অলিম্পিকে চোখ সীমান্তের
ক্রীড়া প্রতিবেদক | ৮ এপ্রিল, ২০২১ ০০:০০
২০১৬ রিও অলিম্পিকের ওয়াইল্ড কার্ড পাওয়ার সব বন্দোবস্তই করে রেখেছিলেন দেশসেরা ভারোত্তোলক মাবিয়া আক্তার সীমান্ত। কিন্তু সেবার ফেডারেশনের অন্তর্কোন্দলে স্বপ্নের সেই ওয়াইল্ড কার্ড পাওয়া হয়নি। অলিম্পিকে খেলার স্বপ্ন অপূর্ণই থেকে গেছে। ভারোত্তোলনে নিয়মটা একটু অদ্ভুত। এখানে ওয়াইল্ড কার্ড পেতে হলেও যোগ্যতা অর্জন করতে হয়। শর্ত থাকে গেমসের আগে সাতটি আন্তর্জাতিক আসরে নিজের প্রমাণ দেওয়ার। সেই শর্ত পূরণে ১৯ এপ্রিল এশিয়ান ওয়েটলিফটিং চ্যাম্পিয়নশিপে অংশ নিতে উজবেকিস্তানের বিমান ধরার কথা সীমান্তের। সেই আসরে ভালো পারফরম্যান্সের রসদটা অবশ্য কাল বাংলাদেশ গেমসে নিজের ইভেন্টে তিনটি রেকর্ড করে জুগিয়ে নিলেন বাংলাদেশ আনসারের কৃতী এই ভারোত্তোলক। তিন বছর আগে নিজেরই গড়া রেকর্ড পেছনে ফেলে ময়মনসিংহে অনুষ্ঠিত ভারোত্তোলন ডিসিপ্লিনের ৬৪ কেজি ওজন শ্রেণিতে স্ন্যাচ, ক্লিন অ্যান্ড জার্ক ও মোট লিফটে আলাদা আলাদা রেকর্ড গড়েছেন টানা দুই এসএ গেমসের স্বর্ণবিজয়ী সীমান্ত।
২০১৮ সালে আন্তঃবাহিনী আসরে স্ন্যাচে ৭৯ কেজি তুলে রেকর্ড গড়েছিলেন সীমান্ত। কাল স্ন্যাচে তুলেছেন ৮০ কেজি। সেবার ক্লিন অ্যান্ড জার্কে ১০০ কেজি তুলে রেকর্ড করেছিলেন। কাল তুলেছেন এক কেজি বেশি। দুইয়ে মিলে ১৮১ কেজি লিফটও ছাড়িয়ে গেছে নিজের আগের ১৮০ কেজি রেকর্ডকে। এই ইভেন্টে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর লিমা আক্তার মোট ১৩২ কেজি তুলে রুপা এবং সিপাহীবাগ যুব সংঘের লাবণী আক্তার ১১৬ কেজি তুলে ব্রোঞ্জ পেয়েছেন।
দেশে করোনা আঘাত হানার পর কিছুদিন ঘরবন্দি থাকতে হয়েছিল সীমান্তকে। তবে বেশিদিন নিজেকে বসিয়ে রাখার পাত্রী নন ২০১৬ সালে এসএ গেমসে ৬৩ কেজিতে এবং ২০১৯ সালে পোখারায় ৭৬ কেজিতে সোনাজয়ী এই ভারোত্তোলক। কোচ ফারুক হোসেনের অধীনে এনএসসির জিমে নিয়মিতই চালিয়ে গেছেন অনুশীলন। দেশের গণ্ডি ছাড়িয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে চোখ রাখা সীমান্ত আসলে নিজেকে প্রস্তুত করছেন টোকিও অলিম্পিকের জন্য। তার আগে অবশ্য তাকে পেরোতে হচ্ছে বড় বাধা। নিজেই সেটা বললেন, ‘এখানে তিনটি আলাদা রেকর্ড গড়ে নিজেকে আসলে উজবেকিস্তানে এশিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপের জন্য তৈরি করে নিলাম। ওই আসরে খেলতে পারলে এক বছরে আমার টানা সাতটি আন্তর্জাতিক আসরে খেলা হয়ে যাবে। তাতে আমি অলিম্পিকের ওয়াইল্ড কার্ডের জন্য যোগ্য হব।’ সাতটি আসরে খেললেই যে ওয়াইল্ড কার্ড উড়ে এসে ধরা দেবে বিষয়টা তাও না। এরপর তাকে অপেক্ষায় থাকতে হবে আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটির সিদ্ধান্তের জন্য। তবে একটা জায়গায় এগিয়ে থাকবেন সীমান্ত। শর্তপূরণের সাতটি আসরে যে অন্য কারও খেলা হয়নি, ‘আগেরবার সব যোগ্যতা থাকা সত্যেও ফেডারেশনের কোন্দলের কারণে অলিম্পিকে যেতে পারিনি। আশা করছি এবার স্বপ্ন সত্যি হবে।’
কাল অবশ্য নিজের রেকর্ডটা আরও বাড়িয়ে নিতে ক্লিন অ্যান্ড জার্কে ১০৩ কেজি তোলার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন সীমান্ত। সেই চেষ্টা করতে গিয়ে বাঁ হাতের কনুইয়ে ব্যথাও পেয়েছেন তিনি। ময়মনসিংহে প্রাথমিকভাবে স্ক্যানে কোনো ফ্র্যাকচার ধরা পড়েনি। তবে ঢাকায় ফিরে এমআরআই করানোর আগ পর্যন্ত শান্তি পাচ্ছেন না সীমান্ত, ‘চেয়েছিলাম নিজের রেকর্ডটা আরও ওপর দিকে নিয়ে যেতে। কিন্তু লিফট করতে গিয়ে পা পিছলে গেলে বাঁ হাতের কনুইয়ে ভালোই ব্যথা পেয়েছি। ঢাকায় এসে এমআরআই করালে বোঝা যাবে কী অবস্থা।’
গেমসের ভারোত্তোলনে এখন পর্যন্ত তিন দিন খেলা হয়েছে। মোট রেকর্ড হয়েছে ১৬টি। সীমান্তের মতো তিনটি করে রেকর্ড গড়েছেন সাখায়েত হোসেন প্রান্ত। এ ছাড়া একটি করে রেকর্ড আছে আরও ১০ জনের। গতকাল তৃতীয় দিনে ছেলেদের ৮৯ কেজিতে সোনা জয়ের পথে আলাদা আলাদা তিনটি রেকর্ডের মালিক হয়েছেন আনসারের প্রান্ত। স্ন্যাচে ১২৪, ক্লিন অ্যান্ড জার্কে ১৪৯, আর মোট ২৭৩ কেজি তুলে সোনা জয়কে স্মরণীয় করে রাখেন এই ভারোত্তোলক। মেয়েদের ৭১ কেজিতে রেকর্ডসহ সোনা জিতেছেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ফারজানা আক্তার রিয়া। স্ন্যাচে ৬০ কেজি তোলার পর ক্লিন অ্যান্ড জার্কে রেকর্ড ৭৮ কেজি তোলেন তিনি। ছেলেদের ৮১ কেজিতে বাংলাদেশ আনসারের সুমন চন্দ্র রায় মোট ২৬০ কেজি তুলে সোনা জিতলেও স্ন্যাচে রেকর্ড ১১৭ কেজি তুলে রেকর্ড গড়েছেন রুপাজয়ী বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ভারোত্তোলক মনোরঞ্জন রায়।
গতকাল পর্যন্ত নিষ্পত্তি হওয়া ১২ ইভেন্টের ৯টি জিতে এগিয়ে আছে বাংলাদেশ আনসার। বাকি তিনটি ইভেন্টে সেরা হয়েছেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ভারোত্তোলকরা। আজ ও কাল আরও আটটি সোনার নিষ্পত্তি হবে পুরুষ ও মহিলা বিভাগে।
শেয়ার করুন
ক্রীড়া প্রতিবেদক | ৮ এপ্রিল, ২০২১ ০০:০০

২০১৬ রিও অলিম্পিকের ওয়াইল্ড কার্ড পাওয়ার সব বন্দোবস্তই করে রেখেছিলেন দেশসেরা ভারোত্তোলক মাবিয়া আক্তার সীমান্ত। কিন্তু সেবার ফেডারেশনের অন্তর্কোন্দলে স্বপ্নের সেই ওয়াইল্ড কার্ড পাওয়া হয়নি। অলিম্পিকে খেলার স্বপ্ন অপূর্ণই থেকে গেছে। ভারোত্তোলনে নিয়মটা একটু অদ্ভুত। এখানে ওয়াইল্ড কার্ড পেতে হলেও যোগ্যতা অর্জন করতে হয়। শর্ত থাকে গেমসের আগে সাতটি আন্তর্জাতিক আসরে নিজের প্রমাণ দেওয়ার। সেই শর্ত পূরণে ১৯ এপ্রিল এশিয়ান ওয়েটলিফটিং চ্যাম্পিয়নশিপে অংশ নিতে উজবেকিস্তানের বিমান ধরার কথা সীমান্তের। সেই আসরে ভালো পারফরম্যান্সের রসদটা অবশ্য কাল বাংলাদেশ গেমসে নিজের ইভেন্টে তিনটি রেকর্ড করে জুগিয়ে নিলেন বাংলাদেশ আনসারের কৃতী এই ভারোত্তোলক। তিন বছর আগে নিজেরই গড়া রেকর্ড পেছনে ফেলে ময়মনসিংহে অনুষ্ঠিত ভারোত্তোলন ডিসিপ্লিনের ৬৪ কেজি ওজন শ্রেণিতে স্ন্যাচ, ক্লিন অ্যান্ড জার্ক ও মোট লিফটে আলাদা আলাদা রেকর্ড গড়েছেন টানা দুই এসএ গেমসের স্বর্ণবিজয়ী সীমান্ত।
২০১৮ সালে আন্তঃবাহিনী আসরে স্ন্যাচে ৭৯ কেজি তুলে রেকর্ড গড়েছিলেন সীমান্ত। কাল স্ন্যাচে তুলেছেন ৮০ কেজি। সেবার ক্লিন অ্যান্ড জার্কে ১০০ কেজি তুলে রেকর্ড করেছিলেন। কাল তুলেছেন এক কেজি বেশি। দুইয়ে মিলে ১৮১ কেজি লিফটও ছাড়িয়ে গেছে নিজের আগের ১৮০ কেজি রেকর্ডকে। এই ইভেন্টে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর লিমা আক্তার মোট ১৩২ কেজি তুলে রুপা এবং সিপাহীবাগ যুব সংঘের লাবণী আক্তার ১১৬ কেজি তুলে ব্রোঞ্জ পেয়েছেন।
দেশে করোনা আঘাত হানার পর কিছুদিন ঘরবন্দি থাকতে হয়েছিল সীমান্তকে। তবে বেশিদিন নিজেকে বসিয়ে রাখার পাত্রী নন ২০১৬ সালে এসএ গেমসে ৬৩ কেজিতে এবং ২০১৯ সালে পোখারায় ৭৬ কেজিতে সোনাজয়ী এই ভারোত্তোলক। কোচ ফারুক হোসেনের অধীনে এনএসসির জিমে নিয়মিতই চালিয়ে গেছেন অনুশীলন। দেশের গণ্ডি ছাড়িয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে চোখ রাখা সীমান্ত আসলে নিজেকে প্রস্তুত করছেন টোকিও অলিম্পিকের জন্য। তার আগে অবশ্য তাকে পেরোতে হচ্ছে বড় বাধা। নিজেই সেটা বললেন, ‘এখানে তিনটি আলাদা রেকর্ড গড়ে নিজেকে আসলে উজবেকিস্তানে এশিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপের জন্য তৈরি করে নিলাম। ওই আসরে খেলতে পারলে এক বছরে আমার টানা সাতটি আন্তর্জাতিক আসরে খেলা হয়ে যাবে। তাতে আমি অলিম্পিকের ওয়াইল্ড কার্ডের জন্য যোগ্য হব।’ সাতটি আসরে খেললেই যে ওয়াইল্ড কার্ড উড়ে এসে ধরা দেবে বিষয়টা তাও না। এরপর তাকে অপেক্ষায় থাকতে হবে আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটির সিদ্ধান্তের জন্য। তবে একটা জায়গায় এগিয়ে থাকবেন সীমান্ত। শর্তপূরণের সাতটি আসরে যে অন্য কারও খেলা হয়নি, ‘আগেরবার সব যোগ্যতা থাকা সত্যেও ফেডারেশনের কোন্দলের কারণে অলিম্পিকে যেতে পারিনি। আশা করছি এবার স্বপ্ন সত্যি হবে।’
কাল অবশ্য নিজের রেকর্ডটা আরও বাড়িয়ে নিতে ক্লিন অ্যান্ড জার্কে ১০৩ কেজি তোলার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন সীমান্ত। সেই চেষ্টা করতে গিয়ে বাঁ হাতের কনুইয়ে ব্যথাও পেয়েছেন তিনি। ময়মনসিংহে প্রাথমিকভাবে স্ক্যানে কোনো ফ্র্যাকচার ধরা পড়েনি। তবে ঢাকায় ফিরে এমআরআই করানোর আগ পর্যন্ত শান্তি পাচ্ছেন না সীমান্ত, ‘চেয়েছিলাম নিজের রেকর্ডটা আরও ওপর দিকে নিয়ে যেতে। কিন্তু লিফট করতে গিয়ে পা পিছলে গেলে বাঁ হাতের কনুইয়ে ভালোই ব্যথা পেয়েছি। ঢাকায় এসে এমআরআই করালে বোঝা যাবে কী অবস্থা।’
গেমসের ভারোত্তোলনে এখন পর্যন্ত তিন দিন খেলা হয়েছে। মোট রেকর্ড হয়েছে ১৬টি। সীমান্তের মতো তিনটি করে রেকর্ড গড়েছেন সাখায়েত হোসেন প্রান্ত। এ ছাড়া একটি করে রেকর্ড আছে আরও ১০ জনের। গতকাল তৃতীয় দিনে ছেলেদের ৮৯ কেজিতে সোনা জয়ের পথে আলাদা আলাদা তিনটি রেকর্ডের মালিক হয়েছেন আনসারের প্রান্ত। স্ন্যাচে ১২৪, ক্লিন অ্যান্ড জার্কে ১৪৯, আর মোট ২৭৩ কেজি তুলে সোনা জয়কে স্মরণীয় করে রাখেন এই ভারোত্তোলক। মেয়েদের ৭১ কেজিতে রেকর্ডসহ সোনা জিতেছেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ফারজানা আক্তার রিয়া। স্ন্যাচে ৬০ কেজি তোলার পর ক্লিন অ্যান্ড জার্কে রেকর্ড ৭৮ কেজি তোলেন তিনি। ছেলেদের ৮১ কেজিতে বাংলাদেশ আনসারের সুমন চন্দ্র রায় মোট ২৬০ কেজি তুলে সোনা জিতলেও স্ন্যাচে রেকর্ড ১১৭ কেজি তুলে রেকর্ড গড়েছেন রুপাজয়ী বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ভারোত্তোলক মনোরঞ্জন রায়।
গতকাল পর্যন্ত নিষ্পত্তি হওয়া ১২ ইভেন্টের ৯টি জিতে এগিয়ে আছে বাংলাদেশ আনসার। বাকি তিনটি ইভেন্টে সেরা হয়েছেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ভারোত্তোলকরা। আজ ও কাল আরও আটটি সোনার নিষ্পত্তি হবে পুরুষ ও মহিলা বিভাগে।