
মেক্সিকোর বিপক্ষে দারুণ জয়ে বিশ্বকাপে ভালোভাবেই টিকে আছে আর্জেন্টিনা। তবে পোল্যান্ডের বিপক্ষে গ্রুপের শেষ ম্যাচটিও এক রকম অগ্নিপরীক্ষা আলবিসেলেস্তেদের। হারলে বাদ পড়বে, ড্র হলে আর্জেন্টিনার তাকিয়ে থাকতে হবে সৌদি আরব-মেক্সিকো ম্যাচের দিকে। এমন ম্যাচে আর্জেন্টিনার একাদশ কেমন হতে পারে। তা নিয়ে ম্যাচের দুদিন আগে থেকেই চলছে বিশ্লেষণ।
আর্জেন্টিনার যে সব খেলোয়াড় মেক্সিকো ম্যাচে খেলেননি, তারা অনুশীলন করেছেন ম্যাচের পর দিনই। একাদশে আর্জেন্টিনার গোলকিপার পজিশনে কোনো পরবর্তন আসবে না তা বলাই যায়। ডিফেন্সে ওতামেন্দি ও অ্যাকুনা থাকবেন বলে ধারণা করা যায়। আর্জেন্টিনা দুই ম্যাচে রাইট-ব্যাকে শুরুর একাদশে খেলিয়েছে দুই খেলোয়াড়কে। নেহুয়ান মোলিনা খেলেছিলেন সৌদি আরবের বিপক্ষে এবং গনজালো মন্তিয়েল খেলেছেন মেক্সিকোর বিপক্ষে। এছাড়া ক্রিশ্চিয়ানো রোমেরো বা লিসান্দ্র মার্তিনেজে পূরণ হবে চারজনের ডিফেন্স লাইন।
মিডফিল্ডে রদ্রিগো ডি পলের জায়গা নিশ্চিত। এনজো ফার্নান্দেজ বদলি হিসেবে নেমে গোল পেয়েছেন মেক্সিকোর বিপক্ষে। ফলে পোল্যান্ডের বিপক্ষে শুরুর একাদশে তিনি খেলতে পারেন। মেক্সিকোর বিপক্ষে খেলেছেন ম্যাক অ্যালিস্টার। পালাসিওসও বদলি নেমেছিলেন। তবে এগিয়ে থাকবে অ্যালিস্টার। এছাড়া গোমেজ অপশনও আছে স্কালোনির হাতে। আর্জেন্টিনার আক্রমণভাগে মেসি, ডি মারিয়া ও লাউতারো মার্তিনেজই থাকবেন।
বিশ্বকাপ গ্রুপ পর্বের ড্রয়ের পর সবার বাঁকা চোখ ছিল বি গ্রুপে। বিশ্ব রাজনীতির বড় শত্রু-মিত্ররা একই গ্রুপে যুক্তরাষ্ট্র, ইংল্যান্ডের সঙ্গে ‘বড় শত্রু’ ইরান। প্রথম পর্ব টপকে যাওয়ার লড়াইয়ে একে অপরকে পেছনে ফেলার প্রতিযোগিতায়। এই এগিয়ে যাওয়ায় যেমন রাজনৈতিক প্রতিশোধের তৃপ্তি থাকবে তেমনি খেলার মাঠে জয়ের আনন্দও থাকছে। এর আগে ইংল্যান্ড-ইরান খেলা হয়েছে। আজ সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক ম্যাচে মুখোমুখি হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইরান। লড়াইটা আবার হয়ে দাঁড়িয়েছে গ্রুপের অলিখিত ফাইনালও।
বিশ্ব রাজনীতিতে দুই রাষ্ট্রের বৈরিতার কথা সবার জানা। ১৯৮০ থেকে একে অপরের মুখ দেখাদেখি বন্ধ অবস্থা। তারাই মাঠের যুদ্ধে নামছে ভিন্ন তৃপ্তির আশায়। তৃপ্তিটা যুদ্ধ জয়ের মতোই। আজ একে অপরকে বিদায় করে দেওয়ার সুযোগ ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের সামনে। গ্রুপে ৩ পয়েন্ট নিয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে ইরান। যুক্তরাষ্ট্র ১ পয়েন্ট নিয়ে তিনে। ইরান জিতলে তাদের পয়েন্ট হবে ৬, যুক্তরাষ্ট্র জিতলে হবে ৫। আর ড্র হলেও ইরান এগিয়ে থাকবে ৪ পয়েন্ট নিয়ে। আজ তাদের শুধু হার এড়ালেই হয়।
গ্রুপের অপর ম্যাচে মুখোমুখি হচ্ছে ইংল্যান্ড ও ওয়েলস। পাশাপাশি দুই রাজ্যের ম্যাচ দেখে সম্প্রীতির হাওয়া বইছে এমন ভাবার সুযোগ নেই। ক্রিকেটে মিলিত হয়ে খেললেও ফুটবলে রাগবির মতোই দ্বৈরথ এ দুই দলের। রাগবিতে তাদের ম্যাচ মানেই উত্তেজনার। ঠিক তেমনি ফুটবলেও ছেড়ে কথা বলে না কেউ কাউকে। দুই দলের ফুটবলের ইতিহাসও পুরনো। সেই ১৮৭৯ সাল থেকে মোট ১০৩ ম্যাচ খেলেছে। এর মধ্যে অভিজ্ঞতার বিচারে অবশ্যই ইংল্যান্ডই জয়ের পাল্লায় এগিয়ে। তাদের ৬৮ জয়ের বিপরীতে ওয়েলসের জয় ১৪টি। আর বাকি ২১ ম্যাচ ড্র। ইংল্যান্ডকে আজ হারালেও ওয়েলসের খুব একটা লাভ নেই। তাদের সমান ৪ পয়েন্ট নিয়ে গোলগড়ে বাদ পড়বেন গ্যারেথ বেলরা। আর ইংল্যান্ড জিতলে সরাসরি দ্বিতীয় রাউন্ড। ফল ড্র হলে ইংল্যান্ডকে তাকিয়ে থাকতে হবে যুক্তরাষ্ট্র-ইরান ম্যাচের দিকে। তবে ইংল্যান্ডের দ্বিতীয় রাউন্ডে ওঠার সুযোগ বেশি।
ফিরে আসা যাক যুক্তরাষ্ট্র-ইরান ম্যাচে। বিশ্বকাপে দুই দলের দেখা এই প্রথম নয়। ১৯৯৮ সালে আরও একবার মাঠের যুদ্ধে নেমেছিল তারা। সেই যুদ্ধ তাতিয়ে দেন ইরানের তখনকার শীর্ষ নেতা আলি খামেনি। ইরান ফুটবলারদের প্রতি তার নির্দেশ ছিল ম্যাচপূর্ব করমর্দনের সময় যেন যুক্তরাষ্ট্র ফুটবলারদের সঙ্গে কথাও না বলেন! অবশ্য ইরান ফুটবলাররা এমনটা করেননি। বরং সম্প্রীতি ও বন্ধুত্বের প্রতীক সাদা গোলাপ উপহার দেন মাঠে। এরপর দুই দল মিলে তুলেছেন গ্রুপ ফটো। রাজনীতিকে মাঠে প্রবেশ করতে দেননি সেই ফুটবলাররা। ওই ম্যাচে ২-১ গোলে জিতেছিল ইরান।
এরপর একটি প্রীতি ম্যাচেও ইরানকে হারাতে পারেনি যুক্তরাষ্ট্র। মাঠের লড়াইয়ে রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীর সঙ্গে ওই ম্যাচে ১-১ গোলে ড্র করে তারা। ইরান তাই অজেয় থেকেই আজ মাঠে নামছে। তবে যুক্তরাষ্ট্রের কোচ গ্রেগ বেরহাল্টার নিশ্চিত আগের ফল এবার বদলাবে। রাজনৈতিক লড়াই ১৯৯৮ এর মতো এবারও পাশে থাকবে উল্লেখ করে বেরহাল্টার বলেন, ‘আমি ক্যারিয়ারে তিনটি ভিন্ন দেশে খেলেছি। সুইডেনে কোচিং করিয়েছি। ফুটবলে একটা মজার ব্যাপার হলো আপনি বিশ্বজুড়ে মানুষের সঙ্গে মিশবেন। নানা মত ও চিন্তা সম্পর্কে জানবেন ও তা আপন করে নেবেন। আর এই বিষয়টা হয় ফুটবলের জন্য। ফুটবল মানুষকে ভালোবাসতে শেখায়। কালকের (আজ) ম্যাচে যা হবে তা শুধুই ক্রীড়াভিত্তিক। দুই দলই দ্বিতীয় রাউন্ডে উঠতে চাইবে। এখানে রাজনৈতিক বা দুই দেশের বৈরী সম্পর্কের কিছুই আসবে না। আমরা দুই দলই ফুটবল খেলি এবং এই খেলার জন্যই প্রতিযোগিতায় নামব।’
বেরহাল্টারের জন্য স্বস্তির বিষয় ইংল্যান্ডের সঙ্গে ভালো খেলে ড্র। ওয়েলসের সঙ্গে পয়েন্ট হারালেও বড় দলের বিপক্ষে ড্রয়ে দ্বিতীয় রাউন্ডের স্বপ্ন এখনো টিকে আছে যুক্তরাষ্ট্রের। তবে ইরান এই ম্যাচে আত্মবিশ্বাসে এগিয়ে থাকবে। প্রথম ম্যাচে ইংল্যান্ডের কাছে ৬-২ গোলে হেরে দুঃস্বপ্নের শুরু হয় ইরানের। তবে ওয়েলসের সঙ্গে ততটাই স্বপ্নময় জয় এসেছে দলটির। ওই ২-০ গোলের জয়ে দ্বিতীয় রাউন্ডের পথে ভালোভাবে এগিয়ে ইরান। তাছাড়া বিশ্বকাপের সময় দেশ থেকেও উড়ে এসেছে সুখবর। প্রায় দুই মাস ধরে পুলিশি হেফাজতে মাশা আমিনি নামক এক তরুণীর মৃত্যুর প্রতিবাদে উত্তাল ছিল ইরান। মাথায় হিজাব না পরায় গ্রেপ্তার হয়েছিলেন আমিনি। ঠিক একই কারণে গ্রেপ্তার হওয়া ইরানের পুরস্কারজয়ী অভিনেত্রী হেনগামেহ ঘাজিনি ছাড়া পেয়েছেন সাজা থেকে। ইরানি প্রতিবাদীদের জন্য এ এক বিজয়। সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে মাঠের জয় সরকারবিরোধী আন্দোলনের মধ্যে স্বস্তি এনে দিতে পারে।
দেখতে দেখতে বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্ব চলে এসেছে শেষ অধ্যায়ে। প্রথম দুটো করে ম্যাচের পর বেশিরভাগ দলই স্পষ্ট বুঝতে পেরেছে নিজেদের অবস্থান। আজ থেকে শুরু তৃতীয় রাউন্ডের খেলা। একই সমান্তরালে হবে শেষ দুটো ম্যাচ, তাতে করে আগেভাগে অঙ্ক মিলিয়ে নামার সুযোগটা থাকছে না। ‘এ’ গ্রুপে আল বাইয়াত স্টেডিয়ামে স্বাগতিক কাতারের মুখোমুখি হবে নেদারল্যান্ডস। খলিফা ইন্টারন্যাশনাল স্টেডিয়ামে খেলবে সেনেগাল ও ইকুয়েডর। কাতারের দ্বিতীয় রাউন্ডে খেলার সম্ভাবনা শেষ, স্বাগতিকরা হেরেছে ইকুয়েডর ও সেনেগালের কাছে। নেদারল্যান্ডস সেনেগালের সঙ্গে জিতলেও ড্র করেছে ইকুয়েডরের সঙ্গে। শেষ রাউন্ডের ম্যাচে তাই তিন দলেরই সুযোগ আছে নকআউটে উঠতে পারার।
অপেক্ষাকৃত সহজ অবস্থানে নেদারল্যান্ডস, তাদের প্রতিপক্ষ কাতার। আসরের স্বাগতিকরা ফিফা র্যাংকিংয়ের ৫০তম অবস্থানে, এখনো কোনো ম্যাচ না জিততে পারা কাতারের বিপক্ষে নেদারল্যান্ডসেরই জেতার কথা। যদিও অঘটনের বিশ্বকাপে কোনো প্রতিপক্ষই নিরাপদ নয়। তবুও ফুটবল সামর্থ্য এগিয়ে রাখছে ডাচদেরই। কাতারের বিপক্ষে জিতলেই শেষ ষোলোয় পা রাখবে নেদারল্যান্ডস, ড্র করলেও তারা যেতে পারে পরের রাউন্ডে যদি ইকুয়েডর হারিয়ে দেয় সেনেগালকে।
ইকুয়েডরের জন্যও অংকটা সহজে মিলে যাবে সেনেগালকে হারাতে পারলে। ড্র করলেও তারা যেতে পারে পরের রাউন্ডে, এমনকি হেরে গেলেও তাদের সম্ভাবনা থাকবে যদি কাতার হারাতে পারে নেদারল্যান্ডসকে।
সেনেগালেরও অংকটা একই, তাদেরও জিততেই হবে সেনেগালের বিপক্ষে। ড্র করলেও তারা শেষ ষোলোয় যেতে পারবে, যদি কাতার হারাতে পারে নেদারল্যান্ডসকে। কাতারের কোনো সম্ভাবনাই নেই, প্রথম দুই ম্যাচে হেরে তারা আগেই ছিটকে গেছে।
বিশ্বকাপের বাছাই পর্বে ইউরোপিয়ান অঞ্চলে সবচেয়ে বেশি গোল করেছিলেন মেমফিস দিপেই। কিন্তু চোটের কারণে বার্সেলোনার এই ফরোয়ার্ডকে এখনো মাঠে নামাতে পারেননি কোচ লুই ফন গাল। ম্যাথিয়াস ডি লিখটের একটা হলুদ কার্ড আছে, আজ আরেকটা কার্ড দেখলে শেষ ষোলোর ম্যাচে খেলতে পারবেন না ডাচ সেন্টারব্যাক। জুরেন টিম্বার খুব সম্ভবত নিজের জায়গাটা ধরেই রাখবেন। ইকুয়েডরের বিপক্ষে ম্যাচের ৬ মিনিটেই কোডি গাকপো গোল করে ডাচদের এগিয়ে দেওয়ার পর অনেকেই ভেবেছিলেন ম্যাচটা সহজেই জিতবে নেদারল্যান্ডস। কিন্তু এনর ভ্যালেন্সিয়ার গোলে সমতা ফিরিয়ে নিজেদের বিশ্বকাপ স্বপ্ন টিকিয়ে রাখে ইকুয়েডর, সঙ্গে অপেক্ষায় রাখে অরেঞ্জদের।
২ গোল করে এখন পর্যন্ত ডাচদের সর্বোচ্চ গোলদাতা কোডি গাকপো। তবে পিএসভি আইন্দহোভেনের ২৩ বছর বয়সী এই উইঙ্গারের কাছ থেকেই শুধু নয়, নেদারল্যান্ডস চাইবে ফ্রাঙ্কি দি ইয়ংয়ের মতো তারকারাও যেন গোলের দেখা পান, কারণ এটাই সম্ভবত এবারের বিশ্বকাপের সহজতম ম্যাচ হতে যাচ্ছে। কাতারকে হারিয়ে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে পরের ধাপে উঠলে নেদারল্যান্ডসের সম্ভাব্য প্রতিপক্ষ হতে পারে ইরান বা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।
সেনেগাল-ইকুয়েডর ম্যাচটা হয়ে গেছে নকআউট। যে জিতবে সেই খেলবে পরের রাউন্ডে। সাদিও মানেকে হারিয়ে সেনেগাল বড় একটা ধাক্কাই খেয়েছে। ডাচদের বিপক্ষে তারা গোল পায়নি, তবে কাতারকে হারিয়েছে ৩-১ গোলে। ইকুয়েডর কাতারকে হারালেও ডাচদের কাছ থেকে ছিনিয়ে এনেছে ১ পয়েন্ট। শক্তিমত্তায় দুই দলই কাছাকাছি, ইকুয়েডরের ফিফা র্যাংকিং ৪৪ আর সেনেগালের ১৮। আফ্রিকান নেশনস কাপ জয়ী সেনেগালের মূল শক্তি ছিল সাদিও মানের মতো একজন উঁচুদরের ফরোয়ার্ড, কিন্তু মানে না থাকায় দুই দলেরই প্রায় সমান সম্ভাবনা।
কাতার বিশ্বকাপে গ্রুপ পর্বের তৃতীয় রাউন্ড শুরু হচ্ছে আজ থেকে। যে রাউন্ড শেষে প্রতি গ্রুপ থেকে দুটি করে দল থেকে যাবে, আর বিদায় নেবে দুটি করে দল। অর্থাৎ বিশ্বকাপ এখন ছোট হয়ে আসার পালা!
‘এ’ গ্রুপ ও ‘বি’ গ্রুপের দলগুলো মাঠে নামবে আজ। দুই গ্রুপ থেকে কোনো দলেরই পরের রাউন্ড নিশ্চিত হয়নি এখনো। তবে ‘এ’ গ্রুপে থাকা স্বাগতিক কাতারের বিদায় আগেই নিশ্চিত হয়েছে। আজ নেদারল্যান্ডস তাদের হারালে বা ড্র করলেই চলে যাবে পরের পর্বে। সেনেগাল ও ইকুয়েডরের মধ্যে দারুণ লড়াই হবে। যেহেতু দুই দলের সামনেই রয়েছে শেষ ষোলোর হাতছানি।
‘বি’ গ্রুপে ৪ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে থাকা ইংল্যান্ড খেলবে ওয়েলসের বিপক্ষে। আর ৩ পয়েন্ট নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে থাকা ইরানের প্রতিপক্ষ যুক্তরাষ্ট্র। এই ম্যাচটা খুব ঝাঁজালো হতে যাচ্ছে বলেই আমার মনে হয়। অন্যদিকে ওয়েলসের বিপক্ষে ইংলিশরাই ফেভারিট থাকবে।
নেদারল্যান্ডস ৩-৪-১-২ ফর্মেশনে খেলে থাকে। কাতার তাদের প্রথম দুই ম্যাচই খেলেছে ৫-৩-২ ফর্মেশনে। ইকুয়েডরের বিপক্ষে ২-০ ব্যবধানে হেরে আসর শুরু করে আয়োজক দেশটি। সেনেগালের বিপক্ষে পরের খেলায় তাদের মধ্যে কিছুটা পরিবর্তন দেখা গেছে। তবে সেটা যথেষ্ট ছিল না। তাই তো হেরে গেছে ৩-১ ব্যবধানে। নেদারল্যান্ডস পরিষ্কার ফেভারিট কাতারের বিপক্ষে। আমার মনে হয় সহজ ম্যাচ হবে ডাচদের জন্য। জেতাটা যদি তাদের হাই স্কোরিং হয়, তাহলেও অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।
সেনেগালের বিপক্ষে ২-০ ব্যবধানে জিতলেও বেশ ঘাম ঝরেছে নেদারল্যান্ডসের। এরপর ইকুয়েডরের বিপক্ষে ১-১ ড্র। ওদের রক্ষণ আসলে খুব শক্তিশালী। ভার্জিল ফন ডাইক, নাথান আকে, ডি লিখটরা আছে। ডালে ব্লিন্ড ও ডেনজেল ডামফ্রিস একটু ওপরে দুই পাশে থাকে। ব্লিন্ডের ডিফেন্ডিং খুব শক্তিশালী। ডামফ্রিসের আক্রমণ খুব শক্ত। ফ্রেংকি ডি ইয়ং পুরো মিডফিল্ড কাভার করে। সব মিলিয়ে বেশ ব্যালেন্সড একটা দল। তবে একটা জায়গায় ওরা পিছিয়ে আছে, সেটা হলোÑ গোল স্কোরিং। এই জায়গার ঘাটতি দ্রুত পূরণ করতে হবে। কারণ সামনে নকআউট পর্বে এটাই সবচেয়ে বেশি কাজে লাগবে।
সেনেগাল ও ইকুয়েডরের মধ্যকার ম্যাচটা খুব ইন্টারেস্টিং হবে। ইকুয়েডর তো প্রমাণ করেছে তারা সহজ প্রতিপক্ষ নয়। কাতারকে হারানোর পর নেদারল্যান্ডসের সঙ্গে ড্রয়েই সেটা প্রমাণ হয়ে গেছে। দারুণ কিছু খেলোয়াড় আছে ওদের। গুস্তাভো আলফারো কোচ হওয়ার পর অনেক উন্নতিও করেছে ওরা। সেনেগালের ৩ পয়েন্ট হওয়ায় ড্র করলে তাদের জন্য যথেষ্ট হবে না। তাই অলআউট খেলে যে কোনো মূল্যে জয় তুলে নিতে চাইবে ওরা। ওদের দলে সাদিও মানের অভাব স্পষ্টই দেখা যাচ্ছে। মানে থাকলে নেদারল্যান্ডসের সঙ্গে তাদের ম্যাচটা অন্য রকমও হতে পারত। শেষ পর্যন্ত যেখানে ২-০ তে হেরেছিল ওরা।
‘বি’ গ্রুপে ইংল্যান্ড ৪ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে। ইরান ৩ পয়েন্ট নিয়ে আছে পরের স্থানে। যুক্তরাষ্ট্র ও ওয়েলসের পয়েন্ট যথক্রামে ২ ও ১। ইংল্যান্ড যে ওয়েলসের বিপক্ষে এগিয়ে থাকবে এটা বলার অপেক্ষা রাখে না। ড্র হলেও ওয়েলসের কোনো কাজে আসবে না। ওয়েলস তাই অলআউটেই যাবে।
ইংল্যান্ড আবার যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে গত ম্যাচে খুব বেশি ভালো খেলেনি। ইরানের সঙ্গে ৬-২ ব্যবধানে জেতার পর যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ড্র করে। অনেকে এ ম্যাচে ইংলিশদের পারফরম্যান্সের সমালোচনা করছেন। ওয়েলস ম্যাচে তাই আগের চেহারায় আসার চেষ্টা করবে তারা। গ্যারেথ সাউথগেট দলে কিছুটা পরিবর্তনও আনতে পারে। ওয়েলস কোচ রব পেজের বিভিন্ন ফর্মেশনে দল সাজানোর সুযোগ আছে। বাছাই পর্বে আমরা সেটাই দেখেছি। শেষ পর্যন্ত ৩-৪-২-১ সে বাস্তবায়ন করছে। ইংল্যান্ডও এই ফর্মেশনে খেলতে পছন্দ করে। তবে এই ম্যাচে তারা কোন ফর্মেশনে মাঠে নামে সেটা দেখার বিষয় হবে।
ইরান ও যুক্তরাষ্ট্র ম্যাচটা খুব ভালো হবে। এমনিতেই দুই দেশের মধ্যে রাজনৈতিক টানাপড়েন আছে। আর এই ম্যাচে যখন তারা মাঠে নামছে দুই দলেরই সুযোগ দ্বিতীয় পর্বে যাওয়ার। ইরান খুব ভালো ডিফেন্ডিং সাইট। কাউন্টারেও বেশ ভালো। যুক্তরাষ্ট্র আবার খুব হাইপ্রেসিং করে খেলে। ইরান যেহেতু এক পয়েন্ট এগিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে, তাই ওরা হারতে চাইবে না। যুক্তরাষ্ট্র যেকোনো মূল্যে ম্যাচ বের করতে চাইবে। সব মিলিয়ে যুদ্ধের দামামা মাঠে থাকতেই পারে!
জার্ড মুলার, ইয়ুর্গেন ক্লিন্সম্যান, মাইকেল বালাক, মিরোসøাভ ক্লোসা। ১৯৭০ থেকে বিশ্বকাপের জার্মানির গোলের সব প্রতিভু। ক্লোসা ১৬ গোল নিয়ে সর্বোচ্চ গোলদাতা টুর্নামেন্টের। মুলার করেছেন ১৪টি। ক্লিন্সম্যান ১১। ২০০২ বিশ্বকাপে ব্রাজিলের কাছে হেরে রানার্সআপ জার্মানরা ১৪টি গোল করেছিল। ১৮টি গোল করে ২০১৪ বিশ্বকাপ জিতেছিল তারা। সেমিফাইনালে এক ব্রাজিলকেই হারিয়ে দিয়েছিল ৭-১ গোলে।
অথচ সেই জার্মানি ২০১৮ থেকে ভুগছে গোলখরায়। সেবার মাত্র দুই গোল করে বিদায় নিয়েছিল গ্রুপ পর্ব থেকেই। এবারের বিশ্বকাপেও সেই খরা কাটিয়ে উঠতে পারেনি। প্রথম ম্যাচে গুনদোয়ানের গোলে এগিয়ে গেলেও হেরেছে জাপানের কাছে (২-১)। রবিবার স্পেনের সঙ্গে বাঁচামরার লড়াইয়ে স্পেনের বিপক্ষে পিছিয়ে পড়েছিল। তৃতীয় আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলতে নামা নিকোলাস ফুলক্রুগ ত্রাতা হয়ে গোল করেছেন। না হলে সে রাতেই মোটামুটি শেষ হয়ে যেত জার্মানদের এবারের বিশ্বকাপও। এই ফুলক্রুগ আবার একাদশের খেলোয়াড় নন। ১২০ ম্যাচে ৪৪ গোল করার টমাস মুলারকে ৭০ মিনিটে পাল্টে তাকে নামান কোচ হান্স ফ্লিক। মাঠে নামার ১৩ মিনিটের মাথায় লেরয় সানের পাস থেকে জামাল মুসিয়ালার পা ঘুরে বল দারুণ শটে জালে পাঠান ২৯ বছর বয়সী ফুলক্রুগ। ১২ মাস আগেও জার্মান দ্বিতীয় বিভাগের লিগে ঘুরে বেড়ানো ফুলক্রুগ অবশ্য দারুণ ফর্ম নিয়ে বিশ্বকাপ খেলতে এসেছেন। ওয়ের্ডার ব্রেমেনের ২৫ গোলের ১০টিই তার।
ফুলক্রুগের এই গোল চারবারের চ্যাম্পিয়নদের আশাটা জিইয়ে রেখেছে। শেষ ম্যাচে কোস্টারিকাকে হারালে রানার্সআপ হয়ে উঠতে পারবে শেষ ষোলোতে। সেক্ষেত্রে অবশ্য জাপানকে স্পেনের কাছে হারাতে হবে। যদি সে ম্যাচটি ড্রও হয়ে, তবু সুযোগ থাকবে জার্মানির। সে ক্ষেত্রে জাপান-জার্মানির পয়েন্ট হবে সমান, দেখা হবে গোল ব্যবধান। এই মুহূর্তে জাপানের গোল ২, খেয়েছে তারা ২টি। জার্মানি গোল করেছে ২টি, খেয়েছে ৩টি। আর জাপান যদি জার্মানির মতো চমকে দেয় স্পেনকেও, সেক্ষেত্রে কোস্টারিকাকে হারিয়েও লাভ হবে না। কারণ গোল ব্যবধানে স্পেন অনেক এগিয়ে (৮-১)।
কাজেই গোলটাই বড় হয়ে দেখা দিচ্ছে জার্মানির ক্ষেত্রে। গতবার মেক্সিকোর কাছে অপ্রত্যাশিত হারের (০-১) পর দ্বিতীয় ম্যাচে সুইডেনকে মার্কো রেউস আর টনি ক্রুসের দু’গোলে হারালেও দক্ষিণ কোরিয়ার কাছে হেরে (০-২) বিদায় নেয় প্রথম পর্ব থেকেই। ফুলক্রুগ অবশ্য আশায় আছেন শেষ ম্যাচে এবার ঠিক হয়ে যাবে সব, ‘আমাদের উন্নতির আরও জায়গা আছে। আশা করছি গ্রুপে শেষ ম্যাচে সব কিছু ঠিকমতো হবে।’ জার্মান কোচ হান্স ফ্লিক দাবি করেছেন দল সঠিক পথেই আছে। রক্ষণে আরও উন্নতির তাগিদ দিয়েছেন তিনি, ‘স্পেন দারুণ একটি দল। তাদের বেশ কিছু তরুণ খেলোয়াড় আছে। আমাদের ডিফেন্সে আরও উন্নতি করতে হবে। তবে গুরুত্বপূর্ণ হলো মানসিকতা।’
১ ডিসেম্বর রাতে শেষ ম্যাচে কোস্টারিকার বিপক্ষে জার্মানরা এই মানসিকতা কতটা রাখতে পারে, সেটাই দেখার। গোল করতে না পারলে এবারও প্রথম রাউন্ডেই শেষ হবে কাপ জয় আর ফাইনালে খেলার হিসাবে বিশ্বকাপের সবচেয়ে সফল দলকে।
বিশ্বকাপ ফুটবল দামামার মাঝে ক্রিকেটে আরেক দামামা বাজিয়েছে ভারতের রুতুরাজ গায়কোয়াড় ১ ওভারে ৭ ছক্কা হাঁকিয়ে। ৫০ ওভারের টুর্নামেন্ট বিজয় হাজারে ট্রফিতে উত্তর প্রদেশের বাঁহাতি স্পিনার শিবার ১ ওভারে ৪৩ রান তুলে নেন ভারতের ৯ টি-টোয়েন্টি খেলা এই ব্যাটার। আহমেদাবাদে গতকাল কোয়ার্টার ফাইনালে ৪৯তম ওভার শুরুর আগে মহারাষ্ট্রের রান ছিল ৫ উইকেটে ২৭২ রান। উত্তর প্রদেশের বাঁহাতি স্পিনার শিবার সামনে ছিলেন মহারাষ্ট্র অধিনায়ক ও ওপেনার রুতুরাজ গায়কোয়াড়। ডানহাতি ব্যাটারের রান ছিল ১৪৭ বলে ১৬৫। রাউন্ড দ্য উইকেটে বল করা শিবার প্রথম ও দ্বিতীয় বল লং অন দিয়ে, তৃতীয়টি মিড উইকেট, চতুর্থটি আবার লং অন দিয়ে, পরের বলটি ছিল নো বল, সোজা সাইটস্ক্রিন বরাবর পাঠান রুতুরাজ, ফ্রি হিট থেকে ওয়াইড লংঅনে পাঠিয়ে ডাবল সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন গায়কোয়াড়। শেষ বলে ওভার দ্য উইকেটে আসেন শিবা, তবে ছক্কা আটকাতে পারেননি। সপ্তম ছক্কাটিও আসে ওয়াইড লং অন দিয়ে। শেষ পর্যন্ত তারা তোলে ৫ উইকেটে ৩৩০ রান, এর মধ্যে গায়কোয়াড় একাই করেন ১৫৯ বলে অপরাজিত ২২০ রান। ইনিংসে ১০টি চারের সঙ্গে তিনি মারেন ১৬টি ছক্কা।
শিবার আগে লিস্ট-এ ক্রিকেটে ১ ওভারে ৪৩ রান দিয়েছিলেন সেন্ট্রাল ডিস্ট্রিক্টের উইলেম লাডিক। সে ক্ষেত্রে অবশ্য ব্যাটসম্যান ছিলেন দুজন নর্দার্ন ডিস্ট্রিক্টের ব্রেট হ্যাম্পটন ও জো কার্টার। তার আগের রেকর্ডটি হয়েছিল ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে, ২০১৩-১৪ মৌসুমে। মিরপুরের শেরেবাংলা জাতীয় স্টেডিয়ামে আবাহনীর আলাউদ্দিন বাবুর ১ ওভারে উঠেছিল ৩৯ রান। ব্যাটসম্যান ছিলেন এল্টন চিগুম্বুরা।
অনিয়ন্ত্রিত জীবনধারা, অস্বাস্থ্যকর খাওয়াদাওয়া এবং শরীরচর্চার অভাবের বেশির ভাগ মানুষেরই হার্ট খারাপ হচ্ছে। উচ্চ রক্তচাপ, রক্তে 'খারাপ' কোলেস্টেরল— এ সব মানুষের নিত্যসঙ্গী। তবে রক্তের বিভিন্ন উপাদানের মাত্রা যদি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে যায়, তা হলে ওষুধ তো খেতেই হবে। সঙ্গে পছন্দের প্রায় সব খাবারেই নিষেধাজ্ঞা জারি হয়ে যাবে। তবে পুষ্টিবিদেরা বলছেন, রোজকার খাবারে কিছু পরিবর্তন আনলেই পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে যাওয়ার আগেই হার্টের যাবতীয় সমস্যা নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারবেন।
বিরিয়ানি হোক বা পোলাও সঙ্গে মাটনের কোনো পদ ছাড়া জমে না। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকেরা বলছেন, এ ধরনের 'লাল' মাংস খেলে হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা ৯ শতাংশ বৃদ্ধি পায়। তাই খাসির বদলে মুরগির মাংস খাওয়া তুলনায় স্বাস্থ্যকর।
অনেক চেষ্টা করেও ভাজাভুজি খাবারের লোভ সামলাতে পারছেন না। এই অভ্যাসের ফলেই কিন্তু অজান্তেই বেশির ভাগ মানুষের হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা বেড়ে চলেছে। পুষ্টিবিদেরা বলছেন, ভাজার বদলে যদি বেকড খাবার খাওয়ার অভ্যাস করা যায়, তবে এই সমস্যা অনেকটাই ঠেকিয়ে রাখা যেতে পারে।
সকালের নাশতায় পাউরুটি খান অনেকেই। কিন্তু পুষ্টিবিদেরা বলছেন, পাউরুটির ওপর মাখন দেওয়ার অভ্যাস ছাড়তে হবে। শুধু পাউরুটি খেতে যদি সমস্যা হয়, তবে ডিম ফেটিয়ে তার মধ্যে পাউরুটি ডুবিয়ে, তা বেক করে নিন। স্বাদ এবং স্বাস্থ্য দুই-ই থাকবে।
মন খারাপ হলে মাঝে মধ্যেই আইসক্রিম খেয়ে ফেলেন। তৎক্ষণাৎ মন ভালো করতে এই টোটকা সত্যিই কার্যকর। কিন্তু সমস্যা হলো আইসক্রিম খাওয়ার অভ্যাসে রক্তে বাড়তে থাকে কোলেস্টেরল। পরবর্তীতে যা হৃদরোগের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
গরমে তেষ্টা মেটাতে বার বার ঠাণ্ডা পানীয়তে চুমুক দিচ্ছেন। কিন্তু এ পানীয়ে থাকা কৃত্রিম শর্করা যে হৃদযন্ত্রের ক্ষতি করছে, টের পেয়েছেন কী? পুষ্টিবিদেরা বলছেন, এই তেষ্টা মেটাতে এবং স্বাস্থ্যের খেয়াল রাখতে নরম পানীয় না খেয়ে ফল থেকে তৈরি রস খেতে পারেন।
পাকিস্তানের প্রস্তাবিত হাইব্রিড মডেলে নয়, এশিয়া কাপ হবে একটি দেশে। আর সেটা শ্রীলংকা। পাকিস্তান তাতে অংশ না নিতে চাইলে তাদেরকে ছাড়াই হবে এশিয়া কাপ।
ভারতের তরফ থেকে পাকিস্তানকে এমন বার্তা দেয়া হয়েছে বলে খবর প্রকাশ করেছে কলকাতাভিত্তিক ইংরেজি দৈনিক দা টেলিগ্রাফ।
বিসিসিআই সেক্রেটারি জয় শাহ যিনি এসিসিরও প্রেসিডেন্ট পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডকে বলেছেন, শ্রীলংকায় এশিয়া কাপ খেলতে রাজি আছে ভারতসহ চার পূর্ণ সদস্য। বিষয়টি নিয়ে এসিসির নির্বাহী সভায় আলোচনা করা হবে। পাকিস্তান রাজি না হলে ৫ দল নিয়েই হবে এশিয়া কাপ।
বিশ্বকাপে পাকিস্তানের ম্যাচ অন্য কোনো দেশে আয়োজনে পিসিবি চেয়ারম্যান নাজমা শেঠির দাবিও নাকচ করে দিয়েছেন জয় শাহ। টেলিগ্রাফ জানিয়েছে, পাকিস্তানকে ভারতেই খেলতে হবে, না হলে না খেলবে। এ বার্তা পিসিবি এবং আইসিসির দুই কর্মকর্তা যারা সম্প্রতি পাকিস্তান সফর করেন তাদেরকে জানিয়ে দিয়েছে বিসিসিআই।
গ্রীষ্মের তীব্র দাবদাহে হাঁসফাঁস অবস্থা মানুষের। এমন অবস্থায় প্রয়োজন ছাড়া বাইরে বের হচ্ছে না কেউ। তাই বলে গরমের ভয়ে ঘরে বসে থাকলে তো আর জীবন চলবে না। শিক্ষার্থীদের ক্লাসে যেতে হবে। আর কর্মজীবীদের অফিস ও অন্যান্য কর্মস্থলে। অনেকেরই এই গরমেও কাজের প্রয়োজনে সারাদিন কেটে যায় বাইরে ঘুরে ঘুরেই। গরমকে মোকাবিলা করতে সঙ্গে এই প্রয়োজনীয় জিনিসগুলো রাখলেই গরমের কাছে নিজেকে হার মানতে হবে না।
পানি পান
গরমের সময় শরীর থেকে স্বাভাবিক ভাবে অনেক বেশি ঘাম বের হয়ে থাকে। যার ফলে দেখা দিতে পারে পানি শূন্যতা। শরীরের মধ্যে যদি পানির পরিমাণ কমে যায় তাহলে ডিহাইড্রেশন হতে পারে। পানি শূন্যতা দূর করতে হলে প্রচুর পরিমাণে বিশুদ্ধ পানি খেতে হবে।
বিশুদ্ধ পানি খাওয়ার পাশাপাশি ফলের জুস কিংবা কচি ডাবের পানি খেতে পারেন। দেহের ত্বককে ভালো রাখতে পানি, শরবত বা জুস পানের বিকল্প নেই। গরমে সময় প্রতিদিন ৩ থেকে ৪ লিটার বিশুদ্ধ পানি খেলে ডিহাইড্রেশন এবং পানি শূণ্যতা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।
খাবার স্যালাইন
গরমের সময় ঘামের সঙ্গে শরীর থেকে প্রয়োজনীয় লবণ বের হতে থাকে যার ফলে শরীর অনেক দুর্বল হয়ে যায়। এ থেকে মুক্তি পেতে খাবার স্যালাইন খেতে পারেন। বিকেল বেলা খাবার স্যালাইন খেলে অতিরিক্ত গরমেও শরীরে সতেজতা ফিরে আসে। আবার অনেকেই স্বাদযুক্ত স্যালাইন খান যেমন, টেস্টি স্যালাইন। ভুল করেও এসব খাবেন না। এক্ষেত্রে সবচেয়ে ভালো হলো ওরস্যালাইন । তবে আপনাদের মধ্যে যাদের উচ্চ রক্তচাপ আছে তারা খাবার স্যালাইন খাওয়ার আগে ভালো কোনো ডাক্তারের মতামত নেওয়া উচিত।
রেড মিট পরিহার করুন
অতিরিক্ত গরমের সময় গরু-ছাগলের মাংস খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। কারণ গরমের সময় বা অতিরিক্ত গরমের সময় গরুর মাংস খেলে শরীরের তাপমাত্রা অনেকাংশে বেরে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। গরু-ছাগলের মাংস ছেড়ে মাছ খেতে পারেন। আর অতিরিক্ত গরমে অবশ্যই অতিরিক্ত মসলাযুক্ত খাবার থেকে দূরে থাকুন।
সবুজ শাক সবজি
গরমের সময় শরীরকে সুস্থ রাখতে বেশি বেশি করে সবুজ শাক সবজি খেতে পারেন। সবুজ শাক সবজিতে অধিক পরিমাণে ভিটামিন মিনারেল এবং খনিজ উপাদান থাকে। এতে করে অতিরিক্ত গরমেও শরীর অসুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে।তাছাড়াও খেতে পারেন তরমুজ যা শরীরে এনার্জি দিতে পারে।
টক জাতীয় ফল
প্রচুর গরমে সুস্থ থাকার উপায় হিসেবে টক জাতীয় ফল খেতে পারেন। যেমন: কামরাঙ্গা, লেবু, তেতুল, আমরা ইত্যাদি ইত্যাদি। তবে অতিরিক্ত টক ফল খাওয়া ঠিক নয়। যদি কারো এসিডিটির সমস্যা থেকে থাকে তবে টক জাতীয় ফল খাওয়া হতে বিরত থাকুন। টক জাতীয় ফল খালি পেটে খাওয়া যাবে না। এতে করে আরো বেশী অসুস্থ হয়ে পারতে পাবেন।
টক দই
অতিরিক্ত গরমে সুস্থ থাকতে হলে টক দই খেতে পারেন। যারা করা রোদে কাজ করেন বিশেষ করে তাদের জন্য অনেক উপকারী হলো টক দই। রোদের প্রচুর তাপ থেকে শরীরকে কিছুটা হলেও রক্ষা করবে টক দই। টক দই শরীরের তাপমাত্রা স্বাভাবিক রাখতে অনেকাংশে সাহায্য করে।
প্রতিদিন গোসল করুন
গরমের সময় প্রতিদিন এক বার করে হলেও গোসল করতে হবে। যদি পারেন তবে দিনে ২ বার গোসল করতে পারেন। গোসল করার ক্ষেত্রে একটু সাবধান থাকতে হবে। বাহির থেকে এসে সাথে সাথে গোসল করতে যাবেন না। একটু বিশ্রাম নিয়ে তারপর গোসল করতে যাবেন। কারণ হঠাৎ করে গরম থেকে এসে গোসল করলে ঠাণ্ডা লাগতে পারে।
ঘরেই অবস্থান করুন
অতিরিক্ত গরমে বিশেষ কোনো প্রয়োজন ছাড়া বাসা থেকে বাহিরে যাবেন না । যদিও বিভিন্ন কারণে বাহিরে যেতে হয়। সেক্ষেত্রে রোদ থেকে বাঁচতে প্রয়োজনে ছাতা ব্যবহার করতে পারেন। যতটুকু সম্ভব ছায়াযুক্ত স্থানে থাকার চেষ্টা করুন।
শারীরিক পরিশ্রম কম করুন
গরমের সময় অনেকেই আছে অতিরিক্ত ব্যায়াম করে থাকেন এমনটি করা যাবে না কারণ অতিরিক্ত গরমে শরীরের তাপমাত্রা একটু বেশি হয়ে থাকে।
পাতলা সুতি কাপড় পরিধান করা
গরমের সময় পাতলা সুতি কাপড় পরা দরকার। কারণ সাদা কাপড় তাপ শোষণ করতে পারে না বরং তাপের প্রতিফলন ঘটায় ও গরম কম লাগে।
পারফিউম ব্যবহারে সতর্ক থাকুন
অতিরিক্ত গরমে ঘামের গন্ধ থেকে বেচে থাকার জন্য অনেকেই সুগন্ধি ব্যবহার করে থাকে। তবে অতিরিক্ত গরমে পারফিউম ব্যবহার না করাটাই উত্তম কাজ। কারণ, পারফিউম গরম লাগা বৃদ্ধি করে দেয়।
যদিও ব্যবহার করতে হয় তাহলে হালকা গন্ধের সুগন্ধি ব্যবহার করতে পাবেন। বাজারে কিছু সুগন্ধি পাওয়া যায় যেগুলো ব্যবহার করলে ঠাণ্ডা লাগে। সেগুলো ব্যবহার করলে আরো ভালো হয়।
ধূমপান পরিত্যাগ করা
আমাদের মধ্যে অনেকেই আছে যারা কিনা ধূমপান করে থাকি। ধূমপান করলে শরীরের তাপমাত্রা তুলনামূলক ভাবে বেড়ে যায়। তাই প্রচন্ত গরমে সুস্থ থাকতে হলে ধূমপান পরিত্যাগ করতে হবে। যদিও এই অভ্যাসটি সহজে পরিত্যাগ করা যায় না। তাই যতটুকু পারেন ধূমপান কম করার চেষ্টা করুন।
চা কফি পরিত্যাগ করুন
চা, কফি বা অ্যালকোহল খেলে শরীরের তাপমাত্রা আরো বৃদ্ধি পায়। আর যদি অতিরিক্ত গরমে চা, কফি বা অ্যালকোহল খেয়ে থাকেন তাহলে শরীরের তাপমাত্রা অতিরিক্ত হারে বৃদ্ধি পাবে যার ফলে হতে পারে হিটস্ট্রোক। তাই গরমের সময় চা কফি বা অ্যালকোহল খাওয়া থেকে দূরে থাকতে হবে।
শান্ত থাকুন
মন মেজাজ গরম থাকলে শরীরের তাপমাত্রা কিছুটা বৃদ্ধি পায়। রাগের কারণে শরীরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায় এবং অতিরিক্ত গরমের ফলে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায় আর দুই তাপমাত্রা এক সঙ্গে হলে কি অবস্থা হতে পারে একবার হলেও সেটা ভেবে দেখবেন।
বিশেষজ্ঞরা অতিরিক্ত গরমে শান্ত থাকার জন্য মতামত দিয়ে থাকে। বিশেষ করে যাদের হার্টের সমস্যা আছে তাদের জন্য শান্ত থাকাটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
রিয়াল মাদ্রিদের সংগে ১৪ বছরের সম্পর্ক চুকিয়ে ফেলছেন। ৪০ কোটি ইউরো চুক্তিতে সৌদি প্রো লিগের ক্লাব আলো ইত্তিহাদে যোগ দিচ্ছেন।
ক'দিন ধরে এমন কথা শোনা যাচ্ছিল করিম বেনজেমাকে নিয়ে। বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলন করে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেবেন -এমন কথাও চাউর হয় স্পেনের সংবাদ মাধ্যমে।
কিন্তু সব কিছুতে জল ঢাললেন ব্যালন ডি অর জয়ী। স্পেনের গণমাধ্যম মার্কার দেয়া মার্কা লিজেন্ড এওয়ার্ড নিতে গিয়ে বললেন, 'আমি যখন রিয়ালেই আছি তখন ভবিষ্যৎ নিয়ে কেনো বলবো। ইন্টারনেটে যা প্রচার হচ্ছে তা ঠিক না। আমি এখানে ভালো আছি। শনিবার রিয়ালের ম্যাচ আছে, সব ফোকাস আমার সেই ম্যাচকে নিয়ে।'
ক্লাব প্রেসিডেন্ট ফ্লোরেন্তিনো পেরেজকে তাকে রিয়ালে আনার জন্য কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বেনজেমা বলেন, '২১ বছরের আমি এই ক্লাবে যোগ দিয়েছিলাম। এই ক্লাবে খেলার মতো আর কিছু হয় না, সান্তিয়াগো বার্নাবু দারুন এক জায়গা।'
রিয়ালের সংগে চুক্তির মেয়াদ এ মাসেই শেষ হচ্ছে বেনজেমার।
পলিথিন বা একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক, বিভিন্ন ধরনের পলিথিনজাত মিনিপ্যাকের উৎপাদন, ব্যবহার ও এর বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সবগুলোই সমস্যা। পলিথিন উৎপাদন ও এর অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহারের মাধ্যমে বাতাসে যেমন কার্বন নিঃসরণের মাত্রা বেড়ে যায়, অন্যদিকে এর ব্যবহার প্রাণিকুল ও মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর বলে প্রমাণিত। প্লাস্টিকের কণা এখন মানুষের রক্তে, মায়ের দুধে, সামুদ্রিক মাছে। শুধু ব্যবহার সম্পর্কিত সমস্যা না, পলিথিনের মাধ্যমে সৃষ্ট বর্জ্য ব্যবস্থাপনা আরও বেশি সমস্যাসংকুল। কারণ এর সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার অভাবে মাটির উর্বরতা নষ্ট হচ্ছে, কৃষির উৎপাদনশীলতা কমে যাচ্ছে, শহরের নর্দমা বন্ধ করে দিচ্ছে তা আবার রোগ-ব্যাধি ছড়াচ্ছে, জলাবদ্ধতার সৃষ্টি করছে এবং সবশেষে শহরকে বসবাসের অনুপযোগী করে দিচ্ছে।
এতসব সত্ত্বেও পলিথিনের ব্যবহার বন্ধ না করা বা বন্ধ করতে না পারার সংকট কোথায় সেটা বুঝতে আমাদের সমস্যা হয়। পলিথিন বন্ধে আইন আছে, নানা ধরনের প্যাকেজিংয়ে পলিথিন ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়েছে তাও অনেক দিন হলো। অন্যদিকে বেশ কিছুদিন ধরে পাটের ব্যাগ ব্যবহারে উদ্বুদ্ধ করার চেষ্টা করা হচ্ছে কিন্তু তা সহসাই হচ্ছে না। ‘সোনালি ব্যাগ’ নিয়ে অনেক ঢাকঢোল পেটানো হয়েছে কিন্তু পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে সেই সোনালি স্বপ্ন কেমন জানি ফ্যাকাশে হয়ে আসছে এতদিনে।
পলিথিনের ব্যবহার শহরাঞ্চলে সবচেয়ে বেশি যার অনেকটাই অভ্যাসগত কারণে। শহরের মানুষের পলিথিনের ওপর অভ্যস্ততা যেমন বেশি, তেমনি তারা ভুক্তভোগীও বেশি। রাস্তাঘাট, ড্রেন নোংরা হয়ে তো থাকেই, বাড়তি পাওনা দুর্গন্ধ, তৈরি হয় জলজট ও ডেঙ্গুর মতো রোগবালাই। বাসাবাড়িতে পলিথিনের ব্যবহার তো আছেই, পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের খাদ্যদ্রব্য, বেকারিজাত পণ্যের পলিথিনের ব্যবহার ও পলিথিনের মোড়ক যত্রতত্র নিক্ষেপই এই অবস্থার জন্য দায়ী। শুধু ঢাকা নয় অন্যান্য ছোট-বড় সব শহরে প্রায় একই অবস্থা। আর এগুলোই হচ্ছে পলিথিন নির্ভর অর্থনীতির অনুষঙ্গ কিন্তু এর অনর্থনীতি হচ্ছে পলিথিনের কারণে পরিবেশদূষণ ও জনস্বাস্থ্যের মারাত্মক ক্ষয়ক্ষতি যার প্রভাব দীর্ঘমেয়াদি। সাধারণভাবে পলিথিন ব্যবহারের ক্ষয়ক্ষতির আর্থিক মূল্যমান নির্ধারণ করা হয় না। তবে দূষণের মাত্রা এখন এমন অবস্থায় পৌঁছেছে তাতে পলিথিনের অর্থনীতির থেকে এর ক্ষয়ক্ষতির অর্থনীতি যে অনেক বড় তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
আসছে ৫ জুন বিশ্ব পরিবেশ দিবস পালন করা হবে। জলবায়ুর পরিবর্তনের পেছনে অন্যতম অনুঘটক হচ্ছে পরিবেশ দূষণ। অর্থমন্ত্রী তার এবারের বাজেট (২০২৩-২৪) বক্তৃতায় জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবিলায় অভিযোজন ও প্রশমন উভয় ক্ষেত্রে উদ্যোগ গ্রহণ করার কথা বলেছেন, পরিবেশ সংরক্ষণে পরিবেশ সংরক্ষণ বিধিমালা ২০২৩ এর উল্লেখ করেছেন কিন্তু পলিথিনের ব্যবহার বন্ধে দৃশ্যমান কোনো রূপকল্প এবারের বাজেটে উল্লেখ করতে সমর্থ হননি। এবারের পরিবেশ দিবসের প্রতিপাদ্য হচ্ছে ‘প্লাস্টিক দূষণের সমাধানে শামিল হই সকলে’। গত বছরের এই দিবসের মূল প্রতিপাদ্য ছিল ‘একটাই পৃথিবী’। পলিথিন ও একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিকের যত্রতত্র ব্যবহার আমাদের এই একমাত্র পৃথিবীকে দূষণের চূড়ান্ত পর্যায়ে নিয়ে যাচ্ছে। পলিথিনের ব্যবহার বন্ধে আইন হয়েছে ২০০২-এ এবং আজ ২০২৩ সাল, এই দীর্ঘ ২১ বছরেও এই আইনের বাস্তবায়ন করা যায়নি। যদিও এবারের বাজেট বক্তৃতায় প্লাস্টিকের তৈরি টেবিলওয়্যার এর মূল্য সংযোজন কর বৃদ্ধি করে ৫ শতাংশ থেকে ৭.৫ শতাংশ প্রস্তাব করা হয়েছে। এখানে পলিথিন ও একবার ব্যবহারযোগ্য প্ল্যাস্টিক সম্পর্কে কিছু বলা হয়নি। ধরেই নেওয়া যায় শুল্ক বৃদ্ধির এই হার কোনোভাবে পলিথিন নিরুৎসাহিত করার জায়গা থেকে না বরঞ্চ কিছুটা বাড়তি কর আদায়ের চিন্তা থেকে।
পরিবেশ দূষণের পাশাপাশি সস্তা পলিথিনের ব্যবহার টেকসই ভোগের ধারণার জন্যও কোনোভাবে সহায়ক না। বরঞ্চ এটা এমন এক ধরনের মনস্তত্ত্ব তৈরি করে যা শুধু পরিবেশকেই ধ্বংস করে। যদিও বিশ্বব্যাপী টেকসই ভোগের ধারণার ওপর ভিত্তি করে এখন ‘সার্কুলার অর্থনীতির’ ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়। সার্কুলার অর্থনীতি শুধু অপচয় কমায় না, প্রাকৃতিক সম্পদের সুরক্ষা, দূষণরোধ, বর্জ্য থেকে তৈরি পরিবেশদূষণ ও স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি কমিয়ে আনতে পারে। তাই পরিবেশগত ঝুঁকি, কার্বন নিঃসরণ কমিয়ে আনতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ তাদের অর্থনীতিকে সার্কুলার অর্থনীতিতে রূপান্তরের জন্য বিভিন্ন ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করছে। অন্যদিকে জাতিসংঘ ঘোষিত টেকসই পৃথিবী গড়ে তোলা এবং এ সংশ্লিষ্ট অভীষ্ট ২০৩০ সমূহ অর্জনে সার্কুলার অর্থনীতি অন্যতম হাতিয়ার।
সাম্প্রতিক সময়ে ঢাকা শহরে রাস্তায় কোনো পেট বোতল পড়ে থাকতে দেখা যায় না। এর কারণ হচ্ছে এখন পেট বোতলের প্রায় শতভাগ রিসাইকেল করা হয় এবং পেট বোতল সংগ্রহের জন্য অপ্রাতিষ্ঠানিকভাবে হলেও একটি সংগ্রহ-লাইন তৈরি হয়েছে। কিন্তু পলিথিনের ক্ষেত্রে তেমনটা দেখা যায় না। তবে পলিথিনের উৎপাদন ও ব্যবহার সার্কুলার ইকোনমির ধারণার সঙ্গেও একেবারে মানানসই না। বিশেষজ্ঞরা বলছেন প্রযুক্তিগতভাবে একবার ব্যবহারযোগ্য পলিথিন রিসাইকেল করা অসম্ভব না হলেও এটি একটি জটিল এবং অর্থনৈতিকভাবে ব্যয়বহুল যে কারণে পেট বোতলের মতো রাস্তা থেকে পলিথিন সংগ্রহ করতে কাউকে দেখা যায় না উলটো রাস্তাঘাটে এখানে সেখানে পলিথিন পড়ে থাকে।
পলিথিন ও একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিকের অনর্থনীতি থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য এখন প্রথম দরকার এর ব্যবহার বন্ধ করা, এর ব্যবহারকে অনেক বেশি দামি করে ফেলতে হবে আর এর প্রতিফলন থাকতে হবে বাজেটে। দ্বিতীয়ত, সার্কুলার অর্থনৈতিক চর্চার উৎসাহিত করার জন্য পরিকল্পনা, দক্ষতা বৃদ্ধি ও বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। পাশাপাশি, পলিথিনের বিকল্প সোনালি ব্যাগের মতো উদ্যোগগুলোকে সরকারি পর্যায় থেকে বিনিয়োগ ও বেসরকারি পর্যায় থেকে বিনিয়োগ উৎসাহিত করতে প্রয়োজনীয় উৎসাহ ও প্রণোদনা প্রদান করতে হবে। সরকার প্রতি বছর বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে পরিবেশ দিবস পালন করে কিন্তু দিবস পালন শুধু আনুষ্ঠানিকতার মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখলেই হবে না এর উদ্যোগ কতটুকু বাস্তবায়ন করা যাচ্ছে তার ওপরও নজর দিতে হবে। তা নাহলে পলিথিনের অর্থনীতির নামে শুধু অনর্থনীতিকে বাড়িয়ে তোলা হবে, আর সেটা হবে টেকসই অর্থনীতি তৈরির সম্ভাবনার অপমৃত্যু।
লেখক : উন্নয়নকর্মী ও কলামিস্ট
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতিতে জোর করে হারানো হয়েছে।
গতকাল রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
এই নিয়ে ঘনিষ্ঠ অনেকের কাছে জানতে চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। ভিন্ন কোনো জটিলতার সৃষ্টি হলে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে গাজীপুরের যেকোনো আসন থেকে মনোনয়ন পাবেন তিনি। সে ক্ষেত্রে গাজীপুর সিটির ভোটে যে সংসদ সদস্য দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে কাজ করার তথ্য মিলবে তাকেই বাদ দেওয়া হবে। এ সিটি ভোটে হারের কারণ জানতে প্রধানমন্ত্রী নিজস্ব একটি সংস্থাকে নির্ভুল তথ্য দিতে নির্দেশ দিয়েছেন।
নির্বাচনকালীন সরকারে মন্ত্রীর দায়িত্বও পেতে পারেন আজমত, ওই সূত্র দাবি করে। সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
নানা অব্যবস্থাপনায় এগোচ্ছে না প্রাথমিক শিক্ষা। প্রায় শতভাগ শিশু ভর্তির আওতায় এসেছে অনেক আগে। এরপর মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতের কাজ অনেকটাই আটকে আছে। খোদ সরকারি সংস্থার গবেষণায় উঠে এসেছে প্রাথমিকে চরম দুরবস্থার কথা। গবেষয়ণা প্রতিবেদন অনুযায়ী, কাক্সিক্ষত মানের চেয়ে শিশুরা অনেক পিছিয়ে আছে। কিছু শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু কাজ করার চেষ্টা করলেও কথায় কথায় তাদের ওপর নেমে আসছে শাস্তির খড়গ। মানের উন্নয়ন না হলেও ঠিকই অধিদপ্তরে বসে ছড়ি ঘোরাচ্ছেন কর্মকর্তারা।
প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের শিখন ঘাটতি নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহায়তায় সম্প্রতি এই গবেষণা করেছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। সেখানে দেখা যায়, করোনা সংক্রমণের আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা গড়ে ইংরেজি বিষয়ে যতটা শিখত, করোনাকালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের ফলে তা সাড়ে ১২ শতাংশ কমে গেছে। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের হার কমেছে প্রায় সাড়ে ১৬ শতাংশ। আর তৃতীয় শ্রেণির বাংলায় কমেছে ১৫ শতাংশের মতো।
গবেষণার তথ্য বলছে, করোনার আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ইংরেজিতে শিখন অর্জনের গড় হার ছিল প্রায় ৪৯ শতাংশ। করোনাকালে বন্ধের প্রভাবে এই হার কমে দাঁড়িয়েছে ৩৬ শতাংশ। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ^পরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের গড় হার ৫১ শতাংশের বেশি, যা আগে ছিল ৬৮ শতাংশের মতো। পঞ্চম শ্রেণির বাংলা, গণিত ও বিজ্ঞানেও ক্ষতি বেড়েছে।
এনসিটিবির সদস্য (প্রাথমিক শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক ড. এ কে এম রিয়াজুল হাসান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রাথমিক শিক্ষার ঘাটতি পূরণে এ ধরনের গবেষণার দরকার ছিল। আন্তর্জাতিক মানদ- বজায় রেখেই তা করা হয়েছে। আমরা এই গবেষণা প্রতিবেদন দু-এক দিনের মধ্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠাব। আমরা অন্তত এক বছরের জন্য রেমিডিয়াল ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেছি। মন্ত্রণালয় সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ নিচ্ছে।’
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, প্রাথমিক শিক্ষা দিন দিন পিছিয়ে পড়লেও সেদিকে তেমন একটা নজর নেই প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের। তারা ব্যস্ত আছে লাখ লাখ শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের বদলি-পদায়ন নিয়ে। কেউ কথা বললেই তার ওপর নেমে আসছে শাস্তি। ফলে শিক্ষকরাও দিন দিন তাদের আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন; কোনো রকমে দিন পার করছেন।
জানা যায়, প্রাথমিক শিক্ষায় উদ্ভাবনী ও অনন্য অবদানের জন্য ২০১৯ সালে সারা দেশের মধ্যে শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষক নির্বাচিত হন রাজবাড়ী জেলার স্বাবলম্বী ইসলামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. শফিকুল ইসলাম। একই বছর রাজধানীর মোহাম্মদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক খায়রুন নাহার লিপি শ্রেষ্ঠ সহকারী শিক্ষিক নির্বাচিত হন। সাধারণত আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী এসব শিক্ষকের হাতে পদক তুলে দেন। শিক্ষকদের পাশাপাশি সেরা শিক্ষার্থীদের পদক দেওয়া হয় একই অনুষ্ঠানে। কিন্তু করোনাকালে তাদের হাতে জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষক পদক তুলে দেওয়া যায়নি। গত ১২ মার্চ রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে তাদের হাতে এ পদক তুলে দেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন। তাই অনুষ্ঠানের কয়েক দিন আগে স্বাভাবিকভাবে তারা দাবি তুলেছিলেন, দেরি হলেও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে তারা পদক নেবেন; যা তাদের সারা জীবনের স্বপ্ন পূরণ করবে। কিন্তু সেটা না হওয়ায় তারা প্রতিমন্ত্রীর হাত থেকে ঠিকই পদক নেন। তবে এর ৬৮ দিনের মাথায় এই শ্রেষ্ঠ শিক্ষকদের প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবি তোলায় চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। একই ঘটনায় জয়পুরহাটের হিন্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. মাহবুবুর রহমানকেও সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। কারণ তার বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী এ পদক নিতে ১১ মার্চ ঢাকা এসেছিল। ওই শিক্ষকও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবিকে সমর্থন করেছিলেন। সাময়িক বরখাস্ত করা হলেও তাদের কাউকে শোকজ করা হয়নি; যা বিধিবহির্ভূত বলছেন শিক্ষকরা।
জানতে চাইলে ঢাকা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. আবদুল আজিজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সাময়িক বরখাস্তের পরবর্তী যে প্রক্রিয়া আছে, সেদিকেই আমরা যাব।’ এর বেশি কিছু তিনি বলতে রাজি হননি। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াতের সঙ্গে এসব ব্যাপারে কথা বলার জন্য গতকাল একাধিকবার চেষ্টা করলেও তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি।
বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক শিক্ষা গবেষণা পরিষদের সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে পদক নেওয়া একজন শিক্ষকের জীবনে সেরা প্রাপ্তি। এ জন্য শিক্ষকদের দাবি থাকতেই পারে, প্রত্যাশা থাকতেই পারে। তবে সবচেয়ে বড় কথা হলো, আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে কাউকে শাস্তি দেওয়া যায় না। শিক্ষকদের যেভাবে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে, তা মোটেও ঠিক হয়নি বলে আমার মনে হয়। এর প্রভাব অন্যান্য শিক্ষকের মধ্যেও পড়বে, এটাই স্বাভাবিক।’
শুধু তা-ই নয়, করোনাকালে বন্ধ থাকা প্রাথমিক শিক্ষা চালু রাখতে কিছু শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু অনলাইন প্ল্যাটফর্ম চালু করেন; যাতে অনলাইন ক্লাস, শিক্ষকদের মধ্যে আলোচনাসহ নানা কাজ করা হয়। এতে প্রতিটি ফেসবুক গ্রুপে লাখ থেকে হাজারো শিক্ষক যুক্ত হয়েছেন। এখনো সেসব গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে। কিন্তু সেই গ্রুপগুলোকেই এখন শায়েস্তা করার হাতিয়ার হিসেবে বেছে নিয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অপব্যবহারের অজুহাত দেখিয়ে অনলাইনে যুক্ত থাকা অনেক শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাকেই দেওয়া হচ্ছে কারণ দর্শানো নোটিস (শোকজ)। সরকার যেখানে শিক্ষকদের ডিজিটালি আপডেট হওয়ার কথা বলছে, সেখানে প্রায় অনেকটাই উল্টো পথে হাঁটছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।
শিক্ষকরা জানান, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে দীর্ঘদিন ধরে আসন গেড়ে বসেছেন কিছু কর্মকর্তা। অনেকেই ৬ থেকে ১২ বছর ধরে একই দপ্তরে চাকরি করছেন। তাদের যে দায়িত্বই থাক না কেন যত লাভজনক কাজ আছে, সেগুলোতেই তারা হাত দিচ্ছেন। যোগ্য কর্মকর্তাকে অধিদপ্তরে আনলে তাদের সরে যেতে হবে, এ জন্য তারা নানাভাবে ঊর্ধ্বতনদের ভুল বুঝিয়ে মাঠপর্যায়ে শাস্তি দিয়ে সবাইকে ভীত করে তুলছেন। এতে পিছিয়ে পড়ছে প্রাথমিক শিক্ষার মান।
প্রায় দুই বছর বন্ধ থাকার পর গত মার্চ-এপ্রিলে অনলাইনে প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলি করা হয়। যদিও নিয়ম ছিল, অনলাইনে নির্দিষ্ট মানদন্ড পূরণ ছাড়া কেউ বদলি হতে পারবেন না। কিন্তু তা মানেনি প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। ঢাকা ও ঢাকার বাইরে নিয়ম ভেঙে কয়েক শো শিক্ষকের বদলির আদেশ জারি করা হয়। আর এই বদলি-পদায়নে বড় অঙ্কের অর্থ লেনদেন হয়েছে বলে দাবি শিক্ষকদের; যা ভাগ-বাটোয়ারা হয়েছে মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের মধ্যে। আবার অনেক জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও থানা শিক্ষা কর্মকর্তাদের বদলিতেও সমন্বয়হীনতা দেখা দিচ্ছে। কাউকে ক্ষোভের বশবর্তী হয়েও অনেক দূরে বদলি করে দেওয়া হচ্ছে। এতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়ন।
জানা যায়, চলতি বছর থেকে প্রথম শ্রেণিতে চালু হয়েছে নতুন শিক্ষাক্রম। আর আগামী বছর থেকে দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণিতে এবং ২০২৫ সাল থেকে চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম চালু হবে। কিন্তু তা পড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নেই অধিদপ্তরের। শিক্ষকদের নামমাত্র প্রশিক্ষণেই দায়িত্ব শেষ করা হয়েছে। আসলে এই শিক্ষাক্রম শিক্ষার্থীরা কতটুকু আত্মস্থ করতে পারছে বা এ জন্য আর কী করা প্রয়োজন, সে ব্যাপারে তেমন নজর নেই।
এ ছাড়া এখনো প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষকরা বেতন পান ১১তম গ্রেডে ও সহকারী শিক্ষকরা পান ১৩তম গ্রেডে। দুই ধরনের প্রায় চার লাখ শিক্ষকই ১০ম গ্রেডে বেতনের দাবি করে আসছেন। এ ছাড়া সহকারী থানা শিক্ষা অফিসার ও সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসারাও দীর্ঘদিন ধরে নবম গ্রেডের দাবি করছেন। আর মাঠে কাজ করা এসব শিক্ষক ও কর্মকর্তার পদোন্নতিও নেই বললেই চলে। কিন্তু এগুলো সমাধানেও তেমন কোনো উদ্যোগ নেই মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের; যা প্রাথমিকের মান উন্নীতের ক্ষেত্রে বড় অন্তরায় বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
প্রবীণ শিক্ষক নেতা মো. সিদ্দিকুর রহমান আরও বলেন, ‘এখনো মফস্বলে বা দুর্গম অঞ্চলের অনেক স্কুলেই এক-দুজন শিক্ষক। অনেক স্কুলে শিক্ষকের পদ তিন-চার বছর ধরে শূন্য। শিক্ষক না থাকলে এর প্রভাব শিক্ষার্থীদের ওপরও পড়ে। এ ছাড়া সরকারি প্রাথমিকে সাধারণত দরিদ্র পরিবারের শিক্ষার্থীরা আসে। তাদের একটু আলাদা যতœ নেওয়া প্রয়োজন। সেগুলোও হচ্ছে না। শিক্ষকরাও তাদের বেতন-ভাতায় সন্তুষ্ট নন। সব মিলিয়ে আমরা প্রাথমিক শিক্ষায় কাক্সিক্ষত মান অর্জন করতে পারছি না।’
ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে গাজীপুর সিটি নির্বাচনে হেরে যাওয়া প্রার্থী আজমত উল্লা খানকে।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে থাইল্যান্ডের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতি জোর করে হারানো হয়েছে।
গত রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন তেমনি যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
দুই দশকেরও বেশি ক্যারিয়ারে অসংখ্য নাটক-টেলিছবি নির্মাণ করেছেন শিহাব শাহীন, উপহার দিয়েছেন হিট প্রোডাকশন। নিজেকে শুধু রোমান্টিক জনরায় আটকে না রেখে কাজ করেছেন বহুমাত্রিক ঘরানায়। নিজেকে প্রমাণ করেছেন সব্যসাচী নির্মাতা হিসেবে। নিজেকে শুধু টেলিভিশনেই আটকে রাখেননি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তিনিও পাল্টেছেন প্লাটফর্ম এবং সেখানেও দেখিয়েছেন নিজের মুন্সিয়ানা।
সর্বশেষ গেল ঈদে তুমুল সাড়া ফেলেছে তার নির্মিত স্পিন অফ সিরিজ ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’। সাফল্যের পর কিছুদিন আগেই অনুষ্ঠিত হয়ে গেল এর সাকসেস পার্টি যেখানে উপস্থিত ছিলেন টিমের কলাকুশলী থেকে শুরু করে অন্যান্য নির্মাতা ও শিল্পীরা। সেই ধারাবাহিকতায় এবার তিনি নিয়ে আসছেন সিরিজটির সিক্যুয়াল। শুধু তাই নয়, একসঙ্গে একাধিক সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে আসছেন জনপ্রিয় নির্মাতা।
শিহাব শাহীন বলেন, ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’ নিয়ে এতটা প্রত্যাশা ছিল না কিন্তু সে সাড়া পেয়েছি তা প্রত্যাশার চেয়েও বেশি। দর্শকরাই কাজটিকে গ্রহণ করেছেন আর তাই এখন এর সিক্যুয়াল নিয়ে আসার পরিকল্পনা করছি। স্পিন অফে দেখিয়েছি অ্যালেন স্বপনের পেছনের গল্প। সিন্ডিকেটে তাকে আমরা দেখিয়েছিলাম ২০২২ সালে, সে ঢাকায় আসার পর এর মাঝের সময়টার গল্পই থাকবে সিক্যুয়ালে। যেটার সংযোগ থাকতে পারে ‘সিন্ডিকেট ২’-তে। ঈদের পরপর এটার শুট করার সম্ভাবনা রয়েছে।
এই সিক্যুয়াল ছাড়াও আরও বেশ কিছু সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে সবকিছু চূড়ান্ত হয়েছে বলেও জানান এ নির্মাতা। তিনি বলেন, মোস্তফা সরয়ার ফারুকির তত্ত্বাবধানে ওটিটি প্লাটফর্ম চরকির ‘মিনিস্ট্রি অফ লাভ’ সিরিজের একটা কনটেন্ট করবো। এখনও কাস্টিং চূড়ান্ত হয়নি। এছাড়া হইচইয়ের একটি সিরিজ ও বিঞ্জের একটি ফিল্ম করা হবে। নাম চূড়ান্ত হয়নি। তবে দুটোতেই জিয়াউল ফারুক অপূর্ব থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
মাঝে শোনা গিয়েছিল, আফরান নিশোকে নিয়ে ‘সিন্ডিকেট ২’ নাকি হবে না, এটা কতটুকু সত্য? এমন প্রশ্নে শিহাব শাহীন বলেন, এটা ভূয়া তথ্য। ডিসেম্বরের শেষ দিকে ‘সিন্ডিকেট ২’ করবো তার আগে সেপ্টেম্বরে শুরু করবো ‘রসু খাঁ’।
জানা গেছে, আগামী সপ্তাহে অস্ট্রেলিয়া পাড়ি জমাচ্ছেন শিহাব শাহীন। দেশে ফিরবেন মাসের শেষ নাগাদ এরপর কাজে নামবেন।
দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী আবাহনী লিমিটেড ও মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের মধ্যকার ফেডারেশন কাপ ফুটবলের ফাইনাল দেখতে কুমিল্লায় উড়ে গেছেন বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন।
কুমিল্লার শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত স্টেডিয়ামে আজ বেলা ৩টা ১৫ মিনিটে শুরু হয়েছে ম্যাচটি। সালাউদ্দিন ম্যাচ শুরুর ঘণ্টা খানেক আগে কুমিল্লায় পৌঁছান।
ঢাকা থেকে সড়ক পথে কুমিল্লায় পাড়ি দিতে মাত্র দুই ঘণ্টা সময় লাগে। তবে সালাউদ্দিন দূরত্বটা পাড়ি দিয়েছেন হেলিকপ্টারে করে। যা আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
টাকার অভাবে কদিন আগে নারী ফুটবলারদের অলিম্পিক বাছাইয়ে পাঠায়নি বাফুফে। অথচ ঢাকা থেকে কুমিল্লায় যেতে বাফুফে সভাপতি বেছে নিলেন হেলিকপ্টার।
হেলিকপ্টারে ঢাকা থেকে কুমিল্লার এই যাত্রায় বাফুফে সভাপতির সঙ্গী হয়েছেন সংস্থার নারী উইংয়ের চেয়ারম্যান মাহফুজা আক্তার কিরণ।