‘ফুটবল ছাড়া আমার অস্তিত্ব শূন্য’
জগন্নাথ বিশ্বাস | ২৩ অক্টোবর, ২০২০ ০০:০০
এডসন আরান্তেস দো নাসিমেন্তো। সবাই চেনে পেলে নামে। নামটা ফুটবলের সমার্থও বটে। যদিও ফুটবলের রাজার নামটা পছন্দ নয়। একবার এক বক্তৃতায় বলেছিলেন, ‘আমার নাম অনেক লম্বা। এডসন আরান্তেস দো নাসিমেন্তো একবার বলা শুরু হলে আর শেষ হতে চায় না। আমার যদিও এত বড় নাম পছন্দ নয়। আমি শহরের শিশু-কিশোরদের সঙ্গে ফুটবল খেলতাম। তাদের কেউ একজন আমাকে পেলে বলে ডাকত। আমি প্রতিবাদ করতাম ‘না, পেলে না, আমাকে পেলে নামে ডেকো না। আমার নাম এডসন। যারা আমায় পেলে নামে ডাকত, আমি তাদের সঙ্গে মারামারিও করতাম। স্কুলে আমাকে আসলে পেলে নামে খ্যাপানো হতো।’
এভাবেই এডসন নামটা হারিয়ে গেছে পেলের জীবন থেকে। বাবা চেয়েছিলেন ছেলে বিজ্ঞানী হোক। সে কারণেই সম্ভবত বিজ্ঞানী টমাস এডিসনের নামের সঙ্গে মিলিয়ে নামও রেখেছিলেন। দোনদিনহোর সেই চাওয়া পূরণ হয়নি। বাবাকে অনুসরণ করে ফুটবলার হন পেলে। ছোটবেলায় মোজার মধ্যে কাগজ ভরে খেলতেন। তা দেখে বাবার বন্ধু সোসা একটি চামড়ার বল কিনে দেন। বয়স তখন ছয়। জন্মদিনে পাওয়া বলে সেদিনই প্রথম লাথি মারেন। সেই লাথি মারার ১২ বছর পর প্রথম বিশ্বকাপ খেলেন পেলে। তারুণ্যে অনুপ্রাণিত হতেন বাবা দোনদিনহোকে দেখে। পরে ব্রাসিলিয়ার মাঝমাঠের ফরোয়ার্ড জিজিনহোকে আদর্শ করে এগিয়েছিলেন তিনি। ‘আমার চোখে জিজিনহো ব্রাজিলের সর্বশ্রেষ্ঠ ফুটবলার’ বলেন পেলে।
ব্রাজিলের হয়ে টানা তিন বিশ্বকাপ জিতে জুলেরিমে কাপ চিরস্থায়ী করেছিলেন পেলে (১৯৫৮, ১৯৬২ ও ১৯৭০ সালের বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন ব্রাজিল)। হাজার গোলের রেকর্ড আছে তার। কিন্তু সব অর্জন ছাপিয়ে পেলে হলেন ফুটবলের জাদুকর। তিনি যদিও বিনয়ের সঙ্গে বলেন, ‘অনেকে আমায় জাদুকর ভেবে ভুল করে। কেন করে আমি জানি না। তবে এটা জানি, ফুটবলের জন্যই আমাকে চেনে সবাই। ফুটবল ছাড়া আমার অস্তিত্ব শূন্য।’ একেবারে সত্যি কথা। পেলে অর্থ, বিত্ত, খ্যাতি সব পেয়েছেন ফুটবলের জন্য। তার জন্য ফুটবল কী পেয়েছে? ম্যাজিক। ববি চার্লটন বলেছিলেন, ‘মাঝে মাঝে ভাবি পেলের মতো ম্যাজিশিয়ানের জন্যই ফুটবল খেলার অবিষ্কার হয়েছিল।’
পেলের সঙ্গে হাত মেলাতে পেরে গর্ববোধ করেছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রিগ্যান। হোয়াইট হাউজে তাকে অভ্যর্থনা জানিয়ে বলেছিলেন, ‘আমার নাম রোনাল্ড রিগ্যান। আমি আমেরিকার প্রেসিডেন্ট। আপনার পরিচয় দেওয়ার দরকার নেই। কারণ পেলেকে সবাই চেনে।’
আজ সেই ফুটবল সম্রাটের ৮০তম জন্মদিন। আশির পরে আরও একটা শূন্য দিলে হয় ৮০০। যেখানেই থাকুন রোনাল্ড রিগ্যান নিশ্চিত থাকতে পারেন, ফুটবল থাকলে ৮০০ বছর পরেও পেলেকে এক ডাকেই চিনবে সবাই।
শেয়ার করুন
জগন্নাথ বিশ্বাস | ২৩ অক্টোবর, ২০২০ ০০:০০

এডসন আরান্তেস দো নাসিমেন্তো। সবাই চেনে পেলে নামে। নামটা ফুটবলের সমার্থও বটে। যদিও ফুটবলের রাজার নামটা পছন্দ নয়। একবার এক বক্তৃতায় বলেছিলেন, ‘আমার নাম অনেক লম্বা। এডসন আরান্তেস দো নাসিমেন্তো একবার বলা শুরু হলে আর শেষ হতে চায় না। আমার যদিও এত বড় নাম পছন্দ নয়। আমি শহরের শিশু-কিশোরদের সঙ্গে ফুটবল খেলতাম। তাদের কেউ একজন আমাকে পেলে বলে ডাকত। আমি প্রতিবাদ করতাম ‘না, পেলে না, আমাকে পেলে নামে ডেকো না। আমার নাম এডসন। যারা আমায় পেলে নামে ডাকত, আমি তাদের সঙ্গে মারামারিও করতাম। স্কুলে আমাকে আসলে পেলে নামে খ্যাপানো হতো।’
এভাবেই এডসন নামটা হারিয়ে গেছে পেলের জীবন থেকে। বাবা চেয়েছিলেন ছেলে বিজ্ঞানী হোক। সে কারণেই সম্ভবত বিজ্ঞানী টমাস এডিসনের নামের সঙ্গে মিলিয়ে নামও রেখেছিলেন। দোনদিনহোর সেই চাওয়া পূরণ হয়নি। বাবাকে অনুসরণ করে ফুটবলার হন পেলে। ছোটবেলায় মোজার মধ্যে কাগজ ভরে খেলতেন। তা দেখে বাবার বন্ধু সোসা একটি চামড়ার বল কিনে দেন। বয়স তখন ছয়। জন্মদিনে পাওয়া বলে সেদিনই প্রথম লাথি মারেন। সেই লাথি মারার ১২ বছর পর প্রথম বিশ্বকাপ খেলেন পেলে। তারুণ্যে অনুপ্রাণিত হতেন বাবা দোনদিনহোকে দেখে। পরে ব্রাসিলিয়ার মাঝমাঠের ফরোয়ার্ড জিজিনহোকে আদর্শ করে এগিয়েছিলেন তিনি। ‘আমার চোখে জিজিনহো ব্রাজিলের সর্বশ্রেষ্ঠ ফুটবলার’ বলেন পেলে।
ব্রাজিলের হয়ে টানা তিন বিশ্বকাপ জিতে জুলেরিমে কাপ চিরস্থায়ী করেছিলেন পেলে (১৯৫৮, ১৯৬২ ও ১৯৭০ সালের বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন ব্রাজিল)। হাজার গোলের রেকর্ড আছে তার। কিন্তু সব অর্জন ছাপিয়ে পেলে হলেন ফুটবলের জাদুকর। তিনি যদিও বিনয়ের সঙ্গে বলেন, ‘অনেকে আমায় জাদুকর ভেবে ভুল করে। কেন করে আমি জানি না। তবে এটা জানি, ফুটবলের জন্যই আমাকে চেনে সবাই। ফুটবল ছাড়া আমার অস্তিত্ব শূন্য।’ একেবারে সত্যি কথা। পেলে অর্থ, বিত্ত, খ্যাতি সব পেয়েছেন ফুটবলের জন্য। তার জন্য ফুটবল কী পেয়েছে? ম্যাজিক। ববি চার্লটন বলেছিলেন, ‘মাঝে মাঝে ভাবি পেলের মতো ম্যাজিশিয়ানের জন্যই ফুটবল খেলার অবিষ্কার হয়েছিল।’
পেলের সঙ্গে হাত মেলাতে পেরে গর্ববোধ করেছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রিগ্যান। হোয়াইট হাউজে তাকে অভ্যর্থনা জানিয়ে বলেছিলেন, ‘আমার নাম রোনাল্ড রিগ্যান। আমি আমেরিকার প্রেসিডেন্ট। আপনার পরিচয় দেওয়ার দরকার নেই। কারণ পেলেকে সবাই চেনে।’
আজ সেই ফুটবল সম্রাটের ৮০তম জন্মদিন। আশির পরে আরও একটা শূন্য দিলে হয় ৮০০। যেখানেই থাকুন রোনাল্ড রিগ্যান নিশ্চিত থাকতে পারেন, ফুটবল থাকলে ৮০০ বছর পরেও পেলেকে এক ডাকেই চিনবে সবাই।