সুযোগ কাজে লাগাবেন ‘ক্যাপ্টেন মুমিনুল’
মোহাম্মদ খাইরুল আমিন, ইন্দোর থেকে | ১৪ নভেম্বর, ২০১৯ ০০:০০
মানুষটা দেখতে ছোটখাটো, কিন্তু কাজেকর্মে বিশাল। আবার সেই তিনি দেশের কঠিন এক মুহূর্তে পড়েছেন জটিল পরিস্থিতিতে। হুট করে কাঁধে টেস্ট দলের নেতৃত্ব। প্রথম সিরিজ আবার বিশ্বের এক নম্বর টেস্ট দল ভারতের বিপক্ষে। ভারতের মাটিতেই। আজ ইন্দোরের হলকার স্টেডিয়ামে দেশের ১১ তম অধিনায়ক হিসেবে অভিষেক। এমন এক সিরিজ যেখানে হারানোর কিছু নেই। কিন্তু মুমিনুল হক মনস্তাত্ত্বিক খেলা ক্রিকেটে মনের জোরে নিজেকে ও দলকে এখনো অনুদঘাটিত এক পথের সন্ধান দিতে চান।
হলকার স্টেডিয়ামে দুপুরে সংবাদ সম্মেলন। অধিনায়ক হিসেবে মুমিনুলের প্রথম। তাও ম্যাচের আগের দিন। মঞ্চে বসে সামনে বেশ গভীর দৃষ্টি বুলিয়ে নেন। ভারতীয় এক সাংবাদিকের প্রথম প্রশ্নটা ঠিক বুঝেছেন কি না তা পাশে বসা মিডিয়া ম্যানেজারের সঙ্গে এক মুহূর্তে আলাপ করে নিশ্চিত হয়ে নেন। এরপর মিনিট পনেরোর প্রশ্নোত্তর পর্বে কখনো সাবলীল। কখনো একটু আটকান। কখনো হেসে হালকা করেন কঠিন প্রশ্নকে। কৌশলে এড়ান জটিলতাও।
সাকিব আল হাসান হঠাৎ নিষিদ্ধ। সফরে ব্যক্তিগত কারণে নেই তামিম ইকবাল। এমন দুই খেলোয়াড়ের শূন্যতায় দলে চাপ। ‘আমার মনে হয় দুইজনের জায়গায় ওইখানে তিনজন খেলোয়াড় নেই। সাকিব ভাই তো একজনের জায়গায় দুইজন, সঙ্গে নেই তামিম ভাইও। হ্যাঁ, একটু চ্যালেঞ্জিং হবে।’ সব স্বীকার করে নিয়ে সামনে বাড়েন মুমিনুল, ‘তবে যারা নেই তাদের নিয়ে পড়ে থাকলে তো হবে না। যারা আছে তাদের নিয়েই আমাদের খেলতে হবে। এখন সবাই অনেক বেশি মনোযোগী। আমার মনে হয়, সবাই অনেক বেশি দায়িত্ব নিয়ে খেলবে। টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপকে একটা সুযোগ হিসেবে দেখছে সবাই। সবাই সেভাবে উদগ্রীব হয়ে আছে। টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ শুরু সেটাও ভারতের বিপক্ষে। সবাই পারফর্ম করার জন্য উদগ্রীব আছে।’
মুমিনুল সব সংস্করণেই খেলেছেন। কিন্তু ৩৬ টেস্ট খেলা মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান এখন কেবল টেস্ট বিশেষজ্ঞ। এক সময় ব্র্যাডম্যানসুলভ ব্যাটিং গড় ছিল এই সংস্করণে। সেটা নেমে এখন ৪৮-এর কাছে। সেঞ্চুরি আছে ৮ টা। জাতীয় দলে বাকি দুই সংস্করণে সুযোগ না মিললেও এই সংস্করণে এখন দেশের নেতা। বিরাট সম্মানের ব্যাপারটা কীভাবে সামলাবেন ২৮ বছরের যুবা?
মুমিনুলের কথায় বারবার এসেছে ‘মনস্তাত্ত্বিক’ ব্যাপারটা। ক্রিকেট ও মনস্তত্ত্বকে এক সুতোয় গাঁথতে পছন্দ করেন বলে নেতৃত্বের প্রসঙ্গে বলেন, ‘আমার কাছে মনে হয় যে পুরোটাই মানসিক শক্তির ব্যাপার। এটা আমার জন্য অনেক রোমাঞ্চকর। জুনিয়র হিসেবে এটা আমার জন্য খুব বড় সুযোগ। আল্লাহতায়ালার কাছে শুকরিয়া। এ রকম সুযোগ সবাই পায় না। এটাকে খুব ভালোভাবে কাজে লাগানোর চেষ্টা করব।’
মুশফিকুর রহিম আগে ছিলেন অধিনায়ক। মাহমুদউল্লাহ টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক এখন। টেস্টে তার নেতৃত্বেও খেলেছেন মুমিনুল। সেঞ্চুরিও করেছেন। তো এই দুই সিনিয়র ও সাবেক ক্যাপ্টেনকে নেতৃত্বে পরিণত হওয়ার জন্যও দরকার মানেন মুমিনুল, ‘এটা আমার জন্য ভালো ব্যাপার যে, যাদের কথা বললেন তারা সব সময় আমাকে সহায়তা করে আসছেন। সিনিয়র দুজনের এই সহায়তা পাওয়াটা আমার জন্য অনেক বড় প্রাপ্তি।’
চন্দিকা হাতুরুসিংহের আমলে ক্যারিয়ার শেষ হতে বসেছিল মুমিনুলের। স্টিভ রোডসের সময়ে নিজেকে আবার প্রতিষ্ঠিত করেছেন। উত্থান ও পতনের সবটা জানা। আর এখন যোগ হলো আরও সম্মানের নেতৃত্ব। নেতৃত্ব অনেককে চাপে ফেলে। কিন্তু ফার্স্ট ক্লাসে, দেশের ‘এ’ দলের নেতৃত্ব দেওয়ার অভিজ্ঞতা আছে এবং অভিজ্ঞতা থেকে মুমিনুলের বিশ্বাস তার ব্যাটিংকে চাপে ফেলবে না নতুন দায়িত্ব। ‘অধিনায়কত্ব পাওয়ার আগে যেভাবে একজন ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলছিলাম এখনো সেভাবে ব্যাটসম্যান হিসেবেই খেলব।’ মুমিনুল বললেন, ‘নেতৃত্বে থাকায় আপনার ক্রিকেট নিয়ে জ্ঞানটা একটু বাড়ে, দায়িত্বও বাড়ে। আমার মনে হয় এখন আমার পারফরম্যান্সের উন্নতি হবে, ব্যাটিং আরেকটু ভালো হবে।’
টেস্ট ক্রিকেট তাকে আগ্রাসী না রক্ষণাত্মক অধিনায়ক হিসেবে আবিষ্কার করবে? হাসেন মুমিনুল, ‘এই মুহূর্তে আমি বলতে পারছি না। এটা নির্ভর করবে পরিস্থিতির ওপর। কোন পরিস্থিতিতে আমি কোন সিদ্ধান্ত নেব সেটা তখনই বলা যাবে।’ তার দর্শন, ‘রক্ষণাত্মক হয়েও আক্রমণ করা যায় আবার আক্রমণাত্মক হয়েও রক্ষণ করা যায়।’
তার মানে, নির্দিষ্ট গণ্ডিতে আটকে থাকার মানসিকতার অধিনায়ক হওয়ায় ঘোর আপত্তি। এমন দর্শন জেনে বিজ্ঞজনও বলেন, ‘ক্যাপ্টেন মুমিনুলের যাত্রা শুভ হোক।’
শেয়ার করুন
মোহাম্মদ খাইরুল আমিন, ইন্দোর থেকে | ১৪ নভেম্বর, ২০১৯ ০০:০০

মানুষটা দেখতে ছোটখাটো, কিন্তু কাজেকর্মে বিশাল। আবার সেই তিনি দেশের কঠিন এক মুহূর্তে পড়েছেন জটিল পরিস্থিতিতে। হুট করে কাঁধে টেস্ট দলের নেতৃত্ব। প্রথম সিরিজ আবার বিশ্বের এক নম্বর টেস্ট দল ভারতের বিপক্ষে। ভারতের মাটিতেই। আজ ইন্দোরের হলকার স্টেডিয়ামে দেশের ১১ তম অধিনায়ক হিসেবে অভিষেক। এমন এক সিরিজ যেখানে হারানোর কিছু নেই। কিন্তু মুমিনুল হক মনস্তাত্ত্বিক খেলা ক্রিকেটে মনের জোরে নিজেকে ও দলকে এখনো অনুদঘাটিত এক পথের সন্ধান দিতে চান।
হলকার স্টেডিয়ামে দুপুরে সংবাদ সম্মেলন। অধিনায়ক হিসেবে মুমিনুলের প্রথম। তাও ম্যাচের আগের দিন। মঞ্চে বসে সামনে বেশ গভীর দৃষ্টি বুলিয়ে নেন। ভারতীয় এক সাংবাদিকের প্রথম প্রশ্নটা ঠিক বুঝেছেন কি না তা পাশে বসা মিডিয়া ম্যানেজারের সঙ্গে এক মুহূর্তে আলাপ করে নিশ্চিত হয়ে নেন। এরপর মিনিট পনেরোর প্রশ্নোত্তর পর্বে কখনো সাবলীল। কখনো একটু আটকান। কখনো হেসে হালকা করেন কঠিন প্রশ্নকে। কৌশলে এড়ান জটিলতাও।
সাকিব আল হাসান হঠাৎ নিষিদ্ধ। সফরে ব্যক্তিগত কারণে নেই তামিম ইকবাল। এমন দুই খেলোয়াড়ের শূন্যতায় দলে চাপ। ‘আমার মনে হয় দুইজনের জায়গায় ওইখানে তিনজন খেলোয়াড় নেই। সাকিব ভাই তো একজনের জায়গায় দুইজন, সঙ্গে নেই তামিম ভাইও। হ্যাঁ, একটু চ্যালেঞ্জিং হবে।’ সব স্বীকার করে নিয়ে সামনে বাড়েন মুমিনুল, ‘তবে যারা নেই তাদের নিয়ে পড়ে থাকলে তো হবে না। যারা আছে তাদের নিয়েই আমাদের খেলতে হবে। এখন সবাই অনেক বেশি মনোযোগী। আমার মনে হয়, সবাই অনেক বেশি দায়িত্ব নিয়ে খেলবে। টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপকে একটা সুযোগ হিসেবে দেখছে সবাই। সবাই সেভাবে উদগ্রীব হয়ে আছে। টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ শুরু সেটাও ভারতের বিপক্ষে। সবাই পারফর্ম করার জন্য উদগ্রীব আছে।’
মুমিনুল সব সংস্করণেই খেলেছেন। কিন্তু ৩৬ টেস্ট খেলা মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান এখন কেবল টেস্ট বিশেষজ্ঞ। এক সময় ব্র্যাডম্যানসুলভ ব্যাটিং গড় ছিল এই সংস্করণে। সেটা নেমে এখন ৪৮-এর কাছে। সেঞ্চুরি আছে ৮ টা। জাতীয় দলে বাকি দুই সংস্করণে সুযোগ না মিললেও এই সংস্করণে এখন দেশের নেতা। বিরাট সম্মানের ব্যাপারটা কীভাবে সামলাবেন ২৮ বছরের যুবা?
মুমিনুলের কথায় বারবার এসেছে ‘মনস্তাত্ত্বিক’ ব্যাপারটা। ক্রিকেট ও মনস্তত্ত্বকে এক সুতোয় গাঁথতে পছন্দ করেন বলে নেতৃত্বের প্রসঙ্গে বলেন, ‘আমার কাছে মনে হয় যে পুরোটাই মানসিক শক্তির ব্যাপার। এটা আমার জন্য অনেক রোমাঞ্চকর। জুনিয়র হিসেবে এটা আমার জন্য খুব বড় সুযোগ। আল্লাহতায়ালার কাছে শুকরিয়া। এ রকম সুযোগ সবাই পায় না। এটাকে খুব ভালোভাবে কাজে লাগানোর চেষ্টা করব।’
মুশফিকুর রহিম আগে ছিলেন অধিনায়ক। মাহমুদউল্লাহ টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক এখন। টেস্টে তার নেতৃত্বেও খেলেছেন মুমিনুল। সেঞ্চুরিও করেছেন। তো এই দুই সিনিয়র ও সাবেক ক্যাপ্টেনকে নেতৃত্বে পরিণত হওয়ার জন্যও দরকার মানেন মুমিনুল, ‘এটা আমার জন্য ভালো ব্যাপার যে, যাদের কথা বললেন তারা সব সময় আমাকে সহায়তা করে আসছেন। সিনিয়র দুজনের এই সহায়তা পাওয়াটা আমার জন্য অনেক বড় প্রাপ্তি।’
চন্দিকা হাতুরুসিংহের আমলে ক্যারিয়ার শেষ হতে বসেছিল মুমিনুলের। স্টিভ রোডসের সময়ে নিজেকে আবার প্রতিষ্ঠিত করেছেন। উত্থান ও পতনের সবটা জানা। আর এখন যোগ হলো আরও সম্মানের নেতৃত্ব। নেতৃত্ব অনেককে চাপে ফেলে। কিন্তু ফার্স্ট ক্লাসে, দেশের ‘এ’ দলের নেতৃত্ব দেওয়ার অভিজ্ঞতা আছে এবং অভিজ্ঞতা থেকে মুমিনুলের বিশ্বাস তার ব্যাটিংকে চাপে ফেলবে না নতুন দায়িত্ব। ‘অধিনায়কত্ব পাওয়ার আগে যেভাবে একজন ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলছিলাম এখনো সেভাবে ব্যাটসম্যান হিসেবেই খেলব।’ মুমিনুল বললেন, ‘নেতৃত্বে থাকায় আপনার ক্রিকেট নিয়ে জ্ঞানটা একটু বাড়ে, দায়িত্বও বাড়ে। আমার মনে হয় এখন আমার পারফরম্যান্সের উন্নতি হবে, ব্যাটিং আরেকটু ভালো হবে।’
টেস্ট ক্রিকেট তাকে আগ্রাসী না রক্ষণাত্মক অধিনায়ক হিসেবে আবিষ্কার করবে? হাসেন মুমিনুল, ‘এই মুহূর্তে আমি বলতে পারছি না। এটা নির্ভর করবে পরিস্থিতির ওপর। কোন পরিস্থিতিতে আমি কোন সিদ্ধান্ত নেব সেটা তখনই বলা যাবে।’ তার দর্শন, ‘রক্ষণাত্মক হয়েও আক্রমণ করা যায় আবার আক্রমণাত্মক হয়েও রক্ষণ করা যায়।’
তার মানে, নির্দিষ্ট গণ্ডিতে আটকে থাকার মানসিকতার অধিনায়ক হওয়ায় ঘোর আপত্তি। এমন দর্শন জেনে বিজ্ঞজনও বলেন, ‘ক্যাপ্টেন মুমিনুলের যাত্রা শুভ হোক।’