হনুমা বিহারি মানে নির্ভরতা
ক্রীড়া ডেস্ক | ১৩ জানুয়ারি, ২০২১ ০০:০০
নামটাই আলাদা। পুরোটা শুনলে আরও অন্যরকম লাগবে। আপনি হয়ত ভাববেন ‘গেদে হনুমা বিহারি’ আবার কারও নাম হয় নাকি? তবে আপনি যাই ভাবুন হনুমা বিহারির তাতে কিছু আসে যায় না। নামে এবং কাজেও তিনি যে সবার থেকে আলাদা এটাই সত্য।
১৯৯৩ সালের ১৩ অক্টোবর অন্ধ্রপ্রদেশের কাকিনাড়ায় জন্ম হনুমার। বাবা সত্যনারায়ণ ছিলেন সাধারণ চাকুরে। মা বিজয়লক্ষ্মী গৃহবধূ। মাত্র ১২ বছর বয়সে বাবার মৃত্যু হয়। ফলে সংসারের হাল ধরেন মা। হায়দরাবাদে মেয়েদের একটি জামা-কাপড়ের দোকান করেছিলেন। সেই দোকানের আয়ে বিহারির ক্রিকেটার হওয়ার স্বপ্ন পূরণ হয়। সহজ কথায় মা বিজয়লক্ষ্মী কাপড়ের ব্যবসা না করলে ক্রিকেটার হতে পারতেন না বিহারি।
মাত্র চার বছর বয়সে খেলা শুরু করেন সিডনি টেস্টের নায়ক। যা দেখে হনুমার বাবা ছেলের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে দেন। কিন্তু তার অকাল মৃত্যুতে সেই প্রশিক্ষণ থেমে যেতে পারত। যায়নি, কারণ বিজয়লক্ষ্মী সচেতন ছিলেন। স্বামীর মৃত্যুর পর তার অফিস থেকে বেশ কিছু টাকা পেয়েছিলেন তিনি। সেই টাকায় ছেলেকে ক্রিকেট অনুশীলনের পিচ তৈরি করিয়ে দিয়েছিলেন দূরদর্শী মা। এরপর রাহুল দ্রাবিড় এবং রামকৃষ্ণণ শ্রীধরকে প্রশিক্ষক হিসেবে পেয়েছেন হনুমা। এদের প্রশিক্ষণেই দক্ষ অলরাউন্ডার হয়ে ওঠেন তিনি।
হনুমা বিহারির ঘরোয়া ক্রিকেটে অভিষেক ২০১০ সালে। এর তিন বছর পর আইপিএলে অভিষেক। ২০১২ সালে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপজয়ী দলেও ছিলেন। ঘরোয়া ক্রিকেটে খেলতেন অন্ধ্রপ্রদেশের হয়ে। ৮৮টি ফার্স্ট ক্লাস ম্যাচে করেছেন ৭০৪৬ রান। নিয়মিত আইপিএল খেলেছেন সানরাইজার্স হায়দরাবাদের হয়ে। সবখানেই রান পেয়েছেন। তবুও হনুমার জন্য জাতীয় দলের দুয়ার বন্ধই ছিল। সেই বন্ধ দুয়ার খোলে ২০১৮ সালে। হনুমার টেস্ট অভিষেক হয় ইংল্যান্ডের বিপক্ষে। ওভালে প্রথম টেস্ট ইনিংসে করেছিলেন ৫৬ রান। অফস্পিনে তিন উইকেটও নিয়েছিলেন। এরপর অস্ট্রেলিয়া সফরে তেমন কিছু করতে পারেননি। ২০১৯ সালের উইন্ডিজ সফরে নিজেকে মেলে ধরেন হনুমা। দুই টেস্টের চার ইনিংসে করেন ৩২, ৯৩, ১১১, ৫৩* রান। ক্যারিয়ারে টেস্ট খেলেছেন ১২টি। ৩২.৮৪ গড়ে ৬২৪ রান করেছেন। নিয়েছেন ৫ উইকেট। কিন্তু সবকিছু ছাপিয়ে হনুমাকে টেস্ট ব্যাটসম্যান হিসেবে পরিচিত করেছে রবিবার সিডনির ১৬১ বলে অপরাজিত ২৩ রানের ইনিংসটি। যা ভারতকে জয়ের সমান ড্র উপহার দিয়েছিল।
হনুমা যে টেস্টে সফল হবেন তার ইঙ্গিত ছিল ফার্স্ট ক্লাসে। যেখানে তার গড় ৫৯.৪৫। বিশ্বাস হোক বা না হোক, ফার্স্ট ক্লাসে স্টিভেন স্মিথের ৫৭.২৭ গড়ের চেয়েও এগিয়ে আছেন হনুমা। ব্যাটিংয়ে যার আদর্শ শচিন টেন্ডুলকার। বোলিংয়ে শেন ওয়ার্ন। বলিউডের ছবির ভক্ত হনুমার প্রিয় অভিনেতা শাহরুখ খান। অভিনেত্রী দীপিকা পাড়–কোন। তবে প্রিয় ছবি বাছতে বললে আমির খানের ‘দঙ্গল’ ছবির কথা বলেন। যেখানে লড়াই আছে। হার না মানা প্রস্তুতি আছে। নিজের ক্রিকেটের সঙ্গেও রুপালি পর্দার এসব লড়াই মিলিয়ে দিয়েছেন হনুমা। মা বিজয়লক্ষ্মী ছেলেকে আদর করে ডাকেন ‘কন্ন’ নামে। তেলেগু ভাষায় ‘কন্ন’ শব্দের মানে কী আমরা জানি না। তবে সিডনি টেস্টের পর হনুমা বিহারি শব্দের মানে কী তা জেনে গেছে গোটা দুনিয়া। টেস্টে হনুমা বিহারি মানে নির্ভরতা!
নিজেই বলেছেন বিহারি, ‘টেস্ট খেলার সময় আমি দারুণ সংকল্পবদ্ধ থাকি। সহজে নিজের উইকেট দিতে চাই না। এটা আমার একটা গুণ। আর আমি মনে করি এটাই আমার শক্তি।’
শেয়ার করুন
ক্রীড়া ডেস্ক | ১৩ জানুয়ারি, ২০২১ ০০:০০

নামটাই আলাদা। পুরোটা শুনলে আরও অন্যরকম লাগবে। আপনি হয়ত ভাববেন ‘গেদে হনুমা বিহারি’ আবার কারও নাম হয় নাকি? তবে আপনি যাই ভাবুন হনুমা বিহারির তাতে কিছু আসে যায় না। নামে এবং কাজেও তিনি যে সবার থেকে আলাদা এটাই সত্য।
১৯৯৩ সালের ১৩ অক্টোবর অন্ধ্রপ্রদেশের কাকিনাড়ায় জন্ম হনুমার। বাবা সত্যনারায়ণ ছিলেন সাধারণ চাকুরে। মা বিজয়লক্ষ্মী গৃহবধূ। মাত্র ১২ বছর বয়সে বাবার মৃত্যু হয়। ফলে সংসারের হাল ধরেন মা। হায়দরাবাদে মেয়েদের একটি জামা-কাপড়ের দোকান করেছিলেন। সেই দোকানের আয়ে বিহারির ক্রিকেটার হওয়ার স্বপ্ন পূরণ হয়। সহজ কথায় মা বিজয়লক্ষ্মী কাপড়ের ব্যবসা না করলে ক্রিকেটার হতে পারতেন না বিহারি।
মাত্র চার বছর বয়সে খেলা শুরু করেন সিডনি টেস্টের নায়ক। যা দেখে হনুমার বাবা ছেলের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে দেন। কিন্তু তার অকাল মৃত্যুতে সেই প্রশিক্ষণ থেমে যেতে পারত। যায়নি, কারণ বিজয়লক্ষ্মী সচেতন ছিলেন। স্বামীর মৃত্যুর পর তার অফিস থেকে বেশ কিছু টাকা পেয়েছিলেন তিনি। সেই টাকায় ছেলেকে ক্রিকেট অনুশীলনের পিচ তৈরি করিয়ে দিয়েছিলেন দূরদর্শী মা। এরপর রাহুল দ্রাবিড় এবং রামকৃষ্ণণ শ্রীধরকে প্রশিক্ষক হিসেবে পেয়েছেন হনুমা। এদের প্রশিক্ষণেই দক্ষ অলরাউন্ডার হয়ে ওঠেন তিনি।
হনুমা বিহারির ঘরোয়া ক্রিকেটে অভিষেক ২০১০ সালে। এর তিন বছর পর আইপিএলে অভিষেক। ২০১২ সালে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপজয়ী দলেও ছিলেন। ঘরোয়া ক্রিকেটে খেলতেন অন্ধ্রপ্রদেশের হয়ে। ৮৮টি ফার্স্ট ক্লাস ম্যাচে করেছেন ৭০৪৬ রান। নিয়মিত আইপিএল খেলেছেন সানরাইজার্স হায়দরাবাদের হয়ে। সবখানেই রান পেয়েছেন। তবুও হনুমার জন্য জাতীয় দলের দুয়ার বন্ধই ছিল। সেই বন্ধ দুয়ার খোলে ২০১৮ সালে। হনুমার টেস্ট অভিষেক হয় ইংল্যান্ডের বিপক্ষে। ওভালে প্রথম টেস্ট ইনিংসে করেছিলেন ৫৬ রান। অফস্পিনে তিন উইকেটও নিয়েছিলেন। এরপর অস্ট্রেলিয়া সফরে তেমন কিছু করতে পারেননি। ২০১৯ সালের উইন্ডিজ সফরে নিজেকে মেলে ধরেন হনুমা। দুই টেস্টের চার ইনিংসে করেন ৩২, ৯৩, ১১১, ৫৩* রান। ক্যারিয়ারে টেস্ট খেলেছেন ১২টি। ৩২.৮৪ গড়ে ৬২৪ রান করেছেন। নিয়েছেন ৫ উইকেট। কিন্তু সবকিছু ছাপিয়ে হনুমাকে টেস্ট ব্যাটসম্যান হিসেবে পরিচিত করেছে রবিবার সিডনির ১৬১ বলে অপরাজিত ২৩ রানের ইনিংসটি। যা ভারতকে জয়ের সমান ড্র উপহার দিয়েছিল।
হনুমা যে টেস্টে সফল হবেন তার ইঙ্গিত ছিল ফার্স্ট ক্লাসে। যেখানে তার গড় ৫৯.৪৫। বিশ্বাস হোক বা না হোক, ফার্স্ট ক্লাসে স্টিভেন স্মিথের ৫৭.২৭ গড়ের চেয়েও এগিয়ে আছেন হনুমা। ব্যাটিংয়ে যার আদর্শ শচিন টেন্ডুলকার। বোলিংয়ে শেন ওয়ার্ন। বলিউডের ছবির ভক্ত হনুমার প্রিয় অভিনেতা শাহরুখ খান। অভিনেত্রী দীপিকা পাড়–কোন। তবে প্রিয় ছবি বাছতে বললে আমির খানের ‘দঙ্গল’ ছবির কথা বলেন। যেখানে লড়াই আছে। হার না মানা প্রস্তুতি আছে। নিজের ক্রিকেটের সঙ্গেও রুপালি পর্দার এসব লড়াই মিলিয়ে দিয়েছেন হনুমা। মা বিজয়লক্ষ্মী ছেলেকে আদর করে ডাকেন ‘কন্ন’ নামে। তেলেগু ভাষায় ‘কন্ন’ শব্দের মানে কী আমরা জানি না। তবে সিডনি টেস্টের পর হনুমা বিহারি শব্দের মানে কী তা জেনে গেছে গোটা দুনিয়া। টেস্টে হনুমা বিহারি মানে নির্ভরতা!
নিজেই বলেছেন বিহারি, ‘টেস্ট খেলার সময় আমি দারুণ সংকল্পবদ্ধ থাকি। সহজে নিজের উইকেট দিতে চাই না। এটা আমার একটা গুণ। আর আমি মনে করি এটাই আমার শক্তি।’