
ইউক্রেনীয় ক্লাব শাখতার দোনেৎস্কের সঙ্গে লড়াইটা তিক্ত অভিজ্ঞতার রিয়াল মাদ্রিদের। তিন মৌসুম হলো গ্রুপে দেখা হচ্ছে তাদের। এর মধ্যে ২০২০-২১ চ্যাম্পিয়নস লিগে ঘরে-বাইরে দু’ম্যাচেই হেরেছিল রিয়াল। সাত মুখোমুখিতে একবার ড্রও আছে। গতবার অবশ্য দুই ম্যাচেই জিতেছিল রিয়াল, একটিতে ৫-০ গোলে। বুধবার এবারের লড়াইয়ের প্রথম দেখায় সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে রিয়াল দুই ব্রাজিলিয়ান ভিনি জুনিয়র ও রদ্রিগোর গোলে ২-১-এ হারিয়েছে শাখতারকে। টানা তিন জয়ে পয়েন্ট তালিকায় একচ্ছত্র আধিপত্য ধরে রাখ রিয়াল। আর্লিং হালান্ডের জোড়ায় এফসি কোপেনহেগেনের বিপক্ষে ৫-০ গোলের জয়ে ম্যানসিটিও তাদের গ্রুপে ৯ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে।
একের পর এক আক্রমণ করে ২৮ মিনিটের মধ্যে দুটি গোল আদায় করে রিয়াল। ১৩ মিনিটে রদ্রিগো এবং ২৮ মিনিটে ভিনিসিউস গোল করেন। পরের ১০ মিনিটও আক্রমণ চলতে থাকে রিয়ালের। কিন্তু গোল মেলেনি। উল্টো ৩৯ মিনিটে আলেকসান্দার জুভকভের দুর্দান্ত এক ভলিতে ব্যবধান কমায় শাখতার। রিয়াল গোলের উদ্দেশ্যে শট নেয় ৩৬টি। যার ১৪টি ছিল লক্ষ্যে। তাই ম্যাচ শেষে টনি ক্রুস বলছেন রিয়ালের সাত গোলে জেতা উচিত ছিল। ‘কখনো কখনো এরকম ম্যাচ আসে, যখন সবকিছু ঠিকঠাক করার পরও গোল যথেষ্ট হয় না। আজকে আমাদের ৭-১ গোলে জেতা উচিত ছিল। যা সুযোগ আমরা পেয়েছি, বিশ্বাস করা কঠিন যে ২-১ গোলে জিতেছি। শেষ পর্যন্ত মনোযোগ ধরে রাখতে হয়েছে আমাদের। কারণ, ব্যবধান ছিল স্রেফ এক গোলে এবং কোনো ভুল করলেই খেসারত দিতে হতো।’ ইন্টারনেট
অপেক্ষার ফল মিষ্টি হয়, প্রবাদটা সবারই জানা। কিন্তু অপেক্ষার প্রহর দীর্ঘ হলে কতটা ধৈর্যের পরীক্ষা দিতে হয়, সে খবর রাখে কয়জনে। ফারিহা ইসলাম তৃষ্ণার অপেক্ষার প্রহরটা লম্বা, তারপরও বিশ্বাস হারাননি নিজের সামর্থ্যে আর সর্বশক্তিমানে। সেজন্যই বোধহয় তৃষ্ণা মিটল অমৃতে, নিজের প্রথম আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি খেলতে নেমেই হ্যাটট্রিকের দেখা পেয়েছেন ফারিহা ইসলাম তৃষ্ণা। টি-টোয়েন্টিতে হ্যাটট্রিক করা দ্বিতীয় বাংলাদেশি নারী ক্রিকেটার তৃষ্ণা, অভিষেকে হ্যাটট্রিক করার কৃতিত্বেও পঞ্চগড়ের এই মেয়ে দ্বিতীয়। তৃষ্ণার আগে টি-টোয়েন্টি অভিষেকেই হ্যাটট্রিক আছে নেপালের অঞ্জলি চান্দের।
গেল মার্চে নিউজিল্যান্ডে নারীদের ওয়ানডে বিশ্বকাপে চারটা ম্যাচ খেলেছিলেন তৃষ্ণা। ব্যাট হাতে কোনো রান করেননি, দক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গে তিন উইকেট নেওয়ার পর বাকি তিন ম্যাচে কোনো উইকেট নেই। তাই কমনওয়েলথ গেমসের বাছাইপর্ব আর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের বাছাইপর্বেও সুযোগ হয়নি দলে। আবুধাবিতে বিশ্বকাপ বাছাইয়ে খেলতে যাওয়ার সুযোগটা এসে যায় জাহানারা আলমের চোটে। রংপুরের হয়ে নারীদের জাতীয় ক্রিকেট লিগে ১২ উইকেট নেওয়াটাই হয়তো চোখে লেগেছিল নির্বাচকদের। কিন্তু মরুর দেশেও ফুরাল না তৃষ্ণার ম্যাচ খেলার অপেক্ষা। সেখানেও ডাগআউটে বসে দেখেছেন অন্যদের খেলতে। দেশে ফিরে এশিয়া কাপের দলে থাকার পরও ঠিকানা সেই সাইড বেঞ্চ। পাকিস্তানের কাছে হারের পর মালয়েশিয়ার বিপক্ষে ম্যাচে কৌশলে কিছু বদল, ডানহাতি মিডিয়াম পেসার লতা ম-লের জায়গায় বাঁহাতি মিডিয়াম পেসার
তৃষ্ণাকে দলে নেওয়া। ম্যাচের দিন সকালেই জানতে পারলেন, অবশেষে অপেক্ষার প্রহর ফুরোতে চলল ‘স্কোয়াডে ছিলাম। চেষ্টা ছিল যেদিনই খেলব ভালো কিছু করব। অভিষেক হবে জানতে পেরেছি আজকে (বৃহস্পতিবার) সকালে। প্রতিটি অনুশীলনেই নিজেকে তৈরি করেছি যেদিন খেলব, দলকে ভালো কিছু দেওয়ার চেষ্টা করব।
জাহানারার বিকল্প হিসেবে আবুধাবি গিয়েছিলেন, সেই জাহানারাই তৃষ্ণাকে পরিয়ে দেন অভিষেকের ক্যাপ। প্রথম ম্যাচ এমনিতেই সবার কাছে স্মরণীয় মুহূর্ত, সেই ম্যাচটা দারুণ কীর্তিতে আরও রঙিন করেছেন তৃষ্ণা ‘প্রথমত ডেব্যু ক্যাপটা উনার কাছ থেকে নিতে পেরেছি এটা অনেক ভালো লাগছে। উনি অভিজ্ঞ ক্রিকেটার, বাংলাদেশের সেরা পেস বোলার। উনার কাছ থেকে ক্যাপটা নিতে পেরে খুব ভালো লেগেছে। সেই সঙ্গে উনি আজকে আমাকে উইশ করেছে যে দিনটা যেন আমার ভালো হয়।’
দিনটা ভালো গেছে তৃষ্ণার, সেই সঙ্গে বাংলাদেশেরও। অপেক্ষার মিষ্টি ফলটা উপভোগ করে তৃষ্ণা জানালেন ধৈর্য হারাননি, ‘প্রথমত আমি হতাশ ছিলাম না, কারণ আমি জানি উপরওয়ালা সব সময় পাশে থাকেন। বিশ্বাস ছিল যেদিন আমি খেলব ভালো খেলব। কাজেই হতাশ ছিলাম না, নিজেকে প্রস্তুত করেই গিয়েছি।
নিজের তৃতীয় ওভারে পরপর দুটো বলে দুই শিকারে অভিষেকেই হ্যাটট্রিকের দ্বারপ্রান্তে। কী চলছিল মাথায়? এমন প্রশ্নে তৃষ্ণার উত্তর ‘ক্যাপ্টেন বলেছিল লেন্থ বলটাই করতে যেহেতু আগের দুটো উইকেট লেন্থ বলেই পেয়েছি। অন্য কিছু চেষ্টা করিনি। আমার শক্তির জায়গাটাই হচ্ছে এক জায়গায় বল করতে পারা আর বাঁহাতি হিসেবে সহজাতভাবেই একটা আউটসুইং আমি পাই বাঁহাতি ব্যাটসম্যানদের বিপক্ষে, ডানহাতিদের জন্য যেটা ইনসুইং হয়।’
উত্তরের সীমান্তবর্তী জেলা পঞ্চগড় থেকে উঠে আসা তৃষ্ণাকে খেলা নিয়ে অনেক সংগ্রামই করতে হয়েছে। সেই লড়াইয়ে বাবা-মায়ের পাশাপাশি শিক্ষক আমিনুদ্দিন স্যারের অবদানের কথাও বলেছেন তৃষ্ণা। বিশ্ব শিক্ষক দিবসের পরদিন হ্যাটট্রিকে অভিষেকে হয়তো সেই শিক্ষককেই গুরুদক্ষিণা দিলেন তৃষ্ণা। যে উপরওয়ালার ওপর তৃষ্ণার অগাধ বিশ্বাস, তিনি তো এভাবেই জীবনের হিসাব মিলিয়ে দেন।
এশিয়া কাপে আজ ভারতের সঙ্গে ম্যাচ পাকিস্তানের। তার ঠিক আগের দিন বিসমাহদের চমকে দিল থাইল্যান্ড। গতকাল সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে ১১৭ রান তাড়া করে ১ বল আগে ৪ উইকেটের রোমাঞ্চকর জয় তুলে নিয়েছে তারা। ২০১৮ সালের এশিয়া কাপে শ্রীলঙ্কা এবং গত বছরের ওয়ানডে বিশ্বকাপ বাছাইয়ে বাংলাদেশকে হারানো থাইল্যান্ডের বড় দলের বিপক্ষে তৃতীয় জয় এটি।
পাকিস্তানের বিপক্ষে ২০২০ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে সিডনিতে ১৫০ করে জয়ের স্বপ্ন দেখছিল থাইল্যান্ড। কিন্তু ম্যাচটা বৃষ্টিতে ভেসে যায়। গতকাল সকালে টস জিতে সেই পাকিস্তানকে ৫ উইকেট হারিয়ে ১১৬ রানে আটকে দেয় থাইরা। সিদ্রা আমিন করেন পাকিস্তানের পক্ষে সর্বোচ্চ ৫৬। নাত্থাকান চানথামের ৫১ বলে ৬১ রানে ১৯ ওভার শেষে থাইল্যান্ডের স্কোর দাঁড়ায় ১০৭/৬। ডায়ানা বেগের ওভার থেকে ১০ রান তুলে নিয়ে উল্লাসে মাতে থাইরা। কোচ হার্শাল বলেন, ‘থাই মেয়েরা মাঠে উড়ে বেড়ায় খেলার আনন্দে। আমরা খুশি। খুব খুব খুশি। কারণ পাকিস্তান সেরা দলগুলোর একটি। আমার মনে হয় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে আনন্দের সঙ্গে খেলতে পারা, আমরা মাঠে মজা করতে চাই। এরপর সবকিছু এমনিতেই হয়ে যায়।’ এই জয়ে শেষ চারের লড়াইয়ে গরমিল করে দিয়েছে থাইল্যান্ড। ভারতের বিপক্ষে তাই জয়ের বিকল্প নেই।
বাংলাদেশ-আরব আমিরাতে ১৪০ গতির বল আর অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডে একই গতির বলে পার্থক্য আছে। বিশ্বের সেরা সাতটি পেসসহায়ক পিচের তিনটিই অস্ট্রেলিয়ায়, একটি নিউজিল্যান্ডে। ওই পিচগুলোতে ১৪০ গতির বোলারকে সামলানো সহজ কথা নয়। বাংলাদেশ এই প্রথম অস্ট্রেলিয়ায় টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলতে যাচ্ছে। এই ফরম্যাটের জন্য অপরিচিত কন্ডিশনে তাই চ্যালেঞ্জটা কঠিন। এই কঠিন চ্যালেঞ্জের প্রস্তুতি কিছুটা নেওয়া যাবে নিউজিল্যান্ডে আজ থেকে শুরু ত্রিদেশীয় সিরিজে। নিজেদের টি-টোয়েন্টি মানসিকতা উন্নতির লক্ষ্য তো আছেই। পাশাপাশি ট্রান্স-তাসমান পিচে আসল পেস বোলিংয়ের সঙ্গে পরিচিতিরও একটা ব্যাপার থাকছে। ক্রাইস্টচার্চে নিউজিল্যান্ড ও পাকিস্তান পেসারদের সামলে পেসসহায়ক পরিবেশে পেস বোলিং সামলানোর প্রস্তুতিটাও হবে বাংলাদেশের।
বিশ্বের পেসসহায়ক উইকেটগুলোর মধ্যে অস্ট্রেলিয়ায় আছে অ্যাডিলেড ওভাল, পার্থ ও ব্রিসবেন। এই তিন ভেন্যুর মধ্যে ব্রিসবেনে একটি ও অ্যাডিলেডে দুটি ম্যাচ বাংলাদেশের। অ্যাডিলেডের ড্রপইন পিচ ধরন অনুযায়ী ব্যাটিংসহায়ক হলেও তাতে পেস ও বাউন্স ধরে দারুণ। বলের গতি ও হাইট বুঝতে না পারলে এখানে রান করা যেমন কঠিন তেমনি বুঝে গেলে রান করাও সহজ। এ মাঠেই পাকিস্তান ও ভারতের সঙ্গে গ্রুপ পর্বের শেষ দুটি ম্যাচ খেলবে বাংলাদেশ। আর ব্রিসবেনে প্রথম পর্ব থেকে উঠে আসা একটি দলের সঙ্গে খেলা সাকিবদের। ২০১৫ বিশ্বকাপে প্রথমবার ব্রিসবেনে খেলার স্বপ্ন সত্যি হতে চলেছিল বাংলাদেশের। কিন্তু বৃষ্টি তা ভেস্তে দেয়। এবার সেই স্বপ্ন সত্যি হলেও ব্রিসবেনের পেসসহায়ক পিচ বুঝে ওঠার চ্যালেঞ্জ থাকবে।
সেই চ্যালেঞ্জটা নিতে হবে ক্রাইস্টচার্চ থেকে। এই সিরিজে পাকিস্তানের নাসিম শাহ, হারিস রউফ, মোহাম্মদ হাসনাইন এবং ফিট হয়ে উঠলে শাহিন শাহ আফ্রিদিকে সামলাতে হবে বাংলাদেশ ব্যাটারদের। এদিকে নিউজিল্যান্ডের টিম সাউদি, অ্যাডাম মিলনে, ট্রেন্ট বোল্ট ও লকি ফার্গুসনদেরও সামলাতে হবে। দুই দলের এই ৮ পেসারেরই ১৪০-এর ওপর বল করার সুনাম আছে। ভাগ্যক্রমে ১৪০-এর ওপর বল করার মতো পেসার বাংলাদেশের আছে। তাসকিন আহমেদ, এবাদত হোসেন ও হাসান মাহমুদরা পিচে গতির ঝড় তুলতে পারেন। তাদের সামলে অনুশীলন সারেন বাংলাদেশ ব্যাটাররা। নিউজিল্যান্ডে অনুষ্ঠিত ত্রিদেশীয় সিরিজে বিপক্ষ পেসারদের সামলে গতির বলের আসল পার্থক্যটাও বুঝতে পারবেন সাকিব-লিটনরা।
ইউরোপিয়ান প্রতিযোগিতায় এর আগে ১৮ বার পর্তুগালে গিয়ে জিততে পারেনি ফরাসি কোনো ক্লাব। এবারও বেনফিকার বিপক্ষে লিওনেল মেসির দারুণ গোলে এগিয়ে যাওয়ার পরও জিততে পারল না পিএসজি। দানিলো পেরেইরার আত্মঘাতী গোলে সমতায় ম্যাচটি থেকে ১ পয়েন্ট ছিনিয়ে নেয় স্বাগতিকরা।
ম্যাচের ২২ মিনিটে এগিয়ে যায় পিএসজি। ডান প্রান্তে বল পেয়ে বক্সের মাথায় দাঁড়ানো কিলিয়ান এমবাপেকে পাস দেন মেসি। এমবাপে বলটা এক পায়ে রিসিভ করে আরেক পা দিয়ে দেন পেছনে চলে আসা নেইমারকে। ততক্ষণে ডান দিক দিয়ে মেসি ছুটে গেছেন বক্সের মাথায়, নেইমারের পাস এবং বাঁ পায়ের বাঁকানো শট। বলটা রংধনুর মতো বাঁক নিয়ে ডান কোনা দিয়ে পোস্টে ঢোকে। এস্তাদিও দা লুজের ৬২ হাজার দর্শক গোলটি মনে রাখবেন অনেক দিন। চ্যাম্পিয়নস লিগে প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে ৪০টি ভিন্ন দলের বিপক্ষে গোলের রেকর্ড গড়লেন মেসি। সব মিলিয়ে তার গোলসংখ্যা ১২৭, ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো আর ১৩ গোল দূরে। ৪১ মিনিটে এনজো ফার্নান্দেজের ক্রস ঠেকাতে গিয়ে আত্মঘাতী গোল করেন দানিলো। বিরতির পর নেইমার ওভারহেড কিক ক্রসবারে লাগে, ৮০ মিনিটে রাফা সিলভার শট গোলকিপার দোন্নারুমা রুখে না দিলে হার নিয়ে ফিরতে হতো পিএসজিকে। ৮১ মিনিটে মেসিকে মাঠ থেকে তুলে নেন পিএসজি কোচ। তবে ইনজুরি নয়, মেসিকে তুলে নেওয়ার কারণ নাকি ক্লান্তি। ‘এক-দুই মিনিট আগে ও বদলি হওয়ার জন্য ইশারা করেছিল। শেষ দৌড়ের সময় ক্লান্তি বোধ করছিল। আর ম্যাচের ওই মুহূর্তে সতেজ কারও মাঠে নামাটাও ভালো ছিল।’
এই গ্রুপের অপর ম্যাচে আদ্রিয়ান রাবিওটের জোড়ায় জুভেন্তাস ৩-১ গোলে হারিয়েছে মাকাবি হাইফাকে। তিন ম্যাচে ৭ পয়েন্ট পিএসজি ও বেনফিকার। জুভেন্তাসের ৩।
সকাল বেলায় অঘটনের জন্ম দিয়ে থাইল্যান্ড হারিয়েছে পাকিস্তানকে। টস জিতে ব্যাট করতে নামার পর প্রথম বলেই এলবিডব্লিউর শিকার শামিমা সুলতানা। বাতাসে তখন অঘটনের গন্ধ।
তবে চাপা উদ্বেগটা কেটে গেছে মুরশিদা খাতুন আর অধিনায়ক নিগার সুলতানা জ্যোতির ব্যাটে। দুজনেই করেছেন হাফসেঞ্চুরি। তাতে ২০ ওভার শেষে বাংলাদেশের সংগ্রহ ৫ উইকেটে ১২৯ রান। টি-টোয়েন্টিতে হয়তো খুব বড় সঞ্চয় নয়, তবে মালয়েশিয়ার বিপক্ষে সেটাই হলো যথেষ্ট। বলা ভালো ১৩০ রানের লক্ষ্যকেই অনেক বড় বানিয়ে দিয়েছেন ফারিহা ইসলাম তৃষ্ণা। অভিষেকেই হ্যাটট্রিক করেছেন এই বাঁহাতি মিডিয়াম পেসার। সঙ্গে সানজিদা আখতার মেঘলা, রুমানা আহমেদ আর ফাহিমা খাতুনের জোড়া শিকারে মালয়েশিয়ার মেয়েরা গুটিয়ে গেছে মাত্র ৪১ রানেই। ৮৮ রানের বড় জয়ে স্বস্তি ফিরেছে বাংলাদেশ দলে, তিন ম্যাচে দুই জয়ে বাংলাদেশ উঠে এসেছে পয়েন্ট টেবিলের তিনে। সেই সঙ্গে স্বাস্থ্যবান হয়েছে রান রেটও।
পাকিস্তানের বিপক্ষে হারের পর হঠাৎ করেই যেন শরতের আকাশে জমেছিল শ্রাবণের মেঘ। উইকেট নিয়ে সমালোচনা, চট্টগ্রাম থেকে কিউরেটরকে উড়িয়ে আনা... সব কিছু মিলিয়ে চাপা অস্থিরতা। দেশের মাটিতে এশিয়া কাপের শিরোপা ধরে রাখার লড়াইয়ে পাকিস্তানের কাছে অসহায় আত্মসমর্পণটা এসেছিল অপ্রত্যাশিত ধাক্কা হয়ে। মালয়েশিয়ার সঙ্গে জয় আবারও স্থিরতা ফিরিয়েছে দলে, শরীরী ভাষাতেও ফিরেছে আত্মবিশ্বাস। শুরুতে দ্রুত দুই উইকেট হারানোর পর নিগার আর মুরশিদা উইকেটে থিতু হতে কিছুটা সময় নিয়েছেন, পরে স্পিনারদের বিপক্ষে উইকেট ছেড়ে বেরিয়ে এসে খেলেছেন আগ্রাসী সব শট।
দলীয় প্রথম ৫০ হয়েছিল ১১.১ ওভারে, সেখান থেকে শেষ পর্যন্ত ১২৯ রান। পরের ৯ ওভারে ৭৯ রান তুলেছে বাংলাদেশ, মুর্শিদার হাফসেঞ্চুরি ৪৭ বলে আর নিগার হাফসেঞ্চুরি করেছেন ৩২ বলে। ছয়খানা চারের সঙ্গে ম্যাচের একমাত্র ছক্কাখানাও মেরেছেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। ম্যাচসেরাও তিনি।
তৃষ্ণার বাঁহাতি মিডিয়াম পেসে শুরুতেই জেরবার মালয়েশিয়া, বিনা উইকেটে ১৩ থেকে ১৩-৩ হয়ে যাওয়ার ধাক্কাটা আর তারা সামাল দিতে পারেনি। উইকেট পড়েছে নিয়মিত বিরতিতে। ১৮.৫ ওভারে মাত্র ৪১ রানেই অলআউট মালয়েশিয়া, একজন ব্যাটারও ছুঁতে পারেননি দুই অঙ্কের রান। পাঁচজন আউট হয়েছেন শূন্য রানে। বাংলাদেশের পরের ম্যাচ প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বী ভারতের সঙ্গে, শনিবার। সোমবার শেষ ম্যাচ শ্রীলঙ্কার সঙ্গে।
সংক্ষিপ্ত সফরে নেপাল হয়ে বিকেলে ঢাকায় এসেছেন মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাইফুদ্দিন নাসুসন ইসমাইল। আজ শনিবার (৪ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছালে তাকে স্বাগত জানান ঢাকায় নিযুক্ত মালয়েশিয়ার হাইকমিশনার হাজনা মো. হাশিম।
প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সফরটা আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তিনি শ্রমবাজারের জটিলতা নিয়ে আলাপ করবেন। কিভাবে দেশটিতে আমরা সহজে কর্মী পাঠাতে পারি; সেগুলো আলোচনায় উঠে আসবে। আমাদেরও কিছু প্রস্তাব রয়েছে। আমাদের কর্মীদের স্বার্থ আগে আমরা চাই, সবার জন্য বাজার খুলে দেওয়া হোক। নিয়োগকর্তার পছন্দমতো রিক্রুটিং এজেন্সি নিয়োগ— এটা আমরা চাই না। অভিবাসন ব্যয়
মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার গত কয়েক বছর ধরে অস্থির। দেশটিতে প্রত্যাশিত শ্রমিক পাঠাতে পারছে না বাংলাদেশ। এমন পরিস্থিতিতে শ্রমবাজারটির জটিলতা নিরসনে আলোচনা করতে সংক্ষিপ্ত সফরে নেপাল হয়ে ঢাকায় আসছেন মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাইফুদ্দিন নাসুসন ইসমাইল।
তার সফরে শ্রমবাজারটি গতিশীল করতে সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) পরিবর্তন, অতিরিক্ত অভিবাসন ব্যয় কমানোসহ দেশের সব বৈধ রিক্রুটিং এজেন্সির জন্য বাজার উন্মুক্ত করার প্রস্তাব দেবে ঢাকা।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে, ২৪ ঘণ্টার সফরে মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদ এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সঙ্গে বৈঠক করবেন। পাশাপাশি তিনি সেনাকল্যাণ সংস্থার সঙ্গেও একটি বৈঠক করবেন।
'পাঠান' মুক্তির আগে থেকেই অনুরাগীদের সঙ্গে শাহরুখের যোগাযোগের একটাই মাধ্যম, টুইটার। শনিবার ফের টুইটারে 'আস্ক এসআরকে' সেশনে ধরা দিলেন শাহরুখ। হালকা মেজাজে, খোলামেলা আড্ডায় মাতলেন অনুরাগীদের সঙ্গে। অনুরাগীদের প্রশ্ন উত্তর দিলেন। সেখানেই একজন টুইটার ব্যবহারকারীর উপদেশ- বয়স অনুযায়ী চরিত্রে অভিনয়ের করার। পাল্টা জবাব দেন শাহরুখও। বলেন, 'তিনি হিরো ছিলেন, আছেন, থাকবেন'।
অনুরাগীরা যেমন রয়েছেন, তেমনই ট্রোল করার লোকের সংখ্যাও কম নয় শাহরুখের সোশালে। বছর সাতান্নর 'তরুণ' এই অভিনেতাকে একজনের প্রশ্ন, 'আপনি কি এভাবেই হিরোর চরিত্রেই অভিনয় করবেন, নাকি কোনো দিন নায়ক-নায়িকার বাবার চরিত্র করার পরিকল্পনাও রয়েছে?' তাতে শাহরুখ যা জবাব দিয়েছেন, তা রীতিমত ছড়িয়ে পড়েছে সোশালে।
এমনিতেই রসিক মানুষ শাহরুখ। তবে কোন কথায় কাকে কী উত্তর দেবেন, তা ভালোই জানা তার। বাদশাহ লেখেন, 'তুই বাপ হ… আমি হিরোর চরিত্রেই ঠিক আছি।'
শনিবারের 'আস্ক এসআরক'-এ সেশনে, শাহরুখের কাছে জানতে চাওয়া হয় 'পাঠান'-এর মোট আয়ের পরিসংখ্যান। তাকেও ফেরাননি শাহরুখ। উত্তর দিয়ে লেখেন, 'ভালোবাসা ৫ হাজার কোটি ছাড়িয়ে গিয়েছে, ৩ হাজার কোটি প্রশংসা, ৩২৫০ কোটি হাগ, ২০০০ কোটি হাসি এখনও গণণা চলছে। তোমার অ্যাকাউন্ট্যান্ট কী বলছেন?'
'পাঠান' ঘিরে উন্মাদনা নজিরবিহীন। প্রেক্ষাগৃহের বাইরে এই ছবি দেখার ঢল। শাহরুখ অভিনীত ছবিটি লম্বা রেসের ঘোড়া, বলেছেন সিনেমা বিশেষজ্ঞরা। ৪ বছর পর শাহরুখ পর্দায় ফিরেছেন বলেই শুধু নয়, ৭ দিনে বক্স অফিসে ৭০০ কোটি টাকার ব্যবসা করেছে 'পাঠান', যা বলিউডে বছরের সেরা ব্লকবাস্টার হিসাবে গণ্য হতে চলেছে।
দুঃসময় পিছু ছাড়ছে না লিভারপুলের। প্রিমিয়ার লিগে টানা তিন ম্যাচে জয়হীন থেকে মাঠে নেমেছিল তারা। ভাঙতে চেয়েছিল ব্যর্থতার বৃত্ত। কিন্তু পারেনি, উল্টো উলভারহ্যাম্পটন ওয়ান্ডারার্সের ধরাশায়ী হয়েছে তারা। পয়েন্ট তালিকার তলানিতে থাকা দল হেরে গেছে বড় ব্যবধানে।
নিজেদের মাঠে শনিবার ৩-০ গোলে জিতেছে উলভস। লিভারপুলের বিপক্ষে লিগে আগের ১১ ম্যাচে হারের পর জয়ের স্বাদ পেয়েছে তারা।
শুরুর ১২ মিনিটে দুই গোল হজম করে দিশেহারা লিভারপুল ঘুরে দাঁড়ানোর পথই খুঁজে পায়নি। দ্বিতীয়ার্ধে হজম করেছে আরও একটি গোল। তার আগেই ছিটকে যায় ম্যাচ থেকে। দারুণ জয়ে উচ্ছ্বাসে মেতে উঠেন উলভসের ফুটবলাররা।
শুরু থেকে একের পর এক আক্রমণে লিভারপুলের রক্ষণ কাঁপাতে থাকে উলভস। দলটির সমর্থকরা আনন্দে মেতে ওঠার উপলক্ষ পেয়ে যায় পঞ্চম মিনিটে। আত্মঘাতী গোল করে লিভারপুল। বাইলাইনের কাছাকাছি গিয়ে হাং হি-চান শট নেওয়ার পরিস্থিতি না দেখে তিনি বক্সে বাড়ান বল, জোয়েল মাতিপের পায়ে লেগে বল পোস্ট ছুঁয়ে গোললাইন পেরিয়ে যায়। আলিসনের প্রাণপণ চেষ্টা যায় বিফলে।
দ্বাদশ মিনিটে আবারও গোল হজম করে বসে লিগে ধুঁকতে থাকা লিভারপুল। ইংলিশ ডিফেন্ডার ক্রেইগ ডসনের পায়ের জোরাল শটে বল খুঁজে নেয় জাল। উলভসের হয়ে অভিষেকেই গোল পেয়ে যান তিনি। ২-০ গোলের ব্যবধান নিয়ে বিরতিতে যায় উলভস।
বিরতির পরও চলে আক্রমণ আর পালটা আক্রমণ। ৭১তম মিনিটে মাঝমাঠে জো গোমেজ ও স্তেফান বাইচেতিস আটকাতে পারেননি জোয়াও মৌতিনিয়োকে। এই পর্তুগিজ মিডফিল্ডারের পাস ধরে বক্সে আড়াআড়ি ক্রস বাড়ান আদামা ত্রাওরো। নিখুঁত টোকায় বাকি কাজ সারেন রুবেন নেভেস। ম্যাচের ভাগ্যও লেখা হয়ে যায় অনেকটাই।
এই হারে লিগ টেবিলে সেরা চারে থাকার পথটা আরও কঠিন হয়ে গেল লিভারপুলের। ২০ ম্যাচে ২৯ পয়েন্ট নিয়ে দশম স্থানে আছে ইয়ুর্গেন ক্লপের দল। তাদের চেয়ে ১০ পয়েন্ট বেশি নিয়ে চার নম্বরে নিউক্যাসল ইউনাইটেড। ২১ ম্যাচে ২০ পয়েন্ট নিয়ে ১৫তম স্থানে উঠে এসেছে উলভস।
ছবি মুক্তির ১০ দিন পার। এখনও বক্স অফিসে 'পাঠান' রাজ। শুধু দেশের মাটিতেই নয়, বিদেশেও অব্যাহত 'পাঠান' ঝড়। বিশ্বজুড়ে ৭০০ কোটির বেশি ব্যবসা ইতিমধ্যেই করে ফেলেছে শাহরুখ খানের এই ছবি। এমনকি, ভারতের প্রতিবেশী দেশ পাকিস্তানেও 'পাঠান' জ্বরে ভুগছেন আমজনতা। নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও সে দেশে প্রেক্ষাগৃহে প্রদর্শিত হলো 'পাঠান'। খালি রইল না প্রেক্ষাগৃহের একটি আসনও, হাউসফুল সেই শো।
অন্য ভারতীয় ছবির মতোই পাকিস্তানে মুক্তির ছাড়পত্র পায়নি সিদ্ধার্থ আনন্দ পরিচালিত ছবি 'পাঠান'। তবে সে দেশের সিন্ধ সেন্সর বোর্ডের সেই নিষেধাজ্ঞাকে একপ্রকার বুড়ো আঙুল দেখিয়ে প্রেক্ষাগৃহে প্রদর্শন করল শাহরুখের ছবি। কানায় কানায় ভর্তি প্রেক্ষাগৃহ দেখল রুপালি পর্দায় 'বাদশাহ ম্যাজিক'।
পাকিস্তানি মুদ্রায় ৯০০ টাকার টিকিটেও হাউসফুল 'পাঠান'-এর শো। নিষেধাজ্ঞা থাকায় বেআইনিভাবেই জোগাড় করে দেখানো হলো 'ওয়াইআরএফ স্পাই ইউনিভার্স'-এর এই ছবি।
পাকিস্তানের 'ফায়ারওয়ার্ক ইভেন্ট' নামক এক সংস্থা আয়োজন করে 'পাঠান' ছবির প্রদর্শনের। ছবির টিকিটমূল্য রাখা হয় পাকিস্তানি মুদ্রায় ৯০০ টাকা। তাতেই ছবির টিকিট পাওয়ার জন্য কাউন্টারের বাইরে লম্বা লাইন পড়ে সিনেপ্রেমীদের। অল্প সময়ের মধ্যেই শো হাউসফুল ঘোষণা করে দেওয়া হয়। তবে পাকিস্তানি সেন্সর বোর্ডের কানে এ খবর যেতেই নড়েচড়ে বসে তারা। 'ফায়ারওয়ার্ক ইভেন্ট'কে অবিলম্বে 'পাঠান'-এর সব প্রদর্শন বন্ধের নির্দেশ দিয়ে বিবৃতি জারি করে সিন্ধ সেন্সর বোর্ড। কেউ যদি এর পরেও বেআইনিভাবে 'পাঠান' প্রদর্শন করে, তাহলে অপরাধের শাস্তিস্বরূপ তার ১ লাখ টাকা জরিমানা থেকে ৩ বছরের জেল পর্যন্ত হতে পারে, হুঁশিয়ারি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের।
সাভারের আশুলিয়ায় মহাসড়কের পাশের একটি ডোবা থেকে মো. ইমাম হোসেন (৪৬) নামে এক ব্যক্তির ভাসমান লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। শনিবার সন্ধ্যায় সাভার ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের পার্শ্ববর্তী ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের পশ্চিম পাশের ডোবা থেকে নিহতের ক্ষতবিক্ষত মরদেহটি উদ্ধার করা হয়।
নিহত ইমাম হোসেন জয়পুরহাট জেলার পাঁচবিবি উপজেলার ভালুকগড়ি গ্রামের আমিনুল ইসলামের ছেলে। তিনি পরিবার নিয়ে আশুলিয়ার জিরাবো পুকুরপাড় এলাকার ভাড়া বাসায় থেকে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতেন।
থানা পুলিশ জানায়, স্থানীয়দের খবরের ভিত্তিতে সন্ধ্যায় ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের পার্শ্ববর্তী একটি ডোবা থেকে লুঙ্গি এবং জ্যাকেট পরিহিত অজ্ঞাত এক ব্যক্তির ক্ষতবিক্ষত মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় পিবিআইকে খবর দেওয়া হলে তারা এসে মরদেহের পরিচয় শনাক্ত করে।
নিহতের পরিবারের বরাত দিয়ে আশুলিয়া থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আল-মামুন কবির বলেন, ইমাম হোসেন বৃহস্পতিবার অটোরিকশা নিয়ে বাড়ি থেকে বের হয়ে আর ফেরেননি। মরদেহটি উদ্ধারের খবর পেয়ে পরিবারের সদস্যরা থানায় এসে লাশ শনাক্ত করেন। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে দুর্বৃত্তরা তাকে শ্বাসরোধে হত্যা করে অটোরিকশা নিয়ে পালিয়ে গেছে এবং নিহতের মরদেহটি ডোবার মধ্যে ফেলে গেছে।
মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকায় শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় আশুলিয়া থানায় মামলা দায়েরের পাশাপাশি হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার এবং গায়েব হওয়া অটোরিকশাটি উদ্ধারে অভিযান চালানো হবে বলেও জানান পুলিশের এই কর্মকর্তা।
শ্রম পরিদর্শক পদে যোগ দেওয়ার ৩৪ বছর পর পদোন্নতি পেলেন মাহমুদুল হক। স্বপ্ন দেখতেন পদোন্নতির সিঁড়ি বেয়ে একসময় প্রতিষ্ঠানের সর্বোচ্চ পদে যাবেন। সেই স্বপ্ন আট বছরেই লুটিয়ে পড়ল জ্যেষ্ঠতার তালিকায়।
১৯৮৮ সালে যোগ দেওয়ায় ’৯৫ সালেই পদোন্নতি পাওয়ার কথা ছিল মাহমুদুল হকের। কর্তৃপক্ষের অবহেলা আর প্রতিষ্ঠানপ্রধানের অদূরদর্শিতা সে স্বপ্ন শুরুতেই বাধা পেল। এন্ট্রি পোস্টে যোগ দেওয়ার পর তার মতো অন্য কর্মচারীরা যখন পদোন্নতির স্বপ্নে বিভোর, তখন তাতে গা-ই করলেন না সেই সময়ের প্রতিষ্ঠানপ্রধান।
মাহমুদুল অপেক্ষায় রইলেন পরিবর্তিত পরিস্থিতির জন্য। সেই পরিবর্তন আসতে আসতে চাকরিতে কেটে গেল আঠারো বছর। আঠারোতে মানুষ প্রাপ্তবয়স্ক হয়। তিনিও ভাবলেন আঠারোতে তিনি না হয় ‘জব ম্যাচিউরিটি’তে পৌঁছালেন। চাকরির আঠারো বছরে পদোন্নতি পেলেও মন্দ হয় না।
কিন্তু অবাক ব্যাপার, কর্তৃপক্ষ পদোন্নতি দিল, তবে মাহমুদুলকে ছাড়া। পদোন্নতির প্রজ্ঞাপনে কোথাও তার নাম নেই। হতাশায় মুষড়ে পড়লেন তিনি। জুনিয়র কর্মকর্তারদের নাম আছে, অথচ তার নাম নেই। প্রতিষ্ঠানের নীতি-নির্ধারকদের দরজায় দরজায় ঘুরলেন ন্যায়বিচারের আশায়। কিন্তু তারা পাত্তাই দিলেন না বিষয়টি।
তারা আমলে না নিলেও মাহমুদুলের স্বপ্ন তো সেখানেই থেমে যাওয়ার নয়। সেই স্বপ্ন পুঁজি করে তিনি গেলেন আদালতে। সেই ভিন্ন জগৎটাও কম চ্যালেঞ্জিং ছিল না। প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনাল তার পক্ষে রায় দিল। মাহমুদুল আনন্দে আত্মহারা হলেন। কিন্তু সেই আনন্দ বেশি দিন স্থায়ী হলো না। সরকার আপিল করল প্রশাসনিক আপিল ট্রাইব্যুনালে। মামলার ফল উল্টে গেল। হতাশায় ভেঙে না পড়ে তিনি গেলেন উচ্চ আদালতে। আপিল বিভাগে সিভিল আপিল মামলা করলে প্রশাসনিক আপিল আদালতের রায় বাতিল হয়। প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনালের রায় বহাল থাকে।
জলে নেমে কুমিরের সঙ্গে লড়াই করার মতো মাহমুদুল হকও যেন সরকারের সঙ্গে লড়াই করতে নামলেন। আপিল বিভাগের রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ পিটিশন করল সরকারপক্ষ। একপর্যায়ে সরকার বুঝতে পারল কোনোভাবেই তারা এ মামলায় জিততে পারবে না। সরকারপক্ষে রিভিউ পিটিশন প্রত্যাহার করা হলো। আদালত সরকারের পদোন্নতির প্রজ্ঞাপনকে আইনের কর্তৃত্ববহির্ভূত বলে ঘোষণা করল। জুনিয়র কর্মকর্তাকে যেদিন থেকে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে এবং যতবার পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে, একইভাবে মাহমুদুল হককে পদোন্নতি দেওয়ার নির্দেশ দেয় আদালত। বকেয়া বেতন-ভাতাসহ সব পাওনা কড়ায়-গ-ায় পরিশোধের নির্দেশনা আসে।
আদালতের এই নির্দেশনা দেওয়া হয় ২০১৮ সালে। এরপর আদেশ বাস্তবায়ন করতে সরকারের লেগে যায় প্রায় চার বছর। ২০২২ সালের ১১ মে তাকে পদোন্নতি দেওয়া হয়। ৩৪ বছর পর পদোন্নতির প্রজ্ঞাপন পেয়ে স্তম্ভিত হয়ে গেলেন মাহমুদুল হক। আবারও তাকে ঠকিয়েছে সরকার। জুনিয়র কর্মকর্তা যুগ্ম মহাপরিদর্শক হলেও তাকে পদোন্নতি দেওয়া হয় তার দুই ধাপ নিচের সহকারী মহাপরিদর্শক পদে। উপমহাপরিদর্শক ও যুগ্ম মহাপরিদর্শক আরও ওপরের পদ। আদালতের নির্দেশনার সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।
কখনোই প্রজ্ঞাপন মাহমুদুল হকের জন্য ভালো বার্তা বয়ে আনেনি। পুরো চাকরিজীবন আদালতের বারান্দায় ঘুরে তিনি পৌঁছেছেন অবসরের প্রান্তসীমায়। আর তিন মাস পরে তিনি অবসরে যাবেন। যৌবন ও মধ্য বয়সের দিনগুলোতে আদালতে ঘুরে বেড়ানোর শক্তি ও সাহস থাকলেও মাহমুদুল হক এখন সেই সাহস দেখাতে দ্বিতীয়বার চিন্তা করছেন। পারবেন তো শেষ সময়ে এসে সরকারের অপরিণামদর্শী সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপসহীন মনোভাব দেখিয়ে শেষ পর্যন্ত লড়ে যেতে?
মাহমুদুল হকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে দেশ রূপান্তরকে জানিয়েছেন, তিনি আদালতের কাছেই জানতে চাইবেন, আদালতের বিচার না মানার শাস্তি কী।
পুরো ঘটনা শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা শুনিয়ে জানতে চাইলেন, কতজনের পক্ষে মাহমুদুল হকের মতো লড়াকু মনোভাব দেখানো সম্ভব?
সীমাহীন আনন্দ নিয়ে মানুষ সরকারি চাকরিতে যোগ দেয়। এরপরই তার মধ্যে যে স্বপ্নটি দানা বাঁধে তা হচ্ছে পদোন্নতি। কার কীভাবে পদোন্নতি হবে তা আইনকানুন, নিয়ম-নীতি দিয়ে পোক্ত করা। পুরো বিষয়টি কাচের মতো স্বচ্ছ। এরপরও পদোন্নতি হয় না। দিন, মাস, বছর পার হয়ে যায়, কাক্সিক্ষত পদোন্নতির দেখা মেলে না।
বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের (বিসিএস) ২৬টি ক্যাডারের মধ্যে হাতে গোনা কয়েকটি ক্যাডারে নিয়মিত পদোন্নতি হয়। বাকি ক্যাডারে হতাশা। তার চেয়েও কঠিন পরিস্থিতি নন-ক্যাডারে। ক্যাডার কর্মকর্তারা নিজের পদোন্নতির ষোলো আনা বুঝে নিয়ে ঠেকিয়ে দেন নন-ক্যাডার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পদোন্নতি। সংখ্যায় বেশি হওয়ায় নন-ক্যাডাররা একজন আরেকজনকে নানা ইস্যুতে আটকাতে গিয়ে পুরো প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করেন। সরকারের মোট কর্মকর্তা-কর্মচারীর প্রায় তিন-চতুর্থাংশ কর্মচারী। সেই হিসেবে সরকারের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনবলের পদোন্নতি হয় না। পে-কমিশন হলেই কর্মচারীদের পদোন্নতির জন্য করুণা উথলে ওঠে। এমনকি ব্লকপোস্টে যারা আছেন, তাদের জন্যও পদোন্নতির বিকল্প সুবিধা বাতলে দেওয়া হয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কর্মচারীদের পদোন্নতি উপেক্ষিতই থাকে।
যখন সময়মতো পদোন্নতি হয় না, তখন নানা ধরনের সমস্যা দেখা দিতে থাকে। এসব সমস্যা সংশ্লিষ্ট দপ্তর-অধিদপ্তরের চৌহদ্দি পেরিয়ে আমজনতাকেও প্রভাবিত করে। নন-ক্যাডার কর্মকর্তা আর সঙ্গে কর্মচারীরা যখন বুঝতে পারেন পদোন্নতির আশা তাদের নেই, তখন তারা দুহাতে টাকা কামানোর ধান্দায় মেতে ওঠেন। এতে করে ঘুষের সংস্কৃতি সমাজে ছড়িয়ে পড়ে। অকার্যকর পথে হাঁটে রাষ্ট্র। সাধারণ মানুষ টাকা ছাড়া তাদের কাছ থেকে কোনো সেবা পায় না, ব্যবসায়ীরা নতুন কোনো আইডিয়া নিয়ে ব্যবসায় আসেন না, ব্যবসাবান্ধব পরিস্থিতি না থাকায় মুখ ফিরিয়ে নেন দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীরা। প্রধানমন্ত্রীর বারবার আহ্বানেও বিনিয়োগকারীরা সাড়া দেন না। সাধারণ মানুষকে নিঃস্বার্থভাবে সেবা দেওয়ার বাণীতেও উদ্বুদ্ধ হন না সংশ্লিষ্টরা।
এই পরিস্থিতিতে অনিয়ম আটকে রাখার সব কৌশলই ব্যর্থ হচ্ছে। যথাযথ তদারকি না থাকায় বিভাগীয় ব্যবস্থা অকার্যকর হয়ে গেছে। ৩ লাখ ৫৩ হাজার ৩৫০টি অডিট আপত্তি ঝুলে থাকায় অডিট প্রতিষ্ঠানগুলোও আগ্রহ হারিয়ে নিজেরাই জড়িয়ে পড়ছে অনিয়মে। দন্তহীন বাঘে পরিণত হওয়ার তথ্য সাংবাদিকদের জানান দুর্নীতি দমন কমিশনের প্রধান নিজেই।
নন-ক্যাডার কর্মকর্তা ও কর্মচারীর পদোন্নতির বড় একটা অংশ আটকে রাখে মন্ত্রণালয়গুলো। এই আটকে রাখার কারণ হচ্ছে মন্ত্রণালয়ের নীতিনির্ধারকদের স্বার্থ। বিভিন্ন দপ্তর, অধিদপ্তরে নন-ক্যাডার কর্মকর্তাদের পদোন্নতি দিলে নিয়ম অনুযায়ী পদোন্নতিপ্রাপ্তদের ওপরের পদে বসাতে হবে। এতে মন্ত্রণালয়ের নীতিনির্ধারকদের এককালীন লাভ; অর্থাৎ টাকার বিনিময়ে একবার পদোন্নতি দেওয়া যাবে। কিন্তু পদোন্নতি না দিয়ে সংশ্লিষ্টদের চলতি দায়িত্ব দিলে বছরজুড়ে টাকা আয় করতে পারেন নীতিনির্ধারকরা। দপ্তর, অধিদপ্তরে বড় অঙ্কের টাকার বিনিময়ে চলতি দায়িত্ব দেওয়া হয়। চলতি দায়িত্বপ্রাপ্তদের আয় অনুসারে নীতিনির্ধারকদের মাসোহারা দিতে হয়। নন-ক্যাডারদের পদোন্নতি দেওয়া হলে মন্ত্রণালয়ের নীতিনির্ধারকদের নিয়মিত আয়ের উৎস বন্ধ হয়ে যায়। এ কারণে আইন বা বিধি-বিধানের ফাঁকফোকর গলিয়ে নন-ক্যাডার এবং কর্মচারীদের পদোন্নতি আটকে রাখার সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হয়।
সরকারি কর্মচারী সংহতি পরিষদের সভাপতি নিজামুল ইসলাম ভূঁইয়া মিলন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সচিবালয় এবং সারা দেশের সরকারি কর্মচারীদের পদোন্নতির মধ্যে একটু পার্থক্য আছে। নন-ক্যাডারের কিছু বিষয় ছাড়া সচিবালয়ের কর্মচারীরা সময়মতো পদোন্নতি পায়। কিন্তু সচিবালয়ের বাইরে পদোন্নতি হয় না বললেই চলে। সচিবালয়ে মাত্র ১০ হাজার কর্মচারী আছেন। সচিবালয়ের বাইরে আছেন ১০ লাখের বেশি। এসব কর্মচারীর পদোন্নতি নিয়ে বহু বছর ধরে চেষ্টা করছি। কিন্তু কোনো ফল পাইনি। সর্বশেষ মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ এ সমস্যা নিয়ে কাজ করার জন্য একটি কমিটি করে দিয়েছে। কমিটি কিছু সুপারিশ করেছে। ব্যস, ওই পর্যন্তই। এরপর এর কোনো অগ্রগতি নেই। যেখানে সরকারপ্রধান বলেন, চাকরিজীবনে সবাই যেন কমপক্ষে একটি পদোন্নতি পায়। সেখানে বহু কর্মচারী কোনো পদোন্নতি ছাড়াই অবসরে যাচ্ছেন। সরকারপ্রধানের নির্দেশনা উপেক্ষা করেন আমলারা। তাদের আগ্রহ কেনা-কাটায়, বিদেশ ভ্রমণে, নতুন জনবল নিয়োগে। এসব করলে তাদের লাভ। কর্মচারী পদোন্নতি দিতে তাদের কোনো আগ্রহ নেই। এর নিশ্চয়ই একটা শেষ আছে। বৈষম্যের পরিণতি কী হয়, তা অনেক দাম দিয়ে বিডিআর বিদ্রোহে আমরা দেখেছি।’
কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের নন-ক্যাডারদের পদোন্নতি ঝুলছে বছরের পর বছর। এই অধিদপ্তরের কয়েক শ কর্মকর্তা পাঁচ বছর আগেই পদোন্নতির যোগ্য হয়েছেন। নানা কায়দা-কানুন করে তাদের পদোন্নতি ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। অধিদপ্তরের মহাপরিদর্শক সংশ্লিষ্টদের জ্যেষ্ঠতা নির্ধারণ করে তাদের পদোন্নতির প্রক্রিয়া এগিয়ে নিলেও শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় নতুন করে জ্যেষ্ঠতার তালিকা করার নামে সময়ক্ষেপণ করছে। জ্যেষ্ঠতার তালিকা করার পর এখন তাদের পারিবারিক সদস্যদের তথ্য যাচাই-বাছাই করার জন্য একটি সংস্থাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। ওই সংস্থা নন-ক্যাডার কর্মকর্তাদের পরিবারের সদস্যদেরও তথ্য তালাশ করছে। তাদের আত্মীয়দের মধ্যে কে কোন দলের সমর্থক তার তথ্য নিচ্ছেন সংস্থার কর্মকর্তারা।
গত মাসে শেষ হওয়া জেলা প্রশাসক সম্মেলনে দায়িত্ব পালন করছিলেন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের একজন প্রশাসনিক কর্মকর্তা। ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনের সুরম্য ভবনে দায়িত্ব পালন করলেও ওই নন-ক্যাডার কর্মকর্তার মনের অবস্থাটা মনোহর ছিল না। কেমন আছেন জানতে চাইলে ওই নন-ক্যাডার কর্মকর্তা বলেন, ‘ভালো নেই। চাকরি করছি, পদোন্নতি নেই। ২০১৫ সালের আগে পদোন্নতি না পেলেও টাইমস্কেল ও সিলেকশন গ্রেড ছিল। তাও তুলে দেওয়া হয়েছে। তুলে দেওয়ার সময় বলা হয়েছিল সময়মতো পদোন্নতি হবে, ব্লকপোস্টধারীদের দেওয়া হবে বিশেষ আর্থিক সুবিধা। এসবের কোনোটাই হয়নি।’
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসে একটি প্রশাসনিক আদেশ খুবই পরিচিত। সেই প্রশাসনিক আদেশ ১৬/২০১৮ অনুযায়ী ৭০ ভাগ কর্মকর্তা সরাসরি নিয়োগ হবে। আর ৩০ ভাগ পদোন্নতির মাধ্যমে পূরণ করা হয়। ৭০ ভাগ কর্মকর্তা সরাসরি নিয়োগের ফলে বিমানে বর্তমানে প্রয়োজনের তুলনায় কর্মকর্তা বেশি। নীতিনির্ধারকদের নতুন জনবল নিয়োগে আগ্রহ বেশি। পুরনোদের পদোন্নতি দিয়ে ওপরের পদ পূরণের চেয়ে তারা নতুন নিয়োগে যান। ফলে কারও চাকরিজীবনে একবারও পদোন্নতি হয় না। নামমাত্র যে পদোন্নতি হয় তা অনিয়মে ভরপুর।
নন-ক্যাডার ছাড়াও ১৩তম গ্রেড থেকে ২০তম গ্রেড পর্যন্ত পদোন্নতি হয় না বললেই চলে। প্রতিটি দপ্তরে এসব গ্রেডের পদোন্নতি আটকে আছে। অথচ এসব গ্রেডেই বেশি লোক চাকরি করছেন। সরকারের মোট জনবল প্রায় ১৫ লাখ ৫৪ হাজার ৯২৭ জন। প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির ২৩ শতাংশ পদের মধ্যেও নন-ক্যাডার রয়েছেন। এ ছাড়া তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির ৭৭ শতাংশ পদই ১৩তম থেকে তার পরের গ্রেডের। এতে করে সহজেই বোঝা যায় সরকারের জনবলের বড় অংশই পদোন্নতির চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে। সরকারের জনবলের এই বিশাল অংশ যখন পদোন্নতি নিয়ে অনিশ্চয়তায় ভোগেন, তখন তারা নানা অনিয়মে ঝুঁকে পড়েন।
বেশির ভাগ দপ্তর, অধিদপ্তর পরিচালনা করেন বিভিন্ন ক্যাডারের কর্মকর্তারা। তারা তাদের প্রশাসনিক মন্ত্রণালয় থেকে প্রেষণে ক্যাডার কর্মকর্তাদের দপ্তর, অধিদপ্তরে পাঠান। প্রেষণে গিয়ে অনেক কর্মকর্তা শুধু রুটিন কাজটুকুই করতে চান। শূন্যপদে জনবল নিয়োগ বা পদোন্নতি রুটিন কাজ না হওয়ায় তা উপেক্ষিত থাকে। তা ছাড়া পদোন্নতি দিতে গিয়ে নানা জটিলতার সৃষ্টি হয়; বিশেষ করে মন্ত্রণালয় থেকে মন্ত্রী বা সচিব তাদের পছন্দের লোককে পদোন্নতি দেওয়ার জন্য সংস্থার প্রধানকে চাপ দেন। এই চাপ উপেক্ষা করার কোনো সুযোগ না থাকায় অযোগ্য লোককে পদোন্নতি দিতে হয় সংস্থার প্রধানকে। এই জটিলতা থেকে দূরে থাকার জন্য সংশ্লিষ্টদের পদোন্নতি দেওয়া থেকেও দূরে থাকেন সংস্থার প্রধানরা।
নন-ক্যাডার কর্মকর্তা এবং কর্মচারীদের পদোন্নতি না হওয়ার কারণ জানতে চাইলে খাদ্য অধিদপ্তরের ১৪ গ্রেডের একজন কর্মচারী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বাইরের লোকের ইচ্ছাটাই জাগে না আমাদের পদোন্নতি দিতে। আমাদের দপ্তরপ্রধান মহাপরিচালক প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তা। অতিরিক্ত মহাপরিচালকও অনেক সময় প্রশাসন ক্যাডার থেকে প্রেষণে আসেন। তাদের কেন ইচ্ছা জাগবে আমাদের পদোন্নতি নিয়ে। যদি এসব পদে ফুড ক্যাডারের কর্মকর্তা থাকতেন, তাহলে তারা খাদ্য বিভাগের সমস্যা বুঝতেন। তা ছাড়া নিয়োগ বিধি সংশোধনের নামে আমরা দীর্ঘদিন একই পদে আটকে আছি।’
গত বছরের ৩ ফেব্রুয়ারি সচিবালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা এবং ব্যক্তিগত কর্মকর্তারা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবের কাছে এক আবেদনে জানান, ‘বর্তমানে সচিবালয়ে প্রায় দুই হাজারের বেশি প্রশাসনিক ও ব্যক্তিগত কর্মকর্তা কর্মরত। এর বিপরীতে ক্যাডারবহির্ভূত সংরক্ষিত পদের সংখ্যা ২৬৭টি, যা খুবই নগণ্য। ফলে একই পদে ২০-২২ বছরের বেশি সময় কর্মরত থাকার পরও অনেকে পদোন্নতি পাচ্ছেন না। পদোন্নতি না পাওয়ায় সৃষ্ট হতাশার ফলে কর্মস্পৃহা নষ্ট হচ্ছে।’
সরকার এ সমস্যা থেকে কীভাবে বের হতে পারে জানতে চাইলে জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞ ফিরোজ মিয়া দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এসব সমস্যা সমাধানে সরকার সব সময়ই কাজ করে। কিন্তু এ চেষ্টা জটিলতার তুলনায় কম। এ বিষয়ে আরও এফোর্ট দিতে হবে।
বগুড়া-৪ (কাহালু-নন্দীগ্রাম) আসনের উপনির্বাচনে বেসরকারিভাবে ১১২ কেন্দ্রের ফলাফলে ৯৫১ ভোটের ব্যবধানে হেরে গেছেন বহুল আলোচিত স্বতন্ত্র প্রার্থী আশরাফুল হোসেন আলম ওরফে হিরো আলম। একতারা প্রতীক নিয়ে তিনি পেয়েছেন ১৯ হাজার ৪৮৬ ভোট। এ আসনে জয় পেয়েছেন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জাসদ (ইনু) সমর্থিত প্রার্থী অ্যাডভোকেট রেজাউল করিম তানসেন। মশাল প্রতীক নিয়ে তিনি পেয়েছেন ২০ হাজার ৪৩৭ ভোট।
বুধবার (১ ফেব্রুয়ারি) সকাল থেকে বগুড়ার দুইটিসহ মোট ৬ আসনে উপনির্বাচনের ভোট গ্রহণ শুরু হয়। ২০২২ সালের ১০ ডিসেম্বর বিএনপির এমপিরা পদত্যাগের ঘোষণা দিলে এ আসনগুলো শূন্য হয়।
তখন, বগুড়া-৬ (সদর) এবং বগুড়া-৪ (কাহালু-নন্দীগ্রাম) আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার ঘোষণা দেন হিরো আলম। নির্বাচন কমিশন একদফা তার প্রার্থিতা বাতিল করলেও পরে আদালতে গিয়ে প্রার্থিতা ফিরে পান তিনি।
নাগরিকত্ব বিষয়ক জটিলতার জেরে সুপ্রিম কোর্টের এক রায়ে দেশের উপপ্রধানমন্ত্রীর পদ ও পার্লামেন্টে আসন হারিয়েছেন নেপালের উপপ্রধানমন্ত্রী রবি লামিছানে। শুক্রবারের রায়ে আদালত জানিয়েছে, এই মুহূর্তে নেপালের নাগরিকত্বও নেই তার।
সুপ্রিম কোর্টের মুখপাত্র বিমল পৌদেল বার্তা সংস্থা এএফপিকে এ সম্পর্কে বলেন, ‘সুপ্রিম কোর্টের সাংবিধানিক বেঞ্চের রায় অনুযায়ী, ২০২২ সালের জাতীয় নির্বাচনে নাগরিকত্ব বিষয়ক আইন লঙ্ঘনের প্রমাণ পাওয়া গেছে রবি লামিছানের বিরুদ্ধে। এ কারণে এখন থেকে আর পার্লামেন্টের সদস্য নন তিনি।’
নেপালের এক সময়ের জনপ্রিয় টেলিভিশন ব্যক্তিত্ব রবি লামিছানে দেশটির রাজনৈতিক দল ন্যাশনাল ইনডিপেনডেন্ট পার্টির শীর্ষ নেতা। ২০২২ সালের ২০ নভেম্বর নেপালের পার্লামেন্ট প্রতিনিধিসভার নির্বাচনে তার দল ২০টি আসনে জয়ী হয়েছে। তারপর গত ডিসেম্বরে ক্ষমতাসীন জোট সরকারে নিজের দলসহ যোগ দিয়ে নেপালের উপপ্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হন লামিছান।
যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিত্ব ছিল লামিছানের; কিন্তু নেপালের সংবিধানে দ্বৈত নাগরিকত্ব স্বীকৃত না হওয়ায় ২০১৮ সালে মার্কিন নাগরিকত্ব ত্যাগ করে নির্বাচন করেছিলেন তিনি। শুক্রবারের রায়ে সুপ্রিম কোর্ট বলেছে, নিয়ম অনুযায়ী যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব ছেড়ে দেওয়ার পর নেপালের নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করার কথা ছিল লামিছানের; কিন্তু তা করেননি তিনি। ফলে এই মুহূর্তে নেপালের নাগরিকও নন লামিছান। এদিকে, শুক্রবার সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পর লামিছানের প্রতিক্রিয়া জানতে তার মন্ত্রণালয়ের দপ্তরে গিয়েছিলেন সাংবাদিকরা; কিন্তু লামিছানে তাদের বলেন, ‘যেহেতু এই মুহূর্তে আমি কোনো দেশেরই নাগরিক নই, তাই আদালতের সিদ্ধান্ত নিয়ে কোনো মন্তব্য করা আমার পক্ষে উচিত নয়, সম্ভবও নয়।’
বগুড়া-৪ (কাহালু-নন্দীগ্রাম) ও বগুড়া-৬ (সদর) আসনের উপনির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. আশরাফুল হোসেন হিরো আলম বুধবার (১ ফেব্রুয়ারি) দুপুর পর্যন্ত ভোটকেন্দ্র পরিদর্শন করে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বলেন, ‘সদরের কেন্দ্র সব দখল হয়্যা গ্যাছে। ডিসি-এসপিক কয়্যাও কোনো কাম হচ্চে না। সদরের আশা সব শ্যাষ। কাহালু-নন্দীগামের অনেক কেন্দ্র ঘুরে ঘুরে দেকছি। ভোট খুব সুষ্ঠু হচ্চে। মাঠের অবস্থা ভালো। কাহালু-নন্দীগ্রামে নিশ্চিত এমপি হচ্চি।’
এর আগে, সকালে সদর উপজেলার এরুলিয়া উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট দিতে যান তিনি। ভোট দেওয়ার পর হিরো আলম বলেন, ‘বগুড়া-৬ আসনে আগে থেকেই গোলযোগের আশঙ্কা করেছিলাম, সেটাই সত্যি হয়েছে। নির্বাচনি এজেন্টদের কেন্দ্র থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে। তবে বগুড়া-৪ আসনে ভোট সুষ্ঠু হচ্ছে। এভাবে সুষ্ঠু ভোট হলে এই আসনে আমিই বিজয়ী হবো।’
এদিকে বগুড়া-৬ আসনের উপনির্বাচনে কয়েকটি কেন্দ্রে নৌকা প্রার্থীর এজেন্ট বাদে অন্য এজেন্টদের ভোটকক্ষ থেকে বের করে দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। আজ সকালে হিরো আলমসহ তিনজন প্রার্থী এ অভিযোগ করেন। আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা তাদের এজেন্টদের বের করে দিয়েছেন বলে সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করা হয়।