অ্যাস্টন ভিলার সাফল্য নেই, তো কী হয়েছে
সুদীপ্ত আনন্দ, বার্মিংহাম থেকে | ৬ আগস্ট, ২০২২ ০০:০০
শিরোপা-সাফল্য থেকে অনেক দূরে বহু দিন ধরেই। তারপরও অ্যাস্টন ভিলা বার্মিংহামবাসীর হৃদয়ের বড় জায়গাজুড়ে। এই শহরে বার্মিংহাম ফুটবল ক্লাব আছে। আছে ওয়েস্ট ব্রুমউইচ এফসি। তবে শহরের বেশিরভাগ মানুষ অ্যাস্টন ভিলাতেই মশগুল। ইংল্যান্ডের ইতিহাসের অন্যতম প্রাচীন ফুটবল ক্লাব এটি। বয়স ১৪৮ বছর। ইংল্যান্ডে বিশালত্বের দিক থেকে অষ্টম ভিলা পার্ক। ৪২ হাজার দর্শক ধারণক্ষমতা বিশিষ্ট এই স্টেডিয়ামের সব কিছুতেই আছে ঐতিহ্য ও আধুনিকতার মিশেল। মেরুন-আকাশি রঙে ছেয়ে আছে পুরো স্টেডিয়াম এলাকা। সেখানে ভিড় করেছেন অনেক ভক্ত। আজ থেকে ইংল্যান্ড মাতবে প্রিমিয়ার লিগের বুনো উৎসবে। গেল মৌসুমে ১৪-তে শেষ করা ভিলা এ মৌসুমে দল গড়েছে সেরা দশে প্রবেশের লক্ষ্য নিয়ে। কোচ ইংলিশ কিংবদন্তি স্টিফেন জেরার্ড। মাঠের লড়াইয়ে তিনি পাচ্ছেন ফিলিপ কুতিনিয়োর মতো তারকা। এ ছাড়া অ্যাসলে ইয়ং, আর্জেন্টাইন গোলকিপার এমিলিয়ানো মার্তিনেজ, থিয়াগো কার্লোস, মার্ক বসনিচরা আছেন বলেই ভিলারা নতুন স্বপ্ন বেঁধে প্রস্তুত হচ্ছেন।
ভিলা পার্কের ঠিক সামনে বিশাল কার পার্কিং। তার এক পাশে প্রতিবন্ধী শিশুদের জন্য একাডেমি, অন্য পাশে ভিলা স্টোর। এই সপ্তাহ জুড়েই সেখানে ভক্তদের আনাগোনা। ঘুরে ঘুরে কিনছেন প্রিয় তারকাদের জার্সি। মেরুন-আকাশি জার্সিতে নিজের নাম লিখে নিচ্ছেন অনেকে। কেবল জার্সি নয়, অ্যাস্টন ভিলার লোগোখচিত বাহারি সরঞ্জামে টইটম্বুর পুরো স্টোর। মনের আনন্দে পছন্দের সরঞ্জাম কিনতে দেখে প্রশ্ন জাগল দীর্ঘদিন সাফল্য থেকে দূরে থাকা একটি ক্লাবকে নিয়ে কেন এত আগ্রহ? আসলে এ এক পরম্পরা। সাফল্যের নিকুচি করে, সবাই ব্যস্ত ঐতিহ্য লালনে। প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম ‘উই আল ভিলা’ সেøাগান বুকে ধারণ করে আছে।
এই ক্লাবটি প্রথম বিভাগ শিরোপা জিতেছে সাতবার। শুরুটা ১৮৮৭ সালে, ক্লাব প্রতিষ্ঠার ১৩ বছর পর। সর্বশেষ ১৯৮১ সালে। পরের বছর ফাইনালে ব্রায়ার্ন মিউনিখকে হারিয়ে ইউরোপিয়ান কাপ জয়। ওই একবারই। তাতেই অবশ্য ইংল্যান্ডের হয়ে ইউরোপের শ্রেষ্ঠত্ব পাওয়া পাঁচ ক্লাবের অভিজাত তালিকায় উঠেছে তাদের নাম। সাতটি এফএ কাপ এসেছে ষাটের ১৮৮৭ থেকে ১৯৫৭ সালের মধ্যে। ১৯৯২ সালে ইংলিশ ফুটবল প্রিমিয়ার লিগ যুগে প্রবেশের পর থেকে আর কিছু জেতা হয়নি অ্যাস্টন ভিলার। সাফল্যের গল্প সবই দূর অতীত। তারপরও বর্তমান ক্লাবটিকে আঁকড়ে রাখে সযতেœ। প্রতি মৌসুমেই ভক্তরা নতুন স্বপ্ন বুকে নিয়ে ছুটে যায় প্রিয় বিলা পার্কে। ছ’মাসের সন্তানকে বাগিতে বসিয়ে ঘুরে ঘুরে জার্সি পছন্দ করছিলেন ড্যান ম্যাকরাইটার। ৩৮ বছরের এই তরুণ অ্যাস্টনকে কখনো শিরোপা উল্লাসে মাততে দেখেননি। তারপরও ভিলা পার্কে ১৩ আগস্ট মৌসুমের প্রথম হোম ম্যাচ দেখার প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছেন। কারণটা জানালেন এভাবে, ‘আমি সাফল্যে বিশ্বাসী নই। এটা বলতে পারেন একটা পরম্পরা। আমার দাদা, বাবারা অ্যাস্টন ভিলা বলতে পাগল ছিলেন। দাদা এখনো হুইল চেয়ারে বসে খেলা দেখতে আসেন। ম্যাচের আগে-পরে বাবাকে দেখেছি সবসময় দলের জার্সি পরে থাকতে। এসব দেখেই এই ক্লাবটা বড্ড আপন হয়ে গেছে।’ ক্রিস্টিফেন বারবোজা চার বছর ধরে চাকরি করেন ভিলা স্টোরে। প্রিয় ক্লাবে কাজ করতে পেরে দারুণ উচ্ছ্বসিত স্টোর ম্যানেজার জানালেন, ‘এ বছর কুতিনহোকে নেওয়ার পর থেকেই ভক্তদের আগ্রহ বেড়ে গেছে। সবার বিশ্বাস কোচ জেরার্ড এবার নিশ্চয় কিছু করে দেখাবে। কারণ কুতিনহো, মার্তিনেজেদের মতো অসাধারণ কিছু খেলোয়াড় আমাদের আছে। এই বিশ্বাস থেকেই সবাই অনেক কেনাকাটা করছে।’
ভিলা পার্কের প্রবেশপথে কড়া নিরাপত্তা। কমনওয়েলথ গেমস কভার করতে আসা বাংলাদেশের সাংবাদিক পরিচয় দিতে খুব অল্প সময়ের জন্য ভেতরে প্রবেশের সুযোগ মিলল। হসপিটালিটি বক্সে প্রবেশ করতে চোখ আটকে গেল সবুজ গালিচা ও বাহারি রঙের গ্যালারিতে। নতুন মৌসুমকে বরণ করতে প্রস্তুত ভিলা পার্ক। শেষ মুহূর্তের ঝাড়পোছে ব্যস্ত বেশ ক’জন স্বেচ্ছাসেবক। ১৩ আগস্ট এখানে স্বাগতিকরা মুখোমুখি হবে এভার্টনের। যে ক্লাবের সঙ্গে ভিলা মুখোমুখি রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে সকল দ্বৈরথকে। ইংল্যান্ডের পুরনো দু ক্লাবের নাম সবার ওপরে আছে সবচেয়ে বেশিবার দ্বৈরথের তালিকায়। তার আগে অবশ্য আজ লিগের প্রথম ম্যাচে অ্যাস্টন ভিলা মুখোমুখি হবে ব্রোনমাউথের বিপক্ষে। তবে আজকের ম্যাচ নিয়ে খুব বেশি ভাবনা নেই পার্ক ভিলার প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা ড্যারেক রাসেলের, ভিলার সদর দরজায় দাঁড়িয়ে কথা হলো তার সঙ্গে। জানা গেল, ভিলার ম্যাচ নিয়ে কতটা উন্মাতাল বার্মিংহামবাসী, ‘দুটি স্ট্যান্ড সংস্কারের পর এখানে ৫০ হাজারের বেশি দর্শক দেখতে পারে খেলা। তবে ৪২ হাজারের বেশি প্রবেশের অনুমতি নেই। আমরা এর মধ্যেই দর্শক ঢল সামলানোর পরিকল্পনা করে ফেলেছি। এভারটন ম্যাচ নিয়ে মানুষের অনেক আগ্রহ। এর মধ্যেই সত্তর শতাংশ টিকিট বিক্রি হয়ে গেছে। ১৩ তারিখ ঢল নামবে এখানে। ম্যাচ ডে গুলোতে সেটা সামাল দেওয়া আমাদের টিমের জন্য বড় চ্যালেঞ্জের।’
ভালোবাসার কমতি নেই। মালিকদের চেষ্টারও খামতি নেই। কমতি শুধু সেরার সারিতে নাম লেখাতে না পারা। জেরার্ড-কুতিনহোদের ঘিরে তাই অতীত ফেরানোর স্বপ্নে বিভোর বার্মিংহাম।
শেয়ার করুন
সুদীপ্ত আনন্দ, বার্মিংহাম থেকে | ৬ আগস্ট, ২০২২ ০০:০০

শিরোপা-সাফল্য থেকে অনেক দূরে বহু দিন ধরেই। তারপরও অ্যাস্টন ভিলা বার্মিংহামবাসীর হৃদয়ের বড় জায়গাজুড়ে। এই শহরে বার্মিংহাম ফুটবল ক্লাব আছে। আছে ওয়েস্ট ব্রুমউইচ এফসি। তবে শহরের বেশিরভাগ মানুষ অ্যাস্টন ভিলাতেই মশগুল। ইংল্যান্ডের ইতিহাসের অন্যতম প্রাচীন ফুটবল ক্লাব এটি। বয়স ১৪৮ বছর। ইংল্যান্ডে বিশালত্বের দিক থেকে অষ্টম ভিলা পার্ক। ৪২ হাজার দর্শক ধারণক্ষমতা বিশিষ্ট এই স্টেডিয়ামের সব কিছুতেই আছে ঐতিহ্য ও আধুনিকতার মিশেল। মেরুন-আকাশি রঙে ছেয়ে আছে পুরো স্টেডিয়াম এলাকা। সেখানে ভিড় করেছেন অনেক ভক্ত। আজ থেকে ইংল্যান্ড মাতবে প্রিমিয়ার লিগের বুনো উৎসবে। গেল মৌসুমে ১৪-তে শেষ করা ভিলা এ মৌসুমে দল গড়েছে সেরা দশে প্রবেশের লক্ষ্য নিয়ে। কোচ ইংলিশ কিংবদন্তি স্টিফেন জেরার্ড। মাঠের লড়াইয়ে তিনি পাচ্ছেন ফিলিপ কুতিনিয়োর মতো তারকা। এ ছাড়া অ্যাসলে ইয়ং, আর্জেন্টাইন গোলকিপার এমিলিয়ানো মার্তিনেজ, থিয়াগো কার্লোস, মার্ক বসনিচরা আছেন বলেই ভিলারা নতুন স্বপ্ন বেঁধে প্রস্তুত হচ্ছেন।
ভিলা পার্কের ঠিক সামনে বিশাল কার পার্কিং। তার এক পাশে প্রতিবন্ধী শিশুদের জন্য একাডেমি, অন্য পাশে ভিলা স্টোর। এই সপ্তাহ জুড়েই সেখানে ভক্তদের আনাগোনা। ঘুরে ঘুরে কিনছেন প্রিয় তারকাদের জার্সি। মেরুন-আকাশি জার্সিতে নিজের নাম লিখে নিচ্ছেন অনেকে। কেবল জার্সি নয়, অ্যাস্টন ভিলার লোগোখচিত বাহারি সরঞ্জামে টইটম্বুর পুরো স্টোর। মনের আনন্দে পছন্দের সরঞ্জাম কিনতে দেখে প্রশ্ন জাগল দীর্ঘদিন সাফল্য থেকে দূরে থাকা একটি ক্লাবকে নিয়ে কেন এত আগ্রহ? আসলে এ এক পরম্পরা। সাফল্যের নিকুচি করে, সবাই ব্যস্ত ঐতিহ্য লালনে। প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম ‘উই আল ভিলা’ সেøাগান বুকে ধারণ করে আছে।
এই ক্লাবটি প্রথম বিভাগ শিরোপা জিতেছে সাতবার। শুরুটা ১৮৮৭ সালে, ক্লাব প্রতিষ্ঠার ১৩ বছর পর। সর্বশেষ ১৯৮১ সালে। পরের বছর ফাইনালে ব্রায়ার্ন মিউনিখকে হারিয়ে ইউরোপিয়ান কাপ জয়। ওই একবারই। তাতেই অবশ্য ইংল্যান্ডের হয়ে ইউরোপের শ্রেষ্ঠত্ব পাওয়া পাঁচ ক্লাবের অভিজাত তালিকায় উঠেছে তাদের নাম। সাতটি এফএ কাপ এসেছে ষাটের ১৮৮৭ থেকে ১৯৫৭ সালের মধ্যে। ১৯৯২ সালে ইংলিশ ফুটবল প্রিমিয়ার লিগ যুগে প্রবেশের পর থেকে আর কিছু জেতা হয়নি অ্যাস্টন ভিলার। সাফল্যের গল্প সবই দূর অতীত। তারপরও বর্তমান ক্লাবটিকে আঁকড়ে রাখে সযতেœ। প্রতি মৌসুমেই ভক্তরা নতুন স্বপ্ন বুকে নিয়ে ছুটে যায় প্রিয় বিলা পার্কে। ছ’মাসের সন্তানকে বাগিতে বসিয়ে ঘুরে ঘুরে জার্সি পছন্দ করছিলেন ড্যান ম্যাকরাইটার। ৩৮ বছরের এই তরুণ অ্যাস্টনকে কখনো শিরোপা উল্লাসে মাততে দেখেননি। তারপরও ভিলা পার্কে ১৩ আগস্ট মৌসুমের প্রথম হোম ম্যাচ দেখার প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছেন। কারণটা জানালেন এভাবে, ‘আমি সাফল্যে বিশ্বাসী নই। এটা বলতে পারেন একটা পরম্পরা। আমার দাদা, বাবারা অ্যাস্টন ভিলা বলতে পাগল ছিলেন। দাদা এখনো হুইল চেয়ারে বসে খেলা দেখতে আসেন। ম্যাচের আগে-পরে বাবাকে দেখেছি সবসময় দলের জার্সি পরে থাকতে। এসব দেখেই এই ক্লাবটা বড্ড আপন হয়ে গেছে।’ ক্রিস্টিফেন বারবোজা চার বছর ধরে চাকরি করেন ভিলা স্টোরে। প্রিয় ক্লাবে কাজ করতে পেরে দারুণ উচ্ছ্বসিত স্টোর ম্যানেজার জানালেন, ‘এ বছর কুতিনহোকে নেওয়ার পর থেকেই ভক্তদের আগ্রহ বেড়ে গেছে। সবার বিশ্বাস কোচ জেরার্ড এবার নিশ্চয় কিছু করে দেখাবে। কারণ কুতিনহো, মার্তিনেজেদের মতো অসাধারণ কিছু খেলোয়াড় আমাদের আছে। এই বিশ্বাস থেকেই সবাই অনেক কেনাকাটা করছে।’
ভিলা পার্কের প্রবেশপথে কড়া নিরাপত্তা। কমনওয়েলথ গেমস কভার করতে আসা বাংলাদেশের সাংবাদিক পরিচয় দিতে খুব অল্প সময়ের জন্য ভেতরে প্রবেশের সুযোগ মিলল। হসপিটালিটি বক্সে প্রবেশ করতে চোখ আটকে গেল সবুজ গালিচা ও বাহারি রঙের গ্যালারিতে। নতুন মৌসুমকে বরণ করতে প্রস্তুত ভিলা পার্ক। শেষ মুহূর্তের ঝাড়পোছে ব্যস্ত বেশ ক’জন স্বেচ্ছাসেবক। ১৩ আগস্ট এখানে স্বাগতিকরা মুখোমুখি হবে এভার্টনের। যে ক্লাবের সঙ্গে ভিলা মুখোমুখি রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে সকল দ্বৈরথকে। ইংল্যান্ডের পুরনো দু ক্লাবের নাম সবার ওপরে আছে সবচেয়ে বেশিবার দ্বৈরথের তালিকায়। তার আগে অবশ্য আজ লিগের প্রথম ম্যাচে অ্যাস্টন ভিলা মুখোমুখি হবে ব্রোনমাউথের বিপক্ষে। তবে আজকের ম্যাচ নিয়ে খুব বেশি ভাবনা নেই পার্ক ভিলার প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা ড্যারেক রাসেলের, ভিলার সদর দরজায় দাঁড়িয়ে কথা হলো তার সঙ্গে। জানা গেল, ভিলার ম্যাচ নিয়ে কতটা উন্মাতাল বার্মিংহামবাসী, ‘দুটি স্ট্যান্ড সংস্কারের পর এখানে ৫০ হাজারের বেশি দর্শক দেখতে পারে খেলা। তবে ৪২ হাজারের বেশি প্রবেশের অনুমতি নেই। আমরা এর মধ্যেই দর্শক ঢল সামলানোর পরিকল্পনা করে ফেলেছি। এভারটন ম্যাচ নিয়ে মানুষের অনেক আগ্রহ। এর মধ্যেই সত্তর শতাংশ টিকিট বিক্রি হয়ে গেছে। ১৩ তারিখ ঢল নামবে এখানে। ম্যাচ ডে গুলোতে সেটা সামাল দেওয়া আমাদের টিমের জন্য বড় চ্যালেঞ্জের।’
ভালোবাসার কমতি নেই। মালিকদের চেষ্টারও খামতি নেই। কমতি শুধু সেরার সারিতে নাম লেখাতে না পারা। জেরার্ড-কুতিনহোদের ঘিরে তাই অতীত ফেরানোর স্বপ্নে বিভোর বার্মিংহাম।