
বিশ্বকাপ প্রস্তুতির ক্ষেত্রে ত্রিদেশীয় সিরিজ খেলতে পারাটা কাজে দেবে বলে জানিয়েছিলেন স্বাগতিক নিউজিল্যান্ড অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসন এক দিন আগেই। বাংলাদেশ সহ-অধিনায়ক নুরুল হাসান সোহানের মুখেও একই কথা। টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক সাকিব আল হাসান দলের সঙ্গে যোগ দিতে পারেননি ভিসা জটিলতায়। যুক্তরাষ্ট্র থেকে তাহিতি হয়ে নিউজিল্যান্ডে যাওয়ার ট্রানজিট ভিসা পাননি তিনি। সাকিবের অনুপস্থিতিতে আনুষ্ঠানিক ফটোসেশনে সোহানকেই যেতে হলো। সেখানেই জানালেন এই সিরিজটি অস্ট্রেলিয়া বিশ্বকাপের প্রস্তুতিতে কতটা কাজের হবে।
গত বিশ্বকাপের ব্যর্থতা ভুলতে এবার নানা পরিকল্পনাই করে দেখছে বাংলাদেশ। কোচ বদল, একাদশ বদল, এমনকি ক্রিকেটারদের ব্যাটিং পজিশন বদলও করা হয়েছে। প্রস্তুতির অংশ হিসেবে শুধুই ক্যাম্প না করে আরব আমিরাতের সঙ্গে দুই ম্যাচের সিরিজও খেলেছে বাংলাদেশ। এবার নিউজিল্যান্ডে ক্রিকেটের দুই সেরা দলকে নিয়ে ত্রিদেশীয় সিরিজেও অংশ নিচ্ছে। সব মিলিয়ে বিশ্বকাপ প্রস্তুতিটা বেশ ভালো হচ্ছে বাংলাদেশের, ‘এশিয়ার কন্ডিশনের চেয়ে নিউজিল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়ার কন্ডিশন পুরো আলাদা। আমাদের জন্য খুব ভালো সুযোগ যে অস্ট্রেলিয়া যাওয়ার আগে আমরা এরকম কন্ডিশনে কয়েকটা ম্যাচ খেলছি এবং পাকিস্তান-নিউজিল্যান্ডের মতো দলের বিপক্ষে খেলার সুযোগ পাচ্ছি। এটি বিশ্বকাপে আমাদের প্রেরণা জোগাবে। এই সিরিজের ইতিবাচক দিকগুলো কাজে লাগালে অবশ্যই আমরা বিশ্বকাপে ভালো কিছু করতে পারব।’
আরব আমিরাতে প্রায় ৪০ ডিগ্রির আবহাওয়ায় ম্যাচ খেলতে হয়েছে। কিন্তু নিউজিল্যান্ডে এখন তীব্র শীত। তাপমাত্রা এমনকি শূন্যে নামছে মাঝেমধ্যেই। ভিন্ন পরিবেশে গিয়ে শুরুতে মানিয়ে নেওয়ার চ্যালেঞ্জ থাকে। সোহান জানালেন সবাই সে চেষ্টা করছে এবং কন্ডিশন কোনো অসুবিধার কারণ হবে না। লিংকনে অনুশীলন সুবিধা সোহানদের প্রতিকূল পরিবেশেও ভালো প্রস্তুতির সুযোগ করে দিয়েছে, ‘আমরা এখানে আসার পর বৃষ্টি ও বরফ পড়া সত্ত্বেও দু’দিনের অনুশীলন ভালোভাবে করতে পেরেছি। প্রস্তুতির দিক থেকে সবাই খুব ভালো করছে। কালও (আজ) অনুশীলন করব। তো ম্যাচের আগে আমরা প্রস্তুতির দিক থেকে শতভাগ ঠিক আছি।’
কাল পাকিস্তানের সঙ্গে ম্যাচ দিয়ে ত্রিদেশীয় সিরিজের অভিযান শুরু বাংলাদেশের। প্রস্তুতি ভালো হলেও এই সিরিজে ফল নিয়ে ভাবছে না বাংলাদেশ। বিশ্বকাপ সামনে রেখে এই সিরিজেও নিজেদের পরিকল্পনার কিছু দেখে নেওয়ার লক্ষ্য আছে। সোহান জানালেন সেই পরিকল্পনা ও প্রক্রিয়া ঠিক করায় এ সিরিজে বাংলাদেশের প্রথম লক্ষ্য, ‘সবচেয়ে বড় যে জিনিসটা আমাদের সবার কাছে একটা বার্তা দেওয়া হচ্ছে যে, আমরা যেন ফলাফল নিয়ে চিন্তা না করি। আমরা একটা প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। ফল কী হবে তা আগে থেকে অনুমান করার সুযোগ নেই। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে বিষয়টি হলো দল হিসেবে খেলা।’
আজ দলের সঙ্গে যোগ দেবেন সাকিব। সোহানরা এতদিন যেসব পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করেছেন তা সাকিব এশিয়া কাপের পর আজই চাক্ষুস দেখবেন। কালকের সংবাদ সম্মেলনে শেষদিকে সহ-অধিনায়ক বারবারই দল হয়ে খেলার কথা বললেন। কিন্তু সাকিব তো এতদিন দলের বাইরেই ছিলেন। তবুও সাকিব একজন পারফরমার। সঠিক জায়গায় ঠিকই জ্বলে ওঠেন। তার সঙ্গে দলের বাকিরা হাত মেলালে আরও একটি আন্তর্জাতিক সিরিজ থেকে ভালো কিছু নিয়ে বিশ্বকাপে যেতে পারবে বাংলাদেশ।
প্রতিপক্ষ ভারতের তামিলনাড়ু রাজ্যের একাদশ। গত বছর ভারতের প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট প্রতিযোগিতা রঞ্জি ট্রফিতে নিজেদের গ্রুপে কোনো ম্যাচ না জিতে তৃতীয় হয়ে নকআউট পর্বে উঠতে ব্যর্থ হয়েছিল তামিলনাড়–। তাদের বিপক্ষেই বিসিবি একাদশ নামে যে দল পাঠাচ্ছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড, সেটা আদতে টেস্ট দলেরই নামান্তর! চার দিনের দুটো ম্যাচের জন্য নির্বাচকরা যে দল গড়েছেন তাতে ১৪ জনের মধ্যে ৯ জনই টেস্ট খেলেছেন।
১০ অক্টোবর থেকে মাঠে গড়াচ্ছে বাংলাদেশের ঘরোয়া প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটের সর্বোচ্চ আসর জাতীয় ক্রিকেট লিগ। বরাবরই অভিযোগ ওঠে, জাতীয় দলের খেলোয়াড়দের পাওয়া যায় না জাতীয় লিগে, তাই হয় না মানসম্মত প্রতিদ্বন্দ্বিতা। জাতীয় লিগ মাঠে গড়াবার ঠিক আগের দিন ১৪ জন ক্রিকেটারের বিসিবি একাদশের হয়ে খেলতে চেন্নাই যাত্রা প্রমাণ করে, জাতীয় লিগে আস্থা নেই নির্বাচকদেরও। দেশের মাটিতে ভারতের বিপক্ষে বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের দুটো ম্যাচ আছে সামনে। অথচ দেশে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট না খেলে টেস্ট দলের সিংহভাগ ক্রিকেটারদের নিয়ে গড়া বিসিবি একাদশ যাচ্ছে চেন্নাই, সেখানে ভারতের রাজ্য দলের বিপক্ষে খেলে হবে দেশে ভারতের বিপক্ষে টেস্টের প্রস্তুতি!
সাধারণত কোনো দেশে মূল দল সফরে যাওয়ার আগে অভিজ্ঞতা ও প্রস্তুতির জন্য ‘এ’ দলের মোড়কে একটা সফর আয়োজনের চেষ্টা থাকে অতিথি বোর্ডের। কিছুদিন আগে শ্রীলঙ্কায় অস্ট্রেলিয়া মূল দল এবং ‘এ’ দল এসেছিল একই সঙ্গে, কেউ চোট পেলে সঙ্গে সঙ্গে ‘এ’ দল থেকে বদলি খেলোয়াড় নিয়েছে অস্ট্রেলিয়া। ভারত সফরে এসেছিল নিউজিল্যান্ড ‘এ’ দল, সেখানেও বেশিরভাগই ছিলেন নতুন মুখ। উদ্দেশ্যটা সহজ, আগামী বছরের গোড়াতেই ভারত সফরের আগে তরুণদের একটু উপমহাদেশে খেলার সুযোগ করে দেওয়া। বিসিবি সেখানে ঘোড়ার আগে গাড়ি জুড়ে দেওয়ার মতো করে বাংলাদেশ জাতীয় দলের সফরের পর ‘এ’ দলকে পাঠিয়েছিল উইন্ডিজে! ২০২৪ সালের শেষে উইন্ডিজে আবার খেলতে যাবে বাংলাদেশ জাতীয় দল, ততদিনে মোহাম্মদ মিঠুনের নেতৃত্বে আগস্ট মাসে ক্যারিবিয়ান ঘুরে আসা দলটা যে সব উইন্ডিজের মাটিতে খেলে শেখা তথাকথিত অভিজ্ঞতা যে ভুলেই বসবেন, এমনটাই স্বাভাবিক।
চোখ বুলানো যাক তামিলনাড়ু রাজ্য দলটির দিকে। যে দলটা সবশেষ মৌসুমে রঞ্জি ট্রফিতে খেলেছে, তাতে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিজ্ঞতাসম্পন্ন ছিলেন তিনজন। অধিনায়ক বিজয় শংকর ও সহ-অধিনায়ক ওয়াশিংটন সুন্দর ভারতীয় দলে নিয়মিত ছিলেন কিছুদিন, তবে এখন চৌহদ্দির বাইরে। আরেকজন সন্দ্বীপ ওয়ারিয়ের গত জুলাইতে কভিড আইসোলেশনে অনেক ক্রিকেটার খেলতে না পারায় তালগোলে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে একটা টি-টোয়েন্টিতে খেলে ফেলেছেন। এন শ্রীনিবাসন আমলে ভারতীয় দলের মিডিয়া ম্যানেজার আর এন বাবার দুই যমজ ছেলে খেলেন তামিলনাড়ু রাজ্য দলে। তাদের একজন ঢাকা লিগে খেলে গেছেন গত বছর এবং তার পারফরম্যান্সও ছিল মাঝারিমানের, ৭ ম্যাচে করেছিলেন ৩৭৮ রান। আরও অবাক করার বিষয় হচ্ছে, তাদেরকেও হয়তো তামিলনাড়ু একাদশে দেখা যাবে না কারণ ভারতের ঘরোয়া টি-টোয়েন্টি আসর সৈয়দ মুশতাক আলি ট্রফি চলছে এবং এই বিজয় শংকর, ওয়াশিংটন সুন্দররা নিশ্চিতভাবেই এই আসরেই রাজ্যের প্রতিনিধিত্ব করবেন।
উল্টোদিকে বিসিবি একাদশটা আসলে বকলমে জাতীয় দল! সাবেক টেস্ট অধিনায়ক মমিনুল হক, টেস্ট দলের নিয়মিত দুই উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান সাইফ হাসান ও সাদমান ইসলাম এবং টেস্টে বাংলাদেশের অন্যতম সেরা স্পিনার তাইজুল ইসলাম আছেন বিসিবি একাদশে। স্টিভ রোডস আমলে এবং পরবর্তীতে সাকিব আল হাসান নিষিদ্ধ থাকার সময়টায় বেশ নিয়মিত জাতীয় দলে ছিলেন মোহাম্মদ মিঠুন। বিরাট কোহলি-স্টিভেন স্মিথ-কেন উইলিয়ামসনরা যে অনূর্ধ-১৯ বিশ্বকাপে খেলেছিলেন, সেই আসরে মিঠুনও ছিলেন বাংলাদেশ দলে। ক্যারিয়ারটা আগায়নি তেমন, ভবিষ্যতে কখনো বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক হবেন সেই আশঙ্কাও ক্ষীণ। অথচ মিঠুন বিসিবি একাদশের অধিনায়ক! অথচ এই রকম সফর ভবিষ্যতের সম্ভাবনাময় কারও নেতৃত্বগুণ পরখ করে দেখার দারুণ সুযোগ, সাকিবের টেস্টে অনাগ্রহ এবং অনিয়মিত উপস্থিতিতে বিসিবি বিকল্প কাউকে পরখ করে না দেখে সেই মিঠুনকেই করেছে অধিনায়ক।
গুঞ্জন ছিল তামিম ইকবাল খেলতে পারেন ওয়ানডেতে। দল প্রকাশের পর নিশ্চিত হওয়া গেছে, ওয়ানডে অধিনায়ক এসবের মাঝে নেই। ওয়ানডে দলে সাইফ হাসানকে রেখে দেওয়াটা প্রশ্নবিদ্ধ, তবে অন্তত নির্বাচকরা এটুকু বাহবা পেতে পারেন যে তৌহিদ হৃদয়, আকবর আলী, রিপন মন্ডল, মৃত্যুঞ্জয় চৌধুরীদের মতো উঠতি খেলোয়াড়দের তারা সুযোগ দিয়েছেন ওয়ানডেতে। যদিও ঘরোয়াতে ভালো করে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ফের ব্যর্থতার ছাপ রাখা এনামুল হক বিজয় জায়গা করে নিয়েছেন দুই ফরম্যাটেই, মিঠুনই অধিনায়ক সীমিত ওভারের সিরিজেও।
দেশ ছাড়ার আগে খোদ বিসিবি সভাপতির পাশে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশ জাতীয় দলের প্রধান কোচ রাসেল ডমিঙ্গ বলেছিলেন, দুবাইতে ‘এ’ দলের খেলার সময় তিনি দলের সঙ্গে থাকবেন, উঠতি খেলোয়াড়দের নিয়ে কাজ করবেন। আফগান ক্রিকেট বোর্ডের দৈন্যে নাকের বদলে নরুন পাওয়ার মতো তামিলনাড়ু রাজ্য দলের সঙ্গে সিরিজে থাকছেন না ডমিঙ্গো। বিসিবির ক্রিকেট অপারেশনস বিভাগের ডেপুটি ম্যানেজার শাহরিয়ার নাফীস জানিয়েছেন, ‘এই সিরিজটা তো হুট করে আয়োজন করা হয়েছে। তাই ডমিঙ্গোকে পাওয়ার সম্ভাবনা অতি ক্ষীণ। দুবাইতে তার ভ্রমণ পরিকল্পনাটা যেভাবে সাজানো যেত, ভারতে তা সম্ভব নয়। এই সফরে স্থানীয় কোচদেরই আমরা প্রাধান্য দেব।’ কিছুদিন আগে ‘এ’ দলের সঙ্গে কোচিং স্টাফের অংশ হিসেবে উইন্ডিজ গিয়েছিলেন রাজিন সালেহ। সাবেক এই অধিনায়কই দেশ রূপান্তরকে জানিয়েছেন, চেন্নাই সফরে থাকছেন তারাই ‘মিজানুর রহমান বাবুল ভাই প্রধান কোচ, পেস বোলিং কোচ হিসেবে তালহা জুবায়ের এবার থাকছে আমাদের সঙ্গে। আমিও যাচ্ছি’ বলে জানিয়েছেন জাতীয় দলের ফিল্ডিং কোচ হিসেবে কাজ করা রাজিন।
বিসিবি একাদশ ভারত যাবে ৯ অক্টোবর। দু’দিন অনুশীলনের পর প্রথম চার দিনের ম্যাচ ১২-১৫ অক্টোবর। দ্বিতীয় চার দিনের ম্যাচটি হবে ১৯-২২ অক্টোবর। এক দিনের ম্যাচ তিনটি হবে ২৭, ২৯ ও ৩১ তারিখে। সবগুলো ম্যাচ চেন্নাইর টেস্ট ভেন্যু চিদাম্বরম স্টেডিয়ামে।
১ নভেম্বর দেশের বিমান ধরবেন ক্রিকেটাররা। অর্থাৎ চার দিনের ম্যাচ ও এক দিনের ম্যাচের দলে যারা খেলছেন, তাদের জাতীয় লিগের পঞ্চম রাউন্ডের আগে দলের সঙ্গে যোগ দেওয়ার সুযোগ নেই। ৭ নভেম্বর থেকে শুরু হবে পঞ্চম রাউন্ড, চতুর্থ রাউন্ডের খেলা ৩১ অক্টোবর শুরু হয়ে চলবে ৩ নভেম্বর পর্যন্ত।
লেভানডফস্কি গোল না পেলে বার্সেলোনাও জিতবে না। নিয়মে দাঁড়িয়ে গেছে যেনো ব্যাপারটা। লা লিগায় অভিষেক ম্যাচে গোলশূন্য ছিলেন পোলিশ স্ট্রাইকার, বার্সাও গোল পায়নি। পরের ৬ ম্যাচের প্রত্যেকটিতে গোল পেয়েছেন, বার্সাও জিতেছে। ভিক্টোরিয়া প্লাজের বিপক্ষে চ্যাম্পিয়নস লিগের প্রথম ম্যাচে হ্যাটট্রিক করেন লেভা, বার্সা জেতে ৫-১ গোলে। পরের ম্যাচে বায়ার্নের বিপক্ষে গোল পাননি, বার্সা হরে সে ম্যাচে। বুধবার সান সিরোতে ইন্তার মিলানের বিপক্ষেও গোলশূন্য লেভা, হাকান চারহানোগ্লুর গোলে হারল বার্সেলোনা।
এই হার অবশ্য মানতে নারাজ বার্সা কোচ জাভি। তার অভিযোগ, রেফারিংয়ে অবিচারের শিকার হয়েছে তার দল। ৬৬ মিনিটে দেম্বেলের ক্রস থেকে বল জালে পাঠান মিডফিল্ডার পেদ্রি। বল তার কাছে পৌঁছার আগে হেড দিতে গিয়ে অনিচ্ছাকৃতভাবে আনসু ফাতির হাতে লাগে। ওটাকে হ্যান্ডবল ধরায় গোল দেননি রেফারি। তবে ভিডিও রিপ্লে দেখে মনে হয়েছে, ফাতির হ্যান্ডবল ছিল অনিচ্ছাকৃত। পরের ঘটনাতেও আছেন ফাতি। বক্সে তার সামনে থেকে বল ‘ক্লিয়ার’ করতে গিয়ে হাতের কবজিতে বল লাগান ডামফ্রিস। রেফারি দীর্ঘ সময় ভিএআরের সহায়তা নিয়ে বার্সার পেনাল্টির আবেদন নাকচ করে দেন। এসব নিয়ে ম্যাচ শেষে বিরক্তি প্রকাশ করেন জাভি, ‘কিছুই বুঝতে পারছি না। আনসু (অনিচ্ছাকৃতভাবে) হ্যান্ডবল করলেও গোলটা করেছে অন্য একজন। এটা গোল। কিন্তু বাতিল করে দেওয়া হলো। আরেকটিও (ডামফ্রিসের হ্যান্ডবল)... বুঝতে পারিনি। খোলাখুলি বলছি, এটা অবিচার। রেফারির মুখ খোলা উচিত।’
এই গ্রুপের অপর ম্যাচে বায়ার্ন মিউনিখ ৫-০ গোলে হারিয়েছে ভিক্টোরিয়া প্লাজেনকে। জোড়া গোল করেন লেরয় সানে। গোল পেয়েছেন সাদিও মানেও। টানা দুই ম্যাচে (লিগ ম্যাচের পর চ্যাম্পিয়নস লিগে) গোল পেলেন সেনেগালিজ। অপর দুই গোল করেন নাব্রি এবং চুপো মোটিং। তিন ম্যাচের সবগুলো জয়ে ৯ পয়েন্টে শীর্ষে বায়ার্ন মিউনিখ, ইন্তার ৬ পয়েন্টে আছে দুইয়ে। ৩ পয়েন্ট নিয়ে বার্সেলোনা তিনে।
পরিসংখ্যানে এগিয়ে প্রতিপক্ষ। তবুও পাকিস্তানের কাছে হারটা মানতে যেন একটু বেশিই কষ্ট হচ্ছে জ্যোতি-সালমাদের। তার ওপর সিলেটের দ্বিতীয় গ্রাউন্ডের অদ্ভুতুড়ে আচরণ, অবিশ্বাস্য টার্নÑ সব মিলিয়ে জেরবার বাংলাদেশ আজ ফের লড়াইয়ে নামছে। প্রতিপক্ষ তুলনামূলক সহজ মালয়েশিয়া। আর মাঠও আগেরটি নয়। এবার খেলা হবে সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামের এক নম্বর গ্রাউন্ডে। মাঠ বদলে উইকেটের চরিত্র বদলাবে কিনা বুঝা মুশকিল হলেও বাংলাদেশ যে জয় ছাড়া ভাবছে না এটা আঁচ করা গেছে সানজিদা আক্তার মেঘলার কথায়।
মালয়েশিয়ার সঙ্গে এ পর্যন্ত দু’বার দেখা হয়েছে বাংলাদেশের। প্রতিবারই দাপুটে জয় পেয়েছেন মেঘলারা। তিন অঙ্কের ঘর পর্যন্ত যেতে দেননি কোনোবারই প্রতিপক্ষকে। এ দুই জয় আজ মাঠে নামার আগে অনুপ্রেরণা হিসেবে দেখছে নারী ক্রিকেট দল।
থাইল্যান্ডের বিপক্ষে দাপুটে জয়ে এশিয়া কাপ শুরু করলেও পাকিস্তানের বিপক্ষে বাজে হারে ছন্দপতন ঘটে। তবে ক্রিকেটাররা, বিশেষ করে সিনিয়ররা ইতিবাচকই আছেন। মালয়েশিয়ার বিপক্ষে আজ তাই ঘুরে দাঁড়ানোর প্রত্যয় সানজিদার কণ্ঠে, ‘আমি দলের মধ্যে জুনিয়র। আমাদের সিনিয়র আপুরা অনেক ইতিবাচক। তারা সবসময় আমাদের জুনিয়রদের সমর্থন দেন। হারজিত দলে থাকবেই, এটা নিয়ে কোনো নেতিবাচতা আমাদের নেই। আমরা ইতিবাচক আছি, পরের ম্যাচেই ঘুরে দাঁড়াব।’ প্রতিপক্ষ সম্পর্কে ধারণা আছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘মালয়েশিয়ার সঙ্গে কমনওয়েলথে খেলেছি। ওদের দল নিয়ে ধারণা আছে। ইনশাআল্লাহ ভালো খেলা হবে।’
নতুন উইকেটে ঘুরে দাঁড়ানোর দিনে লড়াইটা পিচ রক্ষণাবেক্ষণের ওপর নির্ভর করছে বলে মনে করছেন মেঘলা, ‘আমরা এখানে জাতীয় লিগের ম্যাচ খেলে গেছি। দুইটা মাঠেই সমানভাবে খেলা ছিল। গত ম্যাচে পাকিস্তানের সঙ্গে স্পিন উইকেট ছিল, এক নম্বর মাঠেও স্পিন আছে। এটা নির্ভর করছে পিচ কীভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করা হচ্ছে, যেহেতু এটা নতুন ইভেন্ট।’
দ্বিতীয় বাংলাদেশি হিসেবে আইসিসির মাসসেরা নারী ক্রিকেটারের সংক্ষিপ্ত তালিকায় মনোনয়ন পেলেন নিগার সুলতানা জ্যোতি। সেপ্টেম্বরের জন্য ভারত অধিনায়ক হারমানপ্রীত কৌর ও ব্যাটার স্মৃতি মান্দানার সঙ্গে এ মনোনয়ন পেয়েছেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। এর আগে গত নভেম্বরের সেরার সংক্ষিপ্ত তালিকায় ছিলেন বাংলাদেশের নাহিদা আক্তার। গেল মাসে আবুধাবিতে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে দলের সঙ্গে ব্যক্তিগত পারফরম্যান্স দারুণ ছিল নিগারের। ৫ ম্যাচে ৪৫ গড়ে তিনি করেন ১৮০ রান। প্রথম ম্যাচে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে খেলেন ৬৭ রানের ইনিংস, এরপর যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে করেন অপরাজিত ৫৬ রান।
টুর্নামেন্টে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হয়ে ২০২৩তে দক্ষিণ আফ্রিকায় বিশ্বকাপের মূলপর্ব নিশ্চিত করেন নিগাররা। নিগার, হারমানপ্রীত বা স্মৃতি শেষ পর্যন্ত যে-ই এ পুরস্কার জিতুন, তিনি হবেন আইসিসির মাসসেরা হওয়া নিজ দেশের প্রথম নারী ক্রিকেটার।
পুরুষদের সেপ্টেম্বরের মাসসেরার সংক্ষিপ্ত তালিকায় আছেন অস্ট্রেলিয়ার ক্যামেরন গ্রিন, ভারতের অক্ষর প্যাটেল ও পাকিস্তানের মোহাম্মদ রিজওয়ান।
পুরো ম্যাচেই একের পর এক থ্রোইন আদায় করে সিঙ্গাপুরের রক্ষণের ভিত নড়াতে চেয়েছে স্বাগতিক বাংলাদেশ। তাদের হয়ে দারুণ সব লম্বা থ্রোইন করেও গেছেন মোহাম্মদ রাতুল। তবে কাজের কাজ হচ্ছিল না। তাই আগে লিড নিয়েও পয়েন্ট খোয়ানোর শঙ্কা চেপে বসেছিল বাংলাদেশ শিবিরে। ১০ মিনিটে আত্মঘাতী গোলে পিছিয়ে পড়া সিঙ্গাপুর ২৭ মিনিটে সমতায় ফিরে বাকি সময়টায় রক্ষণ আটোসাটো রেখে চেয়েছে এক পয়েন্ট নিয়ে মাঠ ছাড়তে। সেটা করতে গিয়ে তারা বারবার সময়ক্ষেপণের মহড়ায় মেতেছিল। তাই হংকংয়ের রেফারি নির্ধারিত ৯০ মিনিট শেষ হওয়ার পর ৮ মিনিট অতিরিক্ত সময় ম্যাচ এগিয়ে নেন। সেই যোগ করা সময়ের শেষ মিনিটেই রাতুল সফল হলেন। তার আরেকটি লম্বা থ্রোইন ফসকালো সিঙ্গাপুরের কিপার আইজ্যাক লি’র বিশ্বস্ত গ্লাভস। বাংলাদেশ এএফসি অনূর্ধ্ব-১৭ এশিয়ান কাপ বাছাইপর্ব শুরু করতে পারল ২-১ গোলের স্বস্তির জয়ে। কমলাপুর স্টেডিয়ামে দিনের প্রথম ম্যাচে ইয়েমেন ৮-০ গোলে হারায় ভুটানকে।
সরকারি হিসাবে চলতি বছরে বিদ্যুতের চাহিদার তুলনায় উৎপাদন সক্ষমতা হবে প্রায় দ্বিগুণ। পরের দুই বছরে কিছু পুরনো ও অদক্ষ বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ করা হলেও অতিরিক্ত সক্ষমতা হবে প্রায় দেড়গুণ। অথচ আদর্শ মান অনুযায়ী অতিরিক্ত সক্ষমতা সর্বোচ্চ ২০ শতাংশ হওয়া উচিত। এ অবস্থায় বিদ্যুৎ আমদানি ও নতুন কেন্দ্র স্থাপন নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জ্বালানি সংকট ও সঞ্চালন-বিতরণ লাইনের সীমাবদ্ধতার কারণে সক্ষমতা অনুযায়ী বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যায় না। ফলে অপ্রয়োজনীয় বিদ্যুৎকেন্দ্র বসিয়ে রেখে হাজার হাজার কোটি টাকা ক্যাপাসিটি চার্জ দিতে হচ্ছে।
তাদের মতে, সরকার বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে যত মনোযোগ দিয়েছে তার তুলনায় বিতরণ ও সঞ্চালন লাইন বাড়ানো হয়নি। বিদ্যুৎ উৎপাদনে প্রাথমিক জ্বালানির সংস্থানও টেকসই করা হয়নি। অথচ কেন্দ্র ভাড়া বাড়ার পাশাপাশি সরকারের বিনিয়োগ অলস পড়ে থাকার মাত্রা বাড়ছে। এ অবস্থা চললে ভবিষ্যতে বিদ্যুতের দাম বাড়িয়েও লোকসান কমানো কঠিন হয়ে পড়বে। এতে বিদ্যুৎ খাতের অস্থিরতা বাড়বে।
পিডিবির সূত্রমতে, দেশে গ্রিড বিদ্যুতের স্থাপিত ক্ষমতা ২৩ হাজার ৪৮২ মেগাওয়াট। বিদ্যুৎ বিভাগ এটিকেই উৎপাদন ক্ষমতা বলে প্রচার করছে। প্রকৃত উৎপাদন ক্ষমতা ২২ হাজার ৭০০ মেগাওয়াট। ২০২২ সালের ১৬ এপ্রিল সর্বোচ্চ উৎপাদন হয়েছে ১৪ হাজার ৭৮২ মেগাওয়াট। সাধারণত গড়ে ১১-১২ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়। বর্তমানে ভারত থেকে ১ হাজার ১৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির করা হচ্ছে। ভারতের আদানি গ্রুপ থেকে আরও দেড় হাজার মেগাওয়াট আমদানি করা হবে আগামী মার্চে।
বিদ্যুৎ খাতের মহাপরিকল্পনা অনুযায়ী, ২০৪০ সালের মধ্যে ভারত, নেপাল ও ভুটান থেকে ৯ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। ২০৩০ সাল নাগাদ নেপাল থেকে ৫০০ মেগাওয়াট আমদানির লক্ষ্যে কাজ করছে বিদ্যুৎ বিভাগ।
পিডিবির পরিচালক মোহাম্মদ শামীম হাসান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রতি বছর বিদ্যুতের চাহিদা বাড়ছে। সে হিসাবে উৎপাদন বাড়ানো হচ্ছে। কিন্তু উৎপাদন সক্ষমতা ও চাহিদার মধ্যে ফারাক বেশি মনে হলেও সক্ষমতা থাকার পরও জ্বালানি স্বল্পতার কারণে চাহিদার পুরো বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যায় না। অনেক কেন্দ্র কারিগরি ত্রুটি ও মেইনটেনেন্সের কারণে বন্ধ রাখতে হয়। এসব বিবেচনায় নিলে সক্ষমতা বেশি নয়।’
বুয়েটের অধ্যাপক ড. ম তামিম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘চাহিদার তুলনায় ১০ থেকে ২০ শতাংশ অতিরিক্ত বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতাই যথেষ্ট। এর বেশি সক্ষমতা মানে বিপুল আর্থিক বোঝা। কাগজে-কলমে যে সক্ষমতা এখন আছে সেটা অনেক বেশি। আরও বেশি হলে কীভাবে এফোর্ড করব। এর ফলে ক্যাপাসিটি পেমেন্ট বাড়বে। পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রে যেমন বিদ্যুৎ নিতে না পারলেও ৫ হাজার কোটি টাকা “ক্যাপাসিটি পেমেন্ট” দিতে হয়েছে। ভারতের আদানিকেও মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার ক্যাপাসিটি পেমেন্ট দিতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘২০২৭ সাল নাগাদ প্রায় ১২ হাজার মেগাওয়াট কয়লা ও এলএনজিভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র উৎপাদনে আসবে। এসবের জ্বালানির পুরোটাই আমদানিনির্ভর। প্রশ্ন হলো, এ আমদানি ব্যয় কি বহন করা সম্ভব? যদি না পারি তাহলে বিদ্যুৎ উৎপাদন না করলেও এসব কেন্দ্রের জন্য ভাড়া গুনতে হবে। এ টাকা কে দেবে? গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বাড়িয়েই কি তা সম্ভব? কার্যত নানাভাবে ভোক্তার পকেট থেকে এ টাকা যাবে।’
পিডিবির তথ্যমতে, সরকারি-বেসরকারি ও যৌথ উদ্যোগে ১৭টি কেন্দ্র নির্মাণাধীন রয়েছে, যার মোট উৎপাদন ক্ষমতা ১২ হাজার ৯৪ মেগাওয়াট। ১০ হাজার ৮৬৯ মেগাওয়াট ক্ষমতার ৩১টি বিদ্যুৎকেন্দ্র ২০২৫ সালের মধ্যে উৎপাদনে আসবে। ১৭টি কেন্দ্রের ১৩টি বিদ্যুৎ উৎপাদনে যাবে। এসবের মোট উৎপাদন ক্ষমতা ৬৫০ মেগাওয়াট। আরও ৬৫০ মেগাওয়াট ক্ষমতার পাঁচটি কেন্দ্র নির্মাণের দরপত্রের আওতায় রয়েছে। পরিকল্পনাধীন কেন্দ্রের মধ্যে ৫৮৫ মেগাওয়াট ক্ষমতার আটটি কেন্দ্রে উৎপাদন শুরু করার কথা রয়েছে ২০২৫ সালের মধ্যে। এ ছাড়া ভারতের আদানি গ্রুপ থেকে চলতি বছর ১ হাজার ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি করা হবে। অন্যদিকে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ২ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট উৎপাদন শুরু হবে ২০২৫ সাল নাগাদ। সব মিলে দুই বছর পর দেশের মোট উৎপাদন সক্ষমতা অন্তত ৩৯ হাজার ৩০০ মেগাওয়াটে দাঁড়াবে। অথচ তখন বিদ্যুতের চাহিদা হবে ১৯ হাজার ৯০০ মেগাওয়াট।
আগামী দুই-তিন বছরে ৭-৮ হাজার মেগাওয়াট ক্ষমতার কিছু পুরনো ও তেলবিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ করা হলেও ২০২৫ সালে উৎপাদন সক্ষমতা দাঁড়াবে প্রায় ৩৩ হাজার মেগাওয়াটে। বিভিন্ন ধরনের কারিগরি ক্ষতি ও কেন্দ্রের নিজের ব্যবহার্য বিদ্যুৎ বিবেচনায় নিলেও চাহিদার তুলনায় তখন বিদ্যুতের উৎপাদন সক্ষমতা অন্তত ৫০ শতাংশ বেশি হবে। যদিও চাহিদা এর চেয়ে কম হবে বলে ধারণা বিশেষজ্ঞদের। কারণ এর আগের প্রক্ষেপণ অনুযায়ী চাহিদা কমেছে।
প্রক্ষেপণ অনুযায়ী চাহিদা কমলেও উৎপাদন কিন্তু বেড়েই চলেছে। যেমন চলতি বছর পর্যন্ত বিদ্যুতের উৎপাদন সক্ষমতা ২৬ হাজার ৩০৮ মেগাওয়াট ধরা হলেও পিডিবির হিসাবে তা দাঁড়াবে প্রায় ৩০ হাজার মেগাওয়াট। প্রক্ষেপণ অনুযায়ী চাহিদা কমে যাওয়া ও উৎপাদন সক্ষমতা বাড়ার ফলে প্রায় অর্ধেক কেন্দ্র অলস বসে থাকবে।
ড. তামিম বলেন, ‘গত চার-পাঁচ বছরে শিল্পকারখানার সম্প্রসারণ আশানুরূপ হয়নি। নানা সীমাবদ্ধতার কারণে শিল্পে গ্রিডভিত্তিক বিদ্যুতের চাহিদা তেমন বাড়েনি। এ কারণে বিদ্যুতের চাহিদা কম। সরকার বিদ্যুতের যে সক্ষমতার কথা বলছে তা আসলে কতটুকু সত্য আমরা জানি না। প্রকৃত চিত্র আমাদের দেখানো হয় না।’ তিনি বলেন, ‘২০১৬ সালে বিদ্যুৎ নিয়ে যে প্রক্ষেপণ করা হয়েছিল সে অনুযায়ী চাহিদা বাড়েনি। অথবা চাহিদা বেড়েছে কিন্তু সে অনুযায়ী সরবরাহ করতে না পারায় চাহিদা কম দেখানো হচ্ছে। ক্লিয়ার পিকচার আমরা পাচ্ছি না। পরিকল্পনা আরও সতর্কভাবে করা দরকার।’
নতুন বিদ্যুৎকেন্দ্র করার দরকার নেই এমন মন্তব্য করে ড. তামিম বলেন, ‘আমার জানামতে প্রায় তিন হাজার মেগাওয়াট অদক্ষ বিদ্যুৎকেন্দ্র রয়েছে যেগুলো ঠিকমতো গ্যাস পেলেও উৎপাদন করতে পারবে না। এগুলো বন্ধ করে তেলবিদ্যুৎকেন্দ্রের সংখ্যা কমানো দরকার। এতে বিদ্যুতের চাহিদাও মিটবে, উৎপাদন ব্যয়ও কম হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো সত্যিকারের চাহিদার প্রক্ষেপণ করা। জাইকা পুরনো “জিডিপি গ্রোথ” ধরে একটা প্রক্ষেপণ করছে। আমি এটার বিরোধী। বাস্তবের সঙ্গে এর কোনো মিল নেই। আমরা যে “ইকোনমিক গ্রোথ”-এর কথা বলছি সেটা কিন্তু পলিটিক্যাল গ্রোথ। বাস্তব নয়। পৃথিবীর ইতিহাসে ৮-৯ শতাংশ সাসটেইনেবল গ্রোথ হয়েছে এমন নজির নেই। গত ছয়-সাত বছরে আমাদের যে সর্বোচ্চ ইকোনমিক গ্রোথ হয়েছে তা কি এনার্জি ইনটেনসিভ ইকোনমিক গ্রোথ? নাকি অন্য ফ্যাক্টর আছে এখানে? বিবেচনায় নিতে হবে। ২০১৭ সাল থেকে আমরা যে শিল্পপ্রবৃদ্ধি হিসাব করছি তা কিন্তু হয়নি। গত কয়েক বছরে বিদ্যুতের চাহিদা বেড়েছে আবাসিক খাতে। শিল্পে বেড়েছে খুবই কম।’
বিদ্যুতের চাহিদার প্রক্ষেপণ কঠিন নয় উল্লেখ করে অধ্যাপক তামিম বলেন, ‘আগামী পাঁচ বছরে কী পরিমাণ শিল্পকারখানা হবে, কত বিদ্যুৎ লাগবে তা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় থেকেই জানা সম্ভব। অন্যান্য খাতের তথ্যও জানা সম্ভব। ছড়িয়ে থাকা তথ্যগুলো একত্রিত করলেই আসল হিসাবটা পাওয়া সম্ভব। একটু সময় দিলে নিখুঁত চিত্র পাওয়া যাবে।’
বিদ্যুৎ উৎপাদনে জ্বালানির বড় একটি অংশ আমদানি করতে হয়। ফলে আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানির দাম বাড়া বা কমার প্রভাব পড়ে দেশের বিদ্যুৎ খাতে। নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে না এলে বিদ্যুৎ খাত নিয়ে সমস্যা থেকেই যাবে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
পাওয়ার সেলের সাবেক মহাপরিচালক বিডি রহমতুল্লাহ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘অপরিকল্পনা, অদক্ষতা আর কিছু গোষ্ঠীর স্বার্থ রক্ষা করতে গিয়ে অপ্রয়োজনীয় কেন্দ্র নির্মাণের পাশাপাশি বিদ্যুৎ আমদানি করা হচ্ছে। সরকারের দাবি অনুযায়ী চাহিদার চেয়ে অতিরিক্ত বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা রয়েছে। তাহলে আমদানি কেন? বিদ্যুৎ আমদানি ও অপ্রয়োজনীয় বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ করা দরকার। নইলে বিদ্যুতের দাম বেড়ে ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে।’
তিনি বলেন, ‘উচ্চমূল্যে জ্বালানি আমদানি করে বিদ্যুৎ উৎপাদন করলে দাম বাড়তেই থাকবে। অথচ নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে অনেক কম দামে টেকসই বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব। সরকারের কমদামি বিদ্যুতের চেয়ে বেশি দামের বিদ্যুতে আগ্রহ বেশি। কারণ গোষ্ঠী স্বার্থ।’
ইউক্রেনের একাধিক শীর্ষ কর্মকর্তা এবং পশ্চিমা গণমাধ্যম বলছে খুব শিগগিরই বড় আকারে হামলা চালাতে যাচ্ছে রাশিয়া। জার্মান সংবাদমাধ্যম ডয়েচে ভেলে জানিয়েছে, চলতি মাসেই আরও সৈন্য ও সরঞ্জাম নিয়ে নতুন অভিযান শুরু হতে পারে। এদিকে আরও দ্রুত অস্ত্র সরবরাহের অনুরোধ নিয়ে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদর দপ্তর ব্রাসেলস যেতে পারেন।
ইউক্রেনের আশঙ্কা সত্য প্রমাণ করতে রাশিয়া পূর্বের অধিকৃত এলাকায় আরও সৈন্য ও সরঞ্জাম জমা করছে বলে নানা সূত্রে খবর পাওয়া যাচ্ছে। ফলে আগামী ২৪ ফেব্রুয়ারি হামলার বর্ষপূর্তি উপলক্ষে রুশ সেনাবাহিনী আরও বড় আকারের হামলা চালাতে পারে, এমন আশঙ্কা বাড়ছে। লুহানস্ক অঞ্চলের ইউক্রেন নিয়ন্ত্রিত এলাকার গভর্নর সেরহি হাইদাই বলেন, রাশিয়া থেকে রিজার্ভ বাহিনীর আরও সদস্য এবং সরঞ্জাম আসছে। নতুন ধরনের গোলাবারুদও আসতে দেখা যাচ্ছে। দিনরাত গোলাবারুদ নিক্ষেপ বন্ধ করে রুশ বাহিনী কোনো বড় অভিযানের জন্য সেগুলো প্রস্তুত রাখছে বলে হাইদাই মনে করেন। তার মতে, ১৫ ফেব্রুয়ারির পর যেকোনো সময়ে রাশিয়া আরও জোরালো হামলা শুরু করতে পারে। ইউক্রেনের সেনাবাহিনীও বসন্তকালে রাশিয়া অধিকৃত আরও এলাকা ছিনিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা করছে, এমন ধারণা জোরালো হচ্ছে। কিন্তু পশ্চিমা বিশ্ব থেকে ব্যাটেল ট্যাংকসহ আরও অস্ত্র, সরঞ্জাম ও গোলাবারুদ ঠিক সময়ে হাতে না পেলে এমন অভিযান কতটা কার্যকর হবে, সে বিষয়ে সংশয় রয়েছে। ২০২২ সালের দ্বিতীয়ার্ধে ইউক্রেন এলাকা পুনরুদ্ধারের ক্ষেত্রে যে সাফল্য পেয়েছিল, তা বেশ কয়েক সপ্তাহ ধরে থমকে গেছে।
এমন পরিস্থিতিতে জেলেনস্কি চলতি সপ্তাহে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) শীর্ষ সম্মেলনে সশরীরে যোগ দিতে পারেন বলে জল্পনা-কল্পনা চলছে। ইইউ জানিয়েছে, জেলেনস্কিকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। তিনি সত্যি সেই আমন্ত্রণ গ্রহণ করে ব্রাসেলস গেলে সেটা হবে যুদ্ধ শুরুর পর দেশের বাইরে তার দ্বিতীয় সফর। গত বছর ওয়াশিংটনে গিয়ে জেলেনস্কি প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে মুখোমুখি আলোচনা করেন এবং দেশটির কংগ্রেসে ভাষণ দিয়ে আরও অস্ত্র ও সামরিক সরঞ্জামের প্রতিশ্রুতি আদায় করেন। ইউরোপের কাছ থেকেও তেমন সাড়া পেতে তিনি ঝুঁকি নিয়ে ব্রাসেলস যেতে পারেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
উচ্চমাধ্যমিক সার্টিফিকেট (এইচএসসি) ও সমমানের পরীক্ষার ফলাফল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
বুধবার (৮ ফেব্রুয়ারি) সকাল ১১টায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের চামেলী হলে শিক্ষামন্ত্রী ও সব বোর্ডের চেয়ারম্যানরা নিজ নিজ বোর্ডের ফলাফল প্রধানমন্ত্রীর হাতে তুলে দেন।
ফলাফল হস্তান্তরের সময় উপস্থিত ছিলেন শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী।
বেলা সাড়ে ১১টা থেকে নিজ নিজ শিক্ষা বোর্ডের ওয়েবসাইটে ফলাফল আপলোড করা হবে। এ সময় থেকে যে কেউ রোল ও রেজিস্ট্রেশন নম্বর দিয়ে ওয়েবসাইট ও মোবাইলে এসএমএস করে ফল দেখতে পারবেন।
আজ দুপুর সাড়ে ১২টায় শিক্ষা মন্ত্রণালয় সংবাদ সম্মেলন করে বিস্তারিত ফল প্রকাশ করবে। পরীক্ষাকেন্দ্রগুলোয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও অনলাইনে একযোগে ফল প্রকাশ করা হবে বেলা একটায়।
করোনা পরিস্থিতি অনেকটা স্বাভাবিক হওয়ায় গত ৬ নভেম্বর সারা দেশে অনেকটা স্বাভাবিক পরিবেশে শুরু হয়েছিল এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা। ৯টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ড, মাদ্রাসা ও কারিগরি বোর্ড মিলিয়ে ১১টি শিক্ষা বোর্ডের অধীন মোট পরীক্ষার্থী ছিলেন ১২ লাখ ৩ হাজার ৪০৭ জন।
ঢাকা ডমিনেটরসের ক্রিকেটাররা ৭৫ ভাগ পারিশ্রমিক বুঝে পেয়েছেন, বাকিটা টুর্নামেন্ট শেষ হওয়ার এক মাসের মধ্যেই তাদের বুঝিয়ে দেওয়া হবে বলে আশ্বস্ত করেছে ফ্র্যাঞ্চাইজিটি।
আজ সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন দলটির অধিনায়ক নাসির হোসেন। এবারের বিপিএলে নিজেদের শেষ ম্যাচটি খেলেছে ঢাকা। চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের বিপক্ষে ১৫ রানের হার দিয়ে শেষ হয়েছে নাসিরের দলের এবারের বিপিএল মিশন।
ম্যাচ শেষে সংবাদ সম্মেলনে নাসির জানালেন, পারিশ্রমিক নিয়ে সংকট দূর হয়েছে। ‘আমার মনে হয়ে অনেক খেলোয়াড় ৭৫% পারিশ্রমিক পেয়েছে। আমিও পেয়েছি। ২৫% বাকি। চুক্তি অনুযায়ী টুর্নামেন্ট শেষ হওয়ার এক মাসের মধ্যে বাকিটা পেয়ে যাওয়ার কথা। প্রথম পেমেন্টটা পেতে একটু দেরি হয়েছে। কিন্তু তারা সেজন্য দুঃখ প্রকাশ করেছে।’
আসরের মাঝপথে ঢাকার খেলোয়াড়দের পারিশ্রমিক সংক্রান্ত জটিলতার কথা জানা গেলেও নাসির আশ^স্ত করেছেন নিয়ম মেনেই এখন তিন-চতুর্থাংশ পারিশ্রমিক পরিশোধ করেছে ফ্র্যাঞ্চাইজি কর্র্তৃপক্ষ। তবে দল গঠন ও পরিচালনার ব্যপারে ফ্র্যাঞ্চাইজিকে ‘অনভিজ্ঞ’ বলে দাবি করেছেন নাসির।
তার সুপারিশ করা বেশ কয়েকজন বিদেশি ক্রিকেটারকে আনতে না পারার কথাও বলেছেন, ‘আমার কাছে মনে হয় বিদেশি খেলোয়াড়রা একটা বড় ভূমিকা রাখে। কিন্তু আমরা ভালো বিদেশি খেলোয়াড় আনতে পারিনি। তাছাড়া আমাদের টপ অর্ডার ভালো করেনি। ওরা ভালো করলে অন্যরকম হতো। আর মোমেন্টাম না পাওয়ায় আমাদের প্রত্যাশা পূরণ হয়নি। টিমটা শেষ মুহূর্তে হওয়ায় এরকম হতে পারে। আমার বিশ্বাস পরের বছরে এই দল থাকলে ভালো একটা দল হবে। বিদেশি লিগ চলায় খেলোয়াড় পাওয়া যায়নি। যাদের পেয়েছে তাদেরই তারা নিয়ে এসেছে। আরও কিছু বিদেশি খেলোয়াড় পেলে আমরা ভালো করতাম।’
গ্যারি ব্যালান্সের জন্মটা জিম্বাবুয়েতে। তবে স্কুলজীবনে স্বদেশ ছেড়ে পাড়ি জমিয়েছিলেন ইংল্যান্ডে। তবে মাতৃভূমির বয়সভিত্তিক বিশ্বকাপে খেলেছেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের তার অভিষেক ইংলিশদের জার্সি গায়ে। যদিও সেখানেও অনেকদিন ধরে ব্রাত্য। তাই ক্রিকেটের টানে ঘরে ফিরেছেন তিনি। যা রাঙিয়েছেন অসাধারণ এক শতক হাঁকিয়ে।
বুলাওয়ের কুইন্স স্পোর্টস ক্লাব সাক্ষী হলো বিরল এই কীর্তির। ঘরে ফেরা গ্যারি ব্যালান্সকে কেপলার ওয়েসেলসের কীর্তি ছুঁতে দেখল কুইন্স স্পোর্টস ক্লাব। দক্ষিণ আফ্রিকার সাবেক অধিনায়ক ওয়েসেলসের পর দ্বিতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে যে টেস্ট ক্রিকেটে দুটি দেশের হয়ে সেঞ্চুরি পেলেন ব্যালান্স।
বর্ণবাদী নীতির কারণে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে দক্ষিণ আফ্রিকা নিষিদ্ধ থাকার সময় অস্ট্রেলিয়ার হয়ে টেস্ট খেলেছেন ওয়েসলস। ১৯৮২ থেকে ১৯৮৫ সালের মধ্যে অস্ট্রেলিয়ার হয়ে ২৪ টেস্টে চারটি সেঞ্চুরি করা ওয়েসেলস পরে দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে ১৬ টেস্টে করেন দুটি সেঞ্চুরি। ইংল্যান্ডের হয়ে চারটি টেস্ট সেঞ্চুরির মালিক ব্যালান্স জিম্বাবুয়ের হয়ে প্রথম টেস্ট খেলতে নেমেই পেয়ে গেলেন সেঞ্চুরি।
স্কুলে পড়ার সময় জিম্বাবুয়ে ছেড়ে ইংল্যান্ডে পাড়ি জমিয়েছিলেন গ্যারি ব্যালান্স। তবে জিম্বাবুয়ে ক্রিকেটের সঙ্গে সম্পর্ক টিকে ছিল আরও অনেক দিন। ২০০৬ সালে তো ১৬ বছর বয়সী ব্যালান্স জিম্বাবুয়ের হয়ে খেলেন অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে। সেই বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডকে হারিয়ে দিয়েছিল জিম্বাবুয়ে। যে ম্যাচে ৩ উইকেট নেওয়ার পর ব্যাট হাতে সর্বোচ্চ রান করেছিলেন দলের পক্ষে।
২০১৩ সালে ওয়ানডে দিয়ে ইংল্যান্ডের হয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট অভিষেক ব্যালান্সের। পরের বছর ইংল্যান্ডের দুর্দশার অস্ট্রেলিয়া সফরে টেস্ট অভিষেক। সিডনির সেই টেস্টে ১৮ ও ৭ রান করা ব্যালান্স ক্রিকেট তীর্থ লর্ডসে ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় টেস্টেই পেয়ে যান প্রথম সেঞ্চুরি। ক্যারিয়ারের প্রথম ১০ টেস্টের ১৭ ইনিংসেই চার সেঞ্চুরিতে ১ হাজার রান করে ফেলা ব্যালান্স খারাপ সময়টা দেখে ফেলেন তাড়াতাড়ি। পরের ১৩ টেস্টে মাত্র দুটি ফিফটি পাওয়া বাঁহাতি ব্যাটসম্যান ২০১৭ সালের পর আর সুযোগ পাননি ইংল্যান্ড দলে।
ইংল্যান্ড দলে ফেরার স্বপ্ন বিসর্জন দেওয়া সেই ব্যালান্স জন্মভূমি জিম্বাবুয়ের হয়ে খেলার সিদ্ধান্ত নিলেন গত বছর। এ বছরই জিম্বাবুয়ের হয়ে ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি খেলার পর চলমান বুলাওয়ে টেস্টেই লাল বলের ক্রিকেটে জন্মভূমির হয়ে প্রথম খেলছেন ব্যালান্স। আর প্রথমবার ব্যাট করতে নেমেই সেঞ্চুরি তুলে নিয়ে জানিয়ে দিলেন তাঁকে ফিরিয়ে ভুল করেনি জিম্বাবুয়ে।
ব্যালান্স যখন ব্যাটিংয়ে নামলেন জিম্বাবুয়ের রান ৩ উইকেটে ১১৪। ঘণ্টাখানেক পরই আরও ৩ উইকেট হারিয়ে ১৪৭ রান জিম্বাবুয়ের। ফলোঅনের শঙ্কায় পড়া দলের লেজে ব্যাটসম্যানদের নিয়ে এরপর কী লড়াইটাই না করলেন ব্যালান্স। সেই লড়াইয়ে উজ্জীবিত হয়ে ইনিংস ঘোষণার মতো বিলাসিতা করে নিলেন জিম্বাবুয়ে অধিনায়ক ক্রেগ আরভিন।
৯ উইকেটে ৩৭৯ রান তুলে জিম্বাবুয়ে যখন ইনিংস ছাড়ে ব্যালান্স অপরাজিত ১৩৭ রানে। ব্রেন্ডন মাভুতাকে নিয়ে অষ্টম উইকেটে ১৩৫ রান যোগ করা ব্যালান্স খেলেছেন ২৩১ বল, মেরেছেন ১২টি চার ও ২টি ছক্কা। ৯ চারে ৫৬ রান করেছেন নয়ে নামা মাভুতা। জিম্বাবুয়ের অবশ্য লিড নিতে পারেনি। ৬৮ রানে পিছিয়ে ছিল ইনিংস শেষে। চতুর্থ দিন শেষে সেই ব্যবধানটাকে ৮৯ রানে নিয়ে গেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। দ্বিতীয় ইনিংসে বিনা উইকেটে ২১ রান তুলেছে ক্যারিবীয়রা।
শ্রম পরিদর্শক পদে যোগ দেওয়ার ৩৪ বছর পর পদোন্নতি পেলেন মাহমুদুল হক। স্বপ্ন দেখতেন পদোন্নতির সিঁড়ি বেয়ে একসময় প্রতিষ্ঠানের সর্বোচ্চ পদে যাবেন। সেই স্বপ্ন আট বছরেই লুটিয়ে পড়ল জ্যেষ্ঠতার তালিকায়।
১৯৮৮ সালে যোগ দেওয়ায় ’৯৫ সালেই পদোন্নতি পাওয়ার কথা ছিল মাহমুদুল হকের। কর্তৃপক্ষের অবহেলা আর প্রতিষ্ঠানপ্রধানের অদূরদর্শিতা সে স্বপ্ন শুরুতেই বাধা পেল। এন্ট্রি পোস্টে যোগ দেওয়ার পর তার মতো অন্য কর্মচারীরা যখন পদোন্নতির স্বপ্নে বিভোর, তখন তাতে গা-ই করলেন না সেই সময়ের প্রতিষ্ঠানপ্রধান।
মাহমুদুল অপেক্ষায় রইলেন পরিবর্তিত পরিস্থিতির জন্য। সেই পরিবর্তন আসতে আসতে চাকরিতে কেটে গেল আঠারো বছর। আঠারোতে মানুষ প্রাপ্তবয়স্ক হয়। তিনিও ভাবলেন আঠারোতে তিনি না হয় ‘জব ম্যাচিউরিটি’তে পৌঁছালেন। চাকরির আঠারো বছরে পদোন্নতি পেলেও মন্দ হয় না।
কিন্তু অবাক ব্যাপার, কর্তৃপক্ষ পদোন্নতি দিল, তবে মাহমুদুলকে ছাড়া। পদোন্নতির প্রজ্ঞাপনে কোথাও তার নাম নেই। হতাশায় মুষড়ে পড়লেন তিনি। জুনিয়র কর্মকর্তারদের নাম আছে, অথচ তার নাম নেই। প্রতিষ্ঠানের নীতি-নির্ধারকদের দরজায় দরজায় ঘুরলেন ন্যায়বিচারের আশায়। কিন্তু তারা পাত্তাই দিলেন না বিষয়টি।
তারা আমলে না নিলেও মাহমুদুলের স্বপ্ন তো সেখানেই থেমে যাওয়ার নয়। সেই স্বপ্ন পুঁজি করে তিনি গেলেন আদালতে। সেই ভিন্ন জগৎটাও কম চ্যালেঞ্জিং ছিল না। প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনাল তার পক্ষে রায় দিল। মাহমুদুল আনন্দে আত্মহারা হলেন। কিন্তু সেই আনন্দ বেশি দিন স্থায়ী হলো না। সরকার আপিল করল প্রশাসনিক আপিল ট্রাইব্যুনালে। মামলার ফল উল্টে গেল। হতাশায় ভেঙে না পড়ে তিনি গেলেন উচ্চ আদালতে। আপিল বিভাগে সিভিল আপিল মামলা করলে প্রশাসনিক আপিল আদালতের রায় বাতিল হয়। প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনালের রায় বহাল থাকে।
জলে নেমে কুমিরের সঙ্গে লড়াই করার মতো মাহমুদুল হকও যেন সরকারের সঙ্গে লড়াই করতে নামলেন। আপিল বিভাগের রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ পিটিশন করল সরকারপক্ষ। একপর্যায়ে সরকার বুঝতে পারল কোনোভাবেই তারা এ মামলায় জিততে পারবে না। সরকারপক্ষে রিভিউ পিটিশন প্রত্যাহার করা হলো। আদালত সরকারের পদোন্নতির প্রজ্ঞাপনকে আইনের কর্তৃত্ববহির্ভূত বলে ঘোষণা করল। জুনিয়র কর্মকর্তাকে যেদিন থেকে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে এবং যতবার পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে, একইভাবে মাহমুদুল হককে পদোন্নতি দেওয়ার নির্দেশ দেয় আদালত। বকেয়া বেতন-ভাতাসহ সব পাওনা কড়ায়-গ-ায় পরিশোধের নির্দেশনা আসে।
আদালতের এই নির্দেশনা দেওয়া হয় ২০১৮ সালে। এরপর আদেশ বাস্তবায়ন করতে সরকারের লেগে যায় প্রায় চার বছর। ২০২২ সালের ১১ মে তাকে পদোন্নতি দেওয়া হয়। ৩৪ বছর পর পদোন্নতির প্রজ্ঞাপন পেয়ে স্তম্ভিত হয়ে গেলেন মাহমুদুল হক। আবারও তাকে ঠকিয়েছে সরকার। জুনিয়র কর্মকর্তা যুগ্ম মহাপরিদর্শক হলেও তাকে পদোন্নতি দেওয়া হয় তার দুই ধাপ নিচের সহকারী মহাপরিদর্শক পদে। উপমহাপরিদর্শক ও যুগ্ম মহাপরিদর্শক আরও ওপরের পদ। আদালতের নির্দেশনার সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।
কখনোই প্রজ্ঞাপন মাহমুদুল হকের জন্য ভালো বার্তা বয়ে আনেনি। পুরো চাকরিজীবন আদালতের বারান্দায় ঘুরে তিনি পৌঁছেছেন অবসরের প্রান্তসীমায়। আর তিন মাস পরে তিনি অবসরে যাবেন। যৌবন ও মধ্য বয়সের দিনগুলোতে আদালতে ঘুরে বেড়ানোর শক্তি ও সাহস থাকলেও মাহমুদুল হক এখন সেই সাহস দেখাতে দ্বিতীয়বার চিন্তা করছেন। পারবেন তো শেষ সময়ে এসে সরকারের অপরিণামদর্শী সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপসহীন মনোভাব দেখিয়ে শেষ পর্যন্ত লড়ে যেতে?
মাহমুদুল হকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে দেশ রূপান্তরকে জানিয়েছেন, তিনি আদালতের কাছেই জানতে চাইবেন, আদালতের বিচার না মানার শাস্তি কী।
পুরো ঘটনা শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা শুনিয়ে জানতে চাইলেন, কতজনের পক্ষে মাহমুদুল হকের মতো লড়াকু মনোভাব দেখানো সম্ভব?
সীমাহীন আনন্দ নিয়ে মানুষ সরকারি চাকরিতে যোগ দেয়। এরপরই তার মধ্যে যে স্বপ্নটি দানা বাঁধে তা হচ্ছে পদোন্নতি। কার কীভাবে পদোন্নতি হবে তা আইনকানুন, নিয়ম-নীতি দিয়ে পোক্ত করা। পুরো বিষয়টি কাচের মতো স্বচ্ছ। এরপরও পদোন্নতি হয় না। দিন, মাস, বছর পার হয়ে যায়, কাক্সিক্ষত পদোন্নতির দেখা মেলে না।
বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের (বিসিএস) ২৬টি ক্যাডারের মধ্যে হাতে গোনা কয়েকটি ক্যাডারে নিয়মিত পদোন্নতি হয়। বাকি ক্যাডারে হতাশা। তার চেয়েও কঠিন পরিস্থিতি নন-ক্যাডারে। ক্যাডার কর্মকর্তারা নিজের পদোন্নতির ষোলো আনা বুঝে নিয়ে ঠেকিয়ে দেন নন-ক্যাডার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পদোন্নতি। সংখ্যায় বেশি হওয়ায় নন-ক্যাডাররা একজন আরেকজনকে নানা ইস্যুতে আটকাতে গিয়ে পুরো প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করেন। সরকারের মোট কর্মকর্তা-কর্মচারীর প্রায় তিন-চতুর্থাংশ কর্মচারী। সেই হিসেবে সরকারের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনবলের পদোন্নতি হয় না। পে-কমিশন হলেই কর্মচারীদের পদোন্নতির জন্য করুণা উথলে ওঠে। এমনকি ব্লকপোস্টে যারা আছেন, তাদের জন্যও পদোন্নতির বিকল্প সুবিধা বাতলে দেওয়া হয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কর্মচারীদের পদোন্নতি উপেক্ষিতই থাকে।
যখন সময়মতো পদোন্নতি হয় না, তখন নানা ধরনের সমস্যা দেখা দিতে থাকে। এসব সমস্যা সংশ্লিষ্ট দপ্তর-অধিদপ্তরের চৌহদ্দি পেরিয়ে আমজনতাকেও প্রভাবিত করে। নন-ক্যাডার কর্মকর্তা আর সঙ্গে কর্মচারীরা যখন বুঝতে পারেন পদোন্নতির আশা তাদের নেই, তখন তারা দুহাতে টাকা কামানোর ধান্দায় মেতে ওঠেন। এতে করে ঘুষের সংস্কৃতি সমাজে ছড়িয়ে পড়ে। অকার্যকর পথে হাঁটে রাষ্ট্র। সাধারণ মানুষ টাকা ছাড়া তাদের কাছ থেকে কোনো সেবা পায় না, ব্যবসায়ীরা নতুন কোনো আইডিয়া নিয়ে ব্যবসায় আসেন না, ব্যবসাবান্ধব পরিস্থিতি না থাকায় মুখ ফিরিয়ে নেন দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীরা। প্রধানমন্ত্রীর বারবার আহ্বানেও বিনিয়োগকারীরা সাড়া দেন না। সাধারণ মানুষকে নিঃস্বার্থভাবে সেবা দেওয়ার বাণীতেও উদ্বুদ্ধ হন না সংশ্লিষ্টরা।
এই পরিস্থিতিতে অনিয়ম আটকে রাখার সব কৌশলই ব্যর্থ হচ্ছে। যথাযথ তদারকি না থাকায় বিভাগীয় ব্যবস্থা অকার্যকর হয়ে গেছে। ৩ লাখ ৫৩ হাজার ৩৫০টি অডিট আপত্তি ঝুলে থাকায় অডিট প্রতিষ্ঠানগুলোও আগ্রহ হারিয়ে নিজেরাই জড়িয়ে পড়ছে অনিয়মে। দন্তহীন বাঘে পরিণত হওয়ার তথ্য সাংবাদিকদের জানান দুর্নীতি দমন কমিশনের প্রধান নিজেই।
নন-ক্যাডার কর্মকর্তা ও কর্মচারীর পদোন্নতির বড় একটা অংশ আটকে রাখে মন্ত্রণালয়গুলো। এই আটকে রাখার কারণ হচ্ছে মন্ত্রণালয়ের নীতিনির্ধারকদের স্বার্থ। বিভিন্ন দপ্তর, অধিদপ্তরে নন-ক্যাডার কর্মকর্তাদের পদোন্নতি দিলে নিয়ম অনুযায়ী পদোন্নতিপ্রাপ্তদের ওপরের পদে বসাতে হবে। এতে মন্ত্রণালয়ের নীতিনির্ধারকদের এককালীন লাভ; অর্থাৎ টাকার বিনিময়ে একবার পদোন্নতি দেওয়া যাবে। কিন্তু পদোন্নতি না দিয়ে সংশ্লিষ্টদের চলতি দায়িত্ব দিলে বছরজুড়ে টাকা আয় করতে পারেন নীতিনির্ধারকরা। দপ্তর, অধিদপ্তরে বড় অঙ্কের টাকার বিনিময়ে চলতি দায়িত্ব দেওয়া হয়। চলতি দায়িত্বপ্রাপ্তদের আয় অনুসারে নীতিনির্ধারকদের মাসোহারা দিতে হয়। নন-ক্যাডারদের পদোন্নতি দেওয়া হলে মন্ত্রণালয়ের নীতিনির্ধারকদের নিয়মিত আয়ের উৎস বন্ধ হয়ে যায়। এ কারণে আইন বা বিধি-বিধানের ফাঁকফোকর গলিয়ে নন-ক্যাডার এবং কর্মচারীদের পদোন্নতি আটকে রাখার সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হয়।
সরকারি কর্মচারী সংহতি পরিষদের সভাপতি নিজামুল ইসলাম ভূঁইয়া মিলন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সচিবালয় এবং সারা দেশের সরকারি কর্মচারীদের পদোন্নতির মধ্যে একটু পার্থক্য আছে। নন-ক্যাডারের কিছু বিষয় ছাড়া সচিবালয়ের কর্মচারীরা সময়মতো পদোন্নতি পায়। কিন্তু সচিবালয়ের বাইরে পদোন্নতি হয় না বললেই চলে। সচিবালয়ে মাত্র ১০ হাজার কর্মচারী আছেন। সচিবালয়ের বাইরে আছেন ১০ লাখের বেশি। এসব কর্মচারীর পদোন্নতি নিয়ে বহু বছর ধরে চেষ্টা করছি। কিন্তু কোনো ফল পাইনি। সর্বশেষ মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ এ সমস্যা নিয়ে কাজ করার জন্য একটি কমিটি করে দিয়েছে। কমিটি কিছু সুপারিশ করেছে। ব্যস, ওই পর্যন্তই। এরপর এর কোনো অগ্রগতি নেই। যেখানে সরকারপ্রধান বলেন, চাকরিজীবনে সবাই যেন কমপক্ষে একটি পদোন্নতি পায়। সেখানে বহু কর্মচারী কোনো পদোন্নতি ছাড়াই অবসরে যাচ্ছেন। সরকারপ্রধানের নির্দেশনা উপেক্ষা করেন আমলারা। তাদের আগ্রহ কেনা-কাটায়, বিদেশ ভ্রমণে, নতুন জনবল নিয়োগে। এসব করলে তাদের লাভ। কর্মচারী পদোন্নতি দিতে তাদের কোনো আগ্রহ নেই। এর নিশ্চয়ই একটা শেষ আছে। বৈষম্যের পরিণতি কী হয়, তা অনেক দাম দিয়ে বিডিআর বিদ্রোহে আমরা দেখেছি।’
কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের নন-ক্যাডারদের পদোন্নতি ঝুলছে বছরের পর বছর। এই অধিদপ্তরের কয়েক শ কর্মকর্তা পাঁচ বছর আগেই পদোন্নতির যোগ্য হয়েছেন। নানা কায়দা-কানুন করে তাদের পদোন্নতি ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। অধিদপ্তরের মহাপরিদর্শক সংশ্লিষ্টদের জ্যেষ্ঠতা নির্ধারণ করে তাদের পদোন্নতির প্রক্রিয়া এগিয়ে নিলেও শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় নতুন করে জ্যেষ্ঠতার তালিকা করার নামে সময়ক্ষেপণ করছে। জ্যেষ্ঠতার তালিকা করার পর এখন তাদের পারিবারিক সদস্যদের তথ্য যাচাই-বাছাই করার জন্য একটি সংস্থাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। ওই সংস্থা নন-ক্যাডার কর্মকর্তাদের পরিবারের সদস্যদেরও তথ্য তালাশ করছে। তাদের আত্মীয়দের মধ্যে কে কোন দলের সমর্থক তার তথ্য নিচ্ছেন সংস্থার কর্মকর্তারা।
গত মাসে শেষ হওয়া জেলা প্রশাসক সম্মেলনে দায়িত্ব পালন করছিলেন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের একজন প্রশাসনিক কর্মকর্তা। ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনের সুরম্য ভবনে দায়িত্ব পালন করলেও ওই নন-ক্যাডার কর্মকর্তার মনের অবস্থাটা মনোহর ছিল না। কেমন আছেন জানতে চাইলে ওই নন-ক্যাডার কর্মকর্তা বলেন, ‘ভালো নেই। চাকরি করছি, পদোন্নতি নেই। ২০১৫ সালের আগে পদোন্নতি না পেলেও টাইমস্কেল ও সিলেকশন গ্রেড ছিল। তাও তুলে দেওয়া হয়েছে। তুলে দেওয়ার সময় বলা হয়েছিল সময়মতো পদোন্নতি হবে, ব্লকপোস্টধারীদের দেওয়া হবে বিশেষ আর্থিক সুবিধা। এসবের কোনোটাই হয়নি।’
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসে একটি প্রশাসনিক আদেশ খুবই পরিচিত। সেই প্রশাসনিক আদেশ ১৬/২০১৮ অনুযায়ী ৭০ ভাগ কর্মকর্তা সরাসরি নিয়োগ হবে। আর ৩০ ভাগ পদোন্নতির মাধ্যমে পূরণ করা হয়। ৭০ ভাগ কর্মকর্তা সরাসরি নিয়োগের ফলে বিমানে বর্তমানে প্রয়োজনের তুলনায় কর্মকর্তা বেশি। নীতিনির্ধারকদের নতুন জনবল নিয়োগে আগ্রহ বেশি। পুরনোদের পদোন্নতি দিয়ে ওপরের পদ পূরণের চেয়ে তারা নতুন নিয়োগে যান। ফলে কারও চাকরিজীবনে একবারও পদোন্নতি হয় না। নামমাত্র যে পদোন্নতি হয় তা অনিয়মে ভরপুর।
নন-ক্যাডার ছাড়াও ১৩তম গ্রেড থেকে ২০তম গ্রেড পর্যন্ত পদোন্নতি হয় না বললেই চলে। প্রতিটি দপ্তরে এসব গ্রেডের পদোন্নতি আটকে আছে। অথচ এসব গ্রেডেই বেশি লোক চাকরি করছেন। সরকারের মোট জনবল প্রায় ১৫ লাখ ৫৪ হাজার ৯২৭ জন। প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির ২৩ শতাংশ পদের মধ্যেও নন-ক্যাডার রয়েছেন। এ ছাড়া তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির ৭৭ শতাংশ পদই ১৩তম থেকে তার পরের গ্রেডের। এতে করে সহজেই বোঝা যায় সরকারের জনবলের বড় অংশই পদোন্নতির চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে। সরকারের জনবলের এই বিশাল অংশ যখন পদোন্নতি নিয়ে অনিশ্চয়তায় ভোগেন, তখন তারা নানা অনিয়মে ঝুঁকে পড়েন।
বেশির ভাগ দপ্তর, অধিদপ্তর পরিচালনা করেন বিভিন্ন ক্যাডারের কর্মকর্তারা। তারা তাদের প্রশাসনিক মন্ত্রণালয় থেকে প্রেষণে ক্যাডার কর্মকর্তাদের দপ্তর, অধিদপ্তরে পাঠান। প্রেষণে গিয়ে অনেক কর্মকর্তা শুধু রুটিন কাজটুকুই করতে চান। শূন্যপদে জনবল নিয়োগ বা পদোন্নতি রুটিন কাজ না হওয়ায় তা উপেক্ষিত থাকে। তা ছাড়া পদোন্নতি দিতে গিয়ে নানা জটিলতার সৃষ্টি হয়; বিশেষ করে মন্ত্রণালয় থেকে মন্ত্রী বা সচিব তাদের পছন্দের লোককে পদোন্নতি দেওয়ার জন্য সংস্থার প্রধানকে চাপ দেন। এই চাপ উপেক্ষা করার কোনো সুযোগ না থাকায় অযোগ্য লোককে পদোন্নতি দিতে হয় সংস্থার প্রধানকে। এই জটিলতা থেকে দূরে থাকার জন্য সংশ্লিষ্টদের পদোন্নতি দেওয়া থেকেও দূরে থাকেন সংস্থার প্রধানরা।
নন-ক্যাডার কর্মকর্তা এবং কর্মচারীদের পদোন্নতি না হওয়ার কারণ জানতে চাইলে খাদ্য অধিদপ্তরের ১৪ গ্রেডের একজন কর্মচারী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বাইরের লোকের ইচ্ছাটাই জাগে না আমাদের পদোন্নতি দিতে। আমাদের দপ্তরপ্রধান মহাপরিচালক প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তা। অতিরিক্ত মহাপরিচালকও অনেক সময় প্রশাসন ক্যাডার থেকে প্রেষণে আসেন। তাদের কেন ইচ্ছা জাগবে আমাদের পদোন্নতি নিয়ে। যদি এসব পদে ফুড ক্যাডারের কর্মকর্তা থাকতেন, তাহলে তারা খাদ্য বিভাগের সমস্যা বুঝতেন। তা ছাড়া নিয়োগ বিধি সংশোধনের নামে আমরা দীর্ঘদিন একই পদে আটকে আছি।’
গত বছরের ৩ ফেব্রুয়ারি সচিবালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা এবং ব্যক্তিগত কর্মকর্তারা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবের কাছে এক আবেদনে জানান, ‘বর্তমানে সচিবালয়ে প্রায় দুই হাজারের বেশি প্রশাসনিক ও ব্যক্তিগত কর্মকর্তা কর্মরত। এর বিপরীতে ক্যাডারবহির্ভূত সংরক্ষিত পদের সংখ্যা ২৬৭টি, যা খুবই নগণ্য। ফলে একই পদে ২০-২২ বছরের বেশি সময় কর্মরত থাকার পরও অনেকে পদোন্নতি পাচ্ছেন না। পদোন্নতি না পাওয়ায় সৃষ্ট হতাশার ফলে কর্মস্পৃহা নষ্ট হচ্ছে।’
সরকার এ সমস্যা থেকে কীভাবে বের হতে পারে জানতে চাইলে জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞ ফিরোজ মিয়া দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এসব সমস্যা সমাধানে সরকার সব সময়ই কাজ করে। কিন্তু এ চেষ্টা জটিলতার তুলনায় কম। এ বিষয়ে আরও এফোর্ট দিতে হবে।
আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৭ লাখ ৫০ হাজার ১৯৪ কোটি টাকা খরচের হিসাব ধরে বাজেট প্রস্তাব প্রণয়নের কাজ শুরু করেছে সরকার। যা চলতি অর্থবছরের তুলনায় ৭২ হাজার ১৩০ কোটি টাকা বেশি। অভ্যন্তরীণ সম্পদ থেকে খরচের বেশিরভাগ অর্থ জোগাড়ের পরিকল্পনা করা হয়েছে। এ লক্ষ্যমাত্রা প্রায় ১৯ শতাংশ বাড়ানো হবে। আসছে জুনের প্রথমভাগে জাতীয় সংসদে আগামী অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাব উপস্থাপন করা হবে। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
আগামী বাজেট হবে জাতীয় নির্বাচনের আগে বর্তমান সরকারের চলতি মেয়াদের শেষ বাজেট। তাই এখানে নেওয়া কোনো পদক্ষেপে যেন আওয়ামী লীগ সরকার সমালোচনার মুখে না পড়ে এ জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়সহ সংশ্লিষ্টদের থাকছে বিশেষ নজর। এ ছাড়া রয়েছে অর্থনৈতিক সংকট। তাই সংকট ও নির্বাচন দুটোই মাথায় রাখতে হচ্ছে সরকারের নীতিনির্ধারকদের।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, আগামী অর্থবছরের বাজেট নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে এরই মধ্যে মন্ত্রণালয়ে মোটাদাগে একটি রূপরেখা পাঠানো হয়েছে। নতুন পরিকল্পনার পাশাপাশি গত তিন মেয়াদে সরকার কী কী উন্নয়ন করেছে আগামী বাজেট প্রস্তাবে তা মনে করিয়ে দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। গত ডিসেম্বরের শেষের দিকে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি এবং উচ্চপর্যায়ের সরকারি নীতিনির্ধারকদের উপস্থিতিতে অর্থ মন্ত্রণালয়ের ‘বাজেট মনিটরিং ও সম্পদ কমিটির বৈঠকে’ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে পাঠানো আগামী বাজেটের রূপরেখা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আর গত সপ্তাহে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে (এনবিআর) চিঠি পাঠিয়ে অভ্যন্তরীণ সম্পদ থেকে রাজস্ব আদায়ের কৌশল নির্ধারণে কাজ শুরু করতে বলা হয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, যে হিসাব ধরে অর্থ মন্ত্রণালয় বাজেট প্রস্তাব প্রস্তুতির কাজ শুরু করেছে তা কয়েক দফা খতিয়ে দেখা হবে। অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে চূড়ান্ত করে প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানো হবে। তিনি প্রয়োজনীয় সংশোধন, যোগ-বিয়োগ করে আবারও অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠাবেন। বাজেট প্রস্তাব চূড়ান্ত হওয়ার আগেও অনেক কিছু পরিবর্তন হয়ে থাকে।
ডলার সংকটে পণ্য আমদানির জন্য ঋণপত্র বা এলসি খুলতে পারছেন না সাধারণ ব্যবসায়ীরা। চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম থাকায় পণ্যের দাম বাড়ছে। কাঁচামাল সংকটে বিপাকে শিল্প খাত। ব্যাংক খাতে অস্থিরতা। নতুন চাকরির সুসংবাদ নেই বললেই চলে। দফায় দফায় জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি। খুব শিগগিরই এসব সংকট কেটে যাবে বলে মনে করছেন না অর্থনীতিবিদরা। অর্থ সংগ্রহ করতে গিয়ে ঋণদাতা সংস্থার কঠিন শর্তের বেড়াজালে আছে সরকার। এমন পরিস্থিতিতেই আগামী অর্থবছরের বাজেট তৈরির কাজ শুরু হয়েছে।
অর্থ মন্ত্রণালয় ও এনবিআর সূত্র জানিয়েছে, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে সৃষ্ট বৈশি^ক অস্থিরতা মোকাবিলায় সরকার কী কী পদক্ষেপ নেবে তা আগামী বাজেটে স্পষ্ট করা হবে। দেশের চলমান অর্থনৈতিক সংকট দূর করতে একগুচ্ছ পরিকল্পনার কথাও বলা হবে। তবে শত সংকটের মধ্যেও আগামী বাজেটে ব্যবসায়ীদের দাবি অনুযায়ী যতটা সুবিধা দেওয়া সম্ভব তা দিতে সরকারের ঊর্ধ্বতন পর্যায় থেকে বাজেট প্রস্তুত কমিটির কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বিশেষভাবে কাঁচামাল আমদানিতে রাজস্ব ছাড় দিতে হিসাব কষা হচ্ছে।
দেশের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ডলার সংকটে আমদানি রপ্তানি প্রায় বন্ধ। ব্যবসা-বাণিজ্যে সংকটকাল চলছে। এমন পরিস্থিতিতে আগামী বাজেটে আমাদের দাবি অনুযায়ী নগদ সহায়তা দিতে হবে। রাজস্ব ছাড় দিতে হবে। কর অবকাশ ও কর অব্যাহতি বাড়াতে দিতে হবে।’
ঋণদাতা সংস্থা আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) দেওয়া সংস্কারের শর্ত মানার অঙ্গীকার করে সরকার ঋণ পেয়েছে। শর্ত পালনে ব্যর্থ হলে ঋণের যেকোনো কিস্তি আটকে দিতে পারে প্রতিষ্ঠানটি। পর্যায়ক্রমে প্রতি অর্থবছরের বাজেটে এসব সংস্কার প্রস্তাব অন্তর্ভুক্ত করে বাস্তবায়ন করা হবে। আসছে বাজেটে শর্ত মানার চেষ্টা থাকবে। বিশেষভাবে অতীতের মতো ঢালাওভাবে কর অব্যাহতি দেওয়া হবে না। আর্থিক খাতের সংস্কারের কিছু ঘোষণা থাকবে। বিশেষভাবে ব্যাংক খাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় জোর দেওয়া হবে। আইএমএফের সুপারিশে এরই মধ্যে ভ্যাট আইন চূড়ান্ত হয়েছে। আয়কর আইন মন্ত্রিসভার বৈঠকে অনুমোদন হয়েছে। শুল্ক আইন মন্ত্রণালয়ে ভেটিংয়ে আছে। এ তিন আইন অনুযায়ী রাজস্ব আদায়ের কৌশল নির্ধারণ করা হবে। আসছে বাজেটে টেকসই অর্থনৈতিক সংস্কারের অংশ হিসেবে সরকারি আর্থিক ব্যবস্থাপনা শক্তিশালী করার কথা বলা হবে। জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় কিছু উদ্যোগের কথা শোনানো হবে।
পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ঋণদাতা সংস্থার শর্ত মানার কথা বলা হলেও সব আগামী বাজেটে একবারে অন্তর্ভুক্ত করা যাবে না। পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়ন করতে হবে। না হলে অর্থনীতির গতি কমে যাবে।’
আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটে এনবিআর-বহির্ভূত খাত এবং এনবিআর খাতের জন্য মোট আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হতে পারে ৪ লাখ ৮৬ হাজার কোটি টাকা। এনবিআরের রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা চলতি অর্থবছরের চেয়ে ১৯ শতাংশ বাড়িয়ে ধরা হতে পারে। এতে লক্ষ্যমাত্রা ৪ লাখ ৫০ হাজার কোটি টাকা হবে। এনবিআর এ লক্ষ্যমাত্রা কমানোর জোরালো আবেদন করেছে। কিন্তু তা আমলে আনেননি অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। নতুন অর্থবছরে মোট রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে প্রায় ৩৫ শতাংশ বা ১ লাখ ৫৭ হাজার ৫০০ কোটি টাকা ভ্যাট বা মূল্য সংযোজন কর (মূসক) হিসেবে, ৩৪ শতাংশ বা ১ লাখ ৫৩ হাজার কোটি টাকা আয়কর হিসেবে এবং ৩১ শতাংশ বা বাকি ১ লাখ ৩৯ হাজার ৫০০ কোটি টাকা শুল্ক হিসেবে সংগ্রহ করার কথা বলা হতে পারে বলে জানা গেছে।
এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল মজিদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রার কথা শুধু বললেই হবে না। কীভাবে অর্জিত হবে, সেটি নিয়ে সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা না থাকলে প্রতিবারের মতো ঘাটতি থাকবে। রাজস্ব ঘাটতি হলে অর্থনীতিতে আয় ব্যয়ের ভারসাম্য নষ্ট হয়। তাই এনবিআরের লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবসম্মত হওয়া উচিত।’
এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, আগামী অর্থবছরের জন্য নির্ধারিত এ লক্ষ্যমাত্রা পূরণে এনবিআর উৎসে করের আওতা বাড়ানোর পরিকল্পনা করেছে। সম্পদশালীদের ওপর নজর বাড়ানো হবে। শুধু বেশি সম্পদ থাকার কারণে অতিরিক্ত কর গুনতে হবে। সারচার্জ বহাল রাখা হবে। সুপারট্যাক্স গ্রুপকে উচ্চহারে গুনতে হবে কর। আগামী অর্থবছরেও অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগের সুবিধা থাকবে। অর্থ পাচারোধে আইনের শাসন কঠোর করা হবে। অর্থ পাচার আটকাতে প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ানো হবে। করপোরেট কর কমানোর দাবি থাকলেও তা মানা হবে না। অন্যদিকে নির্বাচনের আগের বাজেট হওয়ায় করমুক্ত আয় সীমা বাড়ানোর বিষয়টি বিবেচনা করতে খোদ অর্থমন্ত্রী বললেও রাজস্ব আদায় কমে যাবে এমন যুক্তি দেখিয়ে এনবিআর রাজি নয় বলে জানিয়ে দিয়েছে। কমানো হবে শিল্পের অধিকাংশ কাঁচামাল আমদানি শুল্ক। ডলারের ওপর চাপ কমাতে বেশি ব্যবহৃত পণ্য আমদানিতে রাজস্ব ছাড় দেওয়া হবে। বিলাসবহুল পণ্য আমদানি কমাতে সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা হবে। তৈরি পোশাক খাতের সব সুবিধা বহাল রাখা হবে। শিল্পের অন্যান্য খাতেও কতটা সুবিধা বাড়ানো যায় তা নিয়ে এনবিআর হিসাব করছে।
অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে দেওয়া বাজেট প্রস্তুতিবিষয়ক প্রতিবেদনে উল্লেখ আছে, আগামী অর্থবছরের বাজেটে উন্নয়ন প্রকল্পে ২ লাখ ৬৫ হাজার কোটি এবং ঘাটতি ২ লাখ ৬৪ হাজার ১৯৪ কোটি টাকা বরাদ্দ ধরা হতে পারে। আগামী অর্থবছরে জিডিপির ৬ শতাংশ ঘাটতি ধরে ২ লাখ ৬৪ হাজার ১৯৪ কোটি টাকা নির্ধারণ করা হতে পারে। মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি ৭ দশমিক ৫ শতাংশ ধরা হতে পারে বলে জানা যায়। ঋণদাতা সংস্থার কাছ থেকে ভর্তুকি কমানোর চাপ থাকলেও আগামীবার এ খাতে বেশি ব্যয় ধরা হতে পারে। এ খাতে ১ লাখ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হতে পারে। চলতি অর্থবছরে ভর্তুকি ব্যয় আছে ৮৬ হাজার কোটি টাকা।
উল্লেখ্য, গত সোমবার রাতে আইএমএফ বাংলাদেশকে ঋণ অনুমোদন করে। ঋণদাতা সংস্থাটির কাছ থেকে বাংলাদেশ ছয় কিস্তিতে তিন বছরে ৪৭০ কোটি ডলার পাচ্ছে। ঋণ প্রস্তাব অনুমোদনের দিন আইএমএফ ২০২৭ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের অর্থনীতির বিভিন্ন সূচক নিয়ে পূর্বাভাস দেয়। সংস্থাটি বলছে, ২০২১-২২ অর্থবছরে দেশের প্রবৃদ্ধি ছিল ৭ দশমিক ২ শতাংশ। চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি হতে পারে ৫ দশমিক ৫ শতাংশ। এরপর ২০২৩-২৪ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি বেড়ে হতে পারে ৬ দশমিক ৫ শতাংশ এবং ২০২৪-২৫ অর্থবছরে তা হতে পারে ৭ দশমিক ১ শতাংশ।
এতে রিজার্ভ সম্পর্কে বলা হয়, চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছর শেষে দেশের বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভ কমে দাঁড়াবে ৩ হাজার কোটি ডলার। তবে ২০২৩-২৪ অর্থবছর থেকে তা ধারাবাহিকভাবে বাড়বে এবং ২০২৬-২৭ অর্থবছর শেষে প্রথমবারের মতো রিজার্ভ ৫ হাজার কোটি ডলার ছাড়িয়ে যেতে পারে।
ধারাবাহিকভাবে বিদ্যুৎ ও জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির কারণে কৃষকের উৎপাদন খরচ বেড়েই চলেছে। এ অবস্থায় চলতি বোরো মৌসুমে সেচে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ পাওয়া নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। তবে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহে সরকার নানারকম প্রস্তুতি নিয়েছে বলে দাবি করছে বিদ্যুৎ বিভাগ।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিদ্যুতের যে পরিস্থিতি তাতে গ্রীষ্মে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ কঠিন হয়ে দাঁড়াবে। বেশি দাম দিয়েও কৃষক ঠিকমতো বিদ্যুৎ না পেলে উৎপাদন ব্যাহত হবে। এতে দেশের খাদ্য নিরাপত্তা হুমকির মধ্যে পড়তে পারে।
কৃষি অর্থনীতিবিদ ড. জাহাঙ্গীর আলম খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, জ্বালানি তেল, সার ও বীজের দাম বেড়েছে। এখন আবার বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হলো। তার মানে চারদিক থেকে কৃষকের উৎপাদন খরচ বেড়েছে। এর ফলে কৃষকের ‘সিগনিফিকেন্ট লস’ হবে। এভাবে দাম বাড়িয়ে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। তিনি বলেন, বোরো উপকরণনির্ভর ফসল। কিন্তু উপকরণের দাম এভাবে বাড়তে থাকলে, কৃষক আগ্রহ হারিয়ে ফেললে; সে ঠিকমতো উপকরণ ব্যবহার করতে পারবে না। এতে উৎপাদন ব্যাহত হবে। উৎপাদন খারাপ হলে চালের ঘাটতি হবে। এমনিতেই এখন প্রায় ৭০ লাখ টন গম ও ভুট্টা আমদানি করতে হচ্ছে। এরমধ্যে যদি চাল আমদানি করতে হয়; তাহলে খাদ্য নিরাপত্তা ঝুঁকির মধ্যে পড়বে।
ড. জাহাঙ্গীর বলেন, ‘সারাবিশ্ব নানারকম সংকটে ভুগছে। এ অবস্থায় আমাদের অন্তত খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার সুযোগ রয়েছে। সেজন্য যে পরিমাণ দাম বেড়েছে সে পরিমাণ নগদ অর্থ সহায়তা দিতে হবে কৃষককে। ২০০৯-১০ সালের দিকে জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির কারণে এক কোটির বেশি কৃষককে ৮০০ থেকে ৯০০ টাকা সরাসরি নগদ সহায়তা দেওয়া হয়েছিল। এজন্য তারা ১০ টাকা দিয়ে ব্যাংক অ্যাকাউন্টও খুলেছিলেন। তাদের সেই অ্যাকাউন্ট এখনো আছে, কিন্তু সহায়তা দেওয়া হয় না। এখন যদি সেই সহায়তা দেওয়া হয় তাহলে কৃষক আবার উৎসাহ পাবে।’
বিদ্যুৎ বিভাগ জানায়, প্রতি বছর সেচ মৌসুমে (ফেব্রুয়ারি থেকে মে) বিদ্যুতের চাহিদা বেড়ে যায়। গত মৌসুমে বিদ্যুতের সর্বোচ্চ চাহিদা ছিল ১৪ হাজার ৭৮২ মেগাওয়াট। চলতি বছর সম্ভাব্য চাহিদা ধরা হয়েছে ১৬ হাজার মেগাওয়াট। গত বছরের তুলনায় এ বছর সেচ সংযোগের সংখ্যা ১ হাজার ৯১টি বেড়ে মোট ৪ লাখ ৬৫ হাজার ৪৫৯টি হয়েছে। এজন্য বিদ্যুৎ লাগবে ২ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট।
সেচ মৌসুমে অগ্রাধিকার দিয়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করা হবে বলে জানিয়েছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। সম্প্রতি তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিদ্যুতের চাহিদার সঙ্গে সমন্বয় রেখে উৎপাদনও বাড়ানো হচ্ছে। সেচ মৌসুমে বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য গ্যাস, ফার্নেস অয়েল ও ডিজেল সরবরাহ বৃদ্ধি করা, গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোতে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে গ্যাস সরবরাহ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সার্বিকভাবে পরিস্থিতি ভালো হবে।’
বিদ্যুৎ বিভাগ বলছে, সেচ মৌসুমে বিদ্যুৎকেন্দ্র চালাতে প্রতিদিন ১৬০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস, ৭৭ হাজার ৪০০ টন ফার্নেস অয়েল এবং ৬৬ হাজার ১০০ টন ডিজেলের চাহিদা নির্ধারণ করা হয়েছে। সূত্রমতে, বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) চাহিদা অনুযায়ী গ্যাসের সরবরাহ করা বাস্তবে খুব কঠিন ব্যাপার। গত বছর বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য পিডিবির দৈনিক গ্যাসের চাহিদা ১৬০০ মিলিয়ন ঘনফুট ছিল। বিপরীতে সরবরাহ করা হয়েছে এক হাজার মিলিয়ন ঘনফুট। এ বছর জ¦ালানির ঘাটতি আরও বেশি। তবে সরকার খোলাবাজার থেকে এলএনজি আমদানি করে ঘাটতি মেটানোর উদ্যোগ নিয়েছে। কিন্তু আমদানিকৃত গ্যাস দিয়ে চাহিদা অনুযায়ী কতটা বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যাবে তা নিয়ে কর্মকর্তাদের অনেকেই সন্দিহান।
পিডিবির তথ্যমতে, বর্তমানে দেশে বিদ্যুতের উৎপাদন ক্ষমতা ২২ হাজার ৭০০ মেগাওয়াট। কিন্তু উৎপাদন হচ্ছে ১০ হাজার থেকে ১০ হাজার ৩০০ মেগাওয়াট। গ্যাস ও কয়লা সংকটের কারণে সাড়ে ৩ হাজার থেকে ৪ হাজার মেগাওয়াট কম বিদ্যুৎ উৎপাদিত হচ্ছে। এ ছাড়া রক্ষণাবেক্ষণের কারণেও কিছু কেন্দ্র বন্ধ রয়েছে।
দেশে নির্মাণাধীন ও আমদানিকৃত বিদ্যুৎকেন্দ্রের অগ্রগতি পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, আগামী মার্চের শেষ দিকে ভারতের আদানি থেকে অতি উচ্চ দামে ৭৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আসার সম্ভাবনা রয়েছে।
এ ছাড়া মে মাসের দিকে চট্টগ্রামের এস আলম গ্রুপের নির্মাণাধীন তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রথম ইউনিট থেকে ৬১২ মেগাওয়াট এবং অন্যান্য কিছু ছোট বা মাঝারি বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ১৫০ থেকে ২০০ মেগাওয়াটের মতো বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যোগ হতে পারে। এপ্রিল-মে মাসের দিকে বিদ্যুতের চাহিদা সবচেয়ে বেশি হবে। তখন এসব কেন্দ্র সময়মতো উৎপাদনে এলেও ১৩ হাজার মেগাওয়াটের জোগান দেওয়া সম্ভব হবে। এর বাইরে উচ্চ মূল্যের জ্বালানি আমদানির মাধ্যমে কিছু কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন হতে পারে।
কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) জ্বালানি উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. এম শামসুল আলম মনে করেন, চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ সরবরাহ করার সক্ষমতা সরকারের নেই। কারণ বিদ্যুৎ উৎপাদনের জ্বালানি সরবরাহ করতে সরকারের ডলার খরচের যে সক্ষমতা দরকার তা সীমাবদ্ধ হয়ে গেছে। তিনি বলেন, ‘জ্বালানি খাতে সরকারের ভুলনীতি আর অন্যায্য ও লুণ্ঠনমূলক ব্যয়ের কারণে দাম বেড়েই চলেছে। সেই ব্যয় মেটাতে এখন বিদ্যুৎ জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি করে ভর্তুকি সমন্বয় করতে চাইছে। এই পরিস্থিতিতে উচ্চ দামে বিদেশ থেকে জ্বালানি আমদানি করে চাহিদামতো বিদ্যুৎ উৎপাদন করা অসম্ভব ব্যাপার।’
এদিকে ডলার সংকট এবং ঋণপত্র (এলসি) খোলার বিলম্বের কারণে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য জ্বালানি আমদানি উল্লেখযোগ্য হারে কমে গেছে। সরকারের কাছে বেসরকারি খাতের বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর মোটা অঙ্কের বিল পাওনা থাকলেও তারা ঠিকমতো না পাওয়ার কারণে প্রয়োজনীয় জ্বালানি আমদানি করতে পারছেন না। এতে বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে।
জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ও বুয়েটের অধ্যাপক ড. ইজাজ হোসেন দেশ রূপান্তরকে বলেন, এখন পর্যন্ত বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর নির্মাণকাজ এবং জ্বালানি আমদানির যে অগ্রগতি তাতে চাহিদার তুলনায় আগামী গ্রীষ্মে বিদ্যুতের ঘাটতি হবে আড়াই হাজার থেকে ৩ হাজার মেগাওয়াট। তবে সাশ্রয় নীতি অবলম্বনের মাধ্যমে ১ হাজার মেগাওয়াট এবং উচ্চ মূল্যের জ্বালানি আমদানির মাধ্যমে আরও ১ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুতের ঘাটতি পূরণ করতে পারে সরকার। এরপরও অন্তত ১ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুতের ঘাটতি থাকবে।
এদিকে দাম সমন্বয়ের নামে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনকে (বিইআরসি) পাশ কাটিয়ে গণশুনানি ছাড়াই নির্বাহী আদেশে জানুয়ারি মাসে ১৮ দিনে চার দফা গ্যাস-বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি করেছে সরকার। এর মধ্যে দু’দফায় অন্তত ১০ শতাংশ বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়েছে। এর আগে গত বছরের আগস্টে সেচে ব্যবহৃত ডিজেলের দাম লিটারপ্রতি ২৯ টাকা দাম বাড়ানো হয়। বিদ্যুৎ ও জ¦ালানির মূল্যবৃদ্ধির ফলে কৃষিতে উৎপাদন খরচ অনেক বেড়েছে।
কুমিল্লার নাঙলকোট উপজেলার বাসন্ডা গ্রামের বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম মজুমদার বলছিলেন, গত বছর এক বিঘা বা ৩৩ শতক জমিতে ধান চাষ করতে সেচের জন্য ২৭৫০ টাকা ব্যয় হয়েছে। বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির কারণে চলতি বোরো মৌসুমে এ ব্যয় বেড়ে অন্তত ৪ হাজার টাকা হবে। এর বাইরে অন্যান্য খরচও আনুপাতিক হারে অনেক বেড়েছে। ফলে এখন ধান চাষ করলে প্রতি বিঘা জমিতে অন্তত দেড় থেকে দুই হাজার টাকা লোকসান হচ্ছে।
ডিজেলচালিত ইঞ্জিনের মাধ্যমে জমিতে সেচ দেন কুষ্টিয়ার দৌলতপুর গ্রামের শিয়ালা গ্রামের কৃষক নাঈম। শনিবার রাতে টেলিফোনে তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধির কারণে প্রতিবিঘা জমিতে এ বছর সেচের ব্যয় বেড়েছে ১২০০ থেকে ১৪০০ টাকা। সার, বীজ ও অন্যান্য কৃষি উপকরণের দামও বেড়েছে।
এর আগে মূল্যবৃদ্ধির গণশুনানির সময় বিইআরসি কৃষক ও প্রান্তিক মানুষের কথা বিবেচনা করলেও নির্বাহী আদেশের সময় এসব কিছুই বিবেচনা করা হয় না।
অতীতে সামাজিক সুরক্ষার অংশ হিসেবে প্রতিমাসে ৫০ ইউনিট পর্যন্ত বিদ্যুৎ ব্যবহারকারীকে লাইফলাইন বা প্রান্তিক ব্যবহারকারী হিসেবে বিবেচনা করে তাদের বিদ্যুতের দাম তুলনামূলক কম বাড়াত কমিশন। দেশে এ ধরনের গ্রাহক রয়েছে ১ কোটি ৬৩ লাখ, যাদের অধিকাংশই কৃষক। কিন্তু সর্বশেষ বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির আদেশে এ সুবিধা বাতিল করা হয়েছে।
লাইফ লাইন শ্রেণির প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের বিল ছিল ৩.৭৫ টাকা। গত ডিসেম্বরে তা বাড়িয়ে ৩.৯৪ টাকা করেছিল মন্ত্রণালয়। সেখান থেকে এবার আরেক দফা বাড়িয়ে ৪.১৪ টাকা করা হয়েছে। ফলে গত দুই মাসের ব্যবধানে দরিদ্র মানুষকে এখন প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের জন্য ৩৯ পয়সা বাড়তি ব্যয় করতে হবে।
কৃষকের কথা বিবেচনা করে আগে সেচে ব্যবহৃত বিদ্যুতের দাম সবসময়েই তুলনামূলক সাশ্রয়ী রাখার চেষ্টা করা হতো। কিন্তু এখন কৃষকেরাও রেহাই পাচ্ছে না। গত ১২ ডিসেম্বর কৃষিতে ব্যবহৃত প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দাম ২১ পয়সা বাড়িয়ে ৪.৩৭ টাকা করা হয়। সেখান থেকে এবার আরও ২২ পয়সা বাড়িয়ে ৪.৫৯ টাকা করা হয়েছে।
রংপুরের একজন কৃষক আনোয়ার আলী খানিকটা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, দফায় দফায় যেভাবে সবকিছুর দাম বাড়ছে তাতে চাষি তো আর বেশিদিন বাঁচতে পারবে না। তিনি বলেন, ‘ধান চাষ করে এখন লাভ তো দূরের কথা খরচই ওঠে না। তাই আগের চেয়ে ধান চাষ কমিয়ে দিয়েছি। এখন সারা বছর খাওয়ার জন্য যতটুকু ধান দরকার ততটুকুই চাষ করি। তাতে লোকসান হলেও কী করব? ডাল-ভাত তো খাওয়া লাগবে।’
তাকে বলা হয় নাটকের রাণী। দীর্ঘ এক যুগের ক্যারিয়ারে অসংখ্য নাটকে অভিনয় করেছেন। নানামাত্রিক চরিত্রে হাজির হয়ে মুগ্ধতা ছড়িয়েছেন, দু’হাতে কুড়িয়েছেন দর্শকদের ভালোবাসা। বলছিলাম, সুপারস্টার, দেশের সর্বাধিক দর্শকের তারকা মেহজাবীন চৌধুরীর কথা। সম্প্রতি মুক্তি পেয়েছে তার ওয়েব সিরিজ ‘দ্য সাইলেন্স’। সিরিজ, নাটক, সিনেমা এবং সমসাময়িক নানা বিষয় নিয়ে কথা হয় তার সঙ্গে। তাকে নিয়ে লিখেছেন ইমরুল নূর।
সদ্য মুক্তি পাওয়া ‘দ্য সাইলেন্স’ সিরিজটি থেকে দর্শকদের কেমন সাড়া পাচ্ছেন?
অনেক ভালো সাড়া পাচ্ছি। শুধু যে আমি-ই পাচ্ছি, এমনটা নয়। প্রত্যেকটা সেক্টরের প্রশংসা হচ্ছে যেমন- নির্মাণ, আর্ট, সিনেমাটোগ্রাফি এবং যারা অভিনয় করেছেন এখানে সবার অভিনয়ের বিষয়ে অনেক পজেটিভ মন্তব্য দেখছি, শুনছি, পড়ছি। সব মিলিয়ে পুরো টিম প্রশংসা পাচ্ছে। অনেক ভালো লাগছে।
এমন একটা চরিত্র হয়ে উঠা কতটা চ্যালেঞ্জের? তার জন্য প্রস্তুতি কীভাবে নিয়েছিলেন?গল্পটা এত বেশি ইন্টারেস্টিং ছিলো যে শোনার পরই কাজটি করতে রাজি হয়ে যাই। আমার চরিত্রটাও ইন্টারেস্টিং যেখানে অভিনয়ের অনেক সুযোগ ছিল। আমার কাছে মনে হয়েছে, যদি চরিত্রটা সঠিকভাবে ফুটিয়ে তুলতে পারি তাহলে দর্শকদের মায়াও লাগবে আবার রাগও হবে। তখন তাদের মনে প্রশ্ন জাগবে, এরকম কেন চরিত্রটা? তাই এমন একটা চরিত্র পেয়ে সুযোগ হাতছাড়া করতে চাইনি। পরিচালক ভিকি জাহেদ গল্পের রুবি চরিত্রটি কীভাবে দেখতে চায়, সেসব নিয়ে তার কাছ থেকে শুনি এরপর আমার মত করে চরিত্রটিকে গুছিয়ে নেই।
লুকের দিক থেকে হালকা একটু পরিবর্তন আনা হয়েছে। যারা আমাকে চেনেন তারা সেটা দেখলেই বুঝতে পারবেন।
চরিত্রটির জন্য আপনাকে আলাদা দাঁত ব্যবহার করতে হয়েছিলো। জানা মতে, মুখে অতিরিক্ত জিনিস ব্যবহার করে অভিনয় করা কিংবা এক্সপ্রেশন প্রকাশ করা খুবই কঠিন। সেটা কীভাবে সামলেছেন?
হ্যাঁ, একদমই তাই। আমি আমার মতই কিন্তু একটু আলাদা, অন্যরকম দেখানোর জন্যই এরকমটা করা হয়েছে। ফেসিয়াল স্ট্রাকচারের মধ্যে পরিবর্তন আনতে আলাদা দাঁত ব্যবহার করতে হয়েছে। এটা আসলেই অনেক কঠিন ছিল আমার জন্য। দাঁতের ওপর দাঁত ব্যবহার করে কথা বলা, এক্সপ্রেশন দেওয়া আমার জন্য সহজ ছিলো না। আমি একটু কঠিন কিছু করতেই পছন্দ করি সবসময়। তাই চেয়েছিলাম কথা বলা, এক্সপ্রেশন থেকে ভঙ্গি কিছুটা আলাদা-ই হোক। সহজ ছিলো না, কথা বলতে গিয়ে অনেক সময় জড়িয়ে যেত তারপরও যতটুকু সম্ভব ওভারকাম করার চেষ্টা করেছি।
আর এই সিরিজটিতে নিজেকে সুন্দর কিংবা পরিপাটি দেখানোর কোন ইচ্ছেই ছিলো না। চাচ্ছিলাম আমাকে যেন আমার মত না লাগে।
যতটুকু প্রত্যাশা নিয়ে কাজটি করেছিলেন, তার কতটুকু পূরণ হয়েছে ?
টিমের একজন সদস্য হিসেবে কাজটি নিয়ে প্রত্যাশার চেয়ে ভয় ছিল বেশি। কারণ, এরকম একটা কনসেপ্ট নিয়ে কাজ- সেটা দর্শকরা গ্রহণ করবে কিনা, যেটা বোঝানোর চেষ্টা করা হয়েছে সেটা বুঝবে কিনা! কি হলো, কেন হলো, কিভাবে হলো, মূল ম্যাসেজটা সবাই ধরতে পারবে কিনা এই ভয়টা ছিল।
সবার এত মন্তব্য, রিভিউ পড়ে মনে হলো যে আমরা সাকসেসফুল। দর্শকদেরকে ম্যাসেজটা বুঝাতে পেরেছি। সেই জায়গা থেকে পুরো টিম প্রশংসা পাচ্ছে। আমার মনে হয়েছিলো, কাজটা হয়তো খুব বেশি দর্শক দেখবে না কিন্তু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এত এত মন্তব্য দেখছি যেটা আসলে ভালো লাগা অনেকগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। কেউ কেউ আবার এমন মন্তব্যও করেছেন যে, কিছুক্ষণ দেখার পর ভয়ে নাকি বন্ধ করে দিয়েছেন (হাহাহা)। আসলে ভয়ে বন্ধ করে দিলেই তো হবে না। আমরা চাই একদম শেষ পর্যন্ত দর্শকরা কাজটি দেখুক। এই গল্পের শেষ দেখাটা খুব জরুরি।
যার মাসের ত্রিশ দিনই সময় কাটতো শুটিং ফ্লোরে, এখন তার ব্যস্ততা কি নিয়ে?
আগে তো নাটকে নিয়মিত ছিলাম কিন্তু এখন অন্যান্য কাজের কারণে নাটকে সময় দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। নাটকের স্ক্রিপ্টের মধ্যে নতুনত্ব, আলাদা কিছু খুঁজছি। সবসময়ই যে আলাদা গল্প পাবো, এমনটাও তো সম্ভব না। তবে স্ক্রিপ্টে যেন সৌন্দর্যতা থাকে, গল্পটা সুন্দর হয় কিংবা দর্শকদের সাথে কানেক্ট হবে; এরকম স্ক্রিপ্টেই কাজ করার ইচ্ছে আছে। নয়তো বা আমার অনেক ভালো লাগতে হবে এমন গল্প হলে আবারও নাটকে দেখা যাবে।
আপনার দর্শকদের জন্য সামনে নতুন কি চমক থাকছ?
আগে থেকে বলে ফেললে সেটা তো আর চমক থাকে না। তাই আপাতত কিছু না-ই বলি।
লাক্স সুন্দরী প্রতিযোগিতা থেকে বের হওয়ার পর আপনার একটি সিনেমা করার কথা ছিলো কিন্ত সেটি আর হয় নি। এটা আসলে কেন? সিনেমা দিয়েই যার অভিষেক ঘটার কথা তার ব্যস্ততা বাড়লো নাটকে..
হ্যাঁ। লাক্স চ্যানেল আই সুপারস্টার থেকে বের হওয়ার পরপই ‘ওয়ারিশ’ নামে একটা সিনেমার জন্য চুক্তিবদ্ধ হয়েছিলাম। এটাতে আমার সঙ্গে ছিলেন আরিফিন শুভ ভাইয়া। আমরা রিহার্সেলও করেছিলাম এটার কিন্তু এরপর নানা কারণে সে কাজটি বন্ধ হয়ে যায়। পরে ঐ সিনেমাটি-ই আর হয়নি।
যেহেতু সিনেমা দিয়ে অভিষেক হয়নি তাই আমি চেয়েছিলাম নাটকেই কাজ শুরু করি কারণ, এতে করে অভিনয়ের অনেক কিছু শিখতে পারবো। এরপর প্রস্তুত হয়ে নাহয় সিনেমা করবো। পরে নাটকেই ব্যস্ত হয়ে পড়লাম। এরপর তো ওয়েব সিনেমা, সিরিজ করছি। যদি মেইনস্ট্রিম সিনেমা বা বড় পর্দায় কাজ এখন পর্যন্ত না করার সবচেয়ে বড় কারণ হলো, সঠিক গল্প, ভালো স্ক্রিন-প্লে এবং একটা ভালো টিম না পাওয়া। এক কথায় যদি বলি, মনের মত করে পাইনি এখনও। মনের বিরুদ্ধে গিয়ে আমি কোনো কাজ করতে চাচ্ছি না। নাটক আমাকে অনেক কিছু দিয়েছে। আমার পরিচিতি, দর্শকের ভালোবাসা- সবকিছুই নাটকের মাধ্যমে। নাটক দিয়ে ক্যারিয়ার শুরু করে আজকে আমি এই জায়গায়। আমি এই বিষয়টা অনেক বেশি উপভোগ করি। আমি শুধু ভালো কাজ করতে চাই। এটা দর্শক কোন মাধ্যমে দেখছে তার চেয়ে আমার কাছে বেশি গুরুত্বপূর্ণ- আমি তাদের কতটা ভালো কাজ দিতে পারছি, ভালো অভিনয় দিতে পারছি কিনা! দর্শক আমাকে ভালোবাসলে তারা নিজের মত করে দেখে নেবে। সেটা নাটকে, ওটিটিতে অনলাইন মাধ্যমে নাহয় টিকিট কেটে সিনেমাহলে দেখবে; আমার দর্শকদের প্রতি এটুক বিশ্বাস আছে।
আধুনিকতার ছোঁয়ায় টেলিভিশনের প্রায় সব শিল্পীই এখন ওটিটিতে ঝুঁকছে। এতে করে টেলিভিশন ইন্ডাস্ট্রিতে শিল্পী সংকট তৈরি হয়েছে বলে অনেক পরিচালকের অভিমত। তাদের ভাষ্য, সুযোগ থাকলেও প্রথম সারির শিল্পীদের এখন পাওয়া যাচ্ছে না। এ বিষয়ে আপনার মন্তব্য কি?
দেখুন, এই মুহূর্তটাতে আমি নাটকে কাজ কমিয়েছি আমার নিজের জন্য। এটা আমার নিজের সিদ্ধান্ত। নাটক ছেড়ে দিয়েছি, বিষয়টা কিন্তু তেমন না। আমি জানিয়েছি, ভালো স্ক্রিপ্ট হলে আমি অবশ্যই করবো। সে জায়গা থেকে আমার নিজের কাজ, নিজেকে আরও অনেক উপরে নিয়ে যাওয়ার জন্য এবং দর্শকদের প্রত্যাশা পূরণ করার জন্য ঠিক সেরকম গল্পও তো লাগবে নাকি! তা নাহলে তো সেই একইরকমের কাজ করার পর দর্শকরাই বিরক্ত হবে আর বলবে, মেহজাবীন একইরকম কাজ করছে!
আমি নিজেকে আলাদা করার জন্য এবং দর্শকদের প্রত্যাশা পূরণ করার জন্য নিজের মত করে কাজ করার চেষ্টা করছি। দর্শকরা তো এটাই চাইতো, কাজ কম হোক কিন্তু সেটা যেন ভালো হয়। আমি এখন সেটাই করছি। আর একজন শিল্পী হিসেবে আমিও তো চাইবো, আমার প্রত্যেকটা কাজ খুবই এক্সক্লুসিভ হোক, আলাদা হোক। আগের করা কোন চরিত্রের সাথে মিলে না যাক। দর্শকদের সেই প্রত্যাশা পূরণ করার চেষ্টাতেই এই সময়ে এসে কাজ কমিয়ে দেওয়া।
আর শিল্পীদের ওটিটিতে আগ্রহী হওয়ার অনেক কারণ আছে। এখানে শিল্পীরা নিজেদেরকে ফুটিয়ে তুলতে সব ধরণের স্বাধীনতা পাচ্ছে যেটা টেলিভিশনে সম্ভব হয় না। এটা একটা ক্রিয়েটিভ জায়গা। যেকোন ক্রিয়েটিভ কাজ ভালো করতে হলে সময়ের দরকার। ওটিটিতে শিল্পীরা ভালো গল্প পাচ্ছে, চরিত্র নিয়ে ভাবার সময় পাচ্ছে, সময় নিয়ে কাজ করতে পারছে। এটাই তো চায় সবাই।
তাছাড়া এখন আমাদের টেলিভিশন ইন্ডাস্ট্রি অনেক বড়। এখানে অনেক শিল্পী রয়েছেন তাছাড়া যারা নতুন আছেন তারাও অনেক ট্যালেন্টেড। তাদের এখন সুযোগ দরকার ভালো পরিচালকদের সঙ্গে, ভালো গল্পে কাজ করার। এখন তাদেরকে সেই সুযোগটা দেওয়া হোক এবং তারা নিজেদের মত করে এগিয়ে যাক। একটা ইন্ডাস্ট্রি কিন্তু গুটিকয়েক জনের উপর নির্ভর করে চলবে না এবং উচিতও না। এখানে প্রত্যেকটা মানুষের সেই সুযোগটা পাওয়া উচিত। আবার যখন কারও মনে হবে যে আমি এখান থেকে অন্য জায়গায় যাবো, সে স্বাধীনতাও তার থাকা উচিত। কারণ, আমরা যারা শিল্পী তারা কিন্তু অভিনয়টা বেছেই নিয়েছি ভালো সুযোগ, ভালো কাজ, ভালো চরিত্রের জন্য। যেখানে সে সুযোগটা পাবে, সেটা বেছে নেওয়ার অধিকার একজন শিল্পীর আছে। এতদিন আমি নাটকে অভিনয় করেছি, এখন একটু কম করছি; এটা একান্তই আমার সিদ্ধান্ত। সেই স্বাধীনতা তো একজন শিল্পীর অবশ্যই থাকা উচিত।
যারা এখন নতুন কাজ করছে, তাদের জন্য আমার পক্ষ থেকে অনেক অনেক শুভকামনা। তারা যে চেষ্টা করছে এটা খুব ভালো লাগছে। দর্শকদের উচিত তাদেরকে সাপোর্ট করা। কারণ, একটা সময় সেই সাপোর্টটুকু আমরাও পেয়েছিলাম যখন একেবারেই নতুন ছিলাম। আমাদেরকে যেই ভালোবাসাটা দিয়েছিলেন সেই ভালোবাসাটুকু এখন নতুনদেরকে দিন, এটাই আমি চাইবো।