‘মাশরাফীকে শেখানো আমার সাজে না’
মোহাম্মদ খাইরুল আমিন | ১৪ ডিসেম্বর, ২০১৯ ০০:০০
ব্যক্তিগত জীবনে তারা দীর্ঘদিনের বন্ধু। একসময় জাতীয় দলে দুই পেসার নতুন বল ভাগাভাগি করেছেন। সৈয়দ রাসেলের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার খুব দীর্ঘ হয়নি। মাশরাফী বিন মোর্ত্তজা এই বিপিএলেও ঢাকা প্লাটুনকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। এবারই প্রথমবারের মতো কোচ হয়েছেন রাসেল। ঢাকার বোলিং কোচের দায়িত্বটা তার। মাশরাফীকে কোচিং করানোর প্রশ্ন এলেই হাসিমুখে তীব্র আপত্তি রাসেলের। এটা যে তাকে সাজে না!
‘আমি যদি মাশরাফীকে শেখাতে যাই তাহলে ওটা আসলে সাজে না।’ গতকাল এবারের আসরে ঢাকার দ্বিতীয় ম্যাচের আগে বলছিলেন রাসেল, ‘তারপরও হ্যাঁ, আমরা মতবিনিময় করি। অভিজ্ঞতা শেয়ার করি।’
২০০৫ থেকে ২০১০ পর্যন্ত আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে রাসেল ৬৬টি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছেন। ৬ টেস্ট, ৫২ ওয়ানডে আর ৮ টি-টোয়েন্টি মিলে শিকার ৭৭ উইকেট। ইনজুরির কারণে ক্যারিয়ারের শেষটায় খুব ভুগেছেন ৩৫ বছরের সাবেক বাঁহাতি পেসার। তবে সবকিছু সামলে গেল বছরও ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে খেলেছিলেন। যেখানে নিয়মিত খেলেন সেই আমেরিকায় সম্প্রতি খেলে ফিরে ঢাকার বোলিং কোচ হওয়ার প্রস্তাব পেয়ে আর ভাবেননি। মাস চারেক আগে বিসিবির করানো কোচিংয়ে লেভেল ওয়ান করেছেন।
ওদিকে মাশরাফী জুন-জুলাইয়ের ইংল্যান্ড বিশ্বকাপের পর আর খেলার মধ্যে নেই। সাংসদ শ্রীলঙ্কার সিরিজ চোটে মিস করার পর নড়াইল নিয়ে ব্যস্ত হয়ে গিয়েছিলেন। ক্রিকেটের মধ্যে ছিলেন না। নভেম্বরে ব্যক্তিগত উদ্যোগে ফিটনেসে কাজ করে ১০ কেজির মতো ওজন ঝেড়ে ফেলে ফেরার জন্য তৈরি হওয়া। ঢাকা প্লাটুনের প্রথম ম্যাচটা অবশ্য হারের। আর দলটির অধিনায়ক মাশরাফী ৩ ওভারে ১৮ রান দিয়ে উইকেট পাননি। কিছুটা জড়তা ছিল নিজেই স্বীকার করেছেন।
কিন্তু মাশরাফীর বোলিং কোচ গতকালের ম্যাচের আগে প্রথম ম্যাচে বোলারের বোলিং নিয়ে কি কথা বলেছেন? ‘ওর বোলিংয়ে যে খুব একটা কিছু করতে হবে তা নয়। ফিটনেসে একটু কাজ করতে হবে। ও দুই বছর পর এসেও যদি বল করে প্রথম বলটা মনে হয় জায়গায় পড়বে। এটা তো ওর মাথায় সেট হয়ে আছে। ওর ফিটনেসটা দরকার।’ রাসেল জানিয়েছেন, ‘ওটাই বলেছি, অল্প অল্প করে ফিটনেস নিয়ে কাজ করলে হবে। বোলিং নিয়ে কিছু বলার নেই। বোলিংয়ে ও ভালো করবে দু-এক ম্যাচেই।’
মাশরাফী নড়াইলের। রাসেল যশোরের ঝিকরগাছার। কাছাকাছি এলাকার। কিন্তু তাদের ক্রিকেটে বেড়ে ওঠা একসঙ্গে। আঞ্চলিক দল থেকে শুরু করে জাতীয় দলে। দেশের হয়ে একসঙ্গে ৫ বছর লড়েছেন কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে। ব্যক্তিগত সুখ-দুঃখেরও সাথী। পেশাদার জীবনে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটেও মাশরাফীর নেতৃত্বে খেলেছেন রাসেল।
এখন যখন অধিনায়ক ও বোলিং কোচের ভিন্ন ভূমিকায় দুই বন্ধু এক দলে তখনো নাকি ব্যাপারটা আগের মতোই আছে, ‘আমরা ঘনিষ্ঠ বন্ধু। আর সবসময় একসঙ্গে থাকার কারণে ভিন্ন কিছু মনে হচ্ছে না।’ একসঙ্গে খেলার প্রসঙ্গ টেনে হাস্যোজ্জ্বল রাসেল বলছিলেন, ‘এর আগে যখন আমরা খেলেছি তখন বোলিং পার্টনার হিসেবে যেভাবে সবকিছু শেয়ার করতাম ঠিক একই রকমের কথাবার্তা হচ্ছে। অন্য কোনো কিছু খুঁজে পাচ্ছি না আসলে।’
সত্যি বলতে এই বিপিএল থেকে তো কোচ হিসেবে নতুন জমিনে পা রাখলেন। অনেকের লক্ষ্য থাকে ভবিষ্যতে প্রধান কোচ হিসেবে ক্যারিয়ার গড়ার। রাসেলের লক্ষ্য? ‘পেস বোলার ছিলাম। ভবিষ্যতে আসলে (বিশেষজ্ঞ) বোলিং কোচ হতে চাই।’ মজার ব্যাপার হলো এখনো অনুশীলনে-ড্রেসিং রুমে সব জায়গায়, রাসেল খেলোয়াড়ের অনুভূতি থেকে বের হতে পারছেন না। ‘এখনো আমার নিজেকে কোচ ভাবা একটু কঠিন হচ্ছে। ড্রেসিং রুমে যখন ঢzকেছিলাম...কোচ হিসেবে অনুভূতিটা এখনো অনুভব করতে পারছি না। মনে হচ্ছে খেলোয়াড়ই আছি’– রাসেলের হাসিটা সংক্রমিত করে সামনের প্রতিবেদককেও।
শেয়ার করুন
মোহাম্মদ খাইরুল আমিন | ১৪ ডিসেম্বর, ২০১৯ ০০:০০

ব্যক্তিগত জীবনে তারা দীর্ঘদিনের বন্ধু। একসময় জাতীয় দলে দুই পেসার নতুন বল ভাগাভাগি করেছেন। সৈয়দ রাসেলের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার খুব দীর্ঘ হয়নি। মাশরাফী বিন মোর্ত্তজা এই বিপিএলেও ঢাকা প্লাটুনকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। এবারই প্রথমবারের মতো কোচ হয়েছেন রাসেল। ঢাকার বোলিং কোচের দায়িত্বটা তার। মাশরাফীকে কোচিং করানোর প্রশ্ন এলেই হাসিমুখে তীব্র আপত্তি রাসেলের। এটা যে তাকে সাজে না!
‘আমি যদি মাশরাফীকে শেখাতে যাই তাহলে ওটা আসলে সাজে না।’ গতকাল এবারের আসরে ঢাকার দ্বিতীয় ম্যাচের আগে বলছিলেন রাসেল, ‘তারপরও হ্যাঁ, আমরা মতবিনিময় করি। অভিজ্ঞতা শেয়ার করি।’
২০০৫ থেকে ২০১০ পর্যন্ত আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে রাসেল ৬৬টি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছেন। ৬ টেস্ট, ৫২ ওয়ানডে আর ৮ টি-টোয়েন্টি মিলে শিকার ৭৭ উইকেট। ইনজুরির কারণে ক্যারিয়ারের শেষটায় খুব ভুগেছেন ৩৫ বছরের সাবেক বাঁহাতি পেসার। তবে সবকিছু সামলে গেল বছরও ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে খেলেছিলেন। যেখানে নিয়মিত খেলেন সেই আমেরিকায় সম্প্রতি খেলে ফিরে ঢাকার বোলিং কোচ হওয়ার প্রস্তাব পেয়ে আর ভাবেননি। মাস চারেক আগে বিসিবির করানো কোচিংয়ে লেভেল ওয়ান করেছেন।
ওদিকে মাশরাফী জুন-জুলাইয়ের ইংল্যান্ড বিশ্বকাপের পর আর খেলার মধ্যে নেই। সাংসদ শ্রীলঙ্কার সিরিজ চোটে মিস করার পর নড়াইল নিয়ে ব্যস্ত হয়ে গিয়েছিলেন। ক্রিকেটের মধ্যে ছিলেন না। নভেম্বরে ব্যক্তিগত উদ্যোগে ফিটনেসে কাজ করে ১০ কেজির মতো ওজন ঝেড়ে ফেলে ফেরার জন্য তৈরি হওয়া। ঢাকা প্লাটুনের প্রথম ম্যাচটা অবশ্য হারের। আর দলটির অধিনায়ক মাশরাফী ৩ ওভারে ১৮ রান দিয়ে উইকেট পাননি। কিছুটা জড়তা ছিল নিজেই স্বীকার করেছেন।
কিন্তু মাশরাফীর বোলিং কোচ গতকালের ম্যাচের আগে প্রথম ম্যাচে বোলারের বোলিং নিয়ে কি কথা বলেছেন? ‘ওর বোলিংয়ে যে খুব একটা কিছু করতে হবে তা নয়। ফিটনেসে একটু কাজ করতে হবে। ও দুই বছর পর এসেও যদি বল করে প্রথম বলটা মনে হয় জায়গায় পড়বে। এটা তো ওর মাথায় সেট হয়ে আছে। ওর ফিটনেসটা দরকার।’ রাসেল জানিয়েছেন, ‘ওটাই বলেছি, অল্প অল্প করে ফিটনেস নিয়ে কাজ করলে হবে। বোলিং নিয়ে কিছু বলার নেই। বোলিংয়ে ও ভালো করবে দু-এক ম্যাচেই।’
মাশরাফী নড়াইলের। রাসেল যশোরের ঝিকরগাছার। কাছাকাছি এলাকার। কিন্তু তাদের ক্রিকেটে বেড়ে ওঠা একসঙ্গে। আঞ্চলিক দল থেকে শুরু করে জাতীয় দলে। দেশের হয়ে একসঙ্গে ৫ বছর লড়েছেন কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে। ব্যক্তিগত সুখ-দুঃখেরও সাথী। পেশাদার জীবনে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটেও মাশরাফীর নেতৃত্বে খেলেছেন রাসেল।
এখন যখন অধিনায়ক ও বোলিং কোচের ভিন্ন ভূমিকায় দুই বন্ধু এক দলে তখনো নাকি ব্যাপারটা আগের মতোই আছে, ‘আমরা ঘনিষ্ঠ বন্ধু। আর সবসময় একসঙ্গে থাকার কারণে ভিন্ন কিছু মনে হচ্ছে না।’ একসঙ্গে খেলার প্রসঙ্গ টেনে হাস্যোজ্জ্বল রাসেল বলছিলেন, ‘এর আগে যখন আমরা খেলেছি তখন বোলিং পার্টনার হিসেবে যেভাবে সবকিছু শেয়ার করতাম ঠিক একই রকমের কথাবার্তা হচ্ছে। অন্য কোনো কিছু খুঁজে পাচ্ছি না আসলে।’
সত্যি বলতে এই বিপিএল থেকে তো কোচ হিসেবে নতুন জমিনে পা রাখলেন। অনেকের লক্ষ্য থাকে ভবিষ্যতে প্রধান কোচ হিসেবে ক্যারিয়ার গড়ার। রাসেলের লক্ষ্য? ‘পেস বোলার ছিলাম। ভবিষ্যতে আসলে (বিশেষজ্ঞ) বোলিং কোচ হতে চাই।’ মজার ব্যাপার হলো এখনো অনুশীলনে-ড্রেসিং রুমে সব জায়গায়, রাসেল খেলোয়াড়ের অনুভূতি থেকে বের হতে পারছেন না। ‘এখনো আমার নিজেকে কোচ ভাবা একটু কঠিন হচ্ছে। ড্রেসিং রুমে যখন ঢzকেছিলাম...কোচ হিসেবে অনুভূতিটা এখনো অনুভব করতে পারছি না। মনে হচ্ছে খেলোয়াড়ই আছি’– রাসেলের হাসিটা সংক্রমিত করে সামনের প্রতিবেদককেও।