
শ্রীলঙ্কার অর্থনৈতিক দৈন্যদশার ছাপ পড়েছিল এশিয়া কাপে। সেটা উদ্বোধনী ম্যাচে আফগানিস্তানের বিপক্ষে। ব্যাটিং ধসের পর ৮ উইকেটের হার। যদিও পরের ম্যাচে বাংলাদেশকে হারিয়েই ঘুরে দাঁড়িয়েছিল দলটি। তারপর টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়ন হয়ে দেশে ফিরে তারা। কিন্তু ২৭ আগস্টের সেই হারের ক্ষত কি সহজে শুকিয়েছে দাসুন শানাকাদের! সেই দৈন্যদশার ছাপ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের শুরুতে নামিবিয়ার সঙ্গেও দেখা গেছে। এরপর সেখান থেকেও ঘুরে দাঁড়িয়ে সেই রশিদ খানদের বিপক্ষে ফের নামতে যাচ্ছেন এশিয়া জয়ীরা।
ব্রিসবেনে বাংলাদেশ সময় সকাল ১০টায় শুরু হবে খেলাটি। এই মাঠের অতীত পরিসংখ্যান বলছে, ব্যাটাররা এখানে বেশি কাবু হয়েছেন অফস্পিনারদের কাছে। আর সবচেয়ে বেশি খরুচে পেসাররা। বিশ্বকাপের সুপার টুয়েলভ শুরুর আগ পর্যন্ত গ্যাবায় পেসারদের ইকোনমি ৮.৬৫। লেগ স্পিনাররা যেখানে বল করেছেন ৭.১১ ইকোনমিতে। তবে অফস্পিনারদের ইকোনমি সবচেয়ে ভালো, ৬.৬৮।
তবে বাংলাদেশ-জিম্বাবুয়ের ম্যাচে পেসার-স্পিনাররা সেই পরিসংখ্যানে গরমিল করে দিয়েছেন। গ্যাবাতে তাসকিন ওভারপ্রতি রান খরচ করেছেন ৪.৭৫। আর মোস্তাফিজ দিয়েছেন ৩.৭৫ রান করে। কেবল হাসান মাহমুদ ওভারপ্রতি ৯ রান দিয়ে মাঠে পেসারদের স্বাভাবিকতা বজায় রাখেন। আর টাইগার ফিঙ্গার স্পিনার সাকিব ও মোসাদ্দেক দুজনেই ওভারপ্রতি ৮.৫০ রান করে দিয়ে তালগোল পাকিয়েছেন।
টাইগাররা পরিসংখ্যানের হিসাব পাল্টে দিলেও স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে আয়ারল্যান্ড ঠিকই ধারাবাহিকতা বজায় রেখেছেন কাল এখানে। গতকাল মার্ক অ্যাডায়ার ৪ ওভারে ৫৯ রান দিয়েছেন। আইরিশ লেগ স্পিনার গেরাথ ডেলেনি ওভারপ্রতি প্রায় ১০ রান করে খরচ করেছেন। বিপরীতে অফস্পিনার জর্জ ডকরেল কোনো উইকেট না পেলেও ওভারে মাত্র ৬ রান করে খরচ করেছেন।
স্পিননির্ভর আফগানিস্তানের সঙ্গে শ্রীলঙ্কা ম্যাচেও এমনটি থাকাটাই স্বাভাবিক। রশিদ খান কিংবা ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা রান খরচ করলেও উইকেট নিয়ে দলকে ব্রেক থ্রো এনে দিতে পারেন। অন্যদিকে মুজিব-উর রহমান ও মোহাম্মদ নবীদের আঁটসাঁট বোলিংয়ে চাপে থাকতে পারেন কুশল মেন্ডিস ও পাথুম নিশাঙ্কারা। অন্যদিকে হজরতউল্লাহ জাজাই ও ইব্রাহিম জাদরানরাও কাবু হতে পারেন মহেশ থিকশানাদের কাছে। চারিথ আসালঙ্কাও হয়ে উঠতে পারেন তার যোগ্য সঙ্গী। তবে অস্বাভাবিক কিছু না হলে উভয় দলের ব্যাটাররাই স্ব-মহিমায় জ্বলে উঠতে পারেন পেসারদের পেলে।
এটা তো গেল মাঠের পরিসংখ্যানের কথা। তবে সুপার টুয়েলভের পয়েন্ট টেবিলের পরিসংখ্যানের তলানিতে রয়েছে দুই দল। সেমিফাইনালের আশা টিকিয়ে রাখতে হলে টুর্নামেন্টের সাবেক চ্যাম্পিয়ন শ্রীলঙ্কার কাছে ম্যাচটি তাই অনেক গুরুত্বপূর্ণ। কাসুন রাজিথা যেমন বললেন কাল, ‘আমরা জানি এটি আমাদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ খেলা। মাঠে আমাদের সেরাটা দেওয়ার চেষ্টা করব। এই ম্যাচটি জিততে হবে। আমরা জানি যে, আমরা আমাদের দেশ ও দলের জন্য সেরাটা উজাড় করে দিতে নামব।’
অনেক সম্ভাবনা নিয়ে টুর্নামেন্টে আসা আফগানিস্তান দুই ম্যাচ হার, আর একটি পরিত্যক্ত ম্যাচ থেকে ১ পয়েন্ট নিয়ে একেবারে নিচে। তাদের জন্য শেষ আশায় পানি ঢেলে দিতে পারে বৃষ্টি। ইংলিশ কোচ জোনাথন ট্রটের আশা ম্যাচটা হবে, ‘আশা করি আমরা ম্যাচটা খেলতে পারব। জয়ের লক্ষ্য নিয়ে নেমে আমরা আরও দুই পয়েন্ট যোগ করতে পারব বলে আত্মবিশ্বাস রয়েছে আমাদের।’
প্রতিবেশীর উপকার করাটাই তো প্রতিবেশীর কর্তব্য। তাসমান সাগরের ওপারের ‘বড়’ প্রতিবেশী অস্ট্রেলিয়ার দারুণ একটা উপকারই করতে পারে নিউজিল্যান্ড, আজ ইংল্যান্ডকে হারিয়ে দিয়ে। ব্রিসবেনে আজ হেরে গেলেই আসর থেকে ছুটির ঘণ্টা বেজে যাবে ইংল্যান্ডের। তাতে করে নিউজিল্যান্ড তো সেমিফাইনালে যাবেই, পথের কাঁটা দূর হবে অস্ট্রেলিয়ারও। জিতলে টিকে থাকবে ইংল্যান্ডের আশা, সমীকরণে থাকবে অস্ট্রেলিয়াও।
২০১৯ ওয়ানডে বিশ্বকাপের দুই ফাইনালিস্ট ইংল্যান্ড-নিউজিল্যান্ড গত বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে মুখোমুখি হয়েছিল। ড্যারিল মিচেলের দারুণ ব্যাটিংয়ে কিউইরা ম্যাচটা জিতে উঠেছিল ফাইনালে। এবারেও দুটো দলে কমবেশি সেই ক্রিকেটাররাই আছেন। ইংল্যান্ডের নেতৃত্বে বদল এলেও নিউজিল্যান্ডে কেন উইলিয়ামসনই অধিনায়ক। এবং এই মুহূর্তে দলের ব্যাটিং অর্ডারে সবচেয়ে ‘দুর্বল’ জায়গাটা কিউই অধিনায়কের। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ২৩ বলে ২৩ আর শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ১৩ বলে ৮ রান করেছেন শুধু। একই রকম অবস্থা ইংল্যান্ডের অধিনায়ক জস বাটলারেরও। আইপিএলে মনে হচ্ছিল প্রায় বলে বলে ছয় মারতে পারেন বাটলার। সেই তিনি বিশ্বকাপে এসে আফগানদের বিপক্ষে ১৮ আর আইরিশদের বিপক্ষে শূন্য।
দুটো ম্যাচ হয়ে গেছে, এখনো ইংল্যান্ডের কোনো ব্যাটসম্যানের হাফসেঞ্চুরিও নেই। অন্যদিকে নিউজিল্যান্ডের গ্লেন ফিলিপস করেছেন শতরান, প্রথম ম্যাচে ডেভন কনওয়েও গিয়েছিলেন খুব কাছাকাছি (৯২*)।
সব মিলিয়ে এই মুহূর্তে এগিয়ে আছে নিউজিল্যান্ডই। ইংল্যান্ডের টি-২০ দলটা যদিও রোমাঞ্চকর সব ক্রিকেটারে ঠাসা, বিশ্বকাপে এসে ঠিক নিজেদের খুঁজে পাচ্ছেন না তারা। ইংল্যান্ডের সহকারী কোচ পল কলিংউড সংবাদ সম্মেলনে এসে বলেছেন, ‘ইতিহাস বলে যে নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে আমাদের হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হয়। অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে ম্যাচটা না হওয়াতে যেটা হয়েছে, বোলাররা সতেজ আছে। ব্যাটসম্যানরা নেটে নিজেদের ঝালিয়ে নেওয়ার সুযোগ পেয়েছে। এই মাঠেই আমরা পাকিস্তানের বিপক্ষে প্রস্তুতি ম্যাচ খেলেছিলাম।’
বেন স্টোকসের দলে জায়গা নিয়ে প্রশ্ন ওঠায় কলিংউডের উত্তর, ‘চাপের মুহূর্তে যে একটা মানুষকে আমি দলে চাইব সে হলো বেন স্টোকস। সে শুধু ম্যাচ জেতানো ইনিংসই খেলে না, চাপের মুখে ম্যাচ জেতানো ইনিংস খেলে। সংকটের মুহূর্তে বেন স্টোকসকে দেখলে আশা দেখা যায়, সে শুধু ব্যাট হাতেই না বল হাতেও ম্যাচ ঘুরিয়ে দিতে পারে। এমন মুহূর্তের জন্য বেনকে লাগবেই।’
ব্রিসবেনের মাঠেই বাংলাদেশ-জিম্বাবুয়ে ম্যাচটি হয়েছিল। সেটি দেখেছেন কি না বা শন উইলিয়ামসের কথায় স্পিন বোলারদের সুবিধার বিষয়টি জানেন কি না এমন প্রশ্নে কলিংউডের উত্তর, ‘না দেখিনি। দেখতে হবে কন্ডিশন কেমন, আমরা আসলে আগে থেকেই কোনো কিছু ভেবে রাখতে চাই না আর এখন পর্যন্ত বল যে খুব ঘুরছে এমনটাও দেখিনি। বরং বলের মুভমেন্টে, সিম আর সুইংয়েই যা হচ্ছে দেখছি।’
নিউজিল্যান্ডের প্রতিনিধি হয়ে সংবাদ সম্মেলনে এসেছিলেন লকি ফার্গুসন। এই পেসার বলে দিলেন এই মুহূর্তে বিশ্বের সেরা পেস বোলিং কিউইদেরই, ‘টিম (সাউদি) আর ট্রেন্ট বোল্ট দুর্দান্ত বল করছে। যেখানে বল সুইং করে, সেসব জায়গায় ওদের চেয়ে ভালো কেউ আছে বলে তো মনে হয় না। অন্তত আমার কাছে। ওদের সঙ্গে খেলাটাই খুব দারুণ অভিজ্ঞতা।’
ইংল্যান্ডের ব্যাটিংটা বিশ্বকাপে এখনো জ্বলে না উঠলেও বারুদ কম নয় তাদের। লকি অবশ্য মনে করেন, ওসবে ভয় পেয়ে কাজ নেই কারণ টি-টোয়েন্টিতে সব দলেরই এরকম কিছু না কিছু আছে, ‘টি-২০ খেলার ধরনটাই এমন যে প্রতিটা দলেই শুরুতে ওরকম কিছু বিস্ফোরক ব্যাটসম্যান থাকে। ইংল্যান্ডও ব্যতিক্রম নয়, নিঃসন্দেহে তারা ব্যাটিং শক্তিতে ওপরের দিকেই আছে আর ওদের ব্যাটিং লাইন-আপটাও লম্বা। ঠান্ডা মাথায় নিজেদের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করাটাই আমাদের লক্ষ্য।’ জিতলেই সেমিফাইনাল নিশ্চিত, এমন অবস্থায় লকির ভাবনা, ‘বড় ম্যাচ আমাদের জন্য। একটা করে ম্যাচ নিয়েই ভাবছি। কাল (আজ) জিতলেই পরের ধাপে যেতে পারব যখন যাওয়ার সময় হবে।’
ব্রিসবেনের আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বৃষ্টিও আছে। উত্তেজনার বারুদঠাসা এই ম্যাচটায় না আবার প্রকৃতি জল ঢেলে দেয়!
নিঃসঙ্গ শেরপার মতো একাই লড়লেন লরকান টাকার। আয়ারল্যান্ডের এই উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান ওয়ান ডাউনে নেমে অপরাজিত ছিলেন ৪৮ বলে ৭১ রানের ইনিংস খেলে। কিন্তু অন্যপাশে পাননি কোনো সতীর্থকে। তাই তো অস্ট্রেলিয়ার কাছে ৪২ রানের হার নিয়ে মাঠ ছাড়তে হয়েছে আইরিশদের। চার ম্যাচে দুই জয়ে অস্ট্রেলিয়া কিছুটা এগিয়ে গেল সেমিফাইনালের পথে, যদিও এখনো বাকি আছে অনেক হিসাব। এই জয়ে ৫ পয়েন্ট নিয়ে পয়েন্ট তালিকার দুইয়ে অস্ট্রেলিয়া, সমান পয়েন্ট নিউজিল্যান্ডেরও, তবে এক ম্যাচ কম খেলে।
ব্রিসবেনে টস জিতে বোলিং নিয়েছিল আয়ারল্যান্ড। শুরুতেই ডেভিড ওয়ার্নারকে মাত্র ৩ রানে ফিরিয়ে দিয়ে দলে স্বস্তি এনে দেন ব্যারি ম্যাকার্থি। ওয়ান ডাউনে নামা মিচেল মার্শ বেশ দ্রুত রান তুললেও আউট হয়ে যান অল্পতেই, ২২ বলে ২৮ রান করে। গ্লেন ম্যাক্সওয়েলও আভাস দিলেও পারেননি ঝড় তুলতে, ৯ বলে ১৩ রানেই শেষ তার ইনিংস। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে দারুণ ইনিংস খেলা মার্কাস স্টয়নিসই ভরসা দিলেন, ২৫ বলে ৩৫ রান করে। ওদিকে একপ্রান্ত আগলে অধিনায়ক অ্যারন ফিঞ্চ খেলেছেন ৪৪ বলে ৬৩ রানের ইনিংস। আগের ম্যাচে নিজের ব্যাটিং নিয়ে নিজেই বিরক্তি প্রকাশ করেছিলেন অজি অধিনায়ক, কাল হাফসেঞ্চুরিতে রানখরা কাটলেও ব্যাটিং নিয়ে আত্মতৃপ্তি পাবেন কমন। হাফসেঞ্চুরি করতে লেগেছে তার ৩৮ বল। তখন পর্যন্ত ৪ বাউন্ডারির সঙ্গে ২ ছক্কা মারা ফিঞ্চ পৌঁছেছেন ৩৮ বলে, ৪ বাউন্ডারি আর ২ ছক্কায়। পরে ৬ বলে আরও একটি বাউন্ডারি ও ছক্কা মেরেছেন। সবার সম্মিলিত প্রয়াসেই ৫ উইকেটে ১৭৯ রান করে অস্ট্রেলিয়া, আয়ারল্যান্ডের ম্যাকার্থি নিয়েছেন ৩ উইকেট।
১৮০ রান তাড়ায় ৩.২ ওভারের মধ্যে বালবার্নি, স্টার্লিং, টেক্টর, ক্যাম্ফার ও ডকরেলকে হারিয়ে বসে আইরিশরা। রান তখন মাত্র ২৫। এর মধ্যে দুই উইকেট নেন গ্লেন ম্যাক্সওয়েল। এরপর টাকার একপ্রান্তে একাই লড়ে গেলেও অন্যপ্রান্তে সঙ্গী বদল হয়েছে নিয়মিত। শেষ পর্যন্ত ১৮.১ ওভারে ১৩৭ রানেই অলআউট আয়ারল্যান্ড। ৯ বাউন্ডারি ও ১ ছক্কায় ৪৮ বলে ৭১ রান করলেও হাসতে পারেননি টাকার। হেসেছেন অ্যারন ফিঞ্চ এই বিশ্বকাপে প্রথমবার ম্যাচসেরা হয়ে।
চ্যাম্পিয়নস লিগের ইতিহাসের তৃতীয় সর্বোচ্চ গোলদাতা রবার্ট লেভানডফস্কি। যে ধারায় আগের মৌসুমগুলো খেলেছিলেন, সে ধারায় খেলতে পারলে হয়তো এবার সেঞ্চুরিও পূরণ হয়ে যেত তার। কিন্তু বার্সেলোনায় যোগ দেওয়ার পর সব গেল বদলে। খেলতে হবে কি-না ইউরোপা লিগে। তাতে আর কীভাবে সুখে থাকেন এ পোলিশ তারকা?
বার্সেলোনা চ্যাম্পিয়নস লিগে খেলতে না পারায় অসুখী হলেও প্রথম মৌসুম সহজ হবে না এমন ধারণা আগেই ছিল লেভার। লা ভ্যানগার্দিয়ার সঙ্গে আলাপকালে বলেছেন, ‘অবশ্যই আমি খুশি নই। বার্সেলোনার শেষ ষোলোতে থাকা উচিত ছিল। কিন্তু বার্সেলোনা আসার আগে আমি আগে থেকেই জানতাম যে প্রথম মৌসুমে অবশ্যই যেমনটা হওয়ার কথা তারচেয়ে বেশি কঠিন হতে পারে।’
‘আমরা পুনর্গঠনের প্রক্রিয়ার মধ্যে আছি যা সময় নেয়, আমাদের অবশ্যই ধৈর্য ধরতে হবে। আমি নিশ্চিত যে এই বিপত্তিগুলো আমাদের দল হিসেবে গড়ে তুলবে এবং পরের মৌসুমে সবকিছু ভিন্ন হবে। আমরা বিকশিত হচ্ছি। এখানে এসে প্রথম মৌসুমে সবকিছু ঠিকঠাক হবে এমনটা আমি আশা করিনি। আমি এমন একটি প্রক্রিয়াতে জোর দিয়েছি যার জন্য সময় এবং ধৈর্যের প্রয়োজন’ যোগ করেন লেভানডফস্কি।
এর আগে সবশেষ ২০১০-১১ মৌসুমে বরুশিয়া ডর্টমুন্ডের হয়ে ইউরোপা লিগে খেলেছিলেন লেভানডফস্কি। সে মৌসুমে আট ম্যাচ খেলে গোল দিয়েছিলেন মাত্র একটি। এরপর গত এক যুগে খেলতে হয়নি এ লিগে। চ্যাম্পিয়নস লিগে নিয়মিত জাদুকরী ছন্দের ধারা রেখে এখন পর্যন্ত গোল করেছেন ৯১টি।
আজ ও কাল চ্যাম্পিয়নস লিগে গ্রুপ সেরা-রানার্সআপ নির্ধারণের খেলা। বার্সেলোনা খেললেও সেই লড়াইয়ে নেই। গত রাউন্ডে ইন্তার মিলানের জয়ে বিদায় নিয়েছে তারা। নিজেরাও হেরেছে বায়ার্ন মিউনিখের কাছে। আজ তাদের খেলা ভিক্টোরিয়া প্লাজেনের সঙ্গে।
মার্শেইয়ের মাঠে খেলবে টটেনহাম। পাঁচ ম্যাচে ৮ পয়েন্টে শীর্ষে আছে স্পার্সরা। মার্শেই ছয় পয়েন্টে চারে। গ্রুপের অপর ম্যাচ স্পোর্টিং সিপি ও আইনট্রাখট ফ্রাঙ্কফুর্টের। স্পোর্টিং আতিথেয়তা দেবে ফ্রাঙ্কফুর্টকে। দুই দলেরই পয়েন্ট সমান ৭। দুইয়ে স্পোর্টিং, তিনে ফ্রাঙ্কফুর্ট।
টটেনহাম-মার্শেই ম্যাচে যে দল জিতবে তার শীর্ষ দুইয়ে থেকে শেষ ষোলো নিশ্চিত। একই ভাবে সিপি-স্পোর্টিং ম্যাচের জয়ী দলেরও শেষ ষোলো নিশ্চিত হবে। টটেনহাম ম্যাচ ড্র হলেও পরের রাউন্ডে যাবে হ্যারি কেইনের দল। কিন্তু যদি টটেনহাম হারে এবং স্পোর্টিং-ফ্রাঙ্কফুর্ট ম্যাচ ড্র হয়, তখন তিন দলেরই পয়েন্ট হবে সমান ৮। সে ক্ষেত্রেও পরের রাউন্ডে যাবে টটেনহামই। মুখোমুখি লড়াইয়ে এগিয়ে আছে আন্তনিও কন্তের দল। আগের দেখায় মার্শেইকে ২-০ গোলে হারিয়েছে টটেনহাম।
সি গ্রুপের চার দলের অবস্থান নিশ্চিত হয়েছে আগেই। আজকের ম্যাচের ফলাফল তাদের অবস্থানে কোনো পরিবর্তন আনবে না। শীর্ষ থাকা বায়ার্ন আতিথেয়তা দেবে দ্বিতীয় স্থানে থাকা ইন্তার মিলানকে। আর বার্সেলোনা খেলতে যাবে প্লাজেনের মাঠে।
এ গ্রুপের শীর্ষ দুই দল নাপোলি ও লিভারপুলের ম্যাচ আজ অ্যানফিল্ডে। দুটি দলই নিশ্চিত করেছে পরের রাউন্ড। অসাধারণ কিছু না হলে নাপোলির শীর্ষস্থান এবং লিভারপুলের দ্বিতীয় স্থানও নিশ্চিত। আজ লিভারপুল জিতলে সমান ১৫ করে পয়েন্ট হবে নাপোলি আর অলরেডদের। তবে আগের দেখায় নাপোলি লিভারপুলকে হারিয়েছে ৪-১ গোলে।
বি গ্রুপ থেকে ক্লাব ব্রুজ ও পোর্তোর পরের রাউন্ডে যাওয়া নিশ্চিত। আজ ব্রুজ খেলবে লেভারকুসেনের বিপক্ষে, পোর্তোর ম্যাচ আতলেতিকো মাদ্রিদের বিপক্ষে। লেভারকুসেন যদি জেতে এবং আতলেতিকো হারে তবে ইউরোপা লিগ পজিশন থেকে ছিটকে যাবে ডিয়েগো সিমিওনের আতলেতিকো। এই গ্রুপের পয়েন্ট টেবিল এমন– ব্রুজ (১০), পোর্তো (৯), আতলেতিকো (৫) এবং লেভারকুসেন (৪)।
রবিবার পার্থে সুপার টুয়েলভের ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকার পেসারদের তোপে ধসে পড়ে ভারতীয় ব্যাটিং লাইনআপ। ব্যর্থ হন কোহলিও, আউট হয়ে যান মাত্র ১২ রানে। পরবর্তীতে সীমানার কাছে হাতে জমাতে পারেননি সহজ ক্যাচ। তার হতাশার ম্যাচে ৫ উইকেটে হারের তেতো স্বাদ পেতে হয় দলকে। এর কয়েক ঘণ্টা পর কোহলি জানতে পারেন, ভারত দল যে হোটেলে উঠেছে, সেখানেই ঘটেছে অবৈধ অনুপ্রবেশের ঘটনা। সেটা আবার তার রুমেই!
শুধু রুমে প্রবেশ করেই ক্ষান্ত হয়নি দুর্বৃত্তরা, পুরো রুমের ভিডিও ধারণ করে তা সামাজিক মাধ্যমেও ছড়িয়ে দিয়েছে। সেটা নজর এড়ায়নি কোহলিরও। সামাজিক মাধ্যম ইন্সটাগ্রামে নিজের স্বীকৃত অ্যাকাউন্টে তা প্রকাশ করে ক্ষোভ ঝেড়েছেন ৩৩ বছর বয়সী ব্যাটার। ব্যক্তিগত গোপনীয়তা নিয়ে শঙ্কায় থাকার কথাও জানিয়েছেন তিনি। ‘আমি বুঝতে পারি যে ভক্তরা তাদের প্রিয় খেলোয়াড়দের দেখলে খুবই আনন্দিত ও উত্তেজিত হয়ে পড়ে এবং তাদের সঙ্গে দেখা করার জন্যও রোমাঞ্চিত থাকে। আমি সব সময়ই এটা সমর্থন করেছি। তবে এই ভিডিওটা ভয়ানক এবং এটা আমাকে আমার ব্যক্তিগত গোপনীয়তা নিয়ে শঙ্কায় ফেলে দিয়েছে।’
নিজের রুমেও যদি গোপনীয়তা রক্ষা না হয়, তবে কোথায় তা পাবেন সেই প্রশ্নও রেখেছেন ভারতীয় তারকা ‘যদি আমি আমার হোটেল রুমেই ব্যক্তিগত গোপনীয়তা রক্ষার ব্যাপারটি না পাই, তবে আর কোথায় আমি তা আশা করতে পারি? এমন (ভালোবাসার) বাড়াবাড়ি ও গোপনীয়তার পুরোপুরি লঙ্ঘন আমার জন্য মেনে নেওয়ার মতো নয়। দয়া করে মানুষের গোপনীয়তাকে সম্মান করুন ও তাদের বিনোদনের মাধ্যম বানাবেন না।’
কোহলির পোস্টের পরপরই সেখানে নিজেদের প্রতিক্রিয়া জানাতে থাকেন ক্রিকেট তারকারা। তার স্ত্রী আনুশকা শর্মাও প্রকাশ করেছেন অসন্তোষ। তিনি মন্তব্য করেছেন ‘আপনার বেডরুমেও যদি এটা ঘটে, তবে সীমা থাকল কোথায়?’ অস্ট্রেলিয়ার ওপেনার ডেভিড ওয়ার্নার লিখেছেন ‘এটা অসহ্য, একেবারেই মেনে নেওয়ার মতো নয়।’
দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ম্যাচ ও হোটেলে ঘটা এই অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা বাদ দিলে চলমান টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ব্যাট হাতে দারুণ সময় কাটছে কোহলির। তিন ম্যাচে করেছেন ১৫৬ রান। তার ৫৩ বলে ৮২ রানের অপরাজিত ইনিংসেই নিজেদের প্রথম ম্যাচে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী পাকিস্তানকে হারায় ভারত।
দুটি পেনাল্টি কর্নার কাজে লাগিয়ে প্রথম কোয়ার্টারেই ২-০ লিড নিয়ে নেয় ওয়ালটন ঢাকা। দ্বিতীয় কোয়ার্টারের শুরুতেই হয় আরেক গোল। এরপর ম্যাচে ফেরা বড্ড কঠিন ছিল। তারপরও শেষ দুই কোয়ার্টারে মরিয়া চেষ্টা চালিয়েছিল রূপায়ণ সিটি কুমিল্লা। তবে পিসির অনেকগুলো সুযোগ কাজে লাগাতে ব্যর্থ হয়ে ৪-৩ গোলের তেতো স্বাদ নিতে হয়েছে তাদের। ম্যাচে ৯টা পিসির সুযোগ পেয়েছিল রূপায়ণ সিটি কুমিল্লা। যার মাত্র একটি কাজে লাগাতে পারে তারা। বিপরীতে ওয়ালটন ঢাকা ছয় পিসির তিনটি কাজে লাগিয়ে ম্যাচে গড়ে দেয় ব্যবধান। যা তাদের দ্বিতীয় ম্যাচে দেয় জয়ের স্বাদ।
আগের ম্যাচে মেট্রো এক্সপ্রেস বরিশালের বিপক্ষে সাতটি পিসির সুযোগ কাজে লাগাতে ব্যর্থ হয়েছিলেন ওয়ালটন ঢাকার অধিনায়ক আশরাফুল ইসলাম। অথচ কাল প্রথম দুই প্রচেষ্টাই কাজে লাগান এই পিসি স্টেশালিস্ট। সপ্তম মিনিটে পিছিয়ে যায় রূপায়ণ সিটি কুমিল্লা। ঢাকার ভারতীয় তারকা এসভি সুনিলের পুশ, আবেদ উদ্দিন থামিয়ে দিলে নিখুঁত হিটে লক্ষ্যভেদ করেন আশরাফুল ইসলাম। প্রথম কোয়ার্টারের শেষ মুহূর্তে মালয়েশিয়ান আজরি বিন হাসানের পুশ আবেদ উদ্দিন থামানোর পর আশরাফুলের স্টিক খুঁজে নেয় পোস্ট। ২০ মিনিটে রকিবুল হাসান রকির আড়াআড়ি পাসে স্টিক ছুঁইয়ে ৩-০ করেন ঢাকার ইন্দোনেশিয়ান ফরোয়ার্ড আলফান্দি আলি সুরিয়া। এই গোলে অবশ্য অবদান আছে রূপায়ণ সিটি কুমিল্লার ডিফেন্ডারদেরও। তিন মিনিট বাদে অবশ্য ব্যবধান কমায় পিসি থেকে গোল করে। মিলন হোসেনের পুশ, সারোয়ার হোসেন থামালে অধিনায়ক সোহানুর রহমান সবুজ দলের দ্বিতীয় পিসিতে গোল করেন। পরের মিনিটেই গোলের সুযোগ ছিল। তবে ওয়ালটন ডিফেন্ডার শফিউল আলম শিশির গোললাইন থেকে রুখে দেন পুস্কর ক্ষিসা মিমোর ফ্লিক। ২৫ মিনিটে আবারও পিসির সুযোগ কাজে লাগিয়ে সুরিয়া ঢাকাকে আরও এগিয়ে নেন। সুনিলের পুশ আবেদ থামালে আশরাফুলের ড্রাগ অ্যান্ড ফ্লিকে শেষ মুহূর্তে স্টিক ছুঁইয়ে দিক পরিবর্তন করে জালে পাঠান ইন্দোনেশিয়ার ফরোয়ার্ড। ২৮ মিনিটে পিসির দুটি সুযোগ হাতছাড়া করেন সবুজ। দ্বিতীয় কোয়ার্টারের শেষ মুহূর্তে ঢাকার কিপার আবু সাঈদ নিপ্পন অসাধারণ ক্ষিপ্রতায় মিলনকে গোল করতে দেননি। তৃতীয় কোয়ার্টারে ম্যাচে ফিরতে মরিয়া আক্রমণ চালায় রূপায়ণ সিটি কুমিল্লা। ৩২ মিনিটে পেনাল্টি স্ট্রোক থেকে ব্যবধান ৪-২-এ নামিয়ে আনেন কোরিয়ান কিম সুং ইয়ব। ৩৯ মিনিটে কিম সুং ইয়ব দলের অষ্টম পিসি থেকে ব্যবধান ৪-৩ করেন। মিলনের পুশ প্রদীপ মোর থামালে নিখুঁত ড্রাগ অ্যান্ড ফ্লিকে গোল করেন কোরিয়ান ফরোয়ার্ড। শেষ কোয়ার্টারেও আক্রমণে এগিয়ে ছিল রূপায়ণ। তবে ডিফেন্ডার ও কিপারের কৃতিত্বে ম্যাচটা থেকে পূর্ণ ৩ পয়েন্ট নিয়ে মাঠ ছাড়ে ওয়ালটন ঢাকা। মোনার্ক পদ্মাকে হারিয়ে হকি চ্যাম্পিয়নস ট্রফি শুরু করা রূপায়ণ সিটি কুমিল্লাকে দ্বিতীয় ম্যাচেই হোঁচট খেতে হলো। আগামীকাল তাদের তৃতীয় ম্যাচ মোনার্ক পদ্মার বিপক্ষে। এই ম্যাচ দিয়ে তারা চাইবে জয়ে ফিরতে।
নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান ও আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের সঙ্গে গতকাল মঙ্গলবার সকালে বৈঠক করেছেন ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস। এরপর দুপুরে বৈঠক করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে। এই বৈঠকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মহাপরিচালক উপস্থিত ছিলেন বলে জানা গেছে।
সরকারের গুরুত্বপূর্ণ তিন প্রতিনিধির সঙ্গে বৈঠকের বিষয়টি বেশ আলোচনার জন্ম দিয়েছে। এখানে মূলত আগামী নির্বাচনের ব্যাপারে দেশের রাজনীতিতে যে উত্তাপ দেখা দিয়েছে তা নিয়েই আলোচনা হয়েছে বলে জানা গেছে। তবে আনিসুল হক গণমাধ্যমে বলেছেন, তাদের এ বৈঠকে মার্কিন রাষ্ট্রদূত মূলত শ্রম আইন নিয়ে আলোচনা করেছেন। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের শ্রম আইন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের একটি পরামর্শ ছিল। বৈঠকে সেসব বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। একটি সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) অনুষ্ঠানে যোগ দিতে এ মাসেই জেনেভা যাওয়ার কথা রয়েছে।
পরে বেলা ১টা ১০ মিনিটে মার্কিন দূতাবাসে প্রবেশ করেন বিএনপি মহাসচিব। এরপর বেলা আড়াইটার দিকে তিনি দূতাবাস থেকে বের হন। রাতে মির্জা ফখরুল দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠান সামনে রেখে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যে ভিসানীতি ঘোষণা করেছে তার ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এই নীতি দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে সহায়ক হবে আমরা মনে করি বলে রাষ্ট্রদূতকে জানিয়েছি।’ তিনি বলেন, ‘রাষ্ট্রদূতকে আমি জানিয়েছি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে ছাড়া আওয়ামী লীগের অধীনে দেশে নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হবে না। দেশের জনগণও তাই মনে করে। এ ছাড়া নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার নিয়ে রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে আমাদের কোনো আলাপ হয়নি।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সম্প্রতি আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক বলেছিলেন, “নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করার আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করবেন।” তার এমন বক্তব্য নিয়ে আলোচনার ঝড় উঠলে পরে গণমাধ্যমে বিবৃতি দেয় আইন মন্ত্রণালয়। এরপর গতকাল মঙ্গলবার সকালে সচিবালয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক এবং প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের সঙ্গে বৈঠক করেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাড়া কীভাবে নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করা যায়, তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। দেশের সংবিধানে কী আছে তা-ও জানতে চেয়েছেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত।’
বাসায় তেলাপোকা মারার ওষুধ দেওয়ার পর বিষক্রিয়ায় মারা গেছে রাজধানীর বারিধারা এলাকার ব্যবসায়ী মোবারক হোসেন তুষারের দুই ছেলে। তার মেয়ে এখনো অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি। গত শনিবার ‘ডিসিএস অরগানাইজেন লিমিটেড’ নামের একটি পেস্ট কন্ট্রোল কোম্পানিকে দায়িত্ব দিয়েছিলেন ওই ব্যবসায়ী। প্রতিষ্ঠানটির কর্মীরা বাসায় ওষুধ দিয়ে ছয় ঘণ্টা পরে ঢুকে ঘর পরিষ্কার করতে বলেছিলেন। পরিবারটি ৯ ঘণ্টা পরে বাসায় ঢুকে বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হয়। এ সময় তাদের সবারই পেট খারাপ, বমির মতো উপসর্গ দেখা দেয়।
ওই পরিবারের বরাত দিয়ে পুলিশ জানিয়েছে, সেই পেস্ট কন্ট্রোল কোম্পানি পোকামাকড় নিধনের জন্য অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট (গ্যাস ট্যাবলেট) ব্যবহার করেছিল, যেটা থেকে বিষাক্ত গ্যাস তৈরি হয়। সেই গ্যাসের বিষক্রিয়াতেই তাদের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় মামলা হওয়ার পর ওই প্রতিষ্ঠানের ৫ কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
এদিকে রাজধানীতে গত পাঁচ বছরে এই বিষক্রিয়ায় বেশ কয়েকজন মানুষের মৃত্যু হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, উচ্চমাত্রার এই কীটনাশক বাসায় ব্যবহার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। অথচ বিভিন্নভাবে সাধারণ কীটনাশক হিসেবে দেদার বিক্রি হচ্ছে সারা দেশে।
সূত্র বলছে, রাজধানীসহ সারা দেশে কয়েক শতাধিক পেস্ট কন্ট্রোল প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব কোম্পানির প্রায় ৯৫ ভাগের কোনো অনুমোদন নেই। কৃষি ও পরিবেশ অধিদপ্তরের এসব দেখভাল করার কথা থাকলেও তারাও খুব একটা গুরুত্ব দিচ্ছে না।
পেস্ট কন্ট্রোল সার্ভিস প্রতিষ্ঠান সেবা নিন প্ল্যাটফর্ম লি.-এর চেয়ারম্যান শামসুল আলম বলেন, দেশে ব্যাঙের ছাতার মতো পেস্ট কন্ট্রোল প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠছে। অধিক মুনাফার আশায় তারা এক ধরনের নিষিদ্ধ ট্যাবলেট ব্যবহার করে। আবার অনেকে লিকুইড কেমিক্যাল ব্যবহার করে। কিন্তু কোন মাত্রায় এসব ব্যবহার করতে হয় তার প্রশিক্ষণ নেই। সরকারের পক্ষ থেকে এসব প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে আরও বেশি সতর্ক হওয়া উচিত।
রাজধানীর বেশ কিছু বাজার ঘুরে দেখা যায় অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট যত্রতত্র বিক্রি হচ্ছে। ফুটপাত থেকে শুরু করে দেয়াল লিখন ও অনলাইনের মাধ্যমে দেওয়া হচ্ছে চটকদার বিজ্ঞাপন। অথচ চাষাবাদ ছাড়া অন্য কাজে যার ব্যবহার নিষিদ্ধ। বদ্ধ ঘরে এই ধরনের কীটনাশক ব্যবহার করলে যে কারও বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
গতকাল রাজধানীর কারওয়ান বাজারে মাইকিং করে এসব কীটনাশক বিক্রি করছিলেন কাঞ্চন মিয়া। এ ধরনের কীটনাশক বিক্রির অনুমতি তার আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের অনুমতি লাগে না। দশ বছর ধরে এই ব্যবসা করি। কেউ তো কিছু বলে না। কোথা থেকে এসব পণ্য সংগ্রহ করা হয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, বেশিরভাগ পুরান ঢাকা থেকে সংগ্রহ করি। গাজীপুর সাভার থেকেও এসে দিয়ে যায়। এসব ব্যবহারে মানুষের মৃত্যুর ঝুঁকি রয়েছে তা জানেন না বলে জানান তিনি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন কীটনাশক জাতীয় একপ্রকার ওষুধের জেনেটিক বা গ্রুপ নাম হলো অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড। বাজারে অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট আকারে ফসটক্সিন, সেলফস, কুইকফস, কুইকফিউম, ডেসিয়াগ্যাস এক্সটি ইত্যাদি নামে পাওয়া যায়। অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট গ্যাস ট্যাবলেট নামেও পরিচিত। বাতাসের সংস্পর্শে এসে জীবনবিনাশী ভয়াবহ টক্সিক গ্যাস ফসফিন উৎপাদন করে। এই ট্যাবলেট সাধারণত গুদামজাত শস্যের পোকা দমন, ধান ক্ষেতের পোকা দমন, কলাগাছের পোকা দমন ও ইঁদুর দমনে ব্যবহার হয়ে থাকে। গত এক দশকে দেশে এই বিষাক্ত কীটনাশক মানুষের বাসাবাড়িতে ব্যবহার বাড়ছে। দেশের বাজারে ট্যাবলেট আকারে সহজলভ্য। রাজধানীতে ছারপোকা দমনে প্রায় যথেচ্ছ ব্যবহার হচ্ছে এই ট্যাবলেট।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে বালাইনাশক গ্রহণ করলে সেটা দ্রুত ফুসফুসে শোষিত হয় এবং রক্তে মিশে যায়। যদি পর্যাপ্ত পরিমাণ বালাইনাশক শ্বাসের মাধ্যমে গ্রহণ করা হয় তাহলে নাক, গলা ও ফুসফুস মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সরকারের যে দায়িত্বশীল প্রতিষ্ঠান রয়েছে এসব বিষয়ে তাদের পক্ষ থেকে কোন কোন কীটনাশক কোন মাত্রায় কোন কোন কীটপতঙ্গের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হবে সেটি নির্দিষ্ট করে নিশ্চিত করতে হবে। আমদানির সময়ও বিষয়টি খেয়াল রাখতে হবে। অথবা দেশেই যদি তৈরি করতে হয় তাহলে যথাযথ কর্র্তৃপক্ষের লাইসেন্স নিয়ে উৎপাদন করতে হবে। এটির গুণগত মান থাকছে কি না তারও পরীক্ষা করতে হবে।
পরিবেশ গবেষক পাভেল পার্থ বলেন, আমরা বিভিন্ন মাধ্যমে শুনেছি ওই বাসায় পেস্ট কন্ট্রোল প্রতিষ্ঠানটি অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ব্যবহার করেছে। যদিও আমরা এ বিষয়ে নিশ্চিত না। আমার মতে এটা আরও বেশি তদন্ত করা উচিত। সরকারের যে প্রতিষ্ঠান এসব বিক্রির অনুমোদন দেয় তাদের এই তদন্ত করে জানানো দরকার কী ধরনের কেমিক্যাল সেখানে ব্যবহার করা হয়েছিল। কারণ পেস্ট কন্ট্রোলের নামে কী ধরনের কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয় এটা জানাটা জরুরি।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে কোন ধরনের কীটনাশক কীভাবে ব্যবহার করা হবে তার কোনো নীতিমালা নেই। কীটনাশকগুলো সাধারণ কৃষিজমিতে ব্যবহৃত হয়। ঢাকা শহরে এরকম বিষ ব্যবহার নিষিদ্ধ করা উচিত। তাছাড়া রাস্তাঘাটে এসব জিনিস অহরহ বিক্রি হচ্ছে। এসবও তদন্তের আওতায় আনতে হবে।
আরও এক কর্মী গ্রেপ্তার : দুই শিশুর মৃত্যুর ঘটনায় টিটু মোল্লা নামে একজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তিনি বালাইনাশক কোম্পানিটির কর্মকর্তা। গত সোমবার রাতে তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ভাটারা থানার ওসি আবুল বাসার মুহাম্মদ আসাদুজ্জামান জানান, ওই ঘটনায় করা মামলায় এখন পর্যন্ত তিনজনকে গ্রেপ্তার করে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ।
আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন ঘিরে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সরকারের দূরত্ব প্রকাশ্যে চলে এসেছে। কোনো ধরনের রাখঢাক ছাড়াই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ সরকারের মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ নেতারা যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনা করছেন। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আরও বেশি দৌড়ঝাঁপ শুরু করছেন। ফলে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ক্ষমতাসীনদের দূরত্ব এখন স্পষ্ট। আলোচনা আছে, সরকারবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে পশ্চিমা এ দেশটি হঠাৎ আরও ঘনিষ্ঠ হতে শুরু করেছে।
জানা গেছে, সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে এতদিন যুক্তরাষ্ট্রের মতপার্থক্য ছিল না। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন প্রত্যাশা করছে দেশটি। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগও এ নিয়ে কোনো দ্বিমত করেনি। এরই মধ্যে, ভিসানীতি ঘোষণা করে সরকারকে বড় চাপ দেওয়ার পূর্বাভাস দেয় যুক্তরাষ্ট্র। বিষয়টি নিয়ে সরকারি দল আওয়ামী লীগ ও মাঠের বিরোধী দল বিএনপি একে অন্যকে ঘায়েল করার চেষ্টা করে। তবে ভিসানীতি যে সরকারের ও আওয়ামী লীগের ওপরই বেশি চাপ তৈরি করেছে, সেটা ভেতরে-বাইরে আলোচনা আছে।
আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায় ও কূটনীতি-সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্র দেশ রূপান্তরকে জানিয়েছে, বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র তাদের অবস্থান পাল্টে নির্বাচনের স্বার্থে প্রয়োজনে সংবিধানের বাইরে যেতে হবে সরকারকে এমন প্রস্তাব দিতে চলেছে। ওই সূত্রগুলো দাবি করেছে, গত মাসের শেষের দিকে অথবা চলতি সপ্তাহে বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাস আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের বাসভবনে তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। পিটার হাস ওই বৈঠকে রাজনৈতিক সমঝোতায় না আসলে সব দলের অংশগ্রহণে জাতীয় সরকারের আদলে একটা কিছু করার বিকল্প প্রস্তাব দিয়েছেন। তা না হলে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের স্বার্থে সংবিধানসম্মত করে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের পদক্ষেপ নেওয়ার প্রস্তাব করেন। এ প্রস্তাব সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানেও দেওয়া হয়েছে। আনিসুল হকের সঙ্গে শ্রম আইন নিয়েও দীর্ঘ আলাপ করেন এ রাষ্ট্রদূত।
আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকজন নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, পিটার হাসের ওই প্রস্তাব নিয়ে সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ে গেলে তাতে বড় আপত্তি তোলা হয়। শুধু তাই নয়, যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা পাওয়া যাবে না এটা ধরেই দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরুর বার্তা দেওয়া হয়েছে সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে। তারা স্বীকার করেন যে, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান ক্রমেই আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে চলে যাচ্ছে। তবে নির্বাচনে যুক্তরাষ্ট্রের অসহযোগিতা করবে ধরে নিয়েই সরকারি দল আওয়ামী লীগ প্রস্তুতি নিচ্ছে।
পিটার হাস সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের ও মাঠের বিরোধী দল বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে একান্তে বৈঠক করেছেন। গুরুত্বপূর্ণ ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গেও নির্ধারিত-অনির্ধারিত বৈঠক করা শুরু করেছেন। গত সোমবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ব্রিফিংয়ে পিটার হাসকে উদ্দেশ্য করে প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেছেন, রাষ্ট্রদূতরা সীমা লঙ্ঘন করলে আইনি ব্যবস্থা নেবে সরকার।
আগামী নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সক্রিয় হয়ে ওঠার প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে জানিয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, পিটার হাসের দৌড়ঝাঁপ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘নাহি ছাড়ি’ অবস্থান আওয়ামী লীগের বিভিন্ন স্তরে দুশ্চিন্তা তৈরি হয়েছে।
সরকারের দুই মন্ত্রীও দেশ রূপান্তরের কাছে স্বীকার করেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সরকারের বিপক্ষে যেতে শুরু করেছে। ‘অন্যায় হস্তক্ষেপ’ বেড়েছে পিটার হাসের।
আওয়ামী লীগের কূটনীতিসম্পৃক্ত এক নেতা বলেন, সরকার বিকল্প হিসেবে শক্তিশালী দেশের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নে কাজ করে চলেছে। বিকল্প দেশের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে উঠলে নির্বাচন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রকে মাইনাস করে চলার এক ধরনের কৌশল গ্রহণ করা হবে। এ কৌশলে নির্বাচন সম্পন্ন হয়ে গেলে যুক্তরাষ্ট্রর সঙ্গে সম্পর্ক ঝালাই করা হবে নতুন পরিকল্পনা অনুযায়ী।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর আরেক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, ভিসানীতি মূলত সরকারের বিভিন্ন ক্ষেত্রে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। অনেকেই ভিসানীতিকে সব গেল বলে ধরে নিয়ে অবস্থান টলমলে করে তুলতে চায়। এরকম অবস্থা আওয়ামী লীগকে একটু চিন্তায় ফেলে দিয়েছে। দলের নেতাকর্মীরা যেন সাহস হারিয়ে না ফেলে, সেজন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনা করার কৌশল গ্রহণ করেছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগ নেতাদের সমালোচনা নিয়ে গুঞ্জন শুরু হয়েছে। এমন কথা শোনা যাচ্ছে যে, আওয়ামী লীগ কি তাদের অবস্থান থেকে সরতে শুরু করবে? আবার প্রশ্নও আছে যে, নির্বাচন কি হবে? জাতীয় সরকার আসবে খুব শিগগিরই, এমন গুঞ্জনও রয়েছে জোরালোভাবে। শুধু তাই নয়, বাতিল হওয়া নির্বাচন পদ্ধতি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনেই আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে এমন গুঞ্জনও শুরু হয়েছে। যদিও এসবে কোনো ভিত্তি রয়েছে মনে করেন না আওয়ামী লীগ নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা। তারা দাবি করেন, সংবিধান অনুযায়ীই নির্বাচন হবে। এ ইস্যুতে কোনো শক্তির সঙ্গেই আপস করবেন না আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে দলটির সভাপতিম-লীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, কোনো দেশের চাওয়ায় বাংলাদেশে আগামী নির্বাচন হবে না। দেশের মানুষের চাওয়া অনুযায়ী সংবিধানসম্মতভাবে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন হবে। তিনি বলেন, সবার মতো করেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য করতে বদ্ধপরিকর।
কূটনীতিসম্পৃক্ত আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের আরেক নেতা বলেন, দৃশ্যত যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সরকারের সঙ্গে দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে মনে করা হলেও সেপ্টেম্বরের আগে পশ্চিমা এ দেশটি তার চূড়ান্ত অবস্থান পরিষ্কার করবে না বলে তারা মনে করছেন। ওই নেতা বলেন, সেপ্টেম্বরে ভারত সফর রয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। মূলত সেই সফরেই বোঝা যাবে সরকার কোনদিকে যাবে। এ নেতা আরও বলেন, ‘আমাদের ডিপ্লোম্যাসি (পররাষ্ট্রনীতি) পরস্পরের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের নীতি। কূটনীতিতে প্রধানমন্ত্রী দেশি-বিদেশি অনেক নেতাকে ছাড়িয়ে গেছেন। সেই আস্থা-বিশ্বাসও প্রধানমন্ত্রীর ওপর আমাদের রয়েছে।’
এতদিন যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান পরিষ্কার হয়ে না ওঠায় সরকার ও আওয়ামী লীগ নেতারা দাবি করতেন, দেশটিকে তারা বোঝাতে পেরেছেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে সমালোচনা প্রমাণ করে না যে, ক্ষমতাধর দেশটির সঙ্গে আওয়ামী লীগের বোঝাপড়া ঠিক আছে। যুক্তরাষ্ট্র ভিসানীতি ঘোষণার পরই দেশটির অবস্থান আওয়ামী লীগের পক্ষে আছে এমন কথা কেউ আর বিশ্বাস করছে না।
আওয়ামী লীগের একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, আমেরিকাকে মাইনাস ধরেই এগিয়ে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দলটির শীর্ষ পর্যায়ের দুই নেতা আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান আগের চেয়ে বেশি স্পষ্ট হয়ে ওঠায় রাজনীতিতে তারা ‘ব্যাকফুটে’ চলে যাচ্ছেন কি না, তা নিয়ে আলোচনা চলছে দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের মধ্যে।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমি একটাই বুঝি, একটাই জানি, আগামী নির্বাচন সংবিধানসম্মতভাবেই হবে। এ জায়গা থেকে একটুও নড়বে না সরকার।’
রাজধানীর বনানীর একটি রেস্তোরাঁ থেকে জামায়াতে ইসলামীর বনানী শাখার ১০ নেতাকর্মীকে আটক করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
তাদের মধ্যে বনানী থানা জামায়াতের আমির তাজুল ইসলাম এবং সেক্রেটারি আব্দুর রাফি রয়েছেন।
বনানী থানার ওসি মোস্তাফিজুর রহমান জানান, মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে ওয়ারলেস গেটে অবস্থিত নবাবী রেস্টুরেন্টে গোপন মিটিং করাকালে বনানী থানা জামায়াতে ইসলামী আমির তাজুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক মাওলানা রাফিসহ ১০ নেতাকর্মীকে আটক করা হয়েছে।
আটক ১০ জনের মধ্যে ইসলামী ছাত্রশিবিরের নেতাও রয়েছেন।
পেঁয়াজের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির কারণে সরকার ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দেয় ব্যবসায়ীদের। সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বেনাপোল, হিলি ও ভোমরা স্থলবন্দর দিয়ে গত সোমবার থেকে পেঁয়াজ আমদানি শুরু হয়েছে। ট্রান্সপোর্ট খরচ, ট্যাক্স পরিশোধ ও লেবার খরচসহ আমদানিকরদের হাতে ভারতীয় পেঁয়াজের মূল্য দাঁড়িয়েছে ২৭ টাকা। যা ভারতের বাজারে ১৪-১৫ রুপি দরে বিক্রি হচ্ছে। তবে এখানেও মধ্যস্বত্বভোগীর কারসাজি রয়েছে। দেশি পেঁয়াজের মতো কয়েক হাত ঘুরে অস্বাভাবিক দামে ২৭ টাকার পেঁয়াজ পাইকারিতে বিক্রি হচ্ছে ৫৬-৬০ টাকায়। তবে আমদানি করা পেঁয়াজ এখনো খুচরা বাজারে পৌঁছায়নি।
গতকাল মঙ্গলবার কৃষি মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, সোমবার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে পেঁয়াজ আমদানির অনুমোদন দেওয়া শুরু হয়। প্রথম দিনে ২ লাখ ৮০ হাজার ৮০০ টন পেঁয়াজ আমদানির অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল। গতকাল দ্বিতীয় দিন শেষে আইপি বা আমদানি অনুমোদনের পরিমাণ ৪ লাখ ৩৩ হাজার টনে দাঁড়িয়েছে।
দেশে পেঁয়াজের চাহিদা বছরে প্রায় ২৮ থেকে ৩০ লাখ টন। চলতি বছর পেঁয়াজের নিট উৎপাদন ধরা হচ্ছে ২৪ লাখ ৫৩ হাজার টন। ফলে বাকি পেঁয়াজ আমদানি করতে হবে। ২০২১-২২ অর্থবছরে ৬ লাখ ৬৫ হাজার টন পেঁয়াজ আমদানি করা হয়েছিল। গতকাল কৃষি মন্ত্রণালয় এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, এদিন বিকেল ৫টা পর্যন্ত বিভিন্ন স্থলবন্দর হয়ে ১ হাজার ২৮৮ টন পেঁয়াজ দেশে এসেছে।
চলতি বছর পেঁয়াজের দর রোজার ঈদের পর থেকেই বাড়তে শুরু করেছিল। এক মাসের ব্যবধানে তা ৩০ থেকে ৮০ টাকায় উঠে যায়। গত কয়েক দিন ধরে ১০০ টাকায়ও বিক্রি হচ্ছিল।
কৃষকদের স্বার্থ রক্ষার কথা বলে এতদিন পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি কৃষি মন্ত্রণালয় না দিলেও পরিস্থিতি দেখে রবিবার সায় দেয়। পরদিনই পাইকারি বাজারে এর প্রভাব দেখা যায়। দেশের বিভিন্ন স্থলবন্দর দিয়ে ভারতীয় পেঁয়াজ আসা শুরু হলে পাইকারিতে দাম কমে যায় এক ধাক্কায় ৩০ টাকা। প্রতি কেজি পেঁয়াজের খুচরা মূল্য এখন ৪৫ টাকার বেশি হওয়া উচিত নয় বলে সরকার মনে করে। আর প্রতিবেশী দেশ ভারত থেকে যে পেঁয়াজ দেশে এসেছে, সেগুলো কেনা প্রতি কেজি ২১ থেকে ২২ টাকার মধ্যে ছিল বলে সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টরা জানিয়েছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সব খরচ মিলিয়ে বন্দর পর্যন্ত প্রতি কেজি পেঁয়াজের ক্রয়মূল্য দাঁড়ায় ২৭ টাকায়। আমদানিকারকরা কেজিপ্রতি ২ টাকা লাভে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের কাছে ২৯ টাকায় বিক্রি করছেন। স্থানীয়রা আরও ৫ টাকা লাভে প্রতি কেজি পেঁয়াজ ঢাকার পাইকারদের কাছে বিক্রি করেন ৩৪ টাকায়। ঢাকার পাইকাররা শ্যামবাজারে সেই পেঁয়াজ বিক্রি করেন ৫০-৫৬ টাকায়। শ্যামবাজার ব্যবসায়ীর হাতবদল হয়ে কারওয়ান বাজার পাইকারি মার্কেটে এসে বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা করে।
ভোমরা স্থলবন্দরের আমদানিকারক আমির হামজা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ভারতীয় বাজার থেকে ১৪-১৫ রুপিতে কিনে সব খরচসহ বন্দর পর্যন্ত প্রতি কেজি পেঁয়াজের মূল্য দাঁড়িয়েছে ২৭ টাকা। কেজিতে ২ টাকা লাভে ভোমরা স্থলবন্দরের স্থানীয় ব্যবসায়ীদের কাছে ২৯ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
হিলির বন্দর এলাকার আরেক ব্যবসায়ী আহমেদ আলী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘মূলত আমদানিকারকদের থেকে আমরা পেঁয়াজ কিনে থাকি। আমাদের কাছ থেকে ঢাকার ব্যবসায়ীরা পেঁয়াজ সংগ্রহ করেন। কেজিপ্রতি ৩১-৩২ টাকা আমাদের কেনা পড়ে। ঘরভাড়া, লেবার খরচসহ প্রতি কেজি পেঁয়াজে সামান্য লাভ করে ৩৪-৩৫ টাকা বিক্রি করতে হয়। এর নিচে বিক্রি করলে আমাদের ৭০-৮০ পয়সার মতো লোকসান হয়।’
গতকাল রাজধানীর শ্যামবাজার ঘুরে দেখা যায়, ভারত থেকে আসা পেঁয়াজ বাছাই করে দুই ভাগে বিক্রি করছেন শ্যামবাজারের ব্যবসায়ীরা। আকারে কিছুটা ছোট পেঁয়াজের কেজি ৪০-৪৫ ও ভালো মানের পেঁঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৫০-৫৬ টাকায়।
শ্যামবাজারের মেসার্স নিউ সেবা এন্টারপ্রাইজের ম্যানেজার শেখর দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আজই (গতকাল) আমদানি করা পেঁয়াজের চালান শ্যামবাজারে এসেছে। হাতেগোনা কয়েকজন ব্যবসায়ী ভারতীয় পেঁয়াজ পেলেও অধিকাংশ ব্যবসায়ী আমদানি করা এসব পেঁয়াজ পাননি। বেশ কিছু পেঁয়াজ ট্রাকে পচে যাওয়ায় দুই ভাগে তা বিক্রি হয়েছে। তুলনামূলক ভালো প্রতি কেজি পেঁয়াজ ৪০-৪৫ ও ভালো মানের পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৫০-৫৬ টাকা করে।’
জানতে চাইলে শ্যামবাজার পেঁয়াজ সমিতির সাধারণ সম্পাদক হাজি মোহাম্মদ মাজেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বর্তমানে ভারতের বাজারে প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১৩-১৫ রুপিতে। সেই হিসাবে সব খরচ মিলিয়ে আমাদের দেশের পাইকারি বাজারগুলোতে ৩৫-৩৬ টাকায় ভোক্তারা কিনতে পারবেন। তবে এ পেঁয়াজ কেন ৫০ টাকার ওপর বিক্রি হচ্ছে সে বিষয়ে আমার জানা নেই।’
এদিকে ভারত থেকে আসা প্রতি কেজি পেঁয়াজ ৬০ টাকা করে বিক্রি করতে দেখা গেছে কারওয়ান বাজারের পাইকারি ব্যবসায়ীদের। পেঁয়াজ ব্যবসায়ী ময়না মিঞা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ভারতীয় পেঁয়াজ দেশের বাজারে আসায় আমাদের অনেক লস হয়েছে। আগের কেনা দেশি পেঁয়াজের কেজিপ্রতি ২০-২৫ টাকা করে লস দিয়ে বিক্রি করতে হচ্ছে। তবে আমদানি করা যেসব পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে, তা শ্যামবাজার থেকে বেশি দামে কিনতে হয়েছে। মার্কেটে ক্রেতা না থাকায় সব খরচ মিলিয়ে প্রতি কেজিতে ২ টাকা লাভ করতেও এখন কষ্ট হচ্ছে।’
এদিকে খুচরা বাজারগুলোতে খবর নিয়ে জানা যায়, এখনো ভারত থেকে আসা আমদানি করা পেঁয়াজ খুচরা বাজারে প্রবেশ করেনি। আমদানি করা পেঁয়াজ খুচরা বাজারে না এলেও দেশি পেঁয়াজের দামে কিছুটা প্রভাব পড়েছে। প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৮০-৯০ টাকা দরে। যা গত তিন দিন আগেও বিক্রি হয়েছে ১০০-১০৫ টাকায়।
এদিকে ভারতীয় পেঁয়াজ আসায় স্থানীয় বাজারে পেঁয়াজের দাম কমেছে বলে জানান দিনাজপুর ও সাতক্ষীরা প্রতিনিধি। তাদের তথ্যমতে, সোমবার বিকেলে ভোমরা বন্দর দিয়ে ২৮৭ টন পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে। পর্যায়ক্রমে আরও ৫০ ট্রাক পেঁয়াজ দেশে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে।
অন্যদিকে হাকিমপুর প্রতিনিধি জানান, দিনাজপুরের হিলি বন্দর দিয়ে গত দুদিনে ১৬ ট্রাক পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে। আমদানি করা পেঁয়াজের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪০-৪৫ টাকা দরে। আর দেশি পেঁয়াজ ৬০-৬৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
নতুন অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে ১৩ ধরনের জ্বালানি তেল ও পেট্রোলিয়াম পণ্যের ওপর থেকে বিদ্যমান ৫ শতাংশ আগাম কর প্রত্যাহারের পরিকল্পনা করেছে সরকার। অন্যদিকে উৎপাদন পর্যায়ে তরল করা পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) ভ্যাট ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে সাড়ে ৭ শতাংশ করা হয়েছে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে পেট্রোল, অকটেন ও ডিজেল আমদানিতে প্রতি লিটারে ১৩ দশমিক ৭৫ টাকা করে শুল্ক আরোপ করার প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এ ছাড়া অন্যান্য জ্বালানি জেট ফুয়েল, ফার্নেস অয়েল, লুব বেইজ অয়েল, কেরোসিনের ক্ষেত্রে প্রতি টনে ২৫ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। এত দিন এসব জ্বালানি তেল আমদানির ক্ষেত্রে ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ ছিল।
আমদানি করা পণ্যের যথাযথ মূল্য নির্ধারণে ২০২২-২৩ অর্থবছরে পণ্যের ট্যারিফ মূল্য ও ন্যূনতম মূল্য নির্ধারণ-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনে পেট্রোলিয়াম ও এর উপজাত দুটি হেডিংয়ের আওতায় ১২টি এইচএস কোডের বিপরীতে ট্যারিফ মূল্য এবং একটি হেডিংয়ের আওতায় একটি এইচএস কোডের বিপরীতে ন্যূনতম মূল্য বহাল আছে।
পেট্রোলিয়াম ও এর উপজাতগুলোর মূল্য আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিনিয়ত ওঠানামা করার কারণে অতি প্রয়োজনীয় এই পণ্যের মূল্য স্থিতিশীল রাখতে এ সুপারিশ করা হয়েছে।
এলপিজি সিলিন্ডারের বিষয়ে বাজেট বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী বলেন, এলপিজি সিলিন্ডার তৈরির কাঁচামাল ইস্পাতের পাত (স্টিল শিট) ও ওয়েল্ডিংয়ের তার আমদানির করছাড় সুবিধা তুলে নেওয়া হয়েছে। এলপিজি সিলিন্ডার উৎপাদনকারীরা কাঁচামালে শুল্ককর ছাড় ১২ বছর ধরে ভোগ করে আসছে। তাই রাজস্ব আহরণের স্বার্থে শুধু দুটি উপকরণে ছাড় তুলে নেওয়া হয়েছে। তবে অন্যান্য করছাড়ের মেয়াদ ২০২৫ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত বহাল থাকবে বলে।
পেট্রোলিয়াম তেল এবং বিটুমিনাস খনিজ থেকে প্রাপ্ত তেলের ওপর বিদ্যমান শুল্ক ৫ শতাংশ। নতুন বাজেট অনুযায়ী এসবের প্রতি ব্যারেলের দাম ১ হাজার ১১৭ টাকা (লিটার প্রতি ৭.০২ টাকা) হতে পারে। প্রতি টন ফার্নেস অয়েলের সুনির্দিষ্ট শুল্ক ৯ হাজার ১০৮ টাকা (লিটার প্রতি ৯.১০ টাকা) করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের জন্য নতুন অর্থবছরে (২০২৩-২৪) ৩৪ হাজার ৮১৯ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। এর মধ্যে বিদ্যুৎ খাতে ৩৩ হাজার ৮২৫ কোটি ১০ লাখ টাকা এবং জ্বালানি খাতে ৯৯৪ কোটি ৩১ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করা নতুন বাজেটে এই বরাদ্দের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
চলতি অর্থবছরে (২০২২-২৩) বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতে বরাদ্দ ছিল ২৬ হাজার ৬৬ কোটি টাকা। পরবর্তী সময়ে সংশোধিত বাজেটে তা বেড়ে দাঁড়ায় ২৭ হাজার ৮৯ কোটি টাকা। অর্থাৎ নতুন অর্থবছরে এ খাতে বরাদ্দ বাড়ছে ৭ হাজার ৭৩০ কোটি টাকা।
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তাফা কামাল বাজেট বক্তৃতায় বলেন, উৎপাদন ও বিতরণ সক্ষমতা সম্প্রসারণের ফলে দেশের শতভাগ জনগোষ্ঠী বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় এসেছে। বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ২০০৯ সালে ৪ হাজার ৯৪২ মেগাওয়াট থেকে বর্তমানে ২৬ হাজার ৭০০ মেগাওয়াটে উন্নীত হয়েছে। জ্বালানির ব্যবহার বহুমুখীকরণের জন্য গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পাশাপাশি কয়লা, তরল জ্বালানি, দ্বৈত জ্বালানি, পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানিভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, রামপালে কয়লাভিত্তিক ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রকল্পের প্রথম ইউনিট ও পায়রা ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রকল্পে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হয়েছে। মাতারবাড়ীতে ১২০০ মেগাওয়াট আল্ট্রা-সুপার ক্রিটিক্যাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের কাজ চলছে। সরকারি-বেসরকারি যৌথ উদ্যোগে মোট ১২ হাজার ৯৪ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ৩৩টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণাধীন এবং ২ হাজার ৪১৬ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ১৭টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের চুক্তি প্রক্রিয়াধীন আছে। এছাড়া, ১০ হাজার ৪৪৩ মেগাওয়াট ক্ষমতার আরও ৩৪টি বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে।
মুস্তফা কামাল বলেন, ‘২০৪১ সালের মধ্যে পাশর্^বর্তী দেশগুলো থেকে প্রায় ৯ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির পরিকল্পনা রয়েছে। বর্তমানে ভারত থেকে ১১৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির পাশাপাশি ঝাড়খ-ে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ৭৪৮ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হয়েছে। নেপালের জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির চুক্তি চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। ভুটান থেকে বিদ্যুৎ আমদানির জন্য বাংলাদেশ, ভুটান ও ভারতের মধ্যে একটি ত্রিপক্ষীয় সমঝোতা স্মারক সই হতে যাচ্ছে শিগগিরই। তিনি বলেন, ‘সব মিলিয়ে আমরা ২০৩০ সালের মধ্যে ৪০ হাজার মেগাওয়াট এবং ২০৪১ সালের মধ্যে ৬০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন নিশ্চিত করতে পারব বলে আশা করছি।’
অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘সরকার ২০৩০ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ১০ শতাংশ নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। এছাড়া ২০৪১ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ৪০ শতাংশ পরিচ্ছন্ন জ্বালানি থেকে সংগ্রহ করতে চাই। এরসঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে, ৬০ লাখ সোলার সিস্টেম স্থাপনের মাধ্যমে অফ গ্রিড এলাকায় বসবাসকারী জনগণকে বিদ্যুৎ সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। কার্বন নিঃসরণ কমাতে ডিজেলচালিত পাম্পের জায়গায় সৌরচালিত পাম্প স্থাপন করার অংশ হিসেবে সেচকাজে ইতিমধ্যে ২ হাজার ৫৭০টি পাম্প স্থাপন করা হয়েছে। বর্তমানে নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে ৮৯৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে। সর্বোপরি, রাশিয়ার সহায়তায় রূপপুরে ২৪০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে।’
উৎপাদিত বিদ্যুৎ জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে গত ১৪ বছরে ৬ হাজার ৬৪৪ সার্কিট কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন স্থাপন করা হয়েছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, সঞ্চালন লাইন ১৪ হাজার ৬৪৪ কিলোমিটারে উন্নীত হয়েছে। এছাড়া বিতরণ লাইন ৩ লাখ ৬৯ হাজার থেকে ৬ লাখ ৬৯ হাজার কিলোমিটারে বৃদ্ধি করা হয়েছে। বিদ্যুতের সিস্টেমলস ১৪ শতাংশ থেকে নেমে এসেছে ৭ দশমিক ৭ শতাংশে। ২০৩০ সালের মধ্যে সঞ্চালন লাইনের পরিমাণ ২৮ হাজার কিলোমিটারে সম্প্রসারিত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিদ্যুতের অপব্যবহার রোধের লক্ষ্যে গত ৫ বছরে প্রায় ৫৩ লাখ প্রি-পেইড স্মার্ট মিটার স্থাপন করা হয়েছে।
অর্থমন্ত্রী কামাল বলেন, ২০০৯ সালের তুলনায়, জ্বালানি তেলের মজুদ ক্ষমতা ৮ লাখ ৯৪ হাজার মেট্রিক টন থেকে বৃদ্ধি করে ২০২১-২২ অর্থবছরে ১৩ লাখ ৬০ হাজার টন করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে এই মজুদ ক্ষমতা ৩০ দিনের পরিবর্তে ৬০ দিনে বাড়ানোর বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি উদ্বোধন করা ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী পাইপলাইনের মাধ্যমে আমদানি করা জ্বালানি তেল (ডিজেল) দেশের উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলায় এবং সৈয়দপুরে ১৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রে সরবরাহ করা সম্ভব হবে।
তিনি বলেন, ‘একমাত্র তেল শোধনাগার ইস্টার্ন রিফাইনারির পরিশোধন ক্ষমতা ১৫ লাখ টন থেকে ৪৫ লাখ টনে উন্নীত করার চেষ্টা চলছে। পায়রা সমুদ্রবন্দর এলাকায় একটি বৃহৎ সমন্বিত তেল শোধনাগার স্টোরেজ ট্যাংক নির্মাণের সিদ্ধান্ত আছে। সম্প্রতি ভোলার ইলিশা গ্যাসক্ষেত্রে প্রায় ২০০ বিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের মজুদ আবিষ্কৃত হয়েছে। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার সময় প্রতিদিন গ্যাসের উৎপাদন ছিল ১ হাজার ৭৪৪ মিলিয়ন ঘনফুট, যা বেড়ে হয়েছে প্রায় ২ হাজার ৩০০ মিলিয়ন ঘনফুট। তেল ও গ্যাস অনুসন্ধান কোম্পানি বাপেক্সের সক্ষমতা বাড়ানোর পর দৈনিক গ্যাস উৎপাদন ৯৮৪ মিলিয়ন ঘনফুট বেড়েছে। ২০২৪ সালের মধ্যে আরও ৪৬টি কূপ খনন করা হবে। এতে অতিরিক্ত ৬১৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস জাতীয় গ্রিডে যোগ হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
মুস্তাফা কামাল বলেন, ‘সমুদ্রে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য বিপুল বিনিয়োগ প্রয়োজন হওয়ায় আমরা বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিচ্ছি। ক্রমবর্ধমান জ্বালানির চাহিদা মেটাতে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস আমদানি এবং স্পট মার্কেট থেকেও কেনা হচ্ছে। এছাড়া কক্সবাজারের মাতারবাড়ীতে প্রতিদিন ১ হাজার মিলিয়ন ঘনফুট ক্ষমতাসম্পন্ন ল্যান্ড বেইজড এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।’
বাজেট বক্তৃতায় আরও বলা হয়, ২০০৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত ১ হাজার ১৫৮ কিলোমিটার গ্যাস সঞ্চালন পাইপলাইন নির্মাণ করা হয়েছে। বর্তমানে দেশের উত্তরাঞ্চল ও অন্যান্য এলাকায় ২১৪ কিলোমিটার পাইপলাইন নির্মাণের কাজ চলছে। ২০২৬ সালের মধ্যে পায়রা ও ভোলা থেকে গ্যাস সঞ্চালনের জন্য আরও ৪২৫ কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। গ্যাসের সরবরাহ বাড়ানোর পাশাপাশি অপচয় রোধে প্রি-পেইড মিটার স্থাপনের কাজও চলছে।
চলতি অর্থবছরের চেয়ে আগামী অর্থবছরের সামগ্রিক বাজেট আকারে ১২ দশমিক ৩৪ শতাংশ বড় হলেও আগামী বছরের শিক্ষা-বাজেট দশমিক ৪৪ শতাংশ কমেছে। তবে টাকার অঙ্কে শিক্ষার দুই মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দ ৬ হাজার ৭১৩ কোটি টাকা বেড়েছে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরে শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাতে মোট বাজেটের ১৩ দশমিক ৭ শতাংশ বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। শুধু শিক্ষা খাত হিসাব করলে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা এবং মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষায় বরাদ্দ ১১ দশমিক ৫৭ শতাংশ। টাকার অঙ্কে তা ৮৮ হাজার ১৬২ কোটি। চলতি অর্থবছরে শিক্ষায় বরাদ্দ ছিল ১২ দশমিক ০১ শতাংশ বা ৮১ হাজার ৪৪৯ কোটি টাকা।
ইউনেস্কো, শিক্ষাবিদ বা অংশীজনরা অনেক দিন ধরেই শিক্ষায় জিডিপির কমপক্ষে ৪ শতাংশ বরাদ্দের কথা বলছেন। এটাকে তারা বরাদ্দ হিসেবে না দেখে আগামী দিনের বিনিয়োগ হিসেবে দেখতে বলছেন। গত কয়েক বছর ধরে শিক্ষায় বরাদ্দ ১২ শতাংশের আশপাশে ঘুরপাক খাচ্ছিল। জিডিপির হিসাবে তা ছিল ২ শতাংশের কাছাকাছি। চলতি অর্থবছরে শিক্ষা খাতে মোট বরাদ্দ জিডিপির ১ দশমিক ৮৩ শতাংশ, ২০২১-২২ অর্থবছরে ছিল ২ দশমিক ০৮ শতাংশ। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে তা কমে দাঁড়াচ্ছে জিডিপির ১ দশমিক ৭৬ শতাংশ।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধূরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আগামী বাজেটে যে লক্ষ্য ধরা হয়েছে, তার সঙ্গে শিক্ষায় বরাদ্দের সংগতি নেই। বাজেটে স্মার্ট বাংলাদেশের কথা বলা হয়েছে। এজন্য দক্ষ ও শিক্ষিত জনগোষ্ঠী প্রয়োজন। কিন্তু এ জনগোষ্ঠী তৈরির জন্য প্রয়োজন শিক্ষা খাতে বিনিয়োগ। বরাবরের মতো এবারও শুভংকরের ফাঁকি লক্ষ করছি। শিক্ষার সঙ্গে প্রযুক্তি মিলিয়ে আকার বড় করা হলেও চলতি অর্থবছরের চেয়েও বরাদ্দ কমেছে। নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নেও বাজেটে দিকনির্দেশনা দেখছি না।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ড. ছিদ্দিকুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘শিক্ষায় জিডিপির ২ শতাংশের নিচে বরাদ্দ কাক্সিক্ষত নয়। আগামী অর্থবছরে অন্তত ১৪ থেকে ১৫ শতাংশ বরাদ্দ দিলে ভালো হতো। কারিগরি ও ভোকেশনাল শিক্ষায় আরও বেশি নজর দেওয়া উচিত ছিল। সেটা আগামী অর্থবছরের বাজেটে দেখা যায়নি।’
তিনি বলেন, ‘আগামী বছরের বাজেটে মিড ডে মিলের জন্য বরাদ্দ রাখার কথা বলা হয়েছে, যা খুবই ভালো। যোগ্য শিক্ষক নিয়োগ ও তাদের যথাযথ প্রশিক্ষণে জোর দিতে হবে। শিক্ষায় বরাদ্দের সঠিক ব্যবহারের বিষয়ে গুরুত্ব দিতে হবে।’
আগামী অর্থবছরে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জন্য ৩৪ হাজার ৭২২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরে তা ছিল ৩১ হাজার ৭৬১ কোটি টাকা। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের জন্য ৪২ হাজার ৮৩৮ কোটি এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের জন্য ১০ হাজার ৬০২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের জন্য ৩৯ হাজার ৯৬১ কোটি এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের জন্য ৯ হাজার ৭২৭ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছিল সরকার।
বাজেট ঘিরে প্রতি বছরই বেসরকারি শিক্ষকদের অন্যতম দাবি থাকে শিক্ষাব্যবস্থার জাতীয়করণ, এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের পূর্ণাঙ্গ বাড়ি ভাড়া ও শতভাগ উৎসব-ভাতা প্রদান। নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তকরণের প্রক্রিয়া চলমান রাখাও তাদের অন্যতম দাবি। কিন্তু সেসব বিষয়ে বাজেটে স্পষ্ট কিছু উল্লেখ নেই। তবে এমপিওভুক্তির জন্য মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগে আগামী অর্থবছরে ৩০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে বলে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।
স্বাস্থ্য খাতে চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটের চেয়ে আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে বরাদ্দ বেড়েছে। প্রস্তাবিত বাজেটে এই খাতে এবার বরাদ্দ ১ হাজার ১৮৯ কোটি টাকা বা ৩ দশমিক ২২ শতাংশ বাড়লেও মোট বাজেটের তুলনায় তা কমেছে শূন্য দশমিক ৪ শতাংশ। চলতি অর্থবছরে খাতটিতে বরাদ্দ ছিল মোট বাজেটের ৫ দশমিক ৪ শতাংশ। আগামী বাজেটে তা ৫ শতাংশে নেমে এসেছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে জাতীয় সংসদে ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেট পেশ করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। বাজেটে স্বাস্থ্যসেবা এবং স্বাস্থ্য-শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ খাতে ৩৮ হাজার ৫২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করেন। ২০২২-২৩ অর্থবছরে সংশোধিত বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ ছিল ৩৬ হাজার ৮৬৩ কোটি টাকা।
প্রস্তাবিত বাজেটে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে ২৯ হাজার ৪৩১ কোটি টাকা, যা আগের বছরের তুলনায় মাত্র ১৫০ কোটি টাকা বেশি। এর মধ্যে পরিচালন ব্যয় ১৭ হাজার ২২১ কোটি টাকা ও উন্নয়ন ব্যয় ১২ হাজার ২১০ কোটি টাকা। এছাড়া স্বাস্থ্য-শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটে ৮ হাজার ৬২১ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এই বরাদ্দ থেকেই নতুন মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠার ব্যয় নির্বাহ করা হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক সৈয়দ আবদুল হামিদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, এবার টাকার অঙ্কে গত বছরের তুলনায় (বর্তমান ২০২২-২৩ অর্থবছর) ১ হাজার একশ কোটির মতো বেড়েছে। কিন্তু বাজেট শেয়ারে সেটা কমেছে। সামগ্রিক বাজেটের গ্রোথ বা বৃদ্ধি ১২ শতাংশ, কিন্তু স্বাস্থ্যের বাজেটের বৃদ্ধি ৩ শতাংশ। তারমানে রাষ্ট্রীয় বাজেটে স্বাস্থ্য খাতের গুরুত্ব কমেছে। সেই কারণে ৫ দশমিক ৪ শতাংশ থেকে ৫ শতাংশে নেমে এসেছে।
এই স্বাস্থ্য অর্থনীতিবিদ বলেন, এবার কমার যৌক্তিক কারণ আছে। সেটা হলো স্বাস্থ্য বিভাগের সেক্টর প্রোগ্রামে উন্নয়ন বাজেট থেকে অর্থ আসে। সেই সেক্টর প্রোগ্রাম এই অর্থবছরে শেষ হয়ে প্রস্তাবিত অর্থবছর থেকে নতুন সেক্টর প্রোগ্রাম শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু চলমান সেক্টর প্রোগ্রাম সময়মতো বাস্তবায়ন করতে না পারায় সেটার সময় আরও এক বছর বাড়ানো হয়েছে। এই এক বছরের জন্য নতুন বাজেট থাকে না, পুরনো বাজেট থেকেই ব্যয় করতে হয়। ফলে বরাদ্দ না বাড়িয়ে পাঁচ বছরের বাজেট যদি ছয় বছরে গিয়ে ঠেকে, তাহলে প্রতি বছর টাকা কমে যায়। মূলত এ কারণে এবার টাকা কমে গেছে।
সরকার স্বাস্থ্য খাতে এবারও কিছু থোক বরাদ্দ রাখতে পারত বলে মনে করেন স্বাস্থ্য অর্থনীতির এই শিক্ষক। তিনি বলেন, কভিড ছাড়াও আমাদের অনেক জরুরি খাত আছে। এখন ডেঙ্গু চলছে। এটি ইমার্জেন্সি হয়ে যাবে। ফলে এটার জন্য যে ফান্ড দেওয়া আছে হাসপাতালে, রোগী বাড়লে সেটা দিয়ে হবে না। এরকম ইমার্জেন্সি আরও আসতে পারে। এরকম একটা থোক বরাদ্দ রাখলে স্বাস্থ্যের ইমার্জেন্সিতে সেখান থেকে ব্যয় করা যেত। কিন্তু সেটাও নেই। তার মানে কভিডের শিক্ষা থেকে আমরা কিছুই শিখিনি। প্রস্তাবিত বাজেটে সেটার প্রতিফলন নেই।
সামগ্রিকভাবে বাজেটে রোগীদের স্বাস্থ্যসেবার খরচ বেড়ে যাবে বলেও মনে করছেন এই স্বাস্থ্য অর্থনীতিবিদ। তিনি বলেন, এতে স্বাস্থ্যসেবা ও ওষুধসহ সামগ্রিকভাবে স্বাস্থ্য খাত নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার যথেষ্ট কারণ আছে।
যদিও এবারের বাজেটে ওষুধ, চিকিৎসাসামগ্রী ও স্বাস্থ্য সুরক্ষাসামগ্রী উৎপাদনে প্রয়োজনীয় কাঁচামাল আমদানিতে বিদ্যমান রেয়াতি সুবিধা অব্যাহত রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। এ ছাড়া ক্যানসার রোগীদের চিকিৎসা আরও সুলভ করার জন্য ক্যানসার চিকিৎসায় ব্যবহৃত ওষুধ, আইভি ক্যানুলা উৎপাদনের অন্যতম প্রধান উপাদান সিলিকন টিউবসহ আরও কিছু বিদ্যমান ওষুধের কাঁচামাল আমদানিতে রেয়াতি সুবিধা অব্যাহত রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। তামাক জাতীয় পণ্য যেমন তরল নিকোটিন, ট্রান্সডারমাল ইউস নিকোটিন পণ্যের বিপরীতে ১৫০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপ করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
নতুন অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে অভ্যন্তরীণ ফ্লাইটে খরচ বাড়ছে। কোনো যাত্রী আকাশপথে ভ্রমণ করলেই তাকে দিতে হবে ২০০ টাকার কর। একই সঙ্গে বিদেশগামী বিমানযাত্রীদের কর ৬৭ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে সরকারের তৃতীয় মেয়াদের শেষ (২০২৩-২৪ অর্থবছর) বাজেট উপস্থাপনকালে এসব কথা বলেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এদিকে পর্যটন খাত ও বিমানবহর সম্প্রসারণ ও বিমানবন্দর উন্নয়নের জন্য বেশ কিছু প্রস্তাব করা হয়েছে বাজেটে।
পর্যটন খাত : অর্থমন্ত্রীর তার
বক্তৃতায় বলেন, ডলার সাশ্রয়ের জন্য অপ্রয়োজনীয় বিদেশ ভ্রমণ হ্রাস করা, কৃচ্ছ্রতার অভ্যাস গড়ে তোলা এবং নতুন রাজস্ব আয়ের খাত তৈরি করতে সার্কভুক্ত দেশগুলোতে ভ্রমণ কর ৬৭ শতাংশ বাড়িয়ে ২ হাজার, মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে যাওয়ার ক্ষেত্রে ৩৩ শতাংশ বেড়ে ৪ হাজার এবং অন্যান্য দেশে ৫০ শতাংশ বেড়ে ৬ হাজার টাকা ভ্রমণ কর দিতে হবে।
পর্যটন খাত নিয়ে ব্যাপক পরিকল্পনা : অর্থমন্ত্রী বাজেট বক্তৃতায় আরও বলেছেন, পর্যটন খাতকে সমৃদ্ধ করার জন্য আন্তর্জাতিক মানের আবাসন ও বিনোদন সুবিধা নিয়ে কক্সবাজার জেলায় সাবরাং ট্যুরিজম পার্ক, নাফ ট্যুরিজম পার্ক এবং সোনাদিয়া ইকো ট্যুরিজম পার্ক স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কভিড-১৯ মহামারীর সময় দেশের পর্যটনশিল্প মারাত্মক বিপর্যয়ের মধ্যে পড়ে। এ পরিস্থিতিতে এ শিল্পকে সহায়তা করার জন্য সরকার ১ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ দিয়েছে। বাংলাদেশে পর্যটন সম্ভাবনাময় এলাকাগুলোতে উন্নয়নে সরকারি অর্থায়নে ১০টি প্রকল্প বাস্তবায়নাধীন আছে। পর্যটনশিল্পের উন্নয়নে একটি পর্যটন মহাপরিকল্পনা প্রণয়নের কার্যক্রম চলমান রয়েছে। পর্যটনের উন্নয়ন ও বিকাশের মাধ্যমে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্যে ৩৬টি জেলার পর্যটন ব্র্যান্ডিং অনুসারে বিভিন্ন জেলা ও উপজেলার পর্যটন এলাকার ভৌত অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও সৌন্দর্য বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত আকর্ষণীয় পর্যটন স্থানগুলো সংরক্ষণে এবং পর্যটনশিল্পের উন্নয়নে বঙ্গবন্ধুর অবদান বিষয়ে ডকুমেন্টারি ও টেলিভিশন কমার্শিয়াল প্রস্তুত করা হচ্ছে।
বিমানবহর সম্প্রসারণ ও বিমানবন্দর উন্নয়ন : অর্থমন্ত্রী তার বক্তৃতায় বলেন, সরকার দেশে আন্তর্জাতিক মানের বিমান পরিবহনব্যবস্থা গড়ে তুলতে নানাবিধ কার্যক্রম গ্রহণ করেছে। আকাশপথে যাত্রীদের চাহিদা বিবেচনায় চলতি বছরে মালদ্বীপ ও কানাডার টরন্টোতে বাংলাদেশ বিমানের ফ্লাইট চালু করা হয়েছে। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের
তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণকাজ ২০২৩ সালের মধ্যে সম্পন্ন করার লক্ষ্যে বর্তমানে দিনরাত ২৪ ঘণ্টাই কাজ চলছে। কক্সবাজার বিমানবন্দর আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে উন্নীত করার লক্ষ্যে রানওয়ে সম্প্রসারণ ও নতুন টার্মিনাল ভবন নির্মাণকাজ পুরোদমে এগিয়ে চলছে। সৈয়দপুর বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে উন্নীত করে সেখানে একটি আঞ্চলিক হাব গড়ে তোলার লক্ষ্যে প্রকল্প প্রণয়ন করা হচ্ছে। তাছাড়া দেশের অন্যান্য অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের অবকাঠামো, রানওয়ে, ট্যাক্সিওয়ে, হ্যাঙ্গার ও আমদানি-রপ্তানি পণ্য সংরক্ষণের শেডগুলো সংস্কার ও উন্নয়নসাধনের কার্যক্রম চলমান রয়েছে।