
ডি গ্রুপের প্রথম ম্যাচে আজ অসম লড়াই। হ্যাঁ, খেলায় নিজের দিনে হার-জিত যেকোনো দিকে গড়াতে পারে। তবে ম্যাচের আগে পারা না পারার হিসাব তো করাই যায়। সেদিক থেকে আজ এডুকেশন সিটি স্টেডিয়ামে ডেনমার্কের সামনে আফ্রিকান তিউনিসিয়ার জোর অনেক কমই বলতে হয়। ডেনিসরা বরাবরই ইউরোপিয়ান দ্বিতীয় শক্তির দল। তবে গত ইউরো থেকে যেন নতুন উদ্যমে জেগে উঠে তারাও জায়ান্টদের কাতারে জায়গা করে নিয়েছে। দলটিতে একঝাঁক তারকার উপস্থিতি নেই সত্যি, তবে দলগত শক্তিতে কমতি নেই কোনো। আর সেই ধারায় বিশ্বকাপ বাছাইয়ে কোনো ম্যাচ না জিতে কাতারে আসা ডেনিসদের আজ ফেভারিট ধরতেই হয়। মালির বিপক্ষে আফ্রিকান বাছাইয়ের শেষ ধাপে দুই লেগের লড়াইয়ে কোনোমতে ১ গোলের অ্যাগ্রিগেটে জেতা তিউনিসরা অপেক্ষায় থাকবে একটি অঘটনের।
বলা হচ্ছে এই ম্যাচের কথা। অথচ ডেনিস কোচ কাসপার হুলমান্দ হুঙ্কার ছাড়লেন বিশ্বকাপ জেতার। কাল ম্যাচপূর্ব সংবাদ সম্মেলনে এই কোচের উক্তি আলোচনা ছড়াল বেশ। ব্রাজিল-আর্জেন্টিনার বাইরে এই আসরে স্পষ্ট ফেভারিটের নাম নেই। অনেকটা উন্মুক্ত বিশ্বকাপে তাই হাত ছোঁয়াতে চায় ডেনমার্ক। হুলমান্দ জানান, ‘আমাদের স্বপ্ন কোনো কিছু জেতা। তাই আপনি যখন এমন বিশ্বকাপের মতো কোনো টুর্নামেন্টে যাবেন তখন আমি বলব আমার এই গ্রুপ ফুটবলারদের কিছু জেতার সামর্থ্য আছে। সেই ‘কিছু’ মানে কিন্তু সব কিছুই।’
গত ইউরোয় সেমিফাইনাল খেলে ডেনমার্কের বিশ্বাস বড় হয়েছে। এতটাই যে বাছাইপর্বের ১০ ম্যাচের ৯ ম্যাচ জিতেছে তারা। এই সময়ে বিপক্ষের জালে ৩০ গোল দিলেও নিজেরা হজম করেছে মাত্র ৩ গোল। আর শেষ ৮ ম্যাচে কোনো গোল খায়নি ডেনমার্ক। এই সাফল্য বিশ্বকাপে ডেনিসদের আরও উচ্ছ্বাস দিচ্ছে। সঙ্গে ইউরোর পর এই প্রথম বড় কোনো আসরে ফিরে আসা ক্রিশ্চিয়ান এরিকসেন দলের শক্তি বাড়াচ্ছেন। গত ইউরোতে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে হাসপাতালে ছিলেন এরিকসেন। এই বিশ্বকাপে পুরো ফিট হয়ে উঠেছেন। সব মিলিয়ে হুলমান্দের শিরোপা জয়ের স্বপ্নটা তাই বড় হয়েছে একটু বেশিই।
বড় স্বপ্ন সত্যি করতে গ্রুপসেরা হতে হবে ডেনমার্ককে। এই পথে বড় বাধা ফ্রান্স। তবে বর্তমান বিশ্বজয়ীদের হারানোর নিকটঅতীত আছে ডেনিসদের। নেশন্স লিগের লড়াইয়ে বিশ্বকাপে গ্রুপসঙ্গী ফ্রান্সকে মুখোমুখি দেখায় দুবারই হারিয়েছে তারা। তাই আরও আত্মবিশ্বাসী হুলমান্দ বলেন, ‘আমরা ফেভারিট কিনা যদি জিজ্ঞাস করেন সবাই বলত না। আমিও তাই বলব। কিন্তু আমরা যেকোনো দিন যেকোনো দলকে হারিয়ে দিতে পারি। আমাদের আত্মবিশ্বাসটাই এমন। আমাদের দলটা সব কিছু জিততে প্রস্তুত। আর আপনি যদি বড় কিছু জিততে চান তাহলে এই নিশ্চয়তা থাকতেই হবে।’
ডেনমার্কের সঙ্গে তিউনিসিয়ার পূর্ব লড়াই মাত্র একবার। তাও ২০ বছর আগে। ২০০২ সালের প্রীতি ম্যাচে ২-১ ব্যবধানে জিতেছিল ডেনমার্ক। ওই জয়ের রেশ ডেনিসদের যেমন নেই তেমনি হারের হতাশাও নেই তিউনিসিয়ার। লম্বা বিরতি পর নতুন দেখায় ম্যাচটি হবে নতুনের মতোই। তাতে তিউনিসিয়ার স্বপ্ন খুব একটা নেই। এক যদি না তারা অঘটন ঘটাতে পারে। সেই সম্ভাবনাটাও কম তিউনিসদের। আফ্রিকান বাছাইপর্বের শেষ রাউন্ডে মালির বিপক্ষে জিততে বেগ পেতে হয় দলটির। দুই লেগ মিলিয়ে ১-০ অ্যাগ্রিগেটে জিতলেও সেই গোলটি ছিল আত্মঘাতী। প্রথম লেগে মালির মুসা সিসোকো ভুল না করলে তিউনিসিয়া এই বিশ্বকাপের টিকিটও পেত না।
তবে তিউনিসিয়ার হারানোর কিছু নেই। বরং না হারার চাপে থাকবে ডেনমার্কই। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে বিশ্বকাপে নিজেদের প্রথম ম্যাচে অঘটন উপহার দিতে চাইবে। হুলমান্দরা বিশ্বকাপ জয়ের স্বপ্ন দেখলে এই অঘটন এড়াতে হবে।
আমার জীবনে, আমার টাইমিং সবসময়ই সেরা। অন্যরা কে কী ভাববে, তা নিয়ে আমি চিন্তা করি না। আমি যখন চাই, তখন কথা বলি। খেলোয়াড়রা অনেক বছর ধরে আমাকে ভালোভাবে চেনে
সম্ভাব্য শেষ বিশ্বকাপের সামনে দাঁড়িয়ে তিনি। যা বলার, বিশ্বকাপ-ভাবনা আর পর্তুগাল ক্যারিয়ার নিয়েই বলার কথা। কিন্তু কাতারে আসার পরও ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোকে ঘিরে আছে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড-বিষয়ক আলোচনা।
গত সপ্তাহে পিয়ার্স মরগানকে দেওয়া রোনালদোর সাক্ষাৎকারে ম্যানইড কোচ এরিক টেন হাগ থেকে শুরু করে ক্লাবের শীর্ষস্থানীয় কয়েকজন কর্মকর্তা ও মালিকপক্ষ গ্লেজার পরিবারকে নিয়ে বিস্ফোরক সব মন্তব্য করেছেন পর্তুগিজ তারকা। যুক্তরাজ্যের গণমাধ্যম বলছে, ক্ষুব্ধ ইউনাইটেড রোনালদোকে আর ওল্ড ট্রাফোর্ডে দেখতে রাজি নয়। তবে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ভার আপাতত রোনালদোর ওপরই ছেড়ে দিয়েছে ক্লাবটি।
বিশ্বকাপ খেলতে মাঠে নামার আগে রোনালদোকে পাওয়া যাবে না বলে ধারণা ছিল অনেকের। তবে সবাইকে চমকে দিয়ে আজ দোহায় পর্তুগালের হয়ে সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হন রোনালদো। সেখানে সাক্ষাৎকারে দেওয়া বক্তব্য নিয়ে প্রশ্নে তার সোজাসাপ্টা জবাব, ‘আমার জীবনে, আমার টাইমিং সবসময়ই সেরা। অন্যরা কে কী ভাববে, তা নিয়ে আমি চিন্তা করি না। আমি যখন চাই, তখন কথা বলি। খেলোয়াড়রা অনেক বছর ধরে আমাকে ভালোভাবে চেনে। তারা জানে আমি কী ধরনের মানুষ। এই দলটি উচ্চাকাক্সক্ষী এবং জয়ের জন্য ক্ষুধার্ত। তারা লক্ষ্যে স্থির। তাই আমি নিশ্চিত, (ওই সাক্ষাৎকারে) দলের পরিবেশ বদলাবে না এবং সবার লক্ষ্য ও মনোযোগ অটুট থাকবে।’
যেকোনো ধরনের আক্রমণের মুখে বুক চিতিয়ে দাঁড়ানোর সামর্থ্য আছে জানিয়ে ৩৭ বছর বয়সী এই তারকা যোগ করেন, ‘আমি যখন চাই, কথা বলি। আমি বুলেটপ্রুফ, লোহার পোশাক পরে আছি।’ পর্তুগাল দল কাতারে পা রাখার আগে ও পরে রোনালদো-বিষয়ক জিজ্ঞাসার মুখে পড়েছিলেন ব্রুনো ফার্নান্দেজ, বার্নার্দো সিলভা ও রুবেন নেভেসরা। বিষয়টি নিয়ে বিরক্ত পাঁচবারের ব্যালন ডি’অরজয়ী, ‘ক্রিশ্চিয়ানো সম্পর্কে অন্যদের জিজ্ঞেস করবেন না। ওদের পর্তুগাল আর তাদের নিজেদের নিয়েই জিজ্ঞেস করুন।’
তার আশপাশে জড়িত সবই বিতর্কের বিষয় হয়ে দাঁড়ায় মন্তব্য করে রোনালদো দাবি করেন, ব্রুনোসহ পর্তুগাল দলের কারও সঙ্গেই তার দূরত্ব নেই, ‘টুর্নামেন্ট শুরুর আগে এ ধরনের বিতর্ক সব সময়ই হয়। কিন্তু ব্রুনোর সঙ্গে আমার সম্পর্ক খুবই চমৎকার। আসলে ক্রিশ্চিয়ানোর চারপাশে থাকা সবকিছু নিয়েই বিতর্ক তৈরি হয়। কিন্তু আমি বলছি, দলের সবার সঙ্গে আমার ভালো সম্পর্ক।’
দুই লিওনেলে তাকিয়ে আর্জেন্টিনা। লিওনেলদ্বয় সফল হলেই ঘুচবে ৩৬ বছরের অপেক্ষা। গত বছর কোপা আমেরিকা জিতিয়ে যে দুজন ঘুুচিয়েছিলেন ২৮ বছরের শিরোপা খরা। তারাই পারেন দেশকে তৃতীয়বারের মতো বিশ্বকাপ এনে দিতে। একজন লিওনেল মেসি, আরেকজন লিওনেল স্কালোনি। একজন বহু বছর ধরেই আলবিসেলেস্তেদের স্বপ্নসারথী। অন্যজন খুব অল্প সময়ে কেড়ে নিয়েছেন আস্থার আসন। দুই লিওনেলকে ঘিরে বিশ্বজয়ের মিশন আর্জেন্টিনা শুরু করবে আজ। লুসাইল আইকনিক স্টেডিয়ামে তাদের প্রতিপক্ষ সৌদি আরব। এ মাঠেই হোক রূপকথার শুরু। ১৮ ডিসেম্বর বিজয় সংগীত গেয়ে এখানেই নিশ্চয় রূপকথার শেষটা করতে চাইবেন মেসিরা। বলে দেওয়াই যায় আরবকে এক ইঞ্চি ছাড় দেওয়ার মনোবৃত্তি দেখা যাবে না আর্জেন্টাইনদের মধ্যে। স্বপ্ন জয়ের অভিযান বলেই প্রয়োজনে ধারণ করতে হবে নিষ্ঠুর রূপ।
আর্জেন্টিনার হয়ে মেসির শুরুটা সেই ২০০৫ সাল থেকে। বাঁ পায়ের জাদুকর সেই থেকে মায়াবী জাদুতে সম্মোহিত করে রেখেছেন সারা দুনিয়াকে। বার্সেলোনা একাডেমিতে বেড়ে ওঠা, তার আলোতেই স্প্যানিশ ক্লাবটি জিতেছে সম্ভাব্য সবকিছুই। ক্লাবের হয়ে মেসিও হীরে-জহরতে গেঁথেছেন সাফল্যের মালা। তবে কেন যেন আকাশি জার্সিতে হচ্ছিল না। সাফল্যের খুব কাছে গিয়েও ফিরতে হয়েছে খালি হাতে। তা বিশ্বকাপ বলুন কিংবা কোপা আমেরিকা। একটা সময় মনে হচ্ছিল মেসি খেলা দিয়ে হৃদয় জিতবেন ঠিকই, তবে শিরোপা জেতা হবে না। কোনো শিরোপাই নয়। সেই মনে হওয়াটা ভুল প্রমাণিত হয় অভিষেকের ঠিক ১৬ বছর পর, গত বছর। ব্রাজিলকে তাদের মাঠে ফাইনালে হারিয়ে কোপা আমেরিকা ওঠে ফুটবলের বরপুত্রের হাতে। সেই আসরে আর্জেন্টিনার ১২ গোলের ৯টিতেই ছিল তার অবদান। করেছিলেন চার গোল, সতীর্থদের দিয়ে করিয়েছিলেন পাঁচটি। সে বছরই ওয়েম্বলিতে ইতালিকে ৩-০ গোলে হারিয়ে কনমেবল-উয়েফা কাপ অব চ্যাম্পিয়নস ট্রফি জেতে আর্জেন্টিনা। সেই ১৯৯৩ সালে সর্বশেষ কোপা জয়ের ২৮ বছর পর জোড়া শিরোপায় মেসির যেমন অবদান, কোচ স্কালোনির অবদানকেও খাটো করে দেখার সুযোগ নেই। জর্জ সাম্পোওলির সহকারী হয়ে ২০১৬-তে আর্জেন্টিনা জাতীয় দলে পা রাখা। ২০১৮-তে যখন হেড কোচের দায়িত্ব পান, তখন কম সমালোচনা সইতে হয়নি। খোদ ডিয়েগো ম্যারাডোনা এমন একজনের হাতে দায়িত্ব দেওয়ায় সমালোচনায় বিদ্ধ করেছিলেন আর্জেন্টাইন ফুটবল ফেডারেশনকে। সে সময়ের সমালোচনাগুলো মুখ বুজে সয়ে যাওয়া স্কালোনি একটা পন্থাই নিয়েছিলেন। মেসিকে কেন্দ্রে রেখে পুরো দলটাকে একটা পরিবার হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। ৪৪ বছর বয়সী কোচও বুঝেছিলেন মেসি সুখী থাকলে দলও যেমন খুশি, পুরো আর্জেন্টিনাই খুশি।
মেসিকে ভালো রাখতে জানেন বলেই দুই লিওনেলে রসায়নটা হয়েছে চমৎকার। সেই রসায়নেই এবার সময় এসেছে বিশ্বসেরা হওয়ার। আর্জেন্টিনা দোহায় পা রেখেছে টানা ৩৬ ম্যাচ অপরাজিত থাকার অনন্য এক রেকর্ড নিয়ে। আজ সৌদি আরবকে হারালে তারা ছুঁয়ে ফেলবে ইতালির ৩৭ ম্যাচ অপরাজিত থাকার বিশ্বরেকর্ড। আর গ্রুপের পরে ম্যাচে মেক্সিকোকে হারালে রেকর্ডটা হয়ে যাবে এককভাবে তাদের। এমন ছন্দে থাকা আর্জেন্টিনা যদি এবার বিশ্বকাপ না জেতে, তাহলে অন্যায় হবে। ঘোরতর অন্যায়। এ যে মেসির সম্ভাব্য শেষ বিশ্বকাপ। বয়স তো আর এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। তবে স্কালোনি তা মানছেন না। কোচ মেসিকে ২০২৬ বিশ্বকাপেও দেখতে চান। আমেরিকা-কানাডা বিশ্বকাপে মেসি থাকবেন কি না, এ নিয়ে এখন মাথা ঘামানোর মানে নেই। আগে তো কাতার মিশনটা ঠিকঠাক শেষ করতে হবে।
তবে ঠিকঠাক কাজের পরিকল্পনা করতে গিয়েই স্কালোনি পড়েছেন বিপাকে। এই সুখী আর্জেন্টিনার মাঝমাঠের নেতৃত্ব দিয়ে গেছেন জিওভানি লো সেলসো ও রদ্রিগো ডি পল। সেই ২০১৯ থেকে। বিশ্বকাপ শুরুর আগ মুহূর্তে লো সেলসো হ্যামস্ট্রিং চোটে পড়ে ছিটকে যান। এতদিন ডি পল ও লো সেলসো মাঝমাঠ থেকে আর্জেন্টিনার খেলাটা গোছাতেন। সুবাদে মেসি অনেকটা স্বাধীন হয়ে খেলার সুযোগ পেতেন। কখনো ওপরে আবার কখনো একটু নেমে এসে জায়গা করে আক্রমণে উঠতেন। কখনো গোল করতেন, কখনো করিয়ে শান্তি পেতেন। তাই লো সেলসোর না থাকাটা বড় দুশ্চিন্তা। এটা বাদ দিয়ে এই আর্জেন্টিনার দুর্বলতা খুঁজে পাওয়া মুশকিল। আজ লো সেলসোর জায়গায় মাঝমাঠে ডি পলের সঙ্গী হতে দেখা যেতে পারে লিয়ান্দ্রো পারেদেসকে। ৪-৩-৩ ফরম্যাটে নাম্বার নাইন পজিশনে লাউতারো মার্তিনেজকে রেখে দু’পাশে খেলবেন মেসি ও অ্যাঞ্জেল ডি মারিয়া। রক্ষণে স্কালোনি আস্থা রাখতে পারেন নাহুয়েল মলিনা, নিকোলাস ওতামেন্দি, ক্রিশ্চিয়ান রোমেরো ও নিকোলাস তাগলিয়াফিকোর ওপর। মাঝমাঠে ডি পল ও পারেদেসকে সহায়তা দেবেন দিগো রড্রিগেজ। আর দুর্গ সামলানোর জন্য তো এমি মার্তিনেজ আছেনই।
ওদিকে সৌদি আরবের মনে শান্তি নেই। সেটা কেবল প্রথম ম্যাচের প্রতিপক্ষ আর্জেন্টিনার বলে নয়। পাশের ছোট্ট দেশ কাতার বিশ্বকাপ আয়োজন করে একটা বড় শিক্ষাই দিয়েছে মধ্যপ্রাচ্যের মোড়লদের। তারপর বেরসিক ভাগ্য প্রথম ম্যাচেই জুটিয়ে দিয়েছে মেসির দলকে। তাই পরের ধাপে যাওয়ার বড় আশা করাটাই কঠিন হয়ে পড়েছে ফরাসি কোচ হার্ভে রেনাঁর শিষ্যদের। তারপরও অভ্যস্ত আবহাওয়ায় খেলা বলেই যা একটু সুবিধে। বড়জোর দলের মূল শক্তির জায়গা রক্ষণভাগকে জমাট করে মেসি-মার্তিনেজ, ডি মারিয়াদের রুখে দিতে পারলেই বড় পাওয়া হবে আরবদের জন্য।
শক্তি, ঐতিহ্য, ফর্ম বিবেচনায় বড় কোনো দুর্ঘটনা না ঘটলে আজ বড় জয়েই বিশ্বকাপ শুরু করতে চাইবে আর্জেন্টিনা। কাল পর্যন্ত যতটুকু জানা গেছে, হালকা চোট থেকে সেরে মেসিও প্রস্তুত মাঠে নামতে। নামবেন না-ই বা কেন? এই বিশ্বকাপ যে অনেক কিছু পাওয়ার বিশ্বকাপ। এই শিরোপা না জিতলে যে কখনই আর্জেন্টিনা মেসির আর্জেন্টিনা হবে না। সেটা হয়ে থাকবে ম্যারাডোনার আর্জেন্টিনা। লিওনেলদের রূপকথার যাত্রাটা তাই শুরু হোক জয়ের মুকুট পরে। যেভাবে তারা কোপা জিতে হাসি ফিরিয়েছিলেন ভক্তদের মুখে, ঠিক সেভাবেই যেন লুসাইল স্টেডিয়ামে ১৮ ডিসেম্বর শেষ হাসিটা হাসেন লিওনেল জুটি।
কাতার পৌঁছে আমি সত্যিই খুব অবাক হয়েছি। অনেক কিছুই বদলে গেছে। নতুন বানানো সুন্দর সুন্দর সব স্টেডিয়াম, হোটেল, যাতায়াত ব্যবস্থা... সবকিছুই অনেক উন্নত হয়েছে। আমি এখানে ২০১১ আর ২০১৫ সালে এসেছিলাম। বিশ্বকাপ উপলক্ষে এরকম একটা বড় পরিবর্তন দেখতে পাব, সেটাই স্বাভাবিক। আর এই বৈপ্লবিক পরিবর্তন এসেছে কাতারের শক্তিশালী অর্থনৈতিক সামর্থ্যরে কারণেই। বিশ্বকাপ ফুটবল উপলক্ষে কাতার নিজেদের পুরোপুরি বদলে ফেলেছে। কাতার হয়ে উঠেছে আরও সুন্দর, আরও উন্নত। এই শহরে এসে আমি অদ্ভুত একটা শক্তি অনুভব করতে পারছি। এই নিয়ে তৃতীয়বার এলাম এবং নতুন এই দোহা দেখে সত্যিই চমকে গেছি। আমি ভেবেছিলাম শহরটা বোধহয় খুব বেশি বদলাবে না, তবে কাতার আমাকে ভুল প্রমাণিত করেছে। একবার এখানে পা দিলেই টের পাওয়া যাবে এই দেশ কতটা বদলে গেছে। আমি আশা করব বিশ্বকাপ দেখতে আসা সবাই আয়োজনটা উপভোগ করবে।
আমার মনে হয় আর্জেন্টিনা অন্যতম ফেভারিট হয়েই কাতারে পা রেখেছে, আরও দুই ফেভারিট হচ্ছে ব্রাজিল ও ফ্রান্স। তবে এই দলগুলোর বাইরেও আরও অনেকগুলো ভালো দল আছে যারা টুর্নামেন্টে শেষ পর্যন্ত টিকে থাকার জন্য লড়াই করবে। এই বিশ্বকাপটা হবে কঠিন বিশ্বকাপ। প্রতিপক্ষ সহজ হোক বা দুর্বল, বিশ্বকাপের প্রথম দুটো ম্যাচ যে কোনো দলের জন্যই খুব গুরুত্বপূর্ণ। এটা যে কোনো দলকেই তাদের শক্তিশালী দিক আর দুর্বল দিক খুঁজে পেতে সহায়তা করবে। এই দুটো ম্যাচ যে কোনো দলকেই মাঠটা কেমন, পরিবেশটা কেমন সেটা বুঝতে সহায়তা করবে আর আত্মবিশ্বাস অর্জন করতে পারবে। সাবধানী খেলে গ্রুপ পর্বটা সহজে পার হও, পরের পর্ব থেকে আত্মবিশ্বাস নিয়ে খেল।
এই আর্জেন্টিনা দলটার সবচেয়ে বড় শক্তির জায়গা আমার কাছে মনে হয় দলের শক্তিশালী রিজার্ভ বেঞ্চ। দলে একঝাঁক প্রতিভাবান খেলোয়াড় আছে। মেসির দলটা কোনো ম্যাচ না হেরেই বিশ্বকাপে খেলতে এসেছে। কোচ লিওনেল স্কালোনি অনেকদিন ধরেই এই খেলোয়াড়দের চেনে এবং জানে।
তবে তাকে সতর্ক থাকতে হবে কারণ অনেক সময় গোটা ম্যাচ ভালো খেলেও শেষ মুহূর্তে দুর্ভাগ্যজনক কোনো কারণে ম্যাচ হারতে হতে পারে। সব খেলোয়াড়ই ইউরোপে ক্লাব ফুটবল মৌসুমের মাঝপথে জাতীয় দলে এসে যোগ দিয়েছে। এটা খেলোয়াড়দের খুব সাহায্য করবে কারণ ফ্রান্সের ফুটবল লিগ অনেক কঠিন। বিশ্বকাপে রেফারিরা অনেক বেশি কড়া। প্রতিপক্ষও কঠিন। মেসির অবশ্য এরই মধ্যে সব কিছু সহ্য করে নেওয়ার অভিজ্ঞতা হয়ে গেছে।
আমার আর আমার সব সতীর্থের জন্য, ১৯৮৬’র বিশ্বকাপটা ছিল খুবই কঠিন। আমরা যখন মেক্সিকো পৌঁছাই তখন খুব চাপের মধ্যে ছিলাম। তবে ১৯৯০’র বিশ্বকাপটা আমাদের কাছে ছিল অনেক বেশি আবেগের। আমরা চোট-জর্জর হয়ে বিশ্বকাপে পৌঁছেছিলাম। আমরা ফাইনালে উঠলাম আর আমরা অন্যায্যভাবে হেরে গেলাম। যেসব খেলোয়াড়কে আমরা সেমিফাইনালে আসতে আসতে হারিয়েছি, কোনো সন্দেহ নেই তাদের ফাইনালে পেলে গল্পটা অন্য রকম হতে পারত। তবে মেসি আর তার দলের পরিস্থিতিটা আলাদা। তারা এসেছে দক্ষিণ আমেরিকার চ্যাম্পিয়ন হয়ে। তাদের ওপর খুব বেশি চাপ নেই, খুব বেশি খেলোয়াড়ের চোটও নেই।
মেসি, এই বিশ্বকাপটা ম্যারাডোনার জন্য জিতে নাও আর শিরোপাটা তাকে উৎসর্গ করো। এটাই হতে পারে ম্যারাডোনার প্রতি শ্রেষ্ঠ শ্রদ্ধাঞ্জলি। আর্জেন্টিনার জার্সিতে বিশ্বকাপে খেলাটা একজন খেলোয়াড়ের জন্য সবচেয়ে গৌরবের মুহূর্ত, একই সঙ্গে সবচেয়ে কঠিনও। টাকা-পয়সা কিছু না, এই আকাশি-নীল জার্সির মূল্য অনেক বেশি। শুধু আমার একার নয়, গোটা আর্জেন্টিনার মানুষেরই আশা, মেসি ৩৬ বছর পর বিশ্বকাপটা উৎসর্গ করবে বিশ্বের শ্রেষ্ঠ ফুটবলার ম্যারাডোনাকে, যে দুই বছর আগে এই নভেম্বর মাসেই পৃথিবী থেকে চিরবিদায় নিয়েছে।
সমর্থনের কারণে বিভক্তি থেকে যায়। তবুও পুরো বিশ্ব যেন এক হয়। বিশ্বকাপ ফুটবলের শক্তি এটাই। এর বিশেষত্ব এজন্যই আলাদা। রবিবার রাতে কাতার-ইকুয়েডর ম্যাচ দিয়ে শুরু হয়েছে ফুটবলের মহাযজ্ঞ। তবে উপদ্বীপের উন্মাদনাটা ব্রাজিল-আর্জেন্টিনাকে ঘিরেই, যা শুরু হচ্ছে আজ থেকে। এই উপত্যকার সমর্থকদের চোখ থাকবে কাতারের লুসাইল স্টেডিয়ামে। যেখানে আজ মাঠে নামছে বিশ্বকাপের অভিষেক আসরের রানার্সআপ আর্জেন্টাইনরা। ফুটবল জাদুকর লিওনেল মেসিরা মুখোমুখি হবেন এশিয়ার আরেক দল সৌদি আরবের।
যেকোনো প্রতিযোগিতায় প্রত্যেক দলের কাছে প্রথম ম্যাচ খুব গুরুত্বপূর্ণ। সবারই লক্ষ্য থাকে এই ম্যাচ জিতে মানসিকভাবে এগিয়ে থাকা, বাকি পথটা সহজ করা। আজ আর্জেন্টিনারও সেই লক্ষ্য থাকবে। সৌদি আরবকে হারিয়ে এগিয়ে যাওয়া।
চলতি শতাব্দীর পাঁচ বিশ্বকাপের প্রতিটি আসরের প্রথম ম্যাচেই জয় পেয়েছিল আর্জেন্টিনা। ২০০২ সাল ছাড়া প্রতিটিতেই তারা নকআউট পর্ব খেলেছে। সেবার বাতিস্তা-সেমিওয়ালাসহ তারকা খেলোয়াড়দের নিয়ে গড়া দলটি গ্রুপ পর্ব থেকেই বিদায় নিয়েছিল। তবে বাকি আসরগুলোর একটিতে সেকেন্ড রাউন্ড, দুটিতে কোয়ার্টার ফাইনাল ও একটিতে ফাইনাল খেলেছে তারা।
ফুটবল বিশ্বকাপের অভিষেক আসর হয়েছিল ১৯৩০ সালে। উরুগুয়ের রাজধানী মোন্তেভিদেওতে এস্তাদিও পসিটস মাঠে নিজেদের প্রথম ম্যাচ খেলেছিল আর্জেন্টিনা। সেই ম্যাচে ফ্রান্সকে ১-০ গোলে হারিয়ে তারা শুভ সূচনা করেছিল। সে আসরে তারা উঠেছিল ফাইনালে। যদিও উরুগুয়ের কাছে হেরে রানার্সআপ হয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয়। পরের আসর ১৯৩৪ সালে ইতালির বোলোনিয়ায় সুইডেনের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচ খেলতে নামে তারা। সে ম্যাচে তারা ৩-২ গোলে হেরে যায়।
পরের বিশ্বকাপের আয়োজক দেশ হওয়ার আগ্রহ দেখিয়েছিল আর্জেন্টিনা। কিন্তু ফিফার সভায় ভোটাভুটিতে নির্বাচিত হয় ফ্রান্স। আয়োজক হতে না পারার আক্ষেপে তারা ১৯৩৮ সালের বিশ্বকাপ থেকে নিজেদের নাম প্রত্যাহার করে নেয়। ইউরোপে বিশ্বকাপ হওয়াতে উরুগুয়েও সে আসরে অংশ নেয়নি। এরপর পৃথিবীতে নেমে আসে যুদ্ধ। বিশ্বযুদ্ধের কারণে ১৯৪২ ও ১৯৪৬ সালে বিশ্বকাপ আয়োজিত হয়নি।
আর্থিক বনিবনা না হওয়াতে আর্জেন্টিনার অনেক খেলোয়াড় দেশ ছেড়েছিলেন। ফলে তাদের জাতীয় দলটি হয়ে পড়ে দুর্বল। কিন্তু খর্বশক্তির দল নিয়ে খেলে লজ্জায় পড়তে চায়নি দেশটির ফেডারেশন। এছাড়া ব্রাজিলের সঙ্গে আর্জেন্টিনার ফুটবল ফেডারেশনের সম্পর্কেরও অবনতি হতে থাকে। তাই ১৯৫০ বিশ্বকাপ থেকেও নিজেদের নাম প্রত্যাহার করে নেয় তারা।
বিশ্বকাপ হচ্ছে অথচ আর্জেন্টিনা নেই! আকাশি-নীল দলটি ছাড়া বিশ্বকাপ কেমন যেন ফাঁকা ফাঁকা লাগে। একটু অবিশ্বাস্য শোনাতে পারে, প্রথম বিশ্বকাপের রানার্সআপ আর্জেন্টিনা ত্রিশ থেকে পঞ্চাশের দশক পর্যন্ত টানা তিনটি আসরে অংশই নেয়নি! ১৯৫০ তো বটেই, ১৯৫৪ সালের সুইজারল্যান্ড বিশ্বকাপও বর্জন করেছিল আর্জেন্টাইন। তবে ১৯৫৮ সালে সুইডেনে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপ দিয়ে ৩৪ বছর পর ফুটবলের বিশ্বমঞ্চে ফিরে আসে তারা।
তবে ১৯৫৮ সালের প্রত্যাবর্তনটা তারা রাঙাতে পারেনি। ৮ জুন নিজেদের প্রথম ম্যাচে পশ্চিম জার্মানির বিপক্ষে ৩-১ গোলে হেরে যায়। শুধু তাই নয়! সেবার তারা গ্রুপ পর্ব থেকেই বিদায় নেয়। পরের আসরে চিলিতে ১৯৬২ সালে নিজেদের প্রথম ম্যাচ তারা খেলে বুলগেরিয়ার বিপক্ষে। সেদিন তারা ১-০ গোলে জিতে শুভ সূচনা করেছিল। কিন্তু এ বছরও তারা গ্রুপ পর্ব থেকে বিদায় নেয়।
তবে ইংল্যান্ডে ১৯৬৬ সালের বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনা কোয়ার্টার ফাইনাল খেলে। সে আসরে তারা নিজেদের প্রথম ম্যাচ খেলেন স্পেনের বিপক্ষে ১৩ জুলাইয়ের সেই ম্যাচে ২-১ গোলে জিতে তারা শুভ সূচনা করেছিল। যদিও ১৯৭০ সালের বিশ্বকাপে আবার তারা উত্তীর্ণ হতে পারেনি।
১৯৭৪ বিশ্বকাপে দ্বিতীয় পর্ব থেকেই বিদায় নিয়েছিল। শুরুটাও খুব ভালো বলা যায় না। ইতালির সঙ্গে ১-১ গোলে ড্র করে বিশ্বকাপ অভিযান শুরু করেছিল। নিজেদের সোনালি সময়টা যারা হেলা আর অহমের কারণে বিশ্বকাপ নামক লক্ষ্মীকে পায়ে ঠেলে বিদায় করেছে, সেই আকাশি-নীল জার্সিধারী আর্জেন্টাইনরা ১৯৭৮ সালে এসে শিরোপার স্বাদ পায়। সেবার নিজেদের প্রথম ম্যাচে হাঙ্গেরিকে ২-১ গোলে হারিয়ে শুভ সূচনা করেছিল।
শিরোপা জয়ের পরের আসরে ১৯৮২ সালে স্পেন বিশ্বকাপে আবার দ্বিতীয় পর্ব থেকেই বিদায় নেয়। সেবার বেলজিয়ামের কাছে ১-০ গোলে হেরে বিশ্বকাপ যাত্রা শুরু হয়েছিল তাদের। তবে ১৯৮৬ সালে ম্যারাডোনার হাত ধরে ফের শিরোপা যায় আর্জেন্টিনাতে। মেক্সিকোতে সেবার দক্ষিণ কোরিয়াকে ৩-১ গোলে গুঁড়িয়ে বিশ্বকাপে শুভ সূচনা করেছিল, যা শেষ পর্যন্ত ধরে রাখে তারা। সেবার একই ম্যাচে ‘হ্যান্ড অব গড’ ‘গোল অব দ্য সেঞ্চুরি’ দেখেছিল ফুটবলবিশ্ব। যার মাধ্যমে ম্যারাডোনা হয়ে ওঠেন ফুটবল ঈশ্বর।
১৯৯০ সালে ফের বিশ্বকাপের শিরোপা জয়ের সুযোগ পেয়েছিল আর্জেন্টিনা। কিন্তু পশ্চিম জার্মানির কাছে হেরে রানার্সআপ হয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয় তাদের। সেবার নিজেদের প্রথম ম্যাচটাও অবশ্য ক্যামেরুনের বিপক্ষে ১-০ গোলের হার দিয়ে শুরু করেছিল।
পরের আসর ১৯৯৪ সালে যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বকাপে গ্রিসকে ৪-০ গোলে গুঁড়িয়ে দিয়ে টুর্নামেন্টে শুভ সূচনা করেছিল। কিন্তু রাউন্ড ১৬ থেকেই তাদের বিদায় নিতে হয়েছিল।
ফ্রান্সে ১৯৯৮ বিশ্বকাপে জাপানকে ১-০ গোলে হারিয়ে যাত্রা শুরু হয়েছিল আর্জেন্টিনার। তবে কোয়ার্টার ফাইনাল থেকেই বিদায় নিতে হয়। পরের আসরে জাপান-কোরিয়ার যৌথ উদ্যোগে ২০০২ বিশ্বকাপে নিজেদের প্রথম ম্যাচে নাইজেরিয়াকে ১-০ গোলে হারায় সেমিওয়ালার দল। কিন্তু গ্রুপ পর্ব থেকেই বিদায় নেয় আর্জেন্টিনা।
জার্মানিতে ২০০৬ সালে নিজেদের প্রথম ম্যাচে আইভেরি কোস্টের বিরুদ্ধে ১-০ গোলের জয়ে বিশ্বকাপ যাত্রা শুরু করে। কিন্তু কোয়ার্টার ফাইনালে স্বাগতিকদের কাছে হেরে বিদায় নিতে হয়। দক্ষিণ আফ্রিকার ২০১০ বিশ্বকাপেও এই জার্মানির কাছেই হেরে কোয়ার্টার ফাইনাল থেকে বিদায় নেয়। তবে নাইজেরিয়াকে নিজেদের প্রথম ম্যাচে ১-০ গোলে হারায় তারা।
ব্রাজিলে ২০১৪ বিশ্বকাপে ফাইনালে জার্মানির কাছে হেরে শিরোপাবঞ্চিত হয় আর্জেন্টিনা। বসনিয়া ও হার্জেগোভিনার বিপক্ষে ২-১ ব্যবধানের জয় দিয়ে শুরু হয়েছিল বিশ্বকাপ মিশন। তবে যাচ্ছেতাই পারফরম্যান্স নিয়ে বিশ্বকাপ খেলতে এসেছিল তারা রাশিয়াতে। যার প্রমাণ তাদের ফলাফলে। নিজেদের প্রথম ম্যাচে আইসল্যান্ডের বিপক্ষে ১-১ গোলে ড্র করে তারা। ফ্রান্সের কাছে হেরে রাউন্ড ১৬ থেকে বিদায় নেয়।
তবে কোপা আমেরিকা আর ফিনালিসসিমা জয়ের পর আত্মবিশ্বাসের তুঙ্গে আছে আর্জেন্টিনা। ঘুচিয়েছে তাদের ২৮ বছরের শিরোপা-খরা। এবার সুযোগ বিশ্বজয়ের। অঘটন না হলে যার শুরুটা হতে পারে লুসাইলে সৌদি আরবের বিপক্ষে জয় দিয়ে।
কাতার বিশ্বকাপে নিজেদের প্রথম ম্যাচে মাঠে নামতে যাচ্ছে আর্জেন্টিনা। প্রতিপক্ষ এশিয়ার শক্তিশালী সৌদি আরব। আর্জেন্টিনার ফুটবল ঐতিহ্যের কাছে যারা আসলে কিছুই না! তারপরও এটা বিশ্বকাপ। এখানে কোনো দলকেই খাটো করে দেখার উপায় নেই। তবে এটা তো বলাই যায়, সবার চোখ থাকবে আজ আর্জেন্টিনা কত ব্যবধানে জেতে সেই দিকে। দুইবারের চ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনা বাংলাদেশের মানুষের প্রাণের একটি দল। সেই ডিয়েগো ম্যারাডোনার সময় থেকে। এখন পর্যন্ত লিওনেল মেসি যে ব্যাটনটা ধরে রেখেছেন। সমর্থকদের অনেক প্রত্যাশাও তার ও তাদের দলের ওপর। সেই দিক থেকে আজকের ম্যাচটিতে তাদের পারফরম্যান্স কেমন হয়, সেটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। সামনে তাদের যাত্রার অনেক কিছু নির্ভর করবে এই ম্যাচটির ওপর।
সৌদি আরব এশিয়ার শক্তিধর হলেও আমাদের দেশের সব দর্শকই আসলে আর্জেন্টিনার পক্ষেই থাকবে। কেউ সৌদি আরবের পক্ষে থাকবে না। ম্যাচটি আর্জেন্টিনার জন্য আবার চ্যালেঞ্জিংও। প্রথম ম্যাচে যদি কোনো কিছু করার থাকে, সেই কাজটি তারা সেভাবেই করবে। আশা করি ম্যাচটি অসম্ভব ভালো হবে।
মেসির কাছে এবার সবারই বাড়তি চাওয়া আছে। কারণ এই বিশ্বকাপই তার শেষ বিশ্বকাপ হতে যাচ্ছে। মেসি একটা বিশ্বকাপ পাক এই চাওয়াটা আসলে সবারই। এত বড় একজন খেলোয়াড় বিশ্বকাপে ট্রফি জিততে না পারলে অপূর্ণতা তো থেকেই যায়। ক্যারিয়ারের শেষ লগ্নে এসে বিশ্বকাপের ট্রফি তার হাতে উঠলে পৃথিবীর সব মানুষ খুব খুশি হবে। গত বছর কোপা আমেরিকার শিরোপা জিতেছে আর্জেন্টিনা। মেসিকে ট্রফি হাতে উদযাপন করতে দেখে কে না খুশি হয়েছে। বিশ্বকাপেও সেটা হতেই পারে।
আর্জেন্টিনার বর্তমান দলটাকে সাম্প্রতিক সময়ে তাদের সেরা বলে মনে হচ্ছে। যদিও লো সেলসো ইনজুরির কারণে দলে নেই। নিকো গনসালেস ও হোয়াকিন কোরেয়া পরে ছিটকে গেছে। তবে সব পজিশনেই তাদের কার্যকরী খেলোয়াড় রয়েছে। তাই অতটা ভয়ের কিছুও দেখছি না আমি। এখন যারা দলে আছে তাদের সুস্থ থেকে পুরো টুর্নামেন্ট শেষ করাটাই গুরুত্বপূর্ণ হবে।
ব্যক্তিগতভাবে আমি মনে করি সৌদি আরবের বিপক্ষে মেসি মাঠে একাই অনেক কিছু। প্রথম ম্যাচে যদি সে ঝলসে ওঠে এবং সেই ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে পারে, তাহলে বাংলাদেশের মানুষের মন জয় করবে সে। মেসির সেই ক্রীড়া নৈপুণ্য দেখার জন্য বাংলাদেশের মানুষ বসে আছে। কাতারে যারা মাঠে বসে খেলা দেখবে তারাও বসে আছে। সারা পৃথিবীর মানুষই অপেক্ষা করছে। সবার প্রত্যাশা মেসি ভালো খেলবে এবং তার দল ভালো খেলবে। আর আর্জেন্টিনার অন্য খেলোয়াড়রাও মেসির জন্য বিশেষ কিছু করতে চাইবে। গ্রহের অন্যতম সেরা খেলোয়াড়ের শেষ বিশ্বকাপটা তারাও চাইবে রঙিন করতে। মেসিকে বিশেষ কিছু উপহার দিতে।
এটা আমরা বলতেই পারি, বাংলাদেশের মানুষের চাওয়া থাকবে আর্জেন্টিনা-ব্রাজিল অনেক দূর যাক। কারণ ব্রাজিলেরও অনেক সমর্থক আছে। বিশ্বকাপে যে দলগুলো এসেছে প্রতিটি দলকেই সমীহ করতে হবে। এখানে তুলনামূলকভাবে আর্জেন্টিনা এগিয়েই আছে অনেকটা। কারণ সাম্প্রতিক সময়ে অনেকগুলো গোল করেছে তারা। অপরাজিত আছে টানা ৩৬ ম্যাচে। সেই দিক থেকে আর্জেন্টিনা দল খুব ভালো পারফরম্যান্স করবে বলেই আমি আশাবাদী। তাদের বর্তমান দলটা যে ধারার মধ্যে আছে, আমার মনে হয় না সৌদি আরবের বিপক্ষে জিততে বেগ পেতে হবে তাদের। সবার চোখ যেহেতু মেসির দিকে থাকবে, তাই চাইব মেসি কিছু একটা করুক। তার জাদু দেখতে সারা পৃথিবীর মানুষই বসে আছে।
আরও এক ফেভারিট ফ্রান্স মাঠে নামবে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে। যেহেতু তারা বর্তমান চ্যাম্পিয়ন, তাদের দিকেও নজর থাকবে সবার। করিম বেনজেমা চোটের কারণে ছিটকে গেছে। পল পগবা নেই। তবে কিলিয়ান এমবাপ্পের মতো সময়ের সেরা খেলোয়াড় আছে তাদের দলে। ২০১৮ সালে যে দলটি খেলেছিল সেই দলের সঙ্গে তুলনা করলে বলব, এই দলটায় মিডফিল্ড ও ডিফেন্স এরিয়ায় একটু ঘাটতি আছে। প্রতিপক্ষ যেহেতু অস্ট্রেলিয়া, ওরাও খুব খারাপ দল না। বিশ্বকাপে সবার প্রথম ম্যাচে কিন্তু নিজেদের গুছিয়ে নেওয়ার ব্যাপারও থাকে। যেহেতু দীর্ঘদিন খেলোয়াড়রা ক্লাব ফুটবলে জড়িত ছিল। সবাই বিশ্বকাপের মাত্র কিছুদিন আগে দলের সঙ্গে যোগ দিয়েছে। এ কারণেই গুছিয়ে নিতে একটু সময় লাগে। প্রথম ম্যাচটা ভালো হলে যে কাজটা সহজ হয়ে যায়। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ফ্রান্সকে ফেভারিট ধরা যায়। যদি নিজেদের মতো করে খেলতে পারে তাহলে অস্ট্রেলিয়া ম্যাচে ওদের জিততে অসুবিধা হবে না বলেই আমি মনে করি।
বাংলাদেশের ৫৩তম মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস রবিবার।
একাত্তরের ২৫ মার্চ কালরাতে পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী বাঙালিদের ওপর অতর্কিত গণহত্যা অভিযান ‘অপারেশন সার্চলাইট’ শুরু করে এবং বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে গ্রেপ্তার করে।
গ্রেপ্তারের পূর্বে বঙ্গবন্ধু ২৬ মার্চ রাতের প্রথম প্রহরে ঢাকায় বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন।
১৯৭০-এর সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে জয়লাভ করা সত্ত্বেও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কাছে পাকিস্তানি সামরিক জান্তা ক্ষমতা হস্তান্তর না করে পাকিস্তানি সেনারা বাঙালি বেসামরিক লোকের ওপর গণহত্যা শুরু করে।
তাদের এ অভিযানের মূল লক্ষ্য ছিল আওয়ামী লীগসহ তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের প্রগতিশীল সকল রাজনৈতিক নেতা-কর্মী এবং সকল সচেতন নাগরিককে নির্বিচারে হত্যা করা। ওই ঘোষণা বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন প্রচার মাধ্যমে প্রচারিত হয়।
বঙ্গবন্ধুকে তার ধানমন্ডির বাসভবন থেকে গ্রেপ্তারের আগে তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণার পাশাপাশি যে কোনো মূল্যে শত্রুর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানান।
মুহূর্তের মধ্যেই বঙ্গবন্ধুর এ ঘোষণা ওয়্যারলেসের মাধ্যমে দেশে-বিদেশে ছড়িয়ে দেওয়া হয়। সেই সময় বাস্তবতা ও নিরাপত্তা জনিত কারণে বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার এই ঘোষণা নথি সংরক্ষণ করা সম্ভব ছিল না। পরবর্তী সময়ে সংবিধানের ষষ্ঠ তফসিলে বঙ্গবন্ধুর ঘোষণাটি অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
তৎকালীন ইপিআর-এর ট্রান্সমিটারের মাধ্যমে সারাদেশে ছড়িয়ে পরে। পরে চট্টগ্রামের স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে ২৬ ও ২৭ মার্চ বেশ কয়েকজন শেখ মুজিবের পক্ষে স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠ করেন।
দীর্ঘ নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধর পর ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বিশ্বের মানচিত্রে নতুন রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ ঘটে একটি ভূখণ্ডের, যার নাম বাংলাদেশ।
দেশে ইতিমধ্যে কিছু এলাকায় পরীক্ষামূলকভাবে ফাইভজি ইন্টারনেট সেবা চালু করেছে রাষ্ট্রায়ত্ত মোবাইল ফোন অপারেটর টেলিটক। অন্য অপারেটর গ্রামীণফোন, রবি ও বাংলালিংক একই সেবা চালুর প্রস্তুতি নিচ্ছে। তবে সব মোবাইল অপারেটরই দেশের বেশিরভাগ স্থানে ফোরজি সেবা চালু করেছে। আর সে হিসেবেই তারা ইন্টারনেট প্যাকেজের মূল্য নির্ধারণ করেছে। কিন্তু গ্রাহকরা ফোরজি ইন্টারনেট কিনলেও দেশের অনেক এলাকায় টুজি-থ্রিজি’র সেবা পাচ্ছেন। তারা অপারেটর কোম্পানিগুলোকে এ ব্যাপারে বারবার অভিযোগ জানালেও এর সুরাহা হচ্ছে না।
জানা গেছে, রাজধানীসহ বিভাগীয় শহরগুলোতে মোটামুটিভাবে গ্রাহকরা ফোরজি সেবা পাচ্ছেন। তবে এসব এলাকায়ও অনেক সময় ফোরজি থাকে না, থ্রিজিতে নেমে আসে নেটওয়ার্ক। তবে জেলা পর্যায়ে বেশিরভাগ সময়েই থাকে থ্রিজি। আর মফস্বল ও গ্রামাঞ্চলে বেশিরভাগ সময় সেই থ্রিজিও থাকে না, তখন টুজি নেটওয়ার্কই ভরসা হয়ে দাঁড়ায়। ফলে ইন্টারনেট প্যাকেজ যথাযথভাবে থাকার পর তা কাজ করে না, বাফারিং হয়। এতে গ্রাহকরা ত্যক্তবিরক্ত হয়ে উঠছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, মোবাইল অপারেটর কোম্পানিগুলো সারা দেশের ব্যবসা একত্রে হিসাব না করে এলাকাভিত্তিক ব্যবসার হিসাব-নিকাশ করার কারণেই এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। তারা দেখেন, কোন এলাকায় তাদের গ্রাহক সংখ্যা কত, সেখানে কত সিমে ইন্টারনেট চালু আছে। যদি দেখা যায়, তাদের হিসাব মতে তা সন্তোষজনক আছে তাহলে সেখানে ফোরজি সেবা চালুর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা বহাল রাখে। প্রয়োজনীয় সংখ্যক টাওয়ার নির্মাণ করে। কিন্তু যদি দেখে সন্তোষজনক গ্রাহক নেই তাহলে সেখানে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয় না, এতে সেই এলাকায় ফোরজি পাওয়া যায় না। অথচ শহর এলাকাগুলোতে তারা বেশি ব্যবসা করলেও সেটাকে হিসাবে ধরে না। কিন্তু মফস্বল এলাকা থেকে কল বাবদ প্রয়োজনের বেশি ব্যবসা হলেও তা ইন্টারনেটের সঙ্গে সমন্বয় করে না।
মোবাইল ফোন অপারেটর কোম্পানিগুলোর ফেসবুক পেইজে প্রতিনিয়ত অসংখ্য অভিযোগ জানান গ্রাহকরা। অভিযোগ অনুযায়ী, অপারেটরদের মধ্যে টেলিটকের নেটওয়ার্কই বেশি দুর্বল। টেলিটকের ফেসবুক পেজের এক পোস্টে মো. ফয়জুল ইসলাম লেখেন, ‘ভাই, নেটওয়ার্ক পাই না সকাল থেকে। মিরপুর-২ নম্বরে বাসা স্টেডিয়ামের পশ্চিম পাশে। আর আমার গ্রামের কথা না হয় বাদ দিলাম।’ আরাফাত আলী লেখেন, ‘২জিবি নেট কিনলে দেড় জিবি নষ্ট হয়। মেয়াদ ১৫ দিন তাও ফুরাতে পারি না। তাহলে বুঝেন নেটওয়ার্ক কত ভালো।’ কার্জন চাকমা লেখেন, ‘পাহাড়ি এলাকায় ফোরজি নিশ্চিত করুন। আমাদের পার্বত্য এলাকাগুলোতে টেলিটকের গ্রাহক সবচেয়ে বেশি, কিন্তু শুধু থ্রিজি-টুজিতে সীমাবদ্ধ।’ রাসেল আহমেদ লেখেন, ‘গাইবান্ধার সাদুল্লাপুর উপজেলার নলডাংগা গ্রামে থ্রিজি নেটওয়ার্ক তো নেই-ই। মাঝেমধ্যে টুজি’ও নেই। বুঝুন অবস্থাটা। আমাদের থ্রিজি সেবা দেওয়ার চেষ্টা করুন।’
টেলিটকের মহাব্যবস্থাপক (সিস্টেম অপারেশন) নুরুল মাবুদ চৌধুরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমরা ইতিমধ্যে ফাইভজি রেডিনেস প্রজেক্ট শুরু করেছি। যা শেষ হতে এক বছর বা তার কিছু বেশি সময় লাগতে পারে। এর ফলে আমাদের কাভারেজ এলাকাগুলোতে ফোরজি সেবা নিশ্চিত হবে। এছাড়া আমাদের কাভারেজ বাড়ানোরও বড় পরিকল্পনা রয়েছে।’
বাংলালিংকের পেজের একটি পোস্টে মাহাদী হাসান তালহা লেখেন, ‘আমার এলাকায় আপনাদের সিম ব্যবহার করতে হলে ফোন গাছের ডালে বেঁধে লাউডস্পিকার দিয়ে কথা বলা লাগে। এত্তো ফাস্ট কেন আপনাদের নেটওয়ার্ক।’ আকরাম হোসাইন লেখেন, ‘ভাই আপনাদের সবই ঠিক, তবে নেটওয়ার্ক সেøা।’
বাংলালিংকের চিফ করপোরেট অফিসার তৈমুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ফোরজি সেবার জন্য ২৩০০ মেগাহার্জের স্পেকটার্ম প্রয়োজন হয়। কিন্তু টুজিতে তা লাগে মাত্র ৯০০ মেগাহার্জ। আমরা ইতিমধ্যে ৯৫ শতাংশ কাভারেজ এলাকায় ফোরজি সেবা নিশ্চিত করেছি। তবে আমাদের আরও বেশি সাইট লাগবে। যদি সব অপারেটর মিলে আমরা টাওয়ার শেয়ার করতে পারি, তাহলে সব গ্রাহকের কাছে ভালো সেবা পৌঁছে দেওয়া সহজ হবে।’
রবির পেজে এক পোস্টে তানভীর আহমেদ লেখেন, ‘কলাপাড়া থানা শহরে যদি থ্রিজি নেটওয়ার্ক না পাওয়া যায়, এরচেয়ে দুঃখজনক কিছুই হতে পারে না।’ এইচএমএম ইসমাঈল লেখেন, ‘ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর থানার চম্পকনগর ইউনিয়নে রবি সিমের থ্রিজি নেই। অথচ অনেক বছর আগে রবি টাওয়ার বসানো হয়েছে। আমরা রবি সিম দিয়ে ইন্টারনেট চালাতে অক্ষম।’
রবির চিফ করপোরেট অ্যান্ড রেগুলটরি অফিসার শাহেদ আলম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমাদের কাভারেজ এলাকায় ফোরজি সেবা রয়েছে। তবে দেখা যায়, অনেক ফোন ফোরজি সাপোর্ট করে না। আর কাভারেজ এলাকা থেকে যতদূরে যাওয়া যাবে, নেটওয়ার্ক তত কমতে থাকবে। এছাড়া আমাদের কিছু জায়গায় নেটওয়ার্কের কাজ চলছে। পাশাপাশি নতুন কিছু টাওয়ার তৈরির কাজও আমাদের চলছে।’
গ্রামীণের পেইজে একটি পোস্টে রহিদুল ইসলাম লেখেন, ‘ভাই আমি যখন গ্রামে যাই তখন নেটওয়ার্কের ঝামেলা হয়।’ সাইদুর রহমান লেখেন, ‘এমন সার্ভিস হলে চলবে? কলরেট, ইন্টারনেটের দাম তো ঠিকই বেশি আপনাদের, বাকি সব অপারেটরদের থেকে।’
গত বছরের ২৮ এপ্রিল টেলিকম অপারেটররা বহুল প্রতীক্ষিত ‘আনলিমিটেড’ ও ‘মেয়াদবিহীন’ ইন্টারনেট ডাটা প্যাক চালু করেছে। তবে এতে গ্রাহকদের খুব বেশি সুবিধা হচ্ছে না। কারণ এজন্য প্যাকেজের দাম বাড়িয়েছে অপারেটররা। আর মেয়াদহীন ইন্টারনেট পেতে প্যাকেজের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে একই প্যাকেজ চালু করতে হবে। কিন্তু গ্রাহকের সব সময় একই ধরনের ইন্টারনেট প্যাকেজ নেওয়ার প্রয়োজন পড়ে না। ফলে অব্যবহৃতই থেকে যাচ্ছে গ্রাহকের কেনা ইন্টারনেট। এছাড়া মেয়াদবিহীন হিসেবে মোবাইল অপারেটররা যে প্যাকেজ ঘোষণা করেছে তার যৌক্তিকতা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে গ্রাহকদের।
বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) সূত্র জানায়, গত ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দেশে সচল সিমের সংখ্যা ১৮ কোটি ২০ লাখ ৬১ হাজার। এরমধ্যে গ্রামীণফোনের গ্রাহক সংখ্যা ৭ কোটি ৯০ লাখ ৯৫ হাজার, রবির ৫ কোটি ৫০ লাখ ১৪ হাজার, বাংলালিংকের ৪ কোটি ৮৫ হাজার এবং টেলিটকের ৬০ লাখ ৬৭ হাজার। আর গত ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দেশে মোট ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১২ কোটি ৫০ লাখ। এরমধ্যে মোবাইলে ইন্টারনেট ব্যবহার করেন ১১ কোটি ৩০ লাখ ১৩ হাজার এবং ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার (আইএসপি ও পিএসটিএন)-এর মাধ্যমে ইন্টারনেট ব্যবহার করেন ১১ লাখ ৮৭ হাজার গ্রাহক।
রপ্তানিতে ভালো প্রবৃদ্ধির মধ্যেই তৈরি পোশাক খাতের আকাশে দেখা দিয়েছে শঙ্কার মেঘ। কয়েক মাস ধরেই খাতটির উদ্যোক্তারা রপ্তানি আয় কমে যাওয়া নিয়ে নানা ধরনের শঙ্কা প্রকাশ করে আসছেন। তারা বলছেন, রপ্তানির প্রধান প্রধান অঞ্চলগুলোতে দীর্ঘদিন ধরে উচ্চ মূল্যস্ফীতি থাকায় আগামীতে ওই সব অঞ্চলে রপ্তানি ব্যাপক হারে কমে গেছে। তাদের ভাষ্য, ইতিমধ্যে তার প্রভাবও স্পষ্ট হতে শুরু করেছে। অর্ডার কমে যাওয়ায় কমেছে মূলধনি যন্ত্রপাতি ও কাঁচামাল আমদানিও। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যও বলছে সে কথা। বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান বলছে, গত অর্থবছরের তুলনায় চলতি অর্থবছরের প্রথম আট মাসে মূলধনি যন্ত্রপাতি ও কাঁচামাল আমদানির ঋণপত্র খোলার হার নেমেছে প্রায় অর্ধেকে।
দেশের রপ্তানি আয়ের প্রায় ৮৫ শতাংশ আসে তৈরি পোশাক খাত থেকে। তবে এই খাতের কাঁচামাল ও মূলধনি যন্ত্রপাতির পুরোটাই আমদানিনির্ভর; যা চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরে ব্যাপক হারে কমে গেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম আট মাসে (জুলাই-ফেব্রুয়ারি) টেক্সটাইল ফেব্রিক্স আমদানির এলসি বা ঋণপত্র খোলা কমেছে ২৭ দশমিক ৬৩ শতাংশ। আলোচ্য সময়ে ৬২৬ কোটি ডলারের এলসি খোলেন গার্মেন্টস ব্যবসায়ীরা, যা গত অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ৮৬৫ কোটি ডলার।
তবে প্রস্তুত কাপড়ের চেয়ে বেশি আমদানি কমেছে কাঁচামালের। চলতি অর্থবছরের প্রথম আট মাসে কাঁচা তুলা বা কটন আমদানির এলসি খোলা কমেছে ৪৩ দশমিক ৬ শতাংশ। এ সময়ে কাঁচা তুলা আমদানিতে ১৫৩ কোটি ডলারের এলসি খোলেন ব্যবসায়ীরা। আগের অর্থবছরের একই সময়ে তুলা আমদানিতে ২৭২ কোটি ডলারের এলসি খোলা হয়েছিল। আবার তুলার চেয়ে সুতা আমদানি আরও কমেছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম আট মাসে সুতা আমদানিতে এলসি খোলা হয় ১০৭ কোটি ডলারের, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ২৪২ কোটি ডলার। এ হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে সুতা আমদানির এলসি খোলা কমেছে ৫৬ শতাংশ।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, চলতি অর্থবছরের আট মাসে শিল্পের যন্ত্রপাতি আমদানির এলসি খোলা কমেছে ৫৪ দশমিক ১১ শতাংশ। এই সময় টেক্সটাইল যন্ত্রপাতির এলসি খোলা কমেছে ৭০ দশমিক ৪২ শতাংশ। আর গার্মেন্টস ইন্ডাস্ট্রির যন্ত্রপাতি আমদানি কমেছে ৬৩ দশমিক ৫৪ শতাংশ।
মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানি করে উদ্যোক্তারা সাধারণত নতুন শিল্প-কারখানা স্থাপন বা কারখানার সম্প্রসারণ করে থাকেন। অর্থাৎ শিল্প খাতে বিনিয়োগ বাড়ে। বিনিয়োগ বাড়লে নতুন কর্মসংস্থান তৈরি হয়। মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বাড়ে। সামগ্রিক অর্থনীতিতে গতিশীলতা আসে। আর এটি কমে যাওয়ার অর্থ হচ্ছে, ব্যবসায়ী-শিল্পপতিরা ব্যবসা সম্প্রসারণ কিংবা নতুন কলকারখানা স্থাপন অনেক কমিয়ে দিয়েছেন। এতে দেশে বিনিয়োগ ও উৎপাদনে ‘ধস’ নামার একটা অশনিসংকেত পাওয়া যাচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে বিশ্ববাজারে কাঁচামাল ও জাহাজভাড়া অস্বাভাবিক বৃদ্ধি, উচ্চ মূল্যস্ফীতি, ডলারের বিপরীতে স্থানীয় মুদ্রার ব্যাপক পতন, বিভিন্ন দেশে মন্দার শঙ্কাসহ নানা কারণে দেশের অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাব পড়েছে। এর মধ্যে উচ্চ আমদানি ব্যয়ের কারণে দেশে ডলার সংকট দেখা দিলে এলসি খোলায় কড়াকড়ি আরোপ করে সরকার। এতে ডলারের ওপর চাপ কিছুটা কমানো গেলেও আমদানি জটিলতায় পড়েছে তৈরি পোশাকসহ অন্যান্য খাত।
বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সভাপতি ফারুক হাসান দেশ রূপান্তরকে বলেন, বাংলাদেশ থেকে পোশাক রপ্তানির ক্রয়াদেশ কিছুটা কমেছে। কিন্তু উচ্চমূল্যের পণ্য রপ্তানি বাড়ায় রপ্তানি আয়ে এখন পর্যন্ত কোনো প্রভাব পড়েনি। যেহেতু সাধারণ পোশাক রপ্তানি কমেছে সে কারণে কাঁচামাল ও মেশিনারিজ আমদানিও কমেছে। পাশাপাশি ডলার সংকটও আমদানি কমে যাওয়াতে ভূমিকা রেখেছে। ফারুকের আশঙ্কা, উন্নত দেশগুলোতে ব্যাংকিং খাতে যে সংকট দেখা দিয়েছে, তার কারণেও রপ্তানিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। তবে এসব বিষয় মোকাবিলায় পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
বাংলাদেশ নিটওয়্যার প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিকেএমইএ) সহসভাপতি ফজলে শামীম এহসান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ব্যাংকগুলোতে বিনিয়োগ করার মতো অর্থের সংকট রয়েছে। এ কারণে ব্যাংকগুলো বিনিয়োগ করতে পারছে না। পাশাপাশি ডলারের বিপরীতে টাকার বড় অবমূল্যায়নের কারণে মালিকরা খুব বেশি প্রয়োজন না হলে মূলধনি যন্ত্রপাতি আনছেন না। অবশ্য আন্তর্জাতিক বাজারে কাঁচামালের দাম কমায় আমদানির পরিমাণে প্রভাব পড়েছে বলেও মনে করেন ফজলে শামীম এহসান।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, মন্দার আশঙ্কায় কেউ নতুন বিনিয়োগে আগ্রহ দেখাচ্ছে না। এ কারণে মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানি কমেছে। তবে কাঁচামাল আমদানি কমে যাওয়াটাকে তারাও আসন্ন সংকট হিসেবে দেখছেন। গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক এবং ব্র্যাক ব্যাংকের চেয়ারম্যান আহসান এইচ মনসুর দেশ রূপান্তরকে বলেন, দেশে ডলারের সংকটের কারণে মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানি কমেছে। ডলার সংকটের কারণে ব্যবসায়ীরা কাঁচামাল আমদানি করতেই হিমশিম খাচ্ছেন। এটা খুব ভালো লক্ষণ নয়। তবে তিনি আশাও দেখছেন। তার ভাষ্য, আন্তর্জাতিক বাজারে কাঁচামালের দাম কমে যাওয়ায় মূলত আমদানি ব্যয় কম হয়েছে। আমদানির পরিমাণ খুব একটা কমেছে বলে মনে করেন না তিনি।
পুলিশ ভেরিফিকেশন না হওয়ায় চাকরি স্থায়ীকরণ হচ্ছিল না। কিন্তু তার দেরি সয়নি। নিজের তত্ত্বাবধানে থাকা সার্ভিস বইয়ের পাতায় কর্মকর্তার স্বাক্ষর জাল করে স্থায়ী করে নিলেন নিজের চাকরি। এই ব্যক্তি হলেন ঢাকা মশক নিবারণী দপ্তরের উচ্চমান সহকারী মো. মনোয়ার হোছাইন। স্থানীয় সরকার বিভাগ তদন্তের পর থানায় মামলা হয়। এরপর দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) তদন্তে তার বিরুদ্ধে আনা পাঁচটি অভিযোগের চারটির প্রমাণ মিলে। দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় সংশ্লিষ্ট আইনের দুটি ধারায় তার ১২ বছর সাজা ও অর্থদ- হয়েছে। পুলিশ মনোয়ারকে এখনো গ্রেপ্তার করতে পারেনি।
অনুসন্ধানে জানা যায়, ১৯৯৪ সালের ১৯ মে ‘ক্রু’ বা মশককর্মী পদে যোগ দেন মনোয়ার হোছাইন। দপ্তরের চাকরি বিধিমালা অনুযায়ী, এলডিএ কাম টাইপিস্ট হওয়ার সুযোগ নেই। কিন্তু অসম্ভবকে সম্ভব করে তিনি ওই পদও বাগিয়েছেন। ওই পদ থেকে উচ্চমান সহকারী (হেড ক্লার্ক) পদেও পদোন্নতি নিয়েছেন। এরপর দপ্তরের প্রশাসনিক কর্মকর্তার পদের অতিরিক্ত দায়িত্ব নিয়ে নেন। তথ্য গোপন করে পদোন্নতি নেওয়া এই কর্মকর্তার বাদ ছিল চাকরিতে স্থায়ী হওয়া। প্রথমবার কর্মকর্তাদের ব্যবহার করে বিধিবহির্ভূত পদোন্নতি নেওয়ার পর তার উচ্চাকাক্সক্ষা বেড়ে যায়। ২০১০ সালের ২৬ জানুয়ারি তিনি দপ্তরের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার স্বাক্ষর জাল স্বাক্ষর করে চাকরি স্থায়ী করেন। এর আগে দপ্তরের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ডা. রওশন আরা তালুকদারকে চাকরি স্থায়ী করার জন্য চাপ দেন। কিন্তু তিনি রাজি হননি।
এ ঘটনার পর ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা স্থানীয় সরকার বিভাগ ও দুদকের তদন্ত কমিটির কাছে লিখিতভাবে তার স্বাক্ষর জাল করার বিষয়ে অভিযোগ করেন। ২০১১ সালে মনোয়ারকে বরখাস্ত করা হয়।
ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ডা. রওশন আরা তালুকদার তদন্ত কমিটির কাছে অভিযোগের পক্ষে বিভিন্ন প্রমাণও জমা দেন। তিনি লিখিত বক্তব্যে জানান, অভিযুক্ত মনোয়ার হোছাইনের চাকরি স্থায়ীকরণ সংক্রান্ত চাকরি বইয়ের দ্বিতীয় খ-ের নবম পৃষ্ঠায় যে স্বাক্ষর রয়েছে তা তার নয়। ২০১০ সালের ২৬ জানুয়ারি তারিখের স্বাক্ষরটি মনোয়ারের সৃজনকৃত। চাকরিকালীন তার বিষয়ে কোনো পুলিশ ভেরিফিকেশন করানো হয়নি। এ জন্য তার চাকরিও স্থায়ী করা হয়নি। আর সার্ভিস বইয়ে যে সিল ব্যবহার করা হয়েছে তা তার সময়ে ব্যবহৃত সিল থেকে ভিন্ন। সিলের নিচে যে স্বাক্ষর রয়েছে তিনি বলতে পারবেন সেটা কীভাবে হলো। ইস্যু রেজিস্টার খাতায় ৪৬ নম্বর দিয়ে যে চিঠিটি তৈরি করা হয়েছে তার কোনো কপি কার্যালয়ে পাওয়া যায়নি। ৪৬ নম্বর ক্রমিকটি ২০১০ সালের ২৬ জানুয়ারি লেখা রয়েছে। অন্যান্য কলাম খালি রয়েছে। পরের পাতায় ২০১০ সালের ২৫ জানুয়ারি ২৬ নম্বর ক্রমিক দিয়ে একটি বদলির চিঠি ইস্যু করা হয়েছে।
ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আরও জানান, ঢাকা মশক নিবারণী দপ্তরের উচ্চমান সহকারী হিসেবে কর্মরত ছিলেন মনোয়ার হোছাইন। দপ্তরের বিধি-বিধান অনুযায়ী নথি, রেকর্ডপত্র, সার্ভিস বই তার কাছে রক্ষিত ছিল। এ কারণে জাল স্বাক্ষরের দায় তিনি কোনোভাবেই এড়াতে পারেন না। দপ্তরে জমা দেওয়া তার এলএলবি পাসের সনদও সঠিক ছিল না। জাতীয় বিশ^বিদ্যালয় থেকে তার ওই সনদ সঠিক নয় বলে লিখিতভাবে দপ্তরকে জানানো হয়েছে।
মনোয়ারের বিরুদ্ধে অনিয়মতান্ত্রিক কার্যকলাপ, নিয়োগ বাণিজ্য, স্বাক্ষর জাল, নিজেই নিজের চাকরি স্থায়ীকরণ এবং নথি, রেকর্ডপত্র, সার্ভিস বইয়ে ত্রুটি ঘটানোসহ পাঁচটি অভিযোগ আনা হয়। এর মধ্যে চারটি অভিযোগের প্রমাণ মেলে।
ঢাকা মশক নিবারণী দপ্তর সূত্রে জানা যায়, স্থানীয় সরকার বিভাগের নির্দেশে ২০১৩ সালের ১৮ জুন দপ্তরের পক্ষ থেকে চকবাজার থানায় তার বিরুদ্ধে মামলা (নম্বর-৪) করা হয়। পরে মামলাটি তদন্তের জন্য দুদকে পাঠানো হয়। দুদক তদন্ত করে মনোয়ারের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে। ঢাকার বিশেষ জজ আদালত ২০২২ সালের ৭ ডিসেম্বর তাকে দোষী সাব্যস্ত করে রায় দেওয়া হয়। সংশ্লিষ্ট আইনের একটি ধারায় তার পাঁচ বছরের কারাদ- হয়। পাশাপাশি ২০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে তিন মাসের সশ্রম কারাদ- দেয় আদালত। আরেকটি ধারায় সাত বছরের কারাদন্ড দেওয়ার পাশাপাশি ২০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে তিন মাসের কারাদন্ড দেওয়া হয়েছে।
জানতে চাইলে ঢাকা মশক নিবারণী দপ্তরের বরখাস্ত উচ্চমান সহকারী মনোয়ার হোছাইন দেশ রূপান্তরকে বলেন, একটি চক্র তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে চলেছে। তাদের চক্রান্তের শিকার হয়ে তিনি কর্মস্থল থেকে বরখাস্ত হয়েছেন। কর্মকর্তার স্বাক্ষর জাল এবং আদালতের সাজার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ষড়যন্ত্রকারীরা কত কিছু করছে। কোথায় আবার কী করেছে বুঝতে পারছি না। এ প্রসঙ্গটি বারবার উত্থাপন করলেও তিনি এড়িয়ে যান।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, গণহত্যা নিয়ে পাকিস্তান যা বলে, তারাও (বিএনপি) তাই বলে। কারণ তারা পাকিস্তানি ভাবধারায় উজ্জীবিত, তাদের হৃদয়ে পাকিস্তানি চেতনা।
আজ রবিবার (২৬ মার্চ) ভোরে মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়ে বীর শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে তিনি এসব কথা বলেন।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলামের দাবি 'আওয়ামী লীগের ভুলের জন্য গণহত্যা হয়েছিল'- এমন প্রশ্নের জবাবে কাদের বলেন, তাদের (বিএনপি) হৃদয়ে পাকিস্তানি চেতনা। তারা এমনটা বলবে, এটাই সমীচীন। তিনি বলেন, স্বাধীনতার শত্রুরা সাম্প্রদায়িকতা-জঙ্গিবাদ; এমন নানা পোশাকে স্বাধীনতাকে চ্যালেঞ্জ করে। এই অপশক্তিকে পরাস্ত করতে হবে। কাদের বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ সোনার বাংলা গড়ার পথে রয়েছে। স্মার্ট বাংলাদেশ গড়া এখন অন্যতম অঙ্গীকার।
এর আগে, জাতীয় স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়ে বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সময় আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও জাতীয় সংসদের উপনেতা মতিয়া চৌধুরী, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, আব্দুর রহমান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, মাহবুলউল আলম হানিফ, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. আব্দুস সোবহান গোলাপ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের এক নেতাকে রড দিয়ে পিটিয়ে মাথা ফাটানোর অভিযোগে পাঁচ নেতাকর্মীকে সাময়িক বহিষ্কার করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
বৃহস্পতিবার রাত ৯টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. নূরুল আলমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত শৃঙ্খলা কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়।
বহিষ্কৃতরা হলেন আইন ও বিচার বিভাগের ইমরুল হাসান অমি, বাংলা বিভাগের আহমেদ গালিব, দর্শন বিভাগের কাইয়ূম হাসান ও আরিফুল ইসলাম এবং প্রাণিবিদ্যা বিভাগের তানভিরুল ইসলাম। তারা সবাই বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৭তম ব্যাচের শিক্ষার্থী এবং মীর মশাররফ হোসেন হলে থাকেন।
এদের মধ্যে অমি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের উপ-আইনবিষয়ক সম্পাদক, গালিব ও কাইয়ূম সহসম্পাদক, আরিফুল ইসলাম কার্যকরী সদস্য এবং তানভিরুল কর্মী বলে পরিচিত। বহিষ্কৃতরা হলে অবস্থান করতে পারবে না বলেও সিদ্ধান্ত হয়েছে।
জানা গেছে, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের জহির রায়হান মিলনায়তনে বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ শীর্ষক আলোচনা সভা শেষে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ৪৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থী সাইফুল ইসলামকে রড দিয়ে পেটানো হয়। আহত সাইফুলকে সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়।
সাইফুলের মাথায় তিনটি সেলাই দেওয়া হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ডিউটি ম্যানেজার পলাশ চন্দ্র দাশ।
ভুক্তভোগী সাইফুল বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সহসভাপতি এবং বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের আবাসিক শিক্ষার্থী।
জানা গেছে, এ মারধরের ঘটনার পাশাপাশি গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় মীর মশাররফ হোসেন হল ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের দেশীয় অস্ত্র প্রদর্শন, প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যদের সঙ্গে অসদাচরণ এবং সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনায় পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
এ কমিটি গত রোববার (১৯ মার্চ) সাভারের একটি রেস্টুরেন্টে বসাকে কেন্দ্র করে মীর মশাররফ হোসেন হল ও বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের ছাত্রলীগের মধ্যে পাল্টাপাল্টি দুটি মারধরের ঘটনারও তদন্ত করবে।
তদন্ত কমিটির প্রধান হলেন ১৯ নম্বর হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক শফি মুহাম্মদ তারেক। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন আলবেরুনী হলের প্রাধ্যক্ষ সিকদার মোহাম্মদ জুলকারনাইন, শহীদ রফিক-জব্বার হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক শাহেদ রানা, জাহানারা ইমাম হলের প্রাধ্যক্ষ মোরশেদা বেগম এবং সদস্যসচিব ডেপুটি রেজিস্ট্রার মাহতাব উজ জাহিদ।
শৃঙ্খলা কমিটির সভা শেষে রাত ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আ স ম ফিরোজ-উল-হাসান সাংবাদিকদের বলেন, মারধর এবং সাম্প্রতিক ঘটনা বিবেচনায় চিহ্নিত পাঁচজনকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। তদন্ত কমিটিকে ১০ কার্যদিবসের মধ্যে সুপারিশসহ প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক বদলি প্রসঙ্গে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা ‘সততার বুলি’ আওড়ান। অনলাইন প্রক্রিয়ার বাইরে কোনো বদলি হয় না এ কথাই জোর দিয়ে বলেন তারা।
দেশ রূপান্তরের অনুসন্ধানে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বদলির বিষয়ে জানা গেছে ভয়ংকর তথ্য। ২০২০ সালের মার্চ মাসের পর অনলাইন-বদলির সুযোগ না থাকলেও, টাকা হলেই বদলি হওয়া যায়। আগের কোনো তারিখে বদলির অনুমোদন দেখিয়ে জারি করা হচ্ছে আদেশ। এসব আদেশ অবশ্য ওয়েবসাইটে প্রদর্শিত হয় না। নিয়মিত রাজধানীসহ সারা দেশে শিক্ষক বদলি করা হচ্ছে। তারা যোগদানও করেছেন। অনলাইন প্রক্রিয়ার বাইরেই এসব হচ্ছে।
গত তিন মাসে অনলাইন-ছাড়াই শতাধিক শিক্ষক বদলি হয়েছেন। এমন আটটি বদলির আদেশের কপি দেশ রূপান্তরের হাতে রয়েছে। কয়েকজনের যোগদানপত্রও দেশ রূপান্তরের কাছে আছে। বদলির এসব আদেশের বেশিরভাগ প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক (পলিসি অ্যান্ড অপারেশন) মনীষ চাকমা স্বাক্ষরিত। কোনো কারণে তার ছুটিতে থাকার সময় দায়িত্বে থাকা পরিচালক মো. হামিদুল হক স্বাক্ষরিত কিছু আদেশও রয়েছে।
যেহেতু অনলাইন ছাড়া শিক্ষক বদলি বন্ধ, তাই আগের কোনো তারিখে বদলির অনুমোদন দেখিয়ে এখন শুধু আদেশ জারি করা হচ্ছে। বদলির আদেশ প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে দেওয়ার নিয়ম থাকলেও তা মানা হচ্ছে না। গত তিন মাসের কোনো বদলির আদেশ ওয়েবসাইটে দেওয়া হয়নি। যারা বদলি হচ্ছেন তারা সশরীরে অধিদপ্তরে এসে আদেশপত্র নিয়ে যাচ্ছেন। সরাসরি বদলির আদেশ জারির বিষয়টি এখনো প্রক্রিয়াধীন।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব ফরিদ আহাম্মদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমার কাছেও কিছু আদেশের কপি এসেছে। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আমাকে জানিয়েছেন, এসব বদলির আদেশ গত বছর ২২ ডিসেম্বর সংশোধিত বদলির নির্দেশিকা জারির আগেই অনুমোদন করানো ছিল। পরে বদলির আদেশ জারি হয়েছে। আমাকে বলা হয়েছে, আদেশের সংখ্যা বেশি নয়। ১০-২০টি হতে পারে। সংশোধিত নির্দেশিকা জারির পর সরাসরি নতুন কোনো বদলির ফাইল অনুমোদনের সুযোগ নেই। এখন বদলি করতে হলে অনলাইন আদেশের মাধ্যমেই করতে হবে।’
সচিব বলেন, ‘অনলাইনে গত ১৫ সেপ্টেম্বর বদলি শুরু হলেও তাতে কিছু সমস্যা ছিল। সমস্যা কাটিয়ে গত ২২ ডিসেম্বর সংশোধিত বদলির নির্দেশিকা জারি হয়েছে। এরপর আর অনলাইনের বাইরে বদলির সুযোগ নেই।’
গাজীপুরের কাপাসিয়ার ঝাউয়াদী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মোহাম্মদ লুৎফর রহমান ফরহাদের বদলির আদেশ জারি হয় গত ২৭ ফেব্রুয়ারি। তিনি একই উপজেলার উত্তর পেলাইদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হয়েছেন। তার বদলির আদেশটি মনীষ চাকমা স্বাক্ষরিত। ২৮ ফেব্রুয়ারি যোগদানও করেছেন তিনি। আগে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার মূলাইদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সংযুক্ত ছিলেন। গত ৮ ডিসেম্বর প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের এক আদেশে সব সংযুক্তির আদেশ বাতিল হয়। তিনি অনলাইন-ছাড়াই বদলির আদেশ করিয়ে নিয়েছেন।
অভিযোগ রয়েছে, মোহাম্মদ লুৎফর রহমান ফরহাদ গাজীপুর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার অন্যতম সহযোগী। স্কুলে তেমন ক্লাস নেন না। সারাক্ষণ ডিপিইওর অফিসে থাকেন। শিক্ষক নেতার পরিচয়ে তদবিরবাণিজ্য করেন। জেলার আট-নয় হাজার শিক্ষকের কাছ থেকে নানা অজুহাতে প্রায়ই চাঁদা আদায় করেন। সহকারী শিক্ষক হয়েও মাসে তার আয় কয়েক লাখ টাকা। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রীর চাচাতো ভাই পরিচয়দানকারী হাসান আলীর মাধ্যমে তার বদলির আদেশ করিয়েছেন বলে গল্প করেন। এ কাজে তিন-চার লাখ টাকার লেনদেনের কথাও বলেন। হাসান আলীকে প্রায়ই প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে দেখা যায়। তিনি মন্ত্রণালয়ে প্রতিমন্ত্রীর দপ্তরের আশপাশেই থাকেন।
গত ১৩ মার্চ চাঁদপুরের কচুয়ার নোয়ার্দ্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে রাজধানীর সূত্রাপুরের শহীদ নবী মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হয়ে এসেছেন সহকারী শিক্ষক জান্নাতুল ফেরদৌসী। তার সরাসরি বদলির আদেশে স্বাক্ষর করেছেন মনীষ চাকমা। সম্প্রতি চাঁদপুরের হাজীগঞ্জের দিগচাইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ফাতেমা বেগমও রাজধানীর মিরপুরের একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হয়ে এসেছেন।
গত ১৭ জানুয়ারি ময়মনসিংহ সদর উপজেলার বোররচর বনপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে একই উপজেলার সানকিপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হন সহকারী শিক্ষক খাদিজা আক্তার। তার বদলির আদেশে স্বাক্ষর রয়েছে মো. হামিদুল হকের।
সানকিপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সাবিনা ইয়াসমিন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘খাদিজা আক্তার আমার স্কুলে ১৯ মার্চ যোগ দিয়েছেন। তিনি আমাকে বলেছেন, অনলাইনে আগে আবেদন করা ছিল। পরে অধিদপ্তর থেকে সরাসরি বদলির আদেশ করিয়ে নিয়ে এসেছেন।’
রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার তিলকপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. মোসাফিকুর রহমান গত ১০ মার্চ বদলি হয়ে যান একই জেলার সদর উপজেলার সেনপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। তার আদেশটিও মনীষ চাকমা স্বাক্ষরিত।
গত ২৬ ফেব্রুয়ারি ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলার ধানীখোলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ময়মনসিংহ সদরের আজমতপুর পূর্বপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হন সহকারী শিক্ষক তাসমিনা নার্গিস। একই তারিখে স্বাক্ষরিত আরেকটি আদেশে সহকারী শিক্ষক জেসমিন আক্তার ময়মনসিংহের নান্দাইলের গলগ-া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ময়মনসিংহ সদর উপজেলার চকনজু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হন। এসব বদলির আদেশ মো. হামিদুল হক স্বাক্ষরিত।
গত ১ জানুয়ারি ময়মনসিংহ সদরের কুঠুরাকান্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে একই উপজেলার গাঙ্গিনার পাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হয়ে আসেন সহকারী শিক্ষক আবিদা সুলতানা। আদেশটিতে স্বাক্ষর করেছেন মনীষ চাকমা।
গাঙ্গিনার পাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কাকলী গোস্বামী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘কীভাবে বদলি হয়েছে বলতে পারব না। তবে আবিদা সুলতানা বলেছে, অনলাইনে হয়েছে। আমার স্কুলে তিনি ২ জানুয়ারি যোগ দিয়েছেন।’
ময়মনসিংহের সদর উপজেলার রাজাগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে গত ২৮ ডিসেম্বর সহকারী শিক্ষক সাবিনা ইয়াসমিন একই উপজেলার বড় বিলারপাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হন। আদেশটিতে স্বাক্ষর করেন মনীষ চাকমা। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শ্যামল কুমার ঘোষ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘কীভাবে বদলি হয়েছে, তা বলতে পারব না। তবে সাবিনা ইয়াসমিন যোগ দিয়েছেন।’
দেশের কোনো জায়গা থেকে রাজধানীতে প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলি খুবই কঠিন। রাজধানীতে বদলির জন্য শিক্ষকরা ছয়-সাত লাখ টাকা খরচ করতেও দ্বিধা করেন না। আর অনলাইন প্রক্রিয়া চালু হওয়ার পর দেশের অন্য জায়গায়ও বদলির রেট বেড়ে গেছে। এ জন্য তিন-চার লাখ টাকার লেনদেন হয় বলে জানা গেছে।
সূত্র জানায়, করোনার প্রাদুর্ভাব শুরু হলে ২০২০ সালের ১৭ মার্চ থেকে সারা দেশে সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যায়। বন্ধ রাখা হয় সরকারি প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলিও। এরপর প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রথমবারের মতো গত বছর ১৫ সেপ্টেম্বর থেকে ৬ অক্টোবর পর্যন্ত একই জেলার মধ্যে বদলির জন্য অনলাইনে আবেদন গ্রহণ শুরু করে। ঘোষণা দেওয়া হয়, অনলাইনের বাইরে কোনো ধরনের বদলি কার্যক্রম চলবে না। ওই সময়ে অনলাইনের মাধ্যমে বদলি হওয়া শিক্ষকদের সবাই অক্টোবরের মধ্যে বদলিকৃত স্কুলে যোগদান শেষ করেন।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রথম দফায় বদলি হওয়া শিক্ষকদের সবাই যেহেতু অক্টোবরের মধ্যে যোগদান শেষ করেছেন, অতঃপর গত ফেব্রুয়ারির আগে আর কোনো বদলির আবেদনের সুযোগ ছিল না। দ্বিতীয় দফায় ২৮ ফেব্রুয়ারি থেকে ৩ মার্চ পর্যন্ত একই জেলার মধ্যে বদলির আবেদন নেওয়া হয়। কারা বদলি হলেন তা প্রকাশ করা হয় ৯ মার্চ। গত ১৪ ও ১৫ মার্চ একই বিভাগের মধ্যে বদলির জন্য অনলাইন আবেদন গ্রহণ করা হয়েছে। আর এক বিভাগ থেকে আরেক বিভাগে অনলাইনে বদলির আবেদন গ্রহণ এখনো শুরু হয়নি। মন্ত্রণালয় বলেছে, শিগগির তা শুরু হবে। ফলে এসবের বাইরে যে বদলি হয়েছে সেসব কোনোভাবেই অনলাইন বদলির মধ্যে পড়ে না।
অনলাইন বদলির আদেশের একাধিক কপিও দেশ রূপান্তরের কাছে রয়েছে। একই উপজেলার মধ্যে বদলির আদেশ উপজেলা শিক্ষা অফিসার স্বাক্ষরিত। আর একই জেলার মধ্যে বদলির আদেশ জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার স্বাক্ষরিত। কিন্তু প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে যেসব বদলির আদেশ জারি হয়েছে সেসব ‘অনলাইন বদলি’ নয়। মন্ত্রণালয় নির্দেশিকা জারি করে অনলাইনের বাইরে বদলি বন্ধ করেছে।
এ ব্যাপারে জানার জন্য প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াত ও পরিচালক (পলিসি অ্যান্ড অপারেশন) মনীষ চাকমাকে গত বুধ ও বৃহস্পতিবার একাধিকবার ফোন দিয়ে এবং এসএমএস করেও সাড়া পাওয়া যায়নি।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী, প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলির কাজ হবে পুরোপুরি অনলাইনে। বদলিপ্রত্যাশী শিক্ষক অনলাইনে আবেদন করার পর সেটি প্রাথমিকভাবে যাচাই করবেন সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। তিনি সফটওয়্যার ব্যবহারের মাধ্যমে যাচাই করে আবেদনটি পাঠাবেন উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে। তিনি যাচাই করে পাঠাবেন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে। এরপর সফটওয়্যারের মাধ্যমে বদলি নির্ধারণ করা হবে। এরপর আবার ডিপিইও সেটি মঞ্জুর করে পাঠাবেন উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে। তিনি তখন বদলির আদেশ জারি করবেন এবং শিক্ষক সেটি অনলাইনেই জেনে যাবেন।
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগ হয় উপজেলাভিত্তিক। তাই সাধারণ নিয়মে উপজেলার মধ্যেই শিক্ষকদের বদলি হতে হবে। বিশেষ কারণে উপজেলা বা জেলা পরিবর্তনেরও সুযোগ আছে।
রংপুরের জেলা প্রশাসককে 'স্যার ডাকতে বাধ্য করার' অভিযোগ এনে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ওমর ফারুক।
বুধবার (২২ মার্চ) রাত ৮টা থেকে তিনি প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে অবস্থান শুরু করেন বলে জানা গেছে।
বাংলাদেশের অপরাধীরা আগে ভারতে গিয়ে আত্মগোপন করত। এরপর জানা গেল, সেখান থেকে দেশে অপরাধ ঘটায় তারা। কারও কারও নেপালে অবস্থানের কথাও জানা যায়। ভারতকে নিরাপদ মনে না করায় আরব আমিরাতের দুবাই বেছে নিচ্ছে অপরাধীরা। সেখানে তারা আস্তানা গেড়েছে।
পুলিশসহ বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, দেশের অপরাধজগতের শীর্ষ সন্ত্রাসী ও তাদের সহযোগীরা অপরাধ করেই দুবাই চলে যাচ্ছে। সেখানে বসেই অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের কলকাঠি নাড়ছে। এখন বিতর্কিত মডেল, রাজনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীরাও দুবাইকে কেন্দ্র করে নানা কর্মকাণ্ড চালাচ্ছেন। সেখানে তাদের ব্যবসা-বাণিজ্যও আছে। তাদের কেউ কেউ সোনার কারবারও করছেন। ওই দেশে ভারতের দুর্ধর্ষ অপরাধী দাউদ ইব্রাহিমের শিষ্যত্ব নেওয়ার কথাও শোনা যাচ্ছে।
এদিকে বাংলাদেশে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাগুলো ওইসব অপরাধীর তথ্য জানার পরও তাদের ফেরত আনতে পারছেন না। আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলের ‘রেড নোটিসের’ দিকেই তাকিয়ে থাকতে হচ্ছে পুলিশকে। তালিকাভুক্ত অপরাধীদের ধরতে রেড নোটিস জারি হচ্ছে। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। তারা দিব্যি ঘুরে বেড়াচ্ছে।
পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে, ২০১৮ সালে পুলিশ কর্মকর্তা মামুন ইমরান খান হত্যাকাণ্ডের পর অনেকে পার পেয়ে গেছে। যদিও মামলাটি অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়েছে। তবে নতুন করে আলোচিত মামলাটির পুনঃতদন্ত করার কথা ভাবছে পুলিশ। এ নিয়ে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বৈঠক করছেন।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা দেশ রূপান্তরকে জানান, ২০২২ সালের ২৪ মার্চ সড়কে গুলি চালিয়ে মতিঝিল থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম টিপুকে হত্যা করা হয়। গুলিতে নিহত হন এক কলেজছাত্রী। চাঞ্চল্যকর এই জোড়া খুনের মূল হোতা সুমন শিকদার ওরফে মুসা ঘটনার রাতেই দেশ ছেড়ে চলে যায় দুবাইয়ে। সেখানে শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান ও জয়ের সঙ্গে তার বৈঠক হয়। কিন্তু তাদের মধ্যে আধিপত্য নিয়ে বিরোধ দেখা দিলে মুসা চলে যায় ওমানে। জিসান ও জয় এখনো দুবাইতেই বসবাস করছে। যদিও ওমান থেকে মুসাকে ওই বছরের ৯ জুন ইন্টারপোলের মাধ্যমে ঢাকায় ফিরিয়ে আনে পুলিশ সদর দপ্তর। এ ঘটনার রেশ না কাটতেই ফের আলোচনায় আসে ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান ও হিরো আলমের দুবাই সফরকে কেন্দ্র করে। তারা বনানীতে পুলিশ হত্যাকাণ্ডের আসামি আরাভ খান নামধারী রবিউল ইসলামের সোনার দোকান উদ্বোধন করতে সেখানে যান। দুবাই যাওয়ার কারণে সাকিব ও হিরো আলমকে যেকোনো সময় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডিবি কার্যালয়ে ডাকা হতে পারে। এ ছাড়া ‘প্লেজার ট্যুরের’ জন্য এখন দেশের শিল্পপতিদের পছন্দের জায়গা হয়ে উঠেছে দুবাই। কারণ ঢাকাকে তারা নিরাপদ মনে করছেন না। পাশাপাশি দেশে আটক সোনার চালানের ৮০ শতাংশ জব্দ হচ্ছে দুবাইফেরত বিভিন্ন এয়ারলাইনস থেকে। সব মিলিয়ে এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে দুবাই।
জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘অপরাধীরা যে দেশেই থাকুক না কেন, তাদের চিহ্নিত করে দেশে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চলছে। শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসানকে আটক করার পর দুবাই থেকে ইন্টারপোলের মাধ্যমে দেশে ফেরত আনতে চেয়েছিল পুলিশ। সম্প্রতি আলোচিত পুলিশ কর্মকর্তা হত্যা মামলার অন্যতম আসামি আরাভকে দুবাই থেকে ফেরত আনতে ইন্টারপোলের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। আশা করি অল্প সময়ে সুখবর দেওয়া সম্ভব হবে।’
পুলিশ সদর দপ্তরের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) পদমর্যাদার এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে দেশ রূপান্তরকে জানান, সম্প্রতি আলোচনায় আসা আরাভ খানকে দেশে ফেরাতে ইন্টারপোলের সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে। কিন্তু তিনি ভারতের পাসপোর্টধারী। দেশে তার নামে ১২টি মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়েছে। ওইসব পরোয়ানার কপি ইন্টারপোলের সদর দপ্তরে পাঠানোর পর দ্রুতই তাকে ফেরানো সম্ভব হবে বলে আশা করা হচ্ছে। যদিও এর আগে জিসান ও জয়কে দুবাই থেকে ফেরত আনার উদ্যেগ নিয়েও আনতে পারেনি। টের পেয়ে তারা দুবাই ছেড়ে কানাডায় চলে যায়। তারা আবার দুবাই এসেছে বলে পুলিশের কাছে তথ্য আছে।
ওই পুলিশ কর্মকর্তা আরও বলেন, দেশের শীর্ষ সন্ত্রাসী থেকে শুরু করে বিতর্কিত মডেল, রাজনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীরা এই দেশে অপরাধ করে দুবাই গিয়ে আস্তানা গাড়েন। ইতিমধ্যে পুলিশ একটি তালিকা করেছে। ওই তালিকায় গুলশান ও বনানী এলাকার মডেলের সংখ্যা বেশি। বছরখানেক আগে গ্রেপ্তার হওয়া ফারিয়া মাহবুব পিয়াসা ও চলচ্চিত্র প্রযোজক নজরুল ইসলাম রাজ বেশিরভাগ সময় দুবাই থাকেন। তাদের সঙ্গে অপরাধ জগতের শীর্ষ সন্ত্রাসীদের সখ্য আছে বলে পুলিশের কাছে তথ্য আছে। এমনকি বনানীতে পুলিশ কর্মকর্তা মামুন হত্যাকান্ডে তাদেরও সম্পৃক্ততা ছিল বলেও অভিযোগ উঠেছিল। ঘটনার পর পিয়াসা, রাজ ও আরাভকে আটকও করা হয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগের এক বড় মাপের নেতা ও পুলিশ কর্মকর্তার অনুরোধে তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়। এসব বিষয় নিয়ে পুনরায় তদন্ত করা হতে পারে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সংগীতশিল্পী, এক ব্যবসায়ীর স্ত্রী ও কয়েকজন মডেল নিয়মিত দুবাই আসা-যাওয়া করেন।
পুলিশ সূত্র জানায়, ২০০১ সালে তৎকালীন সরকার ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসী ধরিয়ে দিতে পুরস্কার ঘোষণা করেছিল। তাদের মধ্যে কয়েকজন ধরা পড়েছে। আবার কেউ ক্রসফায়ারে মারা গেছে। আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার তাড়া খেয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আত্মগোপনে আছে কেউ কেউ। আত্মগোপনে থেকেই তারা অপরাধজগৎ নিয়ন্ত্রণ করে। তাদের মধ্যে বেশিরভাগই দুবাই রয়েছে।
পুলিশ সূত্র আরও জানায়, শীর্ষ সন্ত্রাসীদের তৎপরতা বেড়ে যাওয়ায় দুশ্চিন্তায় আছে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাগুলো। এ নিয়ে পুলিশ ও র্যাব কর্মকর্তারা কয়েক দফায় বৈঠক করেছেন। পাশাপাশি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়েও আলাদাভাবে বৈঠক হয়েছে। ওইসব বৈঠকে বলা হয়েছে, ইন্টারপোলের রেড নোটিস জারি করার পরও কেন তারা ধরা পড়ছে না তা খতিয়ে দেখতে হবে। ২০০৩ সালে মালিবাগের সানরাইজ হোটেলে ডিবি পুলিশের দুই সদস্যকে হত্যার পর শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান দুবাই চলে যায়। সেখান থেকেও ঢাকায় ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করে আছে। তার সহযোগী জাফর আহমেদ মানিক ওরফে ফ্রিডম মানিক, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা সোহেল শাহরিয়ার ওরফে শটগান সোহেল, কামরুল হাসান হান্নান, ইব্রাহীম, রবিন ও শাহাদৎ হোসেন বেশিরভাগ সময় দুবাই থাকে।
সূত্র জানায়, বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের বন্দিবিনিময় চুক্তি থাকায় বেশ কয়েকজন শীর্ষ অপরাধীকে বাংলাদেশে ফেরত আনা হয়। শীর্ষ সন্ত্রাসী সুব্রত বাইন, মোল্লা মাসুদ, শাহাদৎ, নারায়ণগঞ্জের সাত খুন মামলার আসামি নুর হোসেনসহ অনেকেই কলকাতায় গিয়ে আশ্রয় নেয়। নুর হোসেন ছাড়া অন্য সন্ত্রাসীদের দেশে ফেরত আনা সম্ভব হয়নি। সুব্রত, মোল্লা মাসুদ ও শাহাদৎ ভারতে সুবিধা করতে না পেরে মুম্বাই হয়ে দুবাই চলে যায়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঢাকার অপরাধজগতের এক সন্ত্রাসী এ প্রতিবেদককে বলেন, অপরাধীরা এখন আর ভারত যেতে চায় না। কারণ ওই দেশে শান্তিতে থাকা যায় না। ফলে সবাই এখন দুবাইমুখী হচ্ছে। দুবাইয়ে সবাই নিরাপদে থাকতে পারছে।
রাজধানীর মিরপুরের একটি মাধ্যমিক-সংযুক্ত প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ে সিফাত। একই এলাকায় বসবাসকারী তার বন্ধু সিয়াম পড়ে একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণিতে। সংযুক্ত প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বৃহস্পতিবার থেকে রোজার ছুটি। আর সরকারি প্রাথমিকে ছুটি ১৫ রোজা অর্থাৎ ৭ এপ্রিল থেকে।
এক দেশে একই শ্রেণির শিক্ষার্থীরা ভিন্ন নিয়মে ছুটি পাচ্ছে। সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, এতে লেখাপড়ায় কেউ এগিয়ে যাবে, আবার কেউ পিছিয়ে পড়বে।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক সৈয়দ মামুনুল আলম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সরকার বা মন্ত্রণালয় সিদ্ধান্ত নিলে ভেবেচিন্তেই নেয়। তবে সব ধরনের স্কুলে একটা কো-অর্ডিনেশন থাকলে ভালো হয়। আমরা ছুটির ব্যাপারে আরও আলাপ-আলোচনা করব।’
জানা গেছে, চাঁদ দেখার ওপর নির্ভর করে আগামী শুক্রবার শুরু হতে পারে রমজান মাস। বছরের শুরুতেই স্কুলগুলোর ছুটির তালিকা অনুমোদন করা হয়। সে অনুযায়ী পবিত্র রমজান, স্বাধীনতা দিবস, ইস্টার সানডে, বৈসাবি, নববর্ষ ও ঈদুল ফিতর উপলক্ষে ২৩ মার্চ থেকে ২৭ এপ্রিল পর্যন্ত সরকারি, বেসরকারি মাধ্যমিক ও নিম্নমাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ছুটি ঘোষণা করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এ ছাড়া সরকারি-বেসরকারি কলেজ, আলিয়া মাদ্রাসা ও টিটি (টিচার্স ট্রেনিং) কলেজেও একই সময়ে ছুটির ঘোষণা রয়েছে মন্ত্রণালয়ের।
তবে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ছুটির তালিকা ভিন্ন। তারা পবিত্র রমজান, ইস্টার সানডে, চৈত্র-সংক্রান্তি ও বাংলা নববর্ষ, ঈদুল ফিতর উপলক্ষে আগামী ৭ থেকে ২৬ এপ্রিল পর্যন্ত ছুটি ঘোষণা করেছে। অর্থাৎ প্রায় ১৫ রমজান পর্যন্ত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা থাকবে।
রাজধানীসহ বড় বড় শহরের মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোর সঙ্গে সংযুক্ত প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এগুলো শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন। তাই এসব প্রতিষ্ঠানে প্রাথমিক বিদ্যালয় থাকলেও মাধ্যমিকের মতোই তাদের ছুটি থাকবে ২৩ মার্চ থেকে ২৭ এপ্রিল পর্যন্ত। কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের রোজার ছুটিও একই। তবে মাদ্রাসায় রোজার ছুটি শুরু এক দিন আগেই অর্থাৎ আজ বুধবার, ২২ মার্চ।
রাজধানীর মোহাম্মদপুরের কিশলয় বালিকা বিদ্যালয় ও কলেজের অধ্যক্ষ মো. রহমত উল্লাহ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমাদের সংযুক্ত প্রাথমিক বিদ্যালয় থাকলেও আমরা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন প্রতিষ্ঠান। তাই বুধবার ক্লাস করে বৃহস্পতিবার রোজার ছুটি শুরু হবে। তবে সব স্কুলে একই ধরনের ছুটি থাকা জরুরি। এতে একই সময়ে সিলেবাস শেষ করা যাবে, শিক্ষক-শিক্ষার্থীরাও সন্তুষ্ট থাকবে।’
রমজানে মাধ্যমিকে স্কুল বন্ধ আর প্রাথমিকে খোলা রাখায় অসন্তোষ দেখা দিয়েছে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চার লাখ শিক্ষকের মধ্যে। তারা বলছেন, যেসব অভিভাবকের সন্তান প্রাথমিক ও মাধ্যমিক দুই স্কুলেই পড়ে তাদের সমস্যা হবে। রমজান মাসে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ। প্রাথমিকের শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরাও রোজা রাখেন। তাই মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সঙ্গে মিল রেখে প্রাথমিকের ছুটি নির্ধারণ করা যৌক্তিক হবে।
বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সাংগাঠনিক সম্পাদক জুলফিকার আলী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এ বছর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে সরকারি ছুটি ৭৬ দিন, কিন্তু প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মাত্র ৫৪ দিন। সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অভিন্ন ছুটি নির্ধারণের যুক্তি তুলে ধরে আমরা ইতিমধ্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা সচিব এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের কাছে আবেদন করেছি। কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে এখনো সাড়া পাইনি।’