তবুও অলিম্পিক কোটার স্বপ্ন
ক্রীড়া প্রতিবেদক | ২ জানুয়ারি, ২০১৯ ০০:০০
২০২০ টোকিও অলিম্পিকের স্বপ্ন যারা বুনে দিয়েছিলেন তারা এখন অতীত। গত অক্টোবরে অর্থাভাবে ডেনমার্কের অভিজ্ঞ রাইফেল কোচ ক্লেভস ক্রিস্টেনসেনকে বিদায় বলে দিয়েছিল বাংলাদেশ শুটিং স্পোর্ট ফেডারেশন। তার আগেই বিদায় নিতে হয় মন্টেনেগ্রোর পিস্তল কোচ মার্কো সকিচকে। অথচ এই দুই ভিনদেশি দেখিয়েছিলেন আশা। দায়িত্ব নিয়ে দেশের শুটারদের মনে বুনে দিয়েছিলেন টোকিও অলিম্পিক গেমসে সরাসরি খেলার স্বপ্ন। কিন্তু লক্ষ্যপূরণের আগেই তাদের বিদায়ে আশার রংটা চটে গেছে খানিকটা। তারপরও স্বপ্ন দেখছেন আবদুল্লাহ হেল বাকি, শাকিল আহমেদরা। অলিম্পিকে সরাসরি জায়গা করে নিতে এ বছরটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ তাদের জন্য। গেল বছর থেকে বাছাই প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গেলেও এ বছর মোটামুটি নিশ্চিত হয়ে যাবে সারা বিশ্বের কজন সরাসরি পাবেন টোকিও অলিম্পিকের টিকিট।
আন্তর্জাতিক পরিম-লে শুটিং বড় আশার নাম বাংলাদেশের জন্য। ক্রিকেটকে এক পাশে রাখলে বলার মতো সাফল্য এসেছে কেবল শুটিং থেকেই। অথচ অমিত প্রতিভা থাকা সত্ত্বেও শুধু সুযোগ-সুবিধার অভাবে সরাসরি অলিম্পিকে খেলা হয়নি বাংলাদেশি শুটারদের। ২০১৪ রিও অলিম্পিকে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে সরাসরি অলিম্পিক খেলেছিলেন গলফার সিদ্দিকুর রহমান। এছাড়া বাংলাদেশের কাছে অলিম্পিক আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটির করুণা বৈ কিছু নয়। তাদের দেওয়া ওয়াইল্ড কার্ড সঙ্গী করে গত তিন দশক অনেক অ্যাথলেটের অলিম্পিক স্বপ্ন পূরণ হয়েছে।
সম্ভাবনাটা দেখেছিলেন বলেই দায়িত্ব নেওয়ার সময় কোটা প্লেসের কথাটা জোর গলায় বলেছিলেন ক্রিস্টেনসেন। কিন্তু অর্থাভাবে তার দেওয়া পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা যাচ্ছে না বলে ফেডারেশন বিদায় বলে দেয় এই কোচকে। ক্রিস্টেনসেনকে হারানোর ধাক্কাটা ভালোই টের পাচ্ছেন তার অধীনেই গত বছর কমনওয়েলথ গেমসের ১০ মিটার এয়ার রাইফেলে রুপাজয়ী বাকি, ‘কোচের চলে যাওয়াটা বড় ধাক্কা। তার কাছ থেকে শিখেছি অনেক। তারপরও এখন যিনি আছেন (স্থানীয় কোচ গোলাম শফিউদ্দিন শিপলু) তিনি ডেনিস কোচের তৈরি করা ট্রেনিং প্রোগ্রাম অনুযায়ী চালিয়ে নিচ্ছেন।’
ছেলেদের ১০ মিটার এয়ার রাইফেল ইভেন্টের জন্য মোট ২৯টি কোটা উন্মুক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে ছয়টি নিশ্চিত করে ফেলেছেন অন্য দেশের ছয় শুটার। এ বছর এশিয়ান শুটারদের জন্য ১১টি কোটা প্লেসের সুযোগ থাকছে। চারটি বিশ্বকাপ এবং এশিয়ান শুটিং চ্যাম্পিয়নশিপ হবে বছরজুড়ে। শুরুটা ফেব্রুয়ারিতে। দিল্লিতে বিশ্বকাপটি হবে ২০ থেকে ২৮ ফেব্রুয়ারি। চীনের বেইজিংয়ে বিশ্বকাপের আরেকটি আসর বসবে ২১ থেকে ২৯ এপ্রিল। মে মাসের শেষভাগে বছরের তৃতীয় বিশ্বকাপ হবে জার্মানির মিউনিখে আর বিশ্বকাপের চতুর্থ আসরটি ব্রাজিলের রিওতে হবে আগস্টে। নভেম্বরে এশিয়ান শুটিং চ্যাম্পিয়নশিপ হবে কাতারের দোহায়।
বাকি মনে করেন, এ আসরগুলোর ফাইনাল খেলতে পারলে কোটার স্বপ্নপূরণ করা সম্ভব। গেল নভেম্বরে নতুন রাইফেল কিনেছেন বাংলাদেশ নৌবাহিনীর আর্থিক সহায়তায়। সেটির সঙ্গে অভ্যস্ত হতে সময় লাগবে আরো কিছুদিন। তবে দিল্লি বিশ্বকাপের আগে প্রস্তুত হয়ে যাবেন, বিশ্বাস তার, ‘এই বছরটা আমাদের জন্য অলিম্পিক কোটা পেতে খুব গুরুত্বপূর্ণ। নভেম্বরে কুয়েতে এশিয়ান এয়ারগান চ্যাম্পিয়নশিপে চতুর্থ হয়েছিলাম। এরপর আর কোনো আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট খেলা হয়নি। মাঝে নতুন রাইফেল কিনেছি। এর সঙ্গে এখন নিজেকে অভ্যস্ত করে তোলার চেষ্টা করছি।’ বাকির বিশ্বাস, নিজের ক্যারিয়ারসেরা স্কোরটা (৬২৪.৮) এশিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপে করতে পারলে ফাইনাল খেলা সম্ভব। আর বিশ্বকাপে ফাইনাল খেলতে প্রয়োজন কমপক্ষে ৬২৬। নিজের বর্তমান ট্রেনিং স্কোর সেই স্বপ্নও দেখাচ্ছে বাকিকে।
তার মতোই স্বপ্ন বুকে লালন করে নিজেকে প্রস্তুত করছেন কমনওয়েলথ গেমসে আরেক রুপাজয়ী পিস্তল শুটার শাকিল আহমেদও। সকিচ চলে যাওয়ার পর ফেডারেশন ফিরিয়ে আনে কোরিয়ান কোচ কিম ইয়ংকে। যার অধীনে ২০১৬ এসএ গেমসে স্বর্ণ জিতেছিলেন শাকিল, ‘কোরিয়ান কোচের অধীনে আমার বেশ উন্নতি হয়েছে। আগের চেয়ে কমপক্ষে ১০ স্কোর বেড়ে গেছে আমার। কোটা প্লেসের ব্যাপারে আমি খুবই আশাবাদী।’
বাংলাদেশ শুটিংয়ে সময়ের উজ্জ্বলতম দুই নাম। তাদের ঘিরেই আবর্তিত অলিম্পিক কোটা প্লেসের স্বপ্ন।
শেয়ার করুন
ক্রীড়া প্রতিবেদক | ২ জানুয়ারি, ২০১৯ ০০:০০

২০২০ টোকিও অলিম্পিকের স্বপ্ন যারা বুনে দিয়েছিলেন তারা এখন অতীত। গত অক্টোবরে অর্থাভাবে ডেনমার্কের অভিজ্ঞ রাইফেল কোচ ক্লেভস ক্রিস্টেনসেনকে বিদায় বলে দিয়েছিল বাংলাদেশ শুটিং স্পোর্ট ফেডারেশন। তার আগেই বিদায় নিতে হয় মন্টেনেগ্রোর পিস্তল কোচ মার্কো সকিচকে। অথচ এই দুই ভিনদেশি দেখিয়েছিলেন আশা। দায়িত্ব নিয়ে দেশের শুটারদের মনে বুনে দিয়েছিলেন টোকিও অলিম্পিক গেমসে সরাসরি খেলার স্বপ্ন। কিন্তু লক্ষ্যপূরণের আগেই তাদের বিদায়ে আশার রংটা চটে গেছে খানিকটা। তারপরও স্বপ্ন দেখছেন আবদুল্লাহ হেল বাকি, শাকিল আহমেদরা। অলিম্পিকে সরাসরি জায়গা করে নিতে এ বছরটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ তাদের জন্য। গেল বছর থেকে বাছাই প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গেলেও এ বছর মোটামুটি নিশ্চিত হয়ে যাবে সারা বিশ্বের কজন সরাসরি পাবেন টোকিও অলিম্পিকের টিকিট।
আন্তর্জাতিক পরিম-লে শুটিং বড় আশার নাম বাংলাদেশের জন্য। ক্রিকেটকে এক পাশে রাখলে বলার মতো সাফল্য এসেছে কেবল শুটিং থেকেই। অথচ অমিত প্রতিভা থাকা সত্ত্বেও শুধু সুযোগ-সুবিধার অভাবে সরাসরি অলিম্পিকে খেলা হয়নি বাংলাদেশি শুটারদের। ২০১৪ রিও অলিম্পিকে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে সরাসরি অলিম্পিক খেলেছিলেন গলফার সিদ্দিকুর রহমান। এছাড়া বাংলাদেশের কাছে অলিম্পিক আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটির করুণা বৈ কিছু নয়। তাদের দেওয়া ওয়াইল্ড কার্ড সঙ্গী করে গত তিন দশক অনেক অ্যাথলেটের অলিম্পিক স্বপ্ন পূরণ হয়েছে।
সম্ভাবনাটা দেখেছিলেন বলেই দায়িত্ব নেওয়ার সময় কোটা প্লেসের কথাটা জোর গলায় বলেছিলেন ক্রিস্টেনসেন। কিন্তু অর্থাভাবে তার দেওয়া পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা যাচ্ছে না বলে ফেডারেশন বিদায় বলে দেয় এই কোচকে। ক্রিস্টেনসেনকে হারানোর ধাক্কাটা ভালোই টের পাচ্ছেন তার অধীনেই গত বছর কমনওয়েলথ গেমসের ১০ মিটার এয়ার রাইফেলে রুপাজয়ী বাকি, ‘কোচের চলে যাওয়াটা বড় ধাক্কা। তার কাছ থেকে শিখেছি অনেক। তারপরও এখন যিনি আছেন (স্থানীয় কোচ গোলাম শফিউদ্দিন শিপলু) তিনি ডেনিস কোচের তৈরি করা ট্রেনিং প্রোগ্রাম অনুযায়ী চালিয়ে নিচ্ছেন।’
ছেলেদের ১০ মিটার এয়ার রাইফেল ইভেন্টের জন্য মোট ২৯টি কোটা উন্মুক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে ছয়টি নিশ্চিত করে ফেলেছেন অন্য দেশের ছয় শুটার। এ বছর এশিয়ান শুটারদের জন্য ১১টি কোটা প্লেসের সুযোগ থাকছে। চারটি বিশ্বকাপ এবং এশিয়ান শুটিং চ্যাম্পিয়নশিপ হবে বছরজুড়ে। শুরুটা ফেব্রুয়ারিতে। দিল্লিতে বিশ্বকাপটি হবে ২০ থেকে ২৮ ফেব্রুয়ারি। চীনের বেইজিংয়ে বিশ্বকাপের আরেকটি আসর বসবে ২১ থেকে ২৯ এপ্রিল। মে মাসের শেষভাগে বছরের তৃতীয় বিশ্বকাপ হবে জার্মানির মিউনিখে আর বিশ্বকাপের চতুর্থ আসরটি ব্রাজিলের রিওতে হবে আগস্টে। নভেম্বরে এশিয়ান শুটিং চ্যাম্পিয়নশিপ হবে কাতারের দোহায়।
বাকি মনে করেন, এ আসরগুলোর ফাইনাল খেলতে পারলে কোটার স্বপ্নপূরণ করা সম্ভব। গেল নভেম্বরে নতুন রাইফেল কিনেছেন বাংলাদেশ নৌবাহিনীর আর্থিক সহায়তায়। সেটির সঙ্গে অভ্যস্ত হতে সময় লাগবে আরো কিছুদিন। তবে দিল্লি বিশ্বকাপের আগে প্রস্তুত হয়ে যাবেন, বিশ্বাস তার, ‘এই বছরটা আমাদের জন্য অলিম্পিক কোটা পেতে খুব গুরুত্বপূর্ণ। নভেম্বরে কুয়েতে এশিয়ান এয়ারগান চ্যাম্পিয়নশিপে চতুর্থ হয়েছিলাম। এরপর আর কোনো আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট খেলা হয়নি। মাঝে নতুন রাইফেল কিনেছি। এর সঙ্গে এখন নিজেকে অভ্যস্ত করে তোলার চেষ্টা করছি।’ বাকির বিশ্বাস, নিজের ক্যারিয়ারসেরা স্কোরটা (৬২৪.৮) এশিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপে করতে পারলে ফাইনাল খেলা সম্ভব। আর বিশ্বকাপে ফাইনাল খেলতে প্রয়োজন কমপক্ষে ৬২৬। নিজের বর্তমান ট্রেনিং স্কোর সেই স্বপ্নও দেখাচ্ছে বাকিকে।
তার মতোই স্বপ্ন বুকে লালন করে নিজেকে প্রস্তুত করছেন কমনওয়েলথ গেমসে আরেক রুপাজয়ী পিস্তল শুটার শাকিল আহমেদও। সকিচ চলে যাওয়ার পর ফেডারেশন ফিরিয়ে আনে কোরিয়ান কোচ কিম ইয়ংকে। যার অধীনে ২০১৬ এসএ গেমসে স্বর্ণ জিতেছিলেন শাকিল, ‘কোরিয়ান কোচের অধীনে আমার বেশ উন্নতি হয়েছে। আগের চেয়ে কমপক্ষে ১০ স্কোর বেড়ে গেছে আমার। কোটা প্লেসের ব্যাপারে আমি খুবই আশাবাদী।’
বাংলাদেশ শুটিংয়ে সময়ের উজ্জ্বলতম দুই নাম। তাদের ঘিরেই আবর্তিত অলিম্পিক কোটা প্লেসের স্বপ্ন।