
জার্ড মুলার, ইয়ুর্গেন ক্লিন্সম্যান, মাইকেল বালাক, মিরোসøাভ ক্লোসা। ১৯৭০ থেকে বিশ্বকাপের জার্মানির গোলের সব প্রতিভু। ক্লোসা ১৬ গোল নিয়ে সর্বোচ্চ গোলদাতা টুর্নামেন্টের। মুলার করেছেন ১৪টি। ক্লিন্সম্যান ১১। ২০০২ বিশ্বকাপে ব্রাজিলের কাছে হেরে রানার্সআপ জার্মানরা ১৪টি গোল করেছিল। ১৮টি গোল করে ২০১৪ বিশ্বকাপ জিতেছিল তারা। সেমিফাইনালে এক ব্রাজিলকেই হারিয়ে দিয়েছিল ৭-১ গোলে।
অথচ সেই জার্মানি ২০১৮ থেকে ভুগছে গোলখরায়। সেবার মাত্র দুই গোল করে বিদায় নিয়েছিল গ্রুপ পর্ব থেকেই। এবারের বিশ্বকাপেও সেই খরা কাটিয়ে উঠতে পারেনি। প্রথম ম্যাচে গুনদোয়ানের গোলে এগিয়ে গেলেও হেরেছে জাপানের কাছে (২-১)। রবিবার স্পেনের সঙ্গে বাঁচামরার লড়াইয়ে স্পেনের বিপক্ষে পিছিয়ে পড়েছিল। তৃতীয় আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলতে নামা নিকোলাস ফুলক্রুগ ত্রাতা হয়ে গোল করেছেন। না হলে সে রাতেই মোটামুটি শেষ হয়ে যেত জার্মানদের এবারের বিশ্বকাপও। এই ফুলক্রুগ আবার একাদশের খেলোয়াড় নন। ১২০ ম্যাচে ৪৪ গোল করার টমাস মুলারকে ৭০ মিনিটে পাল্টে তাকে নামান কোচ হান্স ফ্লিক। মাঠে নামার ১৩ মিনিটের মাথায় লেরয় সানের পাস থেকে জামাল মুসিয়ালার পা ঘুরে বল দারুণ শটে জালে পাঠান ২৯ বছর বয়সী ফুলক্রুগ। ১২ মাস আগেও জার্মান দ্বিতীয় বিভাগের লিগে ঘুরে বেড়ানো ফুলক্রুগ অবশ্য দারুণ ফর্ম নিয়ে বিশ্বকাপ খেলতে এসেছেন। ওয়ের্ডার ব্রেমেনের ২৫ গোলের ১০টিই তার।
ফুলক্রুগের এই গোল চারবারের চ্যাম্পিয়নদের আশাটা জিইয়ে রেখেছে। শেষ ম্যাচে কোস্টারিকাকে হারালে রানার্সআপ হয়ে উঠতে পারবে শেষ ষোলোতে। সেক্ষেত্রে অবশ্য জাপানকে স্পেনের কাছে হারাতে হবে। যদি সে ম্যাচটি ড্রও হয়ে, তবু সুযোগ থাকবে জার্মানির। সে ক্ষেত্রে জাপান-জার্মানির পয়েন্ট হবে সমান, দেখা হবে গোল ব্যবধান। এই মুহূর্তে জাপানের গোল ২, খেয়েছে তারা ২টি। জার্মানি গোল করেছে ২টি, খেয়েছে ৩টি। আর জাপান যদি জার্মানির মতো চমকে দেয় স্পেনকেও, সেক্ষেত্রে কোস্টারিকাকে হারিয়েও লাভ হবে না। কারণ গোল ব্যবধানে স্পেন অনেক এগিয়ে (৮-১)।
কাজেই গোলটাই বড় হয়ে দেখা দিচ্ছে জার্মানির ক্ষেত্রে। গতবার মেক্সিকোর কাছে অপ্রত্যাশিত হারের (০-১) পর দ্বিতীয় ম্যাচে সুইডেনকে মার্কো রেউস আর টনি ক্রুসের দু’গোলে হারালেও দক্ষিণ কোরিয়ার কাছে হেরে (০-২) বিদায় নেয় প্রথম পর্ব থেকেই। ফুলক্রুগ অবশ্য আশায় আছেন শেষ ম্যাচে এবার ঠিক হয়ে যাবে সব, ‘আমাদের উন্নতির আরও জায়গা আছে। আশা করছি গ্রুপে শেষ ম্যাচে সব কিছু ঠিকমতো হবে।’ জার্মান কোচ হান্স ফ্লিক দাবি করেছেন দল সঠিক পথেই আছে। রক্ষণে আরও উন্নতির তাগিদ দিয়েছেন তিনি, ‘স্পেন দারুণ একটি দল। তাদের বেশ কিছু তরুণ খেলোয়াড় আছে। আমাদের ডিফেন্সে আরও উন্নতি করতে হবে। তবে গুরুত্বপূর্ণ হলো মানসিকতা।’
১ ডিসেম্বর রাতে শেষ ম্যাচে কোস্টারিকার বিপক্ষে জার্মানরা এই মানসিকতা কতটা রাখতে পারে, সেটাই দেখার। গোল করতে না পারলে এবারও প্রথম রাউন্ডেই শেষ হবে কাপ জয় আর ফাইনালে খেলার হিসাবে বিশ্বকাপের সবচেয়ে সফল দলকে।
বিশ্বকাপ গ্রুপ পর্বের ড্রয়ের পর সবার বাঁকা চোখ ছিল বি গ্রুপে। বিশ্ব রাজনীতির বড় শত্রু-মিত্ররা একই গ্রুপে যুক্তরাষ্ট্র, ইংল্যান্ডের সঙ্গে ‘বড় শত্রু’ ইরান। প্রথম পর্ব টপকে যাওয়ার লড়াইয়ে একে অপরকে পেছনে ফেলার প্রতিযোগিতায়। এই এগিয়ে যাওয়ায় যেমন রাজনৈতিক প্রতিশোধের তৃপ্তি থাকবে তেমনি খেলার মাঠে জয়ের আনন্দও থাকছে। এর আগে ইংল্যান্ড-ইরান খেলা হয়েছে। আজ সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক ম্যাচে মুখোমুখি হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইরান। লড়াইটা আবার হয়ে দাঁড়িয়েছে গ্রুপের অলিখিত ফাইনালও।
বিশ্ব রাজনীতিতে দুই রাষ্ট্রের বৈরিতার কথা সবার জানা। ১৯৮০ থেকে একে অপরের মুখ দেখাদেখি বন্ধ অবস্থা। তারাই মাঠের যুদ্ধে নামছে ভিন্ন তৃপ্তির আশায়। তৃপ্তিটা যুদ্ধ জয়ের মতোই। আজ একে অপরকে বিদায় করে দেওয়ার সুযোগ ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের সামনে। গ্রুপে ৩ পয়েন্ট নিয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে ইরান। যুক্তরাষ্ট্র ১ পয়েন্ট নিয়ে তিনে। ইরান জিতলে তাদের পয়েন্ট হবে ৬, যুক্তরাষ্ট্র জিতলে হবে ৫। আর ড্র হলেও ইরান এগিয়ে থাকবে ৪ পয়েন্ট নিয়ে। আজ তাদের শুধু হার এড়ালেই হয়।
গ্রুপের অপর ম্যাচে মুখোমুখি হচ্ছে ইংল্যান্ড ও ওয়েলস। পাশাপাশি দুই রাজ্যের ম্যাচ দেখে সম্প্রীতির হাওয়া বইছে এমন ভাবার সুযোগ নেই। ক্রিকেটে মিলিত হয়ে খেললেও ফুটবলে রাগবির মতোই দ্বৈরথ এ দুই দলের। রাগবিতে তাদের ম্যাচ মানেই উত্তেজনার। ঠিক তেমনি ফুটবলেও ছেড়ে কথা বলে না কেউ কাউকে। দুই দলের ফুটবলের ইতিহাসও পুরনো। সেই ১৮৭৯ সাল থেকে মোট ১০৩ ম্যাচ খেলেছে। এর মধ্যে অভিজ্ঞতার বিচারে অবশ্যই ইংল্যান্ডই জয়ের পাল্লায় এগিয়ে। তাদের ৬৮ জয়ের বিপরীতে ওয়েলসের জয় ১৪টি। আর বাকি ২১ ম্যাচ ড্র। ইংল্যান্ডকে আজ হারালেও ওয়েলসের খুব একটা লাভ নেই। তাদের সমান ৪ পয়েন্ট নিয়ে গোলগড়ে বাদ পড়বেন গ্যারেথ বেলরা। আর ইংল্যান্ড জিতলে সরাসরি দ্বিতীয় রাউন্ড। ফল ড্র হলে ইংল্যান্ডকে তাকিয়ে থাকতে হবে যুক্তরাষ্ট্র-ইরান ম্যাচের দিকে। তবে ইংল্যান্ডের দ্বিতীয় রাউন্ডে ওঠার সুযোগ বেশি।
ফিরে আসা যাক যুক্তরাষ্ট্র-ইরান ম্যাচে। বিশ্বকাপে দুই দলের দেখা এই প্রথম নয়। ১৯৯৮ সালে আরও একবার মাঠের যুদ্ধে নেমেছিল তারা। সেই যুদ্ধ তাতিয়ে দেন ইরানের তখনকার শীর্ষ নেতা আলি খামেনি। ইরান ফুটবলারদের প্রতি তার নির্দেশ ছিল ম্যাচপূর্ব করমর্দনের সময় যেন যুক্তরাষ্ট্র ফুটবলারদের সঙ্গে কথাও না বলেন! অবশ্য ইরান ফুটবলাররা এমনটা করেননি। বরং সম্প্রীতি ও বন্ধুত্বের প্রতীক সাদা গোলাপ উপহার দেন মাঠে। এরপর দুই দল মিলে তুলেছেন গ্রুপ ফটো। রাজনীতিকে মাঠে প্রবেশ করতে দেননি সেই ফুটবলাররা। ওই ম্যাচে ২-১ গোলে জিতেছিল ইরান।
এরপর একটি প্রীতি ম্যাচেও ইরানকে হারাতে পারেনি যুক্তরাষ্ট্র। মাঠের লড়াইয়ে রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীর সঙ্গে ওই ম্যাচে ১-১ গোলে ড্র করে তারা। ইরান তাই অজেয় থেকেই আজ মাঠে নামছে। তবে যুক্তরাষ্ট্রের কোচ গ্রেগ বেরহাল্টার নিশ্চিত আগের ফল এবার বদলাবে। রাজনৈতিক লড়াই ১৯৯৮ এর মতো এবারও পাশে থাকবে উল্লেখ করে বেরহাল্টার বলেন, ‘আমি ক্যারিয়ারে তিনটি ভিন্ন দেশে খেলেছি। সুইডেনে কোচিং করিয়েছি। ফুটবলে একটা মজার ব্যাপার হলো আপনি বিশ্বজুড়ে মানুষের সঙ্গে মিশবেন। নানা মত ও চিন্তা সম্পর্কে জানবেন ও তা আপন করে নেবেন। আর এই বিষয়টা হয় ফুটবলের জন্য। ফুটবল মানুষকে ভালোবাসতে শেখায়। কালকের (আজ) ম্যাচে যা হবে তা শুধুই ক্রীড়াভিত্তিক। দুই দলই দ্বিতীয় রাউন্ডে উঠতে চাইবে। এখানে রাজনৈতিক বা দুই দেশের বৈরী সম্পর্কের কিছুই আসবে না। আমরা দুই দলই ফুটবল খেলি এবং এই খেলার জন্যই প্রতিযোগিতায় নামব।’
বেরহাল্টারের জন্য স্বস্তির বিষয় ইংল্যান্ডের সঙ্গে ভালো খেলে ড্র। ওয়েলসের সঙ্গে পয়েন্ট হারালেও বড় দলের বিপক্ষে ড্রয়ে দ্বিতীয় রাউন্ডের স্বপ্ন এখনো টিকে আছে যুক্তরাষ্ট্রের। তবে ইরান এই ম্যাচে আত্মবিশ্বাসে এগিয়ে থাকবে। প্রথম ম্যাচে ইংল্যান্ডের কাছে ৬-২ গোলে হেরে দুঃস্বপ্নের শুরু হয় ইরানের। তবে ওয়েলসের সঙ্গে ততটাই স্বপ্নময় জয় এসেছে দলটির। ওই ২-০ গোলের জয়ে দ্বিতীয় রাউন্ডের পথে ভালোভাবে এগিয়ে ইরান। তাছাড়া বিশ্বকাপের সময় দেশ থেকেও উড়ে এসেছে সুখবর। প্রায় দুই মাস ধরে পুলিশি হেফাজতে মাশা আমিনি নামক এক তরুণীর মৃত্যুর প্রতিবাদে উত্তাল ছিল ইরান। মাথায় হিজাব না পরায় গ্রেপ্তার হয়েছিলেন আমিনি। ঠিক একই কারণে গ্রেপ্তার হওয়া ইরানের পুরস্কারজয়ী অভিনেত্রী হেনগামেহ ঘাজিনি ছাড়া পেয়েছেন সাজা থেকে। ইরানি প্রতিবাদীদের জন্য এ এক বিজয়। সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে মাঠের জয় সরকারবিরোধী আন্দোলনের মধ্যে স্বস্তি এনে দিতে পারে।
দেখতে দেখতে বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্ব চলে এসেছে শেষ অধ্যায়ে। প্রথম দুটো করে ম্যাচের পর বেশিরভাগ দলই স্পষ্ট বুঝতে পেরেছে নিজেদের অবস্থান। আজ থেকে শুরু তৃতীয় রাউন্ডের খেলা। একই সমান্তরালে হবে শেষ দুটো ম্যাচ, তাতে করে আগেভাগে অঙ্ক মিলিয়ে নামার সুযোগটা থাকছে না। ‘এ’ গ্রুপে আল বাইয়াত স্টেডিয়ামে স্বাগতিক কাতারের মুখোমুখি হবে নেদারল্যান্ডস। খলিফা ইন্টারন্যাশনাল স্টেডিয়ামে খেলবে সেনেগাল ও ইকুয়েডর। কাতারের দ্বিতীয় রাউন্ডে খেলার সম্ভাবনা শেষ, স্বাগতিকরা হেরেছে ইকুয়েডর ও সেনেগালের কাছে। নেদারল্যান্ডস সেনেগালের সঙ্গে জিতলেও ড্র করেছে ইকুয়েডরের সঙ্গে। শেষ রাউন্ডের ম্যাচে তাই তিন দলেরই সুযোগ আছে নকআউটে উঠতে পারার।
অপেক্ষাকৃত সহজ অবস্থানে নেদারল্যান্ডস, তাদের প্রতিপক্ষ কাতার। আসরের স্বাগতিকরা ফিফা র্যাংকিংয়ের ৫০তম অবস্থানে, এখনো কোনো ম্যাচ না জিততে পারা কাতারের বিপক্ষে নেদারল্যান্ডসেরই জেতার কথা। যদিও অঘটনের বিশ্বকাপে কোনো প্রতিপক্ষই নিরাপদ নয়। তবুও ফুটবল সামর্থ্য এগিয়ে রাখছে ডাচদেরই। কাতারের বিপক্ষে জিতলেই শেষ ষোলোয় পা রাখবে নেদারল্যান্ডস, ড্র করলেও তারা যেতে পারে পরের রাউন্ডে যদি ইকুয়েডর হারিয়ে দেয় সেনেগালকে।
ইকুয়েডরের জন্যও অংকটা সহজে মিলে যাবে সেনেগালকে হারাতে পারলে। ড্র করলেও তারা যেতে পারে পরের রাউন্ডে, এমনকি হেরে গেলেও তাদের সম্ভাবনা থাকবে যদি কাতার হারাতে পারে নেদারল্যান্ডসকে।
সেনেগালেরও অংকটা একই, তাদেরও জিততেই হবে সেনেগালের বিপক্ষে। ড্র করলেও তারা শেষ ষোলোয় যেতে পারবে, যদি কাতার হারাতে পারে নেদারল্যান্ডসকে। কাতারের কোনো সম্ভাবনাই নেই, প্রথম দুই ম্যাচে হেরে তারা আগেই ছিটকে গেছে।
বিশ্বকাপের বাছাই পর্বে ইউরোপিয়ান অঞ্চলে সবচেয়ে বেশি গোল করেছিলেন মেমফিস দিপেই। কিন্তু চোটের কারণে বার্সেলোনার এই ফরোয়ার্ডকে এখনো মাঠে নামাতে পারেননি কোচ লুই ফন গাল। ম্যাথিয়াস ডি লিখটের একটা হলুদ কার্ড আছে, আজ আরেকটা কার্ড দেখলে শেষ ষোলোর ম্যাচে খেলতে পারবেন না ডাচ সেন্টারব্যাক। জুরেন টিম্বার খুব সম্ভবত নিজের জায়গাটা ধরেই রাখবেন। ইকুয়েডরের বিপক্ষে ম্যাচের ৬ মিনিটেই কোডি গাকপো গোল করে ডাচদের এগিয়ে দেওয়ার পর অনেকেই ভেবেছিলেন ম্যাচটা সহজেই জিতবে নেদারল্যান্ডস। কিন্তু এনর ভ্যালেন্সিয়ার গোলে সমতা ফিরিয়ে নিজেদের বিশ্বকাপ স্বপ্ন টিকিয়ে রাখে ইকুয়েডর, সঙ্গে অপেক্ষায় রাখে অরেঞ্জদের।
২ গোল করে এখন পর্যন্ত ডাচদের সর্বোচ্চ গোলদাতা কোডি গাকপো। তবে পিএসভি আইন্দহোভেনের ২৩ বছর বয়সী এই উইঙ্গারের কাছ থেকেই শুধু নয়, নেদারল্যান্ডস চাইবে ফ্রাঙ্কি দি ইয়ংয়ের মতো তারকারাও যেন গোলের দেখা পান, কারণ এটাই সম্ভবত এবারের বিশ্বকাপের সহজতম ম্যাচ হতে যাচ্ছে। কাতারকে হারিয়ে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে পরের ধাপে উঠলে নেদারল্যান্ডসের সম্ভাব্য প্রতিপক্ষ হতে পারে ইরান বা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।
সেনেগাল-ইকুয়েডর ম্যাচটা হয়ে গেছে নকআউট। যে জিতবে সেই খেলবে পরের রাউন্ডে। সাদিও মানেকে হারিয়ে সেনেগাল বড় একটা ধাক্কাই খেয়েছে। ডাচদের বিপক্ষে তারা গোল পায়নি, তবে কাতারকে হারিয়েছে ৩-১ গোলে। ইকুয়েডর কাতারকে হারালেও ডাচদের কাছ থেকে ছিনিয়ে এনেছে ১ পয়েন্ট। শক্তিমত্তায় দুই দলই কাছাকাছি, ইকুয়েডরের ফিফা র্যাংকিং ৪৪ আর সেনেগালের ১৮। আফ্রিকান নেশনস কাপ জয়ী সেনেগালের মূল শক্তি ছিল সাদিও মানের মতো একজন উঁচুদরের ফরোয়ার্ড, কিন্তু মানে না থাকায় দুই দলেরই প্রায় সমান সম্ভাবনা।
কাতার বিশ্বকাপে গ্রুপ পর্বের তৃতীয় রাউন্ড শুরু হচ্ছে আজ থেকে। যে রাউন্ড শেষে প্রতি গ্রুপ থেকে দুটি করে দল থেকে যাবে, আর বিদায় নেবে দুটি করে দল। অর্থাৎ বিশ্বকাপ এখন ছোট হয়ে আসার পালা!
‘এ’ গ্রুপ ও ‘বি’ গ্রুপের দলগুলো মাঠে নামবে আজ। দুই গ্রুপ থেকে কোনো দলেরই পরের রাউন্ড নিশ্চিত হয়নি এখনো। তবে ‘এ’ গ্রুপে থাকা স্বাগতিক কাতারের বিদায় আগেই নিশ্চিত হয়েছে। আজ নেদারল্যান্ডস তাদের হারালে বা ড্র করলেই চলে যাবে পরের পর্বে। সেনেগাল ও ইকুয়েডরের মধ্যে দারুণ লড়াই হবে। যেহেতু দুই দলের সামনেই রয়েছে শেষ ষোলোর হাতছানি।
‘বি’ গ্রুপে ৪ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে থাকা ইংল্যান্ড খেলবে ওয়েলসের বিপক্ষে। আর ৩ পয়েন্ট নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে থাকা ইরানের প্রতিপক্ষ যুক্তরাষ্ট্র। এই ম্যাচটা খুব ঝাঁজালো হতে যাচ্ছে বলেই আমার মনে হয়। অন্যদিকে ওয়েলসের বিপক্ষে ইংলিশরাই ফেভারিট থাকবে।
নেদারল্যান্ডস ৩-৪-১-২ ফর্মেশনে খেলে থাকে। কাতার তাদের প্রথম দুই ম্যাচই খেলেছে ৫-৩-২ ফর্মেশনে। ইকুয়েডরের বিপক্ষে ২-০ ব্যবধানে হেরে আসর শুরু করে আয়োজক দেশটি। সেনেগালের বিপক্ষে পরের খেলায় তাদের মধ্যে কিছুটা পরিবর্তন দেখা গেছে। তবে সেটা যথেষ্ট ছিল না। তাই তো হেরে গেছে ৩-১ ব্যবধানে। নেদারল্যান্ডস পরিষ্কার ফেভারিট কাতারের বিপক্ষে। আমার মনে হয় সহজ ম্যাচ হবে ডাচদের জন্য। জেতাটা যদি তাদের হাই স্কোরিং হয়, তাহলেও অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।
সেনেগালের বিপক্ষে ২-০ ব্যবধানে জিতলেও বেশ ঘাম ঝরেছে নেদারল্যান্ডসের। এরপর ইকুয়েডরের বিপক্ষে ১-১ ড্র। ওদের রক্ষণ আসলে খুব শক্তিশালী। ভার্জিল ফন ডাইক, নাথান আকে, ডি লিখটরা আছে। ডালে ব্লিন্ড ও ডেনজেল ডামফ্রিস একটু ওপরে দুই পাশে থাকে। ব্লিন্ডের ডিফেন্ডিং খুব শক্তিশালী। ডামফ্রিসের আক্রমণ খুব শক্ত। ফ্রেংকি ডি ইয়ং পুরো মিডফিল্ড কাভার করে। সব মিলিয়ে বেশ ব্যালেন্সড একটা দল। তবে একটা জায়গায় ওরা পিছিয়ে আছে, সেটা হলোÑ গোল স্কোরিং। এই জায়গার ঘাটতি দ্রুত পূরণ করতে হবে। কারণ সামনে নকআউট পর্বে এটাই সবচেয়ে বেশি কাজে লাগবে।
সেনেগাল ও ইকুয়েডরের মধ্যকার ম্যাচটা খুব ইন্টারেস্টিং হবে। ইকুয়েডর তো প্রমাণ করেছে তারা সহজ প্রতিপক্ষ নয়। কাতারকে হারানোর পর নেদারল্যান্ডসের সঙ্গে ড্রয়েই সেটা প্রমাণ হয়ে গেছে। দারুণ কিছু খেলোয়াড় আছে ওদের। গুস্তাভো আলফারো কোচ হওয়ার পর অনেক উন্নতিও করেছে ওরা। সেনেগালের ৩ পয়েন্ট হওয়ায় ড্র করলে তাদের জন্য যথেষ্ট হবে না। তাই অলআউট খেলে যে কোনো মূল্যে জয় তুলে নিতে চাইবে ওরা। ওদের দলে সাদিও মানের অভাব স্পষ্টই দেখা যাচ্ছে। মানে থাকলে নেদারল্যান্ডসের সঙ্গে তাদের ম্যাচটা অন্য রকমও হতে পারত। শেষ পর্যন্ত যেখানে ২-০ তে হেরেছিল ওরা।
‘বি’ গ্রুপে ইংল্যান্ড ৪ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে। ইরান ৩ পয়েন্ট নিয়ে আছে পরের স্থানে। যুক্তরাষ্ট্র ও ওয়েলসের পয়েন্ট যথক্রামে ২ ও ১। ইংল্যান্ড যে ওয়েলসের বিপক্ষে এগিয়ে থাকবে এটা বলার অপেক্ষা রাখে না। ড্র হলেও ওয়েলসের কোনো কাজে আসবে না। ওয়েলস তাই অলআউটেই যাবে।
ইংল্যান্ড আবার যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে গত ম্যাচে খুব বেশি ভালো খেলেনি। ইরানের সঙ্গে ৬-২ ব্যবধানে জেতার পর যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ড্র করে। অনেকে এ ম্যাচে ইংলিশদের পারফরম্যান্সের সমালোচনা করছেন। ওয়েলস ম্যাচে তাই আগের চেহারায় আসার চেষ্টা করবে তারা। গ্যারেথ সাউথগেট দলে কিছুটা পরিবর্তনও আনতে পারে। ওয়েলস কোচ রব পেজের বিভিন্ন ফর্মেশনে দল সাজানোর সুযোগ আছে। বাছাই পর্বে আমরা সেটাই দেখেছি। শেষ পর্যন্ত ৩-৪-২-১ সে বাস্তবায়ন করছে। ইংল্যান্ডও এই ফর্মেশনে খেলতে পছন্দ করে। তবে এই ম্যাচে তারা কোন ফর্মেশনে মাঠে নামে সেটা দেখার বিষয় হবে।
ইরান ও যুক্তরাষ্ট্র ম্যাচটা খুব ভালো হবে। এমনিতেই দুই দেশের মধ্যে রাজনৈতিক টানাপড়েন আছে। আর এই ম্যাচে যখন তারা মাঠে নামছে দুই দলেরই সুযোগ দ্বিতীয় পর্বে যাওয়ার। ইরান খুব ভালো ডিফেন্ডিং সাইট। কাউন্টারেও বেশ ভালো। যুক্তরাষ্ট্র আবার খুব হাইপ্রেসিং করে খেলে। ইরান যেহেতু এক পয়েন্ট এগিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে, তাই ওরা হারতে চাইবে না। যুক্তরাষ্ট্র যেকোনো মূল্যে ম্যাচ বের করতে চাইবে। সব মিলিয়ে যুদ্ধের দামামা মাঠে থাকতেই পারে!
বিশ্বকাপ ফুটবল দামামার মাঝে ক্রিকেটে আরেক দামামা বাজিয়েছে ভারতের রুতুরাজ গায়কোয়াড় ১ ওভারে ৭ ছক্কা হাঁকিয়ে। ৫০ ওভারের টুর্নামেন্ট বিজয় হাজারে ট্রফিতে উত্তর প্রদেশের বাঁহাতি স্পিনার শিবার ১ ওভারে ৪৩ রান তুলে নেন ভারতের ৯ টি-টোয়েন্টি খেলা এই ব্যাটার। আহমেদাবাদে গতকাল কোয়ার্টার ফাইনালে ৪৯তম ওভার শুরুর আগে মহারাষ্ট্রের রান ছিল ৫ উইকেটে ২৭২ রান। উত্তর প্রদেশের বাঁহাতি স্পিনার শিবার সামনে ছিলেন মহারাষ্ট্র অধিনায়ক ও ওপেনার রুতুরাজ গায়কোয়াড়। ডানহাতি ব্যাটারের রান ছিল ১৪৭ বলে ১৬৫। রাউন্ড দ্য উইকেটে বল করা শিবার প্রথম ও দ্বিতীয় বল লং অন দিয়ে, তৃতীয়টি মিড উইকেট, চতুর্থটি আবার লং অন দিয়ে, পরের বলটি ছিল নো বল, সোজা সাইটস্ক্রিন বরাবর পাঠান রুতুরাজ, ফ্রি হিট থেকে ওয়াইড লংঅনে পাঠিয়ে ডাবল সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন গায়কোয়াড়। শেষ বলে ওভার দ্য উইকেটে আসেন শিবা, তবে ছক্কা আটকাতে পারেননি। সপ্তম ছক্কাটিও আসে ওয়াইড লং অন দিয়ে। শেষ পর্যন্ত তারা তোলে ৫ উইকেটে ৩৩০ রান, এর মধ্যে গায়কোয়াড় একাই করেন ১৫৯ বলে অপরাজিত ২২০ রান। ইনিংসে ১০টি চারের সঙ্গে তিনি মারেন ১৬টি ছক্কা।
শিবার আগে লিস্ট-এ ক্রিকেটে ১ ওভারে ৪৩ রান দিয়েছিলেন সেন্ট্রাল ডিস্ট্রিক্টের উইলেম লাডিক। সে ক্ষেত্রে অবশ্য ব্যাটসম্যান ছিলেন দুজন নর্দার্ন ডিস্ট্রিক্টের ব্রেট হ্যাম্পটন ও জো কার্টার। তার আগের রেকর্ডটি হয়েছিল ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে, ২০১৩-১৪ মৌসুমে। মিরপুরের শেরেবাংলা জাতীয় স্টেডিয়ামে আবাহনীর আলাউদ্দিন বাবুর ১ ওভারে উঠেছিল ৩৯ রান। ব্যাটসম্যান ছিলেন এল্টন চিগুম্বুরা।
অবিশ্বাস্য সুন্দর ও শ্বাসরুদ্ধকর অনুভূতি। কালকের প্রথম দুই ম্যাচ থেকে ফুটবল সমর্থকদের এটাই উপলব্ধি হওয়ার কথা। ছন্দপতন ও ফিরে আসার নাটকীয় দৃশ্যপট লিখে রোমাঞ্চ ছড়াল ক্যামেরুন-সার্বিয়া ও ঘানা-দক্ষিণ কোরিয়া ম্যাচ। মিনিটে-মিনিটে গোল হয়ে বিশ্বকাপের সত্যিকার মজা উপভোগের সুযোগ করে দিল ১১ গোলের দুটি ম্যাচ। ক্যামেরুন ও সার্বিয়া ৩-৩ গোলে ড্র হলেও কোরিয়ানরা অল্পের জন্য ঘানার কাছে হেরে গেল ৩-২ গোলে। তবে হার-জিত-ড্রয়ের বিষয়টি পাশে রেখে সবচেয়ে বড় কথা দুই ম্যাচই ছিল উপভোগ্য।
আফ্রিকান অদম্য সিংহ তারা। ছদ্মনামকে সত্যি করে অদম্য সিংহের মতোই ম্যাচে ফিরে এলো ক্যামেরুন। সার্বিয়ার হাতের মুঠোয় থাকা ৩ পয়েন্ট ছিনিয়ে নিয়েছে তারা। দারুণ রোমাঞ্চকর ম্যাচটি শেষ পর্যন্ত ৩-৩ গোলে ড্র হয়। অথচ প্রথম ঘণ্টা এই ক্যামেরুনকেই দমিয়ে দিয়েছিল সার্বিয়া। ৩-১ গোলে এগিয়ে থেকে ব্রাজিলের বিপক্ষে হার ভুলতে বসেছিল। কিন্তু ৩ মিনিটের মাথায় দুই গোল করে সার্বিয়ার জয়ের স্বপ্ন চুরমার করে ক্যামেরুন। জয়ের সমান ড্রতে এখন ১৯৯০ বিশ্বকাপের পর প্রথমবার দ্বিতীয় রাউন্ডে পা রাখার সুযোগ তৈরি করেছে অদম্য সিংহরা। প্রথম ম্যাচে সুইজারল্যান্ডের কাছে ১-০ তে হেরে বিপদেই ছিল ক্যামেরুন। দ্বিতীয় ম্যাচে সার্বিয়ার কাছে হার তাদের বিশ্বকাপ শেষ করে দিত। তা হতে দেননি ভিনসেন্ট আবুবকর ও এরিক চোপু-মোতিং। ২০১৪ থেকে ২০১৮ পর্যন্ত ইউরোপিয়ান ফুটবলের নিয়মিত নাম এ দুই ফুটবলার জ্বলে ওঠেন অভিজ্ঞতার ভারে। দুই কাউন্টার অ্যাটাকে ম্যাচ নিজেদের করে দেন। ৬৩ মিনিটে মধ্যমাঠ থেকে কাস্তেলেত্তো বল বাড়ান আবুবকরের দিকে। বল নিয়ে একাই এগিয়ে ডি বক্সে সার্বিয়ান গোলরক্ষকের মাথার ওপর দিয়ে বল পোস্টে পাঠান। তবে গোলটি অফসাইডের শঙ্কায় ভিএআরে চেক করেন রেফারি। এরপর গোলের বাঁশি বাজান। তার তিন মিনিট পর আর একটি কাউন্টার অ্যাটাকে ক্যামেরুনের হয়ে এগিয়ে যান আবুবকর ও চোপু-মোতিং। অনেকটা ফাঁকায় থাকা সার্বিয়ান ডিফেন্সে ঢুকে মোতিংকে বল পাস দেন আবুবকর। জোরালো শটে গোল করে মোতিং ম্যাচে সমতা আনেন। এর আগে ২৯ মিনিটে কাস্তেলেত্তো ক্যামেরুনের হয়ে প্রথম গোল করেন।
অথচ আগে গোল করেও ম্যাচে হারিয়েই গিয়েছিল ক্যামেরুন। প্রথমার্ধের প্রথম ও তৃতীয় মিনিটে পাভলোভিচ, মিলিনকোভিচ-সাভিচের গোলে ২-১ এ পিছিয়ে পড়ে তারা। বিরতির পর ৫৩ মিনিটে মিত্রোভিচের গোল দলটিকে আরও বিপদে ফেলে। ওই অবস্থা থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর গল্প লিখে ক্যামেরুন। আর এর অনুপ্রেরণা তারা নিয়েছে মরক্কো থেকে। আগের দিন বেলজিয়ামকে ২-০ তে হারিয়ে দেওয়া দলের কথা বলে আবুবকর ম্যাচ শেষে জানান, ‘আমি মরক্কোর ম্যাচটা দেখেছি। ওরা জয়ের জন্য দারুণ স্পৃহা দেখায়। এই বার্তাটাই আমি সতীর্থদের দিয়েছি। ওদের মতো আমাদেরও সেই ইচ্ছা, স্পৃহা দেখাতে হবে। আমরা কিছু ভুল করেছি কিন্তু হাল ছেড়ে দিইনি।’ আবুবকরের কথা বদলে দিয়েছে ক্যামেরুনকে। ম্যাচের ফলই তার প্রমাণ। তিনি নিজেও তো উঠে গেছেন ইতিহাসে। আফ্রিকান প্রথম ফুটবলার হিসেবে বদলি নেমে গোল ও অ্যাসিস্ট করেছেন এক ম্যাচে। নিজেকে মোহামেদ সালাহর মতো মনে করা আবুবকর বলেন, ‘সালাহ আমাকে মুগ্ধ করে না। সে যা করে আমিও তা করতে পারি। ব্যাপারটা হলো আমি ওর মতো ইউরোপের সেরা ক্লাবে খেলতে পারিনি।’
দিনের দ্বিতীয় ম্যাচে দারুণ প্রেসিং ফুটবল খেলেও ভাগ্যের সঙ্গে পেরে ওঠেনি কোরিয়া। প্রথমার্ধেই ২৪ মিনিটে সালিসু ও ৩৪ মিনিটে তুদোসের গোলে পিছিয়ে যায় এশিয়ান টাইগাররা। দ্বিতীয়ার্ধে চার মিনিটে চো গে-সুংয়ের জোড়া গোলে সমতায় ফেরে কোরিয়া। কিন্তু ৭ মিনিটের ব্যবধানে কুদোসের দ্বিতীয় গোল দক্ষিণ কোরিয়ার স্বপ্ন ভঙ্গ করে। ম্যাচের শেষ ১৫ মিনিট পুরোটা সময় ঘানাকে তাদের ডি বক্সে কোণঠাসা করেও শেষরক্ষা হয়নি দলটির। এই জয়ে ৩ পয়েন্ট নিয়ে এইচ গ্রুপে দ্বিতীয় হয়েছে পর্তুগালের কাছে প্রথম ম্যাচ হারা ঘানা। উরুগুয়ের সঙ্গে প্রথম ম্যাচে ড্র করা কোরিয়া মাত্র ১ পয়েন্ট নিয়ে তালিকার শেষে।
ঢাকাসহ সারা দেশে তীব্র দাবদাহ চলছে। দফায় দফায় বিদ্যুৎ থাকছে না বাসা-বাড়ি, অফিস আদালত ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ সর্বত্র। এ নিয়ে চলছে আলোচনা-সমালোচনা। বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনার ঝড় বইছে।
বিদ্যুৎ সমস্যা নিয়ে একটি মহল পরিস্থিতি ঘোলা করার চেষ্টায় আছে বলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাদের কাছে তথ্য এসেছে। আর ওই তথ্য পেয়ে পুলিশ সদর দপ্তর নড়েচড়ে বসেছে। পুলিশের মহাপরিদর্শকসহ শীর্ষ কর্তারা বৈঠক করেছেন। যেকোনো পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সোমবার পুলিশের সব রেঞ্জ অফিস ও ইউনিট প্রধানদের কাছে বিশেষ নির্দেশনা পাঠিয়েছে পুলিশ সদর দপ্তর।
বিশেষ বার্তা পেয়ে ইউনিট প্রধান, রেঞ্জ ডিআইজি ও ৬৪ জেলার পুলিশ সুপাররা আলাদাভাবে বৈঠক করেছেন। বিদ্যুৎ সমস্যার সমাধান না হওয়া পর্যন্ত কঠোর নিরাপত্তা দিতে বলা হয়েছে। এ বিষয়ে ইতিমধ্যে কাজও শুরু করে দিয়েছে পুলিশ।
জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, বিদ্যুতের সমস্যা দ্রুত সমাধান করতে সরকার নানাভাবে চেষ্টা করছে। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে সমস্যার সমাধান হবে বলে আশা করছি। এরই মধ্যে যেকোনো পরিস্থিতি এড়াতে আমরা সতর্ক আছি। বিদ্যুৎ স্টেশনগুলো নিরাপত্তার আওতায় আনা হচ্ছে। এই জন্য আমরা আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
পুলিশ সদর দপ্তরের এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, সোমবার পুলিশ সদর দপ্তর থেকে পুলিশের সব ইউনিট, রেঞ্জ ডিআইজি ও পুলিশ সুপারদের কাছে বিদ্যুৎ স্টেশনে নিরাপত্তা দেওয়ার পাশাপাশি নজরদারি বাড়াতে চিঠি পাঠানো হয়েছে। একটি মহল লোডশেডিংয়ের অজুহাতে দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করতে চাচ্ছে বলে আমরা তথ্য পেয়েছি। যেসব এলাকায় বেশি বিদ্যুৎ আসা-যাওয়া করছে তারও একটি তালিকা তৈরি করা হয়েছে।
কয়েকটি জেলার পুলিশ সুপার দেশ রূপান্তরকে জানিয়েছেন, পুলিশ সদর দপ্তরের চিঠি পাওয়ার পর আমরা বিশেষ বৈঠক করছি। এলাকায় বিদ্যুৎ আসা-যাওয়া করছে তা সত্য। এ জন্য আমরা বেশ সতর্ক আছি। বিদ্যুৎ অফিস ও স্টেশনগুলোর বিষয়ে থানার ওসিদের দিক-নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা দেশ রূপান্তরকে বলেন, লোডশেডিংয়ের অজুহাত তুলে বড় ধরনের হামলা চালাতে পারে একটি বিশেষ মহল। প্রতিটি বিদ্যুৎকেন্দ্রে বাড়তি পুলিশের পাশাপাশি গোয়েন্দা নজরদারি রাখার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়। একই সঙ্গে থানার ওসিদের নানা দিকনির্দেশনা দিচ্ছেন জেলার পুলিশ সুপাররা। এমনকি বাড়তি ফোর্সও প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
তা ছাড়া রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোও নজরদারির আওতায় আনা হয়েছে।
বিদ্যুৎ অফিসের পাশাপাশি ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় কঠোর নিরাপত্তার বলয় গড়ে তুলতে ৫০ থানার ওসিদের বিশেষ নির্দেশনা দিয়েছেন ডিএমপি কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক।
খন্দকার গোলাম ফারুক দেশ রূপান্তরকে জানান, বিদ্যুৎ সমস্যা নিয়ে যাতে কেউ অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি তৈরি করতে না পারে সে জন্য আমরা সতর্ক আছি। বিদ্যুৎ স্টেশনগুলোর পাশাপাশি রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলো বাড়তি নিরাপত্তার আওতায় আনা হয়েছে। ইতিমধ্যে সবাইকে সেই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, বিদ্যুৎসহ যেকোনো সমস্যা নিয়ে কোন মহল যাতে কোন ধরনের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে না পারে সে জন্য বিশেষ নজরদারি করা হচ্ছে। আশা করি বড় ধরনের কোন ঘটনা ঘটবে না। তারপরও পুলিশ সতর্ক আছে।
সূত্র জানায়, লোডশেডিংকে পুঁজি করে কেউ যাতে অপ্রীতিকর কোনো পরিস্থিতি সৃষ্টির সুযোগ নিতে না পারে, সে বিষয়ে নজর রাখতে বলা হয়েছে। নির্দেশনার পর সারা দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদনকেন্দ্র, বিদ্যুৎ অফিস, সাবস্টেশনসহ কেপিআই স্থাপনায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা আগের চেয়ে বৃদ্ধি করা হয়েছে। গোয়েন্দা কার্যক্রম ও পুলিশি টহল বাড়ানো হয়েছে। বিদ্যুৎ বিতরণের দায়িত্বে থাকা সমিতি বা কোম্পানিগুলোর পক্ষ থেকেও পুলিশকে চিঠি দিয়ে বাড়তি নিরাপত্তাও চাওয়া হয়েছে।
অবশেষে বন্ধ হয়ে গেল দেশের সর্ববৃহৎ পটুয়াখালীর পায়রায় ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন। গতকাল সোমবার দুপুরে কেন্দ্রটির দ্বিতীয় ইউনিটের বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। কয়লা সংকটে গত ২৫ মে বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির প্রথম ইউনিট বন্ধ হয়। ২০২০ সালে বাণিজ্যিকভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন করার পর এবারই প্রথম কয়লা সংকটে প্রতিষ্ঠানটির উৎপাদন বন্ধ হলো।
চীন ও বাংলাদেশের যৌথ বিনিয়োগের এই বিদ্যুৎ প্রতিষ্ঠানটিকে কয়লা ক্রয়ে ঋণ দিয়ে আসছে চায়না ন্যাশনাল মেশিনারি ইমপোর্ট অ্যান্ড এক্সপোর্ট কোম্পানি (সিএমসি)। এপ্রিল পর্যন্ত কয়লার ৩৯০ মিলিয়ন ডলার বকেয়া বিল পরিশোধ না করায় কয়লা সরবরাহ বন্ধ করে দেয় সিএমসি। পরে ১০০ মিলিয়ন ডলার পরিশোধ করা হলে কয়লা আমদানির এলসি খোলার শর্ত দেয় চীনা প্রতিষ্ঠান। গতকাল পর্যন্ত ৯৮ মিলিয়ন ডলার পরিশোধ করা হয়েছে। এ মাসের শেষদিকে কয়লা দেশে আসার কথা রয়েছে।
কয়লার অভাবে দেশের সবচেয়ে বড় এবং নির্ভরযোগ্য বিদ্যুৎকেন্দ্রটি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় লোডশেডিংয়ের মাত্রা বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি এক মাসে লোকসান হবে অন্তত ৩০০ কোটি টাকা। আর্থিক ক্ষতির পাশাপাশি লোডশেডিংয়ের কারণে জনদুর্ভোগ ও কারখানার উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার বিষয়টি বিবেচনায় নিলে পুরো ক্ষতির পরিমাণ আরও বেশি।
এদিকে উৎপাদিত বিদ্যুতের দামের বাইরে শুধু কয়লাবাবদ পিডিবির কাছে কেন্দ্রটির বকেয়ার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩০০ মিলিয়ন ডলার। ছয় মাসেরও বেশি সময় ধরে থাকা এ বকেয়ার টাকা পরিশোধের জন্য দফায় দফায় চিঠি দিয়েও তা পরিশোধ করা হয়নি। অভিযোগ উঠেছে, আন্তঃমন্ত্রণালয়ের সমন্বয়হীনতা এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের অবহেলার কারণেই কেন্দ্রটি বন্ধ হয়ে গেছে। যদিও সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলো নিজেদের দায় অস্বীকার করে বলছে, বৈশি^ক মন্দার পরিস্থিতিতে ডলার সংকটের কারণেই এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
চুক্তি অনুযায়ী, উৎপাদিত বিদ্যুতের দামের পাশাপাশি কেন্দ্রভাড়া বাবদ প্রতি মাসে পিডিবিকে ২৪৭ কোটি টাকা দিতে হবে। এখন বিদ্যুৎ উৎপাদন না করলেও নির্ধারিত কেন্দ্রভাড়া পরিশোধ করতে হবে পিডিবিকে। সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, পিডিবির চাহিদা অনুযায়ী নিরবচ্ছিন্নভাবে গড়ে প্রতিদিন ১ হাজার ২৪৪ মেগাওয়াট করে প্রায় তিন কোটি ইউনিট বিদ্যুৎ সরবরাহ করে আসছিল কেন্দ্রটি। প্রতি মাসে এর পরিমাণ ছিল ৯০ কোটি ইউনিট। গড়ে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের বিক্রয়মূল্য ছিল ৫ টাকা ৩০ পয়সা থেকে ৬ টাকার মতো।
প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ বিক্রি করে প্রতিষ্ঠানটির নিট মুনাফার প্রকৃত জানা না গেলেও নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে জানান, সব ধরনের ব্যয় বাদ দিয়ে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতে তাদের নিট মুনাফা হতো ৫ থেকে ৬ শতাংশ। প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের গড়মূল্য সাড়ে ৫ টাকা এবং মুনাফা সাড়ে ৫ শতাংশ বিবেচনায় নিয়ে প্রতিষ্ঠানটির এক মাসে মুনাফার পরিমাণ প্রায় ৩০ কোটি টাকা। কেন্দ্রটি বন্ধ থাকায় এ মুনাফা থেকে বঞ্চিত হবে বিসিপিসিএল। এদিকে কয়লা কেনার জন্য সাড়ে ৬ শতাংশ সুদে ঋণ নেয় প্রতিষ্ঠানটি। গত ছয় মাসের বেশি সময় কয়লার বিল বকেয়া থাকায় সুদের পরিমাণও বেড়ে যাবে। বাড়তি এ সুদের অর্থ বিসিপিসিএলকেই পরিশোধ করতে হবে।
বর্তমানে বিভিন্ন কেন্দ্র থেকে পিডিবির বিদ্যুৎ ক্রয়ের প্রতি ইউনিটের গড়মূল্য প্রায় ১১ টাকা ৫০ পয়সা। যদিও পিডিবি এ বিদ্যুৎ লোকসান দিয়ে বিতরণ কোম্পানির কাছে বিক্রি করছে ৮ টাকা ১০ পয়সায়। পায়রা থেকে এক মাস বিদ্যুৎ কিনতে না পারলে পিডিবির লোকসান আরও বাড়বে।
সূত্রমতে, কয়লা দেশে পৌঁছানো এবং কেন্দ্র চালু করতে সব মিলে অন্তত এক মাসের মতো সময় লাগবে। কোনো কারণে যদি কয়লা আসতে আরও দেরি হয়, তাহলে ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়বে।
বিসিপিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী এএম খোরশেদুল আলম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রটি বিশে^র সেরা কেন্দ্রগুলোর মধ্যে অন্যতম। এক সুইচে চালু করার পর নিরবচ্ছিন্নভাবে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হলেও বৈশি^ক কারণে ডলার সংকটে বন্ধ হয়ে গেছে। এটা আমাদের জন্য খুবই কষ্টদায়ক। তবে এ সময়ে আমরা বসে না থেকে কেন্দ্রের মেইনটেনেন্সের কাজটি করে ফেলব, যাতে দীর্ঘদিন আর মেইনটেনেন্স করা না লাগে।’
কেন্দ্রটি বন্ধের ফলে কী পরিমাণ আর্থিক ক্ষতি হবে তা জানতে চাইলে প্ল্যান্ট ম্যানেজার শাহ আবদুল মওলা দেশ রূপান্তরকে বলেন ‘আমরা এমনিতেই বকেয়া বিল পাচ্ছি না। এটাই বড় ক্ষতি। অন্যান্য ক্ষতির পাশাপাশি কেন্দ্রটি বন্ধের কারণে সাশ্রয়ী দামে দেশের মানুষ বিদ্যুৎ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হবে। এ কেন্দ্র থেকে প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ সাড়ে ৫ থেকে ৬ টাকা দরে বিক্রি করা হচ্ছে। সাশ্রয়ী দামে বিদ্যুৎ দিতে না পেরে কমফোর্ড ফিল করছি না।’
জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. ইজাজ হোসেন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘কেন্দ্র ভাড়ার পাশাপাশি লোডশেডিংয়ে মানুষের ভোগান্তি এবং কারখানার উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার বিষয়টি বিবেচনায় নিলেও এ ক্ষতির পরিমাণ অপূরণীয়। আর লোডশেডিং না দিয়ে সরকার যদি বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে চায়, তাহলে তেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র চালানো ছাড়া কোনো উপায় নেই এই মুহূর্তে। সে ক্ষেত্রে প্রতি ইউনিটে ৪ টাকার ওপর লোকসান হবে।’ তিনি বলেন, ‘ডলার ছাড় ঠিকই হচ্ছে। কিন্তু কেন্দ্রটি বন্ধ হওয়ার আগেই ডলার ছাড় করা উচিত ছিল। এতে বিরাট ক্ষতি হলো। এ ক্ষেত্রে দুটো বিষয় হতে পারে। একটি হলো যারা ডলার ছাড় করছেন তারা বিদ্যুৎ খাতের গুরুত্ব বুঝতে পারছেন না অথবা দেশের পরিস্থিতি আসলেই ভয়াবহ। তবে দেশের উন্নয়নে বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতকে অবশ্যই প্রাধান্য দেওয়া উচিত।’
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র জাকির হোসেন চৌধুরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রের ডলার ব্যবস্থা করার দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের। আর বাংলাদেশ ব্যাংককে রিজার্ভ থেকে ডলার দেওয়া হয় ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা মেনে। এ ক্ষেত্রে খাতের গুরুত্ব বুঝে ডলার ছাড় করা হয়। তবে দেশের প্রয়োজনে ডলার ছাড় করার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের কোনো ধরনের গাফিলতি নেই।’
মূল্যস্ফীতি নিয়ে অস্বস্তিতে ছিল বিশ্বের প্রায় সব দেশই। অধিকাংশ দেশই তাদের মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে এসেছে। প্রতিবেশী ভারত ও শ্রীলঙ্কার নিয়ন্ত্রণহীন মূল্যস্ফীতির কথা প্রায় সবারই জানা, তারাও ইতিমধ্যে তাদের মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের মধ্যে নিয়ে এসেছে। তবে ব্যতিক্রম শুধু বাংলাদেশ। কোনোভাবেই নিত্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে আনতে পারছে না সরকার। ফলাফল ভোক্তা মূল্যসূচকে (সিপিআই) বা মূল্যস্ফীতিতে ১২ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ রেকর্ড। মে মাসে মূল্যস্ফীতি বেড়ে ৯ দশমিক ৯৪ শতাংশ। গতকাল সোমবার বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) সিপিআই ইনডেক্সে এ হালনাগাদ তথ্য প্রকাশ করে।
গত ১ জুন ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট ঘোষণা করে সরকার। এ বাজেটের মূল কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল আগামী অর্থবছরে সরকার কীভাবে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করবে। কিন্তু মূল্যস্ফীতি কমানোর জন্য বাজেট প্রস্তাবে কোনো পদক্ষেপ না থাকলেও লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৬ শতাংশের মধ্যে রাখার। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি পরাবাস্তব বাজেট। মূল্যস্ফীতি ৬ শতাংশের মধ্যে রাখা আসলে সম্ভব নয়। গত ১১ মাসে দেশের গড় মূল্যস্ফীতি ৮ দশমিক ৮৪ শতাংশ।
হালনাগাদ তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, মে মাসে মূল্যস্ফীতি বেড়ে ৯ দশমিক ৯৪ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। এর আগে ২০১১ সালের মে মাসে সর্বোচ্চ মূল্যস্ফীতি ছিল ১০ দশমিক ২০ শতাংশ। সে হিসাবে মূল্যস্ফীতি ১২ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। যদিও চলতি অর্থবছরের ১১ মাসে গড় মূল্যস্ফীতি প্রায় ৯ শতাংশ।
মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়ার অর্থ হলো, আগের বছরের মে মাসে যে পণ্য গড়ে ১০০ টাকা কিনতে হয়েছে, এ বছরের মে মাসে তা কিনতে হচ্ছে গড়ে ১০৯ টাকা ৯৪ পয়সায়। আরও পরিষ্কারভাবে বললে, ধরুন আগের বছরের একই সময়ে ৫০০ টাকার একটি নোটে কোনো ব্যক্তি পাঁচটি পণ্য কিনতে পেরেছিলেন। এ বছরের একই সময়ে মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়ায় এখন একই টাকায় তিনটি পণ্য কিনতে পারছেন। অর্থাৎ মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়ায় মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমে যায়।
খাদ্যে মূল্যস্ফীতি ১ বছরে বেড়েছে ১১.৩২ শতাংশ : ২০২২ সালের মে মাসে খাদ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৮ দশমিক ৩০ শতাংশ, অথচ এ বছরের মে মাসে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক ২৪ শতাংশে। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে মূল্যস্ফীতির হার বেড়েছে ১১ দশমিক ৩২ শতাংশ। এ বছরের এপ্রিল মাসেও খাদ্যে মূল্যস্ফীতি ছিল ৮ দশমিক ০৪ শতাংশ।
খাদ্যবহির্ভূত পণ্যে এক বছরে মূল্যস্ফীতি বেড়েছে ৬৪ শতাংশ : বিবিএসের তথ্য বলছে, সদ্য শেষ হওয়া মে মাসে খাদ্যবহির্ভূত পণ্যের মূল্যস্ফীতি বেড়ে ৯ দশমিক ৯৬ শতাংশ হয়েছে। ২০২২ সালের মে মাসে খাদ্যবহির্ভূত পণ্যের মূল্যস্ফীতি ছিল ৬ দশমিক ০৮ শতাংশ। অর্থাৎ বছরের ব্যবধানে খাদ্যবহির্ভূত পণ্যের মূল্যস্ফীতি বেড়েছে ৬৩ দশমিক ৮২ শতাংশ বা ৬৪ শতাংশ।
গ্রামের চেয়ে শহরের মূল্যস্ফীতি বেশি : এক বছর আগেও শহরের মূল্যস্ফীতি গ্রামের চেয়ে কম ছিল। কারণ গ্রামের চেয়ে শহরে পণ্য মজুদের আধুনিক ব্যবস্থা আছে। তবে সরকারি উদ্যোগে শহরের মতো গ্রামেও কিছু স্থানে খাদ্যগুদামের ব্যবস্থা তৈরি হওয়ায় এখন শহরের তুলনায় গ্রামে মূল্যস্ফীতি কমেছে। মে মাসে শহর এলাকায় গড় মূল্যস্ফীতি ছিল ৯ দশমিক ৯৭ শতাংশ, একই সময়ে গ্রামে মূল্যস্ফীতি ৯ দশমিক ৮৫ শতাংশ।
বিশ্বে কমেছে মূল্যস্ফীতি, বাংলাদেশে বাড়ছে : গত শনিবার মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্সের (এমসিসিআই) বাজেট-পরবর্তী আলোচনায় বিশ্বব্যাংকের সাবেক অর্থনীতিবিদ ও পলিসি রিসার্স ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) ভাইস চেয়ারম্যান সাদিক আহমেদ মূল্যস্ফীতি ইস্যুতে বলেন, বিশ্বের প্রায় সব দেশ সফলভাবে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে এনেছে। শুধু বাংলাদেশ এ ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম। উদাহরণ হিসেবে তিনি উল্লেখ করেন, থাইল্যান্ডে ২০২২ সালের জুনে মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৭ দশমিক ৭ শতাংশ, গত এপ্রিলে তা নেমে এসেছে ২ দশমিক ৭ শতাংশে। অর্থাৎ আগের তুলনায় দেশটিতে মূল্যস্ফীতি কমেছে ৬৫ শতাংশ। যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশে ২০২২ সালের জুনে মূল্যস্ফীতি ছিল ৯ দশমিক ১ শতাংশ। সেখান থেকে ৪৬ শতাংশ মূল্যস্ফীতি কমিয়ে ৪ দশমিক ৯ শতাংশে আনতে সক্ষম হয়েছে তারা। ইউরোপীয় ইউনিয়নের গত অক্টোবর মাসের মূল্যস্ফীতি ছিল ১০ দশমিক ৬ শতাংশ, সেখান থেকে ৩৪ শতাংশ কমিয়ে ৭ শতাংশে আনতে সক্ষম হয়েছে ইইউ।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে নীতি সুদহার বাড়িয়ে দিয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের জন্য নীতি সুদহার বাড়িয়ে দেয়। তবে বাংলাদেশ এ ধরনের সংকট মোকাবিলায় শুরুর দিকে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। উল্টো গত বছর আগস্টে এক ঘোষণাতেই জ্বালানি তেলের দাম ৫১ শতাংশ বাড়ানো হয়। ওই মাসেই মূল্যস্ফীতি বেড়ে ৯ দশমিক ৫২ শতাংশে দাঁড়িয়েছিল। বাংলাদেশ দেরিতে হলেও নীতি সুদহার বাড়িয়েছে। বর্তমানে এ সুদহার ৬ দশমিক ২ শতাংশ। তবে নীতি সুদহার বাড়িয়েও মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়েছে সরকার।
মূল্যস্ফীতি নিয়ে আভাস দিয়ে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল দাবি করেছে, বিশে^র দেশে দেশে মূল্যস্ফীতির যে হার, তা সামষ্টিক অর্থনীতির জন্য হুমকি। মূল্যস্ফীতির এই হার ১২ বছর বা এক যুগের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় ২০০৭-০৮ সালে বিশ্ববাজারে সব ধরনের পণ্যের দাম বাড়ায় মূল্যস্ফীতি বাড়তে বাড়তে ১৪ শতাংশ ছাড়িয়ে গিয়েছিল।
২০০৯ সালের প্রথম দিকে আওয়ামী লীগ সরকার যখন দায়িত্ব নেয়, তখনো মূল্যস্ফীতি ১০ শতাংশের ওপর ছিল। পরে অবশ্য তা কমতে কমতে সহনীয় পর্যায়ে নেমে আসে। দীর্ঘদিন ৫ থেকে ৬ শতাংশের মধ্যে ওঠানামা করেছে।
৩০ জুন শেষ হতে যাওয়া ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে সার্বিক মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৭ দশমিক ৪৮ শতাংশ। ঠিক এরকম এক সময়ে গত বছর ৫ আগস্ট সরকার জ্বালানি তেলের দাম ৪২ থেকে ৫১ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ায়। এর পরপরই বাড়ানো হয় সব ধরনের পরিবহন ভাড়া। এ দুইয়ের প্রভাবে বেড়ে যায় প্রায় সব পণ্যের দাম। ফলে পরের মাস আগস্টে মূল্যস্ফীতি এক লাফে বেড়ে ৯ দশমিক ৫২ শতাংশে ওঠে।
যদিও সেপ্টেম্বর থেকে তা কমতে থাকে। ওই মাসে মূল্যস্ফীতি কমে ৯ দশমিক ১০ শতাংশে আসে। জানুয়ারিতে তা আরও কমে ৮ দশমিক ৫৭ শতাংশে নেমে আসে। তবে রোজাকে সামনে রেখে নিত্যপণ্যের দাম বাড়তে থাকায় বাড়তে থাকে মূল্যস্ফীতি। ফেব্রুয়ারি মাসে তা বেড়ে হয় ৮ দশমিক ৭৮ শতাংশ। মার্চ মাসে হয় ৯ দশমিক ৩৩ শতাংশ। এপ্রিলে তা সামান্য কমে ৯ দশমিক ২৪ শতাংশে নেমে এসেছিল।
মজুরি সূচক বেড়েছে : বিবিএসের তথ্য বলছে, গত কয়েক মাস ধরেই মজুরি সূচক অল্প অল্প করে বাড়ছে। অক্টোবরে এ হার ছিল ৬ দশমিক ৯১ শতাংশ। যা মে মাসে এসে দাঁড়ায় ৭ দশমিক ৩২ শতাংশে।
দেশের একমাত্র পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্র রাঙামাটির কাপ্তাইয়ে হাইড্রোলিক পাওয়ার স্টেশনে তীব্র পানির সংকটে বিদ্যুৎ উৎপাদন সর্বনিম্ন পর্যায়ে পৌঁছেছে। অনাবৃষ্টি এবং তীব্র তাপদাহে কাপ্তাই হ্রদের পানি শুকিয়ে যাওয়ার ফলে এই সংকট দেখা দিয়েছে। ৫টি ইউনিটের মধ্যে কোনরকমে মাত্র ১টি ইউনিট সচল রেখে সর্বনিম্ন ২৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে।
মঙ্গলবার (৬ জুন) সকালে কাপ্তাই পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক এটিএম আবদুজ্জাহের জানান, হ্রদের পানি কমে যাওয়ায় কাপ্তাই পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্রে বিদ্যুৎ উৎপাদন অনেকটা ব্যাহত হচ্ছে।
তিনি জানান, পানির অভাবে কেন্দ্রের সব ক’টি ইউনিট সচল রাখা সম্ভব হচ্ছে না। এতে বিদ্যুৎ উৎপাদন সর্বনিম্ন পর্যায়ে ঠেকেছে। তিনি আরও জানান, কেন্দ্রের ৫টি ইউনিটের মধ্যে বর্তমানে ১ নম্বর ইউনিটটি চালু রাখা হয়েছে। এই ইউনিট হতে মাত্র ২৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে। অথচ এই কেন্দ্রের পাঁচটি ইউনিট সচল থাকলে প্রায় ২৪২ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করে জাতীয় গ্রিডে পাঠানো হয়। সেখানে এখন বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে মাত্র ২৫ মেগাওয়াট।
এটিএম আব্দুজ্জাহের বলেন, বছরের এই সময়ে কখনই পানি এতো নিচে থাকে না। এ বছর এখনো বৃষ্টিপাত শুরু না হওয়ায় খুবই বিপাকে পড়তে হয়েছে আমাদের। বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য মাত্র একটি ইউনিট চালু আছে। আমরাও বৃষ্টির দিকে তাকিয়ে আছি।
কাপ্তাই বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কন্ট্রোল রুমের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে দায়িত্বরত প্রকৌশলী জানান, গত মঙ্গলবার সকাল ১০টা পর্যন্ত কাপ্তাই হ্রদের পানির পরিমাণ ৭৩ দশমিক ৬২ ফুট (মিন সি লেভেল) ছিল। রুলকার্ভ অনুযায়ী এসময় হ্রদে পানি থাকার কথা ৭৮ দশমিক ২০ ফুট এমএসএল (মিন সি লেভেল)। পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রচুর বৃষ্টিপাত না হলে এই সংকট হতে উত্তরণ সম্ভব নয় বলে জানান প্রকৌশলীরা।
সংশ্লিষ্টরা আরও জানায়, অনাবৃষ্টি, বন উজার হওয়া, কাপ্তাই হ্রদে নাব্যতা সংকটের কারণে পানি তলানিতে চলে যাওয়ায় বিদ্যুৎ উৎপাদনে এমন বিপর্যয় ঘটেছে। সঙ্গতকারণে গ্রাহকদের চাহিদা মেটাতে হিমশিম খাচ্ছে কর্তৃপক্ষ।
এদিকে পানি কমে যাওয়ার ফলে শুধুমাত্র বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে তা নয়, কাপ্তাই হ্রদের ওপর নির্ভরশীল বহু মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়েছে। হ্রদের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কয়েকটি উপজেলার সাথে নৌপথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। ফলে মানুষের দুর্ভোগও বৃদ্ধি পাচ্ছে।
কাপ্তাই হ্রদের পাশে বসবাসকারী নুরুল ইসলাম জানান, ভারী বৃষ্টিপাত না হলে হ্রদে পানি বাড়ার সম্ভাবনা নেই। তাই দ্রুত সময়ে কাপ্তাই হ্রদে ড্রেজিং করা প্রয়োজন। ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে কাপ্তাই হ্রদের গভীরতা যেমন বাড়বে তেমনি এই সমস্যা থেকে কিছুটা সমাধান পাওয়া যাবে।
বিলাইছড়ি বাজারের ব্যবসায়ী ইসমাঈল হোসেন জানান, বিলাইছড়িতে নৌপথ বন্ধ মানেই জীবন ও জীবিকার দুর্বিষহ অবস্থা। আমরা বিলাইছড়িবাসীই সম্ভবত সবচেয়ে বেশি কষ্ট পাচ্ছি হ্রদের পানি কমে যাওয়ায়। বৃষ্টি হতে যত দেরি হবে আমাদের কষ্ট তত বেশি দীর্ঘায়িত হবে।
তিনি বলেন, হ্রদের পানি অস্বাভাবিক কমে যাওয়ায় বাজারের পণ্য পরিবহন ব্যয় অনেক বেড়ে গেছে। বড় বোটতো আসতেই পারছে না, ছোট ছোট বোটে পণ্য পরিবহনে সময়ক্ষেপণ হচ্ছে, পর্যাপ্ত পণ্যও আনা যাচ্ছে না। আবার অনেক দূর থেকে পণ্য বাজারে তুলতে শ্রমিকদের বাড়তি মজুরি দিতে হচ্ছে। একই সঙ্গে সাপ্তাহিক বাজারও এখন ঠিকমতো জমছে না। কারণ দূর থেকে মানুষজন আসতে পারছে না। এখন বৃষ্টি হওয়া ছাড়া পানি বাড়ার তো আর কোনো সম্ভাবনা নেই।
সিনেমায় অভিনয় করতে গিয়ে প্রেম এরপর বিয়ে। দেড় বছরের দাম্পত্য জীবনে আট মাস ধরে চিত্রনায়িকা পরীমণি ও শরিফুল রাজের বনিবনা হচ্ছে না বলেই শোনা যাচ্ছে। চলছে টানাপোড়েন এবং সেই সংসার এখন ভাঙনের পথে। রাজের ফেসবুক থেকে অভিনেত্রী তানজিন তিশা, নাজিফা তুষি ও সুনেরাহ বিনতে কামালের কিছু ছবি ও ভিডিও প্রকাশ্যে আসার পর রাজের সঙ্গে পরীমণির মতপার্থক্য প্রকাশ্যে আসে। সব ছাপিয়ে যা এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে।
রবিবার একটি গণমাধ্যমের ‘লাইভ’ অনুষ্ঠানে এসে শরিফুল রাজ জানান, আপাতত তারা সেপারেশনে আছেন এবং তাদের আর একসাথে হওয়ার কোন সুযোগ নেই। পরীকে তিনি শ্রদ্ধা করেন জানিয়ে সবশেষে পরীমণির উদ্দেশ্যে রাজ বলেন, ‘বেবি, আই লাভ ইউ। যা-ই হোক না কেন, আনন্দে থেকো। আমরা আমাদের সন্তানকে ভালো রাখব।’
রাজের এমন মন্তব্যের উত্তর দিতে সোমবার রাতে গণমাধ্যমটির লাইভে এসে রাজের উদ্দেশ্যে পরীমণি বলেন, ‘গরু মেরে জুতা দান করার কোনো দরকার নেই। কেউ রেসপেক্ট করলে সেটা তার কার্যকলাপ দেখেই বোঝা যায়, মুখ ফুটে বলতে হয় না। আমাকে পাবলিকলি অপমান করে এরপর রেসপেক্ট দেখানোর কোনো দরকার নেই। আর আমার বাচ্চাকে নিয়ে এসব ইমোশনালি কোনো কথা শুনতে চাই না। এসব ইমোশনালি কথা মানুষকে গিলিয়ে লাভ নেই। মানুষ বুঝে।’
ফাঁস হওয়া ভিডিওগুলো পরী বলেন, ‘এত বছর ধরে তারা বন্ধু অথচ আমি জানতাম না। এসব সামনে আসার পর জানতে পারলাম। আর রাজ যতটা তার বন্ধুদের ইমেজ নিয়ে কনসার্ন তার পরিবার নিয়ে এতটাও কনসার্ন না।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি এমনিতে অনেক শান্তশিষ্ট। অনেকটা সাপের মতো, লেজে পাড়া না দিলে চুপচাপ থাকি কিন্তু আমার লেজে পাড়া দিলেই আমি ফুঁস করে উঠি আর তখন কামড় দিবই।’
সবশেষে পরী বলেন, ‘আমি চাই এসবের শেষ হোক। আমি আজকে এখানে এসে এসব বলতাম না। তুমিই (রাজ) আমাকে বাধ্য করেছ। এরকম অসুস্থ মানুষের সঙ্গে আমি আর থাকতে চাই না। আমি চাই ২৪ ঘণ্টার মধ্যে রাজ আমাকে ডিভোর্স দিক।’
নতুন অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে ১৩ ধরনের জ্বালানি তেল ও পেট্রোলিয়াম পণ্যের ওপর থেকে বিদ্যমান ৫ শতাংশ আগাম কর প্রত্যাহারের পরিকল্পনা করেছে সরকার। অন্যদিকে উৎপাদন পর্যায়ে তরল করা পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) ভ্যাট ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে সাড়ে ৭ শতাংশ করা হয়েছে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে পেট্রোল, অকটেন ও ডিজেল আমদানিতে প্রতি লিটারে ১৩ দশমিক ৭৫ টাকা করে শুল্ক আরোপ করার প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এ ছাড়া অন্যান্য জ্বালানি জেট ফুয়েল, ফার্নেস অয়েল, লুব বেইজ অয়েল, কেরোসিনের ক্ষেত্রে প্রতি টনে ২৫ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। এত দিন এসব জ্বালানি তেল আমদানির ক্ষেত্রে ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ ছিল।
আমদানি করা পণ্যের যথাযথ মূল্য নির্ধারণে ২০২২-২৩ অর্থবছরে পণ্যের ট্যারিফ মূল্য ও ন্যূনতম মূল্য নির্ধারণ-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনে পেট্রোলিয়াম ও এর উপজাত দুটি হেডিংয়ের আওতায় ১২টি এইচএস কোডের বিপরীতে ট্যারিফ মূল্য এবং একটি হেডিংয়ের আওতায় একটি এইচএস কোডের বিপরীতে ন্যূনতম মূল্য বহাল আছে।
পেট্রোলিয়াম ও এর উপজাতগুলোর মূল্য আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিনিয়ত ওঠানামা করার কারণে অতি প্রয়োজনীয় এই পণ্যের মূল্য স্থিতিশীল রাখতে এ সুপারিশ করা হয়েছে।
এলপিজি সিলিন্ডারের বিষয়ে বাজেট বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী বলেন, এলপিজি সিলিন্ডার তৈরির কাঁচামাল ইস্পাতের পাত (স্টিল শিট) ও ওয়েল্ডিংয়ের তার আমদানির করছাড় সুবিধা তুলে নেওয়া হয়েছে। এলপিজি সিলিন্ডার উৎপাদনকারীরা কাঁচামালে শুল্ককর ছাড় ১২ বছর ধরে ভোগ করে আসছে। তাই রাজস্ব আহরণের স্বার্থে শুধু দুটি উপকরণে ছাড় তুলে নেওয়া হয়েছে। তবে অন্যান্য করছাড়ের মেয়াদ ২০২৫ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত বহাল থাকবে বলে।
পেট্রোলিয়াম তেল এবং বিটুমিনাস খনিজ থেকে প্রাপ্ত তেলের ওপর বিদ্যমান শুল্ক ৫ শতাংশ। নতুন বাজেট অনুযায়ী এসবের প্রতি ব্যারেলের দাম ১ হাজার ১১৭ টাকা (লিটার প্রতি ৭.০২ টাকা) হতে পারে। প্রতি টন ফার্নেস অয়েলের সুনির্দিষ্ট শুল্ক ৯ হাজার ১০৮ টাকা (লিটার প্রতি ৯.১০ টাকা) করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের জন্য নতুন অর্থবছরে (২০২৩-২৪) ৩৪ হাজার ৮১৯ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। এর মধ্যে বিদ্যুৎ খাতে ৩৩ হাজার ৮২৫ কোটি ১০ লাখ টাকা এবং জ্বালানি খাতে ৯৯৪ কোটি ৩১ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করা নতুন বাজেটে এই বরাদ্দের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
চলতি অর্থবছরে (২০২২-২৩) বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতে বরাদ্দ ছিল ২৬ হাজার ৬৬ কোটি টাকা। পরবর্তী সময়ে সংশোধিত বাজেটে তা বেড়ে দাঁড়ায় ২৭ হাজার ৮৯ কোটি টাকা। অর্থাৎ নতুন অর্থবছরে এ খাতে বরাদ্দ বাড়ছে ৭ হাজার ৭৩০ কোটি টাকা।
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তাফা কামাল বাজেট বক্তৃতায় বলেন, উৎপাদন ও বিতরণ সক্ষমতা সম্প্রসারণের ফলে দেশের শতভাগ জনগোষ্ঠী বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় এসেছে। বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ২০০৯ সালে ৪ হাজার ৯৪২ মেগাওয়াট থেকে বর্তমানে ২৬ হাজার ৭০০ মেগাওয়াটে উন্নীত হয়েছে। জ্বালানির ব্যবহার বহুমুখীকরণের জন্য গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পাশাপাশি কয়লা, তরল জ্বালানি, দ্বৈত জ্বালানি, পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানিভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, রামপালে কয়লাভিত্তিক ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রকল্পের প্রথম ইউনিট ও পায়রা ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রকল্পে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হয়েছে। মাতারবাড়ীতে ১২০০ মেগাওয়াট আল্ট্রা-সুপার ক্রিটিক্যাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের কাজ চলছে। সরকারি-বেসরকারি যৌথ উদ্যোগে মোট ১২ হাজার ৯৪ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ৩৩টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণাধীন এবং ২ হাজার ৪১৬ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ১৭টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের চুক্তি প্রক্রিয়াধীন আছে। এছাড়া, ১০ হাজার ৪৪৩ মেগাওয়াট ক্ষমতার আরও ৩৪টি বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে।
মুস্তফা কামাল বলেন, ‘২০৪১ সালের মধ্যে পাশর্^বর্তী দেশগুলো থেকে প্রায় ৯ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির পরিকল্পনা রয়েছে। বর্তমানে ভারত থেকে ১১৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির পাশাপাশি ঝাড়খ-ে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ৭৪৮ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হয়েছে। নেপালের জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির চুক্তি চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। ভুটান থেকে বিদ্যুৎ আমদানির জন্য বাংলাদেশ, ভুটান ও ভারতের মধ্যে একটি ত্রিপক্ষীয় সমঝোতা স্মারক সই হতে যাচ্ছে শিগগিরই। তিনি বলেন, ‘সব মিলিয়ে আমরা ২০৩০ সালের মধ্যে ৪০ হাজার মেগাওয়াট এবং ২০৪১ সালের মধ্যে ৬০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন নিশ্চিত করতে পারব বলে আশা করছি।’
অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘সরকার ২০৩০ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ১০ শতাংশ নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। এছাড়া ২০৪১ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ৪০ শতাংশ পরিচ্ছন্ন জ্বালানি থেকে সংগ্রহ করতে চাই। এরসঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে, ৬০ লাখ সোলার সিস্টেম স্থাপনের মাধ্যমে অফ গ্রিড এলাকায় বসবাসকারী জনগণকে বিদ্যুৎ সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। কার্বন নিঃসরণ কমাতে ডিজেলচালিত পাম্পের জায়গায় সৌরচালিত পাম্প স্থাপন করার অংশ হিসেবে সেচকাজে ইতিমধ্যে ২ হাজার ৫৭০টি পাম্প স্থাপন করা হয়েছে। বর্তমানে নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে ৮৯৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে। সর্বোপরি, রাশিয়ার সহায়তায় রূপপুরে ২৪০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে।’
উৎপাদিত বিদ্যুৎ জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে গত ১৪ বছরে ৬ হাজার ৬৪৪ সার্কিট কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন স্থাপন করা হয়েছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, সঞ্চালন লাইন ১৪ হাজার ৬৪৪ কিলোমিটারে উন্নীত হয়েছে। এছাড়া বিতরণ লাইন ৩ লাখ ৬৯ হাজার থেকে ৬ লাখ ৬৯ হাজার কিলোমিটারে বৃদ্ধি করা হয়েছে। বিদ্যুতের সিস্টেমলস ১৪ শতাংশ থেকে নেমে এসেছে ৭ দশমিক ৭ শতাংশে। ২০৩০ সালের মধ্যে সঞ্চালন লাইনের পরিমাণ ২৮ হাজার কিলোমিটারে সম্প্রসারিত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিদ্যুতের অপব্যবহার রোধের লক্ষ্যে গত ৫ বছরে প্রায় ৫৩ লাখ প্রি-পেইড স্মার্ট মিটার স্থাপন করা হয়েছে।
অর্থমন্ত্রী কামাল বলেন, ২০০৯ সালের তুলনায়, জ্বালানি তেলের মজুদ ক্ষমতা ৮ লাখ ৯৪ হাজার মেট্রিক টন থেকে বৃদ্ধি করে ২০২১-২২ অর্থবছরে ১৩ লাখ ৬০ হাজার টন করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে এই মজুদ ক্ষমতা ৩০ দিনের পরিবর্তে ৬০ দিনে বাড়ানোর বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি উদ্বোধন করা ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী পাইপলাইনের মাধ্যমে আমদানি করা জ্বালানি তেল (ডিজেল) দেশের উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলায় এবং সৈয়দপুরে ১৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রে সরবরাহ করা সম্ভব হবে।
তিনি বলেন, ‘একমাত্র তেল শোধনাগার ইস্টার্ন রিফাইনারির পরিশোধন ক্ষমতা ১৫ লাখ টন থেকে ৪৫ লাখ টনে উন্নীত করার চেষ্টা চলছে। পায়রা সমুদ্রবন্দর এলাকায় একটি বৃহৎ সমন্বিত তেল শোধনাগার স্টোরেজ ট্যাংক নির্মাণের সিদ্ধান্ত আছে। সম্প্রতি ভোলার ইলিশা গ্যাসক্ষেত্রে প্রায় ২০০ বিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের মজুদ আবিষ্কৃত হয়েছে। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার সময় প্রতিদিন গ্যাসের উৎপাদন ছিল ১ হাজার ৭৪৪ মিলিয়ন ঘনফুট, যা বেড়ে হয়েছে প্রায় ২ হাজার ৩০০ মিলিয়ন ঘনফুট। তেল ও গ্যাস অনুসন্ধান কোম্পানি বাপেক্সের সক্ষমতা বাড়ানোর পর দৈনিক গ্যাস উৎপাদন ৯৮৪ মিলিয়ন ঘনফুট বেড়েছে। ২০২৪ সালের মধ্যে আরও ৪৬টি কূপ খনন করা হবে। এতে অতিরিক্ত ৬১৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস জাতীয় গ্রিডে যোগ হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
মুস্তাফা কামাল বলেন, ‘সমুদ্রে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য বিপুল বিনিয়োগ প্রয়োজন হওয়ায় আমরা বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিচ্ছি। ক্রমবর্ধমান জ্বালানির চাহিদা মেটাতে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস আমদানি এবং স্পট মার্কেট থেকেও কেনা হচ্ছে। এছাড়া কক্সবাজারের মাতারবাড়ীতে প্রতিদিন ১ হাজার মিলিয়ন ঘনফুট ক্ষমতাসম্পন্ন ল্যান্ড বেইজড এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।’
বাজেট বক্তৃতায় আরও বলা হয়, ২০০৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত ১ হাজার ১৫৮ কিলোমিটার গ্যাস সঞ্চালন পাইপলাইন নির্মাণ করা হয়েছে। বর্তমানে দেশের উত্তরাঞ্চল ও অন্যান্য এলাকায় ২১৪ কিলোমিটার পাইপলাইন নির্মাণের কাজ চলছে। ২০২৬ সালের মধ্যে পায়রা ও ভোলা থেকে গ্যাস সঞ্চালনের জন্য আরও ৪২৫ কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। গ্যাসের সরবরাহ বাড়ানোর পাশাপাশি অপচয় রোধে প্রি-পেইড মিটার স্থাপনের কাজও চলছে।
চলতি অর্থবছরের চেয়ে আগামী অর্থবছরের সামগ্রিক বাজেট আকারে ১২ দশমিক ৩৪ শতাংশ বড় হলেও আগামী বছরের শিক্ষা-বাজেট দশমিক ৪৪ শতাংশ কমেছে। তবে টাকার অঙ্কে শিক্ষার দুই মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দ ৬ হাজার ৭১৩ কোটি টাকা বেড়েছে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরে শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাতে মোট বাজেটের ১৩ দশমিক ৭ শতাংশ বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। শুধু শিক্ষা খাত হিসাব করলে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা এবং মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষায় বরাদ্দ ১১ দশমিক ৫৭ শতাংশ। টাকার অঙ্কে তা ৮৮ হাজার ১৬২ কোটি। চলতি অর্থবছরে শিক্ষায় বরাদ্দ ছিল ১২ দশমিক ০১ শতাংশ বা ৮১ হাজার ৪৪৯ কোটি টাকা।
ইউনেস্কো, শিক্ষাবিদ বা অংশীজনরা অনেক দিন ধরেই শিক্ষায় জিডিপির কমপক্ষে ৪ শতাংশ বরাদ্দের কথা বলছেন। এটাকে তারা বরাদ্দ হিসেবে না দেখে আগামী দিনের বিনিয়োগ হিসেবে দেখতে বলছেন। গত কয়েক বছর ধরে শিক্ষায় বরাদ্দ ১২ শতাংশের আশপাশে ঘুরপাক খাচ্ছিল। জিডিপির হিসাবে তা ছিল ২ শতাংশের কাছাকাছি। চলতি অর্থবছরে শিক্ষা খাতে মোট বরাদ্দ জিডিপির ১ দশমিক ৮৩ শতাংশ, ২০২১-২২ অর্থবছরে ছিল ২ দশমিক ০৮ শতাংশ। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে তা কমে দাঁড়াচ্ছে জিডিপির ১ দশমিক ৭৬ শতাংশ।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধূরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আগামী বাজেটে যে লক্ষ্য ধরা হয়েছে, তার সঙ্গে শিক্ষায় বরাদ্দের সংগতি নেই। বাজেটে স্মার্ট বাংলাদেশের কথা বলা হয়েছে। এজন্য দক্ষ ও শিক্ষিত জনগোষ্ঠী প্রয়োজন। কিন্তু এ জনগোষ্ঠী তৈরির জন্য প্রয়োজন শিক্ষা খাতে বিনিয়োগ। বরাবরের মতো এবারও শুভংকরের ফাঁকি লক্ষ করছি। শিক্ষার সঙ্গে প্রযুক্তি মিলিয়ে আকার বড় করা হলেও চলতি অর্থবছরের চেয়েও বরাদ্দ কমেছে। নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নেও বাজেটে দিকনির্দেশনা দেখছি না।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ড. ছিদ্দিকুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘শিক্ষায় জিডিপির ২ শতাংশের নিচে বরাদ্দ কাক্সিক্ষত নয়। আগামী অর্থবছরে অন্তত ১৪ থেকে ১৫ শতাংশ বরাদ্দ দিলে ভালো হতো। কারিগরি ও ভোকেশনাল শিক্ষায় আরও বেশি নজর দেওয়া উচিত ছিল। সেটা আগামী অর্থবছরের বাজেটে দেখা যায়নি।’
তিনি বলেন, ‘আগামী বছরের বাজেটে মিড ডে মিলের জন্য বরাদ্দ রাখার কথা বলা হয়েছে, যা খুবই ভালো। যোগ্য শিক্ষক নিয়োগ ও তাদের যথাযথ প্রশিক্ষণে জোর দিতে হবে। শিক্ষায় বরাদ্দের সঠিক ব্যবহারের বিষয়ে গুরুত্ব দিতে হবে।’
আগামী অর্থবছরে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জন্য ৩৪ হাজার ৭২২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরে তা ছিল ৩১ হাজার ৭৬১ কোটি টাকা। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের জন্য ৪২ হাজার ৮৩৮ কোটি এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের জন্য ১০ হাজার ৬০২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের জন্য ৩৯ হাজার ৯৬১ কোটি এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের জন্য ৯ হাজার ৭২৭ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছিল সরকার।
বাজেট ঘিরে প্রতি বছরই বেসরকারি শিক্ষকদের অন্যতম দাবি থাকে শিক্ষাব্যবস্থার জাতীয়করণ, এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের পূর্ণাঙ্গ বাড়ি ভাড়া ও শতভাগ উৎসব-ভাতা প্রদান। নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তকরণের প্রক্রিয়া চলমান রাখাও তাদের অন্যতম দাবি। কিন্তু সেসব বিষয়ে বাজেটে স্পষ্ট কিছু উল্লেখ নেই। তবে এমপিওভুক্তির জন্য মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগে আগামী অর্থবছরে ৩০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে বলে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।
দুই দশকেরও বেশি ক্যারিয়ারে অসংখ্য নাটক-টেলিছবি নির্মাণ করেছেন শিহাব শাহীন, উপহার দিয়েছেন হিট প্রোডাকশন। নিজেকে শুধু রোমান্টিক জনরায় আটকে না রেখে কাজ করেছেন বহুমাত্রিক ঘরানায়। নিজেকে প্রমাণ করেছেন সব্যসাচী নির্মাতা হিসেবে। নিজেকে শুধু টেলিভিশনেই আটকে রাখেননি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তিনিও পাল্টেছেন প্লাটফর্ম এবং সেখানেও দেখিয়েছেন নিজের মুন্সিয়ানা।
সর্বশেষ গেল ঈদে তুমুল সাড়া ফেলেছে তার নির্মিত স্পিন অফ সিরিজ ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’। সাফল্যের পর কিছুদিন আগেই অনুষ্ঠিত হয়ে গেল এর সাকসেস পার্টি যেখানে উপস্থিত ছিলেন টিমের কলাকুশলী থেকে শুরু করে অন্যান্য নির্মাতা ও শিল্পীরা। সেই ধারাবাহিকতায় এবার তিনি নিয়ে আসছেন সিরিজটির সিক্যুয়াল। শুধু তাই নয়, একসঙ্গে একাধিক সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে আসছেন জনপ্রিয় নির্মাতা।
শিহাব শাহীন বলেন, ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’ নিয়ে এতটা প্রত্যাশা ছিল না কিন্তু সে সাড়া পেয়েছি তা প্রত্যাশার চেয়েও বেশি। দর্শকরাই কাজটিকে গ্রহণ করেছেন আর তাই এখন এর সিক্যুয়াল নিয়ে আসার পরিকল্পনা করছি। স্পিন অফে দেখিয়েছি অ্যালেন স্বপনের পেছনের গল্প। সিন্ডিকেটে তাকে আমরা দেখিয়েছিলাম ২০২২ সালে, সে ঢাকায় আসার পর এর মাঝের সময়টার গল্পই থাকবে সিক্যুয়ালে। যেটার সংযোগ থাকতে পারে ‘সিন্ডিকেট ২’-তে। ঈদের পরপর এটার শুট করার সম্ভাবনা রয়েছে।
এই সিক্যুয়াল ছাড়াও আরও বেশ কিছু সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে সবকিছু চূড়ান্ত হয়েছে বলেও জানান এ নির্মাতা। তিনি বলেন, মোস্তফা সরয়ার ফারুকির তত্ত্বাবধানে ওটিটি প্লাটফর্ম চরকির ‘মিনিস্ট্রি অফ লাভ’ সিরিজের একটা কনটেন্ট করবো। এখনও কাস্টিং চূড়ান্ত হয়নি। এছাড়া হইচইয়ের একটি সিরিজ ও বিঞ্জের একটি ফিল্ম করা হবে। নাম চূড়ান্ত হয়নি। তবে দুটোতেই জিয়াউল ফারুক অপূর্ব থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
মাঝে শোনা গিয়েছিল, আফরান নিশোকে নিয়ে ‘সিন্ডিকেট ২’ নাকি হবে না, এটা কতটুকু সত্য? এমন প্রশ্নে শিহাব শাহীন বলেন, এটা ভূয়া তথ্য। ডিসেম্বরের শেষ দিকে ‘সিন্ডিকেট ২’ করবো তার আগে সেপ্টেম্বরে শুরু করবো ‘রসু খাঁ’।
জানা গেছে, আগামী সপ্তাহে অস্ট্রেলিয়া পাড়ি জমাচ্ছেন শিহাব শাহীন। দেশে ফিরবেন মাসের শেষ নাগাদ এরপর কাজে নামবেন।
স্বাস্থ্য খাতে চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটের চেয়ে আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে বরাদ্দ বেড়েছে। প্রস্তাবিত বাজেটে এই খাতে এবার বরাদ্দ ১ হাজার ১৮৯ কোটি টাকা বা ৩ দশমিক ২২ শতাংশ বাড়লেও মোট বাজেটের তুলনায় তা কমেছে শূন্য দশমিক ৪ শতাংশ। চলতি অর্থবছরে খাতটিতে বরাদ্দ ছিল মোট বাজেটের ৫ দশমিক ৪ শতাংশ। আগামী বাজেটে তা ৫ শতাংশে নেমে এসেছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে জাতীয় সংসদে ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেট পেশ করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। বাজেটে স্বাস্থ্যসেবা এবং স্বাস্থ্য-শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ খাতে ৩৮ হাজার ৫২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করেন। ২০২২-২৩ অর্থবছরে সংশোধিত বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ ছিল ৩৬ হাজার ৮৬৩ কোটি টাকা।
প্রস্তাবিত বাজেটে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে ২৯ হাজার ৪৩১ কোটি টাকা, যা আগের বছরের তুলনায় মাত্র ১৫০ কোটি টাকা বেশি। এর মধ্যে পরিচালন ব্যয় ১৭ হাজার ২২১ কোটি টাকা ও উন্নয়ন ব্যয় ১২ হাজার ২১০ কোটি টাকা। এছাড়া স্বাস্থ্য-শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটে ৮ হাজার ৬২১ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এই বরাদ্দ থেকেই নতুন মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠার ব্যয় নির্বাহ করা হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক সৈয়দ আবদুল হামিদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, এবার টাকার অঙ্কে গত বছরের তুলনায় (বর্তমান ২০২২-২৩ অর্থবছর) ১ হাজার একশ কোটির মতো বেড়েছে। কিন্তু বাজেট শেয়ারে সেটা কমেছে। সামগ্রিক বাজেটের গ্রোথ বা বৃদ্ধি ১২ শতাংশ, কিন্তু স্বাস্থ্যের বাজেটের বৃদ্ধি ৩ শতাংশ। তারমানে রাষ্ট্রীয় বাজেটে স্বাস্থ্য খাতের গুরুত্ব কমেছে। সেই কারণে ৫ দশমিক ৪ শতাংশ থেকে ৫ শতাংশে নেমে এসেছে।
এই স্বাস্থ্য অর্থনীতিবিদ বলেন, এবার কমার যৌক্তিক কারণ আছে। সেটা হলো স্বাস্থ্য বিভাগের সেক্টর প্রোগ্রামে উন্নয়ন বাজেট থেকে অর্থ আসে। সেই সেক্টর প্রোগ্রাম এই অর্থবছরে শেষ হয়ে প্রস্তাবিত অর্থবছর থেকে নতুন সেক্টর প্রোগ্রাম শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু চলমান সেক্টর প্রোগ্রাম সময়মতো বাস্তবায়ন করতে না পারায় সেটার সময় আরও এক বছর বাড়ানো হয়েছে। এই এক বছরের জন্য নতুন বাজেট থাকে না, পুরনো বাজেট থেকেই ব্যয় করতে হয়। ফলে বরাদ্দ না বাড়িয়ে পাঁচ বছরের বাজেট যদি ছয় বছরে গিয়ে ঠেকে, তাহলে প্রতি বছর টাকা কমে যায়। মূলত এ কারণে এবার টাকা কমে গেছে।
সরকার স্বাস্থ্য খাতে এবারও কিছু থোক বরাদ্দ রাখতে পারত বলে মনে করেন স্বাস্থ্য অর্থনীতির এই শিক্ষক। তিনি বলেন, কভিড ছাড়াও আমাদের অনেক জরুরি খাত আছে। এখন ডেঙ্গু চলছে। এটি ইমার্জেন্সি হয়ে যাবে। ফলে এটার জন্য যে ফান্ড দেওয়া আছে হাসপাতালে, রোগী বাড়লে সেটা দিয়ে হবে না। এরকম ইমার্জেন্সি আরও আসতে পারে। এরকম একটা থোক বরাদ্দ রাখলে স্বাস্থ্যের ইমার্জেন্সিতে সেখান থেকে ব্যয় করা যেত। কিন্তু সেটাও নেই। তার মানে কভিডের শিক্ষা থেকে আমরা কিছুই শিখিনি। প্রস্তাবিত বাজেটে সেটার প্রতিফলন নেই।
সামগ্রিকভাবে বাজেটে রোগীদের স্বাস্থ্যসেবার খরচ বেড়ে যাবে বলেও মনে করছেন এই স্বাস্থ্য অর্থনীতিবিদ। তিনি বলেন, এতে স্বাস্থ্যসেবা ও ওষুধসহ সামগ্রিকভাবে স্বাস্থ্য খাত নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার যথেষ্ট কারণ আছে।
যদিও এবারের বাজেটে ওষুধ, চিকিৎসাসামগ্রী ও স্বাস্থ্য সুরক্ষাসামগ্রী উৎপাদনে প্রয়োজনীয় কাঁচামাল আমদানিতে বিদ্যমান রেয়াতি সুবিধা অব্যাহত রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। এ ছাড়া ক্যানসার রোগীদের চিকিৎসা আরও সুলভ করার জন্য ক্যানসার চিকিৎসায় ব্যবহৃত ওষুধ, আইভি ক্যানুলা উৎপাদনের অন্যতম প্রধান উপাদান সিলিকন টিউবসহ আরও কিছু বিদ্যমান ওষুধের কাঁচামাল আমদানিতে রেয়াতি সুবিধা অব্যাহত রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। তামাক জাতীয় পণ্য যেমন তরল নিকোটিন, ট্রান্সডারমাল ইউস নিকোটিন পণ্যের বিপরীতে ১৫০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপ করার প্রস্তাব করা হয়েছে।