেরার মঞ্চ বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ (বিপিএল)। তবে চোখ থাকছে মে-জুলাইয়ে ইংল্যান্ডে অনুষ্ঠেয় বিশ্বকাপে। গতকাল সোমবার দুপুরে মিরপুরে একাডেমির জিমে নাসিরের পায়ের স্ট্রেন্থ টেস্ট নিচ্ছিলেন বিসিবি ট্রেনার। এক পায়ে লাফ। উৎসাহ দিতে ট্রেনার রেকর্ড মার্ক দেখান। ‘আমার পাসমার্ক পেলেই চলে। আমরা তো আর গোল্ডেন পাওয়া ছাত্র না!’ হালকা রসিকতায় জবাব ছুড়ে হাসতে হাসতে নিজের মার্কে ফেরেন নাসির। কথাতেই স্পষ্ট, ২৭ বছরের ব্যাটসম্যান প্রতিযোগিতায় ফিরতে কতটা মরিয়া। গেল এপ্রিলে ডান পায়ের লিগামেন্ট ছিঁড়ল। খেলার বাইরের ঘটনায়। সিরাজগঞ্জে ফুটবল খেলতে গিয়ে। যদিও আনুষ্ঠানিক বিবৃতিতে প্র্যাকটিসে চোটের কথা বলা হয়েছিল। দুই মাস লেগে যায় অস্ট্রেলিয়ায় গিয়ে অস্ত্রোপচার করাতে। পরিচিত নাম শল্য চিকিৎসক ডেভিড ইয়াং তার দুই পায়েই অস্ত্রোপচার চালান। নাসিরই মনে করিয়ে দিলেন, ‘আমার তো দুই পায়েই অপারেশন হয়েছে। একটা থেকে ভেইন নিয়েছে। বাঁ পা থেকে রগ নিয়ে ডান পায়ে লাগিয়েছে। এখনো ডান পা একটু দুর্বল আছে। চেষ্টা করছি ওটার শক্তি ফিরিয়ে আনতে।’ শেষ টেস্ট খেলেছেন ২০১৭-তে। ২০১৬ সালের পর টি-টোয়েন্টি খেলা হয়নি। তবে ইনজুরির আগে জানুয়ারিতে মিরপুরের ত্রিদেশীয় সিরিজে খেলেছেন। নাসিরের মতো একজনকে এখনো দলে প্রয়োজন। অবশ্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা অনেক। নাসির চ্যালেঞ্জটা নিতে চান, ‘জাতীয় দলে প্রতিদ্বন্দ্বিতা বেশি হওয়া একদিক দিয়ে ভালো। যারা জাতীয় দলের দরজায় নক করছে তারা নিশ্চয়ই আরো বেশি করে প্র্যাকটিস করবে বা পাইপলাইন থেকে আরো বেশি বেশি খেলোয়াড় আসবে।’ কিন্তু তার নিজের অবস্থাটা এখন কেমন? ৫ জানুয়ারি শুরু হয়ে যাচ্ছে বিপিএল। ‘যত দিন যাচ্ছে তত আত্মবিশ্বাস বাড়ছে আসলে। আর আল্লাহর রহমতে ম্যাচ তো খেললাম তিনটা। এখনো শক্তি পুরোপুরি ফেরেনি। সাধারণত লিগামেন্ট ইনজুরিতে দেখেছি ছয় মাসেই ফিরে আসা যায়। আমার তো অপারেশন প্রায় সাত মাসের মতো হয়ে গেছে। ইনশাআল্লাহ আমি সামনের মাসে মাঠে ব্যাক করব।’ বিসিবি ফিজিও বায়েজিদুল ইসলামও ভরসার হাত রাখেন পিঠে, ‘ওকে বিপিএলে খেলার জন্য তৈরি বলা যায়। তারপরও রানিং টেস্টটা হলে আমরা তাকে বাকি কাজ করার অনুমতি দেব। যেমন ব্যাটিং, বোলিং, ফিল্ডিং। এমনিতে অল্প-স্বল্প ব্যাটিং, বোলিং করছিল। তখন আনুষ্ঠানিকভাবে ম্যাচ খেলার জন্য বলব।’ ওটা হবে অফিশিয়াল অনুমতি। কয়েক দিন আগে প্রাথমিক ফিটনেস টেস্ট হয়েছে। গত দুদিন হলো স্ট্রেন্থ টেস্ট। রানিং টেস্ট বাকি থাকলেও বায়েজিদ মৌখিকভাবে ফিটনেস সার্টিফিকেট দিয়ে দিলেন, ‘ও পাস করে গেছে।’ এই ‘পাস’ করাটাই চাই নাসিরের। স্ট্রেন্থ ট্রেনিংয়ের সময়ই বলছিলেন, ‘আমাকে বলেন আমি পাস করে গেছি, তাহলে আত্মবিশ্বাস বাড়বে।’ ট্রেনার তা না বললেও কাজগুলো ঠিক করলেন অলরাউন্ডার। এই টেস্টের আগেই রংপুর ও ঢাকায় তিনটি অনানুষ্ঠানিক ম্যাচ খেলে নিজের অবস্থাটা বুঝে নিয়েছেন। তাতে বুঝেছেন ‘এখনো পুরোপুরি ম্যাচ ফিট নন’। তবে ‘বিপিএলের এখনো ১২-১৫ দিন আছে। ইনশাআল্লাহ ঠিক হয়ে যাব’ বলে হাসেন নাসির। সিলেট সিক্সার্সও তাই হাসতে পারে। তাদের ভরসার ক্রিকেটারকে শুরু থেকেই পাওয়ার সম্ভাবনা। কিন্তু একজন ক্রিকেটারের সবচেয়ে বড় জায়গা তো জাতীয় দল। আর বিশ্বকাপ স্বপ্নের মতো। যদিও বলা হচ্ছে, শেষ সিরিজে যে ১৬ জন জাতীয় দলে ছিলেন তারাই ইংল্যান্ডে যাওয়ার বড় দাবিদার। দীর্ঘ ইনজুরি আর যাই করুক নাসিরের ভেতরের বিশ্বাসে চিড় ধরাতে পারেনি এত্তটুকুন। ‘জাতীয় দল সবার জন্য উন্মুক্ত বলেই আমি বিশ্বাস করি। আমি যদি পারফর্ম করি...। টিম না দেওয়া পর্যন্ত কে (বিশ্বকাপে) খেলবে না খেলবে তা তো বলা মুশকিল। এটা নিয়ে আমি চিন্তা করি না।’ তাহলে সম্ভব? ‘অসম্ভবের কিছুই নেই। আমি যদি পারফর্ম করতে পারি তাহলে অবশ্যই বিশ্বকাপে খেলতে পারব’-ফিনিশিং দেন ‘ফিনিশার’।