
বিশ্বকাপে এবার কতদূর যাবে আর্জেন্টিনা? দুর্দান্ত ছন্দে থেকে কাতারে পাড়ি দিয়েছে দেশটি। খুবই বাজে একটা সময়ে দায়িত্ব নিয়ে লিওনেল স্কালোনি পুরোপুরি বদলে দিয়েছেন দলটাকে। সুখী একটা পরিবার হিসেবে পারফরম করে চলেছে দুইবারের চ্যাম্পিয়নরা। দলের সবচেয়ে বড় তারকা লিওনেল মেসি নিজের শেষ বিশ্বকাপ খেলবেন। এটাও দলটাকে জাগিয়ে তুলতে বাধ্য। সবকিছু মিলিয়ে অনেকেই দলটির সামনে বড় সুযোগ দেখছেন এবার। আর্জেন্টিনার হয়ে তিনটি বিশ্বকাপ খেলা ক্লদিও ক্যানিজিয়াও রয়েছেন সেই দলে। বর্তমান আর্জেন্টিনা দল নিয়ে বেশ আশাবাদী তিনি। তবে একটা জায়গায় উত্তরসূরিদের সতর্ক থাকার বার্তাও থাকছে তার কথায়।
৫৫ বছর বয়সী ক্যানিজিয়া ১৯৮৭ সাল থেকে ২০০২ সাল পর্যন্ত আর্জেন্টিনার হয়ে ৪৯ ম্যাচ খেলেছেন। নামের পাশে গোল ১৬টি। যার মধ্যে বিশ্বকাপে গোলের সংখ্যা ৪টি। ১৯৯০ সালে প্রথম বিশ্বকাপে খেলেন তিনি। সেবার ফাইনালে উঠলেও শিরোপা ছোঁয়া হয়নি আর্জেন্টিনার। কার্ডের খাঁড়ায় ক্যানিজিয়া অবশ্য ফাইনালে খেলতে পারেননি। তবে ওই আসরে দুই গোল তার নামের পাশে। ক্যানিজিয়া পরে খেলেছেন ১৯৯৪ ও ২০০২ বিশ্বকাপে। ৯৪ বিশ্বকাপেও করেন দুই গোল। ফিফা প্লাসকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে যিনি এবারের আর্জেন্টিনাকে নিয়ে বলেছেন, ‘এই দল নিয়ে আমি আশাবাদী। ট্রফির জন্য চ্যালেঞ্জ জানানোর সুযোগ আছে আমাদের।’
ক্যানিজিয়া ফেভারিটদের কথা বলতে গিয়ে নিজ দেশের সঙ্গে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ব্রাজিলের কথা উল্লেখ করেছেন, ‘কিছু দেশ আছে যারা অবশ্যই শিরোপার জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে। যেমন ফ্রান্স, ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, স্পেন, জার্মানি।’ তবে এই ফেভারিটদের কাজ কঠিন করার মতো দলও দেখছেন ক্যানিজিয়া, ‘আরও কিছু ভালো দলও আছে, যারা এই বড় দলগুলোর কাজ কঠিন করে তুলতে পারে। আমি নেদারল্যান্ডস, বেলজিয়াম, ডেনমার্কের কথা বলছি।’
লিওনেল মেসিরা কাতার বিশ্বকাপে খেলতে গেছে টানা ৩৬ ম্যাচে অপরাজিত থেকে। কিন্তু এই ম্যাচগুলোতে ইউরোপিয়ান প্রতিপক্ষ খুব বেশি ছিল না। মাত্র তিনটি ম্যাচ ছিল ইউরোপিয়ান দলগুলোর বিপক্ষে। ঠিক এই জায়গাটাতেই ক্যানিজিয়ার দুর্ভাবনা কাজ করছে, ‘এই আর্জেন্টিনা দলটাকে ভালো দেখাচ্ছে। কিন্তু আমরা গত কয়েক বছরে ইউরোপের দলগুলোর বিপক্ষে খেলার সুযোগ খুব একটা পাইনি। এটি একটি সমস্যা। তাদের বিপক্ষেও আমাদের খেলা উচিত ছিল, তাদের ধরন অবশ্যই দক্ষিণ আমেরিকার দলগুলোর চেয়ে আলাদা।’
আজ সৌদি আরবের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে বিশ্বকাপ মিশন শুরু করতে যাচ্ছে আর্জেন্টিনা। ‘সি’ গ্রুপে তাদের অন্য দুই প্রতিপক্ষ মেক্সিকো ও পোল্যান্ড।
ডি গ্রুপের প্রথম ম্যাচে আজ অসম লড়াই। হ্যাঁ, খেলায় নিজের দিনে হার-জিত যেকোনো দিকে গড়াতে পারে। তবে ম্যাচের আগে পারা না পারার হিসাব তো করাই যায়। সেদিক থেকে আজ এডুকেশন সিটি স্টেডিয়ামে ডেনমার্কের সামনে আফ্রিকান তিউনিসিয়ার জোর অনেক কমই বলতে হয়। ডেনিসরা বরাবরই ইউরোপিয়ান দ্বিতীয় শক্তির দল। তবে গত ইউরো থেকে যেন নতুন উদ্যমে জেগে উঠে তারাও জায়ান্টদের কাতারে জায়গা করে নিয়েছে। দলটিতে একঝাঁক তারকার উপস্থিতি নেই সত্যি, তবে দলগত শক্তিতে কমতি নেই কোনো। আর সেই ধারায় বিশ্বকাপ বাছাইয়ে কোনো ম্যাচ না জিতে কাতারে আসা ডেনিসদের আজ ফেভারিট ধরতেই হয়। মালির বিপক্ষে আফ্রিকান বাছাইয়ের শেষ ধাপে দুই লেগের লড়াইয়ে কোনোমতে ১ গোলের অ্যাগ্রিগেটে জেতা তিউনিসরা অপেক্ষায় থাকবে একটি অঘটনের।
বলা হচ্ছে এই ম্যাচের কথা। অথচ ডেনিস কোচ কাসপার হুলমান্দ হুঙ্কার ছাড়লেন বিশ্বকাপ জেতার। কাল ম্যাচপূর্ব সংবাদ সম্মেলনে এই কোচের উক্তি আলোচনা ছড়াল বেশ। ব্রাজিল-আর্জেন্টিনার বাইরে এই আসরে স্পষ্ট ফেভারিটের নাম নেই। অনেকটা উন্মুক্ত বিশ্বকাপে তাই হাত ছোঁয়াতে চায় ডেনমার্ক। হুলমান্দ জানান, ‘আমাদের স্বপ্ন কোনো কিছু জেতা। তাই আপনি যখন এমন বিশ্বকাপের মতো কোনো টুর্নামেন্টে যাবেন তখন আমি বলব আমার এই গ্রুপ ফুটবলারদের কিছু জেতার সামর্থ্য আছে। সেই ‘কিছু’ মানে কিন্তু সব কিছুই।’
গত ইউরোয় সেমিফাইনাল খেলে ডেনমার্কের বিশ্বাস বড় হয়েছে। এতটাই যে বাছাইপর্বের ১০ ম্যাচের ৯ ম্যাচ জিতেছে তারা। এই সময়ে বিপক্ষের জালে ৩০ গোল দিলেও নিজেরা হজম করেছে মাত্র ৩ গোল। আর শেষ ৮ ম্যাচে কোনো গোল খায়নি ডেনমার্ক। এই সাফল্য বিশ্বকাপে ডেনিসদের আরও উচ্ছ্বাস দিচ্ছে। সঙ্গে ইউরোর পর এই প্রথম বড় কোনো আসরে ফিরে আসা ক্রিশ্চিয়ান এরিকসেন দলের শক্তি বাড়াচ্ছেন। গত ইউরোতে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে হাসপাতালে ছিলেন এরিকসেন। এই বিশ্বকাপে পুরো ফিট হয়ে উঠেছেন। সব মিলিয়ে হুলমান্দের শিরোপা জয়ের স্বপ্নটা তাই বড় হয়েছে একটু বেশিই।
বড় স্বপ্ন সত্যি করতে গ্রুপসেরা হতে হবে ডেনমার্ককে। এই পথে বড় বাধা ফ্রান্স। তবে বর্তমান বিশ্বজয়ীদের হারানোর নিকটঅতীত আছে ডেনিসদের। নেশন্স লিগের লড়াইয়ে বিশ্বকাপে গ্রুপসঙ্গী ফ্রান্সকে মুখোমুখি দেখায় দুবারই হারিয়েছে তারা। তাই আরও আত্মবিশ্বাসী হুলমান্দ বলেন, ‘আমরা ফেভারিট কিনা যদি জিজ্ঞাস করেন সবাই বলত না। আমিও তাই বলব। কিন্তু আমরা যেকোনো দিন যেকোনো দলকে হারিয়ে দিতে পারি। আমাদের আত্মবিশ্বাসটাই এমন। আমাদের দলটা সব কিছু জিততে প্রস্তুত। আর আপনি যদি বড় কিছু জিততে চান তাহলে এই নিশ্চয়তা থাকতেই হবে।’
ডেনমার্কের সঙ্গে তিউনিসিয়ার পূর্ব লড়াই মাত্র একবার। তাও ২০ বছর আগে। ২০০২ সালের প্রীতি ম্যাচে ২-১ ব্যবধানে জিতেছিল ডেনমার্ক। ওই জয়ের রেশ ডেনিসদের যেমন নেই তেমনি হারের হতাশাও নেই তিউনিসিয়ার। লম্বা বিরতি পর নতুন দেখায় ম্যাচটি হবে নতুনের মতোই। তাতে তিউনিসিয়ার স্বপ্ন খুব একটা নেই। এক যদি না তারা অঘটন ঘটাতে পারে। সেই সম্ভাবনাটাও কম তিউনিসদের। আফ্রিকান বাছাইপর্বের শেষ রাউন্ডে মালির বিপক্ষে জিততে বেগ পেতে হয় দলটির। দুই লেগ মিলিয়ে ১-০ অ্যাগ্রিগেটে জিতলেও সেই গোলটি ছিল আত্মঘাতী। প্রথম লেগে মালির মুসা সিসোকো ভুল না করলে তিউনিসিয়া এই বিশ্বকাপের টিকিটও পেত না।
তবে তিউনিসিয়ার হারানোর কিছু নেই। বরং না হারার চাপে থাকবে ডেনমার্কই। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে বিশ্বকাপে নিজেদের প্রথম ম্যাচে অঘটন উপহার দিতে চাইবে। হুলমান্দরা বিশ্বকাপ জয়ের স্বপ্ন দেখলে এই অঘটন এড়াতে হবে।
আমার জীবনে, আমার টাইমিং সবসময়ই সেরা। অন্যরা কে কী ভাববে, তা নিয়ে আমি চিন্তা করি না। আমি যখন চাই, তখন কথা বলি। খেলোয়াড়রা অনেক বছর ধরে আমাকে ভালোভাবে চেনে
সম্ভাব্য শেষ বিশ্বকাপের সামনে দাঁড়িয়ে তিনি। যা বলার, বিশ্বকাপ-ভাবনা আর পর্তুগাল ক্যারিয়ার নিয়েই বলার কথা। কিন্তু কাতারে আসার পরও ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোকে ঘিরে আছে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড-বিষয়ক আলোচনা।
গত সপ্তাহে পিয়ার্স মরগানকে দেওয়া রোনালদোর সাক্ষাৎকারে ম্যানইড কোচ এরিক টেন হাগ থেকে শুরু করে ক্লাবের শীর্ষস্থানীয় কয়েকজন কর্মকর্তা ও মালিকপক্ষ গ্লেজার পরিবারকে নিয়ে বিস্ফোরক সব মন্তব্য করেছেন পর্তুগিজ তারকা। যুক্তরাজ্যের গণমাধ্যম বলছে, ক্ষুব্ধ ইউনাইটেড রোনালদোকে আর ওল্ড ট্রাফোর্ডে দেখতে রাজি নয়। তবে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ভার আপাতত রোনালদোর ওপরই ছেড়ে দিয়েছে ক্লাবটি।
বিশ্বকাপ খেলতে মাঠে নামার আগে রোনালদোকে পাওয়া যাবে না বলে ধারণা ছিল অনেকের। তবে সবাইকে চমকে দিয়ে আজ দোহায় পর্তুগালের হয়ে সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হন রোনালদো। সেখানে সাক্ষাৎকারে দেওয়া বক্তব্য নিয়ে প্রশ্নে তার সোজাসাপ্টা জবাব, ‘আমার জীবনে, আমার টাইমিং সবসময়ই সেরা। অন্যরা কে কী ভাববে, তা নিয়ে আমি চিন্তা করি না। আমি যখন চাই, তখন কথা বলি। খেলোয়াড়রা অনেক বছর ধরে আমাকে ভালোভাবে চেনে। তারা জানে আমি কী ধরনের মানুষ। এই দলটি উচ্চাকাক্সক্ষী এবং জয়ের জন্য ক্ষুধার্ত। তারা লক্ষ্যে স্থির। তাই আমি নিশ্চিত, (ওই সাক্ষাৎকারে) দলের পরিবেশ বদলাবে না এবং সবার লক্ষ্য ও মনোযোগ অটুট থাকবে।’
যেকোনো ধরনের আক্রমণের মুখে বুক চিতিয়ে দাঁড়ানোর সামর্থ্য আছে জানিয়ে ৩৭ বছর বয়সী এই তারকা যোগ করেন, ‘আমি যখন চাই, কথা বলি। আমি বুলেটপ্রুফ, লোহার পোশাক পরে আছি।’ পর্তুগাল দল কাতারে পা রাখার আগে ও পরে রোনালদো-বিষয়ক জিজ্ঞাসার মুখে পড়েছিলেন ব্রুনো ফার্নান্দেজ, বার্নার্দো সিলভা ও রুবেন নেভেসরা। বিষয়টি নিয়ে বিরক্ত পাঁচবারের ব্যালন ডি’অরজয়ী, ‘ক্রিশ্চিয়ানো সম্পর্কে অন্যদের জিজ্ঞেস করবেন না। ওদের পর্তুগাল আর তাদের নিজেদের নিয়েই জিজ্ঞেস করুন।’
তার আশপাশে জড়িত সবই বিতর্কের বিষয় হয়ে দাঁড়ায় মন্তব্য করে রোনালদো দাবি করেন, ব্রুনোসহ পর্তুগাল দলের কারও সঙ্গেই তার দূরত্ব নেই, ‘টুর্নামেন্ট শুরুর আগে এ ধরনের বিতর্ক সব সময়ই হয়। কিন্তু ব্রুনোর সঙ্গে আমার সম্পর্ক খুবই চমৎকার। আসলে ক্রিশ্চিয়ানোর চারপাশে থাকা সবকিছু নিয়েই বিতর্ক তৈরি হয়। কিন্তু আমি বলছি, দলের সবার সঙ্গে আমার ভালো সম্পর্ক।’
দুই লিওনেলে তাকিয়ে আর্জেন্টিনা। লিওনেলদ্বয় সফল হলেই ঘুচবে ৩৬ বছরের অপেক্ষা। গত বছর কোপা আমেরিকা জিতিয়ে যে দুজন ঘুুচিয়েছিলেন ২৮ বছরের শিরোপা খরা। তারাই পারেন দেশকে তৃতীয়বারের মতো বিশ্বকাপ এনে দিতে। একজন লিওনেল মেসি, আরেকজন লিওনেল স্কালোনি। একজন বহু বছর ধরেই আলবিসেলেস্তেদের স্বপ্নসারথী। অন্যজন খুব অল্প সময়ে কেড়ে নিয়েছেন আস্থার আসন। দুই লিওনেলকে ঘিরে বিশ্বজয়ের মিশন আর্জেন্টিনা শুরু করবে আজ। লুসাইল আইকনিক স্টেডিয়ামে তাদের প্রতিপক্ষ সৌদি আরব। এ মাঠেই হোক রূপকথার শুরু। ১৮ ডিসেম্বর বিজয় সংগীত গেয়ে এখানেই নিশ্চয় রূপকথার শেষটা করতে চাইবেন মেসিরা। বলে দেওয়াই যায় আরবকে এক ইঞ্চি ছাড় দেওয়ার মনোবৃত্তি দেখা যাবে না আর্জেন্টাইনদের মধ্যে। স্বপ্ন জয়ের অভিযান বলেই প্রয়োজনে ধারণ করতে হবে নিষ্ঠুর রূপ।
আর্জেন্টিনার হয়ে মেসির শুরুটা সেই ২০০৫ সাল থেকে। বাঁ পায়ের জাদুকর সেই থেকে মায়াবী জাদুতে সম্মোহিত করে রেখেছেন সারা দুনিয়াকে। বার্সেলোনা একাডেমিতে বেড়ে ওঠা, তার আলোতেই স্প্যানিশ ক্লাবটি জিতেছে সম্ভাব্য সবকিছুই। ক্লাবের হয়ে মেসিও হীরে-জহরতে গেঁথেছেন সাফল্যের মালা। তবে কেন যেন আকাশি জার্সিতে হচ্ছিল না। সাফল্যের খুব কাছে গিয়েও ফিরতে হয়েছে খালি হাতে। তা বিশ্বকাপ বলুন কিংবা কোপা আমেরিকা। একটা সময় মনে হচ্ছিল মেসি খেলা দিয়ে হৃদয় জিতবেন ঠিকই, তবে শিরোপা জেতা হবে না। কোনো শিরোপাই নয়। সেই মনে হওয়াটা ভুল প্রমাণিত হয় অভিষেকের ঠিক ১৬ বছর পর, গত বছর। ব্রাজিলকে তাদের মাঠে ফাইনালে হারিয়ে কোপা আমেরিকা ওঠে ফুটবলের বরপুত্রের হাতে। সেই আসরে আর্জেন্টিনার ১২ গোলের ৯টিতেই ছিল তার অবদান। করেছিলেন চার গোল, সতীর্থদের দিয়ে করিয়েছিলেন পাঁচটি। সে বছরই ওয়েম্বলিতে ইতালিকে ৩-০ গোলে হারিয়ে কনমেবল-উয়েফা কাপ অব চ্যাম্পিয়নস ট্রফি জেতে আর্জেন্টিনা। সেই ১৯৯৩ সালে সর্বশেষ কোপা জয়ের ২৮ বছর পর জোড়া শিরোপায় মেসির যেমন অবদান, কোচ স্কালোনির অবদানকেও খাটো করে দেখার সুযোগ নেই। জর্জ সাম্পোওলির সহকারী হয়ে ২০১৬-তে আর্জেন্টিনা জাতীয় দলে পা রাখা। ২০১৮-তে যখন হেড কোচের দায়িত্ব পান, তখন কম সমালোচনা সইতে হয়নি। খোদ ডিয়েগো ম্যারাডোনা এমন একজনের হাতে দায়িত্ব দেওয়ায় সমালোচনায় বিদ্ধ করেছিলেন আর্জেন্টাইন ফুটবল ফেডারেশনকে। সে সময়ের সমালোচনাগুলো মুখ বুজে সয়ে যাওয়া স্কালোনি একটা পন্থাই নিয়েছিলেন। মেসিকে কেন্দ্রে রেখে পুরো দলটাকে একটা পরিবার হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। ৪৪ বছর বয়সী কোচও বুঝেছিলেন মেসি সুখী থাকলে দলও যেমন খুশি, পুরো আর্জেন্টিনাই খুশি।
মেসিকে ভালো রাখতে জানেন বলেই দুই লিওনেলে রসায়নটা হয়েছে চমৎকার। সেই রসায়নেই এবার সময় এসেছে বিশ্বসেরা হওয়ার। আর্জেন্টিনা দোহায় পা রেখেছে টানা ৩৬ ম্যাচ অপরাজিত থাকার অনন্য এক রেকর্ড নিয়ে। আজ সৌদি আরবকে হারালে তারা ছুঁয়ে ফেলবে ইতালির ৩৭ ম্যাচ অপরাজিত থাকার বিশ্বরেকর্ড। আর গ্রুপের পরে ম্যাচে মেক্সিকোকে হারালে রেকর্ডটা হয়ে যাবে এককভাবে তাদের। এমন ছন্দে থাকা আর্জেন্টিনা যদি এবার বিশ্বকাপ না জেতে, তাহলে অন্যায় হবে। ঘোরতর অন্যায়। এ যে মেসির সম্ভাব্য শেষ বিশ্বকাপ। বয়স তো আর এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। তবে স্কালোনি তা মানছেন না। কোচ মেসিকে ২০২৬ বিশ্বকাপেও দেখতে চান। আমেরিকা-কানাডা বিশ্বকাপে মেসি থাকবেন কি না, এ নিয়ে এখন মাথা ঘামানোর মানে নেই। আগে তো কাতার মিশনটা ঠিকঠাক শেষ করতে হবে।
তবে ঠিকঠাক কাজের পরিকল্পনা করতে গিয়েই স্কালোনি পড়েছেন বিপাকে। এই সুখী আর্জেন্টিনার মাঝমাঠের নেতৃত্ব দিয়ে গেছেন জিওভানি লো সেলসো ও রদ্রিগো ডি পল। সেই ২০১৯ থেকে। বিশ্বকাপ শুরুর আগ মুহূর্তে লো সেলসো হ্যামস্ট্রিং চোটে পড়ে ছিটকে যান। এতদিন ডি পল ও লো সেলসো মাঝমাঠ থেকে আর্জেন্টিনার খেলাটা গোছাতেন। সুবাদে মেসি অনেকটা স্বাধীন হয়ে খেলার সুযোগ পেতেন। কখনো ওপরে আবার কখনো একটু নেমে এসে জায়গা করে আক্রমণে উঠতেন। কখনো গোল করতেন, কখনো করিয়ে শান্তি পেতেন। তাই লো সেলসোর না থাকাটা বড় দুশ্চিন্তা। এটা বাদ দিয়ে এই আর্জেন্টিনার দুর্বলতা খুঁজে পাওয়া মুশকিল। আজ লো সেলসোর জায়গায় মাঝমাঠে ডি পলের সঙ্গী হতে দেখা যেতে পারে লিয়ান্দ্রো পারেদেসকে। ৪-৩-৩ ফরম্যাটে নাম্বার নাইন পজিশনে লাউতারো মার্তিনেজকে রেখে দু’পাশে খেলবেন মেসি ও অ্যাঞ্জেল ডি মারিয়া। রক্ষণে স্কালোনি আস্থা রাখতে পারেন নাহুয়েল মলিনা, নিকোলাস ওতামেন্দি, ক্রিশ্চিয়ান রোমেরো ও নিকোলাস তাগলিয়াফিকোর ওপর। মাঝমাঠে ডি পল ও পারেদেসকে সহায়তা দেবেন দিগো রড্রিগেজ। আর দুর্গ সামলানোর জন্য তো এমি মার্তিনেজ আছেনই।
ওদিকে সৌদি আরবের মনে শান্তি নেই। সেটা কেবল প্রথম ম্যাচের প্রতিপক্ষ আর্জেন্টিনার বলে নয়। পাশের ছোট্ট দেশ কাতার বিশ্বকাপ আয়োজন করে একটা বড় শিক্ষাই দিয়েছে মধ্যপ্রাচ্যের মোড়লদের। তারপর বেরসিক ভাগ্য প্রথম ম্যাচেই জুটিয়ে দিয়েছে মেসির দলকে। তাই পরের ধাপে যাওয়ার বড় আশা করাটাই কঠিন হয়ে পড়েছে ফরাসি কোচ হার্ভে রেনাঁর শিষ্যদের। তারপরও অভ্যস্ত আবহাওয়ায় খেলা বলেই যা একটু সুবিধে। বড়জোর দলের মূল শক্তির জায়গা রক্ষণভাগকে জমাট করে মেসি-মার্তিনেজ, ডি মারিয়াদের রুখে দিতে পারলেই বড় পাওয়া হবে আরবদের জন্য।
শক্তি, ঐতিহ্য, ফর্ম বিবেচনায় বড় কোনো দুর্ঘটনা না ঘটলে আজ বড় জয়েই বিশ্বকাপ শুরু করতে চাইবে আর্জেন্টিনা। কাল পর্যন্ত যতটুকু জানা গেছে, হালকা চোট থেকে সেরে মেসিও প্রস্তুত মাঠে নামতে। নামবেন না-ই বা কেন? এই বিশ্বকাপ যে অনেক কিছু পাওয়ার বিশ্বকাপ। এই শিরোপা না জিতলে যে কখনই আর্জেন্টিনা মেসির আর্জেন্টিনা হবে না। সেটা হয়ে থাকবে ম্যারাডোনার আর্জেন্টিনা। লিওনেলদের রূপকথার যাত্রাটা তাই শুরু হোক জয়ের মুকুট পরে। যেভাবে তারা কোপা জিতে হাসি ফিরিয়েছিলেন ভক্তদের মুখে, ঠিক সেভাবেই যেন লুসাইল স্টেডিয়ামে ১৮ ডিসেম্বর শেষ হাসিটা হাসেন লিওনেল জুটি।
কাতার পৌঁছে আমি সত্যিই খুব অবাক হয়েছি। অনেক কিছুই বদলে গেছে। নতুন বানানো সুন্দর সুন্দর সব স্টেডিয়াম, হোটেল, যাতায়াত ব্যবস্থা... সবকিছুই অনেক উন্নত হয়েছে। আমি এখানে ২০১১ আর ২০১৫ সালে এসেছিলাম। বিশ্বকাপ উপলক্ষে এরকম একটা বড় পরিবর্তন দেখতে পাব, সেটাই স্বাভাবিক। আর এই বৈপ্লবিক পরিবর্তন এসেছে কাতারের শক্তিশালী অর্থনৈতিক সামর্থ্যরে কারণেই। বিশ্বকাপ ফুটবল উপলক্ষে কাতার নিজেদের পুরোপুরি বদলে ফেলেছে। কাতার হয়ে উঠেছে আরও সুন্দর, আরও উন্নত। এই শহরে এসে আমি অদ্ভুত একটা শক্তি অনুভব করতে পারছি। এই নিয়ে তৃতীয়বার এলাম এবং নতুন এই দোহা দেখে সত্যিই চমকে গেছি। আমি ভেবেছিলাম শহরটা বোধহয় খুব বেশি বদলাবে না, তবে কাতার আমাকে ভুল প্রমাণিত করেছে। একবার এখানে পা দিলেই টের পাওয়া যাবে এই দেশ কতটা বদলে গেছে। আমি আশা করব বিশ্বকাপ দেখতে আসা সবাই আয়োজনটা উপভোগ করবে।
আমার মনে হয় আর্জেন্টিনা অন্যতম ফেভারিট হয়েই কাতারে পা রেখেছে, আরও দুই ফেভারিট হচ্ছে ব্রাজিল ও ফ্রান্স। তবে এই দলগুলোর বাইরেও আরও অনেকগুলো ভালো দল আছে যারা টুর্নামেন্টে শেষ পর্যন্ত টিকে থাকার জন্য লড়াই করবে। এই বিশ্বকাপটা হবে কঠিন বিশ্বকাপ। প্রতিপক্ষ সহজ হোক বা দুর্বল, বিশ্বকাপের প্রথম দুটো ম্যাচ যে কোনো দলের জন্যই খুব গুরুত্বপূর্ণ। এটা যে কোনো দলকেই তাদের শক্তিশালী দিক আর দুর্বল দিক খুঁজে পেতে সহায়তা করবে। এই দুটো ম্যাচ যে কোনো দলকেই মাঠটা কেমন, পরিবেশটা কেমন সেটা বুঝতে সহায়তা করবে আর আত্মবিশ্বাস অর্জন করতে পারবে। সাবধানী খেলে গ্রুপ পর্বটা সহজে পার হও, পরের পর্ব থেকে আত্মবিশ্বাস নিয়ে খেল।
এই আর্জেন্টিনা দলটার সবচেয়ে বড় শক্তির জায়গা আমার কাছে মনে হয় দলের শক্তিশালী রিজার্ভ বেঞ্চ। দলে একঝাঁক প্রতিভাবান খেলোয়াড় আছে। মেসির দলটা কোনো ম্যাচ না হেরেই বিশ্বকাপে খেলতে এসেছে। কোচ লিওনেল স্কালোনি অনেকদিন ধরেই এই খেলোয়াড়দের চেনে এবং জানে।
তবে তাকে সতর্ক থাকতে হবে কারণ অনেক সময় গোটা ম্যাচ ভালো খেলেও শেষ মুহূর্তে দুর্ভাগ্যজনক কোনো কারণে ম্যাচ হারতে হতে পারে। সব খেলোয়াড়ই ইউরোপে ক্লাব ফুটবল মৌসুমের মাঝপথে জাতীয় দলে এসে যোগ দিয়েছে। এটা খেলোয়াড়দের খুব সাহায্য করবে কারণ ফ্রান্সের ফুটবল লিগ অনেক কঠিন। বিশ্বকাপে রেফারিরা অনেক বেশি কড়া। প্রতিপক্ষও কঠিন। মেসির অবশ্য এরই মধ্যে সব কিছু সহ্য করে নেওয়ার অভিজ্ঞতা হয়ে গেছে।
আমার আর আমার সব সতীর্থের জন্য, ১৯৮৬’র বিশ্বকাপটা ছিল খুবই কঠিন। আমরা যখন মেক্সিকো পৌঁছাই তখন খুব চাপের মধ্যে ছিলাম। তবে ১৯৯০’র বিশ্বকাপটা আমাদের কাছে ছিল অনেক বেশি আবেগের। আমরা চোট-জর্জর হয়ে বিশ্বকাপে পৌঁছেছিলাম। আমরা ফাইনালে উঠলাম আর আমরা অন্যায্যভাবে হেরে গেলাম। যেসব খেলোয়াড়কে আমরা সেমিফাইনালে আসতে আসতে হারিয়েছি, কোনো সন্দেহ নেই তাদের ফাইনালে পেলে গল্পটা অন্য রকম হতে পারত। তবে মেসি আর তার দলের পরিস্থিতিটা আলাদা। তারা এসেছে দক্ষিণ আমেরিকার চ্যাম্পিয়ন হয়ে। তাদের ওপর খুব বেশি চাপ নেই, খুব বেশি খেলোয়াড়ের চোটও নেই।
মেসি, এই বিশ্বকাপটা ম্যারাডোনার জন্য জিতে নাও আর শিরোপাটা তাকে উৎসর্গ করো। এটাই হতে পারে ম্যারাডোনার প্রতি শ্রেষ্ঠ শ্রদ্ধাঞ্জলি। আর্জেন্টিনার জার্সিতে বিশ্বকাপে খেলাটা একজন খেলোয়াড়ের জন্য সবচেয়ে গৌরবের মুহূর্ত, একই সঙ্গে সবচেয়ে কঠিনও। টাকা-পয়সা কিছু না, এই আকাশি-নীল জার্সির মূল্য অনেক বেশি। শুধু আমার একার নয়, গোটা আর্জেন্টিনার মানুষেরই আশা, মেসি ৩৬ বছর পর বিশ্বকাপটা উৎসর্গ করবে বিশ্বের শ্রেষ্ঠ ফুটবলার ম্যারাডোনাকে, যে দুই বছর আগে এই নভেম্বর মাসেই পৃথিবী থেকে চিরবিদায় নিয়েছে।
সমর্থনের কারণে বিভক্তি থেকে যায়। তবুও পুরো বিশ্ব যেন এক হয়। বিশ্বকাপ ফুটবলের শক্তি এটাই। এর বিশেষত্ব এজন্যই আলাদা। রবিবার রাতে কাতার-ইকুয়েডর ম্যাচ দিয়ে শুরু হয়েছে ফুটবলের মহাযজ্ঞ। তবে উপদ্বীপের উন্মাদনাটা ব্রাজিল-আর্জেন্টিনাকে ঘিরেই, যা শুরু হচ্ছে আজ থেকে। এই উপত্যকার সমর্থকদের চোখ থাকবে কাতারের লুসাইল স্টেডিয়ামে। যেখানে আজ মাঠে নামছে বিশ্বকাপের অভিষেক আসরের রানার্সআপ আর্জেন্টাইনরা। ফুটবল জাদুকর লিওনেল মেসিরা মুখোমুখি হবেন এশিয়ার আরেক দল সৌদি আরবের।
যেকোনো প্রতিযোগিতায় প্রত্যেক দলের কাছে প্রথম ম্যাচ খুব গুরুত্বপূর্ণ। সবারই লক্ষ্য থাকে এই ম্যাচ জিতে মানসিকভাবে এগিয়ে থাকা, বাকি পথটা সহজ করা। আজ আর্জেন্টিনারও সেই লক্ষ্য থাকবে। সৌদি আরবকে হারিয়ে এগিয়ে যাওয়া।
চলতি শতাব্দীর পাঁচ বিশ্বকাপের প্রতিটি আসরের প্রথম ম্যাচেই জয় পেয়েছিল আর্জেন্টিনা। ২০০২ সাল ছাড়া প্রতিটিতেই তারা নকআউট পর্ব খেলেছে। সেবার বাতিস্তা-সেমিওয়ালাসহ তারকা খেলোয়াড়দের নিয়ে গড়া দলটি গ্রুপ পর্ব থেকেই বিদায় নিয়েছিল। তবে বাকি আসরগুলোর একটিতে সেকেন্ড রাউন্ড, দুটিতে কোয়ার্টার ফাইনাল ও একটিতে ফাইনাল খেলেছে তারা।
ফুটবল বিশ্বকাপের অভিষেক আসর হয়েছিল ১৯৩০ সালে। উরুগুয়ের রাজধানী মোন্তেভিদেওতে এস্তাদিও পসিটস মাঠে নিজেদের প্রথম ম্যাচ খেলেছিল আর্জেন্টিনা। সেই ম্যাচে ফ্রান্সকে ১-০ গোলে হারিয়ে তারা শুভ সূচনা করেছিল। সে আসরে তারা উঠেছিল ফাইনালে। যদিও উরুগুয়ের কাছে হেরে রানার্সআপ হয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয়। পরের আসর ১৯৩৪ সালে ইতালির বোলোনিয়ায় সুইডেনের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচ খেলতে নামে তারা। সে ম্যাচে তারা ৩-২ গোলে হেরে যায়।
পরের বিশ্বকাপের আয়োজক দেশ হওয়ার আগ্রহ দেখিয়েছিল আর্জেন্টিনা। কিন্তু ফিফার সভায় ভোটাভুটিতে নির্বাচিত হয় ফ্রান্স। আয়োজক হতে না পারার আক্ষেপে তারা ১৯৩৮ সালের বিশ্বকাপ থেকে নিজেদের নাম প্রত্যাহার করে নেয়। ইউরোপে বিশ্বকাপ হওয়াতে উরুগুয়েও সে আসরে অংশ নেয়নি। এরপর পৃথিবীতে নেমে আসে যুদ্ধ। বিশ্বযুদ্ধের কারণে ১৯৪২ ও ১৯৪৬ সালে বিশ্বকাপ আয়োজিত হয়নি।
আর্থিক বনিবনা না হওয়াতে আর্জেন্টিনার অনেক খেলোয়াড় দেশ ছেড়েছিলেন। ফলে তাদের জাতীয় দলটি হয়ে পড়ে দুর্বল। কিন্তু খর্বশক্তির দল নিয়ে খেলে লজ্জায় পড়তে চায়নি দেশটির ফেডারেশন। এছাড়া ব্রাজিলের সঙ্গে আর্জেন্টিনার ফুটবল ফেডারেশনের সম্পর্কেরও অবনতি হতে থাকে। তাই ১৯৫০ বিশ্বকাপ থেকেও নিজেদের নাম প্রত্যাহার করে নেয় তারা।
বিশ্বকাপ হচ্ছে অথচ আর্জেন্টিনা নেই! আকাশি-নীল দলটি ছাড়া বিশ্বকাপ কেমন যেন ফাঁকা ফাঁকা লাগে। একটু অবিশ্বাস্য শোনাতে পারে, প্রথম বিশ্বকাপের রানার্সআপ আর্জেন্টিনা ত্রিশ থেকে পঞ্চাশের দশক পর্যন্ত টানা তিনটি আসরে অংশই নেয়নি! ১৯৫০ তো বটেই, ১৯৫৪ সালের সুইজারল্যান্ড বিশ্বকাপও বর্জন করেছিল আর্জেন্টাইন। তবে ১৯৫৮ সালে সুইডেনে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপ দিয়ে ৩৪ বছর পর ফুটবলের বিশ্বমঞ্চে ফিরে আসে তারা।
তবে ১৯৫৮ সালের প্রত্যাবর্তনটা তারা রাঙাতে পারেনি। ৮ জুন নিজেদের প্রথম ম্যাচে পশ্চিম জার্মানির বিপক্ষে ৩-১ গোলে হেরে যায়। শুধু তাই নয়! সেবার তারা গ্রুপ পর্ব থেকেই বিদায় নেয়। পরের আসরে চিলিতে ১৯৬২ সালে নিজেদের প্রথম ম্যাচ তারা খেলে বুলগেরিয়ার বিপক্ষে। সেদিন তারা ১-০ গোলে জিতে শুভ সূচনা করেছিল। কিন্তু এ বছরও তারা গ্রুপ পর্ব থেকে বিদায় নেয়।
তবে ইংল্যান্ডে ১৯৬৬ সালের বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনা কোয়ার্টার ফাইনাল খেলে। সে আসরে তারা নিজেদের প্রথম ম্যাচ খেলেন স্পেনের বিপক্ষে ১৩ জুলাইয়ের সেই ম্যাচে ২-১ গোলে জিতে তারা শুভ সূচনা করেছিল। যদিও ১৯৭০ সালের বিশ্বকাপে আবার তারা উত্তীর্ণ হতে পারেনি।
১৯৭৪ বিশ্বকাপে দ্বিতীয় পর্ব থেকেই বিদায় নিয়েছিল। শুরুটাও খুব ভালো বলা যায় না। ইতালির সঙ্গে ১-১ গোলে ড্র করে বিশ্বকাপ অভিযান শুরু করেছিল। নিজেদের সোনালি সময়টা যারা হেলা আর অহমের কারণে বিশ্বকাপ নামক লক্ষ্মীকে পায়ে ঠেলে বিদায় করেছে, সেই আকাশি-নীল জার্সিধারী আর্জেন্টাইনরা ১৯৭৮ সালে এসে শিরোপার স্বাদ পায়। সেবার নিজেদের প্রথম ম্যাচে হাঙ্গেরিকে ২-১ গোলে হারিয়ে শুভ সূচনা করেছিল।
শিরোপা জয়ের পরের আসরে ১৯৮২ সালে স্পেন বিশ্বকাপে আবার দ্বিতীয় পর্ব থেকেই বিদায় নেয়। সেবার বেলজিয়ামের কাছে ১-০ গোলে হেরে বিশ্বকাপ যাত্রা শুরু হয়েছিল তাদের। তবে ১৯৮৬ সালে ম্যারাডোনার হাত ধরে ফের শিরোপা যায় আর্জেন্টিনাতে। মেক্সিকোতে সেবার দক্ষিণ কোরিয়াকে ৩-১ গোলে গুঁড়িয়ে বিশ্বকাপে শুভ সূচনা করেছিল, যা শেষ পর্যন্ত ধরে রাখে তারা। সেবার একই ম্যাচে ‘হ্যান্ড অব গড’ ‘গোল অব দ্য সেঞ্চুরি’ দেখেছিল ফুটবলবিশ্ব। যার মাধ্যমে ম্যারাডোনা হয়ে ওঠেন ফুটবল ঈশ্বর।
১৯৯০ সালে ফের বিশ্বকাপের শিরোপা জয়ের সুযোগ পেয়েছিল আর্জেন্টিনা। কিন্তু পশ্চিম জার্মানির কাছে হেরে রানার্সআপ হয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয় তাদের। সেবার নিজেদের প্রথম ম্যাচটাও অবশ্য ক্যামেরুনের বিপক্ষে ১-০ গোলের হার দিয়ে শুরু করেছিল।
পরের আসর ১৯৯৪ সালে যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বকাপে গ্রিসকে ৪-০ গোলে গুঁড়িয়ে দিয়ে টুর্নামেন্টে শুভ সূচনা করেছিল। কিন্তু রাউন্ড ১৬ থেকেই তাদের বিদায় নিতে হয়েছিল।
ফ্রান্সে ১৯৯৮ বিশ্বকাপে জাপানকে ১-০ গোলে হারিয়ে যাত্রা শুরু হয়েছিল আর্জেন্টিনার। তবে কোয়ার্টার ফাইনাল থেকেই বিদায় নিতে হয়। পরের আসরে জাপান-কোরিয়ার যৌথ উদ্যোগে ২০০২ বিশ্বকাপে নিজেদের প্রথম ম্যাচে নাইজেরিয়াকে ১-০ গোলে হারায় সেমিওয়ালার দল। কিন্তু গ্রুপ পর্ব থেকেই বিদায় নেয় আর্জেন্টিনা।
জার্মানিতে ২০০৬ সালে নিজেদের প্রথম ম্যাচে আইভেরি কোস্টের বিরুদ্ধে ১-০ গোলের জয়ে বিশ্বকাপ যাত্রা শুরু করে। কিন্তু কোয়ার্টার ফাইনালে স্বাগতিকদের কাছে হেরে বিদায় নিতে হয়। দক্ষিণ আফ্রিকার ২০১০ বিশ্বকাপেও এই জার্মানির কাছেই হেরে কোয়ার্টার ফাইনাল থেকে বিদায় নেয়। তবে নাইজেরিয়াকে নিজেদের প্রথম ম্যাচে ১-০ গোলে হারায় তারা।
ব্রাজিলে ২০১৪ বিশ্বকাপে ফাইনালে জার্মানির কাছে হেরে শিরোপাবঞ্চিত হয় আর্জেন্টিনা। বসনিয়া ও হার্জেগোভিনার বিপক্ষে ২-১ ব্যবধানের জয় দিয়ে শুরু হয়েছিল বিশ্বকাপ মিশন। তবে যাচ্ছেতাই পারফরম্যান্স নিয়ে বিশ্বকাপ খেলতে এসেছিল তারা রাশিয়াতে। যার প্রমাণ তাদের ফলাফলে। নিজেদের প্রথম ম্যাচে আইসল্যান্ডের বিপক্ষে ১-১ গোলে ড্র করে তারা। ফ্রান্সের কাছে হেরে রাউন্ড ১৬ থেকে বিদায় নেয়।
তবে কোপা আমেরিকা আর ফিনালিসসিমা জয়ের পর আত্মবিশ্বাসের তুঙ্গে আছে আর্জেন্টিনা। ঘুচিয়েছে তাদের ২৮ বছরের শিরোপা-খরা। এবার সুযোগ বিশ্বজয়ের। অঘটন না হলে যার শুরুটা হতে পারে লুসাইলে সৌদি আরবের বিপক্ষে জয় দিয়ে।
টেস্ট ক্রিকেটে সিলেটের পথচলা শুরু হয়েছিল ২০১৮ সালে। অভিজাত সংস্করণে যা ছিল দেশের অষ্টম ভেন্যু। জিম্বাবুয়ের সঙ্গে ম্যাচ দিয়ে সাদা পোশাকের ক্রিকেটে পা রাখে দেশের সবচেয়ে সুন্দর এই স্টেডিয়ামটি। তবে মাঠের অভিষেক ম্যাচেই হেরে যায় বাংলাদেশ। তারপর আর কোনো পাঁচ দিনের খেলা গড়ায়নি এই মাঠে। এ নিয়ে স্থানীয়দের আক্ষেপের শেষ নেই।
অবশেষে অপেক্ষার প্রহর ফুরাচ্ছে। পাঁচ বছর পর আবারও টেস্ট ক্রিকেট অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের পরিচালক ও সিলেট বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল।
ক্রিকবাজের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেছেন, ‘আগামী নভেম্বর-ডিসেম্বরে আমরা নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে দুই ম্যাচের সিরিজের প্রথম টেস্ট আয়োজন করতে পারব বলে আশা করছি। এটি আমাদের জন্য খুব একটি উপলক্ষ হবে। কারণ পাঁচ বছর পর সিলেটের মাঠে টেস্ট ক্রিকেট ফিরবে।’
সম্প্রতি নিউজিল্যান্ড ক্রিকেটের প্রতিনিধি দল সিলেট সফর করেছে। তারা সেখানকার মাঠসহ সব সুযোগ সুবিধা পরিদর্শন করেছেন। পাশাপাশি নিরাপত্তার বিষয়ে স্থানীয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারি বাহিনীর সঙ্গেও বৈঠক করেছেন। সবকিছু দেখে তারা এখানে আরও বেশি ম্যাচ আয়োজনের জন্য উন্মুখ বলে জানিয়েছেন বিসিবির নারী উইংয়ের চেয়ারম্যান নাদেল।
তিনি যোগ করেছেন, ‘নিউজিল্যান্ড ক্রিকেটের প্রতিনিধি দল আমাদের সুযোগ-সুবিধা নিয়ে বেশ মুগ্ধ। তাদের প্রতিক্রিয়া দেখে মনে হয়েছে আমরা তাদের সব প্রত্যাশা ও প্রয়োজনীয়তা পূরণ করতে পারব।’
এফটিপি সূচি অনুযায়ী চলতি বছর বাংলাদেশের বিপক্ষে তিন ওয়ানডে ও দুই টেস্ট ম্যাচের সিরিজে খেলার কথা নিউজিল্যান্ডের। তবে সিরিজটি হবে দুই ভাগে। প্রথম ভাগে সেপ্টেম্বরের শেষভাগে বাংলাদেশের সঙ্গে ওয়ানডে খেলবে কিউইরা। এই সিরিজ খেলেই বিশ্বকাপ খেলতে ভারতে যাবে দুই দল।
বিশ্বকাপের পর হবে দুই দলের টেস্ট সিরিজ। নভেম্বরের শেষ দিকে আবারও বাংলাদেশে আসবে কিউইরা। বিসিবি প্রস্তাবিত সূচি অনুযায়ী ২১ নভেম্বর ঢাকায় পা রাখার কথা সফরকারীদের। এরপর একটি প্রস্তুতি ম্যাচও খেলবে দলটি। ২৮ নভেম্বর থেকে ২ ডিসেম্বর হবে বাংলাদেশ ও নিউজিল্যান্ডের মধ্যকার সিরিজের প্রথম টেস্ট।
প্রথম দুই সেটই গড়িয়েছে টাইব্রেকারে। প্রথমটি নিষ্পত্তি হয়েছে ৮৫ মিনিটে। দ্বিতীয়টিও টাইব্রেকারে। সেটির নিষ্পত্তি ঘণ্টার ওপরে। দুটোতেই জয় নোভাক জকোভিচের। তারপরেরটিও জিতে যান এই সার্বিয়ান। ১৪তম ফ্রেঞ্চ ওপেনের খেলায় স্পেনের আলেজান্দ্রো ফোকিনার সঙ্গে ৩-০ সেটে জয়লাভ করেন তিনি। যে জয়ে মধুর প্রতিশোধ নিয়ে শেষ ষোলো নিশ্চিত করেছেন তিনি।
৩৬ বছর বয়সী এই নাম্বার ওয়ান টেনিস তারকা প্রথম সেটে কিছুটা ছন্দহীন ছিলেন। তবে চ্যাম্পিয়নদের ঘুরে দাঁড়াতে তো সময় বেশি লাগে না। জকোভিচও ঘুরে দাঁড়িয়েছেন। তারপর ফোকিনাকে কোনো সেট জিততে না দিয়েই ম্যাচ শেষ করেন তিনি।
প্রায় ৪ ঘণ্টাব্যাপী চলা এই ম্যাচটিতে এক পেশে জয় হলেও প্রতিটি সেটেই উত্তেজনার পারদ ছড়িয়েছেন দুজন। সমর্থকেরাও বারবার হয়েছেন রোমাঞ্চিত। তবে শেষ পর্যন্ত নোভাক জকোভিচের সমর্থকেরাই হাসি নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন। আগামী সোমবার জকোভিচ শেষ ষোলোর ম্যাচ খেলতে নামবেন। সেখানে প্রতিপক্ষ হিসেবে কার্লোস আলকারাজকে পেতে পারেন তিনি।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতিতে জোর করে হারানো হয়েছে।
গতকাল রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
এই নিয়ে ঘনিষ্ঠ অনেকের কাছে জানতে চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। ভিন্ন কোনো জটিলতার সৃষ্টি হলে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে গাজীপুরের যেকোনো আসন থেকে মনোনয়ন পাবেন তিনি। সে ক্ষেত্রে গাজীপুর সিটির ভোটে যে সংসদ সদস্য দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে কাজ করার তথ্য মিলবে তাকেই বাদ দেওয়া হবে। এ সিটি ভোটে হারের কারণ জানতে প্রধানমন্ত্রী নিজস্ব একটি সংস্থাকে নির্ভুল তথ্য দিতে নির্দেশ দিয়েছেন।
নির্বাচনকালীন সরকারে মন্ত্রীর দায়িত্বও পেতে পারেন আজমত, ওই সূত্র দাবি করে। সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
নানা অব্যবস্থাপনায় এগোচ্ছে না প্রাথমিক শিক্ষা। প্রায় শতভাগ শিশু ভর্তির আওতায় এসেছে অনেক আগে। এরপর মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতের কাজ অনেকটাই আটকে আছে। খোদ সরকারি সংস্থার গবেষণায় উঠে এসেছে প্রাথমিকে চরম দুরবস্থার কথা। গবেষয়ণা প্রতিবেদন অনুযায়ী, কাক্সিক্ষত মানের চেয়ে শিশুরা অনেক পিছিয়ে আছে। কিছু শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু কাজ করার চেষ্টা করলেও কথায় কথায় তাদের ওপর নেমে আসছে শাস্তির খড়গ। মানের উন্নয়ন না হলেও ঠিকই অধিদপ্তরে বসে ছড়ি ঘোরাচ্ছেন কর্মকর্তারা।
প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের শিখন ঘাটতি নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহায়তায় সম্প্রতি এই গবেষণা করেছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। সেখানে দেখা যায়, করোনা সংক্রমণের আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা গড়ে ইংরেজি বিষয়ে যতটা শিখত, করোনাকালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের ফলে তা সাড়ে ১২ শতাংশ কমে গেছে। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের হার কমেছে প্রায় সাড়ে ১৬ শতাংশ। আর তৃতীয় শ্রেণির বাংলায় কমেছে ১৫ শতাংশের মতো।
গবেষণার তথ্য বলছে, করোনার আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ইংরেজিতে শিখন অর্জনের গড় হার ছিল প্রায় ৪৯ শতাংশ। করোনাকালে বন্ধের প্রভাবে এই হার কমে দাঁড়িয়েছে ৩৬ শতাংশ। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ^পরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের গড় হার ৫১ শতাংশের বেশি, যা আগে ছিল ৬৮ শতাংশের মতো। পঞ্চম শ্রেণির বাংলা, গণিত ও বিজ্ঞানেও ক্ষতি বেড়েছে।
এনসিটিবির সদস্য (প্রাথমিক শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক ড. এ কে এম রিয়াজুল হাসান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রাথমিক শিক্ষার ঘাটতি পূরণে এ ধরনের গবেষণার দরকার ছিল। আন্তর্জাতিক মানদ- বজায় রেখেই তা করা হয়েছে। আমরা এই গবেষণা প্রতিবেদন দু-এক দিনের মধ্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠাব। আমরা অন্তত এক বছরের জন্য রেমিডিয়াল ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেছি। মন্ত্রণালয় সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ নিচ্ছে।’
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, প্রাথমিক শিক্ষা দিন দিন পিছিয়ে পড়লেও সেদিকে তেমন একটা নজর নেই প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের। তারা ব্যস্ত আছে লাখ লাখ শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের বদলি-পদায়ন নিয়ে। কেউ কথা বললেই তার ওপর নেমে আসছে শাস্তি। ফলে শিক্ষকরাও দিন দিন তাদের আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন; কোনো রকমে দিন পার করছেন।
জানা যায়, প্রাথমিক শিক্ষায় উদ্ভাবনী ও অনন্য অবদানের জন্য ২০১৯ সালে সারা দেশের মধ্যে শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষক নির্বাচিত হন রাজবাড়ী জেলার স্বাবলম্বী ইসলামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. শফিকুল ইসলাম। একই বছর রাজধানীর মোহাম্মদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক খায়রুন নাহার লিপি শ্রেষ্ঠ সহকারী শিক্ষিক নির্বাচিত হন। সাধারণত আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী এসব শিক্ষকের হাতে পদক তুলে দেন। শিক্ষকদের পাশাপাশি সেরা শিক্ষার্থীদের পদক দেওয়া হয় একই অনুষ্ঠানে। কিন্তু করোনাকালে তাদের হাতে জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষক পদক তুলে দেওয়া যায়নি। গত ১২ মার্চ রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে তাদের হাতে এ পদক তুলে দেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন। তাই অনুষ্ঠানের কয়েক দিন আগে স্বাভাবিকভাবে তারা দাবি তুলেছিলেন, দেরি হলেও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে তারা পদক নেবেন; যা তাদের সারা জীবনের স্বপ্ন পূরণ করবে। কিন্তু সেটা না হওয়ায় তারা প্রতিমন্ত্রীর হাত থেকে ঠিকই পদক নেন। তবে এর ৬৮ দিনের মাথায় এই শ্রেষ্ঠ শিক্ষকদের প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবি তোলায় চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। একই ঘটনায় জয়পুরহাটের হিন্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. মাহবুবুর রহমানকেও সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। কারণ তার বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী এ পদক নিতে ১১ মার্চ ঢাকা এসেছিল। ওই শিক্ষকও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবিকে সমর্থন করেছিলেন। সাময়িক বরখাস্ত করা হলেও তাদের কাউকে শোকজ করা হয়নি; যা বিধিবহির্ভূত বলছেন শিক্ষকরা।
জানতে চাইলে ঢাকা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. আবদুল আজিজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সাময়িক বরখাস্তের পরবর্তী যে প্রক্রিয়া আছে, সেদিকেই আমরা যাব।’ এর বেশি কিছু তিনি বলতে রাজি হননি। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াতের সঙ্গে এসব ব্যাপারে কথা বলার জন্য গতকাল একাধিকবার চেষ্টা করলেও তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি।
বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক শিক্ষা গবেষণা পরিষদের সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে পদক নেওয়া একজন শিক্ষকের জীবনে সেরা প্রাপ্তি। এ জন্য শিক্ষকদের দাবি থাকতেই পারে, প্রত্যাশা থাকতেই পারে। তবে সবচেয়ে বড় কথা হলো, আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে কাউকে শাস্তি দেওয়া যায় না। শিক্ষকদের যেভাবে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে, তা মোটেও ঠিক হয়নি বলে আমার মনে হয়। এর প্রভাব অন্যান্য শিক্ষকের মধ্যেও পড়বে, এটাই স্বাভাবিক।’
শুধু তা-ই নয়, করোনাকালে বন্ধ থাকা প্রাথমিক শিক্ষা চালু রাখতে কিছু শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু অনলাইন প্ল্যাটফর্ম চালু করেন; যাতে অনলাইন ক্লাস, শিক্ষকদের মধ্যে আলোচনাসহ নানা কাজ করা হয়। এতে প্রতিটি ফেসবুক গ্রুপে লাখ থেকে হাজারো শিক্ষক যুক্ত হয়েছেন। এখনো সেসব গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে। কিন্তু সেই গ্রুপগুলোকেই এখন শায়েস্তা করার হাতিয়ার হিসেবে বেছে নিয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অপব্যবহারের অজুহাত দেখিয়ে অনলাইনে যুক্ত থাকা অনেক শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাকেই দেওয়া হচ্ছে কারণ দর্শানো নোটিস (শোকজ)। সরকার যেখানে শিক্ষকদের ডিজিটালি আপডেট হওয়ার কথা বলছে, সেখানে প্রায় অনেকটাই উল্টো পথে হাঁটছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।
শিক্ষকরা জানান, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে দীর্ঘদিন ধরে আসন গেড়ে বসেছেন কিছু কর্মকর্তা। অনেকেই ৬ থেকে ১২ বছর ধরে একই দপ্তরে চাকরি করছেন। তাদের যে দায়িত্বই থাক না কেন যত লাভজনক কাজ আছে, সেগুলোতেই তারা হাত দিচ্ছেন। যোগ্য কর্মকর্তাকে অধিদপ্তরে আনলে তাদের সরে যেতে হবে, এ জন্য তারা নানাভাবে ঊর্ধ্বতনদের ভুল বুঝিয়ে মাঠপর্যায়ে শাস্তি দিয়ে সবাইকে ভীত করে তুলছেন। এতে পিছিয়ে পড়ছে প্রাথমিক শিক্ষার মান।
প্রায় দুই বছর বন্ধ থাকার পর গত মার্চ-এপ্রিলে অনলাইনে প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলি করা হয়। যদিও নিয়ম ছিল, অনলাইনে নির্দিষ্ট মানদন্ড পূরণ ছাড়া কেউ বদলি হতে পারবেন না। কিন্তু তা মানেনি প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। ঢাকা ও ঢাকার বাইরে নিয়ম ভেঙে কয়েক শো শিক্ষকের বদলির আদেশ জারি করা হয়। আর এই বদলি-পদায়নে বড় অঙ্কের অর্থ লেনদেন হয়েছে বলে দাবি শিক্ষকদের; যা ভাগ-বাটোয়ারা হয়েছে মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের মধ্যে। আবার অনেক জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও থানা শিক্ষা কর্মকর্তাদের বদলিতেও সমন্বয়হীনতা দেখা দিচ্ছে। কাউকে ক্ষোভের বশবর্তী হয়েও অনেক দূরে বদলি করে দেওয়া হচ্ছে। এতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়ন।
জানা যায়, চলতি বছর থেকে প্রথম শ্রেণিতে চালু হয়েছে নতুন শিক্ষাক্রম। আর আগামী বছর থেকে দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণিতে এবং ২০২৫ সাল থেকে চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম চালু হবে। কিন্তু তা পড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নেই অধিদপ্তরের। শিক্ষকদের নামমাত্র প্রশিক্ষণেই দায়িত্ব শেষ করা হয়েছে। আসলে এই শিক্ষাক্রম শিক্ষার্থীরা কতটুকু আত্মস্থ করতে পারছে বা এ জন্য আর কী করা প্রয়োজন, সে ব্যাপারে তেমন নজর নেই।
এ ছাড়া এখনো প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষকরা বেতন পান ১১তম গ্রেডে ও সহকারী শিক্ষকরা পান ১৩তম গ্রেডে। দুই ধরনের প্রায় চার লাখ শিক্ষকই ১০ম গ্রেডে বেতনের দাবি করে আসছেন। এ ছাড়া সহকারী থানা শিক্ষা অফিসার ও সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসারাও দীর্ঘদিন ধরে নবম গ্রেডের দাবি করছেন। আর মাঠে কাজ করা এসব শিক্ষক ও কর্মকর্তার পদোন্নতিও নেই বললেই চলে। কিন্তু এগুলো সমাধানেও তেমন কোনো উদ্যোগ নেই মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের; যা প্রাথমিকের মান উন্নীতের ক্ষেত্রে বড় অন্তরায় বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
প্রবীণ শিক্ষক নেতা মো. সিদ্দিকুর রহমান আরও বলেন, ‘এখনো মফস্বলে বা দুর্গম অঞ্চলের অনেক স্কুলেই এক-দুজন শিক্ষক। অনেক স্কুলে শিক্ষকের পদ তিন-চার বছর ধরে শূন্য। শিক্ষক না থাকলে এর প্রভাব শিক্ষার্থীদের ওপরও পড়ে। এ ছাড়া সরকারি প্রাথমিকে সাধারণত দরিদ্র পরিবারের শিক্ষার্থীরা আসে। তাদের একটু আলাদা যতœ নেওয়া প্রয়োজন। সেগুলোও হচ্ছে না। শিক্ষকরাও তাদের বেতন-ভাতায় সন্তুষ্ট নন। সব মিলিয়ে আমরা প্রাথমিক শিক্ষায় কাক্সিক্ষত মান অর্জন করতে পারছি না।’
ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে গাজীপুর সিটি নির্বাচনে হেরে যাওয়া প্রার্থী আজমত উল্লা খানকে।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে থাইল্যান্ডের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতি জোর করে হারানো হয়েছে।
গত রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন তেমনি যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
দুই দশকেরও বেশি ক্যারিয়ারে অসংখ্য নাটক-টেলিছবি নির্মাণ করেছেন শিহাব শাহীন, উপহার দিয়েছেন হিট প্রোডাকশন। নিজেকে শুধু রোমান্টিক জনরায় আটকে না রেখে কাজ করেছেন বহুমাত্রিক ঘরানায়। নিজেকে প্রমাণ করেছেন সব্যসাচী নির্মাতা হিসেবে। নিজেকে শুধু টেলিভিশনেই আটকে রাখেননি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তিনিও পাল্টেছেন প্লাটফর্ম এবং সেখানেও দেখিয়েছেন নিজের মুন্সিয়ানা।
সর্বশেষ গেল ঈদে তুমুল সাড়া ফেলেছে তার নির্মিত স্পিন অফ সিরিজ ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’। সাফল্যের পর কিছুদিন আগেই অনুষ্ঠিত হয়ে গেল এর সাকসেস পার্টি যেখানে উপস্থিত ছিলেন টিমের কলাকুশলী থেকে শুরু করে অন্যান্য নির্মাতা ও শিল্পীরা। সেই ধারাবাহিকতায় এবার তিনি নিয়ে আসছেন সিরিজটির সিক্যুয়াল। শুধু তাই নয়, একসঙ্গে একাধিক সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে আসছেন জনপ্রিয় নির্মাতা।
শিহাব শাহীন বলেন, ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’ নিয়ে এতটা প্রত্যাশা ছিল না কিন্তু সে সাড়া পেয়েছি তা প্রত্যাশার চেয়েও বেশি। দর্শকরাই কাজটিকে গ্রহণ করেছেন আর তাই এখন এর সিক্যুয়াল নিয়ে আসার পরিকল্পনা করছি। স্পিন অফে দেখিয়েছি অ্যালেন স্বপনের পেছনের গল্প। সিন্ডিকেটে তাকে আমরা দেখিয়েছিলাম ২০২২ সালে, সে ঢাকায় আসার পর এর মাঝের সময়টার গল্পই থাকবে সিক্যুয়ালে। যেটার সংযোগ থাকতে পারে ‘সিন্ডিকেট ২’-তে। ঈদের পরপর এটার শুট করার সম্ভাবনা রয়েছে।
এই সিক্যুয়াল ছাড়াও আরও বেশ কিছু সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে সবকিছু চূড়ান্ত হয়েছে বলেও জানান এ নির্মাতা। তিনি বলেন, মোস্তফা সরয়ার ফারুকির তত্ত্বাবধানে ওটিটি প্লাটফর্ম চরকির ‘মিনিস্ট্রি অফ লাভ’ সিরিজের একটা কনটেন্ট করবো। এখনও কাস্টিং চূড়ান্ত হয়নি। এছাড়া হইচইয়ের একটি সিরিজ ও বিঞ্জের একটি ফিল্ম করা হবে। নাম চূড়ান্ত হয়নি। তবে দুটোতেই জিয়াউল ফারুক অপূর্ব থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
মাঝে শোনা গিয়েছিল, আফরান নিশোকে নিয়ে ‘সিন্ডিকেট ২’ নাকি হবে না, এটা কতটুকু সত্য? এমন প্রশ্নে শিহাব শাহীন বলেন, এটা ভূয়া তথ্য। ডিসেম্বরের শেষ দিকে ‘সিন্ডিকেট ২’ করবো তার আগে সেপ্টেম্বরে শুরু করবো ‘রসু খাঁ’।
জানা গেছে, আগামী সপ্তাহে অস্ট্রেলিয়া পাড়ি জমাচ্ছেন শিহাব শাহীন। দেশে ফিরবেন মাসের শেষ নাগাদ এরপর কাজে নামবেন।
দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী আবাহনী লিমিটেড ও মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের মধ্যকার ফেডারেশন কাপ ফুটবলের ফাইনাল দেখতে কুমিল্লায় উড়ে গেছেন বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন।
কুমিল্লার শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত স্টেডিয়ামে আজ বেলা ৩টা ১৫ মিনিটে শুরু হয়েছে ম্যাচটি। সালাউদ্দিন ম্যাচ শুরুর ঘণ্টা খানেক আগে কুমিল্লায় পৌঁছান।
ঢাকা থেকে সড়ক পথে কুমিল্লায় পাড়ি দিতে মাত্র দুই ঘণ্টা সময় লাগে। তবে সালাউদ্দিন দূরত্বটা পাড়ি দিয়েছেন হেলিকপ্টারে করে। যা আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
টাকার অভাবে কদিন আগে নারী ফুটবলারদের অলিম্পিক বাছাইয়ে পাঠায়নি বাফুফে। অথচ ঢাকা থেকে কুমিল্লায় যেতে বাফুফে সভাপতি বেছে নিলেন হেলিকপ্টার।
হেলিকপ্টারে ঢাকা থেকে কুমিল্লার এই যাত্রায় বাফুফে সভাপতির সঙ্গী হয়েছেন সংস্থার নারী উইংয়ের চেয়ারম্যান মাহফুজা আক্তার কিরণ।