
নিঃসঙ্গ শেরপার মতো একাই লড়লেন লরকান টাকার। আয়ারল্যান্ডের এই উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান ওয়ান ডাউনে নেমে অপরাজিত ছিলেন ৪৮ বলে ৭১ রানের ইনিংস খেলে। কিন্তু অন্যপাশে পাননি কোনো সতীর্থকে। তাই তো অস্ট্রেলিয়ার কাছে ৪২ রানের হার নিয়ে মাঠ ছাড়তে হয়েছে আইরিশদের। চার ম্যাচে দুই জয়ে অস্ট্রেলিয়া কিছুটা এগিয়ে গেল সেমিফাইনালের পথে, যদিও এখনো বাকি আছে অনেক হিসাব। এই জয়ে ৫ পয়েন্ট নিয়ে পয়েন্ট তালিকার দুইয়ে অস্ট্রেলিয়া, সমান পয়েন্ট নিউজিল্যান্ডেরও, তবে এক ম্যাচ কম খেলে।
ব্রিসবেনে টস জিতে বোলিং নিয়েছিল আয়ারল্যান্ড। শুরুতেই ডেভিড ওয়ার্নারকে মাত্র ৩ রানে ফিরিয়ে দিয়ে দলে স্বস্তি এনে দেন ব্যারি ম্যাকার্থি। ওয়ান ডাউনে নামা মিচেল মার্শ বেশ দ্রুত রান তুললেও আউট হয়ে যান অল্পতেই, ২২ বলে ২৮ রান করে। গ্লেন ম্যাক্সওয়েলও আভাস দিলেও পারেননি ঝড় তুলতে, ৯ বলে ১৩ রানেই শেষ তার ইনিংস। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে দারুণ ইনিংস খেলা মার্কাস স্টয়নিসই ভরসা দিলেন, ২৫ বলে ৩৫ রান করে। ওদিকে একপ্রান্ত আগলে অধিনায়ক অ্যারন ফিঞ্চ খেলেছেন ৪৪ বলে ৬৩ রানের ইনিংস। আগের ম্যাচে নিজের ব্যাটিং নিয়ে নিজেই বিরক্তি প্রকাশ করেছিলেন অজি অধিনায়ক, কাল হাফসেঞ্চুরিতে রানখরা কাটলেও ব্যাটিং নিয়ে আত্মতৃপ্তি পাবেন কমন। হাফসেঞ্চুরি করতে লেগেছে তার ৩৮ বল। তখন পর্যন্ত ৪ বাউন্ডারির সঙ্গে ২ ছক্কা মারা ফিঞ্চ পৌঁছেছেন ৩৮ বলে, ৪ বাউন্ডারি আর ২ ছক্কায়। পরে ৬ বলে আরও একটি বাউন্ডারি ও ছক্কা মেরেছেন। সবার সম্মিলিত প্রয়াসেই ৫ উইকেটে ১৭৯ রান করে অস্ট্রেলিয়া, আয়ারল্যান্ডের ম্যাকার্থি নিয়েছেন ৩ উইকেট।
১৮০ রান তাড়ায় ৩.২ ওভারের মধ্যে বালবার্নি, স্টার্লিং, টেক্টর, ক্যাম্ফার ও ডকরেলকে হারিয়ে বসে আইরিশরা। রান তখন মাত্র ২৫। এর মধ্যে দুই উইকেট নেন গ্লেন ম্যাক্সওয়েল। এরপর টাকার একপ্রান্তে একাই লড়ে গেলেও অন্যপ্রান্তে সঙ্গী বদল হয়েছে নিয়মিত। শেষ পর্যন্ত ১৮.১ ওভারে ১৩৭ রানেই অলআউট আয়ারল্যান্ড। ৯ বাউন্ডারি ও ১ ছক্কায় ৪৮ বলে ৭১ রান করলেও হাসতে পারেননি টাকার। হেসেছেন অ্যারন ফিঞ্চ এই বিশ্বকাপে প্রথমবার ম্যাচসেরা হয়ে।
প্রতিবেশীর উপকার করাটাই তো প্রতিবেশীর কর্তব্য। তাসমান সাগরের ওপারের ‘বড়’ প্রতিবেশী অস্ট্রেলিয়ার দারুণ একটা উপকারই করতে পারে নিউজিল্যান্ড, আজ ইংল্যান্ডকে হারিয়ে দিয়ে। ব্রিসবেনে আজ হেরে গেলেই আসর থেকে ছুটির ঘণ্টা বেজে যাবে ইংল্যান্ডের। তাতে করে নিউজিল্যান্ড তো সেমিফাইনালে যাবেই, পথের কাঁটা দূর হবে অস্ট্রেলিয়ারও। জিতলে টিকে থাকবে ইংল্যান্ডের আশা, সমীকরণে থাকবে অস্ট্রেলিয়াও।
২০১৯ ওয়ানডে বিশ্বকাপের দুই ফাইনালিস্ট ইংল্যান্ড-নিউজিল্যান্ড গত বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে মুখোমুখি হয়েছিল। ড্যারিল মিচেলের দারুণ ব্যাটিংয়ে কিউইরা ম্যাচটা জিতে উঠেছিল ফাইনালে। এবারেও দুটো দলে কমবেশি সেই ক্রিকেটাররাই আছেন। ইংল্যান্ডের নেতৃত্বে বদল এলেও নিউজিল্যান্ডে কেন উইলিয়ামসনই অধিনায়ক। এবং এই মুহূর্তে দলের ব্যাটিং অর্ডারে সবচেয়ে ‘দুর্বল’ জায়গাটা কিউই অধিনায়কের। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ২৩ বলে ২৩ আর শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ১৩ বলে ৮ রান করেছেন শুধু। একই রকম অবস্থা ইংল্যান্ডের অধিনায়ক জস বাটলারেরও। আইপিএলে মনে হচ্ছিল প্রায় বলে বলে ছয় মারতে পারেন বাটলার। সেই তিনি বিশ্বকাপে এসে আফগানদের বিপক্ষে ১৮ আর আইরিশদের বিপক্ষে শূন্য।
দুটো ম্যাচ হয়ে গেছে, এখনো ইংল্যান্ডের কোনো ব্যাটসম্যানের হাফসেঞ্চুরিও নেই। অন্যদিকে নিউজিল্যান্ডের গ্লেন ফিলিপস করেছেন শতরান, প্রথম ম্যাচে ডেভন কনওয়েও গিয়েছিলেন খুব কাছাকাছি (৯২*)।
সব মিলিয়ে এই মুহূর্তে এগিয়ে আছে নিউজিল্যান্ডই। ইংল্যান্ডের টি-২০ দলটা যদিও রোমাঞ্চকর সব ক্রিকেটারে ঠাসা, বিশ্বকাপে এসে ঠিক নিজেদের খুঁজে পাচ্ছেন না তারা। ইংল্যান্ডের সহকারী কোচ পল কলিংউড সংবাদ সম্মেলনে এসে বলেছেন, ‘ইতিহাস বলে যে নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে আমাদের হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হয়। অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে ম্যাচটা না হওয়াতে যেটা হয়েছে, বোলাররা সতেজ আছে। ব্যাটসম্যানরা নেটে নিজেদের ঝালিয়ে নেওয়ার সুযোগ পেয়েছে। এই মাঠেই আমরা পাকিস্তানের বিপক্ষে প্রস্তুতি ম্যাচ খেলেছিলাম।’
বেন স্টোকসের দলে জায়গা নিয়ে প্রশ্ন ওঠায় কলিংউডের উত্তর, ‘চাপের মুহূর্তে যে একটা মানুষকে আমি দলে চাইব সে হলো বেন স্টোকস। সে শুধু ম্যাচ জেতানো ইনিংসই খেলে না, চাপের মুখে ম্যাচ জেতানো ইনিংস খেলে। সংকটের মুহূর্তে বেন স্টোকসকে দেখলে আশা দেখা যায়, সে শুধু ব্যাট হাতেই না বল হাতেও ম্যাচ ঘুরিয়ে দিতে পারে। এমন মুহূর্তের জন্য বেনকে লাগবেই।’
ব্রিসবেনের মাঠেই বাংলাদেশ-জিম্বাবুয়ে ম্যাচটি হয়েছিল। সেটি দেখেছেন কি না বা শন উইলিয়ামসের কথায় স্পিন বোলারদের সুবিধার বিষয়টি জানেন কি না এমন প্রশ্নে কলিংউডের উত্তর, ‘না দেখিনি। দেখতে হবে কন্ডিশন কেমন, আমরা আসলে আগে থেকেই কোনো কিছু ভেবে রাখতে চাই না আর এখন পর্যন্ত বল যে খুব ঘুরছে এমনটাও দেখিনি। বরং বলের মুভমেন্টে, সিম আর সুইংয়েই যা হচ্ছে দেখছি।’
নিউজিল্যান্ডের প্রতিনিধি হয়ে সংবাদ সম্মেলনে এসেছিলেন লকি ফার্গুসন। এই পেসার বলে দিলেন এই মুহূর্তে বিশ্বের সেরা পেস বোলিং কিউইদেরই, ‘টিম (সাউদি) আর ট্রেন্ট বোল্ট দুর্দান্ত বল করছে। যেখানে বল সুইং করে, সেসব জায়গায় ওদের চেয়ে ভালো কেউ আছে বলে তো মনে হয় না। অন্তত আমার কাছে। ওদের সঙ্গে খেলাটাই খুব দারুণ অভিজ্ঞতা।’
ইংল্যান্ডের ব্যাটিংটা বিশ্বকাপে এখনো জ্বলে না উঠলেও বারুদ কম নয় তাদের। লকি অবশ্য মনে করেন, ওসবে ভয় পেয়ে কাজ নেই কারণ টি-টোয়েন্টিতে সব দলেরই এরকম কিছু না কিছু আছে, ‘টি-২০ খেলার ধরনটাই এমন যে প্রতিটা দলেই শুরুতে ওরকম কিছু বিস্ফোরক ব্যাটসম্যান থাকে। ইংল্যান্ডও ব্যতিক্রম নয়, নিঃসন্দেহে তারা ব্যাটিং শক্তিতে ওপরের দিকেই আছে আর ওদের ব্যাটিং লাইন-আপটাও লম্বা। ঠান্ডা মাথায় নিজেদের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করাটাই আমাদের লক্ষ্য।’ জিতলেই সেমিফাইনাল নিশ্চিত, এমন অবস্থায় লকির ভাবনা, ‘বড় ম্যাচ আমাদের জন্য। একটা করে ম্যাচ নিয়েই ভাবছি। কাল (আজ) জিতলেই পরের ধাপে যেতে পারব যখন যাওয়ার সময় হবে।’
ব্রিসবেনের আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বৃষ্টিও আছে। উত্তেজনার বারুদঠাসা এই ম্যাচটায় না আবার প্রকৃতি জল ঢেলে দেয়!
শ্রীলঙ্কার অর্থনৈতিক দৈন্যদশার ছাপ পড়েছিল এশিয়া কাপে। সেটা উদ্বোধনী ম্যাচে আফগানিস্তানের বিপক্ষে। ব্যাটিং ধসের পর ৮ উইকেটের হার। যদিও পরের ম্যাচে বাংলাদেশকে হারিয়েই ঘুরে দাঁড়িয়েছিল দলটি। তারপর টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়ন হয়ে দেশে ফিরে তারা। কিন্তু ২৭ আগস্টের সেই হারের ক্ষত কি সহজে শুকিয়েছে দাসুন শানাকাদের! সেই দৈন্যদশার ছাপ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের শুরুতে নামিবিয়ার সঙ্গেও দেখা গেছে। এরপর সেখান থেকেও ঘুরে দাঁড়িয়ে সেই রশিদ খানদের বিপক্ষে ফের নামতে যাচ্ছেন এশিয়া জয়ীরা।
ব্রিসবেনে বাংলাদেশ সময় সকাল ১০টায় শুরু হবে খেলাটি। এই মাঠের অতীত পরিসংখ্যান বলছে, ব্যাটাররা এখানে বেশি কাবু হয়েছেন অফস্পিনারদের কাছে। আর সবচেয়ে বেশি খরুচে পেসাররা। বিশ্বকাপের সুপার টুয়েলভ শুরুর আগ পর্যন্ত গ্যাবায় পেসারদের ইকোনমি ৮.৬৫। লেগ স্পিনাররা যেখানে বল করেছেন ৭.১১ ইকোনমিতে। তবে অফস্পিনারদের ইকোনমি সবচেয়ে ভালো, ৬.৬৮।
তবে বাংলাদেশ-জিম্বাবুয়ের ম্যাচে পেসার-স্পিনাররা সেই পরিসংখ্যানে গরমিল করে দিয়েছেন। গ্যাবাতে তাসকিন ওভারপ্রতি রান খরচ করেছেন ৪.৭৫। আর মোস্তাফিজ দিয়েছেন ৩.৭৫ রান করে। কেবল হাসান মাহমুদ ওভারপ্রতি ৯ রান দিয়ে মাঠে পেসারদের স্বাভাবিকতা বজায় রাখেন। আর টাইগার ফিঙ্গার স্পিনার সাকিব ও মোসাদ্দেক দুজনেই ওভারপ্রতি ৮.৫০ রান করে দিয়ে তালগোল পাকিয়েছেন।
টাইগাররা পরিসংখ্যানের হিসাব পাল্টে দিলেও স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে আয়ারল্যান্ড ঠিকই ধারাবাহিকতা বজায় রেখেছেন কাল এখানে। গতকাল মার্ক অ্যাডায়ার ৪ ওভারে ৫৯ রান দিয়েছেন। আইরিশ লেগ স্পিনার গেরাথ ডেলেনি ওভারপ্রতি প্রায় ১০ রান করে খরচ করেছেন। বিপরীতে অফস্পিনার জর্জ ডকরেল কোনো উইকেট না পেলেও ওভারে মাত্র ৬ রান করে খরচ করেছেন।
স্পিননির্ভর আফগানিস্তানের সঙ্গে শ্রীলঙ্কা ম্যাচেও এমনটি থাকাটাই স্বাভাবিক। রশিদ খান কিংবা ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা রান খরচ করলেও উইকেট নিয়ে দলকে ব্রেক থ্রো এনে দিতে পারেন। অন্যদিকে মুজিব-উর রহমান ও মোহাম্মদ নবীদের আঁটসাঁট বোলিংয়ে চাপে থাকতে পারেন কুশল মেন্ডিস ও পাথুম নিশাঙ্কারা। অন্যদিকে হজরতউল্লাহ জাজাই ও ইব্রাহিম জাদরানরাও কাবু হতে পারেন মহেশ থিকশানাদের কাছে। চারিথ আসালঙ্কাও হয়ে উঠতে পারেন তার যোগ্য সঙ্গী। তবে অস্বাভাবিক কিছু না হলে উভয় দলের ব্যাটাররাই স্ব-মহিমায় জ্বলে উঠতে পারেন পেসারদের পেলে।
এটা তো গেল মাঠের পরিসংখ্যানের কথা। তবে সুপার টুয়েলভের পয়েন্ট টেবিলের পরিসংখ্যানের তলানিতে রয়েছে দুই দল। সেমিফাইনালের আশা টিকিয়ে রাখতে হলে টুর্নামেন্টের সাবেক চ্যাম্পিয়ন শ্রীলঙ্কার কাছে ম্যাচটি তাই অনেক গুরুত্বপূর্ণ। কাসুন রাজিথা যেমন বললেন কাল, ‘আমরা জানি এটি আমাদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ খেলা। মাঠে আমাদের সেরাটা দেওয়ার চেষ্টা করব। এই ম্যাচটি জিততে হবে। আমরা জানি যে, আমরা আমাদের দেশ ও দলের জন্য সেরাটা উজাড় করে দিতে নামব।’
অনেক সম্ভাবনা নিয়ে টুর্নামেন্টে আসা আফগানিস্তান দুই ম্যাচ হার, আর একটি পরিত্যক্ত ম্যাচ থেকে ১ পয়েন্ট নিয়ে একেবারে নিচে। তাদের জন্য শেষ আশায় পানি ঢেলে দিতে পারে বৃষ্টি। ইংলিশ কোচ জোনাথন ট্রটের আশা ম্যাচটা হবে, ‘আশা করি আমরা ম্যাচটা খেলতে পারব। জয়ের লক্ষ্য নিয়ে নেমে আমরা আরও দুই পয়েন্ট যোগ করতে পারব বলে আত্মবিশ্বাস রয়েছে আমাদের।’
চ্যাম্পিয়নস লিগের ইতিহাসের তৃতীয় সর্বোচ্চ গোলদাতা রবার্ট লেভানডফস্কি। যে ধারায় আগের মৌসুমগুলো খেলেছিলেন, সে ধারায় খেলতে পারলে হয়তো এবার সেঞ্চুরিও পূরণ হয়ে যেত তার। কিন্তু বার্সেলোনায় যোগ দেওয়ার পর সব গেল বদলে। খেলতে হবে কি-না ইউরোপা লিগে। তাতে আর কীভাবে সুখে থাকেন এ পোলিশ তারকা?
বার্সেলোনা চ্যাম্পিয়নস লিগে খেলতে না পারায় অসুখী হলেও প্রথম মৌসুম সহজ হবে না এমন ধারণা আগেই ছিল লেভার। লা ভ্যানগার্দিয়ার সঙ্গে আলাপকালে বলেছেন, ‘অবশ্যই আমি খুশি নই। বার্সেলোনার শেষ ষোলোতে থাকা উচিত ছিল। কিন্তু বার্সেলোনা আসার আগে আমি আগে থেকেই জানতাম যে প্রথম মৌসুমে অবশ্যই যেমনটা হওয়ার কথা তারচেয়ে বেশি কঠিন হতে পারে।’
‘আমরা পুনর্গঠনের প্রক্রিয়ার মধ্যে আছি যা সময় নেয়, আমাদের অবশ্যই ধৈর্য ধরতে হবে। আমি নিশ্চিত যে এই বিপত্তিগুলো আমাদের দল হিসেবে গড়ে তুলবে এবং পরের মৌসুমে সবকিছু ভিন্ন হবে। আমরা বিকশিত হচ্ছি। এখানে এসে প্রথম মৌসুমে সবকিছু ঠিকঠাক হবে এমনটা আমি আশা করিনি। আমি এমন একটি প্রক্রিয়াতে জোর দিয়েছি যার জন্য সময় এবং ধৈর্যের প্রয়োজন’ যোগ করেন লেভানডফস্কি।
এর আগে সবশেষ ২০১০-১১ মৌসুমে বরুশিয়া ডর্টমুন্ডের হয়ে ইউরোপা লিগে খেলেছিলেন লেভানডফস্কি। সে মৌসুমে আট ম্যাচ খেলে গোল দিয়েছিলেন মাত্র একটি। এরপর গত এক যুগে খেলতে হয়নি এ লিগে। চ্যাম্পিয়নস লিগে নিয়মিত জাদুকরী ছন্দের ধারা রেখে এখন পর্যন্ত গোল করেছেন ৯১টি।
আজ ও কাল চ্যাম্পিয়নস লিগে গ্রুপ সেরা-রানার্সআপ নির্ধারণের খেলা। বার্সেলোনা খেললেও সেই লড়াইয়ে নেই। গত রাউন্ডে ইন্তার মিলানের জয়ে বিদায় নিয়েছে তারা। নিজেরাও হেরেছে বায়ার্ন মিউনিখের কাছে। আজ তাদের খেলা ভিক্টোরিয়া প্লাজেনের সঙ্গে।
মার্শেইয়ের মাঠে খেলবে টটেনহাম। পাঁচ ম্যাচে ৮ পয়েন্টে শীর্ষে আছে স্পার্সরা। মার্শেই ছয় পয়েন্টে চারে। গ্রুপের অপর ম্যাচ স্পোর্টিং সিপি ও আইনট্রাখট ফ্রাঙ্কফুর্টের। স্পোর্টিং আতিথেয়তা দেবে ফ্রাঙ্কফুর্টকে। দুই দলেরই পয়েন্ট সমান ৭। দুইয়ে স্পোর্টিং, তিনে ফ্রাঙ্কফুর্ট।
টটেনহাম-মার্শেই ম্যাচে যে দল জিতবে তার শীর্ষ দুইয়ে থেকে শেষ ষোলো নিশ্চিত। একই ভাবে সিপি-স্পোর্টিং ম্যাচের জয়ী দলেরও শেষ ষোলো নিশ্চিত হবে। টটেনহাম ম্যাচ ড্র হলেও পরের রাউন্ডে যাবে হ্যারি কেইনের দল। কিন্তু যদি টটেনহাম হারে এবং স্পোর্টিং-ফ্রাঙ্কফুর্ট ম্যাচ ড্র হয়, তখন তিন দলেরই পয়েন্ট হবে সমান ৮। সে ক্ষেত্রেও পরের রাউন্ডে যাবে টটেনহামই। মুখোমুখি লড়াইয়ে এগিয়ে আছে আন্তনিও কন্তের দল। আগের দেখায় মার্শেইকে ২-০ গোলে হারিয়েছে টটেনহাম।
সি গ্রুপের চার দলের অবস্থান নিশ্চিত হয়েছে আগেই। আজকের ম্যাচের ফলাফল তাদের অবস্থানে কোনো পরিবর্তন আনবে না। শীর্ষ থাকা বায়ার্ন আতিথেয়তা দেবে দ্বিতীয় স্থানে থাকা ইন্তার মিলানকে। আর বার্সেলোনা খেলতে যাবে প্লাজেনের মাঠে।
এ গ্রুপের শীর্ষ দুই দল নাপোলি ও লিভারপুলের ম্যাচ আজ অ্যানফিল্ডে। দুটি দলই নিশ্চিত করেছে পরের রাউন্ড। অসাধারণ কিছু না হলে নাপোলির শীর্ষস্থান এবং লিভারপুলের দ্বিতীয় স্থানও নিশ্চিত। আজ লিভারপুল জিতলে সমান ১৫ করে পয়েন্ট হবে নাপোলি আর অলরেডদের। তবে আগের দেখায় নাপোলি লিভারপুলকে হারিয়েছে ৪-১ গোলে।
বি গ্রুপ থেকে ক্লাব ব্রুজ ও পোর্তোর পরের রাউন্ডে যাওয়া নিশ্চিত। আজ ব্রুজ খেলবে লেভারকুসেনের বিপক্ষে, পোর্তোর ম্যাচ আতলেতিকো মাদ্রিদের বিপক্ষে। লেভারকুসেন যদি জেতে এবং আতলেতিকো হারে তবে ইউরোপা লিগ পজিশন থেকে ছিটকে যাবে ডিয়েগো সিমিওনের আতলেতিকো। এই গ্রুপের পয়েন্ট টেবিল এমন– ব্রুজ (১০), পোর্তো (৯), আতলেতিকো (৫) এবং লেভারকুসেন (৪)।
রবিবার পার্থে সুপার টুয়েলভের ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকার পেসারদের তোপে ধসে পড়ে ভারতীয় ব্যাটিং লাইনআপ। ব্যর্থ হন কোহলিও, আউট হয়ে যান মাত্র ১২ রানে। পরবর্তীতে সীমানার কাছে হাতে জমাতে পারেননি সহজ ক্যাচ। তার হতাশার ম্যাচে ৫ উইকেটে হারের তেতো স্বাদ পেতে হয় দলকে। এর কয়েক ঘণ্টা পর কোহলি জানতে পারেন, ভারত দল যে হোটেলে উঠেছে, সেখানেই ঘটেছে অবৈধ অনুপ্রবেশের ঘটনা। সেটা আবার তার রুমেই!
শুধু রুমে প্রবেশ করেই ক্ষান্ত হয়নি দুর্বৃত্তরা, পুরো রুমের ভিডিও ধারণ করে তা সামাজিক মাধ্যমেও ছড়িয়ে দিয়েছে। সেটা নজর এড়ায়নি কোহলিরও। সামাজিক মাধ্যম ইন্সটাগ্রামে নিজের স্বীকৃত অ্যাকাউন্টে তা প্রকাশ করে ক্ষোভ ঝেড়েছেন ৩৩ বছর বয়সী ব্যাটার। ব্যক্তিগত গোপনীয়তা নিয়ে শঙ্কায় থাকার কথাও জানিয়েছেন তিনি। ‘আমি বুঝতে পারি যে ভক্তরা তাদের প্রিয় খেলোয়াড়দের দেখলে খুবই আনন্দিত ও উত্তেজিত হয়ে পড়ে এবং তাদের সঙ্গে দেখা করার জন্যও রোমাঞ্চিত থাকে। আমি সব সময়ই এটা সমর্থন করেছি। তবে এই ভিডিওটা ভয়ানক এবং এটা আমাকে আমার ব্যক্তিগত গোপনীয়তা নিয়ে শঙ্কায় ফেলে দিয়েছে।’
নিজের রুমেও যদি গোপনীয়তা রক্ষা না হয়, তবে কোথায় তা পাবেন সেই প্রশ্নও রেখেছেন ভারতীয় তারকা ‘যদি আমি আমার হোটেল রুমেই ব্যক্তিগত গোপনীয়তা রক্ষার ব্যাপারটি না পাই, তবে আর কোথায় আমি তা আশা করতে পারি? এমন (ভালোবাসার) বাড়াবাড়ি ও গোপনীয়তার পুরোপুরি লঙ্ঘন আমার জন্য মেনে নেওয়ার মতো নয়। দয়া করে মানুষের গোপনীয়তাকে সম্মান করুন ও তাদের বিনোদনের মাধ্যম বানাবেন না।’
কোহলির পোস্টের পরপরই সেখানে নিজেদের প্রতিক্রিয়া জানাতে থাকেন ক্রিকেট তারকারা। তার স্ত্রী আনুশকা শর্মাও প্রকাশ করেছেন অসন্তোষ। তিনি মন্তব্য করেছেন ‘আপনার বেডরুমেও যদি এটা ঘটে, তবে সীমা থাকল কোথায়?’ অস্ট্রেলিয়ার ওপেনার ডেভিড ওয়ার্নার লিখেছেন ‘এটা অসহ্য, একেবারেই মেনে নেওয়ার মতো নয়।’
দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ম্যাচ ও হোটেলে ঘটা এই অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা বাদ দিলে চলমান টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ব্যাট হাতে দারুণ সময় কাটছে কোহলির। তিন ম্যাচে করেছেন ১৫৬ রান। তার ৫৩ বলে ৮২ রানের অপরাজিত ইনিংসেই নিজেদের প্রথম ম্যাচে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী পাকিস্তানকে হারায় ভারত।
দুটি পেনাল্টি কর্নার কাজে লাগিয়ে প্রথম কোয়ার্টারেই ২-০ লিড নিয়ে নেয় ওয়ালটন ঢাকা। দ্বিতীয় কোয়ার্টারের শুরুতেই হয় আরেক গোল। এরপর ম্যাচে ফেরা বড্ড কঠিন ছিল। তারপরও শেষ দুই কোয়ার্টারে মরিয়া চেষ্টা চালিয়েছিল রূপায়ণ সিটি কুমিল্লা। তবে পিসির অনেকগুলো সুযোগ কাজে লাগাতে ব্যর্থ হয়ে ৪-৩ গোলের তেতো স্বাদ নিতে হয়েছে তাদের। ম্যাচে ৯টা পিসির সুযোগ পেয়েছিল রূপায়ণ সিটি কুমিল্লা। যার মাত্র একটি কাজে লাগাতে পারে তারা। বিপরীতে ওয়ালটন ঢাকা ছয় পিসির তিনটি কাজে লাগিয়ে ম্যাচে গড়ে দেয় ব্যবধান। যা তাদের দ্বিতীয় ম্যাচে দেয় জয়ের স্বাদ।
আগের ম্যাচে মেট্রো এক্সপ্রেস বরিশালের বিপক্ষে সাতটি পিসির সুযোগ কাজে লাগাতে ব্যর্থ হয়েছিলেন ওয়ালটন ঢাকার অধিনায়ক আশরাফুল ইসলাম। অথচ কাল প্রথম দুই প্রচেষ্টাই কাজে লাগান এই পিসি স্টেশালিস্ট। সপ্তম মিনিটে পিছিয়ে যায় রূপায়ণ সিটি কুমিল্লা। ঢাকার ভারতীয় তারকা এসভি সুনিলের পুশ, আবেদ উদ্দিন থামিয়ে দিলে নিখুঁত হিটে লক্ষ্যভেদ করেন আশরাফুল ইসলাম। প্রথম কোয়ার্টারের শেষ মুহূর্তে মালয়েশিয়ান আজরি বিন হাসানের পুশ আবেদ উদ্দিন থামানোর পর আশরাফুলের স্টিক খুঁজে নেয় পোস্ট। ২০ মিনিটে রকিবুল হাসান রকির আড়াআড়ি পাসে স্টিক ছুঁইয়ে ৩-০ করেন ঢাকার ইন্দোনেশিয়ান ফরোয়ার্ড আলফান্দি আলি সুরিয়া। এই গোলে অবশ্য অবদান আছে রূপায়ণ সিটি কুমিল্লার ডিফেন্ডারদেরও। তিন মিনিট বাদে অবশ্য ব্যবধান কমায় পিসি থেকে গোল করে। মিলন হোসেনের পুশ, সারোয়ার হোসেন থামালে অধিনায়ক সোহানুর রহমান সবুজ দলের দ্বিতীয় পিসিতে গোল করেন। পরের মিনিটেই গোলের সুযোগ ছিল। তবে ওয়ালটন ডিফেন্ডার শফিউল আলম শিশির গোললাইন থেকে রুখে দেন পুস্কর ক্ষিসা মিমোর ফ্লিক। ২৫ মিনিটে আবারও পিসির সুযোগ কাজে লাগিয়ে সুরিয়া ঢাকাকে আরও এগিয়ে নেন। সুনিলের পুশ আবেদ থামালে আশরাফুলের ড্রাগ অ্যান্ড ফ্লিকে শেষ মুহূর্তে স্টিক ছুঁইয়ে দিক পরিবর্তন করে জালে পাঠান ইন্দোনেশিয়ার ফরোয়ার্ড। ২৮ মিনিটে পিসির দুটি সুযোগ হাতছাড়া করেন সবুজ। দ্বিতীয় কোয়ার্টারের শেষ মুহূর্তে ঢাকার কিপার আবু সাঈদ নিপ্পন অসাধারণ ক্ষিপ্রতায় মিলনকে গোল করতে দেননি। তৃতীয় কোয়ার্টারে ম্যাচে ফিরতে মরিয়া আক্রমণ চালায় রূপায়ণ সিটি কুমিল্লা। ৩২ মিনিটে পেনাল্টি স্ট্রোক থেকে ব্যবধান ৪-২-এ নামিয়ে আনেন কোরিয়ান কিম সুং ইয়ব। ৩৯ মিনিটে কিম সুং ইয়ব দলের অষ্টম পিসি থেকে ব্যবধান ৪-৩ করেন। মিলনের পুশ প্রদীপ মোর থামালে নিখুঁত ড্রাগ অ্যান্ড ফ্লিকে গোল করেন কোরিয়ান ফরোয়ার্ড। শেষ কোয়ার্টারেও আক্রমণে এগিয়ে ছিল রূপায়ণ। তবে ডিফেন্ডার ও কিপারের কৃতিত্বে ম্যাচটা থেকে পূর্ণ ৩ পয়েন্ট নিয়ে মাঠ ছাড়ে ওয়ালটন ঢাকা। মোনার্ক পদ্মাকে হারিয়ে হকি চ্যাম্পিয়নস ট্রফি শুরু করা রূপায়ণ সিটি কুমিল্লাকে দ্বিতীয় ম্যাচেই হোঁচট খেতে হলো। আগামীকাল তাদের তৃতীয় ম্যাচ মোনার্ক পদ্মার বিপক্ষে। এই ম্যাচ দিয়ে তারা চাইবে জয়ে ফিরতে।
ঢাকাসহ সারা দেশে তীব্র দাবদাহ চলছে। দফায় দফায় বিদ্যুৎ থাকছে না বাসা-বাড়ি, অফিস আদালত ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ সর্বত্র। এ নিয়ে চলছে আলোচনা-সমালোচনা। বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনার ঝড় বইছে।
বিদ্যুৎ সমস্যা নিয়ে একটি মহল পরিস্থিতি ঘোলা করার চেষ্টায় আছে বলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাদের কাছে তথ্য এসেছে। আর ওই তথ্য পেয়ে পুলিশ সদর দপ্তর নড়েচড়ে বসেছে। পুলিশের মহাপরিদর্শকসহ শীর্ষ কর্তারা বৈঠক করেছেন। যেকোনো পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সোমবার পুলিশের সব রেঞ্জ অফিস ও ইউনিট প্রধানদের কাছে বিশেষ নির্দেশনা পাঠিয়েছে পুলিশ সদর দপ্তর।
বিশেষ বার্তা পেয়ে ইউনিট প্রধান, রেঞ্জ ডিআইজি ও ৬৪ জেলার পুলিশ সুপাররা আলাদাভাবে বৈঠক করেছেন। বিদ্যুৎ সমস্যার সমাধান না হওয়া পর্যন্ত কঠোর নিরাপত্তা দিতে বলা হয়েছে। এ বিষয়ে ইতিমধ্যে কাজও শুরু করে দিয়েছে পুলিশ।
জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, বিদ্যুতের সমস্যা দ্রুত সমাধান করতে সরকার নানাভাবে চেষ্টা করছে। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে সমস্যার সমাধান হবে বলে আশা করছি। এরই মধ্যে যেকোনো পরিস্থিতি এড়াতে আমরা সতর্ক আছি। বিদ্যুৎ স্টেশনগুলো নিরাপত্তার আওতায় আনা হচ্ছে। এই জন্য আমরা আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
পুলিশ সদর দপ্তরের এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, সোমবার পুলিশ সদর দপ্তর থেকে পুলিশের সব ইউনিট, রেঞ্জ ডিআইজি ও পুলিশ সুপারদের কাছে বিদ্যুৎ স্টেশনে নিরাপত্তা দেওয়ার পাশাপাশি নজরদারি বাড়াতে চিঠি পাঠানো হয়েছে। একটি মহল লোডশেডিংয়ের অজুহাতে দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করতে চাচ্ছে বলে আমরা তথ্য পেয়েছি। যেসব এলাকায় বেশি বিদ্যুৎ আসা-যাওয়া করছে তারও একটি তালিকা তৈরি করা হয়েছে।
কয়েকটি জেলার পুলিশ সুপার দেশ রূপান্তরকে জানিয়েছেন, পুলিশ সদর দপ্তরের চিঠি পাওয়ার পর আমরা বিশেষ বৈঠক করছি। এলাকায় বিদ্যুৎ আসা-যাওয়া করছে তা সত্য। এ জন্য আমরা বেশ সতর্ক আছি। বিদ্যুৎ অফিস ও স্টেশনগুলোর বিষয়ে থানার ওসিদের দিক-নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা দেশ রূপান্তরকে বলেন, লোডশেডিংয়ের অজুহাত তুলে বড় ধরনের হামলা চালাতে পারে একটি বিশেষ মহল। প্রতিটি বিদ্যুৎকেন্দ্রে বাড়তি পুলিশের পাশাপাশি গোয়েন্দা নজরদারি রাখার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়। একই সঙ্গে থানার ওসিদের নানা দিকনির্দেশনা দিচ্ছেন জেলার পুলিশ সুপাররা। এমনকি বাড়তি ফোর্সও প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
তা ছাড়া রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোও নজরদারির আওতায় আনা হয়েছে।
বিদ্যুৎ অফিসের পাশাপাশি ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় কঠোর নিরাপত্তার বলয় গড়ে তুলতে ৫০ থানার ওসিদের বিশেষ নির্দেশনা দিয়েছেন ডিএমপি কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক।
খন্দকার গোলাম ফারুক দেশ রূপান্তরকে জানান, বিদ্যুৎ সমস্যা নিয়ে যাতে কেউ অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি তৈরি করতে না পারে সে জন্য আমরা সতর্ক আছি। বিদ্যুৎ স্টেশনগুলোর পাশাপাশি রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলো বাড়তি নিরাপত্তার আওতায় আনা হয়েছে। ইতিমধ্যে সবাইকে সেই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, বিদ্যুৎসহ যেকোনো সমস্যা নিয়ে কোন মহল যাতে কোন ধরনের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে না পারে সে জন্য বিশেষ নজরদারি করা হচ্ছে। আশা করি বড় ধরনের কোন ঘটনা ঘটবে না। তারপরও পুলিশ সতর্ক আছে।
সূত্র জানায়, লোডশেডিংকে পুঁজি করে কেউ যাতে অপ্রীতিকর কোনো পরিস্থিতি সৃষ্টির সুযোগ নিতে না পারে, সে বিষয়ে নজর রাখতে বলা হয়েছে। নির্দেশনার পর সারা দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদনকেন্দ্র, বিদ্যুৎ অফিস, সাবস্টেশনসহ কেপিআই স্থাপনায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা আগের চেয়ে বৃদ্ধি করা হয়েছে। গোয়েন্দা কার্যক্রম ও পুলিশি টহল বাড়ানো হয়েছে। বিদ্যুৎ বিতরণের দায়িত্বে থাকা সমিতি বা কোম্পানিগুলোর পক্ষ থেকেও পুলিশকে চিঠি দিয়ে বাড়তি নিরাপত্তাও চাওয়া হয়েছে।
অবশেষে বন্ধ হয়ে গেল দেশের সর্ববৃহৎ পটুয়াখালীর পায়রায় ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন। গতকাল সোমবার দুপুরে কেন্দ্রটির দ্বিতীয় ইউনিটের বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। কয়লা সংকটে গত ২৫ মে বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির প্রথম ইউনিট বন্ধ হয়। ২০২০ সালে বাণিজ্যিকভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন করার পর এবারই প্রথম কয়লা সংকটে প্রতিষ্ঠানটির উৎপাদন বন্ধ হলো।
চীন ও বাংলাদেশের যৌথ বিনিয়োগের এই বিদ্যুৎ প্রতিষ্ঠানটিকে কয়লা ক্রয়ে ঋণ দিয়ে আসছে চায়না ন্যাশনাল মেশিনারি ইমপোর্ট অ্যান্ড এক্সপোর্ট কোম্পানি (সিএমসি)। এপ্রিল পর্যন্ত কয়লার ৩৯০ মিলিয়ন ডলার বকেয়া বিল পরিশোধ না করায় কয়লা সরবরাহ বন্ধ করে দেয় সিএমসি। পরে ১০০ মিলিয়ন ডলার পরিশোধ করা হলে কয়লা আমদানির এলসি খোলার শর্ত দেয় চীনা প্রতিষ্ঠান। গতকাল পর্যন্ত ৯৮ মিলিয়ন ডলার পরিশোধ করা হয়েছে। এ মাসের শেষদিকে কয়লা দেশে আসার কথা রয়েছে।
কয়লার অভাবে দেশের সবচেয়ে বড় এবং নির্ভরযোগ্য বিদ্যুৎকেন্দ্রটি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় লোডশেডিংয়ের মাত্রা বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি এক মাসে লোকসান হবে অন্তত ৩০০ কোটি টাকা। আর্থিক ক্ষতির পাশাপাশি লোডশেডিংয়ের কারণে জনদুর্ভোগ ও কারখানার উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার বিষয়টি বিবেচনায় নিলে পুরো ক্ষতির পরিমাণ আরও বেশি।
এদিকে উৎপাদিত বিদ্যুতের দামের বাইরে শুধু কয়লাবাবদ পিডিবির কাছে কেন্দ্রটির বকেয়ার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩০০ মিলিয়ন ডলার। ছয় মাসেরও বেশি সময় ধরে থাকা এ বকেয়ার টাকা পরিশোধের জন্য দফায় দফায় চিঠি দিয়েও তা পরিশোধ করা হয়নি। অভিযোগ উঠেছে, আন্তঃমন্ত্রণালয়ের সমন্বয়হীনতা এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের অবহেলার কারণেই কেন্দ্রটি বন্ধ হয়ে গেছে। যদিও সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলো নিজেদের দায় অস্বীকার করে বলছে, বৈশি^ক মন্দার পরিস্থিতিতে ডলার সংকটের কারণেই এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
চুক্তি অনুযায়ী, উৎপাদিত বিদ্যুতের দামের পাশাপাশি কেন্দ্রভাড়া বাবদ প্রতি মাসে পিডিবিকে ২৪৭ কোটি টাকা দিতে হবে। এখন বিদ্যুৎ উৎপাদন না করলেও নির্ধারিত কেন্দ্রভাড়া পরিশোধ করতে হবে পিডিবিকে। সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, পিডিবির চাহিদা অনুযায়ী নিরবচ্ছিন্নভাবে গড়ে প্রতিদিন ১ হাজার ২৪৪ মেগাওয়াট করে প্রায় তিন কোটি ইউনিট বিদ্যুৎ সরবরাহ করে আসছিল কেন্দ্রটি। প্রতি মাসে এর পরিমাণ ছিল ৯০ কোটি ইউনিট। গড়ে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের বিক্রয়মূল্য ছিল ৫ টাকা ৩০ পয়সা থেকে ৬ টাকার মতো।
প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ বিক্রি করে প্রতিষ্ঠানটির নিট মুনাফার প্রকৃত জানা না গেলেও নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে জানান, সব ধরনের ব্যয় বাদ দিয়ে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতে তাদের নিট মুনাফা হতো ৫ থেকে ৬ শতাংশ। প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের গড়মূল্য সাড়ে ৫ টাকা এবং মুনাফা সাড়ে ৫ শতাংশ বিবেচনায় নিয়ে প্রতিষ্ঠানটির এক মাসে মুনাফার পরিমাণ প্রায় ৩০ কোটি টাকা। কেন্দ্রটি বন্ধ থাকায় এ মুনাফা থেকে বঞ্চিত হবে বিসিপিসিএল। এদিকে কয়লা কেনার জন্য সাড়ে ৬ শতাংশ সুদে ঋণ নেয় প্রতিষ্ঠানটি। গত ছয় মাসের বেশি সময় কয়লার বিল বকেয়া থাকায় সুদের পরিমাণও বেড়ে যাবে। বাড়তি এ সুদের অর্থ বিসিপিসিএলকেই পরিশোধ করতে হবে।
বর্তমানে বিভিন্ন কেন্দ্র থেকে পিডিবির বিদ্যুৎ ক্রয়ের প্রতি ইউনিটের গড়মূল্য প্রায় ১১ টাকা ৫০ পয়সা। যদিও পিডিবি এ বিদ্যুৎ লোকসান দিয়ে বিতরণ কোম্পানির কাছে বিক্রি করছে ৮ টাকা ১০ পয়সায়। পায়রা থেকে এক মাস বিদ্যুৎ কিনতে না পারলে পিডিবির লোকসান আরও বাড়বে।
সূত্রমতে, কয়লা দেশে পৌঁছানো এবং কেন্দ্র চালু করতে সব মিলে অন্তত এক মাসের মতো সময় লাগবে। কোনো কারণে যদি কয়লা আসতে আরও দেরি হয়, তাহলে ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়বে।
বিসিপিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী এএম খোরশেদুল আলম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রটি বিশে^র সেরা কেন্দ্রগুলোর মধ্যে অন্যতম। এক সুইচে চালু করার পর নিরবচ্ছিন্নভাবে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হলেও বৈশি^ক কারণে ডলার সংকটে বন্ধ হয়ে গেছে। এটা আমাদের জন্য খুবই কষ্টদায়ক। তবে এ সময়ে আমরা বসে না থেকে কেন্দ্রের মেইনটেনেন্সের কাজটি করে ফেলব, যাতে দীর্ঘদিন আর মেইনটেনেন্স করা না লাগে।’
কেন্দ্রটি বন্ধের ফলে কী পরিমাণ আর্থিক ক্ষতি হবে তা জানতে চাইলে প্ল্যান্ট ম্যানেজার শাহ আবদুল মওলা দেশ রূপান্তরকে বলেন ‘আমরা এমনিতেই বকেয়া বিল পাচ্ছি না। এটাই বড় ক্ষতি। অন্যান্য ক্ষতির পাশাপাশি কেন্দ্রটি বন্ধের কারণে সাশ্রয়ী দামে দেশের মানুষ বিদ্যুৎ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হবে। এ কেন্দ্র থেকে প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ সাড়ে ৫ থেকে ৬ টাকা দরে বিক্রি করা হচ্ছে। সাশ্রয়ী দামে বিদ্যুৎ দিতে না পেরে কমফোর্ড ফিল করছি না।’
জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. ইজাজ হোসেন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘কেন্দ্র ভাড়ার পাশাপাশি লোডশেডিংয়ে মানুষের ভোগান্তি এবং কারখানার উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার বিষয়টি বিবেচনায় নিলেও এ ক্ষতির পরিমাণ অপূরণীয়। আর লোডশেডিং না দিয়ে সরকার যদি বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে চায়, তাহলে তেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র চালানো ছাড়া কোনো উপায় নেই এই মুহূর্তে। সে ক্ষেত্রে প্রতি ইউনিটে ৪ টাকার ওপর লোকসান হবে।’ তিনি বলেন, ‘ডলার ছাড় ঠিকই হচ্ছে। কিন্তু কেন্দ্রটি বন্ধ হওয়ার আগেই ডলার ছাড় করা উচিত ছিল। এতে বিরাট ক্ষতি হলো। এ ক্ষেত্রে দুটো বিষয় হতে পারে। একটি হলো যারা ডলার ছাড় করছেন তারা বিদ্যুৎ খাতের গুরুত্ব বুঝতে পারছেন না অথবা দেশের পরিস্থিতি আসলেই ভয়াবহ। তবে দেশের উন্নয়নে বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতকে অবশ্যই প্রাধান্য দেওয়া উচিত।’
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র জাকির হোসেন চৌধুরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রের ডলার ব্যবস্থা করার দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের। আর বাংলাদেশ ব্যাংককে রিজার্ভ থেকে ডলার দেওয়া হয় ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা মেনে। এ ক্ষেত্রে খাতের গুরুত্ব বুঝে ডলার ছাড় করা হয়। তবে দেশের প্রয়োজনে ডলার ছাড় করার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের কোনো ধরনের গাফিলতি নেই।’
সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার খুকনি ইউনিয়নের ব্রাহ্মণগ্রাম থেকে আরকান্দি গ্রাম পর্যন্ত এক কিলোমিটার যমুনা নদীর ভাঙ্গণ এলাকার পাশ থেকে ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। এ কারণে ভাঙ্গণ এলাকায় হাজার হাজার বালুর বস্তা ডাম্পিং করেও ভাঙ্গণরোধ করা যাচ্ছে না। ফলে সরকারের কোটি কোটি টাকা এ বাবদ খরচ হলেও কোনো কাজেই আসছে না বালুর বস্তা ডাম্পিং করে।
অপরদিকে অব্যাহত ভাঙ্গণের তাণ্ডবে প্রতিদিনই নদীগর্ভে বাড়িঘর বিলিন হয়ে যাওয়ায় এ এলাকার মানুষ গৃহহীন হয়ে খোলা আকাশের নিচে বাস করছে ও মানবেতর জীবন-যাপন করছে।
এ বিষয়ে ব্রাহ্মণগ্রামের নাজমা খাতুন আব্দুল কাদের, ইয়াহিয়া, জহুরুল ইসলাম, এমদাদুল হক মিলন, আরকান্দি গ্রামের মেহেদী হাসান, হালিমা খাতুন ও রেমান সরকার বলেন, গত ২ সপ্তাহ ধরে এখানে ব্যাপক ভাঙ্গণ শুরু হয়েছে। এই ভাঙ্গণের তাণ্ডবে এ পর্যন্ত অর্ধশতাধিক বাড়িঘর ও বহু গাছপালা নদীগর্ভে বিলিন হয়ে গেছে। এ ভাঙ্গণের তাণ্ডবে গৃহহারা হয়ে শত শত মানুষ অন্যত্র চলে গেছে। অনেকে আবার খোলাস্থানে ছাপড়া তুলে বাস করছে ও মানবেতর জীবন যাপন করছে।
তারা আরও বলেন, গত কয়েকদিন ধরে সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড এ ভাঙ্গণ এলাকায় বালুর বস্তা ফেলার কাজ শুরু করেছে। কিন্তু ঠিকাদারের লোকজন ধীরগতিতে কাজ করায় তা কোনো কাজেই আসছে না। যেসব স্থানে বস্তা ফেলা হচ্ছে দুই দিন না যেতেই সেখানে আবার ভাঙ্গণ দেখা দিচ্ছে। এলাকাবাসীর অভিযোগ ভাঙ্গণ এলাকার ৫০ থেকে ১০০ গজ দূরে ড্রেজার বসিয়ে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। ফলে বস্তা ফেলার কয়েকদিন না যেতেই ওই এলাকায় আবারও ভাঙ্গণ দেখা দিচ্ছে। এতে সরকারের কোটি কোটি টাকা লোপাট হলেও ভাঙ্গণ রোধ হচ্ছে না।
তারা আরও বলেন, শুষ্ক মৌসুমে বস্তা ফেলার কাজ না করে পানি বৃদ্ধি শুরু হয়ে যখন ব্যাপক ভাঙ্গণ শুরু হয়েছে, তখন ঠিকাদারের লোকজন ধীরগতিতে ২/৪ নৌকা বস্তা ফেলে চলে যায়। ২-৩ দিন না যেতেই তা আবার ভেঙ্গে যমুনায় বিলিন হয়ে যায়। ফলে এ বস্তা ফেলা কোনো কাজেই আসছে না। অপরদিকে ঠিকাদারকে বালু সরবরাহের নামে এলাকার কয়েকজন প্রভাবশালী ব্যক্তি প্রতিদিন ১৫/২০ ট্রলারে করে বালু অন্যত্র বিক্রি করছে। ফলে এ ভাঙ্গণের তাণ্ডব আরও ব্যাপক আকার ধারণ করেছে।
এ বিষয়ে বালু সরবরাহকারী খোরশেদ আলম, জয়নাল সরকার ও ফজলু ব্যাপারী এলাকাবাসীর এ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন করে অন্যত্র বিক্রি করা হচ্ছে না। ঠিকাদারের লোকজন বালু উত্তোলন করে তা বস্তায় ভরে ভাঙ্গণ স্থানে ফেলছে। আমরা শুধু তাদের কাজে সহযোগিতা করছি। একটি কুচক্রিমহল ষড়যন্ত্রমূলক ভাবে আমাদের নামে মিথ্যা অপপ্রচার করছে।
এ বিষয়ে জানতে ঠিকাদার আব্দুর রাজ্জাকের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ না করায় তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
এ বিষয়ে শাহজাদপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাদিয়া আফরিন বলেন, নদীভাঙ্গণ রোধে পানি উন্নয়ন বোর্ড বস্তা ফেলার কাজ শুরু করেছে। অচিরেই এ সমস্যা আর থাকবে না।
ভাঙ্গণ এলাকার অদূরে যমুনা নদী থেকে ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন করে অন্যত্র বিক্রির বিষয়ে শাহজাদপুর উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) লিয়াকত সালমান বলেন, এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে খুকনি ইউনিয়ন ভূমি অফিসের নায়েবকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মাহবুবুর রহমানের মোবাইল ফোনে কল করা হলে ফোনটি বন্ধ থাকায় তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
মূল্যস্ফীতি নিয়ে অস্বস্তিতে ছিল বিশ্বের প্রায় সব দেশই। অধিকাংশ দেশই তাদের মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে এসেছে। প্রতিবেশী ভারত ও শ্রীলঙ্কার নিয়ন্ত্রণহীন মূল্যস্ফীতির কথা প্রায় সবারই জানা, তারাও ইতিমধ্যে তাদের মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের মধ্যে নিয়ে এসেছে। তবে ব্যতিক্রম শুধু বাংলাদেশ। কোনোভাবেই নিত্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে আনতে পারছে না সরকার। ফলাফল ভোক্তা মূল্যসূচকে (সিপিআই) বা মূল্যস্ফীতিতে ১২ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ রেকর্ড। মে মাসে মূল্যস্ফীতি বেড়ে ৯ দশমিক ৯৪ শতাংশ। গতকাল সোমবার বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) সিপিআই ইনডেক্সে এ হালনাগাদ তথ্য প্রকাশ করে।
গত ১ জুন ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট ঘোষণা করে সরকার। এ বাজেটের মূল কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল আগামী অর্থবছরে সরকার কীভাবে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করবে। কিন্তু মূল্যস্ফীতি কমানোর জন্য বাজেট প্রস্তাবে কোনো পদক্ষেপ না থাকলেও লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৬ শতাংশের মধ্যে রাখার। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি পরাবাস্তব বাজেট। মূল্যস্ফীতি ৬ শতাংশের মধ্যে রাখা আসলে সম্ভব নয়। গত ১১ মাসে দেশের গড় মূল্যস্ফীতি ৮ দশমিক ৮৪ শতাংশ।
হালনাগাদ তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, মে মাসে মূল্যস্ফীতি বেড়ে ৯ দশমিক ৯৪ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। এর আগে ২০১১ সালের মে মাসে সর্বোচ্চ মূল্যস্ফীতি ছিল ১০ দশমিক ২০ শতাংশ। সে হিসাবে মূল্যস্ফীতি ১২ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। যদিও চলতি অর্থবছরের ১১ মাসে গড় মূল্যস্ফীতি প্রায় ৯ শতাংশ।
মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়ার অর্থ হলো, আগের বছরের মে মাসে যে পণ্য গড়ে ১০০ টাকা কিনতে হয়েছে, এ বছরের মে মাসে তা কিনতে হচ্ছে গড়ে ১০৯ টাকা ৯৪ পয়সায়। আরও পরিষ্কারভাবে বললে, ধরুন আগের বছরের একই সময়ে ৫০০ টাকার একটি নোটে কোনো ব্যক্তি পাঁচটি পণ্য কিনতে পেরেছিলেন। এ বছরের একই সময়ে মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়ায় এখন একই টাকায় তিনটি পণ্য কিনতে পারছেন। অর্থাৎ মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়ায় মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমে যায়।
খাদ্যে মূল্যস্ফীতি ১ বছরে বেড়েছে ১১.৩২ শতাংশ : ২০২২ সালের মে মাসে খাদ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৮ দশমিক ৩০ শতাংশ, অথচ এ বছরের মে মাসে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক ২৪ শতাংশে। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে মূল্যস্ফীতির হার বেড়েছে ১১ দশমিক ৩২ শতাংশ। এ বছরের এপ্রিল মাসেও খাদ্যে মূল্যস্ফীতি ছিল ৮ দশমিক ০৪ শতাংশ।
খাদ্যবহির্ভূত পণ্যে এক বছরে মূল্যস্ফীতি বেড়েছে ৬৪ শতাংশ : বিবিএসের তথ্য বলছে, সদ্য শেষ হওয়া মে মাসে খাদ্যবহির্ভূত পণ্যের মূল্যস্ফীতি বেড়ে ৯ দশমিক ৯৬ শতাংশ হয়েছে। ২০২২ সালের মে মাসে খাদ্যবহির্ভূত পণ্যের মূল্যস্ফীতি ছিল ৬ দশমিক ০৮ শতাংশ। অর্থাৎ বছরের ব্যবধানে খাদ্যবহির্ভূত পণ্যের মূল্যস্ফীতি বেড়েছে ৬৩ দশমিক ৮২ শতাংশ বা ৬৪ শতাংশ।
গ্রামের চেয়ে শহরের মূল্যস্ফীতি বেশি : এক বছর আগেও শহরের মূল্যস্ফীতি গ্রামের চেয়ে কম ছিল। কারণ গ্রামের চেয়ে শহরে পণ্য মজুদের আধুনিক ব্যবস্থা আছে। তবে সরকারি উদ্যোগে শহরের মতো গ্রামেও কিছু স্থানে খাদ্যগুদামের ব্যবস্থা তৈরি হওয়ায় এখন শহরের তুলনায় গ্রামে মূল্যস্ফীতি কমেছে। মে মাসে শহর এলাকায় গড় মূল্যস্ফীতি ছিল ৯ দশমিক ৯৭ শতাংশ, একই সময়ে গ্রামে মূল্যস্ফীতি ৯ দশমিক ৮৫ শতাংশ।
বিশ্বে কমেছে মূল্যস্ফীতি, বাংলাদেশে বাড়ছে : গত শনিবার মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্সের (এমসিসিআই) বাজেট-পরবর্তী আলোচনায় বিশ্বব্যাংকের সাবেক অর্থনীতিবিদ ও পলিসি রিসার্স ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) ভাইস চেয়ারম্যান সাদিক আহমেদ মূল্যস্ফীতি ইস্যুতে বলেন, বিশ্বের প্রায় সব দেশ সফলভাবে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে এনেছে। শুধু বাংলাদেশ এ ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম। উদাহরণ হিসেবে তিনি উল্লেখ করেন, থাইল্যান্ডে ২০২২ সালের জুনে মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৭ দশমিক ৭ শতাংশ, গত এপ্রিলে তা নেমে এসেছে ২ দশমিক ৭ শতাংশে। অর্থাৎ আগের তুলনায় দেশটিতে মূল্যস্ফীতি কমেছে ৬৫ শতাংশ। যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশে ২০২২ সালের জুনে মূল্যস্ফীতি ছিল ৯ দশমিক ১ শতাংশ। সেখান থেকে ৪৬ শতাংশ মূল্যস্ফীতি কমিয়ে ৪ দশমিক ৯ শতাংশে আনতে সক্ষম হয়েছে তারা। ইউরোপীয় ইউনিয়নের গত অক্টোবর মাসের মূল্যস্ফীতি ছিল ১০ দশমিক ৬ শতাংশ, সেখান থেকে ৩৪ শতাংশ কমিয়ে ৭ শতাংশে আনতে সক্ষম হয়েছে ইইউ।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে নীতি সুদহার বাড়িয়ে দিয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের জন্য নীতি সুদহার বাড়িয়ে দেয়। তবে বাংলাদেশ এ ধরনের সংকট মোকাবিলায় শুরুর দিকে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। উল্টো গত বছর আগস্টে এক ঘোষণাতেই জ্বালানি তেলের দাম ৫১ শতাংশ বাড়ানো হয়। ওই মাসেই মূল্যস্ফীতি বেড়ে ৯ দশমিক ৫২ শতাংশে দাঁড়িয়েছিল। বাংলাদেশ দেরিতে হলেও নীতি সুদহার বাড়িয়েছে। বর্তমানে এ সুদহার ৬ দশমিক ২ শতাংশ। তবে নীতি সুদহার বাড়িয়েও মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়েছে সরকার।
মূল্যস্ফীতি নিয়ে আভাস দিয়ে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল দাবি করেছে, বিশে^র দেশে দেশে মূল্যস্ফীতির যে হার, তা সামষ্টিক অর্থনীতির জন্য হুমকি। মূল্যস্ফীতির এই হার ১২ বছর বা এক যুগের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় ২০০৭-০৮ সালে বিশ্ববাজারে সব ধরনের পণ্যের দাম বাড়ায় মূল্যস্ফীতি বাড়তে বাড়তে ১৪ শতাংশ ছাড়িয়ে গিয়েছিল।
২০০৯ সালের প্রথম দিকে আওয়ামী লীগ সরকার যখন দায়িত্ব নেয়, তখনো মূল্যস্ফীতি ১০ শতাংশের ওপর ছিল। পরে অবশ্য তা কমতে কমতে সহনীয় পর্যায়ে নেমে আসে। দীর্ঘদিন ৫ থেকে ৬ শতাংশের মধ্যে ওঠানামা করেছে।
৩০ জুন শেষ হতে যাওয়া ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে সার্বিক মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৭ দশমিক ৪৮ শতাংশ। ঠিক এরকম এক সময়ে গত বছর ৫ আগস্ট সরকার জ্বালানি তেলের দাম ৪২ থেকে ৫১ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ায়। এর পরপরই বাড়ানো হয় সব ধরনের পরিবহন ভাড়া। এ দুইয়ের প্রভাবে বেড়ে যায় প্রায় সব পণ্যের দাম। ফলে পরের মাস আগস্টে মূল্যস্ফীতি এক লাফে বেড়ে ৯ দশমিক ৫২ শতাংশে ওঠে।
যদিও সেপ্টেম্বর থেকে তা কমতে থাকে। ওই মাসে মূল্যস্ফীতি কমে ৯ দশমিক ১০ শতাংশে আসে। জানুয়ারিতে তা আরও কমে ৮ দশমিক ৫৭ শতাংশে নেমে আসে। তবে রোজাকে সামনে রেখে নিত্যপণ্যের দাম বাড়তে থাকায় বাড়তে থাকে মূল্যস্ফীতি। ফেব্রুয়ারি মাসে তা বেড়ে হয় ৮ দশমিক ৭৮ শতাংশ। মার্চ মাসে হয় ৯ দশমিক ৩৩ শতাংশ। এপ্রিলে তা সামান্য কমে ৯ দশমিক ২৪ শতাংশে নেমে এসেছিল।
মজুরি সূচক বেড়েছে : বিবিএসের তথ্য বলছে, গত কয়েক মাস ধরেই মজুরি সূচক অল্প অল্প করে বাড়ছে। অক্টোবরে এ হার ছিল ৬ দশমিক ৯১ শতাংশ। যা মে মাসে এসে দাঁড়ায় ৭ দশমিক ৩২ শতাংশে।
দেশের একমাত্র পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্র রাঙামাটির কাপ্তাইয়ে হাইড্রোলিক পাওয়ার স্টেশনে তীব্র পানির সংকটে বিদ্যুৎ উৎপাদন সর্বনিম্ন পর্যায়ে পৌঁছেছে। অনাবৃষ্টি এবং তীব্র তাপদাহে কাপ্তাই হ্রদের পানি শুকিয়ে যাওয়ার ফলে এই সংকট দেখা দিয়েছে। ৫টি ইউনিটের মধ্যে কোনরকমে মাত্র ১টি ইউনিট সচল রেখে সর্বনিম্ন ২৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে।
মঙ্গলবার (৬ জুন) সকালে কাপ্তাই পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক এটিএম আবদুজ্জাহের জানান, হ্রদের পানি কমে যাওয়ায় কাপ্তাই পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্রে বিদ্যুৎ উৎপাদন অনেকটা ব্যাহত হচ্ছে।
তিনি জানান, পানির অভাবে কেন্দ্রের সব ক’টি ইউনিট সচল রাখা সম্ভব হচ্ছে না। এতে বিদ্যুৎ উৎপাদন সর্বনিম্ন পর্যায়ে ঠেকেছে। তিনি আরও জানান, কেন্দ্রের ৫টি ইউনিটের মধ্যে বর্তমানে ১ নম্বর ইউনিটটি চালু রাখা হয়েছে। এই ইউনিট হতে মাত্র ২৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে। অথচ এই কেন্দ্রের পাঁচটি ইউনিট সচল থাকলে প্রায় ২৪২ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করে জাতীয় গ্রিডে পাঠানো হয়। সেখানে এখন বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে মাত্র ২৫ মেগাওয়াট।
এটিএম আব্দুজ্জাহের বলেন, বছরের এই সময়ে কখনই পানি এতো নিচে থাকে না। এ বছর এখনো বৃষ্টিপাত শুরু না হওয়ায় খুবই বিপাকে পড়তে হয়েছে আমাদের। বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য মাত্র একটি ইউনিট চালু আছে। আমরাও বৃষ্টির দিকে তাকিয়ে আছি।
কাপ্তাই বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কন্ট্রোল রুমের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে দায়িত্বরত প্রকৌশলী জানান, গত মঙ্গলবার সকাল ১০টা পর্যন্ত কাপ্তাই হ্রদের পানির পরিমাণ ৭৩ দশমিক ৬২ ফুট (মিন সি লেভেল) ছিল। রুলকার্ভ অনুযায়ী এসময় হ্রদে পানি থাকার কথা ৭৮ দশমিক ২০ ফুট এমএসএল (মিন সি লেভেল)। পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রচুর বৃষ্টিপাত না হলে এই সংকট হতে উত্তরণ সম্ভব নয় বলে জানান প্রকৌশলীরা।
সংশ্লিষ্টরা আরও জানায়, অনাবৃষ্টি, বন উজার হওয়া, কাপ্তাই হ্রদে নাব্যতা সংকটের কারণে পানি তলানিতে চলে যাওয়ায় বিদ্যুৎ উৎপাদনে এমন বিপর্যয় ঘটেছে। সঙ্গতকারণে গ্রাহকদের চাহিদা মেটাতে হিমশিম খাচ্ছে কর্তৃপক্ষ।
এদিকে পানি কমে যাওয়ার ফলে শুধুমাত্র বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে তা নয়, কাপ্তাই হ্রদের ওপর নির্ভরশীল বহু মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়েছে। হ্রদের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কয়েকটি উপজেলার সাথে নৌপথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। ফলে মানুষের দুর্ভোগও বৃদ্ধি পাচ্ছে।
কাপ্তাই হ্রদের পাশে বসবাসকারী নুরুল ইসলাম জানান, ভারী বৃষ্টিপাত না হলে হ্রদে পানি বাড়ার সম্ভাবনা নেই। তাই দ্রুত সময়ে কাপ্তাই হ্রদে ড্রেজিং করা প্রয়োজন। ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে কাপ্তাই হ্রদের গভীরতা যেমন বাড়বে তেমনি এই সমস্যা থেকে কিছুটা সমাধান পাওয়া যাবে।
বিলাইছড়ি বাজারের ব্যবসায়ী ইসমাঈল হোসেন জানান, বিলাইছড়িতে নৌপথ বন্ধ মানেই জীবন ও জীবিকার দুর্বিষহ অবস্থা। আমরা বিলাইছড়িবাসীই সম্ভবত সবচেয়ে বেশি কষ্ট পাচ্ছি হ্রদের পানি কমে যাওয়ায়। বৃষ্টি হতে যত দেরি হবে আমাদের কষ্ট তত বেশি দীর্ঘায়িত হবে।
তিনি বলেন, হ্রদের পানি অস্বাভাবিক কমে যাওয়ায় বাজারের পণ্য পরিবহন ব্যয় অনেক বেড়ে গেছে। বড় বোটতো আসতেই পারছে না, ছোট ছোট বোটে পণ্য পরিবহনে সময়ক্ষেপণ হচ্ছে, পর্যাপ্ত পণ্যও আনা যাচ্ছে না। আবার অনেক দূর থেকে পণ্য বাজারে তুলতে শ্রমিকদের বাড়তি মজুরি দিতে হচ্ছে। একই সঙ্গে সাপ্তাহিক বাজারও এখন ঠিকমতো জমছে না। কারণ দূর থেকে মানুষজন আসতে পারছে না। এখন বৃষ্টি হওয়া ছাড়া পানি বাড়ার তো আর কোনো সম্ভাবনা নেই।
নতুন অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে ১৩ ধরনের জ্বালানি তেল ও পেট্রোলিয়াম পণ্যের ওপর থেকে বিদ্যমান ৫ শতাংশ আগাম কর প্রত্যাহারের পরিকল্পনা করেছে সরকার। অন্যদিকে উৎপাদন পর্যায়ে তরল করা পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) ভ্যাট ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে সাড়ে ৭ শতাংশ করা হয়েছে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে পেট্রোল, অকটেন ও ডিজেল আমদানিতে প্রতি লিটারে ১৩ দশমিক ৭৫ টাকা করে শুল্ক আরোপ করার প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এ ছাড়া অন্যান্য জ্বালানি জেট ফুয়েল, ফার্নেস অয়েল, লুব বেইজ অয়েল, কেরোসিনের ক্ষেত্রে প্রতি টনে ২৫ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। এত দিন এসব জ্বালানি তেল আমদানির ক্ষেত্রে ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ ছিল।
আমদানি করা পণ্যের যথাযথ মূল্য নির্ধারণে ২০২২-২৩ অর্থবছরে পণ্যের ট্যারিফ মূল্য ও ন্যূনতম মূল্য নির্ধারণ-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনে পেট্রোলিয়াম ও এর উপজাত দুটি হেডিংয়ের আওতায় ১২টি এইচএস কোডের বিপরীতে ট্যারিফ মূল্য এবং একটি হেডিংয়ের আওতায় একটি এইচএস কোডের বিপরীতে ন্যূনতম মূল্য বহাল আছে।
পেট্রোলিয়াম ও এর উপজাতগুলোর মূল্য আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিনিয়ত ওঠানামা করার কারণে অতি প্রয়োজনীয় এই পণ্যের মূল্য স্থিতিশীল রাখতে এ সুপারিশ করা হয়েছে।
এলপিজি সিলিন্ডারের বিষয়ে বাজেট বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী বলেন, এলপিজি সিলিন্ডার তৈরির কাঁচামাল ইস্পাতের পাত (স্টিল শিট) ও ওয়েল্ডিংয়ের তার আমদানির করছাড় সুবিধা তুলে নেওয়া হয়েছে। এলপিজি সিলিন্ডার উৎপাদনকারীরা কাঁচামালে শুল্ককর ছাড় ১২ বছর ধরে ভোগ করে আসছে। তাই রাজস্ব আহরণের স্বার্থে শুধু দুটি উপকরণে ছাড় তুলে নেওয়া হয়েছে। তবে অন্যান্য করছাড়ের মেয়াদ ২০২৫ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত বহাল থাকবে বলে।
পেট্রোলিয়াম তেল এবং বিটুমিনাস খনিজ থেকে প্রাপ্ত তেলের ওপর বিদ্যমান শুল্ক ৫ শতাংশ। নতুন বাজেট অনুযায়ী এসবের প্রতি ব্যারেলের দাম ১ হাজার ১১৭ টাকা (লিটার প্রতি ৭.০২ টাকা) হতে পারে। প্রতি টন ফার্নেস অয়েলের সুনির্দিষ্ট শুল্ক ৯ হাজার ১০৮ টাকা (লিটার প্রতি ৯.১০ টাকা) করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের জন্য নতুন অর্থবছরে (২০২৩-২৪) ৩৪ হাজার ৮১৯ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। এর মধ্যে বিদ্যুৎ খাতে ৩৩ হাজার ৮২৫ কোটি ১০ লাখ টাকা এবং জ্বালানি খাতে ৯৯৪ কোটি ৩১ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করা নতুন বাজেটে এই বরাদ্দের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
চলতি অর্থবছরে (২০২২-২৩) বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতে বরাদ্দ ছিল ২৬ হাজার ৬৬ কোটি টাকা। পরবর্তী সময়ে সংশোধিত বাজেটে তা বেড়ে দাঁড়ায় ২৭ হাজার ৮৯ কোটি টাকা। অর্থাৎ নতুন অর্থবছরে এ খাতে বরাদ্দ বাড়ছে ৭ হাজার ৭৩০ কোটি টাকা।
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তাফা কামাল বাজেট বক্তৃতায় বলেন, উৎপাদন ও বিতরণ সক্ষমতা সম্প্রসারণের ফলে দেশের শতভাগ জনগোষ্ঠী বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় এসেছে। বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ২০০৯ সালে ৪ হাজার ৯৪২ মেগাওয়াট থেকে বর্তমানে ২৬ হাজার ৭০০ মেগাওয়াটে উন্নীত হয়েছে। জ্বালানির ব্যবহার বহুমুখীকরণের জন্য গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পাশাপাশি কয়লা, তরল জ্বালানি, দ্বৈত জ্বালানি, পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানিভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, রামপালে কয়লাভিত্তিক ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রকল্পের প্রথম ইউনিট ও পায়রা ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রকল্পে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হয়েছে। মাতারবাড়ীতে ১২০০ মেগাওয়াট আল্ট্রা-সুপার ক্রিটিক্যাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের কাজ চলছে। সরকারি-বেসরকারি যৌথ উদ্যোগে মোট ১২ হাজার ৯৪ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ৩৩টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণাধীন এবং ২ হাজার ৪১৬ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ১৭টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের চুক্তি প্রক্রিয়াধীন আছে। এছাড়া, ১০ হাজার ৪৪৩ মেগাওয়াট ক্ষমতার আরও ৩৪টি বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে।
মুস্তফা কামাল বলেন, ‘২০৪১ সালের মধ্যে পাশর্^বর্তী দেশগুলো থেকে প্রায় ৯ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির পরিকল্পনা রয়েছে। বর্তমানে ভারত থেকে ১১৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির পাশাপাশি ঝাড়খ-ে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ৭৪৮ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হয়েছে। নেপালের জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির চুক্তি চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। ভুটান থেকে বিদ্যুৎ আমদানির জন্য বাংলাদেশ, ভুটান ও ভারতের মধ্যে একটি ত্রিপক্ষীয় সমঝোতা স্মারক সই হতে যাচ্ছে শিগগিরই। তিনি বলেন, ‘সব মিলিয়ে আমরা ২০৩০ সালের মধ্যে ৪০ হাজার মেগাওয়াট এবং ২০৪১ সালের মধ্যে ৬০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন নিশ্চিত করতে পারব বলে আশা করছি।’
অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘সরকার ২০৩০ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ১০ শতাংশ নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। এছাড়া ২০৪১ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ৪০ শতাংশ পরিচ্ছন্ন জ্বালানি থেকে সংগ্রহ করতে চাই। এরসঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে, ৬০ লাখ সোলার সিস্টেম স্থাপনের মাধ্যমে অফ গ্রিড এলাকায় বসবাসকারী জনগণকে বিদ্যুৎ সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। কার্বন নিঃসরণ কমাতে ডিজেলচালিত পাম্পের জায়গায় সৌরচালিত পাম্প স্থাপন করার অংশ হিসেবে সেচকাজে ইতিমধ্যে ২ হাজার ৫৭০টি পাম্প স্থাপন করা হয়েছে। বর্তমানে নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে ৮৯৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে। সর্বোপরি, রাশিয়ার সহায়তায় রূপপুরে ২৪০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে।’
উৎপাদিত বিদ্যুৎ জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে গত ১৪ বছরে ৬ হাজার ৬৪৪ সার্কিট কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন স্থাপন করা হয়েছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, সঞ্চালন লাইন ১৪ হাজার ৬৪৪ কিলোমিটারে উন্নীত হয়েছে। এছাড়া বিতরণ লাইন ৩ লাখ ৬৯ হাজার থেকে ৬ লাখ ৬৯ হাজার কিলোমিটারে বৃদ্ধি করা হয়েছে। বিদ্যুতের সিস্টেমলস ১৪ শতাংশ থেকে নেমে এসেছে ৭ দশমিক ৭ শতাংশে। ২০৩০ সালের মধ্যে সঞ্চালন লাইনের পরিমাণ ২৮ হাজার কিলোমিটারে সম্প্রসারিত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিদ্যুতের অপব্যবহার রোধের লক্ষ্যে গত ৫ বছরে প্রায় ৫৩ লাখ প্রি-পেইড স্মার্ট মিটার স্থাপন করা হয়েছে।
অর্থমন্ত্রী কামাল বলেন, ২০০৯ সালের তুলনায়, জ্বালানি তেলের মজুদ ক্ষমতা ৮ লাখ ৯৪ হাজার মেট্রিক টন থেকে বৃদ্ধি করে ২০২১-২২ অর্থবছরে ১৩ লাখ ৬০ হাজার টন করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে এই মজুদ ক্ষমতা ৩০ দিনের পরিবর্তে ৬০ দিনে বাড়ানোর বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি উদ্বোধন করা ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী পাইপলাইনের মাধ্যমে আমদানি করা জ্বালানি তেল (ডিজেল) দেশের উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলায় এবং সৈয়দপুরে ১৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রে সরবরাহ করা সম্ভব হবে।
তিনি বলেন, ‘একমাত্র তেল শোধনাগার ইস্টার্ন রিফাইনারির পরিশোধন ক্ষমতা ১৫ লাখ টন থেকে ৪৫ লাখ টনে উন্নীত করার চেষ্টা চলছে। পায়রা সমুদ্রবন্দর এলাকায় একটি বৃহৎ সমন্বিত তেল শোধনাগার স্টোরেজ ট্যাংক নির্মাণের সিদ্ধান্ত আছে। সম্প্রতি ভোলার ইলিশা গ্যাসক্ষেত্রে প্রায় ২০০ বিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের মজুদ আবিষ্কৃত হয়েছে। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার সময় প্রতিদিন গ্যাসের উৎপাদন ছিল ১ হাজার ৭৪৪ মিলিয়ন ঘনফুট, যা বেড়ে হয়েছে প্রায় ২ হাজার ৩০০ মিলিয়ন ঘনফুট। তেল ও গ্যাস অনুসন্ধান কোম্পানি বাপেক্সের সক্ষমতা বাড়ানোর পর দৈনিক গ্যাস উৎপাদন ৯৮৪ মিলিয়ন ঘনফুট বেড়েছে। ২০২৪ সালের মধ্যে আরও ৪৬টি কূপ খনন করা হবে। এতে অতিরিক্ত ৬১৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস জাতীয় গ্রিডে যোগ হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
মুস্তাফা কামাল বলেন, ‘সমুদ্রে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য বিপুল বিনিয়োগ প্রয়োজন হওয়ায় আমরা বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিচ্ছি। ক্রমবর্ধমান জ্বালানির চাহিদা মেটাতে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস আমদানি এবং স্পট মার্কেট থেকেও কেনা হচ্ছে। এছাড়া কক্সবাজারের মাতারবাড়ীতে প্রতিদিন ১ হাজার মিলিয়ন ঘনফুট ক্ষমতাসম্পন্ন ল্যান্ড বেইজড এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।’
বাজেট বক্তৃতায় আরও বলা হয়, ২০০৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত ১ হাজার ১৫৮ কিলোমিটার গ্যাস সঞ্চালন পাইপলাইন নির্মাণ করা হয়েছে। বর্তমানে দেশের উত্তরাঞ্চল ও অন্যান্য এলাকায় ২১৪ কিলোমিটার পাইপলাইন নির্মাণের কাজ চলছে। ২০২৬ সালের মধ্যে পায়রা ও ভোলা থেকে গ্যাস সঞ্চালনের জন্য আরও ৪২৫ কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। গ্যাসের সরবরাহ বাড়ানোর পাশাপাশি অপচয় রোধে প্রি-পেইড মিটার স্থাপনের কাজও চলছে।
চলতি অর্থবছরের চেয়ে আগামী অর্থবছরের সামগ্রিক বাজেট আকারে ১২ দশমিক ৩৪ শতাংশ বড় হলেও আগামী বছরের শিক্ষা-বাজেট দশমিক ৪৪ শতাংশ কমেছে। তবে টাকার অঙ্কে শিক্ষার দুই মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দ ৬ হাজার ৭১৩ কোটি টাকা বেড়েছে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরে শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাতে মোট বাজেটের ১৩ দশমিক ৭ শতাংশ বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। শুধু শিক্ষা খাত হিসাব করলে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা এবং মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষায় বরাদ্দ ১১ দশমিক ৫৭ শতাংশ। টাকার অঙ্কে তা ৮৮ হাজার ১৬২ কোটি। চলতি অর্থবছরে শিক্ষায় বরাদ্দ ছিল ১২ দশমিক ০১ শতাংশ বা ৮১ হাজার ৪৪৯ কোটি টাকা।
ইউনেস্কো, শিক্ষাবিদ বা অংশীজনরা অনেক দিন ধরেই শিক্ষায় জিডিপির কমপক্ষে ৪ শতাংশ বরাদ্দের কথা বলছেন। এটাকে তারা বরাদ্দ হিসেবে না দেখে আগামী দিনের বিনিয়োগ হিসেবে দেখতে বলছেন। গত কয়েক বছর ধরে শিক্ষায় বরাদ্দ ১২ শতাংশের আশপাশে ঘুরপাক খাচ্ছিল। জিডিপির হিসাবে তা ছিল ২ শতাংশের কাছাকাছি। চলতি অর্থবছরে শিক্ষা খাতে মোট বরাদ্দ জিডিপির ১ দশমিক ৮৩ শতাংশ, ২০২১-২২ অর্থবছরে ছিল ২ দশমিক ০৮ শতাংশ। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে তা কমে দাঁড়াচ্ছে জিডিপির ১ দশমিক ৭৬ শতাংশ।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধূরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আগামী বাজেটে যে লক্ষ্য ধরা হয়েছে, তার সঙ্গে শিক্ষায় বরাদ্দের সংগতি নেই। বাজেটে স্মার্ট বাংলাদেশের কথা বলা হয়েছে। এজন্য দক্ষ ও শিক্ষিত জনগোষ্ঠী প্রয়োজন। কিন্তু এ জনগোষ্ঠী তৈরির জন্য প্রয়োজন শিক্ষা খাতে বিনিয়োগ। বরাবরের মতো এবারও শুভংকরের ফাঁকি লক্ষ করছি। শিক্ষার সঙ্গে প্রযুক্তি মিলিয়ে আকার বড় করা হলেও চলতি অর্থবছরের চেয়েও বরাদ্দ কমেছে। নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নেও বাজেটে দিকনির্দেশনা দেখছি না।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ড. ছিদ্দিকুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘শিক্ষায় জিডিপির ২ শতাংশের নিচে বরাদ্দ কাক্সিক্ষত নয়। আগামী অর্থবছরে অন্তত ১৪ থেকে ১৫ শতাংশ বরাদ্দ দিলে ভালো হতো। কারিগরি ও ভোকেশনাল শিক্ষায় আরও বেশি নজর দেওয়া উচিত ছিল। সেটা আগামী অর্থবছরের বাজেটে দেখা যায়নি।’
তিনি বলেন, ‘আগামী বছরের বাজেটে মিড ডে মিলের জন্য বরাদ্দ রাখার কথা বলা হয়েছে, যা খুবই ভালো। যোগ্য শিক্ষক নিয়োগ ও তাদের যথাযথ প্রশিক্ষণে জোর দিতে হবে। শিক্ষায় বরাদ্দের সঠিক ব্যবহারের বিষয়ে গুরুত্ব দিতে হবে।’
আগামী অর্থবছরে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জন্য ৩৪ হাজার ৭২২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরে তা ছিল ৩১ হাজার ৭৬১ কোটি টাকা। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের জন্য ৪২ হাজার ৮৩৮ কোটি এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের জন্য ১০ হাজার ৬০২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের জন্য ৩৯ হাজার ৯৬১ কোটি এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের জন্য ৯ হাজার ৭২৭ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছিল সরকার।
বাজেট ঘিরে প্রতি বছরই বেসরকারি শিক্ষকদের অন্যতম দাবি থাকে শিক্ষাব্যবস্থার জাতীয়করণ, এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের পূর্ণাঙ্গ বাড়ি ভাড়া ও শতভাগ উৎসব-ভাতা প্রদান। নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তকরণের প্রক্রিয়া চলমান রাখাও তাদের অন্যতম দাবি। কিন্তু সেসব বিষয়ে বাজেটে স্পষ্ট কিছু উল্লেখ নেই। তবে এমপিওভুক্তির জন্য মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগে আগামী অর্থবছরে ৩০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে বলে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।
দুই দশকেরও বেশি ক্যারিয়ারে অসংখ্য নাটক-টেলিছবি নির্মাণ করেছেন শিহাব শাহীন, উপহার দিয়েছেন হিট প্রোডাকশন। নিজেকে শুধু রোমান্টিক জনরায় আটকে না রেখে কাজ করেছেন বহুমাত্রিক ঘরানায়। নিজেকে প্রমাণ করেছেন সব্যসাচী নির্মাতা হিসেবে। নিজেকে শুধু টেলিভিশনেই আটকে রাখেননি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তিনিও পাল্টেছেন প্লাটফর্ম এবং সেখানেও দেখিয়েছেন নিজের মুন্সিয়ানা।
সর্বশেষ গেল ঈদে তুমুল সাড়া ফেলেছে তার নির্মিত স্পিন অফ সিরিজ ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’। সাফল্যের পর কিছুদিন আগেই অনুষ্ঠিত হয়ে গেল এর সাকসেস পার্টি যেখানে উপস্থিত ছিলেন টিমের কলাকুশলী থেকে শুরু করে অন্যান্য নির্মাতা ও শিল্পীরা। সেই ধারাবাহিকতায় এবার তিনি নিয়ে আসছেন সিরিজটির সিক্যুয়াল। শুধু তাই নয়, একসঙ্গে একাধিক সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে আসছেন জনপ্রিয় নির্মাতা।
শিহাব শাহীন বলেন, ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’ নিয়ে এতটা প্রত্যাশা ছিল না কিন্তু সে সাড়া পেয়েছি তা প্রত্যাশার চেয়েও বেশি। দর্শকরাই কাজটিকে গ্রহণ করেছেন আর তাই এখন এর সিক্যুয়াল নিয়ে আসার পরিকল্পনা করছি। স্পিন অফে দেখিয়েছি অ্যালেন স্বপনের পেছনের গল্প। সিন্ডিকেটে তাকে আমরা দেখিয়েছিলাম ২০২২ সালে, সে ঢাকায় আসার পর এর মাঝের সময়টার গল্পই থাকবে সিক্যুয়ালে। যেটার সংযোগ থাকতে পারে ‘সিন্ডিকেট ২’-তে। ঈদের পরপর এটার শুট করার সম্ভাবনা রয়েছে।
এই সিক্যুয়াল ছাড়াও আরও বেশ কিছু সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে সবকিছু চূড়ান্ত হয়েছে বলেও জানান এ নির্মাতা। তিনি বলেন, মোস্তফা সরয়ার ফারুকির তত্ত্বাবধানে ওটিটি প্লাটফর্ম চরকির ‘মিনিস্ট্রি অফ লাভ’ সিরিজের একটা কনটেন্ট করবো। এখনও কাস্টিং চূড়ান্ত হয়নি। এছাড়া হইচইয়ের একটি সিরিজ ও বিঞ্জের একটি ফিল্ম করা হবে। নাম চূড়ান্ত হয়নি। তবে দুটোতেই জিয়াউল ফারুক অপূর্ব থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
মাঝে শোনা গিয়েছিল, আফরান নিশোকে নিয়ে ‘সিন্ডিকেট ২’ নাকি হবে না, এটা কতটুকু সত্য? এমন প্রশ্নে শিহাব শাহীন বলেন, এটা ভূয়া তথ্য। ডিসেম্বরের শেষ দিকে ‘সিন্ডিকেট ২’ করবো তার আগে সেপ্টেম্বরে শুরু করবো ‘রসু খাঁ’।
জানা গেছে, আগামী সপ্তাহে অস্ট্রেলিয়া পাড়ি জমাচ্ছেন শিহাব শাহীন। দেশে ফিরবেন মাসের শেষ নাগাদ এরপর কাজে নামবেন।
স্বাস্থ্য খাতে চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটের চেয়ে আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে বরাদ্দ বেড়েছে। প্রস্তাবিত বাজেটে এই খাতে এবার বরাদ্দ ১ হাজার ১৮৯ কোটি টাকা বা ৩ দশমিক ২২ শতাংশ বাড়লেও মোট বাজেটের তুলনায় তা কমেছে শূন্য দশমিক ৪ শতাংশ। চলতি অর্থবছরে খাতটিতে বরাদ্দ ছিল মোট বাজেটের ৫ দশমিক ৪ শতাংশ। আগামী বাজেটে তা ৫ শতাংশে নেমে এসেছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে জাতীয় সংসদে ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেট পেশ করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। বাজেটে স্বাস্থ্যসেবা এবং স্বাস্থ্য-শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ খাতে ৩৮ হাজার ৫২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করেন। ২০২২-২৩ অর্থবছরে সংশোধিত বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ ছিল ৩৬ হাজার ৮৬৩ কোটি টাকা।
প্রস্তাবিত বাজেটে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে ২৯ হাজার ৪৩১ কোটি টাকা, যা আগের বছরের তুলনায় মাত্র ১৫০ কোটি টাকা বেশি। এর মধ্যে পরিচালন ব্যয় ১৭ হাজার ২২১ কোটি টাকা ও উন্নয়ন ব্যয় ১২ হাজার ২১০ কোটি টাকা। এছাড়া স্বাস্থ্য-শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটে ৮ হাজার ৬২১ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এই বরাদ্দ থেকেই নতুন মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠার ব্যয় নির্বাহ করা হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক সৈয়দ আবদুল হামিদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, এবার টাকার অঙ্কে গত বছরের তুলনায় (বর্তমান ২০২২-২৩ অর্থবছর) ১ হাজার একশ কোটির মতো বেড়েছে। কিন্তু বাজেট শেয়ারে সেটা কমেছে। সামগ্রিক বাজেটের গ্রোথ বা বৃদ্ধি ১২ শতাংশ, কিন্তু স্বাস্থ্যের বাজেটের বৃদ্ধি ৩ শতাংশ। তারমানে রাষ্ট্রীয় বাজেটে স্বাস্থ্য খাতের গুরুত্ব কমেছে। সেই কারণে ৫ দশমিক ৪ শতাংশ থেকে ৫ শতাংশে নেমে এসেছে।
এই স্বাস্থ্য অর্থনীতিবিদ বলেন, এবার কমার যৌক্তিক কারণ আছে। সেটা হলো স্বাস্থ্য বিভাগের সেক্টর প্রোগ্রামে উন্নয়ন বাজেট থেকে অর্থ আসে। সেই সেক্টর প্রোগ্রাম এই অর্থবছরে শেষ হয়ে প্রস্তাবিত অর্থবছর থেকে নতুন সেক্টর প্রোগ্রাম শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু চলমান সেক্টর প্রোগ্রাম সময়মতো বাস্তবায়ন করতে না পারায় সেটার সময় আরও এক বছর বাড়ানো হয়েছে। এই এক বছরের জন্য নতুন বাজেট থাকে না, পুরনো বাজেট থেকেই ব্যয় করতে হয়। ফলে বরাদ্দ না বাড়িয়ে পাঁচ বছরের বাজেট যদি ছয় বছরে গিয়ে ঠেকে, তাহলে প্রতি বছর টাকা কমে যায়। মূলত এ কারণে এবার টাকা কমে গেছে।
সরকার স্বাস্থ্য খাতে এবারও কিছু থোক বরাদ্দ রাখতে পারত বলে মনে করেন স্বাস্থ্য অর্থনীতির এই শিক্ষক। তিনি বলেন, কভিড ছাড়াও আমাদের অনেক জরুরি খাত আছে। এখন ডেঙ্গু চলছে। এটি ইমার্জেন্সি হয়ে যাবে। ফলে এটার জন্য যে ফান্ড দেওয়া আছে হাসপাতালে, রোগী বাড়লে সেটা দিয়ে হবে না। এরকম ইমার্জেন্সি আরও আসতে পারে। এরকম একটা থোক বরাদ্দ রাখলে স্বাস্থ্যের ইমার্জেন্সিতে সেখান থেকে ব্যয় করা যেত। কিন্তু সেটাও নেই। তার মানে কভিডের শিক্ষা থেকে আমরা কিছুই শিখিনি। প্রস্তাবিত বাজেটে সেটার প্রতিফলন নেই।
সামগ্রিকভাবে বাজেটে রোগীদের স্বাস্থ্যসেবার খরচ বেড়ে যাবে বলেও মনে করছেন এই স্বাস্থ্য অর্থনীতিবিদ। তিনি বলেন, এতে স্বাস্থ্যসেবা ও ওষুধসহ সামগ্রিকভাবে স্বাস্থ্য খাত নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার যথেষ্ট কারণ আছে।
যদিও এবারের বাজেটে ওষুধ, চিকিৎসাসামগ্রী ও স্বাস্থ্য সুরক্ষাসামগ্রী উৎপাদনে প্রয়োজনীয় কাঁচামাল আমদানিতে বিদ্যমান রেয়াতি সুবিধা অব্যাহত রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। এ ছাড়া ক্যানসার রোগীদের চিকিৎসা আরও সুলভ করার জন্য ক্যানসার চিকিৎসায় ব্যবহৃত ওষুধ, আইভি ক্যানুলা উৎপাদনের অন্যতম প্রধান উপাদান সিলিকন টিউবসহ আরও কিছু বিদ্যমান ওষুধের কাঁচামাল আমদানিতে রেয়াতি সুবিধা অব্যাহত রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। তামাক জাতীয় পণ্য যেমন তরল নিকোটিন, ট্রান্সডারমাল ইউস নিকোটিন পণ্যের বিপরীতে ১৫০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপ করার প্রস্তাব করা হয়েছে।