
২০১৮’র রাশিয়া বিশ্বকাপেও গ্যালারিতে ছিলেন ডিয়েগো ম্যারাডোনা। এবারের বিশ্বকাপে আর দেখা যাবে না। বিশ্বকাপ শুরুর পঞ্চম দিনে ২৫ নভেম্বর কিংবদন্তির দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিকী। সশরীরে ম্যারাডোনা না থাকলেও কাতার বিশ্বকাপের সময় থাকবেন তিনি। ১৯৮৬’র বিশ্বকাপে যে জার্সি পরে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে শতাব্দীর সেরা গোল করেছিলেন ম্যারাডোনা, সেটি প্রদর্শিত হবে বিশ্বকাপের সময়।
১৯৮৬ বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে ইংল্যান্ডকে ২-১ গোলে হারানো ম্যাচে নীল রঙের ১০ নম্বর জার্সি পরেছিলেন আর্জেন্টিনা অধিনায়ক ম্যারাডোনা। ম্যাচে তার করা দুটি গোলই বিখ্যাত। প্রথমটি পরিচিত ‘হ্যান্ড অব গড’ নামে। ওই গোলের চার মিনিট পর যে গোলটি করেছিলেন তা বিখ্যাত ‘গোল অব দ্য সেঞ্চুরি’ নামে। ম্যাচের পর ম্যারাডোনার সঙ্গে জার্সি পাল্টেছিলেন ইংলিশ মিডফিল্ডার স্টিভ হজ। ২০০২ সাল থেকে ইংল্যান্ডের জাতীয় জাদুঘরে রাখা ছিল। এপ্রিলে একটি প্রতিষ্ঠান জার্সিটি নিলামে তোলে, যা রেকর্ড ৮৯ লাখ ৩০ হাজার ডলারে বিক্রি করা হয়। ইন্টারনেট
‘হোম গ্রাউন্ড’ শব্দে যে ‘আপন আপন’ আবহ থাকে তার সব উপাদানই যেন আছে বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দল ও সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামের মধ্যে। এই মাঠেই নারী দলের ঘরোয়া ক্রিকেটের বেশিরভাগ খেলা হয়। জাতীয় দলের অনুশীলন ক্যাম্পও হয় এখানেই। এই স্টেডিয়াম তাই জ্যোতি-সালমাদের জন্য অনেকটা ঘর-দুয়ারের মতো চেনা। এখানে খেলতে নামলে তাই আত্মবিশ্বাস বাড়তি থাকাই স্বাভাবিক। হয়েছেও তাই। এশিয়ার শ্রেষ্ঠত্বের লড়াইয়ে প্রথম ম্যাচে থাইল্যান্ডকে রীতিমতো উড়িয়ে দিয়ে ৯ উইকেটের জয় তুলে নিয়েছে বাংলাদেশ।
বড় জয়ে দেশের নতুন আন্তর্জাতিক গ্রাউন্ডের শুরুটা হলো বাংলাদেশের। দেশের নবম আন্তর্জাতিক ক্রিকেট গ্রাউন্ড হিসেবেও অভিষেক হলো সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামের আউটার গ্রাউন্ডের। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে গত বছরই যাত্রা শুরু হয় এই মাঠের। সিলেট বিভাগের বিপক্ষে ঢাকা বিভাগের সেই ম্যাচ ছিল লো স্কোরিংয়ের। একদিনে বোলাররা তুলে নিয়েছিলেন ২১ উইকেট।
জাতীয় ক্রিকেট লিগের উদ্বোধনী ম্যাচের সেই ধারাটা যেন গ্রাউন্ডের প্রথম আন্তর্জাতিক ম্যাচেও ফের ফিরে এলো। আগে ব্যাট করতে নামা থাইল্যান্ড দল তিন অঙ্কের ঘরে পৌঁছার আগেই গুটিয়ে যায়। তবে বাংলাদেশি ব্যাটাররা খেলেছেন আগ্রাসী মেজাজেই। হোম ভেন্যুর সুবিধা পুরোটাই যেন আদায় করে নিয়েছেন টাইগ্রেসরা।
সকালের উইকেটে টাইগ্রেস স্পিনাররা মাথা তুলে দাঁড়াতেই দেননি থাই ব্যাটারদের। রুমানা আহমেদ ও সোহেলি আক্তারদের ঘূর্ণিতে কাবু হন তারা। সঙ্গে সানজিদা মেঘলা, নাহিদা আক্তার ও সালমা খাতুন কাউকেই পরাস্ত করতে পারেননি পানিতা মায়ারা। যদিও পেস বলে ভালোই জবাব দিয়েছে থাইল্যান্ড। তবুও মাত্র ৮২ রানে থামতে হয় তাদের।
মামুলি ৮৩ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে শুরু থেকেই আগ্রাসী ছিলেন শামীমা সুলতানা। তাকে ভালোই সঙ্গ দিচ্ছিলেন আরেক ওপেনার ফারজানা হক। উদ্বোধনী জুটিতেই জয়ের দ্বার প্রায় উন্মুক্ত হয়ে গিয়েছিল। পাওয়ার প্লেতে শামীমা ব্যাটিংতা-বে স্কোর বোর্ডে যোগ করেন ৫২ রান। ৮ ওভারে কোনো উইকেট না হারিয়ে আসে ৬৯ রান। যার ৪৯ রানই আসে শামীমার ব্যাট থেকে।
স্কোর বোর্ডে চাপ না থাকলেও শামীমার এমন আগ্রাসী ব্যাটিং পরিকল্পনারই অংশ জানালেন অধিনায়ক জ্যোতি, ‘কারণ টুর্নামেন্টে আমাদের আরও অনেকগুলো খেলা আছে। তাই মাঠের ব্যাটিং প্রস্তুতিটা আমাদের কাছে গুরুত্ব পেয়েছে। টার্গেট কত, সেদিকে তাকাইনি। আগে ব্যাট করলেও তাই করতাম আমরা। ব্যাটিংয়ের ধরই ছিল আসলে পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা।’ কদিন আগে আবুধাবিতে বিশ্বকাপ কোয়ালিফায়ারে ১১৩ রান করে কোনো রকমে ১১ রানের জয় পেয়েছিল বাংলাদেশ। কিন্তু থাইল্যান্ডের মতো দলের বিপক্ষে দাপুটে জয় চাই। এবার সেটাই হলো বলে খুশি নিগার সুলতান জ্যোতি।
পরবর্তী ম্যাচ পাকিস্তানের সঙ্গে। সেই ম্যাচে ভিন্ন পরিকল্পনার কথা জানিয়ে জ্যোতি বলেন, ‘পাকিস্তান আর থাইল্যান্ডের শক্তির জায়গা আলাদা। থাইল্যান্ডের সঙ্গে যে পরিকল্পনা নিয়ে আমরা মাঠে নেমেছিলাম, পাকিস্তানের সঙ্গে অন্যভাবে ম্যাচের স্ট্র্যাটেজি সাজাতে হবে।’ মার্চে বিশ্বকাপ টি-টোয়েন্টির শেষ ম্যাচে পাকিস্তানকে ২৩৪ রান করে ৯ রানে হারিয়েছিলেন জ্যোতিরা।
ফুটবল বিশ্বকাপের আগে সবার আগ্রহের কেন্দ্রে থাকে দলগুলোর জার্সি। ঘটা করেই সব দলের জার্সি প্রকাশ করে ক্রীড়াসামগ্রী নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলো। ফুটবলের মতো ক্রিকেটেও সেই চল আছে। তবে তা অতি আগ্রহের বিষয় ছিল না অবশ্য। সেই অতীত বদলেছে এখন। ক্রিকেটেও বিশ্বকাপের জার্সিও সমর্থকদের বড় আগ্রহের কারণ।
আসন্ন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ উপলক্ষে সবার আগে জার্সি উন্মোচন করেছে পাকিস্তান, এরপর নিউজিল্যান্ড আর তৃতীয় হিসেবে গত শুক্রবার রাতে নতুন ডিজাইনের জার্সি প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ। দেশের তিন ঐতিহ্য জামদানি শাড়ির ডিজাইন, সুন্দরবন ও রয়েল বেঙ্গল টাইগারকে আনা হয়েছে জার্সিতে।
গত বিশ্বকাপে বাংলাদেশের জার্সিতে ২০০৪-০৫ সালের জার্সির ধরন কিছুটা ছিল। এবার অতীতকে টানা হয়নি। জার্সিতে নিয়মিত রং সবুজ থাকছে তাতে বুকের অংশে সুন্দরবনের জলছাপ আর নিচের অংশে বাঘের মুখাবয়ব। দুই পাশে হাতের নিচের অংশে লাল রংয়ে থাকছে জামদানি শাড়ির ডিজাইন।
এগিয়ে আনা হয়েছে দেশের শীর্ষ ফুটবল লিগের আসর। গত বছর ফেব্রুয়ারিতে শুরু হয়েছিল বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ। এবার শুরু হচ্ছে ৯ ডিসেম্বর থেকে। শুক্র ও শনিবার দেশের ৬টি ভেন্যুতে আয়োজিত হবে ম্যাচ। লিগ চলবে ২২ জুলাই পর্যন্ত।
আগে আলাদা করে হতো ফেডারেশন কাপ। এবার সপ্তাহের মাঝামাঝি, মঙ্গলবার, ২০ ডিসেম্বর থেকে শুরু হয়ে ১৮ জুলাই পর্যন্ত চলবে এ আসর। তার আগে মৌসুম শুরু হবে স্বাধীনতা কাপ দিয়ে। ৩-৭ নভেম্বর অনুষ্ঠেয় বাছাইপর্ব থেকে ৫ দল এবং গত মৌসুমের বিপিএলের ১১ দল নিয়ে মূলপর্ব হবে ১৩ নভেম্বর থেকে ৫ ডিসেম্বর।
গতকাল বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিনের সভাপতিত্বে পেশাদার লিগ কমিটির সভায় এসব সিদ্ধান্ত হয়েছে।
বিপিএলের প্রথম খেলোয়াড় রেজিস্ট্রেশন শুরু হচ্ছে ৮ অক্টোবর থেকে। করা যাবে এক মাস। দ্বিতীয় উইন্ডোতে রেজিস্ট্রেশন হবে আগামী ১-১৪ মার্চ। এবারের লিগের জন্য প্রতিটি দল সর্বোচ্চ ৫ জন বিদেশি খেলোয়াড় রেজিস্ট্রেশন করতে পারবে। তবে এক ম্যাচে খেলাতে পারবে সর্বোচ্চ ৪ জন।
গত মৌসুমে চতুর্থ হওয়া সাইফ স্পোর্টিং ক্লাব হঠাৎ করে লিগে না খেলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সে সিদ্ধান্ত থেকে দলটির সরে না আসায় হতাশ সালাউদ্দিন। নতুন মৌসুম সামনে রেখে ক্লাবগুলোর প্রতি ফিক্সিং ইস্যুতে কঠোর বার্তাও দিয়েছেন তিনি। ‘বিপিএলে সবাই খেলতে চায়। আমি যা বলেছি, ক্লাবগুলোও তাই চায়। তাদের কিছু যৌক্তিক পয়েন্ট ছিল, সেগুলো বিবেচনায় নিয়েছি। ফুটবল যাতে একটা পর্যায়ে যেতে পারে, সে চেষ্টা করছি। আমি দুইটা জিনিস ক্লাবগুলোকে বলেছি, ড্রাগস আর ফিক্সিং যেন না থাকে। প্রমাণ হলে কঠিন শাস্তি হবে’ বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের জানান তিনি।
আগের বৈঠকে সালাউদ্দিন ইঙ্গিত দিয়েছিলেন সুপার কাপ নিয়ে পৃষ্ঠপোষকদের কাছ থেকে সাড়া পাওয়ার কথা। একই সঙ্গে বলেছিলেন, বিষয়টি চূড়ান্ত না হওয়ার কথাও। কমিটির দ্বিতীয় বৈঠকেও সুপার কাপ ইস্যু ঝুলে আছে। মৌসুমের সূচিতে অবশ্য সুপার কাপের জন্য সময় রেখে দিয়েছে কমিটি। ফরম্যাটও তৈরি করে রাখা হয়েছে। গত লিগ টেবিলের শীর্ষ চার দল এবং বাকি সাত দলের মধ্যে বাছাই পেরিয়ে আসা দুই দল মিলিয়ে ছয় দল নিয়ে হবে সুপার কাপ। পৃষ্ঠপোষকদের কাছ থেকে চূড়ান্ত সাড়া পেলে ২ থেকে ১৩ এপ্রিল হবে সুপার কাপ।
আগের দিনই গ্যাব্রিয়েল জেসুস বলেছিলেন ম্যানচেস্টার সিটিতে পেপ গার্দিওলার কৌশলের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে গিয়ে অনেকটাই হাঁপিয়ে উঠেছিলেন। আর্সেনালে নাম লেখানোর পর স্বাধীনভাবে খেলতে পারছেন, নিজেকে মুক্ত বিহঙ্গের মতো লাগছে তার। খেলাতেও ছাপ তার। ‘মুক্ত বিহঙ্গ’ ব্রাজিলিয়ান স্ট্রাইকার আর্সেনালে শুরু থেকেই গোল পাচ্ছেন। গতকালও পেয়েছেন। নবম ম্যাচে পঞ্চম গোলটি ছিল নগর প্রতিদ্বন্দ্বী টটেনহ্যাম হটস্পারের সঙ্গে এগিয়ে যাওয়ার (২-১)। তার আগে-পড়ে টমাস পার্ট ও গ্রানিত জাকার গোলে ৩-১’র জয়ে ৮ ম্যাচে ২১ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষস্থান ধরে রেখেছে আর্সেনাল।
পাঁচ গোল করা ছাড়াও সতীর্থদের দিয়ে জেসুস গোল করিয়েছেন তিনটি। অথচ ৬ বছরে সিটির হয়ে গোল করেন ২৩৬ ম্যাচে ৯৫টি। গেল মৌসুমে ২৮ ম্যাচে করেছিলেন মাত্র ৮ গোল। জেসুসের দাবি, সিটিতে গার্দিওলার কৌশলের কারণে নিজের সেরাটা দিতে পারেননি। শুক্রবার জেসুস জানান কেন তিনি ইতিহাদে খুশি ছিলেন না। ‘ব্যাপারটা ছিল, যেভাবে গার্দিওলা ফুটবল বোঝেন এবং তিনি যা পেতে চান। এরপর এটা আপনার ওপর যে আপনি সেটা মানবেন কি মানবেন না। যদি আপনি না মানেন, তাহলে সেখানেই শেষ এবং অন্য চ্যালেঞ্জ নিতে চলে যান।’ সিটিতে গার্দিওলা স্ট্রাইকারদের চেয়ে মিডফিল্ডারদের বেশি গুরুত্ব দেন বলে মনে করেন জেসুস। ‘সিটিতে খেলাটা অন্য রকম ছিল। স্ট্রাইকাররা সেখানে খুব বেশি বল স্পর্শ করতে পারত না। আপনি খেলা দেখলেই বিষয়টা বুঝতে পারবেন।’
এদিকে আজ ইতিহাদে ম্যানচেস্টার ডার্বিতে মুখোমুখি হবে ম্যানচেস্টার সিটি ও ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড। সিটি ১৭ পয়েন্টে দুইয়ে আছে। এক ম্যাচ বেশি খেলে সমান পয়েন্টে তিনে টটেনহ্যাম।
প্রায় এক মাস পর গতকাল প্রিমিয়ার লিগে ম্যাচ খেলতে নেমে ড্র করেছে লিভারপুল। গতকাল অ্যানফিল্ডে লিভারপুল ও ব্রাইটন ম্যাচ ৩-৩ গোলে ড্র হয়েছে। লিভারপুলের রবার্তো ফিরমিনো জোড়া গোল করেন। ব্রাইটনের ট্রোসার্ড করেন হ্যাটট্রিক। লিভারপুলের তৃতীয় গোলটি আসে আত্মঘাতী থেকে। একই দিন ক্রিস্টাল প্যালেসকে ২-১ গোলে হারায় চেলসি।
ক্রিকেটে লম্বা সময় ধরে ম্যাচ যে শুধু বিশ্ব আসরেই হয় তা না। দ্বিপক্ষীয় সিরিজেও অনেক সময় এত ম্যাচ হতো যে একটা বিশ্বকাপের সময় লেগে যায়। মানে পুরো এক মাস। ওয়ানডেতে একটা সময় ৫-৬-৭ এমনকি ৮ ম্যাচেরও সিরিজ হয়েছে। কিন্তু টি-টোয়েন্টিতে দ্বিপক্ষীয় সিরিজে এত ম্যাচের লড়াই হয়নি কখনো। টেস্ট খেলুড়ে দলগুলোর মধ্যে সিরিজে সর্বোচ্চ ৫ ম্যাচ হয়েছে। এই প্রথম আগের সব রেকর্ড ছাপিয়ে টি-টোয়েন্টিতে ৭ ম্যাচের দ্বিপক্ষীয় সিরিজ খেলছে পাকিস্তান-ইংল্যান্ড। যার শেষটি আজ। আগের ৬ ম্যাচ দু’দল ভাগাভাগি করে জেতায় লাহোরের গাদ্দাফি স্টেডিয়ামের ম্যাচটি হয়ে উঠেছে অলিখিত ফাইনাল।
টি-টোয়েন্টিতে সর্বশেষ ৫ ম্যাচের সিরিজ খেলেছে ভারত-উইন্ডিজ। ২০২২-এর সিরিজে ভারত ৪-১-এ সিরিজ জেতে। ২০১৯-২০ মৌসুমে টি-টোয়েন্টিতে ৫ ম্যাচের সিরিজ শুরু করে নিউজিল্যান্ড-ইংল্যান্ড। ওই সিরিজের শেষ ম্যাচ টাই হওয়ায় ২-২ ব্যবধানে সমতা ছিল। এছাড়া অস্ট্রেলিয়া-শ্রীলঙ্কা, ভারত-নিউজিল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ড, ইংল্যান্ড-ভারত, দক্ষিণ আফ্রিকা-উইন্ডিজ ও ইংল্যান্ড-উইন্ডিজ নিজেদের মধ্যে ৫ ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ খেলেছিল। এই সিরিজগুলোতে একতরফা লড়াই খুব কমই দেখা গেছে। দু’দলের উজ্জীবিত প্রতিদ্বন্দ্বিতায় উপভোগ্য সিরিজই পেয়েছেন দর্শক-সমর্থকরা। ঠিক যেমনটা চলছে পাকিস্তানে। প্রথমবারের মতো ৭ ম্যাচের সিরিজে একে অপরকে পড়ে ফেলার একগুঁয়েমি নেই। করাচিতে প্রথম ম্যাচে ইংল্যান্ডের জয়ের জবাব দিয়েছিল পাকিস্তান দ্বিতীয় ম্যাচ জিতে। আবার তৃতীয় ম্যাচে ইংল্যান্ডের সিরিজে ফেরার জবাব দেয় পাকিস্তান। চতুর্থ ম্যাচ শেষে ২-২ ব্যবধানে থেকে পঞ্চম ম্যাচে ৩-২ করেছিল পাকিস্তান। কিন্তু ষষ্ঠ ম্যাচ জিতে তা আবারও ৩-৩ করে নেয় ইংল্যান্ড।
গত এশিয়া কাপে শ্রীলঙ্কার কাছে হারের পর ভারত অধিনায়ক রোহিত শর্মা দারুণ এক কথা বলেন। দ্বিপক্ষীয় সিরিজে একে অপরের সঙ্গে বারবার মুখোমুখি হওয়ায় নিজেদের পড়ে ফেলা যায়। সেই অনুসারে রণপরিকল্পনাও ঠিক করা যায় পরের ম্যাচের। কিন্তু টুর্নামেন্টে এক দলের সঙ্গে একবার দেখা হওয়ায় বিপক্ষ কী করবে তা আগে থেকে বুঝে ওঠা কঠিন হয়। রোহিতের চিন্তামতো দ্বিপক্ষীয় সিরিজে এমন অনেকবারই হয়েছে। ভারত অনেকবারই প্রথম ম্যাচ হেরেও দারুণ লড়াই উপহার দিয়ে সিরিজ জিতেছে। বাংলাদেশও ওয়ানডেতে নিজেদের প্রথম ৫ ম্যাচের সিরিজে জিম্বাবুয়ের কাছে দুই ম্যাচ হারের পর টানা তিন জয়ে সিরিজ জিতে নেয়। কিন্তু সেই এক তরফা লড়াইটা এবার পাকিস্তান-ইংল্যান্ড সিরিজে নেই।
টি-টোয়েন্টিতে ৭ ম্যাচের এই সিরিজ এবারই প্রথম হলেও ওয়ানডেতে এত ম্যাচের সিরিজ হয়েছে অনেক। এর চলটা শুরু হয় ১৯৮৭-৮৮ মৌসুমে। সেবার ভারতে প্রথমবার ৭ ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ খেলতে আসে উইন্ডিজ। ৮ ডিসেম্বর শুরু হয়ে ওই সিরিজ হয়েছিল ২৫ জানুয়ারি পর্যন্ত। সবশেষ ৭ ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ হয় ২০১৪-১৫ মৌসুমে। শ্রীলঙ্কা ও নিউজিল্যান্ডের এই সিরিজে অবশ্য এত সময় লাগেনি। তবুও ১১ জানুয়ারি শুরু সিরিজ শেষ হতে লেগেছে ১৮ দিন, অর্ধেক মাসের বেশি। আগে অস্ট্রেলিয়া-ইংল্যান্ডের ন্যাটওয়েস্ট সিরিজ হতো ৭ ম্যাচের। অ্যাশেজের সঙ্গে ওয়ানডেতে এই সিরিজ খেলত দুই প্রতিপক্ষ। তবে এখন ৭ ম্যাচের সিরিজ কমে ৫-এ নেমেছে। কখনো ৬ ম্যাচের সিরিজও খেলে তারা। ন্যাটওয়েস্টের দেখাদেখি ভারতের চাওয়া মতো তাদের সঙ্গেও ৭ ম্যাচের সিরিজ খেলা শুরু করে অস্ট্রেলিয়া। ক্রিকেট ইতিহাসে মোট ২৩টি ৭ ম্যাচের দ্বিপক্ষীয় সিরিজে ভারত, ইংল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকা, অস্ট্রেলিয়া, উইন্ডিজ, নিউজিল্যান্ড ও শ্রীলঙ্কা নিজেদের মধ্যে খেলেছে। সময়ের সঙ্গে ও দর্শক-টিআরপি চাহিদায় এখন আর ওয়ানডেতে ৫ ম্যাচের বেশি সিরিজ হয় না। গত দুই বছর থেকে তো ৩ ম্যাচের সিরিজ হচ্ছে। ওয়ানডেতে মাত্র একবারই ৮ ম্যাচের সিরিজ হয়েছিল। অস্ট্রেলিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকা নিজেদের মধ্যে ওই সিরিজটি অবশ্য টানা খেলেনি। ১৯৯৪ সালের মার্চ মাস বাদ দিয়ে ফেব্রুয়ারি ও এপ্রিলে হোম অ্যান্ড অ্যাওয়ে ভিত্তিতে সিরিজটি খেলে। একদিক থেকে এই সিরিজ টানা হয়নি তবুও ক্রিকইনফো এই সিরিজটিকে ৮ ম্যাচের হিসেবে ধরে রেখেছে। তাই এ সিরিজটি ওয়ানডেতে সবচেয়ে বেশি ম্যাচের দ্বিপক্ষীয় সিরিজের তকমা পেয়ে আছে। ঠিক যেমন পাকিস্তান-ইংল্যান্ড সিরিজটি পেয়ে থাকল এখন পর্যন্ত হওয়া সবচেয়ে বেশি ম্যাচের দ্বিপক্ষীয় টি-টোয়েন্টি সিরিজ।
ভারতীয় বংশোদ্ভূত বুকার পুরস্কারজয়ী ঔপন্যাসিক সালমান রুশদি তার ওপর সংঘটিত ছুরি হামলা নিয়ে প্রথমবারের মতো কথা বলেছেন। মৃত্যুর খুব কাছ থেকে ফিরে আসা রুশদি এখনো পুরোপুরি সেরে ওঠেননি। কিন্তু বেঁচে ফেরায় তিনি নিজেকে ‘ভাগ্যবান’ মনে করছেন। পাশাপাশি প্রকাশ করেছেন কৃতজ্ঞতা।
সোমবার (৬ ফেব্রুয়ারি) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি। প্রতিবেদনটি সম্প্রতি দ্য নিউইয়র্কারকে দেওয়া রুশদির একটি সাক্ষাৎকারের ওপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছে।
২০২২ সালের আগস্টে নিউইয়র্কে একটি সাহিত্যবিষয়ক অনুষ্ঠানে বক্তব্য দিচ্ছিলেন রুশদি। এ সময় মঞ্চে তার ওপর হামলা চালান ২৪ বছর বয়সী যুবক হাদি মাতার। নিউ জার্সির এই বাসিন্দা সেদিন রুশদিকে ১০ থেকে ১৫ বার ছুরিকাঘাত করেন। এতে নিজের রক্তের ওপর লুটিয়ে পড়েন রুশদি। এর জের ধরে প্রায় ছয় সপ্তাহ হাসপাতালে কাটাতে হয় এই লেখককে। পরে এক চোখের দৃষ্টিশক্তিও হারিয়ে ফেলেন তিনি।
দ্য নিউইয়র্কারকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে রুশদি বলেন, ‘আমি অনেকটাই ভাল হয়েছি। যা ঘটেছিল তা বিবেচনা করে দেখলে খুব একটা খারাপ নেই। বড় ক্ষতগুলো সেরে গেছে। তবে বুড়ো আঙুল, তর্জনী ও তালুর নিচের অর্ধেকটা অনুভব করছি। আমাকে প্রচুর হাতের থেরাপি নিতে হচ্ছে। যদিও আমাকে বলা হয়েছে শারীরিকভাবে আমি উন্নতি করছি’।
রুশদি জানান, আঙ্গুলের কিছু অংশে অনুভূতি না থাকায় লিখতে অসুবিধা হচ্ছে তার। তিনি বলেন, ‘আমি উঠে দাঁড়াতে পারছি। হাঁটতে পারছি চারপাশে। তবে আমার শরীরে এমন কিছু অংশ আছে যেগুলো নিয়মিত চেকআপ করতে হবে। এটা ছিল একটি মারাত্মক আক্রমণ’। তিনি জানান, ছুরি হামলার ঘটনায় মানসিকভাবে আঘাত পেয়েছেন। এর ফলে তাকে নিরাপত্তার বিষয়ে পুনর্বিবেচনা করতে হবে।
১৯৮১ সালে ‘মিডনাইটস চিলড্রেন’ উপন্যাস দিয়ে বিশ্বজুড়ে খ্যাতি অর্জন করেন রুশদি। শুধু যুক্তরাজ্যেই বইটির ১০ লাখের বেশি কপি বিক্রি হয়েছিল। ১৯৮৮ সালে চতুর্থ উপন্যাস ‘দ্য স্যাটানিক ভার্সেস’ লেখার পর থেকে প্রাণনাশের হুমকি পেয়ে আসছিলেন এই লেখক। এই উপন্যাস লেখার জন্য রুশদিকে ৯ বছর আত্মগোপনে থাকতে হয়। উপন্যাসটিতে ইসলাম ধর্মের অবমাননা করা হয়েছে বলে মনে করেন মুসলিমরা।
উপন্যাসটি প্রকাশের এক বছর পর ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি রুশদির মৃত্যুদণ্ডের ফতোয়া জারি করেন। সেই সঙ্গে তার মাথার দাম হিসেবে ঘোষণা করেন ৩ মিলিয়ন ডলার পুরস্কার। রুশদি ২০ বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করছেন। মঙ্গলবার (০৭ ফেব্রুয়ারি) প্রকাশিত হচ্ছে তার লেখা নতুন উপন্যাস ‘ভিক্টরি সিটি’। পুরুষতান্ত্রিক বিশ্বকে উপেক্ষা করে এই নারী কীভাবে একটি শহরকে পরিচালনা করেছেন, সে গল্পই উঠে এসেছে বইটিতে।
শ্রম পরিদর্শক পদে যোগ দেওয়ার ৩৪ বছর পর পদোন্নতি পেলেন মাহমুদুল হক। স্বপ্ন দেখতেন পদোন্নতির সিঁড়ি বেয়ে একসময় প্রতিষ্ঠানের সর্বোচ্চ পদে যাবেন। সেই স্বপ্ন আট বছরেই লুটিয়ে পড়ল জ্যেষ্ঠতার তালিকায়।
১৯৮৮ সালে যোগ দেওয়ায় ’৯৫ সালেই পদোন্নতি পাওয়ার কথা ছিল মাহমুদুল হকের। কর্তৃপক্ষের অবহেলা আর প্রতিষ্ঠানপ্রধানের অদূরদর্শিতা সে স্বপ্ন শুরুতেই বাধা পেল। এন্ট্রি পোস্টে যোগ দেওয়ার পর তার মতো অন্য কর্মচারীরা যখন পদোন্নতির স্বপ্নে বিভোর, তখন তাতে গা-ই করলেন না সেই সময়ের প্রতিষ্ঠানপ্রধান।
মাহমুদুল অপেক্ষায় রইলেন পরিবর্তিত পরিস্থিতির জন্য। সেই পরিবর্তন আসতে আসতে চাকরিতে কেটে গেল আঠারো বছর। আঠারোতে মানুষ প্রাপ্তবয়স্ক হয়। তিনিও ভাবলেন আঠারোতে তিনি না হয় ‘জব ম্যাচিউরিটি’তে পৌঁছালেন। চাকরির আঠারো বছরে পদোন্নতি পেলেও মন্দ হয় না।
কিন্তু অবাক ব্যাপার, কর্তৃপক্ষ পদোন্নতি দিল, তবে মাহমুদুলকে ছাড়া। পদোন্নতির প্রজ্ঞাপনে কোথাও তার নাম নেই। হতাশায় মুষড়ে পড়লেন তিনি। জুনিয়র কর্মকর্তারদের নাম আছে, অথচ তার নাম নেই। প্রতিষ্ঠানের নীতি-নির্ধারকদের দরজায় দরজায় ঘুরলেন ন্যায়বিচারের আশায়। কিন্তু তারা পাত্তাই দিলেন না বিষয়টি।
তারা আমলে না নিলেও মাহমুদুলের স্বপ্ন তো সেখানেই থেমে যাওয়ার নয়। সেই স্বপ্ন পুঁজি করে তিনি গেলেন আদালতে। সেই ভিন্ন জগৎটাও কম চ্যালেঞ্জিং ছিল না। প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনাল তার পক্ষে রায় দিল। মাহমুদুল আনন্দে আত্মহারা হলেন। কিন্তু সেই আনন্দ বেশি দিন স্থায়ী হলো না। সরকার আপিল করল প্রশাসনিক আপিল ট্রাইব্যুনালে। মামলার ফল উল্টে গেল। হতাশায় ভেঙে না পড়ে তিনি গেলেন উচ্চ আদালতে। আপিল বিভাগে সিভিল আপিল মামলা করলে প্রশাসনিক আপিল আদালতের রায় বাতিল হয়। প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনালের রায় বহাল থাকে।
জলে নেমে কুমিরের সঙ্গে লড়াই করার মতো মাহমুদুল হকও যেন সরকারের সঙ্গে লড়াই করতে নামলেন। আপিল বিভাগের রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ পিটিশন করল সরকারপক্ষ। একপর্যায়ে সরকার বুঝতে পারল কোনোভাবেই তারা এ মামলায় জিততে পারবে না। সরকারপক্ষে রিভিউ পিটিশন প্রত্যাহার করা হলো। আদালত সরকারের পদোন্নতির প্রজ্ঞাপনকে আইনের কর্তৃত্ববহির্ভূত বলে ঘোষণা করল। জুনিয়র কর্মকর্তাকে যেদিন থেকে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে এবং যতবার পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে, একইভাবে মাহমুদুল হককে পদোন্নতি দেওয়ার নির্দেশ দেয় আদালত। বকেয়া বেতন-ভাতাসহ সব পাওনা কড়ায়-গ-ায় পরিশোধের নির্দেশনা আসে।
আদালতের এই নির্দেশনা দেওয়া হয় ২০১৮ সালে। এরপর আদেশ বাস্তবায়ন করতে সরকারের লেগে যায় প্রায় চার বছর। ২০২২ সালের ১১ মে তাকে পদোন্নতি দেওয়া হয়। ৩৪ বছর পর পদোন্নতির প্রজ্ঞাপন পেয়ে স্তম্ভিত হয়ে গেলেন মাহমুদুল হক। আবারও তাকে ঠকিয়েছে সরকার। জুনিয়র কর্মকর্তা যুগ্ম মহাপরিদর্শক হলেও তাকে পদোন্নতি দেওয়া হয় তার দুই ধাপ নিচের সহকারী মহাপরিদর্শক পদে। উপমহাপরিদর্শক ও যুগ্ম মহাপরিদর্শক আরও ওপরের পদ। আদালতের নির্দেশনার সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।
কখনোই প্রজ্ঞাপন মাহমুদুল হকের জন্য ভালো বার্তা বয়ে আনেনি। পুরো চাকরিজীবন আদালতের বারান্দায় ঘুরে তিনি পৌঁছেছেন অবসরের প্রান্তসীমায়। আর তিন মাস পরে তিনি অবসরে যাবেন। যৌবন ও মধ্য বয়সের দিনগুলোতে আদালতে ঘুরে বেড়ানোর শক্তি ও সাহস থাকলেও মাহমুদুল হক এখন সেই সাহস দেখাতে দ্বিতীয়বার চিন্তা করছেন। পারবেন তো শেষ সময়ে এসে সরকারের অপরিণামদর্শী সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপসহীন মনোভাব দেখিয়ে শেষ পর্যন্ত লড়ে যেতে?
মাহমুদুল হকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে দেশ রূপান্তরকে জানিয়েছেন, তিনি আদালতের কাছেই জানতে চাইবেন, আদালতের বিচার না মানার শাস্তি কী।
পুরো ঘটনা শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা শুনিয়ে জানতে চাইলেন, কতজনের পক্ষে মাহমুদুল হকের মতো লড়াকু মনোভাব দেখানো সম্ভব?
সীমাহীন আনন্দ নিয়ে মানুষ সরকারি চাকরিতে যোগ দেয়। এরপরই তার মধ্যে যে স্বপ্নটি দানা বাঁধে তা হচ্ছে পদোন্নতি। কার কীভাবে পদোন্নতি হবে তা আইনকানুন, নিয়ম-নীতি দিয়ে পোক্ত করা। পুরো বিষয়টি কাচের মতো স্বচ্ছ। এরপরও পদোন্নতি হয় না। দিন, মাস, বছর পার হয়ে যায়, কাক্সিক্ষত পদোন্নতির দেখা মেলে না।
বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের (বিসিএস) ২৬টি ক্যাডারের মধ্যে হাতে গোনা কয়েকটি ক্যাডারে নিয়মিত পদোন্নতি হয়। বাকি ক্যাডারে হতাশা। তার চেয়েও কঠিন পরিস্থিতি নন-ক্যাডারে। ক্যাডার কর্মকর্তারা নিজের পদোন্নতির ষোলো আনা বুঝে নিয়ে ঠেকিয়ে দেন নন-ক্যাডার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পদোন্নতি। সংখ্যায় বেশি হওয়ায় নন-ক্যাডাররা একজন আরেকজনকে নানা ইস্যুতে আটকাতে গিয়ে পুরো প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করেন। সরকারের মোট কর্মকর্তা-কর্মচারীর প্রায় তিন-চতুর্থাংশ কর্মচারী। সেই হিসেবে সরকারের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনবলের পদোন্নতি হয় না। পে-কমিশন হলেই কর্মচারীদের পদোন্নতির জন্য করুণা উথলে ওঠে। এমনকি ব্লকপোস্টে যারা আছেন, তাদের জন্যও পদোন্নতির বিকল্প সুবিধা বাতলে দেওয়া হয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কর্মচারীদের পদোন্নতি উপেক্ষিতই থাকে।
যখন সময়মতো পদোন্নতি হয় না, তখন নানা ধরনের সমস্যা দেখা দিতে থাকে। এসব সমস্যা সংশ্লিষ্ট দপ্তর-অধিদপ্তরের চৌহদ্দি পেরিয়ে আমজনতাকেও প্রভাবিত করে। নন-ক্যাডার কর্মকর্তা আর সঙ্গে কর্মচারীরা যখন বুঝতে পারেন পদোন্নতির আশা তাদের নেই, তখন তারা দুহাতে টাকা কামানোর ধান্দায় মেতে ওঠেন। এতে করে ঘুষের সংস্কৃতি সমাজে ছড়িয়ে পড়ে। অকার্যকর পথে হাঁটে রাষ্ট্র। সাধারণ মানুষ টাকা ছাড়া তাদের কাছ থেকে কোনো সেবা পায় না, ব্যবসায়ীরা নতুন কোনো আইডিয়া নিয়ে ব্যবসায় আসেন না, ব্যবসাবান্ধব পরিস্থিতি না থাকায় মুখ ফিরিয়ে নেন দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীরা। প্রধানমন্ত্রীর বারবার আহ্বানেও বিনিয়োগকারীরা সাড়া দেন না। সাধারণ মানুষকে নিঃস্বার্থভাবে সেবা দেওয়ার বাণীতেও উদ্বুদ্ধ হন না সংশ্লিষ্টরা।
এই পরিস্থিতিতে অনিয়ম আটকে রাখার সব কৌশলই ব্যর্থ হচ্ছে। যথাযথ তদারকি না থাকায় বিভাগীয় ব্যবস্থা অকার্যকর হয়ে গেছে। ৩ লাখ ৫৩ হাজার ৩৫০টি অডিট আপত্তি ঝুলে থাকায় অডিট প্রতিষ্ঠানগুলোও আগ্রহ হারিয়ে নিজেরাই জড়িয়ে পড়ছে অনিয়মে। দন্তহীন বাঘে পরিণত হওয়ার তথ্য সাংবাদিকদের জানান দুর্নীতি দমন কমিশনের প্রধান নিজেই।
নন-ক্যাডার কর্মকর্তা ও কর্মচারীর পদোন্নতির বড় একটা অংশ আটকে রাখে মন্ত্রণালয়গুলো। এই আটকে রাখার কারণ হচ্ছে মন্ত্রণালয়ের নীতিনির্ধারকদের স্বার্থ। বিভিন্ন দপ্তর, অধিদপ্তরে নন-ক্যাডার কর্মকর্তাদের পদোন্নতি দিলে নিয়ম অনুযায়ী পদোন্নতিপ্রাপ্তদের ওপরের পদে বসাতে হবে। এতে মন্ত্রণালয়ের নীতিনির্ধারকদের এককালীন লাভ; অর্থাৎ টাকার বিনিময়ে একবার পদোন্নতি দেওয়া যাবে। কিন্তু পদোন্নতি না দিয়ে সংশ্লিষ্টদের চলতি দায়িত্ব দিলে বছরজুড়ে টাকা আয় করতে পারেন নীতিনির্ধারকরা। দপ্তর, অধিদপ্তরে বড় অঙ্কের টাকার বিনিময়ে চলতি দায়িত্ব দেওয়া হয়। চলতি দায়িত্বপ্রাপ্তদের আয় অনুসারে নীতিনির্ধারকদের মাসোহারা দিতে হয়। নন-ক্যাডারদের পদোন্নতি দেওয়া হলে মন্ত্রণালয়ের নীতিনির্ধারকদের নিয়মিত আয়ের উৎস বন্ধ হয়ে যায়। এ কারণে আইন বা বিধি-বিধানের ফাঁকফোকর গলিয়ে নন-ক্যাডার এবং কর্মচারীদের পদোন্নতি আটকে রাখার সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হয়।
সরকারি কর্মচারী সংহতি পরিষদের সভাপতি নিজামুল ইসলাম ভূঁইয়া মিলন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সচিবালয় এবং সারা দেশের সরকারি কর্মচারীদের পদোন্নতির মধ্যে একটু পার্থক্য আছে। নন-ক্যাডারের কিছু বিষয় ছাড়া সচিবালয়ের কর্মচারীরা সময়মতো পদোন্নতি পায়। কিন্তু সচিবালয়ের বাইরে পদোন্নতি হয় না বললেই চলে। সচিবালয়ে মাত্র ১০ হাজার কর্মচারী আছেন। সচিবালয়ের বাইরে আছেন ১০ লাখের বেশি। এসব কর্মচারীর পদোন্নতি নিয়ে বহু বছর ধরে চেষ্টা করছি। কিন্তু কোনো ফল পাইনি। সর্বশেষ মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ এ সমস্যা নিয়ে কাজ করার জন্য একটি কমিটি করে দিয়েছে। কমিটি কিছু সুপারিশ করেছে। ব্যস, ওই পর্যন্তই। এরপর এর কোনো অগ্রগতি নেই। যেখানে সরকারপ্রধান বলেন, চাকরিজীবনে সবাই যেন কমপক্ষে একটি পদোন্নতি পায়। সেখানে বহু কর্মচারী কোনো পদোন্নতি ছাড়াই অবসরে যাচ্ছেন। সরকারপ্রধানের নির্দেশনা উপেক্ষা করেন আমলারা। তাদের আগ্রহ কেনা-কাটায়, বিদেশ ভ্রমণে, নতুন জনবল নিয়োগে। এসব করলে তাদের লাভ। কর্মচারী পদোন্নতি দিতে তাদের কোনো আগ্রহ নেই। এর নিশ্চয়ই একটা শেষ আছে। বৈষম্যের পরিণতি কী হয়, তা অনেক দাম দিয়ে বিডিআর বিদ্রোহে আমরা দেখেছি।’
কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের নন-ক্যাডারদের পদোন্নতি ঝুলছে বছরের পর বছর। এই অধিদপ্তরের কয়েক শ কর্মকর্তা পাঁচ বছর আগেই পদোন্নতির যোগ্য হয়েছেন। নানা কায়দা-কানুন করে তাদের পদোন্নতি ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। অধিদপ্তরের মহাপরিদর্শক সংশ্লিষ্টদের জ্যেষ্ঠতা নির্ধারণ করে তাদের পদোন্নতির প্রক্রিয়া এগিয়ে নিলেও শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় নতুন করে জ্যেষ্ঠতার তালিকা করার নামে সময়ক্ষেপণ করছে। জ্যেষ্ঠতার তালিকা করার পর এখন তাদের পারিবারিক সদস্যদের তথ্য যাচাই-বাছাই করার জন্য একটি সংস্থাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। ওই সংস্থা নন-ক্যাডার কর্মকর্তাদের পরিবারের সদস্যদেরও তথ্য তালাশ করছে। তাদের আত্মীয়দের মধ্যে কে কোন দলের সমর্থক তার তথ্য নিচ্ছেন সংস্থার কর্মকর্তারা।
গত মাসে শেষ হওয়া জেলা প্রশাসক সম্মেলনে দায়িত্ব পালন করছিলেন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের একজন প্রশাসনিক কর্মকর্তা। ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনের সুরম্য ভবনে দায়িত্ব পালন করলেও ওই নন-ক্যাডার কর্মকর্তার মনের অবস্থাটা মনোহর ছিল না। কেমন আছেন জানতে চাইলে ওই নন-ক্যাডার কর্মকর্তা বলেন, ‘ভালো নেই। চাকরি করছি, পদোন্নতি নেই। ২০১৫ সালের আগে পদোন্নতি না পেলেও টাইমস্কেল ও সিলেকশন গ্রেড ছিল। তাও তুলে দেওয়া হয়েছে। তুলে দেওয়ার সময় বলা হয়েছিল সময়মতো পদোন্নতি হবে, ব্লকপোস্টধারীদের দেওয়া হবে বিশেষ আর্থিক সুবিধা। এসবের কোনোটাই হয়নি।’
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসে একটি প্রশাসনিক আদেশ খুবই পরিচিত। সেই প্রশাসনিক আদেশ ১৬/২০১৮ অনুযায়ী ৭০ ভাগ কর্মকর্তা সরাসরি নিয়োগ হবে। আর ৩০ ভাগ পদোন্নতির মাধ্যমে পূরণ করা হয়। ৭০ ভাগ কর্মকর্তা সরাসরি নিয়োগের ফলে বিমানে বর্তমানে প্রয়োজনের তুলনায় কর্মকর্তা বেশি। নীতিনির্ধারকদের নতুন জনবল নিয়োগে আগ্রহ বেশি। পুরনোদের পদোন্নতি দিয়ে ওপরের পদ পূরণের চেয়ে তারা নতুন নিয়োগে যান। ফলে কারও চাকরিজীবনে একবারও পদোন্নতি হয় না। নামমাত্র যে পদোন্নতি হয় তা অনিয়মে ভরপুর।
নন-ক্যাডার ছাড়াও ১৩তম গ্রেড থেকে ২০তম গ্রেড পর্যন্ত পদোন্নতি হয় না বললেই চলে। প্রতিটি দপ্তরে এসব গ্রেডের পদোন্নতি আটকে আছে। অথচ এসব গ্রেডেই বেশি লোক চাকরি করছেন। সরকারের মোট জনবল প্রায় ১৫ লাখ ৫৪ হাজার ৯২৭ জন। প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির ২৩ শতাংশ পদের মধ্যেও নন-ক্যাডার রয়েছেন। এ ছাড়া তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির ৭৭ শতাংশ পদই ১৩তম থেকে তার পরের গ্রেডের। এতে করে সহজেই বোঝা যায় সরকারের জনবলের বড় অংশই পদোন্নতির চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে। সরকারের জনবলের এই বিশাল অংশ যখন পদোন্নতি নিয়ে অনিশ্চয়তায় ভোগেন, তখন তারা নানা অনিয়মে ঝুঁকে পড়েন।
বেশির ভাগ দপ্তর, অধিদপ্তর পরিচালনা করেন বিভিন্ন ক্যাডারের কর্মকর্তারা। তারা তাদের প্রশাসনিক মন্ত্রণালয় থেকে প্রেষণে ক্যাডার কর্মকর্তাদের দপ্তর, অধিদপ্তরে পাঠান। প্রেষণে গিয়ে অনেক কর্মকর্তা শুধু রুটিন কাজটুকুই করতে চান। শূন্যপদে জনবল নিয়োগ বা পদোন্নতি রুটিন কাজ না হওয়ায় তা উপেক্ষিত থাকে। তা ছাড়া পদোন্নতি দিতে গিয়ে নানা জটিলতার সৃষ্টি হয়; বিশেষ করে মন্ত্রণালয় থেকে মন্ত্রী বা সচিব তাদের পছন্দের লোককে পদোন্নতি দেওয়ার জন্য সংস্থার প্রধানকে চাপ দেন। এই চাপ উপেক্ষা করার কোনো সুযোগ না থাকায় অযোগ্য লোককে পদোন্নতি দিতে হয় সংস্থার প্রধানকে। এই জটিলতা থেকে দূরে থাকার জন্য সংশ্লিষ্টদের পদোন্নতি দেওয়া থেকেও দূরে থাকেন সংস্থার প্রধানরা।
নন-ক্যাডার কর্মকর্তা এবং কর্মচারীদের পদোন্নতি না হওয়ার কারণ জানতে চাইলে খাদ্য অধিদপ্তরের ১৪ গ্রেডের একজন কর্মচারী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বাইরের লোকের ইচ্ছাটাই জাগে না আমাদের পদোন্নতি দিতে। আমাদের দপ্তরপ্রধান মহাপরিচালক প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তা। অতিরিক্ত মহাপরিচালকও অনেক সময় প্রশাসন ক্যাডার থেকে প্রেষণে আসেন। তাদের কেন ইচ্ছা জাগবে আমাদের পদোন্নতি নিয়ে। যদি এসব পদে ফুড ক্যাডারের কর্মকর্তা থাকতেন, তাহলে তারা খাদ্য বিভাগের সমস্যা বুঝতেন। তা ছাড়া নিয়োগ বিধি সংশোধনের নামে আমরা দীর্ঘদিন একই পদে আটকে আছি।’
গত বছরের ৩ ফেব্রুয়ারি সচিবালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা এবং ব্যক্তিগত কর্মকর্তারা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবের কাছে এক আবেদনে জানান, ‘বর্তমানে সচিবালয়ে প্রায় দুই হাজারের বেশি প্রশাসনিক ও ব্যক্তিগত কর্মকর্তা কর্মরত। এর বিপরীতে ক্যাডারবহির্ভূত সংরক্ষিত পদের সংখ্যা ২৬৭টি, যা খুবই নগণ্য। ফলে একই পদে ২০-২২ বছরের বেশি সময় কর্মরত থাকার পরও অনেকে পদোন্নতি পাচ্ছেন না। পদোন্নতি না পাওয়ায় সৃষ্ট হতাশার ফলে কর্মস্পৃহা নষ্ট হচ্ছে।’
সরকার এ সমস্যা থেকে কীভাবে বের হতে পারে জানতে চাইলে জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞ ফিরোজ মিয়া দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এসব সমস্যা সমাধানে সরকার সব সময়ই কাজ করে। কিন্তু এ চেষ্টা জটিলতার তুলনায় কম। এ বিষয়ে আরও এফোর্ট দিতে হবে।
বগুড়া-৪ (কাহালু-নন্দীগ্রাম) আসনের উপনির্বাচনে বেসরকারিভাবে ১১২ কেন্দ্রের ফলাফলে ৯৫১ ভোটের ব্যবধানে হেরে গেছেন বহুল আলোচিত স্বতন্ত্র প্রার্থী আশরাফুল হোসেন আলম ওরফে হিরো আলম। একতারা প্রতীক নিয়ে তিনি পেয়েছেন ১৯ হাজার ৪৮৬ ভোট। এ আসনে জয় পেয়েছেন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জাসদ (ইনু) সমর্থিত প্রার্থী অ্যাডভোকেট রেজাউল করিম তানসেন। মশাল প্রতীক নিয়ে তিনি পেয়েছেন ২০ হাজার ৪৩৭ ভোট।
বুধবার (১ ফেব্রুয়ারি) সকাল থেকে বগুড়ার দুইটিসহ মোট ৬ আসনে উপনির্বাচনের ভোট গ্রহণ শুরু হয়। ২০২২ সালের ১০ ডিসেম্বর বিএনপির এমপিরা পদত্যাগের ঘোষণা দিলে এ আসনগুলো শূন্য হয়।
তখন, বগুড়া-৬ (সদর) এবং বগুড়া-৪ (কাহালু-নন্দীগ্রাম) আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার ঘোষণা দেন হিরো আলম। নির্বাচন কমিশন একদফা তার প্রার্থিতা বাতিল করলেও পরে আদালতে গিয়ে প্রার্থিতা ফিরে পান তিনি।
বগুড়া-৪ (কাহালু-নন্দীগ্রাম) ও বগুড়া-৬ (সদর) আসনের উপনির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. আশরাফুল হোসেন হিরো আলম বুধবার (১ ফেব্রুয়ারি) দুপুর পর্যন্ত ভোটকেন্দ্র পরিদর্শন করে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বলেন, ‘সদরের কেন্দ্র সব দখল হয়্যা গ্যাছে। ডিসি-এসপিক কয়্যাও কোনো কাম হচ্চে না। সদরের আশা সব শ্যাষ। কাহালু-নন্দীগামের অনেক কেন্দ্র ঘুরে ঘুরে দেকছি। ভোট খুব সুষ্ঠু হচ্চে। মাঠের অবস্থা ভালো। কাহালু-নন্দীগ্রামে নিশ্চিত এমপি হচ্চি।’
এর আগে, সকালে সদর উপজেলার এরুলিয়া উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট দিতে যান তিনি। ভোট দেওয়ার পর হিরো আলম বলেন, ‘বগুড়া-৬ আসনে আগে থেকেই গোলযোগের আশঙ্কা করেছিলাম, সেটাই সত্যি হয়েছে। নির্বাচনি এজেন্টদের কেন্দ্র থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে। তবে বগুড়া-৪ আসনে ভোট সুষ্ঠু হচ্ছে। এভাবে সুষ্ঠু ভোট হলে এই আসনে আমিই বিজয়ী হবো।’
এদিকে বগুড়া-৬ আসনের উপনির্বাচনে কয়েকটি কেন্দ্রে নৌকা প্রার্থীর এজেন্ট বাদে অন্য এজেন্টদের ভোটকক্ষ থেকে বের করে দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। আজ সকালে হিরো আলমসহ তিনজন প্রার্থী এ অভিযোগ করেন। আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা তাদের এজেন্টদের বের করে দিয়েছেন বলে সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করা হয়।
আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৭ লাখ ৫০ হাজার ১৯৪ কোটি টাকা খরচের হিসাব ধরে বাজেট প্রস্তাব প্রণয়নের কাজ শুরু করেছে সরকার। যা চলতি অর্থবছরের তুলনায় ৭২ হাজার ১৩০ কোটি টাকা বেশি। অভ্যন্তরীণ সম্পদ থেকে খরচের বেশিরভাগ অর্থ জোগাড়ের পরিকল্পনা করা হয়েছে। এ লক্ষ্যমাত্রা প্রায় ১৯ শতাংশ বাড়ানো হবে। আসছে জুনের প্রথমভাগে জাতীয় সংসদে আগামী অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাব উপস্থাপন করা হবে। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
আগামী বাজেট হবে জাতীয় নির্বাচনের আগে বর্তমান সরকারের চলতি মেয়াদের শেষ বাজেট। তাই এখানে নেওয়া কোনো পদক্ষেপে যেন আওয়ামী লীগ সরকার সমালোচনার মুখে না পড়ে এ জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়সহ সংশ্লিষ্টদের থাকছে বিশেষ নজর। এ ছাড়া রয়েছে অর্থনৈতিক সংকট। তাই সংকট ও নির্বাচন দুটোই মাথায় রাখতে হচ্ছে সরকারের নীতিনির্ধারকদের।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, আগামী অর্থবছরের বাজেট নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে এরই মধ্যে মন্ত্রণালয়ে মোটাদাগে একটি রূপরেখা পাঠানো হয়েছে। নতুন পরিকল্পনার পাশাপাশি গত তিন মেয়াদে সরকার কী কী উন্নয়ন করেছে আগামী বাজেট প্রস্তাবে তা মনে করিয়ে দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। গত ডিসেম্বরের শেষের দিকে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি এবং উচ্চপর্যায়ের সরকারি নীতিনির্ধারকদের উপস্থিতিতে অর্থ মন্ত্রণালয়ের ‘বাজেট মনিটরিং ও সম্পদ কমিটির বৈঠকে’ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে পাঠানো আগামী বাজেটের রূপরেখা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আর গত সপ্তাহে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে (এনবিআর) চিঠি পাঠিয়ে অভ্যন্তরীণ সম্পদ থেকে রাজস্ব আদায়ের কৌশল নির্ধারণে কাজ শুরু করতে বলা হয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, যে হিসাব ধরে অর্থ মন্ত্রণালয় বাজেট প্রস্তাব প্রস্তুতির কাজ শুরু করেছে তা কয়েক দফা খতিয়ে দেখা হবে। অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে চূড়ান্ত করে প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানো হবে। তিনি প্রয়োজনীয় সংশোধন, যোগ-বিয়োগ করে আবারও অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠাবেন। বাজেট প্রস্তাব চূড়ান্ত হওয়ার আগেও অনেক কিছু পরিবর্তন হয়ে থাকে।
ডলার সংকটে পণ্য আমদানির জন্য ঋণপত্র বা এলসি খুলতে পারছেন না সাধারণ ব্যবসায়ীরা। চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম থাকায় পণ্যের দাম বাড়ছে। কাঁচামাল সংকটে বিপাকে শিল্প খাত। ব্যাংক খাতে অস্থিরতা। নতুন চাকরির সুসংবাদ নেই বললেই চলে। দফায় দফায় জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি। খুব শিগগিরই এসব সংকট কেটে যাবে বলে মনে করছেন না অর্থনীতিবিদরা। অর্থ সংগ্রহ করতে গিয়ে ঋণদাতা সংস্থার কঠিন শর্তের বেড়াজালে আছে সরকার। এমন পরিস্থিতিতেই আগামী অর্থবছরের বাজেট তৈরির কাজ শুরু হয়েছে।
অর্থ মন্ত্রণালয় ও এনবিআর সূত্র জানিয়েছে, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে সৃষ্ট বৈশি^ক অস্থিরতা মোকাবিলায় সরকার কী কী পদক্ষেপ নেবে তা আগামী বাজেটে স্পষ্ট করা হবে। দেশের চলমান অর্থনৈতিক সংকট দূর করতে একগুচ্ছ পরিকল্পনার কথাও বলা হবে। তবে শত সংকটের মধ্যেও আগামী বাজেটে ব্যবসায়ীদের দাবি অনুযায়ী যতটা সুবিধা দেওয়া সম্ভব তা দিতে সরকারের ঊর্ধ্বতন পর্যায় থেকে বাজেট প্রস্তুত কমিটির কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বিশেষভাবে কাঁচামাল আমদানিতে রাজস্ব ছাড় দিতে হিসাব কষা হচ্ছে।
দেশের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ডলার সংকটে আমদানি রপ্তানি প্রায় বন্ধ। ব্যবসা-বাণিজ্যে সংকটকাল চলছে। এমন পরিস্থিতিতে আগামী বাজেটে আমাদের দাবি অনুযায়ী নগদ সহায়তা দিতে হবে। রাজস্ব ছাড় দিতে হবে। কর অবকাশ ও কর অব্যাহতি বাড়াতে দিতে হবে।’
ঋণদাতা সংস্থা আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) দেওয়া সংস্কারের শর্ত মানার অঙ্গীকার করে সরকার ঋণ পেয়েছে। শর্ত পালনে ব্যর্থ হলে ঋণের যেকোনো কিস্তি আটকে দিতে পারে প্রতিষ্ঠানটি। পর্যায়ক্রমে প্রতি অর্থবছরের বাজেটে এসব সংস্কার প্রস্তাব অন্তর্ভুক্ত করে বাস্তবায়ন করা হবে। আসছে বাজেটে শর্ত মানার চেষ্টা থাকবে। বিশেষভাবে অতীতের মতো ঢালাওভাবে কর অব্যাহতি দেওয়া হবে না। আর্থিক খাতের সংস্কারের কিছু ঘোষণা থাকবে। বিশেষভাবে ব্যাংক খাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় জোর দেওয়া হবে। আইএমএফের সুপারিশে এরই মধ্যে ভ্যাট আইন চূড়ান্ত হয়েছে। আয়কর আইন মন্ত্রিসভার বৈঠকে অনুমোদন হয়েছে। শুল্ক আইন মন্ত্রণালয়ে ভেটিংয়ে আছে। এ তিন আইন অনুযায়ী রাজস্ব আদায়ের কৌশল নির্ধারণ করা হবে। আসছে বাজেটে টেকসই অর্থনৈতিক সংস্কারের অংশ হিসেবে সরকারি আর্থিক ব্যবস্থাপনা শক্তিশালী করার কথা বলা হবে। জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় কিছু উদ্যোগের কথা শোনানো হবে।
পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ঋণদাতা সংস্থার শর্ত মানার কথা বলা হলেও সব আগামী বাজেটে একবারে অন্তর্ভুক্ত করা যাবে না। পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়ন করতে হবে। না হলে অর্থনীতির গতি কমে যাবে।’
আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটে এনবিআর-বহির্ভূত খাত এবং এনবিআর খাতের জন্য মোট আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হতে পারে ৪ লাখ ৮৬ হাজার কোটি টাকা। এনবিআরের রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা চলতি অর্থবছরের চেয়ে ১৯ শতাংশ বাড়িয়ে ধরা হতে পারে। এতে লক্ষ্যমাত্রা ৪ লাখ ৫০ হাজার কোটি টাকা হবে। এনবিআর এ লক্ষ্যমাত্রা কমানোর জোরালো আবেদন করেছে। কিন্তু তা আমলে আনেননি অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। নতুন অর্থবছরে মোট রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে প্রায় ৩৫ শতাংশ বা ১ লাখ ৫৭ হাজার ৫০০ কোটি টাকা ভ্যাট বা মূল্য সংযোজন কর (মূসক) হিসেবে, ৩৪ শতাংশ বা ১ লাখ ৫৩ হাজার কোটি টাকা আয়কর হিসেবে এবং ৩১ শতাংশ বা বাকি ১ লাখ ৩৯ হাজার ৫০০ কোটি টাকা শুল্ক হিসেবে সংগ্রহ করার কথা বলা হতে পারে বলে জানা গেছে।
এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল মজিদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রার কথা শুধু বললেই হবে না। কীভাবে অর্জিত হবে, সেটি নিয়ে সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা না থাকলে প্রতিবারের মতো ঘাটতি থাকবে। রাজস্ব ঘাটতি হলে অর্থনীতিতে আয় ব্যয়ের ভারসাম্য নষ্ট হয়। তাই এনবিআরের লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবসম্মত হওয়া উচিত।’
এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, আগামী অর্থবছরের জন্য নির্ধারিত এ লক্ষ্যমাত্রা পূরণে এনবিআর উৎসে করের আওতা বাড়ানোর পরিকল্পনা করেছে। সম্পদশালীদের ওপর নজর বাড়ানো হবে। শুধু বেশি সম্পদ থাকার কারণে অতিরিক্ত কর গুনতে হবে। সারচার্জ বহাল রাখা হবে। সুপারট্যাক্স গ্রুপকে উচ্চহারে গুনতে হবে কর। আগামী অর্থবছরেও অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগের সুবিধা থাকবে। অর্থ পাচারোধে আইনের শাসন কঠোর করা হবে। অর্থ পাচার আটকাতে প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ানো হবে। করপোরেট কর কমানোর দাবি থাকলেও তা মানা হবে না। অন্যদিকে নির্বাচনের আগের বাজেট হওয়ায় করমুক্ত আয় সীমা বাড়ানোর বিষয়টি বিবেচনা করতে খোদ অর্থমন্ত্রী বললেও রাজস্ব আদায় কমে যাবে এমন যুক্তি দেখিয়ে এনবিআর রাজি নয় বলে জানিয়ে দিয়েছে। কমানো হবে শিল্পের অধিকাংশ কাঁচামাল আমদানি শুল্ক। ডলারের ওপর চাপ কমাতে বেশি ব্যবহৃত পণ্য আমদানিতে রাজস্ব ছাড় দেওয়া হবে। বিলাসবহুল পণ্য আমদানি কমাতে সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা হবে। তৈরি পোশাক খাতের সব সুবিধা বহাল রাখা হবে। শিল্পের অন্যান্য খাতেও কতটা সুবিধা বাড়ানো যায় তা নিয়ে এনবিআর হিসাব করছে।
অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে দেওয়া বাজেট প্রস্তুতিবিষয়ক প্রতিবেদনে উল্লেখ আছে, আগামী অর্থবছরের বাজেটে উন্নয়ন প্রকল্পে ২ লাখ ৬৫ হাজার কোটি এবং ঘাটতি ২ লাখ ৬৪ হাজার ১৯৪ কোটি টাকা বরাদ্দ ধরা হতে পারে। আগামী অর্থবছরে জিডিপির ৬ শতাংশ ঘাটতি ধরে ২ লাখ ৬৪ হাজার ১৯৪ কোটি টাকা নির্ধারণ করা হতে পারে। মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি ৭ দশমিক ৫ শতাংশ ধরা হতে পারে বলে জানা যায়। ঋণদাতা সংস্থার কাছ থেকে ভর্তুকি কমানোর চাপ থাকলেও আগামীবার এ খাতে বেশি ব্যয় ধরা হতে পারে। এ খাতে ১ লাখ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হতে পারে। চলতি অর্থবছরে ভর্তুকি ব্যয় আছে ৮৬ হাজার কোটি টাকা।
উল্লেখ্য, গত সোমবার রাতে আইএমএফ বাংলাদেশকে ঋণ অনুমোদন করে। ঋণদাতা সংস্থাটির কাছ থেকে বাংলাদেশ ছয় কিস্তিতে তিন বছরে ৪৭০ কোটি ডলার পাচ্ছে। ঋণ প্রস্তাব অনুমোদনের দিন আইএমএফ ২০২৭ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের অর্থনীতির বিভিন্ন সূচক নিয়ে পূর্বাভাস দেয়। সংস্থাটি বলছে, ২০২১-২২ অর্থবছরে দেশের প্রবৃদ্ধি ছিল ৭ দশমিক ২ শতাংশ। চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি হতে পারে ৫ দশমিক ৫ শতাংশ। এরপর ২০২৩-২৪ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি বেড়ে হতে পারে ৬ দশমিক ৫ শতাংশ এবং ২০২৪-২৫ অর্থবছরে তা হতে পারে ৭ দশমিক ১ শতাংশ।
এতে রিজার্ভ সম্পর্কে বলা হয়, চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছর শেষে দেশের বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভ কমে দাঁড়াবে ৩ হাজার কোটি ডলার। তবে ২০২৩-২৪ অর্থবছর থেকে তা ধারাবাহিকভাবে বাড়বে এবং ২০২৬-২৭ অর্থবছর শেষে প্রথমবারের মতো রিজার্ভ ৫ হাজার কোটি ডলার ছাড়িয়ে যেতে পারে।