ক্রিকেটারদের জন্য নতুন চুক্তির নীতিমালা হচ্ছে
ক্রীড়া প্রতিবেদক | ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ ০০:০০
উইন্ডিজের বিপক্ষে মিরপুর টেস্টে মেহেদী হাসান মিরাজ যদি বাংলাদেশকে জিতিয়েই দিতেন, তবে এত কিছু হতো কিনা সন্দেহ। বাংলাদেশের চিরায়ত নিয়মের মতো এক জয়ে মাটিচাপা পড়ে যেত আসল সমস্যাগুলো। তা হয়নি বলেই অনেক সমস্যা সামনে এসেছে। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) প্রধান নাজমুল হাসান পাপন অন্তত এমনটাই মনে করেন। সবচেয়ে বড় সমস্যা হয়ে উঠেছে সাকিব আল হাসানের শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টেস্ট সিরিজ না খেলে ছুটি নিয়ে আইপিএল খেলতে চাওয়া। আর এই এক সমস্যার সমাধান করতে গিয়েই ক্রিকেটারদের সঙ্গে কেন্দ্রীয় চুক্তির নতুন নীতিমালা ঠিক করছে বিসিবি। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজ শেষেই ক্রিকেটারদের সঙ্গে ওই চুক্তি করা হবে। তাতে ক্রিকেটারদের আর বাঁধাধরা নিয়মের মধ্যে রাখবে না বোর্ড। কারও মন চাইলে সে দেশের হয়ে খেলবে নয়তো বিভিন্ন দেশের ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে। কিন্তু কোনো সিরিজের আগে হুট করে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে না, দেশের হয়ে খেলতে না চাইলে জানাতে হবে চুক্তির সময়েই।
আইপিএল খেলার জন্য সাকিবের শ্রীলঙ্কা সিরিজ না খেলার সিদ্ধান্তে তোলপাড় বাংলাদেশ ক্রিকেটাঙ্গন। সাকিবের ওই সিদ্ধান্তের পর গতকাল প্রথম সংবাদ মাধ্যমের মুখোমুখি হন পাপন। এর আগে নিজেদের মধ্যে বোর্ড মিটিং করেছেন। গুঞ্জন ছিল এই সভাতেই সাকিবকে টেস্ট চুক্তি থেকে সরিয়ে দেওয়া হবে। কিন্তু পাপন জানালেন সাকিবের ওই ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। আজ সকালে সিঙ্গাপুর এয়ারলাইনসে একটি উড়ালে নিউজিল্যান্ডের উদ্দেশে দেশ ছাড়বে বাংলাদেশ দল। নিউজিল্যান্ড সিরিজ, ফিউচার ট্যুর অনুযায়ী বাকি থাকা বিভিন্ন সিরিজ, বিশেষ করে ক্রিকেটারদের সঙ্গে নতুন চক্রে চুক্তির বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছে বোর্ড। নিউজিল্যান্ড সিরিজের পরই নতুন চুক্তিতে ক্রিকেটারদের জন্য যে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার সুযোগ করে দিচ্ছে বিসিবি। ইংল্যান্ড, নিউজিল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ার যেমন ক্রিকেটারদের সঙ্গে আগে থেকেই উন্মুক্ত চুক্তি থাকে সেই পথেই হাঁটছে বিসিবি। কারণ আগের চুক্তিগুলোর মতো ভবিষ্যতে ক্রিকেটারদের কাছে ‘জিম্মি’ থাকতে চায় না বোর্ড। সিরিজের আগে ক্রিকেটার হারিয়ে বিপদে না পড়ার জন্যই নতুন পথে হাঁটছেন পাপন। বললেন, ‘জিম্মি থাকার বিষয়টা একেবারে অস্বীকার করার পথ নেই। এটা এর আগেও যে হয়নি তা না। তবে এখন একটা ব্যাপারে আমরা একদম পরিষ্কার- কাউকে জোর করে কোথাও পাঠাব না, যারা খেলতে চায় না তারা খেলবে না। আমরা চাই সবাই খেলুক। তবে কারও যদি জাতীয় দলের চেয়ে অন্য কোথাও খেলতে ভালো লাগে তাহলে তারা যেতে পারে, কোনো বাধা নেই। এই বার্তাটা সবার জন্য, কেবল সাকিব আল হাসানের জন্য না, সবার জন্য।’
নতুন চুক্তি কেমন হবে এ ব্যাপারে বোর্ড সভাপতি বলেন, ‘আমরা আজ এ ব্যাপারেও আলোচনা করেছি, আমরা ওদের (জাতীয় দলের ক্রিকেটারদের সঙ্গে) সঙ্গে একটা নতুন চুক্তি তৈরি করব। ওখানে পরিষ্কারভাবে লেখা থাকবে যে কে কোন ফরম্যাট খেলতে চায়, তাদের বলতে হবে। এবং এটাও জানতে হবে তাদের যদি ঐ সময়ে অন্য কোনো খেলা থাকে তাহলে সেখানে খেলবে নাকি দেশের হয়ে খেলবে। এই কন্ট্র্যাক্টে যারা সই করবে তাদের তো আমরা তখন যেতে দেব না। আগে এটা ছিল টুর্নামেন্টের আগে বা ব্যক্তির পর, এখন আমরা কাগজে-কলমে লিখিত নিয়ে নেব। কারও বলার কিছু থাকবে না, যে দিল না, জোর করে যাচ্ছে এসব বলার কিছু থাকবে না। যে খেলবে না, সে খেলবে না।’
নিজেদের অবস্থান পরিষ্কার করলেও শ্রীলঙ্কা সিরিজে সাকিবকে না পেয়ে মনঃক্ষুণœ বিসিবি প্রধান। একটা ক্রিকেটারের পেছনে বছরের পর বছর ব্যয় করার পর তারা দেশের হয়ে খেলবে না এটা ভাবতেই পারছেন না পাপন। ভেবেছিলেন উইন্ডিজ সিরিজের ব্যর্থতা ভুলতে শ্রীলঙ্কা সিরিজকে আরও গুরুত্ব দিয়ে নেবেন ক্রিকেটাররা। কিন্তু দেখলেন তার ধারণা ভুল। তবে এটাও পরিষ্কার করলেন যে কেউই অপরিহার্য না, ‘না না, (সাকিবের না খেলার সিদ্ধান্তে) ব্রিবত ঠিক না, মন খারাপ। মনটা খারাপ কেন? দেখেন একটা খেলোয়াড়ের পেছনে কম ইনভেস্ট করি না। চুক্তির বাইরে ইনজুরি হলো সবকিছু নিয়ে আমরা ওদের যে সুযোগটা এখন দিই সেটা আগে কখনো চিন্তাই করা যেত না। এই জায়গায় দল এরকম দুইটা টেস্ট ম্যাচ হারার পরে, মানে আমরা টেস্ট ম্যাচ হেরেছি আফগানিস্তানের সঙ্গে, পাকিস্তানের সঙ্গে, ভারতের সঙ্গে। আমরা ওয়েস্ট ইন্ডিজের সঙ্গে নিজেদের মাটিতে পর পর দুই টেস্টে হারলাম। আমার ধারণা ছিল সবাই উঠেপড়ে লাগবে টেস্টটা আমাদের জিততেই হবে। সেই জায়গায় কেউ যদি মনে করে এটা খেলবে না অন্য একটা ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে খেলবে। এরপর আর কিছু বলার থাকে না।’
সাকিবের পথে হেঁটে মোস্তাফিজও এসেছিলেন পাপনের কাছে। আইপিএলের জন্য ছুটি চাওয়ার ব্যাপারে বোর্ড প্রধানের কী সিদ্ধান্ত তা শুনে গেলেন এ পেসার। সাকিবের মতো মোস্তাফিজকেও একই বার্তা দিয়েছেন পাপন। শুধু মোস্তাফিজ না বাকি ক্রিকেটারদেরও একই কথা জানিয়ে দিয়েছেন বোর্ড প্রধান। আক্ষেপ করেই বললেন, ‘আজ দলের যারা বিশ্বমানের হয়েছে তাদের প্রথম ৫-৬ বছরের গড় দেখুন। ভালো ছিল না, ওই সময় কি ওদের দলের বাইরে রেখেছি? এখন তারা বিশ্বমানের হওয়ার পর দেশের হয়ে যখন কিছু করবে এই সময়ে যদিৃআসলে খেলতে হবে বলে খেলা এমনটা আর হবে না। টেস্ট মানসিক ব্যাপার এখানে আগে থেকে প্রস্তুত না থাকলে দরকার নেই। কিন্তু সিরিজের আগে বললে চলবে না আগেই জানাতে হবে। এজন্যই নতুন চুক্তি। দলে কেউ অপরিহার্য না, আবার তাদের ছাড়া দল হবে না এমনও না। চুক্তি নীতিমালা তৈরি হোক এরপর সব ঠিক হয়ে যাবে।’
শেয়ার করুন
ক্রীড়া প্রতিবেদক | ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ ০০:০০

উইন্ডিজের বিপক্ষে মিরপুর টেস্টে মেহেদী হাসান মিরাজ যদি বাংলাদেশকে জিতিয়েই দিতেন, তবে এত কিছু হতো কিনা সন্দেহ। বাংলাদেশের চিরায়ত নিয়মের মতো এক জয়ে মাটিচাপা পড়ে যেত আসল সমস্যাগুলো। তা হয়নি বলেই অনেক সমস্যা সামনে এসেছে। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) প্রধান নাজমুল হাসান পাপন অন্তত এমনটাই মনে করেন। সবচেয়ে বড় সমস্যা হয়ে উঠেছে সাকিব আল হাসানের শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টেস্ট সিরিজ না খেলে ছুটি নিয়ে আইপিএল খেলতে চাওয়া। আর এই এক সমস্যার সমাধান করতে গিয়েই ক্রিকেটারদের সঙ্গে কেন্দ্রীয় চুক্তির নতুন নীতিমালা ঠিক করছে বিসিবি। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজ শেষেই ক্রিকেটারদের সঙ্গে ওই চুক্তি করা হবে। তাতে ক্রিকেটারদের আর বাঁধাধরা নিয়মের মধ্যে রাখবে না বোর্ড। কারও মন চাইলে সে দেশের হয়ে খেলবে নয়তো বিভিন্ন দেশের ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে। কিন্তু কোনো সিরিজের আগে হুট করে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে না, দেশের হয়ে খেলতে না চাইলে জানাতে হবে চুক্তির সময়েই।
আইপিএল খেলার জন্য সাকিবের শ্রীলঙ্কা সিরিজ না খেলার সিদ্ধান্তে তোলপাড় বাংলাদেশ ক্রিকেটাঙ্গন। সাকিবের ওই সিদ্ধান্তের পর গতকাল প্রথম সংবাদ মাধ্যমের মুখোমুখি হন পাপন। এর আগে নিজেদের মধ্যে বোর্ড মিটিং করেছেন। গুঞ্জন ছিল এই সভাতেই সাকিবকে টেস্ট চুক্তি থেকে সরিয়ে দেওয়া হবে। কিন্তু পাপন জানালেন সাকিবের ওই ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। আজ সকালে সিঙ্গাপুর এয়ারলাইনসে একটি উড়ালে নিউজিল্যান্ডের উদ্দেশে দেশ ছাড়বে বাংলাদেশ দল। নিউজিল্যান্ড সিরিজ, ফিউচার ট্যুর অনুযায়ী বাকি থাকা বিভিন্ন সিরিজ, বিশেষ করে ক্রিকেটারদের সঙ্গে নতুন চক্রে চুক্তির বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছে বোর্ড। নিউজিল্যান্ড সিরিজের পরই নতুন চুক্তিতে ক্রিকেটারদের জন্য যে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার সুযোগ করে দিচ্ছে বিসিবি। ইংল্যান্ড, নিউজিল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ার যেমন ক্রিকেটারদের সঙ্গে আগে থেকেই উন্মুক্ত চুক্তি থাকে সেই পথেই হাঁটছে বিসিবি। কারণ আগের চুক্তিগুলোর মতো ভবিষ্যতে ক্রিকেটারদের কাছে ‘জিম্মি’ থাকতে চায় না বোর্ড। সিরিজের আগে ক্রিকেটার হারিয়ে বিপদে না পড়ার জন্যই নতুন পথে হাঁটছেন পাপন। বললেন, ‘জিম্মি থাকার বিষয়টা একেবারে অস্বীকার করার পথ নেই। এটা এর আগেও যে হয়নি তা না। তবে এখন একটা ব্যাপারে আমরা একদম পরিষ্কার- কাউকে জোর করে কোথাও পাঠাব না, যারা খেলতে চায় না তারা খেলবে না। আমরা চাই সবাই খেলুক। তবে কারও যদি জাতীয় দলের চেয়ে অন্য কোথাও খেলতে ভালো লাগে তাহলে তারা যেতে পারে, কোনো বাধা নেই। এই বার্তাটা সবার জন্য, কেবল সাকিব আল হাসানের জন্য না, সবার জন্য।’
নতুন চুক্তি কেমন হবে এ ব্যাপারে বোর্ড সভাপতি বলেন, ‘আমরা আজ এ ব্যাপারেও আলোচনা করেছি, আমরা ওদের (জাতীয় দলের ক্রিকেটারদের সঙ্গে) সঙ্গে একটা নতুন চুক্তি তৈরি করব। ওখানে পরিষ্কারভাবে লেখা থাকবে যে কে কোন ফরম্যাট খেলতে চায়, তাদের বলতে হবে। এবং এটাও জানতে হবে তাদের যদি ঐ সময়ে অন্য কোনো খেলা থাকে তাহলে সেখানে খেলবে নাকি দেশের হয়ে খেলবে। এই কন্ট্র্যাক্টে যারা সই করবে তাদের তো আমরা তখন যেতে দেব না। আগে এটা ছিল টুর্নামেন্টের আগে বা ব্যক্তির পর, এখন আমরা কাগজে-কলমে লিখিত নিয়ে নেব। কারও বলার কিছু থাকবে না, যে দিল না, জোর করে যাচ্ছে এসব বলার কিছু থাকবে না। যে খেলবে না, সে খেলবে না।’
নিজেদের অবস্থান পরিষ্কার করলেও শ্রীলঙ্কা সিরিজে সাকিবকে না পেয়ে মনঃক্ষুণœ বিসিবি প্রধান। একটা ক্রিকেটারের পেছনে বছরের পর বছর ব্যয় করার পর তারা দেশের হয়ে খেলবে না এটা ভাবতেই পারছেন না পাপন। ভেবেছিলেন উইন্ডিজ সিরিজের ব্যর্থতা ভুলতে শ্রীলঙ্কা সিরিজকে আরও গুরুত্ব দিয়ে নেবেন ক্রিকেটাররা। কিন্তু দেখলেন তার ধারণা ভুল। তবে এটাও পরিষ্কার করলেন যে কেউই অপরিহার্য না, ‘না না, (সাকিবের না খেলার সিদ্ধান্তে) ব্রিবত ঠিক না, মন খারাপ। মনটা খারাপ কেন? দেখেন একটা খেলোয়াড়ের পেছনে কম ইনভেস্ট করি না। চুক্তির বাইরে ইনজুরি হলো সবকিছু নিয়ে আমরা ওদের যে সুযোগটা এখন দিই সেটা আগে কখনো চিন্তাই করা যেত না। এই জায়গায় দল এরকম দুইটা টেস্ট ম্যাচ হারার পরে, মানে আমরা টেস্ট ম্যাচ হেরেছি আফগানিস্তানের সঙ্গে, পাকিস্তানের সঙ্গে, ভারতের সঙ্গে। আমরা ওয়েস্ট ইন্ডিজের সঙ্গে নিজেদের মাটিতে পর পর দুই টেস্টে হারলাম। আমার ধারণা ছিল সবাই উঠেপড়ে লাগবে টেস্টটা আমাদের জিততেই হবে। সেই জায়গায় কেউ যদি মনে করে এটা খেলবে না অন্য একটা ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে খেলবে। এরপর আর কিছু বলার থাকে না।’
সাকিবের পথে হেঁটে মোস্তাফিজও এসেছিলেন পাপনের কাছে। আইপিএলের জন্য ছুটি চাওয়ার ব্যাপারে বোর্ড প্রধানের কী সিদ্ধান্ত তা শুনে গেলেন এ পেসার। সাকিবের মতো মোস্তাফিজকেও একই বার্তা দিয়েছেন পাপন। শুধু মোস্তাফিজ না বাকি ক্রিকেটারদেরও একই কথা জানিয়ে দিয়েছেন বোর্ড প্রধান। আক্ষেপ করেই বললেন, ‘আজ দলের যারা বিশ্বমানের হয়েছে তাদের প্রথম ৫-৬ বছরের গড় দেখুন। ভালো ছিল না, ওই সময় কি ওদের দলের বাইরে রেখেছি? এখন তারা বিশ্বমানের হওয়ার পর দেশের হয়ে যখন কিছু করবে এই সময়ে যদিৃআসলে খেলতে হবে বলে খেলা এমনটা আর হবে না। টেস্ট মানসিক ব্যাপার এখানে আগে থেকে প্রস্তুত না থাকলে দরকার নেই। কিন্তু সিরিজের আগে বললে চলবে না আগেই জানাতে হবে। এজন্যই নতুন চুক্তি। দলে কেউ অপরিহার্য না, আবার তাদের ছাড়া দল হবে না এমনও না। চুক্তি নীতিমালা তৈরি হোক এরপর সব ঠিক হয়ে যাবে।’