‘এমপি’ মাশরাফীদের চ্যালেঞ্জ ২০১৯
ক্রীড়া প্রতিবেদক | ১ জানুয়ারি, ২০১৯ ০০:০০
টানা তিন দিনের ছুটির আড়মোড়া ভেঙে জেগে ওঠে ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। গতকাল সব আলস্য কেড়ে নেয় নির্বাচনী আলোচনার উত্তাপ। এক হিসেবে বিসিবি ওখানে শতভাগ জয়ী এবং এবারের সবচেয়ে আলোচিত প্রার্থীও এই অঙ্গনের। ওখানে এমন আলোচনার ভেতর থেকে সাড়া দিয়ে জেগে ওঠে ২০১৯। জানায়, শুরু হয়ে গেল ‘এমপি মাশরাফী’দের বিশ্বকাপ চ্যালেঞ্জের বছর।
বিসিবির মতো এখন প্রায় সবখানেই সাধারণ আলোচনার প্রথম ভাগে বাংলাদেশ ওয়ানডে দলের অধিনায়ক মাশরাফী বিন মোর্ত্তজা। তা অবশ্য তার নির্বাচন করার খবরের দিন থেকে। রবিবার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বীর চেয়ে ৩৪ গুণের বেশি ভোট পেয়ে প্রথমবার সংসদ সদস্য বা দেশের আইনপ্রণেতাদের একজন হলেন। আলোচনায় একজন যাচাই করে নেন, ‘এর আগে কোনো এমপি আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলেননি তাই না?’
শচীন টেন্ডুলকার তো আর সরাসরি নির্বাচনে জেতেননি। সেই হিসেবে মাশরাফী প্রথম হবেন এবং একজন রিপোর্টার এই আলোচনায় নিজের দিক দিয়ে ভাবেন, ‘দেখার ইচ্ছা মাশরাফী এবার যখন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নামেন তখন আন্তর্জাতিক মিডিয়া কী লেখে।’
নির্বাচন জিতে বিশ্বের নানা প্রান্তের আন্তর্জাতিক পাতায় এখন ‘এমপি মাশরাফী’। ‘সক্রিয় ক্রিকেটার হিসেবে প্রথম এমপি’Ñ এমন শিরোনামও দেখা যাচ্ছে কোথাও। সব ঠিক থাকলে এমপি-ক্রিকেটার হিসেবে তার অভিষেক হবে ৫ জানুয়ারি। এবারের বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে (বিপিএল) উদ্বোধনী দিনেই তার চ্যাম্পিয়ন রংপুর রাইডার্সের ম্যাচ।
বিসিবির সাবেক প্রেসিডেন্ট আ হ ম মোস্তফা কামালও ব্যাপক ব্যবধানে আবার নির্বাচিত হয়েছেন। বিপিএলের একটি দলের কর্ণধার তিনি। বিসিবির বর্তমান সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনও আরেকবার জিতলেন। বোর্ডের পরিচালক দেশের প্রথম টেস্ট অধিনায়ক নাঈমুর রহমান দুর্জয় জিতলেন আবার। তবে মাশরাফীর মতো আলোচিত নির্বাচন ছিল না কারো।
নির্বাচন স্পর্শ করলেও তার চেয়ে বেশি ক্রিকেটে কয়েকজনের মনোযোগ। বছরের শেষ দিনটাতেও নিজেদের ছুটি দেননি। জাতীয় দলের অনেকে ছুটি কাটাচ্ছেন। কিন্তু সবচেয়ে অধ্যাবসায়ী মুশফিকুর রহিম ঠিকই মাঠে। অনুশীলনে। মোহাম্মদ মিথুন ফিটনেসটা ঠিক রেখে বিপিএলের পারফরমার হতে চাইছেন। জাতীয় দলে জায়গা পাকা না। পরিশ্রম থেকে সরার উপায় নেই। ছিটকে পড়া নুরুল হাসান সোহান যথারীতি মাঠেই আছেন। মাত্রই বাংলাদেশ ক্রিকেট লিগে (বিসিএল) প্রথমবারের মতো সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক হয়েছেন এনামুল হক বিজয়। ব্যক্তিগত কোচের অধীনে ফিটনেসের দিকে তার দারুণ নজর।
২০১৮ সালে টেস্ট ক্রিকেটে দেশের সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি তাইজুল ইসলাম এই একটি সংস্করণই খেলেন। সারা বছর জাতীয় দলে সুযোগ নেই বলে নিজের গরজেই সব করে নিতে হয়। এক দিনের ব্যবধানে আবার মাঠে। এবার বিপিএলের প্রস্তুতি। বছরের সেরা টেস্ট বোলার হয়েও উচ্ছ্বাস নেই। বিপিএলে পারফর্ম করতে হবে কিন্তু উত্তেজনার উত্তাপ নেই কথায়। আছে শুধু নিজেকে তৈরি রাখার পণ। এখন আপাতত ব্যক্তিগত গরজেই কেউ কেউ ব্যস্ত রাখছেন নিজেকে। বিপিএলের জন্য দিন দুয়েকের মধ্যে দেশের সব স্তরের সেরা ক্রিকেটারদের উপস্থিতিতে গমগম করবে স্টেডিয়াম, একাডেমির মাঠ কিংবা ইনডোর।
২০১৮ আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি ম্যাচ খেলার ও জেতার বছর। সামনে খেলোয়াড়দের ফিটনেসের পরীক্ষা নিতে অপেক্ষায় ঠাসা সূচি। ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত বিপিএল। ১৩ ফেব্রুয়ারি থেকে ২০ মার্চ পর্যন্ত নিউজিল্যান্ডে ওয়ানডে আর টেস্ট সিরিজ। ৭ থেকে ১৫ মে আয়ারল্যান্ডে তিনজাতি ওয়ানডে সিরিজ। এরপরই ইংল্যান্ড বিশ্বকাপ। এই বছরে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জের টুর্নামেন্ট। ওখানে ফেভারিট নয়, জায়ান্ট কিলারও নয়,
প্রথমবার আন্ডারডগ হিসেবে শুরু করে বিশ্ব কাঁপানোর টার্গেট। সেমিফাইনালে উঠতে না পারলে অবশ্য ২ জুন শুরু হয়ে ৫ জুলাই শেষ হবে মিশন। অবিশ্বাস্য কিছু ঘটাতে পারলে ১৪ জুলাইয়ের লন্ডন ফাইনাল থাকবে অপেক্ষায়। সব ঠিক থাকলে ‘এমপি মাশরাফী’ থাকবেন সবার সামনে।
সব মিলে সফল একটি বছরের পর নিদারুণ ব্যস্ততার ২০১৯ মিশন শুরু হলো বলে।
শেয়ার করুন
ক্রীড়া প্রতিবেদক | ১ জানুয়ারি, ২০১৯ ০০:০০

টানা তিন দিনের ছুটির আড়মোড়া ভেঙে জেগে ওঠে ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। গতকাল সব আলস্য কেড়ে নেয় নির্বাচনী আলোচনার উত্তাপ। এক হিসেবে বিসিবি ওখানে শতভাগ জয়ী এবং এবারের সবচেয়ে আলোচিত প্রার্থীও এই অঙ্গনের। ওখানে এমন আলোচনার ভেতর থেকে সাড়া দিয়ে জেগে ওঠে ২০১৯। জানায়, শুরু হয়ে গেল ‘এমপি মাশরাফী’দের বিশ্বকাপ চ্যালেঞ্জের বছর।
বিসিবির মতো এখন প্রায় সবখানেই সাধারণ আলোচনার প্রথম ভাগে বাংলাদেশ ওয়ানডে দলের অধিনায়ক মাশরাফী বিন মোর্ত্তজা। তা অবশ্য তার নির্বাচন করার খবরের দিন থেকে। রবিবার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বীর চেয়ে ৩৪ গুণের বেশি ভোট পেয়ে প্রথমবার সংসদ সদস্য বা দেশের আইনপ্রণেতাদের একজন হলেন। আলোচনায় একজন যাচাই করে নেন, ‘এর আগে কোনো এমপি আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলেননি তাই না?’
শচীন টেন্ডুলকার তো আর সরাসরি নির্বাচনে জেতেননি। সেই হিসেবে মাশরাফী প্রথম হবেন এবং একজন রিপোর্টার এই আলোচনায় নিজের দিক দিয়ে ভাবেন, ‘দেখার ইচ্ছা মাশরাফী এবার যখন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নামেন তখন আন্তর্জাতিক মিডিয়া কী লেখে।’
নির্বাচন জিতে বিশ্বের নানা প্রান্তের আন্তর্জাতিক পাতায় এখন ‘এমপি মাশরাফী’। ‘সক্রিয় ক্রিকেটার হিসেবে প্রথম এমপি’Ñ এমন শিরোনামও দেখা যাচ্ছে কোথাও। সব ঠিক থাকলে এমপি-ক্রিকেটার হিসেবে তার অভিষেক হবে ৫ জানুয়ারি। এবারের বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে (বিপিএল) উদ্বোধনী দিনেই তার চ্যাম্পিয়ন রংপুর রাইডার্সের ম্যাচ।
বিসিবির সাবেক প্রেসিডেন্ট আ হ ম মোস্তফা কামালও ব্যাপক ব্যবধানে আবার নির্বাচিত হয়েছেন। বিপিএলের একটি দলের কর্ণধার তিনি। বিসিবির বর্তমান সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনও আরেকবার জিতলেন। বোর্ডের পরিচালক দেশের প্রথম টেস্ট অধিনায়ক নাঈমুর রহমান দুর্জয় জিতলেন আবার। তবে মাশরাফীর মতো আলোচিত নির্বাচন ছিল না কারো।
নির্বাচন স্পর্শ করলেও তার চেয়ে বেশি ক্রিকেটে কয়েকজনের মনোযোগ। বছরের শেষ দিনটাতেও নিজেদের ছুটি দেননি। জাতীয় দলের অনেকে ছুটি কাটাচ্ছেন। কিন্তু সবচেয়ে অধ্যাবসায়ী মুশফিকুর রহিম ঠিকই মাঠে। অনুশীলনে। মোহাম্মদ মিথুন ফিটনেসটা ঠিক রেখে বিপিএলের পারফরমার হতে চাইছেন। জাতীয় দলে জায়গা পাকা না। পরিশ্রম থেকে সরার উপায় নেই। ছিটকে পড়া নুরুল হাসান সোহান যথারীতি মাঠেই আছেন। মাত্রই বাংলাদেশ ক্রিকেট লিগে (বিসিএল) প্রথমবারের মতো সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক হয়েছেন এনামুল হক বিজয়। ব্যক্তিগত কোচের অধীনে ফিটনেসের দিকে তার দারুণ নজর।
২০১৮ সালে টেস্ট ক্রিকেটে দেশের সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি তাইজুল ইসলাম এই একটি সংস্করণই খেলেন। সারা বছর জাতীয় দলে সুযোগ নেই বলে নিজের গরজেই সব করে নিতে হয়। এক দিনের ব্যবধানে আবার মাঠে। এবার বিপিএলের প্রস্তুতি। বছরের সেরা টেস্ট বোলার হয়েও উচ্ছ্বাস নেই। বিপিএলে পারফর্ম করতে হবে কিন্তু উত্তেজনার উত্তাপ নেই কথায়। আছে শুধু নিজেকে তৈরি রাখার পণ। এখন আপাতত ব্যক্তিগত গরজেই কেউ কেউ ব্যস্ত রাখছেন নিজেকে। বিপিএলের জন্য দিন দুয়েকের মধ্যে দেশের সব স্তরের সেরা ক্রিকেটারদের উপস্থিতিতে গমগম করবে স্টেডিয়াম, একাডেমির মাঠ কিংবা ইনডোর।
২০১৮ আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি ম্যাচ খেলার ও জেতার বছর। সামনে খেলোয়াড়দের ফিটনেসের পরীক্ষা নিতে অপেক্ষায় ঠাসা সূচি। ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত বিপিএল। ১৩ ফেব্রুয়ারি থেকে ২০ মার্চ পর্যন্ত নিউজিল্যান্ডে ওয়ানডে আর টেস্ট সিরিজ। ৭ থেকে ১৫ মে আয়ারল্যান্ডে তিনজাতি ওয়ানডে সিরিজ। এরপরই ইংল্যান্ড বিশ্বকাপ। এই বছরে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জের টুর্নামেন্ট। ওখানে ফেভারিট নয়, জায়ান্ট কিলারও নয়,
প্রথমবার আন্ডারডগ হিসেবে শুরু করে বিশ্ব কাঁপানোর টার্গেট। সেমিফাইনালে উঠতে না পারলে অবশ্য ২ জুন শুরু হয়ে ৫ জুলাই শেষ হবে মিশন। অবিশ্বাস্য কিছু ঘটাতে পারলে ১৪ জুলাইয়ের লন্ডন ফাইনাল থাকবে অপেক্ষায়। সব ঠিক থাকলে ‘এমপি মাশরাফী’ থাকবেন সবার সামনে।
সব মিলে সফল একটি বছরের পর নিদারুণ ব্যস্ততার ২০১৯ মিশন শুরু হলো বলে।