প্যাট কামিন্স : অস্ট্রেলিয়ার প্রথম ফাস্ট বোলিং অধিনায়ক
ক্রীড়া ডেস্ক | ২৭ নভেম্বর, ২০২১ ০০:০০
স্টিভ স্মিথের নিষেধাজ্ঞার পর থেকেই সঠিক অধিনায়কের খোঁজে ছিল অস্ট্রেলিয়া। ছোট ফরম্যাটে অ্যারন ফিঞ্চকে নিয়ে কোনো অভিযোগ নেই। কিন্তু টেস্টে টিম পেইন ঠিক অজি নেতৃত্বের সঙ্গে যাচ্ছিলেন না। তার ওপর চার বছর আগে এক নারীকে অশ্লীল ছবি ও ক্ষুদেবার্তা পাঠানোর ঘটনা কদিন আগে ফাঁস হওয়ার পর পেইন নিজেই সরে দাঁড়ান অধিনায়কত্ব থেকে। তাই নতুন টেস্ট অধিনায়ক বেছে নিতেই হতো অস্ট্রেলিয়াকে। সহ-অধিনায়ক প্যাট কামিন্সের নামই ঘুরেফিরে আসছিল বেশি। সঙ্গে স্টিভ স্মিথকেও নেতৃত্ব ফিরিয়ে দেওযার কথা বলাবলি হচ্ছিল। ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া দুজনকেই রেখেছেন নেতৃত্বে। ১৪৪ বছরের টেস্ট ইতিহাসে এই প্রথম একজন ফাস্ট বোলারকে পূর্ণ সময়ের জন্য টেস্ট অধিনায়ক করল অস্ট্রেলিয়া। আর কামিন্সের চাহিদা অনুযায়ীই স্টিভ স্মিথকে করা হয়েছে তার ডেপুটি। নতুন নেতৃত্ব জুটির প্রথম অ্যাসাইনমেন্ট ৮ জানুয়ারি থেকে শুরু অ্যাশেজ।
কামিন্সকে নেতৃত্ব দেওয়ার ব্যাপারে সিএ’র প্রধান নির্বাহী নিক হকলে বলেন, ‘প্যাট দারুণ একজন নেতা এবং ক্রিকেটার। সতীর্থদের কাছে ও বেশ সম্মানের। এছাড়া ক্রিকেট জ্ঞান এবং অর্জনের দিক থেকেও কামিন্স বেশ সফল। আমরা সৌভাগ্যবান যে কামিন্সকে সহযোগিতা করার মতো সবচেয়ে অভিজ্ঞ ক্রিকেটার আছে দলে। স্মিথ সহযোগী হিসেবে থাকছে। আমরা বিশ্বাস করি ওরা দুজন সফল হবে।’
নেতৃত্ব পাওয়া কামিন্স নিজেকে গর্বিত ভাবছেন। একই সঙ্গে স্মিথকেই সহযোগী হিসেবে চান সে ব্যাপারেও স্পষ্ট করেছেন, ‘আমাদের জন্য সামনে বিশাল অ্যাশেজ গ্রীষ্ম অপেক্ষা করছে। এই সময়ে এত বড় দায়িত্ব পাওয়াটা আমার জন্য অত্যন্ত গর্বের। আশা করি গত কয়েক বছরে আমরা যে সফল ক্রিকেট খেলেছি আমিও সেই সাফল্য নিয়ে আসতে পারব। আমি বিশ্বাস করি দলকে দেওয়ার মতো যথেষ্ট অভিজ্ঞতা এখন আমার আছে। পেসার অধিনায়ককে সবসময়ই অনেক সমস্যায় পড়তে হয়। আমি সেই সমস্যাগুলো কাটাতে প্রতিজ্ঞ। এজন্য আমি স্টিভ স্মিথকে পাশে চাই। অবশ্যই, অধিনায়ক নির্বাচন করাটা আমাদের কাজ নয়। কিন্তু আমি পরিষ্কার বলেছি যে, আমার নেতৃত্ব দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে স্মিথের দৃষ্টিভঙ্গি দারুণ মিলে। এছাড়া আমার নেতৃত্ব পরিকল্পনার বিশাল অংশ জুড়ে আছে স্মিথ। তাই ওকে সবসময় সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে আমার পাশে চাই। বোর্ডকে ধন্যবাদ যে, ওরা আমার ব্যাখ্যা মেনে নিয়েছে।’ শুধু তাই নয়, কেন স্মিথকে কামিন্স সহ-অধিনায়ক চান তার আরেকটা ব্যাখ্যাও দিয়েছেন, ‘মাঠে এমনো হতে পারে যে খুব গরমের মধ্যে আমাকে বোলিং করতে হচ্ছে। তখন পরিকল্পনা, পরামর্শের ব্যাপারে একজনকে পাশে দরকার। এখানে স্মিথ সেরা প্রার্থী। আমি এজন্যই ওকে চাই।’
এদিকে স্মিথ বলছেন তার নেতৃত্বে ফেরাটা অনেকেই হয়ত ভালো চোখে দেখছে না। কিন্তু অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেটের ভরসা তিনি ফিরিয়ে দিতে চান, ‘অনেকেই হয়ত আমার নেতৃত্বে ফেরা ভালো চোখে দেখছে না। আমি বুঝি এবং মেনেও নিচ্ছি। তবে গত দুই বছরে আমি নিজেকে অনেক বদল করেছি এখন বিশ্বাস করি ভালো নেতা হওয়ার যোগ্যতা আমার আছে।’
জাতীয় দলের অধিনায়ক হওয়ার আগে পেশাদার ক্যারিয়ারে মাত্র একবারই নেতৃত্ব দিয়েছিলেন কামিন্স, নিউ সাউথ ওয়েলস রাজ্য দলকে ওয়ানডে টুর্নামেন্টে। চার ম্যাচের ছোট ওই নেতৃত্ব সফরটা অবশ্য শিরোপা জিতেই শেষ করেছিলেন কামিন্স। বলা হয় অধিনায়ক হিসেবে কেমন করেন সেটা দেখার জন্যই গত মৌসুমে কামিন্সকে নেতৃত্ব দেওয়া হয়। ওই আসর দেখার পর সন্তুষ্ট ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার কর্মকর্তারা। অধিনায়ক নির্দিষ্ট করার জন্য পাঁচ সদস্যের প্যানেল অবশেষে কামিন্সকেই দায়িত্ব দেওয়ার জন্য সম্মত হয়। এতে নিজেদের ক্রিকেট ইতিহাসে উল্টো পথে হাঁটল অস্ট্রেলিয়া। দেশটিতে টেস্ট অধিনায়ক হিসেবে পেস বোলারদের দায়িত্বে রাখে না। সবশেষ ১৯৫৬ সালে মূল অধিনায়ক ইনজুরিতে থাকায় ফাস্ট বোলার রে লিন্ডওয়াল নেতৃত্ব দেন একটি টেস্ট। আর বোলার হিসেবে সর্বশেষ অস্ট্রেলিয়াকে নেতৃত্ব দেন কিংবদন্তি রিচি বেনো, যিনি মূলত ছিলেন অলরাউন্ডার।
টেস্টে ফাস্ট বোলিং অধিনায়ক
(অধিনায়ক হিসেবে যারা অন্তত ৫০ উইকেট নিয়েছেন)
নেতৃত্ব জয় হার ড্র উই. মোট ম্যাচ শিকার
ইমরান খান (পাকিস্তান) ৪৮ ১৪ ৮ ২৬ ১৮৭ ৮৮ ৩৬২
কপিল দেব (ভারত) ৩৪ ৪ ৭ ২৩ ১১১ ১৩১ ৪৩৪
ওয়াসিম আকরাম (পাকিস্তান) ২৫ ১২ ৮ ৫ ১০৭ ১০৪ ৪১৪
শন পোলক (দ. আফ্রিকা) ২৬ ১৪ ৫ ৭ ১০৩ ১০৮ ৪২১
জেসন হোল্ডার (উইন্ডিজ) ৩৭ ১১ ২১ ৫ ১০০ ৫২ ১৩৭
কোর্টনি ওয়ালশ (উইন্ডিজ) ২২ ৬ ৭ ৯ ৮৫ ১৩২ ৫১৯
বব উইলিস (ইংল্যান্ড) ১৮ ৭ ৫ ৬ ৭৭ ৯০ ৩২৫
ওয়াকার ইউনিস (পাকিস্তান) ১৭ ১০ ৭ ০ ৬৭ ৮৭ ৩৭৩
ড্যারেন স্যামি (উইন্ডিজ) ৩০ ৮ ১২ ১০ ৫৭ ৩৮ ৮৪
হিথ স্ট্রিক (জিম্বাবুয়ে) ২১ ৪ ১১ ৬ ৫৬ ৬৫ ২১৬
শেয়ার করুন
ক্রীড়া ডেস্ক | ২৭ নভেম্বর, ২০২১ ০০:০০

স্টিভ স্মিথের নিষেধাজ্ঞার পর থেকেই সঠিক অধিনায়কের খোঁজে ছিল অস্ট্রেলিয়া। ছোট ফরম্যাটে অ্যারন ফিঞ্চকে নিয়ে কোনো অভিযোগ নেই। কিন্তু টেস্টে টিম পেইন ঠিক অজি নেতৃত্বের সঙ্গে যাচ্ছিলেন না। তার ওপর চার বছর আগে এক নারীকে অশ্লীল ছবি ও ক্ষুদেবার্তা পাঠানোর ঘটনা কদিন আগে ফাঁস হওয়ার পর পেইন নিজেই সরে দাঁড়ান অধিনায়কত্ব থেকে। তাই নতুন টেস্ট অধিনায়ক বেছে নিতেই হতো অস্ট্রেলিয়াকে। সহ-অধিনায়ক প্যাট কামিন্সের নামই ঘুরেফিরে আসছিল বেশি। সঙ্গে স্টিভ স্মিথকেও নেতৃত্ব ফিরিয়ে দেওযার কথা বলাবলি হচ্ছিল। ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া দুজনকেই রেখেছেন নেতৃত্বে। ১৪৪ বছরের টেস্ট ইতিহাসে এই প্রথম একজন ফাস্ট বোলারকে পূর্ণ সময়ের জন্য টেস্ট অধিনায়ক করল অস্ট্রেলিয়া। আর কামিন্সের চাহিদা অনুযায়ীই স্টিভ স্মিথকে করা হয়েছে তার ডেপুটি। নতুন নেতৃত্ব জুটির প্রথম অ্যাসাইনমেন্ট ৮ জানুয়ারি থেকে শুরু অ্যাশেজ।
কামিন্সকে নেতৃত্ব দেওয়ার ব্যাপারে সিএ’র প্রধান নির্বাহী নিক হকলে বলেন, ‘প্যাট দারুণ একজন নেতা এবং ক্রিকেটার। সতীর্থদের কাছে ও বেশ সম্মানের। এছাড়া ক্রিকেট জ্ঞান এবং অর্জনের দিক থেকেও কামিন্স বেশ সফল। আমরা সৌভাগ্যবান যে কামিন্সকে সহযোগিতা করার মতো সবচেয়ে অভিজ্ঞ ক্রিকেটার আছে দলে। স্মিথ সহযোগী হিসেবে থাকছে। আমরা বিশ্বাস করি ওরা দুজন সফল হবে।’
নেতৃত্ব পাওয়া কামিন্স নিজেকে গর্বিত ভাবছেন। একই সঙ্গে স্মিথকেই সহযোগী হিসেবে চান সে ব্যাপারেও স্পষ্ট করেছেন, ‘আমাদের জন্য সামনে বিশাল অ্যাশেজ গ্রীষ্ম অপেক্ষা করছে। এই সময়ে এত বড় দায়িত্ব পাওয়াটা আমার জন্য অত্যন্ত গর্বের। আশা করি গত কয়েক বছরে আমরা যে সফল ক্রিকেট খেলেছি আমিও সেই সাফল্য নিয়ে আসতে পারব। আমি বিশ্বাস করি দলকে দেওয়ার মতো যথেষ্ট অভিজ্ঞতা এখন আমার আছে। পেসার অধিনায়ককে সবসময়ই অনেক সমস্যায় পড়তে হয়। আমি সেই সমস্যাগুলো কাটাতে প্রতিজ্ঞ। এজন্য আমি স্টিভ স্মিথকে পাশে চাই। অবশ্যই, অধিনায়ক নির্বাচন করাটা আমাদের কাজ নয়। কিন্তু আমি পরিষ্কার বলেছি যে, আমার নেতৃত্ব দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে স্মিথের দৃষ্টিভঙ্গি দারুণ মিলে। এছাড়া আমার নেতৃত্ব পরিকল্পনার বিশাল অংশ জুড়ে আছে স্মিথ। তাই ওকে সবসময় সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে আমার পাশে চাই। বোর্ডকে ধন্যবাদ যে, ওরা আমার ব্যাখ্যা মেনে নিয়েছে।’ শুধু তাই নয়, কেন স্মিথকে কামিন্স সহ-অধিনায়ক চান তার আরেকটা ব্যাখ্যাও দিয়েছেন, ‘মাঠে এমনো হতে পারে যে খুব গরমের মধ্যে আমাকে বোলিং করতে হচ্ছে। তখন পরিকল্পনা, পরামর্শের ব্যাপারে একজনকে পাশে দরকার। এখানে স্মিথ সেরা প্রার্থী। আমি এজন্যই ওকে চাই।’
এদিকে স্মিথ বলছেন তার নেতৃত্বে ফেরাটা অনেকেই হয়ত ভালো চোখে দেখছে না। কিন্তু অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেটের ভরসা তিনি ফিরিয়ে দিতে চান, ‘অনেকেই হয়ত আমার নেতৃত্বে ফেরা ভালো চোখে দেখছে না। আমি বুঝি এবং মেনেও নিচ্ছি। তবে গত দুই বছরে আমি নিজেকে অনেক বদল করেছি এখন বিশ্বাস করি ভালো নেতা হওয়ার যোগ্যতা আমার আছে।’
জাতীয় দলের অধিনায়ক হওয়ার আগে পেশাদার ক্যারিয়ারে মাত্র একবারই নেতৃত্ব দিয়েছিলেন কামিন্স, নিউ সাউথ ওয়েলস রাজ্য দলকে ওয়ানডে টুর্নামেন্টে। চার ম্যাচের ছোট ওই নেতৃত্ব সফরটা অবশ্য শিরোপা জিতেই শেষ করেছিলেন কামিন্স। বলা হয় অধিনায়ক হিসেবে কেমন করেন সেটা দেখার জন্যই গত মৌসুমে কামিন্সকে নেতৃত্ব দেওয়া হয়। ওই আসর দেখার পর সন্তুষ্ট ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার কর্মকর্তারা। অধিনায়ক নির্দিষ্ট করার জন্য পাঁচ সদস্যের প্যানেল অবশেষে কামিন্সকেই দায়িত্ব দেওয়ার জন্য সম্মত হয়। এতে নিজেদের ক্রিকেট ইতিহাসে উল্টো পথে হাঁটল অস্ট্রেলিয়া। দেশটিতে টেস্ট অধিনায়ক হিসেবে পেস বোলারদের দায়িত্বে রাখে না। সবশেষ ১৯৫৬ সালে মূল অধিনায়ক ইনজুরিতে থাকায় ফাস্ট বোলার রে লিন্ডওয়াল নেতৃত্ব দেন একটি টেস্ট। আর বোলার হিসেবে সর্বশেষ অস্ট্রেলিয়াকে নেতৃত্ব দেন কিংবদন্তি রিচি বেনো, যিনি মূলত ছিলেন অলরাউন্ডার।
টেস্টে ফাস্ট বোলিং অধিনায়ক
(অধিনায়ক হিসেবে যারা অন্তত ৫০ উইকেট নিয়েছেন)
নেতৃত্ব জয় হার ড্র উই. মোট ম্যাচ শিকার
ইমরান খান (পাকিস্তান) ৪৮ ১৪ ৮ ২৬ ১৮৭ ৮৮ ৩৬২
কপিল দেব (ভারত) ৩৪ ৪ ৭ ২৩ ১১১ ১৩১ ৪৩৪
ওয়াসিম আকরাম (পাকিস্তান) ২৫ ১২ ৮ ৫ ১০৭ ১০৪ ৪১৪
শন পোলক (দ. আফ্রিকা) ২৬ ১৪ ৫ ৭ ১০৩ ১০৮ ৪২১
জেসন হোল্ডার (উইন্ডিজ) ৩৭ ১১ ২১ ৫ ১০০ ৫২ ১৩৭
কোর্টনি ওয়ালশ (উইন্ডিজ) ২২ ৬ ৭ ৯ ৮৫ ১৩২ ৫১৯
বব উইলিস (ইংল্যান্ড) ১৮ ৭ ৫ ৬ ৭৭ ৯০ ৩২৫
ওয়াকার ইউনিস (পাকিস্তান) ১৭ ১০ ৭ ০ ৬৭ ৮৭ ৩৭৩
ড্যারেন স্যামি (উইন্ডিজ) ৩০ ৮ ১২ ১০ ৫৭ ৩৮ ৮৪
হিথ স্ট্রিক (জিম্বাবুয়ে) ২১ ৪ ১১ ৬ ৫৬ ৬৫ ২১৬