৭-১ গোলে হেরে কেঁদেছিলেন জুলিও সিজার
ক্রীড়া প্রতিবেদক | ২৪ জানুয়ারি, ২০২০ ০০:০০
বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপের শুভেচ্ছা দূত হিসেবে এসেছেন সাবেক ব্রাজিলিয়ান গোলরক্ষক জুলিও সিজার। আগেরদিন ঢাকায় পা রেখে গতকাল বেশ ব্যস্ত সময় কাটল তার। এক ফাঁকে সংবাদ মাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে বললেন অনেক কথাই। অবধারিতভাবে উঠে এলো ২০১৪ বিশ^কাপ সেমিফাইনালে জার্মানির কাছে ৭-১ গোলে হারের বিষয়টি। সেরা কোচ হিসেবে হোসে মরিনহোর নাম নিয়েছেন, আর সেরা ফুটবলার রোনালদিনহো। এছাড়া বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে সম্মানও জানান তিনি।
বৃহস্পতিবার সিজারের দিন শুরু হয় ধানম-ি থেকে। ধানম-ির ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে সম্মান প্রদর্শন করে সাবেক ব্রাজিল তারকা জানান, ‘এখানে এসে খুব ভালো লাগছে। আমি আমার খেলোয়াড়ি জীবনে ফিরে গেছি। ব্রাজিলের হয়ে বিশ^কাপ খেলার সময়গুলো মনে পড়ছে। আমাকে এখানে আসার সুযোগ করে দেওয়ার জন্য বাফুফে প্রেসিডেন্টকে ধন্যবাদ দিতে চাই। এখানে খুবই সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য এসেছি। তবে আমি আরও বেশি সময় থাকতে চাই বাংলাদেশে। এই সফরের উদ্দেশ্য জাতির পিতাকে সম্মান জানানো। তার বাড়িতে যাওয়ার সুযোগ হয়েছে। খুবই আবেগপূর্ণ একটি সফর। এই জাতির অনেক নায়ক আছে। ফিফা সভাপতি জিয়ানি ইনফ্যান্টিনো বাংলাদেশের ফুটবলের উন্নয়ন চান। বিশেষ করে নারী ফুটবলের উন্নয়ন দেখতে চান।’
এরপরই তাকে স্মরণ করতে হলো ২০১৪ সালে জার্মানির কাছে হারের ম্যাচটি। ওই ম্যাচটিকে ক্যারিয়ারের সবচেয়ে কালো ম্যাচ বললেন সিজার, ‘পরাজয়ের পর ড্রেসিং রুমের অবস্থা খুবই খারাপ ছিল। কেউই কথা বলছিল না। একদমই চুপ হয়ে গিয়েছিল সবাই। অনেকেই কাঁদছিল। আমি কাঁদছিলাম অঝোরে। এমনকি সান্ত¡না দেওয়ারও কেউ ছিল না। অনেকটা সময় পরে আমাদের ফেডারেশনের সভাপতি এসে সান্ত¡না দেন। তিনি বলেন, ফুটবলে এমন কিছু হতেই পারে। এবার সামনে এগিয়ে যাওয়ার কথা ভাবতে হবে। আমাদের জন্য সবচেয়ে কঠিন ছিল পরদিন ট্রেনিং গ্রাউন্ডে যাওয়া। কারণ, তখনো নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে স্থান নির্ধারণী ম্যাচ বাকি। মাথা উঁচু করে সেখানে যাওয়াটাই ছিল সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।’
বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে সম্মান জানানোর পর রাজধানীর বেরাইদে ফরটিজ গ্রাউন্ডে অবস্থিত বাফুফে’র অ্যাকাডেমি পরিদর্শনে যাওয়ার কথা ছিল সিজারের। কিন্তু সময় সংক্ষেপের কারণে তা বাতিল করে বাফুফে ভবনে চলে আসেন সাবেক ইন্তার মিলান তারকা। সেখানে নারী ফুটবলারদের সঙ্গে কিছু সময় কাটান এবং জাতীয় দলের গোলরক্ষকদের নিয়েও নিজের মতামত দেন। জানালেন, ‘আমার উচ্চতা ১ দশমিক ৮৬ মিটার। সেই তুলনায় এখানকার গোলরক্ষকরা অনেক ছোট। আমি তাদের বলেছিলাম, গোলরক্ষক হতে হলে লম্বা না হলেও হবে। তবে পায়ে শক্তি থাকতে হবে। আমি তাদের মুভমেন্ট দেখে সত্যিই অবাক হয়েছি। আমি কেন গোলরক্ষক হয়েছি? নয় বছর থেকেই গোলরক্ষক হিসেবে খেলেছি। অনেকেই স্ট্রাইকার অথবা মিডফিল্ডার হতে চায়। আমি শুরু থেকেই গোলরক্ষক হতে চেয়েছি।’
এছাড়া দুপুরে স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের সদস্যদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন সিজার। ওই দলের বীরত্বের গল্প শুনে মুগ্ধ হন তিনি। ফিরে গিয়ে পরিবারকে স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের মহৎ লড়াইয়ের কথাও শোনাবেন বলে জানান।
এছাড়া ২০১০ এ ইন্তার মিলানের হয়ে ট্রেবল জয়ের স্মৃতিও স্মরণ করেন সিজার। সেবার চ্যাম্পিয়ন্স লিগ, সিরি আ ও ইতালিয়ান কাপ জিতেছিল ইন্তার। সিজার জানান, ‘আমার শ্রেষ্ঠ সময়টা মরিনহোর সঙ্গে কাটিয়েছি। তিনি একজন অসাধারণ কোচ। বিশে^র সেরা। আমার সময়ের সেরা ফুটবলার কে বলতে গেলে অনেক ভাবতে হবে। রোনালদো, রোনালদিনহো কিংবা জিনেদিন জিদানরা প্রত্যেকেই নিজেদের জায়গায় সেরা ছিলেন। তবে আমার কাছে মনে হয় রোনালদিনহো সবচেয়ে আলাদা ছিলেন। সত্যিকারের জিনিয়াস ছিলেন।’
তবে মেসি-রোনালদোর মধ্যে কাউকে এগিয়ে রাখেননি সিজার। জানালেন দুজনই নিজেদের স্থানে সেরা।
শেয়ার করুন
ক্রীড়া প্রতিবেদক | ২৪ জানুয়ারি, ২০২০ ০০:০০

বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপের শুভেচ্ছা দূত হিসেবে এসেছেন সাবেক ব্রাজিলিয়ান গোলরক্ষক জুলিও সিজার। আগেরদিন ঢাকায় পা রেখে গতকাল বেশ ব্যস্ত সময় কাটল তার। এক ফাঁকে সংবাদ মাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে বললেন অনেক কথাই। অবধারিতভাবে উঠে এলো ২০১৪ বিশ^কাপ সেমিফাইনালে জার্মানির কাছে ৭-১ গোলে হারের বিষয়টি। সেরা কোচ হিসেবে হোসে মরিনহোর নাম নিয়েছেন, আর সেরা ফুটবলার রোনালদিনহো। এছাড়া বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে সম্মানও জানান তিনি।
বৃহস্পতিবার সিজারের দিন শুরু হয় ধানম-ি থেকে। ধানম-ির ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে সম্মান প্রদর্শন করে সাবেক ব্রাজিল তারকা জানান, ‘এখানে এসে খুব ভালো লাগছে। আমি আমার খেলোয়াড়ি জীবনে ফিরে গেছি। ব্রাজিলের হয়ে বিশ^কাপ খেলার সময়গুলো মনে পড়ছে। আমাকে এখানে আসার সুযোগ করে দেওয়ার জন্য বাফুফে প্রেসিডেন্টকে ধন্যবাদ দিতে চাই। এখানে খুবই সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য এসেছি। তবে আমি আরও বেশি সময় থাকতে চাই বাংলাদেশে। এই সফরের উদ্দেশ্য জাতির পিতাকে সম্মান জানানো। তার বাড়িতে যাওয়ার সুযোগ হয়েছে। খুবই আবেগপূর্ণ একটি সফর। এই জাতির অনেক নায়ক আছে। ফিফা সভাপতি জিয়ানি ইনফ্যান্টিনো বাংলাদেশের ফুটবলের উন্নয়ন চান। বিশেষ করে নারী ফুটবলের উন্নয়ন দেখতে চান।’
এরপরই তাকে স্মরণ করতে হলো ২০১৪ সালে জার্মানির কাছে হারের ম্যাচটি। ওই ম্যাচটিকে ক্যারিয়ারের সবচেয়ে কালো ম্যাচ বললেন সিজার, ‘পরাজয়ের পর ড্রেসিং রুমের অবস্থা খুবই খারাপ ছিল। কেউই কথা বলছিল না। একদমই চুপ হয়ে গিয়েছিল সবাই। অনেকেই কাঁদছিল। আমি কাঁদছিলাম অঝোরে। এমনকি সান্ত¡না দেওয়ারও কেউ ছিল না। অনেকটা সময় পরে আমাদের ফেডারেশনের সভাপতি এসে সান্ত¡না দেন। তিনি বলেন, ফুটবলে এমন কিছু হতেই পারে। এবার সামনে এগিয়ে যাওয়ার কথা ভাবতে হবে। আমাদের জন্য সবচেয়ে কঠিন ছিল পরদিন ট্রেনিং গ্রাউন্ডে যাওয়া। কারণ, তখনো নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে স্থান নির্ধারণী ম্যাচ বাকি। মাথা উঁচু করে সেখানে যাওয়াটাই ছিল সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।’
বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে সম্মান জানানোর পর রাজধানীর বেরাইদে ফরটিজ গ্রাউন্ডে অবস্থিত বাফুফে’র অ্যাকাডেমি পরিদর্শনে যাওয়ার কথা ছিল সিজারের। কিন্তু সময় সংক্ষেপের কারণে তা বাতিল করে বাফুফে ভবনে চলে আসেন সাবেক ইন্তার মিলান তারকা। সেখানে নারী ফুটবলারদের সঙ্গে কিছু সময় কাটান এবং জাতীয় দলের গোলরক্ষকদের নিয়েও নিজের মতামত দেন। জানালেন, ‘আমার উচ্চতা ১ দশমিক ৮৬ মিটার। সেই তুলনায় এখানকার গোলরক্ষকরা অনেক ছোট। আমি তাদের বলেছিলাম, গোলরক্ষক হতে হলে লম্বা না হলেও হবে। তবে পায়ে শক্তি থাকতে হবে। আমি তাদের মুভমেন্ট দেখে সত্যিই অবাক হয়েছি। আমি কেন গোলরক্ষক হয়েছি? নয় বছর থেকেই গোলরক্ষক হিসেবে খেলেছি। অনেকেই স্ট্রাইকার অথবা মিডফিল্ডার হতে চায়। আমি শুরু থেকেই গোলরক্ষক হতে চেয়েছি।’
এছাড়া দুপুরে স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের সদস্যদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন সিজার। ওই দলের বীরত্বের গল্প শুনে মুগ্ধ হন তিনি। ফিরে গিয়ে পরিবারকে স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের মহৎ লড়াইয়ের কথাও শোনাবেন বলে জানান।
এছাড়া ২০১০ এ ইন্তার মিলানের হয়ে ট্রেবল জয়ের স্মৃতিও স্মরণ করেন সিজার। সেবার চ্যাম্পিয়ন্স লিগ, সিরি আ ও ইতালিয়ান কাপ জিতেছিল ইন্তার। সিজার জানান, ‘আমার শ্রেষ্ঠ সময়টা মরিনহোর সঙ্গে কাটিয়েছি। তিনি একজন অসাধারণ কোচ। বিশে^র সেরা। আমার সময়ের সেরা ফুটবলার কে বলতে গেলে অনেক ভাবতে হবে। রোনালদো, রোনালদিনহো কিংবা জিনেদিন জিদানরা প্রত্যেকেই নিজেদের জায়গায় সেরা ছিলেন। তবে আমার কাছে মনে হয় রোনালদিনহো সবচেয়ে আলাদা ছিলেন। সত্যিকারের জিনিয়াস ছিলেন।’
তবে মেসি-রোনালদোর মধ্যে কাউকে এগিয়ে রাখেননি সিজার। জানালেন দুজনই নিজেদের স্থানে সেরা।