হতাশ ফুটবলে স্বপ্নভঙ্গ বাংলাদেশের
ক্রীড়া প্রতিবেদক | ২৪ জানুয়ারি, ২০২০ ০০:০০
ম্যাচ শেষ হতেই শুরু হয়ে গেল বুরুন্ডির ফুটবলারদের উদ্দাম নৃত্য। শাকিরার ‘ওলে ওলে’র তালে তালে দু’হাত প্রসারিত করে যেন ভেসে যেতে চাইলেন পূর্ব আফ্রিকার এই দেশের ফুটবলশিল্পীরা। তাদের এই চোখে পড়ার মতো উদযাপনে অস্বাভাবিকতা নেই। প্রায় কুড়ি হাজার বাংলাদেশি দর্শকের সামনে, প্রতিকূল আবহে তারা স্বাগতিকদের ৩-০ ব্যবধানে হারিয়ে উঠে গেছে বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপের ফাইনালে। র্যাংকিংয়ের ব্যবধানটাই সত্য হলো বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামের সবুজ ময়দানে। ৩৭ ধাপ পিছিয়ে থাকা বাংলাদেশ পারেনি নিজেদের ছাড়িয়ে যাওয়া ফুটবল খেলতে। তাই তো আরেকবার সেমিফাইনালে স্বপ্নভঙ্গ হলো স্বাগতিকদের। ফাইনালের আশা নিয়ে গ্যালারি ভরিয়ে দেওয়া সমর্থকরাও ফিরে গেলেন এক বুক হতাশা নিয়ে।
বাংলাদেশের স্বপ্ন হন্তারক সিমিরিমানা জসপিন। প্রথমার্ধের শেষভাগে দু’টির পর দ্বিতীয়ার্ধের শেষ দিকে হ্যাটট্রিক পূরণ করেছেন আগের ম্যাচেও হ্যাটট্রিক করা এই স্ট্রাইকার। আর এই তিন গোলেই রয়েছে বাংলাদেশের অনভিজ্ঞ রক্ষণের ‘অবদান’। দলের দুই নির্ভরযোগ্য সেন্টার-ব্যাক তপু বর্মন এবং ইয়াসিন খানের অভাব পূরণ করতে পারেননি রিয়াদুল হাসান, রায়হান হাসান, বিশ্বনাথ ঘোষ এবং রহমত মিয়া। রক্ষণ বারবার আলগা করে দিয়ে জসপিনকে জালের নাগাল পেতে সহায়তা করেছেন তারা। অথচ জসপিনের প্রথম গোলের আগ পর্যন্ত দারুণ আক্রমণাত্মক ফুটবল খেলেছে বাংলাদেশ। বেশ ক’বার গোলের সহজ সুযোগ তৈরি করেও শেষ পর্যন্ত তার নাগাল পাননি সাদ উদ্দিন, মাহবুবুর রহমান সুফিলরা। ম্যাচ শুরুর খানিক বাদেই পেশিতে টান পড়ায় মাঠ ছাড়তে হয়েছিল আগের ম্যাচে জোড়া গোলে খাতা খোলা মতিন মিয়া। পঞ্চম মিনিটে তার জায়গায় সুফিল নেমে করেছেন অবিশ্বাস্য সব ভুল।
অষ্টম মিনিটে মোহাম্মদ ইব্রাহিমকে দারুণ এক বল অবশ্য বানিয়ে দেন সুফিল। কিন্তু ইব্রাহিমের জোরালো শট সরাসরি চলে যায় বুরুন্ডি গোলরক্ষক আইমি ফ্যালেসের কাছে। ২২ মিনিটে তপুর জায়গায় মূল একাদশে ফেরা রায়হানের লং থ্রো-ইন ফাঁকায় পেয়ে গিয়েছিলেন সুফিল। কিন্তু সেটার নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বড় সুযোগ নষ্ট করেন এই ফরোয়ার্ড। সময় যত গড়িয়েছে আক্রমণের ধার বাড়লেও বাংলাদেশের রক্ষণের ফাটলগুলো প্রকাশ্য হতে থাকে। সুবাদে ৪২ মিনিটে ধারার বিপরীতে প্রথম গোলের দেখা পেয়ে যায় বুরুন্ডি। গাবনজিজা ব্ল্যানচার্ডের ডান দিক থেকে ক্রস বিস্ময়করভাবে বাংলাদেশের তিন ডিফেন্ডারের মাঝখানে দাঁড়ানো জসপিনের কাছে চলে এলে ঠা-া মাথায় তা জালে জড়িয়ে দেন। যোগ করা সময় ১৮ বছর বয়সী এই স্ট্রাইকার ব্যবধান দ্বিগুণ করেন ব্ল্যানচার্ডের আরেকটি ক্রসে হেড করে।
দ্বিতীয়ার্ধে ঘুরে দাঁড়াতে মরিয়া আক্রমণ চালিয়েছিল বাংলাদেশ। ৪৯ মিনিটে বক্সের ওপর থেকে লম্বা থ্রু ধরে সাদ উদ্দিন যে শট নেন তার সরাসরি আগুয়ান বুরুন্ডি গোলরক্ষকের গ্লাভসে জমা পড়ে। ৬১ মিনিটে আরেকটি ভালো সুযোগ বাংলাদেশের নষ্ট হয়। জামালের ক্রসে সুফিলের হেড দুর্দান্তভাবে রুখে দেন বুরুন্ডি গোলরক্ষক ফ্যালেস।
৭৫ মিনিটে ফ্যালেস ফের ত্রাতায় ভূমিকা জামালের একটি নিচু ফ্রি-কিক ঠেকিয়ে দিয়ে। চার মিনিট বাদে বাংলাদেশকে ম্যাচ থেকে ছিটকে দিয়ে হ্যাটট্রিক পূরণ করেন জসপিন। বদলি ফরোয়ার্ড রাকিব হোসেন সহজ একটা সুযোগ নষ্ট করার পর প্রতি আক্রমণে বল পেয়ে ডিফেন্ডার রহমত মিয়াকে পরাস্ত করে সহজেই বাংলাদেশ গোলরক্ষক আশরাফুল ইসলাম রানাকে ধরাশায়ী করেন মরিশাসের সঙ্গে হ্যাটট্রিক করা জসপিন। ম্যাচের শেষ দিকে সাদ উদ্দিন, জামালরা আরও কয়েকটি সুযোগ নষ্ট করলে মাথা নিচু করেই মাঠ ছাড়তে হয় তাদের।
সেমিফাইনাল থেকে বিদায় নেওয়া এই হারে কোনো অজুহাত খুঁজছেন না বাংলাদেশ কোচ জেমি ডে। বরং বুরুন্ডিকে কৃতিত্ব দিয়ে তিনি বলেছেন, ‘শুরুটা ভালো করলেও প্রথমার্ধের শেষভাগে কিছু ভুলে আমরা পিছিয়ে পড়ি। দ্বিতীয়ার্ধেও শুরুটা ভালো করেছি আমরা। ম্যাচে হয়তো আমরা এবং বুরুন্ডি সমান সুযোগ পেয়েছি। কিন্তু পার্থক্য হলো তারা সেগুলো কাজে লাগিয়েছে, আমরা পারিনি। এমন হারে সত্যিই খুব হতাশ।’
বুরুন্ডির কোচ বিফুবুসা জসলিন মনে করেন তার দল ভালো খেলেই পেয়েছে কাক্সিক্ষত জয়ের দেখা, ‘আমি সত্যি খুশি এই আসরের ফাইনাল উঠতে পেরে। এখানে আমরা খুব ভালো প্রস্তুতি নিয়ে এসেছিলাম। ছেলেরা কঠোর পরিশ্রমের সুফল এখানে পাচ্ছে।’
আগামীকাল বঙ্গবন্ধু গোল্ড কাপের আরেকটি স্বাগতিকহীন ফাইনালের সাক্ষী হবে বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামের গ্যালারি। যেখানে বুরুন্ডি খেলবে আগের দিন ফাইনাল নিশ্চিত করা ফিলিস্তিনের বিপক্ষে।
শেয়ার করুন
ক্রীড়া প্রতিবেদক | ২৪ জানুয়ারি, ২০২০ ০০:০০

ম্যাচ শেষ হতেই শুরু হয়ে গেল বুরুন্ডির ফুটবলারদের উদ্দাম নৃত্য। শাকিরার ‘ওলে ওলে’র তালে তালে দু’হাত প্রসারিত করে যেন ভেসে যেতে চাইলেন পূর্ব আফ্রিকার এই দেশের ফুটবলশিল্পীরা। তাদের এই চোখে পড়ার মতো উদযাপনে অস্বাভাবিকতা নেই। প্রায় কুড়ি হাজার বাংলাদেশি দর্শকের সামনে, প্রতিকূল আবহে তারা স্বাগতিকদের ৩-০ ব্যবধানে হারিয়ে উঠে গেছে বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপের ফাইনালে। র্যাংকিংয়ের ব্যবধানটাই সত্য হলো বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামের সবুজ ময়দানে। ৩৭ ধাপ পিছিয়ে থাকা বাংলাদেশ পারেনি নিজেদের ছাড়িয়ে যাওয়া ফুটবল খেলতে। তাই তো আরেকবার সেমিফাইনালে স্বপ্নভঙ্গ হলো স্বাগতিকদের। ফাইনালের আশা নিয়ে গ্যালারি ভরিয়ে দেওয়া সমর্থকরাও ফিরে গেলেন এক বুক হতাশা নিয়ে।
বাংলাদেশের স্বপ্ন হন্তারক সিমিরিমানা জসপিন। প্রথমার্ধের শেষভাগে দু’টির পর দ্বিতীয়ার্ধের শেষ দিকে হ্যাটট্রিক পূরণ করেছেন আগের ম্যাচেও হ্যাটট্রিক করা এই স্ট্রাইকার। আর এই তিন গোলেই রয়েছে বাংলাদেশের অনভিজ্ঞ রক্ষণের ‘অবদান’। দলের দুই নির্ভরযোগ্য সেন্টার-ব্যাক তপু বর্মন এবং ইয়াসিন খানের অভাব পূরণ করতে পারেননি রিয়াদুল হাসান, রায়হান হাসান, বিশ্বনাথ ঘোষ এবং রহমত মিয়া। রক্ষণ বারবার আলগা করে দিয়ে জসপিনকে জালের নাগাল পেতে সহায়তা করেছেন তারা। অথচ জসপিনের প্রথম গোলের আগ পর্যন্ত দারুণ আক্রমণাত্মক ফুটবল খেলেছে বাংলাদেশ। বেশ ক’বার গোলের সহজ সুযোগ তৈরি করেও শেষ পর্যন্ত তার নাগাল পাননি সাদ উদ্দিন, মাহবুবুর রহমান সুফিলরা। ম্যাচ শুরুর খানিক বাদেই পেশিতে টান পড়ায় মাঠ ছাড়তে হয়েছিল আগের ম্যাচে জোড়া গোলে খাতা খোলা মতিন মিয়া। পঞ্চম মিনিটে তার জায়গায় সুফিল নেমে করেছেন অবিশ্বাস্য সব ভুল।
অষ্টম মিনিটে মোহাম্মদ ইব্রাহিমকে দারুণ এক বল অবশ্য বানিয়ে দেন সুফিল। কিন্তু ইব্রাহিমের জোরালো শট সরাসরি চলে যায় বুরুন্ডি গোলরক্ষক আইমি ফ্যালেসের কাছে। ২২ মিনিটে তপুর জায়গায় মূল একাদশে ফেরা রায়হানের লং থ্রো-ইন ফাঁকায় পেয়ে গিয়েছিলেন সুফিল। কিন্তু সেটার নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বড় সুযোগ নষ্ট করেন এই ফরোয়ার্ড। সময় যত গড়িয়েছে আক্রমণের ধার বাড়লেও বাংলাদেশের রক্ষণের ফাটলগুলো প্রকাশ্য হতে থাকে। সুবাদে ৪২ মিনিটে ধারার বিপরীতে প্রথম গোলের দেখা পেয়ে যায় বুরুন্ডি। গাবনজিজা ব্ল্যানচার্ডের ডান দিক থেকে ক্রস বিস্ময়করভাবে বাংলাদেশের তিন ডিফেন্ডারের মাঝখানে দাঁড়ানো জসপিনের কাছে চলে এলে ঠা-া মাথায় তা জালে জড়িয়ে দেন। যোগ করা সময় ১৮ বছর বয়সী এই স্ট্রাইকার ব্যবধান দ্বিগুণ করেন ব্ল্যানচার্ডের আরেকটি ক্রসে হেড করে।
দ্বিতীয়ার্ধে ঘুরে দাঁড়াতে মরিয়া আক্রমণ চালিয়েছিল বাংলাদেশ। ৪৯ মিনিটে বক্সের ওপর থেকে লম্বা থ্রু ধরে সাদ উদ্দিন যে শট নেন তার সরাসরি আগুয়ান বুরুন্ডি গোলরক্ষকের গ্লাভসে জমা পড়ে। ৬১ মিনিটে আরেকটি ভালো সুযোগ বাংলাদেশের নষ্ট হয়। জামালের ক্রসে সুফিলের হেড দুর্দান্তভাবে রুখে দেন বুরুন্ডি গোলরক্ষক ফ্যালেস।
৭৫ মিনিটে ফ্যালেস ফের ত্রাতায় ভূমিকা জামালের একটি নিচু ফ্রি-কিক ঠেকিয়ে দিয়ে। চার মিনিট বাদে বাংলাদেশকে ম্যাচ থেকে ছিটকে দিয়ে হ্যাটট্রিক পূরণ করেন জসপিন। বদলি ফরোয়ার্ড রাকিব হোসেন সহজ একটা সুযোগ নষ্ট করার পর প্রতি আক্রমণে বল পেয়ে ডিফেন্ডার রহমত মিয়াকে পরাস্ত করে সহজেই বাংলাদেশ গোলরক্ষক আশরাফুল ইসলাম রানাকে ধরাশায়ী করেন মরিশাসের সঙ্গে হ্যাটট্রিক করা জসপিন। ম্যাচের শেষ দিকে সাদ উদ্দিন, জামালরা আরও কয়েকটি সুযোগ নষ্ট করলে মাথা নিচু করেই মাঠ ছাড়তে হয় তাদের।
সেমিফাইনাল থেকে বিদায় নেওয়া এই হারে কোনো অজুহাত খুঁজছেন না বাংলাদেশ কোচ জেমি ডে। বরং বুরুন্ডিকে কৃতিত্ব দিয়ে তিনি বলেছেন, ‘শুরুটা ভালো করলেও প্রথমার্ধের শেষভাগে কিছু ভুলে আমরা পিছিয়ে পড়ি। দ্বিতীয়ার্ধেও শুরুটা ভালো করেছি আমরা। ম্যাচে হয়তো আমরা এবং বুরুন্ডি সমান সুযোগ পেয়েছি। কিন্তু পার্থক্য হলো তারা সেগুলো কাজে লাগিয়েছে, আমরা পারিনি। এমন হারে সত্যিই খুব হতাশ।’
বুরুন্ডির কোচ বিফুবুসা জসলিন মনে করেন তার দল ভালো খেলেই পেয়েছে কাক্সিক্ষত জয়ের দেখা, ‘আমি সত্যি খুশি এই আসরের ফাইনাল উঠতে পেরে। এখানে আমরা খুব ভালো প্রস্তুতি নিয়ে এসেছিলাম। ছেলেরা কঠোর পরিশ্রমের সুফল এখানে পাচ্ছে।’
আগামীকাল বঙ্গবন্ধু গোল্ড কাপের আরেকটি স্বাগতিকহীন ফাইনালের সাক্ষী হবে বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামের গ্যালারি। যেখানে বুরুন্ডি খেলবে আগের দিন ফাইনাল নিশ্চিত করা ফিলিস্তিনের বিপক্ষে।