লড়াকু ব্রুজনের পরিবর্তনের স্বপ্ন
| ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ০০:০০
‘আমি জাদুকর নই, সাত দিনেই দলের চেহারা আমূল বদলে দেব। তবে কিছু পরিবর্তন আনতে চাইব। সেটা যদি হয়, তা হবে অসাধারণ। আর না হলে তো অনেক বিকল্প পথই খোলা থাকবে।’
গতকাল জাতীয় দলের কোচের দায়িত্ব নিয়ে প্রথম সংবাদ মাধ্যমের সামনে এসে এভাবেই স্বপ্ন দেখালেন অস্কার ব্রুজন। ১ অক্টোবর থেকে শুরু সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে তার অধীনেই বাংলাদেশ অভিযান শুরু করবে। জেমি ডে’কে নির্বাসনে পাঠিয়ে বাফুফে চাইছে দেশের সবচেয়ে সফল দল বসুন্ধরা কিংসের কোচের হাতে স্বল্প সময়ে সাফল্য খুঁজতে। বাস্তবতা বুঝেও বাফুফে ব্রুজনের কাছ থেকে চাইছেন সাধ্যের সেরাটা। নিজেকে যোদ্ধা দাবি করে ব্রুজনই নিরাশ করছেন না। অন্তত এই স্প্যানিশ কোচ শুরুতেই চাইছেন সবাইকে আশ্বস্ত করতে।
আগের চার আসরে যে দলটি সাফের সেমিফাইনালে যেতে ব্যর্থ। যে দলটির র্যাংকিং নেমে গেছে দুশ’র কাছাকাছি (১৮৯তম), পাঁচ জাতির সাফে যে দলটি র্যাংকিংয়ে শেষ দিক থেকে দ্বিতীয়, যে দলটিতে প্রস্তুত করার সময় মোটে এক সপ্তাহ, সেই দলের কোচের মুখে ফাইনাল খেলা বা শিরোপা জয়ের আশার কথা একটু বাড়াবাড়িই। তবে ব্রুজনের কথা শুনেই নতুন করে স্বপ্ন দেখতে চাইবেন অনেকেই। নিজেকে জাদুকর দাবি না করলেও, প্রতিপক্ষ ব্যবচ্ছেদে গিয়ে ব্রুজন বোঝাতে চাইলেন বাংলাদেশেরও আছে ভালো সুযোগ, ‘আমার কাছে বাস্তবতাটা একটু ভিন্ন। বাস্তবতা হলো আমাদের শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে প্রথম ম্যাচটা জিততে হবে। আমার কাছে বাস্তবতা হলো, নেপাল ও মালদ্বীপ আমাদের চেয়ে ভালো দল নয়। তারা আমাদের হারাতে পারে, আমরা ড্র করতে পারি আবার আমরা তাদের হারাতেও পারি। আমি বিশ্বাস করি, এই টুর্নামেন্টে মালদ্বীপ ও নেপালই আমাদের মূল প্রতিপক্ষ। ভারতে আমি অনেক বছর কাজ করেছি। ফিফা র্যাঙ্কিংয়ে হয়ত ওরা অনেক এগিয়ে। তবে টেকনিক্যাল ও ট্যাকটিক্যাল পর্যালোচনা যদি করা হয়, তারা আমাদের মানেরই। তাদের দলে ব্যক্তিগত নৈপুণ্যনির্ভর এমন কোনো খেলোয়াড় নেই, যারা একাই পার্থক্য গড়ে দিতে পারে। শারীরিকভাবে শক্তিশালী কিছু খেলোয়াড় তাদের আছে। ভারতকে একপাশে রেখে আমি আবারও বলছি এখানে আমাদের মূল প্রতিপক্ষ মালদ্বীপ, নেপাল ও শ্রীলঙ্কা।’
দীর্ঘ ১৪ বছরের কোচিং ক্যারিয়ারে ৪৪ বছর বয়সী ব্রুজন কখনই কোনো জাতীয় দলে কাজ করার সুযোগ পাননি। শেষ ১০ বছর তিনি দক্ষিণ এশিয়ায় ঘুরেঘুরে কাজ করেছেন। প্রথম কোনো জাতীয় দলের দায়িত্ব পেয়েই বলেছেন, ‘এই দায়িত্বটা আমার কাছে বিশেষ কিছু। অনেক গর্বের। আমি মনে করি ঈশ্বর প্রদত্ত একটা দায়িত্ব। এই তিন বছরে (বসুন্ধরা কিংস) ক্লাবের হয়ে নিজেকে প্রমাণ করেছি। অনেক কিছু জিতেছি। এখানকার প্রেক্ষাপট একেবারেই ভিন্ন। এখানে আমাকে নতুন করে প্রমাণ করতে হবে। এমন কিছু করতে চাই যাতে সবাই মনে করে এই দায়িত্বের জন্যও আমি সঠিক ব্যক্তি। হাতে বড্ড অল্প সময়। এ সময়ের মধ্যে একটা দলকে আমূল বদলে দেওয়া সম্ভব নয়। কারণ আমি জাদুকর নই। তবে আমি খেলোয়াড়দের চিন্তাধারায় কিছু পরিবর্তন আনতে চাই। মানসিক দিকগুলো নিয়ে কাজ করতে চাই। ছেলেদের বোঝাতে চাই আমরা লুজার না; কয়টা গোল হজম করবÑএটা ভেবে যেন মাঠে না নামি। প্রতিপক্ষ যদি হাই ব্লক করে খেলতে চায়, আমরাও হাই ব্লক করব। তবে আমরা আত্মঘাতী হতে চাই না। এই পরিবর্তনগুলো হলে তো অসাধারণ কিছু হবে। এই পরিবর্তনে যে রাতারাতি আমরা সর্বোচ্চ সাফল্য পাব, তা আমি বিশ্বাস করি না। কিন্তু এই পরিবর্তনে যদি দলের দৃঢ়তা ও আত্মবিশ্বাসের উন্নতি হয়, সেটাও বড় পাওয়া হবে।’
সময় অল্প বলেই কিংসের প্রায় পুরো কোচিং স্টাফ নিয়েই সাফ অভিযান শুরু করবেন ব্রুজন। সহকারী কোচ হিসেবে থাকবেন মাহবুব হোসেন রক্সি ও আসিফুজ্জামান। গোলকিপার নুরুজ্জামান নয়ন। পুরনোদের মধ্যে কেবল থাকছেন জাতীয় অস্ট্রেলিয়ান ট্রেনার ইভান রাজলগ।
তিন বছর জাতীয় দল নিয়ে কাজ করা জেমি ডে’র প্রতি সহমর্মিতা ঝরেছে ব্রুজনের কণ্ঠে, ‘গত দুই বছর তিনি আমার সংস্পর্শে ছিলেন, আমাদের মনিটর করেছেন, দারুণ কাজ করেছেন। সাম্প্রতিক ট্যুরগুলোতে তিনি যে ফল করেছিলেন, সেটা হয়ত বাফুফের প্রত্যাশা মেটাতে পারেনি। কিন্তু আমি নিশ্চিত তিনি সেরা চেষ্টাই করেছেন। একজন সহকর্মীর স্থলাভিষিক্ত হওয়াটা দুঃখের। কিন্তু পরিস্থিতি পুরোপুরি বুঝতে পারছি। তাই অনেক ভেবেচিন্তেই এই দায়িত্ব নিতে এগিয়ে এসেছি। কারণ আমি যোদ্ধা এবং উইনার। তাই আমি খেলব জয়ের জন্য। দলে যাদের নেওয়া হয়েছে তাদের মধ্যে জয়ের এই তাড়নাটা ছড়িয়ে দিতে চাই।’
আজ থেকে ব্রুজন জাতীয় দল নিয়ে মাঠের প্রস্তুতি শুরু করবেন। দল মালদ্বীপ যাবে ২৮ সেপ্টেম্বর। আর ১ অক্টোবর বাংলাদেশের প্রথম ম্যাচ শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে।
শেয়ার করুন
| ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ০০:০০

‘আমি জাদুকর নই, সাত দিনেই দলের চেহারা আমূল বদলে দেব। তবে কিছু পরিবর্তন আনতে চাইব। সেটা যদি হয়, তা হবে অসাধারণ। আর না হলে তো অনেক বিকল্প পথই খোলা থাকবে।’
গতকাল জাতীয় দলের কোচের দায়িত্ব নিয়ে প্রথম সংবাদ মাধ্যমের সামনে এসে এভাবেই স্বপ্ন দেখালেন অস্কার ব্রুজন। ১ অক্টোবর থেকে শুরু সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে তার অধীনেই বাংলাদেশ অভিযান শুরু করবে। জেমি ডে’কে নির্বাসনে পাঠিয়ে বাফুফে চাইছে দেশের সবচেয়ে সফল দল বসুন্ধরা কিংসের কোচের হাতে স্বল্প সময়ে সাফল্য খুঁজতে। বাস্তবতা বুঝেও বাফুফে ব্রুজনের কাছ থেকে চাইছেন সাধ্যের সেরাটা। নিজেকে যোদ্ধা দাবি করে ব্রুজনই নিরাশ করছেন না। অন্তত এই স্প্যানিশ কোচ শুরুতেই চাইছেন সবাইকে আশ্বস্ত করতে।
আগের চার আসরে যে দলটি সাফের সেমিফাইনালে যেতে ব্যর্থ। যে দলটির র্যাংকিং নেমে গেছে দুশ’র কাছাকাছি (১৮৯তম), পাঁচ জাতির সাফে যে দলটি র্যাংকিংয়ে শেষ দিক থেকে দ্বিতীয়, যে দলটিতে প্রস্তুত করার সময় মোটে এক সপ্তাহ, সেই দলের কোচের মুখে ফাইনাল খেলা বা শিরোপা জয়ের আশার কথা একটু বাড়াবাড়িই। তবে ব্রুজনের কথা শুনেই নতুন করে স্বপ্ন দেখতে চাইবেন অনেকেই। নিজেকে জাদুকর দাবি না করলেও, প্রতিপক্ষ ব্যবচ্ছেদে গিয়ে ব্রুজন বোঝাতে চাইলেন বাংলাদেশেরও আছে ভালো সুযোগ, ‘আমার কাছে বাস্তবতাটা একটু ভিন্ন। বাস্তবতা হলো আমাদের শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে প্রথম ম্যাচটা জিততে হবে। আমার কাছে বাস্তবতা হলো, নেপাল ও মালদ্বীপ আমাদের চেয়ে ভালো দল নয়। তারা আমাদের হারাতে পারে, আমরা ড্র করতে পারি আবার আমরা তাদের হারাতেও পারি। আমি বিশ্বাস করি, এই টুর্নামেন্টে মালদ্বীপ ও নেপালই আমাদের মূল প্রতিপক্ষ। ভারতে আমি অনেক বছর কাজ করেছি। ফিফা র্যাঙ্কিংয়ে হয়ত ওরা অনেক এগিয়ে। তবে টেকনিক্যাল ও ট্যাকটিক্যাল পর্যালোচনা যদি করা হয়, তারা আমাদের মানেরই। তাদের দলে ব্যক্তিগত নৈপুণ্যনির্ভর এমন কোনো খেলোয়াড় নেই, যারা একাই পার্থক্য গড়ে দিতে পারে। শারীরিকভাবে শক্তিশালী কিছু খেলোয়াড় তাদের আছে। ভারতকে একপাশে রেখে আমি আবারও বলছি এখানে আমাদের মূল প্রতিপক্ষ মালদ্বীপ, নেপাল ও শ্রীলঙ্কা।’
দীর্ঘ ১৪ বছরের কোচিং ক্যারিয়ারে ৪৪ বছর বয়সী ব্রুজন কখনই কোনো জাতীয় দলে কাজ করার সুযোগ পাননি। শেষ ১০ বছর তিনি দক্ষিণ এশিয়ায় ঘুরেঘুরে কাজ করেছেন। প্রথম কোনো জাতীয় দলের দায়িত্ব পেয়েই বলেছেন, ‘এই দায়িত্বটা আমার কাছে বিশেষ কিছু। অনেক গর্বের। আমি মনে করি ঈশ্বর প্রদত্ত একটা দায়িত্ব। এই তিন বছরে (বসুন্ধরা কিংস) ক্লাবের হয়ে নিজেকে প্রমাণ করেছি। অনেক কিছু জিতেছি। এখানকার প্রেক্ষাপট একেবারেই ভিন্ন। এখানে আমাকে নতুন করে প্রমাণ করতে হবে। এমন কিছু করতে চাই যাতে সবাই মনে করে এই দায়িত্বের জন্যও আমি সঠিক ব্যক্তি। হাতে বড্ড অল্প সময়। এ সময়ের মধ্যে একটা দলকে আমূল বদলে দেওয়া সম্ভব নয়। কারণ আমি জাদুকর নই। তবে আমি খেলোয়াড়দের চিন্তাধারায় কিছু পরিবর্তন আনতে চাই। মানসিক দিকগুলো নিয়ে কাজ করতে চাই। ছেলেদের বোঝাতে চাই আমরা লুজার না; কয়টা গোল হজম করবÑএটা ভেবে যেন মাঠে না নামি। প্রতিপক্ষ যদি হাই ব্লক করে খেলতে চায়, আমরাও হাই ব্লক করব। তবে আমরা আত্মঘাতী হতে চাই না। এই পরিবর্তনগুলো হলে তো অসাধারণ কিছু হবে। এই পরিবর্তনে যে রাতারাতি আমরা সর্বোচ্চ সাফল্য পাব, তা আমি বিশ্বাস করি না। কিন্তু এই পরিবর্তনে যদি দলের দৃঢ়তা ও আত্মবিশ্বাসের উন্নতি হয়, সেটাও বড় পাওয়া হবে।’
সময় অল্প বলেই কিংসের প্রায় পুরো কোচিং স্টাফ নিয়েই সাফ অভিযান শুরু করবেন ব্রুজন। সহকারী কোচ হিসেবে থাকবেন মাহবুব হোসেন রক্সি ও আসিফুজ্জামান। গোলকিপার নুরুজ্জামান নয়ন। পুরনোদের মধ্যে কেবল থাকছেন জাতীয় অস্ট্রেলিয়ান ট্রেনার ইভান রাজলগ।
তিন বছর জাতীয় দল নিয়ে কাজ করা জেমি ডে’র প্রতি সহমর্মিতা ঝরেছে ব্রুজনের কণ্ঠে, ‘গত দুই বছর তিনি আমার সংস্পর্শে ছিলেন, আমাদের মনিটর করেছেন, দারুণ কাজ করেছেন। সাম্প্রতিক ট্যুরগুলোতে তিনি যে ফল করেছিলেন, সেটা হয়ত বাফুফের প্রত্যাশা মেটাতে পারেনি। কিন্তু আমি নিশ্চিত তিনি সেরা চেষ্টাই করেছেন। একজন সহকর্মীর স্থলাভিষিক্ত হওয়াটা দুঃখের। কিন্তু পরিস্থিতি পুরোপুরি বুঝতে পারছি। তাই অনেক ভেবেচিন্তেই এই দায়িত্ব নিতে এগিয়ে এসেছি। কারণ আমি যোদ্ধা এবং উইনার। তাই আমি খেলব জয়ের জন্য। দলে যাদের নেওয়া হয়েছে তাদের মধ্যে জয়ের এই তাড়নাটা ছড়িয়ে দিতে চাই।’
আজ থেকে ব্রুজন জাতীয় দল নিয়ে মাঠের প্রস্তুতি শুরু করবেন। দল মালদ্বীপ যাবে ২৮ সেপ্টেম্বর। আর ১ অক্টোবর বাংলাদেশের প্রথম ম্যাচ শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে।