
১৯৮৬ বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে ইংল্যান্ডকে ২-১ গোলে হারিয়েছিল আর্জেন্টিনা। মেক্সিকো সিটির অ্যাজটেক স্টেডিয়ামে দুটো গোলই করেছিলেন ম্যারাডোনা। তার প্রথমটি ‘হ্যান্ড অব গড’ নামে পরিচিত। অন্যটি ‘গোল অব দ্য সেঞ্চুরি’ নামে। আজ দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিকী ম্যারাডোনার। আর আগামীকাল মেক্সিকোর বিপক্ষে বাঁচা-মরার লড়াইয়ে মাঠে নামবে আর্জেন্টিনা। ১৯৮৬ বিশ্বকাপে মেক্সিকোতে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে যে জার্সি গায়ে দিয়েছিলেন আর্জেন্টাইন কিংবদন্তি ডিয়েগো ম্যারাডোনা, সেটি কিছুদিন আগে রেকর্ড দামে বিক্রি হয়। জার্সিটির ক্রেতা হাভিয়ের মালুফ আজ ম্যারাডোনার জার্সিটি গায়ে দেবেন তাকে সম্মান জানাতে।
কিছুদিন আগে নিলামে জার্সিটি বিক্রি হয়েছে রেকর্ড দামে। ইংল্যান্ডের নিলাম সংস্থা সথবি ৮৯ লাখ ডলারেধ বিক্রি করে জার্সিটি, বাংলাদেশি অর্থে যা প্রায় ৭৭ কোটি টাকা। নিলামে জার্সিটি কিনেছিলেন হাভিয়ের মালুফ। বিশ্বকাপ উপলক্ষে জার্সিটি কাতারের স্পোর্টস মিউজিয়ামে প্রদর্শনও হয়। দুই বছর আগে ২৫ নভেম্বর হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে ৬০ বছর বয়সে মারা যান সর্বকালের অন্যতম সেরা খেলোয়াড় ডিয়েগো ম্যারাডোনা। ম্যারাডোনাভক্ত মালুফ জানান, দিনটিকে ঘিরে আছে তার কিছু পরিকল্পনা ‘ম্যারাডোনাকে সম্মান জানাতে আমি কিছু সময়ের জন্য জার্সিটি গায়ে দিব। আমরা সবাই তার গল্প এবং ফুটবলে তার প্রভাব সম্পর্কে জানি।’ ভবিষ্যতে জার্সিটি কোনো এক আর্জেন্টাইনের কাছে থাকলে ভালো হবে বলে মনে করেন মালুফ। তিনি বলেন, ‘একদিন জার্সিটি আর্জেন্টিনায় গেলে সেটি ভালো হবে। তাহলে আর্জেন্টিনার সব মানুষ এটি দেখতে পারবেন, গুরুত্বটা বুজবেন।’ ধারণা করা হচ্ছে, এবার কাতারে ৩০ হাজারের বেশি সমর্থক জড়ো হয়েছেন আর্জেন্টিনার খেলা দেখতে। তাদের বেশিরভাগের গায়েই লিওনেল মেসির নাম লেখা ১০ নম্বর জার্সি।
তবে ম্যারাডোনার নাম লেখা ১০ নম্বর জার্সি পরা লোকও আছে অনেক। কাতারের খলিফা স্টেডিয়ামের কাছে ম্যারাডোনার ভাস্কর্য আছে। অনেক আর্জেন্টাইন সমর্থকই সেটি দেখতে গেছেন। আর্জেন্টিনা-সৌদি ম্যাচেও দেখা গেছে ম্যারাডোনার নামে ব্যানার। তার ছবি হাতে সমর্থকরা। আরেকটি আর্জেন্টাইন গ্রুপ পরিকল্পনা করেছে দোহা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ম্যারাডোনা ফ্যানফেস্ট করার।
ম্যারাডোনার পরিবার অবশ্য দাবি করেছিল, যে জার্সি পরে ম্যারাডোনা গোল করেছিলেন, নিলামে ওঠা জার্সিটি সেটা নয়। তাদের দাবি ছিল, প্রথমার্ধের পর ম্যারাডোনা জার্সি বদল করেন। তবে নিলামকারক সথবি জানায়, তারা রেজ্যুলিউশন ফটোম্যাচিং কোম্পানির সঙ্গে মিলে জার্সিটি যে আসল সেটা নিশ্চিত করেছে।
এক গ্রুপে রাজনৈতিক শত্রু-মিত্রের এমন মেলবন্ধন বিশ্বকাপে খুব কমই দেখা যায়। ‘বি’ গ্রুপে একসঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র-ইরান-ইংল্যান্ড, আছে ওয়েলসও। যারা গ্রেট ব্রিটেনের সহ-রাজ্য। গ্রুপের প্রতি ম্যাচে তাই খেলার দ্বৈরথের পাশাপাশি রাজনৈতিক মিল-অমিলও উপস্থিত। আজ রাতে ইংল্যান্ড-যুক্তরাষ্ট্র ম্যাচে থাকছে ‘মিল’-এর বিষয়টি। বিশ্ব রাজনীতির সব বিষয়ে একমত হওয়া জুটি মাঠের লড়াইয়ে নামবে একে অপরকে হারাতে। রাজনীতির মাঠের দুই বন্ধুর দ্বৈরথ কোন আনন্দ উপহার দেয় সেটাই দেখার।
ফুটবলে দু’দলের লড়াই উপভোগ্য হলেও অতীতে চিত্রটা এমন ছিল না। যুক্তরাষ্ট্র ১৯৩০-৩৮ তিন বিশ্বকাপ খেললেও নিয়মিত হয়েছে অনেক পড়ে। ইংল্যান্ড আবার বিশ্বকাপই খেলেছে ১৯৫০ থেকে। দু’দলের লড়াইয়ে সবসময় ইংল্যান্ড মাঠে নামে ফেভারিট হয়ে। কিন্তু বিশ্বকাপে দু’দলের ভাগ্য অনেকটা ভারত-পাকিস্তানের মতো। ওয়ানডে বিশ্বকাপে যেমন ভারতকে হারাতে পারে না পাকিস্তান। তেমনি বিশ্বকাপে যুক্তরাষ্ট্রকে হারাতে পারে না ইংল্যান্ড। এ পর্যন্ত মূল আসরে দু’বার দেখা হয়েছিল। ১৯৫০ বিশ্বকাপে প্রথম দেখায় যুক্তরাষ্ট্রের কাছে ইংল্যান্ডের ১-০ গোলের হার বিশ্বকাপে সেরা অঘটনের একটি হয়ে আছে আজো। এরপর ২০১০-এ দ্বিতীয়বার লড়াইয়ে নেমে ১-১ ব্যবধানে ড্র করে দু’দল। অথচ এ দুই ম্যাচের বাইরে ৯ দেখায় ৮ বারই জিতেছে থ্রি লায়ন্সরা। এর মধ্যে ১৯৬৪ সালের এক ম্যাচে ১০-০ গোলে জয়ের রেকর্ডও আছে। তবুও বিশ্বকাপ ম্যাচ বলে অতীত ভয় দাগ কাটবে ইংল্যান্ডের মনে।
সেই ভয় কাটার রসদ ইংল্যান্ড অবশ্য পেয়ে গেছে। ইরানকে ৬-২ গোলে হারিয়ে আত্মবিশ্বাসের দিক থেকে অনেক উঁচুতে আছেন রাশফোর্ড-বেলিংহ্যামরা। এতদিন ইংল্যান্ডের আক্রমণের মধ্যমণি ধরা হতো হ্যারি কেইনকে। গত বিশ্বকাপে ৬ গোল করে সেই সামর্থ্য দেখিয়েছেনও। অথচ গত ম্যাচে ইরানের বিপক্ষে ভিন্ন ৫ জন গোল করলেও তালিকায় কেইন ছিলেন না। দুটি অ্যাসিস্ট করেছেন। তবে ইংল্যান্ডের জন্য বড় কথা কেইনের গোল ছাড়াই বড় ব্যবধানে জয়। ইংল্যান্ডের গত ম্যাচের ৬ গোলে মোট ৯ ফুটবলারের অবদান ছিল। ১৯৭৪ সালে জায়ারের বিপক্ষে যুগোস্ল্যাভিয়ার ম্যাচে সবশেষ বার এক খেলার গোলসংখ্যায় এত সংখ্যক ফুটবলারের অবদান ছিল। গত ম্যাচে ৭০ মিনিটে বদলি হয়ে উঠে যাওয়ায় কেইনের ইনজুরি ভয় ছিল। তা কেটে গেছে। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পুরো ফিট হয়েই নামবেন ইংল্যান্ড অধিনায়ক। তার সঙ্গে ফিট দলের আরেকটি জয় ইংলিশদের দ্বিতীয় রাউন্ডে পৌঁছে দেবে।
কেইনের বদলে ওই ম্যাচে ক্যালাম উইলসন মাঠে নামেন। ২০ মিনিট দারুণ খেলেছেন। জ্যাক গ্রিলিশের গোলে অ্যাসিস্ট তারই। অথচ ওই গোলটি করতে পারতেন ক্যালাম নিজেই। দলের জন্য এমন অ-স্বার্থপর খেলা ইংল্যান্ডকে ভালো কিছু এনে দিতে সহযোগিতা করবে বলে জানান গোলরক্ষক জর্ডান পিকফোর্ড, ‘সবাই নিজেদের সেরাটা দিতে আগ্রহী। ইরান ম্যাচে আমরা তা দেখিয়েছি। সবচেয়ে বড় বিষয় হলো আমরা নিজেদের জন্য খেলছি না। ক্যালাম হ্যারির বদলি হিসেবে ৭০ মিনিটে নামার পর অ-স্বার্থপর খেলা উপহার দিয়েছে। জ্যাককে (গ্রিলিশ) নিজের গোলটা উপহার দিয়েছে সে। আমরা দলের সবাই জানি এখানে একটা লক্ষ্য নিয়ে এসেছি। তা দলের জন্যই।’ ইংল্যান্ড দল হিসেবে বিশ্বকাপের আগের বাজে ফর্ম কাটিয়েছে। ইরানের বিপক্ষে মাঠে নামার আগে ৬ ম্যাচে জয়ের মুখ দেখেনি ইংলিশরা।
উজ্জীবিত ইংল্যান্ডের সামনে কঠিন পরীক্ষা দিতে হবে যুক্তরাষ্ট্রকে। বিশ্বকাপে দলটির সঙ্গে তাদের না হারার অতীতও হয়ত ভেঙে যাবে আজ। ওয়েলসের সঙ্গে এগিয়ে গিয়েও গোল হজম করা দলটি ওই রেকর্ড ধরে রাখতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। তার জন্য ইংল্যান্ডের মতো তাদেরও দল হিসেবে বিশেষ কিছু করা চাই যুক্তরাষ্ট্রের। কারণ, আজ হারলে তাদের বিশ্বকাপ প্রায় শেষের দিকেই চলে যাবে। যুক্তরাষ্ট্র গোলরক্ষক ম্যাট টার্নার এই ভয় করছেন না। বরং বুক চিতিয়ে ইংল্যান্ডকে থামানোর বিশ্বাস নিচ্ছেন প্রথম ম্যাচের লড়াই থেকে, ‘ওয়েলসের সঙ্গে আমরা জয় দিয়েই শুরু করতাম। কিন্তু দ্বিতীয়ার্ধে কিছু সুযোগ মিস করায় আমরা গোল পাইনি। আমরা যে সুযোগগুলো পেয়েছি তাকে কাজে লাগাতে আমাদের পরিকল্পনা নিয়ে আরও স্পষ্ট হতে হবে। শেষ মুহূর্তে সবসময় ছোট সুযোগই আসবে। ওগুলোই কাজে লাগাতে হবে। আমরা জানি ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সুযোগ পাওয়া আরও কঠিন হবে এবং গোল পেতে চাইলে আরও ক্লিনিক্যাল হতে হবে আমাদের।’
বিশ্বকাপ পর্বের মাঝপথে। এখান থেকে দ্বিতীয় রাউন্ডে পা রাখার লড়াই শুরু। সহজ পথে এগিয়ে যেতে চাইলে যুক্তরাষ্ট্রকে হারানোই ইংল্যান্ডের একমাত্র পথ। ইংল্যান্ডের এই চ্যালেঞ্জ যুক্তরাষ্ট্র থামাতে পারবে তো।
কাতার বিশ্বকাপে শুরুর বাঁশি বাজার সপ্তাহ খানেক আগেও নিশ্চিত ছিল না ইকুয়েডরের অংশগ্রহণ। তাদের বিপক্ষে অযোগ্য খেলোয়াড় খেলানোর অভিযোগ ছিল চিলির। অনেক নাটক হলেও শেষ পর্যন্ত অবশ্য বিশ্বমঞ্চে পা রাখে দক্ষিণ আমেরিকা অঞ্চলের দেশটি। এমনকি এবারের বিশ্বকাপ শুরুই হয়েছে তাদের জয় দিয়ে। উদ্বোধনী ম্যাচে তারা হারায় স্বাগতিক কাতারকে। স্বাগতিক হিসেবে খেলতে নেমে বিশ্বকাপে প্রথম ম্যাচ হারা একমাত্র দল কাতার। ইকুয়েডর তো গর্ব করতেই পারে! এবার যাদের ইউরোপের বড় শক্তি নেদারল্যান্ডসের মুখোমুখি হওয়ার পালা। আল রাইয়ানের খলিফা ইন্টারন্যাশনাল স্টেডিয়ামে আজ ‘এ’ গ্রুপের ম্যাচটি শুরু হবে বাংলাদেশ সময় রাত ১০টায়।
লুই ফন গালের নেদারল্যান্ডসও আসর শুরু করেছে জয় দিয়ে। সেনেগালকে হারায় তারা। নেদারল্যান্ডস-ইকুয়েডর ম্যাচটা তাই টেবিলে দুই দলের একে অপরের চেয়ে এগিয়ে যাওয়ার। যে দল জিতবে তারা শুধু শীর্ষেই উঠবে না, সেমিফাইনালের পথেও এগিয়ে যাবে একধাপ।
নিজেদের প্রথম ম্যাচে নেদারল্যান্ডস ও ইকুয়েডর দুই দলই জয় পেয়েছে সমান ২-০ ব্যবধানে। সেনেগালকে হারাতে অবশ্য বেশ বেগ পেতে হয়েছে তাদের। তবে ফুটবল ঐতিহ্যে নেদারল্যান্ডস যোজন যোজন এগিয়ে ইকুয়েডরের চেয়ে। ফিফা র্যাংকিংয়ে নেদারল্যান্ডসের অবস্থান ৮। ইকুয়েডরের অবস্থান সেখানে ৪৪। যদিও কখনো বিশ্বকাপ জেতা হয়নি ডাচদের। তবে তাদের ফুটবলে যে নান্দনিকতার ছোঁয়া, সেটা সমাদৃত বিশ্বব্যাপী। কখনো শিরোপা ঘরে তুলতে না পারলেও তিনবার রানার্সআপ হয়েছে তারা। এ নিয়ে খেলছে একাদশ বিশ্বকাপ। অন্যদিকে এ নিয়ে চতুর্থ বিশ্বকাপ খেলছে ইকুয়েডর। বিশ্ব মঞ্চে তাদের সেরা সাফল্য ২০০৬ সালে জার্মানি আসরে শেষ ষোলোতে খেলা। ডাচটা তাই ফেভারিট থাকবে এটাই স্বাভাবিক।
তবে এটাও ঠিক আগের ম্যাচের চেয়ে নিজেদের উন্নতি দেখাতে নেদারল্যান্ডসকে। সেনেগালের বিপক্ষে গোল পেতে ৮৪ মিনিট পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়েছিল তাদের। ডাচ অধিনায়ক ভার্জিল ফন ডাইকের কণ্ঠে তাই নিজেদের খেলায় উন্নতির তাগিদ, ‘আমরা জিতেছি (সেনেগালের বিপক্ষে)। কিন্তু এটাও জানি যে, আমরা আরও ভালো করতে পারি এবং অবশ্যই তা করতে হবে।’
এমনিতে ডাচরা বিশ্বকাপে এসেছে দারুণ ছন্দ নিয়ে। বাছাই পর্বে নিজেদের গ্রুপে শীর্ষে থেকে সরাসরি মূল পর্বে ওঠে তারা। গত বছর অনুষ্ঠিত ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপে চেক রিপাবলিকের বিপক্ষে হেরেছিল শেষ ষোলোয়। এরপর টানা ১৬ ম্যাচ অপরাজিত তারা। ২০১০ বিশ্বকাপে রানার্সআপ ও ২০১৪ বিশ্বকাপে তৃতীয় হলেও ২০১৮ বিশ্বকাপে ছিল না তারা। এবার তাই ভালো কিছু করতে মুখিয়ে দলটি। ফন গালও তৃতীয় মেয়াদে দলটির দায়িত্ব নিয়েছেন সেই স্বপ্ন নিয়েই। ইকুয়েডর ম্যাচের আগে যার জন্য স্বস্তির মেমফিস ডিপাইয়ের পুরোপুরি সুস্থ হয়ে ওঠা। সেনেগালের বিপক্ষে শেষ ৩০ মিনিট খেলেছেনও তিনি। ৪২টি আন্তর্জাতিক গোলের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন বার্সেলোনার এই ফরোয়ার্ডকে তাই শুরুর একাদশে মাঠে নামতে দেখা যেতে পারে।
নেদারল্যান্ডস র্যাংকিংয়ে এগিয়ে থাকলেও বড় স্বপ্ন দেখছে ইকুয়েডরও। এক্ষেত্রে আর্জেন্টিনার বিপক্ষে সৌদি আরবের জয়কে তারা প্রেরণা হিসেবে নিচ্ছে। দলটির গোলকিপার হারনান গালিনদেস বলেছেন, ‘এটা কঠিন ম্যাচ হবে। তবে আমি আশা করি, নেদারল্যান্ডস আমাদের সমীহ করবে। আমার মনে হয় আর্জেন্টিনার হার এই বিশ্বকাপের শেষ চমক হবে না।’
ইকুয়েডর দলে অস্বস্তি ছিল কাতারের বিপক্ষে দুই গোল করা এনার ভ্যালেন্সিয়াকে নিয়ে। দলকে জেতানো ম্যাচে হাঁটুতে চোট পেয়েছিলেন তিনি। তবে সেটা খুব গুরুতর নয় বলেই খবর। ফলে অভিজ্ঞ এই ফরোয়ার্ডকে শুরুর একাদশেই দেখা যেতে পারে। নেদারল্যান্ডস ও ইকুয়েডর এখন পর্যন্ত দু’বার মুখোমুখি হয়েছি। দুটিই ছিল প্রীতি ম্যাচ। ২০০৬ সালে প্রথম সাক্ষাতে ১-০তে জিতেছিল ডাচরা। ২০১৪ সালে অনুষ্ঠিত ম্যাচটি ১-১ গোলে ড্র হয়েছিল।
ব্রাজিল-সার্বিয়া ম্যাচ দিয়ে কাতার বিশ্বকাপে অংশ নেওয়া সব দলেরই একটি করে ম্যাচ দেখে ফেললাম আমরা। এবার ‘দ্বিতীয় রাউন্ড’ শুরুর পালা। আর সেই পর্বে আজ আলাদা ম্যাচে মাঠে নামতে যাচ্ছে দুই বড় দল ইংল্যান্ড ও নেদারল্যান্ডস। ইরানকে গুঁড়িয়ে আসর শুরু করা ইংল্যান্ড খেলবে যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে। আর নেদারল্যান্ডস মুখোমুখি হবে ইকুয়েডরের। যে দুই ম্যাচে আমি ইংল্যান্ড ও নেদারল্যান্ডসকেই ফেভারিট বলব।
সেনেগালের বিপক্ষে নিজেদের প্রথম ম্যাচে নেদারল্যান্ডস বেশ ভাগ্যবান ছিল। ৮৩ মিনিট পর্যন্ত ম্যাচের স্কোর লাইন ছিল শূন্য-শূন্য। সেখান থেকে শেষ দিকে পেশাদার পারফরম্যান্স দেখিয়ে ম্যাচ জিতে নিয়েছে ডাচরা। ইকুয়েডরও আসর শুরু করেছে জয় দিয়ে। উদ্বোধনী ম্যাচে হারিয়েছে কাতারকে। ফলে একটি করে ম্যাচ শেষে ‘এ’ গ্রুপে শীর্ষে অবস্থান করছে নেদারল্যান্ডস ও ইকুয়েডর। লড়াইটা তাই তাদের একে অপরের থেকে এগিয়ে যাওয়ার।
ইকুয়েডরের বেলায় যেটা হয়েছে, প্রথম ম্যাচেই সহজ প্রতিপক্ষ পাওয়া ওদের জন্য বিপদের কারণ হতে পারে। কাতারের মতো দলকে (২-০) হারিয়ে নেদারল্যান্ডসের সামনে পরা, এটা বেশ কঠিন। তাই এই ম্যাচে নেদারল্যান্ডস যে ফেভারিট এতে কোনো সংশয় নেই। স্কোর লাইন ১-০ বা ২-১ হতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে ইংল্যান্ড তাদের ফর্মেশনে বদল আনবে কি-না সেটা দেখার বিষয়। ইরানের বিপক্ষে ব্যাক ফোর নিয়ে খেলেছিল। ৪-২-৩-১ ফর্মেশন বলা যায়। যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে সেটা ৩-৪-৩ ফর্মেশনও হতে পারে। তবে শুরুর একাদশ হয়তো আগের মতোই হবে। রক্ষণে যেমন হ্যারি ম্যাগুয়ের, জন স্টোনস, লুক শ, কিরান ট্রিপিয়ার ছিল। তাদের ওপরে খেলেছে ডেকলান রিস ও জুড বেলিংহ্যাম। আক্রমণে দুইপাশে খেলেছে সাকা ও স্টার্লিং, মাউন্ট একটু পেছন থেকে সাপোর্ট দিয়েছে। একেবারে টপে ছিল হ্যারি কেইন। বেলিংহ্যামকে নিয়ে আগের কলামেও আমার উচ্চাশার কথা বলেছিলাম। ওকে তরুণ তারকা বলা হয়। তবে ও অনেক পরিণত খেলোয়াড়। যদি সব ঠিকঠাক থাকে তাহলে সে এই বিশ্বকাপের তারকা হবে বলে আমি মনে করি।
ওয়েলসের বিপক্ষে যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাচটা ড্র হয়েছিল। সৌভাগ্যবশত ওয়েলস শেষ দিকে পেনাল্টি থেকে গোল করে পয়েন্ট পেয়েছে। তবে এটা যুক্তরাষ্ট্রেরই দোষ। শেষ দিকে গিয়ে যে ফাউলটা করল, ওটার কোনো দরকারই ছিল না। লাইবেরিয়ার প্রেসিডেন্ট ও ব্যালন ডি’অর জয়ী সাবেক ফুটবলার জর্জ উইয়াহর ছেলে টিমোথি উইয়াহ খেলছে যুক্তরাষ্ট্র দলে। প্রথম ম্যাচে তো গোলও করল। তবে ইরানের বিপক্ষে ৬-২ গোলে জয়ের তাজা যে স্মৃতি, সেই আত্মবিশ্বাস খুব কাজে দেবে ইংল্যান্ডকে। ২-০ হতে পারে ম্যাচের ফল।
সর্বোচ্চ ৫ বিশ্বকাপ খেলা দিয়েগো গোডিনের হেড। রিয়াল মাদ্রিদ তারকা ফেদে ভালভার্দের শট। দুটোই বারে লেগে ফিরে আসে। সঙ্গে উরুগুয়ের সেরা তারকা লুইস সুয়ারেজ ও এডিনসন কাভানির চোখ রাঙানি কিছুই হারাতে পারেনি দক্ষিণ কোরিয়াকে। উল্টো পজিশন, কাউন্টার অ্যাটাক ও শক্তিনির্ভর ফুটবল উপহার দিয়ে উরুগুয়ের কাছ থেকে ১ পয়েন্ট ছিনিয়ে নিয়েছে কোরিয়ানরা। গোলশূন্য ড্র হওয়া আরেক ম্যাচে এইচ গ্রুপ থেকে দ্বিতীয় রাউন্ডে যাওয়ার দরজাও অনেকটা খোলা আছে দুই দলের জন্য।
ম্যাচের শুরু থেকে কোরিয়ানদের আক্রমণ সামলেই কেটেছে উরুগুয়ের। প্রায় ১৫ মিনিট পর্যন্ত এশিয়ান বাঘদের মাঠ বা বল পজিশন ছিল ৭০ ভাগের ওপরে। ম্যাচের সময় গড়াতে এই অবস্থার বদল হয়। ধীরে ধীরে ম্যাচে ফিরতে থাকে উরুগুয়ে। বল পজিশনে এগিয়ে থাকলেও গোলের সুযোগটা তৈরি করে তারাই। ২২ মিনিটে প্রথম স্পষ্ট সুযোগ মিস করে লাতিন আমেরিকান দলটি। গিমেনেজ বাম উইং থেকে বল থ্রু করেন ডি বক্সে। পোস্টের সরাসরি ১০ গজ দূরে থাকা নুনেজ বলে পা ছোঁয়ালেই গোল। অথচ মিস করায় গোলহীন থাকতে হয় উরুগুয়েকে। ২৭ মিনিটে কাউন্টার অ্যাটাক থেকে গোলের ভালো সুযোগ পেয়েছিল তারা। এবারও ফরোয়ার্ডরা বল রিসিভ করতে দেরি করায় মিলে ব্যর্থতা। এ দুই সুযোগের পর পাল্টা জবাব দিয়ে দেয় দক্ষিণ কোরিয়া। ৩৩ মিনিটে অসাধারণ এক দলীয় গেম প্লেতে গোলের দারুণ সুযোগ তৈরি করে কোরিয়া। অথচ পোস্টের ৮ গজ সামনে দাঁড়িয়েও বল জালে পাঠাতে ব্যর্থ হন মুন-হোয়ান কিম। সহজ সুযোগে বলে পা ছুঁইয়ে পোস্টের ওপর দিয়ে পাঠিয়ে দেন। প্রথমার্ধে শেষ আক্রমণটায় গোল পেয়েই গিয়েছিল উরুগুয়ে। এবার তাদের সামনে বাধা হয়ে দাঁড়ায় ভাগ্য। ৪৪ মিনিটে দিয়েগো গোডিনের হেডিং কোরিয়ার বারে লেগে ফিরে আসে। তাই প্রথমার্ধে দুই দলই থাকে গোলহীন।
দ্বিতীয়ার্ধে ম্যাচ ধীর হয়ে যায়। একটু নি®প্রভ থাকা সুয়ারেজকে দ্বিতীয়ার্ধে তুলে নিয়ে কিছুটা ইনজুরড কাভানিকে নামান উরুগুয়ে কোচ। তাতে দলটির আক্রমণের ধার বাড়ে। ওদিকে কোরিয়ান লোকাল বয় লি ক্যাং ইনকে নামিয়ে তাদেরও আক্রমণ বাড়ান কোচ পাওলো বেন্তো। তাতে ম্যাচের শেষদিকে দুই দলই গোলের চেষ্টায় মরিয়া হয়ে ওঠে। এক্ষেত্রে গোলের সুযোগ বেশি পায় উরুগুয়ে। কাভানি-নুনেজ জুটি গোলের ভালো সুযোগ পোস্টের বাইরে মেরে নষ্ট করেন। এরপর ভালভার্দের এক শট অল্পের জন্য পোস্টের ওপর দিয়ে যায়। বিপরীতে কোরিয়ান তারকা সনও গোলের সুযোগ পোস্টের বাইরে মেরে নষ্ট করেন। ইনজুরি সময়েও সুযোগ মিস হয় দুই দলের।
দুই দলের গোল মিসের এমন মহড়ায় খেলায় আর হার-জিত হয়নি। তাতে দ্বিতীয়ার্ধের পথে এগিয়ে বা পিছিয়ে নেই উরুগুয়ে কোরিয়া। পর্তুগাল-ঘানা ম্যাচের ফলাফল তাদের পরের ম্যাচে প্রভাব রাখবে বেশ।
দুই এশিয়ান সৌদি আরব ও জাপান নিজেদের প্রথম ম্যাচে চমকে দিয়েছে বিশ্বকাপকে। সাবেক দুই চ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনা ও জার্মানিকে হারিয়ে দিয়েছে তারা। অন্যদিকে কাতার ও ইরানের প্রথম ম্যাচের ফল তার উল্টো। হেরেছে দুই দলই। তবে আজ নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে কি জ্বলে উঠবে এশিয়ার এ দুই দল। ‘এ’ গ্রুপের ম্যাচে কাতার খেলবে সেনেগালের বিপক্ষে। বি গ্রুপের ম্যাচে ইরানের প্রতিপক্ষ ওয়েলস।
বিশ্বকাপ ইতিহাসে প্রথম স্বাগতিক দল হিসেবে উদ্বোধনী ম্যাচে হেরেছে কাতার। তবে স্বস্তির বিষয় ইকুয়েডরের বিপক্ষে মাত্র দুই গোল হজম করে বিশ্ব র্যাংকিংয়ে ৫০ নম্বরে থাকা দল কাতার। স্বাগতিক দেশ হওয়ায় তাদের নিয়ে ঘরের সমর্থকদের বেশ আশা। এশিয়ান বর্তমান চ্যাম্পিয়ন কাতার। যে দলগুলোর সঙ্গে কাতার প্রায় নিয়মিত খেলে এশিয়ান অঞ্চলে তাদের মধ্যে সৌদি আরব, জাপানও আছে। এই দুটি দল বিশ্বকাপে নিজেদের প্রথম ম্যাচই জিতেছে। সেখান থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে আজ কাতার হারাতে চাইবে সেনেগালকে।
কাতারের মিডফিল্ডার ইসমাইল মোহামেদ আরব দলের ভালো খেলার বিষয়টি টেনে জানিয়েছেন এ থেকে তারাও অনুপ্রাণিত। মোহামেদ বলেন, ‘এখন পর্যন্ত বিশেষ করে আরব দলটি যেভাবে পারফরম্যান্স করেছে সেটি আমাদের জন্য ঈর্ষণীয় এবং অনুপ্রেরণারও। আমাদেরও অনুপ্রাণিত করবে ভালো খেলতে। নিজেদের ওপর ফোকাস রাখতে হবে। সবটুকু দিয়ে খেলতে হবে কাল।’ প্রথম ম্যাচে ইকুয়েডরের গোলমুখে কোনো শট লক্ষ্যে রাখতে পারেনি। তবুও সেনেগালিজ কোচ আলিউ সিসে কাতার শক্তিশালী দল বলছেন ‘আগের ম্যাচে র্যাংকিংয়ে আট নম্বর দলের বিপক্ষে আমরা খারাপ খেলিনি। তবে লক্ষ্য কাতার ম্যাচ। আমরা শক্তিশালী দলের বিপক্ষেই খেলতে যাচ্ছি।’ প্রথম ম্যাচে আফ্রিকা নেশন্স কাপ জয়ী সেনেগাল ভালোই প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল ডাচদের বিপক্ষে। প্রতিপক্ষকে গোলবঞ্চিত রেখেছিল ৮৩ মিনিট পর্যন্ত। পরে দুই গোল খাওয়া গোলকিপার এদুয়ার্দো মেন্দিকে আজকে বসিয়ে রাখতে পারেন কোচ সিসে।
ওয়েলস ও ইরানের ম্যাচ আহমেদ বিন আলি স্টেডিয়ামে। ইরান বিশ্বকাপে প্রথম ম্যাচে ইংল্যান্ডের কাছে হজম করেছে ৬ গোল। তবে দুটি গোল শোধও দেয় তারা। ওই ম্যাচে ইরানের তিনটি শট ছিল লক্ষ্যে। ইরানের লক্ষ্য থাকবে আজ জয়ে ফেরার। ওয়েলস যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ১-১ গোলে ড্র করায় উজ্জীবিত আছে। আজ বেল ও তার দল পূর্ণ তিন পয়েন্টের লক্ষ্যেই মাঠে নামবে। ওয়েলস উইঙ্গার হ্যারি উইলসন বলেন, ‘আমরা পূর্ণ তিন পয়েন্ট নিশ্চিতের জন্যই মাঠে নামব। আমরা সহজেই জয় পাব না। মাঠে খেলেই পয়েন্ট অর্জন করতে হবে।’
আগের ইনিংসের মতোই ব্যর্থ উসমান খাজা। পারেননি ডেভিড ওয়ার্নারও। প্রথম ইনিংসের দুই সেঞ্চুরিয়ানও ফিরে গেছেন। দ্বিতীয় ইনিংসের ব্যাটিংয়ে তাই খুব একটা সুবিধাজনক অবস্থায় নেই অস্ট্রেলিয়া। তবুও তৃতীয় দিন শেষে এগিয়ে আছে তারা।
ওভালে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে ভারতকে ২৯৬ রানে আটকে দেওয়ার পর দ্বিতীয় ইনিংসে ৪ উইকেট হারিয়ে ১২৩ রান করে অসিরা। এগিয়ে আছে ২৯৬ রানে।
দ্বিতীয় ইনিংসে বোলিংয়ের শুরুটা ভালো করেছে ভারত। অস্ট্রেলিয়াকে চেপে ধরেছে তারা।
দুই ওপেনার ডেভিড ওয়ার্নার ও উসমান খাজা ফেরেন ২৪ রানের মধ্যেই। মারনাস লাবুশান ও স্টিভেন স্মিথের ৬২ রানের জুটি ভাঙেন রবীন্দ্র জাদেজা, পরে ট্রাভিস হেডকেও ফেরান এই স্পিনার। টেস্ট ক্যারিয়ারে অষ্টমবারের মতো স্মিথকে আউট করেছেন জাদেজা।
তৃতীয় দিন শেষে মারনাস লাবুশানের সঙ্গে অপরাজিত আছেন ক্যামেরুন গ্রিন।
সংক্ষিপ্ত স্কোর: অস্ট্রেলিয়া: ৪৬৯ ও ৪৪ ওভারে ১২৩/৪ (লাবুশেন ৪১*, স্মিথ ৩৪; জাদেজা ২/২৫, উমেশ ১/২১)ভারত ১ম ইনিংস: ৬৯.৪ ওভারে ২৯৬ (রাহানে ৮৯, শার্দূল ৫১, জাদেজা ৪৮; কামিন্স ৩/৮৩, গ্রিন ২/৪৪, বোল্যান্ড ২/৫৯)।
আসন্ন ঈদুল আজহায় কোরবানির জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিজের পালন করা সাড়ে ২১ মণ ওজনের গরু উপহার দিতে চেয়েছিলেন কিশোরগঞ্জ জেলার পাকুন্দিয়া উপজেলার চরকাউনা গ্রামের সাধারণ কৃষক বুলবুল আহমেদ ও তার স্ত্রী ইসরাত জাহান। তাদের এই ভালোবাসার প্রতি সম্মান জানিয়ে উপহারের এই গরু গ্রহণে সম্মতি দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
শুক্রবার (৯ জুন) সন্ধ্যায় গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারি কৃষিবিদ মশিউর রহমান হুমায়ুন বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রী উপহারের গরু গ্রহণে সম্মতি দেন।
প্রধানমন্ত্রীর উপ-প্রেস সচিব হাসান জাহিদ তুষার গণমাধ্যমকে এ তথ্য জানিয়েছেন। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী খুশি হয়েছেন এবং এই বিরল ভালোবাসার জন্য বুলবুল আহমেদ ও তার স্ত্রীকে ধন্যবাদ দেন।
হাসান জাহিদ তুষার জানান, প্রধানমন্ত্রীর ইচ্ছা এই গরু বুলবুল আহমেদের নিজ বাড়িতেই থাকবে এবং সেখানেই কোরবানি হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কোরবানির গরুর মাংস স্থানীয় দরিদ্র-অসহায় জনগণের মধ্যে বিলিয়ে দেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন।
গরুটি ক্রস ব্রাহমা প্রজাতির। এতে আনুমানিক ৮০০ কেজি মাংস হতে পারে বলে জানিয়েছেন বুলবুল আহমেদ। বুলবুল জানান, ২০২০ সালে নেত্রকোনা জেলা থেকে আড়াই লাখ টাকায় প্রধানমন্ত্রীকে উপহার দেওয়ার জন্য তিনি এই গরু কেনেন। গরু কেনার পর কিশোরগঞ্জের বিখ্যাত পাগলা মসজিদে পাঁচ হাজার টাকা মানতও করছিলেন তিনি যেন তার গরুটি সুস্থ থাকে।
তিনি আরও জানান, তিনি ও পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকে মাঠকর্মী হিসেবে কর্মরত তার স্ত্রী ইসরাত জাহান আওয়ামী লীগ সরকারের একটি বাড়ি, একটি খামার প্রকল্প থেকে ক্ষুদ্র ঋণ নিয়ে এবং নিজের জমানো টাকা দিয়ে প্রধানমন্ত্রীর জন্য এই গরু কেনেন। তারা গত তিন বছর গরুটির নিবিড় পরিচর্যা করেন।
প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আবেগ ও ভালবাসা থেকে তারা এই গরু ক্রয় ও লালন পালন করেছেন বলে জানান।
উপহার হিসেবে তার গরুটি গ্রহণ করার সম্মতি দেওয়ায় বুলবুল আহমেদ প্রধানমন্ত্রীর প্রতি ধন্যবাদ এবং কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন। বুলবুল আহমেদ কিশোরগঞ্জ জেলা আওয়ামী মৎস্যজীবী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক।
ষাটের দশকে বাঙালির স্বাধিকার আন্দোলনের আগুন তরুণদের বুকে ছড়িয়ে দিয়েছিলেন তিনি। স্বাধীন বাংলা প্রতিষ্ঠান ক্ষেত্র তৈরি করতে গড়ে তুলেছিলেন ‘নিউক্লিয়াস’। স্বাধীনতার পর তিনি সমতাভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠার সংগ্রামের বাঁধভাঙা ঢেউ তুলেছিলেন। কিন্তু নব্বইয়ের দশকে সবকিছু থেকে দূরে আড়ালে চলে যান। রাজনীতিতে তাকে নিয়ে তৈরি হয়েছিল রহস্য। সেই রহস্য নায়ক সিরাজুল আলম খান চলে গেলেন চিররহস্যের দেশে।
মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম এ সংগঠক গতকাল শুক্রবার দুপুর আড়াইটার কিছু পর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।
সিরাজুল আলম খানের মৃত্যুর বিষয়টি দেশ রূপান্তরকে নিশ্চিত করেছেন হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাজমুল হক।
সিরাজুল আলম খানের ব্যক্তিগত সহকারী রুবেল দেশ রূপান্তরকে বলেন, অসুস্থ অবস্থায় তাকে রাজধানীর একটি প্রাইভেট হাসপাতালে প্রথমে ভর্তি করা হয়েছিল। পরে চিকিৎসকদের পরামর্শে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। অবস্থার অবনতি হলে গত ১ জুন নেওয়া হয় আইসিইউতে। এরপর গত বৃহস্পতিবার রাতে লাইফ সাপোর্ট দেওয়া হয়।
বঙ্গবন্ধুর আস্থাভাজন সিরাজুল আলম খানের জন্ম নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার আলীপুর গ্রামে, ১৯৪১ সালের ৬ জানুয়ারি। তার বাবা খোরশেদ আলম খান ছিলেন স্কুল পরিদর্শক। মা সৈয়দা জাকিয়া খাতুন গৃহিণী ছিলেন। ছয় ভাই ও তিন বোনের মধ্যে দ্বিতীয় সিরাজুল আলম খান।
১৯৬১ সালে ছাত্রলীগের সহসাধারণ সম্পাদক হন সিরাজুল আলম খান। ১৯৬৩ সালে তিনি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। তিনি ১৯৭২ সালে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) গঠন করেন।
সিরাজুল আলম খানের মৃত্যুর খবর পেয়ে হাসপাতালে ছুটে আসেন জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু, বাংলাদেশ জাসদের সভাপতি শরীফ নুরুল আম্বিয়া, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সভাপতি আ স ম আবদুর রব, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) সাধারণ সম্পাদক খালেকুজ্জামান, নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান (মান্না), জনসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, গণ অধিকার পরিষদের সদস্য সচিব নুরুল হক (নুর)।
সিরাজুল আলম খানের মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। তার আত্মার শান্তি কামনা করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানান তিনি। শোক জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ বিভিন্ন সংগঠন।
প্রয়াত সিরাজুল আলম খানের ঘনিষ্ঠ ও নাট্য পরিচালক সাকিল সৈকত দেশ রূপান্তরকে বলেন, সিরাজুল আলম খানের মরদেহ বিকেলে হাসপাতাল থেকে মোহাম্মদপুরের আল-মারকাজুলে নেওয়া হয়েছে। সেখানে গোসল শেষে রাতে শমরিতা হাসপাতালের হিমঘরে রাখা হবে। আজ শনিবার সকাল ১০টায় বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটে জানাজা শেষে নোয়াখালীতে নিয়ে যাওয়া হবে। সেখানে পুনরায় জানাজা শেষে বেগমগঞ্জের আলীপুরে মায়ের কবরের পাশে দাফন করা হবে রাজনীতির এ নায়ককে।
১৯৪১ সালে জন্ম নেওয়া এ কিংবদন্তি রাজনীতিককে বিগত কয়েক বছর ধরে নিয়মিত হাসপাতালে যেতে হয়েছে। দেশে এবং বিদেশে দীর্ঘ সময় চিকিৎসা নিয়েছেন তিনি।
জন্মের কয়েক বছর পর পিতার চাকরির সুবাদে সিরাজুল আলম খুলনায় চলে যান। ১৯৫৬ সালে খুলনা জিলা স্কুল থেকে এসএসসি ও ১৯৫৮ সালে ঢাকা কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। অনার্স ডিগ্রি অর্জনের পর কনভোকেশন মুভমেন্টে অংশ নেওয়ার কারণে তাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করা হয়।
স্বাধীনতার পক্ষে আন্দোলন-সংগ্রাম পরিচালনায় ১৯৬২ ছাত্রলীগ নেতা সিরাজুল আলম খান, আবদুর রাজ্জাক ও কাজী আরেফ আহমেদের নেতৃত্বে স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী পরিষদ বা স্বাধীনতার ‘নিউক্লিয়াস’ গঠিত হয়। পরে ছাত্র-তরুণদের আন্দোলন সংগঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন তারা। বঙ্গবন্ধুরও ঘনিষ্ঠ সাহচর্যে ছিলেন এ ছাত্রনেতারা। ছয় দফার সমর্থনে জনমত গঠনে ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করেন সিরাজুল আলম খান। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা বাতিল ও বঙ্গবন্ধুর মুক্তির দাবিতে আন্দোলন ও ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানে ছাত্র-শ্রমিকদের সম্পৃক্ত করতে প্রধান ভূমিকা পালন করেন তিনি।
বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পরপরই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাগ্নে শেখ ফজলুল হক মনির সঙ্গে বিরোধের জের ধরে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ ভেঙে দুই ভাগ হয়। এরপর ১৯৭২ সালে সিরাজুল আলম খানের উদ্যোগে রাজনৈতিক দল জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ প্রতিষ্ঠা হয়। তিনি কখনো নেতৃত্বে না এলেও জাসদ নেতাদের পরামর্শ দিয়ে তাদের ‘তাত্ত্বিক গুরু’ হিসেবে খ্যাতি পান। অনুসারী সবাই তাকে ‘দাদা ভাই’ নামেই ডাকতেন।
মূলত নব্বইয়ের দশকে সিরাজুল আলম খান কখনো জনসমক্ষে আসতেন না এবং বক্তৃতা-বিবৃতি দিতেন না; আড়ালে থেকে তৎপরতা চালাতেন বলে বাংলাদেশের রাজনীতিতে ‘রহস্য পুরুষ’ হিসেবে পরিচিতি পান। নব্বই পর্যন্ত একাধিকবার জেল-জুলুম খেটেছেন তিনি।
দাদা ভাইয়ের মৃত্যুত গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি) সভাপতি আ স ম আবদুর রব, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের চেয়ারপারসন অধ্যাপক আলতাফুন্নেসা, গণফোরাম একাংশে সভাপতি মোস্তফা মোহসিন মন্টু ও সাধারণ সম্পাদক সুব্রত চৌধুরী, লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান।
বেশ ক'দিন তীব্র তাপদাহের পর গতকাল রাজধানী ঢাকাজুড়ে হয়েছে স্বস্তির বৃষ্টি। এতে তাপমাত্রা এসেছে কমে, পরিচ্ছন্ন হয়েছে পরিবেশ। তবুও আজ সকালে বায়ুদূষণের কারণে বিশ্বে দূষিত শহরের তালিকায় শীর্ষ পাঁচে আছে ঢাকা। বৃষ্টিধোয়া রাজধানী ঢাকা আজ সকাল সাড়ে ৮টায় ১৫৫ স্কোর নিয়ে দূষণের তালিকায় চতুর্থ।
আজ শনিবার (১০ জুন) সকাল সাড়ে ৮টায় বায়ুমানের সূচক (একিউআই) অনুযায়ী ঢাকায় বাতাসের স্কোর ছিল ১৫৫। বায়ুর মান বিচারে এ মাত্রাকে 'অস্বাস্থ্যকর' বলা হয়। একই সময়ে একিউআই স্কোর ১৬৮ নিয়ে প্রথম অবস্থানে আছে পাকিস্তানের লাহোর। দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে ভিয়েতনামের হ্যানয়, স্কোর ১৫৬। তৃতীয় স্থানে রয়েছে ইসরায়েলের তেলআবিব। আর পঞ্চম স্থানে আছে চীনের শেংডু, স্কোর ১৪৯।
একইসময়ে ১৩৮ স্কোর নিয়ে ষষ্ঠ স্থানে রয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকার জোহেনেসবার্গ। ১৩২ স্কোর নিয়ে সপ্তম স্থানে রয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই। অষ্টম নেপালের কাঠমান্ডু, স্কোর ১২৭। ১১৮ স্কোর নিয়ে নবম স্থানে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ডেট্রয়েট আর ১১৭ স্কোর নিয়ে দশম সৌদি আরবের রিয়াদ।
সুইজারল্যান্ডভিত্তিক বায়ুর মান পর্যবেক্ষণকারী প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান আইকিউ এয়ার দূষিত বাতাসের শহরের এ তালিকা প্রকাশ করে। প্রতিদিনের বাতাসের মান নিয়ে তৈরি করা একিউআই স্কোর একটি নির্দিষ্ট শহরের বাতাস কতটুকু নির্মল বা দূষিত, সে সম্পর্কে মানুষকে তথ্য দেয় এবং তাদের কোনো ধরনের স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি হতে পারে কি না, তা জানায়।
তথ্যমতে, একিউআই স্কোর শূন্য থেকে ৫০ ভালো হিসেবে বিবেচিত হয়। ৫১ থেকে ১০০ মাঝারি হিসেবে গণ্য করা হয়। আর সংবেদনশীল গোষ্ঠীর জন্য অস্বাস্থ্যকর হিসেবে বিবেচিত হয় ১০১ থেকে ১৫০ স্কোর। ১৫১ থেকে ২০০ পর্যন্ত 'অস্বাস্থ্যকর' হিসেবে বিবেচিত হয়। একইভাবে একিউআই স্কোর ২০১ থেকে ৩০০ এর মধ্যে থাকলে 'খুব অস্বাস্থ্যকর' এবং স্কোর ৩০১ থেকে ৪০০ এর মধ্যে থাকলে 'ঝুঁকিপূর্ণ' বলে বিবেচিত হয়।
কুমিল্লার বরুড়া উপজেলায় ১২ বছরের এক শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগে মো. রহুল আমিন (৫৬) নামের এক ব্যক্তিকে আটক করেছে পুলিশ।
শুক্রবার (৯ জুন) শিশুটির বাবা বাদী হয়ে বরুড়া থানায় মামলা করলে তাকে আটক করা হয়।
আটক মো. রহুল আমিন উপজেলার ঝলম ইউনিয়নের বেওলাইন গ্রামের মৃত আব্দুল হকের ছেলে।
ঘটনা সত্যতা নিশ্চিত করে বরুড়া থানার অফিসার ইনচার্জ মো. ফিরোজ হোসেন বলেন, ধর্ষণের শিকার শিশুটির বাবা বাদী হয়ে বরুড়া থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা রুজু করেছেন। অভিযোগের ভিত্তিতে ধর্ষককে আটক করে জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়।
মামলার অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, গত ২১ মার্চ ভোর আনুমানিক ৬টায় দিকে উপজেলার ঝলম ইউনিয়নের বেওলাইন গ্রামে ১২ বছরের শিশুকে গোয়ালঘরের পেছনে ধর্ষণ করেন মো. রহুল আমিন। এবিষয়ে এতোদিন জানাজানি না হলেও ৪ জুন (রোববার) হঠাৎ শিশুটি অসুস্থ হয়ে পড়ে। পরে পরিবারের লোকজন স্থানীয় পল্লী চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যান। সেখানে পল্লী চিকিৎসক প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নিয়ে যাওয়ার পর পরীক্ষা করে কর্তবরত চিকিৎসক উন্নত চিকিৎসা জন্য কুমিল্লা মেডিকেল কলেজে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার জন্য পরামর্শ প্রদান করেন। কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক পরীক্ষা নিরীক্ষা করে ধর্ষণের বিষয়টি নিশ্চিত হন। তারপর ভুক্তভোগী শিশুর পরিবারকে বিষয়টি জানান। ভুক্তভোগী শিশুটি এখন কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে।
বাসায় তেলাপোকা মারার ওষুধ দেওয়ার পর বিষক্রিয়ায় মারা গেছে রাজধানীর বারিধারা এলাকার ব্যবসায়ী মোবারক হোসেন তুষারের দুই ছেলে। তার মেয়ে এখনো অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি। গত শনিবার ‘ডিসিএস অরগানাইজেন লিমিটেড’ নামের একটি পেস্ট কন্ট্রোল কোম্পানিকে দায়িত্ব দিয়েছিলেন ওই ব্যবসায়ী। প্রতিষ্ঠানটির কর্মীরা বাসায় ওষুধ দিয়ে ছয় ঘণ্টা পরে ঢুকে ঘর পরিষ্কার করতে বলেছিলেন। পরিবারটি ৯ ঘণ্টা পরে বাসায় ঢুকে বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হয়। এ সময় তাদের সবারই পেট খারাপ, বমির মতো উপসর্গ দেখা দেয়।
ওই পরিবারের বরাত দিয়ে পুলিশ জানিয়েছে, সেই পেস্ট কন্ট্রোল কোম্পানি পোকামাকড় নিধনের জন্য অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট (গ্যাস ট্যাবলেট) ব্যবহার করেছিল, যেটা থেকে বিষাক্ত গ্যাস তৈরি হয়। সেই গ্যাসের বিষক্রিয়াতেই তাদের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় মামলা হওয়ার পর ওই প্রতিষ্ঠানের ৫ কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
এদিকে রাজধানীতে গত পাঁচ বছরে এই বিষক্রিয়ায় বেশ কয়েকজন মানুষের মৃত্যু হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, উচ্চমাত্রার এই কীটনাশক বাসায় ব্যবহার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। অথচ বিভিন্নভাবে সাধারণ কীটনাশক হিসেবে দেদার বিক্রি হচ্ছে সারা দেশে।
সূত্র বলছে, রাজধানীসহ সারা দেশে কয়েক শতাধিক পেস্ট কন্ট্রোল প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব কোম্পানির প্রায় ৯৫ ভাগের কোনো অনুমোদন নেই। কৃষি ও পরিবেশ অধিদপ্তরের এসব দেখভাল করার কথা থাকলেও তারাও খুব একটা গুরুত্ব দিচ্ছে না।
পেস্ট কন্ট্রোল সার্ভিস প্রতিষ্ঠান সেবা নিন প্ল্যাটফর্ম লি.-এর চেয়ারম্যান শামসুল আলম বলেন, দেশে ব্যাঙের ছাতার মতো পেস্ট কন্ট্রোল প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠছে। অধিক মুনাফার আশায় তারা এক ধরনের নিষিদ্ধ ট্যাবলেট ব্যবহার করে। আবার অনেকে লিকুইড কেমিক্যাল ব্যবহার করে। কিন্তু কোন মাত্রায় এসব ব্যবহার করতে হয় তার প্রশিক্ষণ নেই। সরকারের পক্ষ থেকে এসব প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে আরও বেশি সতর্ক হওয়া উচিত।
রাজধানীর বেশ কিছু বাজার ঘুরে দেখা যায় অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট যত্রতত্র বিক্রি হচ্ছে। ফুটপাত থেকে শুরু করে দেয়াল লিখন ও অনলাইনের মাধ্যমে দেওয়া হচ্ছে চটকদার বিজ্ঞাপন। অথচ চাষাবাদ ছাড়া অন্য কাজে যার ব্যবহার নিষিদ্ধ। বদ্ধ ঘরে এই ধরনের কীটনাশক ব্যবহার করলে যে কারও বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
গতকাল রাজধানীর কারওয়ান বাজারে মাইকিং করে এসব কীটনাশক বিক্রি করছিলেন কাঞ্চন মিয়া। এ ধরনের কীটনাশক বিক্রির অনুমতি তার আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের অনুমতি লাগে না। দশ বছর ধরে এই ব্যবসা করি। কেউ তো কিছু বলে না। কোথা থেকে এসব পণ্য সংগ্রহ করা হয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, বেশিরভাগ পুরান ঢাকা থেকে সংগ্রহ করি। গাজীপুর সাভার থেকেও এসে দিয়ে যায়। এসব ব্যবহারে মানুষের মৃত্যুর ঝুঁকি রয়েছে তা জানেন না বলে জানান তিনি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন কীটনাশক জাতীয় একপ্রকার ওষুধের জেনেটিক বা গ্রুপ নাম হলো অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড। বাজারে অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট আকারে ফসটক্সিন, সেলফস, কুইকফস, কুইকফিউম, ডেসিয়াগ্যাস এক্সটি ইত্যাদি নামে পাওয়া যায়। অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট গ্যাস ট্যাবলেট নামেও পরিচিত। বাতাসের সংস্পর্শে এসে জীবনবিনাশী ভয়াবহ টক্সিক গ্যাস ফসফিন উৎপাদন করে। এই ট্যাবলেট সাধারণত গুদামজাত শস্যের পোকা দমন, ধান ক্ষেতের পোকা দমন, কলাগাছের পোকা দমন ও ইঁদুর দমনে ব্যবহার হয়ে থাকে। গত এক দশকে দেশে এই বিষাক্ত কীটনাশক মানুষের বাসাবাড়িতে ব্যবহার বাড়ছে। দেশের বাজারে ট্যাবলেট আকারে সহজলভ্য। রাজধানীতে ছারপোকা দমনে প্রায় যথেচ্ছ ব্যবহার হচ্ছে এই ট্যাবলেট।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে বালাইনাশক গ্রহণ করলে সেটা দ্রুত ফুসফুসে শোষিত হয় এবং রক্তে মিশে যায়। যদি পর্যাপ্ত পরিমাণ বালাইনাশক শ্বাসের মাধ্যমে গ্রহণ করা হয় তাহলে নাক, গলা ও ফুসফুস মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সরকারের যে দায়িত্বশীল প্রতিষ্ঠান রয়েছে এসব বিষয়ে তাদের পক্ষ থেকে কোন কোন কীটনাশক কোন মাত্রায় কোন কোন কীটপতঙ্গের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হবে সেটি নির্দিষ্ট করে নিশ্চিত করতে হবে। আমদানির সময়ও বিষয়টি খেয়াল রাখতে হবে। অথবা দেশেই যদি তৈরি করতে হয় তাহলে যথাযথ কর্র্তৃপক্ষের লাইসেন্স নিয়ে উৎপাদন করতে হবে। এটির গুণগত মান থাকছে কি না তারও পরীক্ষা করতে হবে।
পরিবেশ গবেষক পাভেল পার্থ বলেন, আমরা বিভিন্ন মাধ্যমে শুনেছি ওই বাসায় পেস্ট কন্ট্রোল প্রতিষ্ঠানটি অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ব্যবহার করেছে। যদিও আমরা এ বিষয়ে নিশ্চিত না। আমার মতে এটা আরও বেশি তদন্ত করা উচিত। সরকারের যে প্রতিষ্ঠান এসব বিক্রির অনুমোদন দেয় তাদের এই তদন্ত করে জানানো দরকার কী ধরনের কেমিক্যাল সেখানে ব্যবহার করা হয়েছিল। কারণ পেস্ট কন্ট্রোলের নামে কী ধরনের কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয় এটা জানাটা জরুরি।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে কোন ধরনের কীটনাশক কীভাবে ব্যবহার করা হবে তার কোনো নীতিমালা নেই। কীটনাশকগুলো সাধারণ কৃষিজমিতে ব্যবহৃত হয়। ঢাকা শহরে এরকম বিষ ব্যবহার নিষিদ্ধ করা উচিত। তাছাড়া রাস্তাঘাটে এসব জিনিস অহরহ বিক্রি হচ্ছে। এসবও তদন্তের আওতায় আনতে হবে।
আরও এক কর্মী গ্রেপ্তার : দুই শিশুর মৃত্যুর ঘটনায় টিটু মোল্লা নামে একজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তিনি বালাইনাশক কোম্পানিটির কর্মকর্তা। গত সোমবার রাতে তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ভাটারা থানার ওসি আবুল বাসার মুহাম্মদ আসাদুজ্জামান জানান, ওই ঘটনায় করা মামলায় এখন পর্যন্ত তিনজনকে গ্রেপ্তার করে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ।
একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবিরের মেয়ে অর্পিতা শাহরিয়ার কবির মুমুর (৪১) ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। মৃত্যুর আগে তিনি চিরকুট লিখে গেছেন। তবে সেখানে কি লেখা আছে তা নিশ্চিত করে জানা যায়নি।
বৃহস্পতিবার রাতে রাজধানীর মহাখালীর আমতলী এলাকার বাসা থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়। রাতেই পরিবারের দাবির প্রেক্ষিতে ময়নাতদন্ত ছাড়ায় মরদেহ হস্তান্তর করেছে পুলিশ। বিষয়টি দেশ রূপান্তরকে নিশ্চিত করেছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গুলশান বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) মো. জাহাঙ্গীর আলম। পুলিশের ধারণা, অর্পিতা গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন।
গুলশান বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মো. শহীদুল্লাহ সাংবাদিকদের বলেন, খবর পেয়ে পুলিশ বাসা থেকে লাশটি উদ্ধার করে। পরে স্বজনের অনুরোধে ময়নাতদন্ত ছাড়াই লাশ দাফনের অনুমতি দেওয়া হয়।
জানা গেছে, লন্ডনে আইন বিষয়ে পড়ালেখা করতেন অর্পিতা। ২০২০ সালের জানুয়ারিতে মা ফাতেমা কবিরের মৃত্যুর কারণে তিনি দেশে আসেন। এরপর দেশেই ছিলেন। মায়ের মৃত্যুর পর মানসিকভাবে অবসাদগ্রস্থ ছিলেন তিনি। বৃহস্পতিবার তার লণ্ডনে ফেরার কথা ছিল। মৃত্যুর আগে লিখে যাওয়া একটি চিরকুটে (সুইসাইড নোট) তিনি আত্মহত্যার বিষয়টি উল্লেখ করেছেন।
মেয়ের মৃত্যুতে শোকে বিবহবল লেখক–কলামিস্ট শাহরিয়ার কবির গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে পারেননি। তবে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সাধারণ সম্পাদক কাজী মুকুল বলেন, রাজধানীর মিরপুরের শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে অর্পিতাকে তাঁর মায়ের কবরে দাফন করা হয়েছে। রবিবার তাঁর কুলখানি অনুষ্ঠিত হবে।
একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবিরের মেয়ে অর্পিতা শাহরিয়ার কবির মুমুর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ।
বৃহস্পতিবার (৮ জুন) রাতে বনানীর বাসা থেকে ঝুলন্ত অবস্থায় মরদেহটি উদ্ধার করা হয়। রাতেই পরিবারের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করেছে পুলিশ।
তবে কী কারণে তিনি আত্মহত্যা করেছেন সে বিষয়ে কিছু জানা যায়নি।
শুক্রবার সকালে বনানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তাফিজুর রহমান জানান, বনানীর একটি বাসা থেকে অর্পিতা শাহরিয়ার কবির মুমুর মরদেহ উদ্ধার করা হয়, যা ঝুলন্ত অবস্থায় ছিল। পরে রাতেই পরিবারের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করা হয়েছে।
এর আগে, ২০২০ সালের জানুয়ারিতে স্ত্রী হারান শাহরিয়ার কবির।
নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান ও আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের সঙ্গে গতকাল মঙ্গলবার সকালে বৈঠক করেছেন ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস। এরপর দুপুরে বৈঠক করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে। এই বৈঠকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মহাপরিচালক উপস্থিত ছিলেন বলে জানা গেছে।
সরকারের গুরুত্বপূর্ণ তিন প্রতিনিধির সঙ্গে বৈঠকের বিষয়টি বেশ আলোচনার জন্ম দিয়েছে। এখানে মূলত আগামী নির্বাচনের ব্যাপারে দেশের রাজনীতিতে যে উত্তাপ দেখা দিয়েছে তা নিয়েই আলোচনা হয়েছে বলে জানা গেছে। তবে আনিসুল হক গণমাধ্যমে বলেছেন, তাদের এ বৈঠকে মার্কিন রাষ্ট্রদূত মূলত শ্রম আইন নিয়ে আলোচনা করেছেন। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের শ্রম আইন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের একটি পরামর্শ ছিল। বৈঠকে সেসব বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। একটি সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) অনুষ্ঠানে যোগ দিতে এ মাসেই জেনেভা যাওয়ার কথা রয়েছে।
পরে বেলা ১টা ১০ মিনিটে মার্কিন দূতাবাসে প্রবেশ করেন বিএনপি মহাসচিব। এরপর বেলা আড়াইটার দিকে তিনি দূতাবাস থেকে বের হন। রাতে মির্জা ফখরুল দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠান সামনে রেখে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যে ভিসানীতি ঘোষণা করেছে তার ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এই নীতি দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে সহায়ক হবে আমরা মনে করি বলে রাষ্ট্রদূতকে জানিয়েছি।’ তিনি বলেন, ‘রাষ্ট্রদূতকে আমি জানিয়েছি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে ছাড়া আওয়ামী লীগের অধীনে দেশে নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হবে না। দেশের জনগণও তাই মনে করে। এ ছাড়া নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার নিয়ে রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে আমাদের কোনো আলাপ হয়নি।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সম্প্রতি আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক বলেছিলেন, “নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করার আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করবেন।” তার এমন বক্তব্য নিয়ে আলোচনার ঝড় উঠলে পরে গণমাধ্যমে বিবৃতি দেয় আইন মন্ত্রণালয়। এরপর গতকাল মঙ্গলবার সকালে সচিবালয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক এবং প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের সঙ্গে বৈঠক করেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাড়া কীভাবে নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করা যায়, তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। দেশের সংবিধানে কী আছে তা-ও জানতে চেয়েছেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত।’
আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন ঘিরে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সরকারের দূরত্ব প্রকাশ্যে চলে এসেছে। কোনো ধরনের রাখঢাক ছাড়াই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ সরকারের মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ নেতারা যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনা করছেন। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আরও বেশি দৌড়ঝাঁপ শুরু করছেন। ফলে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ক্ষমতাসীনদের দূরত্ব এখন স্পষ্ট। আলোচনা আছে, সরকারবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে পশ্চিমা এ দেশটি হঠাৎ আরও ঘনিষ্ঠ হতে শুরু করেছে।
জানা গেছে, সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে এতদিন যুক্তরাষ্ট্রের মতপার্থক্য ছিল না। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন প্রত্যাশা করছে দেশটি। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগও এ নিয়ে কোনো দ্বিমত করেনি। এরই মধ্যে, ভিসানীতি ঘোষণা করে সরকারকে বড় চাপ দেওয়ার পূর্বাভাস দেয় যুক্তরাষ্ট্র। বিষয়টি নিয়ে সরকারি দল আওয়ামী লীগ ও মাঠের বিরোধী দল বিএনপি একে অন্যকে ঘায়েল করার চেষ্টা করে। তবে ভিসানীতি যে সরকারের ও আওয়ামী লীগের ওপরই বেশি চাপ তৈরি করেছে, সেটা ভেতরে-বাইরে আলোচনা আছে।
আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায় ও কূটনীতি-সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্র দেশ রূপান্তরকে জানিয়েছে, বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র তাদের অবস্থান পাল্টে নির্বাচনের স্বার্থে প্রয়োজনে সংবিধানের বাইরে যেতে হবে সরকারকে এমন প্রস্তাব দিতে চলেছে। ওই সূত্রগুলো দাবি করেছে, গত মাসের শেষের দিকে অথবা চলতি সপ্তাহে বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাস আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের বাসভবনে তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। পিটার হাস ওই বৈঠকে রাজনৈতিক সমঝোতায় না আসলে সব দলের অংশগ্রহণে জাতীয় সরকারের আদলে একটা কিছু করার বিকল্প প্রস্তাব দিয়েছেন। তা না হলে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের স্বার্থে সংবিধানসম্মত করে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের পদক্ষেপ নেওয়ার প্রস্তাব করেন। এ প্রস্তাব সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানেও দেওয়া হয়েছে। আনিসুল হকের সঙ্গে শ্রম আইন নিয়েও দীর্ঘ আলাপ করেন এ রাষ্ট্রদূত।
আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকজন নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, পিটার হাসের ওই প্রস্তাব নিয়ে সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ে গেলে তাতে বড় আপত্তি তোলা হয়। শুধু তাই নয়, যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা পাওয়া যাবে না এটা ধরেই দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরুর বার্তা দেওয়া হয়েছে সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে। তারা স্বীকার করেন যে, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান ক্রমেই আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে চলে যাচ্ছে। তবে নির্বাচনে যুক্তরাষ্ট্রের অসহযোগিতা করবে ধরে নিয়েই সরকারি দল আওয়ামী লীগ প্রস্তুতি নিচ্ছে।
পিটার হাস সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের ও মাঠের বিরোধী দল বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে একান্তে বৈঠক করেছেন। গুরুত্বপূর্ণ ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গেও নির্ধারিত-অনির্ধারিত বৈঠক করা শুরু করেছেন। গত সোমবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ব্রিফিংয়ে পিটার হাসকে উদ্দেশ্য করে প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেছেন, রাষ্ট্রদূতরা সীমা লঙ্ঘন করলে আইনি ব্যবস্থা নেবে সরকার।
আগামী নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সক্রিয় হয়ে ওঠার প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে জানিয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, পিটার হাসের দৌড়ঝাঁপ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘নাহি ছাড়ি’ অবস্থান আওয়ামী লীগের বিভিন্ন স্তরে দুশ্চিন্তা তৈরি হয়েছে।
সরকারের দুই মন্ত্রীও দেশ রূপান্তরের কাছে স্বীকার করেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সরকারের বিপক্ষে যেতে শুরু করেছে। ‘অন্যায় হস্তক্ষেপ’ বেড়েছে পিটার হাসের।
আওয়ামী লীগের কূটনীতিসম্পৃক্ত এক নেতা বলেন, সরকার বিকল্প হিসেবে শক্তিশালী দেশের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নে কাজ করে চলেছে। বিকল্প দেশের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে উঠলে নির্বাচন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রকে মাইনাস করে চলার এক ধরনের কৌশল গ্রহণ করা হবে। এ কৌশলে নির্বাচন সম্পন্ন হয়ে গেলে যুক্তরাষ্ট্রর সঙ্গে সম্পর্ক ঝালাই করা হবে নতুন পরিকল্পনা অনুযায়ী।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর আরেক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, ভিসানীতি মূলত সরকারের বিভিন্ন ক্ষেত্রে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। অনেকেই ভিসানীতিকে সব গেল বলে ধরে নিয়ে অবস্থান টলমলে করে তুলতে চায়। এরকম অবস্থা আওয়ামী লীগকে একটু চিন্তায় ফেলে দিয়েছে। দলের নেতাকর্মীরা যেন সাহস হারিয়ে না ফেলে, সেজন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনা করার কৌশল গ্রহণ করেছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগ নেতাদের সমালোচনা নিয়ে গুঞ্জন শুরু হয়েছে। এমন কথা শোনা যাচ্ছে যে, আওয়ামী লীগ কি তাদের অবস্থান থেকে সরতে শুরু করবে? আবার প্রশ্নও আছে যে, নির্বাচন কি হবে? জাতীয় সরকার আসবে খুব শিগগিরই, এমন গুঞ্জনও রয়েছে জোরালোভাবে। শুধু তাই নয়, বাতিল হওয়া নির্বাচন পদ্ধতি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনেই আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে এমন গুঞ্জনও শুরু হয়েছে। যদিও এসবে কোনো ভিত্তি রয়েছে মনে করেন না আওয়ামী লীগ নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা। তারা দাবি করেন, সংবিধান অনুযায়ীই নির্বাচন হবে। এ ইস্যুতে কোনো শক্তির সঙ্গেই আপস করবেন না আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে দলটির সভাপতিম-লীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, কোনো দেশের চাওয়ায় বাংলাদেশে আগামী নির্বাচন হবে না। দেশের মানুষের চাওয়া অনুযায়ী সংবিধানসম্মতভাবে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন হবে। তিনি বলেন, সবার মতো করেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য করতে বদ্ধপরিকর।
কূটনীতিসম্পৃক্ত আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের আরেক নেতা বলেন, দৃশ্যত যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সরকারের সঙ্গে দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে মনে করা হলেও সেপ্টেম্বরের আগে পশ্চিমা এ দেশটি তার চূড়ান্ত অবস্থান পরিষ্কার করবে না বলে তারা মনে করছেন। ওই নেতা বলেন, সেপ্টেম্বরে ভারত সফর রয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। মূলত সেই সফরেই বোঝা যাবে সরকার কোনদিকে যাবে। এ নেতা আরও বলেন, ‘আমাদের ডিপ্লোম্যাসি (পররাষ্ট্রনীতি) পরস্পরের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের নীতি। কূটনীতিতে প্রধানমন্ত্রী দেশি-বিদেশি অনেক নেতাকে ছাড়িয়ে গেছেন। সেই আস্থা-বিশ্বাসও প্রধানমন্ত্রীর ওপর আমাদের রয়েছে।’
এতদিন যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান পরিষ্কার হয়ে না ওঠায় সরকার ও আওয়ামী লীগ নেতারা দাবি করতেন, দেশটিকে তারা বোঝাতে পেরেছেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে সমালোচনা প্রমাণ করে না যে, ক্ষমতাধর দেশটির সঙ্গে আওয়ামী লীগের বোঝাপড়া ঠিক আছে। যুক্তরাষ্ট্র ভিসানীতি ঘোষণার পরই দেশটির অবস্থান আওয়ামী লীগের পক্ষে আছে এমন কথা কেউ আর বিশ্বাস করছে না।
আওয়ামী লীগের একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, আমেরিকাকে মাইনাস ধরেই এগিয়ে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দলটির শীর্ষ পর্যায়ের দুই নেতা আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান আগের চেয়ে বেশি স্পষ্ট হয়ে ওঠায় রাজনীতিতে তারা ‘ব্যাকফুটে’ চলে যাচ্ছেন কি না, তা নিয়ে আলোচনা চলছে দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের মধ্যে।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমি একটাই বুঝি, একটাই জানি, আগামী নির্বাচন সংবিধানসম্মতভাবেই হবে। এ জায়গা থেকে একটুও নড়বে না সরকার।’