ফুটবলে ‘আলো’য় ফেরার বছর
ক্রীড়া প্রতিবেদক | ৩১ ডিসেম্বর, ২০১৮ ০০:০০
দেশের ফুটবলে ২০১৮ ছিল অন্ধকার থেকে আলোয় ফেরার বছর। শিরোনাম আর প্রথম বাক্যে বিভ্রান্ত হচ্ছেন নিশ্চয়ই? এ বছরই তো বাংলাদেশের ফিফা র্যাংকিং ছুঁয়েছিল ইতিহাসের সর্বনিম্ন ১৯৭তম স্থান। তো আলোটা ফিরল কোত্থেকে? একটু ভেতরে চোখ রাখুন। ফিফা র্যাংকিং এক পাশে রেখে জেনে নিন, এ বছরই বাংলাদেশ আবার ফিরেছে আন্তর্জাতিক পরিম-লে। তাও ১৭ মাসের নির্বাসন কাটিয়ে। আর ফেরার বছরেই প্রথমবারের মতো উঠেছিল এশিয়ান গেমস ফুটবলের দ্বিতীয়পর্বে। আঁধার কাটিয়ে দেওয়ার মতো আরেকটি সাফল্য এসেছে বাংলাদেশের কিশোরদের দৃঢ়তায়। বিদেশের মাটিতে তারা জিতেছে সাফ অনূর্ধ্ব-১৫ চ্যাম্পিয়নশিপ।
১০ অক্টোবর ২০১৬। ভুটানের মাটিতে তাদের কাছে ইতিহাসের প্রথম হার এশিয়ান কাপের বাছাইপর্বের প্লেঅফে। সেই হারে বাংলাদেশের ফুটবল পড়ে যায় অন্ধ কুয়োয়। এরপর ১৭টি মাস কোনো আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলা হয়নি জাতীয় দলের। ওই সময় কোনো প্রদর্শনী ম্যাচও আয়োজন করেনি বাফুফে। অথচ এই সময়টাতেই তারা নিয়ে আসে অ্যাংলো-অস্ট্রিয়ান কোচ অ্যান্ড্রু ওর্ডকে। কোচের সময়টা কেটেছে ঘরোয়া ফুটবল দেখে আর ফাঁকফোকরে ছোট ছোট ট্রেনিং ক্যাম্প করিয়ে। এ বছর ২৭ মার্চ লাওসের বিপক্ষে সে দেশে প্রদর্শনী ম্যাচ দিয়ে ওর্ডের অভিষেক। পিছিয়ে থেকেও ম্যাচটি বাংলাদেশ ড্র করেছিল ২-২ গোলে।
ওই ম্যাচ দিয়ে আন্তর্জাতিক নির্বাসন কাটলেও ওর্ডের চলে যাওয়া আসে বড় ধাক্কা হয়ে। বাফুফে সেই ধাক্কা দ্রুতই সামলেছে ইংলিশ কোচ জেমি ডে’কে নিয়োগ দিয়ে। এই কোচের অধীনে বাংলাদেশের খেলোয়াড়দের ফিটনেসে এসেছে আমূল পরিবর্তন। কঠোর পরিশ্রম এবং খাদ্যাভ্যাস বদলে তাদের দিয়েছে ৯০ মিনিট অনেকটাই সমানতালে খেলার শক্তি। সেই শক্তির জোরেই ইতিহাস রচিত হয় আগস্টে জাকার্তায় এশিয়ান গেমসে। ‘বি’ গ্রুপে উজবেকিস্তানের কাছে ৩-০ গোলের হারে শুরু। কিন্তু পরের ম্যাচে থাইল্যান্ডের সঙ্গে ১-১ ড্র বাঁচিয়ে রাখে বাংলাদেশের দ্বিতীয় রাউন্ডের আশা। সেই আশা ঘুড়ি হয়ে আকাশে উড়েছে শেষ ম্যাচে কাতারকে ১-০ গোলে হারানোর মধ্য দিয়ে। দ্বিতীয়পর্ব থেকে অবশ্য বিদায় নিতে হয়েছে উত্তর কোরিয়ার কাছে হেরে।
স্বপ্নময় এশিয়াড শেষেই রূঢ় বাস্তবে ফিরতে হয় বাংলাদেশ দলকে। শ্রীলঙ্কার কাছে নীলফামারীতে প্রদর্শনী ম্যাচে হার। এরপর দেশের মাটিতে ১২তম সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ। ২০০৯-এর পর থেকে এই আসর আক্ষেপ হয়ে আছে বাংলাদেশের জন্য। ২০১১, ’১৩ ও ’১৫ টানা তিনটি আসরে গ্রুপপর্ব থেকে বিদায় নেওয়া বাংলাদেশ এবার তৃতীয়বারের মতো আয়োজক। আশা ছিল দেশে গ্রুপপর্বের দেয়াল টপকাবে। প্রথম দুই ম্যাচে ভুটান এবং পাকিস্তানকে হারিয়ে সে লক্ষ্যেই এগোচ্ছিল স্বাগতিকরা। কিন্তু গ্রুপের শেষ ম্যাচে নেপালের কাছে ২-০ হারে ফের গ্রুপপর্ব থেকে বিদায় নিতে হয় তাদের। সাফের পর বঙ্গবন্ধু কাপে বাংলাদেশ বিদায় নেয় সেমিফাইনাল থেকে।
১৭ মার্চ নির্বাসন থেকে মুক্তির পর জাতীয় দল আটটি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছে। তিনটিতে জিতেছে, চারটিতে হার। একটি ড্র। এ বছর সেপ্টেম্বরেই বাংলাদেশ র্যাংকিংয়ে নেমে যায় ১৯৭তম স্থানে। বর্তমানে ১৯২। সিনিয়রদের পাশে উজ্জ্বল আন্ডারডগ হয়েও নেপালে কিশোরদের সাফ অনূর্ধ্ব- ১৫ চ্যাম্পিয়শিপ জয়।
ঘরোয়া ফুটবলে চোখ রাখলে বরাবরের মতো এবারো হতাশা জাগাবে বাফুফের অপরিকল্পিত কার্যক্রম। বছরের শুরুতে (১৩ জানুয়ারি) শেষ মৌসুমের লিগ শেষ হলো। স্বাধীনতা কাপ দিয়ে শেষ হয় আগের মৌসুম। দীর্ঘ বিরতি দিয়ে বছরের শেষভাগে তারা মাঠে নামিয়েছে দলগুলোকে। হয়েছে একই ফরম্যাটে দুটি টুর্নামেন্টÑ ফেডারেশন ও স্বাধীনতা কাপ। ফেডারেশন কাপের ফাইনালে নবাগত বসুন্ধরা কিংসকে হারিয়ে আগামী এশিয়া কাপের টিকিট জিতে নেয় আবাহনী লিমিটেড। আর বসুন্ধরা কিংস আবির্ভাবের বছরে আক্ষেপ ঘুচিয়েছে স্বাধীনতা কাপ জিতে।
ছেলেদের চেয়ে মেয়েরা ছিল অনেক বেশি ব্যস্ত। গোলের মেলা বসিয়ে তারা জিতেছে অনেক ম্যাচ। পেয়েছে শিরোপার স্বাদ। এএফসি টুর্নামেন্টের বাছাইপর্বের দ্বিতীয় রাউন্ডে আবার শিরোপা হারানোর বেদনায়ও পুড়তে হয়েছে। তবে বছরের শেষদিকে সিনিয়র পর্যায়ের দৈন্য ফুটে উঠেছে অলিম্পিক বাছাইপর্বে। মিয়ানমারে অনুষ্ঠিত এই আসরে ভারত, মিয়ানমারের মতো দলের কাছে নাস্তানাবুদ হওয়ার মধ্য দিয়ে বের হয়ে এসেছে একটি নির্মম সত্য। ওই পর্যায়ে এখনো অনেক পিছিয়ে বাংলাদেশের মেয়েরা।
শেয়ার করুন
ক্রীড়া প্রতিবেদক | ৩১ ডিসেম্বর, ২০১৮ ০০:০০

দেশের ফুটবলে ২০১৮ ছিল অন্ধকার থেকে আলোয় ফেরার বছর। শিরোনাম আর প্রথম বাক্যে বিভ্রান্ত হচ্ছেন নিশ্চয়ই? এ বছরই তো বাংলাদেশের ফিফা র্যাংকিং ছুঁয়েছিল ইতিহাসের সর্বনিম্ন ১৯৭তম স্থান। তো আলোটা ফিরল কোত্থেকে? একটু ভেতরে চোখ রাখুন। ফিফা র্যাংকিং এক পাশে রেখে জেনে নিন, এ বছরই বাংলাদেশ আবার ফিরেছে আন্তর্জাতিক পরিম-লে। তাও ১৭ মাসের নির্বাসন কাটিয়ে। আর ফেরার বছরেই প্রথমবারের মতো উঠেছিল এশিয়ান গেমস ফুটবলের দ্বিতীয়পর্বে। আঁধার কাটিয়ে দেওয়ার মতো আরেকটি সাফল্য এসেছে বাংলাদেশের কিশোরদের দৃঢ়তায়। বিদেশের মাটিতে তারা জিতেছে সাফ অনূর্ধ্ব-১৫ চ্যাম্পিয়নশিপ।
১০ অক্টোবর ২০১৬। ভুটানের মাটিতে তাদের কাছে ইতিহাসের প্রথম হার এশিয়ান কাপের বাছাইপর্বের প্লেঅফে। সেই হারে বাংলাদেশের ফুটবল পড়ে যায় অন্ধ কুয়োয়। এরপর ১৭টি মাস কোনো আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলা হয়নি জাতীয় দলের। ওই সময় কোনো প্রদর্শনী ম্যাচও আয়োজন করেনি বাফুফে। অথচ এই সময়টাতেই তারা নিয়ে আসে অ্যাংলো-অস্ট্রিয়ান কোচ অ্যান্ড্রু ওর্ডকে। কোচের সময়টা কেটেছে ঘরোয়া ফুটবল দেখে আর ফাঁকফোকরে ছোট ছোট ট্রেনিং ক্যাম্প করিয়ে। এ বছর ২৭ মার্চ লাওসের বিপক্ষে সে দেশে প্রদর্শনী ম্যাচ দিয়ে ওর্ডের অভিষেক। পিছিয়ে থেকেও ম্যাচটি বাংলাদেশ ড্র করেছিল ২-২ গোলে।
ওই ম্যাচ দিয়ে আন্তর্জাতিক নির্বাসন কাটলেও ওর্ডের চলে যাওয়া আসে বড় ধাক্কা হয়ে। বাফুফে সেই ধাক্কা দ্রুতই সামলেছে ইংলিশ কোচ জেমি ডে’কে নিয়োগ দিয়ে। এই কোচের অধীনে বাংলাদেশের খেলোয়াড়দের ফিটনেসে এসেছে আমূল পরিবর্তন। কঠোর পরিশ্রম এবং খাদ্যাভ্যাস বদলে তাদের দিয়েছে ৯০ মিনিট অনেকটাই সমানতালে খেলার শক্তি। সেই শক্তির জোরেই ইতিহাস রচিত হয় আগস্টে জাকার্তায় এশিয়ান গেমসে। ‘বি’ গ্রুপে উজবেকিস্তানের কাছে ৩-০ গোলের হারে শুরু। কিন্তু পরের ম্যাচে থাইল্যান্ডের সঙ্গে ১-১ ড্র বাঁচিয়ে রাখে বাংলাদেশের দ্বিতীয় রাউন্ডের আশা। সেই আশা ঘুড়ি হয়ে আকাশে উড়েছে শেষ ম্যাচে কাতারকে ১-০ গোলে হারানোর মধ্য দিয়ে। দ্বিতীয়পর্ব থেকে অবশ্য বিদায় নিতে হয়েছে উত্তর কোরিয়ার কাছে হেরে।
স্বপ্নময় এশিয়াড শেষেই রূঢ় বাস্তবে ফিরতে হয় বাংলাদেশ দলকে। শ্রীলঙ্কার কাছে নীলফামারীতে প্রদর্শনী ম্যাচে হার। এরপর দেশের মাটিতে ১২তম সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ। ২০০৯-এর পর থেকে এই আসর আক্ষেপ হয়ে আছে বাংলাদেশের জন্য। ২০১১, ’১৩ ও ’১৫ টানা তিনটি আসরে গ্রুপপর্ব থেকে বিদায় নেওয়া বাংলাদেশ এবার তৃতীয়বারের মতো আয়োজক। আশা ছিল দেশে গ্রুপপর্বের দেয়াল টপকাবে। প্রথম দুই ম্যাচে ভুটান এবং পাকিস্তানকে হারিয়ে সে লক্ষ্যেই এগোচ্ছিল স্বাগতিকরা। কিন্তু গ্রুপের শেষ ম্যাচে নেপালের কাছে ২-০ হারে ফের গ্রুপপর্ব থেকে বিদায় নিতে হয় তাদের। সাফের পর বঙ্গবন্ধু কাপে বাংলাদেশ বিদায় নেয় সেমিফাইনাল থেকে।
১৭ মার্চ নির্বাসন থেকে মুক্তির পর জাতীয় দল আটটি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছে। তিনটিতে জিতেছে, চারটিতে হার। একটি ড্র। এ বছর সেপ্টেম্বরেই বাংলাদেশ র্যাংকিংয়ে নেমে যায় ১৯৭তম স্থানে। বর্তমানে ১৯২। সিনিয়রদের পাশে উজ্জ্বল আন্ডারডগ হয়েও নেপালে কিশোরদের সাফ অনূর্ধ্ব- ১৫ চ্যাম্পিয়শিপ জয়।
ঘরোয়া ফুটবলে চোখ রাখলে বরাবরের মতো এবারো হতাশা জাগাবে বাফুফের অপরিকল্পিত কার্যক্রম। বছরের শুরুতে (১৩ জানুয়ারি) শেষ মৌসুমের লিগ শেষ হলো। স্বাধীনতা কাপ দিয়ে শেষ হয় আগের মৌসুম। দীর্ঘ বিরতি দিয়ে বছরের শেষভাগে তারা মাঠে নামিয়েছে দলগুলোকে। হয়েছে একই ফরম্যাটে দুটি টুর্নামেন্টÑ ফেডারেশন ও স্বাধীনতা কাপ। ফেডারেশন কাপের ফাইনালে নবাগত বসুন্ধরা কিংসকে হারিয়ে আগামী এশিয়া কাপের টিকিট জিতে নেয় আবাহনী লিমিটেড। আর বসুন্ধরা কিংস আবির্ভাবের বছরে আক্ষেপ ঘুচিয়েছে স্বাধীনতা কাপ জিতে।
ছেলেদের চেয়ে মেয়েরা ছিল অনেক বেশি ব্যস্ত। গোলের মেলা বসিয়ে তারা জিতেছে অনেক ম্যাচ। পেয়েছে শিরোপার স্বাদ। এএফসি টুর্নামেন্টের বাছাইপর্বের দ্বিতীয় রাউন্ডে আবার শিরোপা হারানোর বেদনায়ও পুড়তে হয়েছে। তবে বছরের শেষদিকে সিনিয়র পর্যায়ের দৈন্য ফুটে উঠেছে অলিম্পিক বাছাইপর্বে। মিয়ানমারে অনুষ্ঠিত এই আসরে ভারত, মিয়ানমারের মতো দলের কাছে নাস্তানাবুদ হওয়ার মধ্য দিয়ে বের হয়ে এসেছে একটি নির্মম সত্য। ওই পর্যায়ে এখনো অনেক পিছিয়ে বাংলাদেশের মেয়েরা।