ডালিয়া এখন শতভাগ কোচ
সুদীপ্ত আনন্দ | ৮ এপ্রিল, ২০২১ ০০:০০
জাতীয় দল থেকে বিদায় নিয়েছিলেন ২০১৮ সালে। তবে খেলা ছাড়েননি। ঘরোয়া আসরে নিয়মিতই অংশ নিয়েছেন। এবার পুরোপুরি খেলোয়াড়ি ক্যারিয়ারে যতি টেনে দিলেন হ্যান্ডবল অঙ্গনের তারকা ডালিয়া আক্তার। খেলোয়াড়ি ক্যারিয়ারেই শুরু করেছিলেন কোচিং। পুরুষ দলকেও কোচিং করাতে দেখা গেছে তাকে। পুরোপুরি খেলা ছেড়ে দেওয়ার পর এখন থেকে পুরোদস্তুর কোচের ভূমিকায় দেখা যাবে তাকে।
বঙ্গবন্ধু নবম বাংলাদেশ গেমসের হ্যান্ডবল ইভেন্ট চলছে কয়েক দিন ধরেই। গতকাল সৈয়দ (ক্যাপ্টেন) এম মনসুর আলী স্টেডিয়ামে দেখা গেল হ্যান্ডবল ফেডারেশনের কর্তাদের ভিড়। তারা জড়ো হয়েছিলেন ‘হ্যান্ডবলের মুখ’ পরিচিতি পাওয়া ডালিয়াকে বিদায় দিতে। ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান কোহিনূরের কথাতেই পরিষ্কার হলো হ্যান্ডবলে ডালিয়ার জনপ্রিয়তা, ‘হ্যান্ডবলের অনেক খেলোয়াড়ের নাম আমি বলতে পারি না। কিন্তু ডালিয়ার নাম সব সময় মনে থাকে। কারণ সভা, সেমিনারে অংশ নিতে যেখানেই যাই সেখানেই হ্যান্ডবলের কথা উঠলে সবাইকে ডালিয়ার কথা বলতে শুনি। ডালিয়া খেলা ছেড়ে দিলেও অন্য ভূমিকায় আমাদের সঙ্গেই থাকবে।’
১৯৯৫ সালে মাদারীপুর জেলার হয়ে জাতীয় পর্যায়ে অভিষেক হয়েছিল সেন্টারব্যাক ডালিয়ার। গতকাল নিজ জেলার হয়েই শেষবারের মতো খেলতে নেমেছিলেন ছোট খেলার এই বড় তারকা। তবে মাঝের দীর্ঘ ২০ বছর ডালিয়া ছিলেন বাংলাদেশ জুট মিলস করপোরেশনের (বিজেএমসি) অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে। এই সংস্থার হয়ে তিনি জিতেছেন ১৮টি জাতীয় পর্যায়ের শিরোপা। মাঝে দুই বছর বিজেএমসির কার্যক্রম স্থগিত থাকায় খেলেছিলেন বাংলাদেশ আনসারে। এবারও বিজেএমসি খেলাধুলা থেকে নিজেদের গুটিয়ে নেওয়ায় ফিরেছিলেন নিজ জেলা মাদারীপুরে, ‘মাদারীপুরের হয়েই শুরু, এই জেলার হয়েই শেষ। নিজেকে তাই সৌভাগ্যবান মনে করি। তবে আমার স্বর্ণসময়টা কেটেছে বিজেএমসির হয়ে। এই সংস্থার হয়ে আমার অনেক প্রাপ্তি।’ জাতীয় হ্যান্ডবল দলের অধিনায়কত্বও করেছেন দীর্ঘদিন। ডালিয়ার অবশ্য আরেকটা পরিচয়ও আছে। যেটা দিতে গর্ববোধ করেন, ‘২০০১ সালে এদেশে মহিলা ফুটবলের প্রচলন হয়। পশ্চিমবঙ্গের একটি দলের সঙ্গে প্রীতি ম্যাচের জন্য গড়া বাংলাদেশ দলের সদস্য ছিলাম আমি। ২০১০ সাল পর্যন্ত টানা জাতীয় দলে খেলি। ২০০৬ সাল থেকে অধিনায়কত্ব করি। ছোট্ট ক্যারিয়ারে ফুটবলার হিসেবেও অনেক প্রাপ্তি আমার। অধিনায়ক হিসেবে ইন্দো-বাংলা গেমসে সোনা জিততে পারাটা বিশাল গর্বের।’
একটা অনাকাক্সিক্ষত ঘটনায় ফুটবল ক্যারিয়ারটা ২০১০-এ থেমে যায় ডালিয়ার। তবে প্রাণের খেলা হ্যান্ডবলটা ঠিকই খেলেছেন। খেলা অবস্থাতেই টুকটাক কোচিংয়ে যুক্ত হয়ে পড়েন। স্কুল পর্যায়ে ভিকারুননিসা স্কুলকেও কোচিং করান তিনি। তবে ২০১৭ সালে জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপে পুরুষ ঢাকা জেলা দলকে কোচিং করানোর মধ্য দিয়ে পেশাদারি কোচিং ক্যারিয়ারের শুরু ডালিয়ার, ‘কোচিংয়ের ওপর ঝোকটা আসলে অনেক দিনের। ফেডারেশনও আমাকে কোচিংয়ের ওপর পড়ালেখার সুযোগ করে দিয়েছে। ২০১২ সালে জার্মানিতে একটা ডিপ্লোমা কোর্স করি। এরপর ২০১৮ সালে জাপানে ইন্টারন্যাশনাল হ্যান্ডবল ফেডারেশনের (আইএইচএফ) ন্যাশনাল টিম কোচিং কোর্সের প্রথম পর্ব করি। সেই কোর্সে ভালো করায় ২০১৯ সালে দক্ষিণ কোরিয়া আইএইচএফ গ্লোবাল কোচেস কোর্সে অংশ নিয়ে কোচিংয়ের ওপর ‘বি’ লাইসেন্স অর্জন করি। দেশের মধ্যে আমিই একমাত্র কোচ হিসেবে বাইরে থেকে এই লাইসেন্স অর্জন করেছি। ২০১৭ সালে ঢাকা জেলাকে কোচিং করানো শুরু করি। এরপর প্রিমিয়ার লিগে ছেলেদের প্রাইম স্পোর্টস ক্লাবকে কোচিং করাই।’ মাঠের সফল এই খেলোয়াড় এখন কোচ হিসেবেও পেতে চান সফলতা। সেই সঙ্গে খেলোয়াড়ি জীবনের একটা আক্ষেপ কোচ হিসেবে ঘোচাতে চান খেলায় নিজেকে জড়িয়ে বিয়ের মতো সামাজিক বন্ধনে আটকে না পড়া ডালিয়া, ‘খেলোয়াড়ি জীবনে আমার অনেক অর্জন। কিন্তু কখনো কোনো পর্যায়েই ভারতকে হারাতে পারিনি। আসলে আমরা তো খুব বেশি খেলার সুযোগই পাই না। এখন কোচ হিসেবে যদি শিষ্যদের দিয়ে ভারতকে কোনো পর্যায়ে হারাতে পারি, সেটা হবে পরম পাওয়া। তাছাড়া স্বপ্ন দেখি আমার কোচিংয়ে দল একদিন এসএ গেমসে সোনা জিতবে। আশা করি ফেডারেশন আমাকে সেই সুযোগ দেবে।’
বর্তমানে সাউথ ব্রিজ স্কুলের ক্রীড়া শিক্ষক হিসেবে কাজ করছেন ডালিয়া। খেলা ছাড়ার কষ্টটা চাপা দিয়ে কোচ হিসেবে সফল হওয়ার স্বপ্নটা সত্যি হলেই হ্যান্ডবলের ইতিহাসে পাকাপাকি লেখা হয়ে যাবে ডালিয়ার নাম।
শেয়ার করুন
সুদীপ্ত আনন্দ | ৮ এপ্রিল, ২০২১ ০০:০০

জাতীয় দল থেকে বিদায় নিয়েছিলেন ২০১৮ সালে। তবে খেলা ছাড়েননি। ঘরোয়া আসরে নিয়মিতই অংশ নিয়েছেন। এবার পুরোপুরি খেলোয়াড়ি ক্যারিয়ারে যতি টেনে দিলেন হ্যান্ডবল অঙ্গনের তারকা ডালিয়া আক্তার। খেলোয়াড়ি ক্যারিয়ারেই শুরু করেছিলেন কোচিং। পুরুষ দলকেও কোচিং করাতে দেখা গেছে তাকে। পুরোপুরি খেলা ছেড়ে দেওয়ার পর এখন থেকে পুরোদস্তুর কোচের ভূমিকায় দেখা যাবে তাকে।
বঙ্গবন্ধু নবম বাংলাদেশ গেমসের হ্যান্ডবল ইভেন্ট চলছে কয়েক দিন ধরেই। গতকাল সৈয়দ (ক্যাপ্টেন) এম মনসুর আলী স্টেডিয়ামে দেখা গেল হ্যান্ডবল ফেডারেশনের কর্তাদের ভিড়। তারা জড়ো হয়েছিলেন ‘হ্যান্ডবলের মুখ’ পরিচিতি পাওয়া ডালিয়াকে বিদায় দিতে। ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান কোহিনূরের কথাতেই পরিষ্কার হলো হ্যান্ডবলে ডালিয়ার জনপ্রিয়তা, ‘হ্যান্ডবলের অনেক খেলোয়াড়ের নাম আমি বলতে পারি না। কিন্তু ডালিয়ার নাম সব সময় মনে থাকে। কারণ সভা, সেমিনারে অংশ নিতে যেখানেই যাই সেখানেই হ্যান্ডবলের কথা উঠলে সবাইকে ডালিয়ার কথা বলতে শুনি। ডালিয়া খেলা ছেড়ে দিলেও অন্য ভূমিকায় আমাদের সঙ্গেই থাকবে।’
১৯৯৫ সালে মাদারীপুর জেলার হয়ে জাতীয় পর্যায়ে অভিষেক হয়েছিল সেন্টারব্যাক ডালিয়ার। গতকাল নিজ জেলার হয়েই শেষবারের মতো খেলতে নেমেছিলেন ছোট খেলার এই বড় তারকা। তবে মাঝের দীর্ঘ ২০ বছর ডালিয়া ছিলেন বাংলাদেশ জুট মিলস করপোরেশনের (বিজেএমসি) অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে। এই সংস্থার হয়ে তিনি জিতেছেন ১৮টি জাতীয় পর্যায়ের শিরোপা। মাঝে দুই বছর বিজেএমসির কার্যক্রম স্থগিত থাকায় খেলেছিলেন বাংলাদেশ আনসারে। এবারও বিজেএমসি খেলাধুলা থেকে নিজেদের গুটিয়ে নেওয়ায় ফিরেছিলেন নিজ জেলা মাদারীপুরে, ‘মাদারীপুরের হয়েই শুরু, এই জেলার হয়েই শেষ। নিজেকে তাই সৌভাগ্যবান মনে করি। তবে আমার স্বর্ণসময়টা কেটেছে বিজেএমসির হয়ে। এই সংস্থার হয়ে আমার অনেক প্রাপ্তি।’ জাতীয় হ্যান্ডবল দলের অধিনায়কত্বও করেছেন দীর্ঘদিন। ডালিয়ার অবশ্য আরেকটা পরিচয়ও আছে। যেটা দিতে গর্ববোধ করেন, ‘২০০১ সালে এদেশে মহিলা ফুটবলের প্রচলন হয়। পশ্চিমবঙ্গের একটি দলের সঙ্গে প্রীতি ম্যাচের জন্য গড়া বাংলাদেশ দলের সদস্য ছিলাম আমি। ২০১০ সাল পর্যন্ত টানা জাতীয় দলে খেলি। ২০০৬ সাল থেকে অধিনায়কত্ব করি। ছোট্ট ক্যারিয়ারে ফুটবলার হিসেবেও অনেক প্রাপ্তি আমার। অধিনায়ক হিসেবে ইন্দো-বাংলা গেমসে সোনা জিততে পারাটা বিশাল গর্বের।’
একটা অনাকাক্সিক্ষত ঘটনায় ফুটবল ক্যারিয়ারটা ২০১০-এ থেমে যায় ডালিয়ার। তবে প্রাণের খেলা হ্যান্ডবলটা ঠিকই খেলেছেন। খেলা অবস্থাতেই টুকটাক কোচিংয়ে যুক্ত হয়ে পড়েন। স্কুল পর্যায়ে ভিকারুননিসা স্কুলকেও কোচিং করান তিনি। তবে ২০১৭ সালে জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপে পুরুষ ঢাকা জেলা দলকে কোচিং করানোর মধ্য দিয়ে পেশাদারি কোচিং ক্যারিয়ারের শুরু ডালিয়ার, ‘কোচিংয়ের ওপর ঝোকটা আসলে অনেক দিনের। ফেডারেশনও আমাকে কোচিংয়ের ওপর পড়ালেখার সুযোগ করে দিয়েছে। ২০১২ সালে জার্মানিতে একটা ডিপ্লোমা কোর্স করি। এরপর ২০১৮ সালে জাপানে ইন্টারন্যাশনাল হ্যান্ডবল ফেডারেশনের (আইএইচএফ) ন্যাশনাল টিম কোচিং কোর্সের প্রথম পর্ব করি। সেই কোর্সে ভালো করায় ২০১৯ সালে দক্ষিণ কোরিয়া আইএইচএফ গ্লোবাল কোচেস কোর্সে অংশ নিয়ে কোচিংয়ের ওপর ‘বি’ লাইসেন্স অর্জন করি। দেশের মধ্যে আমিই একমাত্র কোচ হিসেবে বাইরে থেকে এই লাইসেন্স অর্জন করেছি। ২০১৭ সালে ঢাকা জেলাকে কোচিং করানো শুরু করি। এরপর প্রিমিয়ার লিগে ছেলেদের প্রাইম স্পোর্টস ক্লাবকে কোচিং করাই।’ মাঠের সফল এই খেলোয়াড় এখন কোচ হিসেবেও পেতে চান সফলতা। সেই সঙ্গে খেলোয়াড়ি জীবনের একটা আক্ষেপ কোচ হিসেবে ঘোচাতে চান খেলায় নিজেকে জড়িয়ে বিয়ের মতো সামাজিক বন্ধনে আটকে না পড়া ডালিয়া, ‘খেলোয়াড়ি জীবনে আমার অনেক অর্জন। কিন্তু কখনো কোনো পর্যায়েই ভারতকে হারাতে পারিনি। আসলে আমরা তো খুব বেশি খেলার সুযোগই পাই না। এখন কোচ হিসেবে যদি শিষ্যদের দিয়ে ভারতকে কোনো পর্যায়ে হারাতে পারি, সেটা হবে পরম পাওয়া। তাছাড়া স্বপ্ন দেখি আমার কোচিংয়ে দল একদিন এসএ গেমসে সোনা জিতবে। আশা করি ফেডারেশন আমাকে সেই সুযোগ দেবে।’
বর্তমানে সাউথ ব্রিজ স্কুলের ক্রীড়া শিক্ষক হিসেবে কাজ করছেন ডালিয়া। খেলা ছাড়ার কষ্টটা চাপা দিয়ে কোচ হিসেবে সফল হওয়ার স্বপ্নটা সত্যি হলেই হ্যান্ডবলের ইতিহাসে পাকাপাকি লেখা হয়ে যাবে ডালিয়ার নাম।