
নিজের টুইটার অ্যাকাউন্টে লিওনেল মেসি লিখেছেন, ‘উই গো এগেইন অন স্যাটার ডে!’ তার নিচে হাজারো কমেন্টস। ভিনগ্রহের ফুটবলশিল্পীর কাছে কারও আকুতি, ‘আমাদের রক্ষা করো।’ আশা হারিয়ে কেউ লিখেছেন, ‘সৌদির কাছে হেরেই তোমাদের বিদায়ঘণ্টা বেজে উঠেছে।’ তবে বেশিরভাগই জানিয়েছে শুভ কামনা। ১৭ বছরের দীর্ঘ ক্যারিয়ারে সদলবলে মেসি এক কঠিন শনিবারের মুখোমুখি হতে যাচ্ছেন। এই শনিবারটা নিজেদের করতে না পারলে ফুটবলের খেড়ো খাতায় লেখা হবে আরেকটা আক্ষেপের অধ্যায়।
সেই ২০০৫ থেকে মোহনীয় ফুটবলে বিশ্বকে মাতিয়ে রেখেছেন মেসি। এখন তার বিদায় নেওয়ার পালা। এক বিশ্বকাপ ছাড়া বিশ্বের তাবৎ সাফল্য ধরা দিয়েছে তার পায়ে। এই বিশ্বকাপটা নিজের করতে পারলেই পেলে-ম্যারাডোনার কাতারে স্থান হবে বাঁ পায়ের খুদে জাদুকরের। তবে তার স্বপ্নপূরণের পথে কাঁটা বিছিয়ে দিয়েছে সৌদি আরব। বিশ্বকাপটা মেসিদের শুরু হয়েছে দুঃস্বপ্নের মতো। বিশ্বকাপের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় অঘটনের শিকার হওয়া আর্জেন্টিনার গ্রুপ পর্ব পেরুনোই এখন কঠিন। গ্রুপের শেষ দুই ম্যাচে মেক্সিকো ও পোল্যান্ডকে যে করেই হোক হারাতে হবে। দেয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়া আর্জেন্টিনার সামনে আসছে শনিবার পুরনো শত্রু মেক্সিকো। শেষ তিন দেখায় যাদের মেসিরা হারিয়েছেন সহজেই। তারপরও নির্ভার হওয়ার সুযোগ নেই। এই আসরটাও তো তারা শুরু করেছিল টানা ৩৬ ম্যাচ অপরাজিত থেকে। সৌদি আরব যে এমন রুদ্রমূর্তি ধারণ করবে, এতটা নৃশংসভাবে মেসিদের ক্ষত-বিক্ষত করবে, কেউ কল্পনা করেনি। তাই তো এখন আর্জেন্টিনা শিবিরে গ্রুপ পর্ব থেকে বিদায়ের শঙ্কা। কাল জিততে না পারলেই ৩৬ বছরের অপেক্ষাটা আরও দীর্ঘায়িত হবে।
যদি শনিবারটা নিজেদের করা না যায় তবে মেসির নাম উঠে যাবে এক দুর্ভাগা তালিকায়। যেখানে আগে থেকেই হাপিত্যেশ করে চলছেন জর্জ বেস্ট, ইউসেবিও, পুসকাস, ইয়োহান ক্রুইফ, লেভ ইয়াসিন, মিশেল প্লাতিনি, ডি স্টেফানো, সক্রেটিস, জিকো, রবার্তো ব্যাজ্জিও, লুইস ফিগোর মতো ফুটবল কিংবদন্তিরা। যাদের পায়ের ছোঁয়ায় সমৃদ্ধ হয়েছিল ফুটবল। যাদের নান্দনিক ফুটবলে মাতোয়ারা হয়েছে লক্ষ্য-কোটি ভক্ত, তাদের বিদায়টা ছিল বড্ড বেদনাবিধুর। প্রতিটি ফুটবলারের স্বপ্ন থাকে একটিবার হলেও বিশ্বকাপ জেতা। সেই স্বপ্ন অপূর্ণ রেখেই তাদের খুলে রাখতে হয়েছে বুটজোড়া। না পাওয়ার বেদনা সঙ্গী হয়েছে সারা জীবনের তরে। মেসিরও কী একই পরিণতি হবে?
যদি তাই হয়, সেটা হবে বড্ড অন্যায়। সেই ছোটবেলা থেকে আজ পর্যন্ত ফুটবলকে কেবল দু’হাত ভরে দিয়েই গেছেন। বিপরীতে পাওয়া সাতটি ব্যালন ডি’অর, ক্লাব ফুটবলের অসংখ্য শিরোপা, সম্মান, খ্যাতি এবং সবচেয়ে বড় সম্পদ মানুষের ভালোবাসাও ঠুনকো হয়ে যাবে বিশ্বকাপ না পাওয়ার আক্ষেপের কাছে। আর্জেন্টিনার স্বপ্নের ধারক মেসি এই কঠিন সত্যটা তীব্রভাবে অনুভব করেন। তাই নিজের শেষটা এখানেই এবং এভাবে দেখতে চান না। তাই তো দুঃস্বপ্নের ম্যাচ শেষে নিজেকে না লুকিয়ে চলে আসেন সংবাদমাধ্যমের সামনে। শুনিয়ে যান আশার বাণী ‘এখনই সবকিছু শেষ হয়ে যায়নি। আমরা পরের দুই ম্যাচে ফিরব আরও শক্তি সঞ্চয় করে।’
দীর্ঘ ২৮ বছরের শিরোপা-খরা ঘুচিয়ে মেসিরা গত বছর জিতেছিল কোপা আমেরিকা। তখন থেকেই বিশ্বকাপ নিয়ে আর্জেন্টাইনদের প্রত্যাশা আকাশ ছুঁয়েছে। তাই সৌদি-ঝড় সামলে তাদের ঘুরে দাড়াতেই হবে। খুঁজে নিতে হবে কক্ষপথ। তাদের দিশারী লিওনেল স্কালোনি সেই পথটাই খুঁজে পেতে ভাবছেন একাদশে বদল আনার কথা। ধাক্কা সামলে কাল সন্ধ্যায় অনুশীলন করেছে আর্জেন্টিনা। তবে সেখানে ছিল না সংবাদকর্মীদের প্রবেশের অনুমতি। কাতার বিশ্ববিদ্যালয় গ্রাউন্ডে রুদ্ধদ্বার অনুশীলনের সময়টাতে স্কালোনি যতটা না সৌদির সঙ্গে করা ভুলগুলো শিষ্যদের ধরিয়ে দিয়েছেন, তারচেয়ে বেশি নিশ্চয় ফুটবলারদের জাগিয়ে তুলতে চেষ্টা করেছেন। সুখের সংসারে হঠাৎ আসা অনাহূত অসুখ নামের অতিথির আগমন। সেটাকে দূরে সরিয়ে এগিয়ে যেতেই হবে। আর পা হড়কালে চলবে না। তাই কোচ একাদশ সাজাতে চান নতুন করে। সৌদি ম্যাচে শেষ ১৫ মিনিটের জন্য একসঙ্গে কোচ মাঠে পাঠিয়েছিলেন হুলিয়ান আলভারেজ, লিসান্দ্রো মার্তিনেজ ও এনজো ফার্নান্দেজকে। সৌদির ম্যাচে নিভে থাকা ক্রিশ্চিয়ান রোমেরো, পাপু গোমেজ ও লিওনার্দো পারেদেসের জায়গায় এদের দেখা যেতে পারে শুরুতে।
প্রথম ম্যাচে প্রথমার্ধটা নিজেদের মতোই খেলেছিল আর্জেন্টিনা। পেনাল্টি থেকে বিশ্বকাপের আসরে মেসি পান সপ্তম গোলের দেখা। তবে দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই আর্জেন্টিনার রক্ষণের দুর্বলতা কাজে লাগিয়ে অসাধারণ দুই গোলে ম্যাচটা নিজেদের করে নেয় সৌদি আরব। বাকিটা সময়ও সেভাবে আক্রমণ গুছিয়ে সৌদির গোলের দরজা খুলতে পারেনি আলবিসেলেস্তেরা। মেসি, ডি মারিয়া, ফার্নান্দেজদের সব চেষ্টাই মাটি হয়েছে গ্রিন ফ্যালকনদের প্রতিরোধে। তাই স্কালোনিকে গোল করা আর গোল সামলানো দুটি নিয়েই ভাবতে হচ্ছে।
আর এখানেই মেসিকে দেখাতে হবে জাদু। শনিবারটা নিজেদের করতে, স্বপ্নের শিরোপায় হাত রাখতে মেসিকে আরেকবার এবং সাদা-আকাশি জার্সিতে শেষবারের মতো অসামান্য রূপে ধরা দিতে হবে। নইলে...!!!
এক গ্রুপে রাজনৈতিক শত্রু-মিত্রের এমন মেলবন্ধন বিশ্বকাপে খুব কমই দেখা যায়। ‘বি’ গ্রুপে একসঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র-ইরান-ইংল্যান্ড, আছে ওয়েলসও। যারা গ্রেট ব্রিটেনের সহ-রাজ্য। গ্রুপের প্রতি ম্যাচে তাই খেলার দ্বৈরথের পাশাপাশি রাজনৈতিক মিল-অমিলও উপস্থিত। আজ রাতে ইংল্যান্ড-যুক্তরাষ্ট্র ম্যাচে থাকছে ‘মিল’-এর বিষয়টি। বিশ্ব রাজনীতির সব বিষয়ে একমত হওয়া জুটি মাঠের লড়াইয়ে নামবে একে অপরকে হারাতে। রাজনীতির মাঠের দুই বন্ধুর দ্বৈরথ কোন আনন্দ উপহার দেয় সেটাই দেখার।
ফুটবলে দু’দলের লড়াই উপভোগ্য হলেও অতীতে চিত্রটা এমন ছিল না। যুক্তরাষ্ট্র ১৯৩০-৩৮ তিন বিশ্বকাপ খেললেও নিয়মিত হয়েছে অনেক পড়ে। ইংল্যান্ড আবার বিশ্বকাপই খেলেছে ১৯৫০ থেকে। দু’দলের লড়াইয়ে সবসময় ইংল্যান্ড মাঠে নামে ফেভারিট হয়ে। কিন্তু বিশ্বকাপে দু’দলের ভাগ্য অনেকটা ভারত-পাকিস্তানের মতো। ওয়ানডে বিশ্বকাপে যেমন ভারতকে হারাতে পারে না পাকিস্তান। তেমনি বিশ্বকাপে যুক্তরাষ্ট্রকে হারাতে পারে না ইংল্যান্ড। এ পর্যন্ত মূল আসরে দু’বার দেখা হয়েছিল। ১৯৫০ বিশ্বকাপে প্রথম দেখায় যুক্তরাষ্ট্রের কাছে ইংল্যান্ডের ১-০ গোলের হার বিশ্বকাপে সেরা অঘটনের একটি হয়ে আছে আজো। এরপর ২০১০-এ দ্বিতীয়বার লড়াইয়ে নেমে ১-১ ব্যবধানে ড্র করে দু’দল। অথচ এ দুই ম্যাচের বাইরে ৯ দেখায় ৮ বারই জিতেছে থ্রি লায়ন্সরা। এর মধ্যে ১৯৬৪ সালের এক ম্যাচে ১০-০ গোলে জয়ের রেকর্ডও আছে। তবুও বিশ্বকাপ ম্যাচ বলে অতীত ভয় দাগ কাটবে ইংল্যান্ডের মনে।
সেই ভয় কাটার রসদ ইংল্যান্ড অবশ্য পেয়ে গেছে। ইরানকে ৬-২ গোলে হারিয়ে আত্মবিশ্বাসের দিক থেকে অনেক উঁচুতে আছেন রাশফোর্ড-বেলিংহ্যামরা। এতদিন ইংল্যান্ডের আক্রমণের মধ্যমণি ধরা হতো হ্যারি কেইনকে। গত বিশ্বকাপে ৬ গোল করে সেই সামর্থ্য দেখিয়েছেনও। অথচ গত ম্যাচে ইরানের বিপক্ষে ভিন্ন ৫ জন গোল করলেও তালিকায় কেইন ছিলেন না। দুটি অ্যাসিস্ট করেছেন। তবে ইংল্যান্ডের জন্য বড় কথা কেইনের গোল ছাড়াই বড় ব্যবধানে জয়। ইংল্যান্ডের গত ম্যাচের ৬ গোলে মোট ৯ ফুটবলারের অবদান ছিল। ১৯৭৪ সালে জায়ারের বিপক্ষে যুগোস্ল্যাভিয়ার ম্যাচে সবশেষ বার এক খেলার গোলসংখ্যায় এত সংখ্যক ফুটবলারের অবদান ছিল। গত ম্যাচে ৭০ মিনিটে বদলি হয়ে উঠে যাওয়ায় কেইনের ইনজুরি ভয় ছিল। তা কেটে গেছে। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পুরো ফিট হয়েই নামবেন ইংল্যান্ড অধিনায়ক। তার সঙ্গে ফিট দলের আরেকটি জয় ইংলিশদের দ্বিতীয় রাউন্ডে পৌঁছে দেবে।
কেইনের বদলে ওই ম্যাচে ক্যালাম উইলসন মাঠে নামেন। ২০ মিনিট দারুণ খেলেছেন। জ্যাক গ্রিলিশের গোলে অ্যাসিস্ট তারই। অথচ ওই গোলটি করতে পারতেন ক্যালাম নিজেই। দলের জন্য এমন অ-স্বার্থপর খেলা ইংল্যান্ডকে ভালো কিছু এনে দিতে সহযোগিতা করবে বলে জানান গোলরক্ষক জর্ডান পিকফোর্ড, ‘সবাই নিজেদের সেরাটা দিতে আগ্রহী। ইরান ম্যাচে আমরা তা দেখিয়েছি। সবচেয়ে বড় বিষয় হলো আমরা নিজেদের জন্য খেলছি না। ক্যালাম হ্যারির বদলি হিসেবে ৭০ মিনিটে নামার পর অ-স্বার্থপর খেলা উপহার দিয়েছে। জ্যাককে (গ্রিলিশ) নিজের গোলটা উপহার দিয়েছে সে। আমরা দলের সবাই জানি এখানে একটা লক্ষ্য নিয়ে এসেছি। তা দলের জন্যই।’ ইংল্যান্ড দল হিসেবে বিশ্বকাপের আগের বাজে ফর্ম কাটিয়েছে। ইরানের বিপক্ষে মাঠে নামার আগে ৬ ম্যাচে জয়ের মুখ দেখেনি ইংলিশরা।
উজ্জীবিত ইংল্যান্ডের সামনে কঠিন পরীক্ষা দিতে হবে যুক্তরাষ্ট্রকে। বিশ্বকাপে দলটির সঙ্গে তাদের না হারার অতীতও হয়ত ভেঙে যাবে আজ। ওয়েলসের সঙ্গে এগিয়ে গিয়েও গোল হজম করা দলটি ওই রেকর্ড ধরে রাখতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। তার জন্য ইংল্যান্ডের মতো তাদেরও দল হিসেবে বিশেষ কিছু করা চাই যুক্তরাষ্ট্রের। কারণ, আজ হারলে তাদের বিশ্বকাপ প্রায় শেষের দিকেই চলে যাবে। যুক্তরাষ্ট্র গোলরক্ষক ম্যাট টার্নার এই ভয় করছেন না। বরং বুক চিতিয়ে ইংল্যান্ডকে থামানোর বিশ্বাস নিচ্ছেন প্রথম ম্যাচের লড়াই থেকে, ‘ওয়েলসের সঙ্গে আমরা জয় দিয়েই শুরু করতাম। কিন্তু দ্বিতীয়ার্ধে কিছু সুযোগ মিস করায় আমরা গোল পাইনি। আমরা যে সুযোগগুলো পেয়েছি তাকে কাজে লাগাতে আমাদের পরিকল্পনা নিয়ে আরও স্পষ্ট হতে হবে। শেষ মুহূর্তে সবসময় ছোট সুযোগই আসবে। ওগুলোই কাজে লাগাতে হবে। আমরা জানি ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সুযোগ পাওয়া আরও কঠিন হবে এবং গোল পেতে চাইলে আরও ক্লিনিক্যাল হতে হবে আমাদের।’
বিশ্বকাপ পর্বের মাঝপথে। এখান থেকে দ্বিতীয় রাউন্ডে পা রাখার লড়াই শুরু। সহজ পথে এগিয়ে যেতে চাইলে যুক্তরাষ্ট্রকে হারানোই ইংল্যান্ডের একমাত্র পথ। ইংল্যান্ডের এই চ্যালেঞ্জ যুক্তরাষ্ট্র থামাতে পারবে তো।
কাতার বিশ্বকাপে শুরুর বাঁশি বাজার সপ্তাহ খানেক আগেও নিশ্চিত ছিল না ইকুয়েডরের অংশগ্রহণ। তাদের বিপক্ষে অযোগ্য খেলোয়াড় খেলানোর অভিযোগ ছিল চিলির। অনেক নাটক হলেও শেষ পর্যন্ত অবশ্য বিশ্বমঞ্চে পা রাখে দক্ষিণ আমেরিকা অঞ্চলের দেশটি। এমনকি এবারের বিশ্বকাপ শুরুই হয়েছে তাদের জয় দিয়ে। উদ্বোধনী ম্যাচে তারা হারায় স্বাগতিক কাতারকে। স্বাগতিক হিসেবে খেলতে নেমে বিশ্বকাপে প্রথম ম্যাচ হারা একমাত্র দল কাতার। ইকুয়েডর তো গর্ব করতেই পারে! এবার যাদের ইউরোপের বড় শক্তি নেদারল্যান্ডসের মুখোমুখি হওয়ার পালা। আল রাইয়ানের খলিফা ইন্টারন্যাশনাল স্টেডিয়ামে আজ ‘এ’ গ্রুপের ম্যাচটি শুরু হবে বাংলাদেশ সময় রাত ১০টায়।
লুই ফন গালের নেদারল্যান্ডসও আসর শুরু করেছে জয় দিয়ে। সেনেগালকে হারায় তারা। নেদারল্যান্ডস-ইকুয়েডর ম্যাচটা তাই টেবিলে দুই দলের একে অপরের চেয়ে এগিয়ে যাওয়ার। যে দল জিতবে তারা শুধু শীর্ষেই উঠবে না, সেমিফাইনালের পথেও এগিয়ে যাবে একধাপ।
নিজেদের প্রথম ম্যাচে নেদারল্যান্ডস ও ইকুয়েডর দুই দলই জয় পেয়েছে সমান ২-০ ব্যবধানে। সেনেগালকে হারাতে অবশ্য বেশ বেগ পেতে হয়েছে তাদের। তবে ফুটবল ঐতিহ্যে নেদারল্যান্ডস যোজন যোজন এগিয়ে ইকুয়েডরের চেয়ে। ফিফা র্যাংকিংয়ে নেদারল্যান্ডসের অবস্থান ৮। ইকুয়েডরের অবস্থান সেখানে ৪৪। যদিও কখনো বিশ্বকাপ জেতা হয়নি ডাচদের। তবে তাদের ফুটবলে যে নান্দনিকতার ছোঁয়া, সেটা সমাদৃত বিশ্বব্যাপী। কখনো শিরোপা ঘরে তুলতে না পারলেও তিনবার রানার্সআপ হয়েছে তারা। এ নিয়ে খেলছে একাদশ বিশ্বকাপ। অন্যদিকে এ নিয়ে চতুর্থ বিশ্বকাপ খেলছে ইকুয়েডর। বিশ্ব মঞ্চে তাদের সেরা সাফল্য ২০০৬ সালে জার্মানি আসরে শেষ ষোলোতে খেলা। ডাচটা তাই ফেভারিট থাকবে এটাই স্বাভাবিক।
তবে এটাও ঠিক আগের ম্যাচের চেয়ে নিজেদের উন্নতি দেখাতে নেদারল্যান্ডসকে। সেনেগালের বিপক্ষে গোল পেতে ৮৪ মিনিট পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়েছিল তাদের। ডাচ অধিনায়ক ভার্জিল ফন ডাইকের কণ্ঠে তাই নিজেদের খেলায় উন্নতির তাগিদ, ‘আমরা জিতেছি (সেনেগালের বিপক্ষে)। কিন্তু এটাও জানি যে, আমরা আরও ভালো করতে পারি এবং অবশ্যই তা করতে হবে।’
এমনিতে ডাচরা বিশ্বকাপে এসেছে দারুণ ছন্দ নিয়ে। বাছাই পর্বে নিজেদের গ্রুপে শীর্ষে থেকে সরাসরি মূল পর্বে ওঠে তারা। গত বছর অনুষ্ঠিত ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপে চেক রিপাবলিকের বিপক্ষে হেরেছিল শেষ ষোলোয়। এরপর টানা ১৬ ম্যাচ অপরাজিত তারা। ২০১০ বিশ্বকাপে রানার্সআপ ও ২০১৪ বিশ্বকাপে তৃতীয় হলেও ২০১৮ বিশ্বকাপে ছিল না তারা। এবার তাই ভালো কিছু করতে মুখিয়ে দলটি। ফন গালও তৃতীয় মেয়াদে দলটির দায়িত্ব নিয়েছেন সেই স্বপ্ন নিয়েই। ইকুয়েডর ম্যাচের আগে যার জন্য স্বস্তির মেমফিস ডিপাইয়ের পুরোপুরি সুস্থ হয়ে ওঠা। সেনেগালের বিপক্ষে শেষ ৩০ মিনিট খেলেছেনও তিনি। ৪২টি আন্তর্জাতিক গোলের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন বার্সেলোনার এই ফরোয়ার্ডকে তাই শুরুর একাদশে মাঠে নামতে দেখা যেতে পারে।
নেদারল্যান্ডস র্যাংকিংয়ে এগিয়ে থাকলেও বড় স্বপ্ন দেখছে ইকুয়েডরও। এক্ষেত্রে আর্জেন্টিনার বিপক্ষে সৌদি আরবের জয়কে তারা প্রেরণা হিসেবে নিচ্ছে। দলটির গোলকিপার হারনান গালিনদেস বলেছেন, ‘এটা কঠিন ম্যাচ হবে। তবে আমি আশা করি, নেদারল্যান্ডস আমাদের সমীহ করবে। আমার মনে হয় আর্জেন্টিনার হার এই বিশ্বকাপের শেষ চমক হবে না।’
ইকুয়েডর দলে অস্বস্তি ছিল কাতারের বিপক্ষে দুই গোল করা এনার ভ্যালেন্সিয়াকে নিয়ে। দলকে জেতানো ম্যাচে হাঁটুতে চোট পেয়েছিলেন তিনি। তবে সেটা খুব গুরুতর নয় বলেই খবর। ফলে অভিজ্ঞ এই ফরোয়ার্ডকে শুরুর একাদশেই দেখা যেতে পারে। নেদারল্যান্ডস ও ইকুয়েডর এখন পর্যন্ত দু’বার মুখোমুখি হয়েছি। দুটিই ছিল প্রীতি ম্যাচ। ২০০৬ সালে প্রথম সাক্ষাতে ১-০তে জিতেছিল ডাচরা। ২০১৪ সালে অনুষ্ঠিত ম্যাচটি ১-১ গোলে ড্র হয়েছিল।
ব্রাজিল-সার্বিয়া ম্যাচ দিয়ে কাতার বিশ্বকাপে অংশ নেওয়া সব দলেরই একটি করে ম্যাচ দেখে ফেললাম আমরা। এবার ‘দ্বিতীয় রাউন্ড’ শুরুর পালা। আর সেই পর্বে আজ আলাদা ম্যাচে মাঠে নামতে যাচ্ছে দুই বড় দল ইংল্যান্ড ও নেদারল্যান্ডস। ইরানকে গুঁড়িয়ে আসর শুরু করা ইংল্যান্ড খেলবে যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে। আর নেদারল্যান্ডস মুখোমুখি হবে ইকুয়েডরের। যে দুই ম্যাচে আমি ইংল্যান্ড ও নেদারল্যান্ডসকেই ফেভারিট বলব।
সেনেগালের বিপক্ষে নিজেদের প্রথম ম্যাচে নেদারল্যান্ডস বেশ ভাগ্যবান ছিল। ৮৩ মিনিট পর্যন্ত ম্যাচের স্কোর লাইন ছিল শূন্য-শূন্য। সেখান থেকে শেষ দিকে পেশাদার পারফরম্যান্স দেখিয়ে ম্যাচ জিতে নিয়েছে ডাচরা। ইকুয়েডরও আসর শুরু করেছে জয় দিয়ে। উদ্বোধনী ম্যাচে হারিয়েছে কাতারকে। ফলে একটি করে ম্যাচ শেষে ‘এ’ গ্রুপে শীর্ষে অবস্থান করছে নেদারল্যান্ডস ও ইকুয়েডর। লড়াইটা তাই তাদের একে অপরের থেকে এগিয়ে যাওয়ার।
ইকুয়েডরের বেলায় যেটা হয়েছে, প্রথম ম্যাচেই সহজ প্রতিপক্ষ পাওয়া ওদের জন্য বিপদের কারণ হতে পারে। কাতারের মতো দলকে (২-০) হারিয়ে নেদারল্যান্ডসের সামনে পরা, এটা বেশ কঠিন। তাই এই ম্যাচে নেদারল্যান্ডস যে ফেভারিট এতে কোনো সংশয় নেই। স্কোর লাইন ১-০ বা ২-১ হতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে ইংল্যান্ড তাদের ফর্মেশনে বদল আনবে কি-না সেটা দেখার বিষয়। ইরানের বিপক্ষে ব্যাক ফোর নিয়ে খেলেছিল। ৪-২-৩-১ ফর্মেশন বলা যায়। যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে সেটা ৩-৪-৩ ফর্মেশনও হতে পারে। তবে শুরুর একাদশ হয়তো আগের মতোই হবে। রক্ষণে যেমন হ্যারি ম্যাগুয়ের, জন স্টোনস, লুক শ, কিরান ট্রিপিয়ার ছিল। তাদের ওপরে খেলেছে ডেকলান রিস ও জুড বেলিংহ্যাম। আক্রমণে দুইপাশে খেলেছে সাকা ও স্টার্লিং, মাউন্ট একটু পেছন থেকে সাপোর্ট দিয়েছে। একেবারে টপে ছিল হ্যারি কেইন। বেলিংহ্যামকে নিয়ে আগের কলামেও আমার উচ্চাশার কথা বলেছিলাম। ওকে তরুণ তারকা বলা হয়। তবে ও অনেক পরিণত খেলোয়াড়। যদি সব ঠিকঠাক থাকে তাহলে সে এই বিশ্বকাপের তারকা হবে বলে আমি মনে করি।
ওয়েলসের বিপক্ষে যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাচটা ড্র হয়েছিল। সৌভাগ্যবশত ওয়েলস শেষ দিকে পেনাল্টি থেকে গোল করে পয়েন্ট পেয়েছে। তবে এটা যুক্তরাষ্ট্রেরই দোষ। শেষ দিকে গিয়ে যে ফাউলটা করল, ওটার কোনো দরকারই ছিল না। লাইবেরিয়ার প্রেসিডেন্ট ও ব্যালন ডি’অর জয়ী সাবেক ফুটবলার জর্জ উইয়াহর ছেলে টিমোথি উইয়াহ খেলছে যুক্তরাষ্ট্র দলে। প্রথম ম্যাচে তো গোলও করল। তবে ইরানের বিপক্ষে ৬-২ গোলে জয়ের তাজা যে স্মৃতি, সেই আত্মবিশ্বাস খুব কাজে দেবে ইংল্যান্ডকে। ২-০ হতে পারে ম্যাচের ফল।
সর্বোচ্চ ৫ বিশ্বকাপ খেলা দিয়েগো গোডিনের হেড। রিয়াল মাদ্রিদ তারকা ফেদে ভালভার্দের শট। দুটোই বারে লেগে ফিরে আসে। সঙ্গে উরুগুয়ের সেরা তারকা লুইস সুয়ারেজ ও এডিনসন কাভানির চোখ রাঙানি কিছুই হারাতে পারেনি দক্ষিণ কোরিয়াকে। উল্টো পজিশন, কাউন্টার অ্যাটাক ও শক্তিনির্ভর ফুটবল উপহার দিয়ে উরুগুয়ের কাছ থেকে ১ পয়েন্ট ছিনিয়ে নিয়েছে কোরিয়ানরা। গোলশূন্য ড্র হওয়া আরেক ম্যাচে এইচ গ্রুপ থেকে দ্বিতীয় রাউন্ডে যাওয়ার দরজাও অনেকটা খোলা আছে দুই দলের জন্য।
ম্যাচের শুরু থেকে কোরিয়ানদের আক্রমণ সামলেই কেটেছে উরুগুয়ের। প্রায় ১৫ মিনিট পর্যন্ত এশিয়ান বাঘদের মাঠ বা বল পজিশন ছিল ৭০ ভাগের ওপরে। ম্যাচের সময় গড়াতে এই অবস্থার বদল হয়। ধীরে ধীরে ম্যাচে ফিরতে থাকে উরুগুয়ে। বল পজিশনে এগিয়ে থাকলেও গোলের সুযোগটা তৈরি করে তারাই। ২২ মিনিটে প্রথম স্পষ্ট সুযোগ মিস করে লাতিন আমেরিকান দলটি। গিমেনেজ বাম উইং থেকে বল থ্রু করেন ডি বক্সে। পোস্টের সরাসরি ১০ গজ দূরে থাকা নুনেজ বলে পা ছোঁয়ালেই গোল। অথচ মিস করায় গোলহীন থাকতে হয় উরুগুয়েকে। ২৭ মিনিটে কাউন্টার অ্যাটাক থেকে গোলের ভালো সুযোগ পেয়েছিল তারা। এবারও ফরোয়ার্ডরা বল রিসিভ করতে দেরি করায় মিলে ব্যর্থতা। এ দুই সুযোগের পর পাল্টা জবাব দিয়ে দেয় দক্ষিণ কোরিয়া। ৩৩ মিনিটে অসাধারণ এক দলীয় গেম প্লেতে গোলের দারুণ সুযোগ তৈরি করে কোরিয়া। অথচ পোস্টের ৮ গজ সামনে দাঁড়িয়েও বল জালে পাঠাতে ব্যর্থ হন মুন-হোয়ান কিম। সহজ সুযোগে বলে পা ছুঁইয়ে পোস্টের ওপর দিয়ে পাঠিয়ে দেন। প্রথমার্ধে শেষ আক্রমণটায় গোল পেয়েই গিয়েছিল উরুগুয়ে। এবার তাদের সামনে বাধা হয়ে দাঁড়ায় ভাগ্য। ৪৪ মিনিটে দিয়েগো গোডিনের হেডিং কোরিয়ার বারে লেগে ফিরে আসে। তাই প্রথমার্ধে দুই দলই থাকে গোলহীন।
দ্বিতীয়ার্ধে ম্যাচ ধীর হয়ে যায়। একটু নি®প্রভ থাকা সুয়ারেজকে দ্বিতীয়ার্ধে তুলে নিয়ে কিছুটা ইনজুরড কাভানিকে নামান উরুগুয়ে কোচ। তাতে দলটির আক্রমণের ধার বাড়ে। ওদিকে কোরিয়ান লোকাল বয় লি ক্যাং ইনকে নামিয়ে তাদেরও আক্রমণ বাড়ান কোচ পাওলো বেন্তো। তাতে ম্যাচের শেষদিকে দুই দলই গোলের চেষ্টায় মরিয়া হয়ে ওঠে। এক্ষেত্রে গোলের সুযোগ বেশি পায় উরুগুয়ে। কাভানি-নুনেজ জুটি গোলের ভালো সুযোগ পোস্টের বাইরে মেরে নষ্ট করেন। এরপর ভালভার্দের এক শট অল্পের জন্য পোস্টের ওপর দিয়ে যায়। বিপরীতে কোরিয়ান তারকা সনও গোলের সুযোগ পোস্টের বাইরে মেরে নষ্ট করেন। ইনজুরি সময়েও সুযোগ মিস হয় দুই দলের।
দুই দলের গোল মিসের এমন মহড়ায় খেলায় আর হার-জিত হয়নি। তাতে দ্বিতীয়ার্ধের পথে এগিয়ে বা পিছিয়ে নেই উরুগুয়ে কোরিয়া। পর্তুগাল-ঘানা ম্যাচের ফলাফল তাদের পরের ম্যাচে প্রভাব রাখবে বেশ।
দুই এশিয়ান সৌদি আরব ও জাপান নিজেদের প্রথম ম্যাচে চমকে দিয়েছে বিশ্বকাপকে। সাবেক দুই চ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনা ও জার্মানিকে হারিয়ে দিয়েছে তারা। অন্যদিকে কাতার ও ইরানের প্রথম ম্যাচের ফল তার উল্টো। হেরেছে দুই দলই। তবে আজ নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে কি জ্বলে উঠবে এশিয়ার এ দুই দল। ‘এ’ গ্রুপের ম্যাচে কাতার খেলবে সেনেগালের বিপক্ষে। বি গ্রুপের ম্যাচে ইরানের প্রতিপক্ষ ওয়েলস।
বিশ্বকাপ ইতিহাসে প্রথম স্বাগতিক দল হিসেবে উদ্বোধনী ম্যাচে হেরেছে কাতার। তবে স্বস্তির বিষয় ইকুয়েডরের বিপক্ষে মাত্র দুই গোল হজম করে বিশ্ব র্যাংকিংয়ে ৫০ নম্বরে থাকা দল কাতার। স্বাগতিক দেশ হওয়ায় তাদের নিয়ে ঘরের সমর্থকদের বেশ আশা। এশিয়ান বর্তমান চ্যাম্পিয়ন কাতার। যে দলগুলোর সঙ্গে কাতার প্রায় নিয়মিত খেলে এশিয়ান অঞ্চলে তাদের মধ্যে সৌদি আরব, জাপানও আছে। এই দুটি দল বিশ্বকাপে নিজেদের প্রথম ম্যাচই জিতেছে। সেখান থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে আজ কাতার হারাতে চাইবে সেনেগালকে।
কাতারের মিডফিল্ডার ইসমাইল মোহামেদ আরব দলের ভালো খেলার বিষয়টি টেনে জানিয়েছেন এ থেকে তারাও অনুপ্রাণিত। মোহামেদ বলেন, ‘এখন পর্যন্ত বিশেষ করে আরব দলটি যেভাবে পারফরম্যান্স করেছে সেটি আমাদের জন্য ঈর্ষণীয় এবং অনুপ্রেরণারও। আমাদেরও অনুপ্রাণিত করবে ভালো খেলতে। নিজেদের ওপর ফোকাস রাখতে হবে। সবটুকু দিয়ে খেলতে হবে কাল।’ প্রথম ম্যাচে ইকুয়েডরের গোলমুখে কোনো শট লক্ষ্যে রাখতে পারেনি। তবুও সেনেগালিজ কোচ আলিউ সিসে কাতার শক্তিশালী দল বলছেন ‘আগের ম্যাচে র্যাংকিংয়ে আট নম্বর দলের বিপক্ষে আমরা খারাপ খেলিনি। তবে লক্ষ্য কাতার ম্যাচ। আমরা শক্তিশালী দলের বিপক্ষেই খেলতে যাচ্ছি।’ প্রথম ম্যাচে আফ্রিকা নেশন্স কাপ জয়ী সেনেগাল ভালোই প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল ডাচদের বিপক্ষে। প্রতিপক্ষকে গোলবঞ্চিত রেখেছিল ৮৩ মিনিট পর্যন্ত। পরে দুই গোল খাওয়া গোলকিপার এদুয়ার্দো মেন্দিকে আজকে বসিয়ে রাখতে পারেন কোচ সিসে।
ওয়েলস ও ইরানের ম্যাচ আহমেদ বিন আলি স্টেডিয়ামে। ইরান বিশ্বকাপে প্রথম ম্যাচে ইংল্যান্ডের কাছে হজম করেছে ৬ গোল। তবে দুটি গোল শোধও দেয় তারা। ওই ম্যাচে ইরানের তিনটি শট ছিল লক্ষ্যে। ইরানের লক্ষ্য থাকবে আজ জয়ে ফেরার। ওয়েলস যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ১-১ গোলে ড্র করায় উজ্জীবিত আছে। আজ বেল ও তার দল পূর্ণ তিন পয়েন্টের লক্ষ্যেই মাঠে নামবে। ওয়েলস উইঙ্গার হ্যারি উইলসন বলেন, ‘আমরা পূর্ণ তিন পয়েন্ট নিশ্চিতের জন্যই মাঠে নামব। আমরা সহজেই জয় পাব না। মাঠে খেলেই পয়েন্ট অর্জন করতে হবে।’
নির্ধারিত সময় পেরিয়েছে। ১০ জনের ব্রাজিল। তবুও এগিয়ে ২-০ গোলে। খেলা গড়ায় ইঞ্জুরি টাইমে। তখনই যেন বেড়ে যায় সেলেসাওদের গতি। মিনিট কয়েকের মুহূর্তে ব্যবধান দাঁড়ায় ৪-০ গোলে। তবে প্রতিপক্ষ তিউনিশিয়াও কম যায় না। হাল ছাড়েনি তারা। শেষ মুহূর্ত অবধি লড়ে গেছে। তাতে আদায় করেছে একটি গোল। যদিও সেই গোল তাদের নিয়ে যেতে পারেনি পরের ধাপে।
যুব বিশ্বকাপে আন্দ্রে সান্তোসের জোড়া গোলে ম্যারাডোনার মাঠে উত্তর আফ্রিকার দেশ তিউনিশিয়ার বিপক্ষে ৪-০ গোলের জয় পেয়েছে ব্রাজিল। এতে কোয়ার্টার ফাইনাল নিশ্চিত করেছে সেলেসাওরা।
ডিয়েগো আরমান্দো ম্যারাডোনা মাল্টি পারপাস স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত শেষ ষোলোর খেলার পুরোটা সময় বলের দখলটা বেশি ছিল তিউনিশিয়ার পায়েই। আক্রমণের ধারও ছিল ভালো। গোলের সুযোগও অনেকগুলো সৃষ্টি হয়েছিল। তবু ফিনিশারদের ছিল ব্যর্থতা। আর সেটা কাজে লাগিয়েছেন ব্রাজিলের যুবারা। শুরুটা অবশ্য তিউনিশিয়ার কল্যাণেই।
খেলার ১১ মিনিটে পেনালটি পেয়ে যায় ব্রাজিল যুবারা। সেখান থেকে গোল আদায় করে নেন মার্কোস লিওনার্দো। ৩১ মিনিটে এই লিওনার্দো ফের দলকে এগিয়ে দেন। তবে এবার আর তিনি গোল করেননি, তবে করিয়েছেন। তার পাস থেকে পায়ে বল নিয়ে তিউনিশিয়ার জালে জড়ান আন্দ্রে সান্তোস।
২-০ গোলের ব্যবধান পেয়ে হৈ হৈ করতে করতে বিরতিতে যেতে পারত ব্রাজিল। কিন্তু প্রথমার্ধের শেষ বাঁশিটা বাজার আগ মুহূর্তেই লাল কার্ড দেখেন রবার্ট রেনান। তার এমন কাণ্ডে ১০ জনের দলে পরিণত হয় ব্রাজিল।
তাতে অবশ্য পরের অর্ধের নির্ধারিত সময়ে কোনো ছাপ পড়তে দেখা যায়নি। ব্যবধানটা যে তখনও ২-০ তেই ছিল। তবে ৯১ মিনিটে ফের গোল আদায় করে ফেলে ব্রাজিল। এবার ম্যাথুস মার্টিনস। তার ৯ মিনিট পর আন্দ্রে সান্তোস নিজের দ্বিতীয় গোল আদায় করে নেন। চার গোলে এগিয়ে থেকে ব্রাজিল যখন জয়ের অপেক্ষা করছিল, ঠিক তখনই ১০৩ মিনিটের সময় প্রথম গোলটি হজম করে সেলেসাওরা।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) চাপ আর নির্বাচনী তাপের মধ্যেই আজ জাতীয় সংসদে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাব পেশ করা হবে। জাতীয় নির্বাচনের আগে বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের তৃতীয় মেয়াদের শেষ বাজেট এটি। অনেক যোগ-বিয়োগ কষে বাজেট প্রণয়নের শেষ সময়ে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল প্রস্তাবিত বাজেটে নির্বাচনী চমক হিসেবে বড় মাপের ব্যবসায়ীদের খুশি করতে সম্পূর্ণ নতুন পথে হেঁটেছেন। ভর্তুকি নাম দিয়ে বড় অঙ্কের ‘কর ছাড়’ দিয়েছেন। অথচ রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে রাজস্ব জাল বিছিয়ে সাধারণ আয়ের মানুষকে আটকে ফেললেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে পাঠানো প্রস্তাবিত বাজেট সারসংক্ষেপ, ভর্তুকির নামে ‘কর ছাড়’কে বৈশি^ক মন্দা মোকাবিলার ঢাল হিসেবে উল্লেখ করেছেন অর্থমন্ত্রী। এ পদক্ষেপের পরোক্ষ প্রভাবে বাজারে পণ্যের দাম কমার গতিরোধ করবে বলেও সরকারপ্রধানকে জানিয়েছেন।
তবে অর্থনীতির বিশ্লেষকরা বলেছেন, আগামী অর্থবছরের বাজেটে ছোটদের কর পরিশোধে চেপে ধরলেও কৌশলে বড় মাপের ব্যবসায়ীদের ঠিকই খুশি করলেন অর্থমন্ত্রী। এ পদক্ষেপের ফলে বাজারে জিনিসপত্রের দাম কমায় খুব বেশি প্রভাব পড়বে এমন আশা করা কঠিন।
এনবিআরের সাবেক সদস্য কর-বিশ্লেষক ড. আমিনুল করিম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আইএমএফের কাছ থেকে কর অব্যাহতি ও কর অবকাশ সুবিধা কমানোর চাপ আছে। এ শর্ত না মানলে ঋণের কিস্তি দেওয়া বন্ধ করা হতে পারে। অন্যদিকে নির্বাচনের আগের বাজেট হওয়ায় বড় মাপের ব্যবসায়ীদের বিভিন্ন সুবিধা দেওয়ার চাপ আছে। বিভিন্নমুখী চাপে সরকার সব পক্ষকে খুশি করতেই আগামীতে কৌশলে কর ছাড় রাখছে ভর্তুকির নাম দিয়ে। অন্যদিকে সাধারণ আয়ের মানুষের ওপর কিন্তু ন্যূনতম কর ধার্য করার কথা শুনছি। অনেক মানুষকে রাজস্বের আওতায় আনার কথাও শুনেছি। এভাবে ছোটদের ওপর ঠিকই কর পরিশোধে চাপ বাড়াল।’
একই মত জানিয়ে এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল মজিদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমাদের দেশের বড় মাপের ব্যবসায়ীদের অনেকে সরাসরি রাজনীতি করেন। অনেকে রাজনীতি না করলেও সরকারের নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক রেখে চলেন। এরা সমাজের প্রভাবশালী। বাজেট প্রণয়নকালেই এরা সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে যোগাযোগ করে নিজেদের পক্ষে সুবিধামতো অনেক কিছু আদায় করে নেন। এবারও তাই হচ্ছে। শেষ পর্যন্ত কৌশলে বড় মাপের ব্যবসায়ীদের খুশি করার চেষ্টা করা হয়েছে। এভাবে আইএমএফের জেরার মুখে বলার সুযোগ থাকছে যে কর ছাড় ও ভর্তুকি দুই হিসাব এক করেছি।’
সাধারণ মানুষের মধ্যে অনেকে আশায় আছেন এবারের বাজেটে অর্থমন্ত্রী হয়তো জীবনযাত্রার ব্যয় কমাতে সূত্র কষবেন। কিন্তু বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকার এ বাজেটে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে বড় কোনো রক্ষাকবচ রাখলেন না। কৌশলী অর্থমন্ত্রী আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কাছে দেওয়া কথা রেখেছেন। সাধারণ মানুষকে রাজস্ব জালে আটকে ফেলার ছক করেছেন। মূল বাজেটের আকার বাড়ানোর সঙ্গে সমন্বয় করে সরকারের আয়ের হিসাবও বাড়ানো হয়েছে। রাজস্ব আয়ের প্রাক্কলন করা হয়েছে ৫ লাখ কোটি টাকা। এখানে কর খাত থেকে ৪ লাখ ৫০ হাজার কোটি, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কাছ থেকে চলতিবারের তুলনায় ৬০ হাজার কোটি টাকা বাড়িয়ে ৪ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা করলেন। এনবিআরবহির্ভূত খাত থেকে ২০ হাজার কোটি টাকা আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এখানে করবহির্ভূত খাত থেকে ৫০ হাজার কোটি টাকা আদায় করা হবে। শেষ সময়ের হিসাবকষে শত সংকটের বাজেটে অর্থমন্ত্রী ব্যবসায়ীদের খুশি করার চেষ্টা করেছেন।
আগামী বাজেট প্রস্তাবে অর্থমন্ত্রী কর ছাড়সহ ২ লাখ ৮৯ হাজার ২২৮ কোটি টাকা ভর্তুকি দেওয়ার প্রস্তাব করবেন। জাতীয় বাজেটে নিয়মিত ভর্তুকি হিসাবে ১ লাখ ১০ হাজার কোটি টাকা রাখার কথা আছে। বাকিটা প্রত্যক্ষ কর ছাড় দিয়ে ভর্তুকি খাতে অন্তর্ভুক্তি হিসেবে রাখা হয়েছে। প্রত্যক্ষ কর ব্যয়ের মধ্যে উল্লেখযোগ্য বেতনসহ অন্য খাতে ৭৭ হাজার ২১৮ কোটি বা মোট কর ছাড়ের ক্ষুদ্রঋণ খাতে ১২ শতাংশ বা ১৫ হাজার ৩১৫ কোটি, প্রবাসী আয় খাতে ৯ শতাংশ বা ১১ হাজার ২৮৭ কোটি, বিদ্যুৎ ও জ¦ালানি খাতে ৭ শতাংশ বা ৮ হাজার ৩৮০ কোটি, অর্থনৈতিক অঞ্চল ও হাই-টেক শিল্প খাতে ৪ শতাংশ বা ৪ হাজার ৬১২ কোটি, গার্মেন্টস ও টেক্সটাইল ৩ শতাংশ বা ৩ হাজার ৪৩৮ কোটি, পোলট্রি ও মৎস্য খাতে ২ শতাংশ বা ৩ হাজার ১২০ কোটি, আইটি এবং সফটওয়্যার খাতে ১ শতাংশ বা ১ হাজার ৪৭৭ কোটি এবং পুঁজিবাজার খাতে ১ শতাংশ বা ৯৬৬ কোটি টাকা।
পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইস মনসুর দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এ যেন পুরনো বোতলে নতুন পানীয়। বড়দেরই বিভিন্ন কৌশলে সুবিধা দেওয়া হলো।’
অর্থমন্ত্রী রাজস্ব আদায়ের কৌশল হিসেবে বড় সুবিধা দিলেও ইটিআইএন গ্রহণ ও রিটার্ন দাখিলে কঠোরতা এনেছেন। ইটিআইএন না নিলে ৪০ ধরনের সেবা এবং রিটার্ন দাখিলের সিøপ না নিলে ৩৮ ধরনের সেবা দেওয়া হবে না। এতদিন ইটিআইএন নিয়েও অনেকে করযোগ্য আয় না থাকলে শুধু রিটার্ন দাখিল করেছে, একটি টাকার কর দিতে হয়নি। আগামী অর্থবছরের প্রস্তাবিত অর্থ বিল বিশ্লেষণ করে বলা যায়, ১ জুলাই থেকে করযোগ্য আয় না থাকলেও ২ হাজার টাকা ন্যূনতম কর দিতে হবে।
সাধারণ আয়ের অনেক করদাতা বলেছেন, খাবারের খরচ অনেক বেড়েছে। বাসা ভাড়া, যাতায়াত, চিকিৎসা সবকিছুই এখন বেশি। এর মধ্যে সাধারণ আয়ের ওপর কর পরিশোধে চাপ দেওয়া হলে ভোগান্তি বাড়বে। সাধারণ মানুষকে কর পরিশোধে বাধ্য করলেও সম্পদশালীদের রাজস্ব ফাঁকি কমাতে, বকেয়া আদায়ে এবং অর্থ পাচার রোধে জোরালো কিছু রাখা হয়নি। এনবিআরের সক্ষমতা বাড়াতেও পুরনো পথেই হেঁটেছেন অর্থমন্ত্রী।
আগামী অর্থবছর থেকে রিটার্ন জমা দিতে দেরি হলে বেশি হারে জরিমানা দিতে হবে। বাজেটে আইন করে জরিমানার পরিমাণ প্রদেয় করের পরিমাণ দ্বিগুণ ৪ শতাংশ নির্ধারণে প্রস্তাব করা হয়েছে।
বড়রা সুবিধা দিয়ে রাজস্ব আদায়ে চাপ বাড়ানোয় জীবনযাত্রার অনেক খাতেই খরচ বাড়বে। অসাধু ব্যবসায়ীদের কারসাজি কমাতেও বাজেটে রাখা হয়নি কিছু। আন্তর্জাতিক পণ্যের বাজারের অস্থিরতা কবে কমবে তা নিয়ে রয়েছে অশ্চিয়তা। তাই গত মাস ছয়েক থেকে বেশি দামে বিক্রি হওয়া চাল, ডাল, আট, ময়দা, ভোজ্য তেল, লবণ, চিনি, মাছ, মাংসসহ সব ধরনের খাবারের দাম আপাতত কমছে না। চিকিৎসা, যাতায়াত, শিক্ষাসহ খাদ্যবহির্ভূত ব্যয়ও কমবে না। গত (নভেম্বর ২০২২-এপ্রিল ২০২৩) ছয় মাসের সাধারণ মূল্যস্ফীতির গড় হার ৮ দশমিক ৯১ শতাংশ।
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছেন, বিশেষ কোনো চাপ নেই, অর্থনৈতিক উন্নয়ন গতিশীল রাখতে এবারের বাজেটে থাকছে ধারাবাহিকতা।
আজ বৃহস্পতিবার (১ জুন) বিকেলে ঘোষিত হতে যাওয়া ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটকে 'গরিববান্ধব' উল্লেখ করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল আরও বলেন, সবাইকে নিয়ে সবার জন্য বাজেট ঠিক করা হয়েছে। সামাজিক নিরাপত্তার আকার বড় হচ্ছে।
আজ বৃহস্পতিবার (১ জুন) রাজধানীর গুলশানের বাসা থেকে জাতীয় সংসদ ভবনে যাত্রার প্রাক্কালে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বাজেট সম্পর্কে এ মন্তব্য করেন তিনি।
বিকেলে জাতীয় সংসদে সাত লাখ ৬১ হাজার কোটি টাকার বাজেট পেশ করবেন আ হ ম মুস্তফা কামাল। নতুন অর্থবছরে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধির হার অর্জনের লক্ষ্য স্থির করেছে সরকার। সেখানে মূল্যস্ফীতির হার ৬ দশমিক ৫ শতাংশ। আগামী অর্থবছরে মোট বিনিয়োগের লক্ষ্যমাত্রা জিডিপির ৩৩ শতাংশ ছাড়িয়ে যাবে, এমন আশা করছেন অর্থমন্ত্রী।
বাজেটে ৫ লাখ কোটি টাকার রাজস্ব আয়ের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। বাজেট ঘাটতি হতে পারে ২ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা। রবিবার (৪ জুন) থেকে সংসদে প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনা শুরু হবে।
রোমাঞ্চকর ফাইনালে মোহামেডানকে ১৪ বছর পর ফেডারেশন কাপ শিরোপা এনে দেওয়ার অন্যতম নায়ক আহসান আহমেদ বিপু। দীর্ঘদিন সাদা-কালোদের হয়ে খেলা এই গোলরক্ষক কাল দেশ রূপান্তরের শিহাব উদ্দিনকে জানালেন আবাহনীর বিপক্ষে উত্তেজনার ম্যাচে চাপ মাথায় নিয়ে নামা ও পেনাল্টি ভাগ্যে জয়ী হওয়ার পেছনের গল্প…
এত বড় ফাইনালে হঠাৎ করে বদলি হিসেবে নামলেন। এটা কি আপনার জন্য চাপ হয়েছিল?
বিপু : চাপ তো অবশ্যই। গোল আর গোল, ফাইনাল, প্রতিপক্ষ আবাহনী। মানসম্মানের ব্যাপার। এটা কিন্তু একটা ফাইনাল না শুধু, সম্মানেরও ব্যাপার। চাপ তো অবশ্যই ছিল।
তো এই চাপটা সামলালেন কীভাবে?
বিপু : সত্যি বলতে আল্লাহর প্রতি অগাধ বিশ্বাস ছিল যে আমরা কামব্যাক করতে পারব। শুধু আমি একা না পুরো দল, হাফটাইমে যখন ২ গোল হয়, আমরা ডাগআউটে একজনও হতাশার কথা বলিনি। আমরা চরম বিশ্বাসী ছিলাম যে এখান থেকে ম্যাচ ঘুরানো সম্ভব। আমাদের অধিনায়ক দিয়াবাতে আত্মবিশ্বাসী ছিল যে ম্যাচে ফেরা সম্ভব।
কিন্তু নামার পরপরই তো একটা গোল হজম করলেন। তাতে কি চাপ বাড়েনি?
বিপু : না বাড়েনি কারণ গতকাল যে ৮টা গোল হয়েছিল তার মধ্যে সবচেয়ে সেরা গোল ছিল ওটা। গোলটা সত্যি বলব আমি নিজের ভুলে হজম করেছি। হাতেও লেগেছিল কিন্তু আটকাতে পারিনি।
পরে তো পেনাল্টি মানে ভাগ্য পরীক্ষাতেও নামতে হলো? তার মানে আপনার ওপর সবার বিশ্বাস ছিল?
বিপু : ওটা জানি না, এটুক বলতে পারি আমাদের কোচিং স্টাফ আমার ওপর বিশ্বাস রেখেছিল। যেহেতু ফাইনাল, পেনাল্টির একটা সম্ভাবনা তো থাকেই। তো আমাদের আগে থেকেই প্রস্তুতি নেওয়া ছিল, গোলরক্ষক কোচ কানন ভাই আমাদের নিয়ে পেনাল্টির আলাদা কাজ করেছিলেন। কিছু বিষয় যেমন শুট নেওয়ার আগ মুহূর্ত মানে শেষ পর্যন্ত অপেক্ষা করা। আর নিজেও একটু চিন্তাভাবনা রেখেছিলাম। তো প্রস্তুতি আগে থেকেই ছিল। চাপ নেওয়ার ব্যাপারটা আসলে আমি স্বাভাবিক ছিলাম। বেশি কিছু চিন্তা করিনি। এমন সময়গুলোতে বেশি চিন্তা করলে উল্টো চাপে পড়ে যেতে হয়।
পেনাল্টি নিয়ে প্রস্তুতির কথা বলছিলেন। আগে থেকেই কি পেনাল্টির প্রস্তুতি ছিল?
বিপু : সে রকম না। কারণ ফাইনালে আগে থেকেই তো বলা যায় না যে পেনাল্টি হবেই। তবে আমাকে খেলার আগে থেকেই মানে ফাইনালের আগেই বলা হয়েছিল যে খেলা যদি ড্রয়ের দিকে যায় তাহলে নামতে হতে পারে। সেই প্রস্তুতি নেওয়া ছিল। তবে পেনাল্টির একটু আগে নামতে হয়েছিল আরকি।
পেনাল্টিতে দুটো সেভ করলেন। এটা কীভাবে সম্ভব হলো। কী ভাবছিলেন ডাইভ দেওয়ার আগে?
বিপু : সত্যি বলছি আমার কোনো চিন্তাই ছিল না। হয়ে গেছে। আল্লাহ মিলিয়ে দিয়েছেন, এখানে আমার কিছু নেই।
বিশ্বকাপ ফাইনালেও তো পেনাল্টি হয়েছিল। তা তো দেখেছেন। নিজের পেনাল্টি মুখোমুখি হওয়ার সময় ওই রকম কিছু মনে হচ্ছিল?
বিপু : না, ওরকম কিছু না। আমি আল্লাহর ওপর বিশ্বাস রেখেছিলাম। আর মনে মনে ভাবছিলাম যে দলের জন্য কিছু করতেই হবে। আমি বলতে পারি এই দলটার মধ্যে সবচেয়ে পুরনো খেলোয়াড় কিন্তু আমি। আমি দীর্ঘদিন মোহামেডানে খেলেছি। মোহামেডান থেকে সুপার কাপ জিতেছি, স্বাধীনতা কাপ জিতেছি। তো ক্লাবের জন্য কিছু করার তাগিদটা ছিল।
পেনাল্টিতে প্রথম সেভ করার পর আপনার সাহস কি বেড়ে গিয়েছিল?
বিপু : সাহস তো বেড়েছেই। প্রথম সেভটা যখন করি তখন আমার টিম মেটরাও মানসিকভাবে এগিয়ে গেছে। এরপর আমাদের অধিনায়ক গোল করল। প্রথম গোল করা মানে মানসিকভাবে এগিয়ে থাকা। রাফায়েল কিন্তু আবাহনীর অনেক বড় ব্র্যান্ড। হতে পারে কলিনদ্রেস নামের বিচারে ভারী কিন্তু রাফায়েল এগিয়ে।
প্রথমটা তো সেভ করলেন দ্বিতীয় পেনাল্টি সেভের আগে কী ভাবনা হচ্ছিল আপনার। দ্বিতীয়টা সহজ হয় না কঠিন?
বিপু : ওটা ফিফটি-ফিফটি ছিল। কলিনদ্রেস একটু অপেক্ষা করছিল মারার সময় তাই আমিও ওয়েট করলাম। আর সফল হই। কলিনদ্রেসের শটটা কিন্তু যথেষ্ট পাওয়ারফুল ছিল। আমি সঠিক দিকে ঝাঁপিয়ে পড়েছি। আর রাফায়েল একটু স্লো শট নেয় সবসময়। আর সবসময় একটু জার্ক করে বাঁদিকে শট নেয়, কাল নিয়েছিল ডানদিকে। আমি অপেক্ষা করায় সঠিক দিকে ডাইভ দিতে পেরেছি।
আচ্ছা আপনার পছন্দের গোলকিপার কে?
বিপু : পিওতর চেক।
বিশেষ কোনো কারণ আছে ওকে পছন্দ করার?
বিপু : ঠিক কেন সেটা বলতে পারব না। তবে ওর সেভগুলো আমার ভালো লাগে। এখন অনেক গোলরক্ষক থাকতে পারে, চেক আমার কাছে এখনো সেরা। বিশেষ করে একটা সেভ দেখেছিলাম ও মাটিতে পড়ে গিয়েও কীভাবে যেন হাত দিয়ে বল ফিরিয়েছিল। চেলসিতে থাকা অবস্থায় সম্ভবত। এছাড়া শুধু একটা না আরও অনেক সেভ করেছে সে। আর একটা ব্যাপার হলো তার ইনজুরির পরও যেভাবে সে খেলা চালিয়ে গেছে এটা আমাকে উজ্জীবিত করে। আমিও ইনজুরির পর খেলছি, ২০১৮-১৯ এ বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে বসুন্ধরার সঙ্গে ফেডারেশন কাপের ম্যাচ খেলার সময় আমার হাত ভেঙেছিল। এখনো হাতে প্লেট লাগানো আছে।
নিজেকে কোথায় দেখতে চান?
বিপু : আমার কোনো নিজস্ব লক্ষ্য নেই। আমি খেলে যেতে চাই। কোচরা জানেন আমাকে কোথায় খেলাবেন। জাতীয় দলে খেলার ইচ্ছা তো সবারই থাকে কিন্তু আমি সেই লক্ষ্য নিয়ে আগাতে চাই না। হলে এমনিতেই হবে।
অনেক বছর পর মোহামেডান শিরোপা জিতল। এই ধারা অব্যাহত রেখে সামনেরবার কী লক্ষ্য রাখছেন?
বিপু : গত বছর আমরা সেমিফাইনাল থেকে বাদ পড়ে গিয়েছিলাম সেখানে রেফারিংয়ের কিছু ব্যাপার ছিল আপনারা সবাই দেখেছেন। ইনশাআল্লাহ এই ধারা অব্যাহত থাকবে। আমাদের ফল তো আগের থেকে ভালো হচ্ছে। এটা বড় আত্মবিশ্বাসের কারণ।
দেশের ৬০টি জেলার ওপর দিয়ে তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। এতে দিনের তাপমাত্রা আরও বাড়তে পারে। এ ছাড়া দেশজুড়ে বয়ে যাওয়া তাপপ্রবাহ আরও দুই দিন থাকতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
আজ বৃহস্পতিবার (১ জুন) সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত আবহাওয়ার পূর্বাভাসে এ তথ্য জানানো হয়।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ ড. মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক জানান, ঢাকা বিভাগের ১৩টি, খুলনার ১০টি, রাজশাহীর আটটি, বরিশালের ছয়, রংপুরের আটটি, সিলেটের চার ও ময়মনসিংহ বিভাগের চারটি জেলাসহ চট্টগ্রাম, সীতাকুণ্ড, রাঙ্গামাটি, কুমিল্লা, চাঁদপুর, নোয়াখালী ও ফেনী জেলার ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা বিস্তার লাভ করতে পারে। সারা দেশে দিনের তাপমাত্রা সামান্য বৃদ্ধি পেতে পারে।
আগামী দুই দিনে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমী বায়ু টেকনাফ উপকূল পর্যন্ত অগ্রসর হতে পারে এবং বিদ্যমান তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকতে পারে বলেও জানান এই আবহাওয়াবিদ।
তিনি আরও জানান, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের দু-এক জায়গায় বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। এ ছাড়া দেশের অন্যত্র অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে।
আবহাওয়ার সিনপটিক অবস্থায় বলা হয়, লঘুচাপের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ এবং তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতিতে জোর করে হারানো হয়েছে।
গতকাল রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
এই নিয়ে ঘনিষ্ঠ অনেকের কাছে জানতে চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। ভিন্ন কোনো জটিলতার সৃষ্টি হলে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে গাজীপুরের যেকোনো আসন থেকে মনোনয়ন পাবেন তিনি। সে ক্ষেত্রে গাজীপুর সিটির ভোটে যে সংসদ সদস্য দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে কাজ করার তথ্য মিলবে তাকেই বাদ দেওয়া হবে। এ সিটি ভোটে হারের কারণ জানতে প্রধানমন্ত্রী নিজস্ব একটি সংস্থাকে নির্ভুল তথ্য দিতে নির্দেশ দিয়েছেন।
নির্বাচনকালীন সরকারে মন্ত্রীর দায়িত্বও পেতে পারেন আজমত, ওই সূত্র দাবি করে। সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
নানা অব্যবস্থাপনায় এগোচ্ছে না প্রাথমিক শিক্ষা। প্রায় শতভাগ শিশু ভর্তির আওতায় এসেছে অনেক আগে। এরপর মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতের কাজ অনেকটাই আটকে আছে। খোদ সরকারি সংস্থার গবেষণায় উঠে এসেছে প্রাথমিকে চরম দুরবস্থার কথা। গবেষয়ণা প্রতিবেদন অনুযায়ী, কাক্সিক্ষত মানের চেয়ে শিশুরা অনেক পিছিয়ে আছে। কিছু শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু কাজ করার চেষ্টা করলেও কথায় কথায় তাদের ওপর নেমে আসছে শাস্তির খড়গ। মানের উন্নয়ন না হলেও ঠিকই অধিদপ্তরে বসে ছড়ি ঘোরাচ্ছেন কর্মকর্তারা।
প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের শিখন ঘাটতি নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহায়তায় সম্প্রতি এই গবেষণা করেছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। সেখানে দেখা যায়, করোনা সংক্রমণের আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা গড়ে ইংরেজি বিষয়ে যতটা শিখত, করোনাকালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের ফলে তা সাড়ে ১২ শতাংশ কমে গেছে। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের হার কমেছে প্রায় সাড়ে ১৬ শতাংশ। আর তৃতীয় শ্রেণির বাংলায় কমেছে ১৫ শতাংশের মতো।
গবেষণার তথ্য বলছে, করোনার আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ইংরেজিতে শিখন অর্জনের গড় হার ছিল প্রায় ৪৯ শতাংশ। করোনাকালে বন্ধের প্রভাবে এই হার কমে দাঁড়িয়েছে ৩৬ শতাংশ। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ^পরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের গড় হার ৫১ শতাংশের বেশি, যা আগে ছিল ৬৮ শতাংশের মতো। পঞ্চম শ্রেণির বাংলা, গণিত ও বিজ্ঞানেও ক্ষতি বেড়েছে।
এনসিটিবির সদস্য (প্রাথমিক শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক ড. এ কে এম রিয়াজুল হাসান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রাথমিক শিক্ষার ঘাটতি পূরণে এ ধরনের গবেষণার দরকার ছিল। আন্তর্জাতিক মানদ- বজায় রেখেই তা করা হয়েছে। আমরা এই গবেষণা প্রতিবেদন দু-এক দিনের মধ্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠাব। আমরা অন্তত এক বছরের জন্য রেমিডিয়াল ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেছি। মন্ত্রণালয় সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ নিচ্ছে।’
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, প্রাথমিক শিক্ষা দিন দিন পিছিয়ে পড়লেও সেদিকে তেমন একটা নজর নেই প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের। তারা ব্যস্ত আছে লাখ লাখ শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের বদলি-পদায়ন নিয়ে। কেউ কথা বললেই তার ওপর নেমে আসছে শাস্তি। ফলে শিক্ষকরাও দিন দিন তাদের আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন; কোনো রকমে দিন পার করছেন।
জানা যায়, প্রাথমিক শিক্ষায় উদ্ভাবনী ও অনন্য অবদানের জন্য ২০১৯ সালে সারা দেশের মধ্যে শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষক নির্বাচিত হন রাজবাড়ী জেলার স্বাবলম্বী ইসলামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. শফিকুল ইসলাম। একই বছর রাজধানীর মোহাম্মদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক খায়রুন নাহার লিপি শ্রেষ্ঠ সহকারী শিক্ষিক নির্বাচিত হন। সাধারণত আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী এসব শিক্ষকের হাতে পদক তুলে দেন। শিক্ষকদের পাশাপাশি সেরা শিক্ষার্থীদের পদক দেওয়া হয় একই অনুষ্ঠানে। কিন্তু করোনাকালে তাদের হাতে জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষক পদক তুলে দেওয়া যায়নি। গত ১২ মার্চ রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে তাদের হাতে এ পদক তুলে দেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন। তাই অনুষ্ঠানের কয়েক দিন আগে স্বাভাবিকভাবে তারা দাবি তুলেছিলেন, দেরি হলেও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে তারা পদক নেবেন; যা তাদের সারা জীবনের স্বপ্ন পূরণ করবে। কিন্তু সেটা না হওয়ায় তারা প্রতিমন্ত্রীর হাত থেকে ঠিকই পদক নেন। তবে এর ৬৮ দিনের মাথায় এই শ্রেষ্ঠ শিক্ষকদের প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবি তোলায় চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। একই ঘটনায় জয়পুরহাটের হিন্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. মাহবুবুর রহমানকেও সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। কারণ তার বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী এ পদক নিতে ১১ মার্চ ঢাকা এসেছিল। ওই শিক্ষকও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবিকে সমর্থন করেছিলেন। সাময়িক বরখাস্ত করা হলেও তাদের কাউকে শোকজ করা হয়নি; যা বিধিবহির্ভূত বলছেন শিক্ষকরা।
জানতে চাইলে ঢাকা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. আবদুল আজিজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সাময়িক বরখাস্তের পরবর্তী যে প্রক্রিয়া আছে, সেদিকেই আমরা যাব।’ এর বেশি কিছু তিনি বলতে রাজি হননি। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াতের সঙ্গে এসব ব্যাপারে কথা বলার জন্য গতকাল একাধিকবার চেষ্টা করলেও তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি।
বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক শিক্ষা গবেষণা পরিষদের সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে পদক নেওয়া একজন শিক্ষকের জীবনে সেরা প্রাপ্তি। এ জন্য শিক্ষকদের দাবি থাকতেই পারে, প্রত্যাশা থাকতেই পারে। তবে সবচেয়ে বড় কথা হলো, আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে কাউকে শাস্তি দেওয়া যায় না। শিক্ষকদের যেভাবে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে, তা মোটেও ঠিক হয়নি বলে আমার মনে হয়। এর প্রভাব অন্যান্য শিক্ষকের মধ্যেও পড়বে, এটাই স্বাভাবিক।’
শুধু তা-ই নয়, করোনাকালে বন্ধ থাকা প্রাথমিক শিক্ষা চালু রাখতে কিছু শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু অনলাইন প্ল্যাটফর্ম চালু করেন; যাতে অনলাইন ক্লাস, শিক্ষকদের মধ্যে আলোচনাসহ নানা কাজ করা হয়। এতে প্রতিটি ফেসবুক গ্রুপে লাখ থেকে হাজারো শিক্ষক যুক্ত হয়েছেন। এখনো সেসব গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে। কিন্তু সেই গ্রুপগুলোকেই এখন শায়েস্তা করার হাতিয়ার হিসেবে বেছে নিয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অপব্যবহারের অজুহাত দেখিয়ে অনলাইনে যুক্ত থাকা অনেক শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাকেই দেওয়া হচ্ছে কারণ দর্শানো নোটিস (শোকজ)। সরকার যেখানে শিক্ষকদের ডিজিটালি আপডেট হওয়ার কথা বলছে, সেখানে প্রায় অনেকটাই উল্টো পথে হাঁটছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।
শিক্ষকরা জানান, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে দীর্ঘদিন ধরে আসন গেড়ে বসেছেন কিছু কর্মকর্তা। অনেকেই ৬ থেকে ১২ বছর ধরে একই দপ্তরে চাকরি করছেন। তাদের যে দায়িত্বই থাক না কেন যত লাভজনক কাজ আছে, সেগুলোতেই তারা হাত দিচ্ছেন। যোগ্য কর্মকর্তাকে অধিদপ্তরে আনলে তাদের সরে যেতে হবে, এ জন্য তারা নানাভাবে ঊর্ধ্বতনদের ভুল বুঝিয়ে মাঠপর্যায়ে শাস্তি দিয়ে সবাইকে ভীত করে তুলছেন। এতে পিছিয়ে পড়ছে প্রাথমিক শিক্ষার মান।
প্রায় দুই বছর বন্ধ থাকার পর গত মার্চ-এপ্রিলে অনলাইনে প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলি করা হয়। যদিও নিয়ম ছিল, অনলাইনে নির্দিষ্ট মানদন্ড পূরণ ছাড়া কেউ বদলি হতে পারবেন না। কিন্তু তা মানেনি প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। ঢাকা ও ঢাকার বাইরে নিয়ম ভেঙে কয়েক শো শিক্ষকের বদলির আদেশ জারি করা হয়। আর এই বদলি-পদায়নে বড় অঙ্কের অর্থ লেনদেন হয়েছে বলে দাবি শিক্ষকদের; যা ভাগ-বাটোয়ারা হয়েছে মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের মধ্যে। আবার অনেক জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও থানা শিক্ষা কর্মকর্তাদের বদলিতেও সমন্বয়হীনতা দেখা দিচ্ছে। কাউকে ক্ষোভের বশবর্তী হয়েও অনেক দূরে বদলি করে দেওয়া হচ্ছে। এতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়ন।
জানা যায়, চলতি বছর থেকে প্রথম শ্রেণিতে চালু হয়েছে নতুন শিক্ষাক্রম। আর আগামী বছর থেকে দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণিতে এবং ২০২৫ সাল থেকে চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম চালু হবে। কিন্তু তা পড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নেই অধিদপ্তরের। শিক্ষকদের নামমাত্র প্রশিক্ষণেই দায়িত্ব শেষ করা হয়েছে। আসলে এই শিক্ষাক্রম শিক্ষার্থীরা কতটুকু আত্মস্থ করতে পারছে বা এ জন্য আর কী করা প্রয়োজন, সে ব্যাপারে তেমন নজর নেই।
এ ছাড়া এখনো প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষকরা বেতন পান ১১তম গ্রেডে ও সহকারী শিক্ষকরা পান ১৩তম গ্রেডে। দুই ধরনের প্রায় চার লাখ শিক্ষকই ১০ম গ্রেডে বেতনের দাবি করে আসছেন। এ ছাড়া সহকারী থানা শিক্ষা অফিসার ও সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসারাও দীর্ঘদিন ধরে নবম গ্রেডের দাবি করছেন। আর মাঠে কাজ করা এসব শিক্ষক ও কর্মকর্তার পদোন্নতিও নেই বললেই চলে। কিন্তু এগুলো সমাধানেও তেমন কোনো উদ্যোগ নেই মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের; যা প্রাথমিকের মান উন্নীতের ক্ষেত্রে বড় অন্তরায় বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
প্রবীণ শিক্ষক নেতা মো. সিদ্দিকুর রহমান আরও বলেন, ‘এখনো মফস্বলে বা দুর্গম অঞ্চলের অনেক স্কুলেই এক-দুজন শিক্ষক। অনেক স্কুলে শিক্ষকের পদ তিন-চার বছর ধরে শূন্য। শিক্ষক না থাকলে এর প্রভাব শিক্ষার্থীদের ওপরও পড়ে। এ ছাড়া সরকারি প্রাথমিকে সাধারণত দরিদ্র পরিবারের শিক্ষার্থীরা আসে। তাদের একটু আলাদা যতœ নেওয়া প্রয়োজন। সেগুলোও হচ্ছে না। শিক্ষকরাও তাদের বেতন-ভাতায় সন্তুষ্ট নন। সব মিলিয়ে আমরা প্রাথমিক শিক্ষায় কাক্সিক্ষত মান অর্জন করতে পারছি না।’
ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে গাজীপুর সিটি নির্বাচনে হেরে যাওয়া প্রার্থী আজমত উল্লা খানকে।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে থাইল্যান্ডের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতি জোর করে হারানো হয়েছে।
গত রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন তেমনি যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে বেসরকারিভাবে বিজয়ী হয়েছেন জায়েদা খাতুন।
তিনি ঘড়ি প্রতীকে মোট ২ লাখ ৩৮ হাজার ৯৩৪ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। তার নিকটতম আওয়ামী লীগ মনোনিত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আজমত উল্লা খান পেয়েছেন ২ লাখ ২২ হাজার ৭৩৭ ভোট।
বৃহস্পতিবার সকাল ৮টায় এ সিটির ৪৮০টি কেন্দ্রে ইভিএমে ভোটগ্রহণ শুরু হয়, যা একটানা বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলে।
বৃহস্পতিবার (২৫ মে) রাতে রির্টানিং কর্মকর্তা স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুনকে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত ঘোষণা করেন।
নির্বাচনের অন্য মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে লাঙ্গল প্রতীকে জাতীয় পার্টির প্রার্থী এম এম নিয়াজ উদ্দিন ১৬ হাজার ৩৬২ ভোট, গোলাপ ফুল প্রতীকে জাকের পার্টির মো. রাজু আহাম্মেদ ৭ হাজার ২০৬ ভোট, মাছ প্রতীকে গণফ্রন্টের প্রার্থী আতিকুল ইসলাম ১৬ হাজার ৯৭৪ ভোট, স্বতন্ত্রপ্রার্থী ঘোড়া প্রতীকের মো. হারুন-অর-রশীদ ২ হাজার ৪২৬ ভোট এবং হাতি প্রতীকের সরকার শাহনূর ইসলাম ২৩ হাজার ২৬৫ ভোট পেয়েছেন।
নির্বাচন কমিশনের তথ্যানুযায়ী, গাজীপুর সিটিতে মোট ভোটার ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৭৬ জন। তাদের মধ্যে ৫ লাখ ৯২ হাজার ৭৬২ জন পুরুষ, ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৬৯৬ জন নারী ও ১৮ জন হিজড়া। এই সিটিতে ৫৭টি সাধারণ ও ১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড আছে। মোট ভোটকেন্দ্র ৪৮০টি, মোট ভোটকক্ষ ৩ হাজার ৪৯৭টি।
দুই দশকেরও বেশি ক্যারিয়ারে অসংখ্য নাটক-টেলিছবি নির্মাণ করেছেন শিহাব শাহীন, উপহার দিয়েছেন হিট প্রোডাকশন। নিজেকে শুধু রোমান্টিক জনরায় আটকে না রেখে কাজ করেছেন বহুমাত্রিক ঘরানায়। নিজেকে প্রমাণ করেছেন সব্যসাচী নির্মাতা হিসেবে। নিজেকে শুধু টেলিভিশনেই আটকে রাখেননি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তিনিও পাল্টেছেন প্লাটফর্ম এবং সেখানেও দেখিয়েছেন নিজের মুন্সিয়ানা।
সর্বশেষ গেল ঈদে তুমুল সাড়া ফেলেছে তার নির্মিত স্পিন অফ সিরিজ ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’। সাফল্যের পর কিছুদিন আগেই অনুষ্ঠিত হয়ে গেল এর সাকসেস পার্টি যেখানে উপস্থিত ছিলেন টিমের কলাকুশলী থেকে শুরু করে অন্যান্য নির্মাতা ও শিল্পীরা। সেই ধারাবাহিকতায় এবার তিনি নিয়ে আসছেন সিরিজটির সিক্যুয়াল। শুধু তাই নয়, একসঙ্গে একাধিক সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে আসছেন জনপ্রিয় নির্মাতা।
শিহাব শাহীন বলেন, ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’ নিয়ে এতটা প্রত্যাশা ছিল না কিন্তু সে সাড়া পেয়েছি তা প্রত্যাশার চেয়েও বেশি। দর্শকরাই কাজটিকে গ্রহণ করেছেন আর তাই এখন এর সিক্যুয়াল নিয়ে আসার পরিকল্পনা করছি। স্পিন অফে দেখিয়েছি অ্যালেন স্বপনের পেছনের গল্প। সিন্ডিকেটে তাকে আমরা দেখিয়েছিলাম ২০২২ সালে, সে ঢাকায় আসার পর এর মাঝের সময়টার গল্পই থাকবে সিক্যুয়ালে। যেটার সংযোগ থাকতে পারে ‘সিন্ডিকেট ২’-তে। ঈদের পরপর এটার শুট করার সম্ভাবনা রয়েছে।
এই সিক্যুয়াল ছাড়াও আরও বেশ কিছু সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে সবকিছু চূড়ান্ত হয়েছে বলেও জানান এ নির্মাতা। তিনি বলেন, মোস্তফা সরয়ার ফারুকির তত্ত্বাবধানে ওটিটি প্লাটফর্ম চরকির ‘মিনিস্ট্রি অফ লাভ’ সিরিজের একটা কনটেন্ট করবো। এখনও কাস্টিং চূড়ান্ত হয়নি। এছাড়া হইচইয়ের একটি সিরিজ ও বিঞ্জের একটি ফিল্ম করা হবে। নাম চূড়ান্ত হয়নি। তবে দুটোতেই জিয়াউল ফারুক অপূর্ব থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
মাঝে শোনা গিয়েছিল, আফরান নিশোকে নিয়ে ‘সিন্ডিকেট ২’ নাকি হবে না, এটা কতটুকু সত্য? এমন প্রশ্নে শিহাব শাহীন বলেন, এটা ভূয়া তথ্য। ডিসেম্বরের শেষ দিকে ‘সিন্ডিকেট ২’ করবো তার আগে সেপ্টেম্বরে শুরু করবো ‘রসু খাঁ’।
জানা গেছে, আগামী সপ্তাহে অস্ট্রেলিয়া পাড়ি জমাচ্ছেন শিহাব শাহীন। দেশে ফিরবেন মাসের শেষ নাগাদ এরপর কাজে নামবেন।