
ক্রীড়া সাংবাদিকদের সংগঠন ইন্টারন্যাশনাল স্পোর্টস প্রেস অ্যাসোসিয়েশনের (এআইপিএস) এশিয়া মহাদেশীয় অংশ, এআইপিএস এশিয়ার কার্যনির্বাহী সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন বাংলাদেশের সনৎ বাবলা। দৈনিক কালের কণ্ঠের বিশেষ প্রতিনিধি বাবলা বাংলাদেশ ক্রীড়ালেখক সমিতির (বিএসপিএ) সভাপতি। মঙ্গলবার রোমে মহাদেশীয় নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন বাবলা। এআইপিএস এশিয়ার নতুন সভাপতি হয়েছেন হি ডং জং। এআইপিএস এশিয়ার নতুন এই কার্যনির্বাহী কমিটি আগামী চার বছরের জন্য দায়িত্ব পালন করবে।
বোলিংয়ে অবিশ্বাস্য টার্নে অবাক সবাই। উইকেটরক্ষকের কাছে যাওয়ার আগে কিছু বল পড়ছে দুই ড্রপ। এশিয়া কাপ দিয়ে আন্তর্জাতিক ভেন্যুর মর্যাদা পাওয়া সিলেট একাডেমি মাঠের পিচের এমন অদ্ভুতুড়ে কান্ড টুর্নামেন্টের শুরু থেকেই। যদিও সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামের আউটার গ্রাউন্ডের উইকেট আলাদাভাবে আলোচনায় পাকিস্তানের বিপক্ষে স্বাগতিকদের হারের পর থেকে। সালমা খাতুন তো সমালোচনা করেছেনই, জয় পেয়েও পাকিস্তানি ওপেনার সিদ্রা আমিনের মন্তব্য, ‘এমন উইকেট টি-টোয়েন্টির জন্য মোটেও আদর্শিক নয়।’ এবার উইকেট নিয়ে বিস্ফোরক মন্তব্য স্বাগতিক দলের কোচ মাহমুদ ইমনের। তার মতে, এমন উইকেট আসছে বিশ্বকাপের প্রস্তুতিকেই পিছিয়ে দিতে যথেষ্ট।
সিলেটের জেলা দল, বিভাগীয় দলের কোচের দায়িত্বে দীর্ঘদিন ছিলেন মাহমুদ ইমন। সে কারণে সিলেট ক্রিকেট স্টেডিয়াম তার কাছে অনেকটা হাতের তালুর মতোই পরিচিত। তাছাড়া নারী ক্রিকেটারদের অনুশীলন ক্যাম্প, লিগ হয় এখানে। তবুও বাংলাদেশ দলের কাছে যে এই পিচ রীতিমতো অচেনা। গতকাল অনির্ধারিত সংবাদ সম্মেলনে কোচ ইমনের কথায় অন্তত এমনটাই মনে হয়েছে, ‘আমি মেয়েদের ক্রিকেট নিয়ে যতদিন ধরে কাজ করেছি, এরকম উইকেট আগে কখনো দেখিনি। এটা আমার নিজের শহর। স্থানীয় ক্রিকেটেও এরকম উইকেট পাইনি কখনো।’
বাংলাদেশ দলের অনুশীলনের নির্ধারিত সময় ছিল গতকাল সকাল ১০টায়। কিন্তু মাঠে গিয়ে জানা গেল, অনুশীলনে আসছেন না নিগার সুলতানারা। পরে জানা গেল, খেলার আগে দুই দিন বিরতি থাকায় গতকাল হোটেলে জিমেই অনুশীলন করেছে দল। তার বদলে কোচ ইমন এলেন গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে। সেখানে উইকেট প্রসঙ্গ আসতেই ইমন ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, ‘সত্যি বলতে স্বাগতিক দল হিসেবে কিংবা কোনোভাবেই আমরা কোনো বাড়তি সুবিধা চাই না। তবে একটা স্পোর্টিং উইকেটের প্রয়োজন। বিশেষ করে মেয়েদের ক্রিকেটে, আমি যেসব জায়গায় দেখেছি, জিম্বাবুয়ে থেকে শুরু করে সব জায়গায় চেষ্টা করা হয় স্পোর্টিং উইকেট দেওয়ার।’ সিলেটে যে ধরনের উইকেটে খেলা হচ্ছে তা বিশ্বকাপের জন্য যথেষ্ট প্রস্তুতি নয় মন্তব্য করে ইমন ‘এটা আমাদের মেয়েদের ক্রিকেটের জন্য, সামনে আমাদের যে এফটিপি ট্যুর এবং এফটিপির যে কাজ আছে, তারপর সামনে দক্ষিণ আফ্রিকায় আমাদের যে ওয়ার্ল্ড কাপ আছে, তাতে আমাদের প্রস্তুতির ক্ষেত্রে বলেন আর মনোবলের ক্ষেত্রে বলেন আমাদের পিছিয়ে দেওয়ার জন্য এটা যথেষ্ট বলে আমি মনে করি।’ নারী দলের প্রধান কোচ হওয়ার আগে মাহমুদ সিলেট বিভাগের বিসিবির নিয়োগপ্রাপ্ত কোচ হিসেবে কাজ করেছেন। জাতীয় দলের ক্রিকেটার নাসুম আহমেদ, খালেদ আহমেদরা উঠে এসেছেন তার হাত ধরেই। সিলেট সম্পর্কে অভিজ্ঞ এই কোচ বিষয়টি সংশ্লিষ্টদের জানিয়েছেন, ‘উইকেট নিয়ে অবশ্যই আমাদের যারা কনসার্নপারসন আছেন তাদের সঙ্গে কথা হয়েছে এবং তারা আমাদের আশ্বস্তও করেছেন পরবর্তী সময়ের বিষয়ে।’
এ ধরনের উইকেটে খেলে ছেলেদের মতো মেয়েদের ক্রিকেটও ক্ষতিগ্রস্ত হবে কিনা জানতে চাইলে ইমন বলেন, ‘দেশের খেলার জন্য আমাদের যেরকম ক্রিকেট দরকার তার প্রস্তুতি আমাদের দেশ থেকেই নিতে হবে। দেশে যদি আমরা প্রস্তুতি নিতে না পারি তাহলে বিশ্বকাপে আমরা পারফর্ম করব কীভাবে।’
নারী ক্রিকেট দলের কোচ ইমনের এমন মন্তব্যের পক্ষে যুক্তি হয়ে আছে যেন ছেলেদের জাতীয় ক্রিকেট দল। গত বছর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আগে ঘরের মাঠে অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে সিরিজ জিতেছিল টাইগাররা। মন্থর গতির উইকেটের সুবিধা নিয়ে অসিদের ৪-১ এবং কিউইদের ৩-২ ব্যবধানে হারান মাহমুদউল্লাহ রিয়াদরা। কিন্তু বিশ্বকাপে গিয়ে ভরাডুবি হয় তাদের। সুপার টুয়েলভে খেলা নিয়েই জাগে শঙ্কা। শেষ পর্যন্ত উত্তীর্ণ হলেও সে পর্বে জিততে পারেননি তারা একটি ম্যাচও। উল্টো যে দুই দেশকে ঘরের মাঠে সিরিজে হারিয়েছিলেন আফিফ হোসেনরা, সে দলগুলোই বিশ্বকাপের ফাইনাল খেলে। দক্ষিণ আফ্রিকায় অনুষ্ঠিতব্য টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের প্রস্তুতির জন্য ইমন তাই চান স্পোর্টিং উইকেট।
কাল গ্রাউন্ড-১-এ মালয়েশিয়ার সঙ্গে খেলতে নামবে বাংলাদেশ। সিলেটের উইকেটের সঙ্গে চেনা-জানা আছে স্থানীয় ও বাসিন্দা ও নারী দলের কোচ ইমনের। আউটার গ্রাউন্ডের উইকেটের এমন চরিত্র দেখে প্রশ্ন আসা স্বাভাবিক গ্রাউন্ড-১-এর উইকেট কেমন? উত্তরে কোচ ইমন বলেন, ‘খুব সকালে আউটার গ্রাউন্ডের উইকেটে ঘাপলা থাকে। পরের দিকে অনেকটা সহজ হয়ে যায়। গ্রাউন্ড-১ও এরকমই হবে বলে আমার মনে হয়।’
বিশ্বকাপ অস্ট্রেলিয়ায় আর বাংলাদেশ প্রস্তুতি নিচ্ছে নিউজিল্যান্ডে! কতটা কার্যকর হবে এই প্রস্তুতি এ নিয়ে অনেকের কাছে তা জিজ্ঞাসা। তবে বাংলাদেশ দলের অস্ট্রেলিয়ান ব্যাটিং কোচ জেমি সিডন্স বলছেন, তার কাছে ক্রাইস্টচার্চের এখনকার আবহাওয়া মনে হচ্ছে অস্ট্রেলিয়ার মতোই।
নিউজিল্যান্ডে মঙ্গলবার থেকে অনুশীলন শুরু করেছে বাংলাদেশ দল। সেই চেনা লিঙ্কন গ্রিন মাঠেই শুরু হয়েছে অনুশীলন। যথারীতি অধিনায়ক সাকিব আল হাসান অনুপস্থিত, এখনো দলের সঙ্গে যোগ দিতে পারেননি পেস বোলিং কোচ অ্যালান ডোনাল্ডও। অতিমারীতে দীর্ঘ সময় পর্যটক প্রবেশ বন্ধ রেখেছিল নিউজিল্যান্ড, ছিল কঠিন সংগনিরোধ নিয়মও। সেই সব কড়াকড়ি উঠে যাওয়ার পর অনেক দেশ থেকেই পর্যটক আর শিক্ষার্থীরা ছুটছেন নিউজিল্যান্ডে। তাই টিকিট নিয়ে হাহাকার, ডোনাল্ডও পড়েছেন সেই জটিলতায়।
আরব আমিরাত থেকে বাংলাদেশ হয়ে নিউজিল্যান্ড ভ্যাপসা গরম থেকে ফুরফুরে আবহাওয়ায় পা রাখতে পেরেই খুশি সিডন্স। ‘আমরা তো ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা থেকে এলাম, একটু ঠা-া আবহাওয়ায় পা রাখতে পেরে ভালোই লাগছে। আমরা জনাদুয়েক অস্ট্রেলিয়ান আছি এই দলের সঙ্গে, আমাদের কাছে তো আবহাওয়া অস্ট্রেলিয়ার মতোই মনে হচ্ছে। হ্যাগলি ওভাল তো অনেকটা অস্ট্রেলিয়ার মতোই, ওখানে মৌসুমের শুরুতে আবহাওয়া এরকমই থাকে’ অনুশীলনের এক ফাঁকে স্থানীয় গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন বাংলাদেশ দলের ব্যাটিং কোচ।
২০১৫’র বিশ্বকাপে বাংলাদেশ দুটো ম্যাচ খেলেছিল নিউজিল্যান্ডে। এরপর থেকে প্রায় প্রতি বছরই কোনো না কোনো সংস্করণে খেলতে নিউজিল্যান্ডে এসেছে বাংলাদেশ দল। এই বছরে প্রথম দিনেই তো মাউন্ট মঙ্গানুইতে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট খেলতে নেমেছিল বাংলাদেশ, পেয়েছিল ঐতিহাসিক এক জয়। নিয়মিত মুখ মুশফিকুর রহিম, মাহমুদউল্লাহদের না দেখতে পাওয়া কিছুটা হতাশ স্থানীয় সাংবাদিককে সিডন্স জানিয়েছেন, ‘আমরা একটা তরুণ দল নিয়ে এসেছি। বেশ কয়েকজন সিনিয়র খেলোয়াড় অবসর নিয়ে নিয়েছেন আর অনেকে এই সফরে নেই। অল্প কয়েকজন আছেন। তরুণ দলটা খুবই উদ্যমী আর উচ্ছ্বসিত। তাদের অনেক কিছুই শিখতে হবে, সেটাই দেখতে চাই এখানে।’
নতুনদের নিয়ে নতুন করেই সব শুরু করতে চান, সেজন্যই উদ্বোধনী জুটিতে ভিন্ন চিন্তা; জানিয়েছেন ব্যাটিং কোচ ‘দলে সাব্বির আর মিরাজ আছে, ওদের ব্যাটিংটা তামিম আর লিটনের থেকে একেবারে আলাদা। লিটন এখনো আছে দলের সঙ্গে, ওকে হয়তো আমরা তিনে বা চারে ব্যাট করতে পাঠাব। উইকেটও খুব ভালো মনে হচ্ছে। ছেলেরা বড় দুটো দলের সঙ্গে এখানে কেমন করে সেটাই দেখতে চাই।’
শুক্রবার ত্রিদেশীয় সিরিজের প্রথম ম্যাচে মুখোমুখি বাংলাদেশ ও পাকিস্তান। সিডন্স মনে করেন, দুই যুযুধানের সঙ্গে লড়ে প্রস্তুতি ভালোই হবে বাংলাদেশের ‘নিউজিল্যান্ড গত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের রানার্সআপ। পাকিস্তান সব সময়ই টি-টোয়েন্টিতে খুব আকর্ষণীয় দল। এর চেয়ে বেশি আর কী চাইতে পারতাম! উইকেটও বেশ চ্যালেঞ্জিং মনে হচ্ছে, আমার মনে হয় এসব অভিজ্ঞতাই বিশ্বকাপে আমাদের অনেকদূর যেতে সহায়তা করবে।’
বিশ্বকাপ দল থেকে বাদ পড়ার এমন হাস্যকর কারণ আর হতে পারে না। যেকোনো খেলোয়াড়ই চাইবেন নিজ খেলার বিশ্বকাপে খেলতে। কিন্তু শিমরন হেটমায়ার নিজের পায়ে কুড়োল মারলেন। ঘটনা এই রকম শনিবার উইন্ডিজ ক্রিকেটারদের বিভিন্ন দ্বীপ থেকে সরাসরি অস্ট্রেলিয়া যাওয়ার কথা। হেটমায়ার বোর্ডের কাছে ফ্লাইট পিছিয়ে দেওয়ার অনুরোধ করেন। পরিবর্তিত তারিখ রাখা হয় ৩ অক্টোবর। কিন্তু এদিনও যথাসময়ে বিমানবন্দরে না গিয়ে উইন্ডিজ ক্রিকেট পরিচালক, সাবেক অধিনায়ক জিমি অ্যাডামসকে জানিয়ে দেন বিমানবন্দরে যেতে পারছেন না তিনি। শাস্তি হিসেবে হেটমায়ারকে বাদ দিয়ে দেন নির্বাচকরা। তার জায়গায় ডাক পেয়েছেন সামারাহ ব্রুকস। সদ্য সমাপ্ত সিপিএলে চ্যাম্পিয়ন জ্যামাইকা তালাওয়াসের হয়ে ৮ ম্যাচে ১৫৩ স্ট্রাইক রেটে ২৪১ রান করেছেন এই ব্যাটার।
বিশ্বকাপের আগে ৫ ও ৭ অক্টোবর অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে দুই ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ খেলবে উইন্ডিজ। সিরিজটির জন্য হেটমায়ার ছাড়া উইন্ডিজ বিশ্বকাপ দলের বাকি সবাই সঠিক সময়েই নিজ নিজ দ্বীপ ছেড়েছেন। হেটমায়ারের এমন উদাসীনতায় তাই বেশ চটেছেন অ্যাডামস, ‘অস্ট্রেলিয়া যাওয়ার বিমান উইন্ডিজ থেকে পাওয়া কঠিন। কোনোমতে ৩ অক্টোবর একটা সিট ম্যানেজ করা হয়েছে। এমনিতেও সে ৫ অক্টোবরের ম্যাচটি মিস করত। ৩ অক্টোবর সে জানাল নিউইয়র্কের বিমান ধরতে পারবে না। এটা কখনই গ্রহণযোগ্য নয়।’
হেটমায়ার পারিবারিক কারণ দেখিয়ে প্রথমবার বিমানসূচি পেছানোর অনুরোধ করেছিলেন। তখনই বোর্ড থেকে জানিয়ে দেওয়া হয়, দ্বিতীয়বার বিমান মিস করলে তার বিশ্বকাপ জায়গা হুমকিতে পড়তে পারে। কিন্তু তা আমলে নেননি হেটমায়ার। শৃঙ্খলার ব্যাপারে উদাসীন প্রজন্মের অন্যতম সেরা এই ক্রিকেটার। পরিবারিক ও ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে এর আগেও উইন্ডিজের হয়ে খেলা মিস করেছেন। আবার ফিটনেস পরীক্ষাতেও অংশ নেননি সময়ে-সময়ে। এছাড়া জাতীয় দলের হয়ে অফফর্মের কারণে দারুণ সম্ভাবনাময় এই ব্যাটারের ক্যারিয়ার এখন হুমকির মুখে।
বাংলাদেশ বংশোদ্ভূত যুক্তরাজ্যের ফুটবলার হামজা চৌধুরীকে নিয়ে এ দেশের ফুটবলপ্রেমীদের আগ্রহের শেষ নেই। সম্প্রতি ২৫ বছর বয়সী এ ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার বাংলাদেশের হয়ে খেলার ইচ্ছের কথা জানান এক সাক্ষাৎকারে। এরপর থেকেই ফুটবলভক্তদের প্রশ্ন, কবে হামজাকে দেখা যাবে লাল-সবুজ জার্সিতে?
বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন এ ফুটবলারকে পাওয়ার ব্যাপারে আগ্রহ দেখিয়েছিলেন। সেটা যে শুধু মুখের কথা ছিল না স্পষ্ট হয়েছে। বাফুফের সাধারণ সম্পাদক আবু নাঈম সোহাগ দাবি করেছেন, হামজাকে পেতে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে তার দল লিস্টার সিটির কাছে চিঠি পাঠিয়েছেন তারা। ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের ক্লাবটি বাফুফের চিঠির প্রাপ্তি স্বীকারও করেছে। তবে এখনো তাদের সিদ্ধান্ত জানায়নি।
আবু নাঈম সোহাগ বলেন, ‘আমরা তার ক্লাবের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। ক্লাবটি চিঠি পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিতও করেছে। যেহেতু সে একটি ক্লাবের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ, তাই তার ক্লাবের সঙ্গেই যোগাযোগ করতে হচ্ছে। সরাসরি তো আমরা তার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারি না। ক্লাবের মাধ্যমে, তাদের অনুমতি নিয়ে ফুটবলের যে নর্মস, সেটা অনুসরণ করেই আমাদের যোগাযোগ করতে হবে। এ যোগাযোগের জন্য যদি একটু বিলম্বও হয়, আমরা সঠিক নিয়মেই এগোতে চাই।’
যুক্তরাজ্যে জন্ম নেওয়া হামজা চৌধুরী বর্তমানে ধারে খেলছেন ওয়াটফোর্ডে। ইংল্যান্ড অনূর্ধ্ব-২১ দলে প্রতিনিধিত্ব করলেও এখনো সে দেশের সিনিয়র দলে ডাক পাননি। হামজার মায়ের বাড়ি সিলেটের হবিগঞ্জে। নানাবাড়িতে সেই ছোটবেলা থেকেই যাতায়াত থাকায় বাংলাদেশের প্রতি হামজার রয়েছে অন্যরকম টান। ইংল্যান্ডের হয়ে খেলার সুযোগ ধীরে ধীরে কমতে থাকায় হয়তো হামজা চাইছেন বাংলাদেশের জার্সিতে জাতীয় দলে খেলার স্বপ্নপূরণ করতে। আর র্যাংকিংয়ে ক্রমেই নিম্নমুখী বাংলাদেশও সে সুযোগ নিয়ে চাইছে দলের শক্তি বাড়াতে।
আর্জেন্টিনা সমর্থকদের চোখে ২০১৪ বিশ্বকাপ ফাইনালের খলনায়ক গনজালো হিগুয়েন। সেদিন জার্মানির বিপক্ষে সহজ গোলের সুযোগ মিস না করলে লিওনেল মেসির বিশ্বকাপ স্বপ্নপূরণ হতেও পারত। ২০১৯-এর মার্চে হিগুয়েন যখন আন্তর্জাতিক ফুটবলকে বিদায় বলেন আর্জেন্টিনা সমর্থকরা ব্যথিত হননি সম্ভবত! কারণ গোল মিসের ভুল যে তিনি বারবারই করতেন। এবার পাকাপাকি ভাবেই প্রতিযোগিতামূলক ফুটবলকে বিদায় বলে দিলেন হিগুয়েন। ৩৪ বছর বয়সী ফুটবলার অশ্রুসজল চোখে জানিয়ে দিলেন আর এগোতে চান না।
রিয়াল মাদ্রিদ, নাপোলি ও জুভেন্তাসের হয়ে মাঠ মাতানো হিগুয়েন গত দুই মৌসুম ধরে খেলছেন যুক্তরাষ্ট্রে। ইন্তার মায়ামির হয়ে ৬৫ ম্যাচে করেছেন ২৭ গোল। ক’মাস ধরেই গুঞ্জন ছিল অবসরে যাচ্ছেন এই স্ট্রাইকার। এক সময় অস্বীকার করলেও গুঞ্জন সত্যি করে হিগুয়েন জানিয়ে দিলেন, ‘ফুটবলকে বিদায় বলার দিন এসেছে। এই পেশাটা আমাকে অনেক কিছুই দিয়েছে। আমি সত্যিই গর্বিত এই খেলা থেকে পাওয়া ভালো এবং খারাপ মুহূর্তগুলোর জন্য।’ ইন্টারনেট
শ্রম পরিদর্শক পদে যোগ দেওয়ার ৩৪ বছর পর পদোন্নতি পেলেন মাহমুদুল হক। স্বপ্ন দেখতেন পদোন্নতির সিঁড়ি বেয়ে একসময় প্রতিষ্ঠানের সর্বোচ্চ পদে যাবেন। সেই স্বপ্ন আট বছরেই লুটিয়ে পড়ল জ্যেষ্ঠতার তালিকায়।
১৯৮৮ সালে যোগ দেওয়ায় ’৯৫ সালেই পদোন্নতি পাওয়ার কথা ছিল মাহমুদুল হকের। কর্তৃপক্ষের অবহেলা আর প্রতিষ্ঠানপ্রধানের অদূরদর্শিতা সে স্বপ্ন শুরুতেই বাধা পেল। এন্ট্রি পোস্টে যোগ দেওয়ার পর তার মতো অন্য কর্মচারীরা যখন পদোন্নতির স্বপ্নে বিভোর, তখন তাতে গা-ই করলেন না সেই সময়ের প্রতিষ্ঠানপ্রধান।
মাহমুদুল অপেক্ষায় রইলেন পরিবর্তিত পরিস্থিতির জন্য। সেই পরিবর্তন আসতে আসতে চাকরিতে কেটে গেল আঠারো বছর। আঠারোতে মানুষ প্রাপ্তবয়স্ক হয়। তিনিও ভাবলেন আঠারোতে তিনি না হয় ‘জব ম্যাচিউরিটি’তে পৌঁছালেন। চাকরির আঠারো বছরে পদোন্নতি পেলেও মন্দ হয় না।
কিন্তু অবাক ব্যাপার, কর্তৃপক্ষ পদোন্নতি দিল, তবে মাহমুদুলকে ছাড়া। পদোন্নতির প্রজ্ঞাপনে কোথাও তার নাম নেই। হতাশায় মুষড়ে পড়লেন তিনি। জুনিয়র কর্মকর্তারদের নাম আছে, অথচ তার নাম নেই। প্রতিষ্ঠানের নীতি-নির্ধারকদের দরজায় দরজায় ঘুরলেন ন্যায়বিচারের আশায়। কিন্তু তারা পাত্তাই দিলেন না বিষয়টি।
তারা আমলে না নিলেও মাহমুদুলের স্বপ্ন তো সেখানেই থেমে যাওয়ার নয়। সেই স্বপ্ন পুঁজি করে তিনি গেলেন আদালতে। সেই ভিন্ন জগৎটাও কম চ্যালেঞ্জিং ছিল না। প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনাল তার পক্ষে রায় দিল। মাহমুদুল আনন্দে আত্মহারা হলেন। কিন্তু সেই আনন্দ বেশি দিন স্থায়ী হলো না। সরকার আপিল করল প্রশাসনিক আপিল ট্রাইব্যুনালে। মামলার ফল উল্টে গেল। হতাশায় ভেঙে না পড়ে তিনি গেলেন উচ্চ আদালতে। আপিল বিভাগে সিভিল আপিল মামলা করলে প্রশাসনিক আপিল আদালতের রায় বাতিল হয়। প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনালের রায় বহাল থাকে।
জলে নেমে কুমিরের সঙ্গে লড়াই করার মতো মাহমুদুল হকও যেন সরকারের সঙ্গে লড়াই করতে নামলেন। আপিল বিভাগের রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ পিটিশন করল সরকারপক্ষ। একপর্যায়ে সরকার বুঝতে পারল কোনোভাবেই তারা এ মামলায় জিততে পারবে না। সরকারপক্ষে রিভিউ পিটিশন প্রত্যাহার করা হলো। আদালত সরকারের পদোন্নতির প্রজ্ঞাপনকে আইনের কর্তৃত্ববহির্ভূত বলে ঘোষণা করল। জুনিয়র কর্মকর্তাকে যেদিন থেকে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে এবং যতবার পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে, একইভাবে মাহমুদুল হককে পদোন্নতি দেওয়ার নির্দেশ দেয় আদালত। বকেয়া বেতন-ভাতাসহ সব পাওনা কড়ায়-গ-ায় পরিশোধের নির্দেশনা আসে।
আদালতের এই নির্দেশনা দেওয়া হয় ২০১৮ সালে। এরপর আদেশ বাস্তবায়ন করতে সরকারের লেগে যায় প্রায় চার বছর। ২০২২ সালের ১১ মে তাকে পদোন্নতি দেওয়া হয়। ৩৪ বছর পর পদোন্নতির প্রজ্ঞাপন পেয়ে স্তম্ভিত হয়ে গেলেন মাহমুদুল হক। আবারও তাকে ঠকিয়েছে সরকার। জুনিয়র কর্মকর্তা যুগ্ম মহাপরিদর্শক হলেও তাকে পদোন্নতি দেওয়া হয় তার দুই ধাপ নিচের সহকারী মহাপরিদর্শক পদে। উপমহাপরিদর্শক ও যুগ্ম মহাপরিদর্শক আরও ওপরের পদ। আদালতের নির্দেশনার সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।
কখনোই প্রজ্ঞাপন মাহমুদুল হকের জন্য ভালো বার্তা বয়ে আনেনি। পুরো চাকরিজীবন আদালতের বারান্দায় ঘুরে তিনি পৌঁছেছেন অবসরের প্রান্তসীমায়। আর তিন মাস পরে তিনি অবসরে যাবেন। যৌবন ও মধ্য বয়সের দিনগুলোতে আদালতে ঘুরে বেড়ানোর শক্তি ও সাহস থাকলেও মাহমুদুল হক এখন সেই সাহস দেখাতে দ্বিতীয়বার চিন্তা করছেন। পারবেন তো শেষ সময়ে এসে সরকারের অপরিণামদর্শী সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপসহীন মনোভাব দেখিয়ে শেষ পর্যন্ত লড়ে যেতে?
মাহমুদুল হকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে দেশ রূপান্তরকে জানিয়েছেন, তিনি আদালতের কাছেই জানতে চাইবেন, আদালতের বিচার না মানার শাস্তি কী।
পুরো ঘটনা শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা শুনিয়ে জানতে চাইলেন, কতজনের পক্ষে মাহমুদুল হকের মতো লড়াকু মনোভাব দেখানো সম্ভব?
বুধবার বগুড়া-৪ আসনের উপনির্বাচনে মাত্র ৮৩৪ ভোটে হেরেছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিরো আলম। এর প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেছেন, স্যার ডাকতে হবে এ জন্য কিছু শিক্ষিত মানুষ আমাকে হারিয়ে দিয়েছে।
হিরো আলম বলেন, এমপি হলে আমাকে স্যার বলতে হবে। এ জন্য কিছু শিক্ষিত মানুষ আমাকে আগে থেকেই মানতে পারছিলো না। আমাকে স্যার বলতে কষ্ট হবে এমন লোকেরাই ফলাফল পাল্টে আমাকে পরাজিত করেছেন। তারা আমাকে ইভিএম কারসাজিতে হারিয়ে দিয়েছেন। এ ছাড়া আমি এমপি হলে নাকি বাংলাদেশের সম্মানহানী হবে। এমন ভাবনা থেকেও আমাকে হারিয়ে দেয়া হয়েছে। মশাল মার্কার অস্তিত্ব ছিল না। আমি কাহালু-নন্দীগ্রাম আসন থেকে বিপুল ভোটে জয়লাভ করেছি। নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তাদের জোগসাজশে গণনায় আমাকে হারিয়ে দেওয়া হয়েছে। আমি এ ফলাফল মানি না।
হিরো আলম বুধবার রাত সাড়ে ১০টায় বগুড়া সদরের এরুলিয়া নিজ বাড়িতে গণমাধ্যমকর্মীদের এসব বলেন।
তিনি আরো বলেন, সারাদিন মাঠে ভোটারের উপস্থিতি তেমন ছিল না। হঠাৎ এত ভোট কোথা থেকে এল বুঝতে পারছি না। মশাল মার্কার অস্তিত্ব ছিল না। তাদের নির্বাচনী প্রচার ছিল না। মানুষের তাদের আগেই প্রত্যাখ্যান করেছে। তারপর কীভাবে আমার চেয়ে বেশি ভোট পেল বিষয়টি পরিস্কার নয়।বগুড়া সদর আসন সম্পর্কে তিনি বলেন, সেখানে অনেক কেন্দ্রে তার এজেন্টকে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। তার কর্মীদের মারধর করা হয়েছে। ফলে সকালেই ওই আসনের ভরসা ছেড়ে দিই।
ফলাফল নিয়ে নির্বাচন কমিশনে লিখিত অভিযোগ দেওয়া হবে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিষয়টি নিয়ে এখন কোনো কথা বলব না। পরে জানান হবে।
তিনি ভক্তদের উদ্দেশ্যে বলেন, যারা আমাকে নির্বাচনে নানাভাবে সহযোগিতা করেছেন তাদের প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। আমি ভোটে হারলেও সারাজীবন মানুষের পাশে ছিলাম, শেষ পর্যন্ত থাকব।
সীমাহীন আনন্দ নিয়ে মানুষ সরকারি চাকরিতে যোগ দেয়। এরপরই তার মধ্যে যে স্বপ্নটি দানা বাঁধে তা হচ্ছে পদোন্নতি। কার কীভাবে পদোন্নতি হবে তা আইনকানুন, নিয়ম-নীতি দিয়ে পোক্ত করা। পুরো বিষয়টি কাচের মতো স্বচ্ছ। এরপরও পদোন্নতি হয় না। দিন, মাস, বছর পার হয়ে যায়, কাক্সিক্ষত পদোন্নতির দেখা মেলে না।
বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের (বিসিএস) ২৬টি ক্যাডারের মধ্যে হাতে গোনা কয়েকটি ক্যাডারে নিয়মিত পদোন্নতি হয়। বাকি ক্যাডারে হতাশা। তার চেয়েও কঠিন পরিস্থিতি নন-ক্যাডারে। ক্যাডার কর্মকর্তারা নিজের পদোন্নতির ষোলো আনা বুঝে নিয়ে ঠেকিয়ে দেন নন-ক্যাডার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পদোন্নতি। সংখ্যায় বেশি হওয়ায় নন-ক্যাডাররা একজন আরেকজনকে নানা ইস্যুতে আটকাতে গিয়ে পুরো প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করেন। সরকারের মোট কর্মকর্তা-কর্মচারীর প্রায় তিন-চতুর্থাংশ কর্মচারী। সেই হিসেবে সরকারের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনবলের পদোন্নতি হয় না। পে-কমিশন হলেই কর্মচারীদের পদোন্নতির জন্য করুণা উথলে ওঠে। এমনকি ব্লকপোস্টে যারা আছেন, তাদের জন্যও পদোন্নতির বিকল্প সুবিধা বাতলে দেওয়া হয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কর্মচারীদের পদোন্নতি উপেক্ষিতই থাকে।
যখন সময়মতো পদোন্নতি হয় না, তখন নানা ধরনের সমস্যা দেখা দিতে থাকে। এসব সমস্যা সংশ্লিষ্ট দপ্তর-অধিদপ্তরের চৌহদ্দি পেরিয়ে আমজনতাকেও প্রভাবিত করে। নন-ক্যাডার কর্মকর্তা আর সঙ্গে কর্মচারীরা যখন বুঝতে পারেন পদোন্নতির আশা তাদের নেই, তখন তারা দুহাতে টাকা কামানোর ধান্দায় মেতে ওঠেন। এতে করে ঘুষের সংস্কৃতি সমাজে ছড়িয়ে পড়ে। অকার্যকর পথে হাঁটে রাষ্ট্র। সাধারণ মানুষ টাকা ছাড়া তাদের কাছ থেকে কোনো সেবা পায় না, ব্যবসায়ীরা নতুন কোনো আইডিয়া নিয়ে ব্যবসায় আসেন না, ব্যবসাবান্ধব পরিস্থিতি না থাকায় মুখ ফিরিয়ে নেন দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীরা। প্রধানমন্ত্রীর বারবার আহ্বানেও বিনিয়োগকারীরা সাড়া দেন না। সাধারণ মানুষকে নিঃস্বার্থভাবে সেবা দেওয়ার বাণীতেও উদ্বুদ্ধ হন না সংশ্লিষ্টরা।
এই পরিস্থিতিতে অনিয়ম আটকে রাখার সব কৌশলই ব্যর্থ হচ্ছে। যথাযথ তদারকি না থাকায় বিভাগীয় ব্যবস্থা অকার্যকর হয়ে গেছে। ৩ লাখ ৫৩ হাজার ৩৫০টি অডিট আপত্তি ঝুলে থাকায় অডিট প্রতিষ্ঠানগুলোও আগ্রহ হারিয়ে নিজেরাই জড়িয়ে পড়ছে অনিয়মে। দন্তহীন বাঘে পরিণত হওয়ার তথ্য সাংবাদিকদের জানান দুর্নীতি দমন কমিশনের প্রধান নিজেই।
নন-ক্যাডার কর্মকর্তা ও কর্মচারীর পদোন্নতির বড় একটা অংশ আটকে রাখে মন্ত্রণালয়গুলো। এই আটকে রাখার কারণ হচ্ছে মন্ত্রণালয়ের নীতিনির্ধারকদের স্বার্থ। বিভিন্ন দপ্তর, অধিদপ্তরে নন-ক্যাডার কর্মকর্তাদের পদোন্নতি দিলে নিয়ম অনুযায়ী পদোন্নতিপ্রাপ্তদের ওপরের পদে বসাতে হবে। এতে মন্ত্রণালয়ের নীতিনির্ধারকদের এককালীন লাভ; অর্থাৎ টাকার বিনিময়ে একবার পদোন্নতি দেওয়া যাবে। কিন্তু পদোন্নতি না দিয়ে সংশ্লিষ্টদের চলতি দায়িত্ব দিলে বছরজুড়ে টাকা আয় করতে পারেন নীতিনির্ধারকরা। দপ্তর, অধিদপ্তরে বড় অঙ্কের টাকার বিনিময়ে চলতি দায়িত্ব দেওয়া হয়। চলতি দায়িত্বপ্রাপ্তদের আয় অনুসারে নীতিনির্ধারকদের মাসোহারা দিতে হয়। নন-ক্যাডারদের পদোন্নতি দেওয়া হলে মন্ত্রণালয়ের নীতিনির্ধারকদের নিয়মিত আয়ের উৎস বন্ধ হয়ে যায়। এ কারণে আইন বা বিধি-বিধানের ফাঁকফোকর গলিয়ে নন-ক্যাডার এবং কর্মচারীদের পদোন্নতি আটকে রাখার সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হয়।
সরকারি কর্মচারী সংহতি পরিষদের সভাপতি নিজামুল ইসলাম ভূঁইয়া মিলন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সচিবালয় এবং সারা দেশের সরকারি কর্মচারীদের পদোন্নতির মধ্যে একটু পার্থক্য আছে। নন-ক্যাডারের কিছু বিষয় ছাড়া সচিবালয়ের কর্মচারীরা সময়মতো পদোন্নতি পায়। কিন্তু সচিবালয়ের বাইরে পদোন্নতি হয় না বললেই চলে। সচিবালয়ে মাত্র ১০ হাজার কর্মচারী আছেন। সচিবালয়ের বাইরে আছেন ১০ লাখের বেশি। এসব কর্মচারীর পদোন্নতি নিয়ে বহু বছর ধরে চেষ্টা করছি। কিন্তু কোনো ফল পাইনি। সর্বশেষ মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ এ সমস্যা নিয়ে কাজ করার জন্য একটি কমিটি করে দিয়েছে। কমিটি কিছু সুপারিশ করেছে। ব্যস, ওই পর্যন্তই। এরপর এর কোনো অগ্রগতি নেই। যেখানে সরকারপ্রধান বলেন, চাকরিজীবনে সবাই যেন কমপক্ষে একটি পদোন্নতি পায়। সেখানে বহু কর্মচারী কোনো পদোন্নতি ছাড়াই অবসরে যাচ্ছেন। সরকারপ্রধানের নির্দেশনা উপেক্ষা করেন আমলারা। তাদের আগ্রহ কেনা-কাটায়, বিদেশ ভ্রমণে, নতুন জনবল নিয়োগে। এসব করলে তাদের লাভ। কর্মচারী পদোন্নতি দিতে তাদের কোনো আগ্রহ নেই। এর নিশ্চয়ই একটা শেষ আছে। বৈষম্যের পরিণতি কী হয়, তা অনেক দাম দিয়ে বিডিআর বিদ্রোহে আমরা দেখেছি।’
কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের নন-ক্যাডারদের পদোন্নতি ঝুলছে বছরের পর বছর। এই অধিদপ্তরের কয়েক শ কর্মকর্তা পাঁচ বছর আগেই পদোন্নতির যোগ্য হয়েছেন। নানা কায়দা-কানুন করে তাদের পদোন্নতি ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। অধিদপ্তরের মহাপরিদর্শক সংশ্লিষ্টদের জ্যেষ্ঠতা নির্ধারণ করে তাদের পদোন্নতির প্রক্রিয়া এগিয়ে নিলেও শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় নতুন করে জ্যেষ্ঠতার তালিকা করার নামে সময়ক্ষেপণ করছে। জ্যেষ্ঠতার তালিকা করার পর এখন তাদের পারিবারিক সদস্যদের তথ্য যাচাই-বাছাই করার জন্য একটি সংস্থাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। ওই সংস্থা নন-ক্যাডার কর্মকর্তাদের পরিবারের সদস্যদেরও তথ্য তালাশ করছে। তাদের আত্মীয়দের মধ্যে কে কোন দলের সমর্থক তার তথ্য নিচ্ছেন সংস্থার কর্মকর্তারা।
গত মাসে শেষ হওয়া জেলা প্রশাসক সম্মেলনে দায়িত্ব পালন করছিলেন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের একজন প্রশাসনিক কর্মকর্তা। ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনের সুরম্য ভবনে দায়িত্ব পালন করলেও ওই নন-ক্যাডার কর্মকর্তার মনের অবস্থাটা মনোহর ছিল না। কেমন আছেন জানতে চাইলে ওই নন-ক্যাডার কর্মকর্তা বলেন, ‘ভালো নেই। চাকরি করছি, পদোন্নতি নেই। ২০১৫ সালের আগে পদোন্নতি না পেলেও টাইমস্কেল ও সিলেকশন গ্রেড ছিল। তাও তুলে দেওয়া হয়েছে। তুলে দেওয়ার সময় বলা হয়েছিল সময়মতো পদোন্নতি হবে, ব্লকপোস্টধারীদের দেওয়া হবে বিশেষ আর্থিক সুবিধা। এসবের কোনোটাই হয়নি।’
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসে একটি প্রশাসনিক আদেশ খুবই পরিচিত। সেই প্রশাসনিক আদেশ ১৬/২০১৮ অনুযায়ী ৭০ ভাগ কর্মকর্তা সরাসরি নিয়োগ হবে। আর ৩০ ভাগ পদোন্নতির মাধ্যমে পূরণ করা হয়। ৭০ ভাগ কর্মকর্তা সরাসরি নিয়োগের ফলে বিমানে বর্তমানে প্রয়োজনের তুলনায় কর্মকর্তা বেশি। নীতিনির্ধারকদের নতুন জনবল নিয়োগে আগ্রহ বেশি। পুরনোদের পদোন্নতি দিয়ে ওপরের পদ পূরণের চেয়ে তারা নতুন নিয়োগে যান। ফলে কারও চাকরিজীবনে একবারও পদোন্নতি হয় না। নামমাত্র যে পদোন্নতি হয় তা অনিয়মে ভরপুর।
নন-ক্যাডার ছাড়াও ১৩তম গ্রেড থেকে ২০তম গ্রেড পর্যন্ত পদোন্নতি হয় না বললেই চলে। প্রতিটি দপ্তরে এসব গ্রেডের পদোন্নতি আটকে আছে। অথচ এসব গ্রেডেই বেশি লোক চাকরি করছেন। সরকারের মোট জনবল প্রায় ১৫ লাখ ৫৪ হাজার ৯২৭ জন। প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির ২৩ শতাংশ পদের মধ্যেও নন-ক্যাডার রয়েছেন। এ ছাড়া তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির ৭৭ শতাংশ পদই ১৩তম থেকে তার পরের গ্রেডের। এতে করে সহজেই বোঝা যায় সরকারের জনবলের বড় অংশই পদোন্নতির চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে। সরকারের জনবলের এই বিশাল অংশ যখন পদোন্নতি নিয়ে অনিশ্চয়তায় ভোগেন, তখন তারা নানা অনিয়মে ঝুঁকে পড়েন।
বেশির ভাগ দপ্তর, অধিদপ্তর পরিচালনা করেন বিভিন্ন ক্যাডারের কর্মকর্তারা। তারা তাদের প্রশাসনিক মন্ত্রণালয় থেকে প্রেষণে ক্যাডার কর্মকর্তাদের দপ্তর, অধিদপ্তরে পাঠান। প্রেষণে গিয়ে অনেক কর্মকর্তা শুধু রুটিন কাজটুকুই করতে চান। শূন্যপদে জনবল নিয়োগ বা পদোন্নতি রুটিন কাজ না হওয়ায় তা উপেক্ষিত থাকে। তা ছাড়া পদোন্নতি দিতে গিয়ে নানা জটিলতার সৃষ্টি হয়; বিশেষ করে মন্ত্রণালয় থেকে মন্ত্রী বা সচিব তাদের পছন্দের লোককে পদোন্নতি দেওয়ার জন্য সংস্থার প্রধানকে চাপ দেন। এই চাপ উপেক্ষা করার কোনো সুযোগ না থাকায় অযোগ্য লোককে পদোন্নতি দিতে হয় সংস্থার প্রধানকে। এই জটিলতা থেকে দূরে থাকার জন্য সংশ্লিষ্টদের পদোন্নতি দেওয়া থেকেও দূরে থাকেন সংস্থার প্রধানরা।
নন-ক্যাডার কর্মকর্তা এবং কর্মচারীদের পদোন্নতি না হওয়ার কারণ জানতে চাইলে খাদ্য অধিদপ্তরের ১৪ গ্রেডের একজন কর্মচারী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বাইরের লোকের ইচ্ছাটাই জাগে না আমাদের পদোন্নতি দিতে। আমাদের দপ্তরপ্রধান মহাপরিচালক প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তা। অতিরিক্ত মহাপরিচালকও অনেক সময় প্রশাসন ক্যাডার থেকে প্রেষণে আসেন। তাদের কেন ইচ্ছা জাগবে আমাদের পদোন্নতি নিয়ে। যদি এসব পদে ফুড ক্যাডারের কর্মকর্তা থাকতেন, তাহলে তারা খাদ্য বিভাগের সমস্যা বুঝতেন। তা ছাড়া নিয়োগ বিধি সংশোধনের নামে আমরা দীর্ঘদিন একই পদে আটকে আছি।’
গত বছরের ৩ ফেব্রুয়ারি সচিবালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা এবং ব্যক্তিগত কর্মকর্তারা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবের কাছে এক আবেদনে জানান, ‘বর্তমানে সচিবালয়ে প্রায় দুই হাজারের বেশি প্রশাসনিক ও ব্যক্তিগত কর্মকর্তা কর্মরত। এর বিপরীতে ক্যাডারবহির্ভূত সংরক্ষিত পদের সংখ্যা ২৬৭টি, যা খুবই নগণ্য। ফলে একই পদে ২০-২২ বছরের বেশি সময় কর্মরত থাকার পরও অনেকে পদোন্নতি পাচ্ছেন না। পদোন্নতি না পাওয়ায় সৃষ্ট হতাশার ফলে কর্মস্পৃহা নষ্ট হচ্ছে।’
সরকার এ সমস্যা থেকে কীভাবে বের হতে পারে জানতে চাইলে জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞ ফিরোজ মিয়া দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এসব সমস্যা সমাধানে সরকার সব সময়ই কাজ করে। কিন্তু এ চেষ্টা জটিলতার তুলনায় কম। এ বিষয়ে আরও এফোর্ট দিতে হবে।
মুক্তিযুদ্ধে এমনটা যে ঘটবে তার আলামত কিন্তু যুদ্ধের সময়েই টের পাওয়া গিয়েছিল। এই যুদ্ধে স্বতঃস্ফূর্ত বিদ্রোহ ঘটেছে। নেতৃত্ব ছিল নির্বাচনে-জেতা জাতীয়তাবাদীদের হাতে। ভারত সরকার তাদের সাহায্য করেছে। জাতীয়তাবাদীরা ক্ষমতার হস্তান্তর চেয়েছে, রূপান্তর চায়নি। তারা লড়ছিল হস্তান্তরের লক্ষ্যেই। জনগণ কিন্তু তত দিনে অনেকটা এগিয়ে গিয়েছে, তারা শুধু যে ক্ষমতার হস্তান্তর চেয়েছে তা নয়, চেয়েছে রাষ্ট্র ক্ষমতার বিচূর্ণকরণ। বস্তুত রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন, ঊনসত্তরের অভ্যুত্থান এবং একাত্তরের যুদ্ধ এসব ঘটনার মধ্য দিয়ে ধাপে ধাপে যে চেতনাটি অগ্রসর হচ্ছিল সেটা ছিল সমাজবিপ্লবী। এই চেতনা ঠিকই বুঝেছে যে পুরাতন রাষ্ট্রকে টিকিয়ে রেখে মুক্তি আসবে না। রাষ্ট্রকে ভাঙতে হবে, যাতে করে রাষ্ট্র জনগণের শত্রু না হয়ে মিত্র হয়; শুধু মিত্রও নয়, জনগণের সেবক হয়। ঊনসত্তরের অভ্যুত্থানের মূল আকাক্সক্ষাটা ছিল ওই রকম রাষ্ট্রের। কথা ছিল একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ ওই আকাক্সক্ষাটাকে বাস্তবায়িত করবে।
কিন্তু যুদ্ধ সেদিকে এগোয়নি। নেতৃত্বে রয়ে গেছে জাতীয়তাবাদীই। পাকিস্তানি জাতীয়তাবাদের জায়গায় বাঙালি জাতীয়তাবাদ স্থাপিত হয়েছে। এ পর্যন্ত ঠিকই আছে। দুই জাতীয়তাবাদের ভেতর পার্থক্যটাও সুস্পষ্ট, কিন্তু দুয়ের ভেতর মিল এইখানে যে, উভয়েই পুঁজিবাদী। এই মিলটা কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। জাতীয়তাবাদী নেতারা ব্যক্তিমালিকানার বিরোধী ছিলেন না, যেমন ছিলেন না তারা সামাজিক মালিকানার পক্ষে। বস্তুত পুরাতন ধ্যানধারণাই নতুন রাষ্ট্রে কার্যকর হয়েছে। সমাজতন্ত্রের লক্ষ্যাভিমুখী যাত্রার কথা বলা হয়েছিল, কিন্তু সেদিকে যাবে কী, রাষ্ট্র অচিরেই তার পুরাতন পথে ফিরে গেছে। রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানগুলো ব্যক্তিমালিকানায় চলে গেছে। রাষ্ট্রীয়করণ ছিল ব্যক্তিমালিকানা স্থাপনের মধ্যবর্তী ধাপ। আদমজী জুট মিলস পাকিস্তান আমলে ছিল, এখন নেই। এটা কেবল ঘটনা নয়, একটা প্রতীকও বটে।
যুদ্ধের শুরুতেই কিন্তু বোঝা গিয়েছিল যে বিপ্লবী উপাদান থাকা সত্ত্বেও এ যুদ্ধ বিপ্লবী হবে না। ধরা যাক স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের ঘটনা। চট্টগ্রাম বেতার কেন্দ্রের সঙ্গে প্রান্তিকভাবে যুক্ত তিনজন দুঃসাহসী তরুণ স্বতঃস্ফূর্ত উদ্যোগ নিয়ে ওই গোপন বেতার কেন্দ্রটি স্থাপন করেন, কালুরঘাট ট্রান্সমিটার কেন্দ্রটিকে ব্যবহার করে। নাম দিয়েছিলেন স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী বেতার কেন্দ্র। ২৬ মার্চ ওই নামেই বেতার কেন্দ্রটি চালু হয়। কিন্তু তার বিপ্লবী নামটি ধরে রাখা যায়নি। বিপ্লবী নাম ধরে রাখবে কী, ৩০ তারিখ দুপুরে কেন্দ্রটিই সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে যায়। ধ্বংসের কাজটি করে পাকিস্তানি হানাদাররা। তারা বিমান আক্রমণ চালায়। ওটিই ছিল বাংলাদেশে তাদের যুদ্ধবিমানের প্রথম আক্রমণ। বেতার কেন্দ্রটি ধ্বংস না করে তাদের স্বস্তি ছিল না, কারণ সেখান থেকে প্রতিরোধ যুদ্ধের সংবাদ সম্প্রচারিত হয়েছিল। তারা লড়ছে, বিশ্ববাসী জেনেছিল, সবচেয়ে বেশি করে জেনেছিল বাঙালিরা, দেশে যেমন, বিদেশেও তেমনি। তারা উদ্দীপ্ত হয়েছে, ভরসা পেয়েছে, সাহস পেয়েছে রুখে দাঁড়ানোর। হানাদাররা অস্থির হয়েছে। খুঁজে খুঁজে বের করেছে বেতার কেন্দ্রের ঠিকানা, বোমাবর্ষণ করেছে মহোৎসাহে।
এরপরও কেন্দ্রটি চালু ছিল। প্রথমে গেছে সে আগরতলায়, সেখান থেকে কলকাতায়। কিন্তু ‘বিপ্লবী’ আর থাকেনি। ওই পরিচয় বিলুপ্ত করা হয়েছিল কিন্তু মেজর জিয়ার নির্দেশেই। পরে আওয়ামী লীগের প্রবাসী সরকার যে বিপ্লবীকে ফেরত এনেছে তা মোটেই নয়, বেতার কেন্দ্রটি বিপ্লবহীন ‘স্বাধীন’ অবস্থায় রয়ে গেছে। যুদ্ধটা তো ছিল পুরোপুরি জনযুদ্ধ, কিন্তু ওই শব্দটি একবার মাত্র ব্যবহার করা হয়েছে, তারপর নিষিদ্ধ করে দেওয়া হয়েছিল ‘জনযুদ্ধ’ মাওবাদের গন্ধ আছে বলে। বেতার অনুষ্ঠানের শেষে একটি সিগনেচার টিউন বাজানো হতো, সে গানটির শুরু ‘জয় বাংলা বাংলার জয়’ দিয়ে, শেষে ছিল ভুখা বেকার মানুষদের কথা, আপত্তিকর বিবেচনায় গানটি বাদ দেওয়া হয়। বেকারদের দায়িত্ব স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্র কেন নিতে যাবে? স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের ওপর চাপ ছিল আওয়ামী লীগের খবরকে বেশি বেশি প্রচার করার, পারলে মুক্তিযুদ্ধকে একদলীয় ঘটনা হিসেবে চিত্রিত করার। কলকাতায় কেন্দ্রটি সম্পূর্ণরূপে প্রবাসী সরকারের নিয়ন্ত্রণেই ছিল। শেষের দিকে ভারত সরকারের একজন প্রতিনিধিও অনুষ্ঠানসূচির ওপর চোখ রাখতেন। স্বাধীনতার পরপর ইনি ঢাকাতেও এসেছিলেন, বাংলাদেশ বেতারের দেখভাল করার জন্য। ডিসেম্বরের ৬ তারিখে ভারত সরকার যখন বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয় সেই ক্ষণ থেকেই স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র তার নাম বদলে ফেলে বাংলাদেশ বেতার হয় অর্থাৎ একটি সরকারি প্রতিষ্ঠান হয়ে যায়। বিপ্লবীত্ব আগেই গিয়েছিল এবার গেল স্বাধীনতাটুকুও। যেন বাংলাদেশেরই প্রতীক। পাকিস্তানি বেতারের মতোই স্বাধীন বাংলা বেতারের অনুষ্ঠানও কিন্তু কোরআন পাঠ ও ব্যাখ্যা দিয়েই শুরু হতো। সপ্তাহে ছয় দিন ইসলামের দৃষ্টিতে বলে একটি অনুষ্ঠান থাকত।
স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা; ওই ঘটনার ভেতরে আমাদের মুক্তিসংগ্রামের মোড়বদলের কালে সংগ্রামের শক্তি ও সীমা দুটোই প্রতিফলিত হয়েছে। কেন্দ্রের গঠনে উদ্যোগী তিন তরুণের সঙ্গে বেগম মুশতারী শফীর অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ যোগ ছিল। যুদ্ধের শুরুতেই তিনি তার স্বামী এবং সহোদর একমাত্র ভাইটিকে হারান; তার বড় বোনের স্বামীও শহীদ হয়েছেন। অবিশ্বাস্য কষ্টের ভেতর দিয়ে সাত সন্তানের ছয়জনকে সঙ্গে নিয়ে ভাসতে ভাসতে সম্পূর্ণরূপে সর্বহারা দশায় আগরতলায় উপস্থিত হয়ে কোনো মতে প্রাণ বাঁচাতে সক্ষম হয়েছিলেন। পরে তার অভিজ্ঞতার ওপর ভিত্তি করে তিনি ‘স্বাধীনতা আমার রক্তঝরা দিন’ (১৯৮৯) নামে একটি বই লিখেছেন, তার অভিজ্ঞতার ভেতর ভবিষ্যতের বাংলাদেশ কেমন হবে তার লক্ষণ বিলক্ষণ ফুটে উঠেছিল। আগরতলায় গিয়ে যেসব ঘটনা স্বচক্ষে দেখেছেন তাতে ভবিষ্যতের বাংলাদেশ সম্পর্কে ভরসা রীতিমতো বিচলিত রয়েছে। আগরতলা পৌঁছে তিনি জানতে পেরেছেন যে চট্টগ্রামের এমএনএ এমপিএরা একটি ভবনে রয়েছেন। শুনে আশান্বিত হয়ে তিনি গেছেন তাদের খোঁজে। ভবনে গিয়ে পৌঁছান সকাল সাড়ে দশটায়। নেতাদের সন্ধান পেয়েছেন ঠিকই, কিন্তু দরজার সামনে কাজের ছেলেটি বলেছে দেখা করা যাবে না। কেন? কারণ ওনারা একটু বেসামাল আছেন। দরজাটা ভেজানো ছিল। মুশতারী শফী লিখেছেন, ‘আমি যেখানে বসেছি সেখান থেকে দরজার ফাঁক দিয়ে আরেকটি রুম দেখা যায়। সেখানে দেখা যাচ্ছে চিৎ হয়ে উপুড় হয়ে মেঝেতেই দু-তিনজন শুয়ে আছে।’ তিনি ভেবেছিলেন ঘুমোচ্ছে। পরে জানলেন নেতারা রাতে ড্রিংক করেছেন, সেজন্য সকালে তাদের ওই করুণদশা। মুশতারী শফীর স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া : ‘আমি অবাক। এখানে ড্রিংক? এরাই না জাতীয় নেতা? মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা করছেন?’ (পৃ. ১৩৭-৩৮)
অবাক হওয়াটা ওখানেই শেষ হয়নি। তার জন্য আরও একটি ‘বিস্ময়-মহাবিস্ময়’ অপেক্ষা করছিল। তিনি লিখেছেন, ‘এখানে এসে একটা বিষয় লক্ষ করলাম, ন্যাপ ও কমিউনিস্ট পার্টির রিক্রুট-করা মুক্তিযোদ্ধাদের ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা প্রবাসী সরকার করছে না। যেমন আওয়ামী লীগের যে কেউ যে-কাউকে রিক্রুট করলে তার সঙ্গে সঙ্গে সরকারি খরচে ট্রেনিং এবং থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করা হচ্ছে, বামপন্থি দলের কাউকেই সে রকমটি করা হচ্ছে না। কোথাও পাশ কাটিয়ে যাওয়া হচ্ছে, কোথাও সরাসরি নাকচ করা হচ্ছে। ফলে বামপন্থিরা ভারত সরকারের দুয়ারে দুয়ারে ধাক্কা দিয়ে এবং নিজেদের পার্টির খরচে সম্পূর্ণ আলাদা ট্রানজিট ক্যাম্প এবং যুবকদের ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে।’ (পৃ. ১৫৪)
তার মনে প্রশ্ন জেগেছে জাতীয় মুক্তির সংগ্রাম যেখানে চলছে, সেখানে বাম-ডান আবার কী, সবাই তো মুক্তিযোদ্ধা। তার মতো মানুষদের কাছে সব মুক্তিযোদ্ধাই যে এক, এটা ঠিক, কিন্তু নেতৃত্ব তো ছিল পুঁজিবাদী ঘরানার, তারা বামপন্থির গন্ধ পেলেই সতর্ক হতো। ন্যাপ ও কমিউনিস্ট পার্টির মতো নরম বামদের তবু সহ্য করত, তাড়িয়ে দিত না। শক্ত বামপন্থিদের দেখা মাত্র ধাওয়া করত। শক্ত বামপন্থিদের কাউকে কাউকে তাই প্রাণ ভয়ে আগরতলার মুক্তভূমি থেকে আবার হানাদারকবলিত পাকিস্তানে পালিয়ে আসতে হয়েছে। কেউ কেউ নিহতও হয়েছে, আগরতলাতেই। মুশতারী শফীর আরেক মর্মান্তিক অভিজ্ঞতা মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য কোনো-মতো তৈরি করা ফিল্ড হাসপাতালে। সেখানে চিকিৎসক, স্বেচ্ছাসেবক সবাই কাজ করছেন স্বতঃস্ফূর্তভাবে। আহত যোদ্ধারা দিন গুনছেন কখন উঠে দাঁড়াতে পারবেন, এবং পুনরায় যুদ্ধে যাবেন। স্বেচ্ছাসেবকদের ভেতর মুশতারী শফীও ছিলেন।
লেখক: ইমেরিটাস অধ্যাপক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
এক। রাজনীতির মাঠে সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে হয়। না হলে রাজনীতির গতির সঙ্গে তাল মেলানো কঠিন হয়ে যায়। নেতৃত্বের হযবরল অবস্থা, নেতৃত্বের বিক্ষিপ্ত বক্তব্য, কোন্দল ও অযোগ্য ব্যক্তিদের গণহারের পদায়নের কারণে বিএনপির মধ্যে দ্বিধাদ্বন্দ্ব, শঙ্কা, ভয়, অনিশ্চয়তা প্রবলভাবে বিদ্যমান। বিদেশে বসেও আন্দোলন-সংগ্রামে সফল নেতৃত্ব দেওয়ার উদাহরণ ইতিহাসে অনেক আছে। এখন প্রযুক্তি অনেক এগিয়েছে। কিন্তু বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন বা তার দল প্রযুক্তির সেই সুবিধাকে কাজে লাগাতে পারেনি।
দুই। বিভাগীয় সমাবেশ ঘিরে রাজনীতির মাঠে ঢেউ তুলেছিল বিএনপি। ঢাকার সমাবেশের আগ পর্যন্ত বিএনপি সুবিধাজনক অবস্থাতেই ছিল। মানুষের উপস্থিতি ছিল লক্ষণীয়। পাশাপাশি বিভিন্ন রাজনৈতিক দল বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনের ঘোষণা দিয়েছে। বিভিন্ন দলের যুগপৎ আন্দোলনের ঘোষণা ও বিভাগীয় সমাবেশগুলোয় ব্যাপক জনসমাগমের পরও বিএনপির মধ্যে ঝিমুনিভাব দেখা যাচ্ছে। মূলত, পল্টনে সমাবেশ করতে না পারা বিএনপির জন্য এক ধরনের মনস্তাত্ত্বিক পরাজয়। সরকারের চাপের মুখে বিএনপি বলতে শুরু করে, নিরাপদ ও সুবিধাজনক স্থানে তারা সমাবেশ করার কথা বিবেচনা করবে। বিএনপির নমনীয় অবস্থান বুঝতে পেরেই আওয়ামী লীগ কঠোর অবস্থানে চলে যায়। ৭ ডিসেম্বর পল্টনে বিএনপি অফিসের সামনে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনায় এক বিএনপি কর্মী নিহত হন। পুলিশ অভিযান চালায় বিএনপির অফিসে। এ ঘটনার পরপরই বিএনপিকে কিছুটা অগোছালো মনে হয়। দলীয় অফিসে হামলা এবং মহাসচিব মির্জা ফখরুলসহ অন্য নেতাকর্মীদের গণহারে আটকের পর কোনো শক্তিশালী কর্মসূচি ঘোষণা করেনি বিএনপি। ৭ ডিসেম্বর মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর একা একা কেন্দ্রীয় অফিসের সামনে ফুটপাতে অসহায়ের মতো বসে ছিলেন। এ সময় অন্য কোনো নেতাকর্মীকে তার পাশে দেখা যায়নি। ১০ ডিসেম্বর পল্টন থেকে সমাবেশ সরিয়ে নেওয়ায় বিএনপি মূলত আওয়ামী লীগের সঙ্গে মনস্তাত্ত্বিক খেলায় হেরে যায়। সরকার বা আওয়ামী লীগ যেভাবে চেয়েছে, বিএনপি সেভাবেই সমাবেশ করেছে।
তিন। বিএনপির একজন নেতা বলেছিলেন, ১০ ডিসেম্বরের পর দেশ চলবে খালেদা জিয়ার কথায়। ৮ তারিখ রাতে পুলিশ দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসকে বাসা থেকে তুলে ডিবি অফিসে নেয়। পরে বিস্ফোরক আইনে দুই নেতার নামে মামলা দিয়ে কারাগারে পাঠানো হলো। কিন্তু বিএনপির পক্ষ থেকে রাজপথে প্রতিক্রিয়া দেখা গেল না। যারা ১০ তারিখের আওয়াজ তুলেছিলেন, তারা নিশ্চুপ হয়ে গেলেন। বিএনপি এর আগে অনেকবার বলেছে যে ঈদের পর আন্দোলন হবে। কিন্তু সেই ঈদ আর বিএনপির আসেনি। এজন্য অনেক তামাশাও হয়েছে। এখন শোনা যাচ্ছে, সেপ্টেম্বর-অক্টোবর নাগাদ দলটি চূড়ান্ত আন্দোলনে নামতে চায়। কোনোভাবে যদি ওই সময় পর্যন্ত বিএনপির আন্দোলনকে আওয়ামী লীগ টেনে নিতে পারে, তাহলে যেকোনো প্রকারে নির্বাচন করে ফেলবে। কারণ, নভেম্বরেই তফসিল ঘোষণা করবে নির্বাচন কমিশন। আর সেপ্টেম্বর-অক্টোবরেই যদি চূড়ান্ত, তাহলে এখন বিভিন্ন কর্মসূচি ঘোষণা করে সাধারণ কর্মীদের মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে কেন? গত কয়েক মাসে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করতে গিয়ে বিএনপির ৯ কর্মী নিহত হয়েছেন। তফসিল ঘোষণা হয়ে গেলে নির্বাচন আটকানো এই বিএনপির পক্ষে সম্ভব হবে না। ২০১৪ ও ২০১৮ সালেও পারেনি।
চার। ২০০৬ সালের পর থেকে গত ১৫ বছর বিএনপি ক্ষমতার বাইরে। ক্ষমতার বাইরে থাকা দলগুলোর নানা অর্জন থাকে। বিএনপির প্রাপ্তি বা অর্জন কোথায়? গত কয়েক বছরে তাদের যে আন্দোলন, তার সিংহভাগই হচ্ছে ক্ষমতায় যাওয়ার আন্দোলন। এটা সাধারণ মানুষের ভেতর বেশি প্রভাব ফেলছে। বাংলাদেশের ভোটের রাজনীতি দুভাগে বিভক্ত, আওয়ামী লীগ এবং আওয়ামী লীগবিরোধী। বিএনপি হয়তো এই আওয়ামী লীগবিরোধী প্ল্যাটফর্মের প্রতিনিধিত্ব করেছে। রাজনীতি আসলে কৌশলের খেলা। কখনো কখনো অপকৌশলেরও খেলা। রাজপথে আমরা যা দেখি, সেটা সেই কৌশল বা অপকৌশলের শেষ ধাপ। তার আগে পর্দার পেছনে চলে আসল খেলা। সেই খেলায় আওয়ামী লীগের কাছে বারবার হেরে যাচ্ছে বিএনপি। হেরে ক্ষমতা থেকে ক্রমশ দূরে সরে যাচ্ছে।
পাঁচ। মনে হচ্ছে, বিএনপি আওয়ামী লীগের সঙ্গে কৌশলে কুলিয়ে উঠতে পারছে না। বিএনপির থিংকট্যাংক আন্দোলনের নতুন নতুন কৌশল উদ্ভাবনে ব্যর্থ হয়েছে। সরকার দমন-নিপীড়ন করছে। এটা আমরা জানি। এর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে বিএনপিকে বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিতে হবে। সহিংসতা না করেও সফল আন্দোলন করা যায়। প্রতিপক্ষের চাপ সব সময়ই রাজনীতিতে থাকবে। জনসমর্থন থাকার পরও বিএনপি এই চাপের কাছে নতি স্বীকার করছে। ডিসেম্বরে বিএনপির মধ্যে যে গতি ছিল, তার অনেকটাই এখন থিতিয়ে গেছে। সামনে রোজা। ওই সময় আন্দোলন জমাতে পারবে না। ২০১৪ আর ২০১৮ সালের ভোটে আওয়ামী লীগের কৌশল কাজ করেছে। তারা এবারও বেশ আত্মবিশ্বাসী। বিভিন্ন কৌশলে আওয়ামী লীগ নির্বাচনমুখী হচ্ছে। দুবারই বিএনপির কৌশল মাঠে মারা গেছে। এবার তাদের তূণে কী ধরনের তির আছে, তা স্পষ্ট নয়। দলের চেয়ারপারসন অন্তরীণ। তার যা বয়স এবং শরীরের যে অবস্থা, তাতে তিনি আর দলের নেতৃত্ব দেবেন বা আন্দোলনে নামবেন; তেমন বাস্তবতা নেই। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানও দণ্ড মাথায় নিয়ে পালিয়ে আছেন। তাই এ অবস্থায় নেতৃত্বশূন্যতাই বিএনপির সবচেয়ে বড় সংকট। এখানে ভালো খেলার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে দলে একজন ভালো নেতা থাকা। বিএনপির সেই নেতা কে?
লেখক : প্রেসিডিয়াম সদস্য, বাংলাদেশ যুব ইউনিয়ন, কেন্দ্রীয় কমিটি
বগুড়া-৪ (কাহালু-নন্দীগ্রাম) আসনের উপনির্বাচনে বেসরকারিভাবে ১১২ কেন্দ্রের ফলাফলে ৯৫১ ভোটের ব্যবধানে হেরে গেছেন বহুল আলোচিত স্বতন্ত্র প্রার্থী আশরাফুল হোসেন আলম ওরফে হিরো আলম। একতারা প্রতীক নিয়ে তিনি পেয়েছেন ১৯ হাজার ৪৮৬ ভোট। এ আসনে জয় পেয়েছেন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জাসদ (ইনু) সমর্থিত প্রার্থী অ্যাডভোকেট রেজাউল করিম তানসেন। মশাল প্রতীক নিয়ে তিনি পেয়েছেন ২০ হাজার ৪৩৭ ভোট।
বুধবার (১ ফেব্রুয়ারি) সকাল থেকে বগুড়ার দুইটিসহ মোট ৬ আসনে উপনির্বাচনের ভোট গ্রহণ শুরু হয়। ২০২২ সালের ১০ ডিসেম্বর বিএনপির এমপিরা পদত্যাগের ঘোষণা দিলে এ আসনগুলো শূন্য হয়।
তখন, বগুড়া-৬ (সদর) এবং বগুড়া-৪ (কাহালু-নন্দীগ্রাম) আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার ঘোষণা দেন হিরো আলম। নির্বাচন কমিশন একদফা তার প্রার্থিতা বাতিল করলেও পরে আদালতে গিয়ে প্রার্থিতা ফিরে পান তিনি।
নাগরিকত্ব বিষয়ক জটিলতার জেরে সুপ্রিম কোর্টের এক রায়ে দেশের উপপ্রধানমন্ত্রীর পদ ও পার্লামেন্টে আসন হারিয়েছেন নেপালের উপপ্রধানমন্ত্রী রবি লামিছানে। শুক্রবারের রায়ে আদালত জানিয়েছে, এই মুহূর্তে নেপালের নাগরিকত্বও নেই তার।
সুপ্রিম কোর্টের মুখপাত্র বিমল পৌদেল বার্তা সংস্থা এএফপিকে এ সম্পর্কে বলেন, ‘সুপ্রিম কোর্টের সাংবিধানিক বেঞ্চের রায় অনুযায়ী, ২০২২ সালের জাতীয় নির্বাচনে নাগরিকত্ব বিষয়ক আইন লঙ্ঘনের প্রমাণ পাওয়া গেছে রবি লামিছানের বিরুদ্ধে। এ কারণে এখন থেকে আর পার্লামেন্টের সদস্য নন তিনি।’
নেপালের এক সময়ের জনপ্রিয় টেলিভিশন ব্যক্তিত্ব রবি লামিছানে দেশটির রাজনৈতিক দল ন্যাশনাল ইনডিপেনডেন্ট পার্টির শীর্ষ নেতা। ২০২২ সালের ২০ নভেম্বর নেপালের পার্লামেন্ট প্রতিনিধিসভার নির্বাচনে তার দল ২০টি আসনে জয়ী হয়েছে। তারপর গত ডিসেম্বরে ক্ষমতাসীন জোট সরকারে নিজের দলসহ যোগ দিয়ে নেপালের উপপ্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হন লামিছান।
যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিত্ব ছিল লামিছানের; কিন্তু নেপালের সংবিধানে দ্বৈত নাগরিকত্ব স্বীকৃত না হওয়ায় ২০১৮ সালে মার্কিন নাগরিকত্ব ত্যাগ করে নির্বাচন করেছিলেন তিনি। শুক্রবারের রায়ে সুপ্রিম কোর্ট বলেছে, নিয়ম অনুযায়ী যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব ছেড়ে দেওয়ার পর নেপালের নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করার কথা ছিল লামিছানের; কিন্তু তা করেননি তিনি। ফলে এই মুহূর্তে নেপালের নাগরিকও নন লামিছান। এদিকে, শুক্রবার সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পর লামিছানের প্রতিক্রিয়া জানতে তার মন্ত্রণালয়ের দপ্তরে গিয়েছিলেন সাংবাদিকরা; কিন্তু লামিছানে তাদের বলেন, ‘যেহেতু এই মুহূর্তে আমি কোনো দেশেরই নাগরিক নই, তাই আদালতের সিদ্ধান্ত নিয়ে কোনো মন্তব্য করা আমার পক্ষে উচিত নয়, সম্ভবও নয়।’
তার কলাম মানেই সেদিন বাংলার বাণী অফিস সরগরম। সকাল থেকেই ফোন আসত। বিভিন্ন আড্ডায়ও আলোচনা হতো সেই কলাম নিয়ে। আন্তর্জাতিক রাজনীতির বিষয়-আশয় এবং দেশের সমসাময়িক বিষয়গুলো আকর্ষণীয় এবং সহজ করে পাঠকের কাছে তুলে ধরতেন এই সাংবাদিক। এর বাইরে প্রকৃতি, পাহাড়, নদী ও দেশের ইতিহাস-ঐতিহ্য নিয়ে লিখতেন। পার্বত্য চট্টগ্রামের লাল পাহাড়ের মানুষের জীবনের গল্পও তুলে আনতেন। প্রায় দেড় দশক নিরবচ্ছিন্নভাবে তিনি সাংবাদিকতা করেছেন। লিখেছেন অসংখ্য কলাম।
যখন সাংবাদিকতা করতেন তখন তার কাজের জায়গাটিতে তিনি ছিলেন সেরা। ছাত্ররাজনীতির জন্য যেমন নিজেকে উজাড় করে দিয়েছেন, ছাত্রনেতা হিসেবেও পেয়েছেন তুমুল জনপ্রিয়। সফল হয়েছেন প্রতিমন্ত্রী এবং মন্ত্রী হিসেবে। দেশের ঐতিহ্যবাহী এবং ইতিহাসসমৃদ্ধ রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবেও তিনি সফল। তৃতীয়বারের মতো দলের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি হলেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। রাজনীতির বাইরে তার আরও অনেক পরিচয়ের মধ্যে সাংবাদিক পরিচয়টাও অনেক বেশি উজ্জ্বল।
ছাত্রজীবন থেকেই ছিলেন স্পষ্টবাদী, সাহসী ও দেশপ্রেমিক। পাকিস্তান আমলে ছাত্র ও গণআন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা রাখা এ নেতা ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন এবং কোম্পানীগঞ্জ থানা মুজিব বাহিনীর (বিএলএফ) অধিনায়ক ছিলেন।
পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট সপরিবারে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয়। ওই ভয়াল রাতে নিহত হন তার ভাগ্নে শেখ ফজলুল হক মনি। তিনি তখন দৈনিক বাংলার বাণীর সম্পাদক। ফলে পত্রিকাটিও বন্ধ করে দেওয়া হয়। এরপর ১৯৮১ সালে পত্রিকাটি আবার ছাপার অনুমতি পায়। ওই সময় ওবায়দুল কাদের জেল থেকে ছাড়া পেয়ে আবার রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড শুরু করেন। সেই সঙ্গে লেখালেখি। দ্বিতীয়বার শেখ ফজলুল করিম সেলিমের (বর্তমানে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য) সম্পাদনায় বাংলার বাণী পত্রিকার ছাপা শুরু হওয়ার পর যুক্ত হন ওবায়দুল কাদের। তিনি পত্রিকাটির সহকারী সম্পাদক ছিলেন। ১৯৯৬ সালে সংসদ সদস্য ও পরে ক্রীড়া ও সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালনের আগপর্যন্ত তিনি সাংবাদিকতা করেছেন।
টানা ১৫ বছরের সাংবাদিকতা জীবনে ওবায়দুল কাদের অসংখ্য কলাম লিখেছেন বাংলার বাণীতে। ‘ও কাদের’ নামে তিনি কলাম লিখতেন। প্রতিদিন সকালে অফিসে আসতেন। সম্পাদকীয় বিভাগ ও অন্যান্য বিভাগের সঙ্গে মিটিং করতেন। সম্পাদকীয় বিভাগের বাইরে সেই সময় তিনি বাংলার বাণীর আন্তর্জাতিক পাতাটি নিজের দায়িত্বে বের করতেন। আন্তর্জাতিক বিষয়, আন্তর্জাতিক রাজনীতি ও সমসাময়িক বিষয়ে তিনি খুব বেশি সচেতন ও আগ্রহী ছিলেন।
ওবায়দুল কাদেরের সেই সময়কার সহকর্মীরা দেশ রূপান্তরকে বলেন, সহকর্মী হিসেবে তিনি চমৎকার ছিলেন। তাছাড়া সাংবাদিক হিসেবেও খুব পেশাদার ছিলেন। তিনি যদি রাজনীতি না করে সাংবাদিক থাকতেন, তার অনেক লেখা এবং অসংখ্য বই আমরা পেতাম। যদিও তিনি এখন রাজনীতিতে শীর্ষ অবস্থানে রয়েছেন। কিন্তু আমরা যারা তাকে পেয়েছি, তারা তার লেখা মিস করছি। তার লেখার জন্য অপেক্ষা করতাম। যেহেতু বাংলার বাণী ছিল বিরোধী ঘরানার পত্রিকা, তাই সাধারণ মানুষেরও আগ্রহ থাকত।
ওবায়দুল কাদেরের লেখালেখি ও তার কলাম সম্পর্কে জাতীয় অধ্যাপক প্রয়াত কবীর চৌধুরী লিখেছিলেন, ‘যখনি সংকট, যখনই এক অপয়া অন্ধকার ওঁৎ পেতে আসে, যখনই সমাজ ধূসরতায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে, যখনই মিথ্যা ও ইতিহাস বিকৃতির গোলকধাঁধায় নয়া প্রজন্মকে দিগভ্রান্ত করার অপচেষ্টা, যখনই রাজনীতির গৌরব কলুষতায় ঢেকে দেওয়ার অপপ্রয়াস তখনই ওবায়দুল কাদেরের এই জীবন ঘনিষ্ঠ, সত্য ও সুন্দরের আরাধনাময় সাহসী রচনা সমাজকে আলোর ইতিহাস শোনাতে পারে।’
ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকতা জীবনে সম্পাদকীয়-উপসম্পাদকীয়, রাজনৈতিক কলাম লিখেছেন অসংখ্য। কবি নির্মলেন্দু গুণ তার সম্পর্কে বলেছেন, ‘বাংলার বাণী পত্রিকায় সম্পাদকীয় বিভাগে আমার সহকর্মী ছিলেন, কলাম লেখক হিসেবেও জনপ্রিয় হয়েছিলেন।... আমি তার অলংকৃত কাব্যিক ভাষায় বক্তৃতার একজন ভক্তশ্রোতা।’
প্রয়াত সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হকের মূল্যায়ন ছিল, ‘ওবায়দুল কাদের শুধু রাজনীতিক নন, তিনি সাংবাদিক, তিনি বাগ্মী, তিনি লেখক। বক্তৃতায় বাংলা শব্দ উচ্চারণ, ছন্দের ব্যবহারে চারণকবি তিনি। নিবন্ধ লেখক হিসেবে যুক্তি ও বিশ্লেষণে তীব্র লক্ষ্যভেদী তিনি।’
জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন তার সাংবাদিকতা জীবন শুরু করেন বাংলার বাণীতে। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘১৯৮৯ সালে বাংলার বাণীতে যখন জয়েন করি তখন সহকারী সম্পাদক হিসেবে কাদের ভাইকে পাই। আমরা বার্তাকক্ষে বসতাম আর তিনি তখন অ্যাসিস্ট্যান্ট এডিটরদের রুমে বসতেন। ওনাদের আলাদা রুম ছিল। তিনি রুম থেকে বের হয়ে সবসময় আমাদের খোঁজখবর নিতেন। মাঝেমধ্যে আমাদের এখানে এসে গল্প করতেন। তিনি সহকর্মী হিসেবে খুবই আন্তরিক ও সহকর্মীবান্ধব ছিলেন।’
সেই সময়ে বাংলার বাণীতে ওবায়দুল কাদেরের আরেক সহকর্মী ও পাক্ষিক ক্রীড়াজগৎ পত্রিকার সম্পাদক দুলাল মাহমুদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমি তাকে ১৯৮৫ সালে পেয়েছি। আমি তখন সহ-সম্পাদক হিসেবে জয়েন করেছি বাংলার বাণীতে। ওবায়দুল কাদের তখন সহকারী সম্পাদক ছিলেন। তিনি কলাম লিখতেন। তার কলাম পাঠকের কাছে বেশ জনপ্রিয় ছিল। তার লেখার মধ্যে সাহিত্য ছিল। লেখা খুব আকর্ষণীয় ছিল। পাশাপাশি তিনি বিভিন্ন জায়গায় যেতেন, সেসব বিষয় নিয়েও লিখতেন। তার সবচেয়ে পছন্দের জায়গা ছিল চট্টগ্রাম, পাহাড়-সমুদ্র খুব পছন্দ করতেন এবং এসব নিয়েও তিনি লেখালেখি করতেন। তিনি খুব আবেগী লোক ছিলেন এবং লেখার মধ্যে সেটা ফুটে উঠত। তার লেখা পাঠক পড়তে বাধ্য হতেন।’
তিনি বলেন, ‘রাজনীতির মানুষ হলেও অফিসে ঢুকলে একজন সংবাদকর্মী হিসেবেই থাকতেন ওবায়দুল কাদের। রাজনীতির বিষয়টা বাইরে রাখতেন। বরাবরই তিনি শৌখিন টাইপের লোক ছিলেন। ভালো কাগজ-কলম ব্যবহার করতেন লেখার সময়। লেখার সময় আলাদা একটা মেজাজে থাকতেন। তখন খুব জরুরি না হলে কোনো বিষয় অ্যালাউ করতেন না। লেখা শেষ করলে বেশ ফুরফুরে থাকতেন। তখন আমাদের সঙ্গে আড্ডা দিতেন, গল্প করতেন। পেশাদার সাংবাদিক হিসেবে তার মনোভাব আমরা দেখতে পেয়েছি।’
সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সাংবাদিক সুভাষ চন্দ বাদল বাংলার বাণী পত্রিকায় ওবায়দুল কাদেরের সহকর্মী ছিলেন। তিনি বলেন, ‘কাদের ভাইকে ছাত্ররাজনীতি থেকেই চিনতাম। ১৯৭৫ সালের পর যখন তিনি কারাগারে যান তখন আমিও কারাগারে। তাকে কারাগারে দেখেছি বই নিয়ে ডুবে থাকতে। বাংলার বাণীতে এসে তাকে নতুন করে পেয়েছি। সেই সময় আজিজ মিসির ও তার কলাম ছিল সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়। তিনি সাংবাদিকবান্ধব। বাংলার বাণী অফিসেও সহকর্মীদের সবসময় সহযোগিতা করতেন। আমি রিপোর্টার হিসেবে যদি কখনো কোথাও আটকে যেতাম তিনি সহযোগিতা করতেন। কাদের ভাই সাংবাদিক হিসেবে ছিলেন মেধাবী ও জ্ঞানী। তার সাহসের ঘাটতি ছিল না। তার কলামেও এর প্রভাব দেখেছি।’
ওবায়দুল কাদের ১৯৫২ সালের ১ জানুয়ারি নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ থানার বড় রাজাপুর গ্রামে জন্ম নেন। বাবা মোশারফ হোসেন সরকারি চাকরি ছেড়ে দিয়ে উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষকতা শুরু করেন। মা ফজিলাতুন্নেছা। ওবায়দুল কাদের বসুরহাট সরকারি এএইচসি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে প্রথম বিভাগে এসএসসি ও নোয়াখালী কলেজ থেকে মেধা তালিকায় স্থান পেয়ে এইচএসসি পাস করেন। অতঃপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে অনার্সসহ স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি কলেজজীবন থেকে ছাত্ররাজনীতি শুরু করেন।
১৯৭৫-এর পর একনাগাড়ে দীর্ঘ আড়াই বছর কারাগারে ছিলেন। কারাগারে থাকা অবস্থায় তিনি বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি নির্বাচিত হন এবং পরপর দুবার সভাপতি ছিলেন।
তার সেই সময়ের সহকর্মীরা বলেন, সাংবাদিক ওবায়দুল কাদের তথা কাদের ভাই মানেই অন্যরকম। তিনি ছিলেন খুব সংবেদনশীল। সবাইকে মেনে নেওয়ার একটা ক্ষমতা ছিল। তিনি যে এত বড় একজন রাজনীতিক ও মুক্তিযোদ্ধা, এত বড় ছাত্রনেতা, তা কখনই সাংবাদিকদের কাছে মনে হতো না। মনে হতো, কাদের ভাই যেন সাংবাদিকতার মধ্যেই ডুবে আছেন। কোনো রিপোর্টার বা সাব-এডিটর অনুবাদ করতে সমস্যায় পড়েছেÑ কাদের ভাইয়ের কাছে গেলেই সমাধান। নিজের রুমে, ডেস্কে বসিয়ে বুঝিয়ে দিতেন। আর তার টেবিলে ছিল সবসময়ই গাদা গাদা বই।
বাংলার বাণীর সেই সময়ের একাধিক সাংবাদিক ওবায়দুল কাদের সম্পর্কে দেশ রূপান্তরকে বলেন, কাদের ভাই ছিলেন সাংবাদিকতার প্রতি পুরো নিষ্ঠাবান। তার কাছে অনেক কিছু শিখেছি। তিনি দীর্ঘক্ষণ কোথাও বসে থাকতেন না। কাজের ফাঁকে ফাঁকেই তিনি রুম থেকে বেরিয়ে অন্য সহকর্মীদের টেবিলে টেবিলে আড্ডা দিতেন। সেখানে হয়তো আমরা চায়ের অর্ডার দিয়েছি। চা আসতে না আসতেই তিনি উঠে যেতেন। তারপর আবার তাকে চায়ের কাপ নিয়ে খুঁজতে হতো কাদের ভাই কই...।
আজ বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের প্রধান কার্যালয়ে বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যের প্রতিবাদে বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের উদ্যোগে শান্তি সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন যুবলীগ চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস্ পরশ। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য লে. কর্নেল (অব.) মুহাম্মদ ফারুক খান, বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সদস্য অ্যাডভোকেট তারানা হালিম। আর অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন যুবলীগ সম্পাদক মো. মাইনুল হোসেন খান নিখিল।
সভাপতির বক্তব্যে যুবলীগ চেয়ারম্যান বলেন, বিএনপির মুখে গণতন্ত্রের কথা, মানবাধিকারের কথা মানায় না। আপনাদের হিংসাত্মক রাজনীতি আর সন্ত্রাসের কারণে নতুন প্রজন্ম রাজনীতি করতে চায় না। যারা একুশে আগস্ট ঘটিয়েছে, নিরীহ মানুষকে হত্যা করেছে, মানুষকে আগুনে পুড়িয়ে মেরেছে, কৃষকের বুকে গুলি চালিয়েছে, জঙ্গিবাদের উত্থান ঘটিয়েছে, তাদের সকল অপকর্মের মেডেল আছে। আমি বিশ্বাস করি, আওয়ামী লীগ নয়, বিএনপির প্রধান শত্রু এ দেশের সাধারণ জনগণ। যারা একাত্তরে হাতিয়ার তুলে নিয়েছিল দেশকে স্বাধীন করার জন্য, একাত্তরের পরাজয়ের প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য আপনারা বার বার তাদেরকেই আক্রমণ করেন। আওয়ামী লীগ আপনাদের অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে আসে বলেই আওয়ামী লীগের সঙ্গে আপনাদের বিরোধ ঘটে। সব সময় এ দেশের সাধারণ মানুষকে আপনাদের ষড়যন্ত্রের শিকার বানান, হত্যার শিকার বানান এবং আপনাদের সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যের শিকার বানান।
পরশ আরও বলেন, এ বছরটা নির্বাচনের বছর। আমাদের রাজপথে থাকতে হবে। মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে। শুধু নেতাকর্মী দ্বারা আবর্ত থাকলে চলবে না, আমাদের চলে যেতে হবে সাধারণ মানুষের কাছে। গত ১৪ বছরে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার অর্জনের কথা সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে হবে। যদি সাধারণ মানুষ উন্নয়নের সুফল না পায় তাহলে সেই উন্নয়নের কোনো মূল্য থাকে না। যখন আমাদের সকল উন্নয়নের সুফল সাধারণ মানুষের কাছে নিয়ে যেতে পারব তখনই জাতির পিতার স্বপ্ন বাস্তবায়ন হবে।
তিনি যুবলীগের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বলেন, যুবলীগের ভাই ও বোনেরা- আপনারা ঐক্যবদ্ধ থাকবেন, আপনারা ধৈর্যশীল থাকবেন। ওদের কৌশল আমাদের সন্ত্রাসী হিসাবে উপস্থাপন করা। ওরা পায়ে পাড়া দিয়ে ঝগড়া করতে চাইবে। আপনারা ওদের ফাঁদে পা দেবেন না। কিন্তু রাজপথ আমরা ছেড়ে দেব না। ভুলে যাবেন না, ওরা কিন্তু দিনকে রাত এবং রাতকে দিন বানাতে পারদর্শী। মিথ্যার ওপরই দলটার সৃষ্টি। ওরা জাতির পিতার নাম মুছে ফেলেছিল, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃত করেছিল। সুতরাং মিথ্যা চর্চার ক্ষেত্রে এই দলকে দুর্বল ভাবার কোনো সুযোগ নেই।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য লে. কর্নেল (অব.) মুহাম্মদ ফারুক খান বলেন, যখন জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, যখন বাংলাদেশের জিডিপি সিংগাপুর, মালয়েশিয়ার উপরে, যখন বাংলাদেশ বিশ্বের ৩৫তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ ঠিক সেই মুহূর্তে বিএনপি-জামায়াত বাংলাদেশকে পেছনের দিকে নেওয়ার জন্য নানামুখী ষড়যন্ত্র করছে। বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ, এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক তারা সবাই ভবিষ্যদ্বণী করছে, বাংলাদেশ যেভাবে সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে যদি এভাবে এগিয়ে যায় তাহলে ২০৩০ সালের মধ্যে বিশ্বের ২৭তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ হবে। আর এটা সম্ভব শুধুমাত্র রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা এবং আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে।
তিনি যুবলীগের উদ্দেশে বলেন, বিএনপি-জামায়াত আগামী নির্বাচনকে কেন্দ্র করে তারা নানা মিথ্যা প্রচারণা ও গুজব ছড়িয়ে দিচ্ছে। ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা প্রতিটি জেলায়, উপজেলায়, ইউনিয়ন, ওয়ার্ড এবং ইউনিটে জননেত্রী শেখ হাসিনার উন্নয়ন বার্তা পৌঁছে দিতে হবে। বলতে হবে বাংলাদেশ শ্রীলঙ্কা হয়নি, বাংলাদেশ উন্নয়নের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। আপনারা শেখ হাসিনার পাশে থাকুন, নৌকার পাশে থাকুন, নৌকায় ভোট দিন।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সদস্য অ্যাডভোকেট তারানা হালিম বলেন, যারা স্যাংশন নিয়ে কথা বলেন তাদের দলের প্রধান খালেদা জিয়া তৎকালীন আমেরিকার পরারাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে স্যাংশন চেয়েছেন। যাতে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক ভাবে ভেঙে পড়ে, দুর্ভিক্ষ সৃষ্টি হয়, খাদ্য সংকট সৃষ্টি হয়, বেকার সমস্যা বৃদ্ধি পায়, মানুষের দুর্ভোগ বাড়ে। এটাই হলো বিএনপির আসল চেহারা। তারা কখনোই এ দেশের মানুষের ভালো চায় না। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের অভিজ্ঞতা আছে কিভাবে অর্থনৈতিক মন্দা কাটিয়ে তোলা যায়। সামনের যে বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দার কথা বলা হচ্ছে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বের মাধ্যমে বাংলাদেশ তা কাটিয়ে উঠতে পারবে। আগামী নির্বাচনে নৌকায় ভোট দিলে বঙ্গবন্ধুকন্যা তার দূরদর্শী নেতৃত্বে একটি উন্নত-সুখী-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তুলতে পারবে।
সঞ্চালকের বক্তব্যে যুবলীগ সম্পাদক নিখিল বলেন, রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ঢাকার রাজপথে আপনারা পোস্টার হয়েছেন। নুর হোসেন, ফাত্তাহ বাবুল হয়েছেন। তারপরেও দেশের স্বার্থে সংগঠনের স্বার্থে, বঙ্গবন্ধুকন্যা রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার প্রশ্নে যুবলীগ আপস করেনি, যুবলীগ আপস করতে জানে না। তিনি যুবলীগের নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, যেমনি করে বিগত দিনে কাফনের কাপড় মাথায় বেঁধে রাজপথ আগলে রেখে প্রিয় নেত্রীর নির্দেশিত পথে মানুষের কল্যাণে, মানুষের অধিকার আদায়ের জন্য আপনারা সব সময় কাজ করেছেন। আগামী নির্বাচনেও সেই সাহসিকতা আর বীরত্বের সাথে রাজপথে থাকবেন। বিএনপি-জামায়াতের সকল ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে আবারও রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনাকে প্রধানমন্ত্রী বানিয়ে ঘরে ফিরবেন।
এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য অ্যাডভোকেট মামুনুর রশীদ, মো. রফিকুল ইসলাম, মো. হাবিবুর রহমান পবন, মো. নবী নেওয়াজ প্রমুখ।
বগুড়া-৪ (কাহালু-নন্দীগ্রাম) ও বগুড়া-৬ (সদর) আসনের উপনির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. আশরাফুল হোসেন হিরো আলম বুধবার (১ ফেব্রুয়ারি) দুপুর পর্যন্ত ভোটকেন্দ্র পরিদর্শন করে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বলেন, ‘সদরের কেন্দ্র সব দখল হয়্যা গ্যাছে। ডিসি-এসপিক কয়্যাও কোনো কাম হচ্চে না। সদরের আশা সব শ্যাষ। কাহালু-নন্দীগামের অনেক কেন্দ্র ঘুরে ঘুরে দেকছি। ভোট খুব সুষ্ঠু হচ্চে। মাঠের অবস্থা ভালো। কাহালু-নন্দীগ্রামে নিশ্চিত এমপি হচ্চি।’
এর আগে, সকালে সদর উপজেলার এরুলিয়া উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট দিতে যান তিনি। ভোট দেওয়ার পর হিরো আলম বলেন, ‘বগুড়া-৬ আসনে আগে থেকেই গোলযোগের আশঙ্কা করেছিলাম, সেটাই সত্যি হয়েছে। নির্বাচনি এজেন্টদের কেন্দ্র থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে। তবে বগুড়া-৪ আসনে ভোট সুষ্ঠু হচ্ছে। এভাবে সুষ্ঠু ভোট হলে এই আসনে আমিই বিজয়ী হবো।’
এদিকে বগুড়া-৬ আসনের উপনির্বাচনে কয়েকটি কেন্দ্রে নৌকা প্রার্থীর এজেন্ট বাদে অন্য এজেন্টদের ভোটকক্ষ থেকে বের করে দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। আজ সকালে হিরো আলমসহ তিনজন প্রার্থী এ অভিযোগ করেন। আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা তাদের এজেন্টদের বের করে দিয়েছেন বলে সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করা হয়।