
অবিশ্বাস্য সুন্দর ও শ্বাসরুদ্ধকর অনুভূতি। কালকের প্রথম দুই ম্যাচ থেকে ফুটবল সমর্থকদের এটাই উপলব্ধি হওয়ার কথা। ছন্দপতন ও ফিরে আসার নাটকীয় দৃশ্যপট লিখে রোমাঞ্চ ছড়াল ক্যামেরুন-সার্বিয়া ও ঘানা-দক্ষিণ কোরিয়া ম্যাচ। মিনিটে-মিনিটে গোল হয়ে বিশ্বকাপের সত্যিকার মজা উপভোগের সুযোগ করে দিল ১১ গোলের দুটি ম্যাচ। ক্যামেরুন ও সার্বিয়া ৩-৩ গোলে ড্র হলেও কোরিয়ানরা অল্পের জন্য ঘানার কাছে হেরে গেল ৩-২ গোলে। তবে হার-জিত-ড্রয়ের বিষয়টি পাশে রেখে সবচেয়ে বড় কথা দুই ম্যাচই ছিল উপভোগ্য।
আফ্রিকান অদম্য সিংহ তারা। ছদ্মনামকে সত্যি করে অদম্য সিংহের মতোই ম্যাচে ফিরে এলো ক্যামেরুন। সার্বিয়ার হাতের মুঠোয় থাকা ৩ পয়েন্ট ছিনিয়ে নিয়েছে তারা। দারুণ রোমাঞ্চকর ম্যাচটি শেষ পর্যন্ত ৩-৩ গোলে ড্র হয়। অথচ প্রথম ঘণ্টা এই ক্যামেরুনকেই দমিয়ে দিয়েছিল সার্বিয়া। ৩-১ গোলে এগিয়ে থেকে ব্রাজিলের বিপক্ষে হার ভুলতে বসেছিল। কিন্তু ৩ মিনিটের মাথায় দুই গোল করে সার্বিয়ার জয়ের স্বপ্ন চুরমার করে ক্যামেরুন। জয়ের সমান ড্রতে এখন ১৯৯০ বিশ্বকাপের পর প্রথমবার দ্বিতীয় রাউন্ডে পা রাখার সুযোগ তৈরি করেছে অদম্য সিংহরা। প্রথম ম্যাচে সুইজারল্যান্ডের কাছে ১-০ তে হেরে বিপদেই ছিল ক্যামেরুন। দ্বিতীয় ম্যাচে সার্বিয়ার কাছে হার তাদের বিশ্বকাপ শেষ করে দিত। তা হতে দেননি ভিনসেন্ট আবুবকর ও এরিক চোপু-মোতিং। ২০১৪ থেকে ২০১৮ পর্যন্ত ইউরোপিয়ান ফুটবলের নিয়মিত নাম এ দুই ফুটবলার জ্বলে ওঠেন অভিজ্ঞতার ভারে। দুই কাউন্টার অ্যাটাকে ম্যাচ নিজেদের করে দেন। ৬৩ মিনিটে মধ্যমাঠ থেকে কাস্তেলেত্তো বল বাড়ান আবুবকরের দিকে। বল নিয়ে একাই এগিয়ে ডি বক্সে সার্বিয়ান গোলরক্ষকের মাথার ওপর দিয়ে বল পোস্টে পাঠান। তবে গোলটি অফসাইডের শঙ্কায় ভিএআরে চেক করেন রেফারি। এরপর গোলের বাঁশি বাজান। তার তিন মিনিট পর আর একটি কাউন্টার অ্যাটাকে ক্যামেরুনের হয়ে এগিয়ে যান আবুবকর ও চোপু-মোতিং। অনেকটা ফাঁকায় থাকা সার্বিয়ান ডিফেন্সে ঢুকে মোতিংকে বল পাস দেন আবুবকর। জোরালো শটে গোল করে মোতিং ম্যাচে সমতা আনেন। এর আগে ২৯ মিনিটে কাস্তেলেত্তো ক্যামেরুনের হয়ে প্রথম গোল করেন।
অথচ আগে গোল করেও ম্যাচে হারিয়েই গিয়েছিল ক্যামেরুন। প্রথমার্ধের প্রথম ও তৃতীয় মিনিটে পাভলোভিচ, মিলিনকোভিচ-সাভিচের গোলে ২-১ এ পিছিয়ে পড়ে তারা। বিরতির পর ৫৩ মিনিটে মিত্রোভিচের গোল দলটিকে আরও বিপদে ফেলে। ওই অবস্থা থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর গল্প লিখে ক্যামেরুন। আর এর অনুপ্রেরণা তারা নিয়েছে মরক্কো থেকে। আগের দিন বেলজিয়ামকে ২-০ তে হারিয়ে দেওয়া দলের কথা বলে আবুবকর ম্যাচ শেষে জানান, ‘আমি মরক্কোর ম্যাচটা দেখেছি। ওরা জয়ের জন্য দারুণ স্পৃহা দেখায়। এই বার্তাটাই আমি সতীর্থদের দিয়েছি। ওদের মতো আমাদেরও সেই ইচ্ছা, স্পৃহা দেখাতে হবে। আমরা কিছু ভুল করেছি কিন্তু হাল ছেড়ে দিইনি।’ আবুবকরের কথা বদলে দিয়েছে ক্যামেরুনকে। ম্যাচের ফলই তার প্রমাণ। তিনি নিজেও তো উঠে গেছেন ইতিহাসে। আফ্রিকান প্রথম ফুটবলার হিসেবে বদলি নেমে গোল ও অ্যাসিস্ট করেছেন এক ম্যাচে। নিজেকে মোহামেদ সালাহর মতো মনে করা আবুবকর বলেন, ‘সালাহ আমাকে মুগ্ধ করে না। সে যা করে আমিও তা করতে পারি। ব্যাপারটা হলো আমি ওর মতো ইউরোপের সেরা ক্লাবে খেলতে পারিনি।’
দিনের দ্বিতীয় ম্যাচে দারুণ প্রেসিং ফুটবল খেলেও ভাগ্যের সঙ্গে পেরে ওঠেনি কোরিয়া। প্রথমার্ধেই ২৪ মিনিটে সালিসু ও ৩৪ মিনিটে তুদোসের গোলে পিছিয়ে যায় এশিয়ান টাইগাররা। দ্বিতীয়ার্ধে চার মিনিটে চো গে-সুংয়ের জোড়া গোলে সমতায় ফেরে কোরিয়া। কিন্তু ৭ মিনিটের ব্যবধানে কুদোসের দ্বিতীয় গোল দক্ষিণ কোরিয়ার স্বপ্ন ভঙ্গ করে। ম্যাচের শেষ ১৫ মিনিট পুরোটা সময় ঘানাকে তাদের ডি বক্সে কোণঠাসা করেও শেষরক্ষা হয়নি দলটির। এই জয়ে ৩ পয়েন্ট নিয়ে এইচ গ্রুপে দ্বিতীয় হয়েছে পর্তুগালের কাছে প্রথম ম্যাচ হারা ঘানা। উরুগুয়ের সঙ্গে প্রথম ম্যাচে ড্র করা কোরিয়া মাত্র ১ পয়েন্ট নিয়ে তালিকার শেষে।
বিশ্বকাপ গ্রুপ পর্বের ড্রয়ের পর সবার বাঁকা চোখ ছিল বি গ্রুপে। বিশ্ব রাজনীতির বড় শত্রু-মিত্ররা একই গ্রুপে যুক্তরাষ্ট্র, ইংল্যান্ডের সঙ্গে ‘বড় শত্রু’ ইরান। প্রথম পর্ব টপকে যাওয়ার লড়াইয়ে একে অপরকে পেছনে ফেলার প্রতিযোগিতায়। এই এগিয়ে যাওয়ায় যেমন রাজনৈতিক প্রতিশোধের তৃপ্তি থাকবে তেমনি খেলার মাঠে জয়ের আনন্দও থাকছে। এর আগে ইংল্যান্ড-ইরান খেলা হয়েছে। আজ সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক ম্যাচে মুখোমুখি হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইরান। লড়াইটা আবার হয়ে দাঁড়িয়েছে গ্রুপের অলিখিত ফাইনালও।
বিশ্ব রাজনীতিতে দুই রাষ্ট্রের বৈরিতার কথা সবার জানা। ১৯৮০ থেকে একে অপরের মুখ দেখাদেখি বন্ধ অবস্থা। তারাই মাঠের যুদ্ধে নামছে ভিন্ন তৃপ্তির আশায়। তৃপ্তিটা যুদ্ধ জয়ের মতোই। আজ একে অপরকে বিদায় করে দেওয়ার সুযোগ ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের সামনে। গ্রুপে ৩ পয়েন্ট নিয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে ইরান। যুক্তরাষ্ট্র ১ পয়েন্ট নিয়ে তিনে। ইরান জিতলে তাদের পয়েন্ট হবে ৬, যুক্তরাষ্ট্র জিতলে হবে ৫। আর ড্র হলেও ইরান এগিয়ে থাকবে ৪ পয়েন্ট নিয়ে। আজ তাদের শুধু হার এড়ালেই হয়।
গ্রুপের অপর ম্যাচে মুখোমুখি হচ্ছে ইংল্যান্ড ও ওয়েলস। পাশাপাশি দুই রাজ্যের ম্যাচ দেখে সম্প্রীতির হাওয়া বইছে এমন ভাবার সুযোগ নেই। ক্রিকেটে মিলিত হয়ে খেললেও ফুটবলে রাগবির মতোই দ্বৈরথ এ দুই দলের। রাগবিতে তাদের ম্যাচ মানেই উত্তেজনার। ঠিক তেমনি ফুটবলেও ছেড়ে কথা বলে না কেউ কাউকে। দুই দলের ফুটবলের ইতিহাসও পুরনো। সেই ১৮৭৯ সাল থেকে মোট ১০৩ ম্যাচ খেলেছে। এর মধ্যে অভিজ্ঞতার বিচারে অবশ্যই ইংল্যান্ডই জয়ের পাল্লায় এগিয়ে। তাদের ৬৮ জয়ের বিপরীতে ওয়েলসের জয় ১৪টি। আর বাকি ২১ ম্যাচ ড্র। ইংল্যান্ডকে আজ হারালেও ওয়েলসের খুব একটা লাভ নেই। তাদের সমান ৪ পয়েন্ট নিয়ে গোলগড়ে বাদ পড়বেন গ্যারেথ বেলরা। আর ইংল্যান্ড জিতলে সরাসরি দ্বিতীয় রাউন্ড। ফল ড্র হলে ইংল্যান্ডকে তাকিয়ে থাকতে হবে যুক্তরাষ্ট্র-ইরান ম্যাচের দিকে। তবে ইংল্যান্ডের দ্বিতীয় রাউন্ডে ওঠার সুযোগ বেশি।
ফিরে আসা যাক যুক্তরাষ্ট্র-ইরান ম্যাচে। বিশ্বকাপে দুই দলের দেখা এই প্রথম নয়। ১৯৯৮ সালে আরও একবার মাঠের যুদ্ধে নেমেছিল তারা। সেই যুদ্ধ তাতিয়ে দেন ইরানের তখনকার শীর্ষ নেতা আলি খামেনি। ইরান ফুটবলারদের প্রতি তার নির্দেশ ছিল ম্যাচপূর্ব করমর্দনের সময় যেন যুক্তরাষ্ট্র ফুটবলারদের সঙ্গে কথাও না বলেন! অবশ্য ইরান ফুটবলাররা এমনটা করেননি। বরং সম্প্রীতি ও বন্ধুত্বের প্রতীক সাদা গোলাপ উপহার দেন মাঠে। এরপর দুই দল মিলে তুলেছেন গ্রুপ ফটো। রাজনীতিকে মাঠে প্রবেশ করতে দেননি সেই ফুটবলাররা। ওই ম্যাচে ২-১ গোলে জিতেছিল ইরান।
এরপর একটি প্রীতি ম্যাচেও ইরানকে হারাতে পারেনি যুক্তরাষ্ট্র। মাঠের লড়াইয়ে রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীর সঙ্গে ওই ম্যাচে ১-১ গোলে ড্র করে তারা। ইরান তাই অজেয় থেকেই আজ মাঠে নামছে। তবে যুক্তরাষ্ট্রের কোচ গ্রেগ বেরহাল্টার নিশ্চিত আগের ফল এবার বদলাবে। রাজনৈতিক লড়াই ১৯৯৮ এর মতো এবারও পাশে থাকবে উল্লেখ করে বেরহাল্টার বলেন, ‘আমি ক্যারিয়ারে তিনটি ভিন্ন দেশে খেলেছি। সুইডেনে কোচিং করিয়েছি। ফুটবলে একটা মজার ব্যাপার হলো আপনি বিশ্বজুড়ে মানুষের সঙ্গে মিশবেন। নানা মত ও চিন্তা সম্পর্কে জানবেন ও তা আপন করে নেবেন। আর এই বিষয়টা হয় ফুটবলের জন্য। ফুটবল মানুষকে ভালোবাসতে শেখায়। কালকের (আজ) ম্যাচে যা হবে তা শুধুই ক্রীড়াভিত্তিক। দুই দলই দ্বিতীয় রাউন্ডে উঠতে চাইবে। এখানে রাজনৈতিক বা দুই দেশের বৈরী সম্পর্কের কিছুই আসবে না। আমরা দুই দলই ফুটবল খেলি এবং এই খেলার জন্যই প্রতিযোগিতায় নামব।’
বেরহাল্টারের জন্য স্বস্তির বিষয় ইংল্যান্ডের সঙ্গে ভালো খেলে ড্র। ওয়েলসের সঙ্গে পয়েন্ট হারালেও বড় দলের বিপক্ষে ড্রয়ে দ্বিতীয় রাউন্ডের স্বপ্ন এখনো টিকে আছে যুক্তরাষ্ট্রের। তবে ইরান এই ম্যাচে আত্মবিশ্বাসে এগিয়ে থাকবে। প্রথম ম্যাচে ইংল্যান্ডের কাছে ৬-২ গোলে হেরে দুঃস্বপ্নের শুরু হয় ইরানের। তবে ওয়েলসের সঙ্গে ততটাই স্বপ্নময় জয় এসেছে দলটির। ওই ২-০ গোলের জয়ে দ্বিতীয় রাউন্ডের পথে ভালোভাবে এগিয়ে ইরান। তাছাড়া বিশ্বকাপের সময় দেশ থেকেও উড়ে এসেছে সুখবর। প্রায় দুই মাস ধরে পুলিশি হেফাজতে মাশা আমিনি নামক এক তরুণীর মৃত্যুর প্রতিবাদে উত্তাল ছিল ইরান। মাথায় হিজাব না পরায় গ্রেপ্তার হয়েছিলেন আমিনি। ঠিক একই কারণে গ্রেপ্তার হওয়া ইরানের পুরস্কারজয়ী অভিনেত্রী হেনগামেহ ঘাজিনি ছাড়া পেয়েছেন সাজা থেকে। ইরানি প্রতিবাদীদের জন্য এ এক বিজয়। সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে মাঠের জয় সরকারবিরোধী আন্দোলনের মধ্যে স্বস্তি এনে দিতে পারে।
দেখতে দেখতে বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্ব চলে এসেছে শেষ অধ্যায়ে। প্রথম দুটো করে ম্যাচের পর বেশিরভাগ দলই স্পষ্ট বুঝতে পেরেছে নিজেদের অবস্থান। আজ থেকে শুরু তৃতীয় রাউন্ডের খেলা। একই সমান্তরালে হবে শেষ দুটো ম্যাচ, তাতে করে আগেভাগে অঙ্ক মিলিয়ে নামার সুযোগটা থাকছে না। ‘এ’ গ্রুপে আল বাইয়াত স্টেডিয়ামে স্বাগতিক কাতারের মুখোমুখি হবে নেদারল্যান্ডস। খলিফা ইন্টারন্যাশনাল স্টেডিয়ামে খেলবে সেনেগাল ও ইকুয়েডর। কাতারের দ্বিতীয় রাউন্ডে খেলার সম্ভাবনা শেষ, স্বাগতিকরা হেরেছে ইকুয়েডর ও সেনেগালের কাছে। নেদারল্যান্ডস সেনেগালের সঙ্গে জিতলেও ড্র করেছে ইকুয়েডরের সঙ্গে। শেষ রাউন্ডের ম্যাচে তাই তিন দলেরই সুযোগ আছে নকআউটে উঠতে পারার।
অপেক্ষাকৃত সহজ অবস্থানে নেদারল্যান্ডস, তাদের প্রতিপক্ষ কাতার। আসরের স্বাগতিকরা ফিফা র্যাংকিংয়ের ৫০তম অবস্থানে, এখনো কোনো ম্যাচ না জিততে পারা কাতারের বিপক্ষে নেদারল্যান্ডসেরই জেতার কথা। যদিও অঘটনের বিশ্বকাপে কোনো প্রতিপক্ষই নিরাপদ নয়। তবুও ফুটবল সামর্থ্য এগিয়ে রাখছে ডাচদেরই। কাতারের বিপক্ষে জিতলেই শেষ ষোলোয় পা রাখবে নেদারল্যান্ডস, ড্র করলেও তারা যেতে পারে পরের রাউন্ডে যদি ইকুয়েডর হারিয়ে দেয় সেনেগালকে।
ইকুয়েডরের জন্যও অংকটা সহজে মিলে যাবে সেনেগালকে হারাতে পারলে। ড্র করলেও তারা যেতে পারে পরের রাউন্ডে, এমনকি হেরে গেলেও তাদের সম্ভাবনা থাকবে যদি কাতার হারাতে পারে নেদারল্যান্ডসকে।
সেনেগালেরও অংকটা একই, তাদেরও জিততেই হবে সেনেগালের বিপক্ষে। ড্র করলেও তারা শেষ ষোলোয় যেতে পারবে, যদি কাতার হারাতে পারে নেদারল্যান্ডসকে। কাতারের কোনো সম্ভাবনাই নেই, প্রথম দুই ম্যাচে হেরে তারা আগেই ছিটকে গেছে।
বিশ্বকাপের বাছাই পর্বে ইউরোপিয়ান অঞ্চলে সবচেয়ে বেশি গোল করেছিলেন মেমফিস দিপেই। কিন্তু চোটের কারণে বার্সেলোনার এই ফরোয়ার্ডকে এখনো মাঠে নামাতে পারেননি কোচ লুই ফন গাল। ম্যাথিয়াস ডি লিখটের একটা হলুদ কার্ড আছে, আজ আরেকটা কার্ড দেখলে শেষ ষোলোর ম্যাচে খেলতে পারবেন না ডাচ সেন্টারব্যাক। জুরেন টিম্বার খুব সম্ভবত নিজের জায়গাটা ধরেই রাখবেন। ইকুয়েডরের বিপক্ষে ম্যাচের ৬ মিনিটেই কোডি গাকপো গোল করে ডাচদের এগিয়ে দেওয়ার পর অনেকেই ভেবেছিলেন ম্যাচটা সহজেই জিতবে নেদারল্যান্ডস। কিন্তু এনর ভ্যালেন্সিয়ার গোলে সমতা ফিরিয়ে নিজেদের বিশ্বকাপ স্বপ্ন টিকিয়ে রাখে ইকুয়েডর, সঙ্গে অপেক্ষায় রাখে অরেঞ্জদের।
২ গোল করে এখন পর্যন্ত ডাচদের সর্বোচ্চ গোলদাতা কোডি গাকপো। তবে পিএসভি আইন্দহোভেনের ২৩ বছর বয়সী এই উইঙ্গারের কাছ থেকেই শুধু নয়, নেদারল্যান্ডস চাইবে ফ্রাঙ্কি দি ইয়ংয়ের মতো তারকারাও যেন গোলের দেখা পান, কারণ এটাই সম্ভবত এবারের বিশ্বকাপের সহজতম ম্যাচ হতে যাচ্ছে। কাতারকে হারিয়ে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে পরের ধাপে উঠলে নেদারল্যান্ডসের সম্ভাব্য প্রতিপক্ষ হতে পারে ইরান বা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।
সেনেগাল-ইকুয়েডর ম্যাচটা হয়ে গেছে নকআউট। যে জিতবে সেই খেলবে পরের রাউন্ডে। সাদিও মানেকে হারিয়ে সেনেগাল বড় একটা ধাক্কাই খেয়েছে। ডাচদের বিপক্ষে তারা গোল পায়নি, তবে কাতারকে হারিয়েছে ৩-১ গোলে। ইকুয়েডর কাতারকে হারালেও ডাচদের কাছ থেকে ছিনিয়ে এনেছে ১ পয়েন্ট। শক্তিমত্তায় দুই দলই কাছাকাছি, ইকুয়েডরের ফিফা র্যাংকিং ৪৪ আর সেনেগালের ১৮। আফ্রিকান নেশনস কাপ জয়ী সেনেগালের মূল শক্তি ছিল সাদিও মানের মতো একজন উঁচুদরের ফরোয়ার্ড, কিন্তু মানে না থাকায় দুই দলেরই প্রায় সমান সম্ভাবনা।
কাতার বিশ্বকাপে গ্রুপ পর্বের তৃতীয় রাউন্ড শুরু হচ্ছে আজ থেকে। যে রাউন্ড শেষে প্রতি গ্রুপ থেকে দুটি করে দল থেকে যাবে, আর বিদায় নেবে দুটি করে দল। অর্থাৎ বিশ্বকাপ এখন ছোট হয়ে আসার পালা!
‘এ’ গ্রুপ ও ‘বি’ গ্রুপের দলগুলো মাঠে নামবে আজ। দুই গ্রুপ থেকে কোনো দলেরই পরের রাউন্ড নিশ্চিত হয়নি এখনো। তবে ‘এ’ গ্রুপে থাকা স্বাগতিক কাতারের বিদায় আগেই নিশ্চিত হয়েছে। আজ নেদারল্যান্ডস তাদের হারালে বা ড্র করলেই চলে যাবে পরের পর্বে। সেনেগাল ও ইকুয়েডরের মধ্যে দারুণ লড়াই হবে। যেহেতু দুই দলের সামনেই রয়েছে শেষ ষোলোর হাতছানি।
‘বি’ গ্রুপে ৪ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে থাকা ইংল্যান্ড খেলবে ওয়েলসের বিপক্ষে। আর ৩ পয়েন্ট নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে থাকা ইরানের প্রতিপক্ষ যুক্তরাষ্ট্র। এই ম্যাচটা খুব ঝাঁজালো হতে যাচ্ছে বলেই আমার মনে হয়। অন্যদিকে ওয়েলসের বিপক্ষে ইংলিশরাই ফেভারিট থাকবে।
নেদারল্যান্ডস ৩-৪-১-২ ফর্মেশনে খেলে থাকে। কাতার তাদের প্রথম দুই ম্যাচই খেলেছে ৫-৩-২ ফর্মেশনে। ইকুয়েডরের বিপক্ষে ২-০ ব্যবধানে হেরে আসর শুরু করে আয়োজক দেশটি। সেনেগালের বিপক্ষে পরের খেলায় তাদের মধ্যে কিছুটা পরিবর্তন দেখা গেছে। তবে সেটা যথেষ্ট ছিল না। তাই তো হেরে গেছে ৩-১ ব্যবধানে। নেদারল্যান্ডস পরিষ্কার ফেভারিট কাতারের বিপক্ষে। আমার মনে হয় সহজ ম্যাচ হবে ডাচদের জন্য। জেতাটা যদি তাদের হাই স্কোরিং হয়, তাহলেও অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।
সেনেগালের বিপক্ষে ২-০ ব্যবধানে জিতলেও বেশ ঘাম ঝরেছে নেদারল্যান্ডসের। এরপর ইকুয়েডরের বিপক্ষে ১-১ ড্র। ওদের রক্ষণ আসলে খুব শক্তিশালী। ভার্জিল ফন ডাইক, নাথান আকে, ডি লিখটরা আছে। ডালে ব্লিন্ড ও ডেনজেল ডামফ্রিস একটু ওপরে দুই পাশে থাকে। ব্লিন্ডের ডিফেন্ডিং খুব শক্তিশালী। ডামফ্রিসের আক্রমণ খুব শক্ত। ফ্রেংকি ডি ইয়ং পুরো মিডফিল্ড কাভার করে। সব মিলিয়ে বেশ ব্যালেন্সড একটা দল। তবে একটা জায়গায় ওরা পিছিয়ে আছে, সেটা হলোÑ গোল স্কোরিং। এই জায়গার ঘাটতি দ্রুত পূরণ করতে হবে। কারণ সামনে নকআউট পর্বে এটাই সবচেয়ে বেশি কাজে লাগবে।
সেনেগাল ও ইকুয়েডরের মধ্যকার ম্যাচটা খুব ইন্টারেস্টিং হবে। ইকুয়েডর তো প্রমাণ করেছে তারা সহজ প্রতিপক্ষ নয়। কাতারকে হারানোর পর নেদারল্যান্ডসের সঙ্গে ড্রয়েই সেটা প্রমাণ হয়ে গেছে। দারুণ কিছু খেলোয়াড় আছে ওদের। গুস্তাভো আলফারো কোচ হওয়ার পর অনেক উন্নতিও করেছে ওরা। সেনেগালের ৩ পয়েন্ট হওয়ায় ড্র করলে তাদের জন্য যথেষ্ট হবে না। তাই অলআউট খেলে যে কোনো মূল্যে জয় তুলে নিতে চাইবে ওরা। ওদের দলে সাদিও মানের অভাব স্পষ্টই দেখা যাচ্ছে। মানে থাকলে নেদারল্যান্ডসের সঙ্গে তাদের ম্যাচটা অন্য রকমও হতে পারত। শেষ পর্যন্ত যেখানে ২-০ তে হেরেছিল ওরা।
‘বি’ গ্রুপে ইংল্যান্ড ৪ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে। ইরান ৩ পয়েন্ট নিয়ে আছে পরের স্থানে। যুক্তরাষ্ট্র ও ওয়েলসের পয়েন্ট যথক্রামে ২ ও ১। ইংল্যান্ড যে ওয়েলসের বিপক্ষে এগিয়ে থাকবে এটা বলার অপেক্ষা রাখে না। ড্র হলেও ওয়েলসের কোনো কাজে আসবে না। ওয়েলস তাই অলআউটেই যাবে।
ইংল্যান্ড আবার যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে গত ম্যাচে খুব বেশি ভালো খেলেনি। ইরানের সঙ্গে ৬-২ ব্যবধানে জেতার পর যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ড্র করে। অনেকে এ ম্যাচে ইংলিশদের পারফরম্যান্সের সমালোচনা করছেন। ওয়েলস ম্যাচে তাই আগের চেহারায় আসার চেষ্টা করবে তারা। গ্যারেথ সাউথগেট দলে কিছুটা পরিবর্তনও আনতে পারে। ওয়েলস কোচ রব পেজের বিভিন্ন ফর্মেশনে দল সাজানোর সুযোগ আছে। বাছাই পর্বে আমরা সেটাই দেখেছি। শেষ পর্যন্ত ৩-৪-২-১ সে বাস্তবায়ন করছে। ইংল্যান্ডও এই ফর্মেশনে খেলতে পছন্দ করে। তবে এই ম্যাচে তারা কোন ফর্মেশনে মাঠে নামে সেটা দেখার বিষয় হবে।
ইরান ও যুক্তরাষ্ট্র ম্যাচটা খুব ভালো হবে। এমনিতেই দুই দেশের মধ্যে রাজনৈতিক টানাপড়েন আছে। আর এই ম্যাচে যখন তারা মাঠে নামছে দুই দলেরই সুযোগ দ্বিতীয় পর্বে যাওয়ার। ইরান খুব ভালো ডিফেন্ডিং সাইট। কাউন্টারেও বেশ ভালো। যুক্তরাষ্ট্র আবার খুব হাইপ্রেসিং করে খেলে। ইরান যেহেতু এক পয়েন্ট এগিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে, তাই ওরা হারতে চাইবে না। যুক্তরাষ্ট্র যেকোনো মূল্যে ম্যাচ বের করতে চাইবে। সব মিলিয়ে যুদ্ধের দামামা মাঠে থাকতেই পারে!
জার্ড মুলার, ইয়ুর্গেন ক্লিন্সম্যান, মাইকেল বালাক, মিরোসøাভ ক্লোসা। ১৯৭০ থেকে বিশ্বকাপের জার্মানির গোলের সব প্রতিভু। ক্লোসা ১৬ গোল নিয়ে সর্বোচ্চ গোলদাতা টুর্নামেন্টের। মুলার করেছেন ১৪টি। ক্লিন্সম্যান ১১। ২০০২ বিশ্বকাপে ব্রাজিলের কাছে হেরে রানার্সআপ জার্মানরা ১৪টি গোল করেছিল। ১৮টি গোল করে ২০১৪ বিশ্বকাপ জিতেছিল তারা। সেমিফাইনালে এক ব্রাজিলকেই হারিয়ে দিয়েছিল ৭-১ গোলে।
অথচ সেই জার্মানি ২০১৮ থেকে ভুগছে গোলখরায়। সেবার মাত্র দুই গোল করে বিদায় নিয়েছিল গ্রুপ পর্ব থেকেই। এবারের বিশ্বকাপেও সেই খরা কাটিয়ে উঠতে পারেনি। প্রথম ম্যাচে গুনদোয়ানের গোলে এগিয়ে গেলেও হেরেছে জাপানের কাছে (২-১)। রবিবার স্পেনের সঙ্গে বাঁচামরার লড়াইয়ে স্পেনের বিপক্ষে পিছিয়ে পড়েছিল। তৃতীয় আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলতে নামা নিকোলাস ফুলক্রুগ ত্রাতা হয়ে গোল করেছেন। না হলে সে রাতেই মোটামুটি শেষ হয়ে যেত জার্মানদের এবারের বিশ্বকাপও। এই ফুলক্রুগ আবার একাদশের খেলোয়াড় নন। ১২০ ম্যাচে ৪৪ গোল করার টমাস মুলারকে ৭০ মিনিটে পাল্টে তাকে নামান কোচ হান্স ফ্লিক। মাঠে নামার ১৩ মিনিটের মাথায় লেরয় সানের পাস থেকে জামাল মুসিয়ালার পা ঘুরে বল দারুণ শটে জালে পাঠান ২৯ বছর বয়সী ফুলক্রুগ। ১২ মাস আগেও জার্মান দ্বিতীয় বিভাগের লিগে ঘুরে বেড়ানো ফুলক্রুগ অবশ্য দারুণ ফর্ম নিয়ে বিশ্বকাপ খেলতে এসেছেন। ওয়ের্ডার ব্রেমেনের ২৫ গোলের ১০টিই তার।
ফুলক্রুগের এই গোল চারবারের চ্যাম্পিয়নদের আশাটা জিইয়ে রেখেছে। শেষ ম্যাচে কোস্টারিকাকে হারালে রানার্সআপ হয়ে উঠতে পারবে শেষ ষোলোতে। সেক্ষেত্রে অবশ্য জাপানকে স্পেনের কাছে হারাতে হবে। যদি সে ম্যাচটি ড্রও হয়ে, তবু সুযোগ থাকবে জার্মানির। সে ক্ষেত্রে জাপান-জার্মানির পয়েন্ট হবে সমান, দেখা হবে গোল ব্যবধান। এই মুহূর্তে জাপানের গোল ২, খেয়েছে তারা ২টি। জার্মানি গোল করেছে ২টি, খেয়েছে ৩টি। আর জাপান যদি জার্মানির মতো চমকে দেয় স্পেনকেও, সেক্ষেত্রে কোস্টারিকাকে হারিয়েও লাভ হবে না। কারণ গোল ব্যবধানে স্পেন অনেক এগিয়ে (৮-১)।
কাজেই গোলটাই বড় হয়ে দেখা দিচ্ছে জার্মানির ক্ষেত্রে। গতবার মেক্সিকোর কাছে অপ্রত্যাশিত হারের (০-১) পর দ্বিতীয় ম্যাচে সুইডেনকে মার্কো রেউস আর টনি ক্রুসের দু’গোলে হারালেও দক্ষিণ কোরিয়ার কাছে হেরে (০-২) বিদায় নেয় প্রথম পর্ব থেকেই। ফুলক্রুগ অবশ্য আশায় আছেন শেষ ম্যাচে এবার ঠিক হয়ে যাবে সব, ‘আমাদের উন্নতির আরও জায়গা আছে। আশা করছি গ্রুপে শেষ ম্যাচে সব কিছু ঠিকমতো হবে।’ জার্মান কোচ হান্স ফ্লিক দাবি করেছেন দল সঠিক পথেই আছে। রক্ষণে আরও উন্নতির তাগিদ দিয়েছেন তিনি, ‘স্পেন দারুণ একটি দল। তাদের বেশ কিছু তরুণ খেলোয়াড় আছে। আমাদের ডিফেন্সে আরও উন্নতি করতে হবে। তবে গুরুত্বপূর্ণ হলো মানসিকতা।’
১ ডিসেম্বর রাতে শেষ ম্যাচে কোস্টারিকার বিপক্ষে জার্মানরা এই মানসিকতা কতটা রাখতে পারে, সেটাই দেখার। গোল করতে না পারলে এবারও প্রথম রাউন্ডেই শেষ হবে কাপ জয় আর ফাইনালে খেলার হিসাবে বিশ্বকাপের সবচেয়ে সফল দলকে।
বিশ্বকাপ ফুটবল দামামার মাঝে ক্রিকেটে আরেক দামামা বাজিয়েছে ভারতের রুতুরাজ গায়কোয়াড় ১ ওভারে ৭ ছক্কা হাঁকিয়ে। ৫০ ওভারের টুর্নামেন্ট বিজয় হাজারে ট্রফিতে উত্তর প্রদেশের বাঁহাতি স্পিনার শিবার ১ ওভারে ৪৩ রান তুলে নেন ভারতের ৯ টি-টোয়েন্টি খেলা এই ব্যাটার। আহমেদাবাদে গতকাল কোয়ার্টার ফাইনালে ৪৯তম ওভার শুরুর আগে মহারাষ্ট্রের রান ছিল ৫ উইকেটে ২৭২ রান। উত্তর প্রদেশের বাঁহাতি স্পিনার শিবার সামনে ছিলেন মহারাষ্ট্র অধিনায়ক ও ওপেনার রুতুরাজ গায়কোয়াড়। ডানহাতি ব্যাটারের রান ছিল ১৪৭ বলে ১৬৫। রাউন্ড দ্য উইকেটে বল করা শিবার প্রথম ও দ্বিতীয় বল লং অন দিয়ে, তৃতীয়টি মিড উইকেট, চতুর্থটি আবার লং অন দিয়ে, পরের বলটি ছিল নো বল, সোজা সাইটস্ক্রিন বরাবর পাঠান রুতুরাজ, ফ্রি হিট থেকে ওয়াইড লংঅনে পাঠিয়ে ডাবল সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন গায়কোয়াড়। শেষ বলে ওভার দ্য উইকেটে আসেন শিবা, তবে ছক্কা আটকাতে পারেননি। সপ্তম ছক্কাটিও আসে ওয়াইড লং অন দিয়ে। শেষ পর্যন্ত তারা তোলে ৫ উইকেটে ৩৩০ রান, এর মধ্যে গায়কোয়াড় একাই করেন ১৫৯ বলে অপরাজিত ২২০ রান। ইনিংসে ১০টি চারের সঙ্গে তিনি মারেন ১৬টি ছক্কা।
শিবার আগে লিস্ট-এ ক্রিকেটে ১ ওভারে ৪৩ রান দিয়েছিলেন সেন্ট্রাল ডিস্ট্রিক্টের উইলেম লাডিক। সে ক্ষেত্রে অবশ্য ব্যাটসম্যান ছিলেন দুজন নর্দার্ন ডিস্ট্রিক্টের ব্রেট হ্যাম্পটন ও জো কার্টার। তার আগের রেকর্ডটি হয়েছিল ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে, ২০১৩-১৪ মৌসুমে। মিরপুরের শেরেবাংলা জাতীয় স্টেডিয়ামে আবাহনীর আলাউদ্দিন বাবুর ১ ওভারে উঠেছিল ৩৯ রান। ব্যাটসম্যান ছিলেন এল্টন চিগুম্বুরা।
রাজধানীর সরকারি কবি নজরুল সরকারি কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি এম ওয়াসিম রানার (৩০) লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। তিনি গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন বলে জানিয়েছেন তার বন্ধুরা। শুক্রবার (০২ জুন) রাত সাড়ে ১২টার দিকে চানখারপুলের একটি বাসায় তার বন্ধুরা তাকে দরজা ভেঙে ঝুলন্ত অবস্থায় উদ্ধার করে।
অচেতন অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। ঢামেক হাসপাতাল পুলিশ ফাড়ির ইনচার্জ পরিদর্শক মো. বাচ্চু মিয়া মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
রানার বন্ধু ইমরান হোসেন বাবু জানান, 'রানা কলেজের ইসলামের ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী ছিলেন। তার গ্রামের বাড়ি বাগেরহাট জেলার চিতলমারী উপজেলায়। কয়েক দিন যাবৎ রানার খু্ব মন খারাপ ছিল। একাকী থাকতে চাইত। চুপচাপ থাকত। তবে কী চিন্তা করত সে ব্যাপারে কিছু বলত না। তাই আমি তাকে বলেছিলাম- বন্ধু, তুমি কিছুদিনের জন্য কক্সবাজার ঘুরে আস।'
ঘটনার পরপরই রানার স্ত্রী পরিচয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গের সামনে রাত দেড়টার সময় সানজিদা নামে এক মেয়েকে আহাজারি করতে দেখা যায়। সানজিদা আক্তার (জান্নাতি) কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সাবেক কমিটির ছাত্রী বিষয়ক সম্পাদক ছিলেন।
সানজিদা আক্তারের প্রতিবেশী মাইদুল ইসলাম জানান, 'সানজিদা আপুকে আমরা জান্নাতি আপু বলে ডাকি। রানা ভাইয়ের সঙ্গে তার বিয়ে হয়েছে অনেকদিন আগে। রাজনৈতিক কারণে বিষয়টি জানাজানি হয়নি। জান্নাতি আপু ডেমরা রূপগঞ্জের তারাবো এলাকায় একটি বাসায় থাকতেন।'
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সাবেক এক সহসভাপতি বলেন, 'আমরা জানতাম, সানজিদার সঙ্গে প্রেম ছিল। বিয়ে হয়েছিল কি-না তা সঠিক জানি না।' মৃত্যুর কারণ যা-ই হোক, সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে আসল রহস্য উন্মোচন করে বিচারের দাবি জানান তিনি।
রানার মৃত্যুর খবরে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটিসহ বিভিন্ন ইউনিটের নেতাকর্মীরা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ছুটে আসেন এবং তারা শোক জানান। আজ (০৩ জুন) শনিবার সকাল সাড়ে ৮টায় কবি নজরুল সরকারি কলেজ মাঠে তার জানাজা অনুষ্ঠিত হবে।
টেস্ট ক্রিকেটে সিলেটের পথচলা শুরু হয়েছিল ২০১৮ সালে। অভিজাত সংস্করণে যা ছিল দেশের অষ্টম ভেন্যু। জিম্বাবুয়ের সঙ্গে ম্যাচ দিয়ে সাদা পোশাকের ক্রিকেটে পা রাখে দেশের সবচেয়ে সুন্দর এই স্টেডিয়ামটি। তবে মাঠের অভিষেক ম্যাচেই হেরে যায় বাংলাদেশ। তারপর আর কোনো পাঁচ দিনের খেলা গড়ায়নি এই মাঠে। এ নিয়ে স্থানীয়দের আক্ষেপের শেষ নেই।
অবশেষে অপেক্ষার প্রহর ফুরাচ্ছে। পাঁচ বছর পর আবারও টেস্ট ক্রিকেট অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের পরিচালক ও সিলেট বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল।
ক্রিকবাজের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেছেন, ‘আগামী নভেম্বর-ডিসেম্বরে আমরা নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে দুই ম্যাচের সিরিজের প্রথম টেস্ট আয়োজন করতে পারব বলে আশা করছি। এটি আমাদের জন্য খুব একটি উপলক্ষ হবে। কারণ পাঁচ বছর পর সিলেটের মাঠে টেস্ট ক্রিকেট ফিরবে।’
সম্প্রতি নিউজিল্যান্ড ক্রিকেটের প্রতিনিধি দল সিলেট সফর করেছে। তারা সেখানকার মাঠসহ সব সুযোগ সুবিধা পরিদর্শন করেছেন। পাশাপাশি নিরাপত্তার বিষয়ে স্থানীয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারি বাহিনীর সঙ্গেও বৈঠক করেছেন। সবকিছু দেখে তারা এখানে আরও বেশি ম্যাচ আয়োজনের জন্য উন্মুখ বলে জানিয়েছেন বিসিবির নারী উইংয়ের চেয়ারম্যান নাদেল।
তিনি যোগ করেছেন, ‘নিউজিল্যান্ড ক্রিকেটের প্রতিনিধি দল আমাদের সুযোগ-সুবিধা নিয়ে বেশ মুগ্ধ। তাদের প্রতিক্রিয়া দেখে মনে হয়েছে আমরা তাদের সব প্রত্যাশা ও প্রয়োজনীয়তা পূরণ করতে পারব।’
এফটিপি সূচি অনুযায়ী চলতি বছর বাংলাদেশের বিপক্ষে তিন ওয়ানডে ও দুই টেস্ট ম্যাচের সিরিজে খেলার কথা নিউজিল্যান্ডের। তবে সিরিজটি হবে দুই ভাগে। প্রথম ভাগে সেপ্টেম্বরের শেষভাগে বাংলাদেশের সঙ্গে ওয়ানডে খেলবে কিউইরা। এই সিরিজ খেলেই বিশ্বকাপ খেলতে ভারতে যাবে দুই দল।
বিশ্বকাপের পর হবে দুই দলের টেস্ট সিরিজ। নভেম্বরের শেষ দিকে আবারও বাংলাদেশে আসবে কিউইরা। বিসিবি প্রস্তাবিত সূচি অনুযায়ী ২১ নভেম্বর ঢাকায় পা রাখার কথা সফরকারীদের। এরপর একটি প্রস্তুতি ম্যাচও খেলবে দলটি। ২৮ নভেম্বর থেকে ২ ডিসেম্বর হবে বাংলাদেশ ও নিউজিল্যান্ডের মধ্যকার সিরিজের প্রথম টেস্ট।
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ৩০০ আসনের সীমানা নির্ধারণ করে চূড়ান্ত গেজেট প্রকাশ করেছে নির্বাচন কমিশন। প্রকাশিত গেজেটে কয়েকটি আসনে পরিবর্তন এসেছে।
গত বৃহস্পতিবার ইসি সচিব মো. জাহাংগীর আলম স্বাক্ষরিত এ সংক্রান্ত গেজেট শনিবার (৩ জুন)বিজি প্রেসের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, নির্বাচন কমিশন কর্তৃক জাতীয় সংসদের নির্বাচনী এলাকার সীমানা নির্ধারণ আইন, ২০২১-এর ধারা ৬-এর উপধারা (৩)-এর অধীনে সংসদের পুনর্নির্ধারিত নির্বাচনী এলাকার প্রাথমিক তালিকা গত ২৬ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ গেজেটের অতিরিক্ত সংখ্যায় প্রকাশিত হয় এবং ওই বিজ্ঞপ্তির অনুচ্ছেদ ৩-এর অধীন পুনর্নির্ধারিত নির্বাচনী এলাকার বিষয়ে দাবি/আপত্তি/সুপারিশ/মতামত আহ্বান করা হয়।
আরও বলা হয়, পরে নির্ধারিত সময়সূচি মোতাবেক প্রাপ্ত দাবি/আপত্তি/সুপারিশ/মতামতের ওপর কমিশন কর্তৃক প্রকাশ্য শুনানি গ্রহণ করা হয়। নির্বাচন কমিশন উক্ত আইনের ধারা ৬-এর উপধারা (৪) অনুযায়ী দাবি/আপত্তি/সুপারিশ/মতামত পর্যালোচনা করে প্রাথমিক তালিকায় প্রকাশিত নির্বাচনী এলাকার প্রয়োজনীয় সংশোধন করে সংযুক্ত তপশিল মোতাবেক জাতীয় সংসদের ৩০০ আসনের পুনর্নির্ধারিত সীমানার চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করল।
চারপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে চাপ চাপ রক্ত, ছেঁড়া জামাকাপড়, খাবার, ব্যাগপত্র, রক্তমাখা দেহ। এসবের মাঝেই ভাঙা লাইনের উপর পাওয়া গেলো ছোপ ছোপ রক্তমাখা একটি কবিতার খাতা।
খাতায় লেখা বিভিন্ন রকমের ভালোবাসার কবিতা, মাঝে মাঝে আবার নকশাও আঁকা। হাতে নিয়ে পাতা উল্টাতেই চোখে পড়ল,
‘‘অল্প অল্প মেঘ থেকে হালকা হালকা বৃষ্টি হয়, ছোট্ট ছোট্ট গল্প থেকে ভালোবাসা সৃষ্টি হয়....’’
পাতা উল্টাতেই চোখে পড়ল আরও একটি কবিতা। তার শুরুতে লেখা,
‘ভালোবাসা এই মন তোকে চায় সারাক্ষণ,
আছিস তুই মনের মাঝে
পাশে থাকিস সকাল সাঁঝে।
কী করে তোকে ভুলবে এই মন,
তুই যে আমার জীবন...’
কবিতাটি লেখক কে, কার জন্য এই কবিতা লিখা, তা জানার উপায় নেই। সম্ভবত, কবিতার খাতার মালিক দুর্ঘটনাগ্রস্ত ট্রেনটিতেই ছিলেন। দুর্ঘটনার ভয়াবহতা এতটাই বেশি ছিল যে, সেই কবিতার খাতা ছিটকে এসে পড়েছে ভাঙা লাইনে।
কবিতার খাতার মালিক সুস্থ, আহত না মৃত, তাও জানা সম্ভব হয়নি। যিনি লিখেছেন, তিনি পুরুষ না মহিলা তা-ও জানা সম্ভব হয়নি। তবে লেখা পড়ে বোঝা যায়, কবিতাটি প্রিয় কারও উদ্দেশে লেখা। যাঁর উদ্দেশে এই কবিতা লেখা, এই কবিতার খাতা কি তাঁর কাছেও কোনও দিন পৌঁছাবে! তাও জানার উপায় নেই।
ভারতের ওড়িশার বালেশ্বরে ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনাস্থলে এই কবিতার খাতা হাতে পায় আনন্দবাজারের প্রতিনিধি। এভাবেই এক প্রতিবেদনে বর্ণনা তুলে ধরে ভারতীয় গণমাধ্যম আনন্দবাজার।
ভারতীয় গণমাধ্যম এনডিটিভির তথ্যমতে, শনিবার ভোর পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা ২৩৩। আহত ৯০০ জনের বেশি। ভেতরে এখনও আটকে আছে অনেক মানুষ।
প্রথম দুই সেটই গড়িয়েছে টাইব্রেকারে। প্রথমটি নিষ্পত্তি হয়েছে ৮৫ মিনিটে। দ্বিতীয়টিও টাইব্রেকারে। সেটির নিষ্পত্তি ঘণ্টার ওপরে। দুটোতেই জয় নোভাক জকোভিচের। তারপরেরটিও জিতে যান এই সার্বিয়ান। ১৪তম ফ্রেঞ্চ ওপেনের খেলায় স্পেনের আলেজান্দ্রো ফোকিনার সঙ্গে ৩-০ সেটে জয়লাভ করেন তিনি। যে জয়ে মধুর প্রতিশোধ নিয়ে শেষ ষোলো নিশ্চিত করেছেন তিনি।
৩৬ বছর বয়সী এই নাম্বার ওয়ান টেনিস তারকা প্রথম সেটে কিছুটা ছন্দহীন ছিলেন। তবে চ্যাম্পিয়নদের ঘুরে দাঁড়াতে তো সময় বেশি লাগে না। জকোভিচও ঘুরে দাঁড়িয়েছেন। তারপর ফোকিনাকে কোনো সেট জিততে না দিয়েই ম্যাচ শেষ করেন তিনি।
প্রায় ৪ ঘণ্টাব্যাপী চলা এই ম্যাচটিতে এক পেশে জয় হলেও প্রতিটি সেটেই উত্তেজনার পারদ ছড়িয়েছেন দুজন। সমর্থকেরাও বারবার হয়েছেন রোমাঞ্চিত। তবে শেষ পর্যন্ত নোভাক জকোভিচের সমর্থকেরাই হাসি নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন। আগামী সোমবার জকোভিচ শেষ ষোলোর ম্যাচ খেলতে নামবেন। সেখানে প্রতিপক্ষ হিসেবে কার্লোস আলকারাজকে পেতে পারেন তিনি।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতিতে জোর করে হারানো হয়েছে।
গতকাল রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
এই নিয়ে ঘনিষ্ঠ অনেকের কাছে জানতে চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। ভিন্ন কোনো জটিলতার সৃষ্টি হলে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে গাজীপুরের যেকোনো আসন থেকে মনোনয়ন পাবেন তিনি। সে ক্ষেত্রে গাজীপুর সিটির ভোটে যে সংসদ সদস্য দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে কাজ করার তথ্য মিলবে তাকেই বাদ দেওয়া হবে। এ সিটি ভোটে হারের কারণ জানতে প্রধানমন্ত্রী নিজস্ব একটি সংস্থাকে নির্ভুল তথ্য দিতে নির্দেশ দিয়েছেন।
নির্বাচনকালীন সরকারে মন্ত্রীর দায়িত্বও পেতে পারেন আজমত, ওই সূত্র দাবি করে। সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
নানা অব্যবস্থাপনায় এগোচ্ছে না প্রাথমিক শিক্ষা। প্রায় শতভাগ শিশু ভর্তির আওতায় এসেছে অনেক আগে। এরপর মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতের কাজ অনেকটাই আটকে আছে। খোদ সরকারি সংস্থার গবেষণায় উঠে এসেছে প্রাথমিকে চরম দুরবস্থার কথা। গবেষয়ণা প্রতিবেদন অনুযায়ী, কাক্সিক্ষত মানের চেয়ে শিশুরা অনেক পিছিয়ে আছে। কিছু শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু কাজ করার চেষ্টা করলেও কথায় কথায় তাদের ওপর নেমে আসছে শাস্তির খড়গ। মানের উন্নয়ন না হলেও ঠিকই অধিদপ্তরে বসে ছড়ি ঘোরাচ্ছেন কর্মকর্তারা।
প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের শিখন ঘাটতি নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহায়তায় সম্প্রতি এই গবেষণা করেছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। সেখানে দেখা যায়, করোনা সংক্রমণের আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা গড়ে ইংরেজি বিষয়ে যতটা শিখত, করোনাকালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের ফলে তা সাড়ে ১২ শতাংশ কমে গেছে। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের হার কমেছে প্রায় সাড়ে ১৬ শতাংশ। আর তৃতীয় শ্রেণির বাংলায় কমেছে ১৫ শতাংশের মতো।
গবেষণার তথ্য বলছে, করোনার আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ইংরেজিতে শিখন অর্জনের গড় হার ছিল প্রায় ৪৯ শতাংশ। করোনাকালে বন্ধের প্রভাবে এই হার কমে দাঁড়িয়েছে ৩৬ শতাংশ। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ^পরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের গড় হার ৫১ শতাংশের বেশি, যা আগে ছিল ৬৮ শতাংশের মতো। পঞ্চম শ্রেণির বাংলা, গণিত ও বিজ্ঞানেও ক্ষতি বেড়েছে।
এনসিটিবির সদস্য (প্রাথমিক শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক ড. এ কে এম রিয়াজুল হাসান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রাথমিক শিক্ষার ঘাটতি পূরণে এ ধরনের গবেষণার দরকার ছিল। আন্তর্জাতিক মানদ- বজায় রেখেই তা করা হয়েছে। আমরা এই গবেষণা প্রতিবেদন দু-এক দিনের মধ্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠাব। আমরা অন্তত এক বছরের জন্য রেমিডিয়াল ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেছি। মন্ত্রণালয় সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ নিচ্ছে।’
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, প্রাথমিক শিক্ষা দিন দিন পিছিয়ে পড়লেও সেদিকে তেমন একটা নজর নেই প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের। তারা ব্যস্ত আছে লাখ লাখ শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের বদলি-পদায়ন নিয়ে। কেউ কথা বললেই তার ওপর নেমে আসছে শাস্তি। ফলে শিক্ষকরাও দিন দিন তাদের আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন; কোনো রকমে দিন পার করছেন।
জানা যায়, প্রাথমিক শিক্ষায় উদ্ভাবনী ও অনন্য অবদানের জন্য ২০১৯ সালে সারা দেশের মধ্যে শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষক নির্বাচিত হন রাজবাড়ী জেলার স্বাবলম্বী ইসলামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. শফিকুল ইসলাম। একই বছর রাজধানীর মোহাম্মদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক খায়রুন নাহার লিপি শ্রেষ্ঠ সহকারী শিক্ষিক নির্বাচিত হন। সাধারণত আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী এসব শিক্ষকের হাতে পদক তুলে দেন। শিক্ষকদের পাশাপাশি সেরা শিক্ষার্থীদের পদক দেওয়া হয় একই অনুষ্ঠানে। কিন্তু করোনাকালে তাদের হাতে জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষক পদক তুলে দেওয়া যায়নি। গত ১২ মার্চ রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে তাদের হাতে এ পদক তুলে দেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন। তাই অনুষ্ঠানের কয়েক দিন আগে স্বাভাবিকভাবে তারা দাবি তুলেছিলেন, দেরি হলেও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে তারা পদক নেবেন; যা তাদের সারা জীবনের স্বপ্ন পূরণ করবে। কিন্তু সেটা না হওয়ায় তারা প্রতিমন্ত্রীর হাত থেকে ঠিকই পদক নেন। তবে এর ৬৮ দিনের মাথায় এই শ্রেষ্ঠ শিক্ষকদের প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবি তোলায় চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। একই ঘটনায় জয়পুরহাটের হিন্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. মাহবুবুর রহমানকেও সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। কারণ তার বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী এ পদক নিতে ১১ মার্চ ঢাকা এসেছিল। ওই শিক্ষকও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবিকে সমর্থন করেছিলেন। সাময়িক বরখাস্ত করা হলেও তাদের কাউকে শোকজ করা হয়নি; যা বিধিবহির্ভূত বলছেন শিক্ষকরা।
জানতে চাইলে ঢাকা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. আবদুল আজিজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সাময়িক বরখাস্তের পরবর্তী যে প্রক্রিয়া আছে, সেদিকেই আমরা যাব।’ এর বেশি কিছু তিনি বলতে রাজি হননি। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াতের সঙ্গে এসব ব্যাপারে কথা বলার জন্য গতকাল একাধিকবার চেষ্টা করলেও তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি।
বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক শিক্ষা গবেষণা পরিষদের সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে পদক নেওয়া একজন শিক্ষকের জীবনে সেরা প্রাপ্তি। এ জন্য শিক্ষকদের দাবি থাকতেই পারে, প্রত্যাশা থাকতেই পারে। তবে সবচেয়ে বড় কথা হলো, আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে কাউকে শাস্তি দেওয়া যায় না। শিক্ষকদের যেভাবে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে, তা মোটেও ঠিক হয়নি বলে আমার মনে হয়। এর প্রভাব অন্যান্য শিক্ষকের মধ্যেও পড়বে, এটাই স্বাভাবিক।’
শুধু তা-ই নয়, করোনাকালে বন্ধ থাকা প্রাথমিক শিক্ষা চালু রাখতে কিছু শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু অনলাইন প্ল্যাটফর্ম চালু করেন; যাতে অনলাইন ক্লাস, শিক্ষকদের মধ্যে আলোচনাসহ নানা কাজ করা হয়। এতে প্রতিটি ফেসবুক গ্রুপে লাখ থেকে হাজারো শিক্ষক যুক্ত হয়েছেন। এখনো সেসব গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে। কিন্তু সেই গ্রুপগুলোকেই এখন শায়েস্তা করার হাতিয়ার হিসেবে বেছে নিয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অপব্যবহারের অজুহাত দেখিয়ে অনলাইনে যুক্ত থাকা অনেক শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাকেই দেওয়া হচ্ছে কারণ দর্শানো নোটিস (শোকজ)। সরকার যেখানে শিক্ষকদের ডিজিটালি আপডেট হওয়ার কথা বলছে, সেখানে প্রায় অনেকটাই উল্টো পথে হাঁটছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।
শিক্ষকরা জানান, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে দীর্ঘদিন ধরে আসন গেড়ে বসেছেন কিছু কর্মকর্তা। অনেকেই ৬ থেকে ১২ বছর ধরে একই দপ্তরে চাকরি করছেন। তাদের যে দায়িত্বই থাক না কেন যত লাভজনক কাজ আছে, সেগুলোতেই তারা হাত দিচ্ছেন। যোগ্য কর্মকর্তাকে অধিদপ্তরে আনলে তাদের সরে যেতে হবে, এ জন্য তারা নানাভাবে ঊর্ধ্বতনদের ভুল বুঝিয়ে মাঠপর্যায়ে শাস্তি দিয়ে সবাইকে ভীত করে তুলছেন। এতে পিছিয়ে পড়ছে প্রাথমিক শিক্ষার মান।
প্রায় দুই বছর বন্ধ থাকার পর গত মার্চ-এপ্রিলে অনলাইনে প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলি করা হয়। যদিও নিয়ম ছিল, অনলাইনে নির্দিষ্ট মানদন্ড পূরণ ছাড়া কেউ বদলি হতে পারবেন না। কিন্তু তা মানেনি প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। ঢাকা ও ঢাকার বাইরে নিয়ম ভেঙে কয়েক শো শিক্ষকের বদলির আদেশ জারি করা হয়। আর এই বদলি-পদায়নে বড় অঙ্কের অর্থ লেনদেন হয়েছে বলে দাবি শিক্ষকদের; যা ভাগ-বাটোয়ারা হয়েছে মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের মধ্যে। আবার অনেক জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও থানা শিক্ষা কর্মকর্তাদের বদলিতেও সমন্বয়হীনতা দেখা দিচ্ছে। কাউকে ক্ষোভের বশবর্তী হয়েও অনেক দূরে বদলি করে দেওয়া হচ্ছে। এতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়ন।
জানা যায়, চলতি বছর থেকে প্রথম শ্রেণিতে চালু হয়েছে নতুন শিক্ষাক্রম। আর আগামী বছর থেকে দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণিতে এবং ২০২৫ সাল থেকে চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম চালু হবে। কিন্তু তা পড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নেই অধিদপ্তরের। শিক্ষকদের নামমাত্র প্রশিক্ষণেই দায়িত্ব শেষ করা হয়েছে। আসলে এই শিক্ষাক্রম শিক্ষার্থীরা কতটুকু আত্মস্থ করতে পারছে বা এ জন্য আর কী করা প্রয়োজন, সে ব্যাপারে তেমন নজর নেই।
এ ছাড়া এখনো প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষকরা বেতন পান ১১তম গ্রেডে ও সহকারী শিক্ষকরা পান ১৩তম গ্রেডে। দুই ধরনের প্রায় চার লাখ শিক্ষকই ১০ম গ্রেডে বেতনের দাবি করে আসছেন। এ ছাড়া সহকারী থানা শিক্ষা অফিসার ও সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসারাও দীর্ঘদিন ধরে নবম গ্রেডের দাবি করছেন। আর মাঠে কাজ করা এসব শিক্ষক ও কর্মকর্তার পদোন্নতিও নেই বললেই চলে। কিন্তু এগুলো সমাধানেও তেমন কোনো উদ্যোগ নেই মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের; যা প্রাথমিকের মান উন্নীতের ক্ষেত্রে বড় অন্তরায় বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
প্রবীণ শিক্ষক নেতা মো. সিদ্দিকুর রহমান আরও বলেন, ‘এখনো মফস্বলে বা দুর্গম অঞ্চলের অনেক স্কুলেই এক-দুজন শিক্ষক। অনেক স্কুলে শিক্ষকের পদ তিন-চার বছর ধরে শূন্য। শিক্ষক না থাকলে এর প্রভাব শিক্ষার্থীদের ওপরও পড়ে। এ ছাড়া সরকারি প্রাথমিকে সাধারণত দরিদ্র পরিবারের শিক্ষার্থীরা আসে। তাদের একটু আলাদা যতœ নেওয়া প্রয়োজন। সেগুলোও হচ্ছে না। শিক্ষকরাও তাদের বেতন-ভাতায় সন্তুষ্ট নন। সব মিলিয়ে আমরা প্রাথমিক শিক্ষায় কাক্সিক্ষত মান অর্জন করতে পারছি না।’
ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে গাজীপুর সিটি নির্বাচনে হেরে যাওয়া প্রার্থী আজমত উল্লা খানকে।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে থাইল্যান্ডের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতি জোর করে হারানো হয়েছে।
গত রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন তেমনি যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
দুই দশকেরও বেশি ক্যারিয়ারে অসংখ্য নাটক-টেলিছবি নির্মাণ করেছেন শিহাব শাহীন, উপহার দিয়েছেন হিট প্রোডাকশন। নিজেকে শুধু রোমান্টিক জনরায় আটকে না রেখে কাজ করেছেন বহুমাত্রিক ঘরানায়। নিজেকে প্রমাণ করেছেন সব্যসাচী নির্মাতা হিসেবে। নিজেকে শুধু টেলিভিশনেই আটকে রাখেননি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তিনিও পাল্টেছেন প্লাটফর্ম এবং সেখানেও দেখিয়েছেন নিজের মুন্সিয়ানা।
সর্বশেষ গেল ঈদে তুমুল সাড়া ফেলেছে তার নির্মিত স্পিন অফ সিরিজ ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’। সাফল্যের পর কিছুদিন আগেই অনুষ্ঠিত হয়ে গেল এর সাকসেস পার্টি যেখানে উপস্থিত ছিলেন টিমের কলাকুশলী থেকে শুরু করে অন্যান্য নির্মাতা ও শিল্পীরা। সেই ধারাবাহিকতায় এবার তিনি নিয়ে আসছেন সিরিজটির সিক্যুয়াল। শুধু তাই নয়, একসঙ্গে একাধিক সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে আসছেন জনপ্রিয় নির্মাতা।
শিহাব শাহীন বলেন, ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’ নিয়ে এতটা প্রত্যাশা ছিল না কিন্তু সে সাড়া পেয়েছি তা প্রত্যাশার চেয়েও বেশি। দর্শকরাই কাজটিকে গ্রহণ করেছেন আর তাই এখন এর সিক্যুয়াল নিয়ে আসার পরিকল্পনা করছি। স্পিন অফে দেখিয়েছি অ্যালেন স্বপনের পেছনের গল্প। সিন্ডিকেটে তাকে আমরা দেখিয়েছিলাম ২০২২ সালে, সে ঢাকায় আসার পর এর মাঝের সময়টার গল্পই থাকবে সিক্যুয়ালে। যেটার সংযোগ থাকতে পারে ‘সিন্ডিকেট ২’-তে। ঈদের পরপর এটার শুট করার সম্ভাবনা রয়েছে।
এই সিক্যুয়াল ছাড়াও আরও বেশ কিছু সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে সবকিছু চূড়ান্ত হয়েছে বলেও জানান এ নির্মাতা। তিনি বলেন, মোস্তফা সরয়ার ফারুকির তত্ত্বাবধানে ওটিটি প্লাটফর্ম চরকির ‘মিনিস্ট্রি অফ লাভ’ সিরিজের একটা কনটেন্ট করবো। এখনও কাস্টিং চূড়ান্ত হয়নি। এছাড়া হইচইয়ের একটি সিরিজ ও বিঞ্জের একটি ফিল্ম করা হবে। নাম চূড়ান্ত হয়নি। তবে দুটোতেই জিয়াউল ফারুক অপূর্ব থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
মাঝে শোনা গিয়েছিল, আফরান নিশোকে নিয়ে ‘সিন্ডিকেট ২’ নাকি হবে না, এটা কতটুকু সত্য? এমন প্রশ্নে শিহাব শাহীন বলেন, এটা ভূয়া তথ্য। ডিসেম্বরের শেষ দিকে ‘সিন্ডিকেট ২’ করবো তার আগে সেপ্টেম্বরে শুরু করবো ‘রসু খাঁ’।
জানা গেছে, আগামী সপ্তাহে অস্ট্রেলিয়া পাড়ি জমাচ্ছেন শিহাব শাহীন। দেশে ফিরবেন মাসের শেষ নাগাদ এরপর কাজে নামবেন।
দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী আবাহনী লিমিটেড ও মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের মধ্যকার ফেডারেশন কাপ ফুটবলের ফাইনাল দেখতে কুমিল্লায় উড়ে গেছেন বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন।
কুমিল্লার শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত স্টেডিয়ামে আজ বেলা ৩টা ১৫ মিনিটে শুরু হয়েছে ম্যাচটি। সালাউদ্দিন ম্যাচ শুরুর ঘণ্টা খানেক আগে কুমিল্লায় পৌঁছান।
ঢাকা থেকে সড়ক পথে কুমিল্লায় পাড়ি দিতে মাত্র দুই ঘণ্টা সময় লাগে। তবে সালাউদ্দিন দূরত্বটা পাড়ি দিয়েছেন হেলিকপ্টারে করে। যা আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
টাকার অভাবে কদিন আগে নারী ফুটবলারদের অলিম্পিক বাছাইয়ে পাঠায়নি বাফুফে। অথচ ঢাকা থেকে কুমিল্লায় যেতে বাফুফে সভাপতি বেছে নিলেন হেলিকপ্টার।
হেলিকপ্টারে ঢাকা থেকে কুমিল্লার এই যাত্রায় বাফুফে সভাপতির সঙ্গী হয়েছেন সংস্থার নারী উইংয়ের চেয়ারম্যান মাহফুজা আক্তার কিরণ।