
ব্রাজিল দলে কাসেমিরোকে বলা হয় ফায়ার ফাইটার। এমন নয় যে, কখনো ফায়ার সার্ভিসে কাজ করতেন এই ব্রাজিলিয়ান ফুটবলার। কাসেমিরোকে সতীর্থরা এ নামে ডাকেন কারণ জরুরি মুহূর্তে তাকেই এগিয়ে আসতে হয়! নামটা রিয়াল মাদ্রিদে থাকার সময়ে কোচ কার্লো আনচেলত্তির দেওয়া। ফিলিপে লুইস আবার তাকে ডাকেন ‘ভ্যাকুয়াম ক্লিনার’, মাঠের সব ‘জঞ্জাল’ সরানোই নাকি কাসেমিরোর কাজ! তবে কাল সুইজারল্যান্ডের বিপক্ষে কাসেমিরো ফায়ার ফাইটারের ভূমিকায়। গোল যখন অধরা, এমন জরুরি মুহূর্তেই কাসেমিরোর গোলে সুইসদের প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপে হারিয়ে শেষ ষোলো নিশ্চিত করেছে পাঁচবারের চ্যাম্পিয়নরা।
নেইমার নেই, এই হাহাকার সুইজারল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচ শুরুর আগে থেকেই। কে খেলবেন নেইমারের জায়গায়, এ নিয়ে জল্পনা-কল্পনা। নেইমারকে ছাড়াও যে ম্যাচ জেতা যায়, কাসেমিরো সেই দৃষ্টান্তই দেখালেন। সুইজারল্যান্ডের বিপক্ষে কাসেমিরোর গোলটা মনে করিয়ে দেয় রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে ২০১৭-এর চ্যাম্পিয়নস লিগ ফাইনালে জুভেন্তাসের বিপক্ষে গোলটাকে। স্টেডিয়াম ৯৭৪-এ, নির্ধারিত সময়ের যখন আর মাত্র মিনিট সাতেক বাকি, তখন দূরপাল্লার শটে কাসেমিরোর গোলেই তো হলুদ ঢেউ উঠল। ভিনিসিয়ুস জুনিয়রের ছোট্ট পাস থেকেই কাসেমিরোর শটে ব্রাজিল পেল আরাধ্য গোলের দেখা, ম্যাচের ৮৩ মিনিটে।
ম্যাচের পর কাসেমিরো জানালেন নিজের অনুভূতির কথা, ‘বিশ্বকাপ শুরুর আগে থেকেই জানতাম, গ্রুপটা হবে কঠিন। আমাদের গ্রুপটা খুব কঠিন। সার্বিয়া জানে কীভাবে খেলতে হয়, কীভাবে খেলা তৈরি করতে হয়। আজও (সোমবার) আমরা জানতাম খুব কঠিন হবে ম্যাচটা। প্রথম কঠিন কাজটা হচ্ছে পরের রাউন্ডে জায়গা করে নেওয়া। এটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। আমরা ভালোভাবেই লড়েছি, অনেক কিছু সয়েছি। ওরা জানে যে ওদের ফুটবল খুব একঘেয়ে। এ ম্যাচটা ছিল খুবই টানটান, আমরা জানতাম যে আমাদের পায়ে বল এলে গোল করতেই হবে এবং ঈশ্বরের দয়ায় আমরা সেটা করতে পেরেছি’Ñ ব্রাজিলের স্পোর্টটিভিকে জানিয়েছেন ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে আসা এ মিডফিল্ডার।
আগে ক্রসবারে বল লাগিয়েছিলেন কাসেমিরো, এবার পেলেন গোলের দেখা। কাসেমিরো বলছেন, ‘প্রথমে ক্রসবারে বল লেগেছিল, আজকে আমি সুযোগ পেয়েছি এবং গোল করে দলকে সাহায্য করতে পেরেছি। এটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।’ নির্ভার হয়ে তিনি বললেন, ‘এখন আমাদের কাজ হবে বিশ্রাম নেওয়া এবং পরের ম্যাচের জন্য চিন্তা করা।’
ম্যাচের পর রদ্রিগোও বলেছেন, ‘আমি খুবই খুশি, যা করতে চেয়েছিলাম তা করতে পেরেছি। আমি খেলতে পেরেছি। কাসেমিরো জানে কী করতে হবে। সে নাম্বার ফাইভ, নাম্বার নাইন এবং নাম্বার ইলেভেনÑ সব পজিশনেই খেলতে পারে! আমরা রিয়াল মাদ্রিদে একসঙ্গে অনেক দিন খেলেছি। তাই আমরা একে অন্যের নড়াচড়া দেখেই বুঝতে পারি কী হতে যাচ্ছে।’
এ নিয়ে পরপর দুই ম্যাচে দুটো ইউরোপিয়ান দলকে হারাল ব্রাজিল। আর দুই ম্যাচেই ব্রাজিলের গোলপোস্টে প্রতিপক্ষ কোনো শটই নিতে পারেনি। ১৯৬৬ সালের পর থেকে, ১৯৯৮ বিশ্বকাপের ফ্রান্স দল বাদে অন্য কোনো দলের রক্ষণ এতটা জমাট ছিল না।
বিশ্বকাপ গ্রুপ পর্বের ড্রয়ের পর সবার বাঁকা চোখ ছিল বি গ্রুপে। বিশ্ব রাজনীতির বড় শত্রু-মিত্ররা একই গ্রুপে যুক্তরাষ্ট্র, ইংল্যান্ডের সঙ্গে ‘বড় শত্রু’ ইরান। প্রথম পর্ব টপকে যাওয়ার লড়াইয়ে একে অপরকে পেছনে ফেলার প্রতিযোগিতায়। এই এগিয়ে যাওয়ায় যেমন রাজনৈতিক প্রতিশোধের তৃপ্তি থাকবে তেমনি খেলার মাঠে জয়ের আনন্দও থাকছে। এর আগে ইংল্যান্ড-ইরান খেলা হয়েছে। আজ সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক ম্যাচে মুখোমুখি হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইরান। লড়াইটা আবার হয়ে দাঁড়িয়েছে গ্রুপের অলিখিত ফাইনালও।
বিশ্ব রাজনীতিতে দুই রাষ্ট্রের বৈরিতার কথা সবার জানা। ১৯৮০ থেকে একে অপরের মুখ দেখাদেখি বন্ধ অবস্থা। তারাই মাঠের যুদ্ধে নামছে ভিন্ন তৃপ্তির আশায়। তৃপ্তিটা যুদ্ধ জয়ের মতোই। আজ একে অপরকে বিদায় করে দেওয়ার সুযোগ ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের সামনে। গ্রুপে ৩ পয়েন্ট নিয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে ইরান। যুক্তরাষ্ট্র ১ পয়েন্ট নিয়ে তিনে। ইরান জিতলে তাদের পয়েন্ট হবে ৬, যুক্তরাষ্ট্র জিতলে হবে ৫। আর ড্র হলেও ইরান এগিয়ে থাকবে ৪ পয়েন্ট নিয়ে। আজ তাদের শুধু হার এড়ালেই হয়।
গ্রুপের অপর ম্যাচে মুখোমুখি হচ্ছে ইংল্যান্ড ও ওয়েলস। পাশাপাশি দুই রাজ্যের ম্যাচ দেখে সম্প্রীতির হাওয়া বইছে এমন ভাবার সুযোগ নেই। ক্রিকেটে মিলিত হয়ে খেললেও ফুটবলে রাগবির মতোই দ্বৈরথ এ দুই দলের। রাগবিতে তাদের ম্যাচ মানেই উত্তেজনার। ঠিক তেমনি ফুটবলেও ছেড়ে কথা বলে না কেউ কাউকে। দুই দলের ফুটবলের ইতিহাসও পুরনো। সেই ১৮৭৯ সাল থেকে মোট ১০৩ ম্যাচ খেলেছে। এর মধ্যে অভিজ্ঞতার বিচারে অবশ্যই ইংল্যান্ডই জয়ের পাল্লায় এগিয়ে। তাদের ৬৮ জয়ের বিপরীতে ওয়েলসের জয় ১৪টি। আর বাকি ২১ ম্যাচ ড্র। ইংল্যান্ডকে আজ হারালেও ওয়েলসের খুব একটা লাভ নেই। তাদের সমান ৪ পয়েন্ট নিয়ে গোলগড়ে বাদ পড়বেন গ্যারেথ বেলরা। আর ইংল্যান্ড জিতলে সরাসরি দ্বিতীয় রাউন্ড। ফল ড্র হলে ইংল্যান্ডকে তাকিয়ে থাকতে হবে যুক্তরাষ্ট্র-ইরান ম্যাচের দিকে। তবে ইংল্যান্ডের দ্বিতীয় রাউন্ডে ওঠার সুযোগ বেশি।
ফিরে আসা যাক যুক্তরাষ্ট্র-ইরান ম্যাচে। বিশ্বকাপে দুই দলের দেখা এই প্রথম নয়। ১৯৯৮ সালে আরও একবার মাঠের যুদ্ধে নেমেছিল তারা। সেই যুদ্ধ তাতিয়ে দেন ইরানের তখনকার শীর্ষ নেতা আলি খামেনি। ইরান ফুটবলারদের প্রতি তার নির্দেশ ছিল ম্যাচপূর্ব করমর্দনের সময় যেন যুক্তরাষ্ট্র ফুটবলারদের সঙ্গে কথাও না বলেন! অবশ্য ইরান ফুটবলাররা এমনটা করেননি। বরং সম্প্রীতি ও বন্ধুত্বের প্রতীক সাদা গোলাপ উপহার দেন মাঠে। এরপর দুই দল মিলে তুলেছেন গ্রুপ ফটো। রাজনীতিকে মাঠে প্রবেশ করতে দেননি সেই ফুটবলাররা। ওই ম্যাচে ২-১ গোলে জিতেছিল ইরান।
এরপর একটি প্রীতি ম্যাচেও ইরানকে হারাতে পারেনি যুক্তরাষ্ট্র। মাঠের লড়াইয়ে রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীর সঙ্গে ওই ম্যাচে ১-১ গোলে ড্র করে তারা। ইরান তাই অজেয় থেকেই আজ মাঠে নামছে। তবে যুক্তরাষ্ট্রের কোচ গ্রেগ বেরহাল্টার নিশ্চিত আগের ফল এবার বদলাবে। রাজনৈতিক লড়াই ১৯৯৮ এর মতো এবারও পাশে থাকবে উল্লেখ করে বেরহাল্টার বলেন, ‘আমি ক্যারিয়ারে তিনটি ভিন্ন দেশে খেলেছি। সুইডেনে কোচিং করিয়েছি। ফুটবলে একটা মজার ব্যাপার হলো আপনি বিশ্বজুড়ে মানুষের সঙ্গে মিশবেন। নানা মত ও চিন্তা সম্পর্কে জানবেন ও তা আপন করে নেবেন। আর এই বিষয়টা হয় ফুটবলের জন্য। ফুটবল মানুষকে ভালোবাসতে শেখায়। কালকের (আজ) ম্যাচে যা হবে তা শুধুই ক্রীড়াভিত্তিক। দুই দলই দ্বিতীয় রাউন্ডে উঠতে চাইবে। এখানে রাজনৈতিক বা দুই দেশের বৈরী সম্পর্কের কিছুই আসবে না। আমরা দুই দলই ফুটবল খেলি এবং এই খেলার জন্যই প্রতিযোগিতায় নামব।’
বেরহাল্টারের জন্য স্বস্তির বিষয় ইংল্যান্ডের সঙ্গে ভালো খেলে ড্র। ওয়েলসের সঙ্গে পয়েন্ট হারালেও বড় দলের বিপক্ষে ড্রয়ে দ্বিতীয় রাউন্ডের স্বপ্ন এখনো টিকে আছে যুক্তরাষ্ট্রের। তবে ইরান এই ম্যাচে আত্মবিশ্বাসে এগিয়ে থাকবে। প্রথম ম্যাচে ইংল্যান্ডের কাছে ৬-২ গোলে হেরে দুঃস্বপ্নের শুরু হয় ইরানের। তবে ওয়েলসের সঙ্গে ততটাই স্বপ্নময় জয় এসেছে দলটির। ওই ২-০ গোলের জয়ে দ্বিতীয় রাউন্ডের পথে ভালোভাবে এগিয়ে ইরান। তাছাড়া বিশ্বকাপের সময় দেশ থেকেও উড়ে এসেছে সুখবর। প্রায় দুই মাস ধরে পুলিশি হেফাজতে মাশা আমিনি নামক এক তরুণীর মৃত্যুর প্রতিবাদে উত্তাল ছিল ইরান। মাথায় হিজাব না পরায় গ্রেপ্তার হয়েছিলেন আমিনি। ঠিক একই কারণে গ্রেপ্তার হওয়া ইরানের পুরস্কারজয়ী অভিনেত্রী হেনগামেহ ঘাজিনি ছাড়া পেয়েছেন সাজা থেকে। ইরানি প্রতিবাদীদের জন্য এ এক বিজয়। সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে মাঠের জয় সরকারবিরোধী আন্দোলনের মধ্যে স্বস্তি এনে দিতে পারে।
দেখতে দেখতে বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্ব চলে এসেছে শেষ অধ্যায়ে। প্রথম দুটো করে ম্যাচের পর বেশিরভাগ দলই স্পষ্ট বুঝতে পেরেছে নিজেদের অবস্থান। আজ থেকে শুরু তৃতীয় রাউন্ডের খেলা। একই সমান্তরালে হবে শেষ দুটো ম্যাচ, তাতে করে আগেভাগে অঙ্ক মিলিয়ে নামার সুযোগটা থাকছে না। ‘এ’ গ্রুপে আল বাইয়াত স্টেডিয়ামে স্বাগতিক কাতারের মুখোমুখি হবে নেদারল্যান্ডস। খলিফা ইন্টারন্যাশনাল স্টেডিয়ামে খেলবে সেনেগাল ও ইকুয়েডর। কাতারের দ্বিতীয় রাউন্ডে খেলার সম্ভাবনা শেষ, স্বাগতিকরা হেরেছে ইকুয়েডর ও সেনেগালের কাছে। নেদারল্যান্ডস সেনেগালের সঙ্গে জিতলেও ড্র করেছে ইকুয়েডরের সঙ্গে। শেষ রাউন্ডের ম্যাচে তাই তিন দলেরই সুযোগ আছে নকআউটে উঠতে পারার।
অপেক্ষাকৃত সহজ অবস্থানে নেদারল্যান্ডস, তাদের প্রতিপক্ষ কাতার। আসরের স্বাগতিকরা ফিফা র্যাংকিংয়ের ৫০তম অবস্থানে, এখনো কোনো ম্যাচ না জিততে পারা কাতারের বিপক্ষে নেদারল্যান্ডসেরই জেতার কথা। যদিও অঘটনের বিশ্বকাপে কোনো প্রতিপক্ষই নিরাপদ নয়। তবুও ফুটবল সামর্থ্য এগিয়ে রাখছে ডাচদেরই। কাতারের বিপক্ষে জিতলেই শেষ ষোলোয় পা রাখবে নেদারল্যান্ডস, ড্র করলেও তারা যেতে পারে পরের রাউন্ডে যদি ইকুয়েডর হারিয়ে দেয় সেনেগালকে।
ইকুয়েডরের জন্যও অংকটা সহজে মিলে যাবে সেনেগালকে হারাতে পারলে। ড্র করলেও তারা যেতে পারে পরের রাউন্ডে, এমনকি হেরে গেলেও তাদের সম্ভাবনা থাকবে যদি কাতার হারাতে পারে নেদারল্যান্ডসকে।
সেনেগালেরও অংকটা একই, তাদেরও জিততেই হবে সেনেগালের বিপক্ষে। ড্র করলেও তারা শেষ ষোলোয় যেতে পারবে, যদি কাতার হারাতে পারে নেদারল্যান্ডসকে। কাতারের কোনো সম্ভাবনাই নেই, প্রথম দুই ম্যাচে হেরে তারা আগেই ছিটকে গেছে।
বিশ্বকাপের বাছাই পর্বে ইউরোপিয়ান অঞ্চলে সবচেয়ে বেশি গোল করেছিলেন মেমফিস দিপেই। কিন্তু চোটের কারণে বার্সেলোনার এই ফরোয়ার্ডকে এখনো মাঠে নামাতে পারেননি কোচ লুই ফন গাল। ম্যাথিয়াস ডি লিখটের একটা হলুদ কার্ড আছে, আজ আরেকটা কার্ড দেখলে শেষ ষোলোর ম্যাচে খেলতে পারবেন না ডাচ সেন্টারব্যাক। জুরেন টিম্বার খুব সম্ভবত নিজের জায়গাটা ধরেই রাখবেন। ইকুয়েডরের বিপক্ষে ম্যাচের ৬ মিনিটেই কোডি গাকপো গোল করে ডাচদের এগিয়ে দেওয়ার পর অনেকেই ভেবেছিলেন ম্যাচটা সহজেই জিতবে নেদারল্যান্ডস। কিন্তু এনর ভ্যালেন্সিয়ার গোলে সমতা ফিরিয়ে নিজেদের বিশ্বকাপ স্বপ্ন টিকিয়ে রাখে ইকুয়েডর, সঙ্গে অপেক্ষায় রাখে অরেঞ্জদের।
২ গোল করে এখন পর্যন্ত ডাচদের সর্বোচ্চ গোলদাতা কোডি গাকপো। তবে পিএসভি আইন্দহোভেনের ২৩ বছর বয়সী এই উইঙ্গারের কাছ থেকেই শুধু নয়, নেদারল্যান্ডস চাইবে ফ্রাঙ্কি দি ইয়ংয়ের মতো তারকারাও যেন গোলের দেখা পান, কারণ এটাই সম্ভবত এবারের বিশ্বকাপের সহজতম ম্যাচ হতে যাচ্ছে। কাতারকে হারিয়ে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে পরের ধাপে উঠলে নেদারল্যান্ডসের সম্ভাব্য প্রতিপক্ষ হতে পারে ইরান বা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।
সেনেগাল-ইকুয়েডর ম্যাচটা হয়ে গেছে নকআউট। যে জিতবে সেই খেলবে পরের রাউন্ডে। সাদিও মানেকে হারিয়ে সেনেগাল বড় একটা ধাক্কাই খেয়েছে। ডাচদের বিপক্ষে তারা গোল পায়নি, তবে কাতারকে হারিয়েছে ৩-১ গোলে। ইকুয়েডর কাতারকে হারালেও ডাচদের কাছ থেকে ছিনিয়ে এনেছে ১ পয়েন্ট। শক্তিমত্তায় দুই দলই কাছাকাছি, ইকুয়েডরের ফিফা র্যাংকিং ৪৪ আর সেনেগালের ১৮। আফ্রিকান নেশনস কাপ জয়ী সেনেগালের মূল শক্তি ছিল সাদিও মানের মতো একজন উঁচুদরের ফরোয়ার্ড, কিন্তু মানে না থাকায় দুই দলেরই প্রায় সমান সম্ভাবনা।
কাতার বিশ্বকাপে গ্রুপ পর্বের তৃতীয় রাউন্ড শুরু হচ্ছে আজ থেকে। যে রাউন্ড শেষে প্রতি গ্রুপ থেকে দুটি করে দল থেকে যাবে, আর বিদায় নেবে দুটি করে দল। অর্থাৎ বিশ্বকাপ এখন ছোট হয়ে আসার পালা!
‘এ’ গ্রুপ ও ‘বি’ গ্রুপের দলগুলো মাঠে নামবে আজ। দুই গ্রুপ থেকে কোনো দলেরই পরের রাউন্ড নিশ্চিত হয়নি এখনো। তবে ‘এ’ গ্রুপে থাকা স্বাগতিক কাতারের বিদায় আগেই নিশ্চিত হয়েছে। আজ নেদারল্যান্ডস তাদের হারালে বা ড্র করলেই চলে যাবে পরের পর্বে। সেনেগাল ও ইকুয়েডরের মধ্যে দারুণ লড়াই হবে। যেহেতু দুই দলের সামনেই রয়েছে শেষ ষোলোর হাতছানি।
‘বি’ গ্রুপে ৪ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে থাকা ইংল্যান্ড খেলবে ওয়েলসের বিপক্ষে। আর ৩ পয়েন্ট নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে থাকা ইরানের প্রতিপক্ষ যুক্তরাষ্ট্র। এই ম্যাচটা খুব ঝাঁজালো হতে যাচ্ছে বলেই আমার মনে হয়। অন্যদিকে ওয়েলসের বিপক্ষে ইংলিশরাই ফেভারিট থাকবে।
নেদারল্যান্ডস ৩-৪-১-২ ফর্মেশনে খেলে থাকে। কাতার তাদের প্রথম দুই ম্যাচই খেলেছে ৫-৩-২ ফর্মেশনে। ইকুয়েডরের বিপক্ষে ২-০ ব্যবধানে হেরে আসর শুরু করে আয়োজক দেশটি। সেনেগালের বিপক্ষে পরের খেলায় তাদের মধ্যে কিছুটা পরিবর্তন দেখা গেছে। তবে সেটা যথেষ্ট ছিল না। তাই তো হেরে গেছে ৩-১ ব্যবধানে। নেদারল্যান্ডস পরিষ্কার ফেভারিট কাতারের বিপক্ষে। আমার মনে হয় সহজ ম্যাচ হবে ডাচদের জন্য। জেতাটা যদি তাদের হাই স্কোরিং হয়, তাহলেও অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।
সেনেগালের বিপক্ষে ২-০ ব্যবধানে জিতলেও বেশ ঘাম ঝরেছে নেদারল্যান্ডসের। এরপর ইকুয়েডরের বিপক্ষে ১-১ ড্র। ওদের রক্ষণ আসলে খুব শক্তিশালী। ভার্জিল ফন ডাইক, নাথান আকে, ডি লিখটরা আছে। ডালে ব্লিন্ড ও ডেনজেল ডামফ্রিস একটু ওপরে দুই পাশে থাকে। ব্লিন্ডের ডিফেন্ডিং খুব শক্তিশালী। ডামফ্রিসের আক্রমণ খুব শক্ত। ফ্রেংকি ডি ইয়ং পুরো মিডফিল্ড কাভার করে। সব মিলিয়ে বেশ ব্যালেন্সড একটা দল। তবে একটা জায়গায় ওরা পিছিয়ে আছে, সেটা হলোÑ গোল স্কোরিং। এই জায়গার ঘাটতি দ্রুত পূরণ করতে হবে। কারণ সামনে নকআউট পর্বে এটাই সবচেয়ে বেশি কাজে লাগবে।
সেনেগাল ও ইকুয়েডরের মধ্যকার ম্যাচটা খুব ইন্টারেস্টিং হবে। ইকুয়েডর তো প্রমাণ করেছে তারা সহজ প্রতিপক্ষ নয়। কাতারকে হারানোর পর নেদারল্যান্ডসের সঙ্গে ড্রয়েই সেটা প্রমাণ হয়ে গেছে। দারুণ কিছু খেলোয়াড় আছে ওদের। গুস্তাভো আলফারো কোচ হওয়ার পর অনেক উন্নতিও করেছে ওরা। সেনেগালের ৩ পয়েন্ট হওয়ায় ড্র করলে তাদের জন্য যথেষ্ট হবে না। তাই অলআউট খেলে যে কোনো মূল্যে জয় তুলে নিতে চাইবে ওরা। ওদের দলে সাদিও মানের অভাব স্পষ্টই দেখা যাচ্ছে। মানে থাকলে নেদারল্যান্ডসের সঙ্গে তাদের ম্যাচটা অন্য রকমও হতে পারত। শেষ পর্যন্ত যেখানে ২-০ তে হেরেছিল ওরা।
‘বি’ গ্রুপে ইংল্যান্ড ৪ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে। ইরান ৩ পয়েন্ট নিয়ে আছে পরের স্থানে। যুক্তরাষ্ট্র ও ওয়েলসের পয়েন্ট যথক্রামে ২ ও ১। ইংল্যান্ড যে ওয়েলসের বিপক্ষে এগিয়ে থাকবে এটা বলার অপেক্ষা রাখে না। ড্র হলেও ওয়েলসের কোনো কাজে আসবে না। ওয়েলস তাই অলআউটেই যাবে।
ইংল্যান্ড আবার যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে গত ম্যাচে খুব বেশি ভালো খেলেনি। ইরানের সঙ্গে ৬-২ ব্যবধানে জেতার পর যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ড্র করে। অনেকে এ ম্যাচে ইংলিশদের পারফরম্যান্সের সমালোচনা করছেন। ওয়েলস ম্যাচে তাই আগের চেহারায় আসার চেষ্টা করবে তারা। গ্যারেথ সাউথগেট দলে কিছুটা পরিবর্তনও আনতে পারে। ওয়েলস কোচ রব পেজের বিভিন্ন ফর্মেশনে দল সাজানোর সুযোগ আছে। বাছাই পর্বে আমরা সেটাই দেখেছি। শেষ পর্যন্ত ৩-৪-২-১ সে বাস্তবায়ন করছে। ইংল্যান্ডও এই ফর্মেশনে খেলতে পছন্দ করে। তবে এই ম্যাচে তারা কোন ফর্মেশনে মাঠে নামে সেটা দেখার বিষয় হবে।
ইরান ও যুক্তরাষ্ট্র ম্যাচটা খুব ভালো হবে। এমনিতেই দুই দেশের মধ্যে রাজনৈতিক টানাপড়েন আছে। আর এই ম্যাচে যখন তারা মাঠে নামছে দুই দলেরই সুযোগ দ্বিতীয় পর্বে যাওয়ার। ইরান খুব ভালো ডিফেন্ডিং সাইট। কাউন্টারেও বেশ ভালো। যুক্তরাষ্ট্র আবার খুব হাইপ্রেসিং করে খেলে। ইরান যেহেতু এক পয়েন্ট এগিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে, তাই ওরা হারতে চাইবে না। যুক্তরাষ্ট্র যেকোনো মূল্যে ম্যাচ বের করতে চাইবে। সব মিলিয়ে যুদ্ধের দামামা মাঠে থাকতেই পারে!
জার্ড মুলার, ইয়ুর্গেন ক্লিন্সম্যান, মাইকেল বালাক, মিরোসøাভ ক্লোসা। ১৯৭০ থেকে বিশ্বকাপের জার্মানির গোলের সব প্রতিভু। ক্লোসা ১৬ গোল নিয়ে সর্বোচ্চ গোলদাতা টুর্নামেন্টের। মুলার করেছেন ১৪টি। ক্লিন্সম্যান ১১। ২০০২ বিশ্বকাপে ব্রাজিলের কাছে হেরে রানার্সআপ জার্মানরা ১৪টি গোল করেছিল। ১৮টি গোল করে ২০১৪ বিশ্বকাপ জিতেছিল তারা। সেমিফাইনালে এক ব্রাজিলকেই হারিয়ে দিয়েছিল ৭-১ গোলে।
অথচ সেই জার্মানি ২০১৮ থেকে ভুগছে গোলখরায়। সেবার মাত্র দুই গোল করে বিদায় নিয়েছিল গ্রুপ পর্ব থেকেই। এবারের বিশ্বকাপেও সেই খরা কাটিয়ে উঠতে পারেনি। প্রথম ম্যাচে গুনদোয়ানের গোলে এগিয়ে গেলেও হেরেছে জাপানের কাছে (২-১)। রবিবার স্পেনের সঙ্গে বাঁচামরার লড়াইয়ে স্পেনের বিপক্ষে পিছিয়ে পড়েছিল। তৃতীয় আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলতে নামা নিকোলাস ফুলক্রুগ ত্রাতা হয়ে গোল করেছেন। না হলে সে রাতেই মোটামুটি শেষ হয়ে যেত জার্মানদের এবারের বিশ্বকাপও। এই ফুলক্রুগ আবার একাদশের খেলোয়াড় নন। ১২০ ম্যাচে ৪৪ গোল করার টমাস মুলারকে ৭০ মিনিটে পাল্টে তাকে নামান কোচ হান্স ফ্লিক। মাঠে নামার ১৩ মিনিটের মাথায় লেরয় সানের পাস থেকে জামাল মুসিয়ালার পা ঘুরে বল দারুণ শটে জালে পাঠান ২৯ বছর বয়সী ফুলক্রুগ। ১২ মাস আগেও জার্মান দ্বিতীয় বিভাগের লিগে ঘুরে বেড়ানো ফুলক্রুগ অবশ্য দারুণ ফর্ম নিয়ে বিশ্বকাপ খেলতে এসেছেন। ওয়ের্ডার ব্রেমেনের ২৫ গোলের ১০টিই তার।
ফুলক্রুগের এই গোল চারবারের চ্যাম্পিয়নদের আশাটা জিইয়ে রেখেছে। শেষ ম্যাচে কোস্টারিকাকে হারালে রানার্সআপ হয়ে উঠতে পারবে শেষ ষোলোতে। সেক্ষেত্রে অবশ্য জাপানকে স্পেনের কাছে হারাতে হবে। যদি সে ম্যাচটি ড্রও হয়ে, তবু সুযোগ থাকবে জার্মানির। সে ক্ষেত্রে জাপান-জার্মানির পয়েন্ট হবে সমান, দেখা হবে গোল ব্যবধান। এই মুহূর্তে জাপানের গোল ২, খেয়েছে তারা ২টি। জার্মানি গোল করেছে ২টি, খেয়েছে ৩টি। আর জাপান যদি জার্মানির মতো চমকে দেয় স্পেনকেও, সেক্ষেত্রে কোস্টারিকাকে হারিয়েও লাভ হবে না। কারণ গোল ব্যবধানে স্পেন অনেক এগিয়ে (৮-১)।
কাজেই গোলটাই বড় হয়ে দেখা দিচ্ছে জার্মানির ক্ষেত্রে। গতবার মেক্সিকোর কাছে অপ্রত্যাশিত হারের (০-১) পর দ্বিতীয় ম্যাচে সুইডেনকে মার্কো রেউস আর টনি ক্রুসের দু’গোলে হারালেও দক্ষিণ কোরিয়ার কাছে হেরে (০-২) বিদায় নেয় প্রথম পর্ব থেকেই। ফুলক্রুগ অবশ্য আশায় আছেন শেষ ম্যাচে এবার ঠিক হয়ে যাবে সব, ‘আমাদের উন্নতির আরও জায়গা আছে। আশা করছি গ্রুপে শেষ ম্যাচে সব কিছু ঠিকমতো হবে।’ জার্মান কোচ হান্স ফ্লিক দাবি করেছেন দল সঠিক পথেই আছে। রক্ষণে আরও উন্নতির তাগিদ দিয়েছেন তিনি, ‘স্পেন দারুণ একটি দল। তাদের বেশ কিছু তরুণ খেলোয়াড় আছে। আমাদের ডিফেন্সে আরও উন্নতি করতে হবে। তবে গুরুত্বপূর্ণ হলো মানসিকতা।’
১ ডিসেম্বর রাতে শেষ ম্যাচে কোস্টারিকার বিপক্ষে জার্মানরা এই মানসিকতা কতটা রাখতে পারে, সেটাই দেখার। গোল করতে না পারলে এবারও প্রথম রাউন্ডেই শেষ হবে কাপ জয় আর ফাইনালে খেলার হিসাবে বিশ্বকাপের সবচেয়ে সফল দলকে।
বিশ্বকাপ ফুটবল দামামার মাঝে ক্রিকেটে আরেক দামামা বাজিয়েছে ভারতের রুতুরাজ গায়কোয়াড় ১ ওভারে ৭ ছক্কা হাঁকিয়ে। ৫০ ওভারের টুর্নামেন্ট বিজয় হাজারে ট্রফিতে উত্তর প্রদেশের বাঁহাতি স্পিনার শিবার ১ ওভারে ৪৩ রান তুলে নেন ভারতের ৯ টি-টোয়েন্টি খেলা এই ব্যাটার। আহমেদাবাদে গতকাল কোয়ার্টার ফাইনালে ৪৯তম ওভার শুরুর আগে মহারাষ্ট্রের রান ছিল ৫ উইকেটে ২৭২ রান। উত্তর প্রদেশের বাঁহাতি স্পিনার শিবার সামনে ছিলেন মহারাষ্ট্র অধিনায়ক ও ওপেনার রুতুরাজ গায়কোয়াড়। ডানহাতি ব্যাটারের রান ছিল ১৪৭ বলে ১৬৫। রাউন্ড দ্য উইকেটে বল করা শিবার প্রথম ও দ্বিতীয় বল লং অন দিয়ে, তৃতীয়টি মিড উইকেট, চতুর্থটি আবার লং অন দিয়ে, পরের বলটি ছিল নো বল, সোজা সাইটস্ক্রিন বরাবর পাঠান রুতুরাজ, ফ্রি হিট থেকে ওয়াইড লংঅনে পাঠিয়ে ডাবল সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন গায়কোয়াড়। শেষ বলে ওভার দ্য উইকেটে আসেন শিবা, তবে ছক্কা আটকাতে পারেননি। সপ্তম ছক্কাটিও আসে ওয়াইড লং অন দিয়ে। শেষ পর্যন্ত তারা তোলে ৫ উইকেটে ৩৩০ রান, এর মধ্যে গায়কোয়াড় একাই করেন ১৫৯ বলে অপরাজিত ২২০ রান। ইনিংসে ১০টি চারের সঙ্গে তিনি মারেন ১৬টি ছক্কা।
শিবার আগে লিস্ট-এ ক্রিকেটে ১ ওভারে ৪৩ রান দিয়েছিলেন সেন্ট্রাল ডিস্ট্রিক্টের উইলেম লাডিক। সে ক্ষেত্রে অবশ্য ব্যাটসম্যান ছিলেন দুজন নর্দার্ন ডিস্ট্রিক্টের ব্রেট হ্যাম্পটন ও জো কার্টার। তার আগের রেকর্ডটি হয়েছিল ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে, ২০১৩-১৪ মৌসুমে। মিরপুরের শেরেবাংলা জাতীয় স্টেডিয়ামে আবাহনীর আলাউদ্দিন বাবুর ১ ওভারে উঠেছিল ৩৯ রান। ব্যাটসম্যান ছিলেন এল্টন চিগুম্বুরা।
আগের ইনিংসের মতোই ব্যর্থ উসমান খাজা। পারেননি ডেভিড ওয়ার্নারও। প্রথম ইনিংসের দুই সেঞ্চুরিয়ানও ফিরে গেছেন। দ্বিতীয় ইনিংসের ব্যাটিংয়ে তাই খুব একটা সুবিধাজনক অবস্থায় নেই অস্ট্রেলিয়া। তবুও তৃতীয় দিন শেষে এগিয়ে আছে তারা।
ওভালে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে ভারতকে ২৯৬ রানে আটকে দেওয়ার পর দ্বিতীয় ইনিংসে ৪ উইকেট হারিয়ে ১২৩ রান করে অসিরা। এগিয়ে আছে ২৯৬ রানে।
দ্বিতীয় ইনিংসে বোলিংয়ের শুরুটা ভালো করেছে ভারত। অস্ট্রেলিয়াকে চেপে ধরেছে তারা।
দুই ওপেনার ডেভিড ওয়ার্নার ও উসমান খাজা ফেরেন ২৪ রানের মধ্যেই। মারনাস লাবুশান ও স্টিভেন স্মিথের ৬২ রানের জুটি ভাঙেন রবীন্দ্র জাদেজা, পরে ট্রাভিস হেডকেও ফেরান এই স্পিনার। টেস্ট ক্যারিয়ারে অষ্টমবারের মতো স্মিথকে আউট করেছেন জাদেজা।
তৃতীয় দিন শেষে মারনাস লাবুশানের সঙ্গে অপরাজিত আছেন ক্যামেরুন গ্রিন।
সংক্ষিপ্ত স্কোর: অস্ট্রেলিয়া: ৪৬৯ ও ৪৪ ওভারে ১২৩/৪ (লাবুশেন ৪১*, স্মিথ ৩৪; জাদেজা ২/২৫, উমেশ ১/২১)ভারত ১ম ইনিংস: ৬৯.৪ ওভারে ২৯৬ (রাহানে ৮৯, শার্দূল ৫১, জাদেজা ৪৮; কামিন্স ৩/৮৩, গ্রিন ২/৪৪, বোল্যান্ড ২/৫৯)।
আসন্ন ঈদুল আজহায় কোরবানির জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিজের পালন করা সাড়ে ২১ মণ ওজনের গরু উপহার দিতে চেয়েছিলেন কিশোরগঞ্জ জেলার পাকুন্দিয়া উপজেলার চরকাউনা গ্রামের সাধারণ কৃষক বুলবুল আহমেদ ও তার স্ত্রী ইসরাত জাহান। তাদের এই ভালোবাসার প্রতি সম্মান জানিয়ে উপহারের এই গরু গ্রহণে সম্মতি দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
শুক্রবার (৯ জুন) সন্ধ্যায় গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারি কৃষিবিদ মশিউর রহমান হুমায়ুন বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রী উপহারের গরু গ্রহণে সম্মতি দেন।
প্রধানমন্ত্রীর উপ-প্রেস সচিব হাসান জাহিদ তুষার গণমাধ্যমকে এ তথ্য জানিয়েছেন। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী খুশি হয়েছেন এবং এই বিরল ভালোবাসার জন্য বুলবুল আহমেদ ও তার স্ত্রীকে ধন্যবাদ দেন।
হাসান জাহিদ তুষার জানান, প্রধানমন্ত্রীর ইচ্ছা এই গরু বুলবুল আহমেদের নিজ বাড়িতেই থাকবে এবং সেখানেই কোরবানি হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কোরবানির গরুর মাংস স্থানীয় দরিদ্র-অসহায় জনগণের মধ্যে বিলিয়ে দেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন।
গরুটি ক্রস ব্রাহমা প্রজাতির। এতে আনুমানিক ৮০০ কেজি মাংস হতে পারে বলে জানিয়েছেন বুলবুল আহমেদ। বুলবুল জানান, ২০২০ সালে নেত্রকোনা জেলা থেকে আড়াই লাখ টাকায় প্রধানমন্ত্রীকে উপহার দেওয়ার জন্য তিনি এই গরু কেনেন। গরু কেনার পর কিশোরগঞ্জের বিখ্যাত পাগলা মসজিদে পাঁচ হাজার টাকা মানতও করছিলেন তিনি যেন তার গরুটি সুস্থ থাকে।
তিনি আরও জানান, তিনি ও পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকে মাঠকর্মী হিসেবে কর্মরত তার স্ত্রী ইসরাত জাহান আওয়ামী লীগ সরকারের একটি বাড়ি, একটি খামার প্রকল্প থেকে ক্ষুদ্র ঋণ নিয়ে এবং নিজের জমানো টাকা দিয়ে প্রধানমন্ত্রীর জন্য এই গরু কেনেন। তারা গত তিন বছর গরুটির নিবিড় পরিচর্যা করেন।
প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আবেগ ও ভালবাসা থেকে তারা এই গরু ক্রয় ও লালন পালন করেছেন বলে জানান।
উপহার হিসেবে তার গরুটি গ্রহণ করার সম্মতি দেওয়ায় বুলবুল আহমেদ প্রধানমন্ত্রীর প্রতি ধন্যবাদ এবং কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন। বুলবুল আহমেদ কিশোরগঞ্জ জেলা আওয়ামী মৎস্যজীবী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক।
বেশ ক'দিন তীব্র তাপদাহের পর গতকাল রাজধানী ঢাকাজুড়ে হয়েছে স্বস্তির বৃষ্টি। এতে তাপমাত্রা এসেছে কমে, পরিচ্ছন্ন হয়েছে পরিবেশ। তবুও আজ সকালে বায়ুদূষণের কারণে বিশ্বে দূষিত শহরের তালিকায় শীর্ষ পাঁচে আছে ঢাকা। বৃষ্টিধোয়া রাজধানী ঢাকা আজ সকাল সাড়ে ৮টায় ১৫৫ স্কোর নিয়ে দূষণের তালিকায় চতুর্থ।
আজ শনিবার (১০ জুন) সকাল সাড়ে ৮টায় বায়ুমানের সূচক (একিউআই) অনুযায়ী ঢাকায় বাতাসের স্কোর ছিল ১৫৫। বায়ুর মান বিচারে এ মাত্রাকে 'অস্বাস্থ্যকর' বলা হয়। একই সময়ে একিউআই স্কোর ১৬৮ নিয়ে প্রথম অবস্থানে আছে পাকিস্তানের লাহোর। দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে ভিয়েতনামের হ্যানয়, স্কোর ১৫৬। তৃতীয় স্থানে রয়েছে ইসরায়েলের তেলআবিব। আর পঞ্চম স্থানে আছে চীনের শেংডু, স্কোর ১৪৯।
একইসময়ে ১৩৮ স্কোর নিয়ে ষষ্ঠ স্থানে রয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকার জোহেনেসবার্গ। ১৩২ স্কোর নিয়ে সপ্তম স্থানে রয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই। অষ্টম নেপালের কাঠমান্ডু, স্কোর ১২৭। ১১৮ স্কোর নিয়ে নবম স্থানে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ডেট্রয়েট আর ১১৭ স্কোর নিয়ে দশম সৌদি আরবের রিয়াদ।
সুইজারল্যান্ডভিত্তিক বায়ুর মান পর্যবেক্ষণকারী প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান আইকিউ এয়ার দূষিত বাতাসের শহরের এ তালিকা প্রকাশ করে। প্রতিদিনের বাতাসের মান নিয়ে তৈরি করা একিউআই স্কোর একটি নির্দিষ্ট শহরের বাতাস কতটুকু নির্মল বা দূষিত, সে সম্পর্কে মানুষকে তথ্য দেয় এবং তাদের কোনো ধরনের স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি হতে পারে কি না, তা জানায়।
তথ্যমতে, একিউআই স্কোর শূন্য থেকে ৫০ ভালো হিসেবে বিবেচিত হয়। ৫১ থেকে ১০০ মাঝারি হিসেবে গণ্য করা হয়। আর সংবেদনশীল গোষ্ঠীর জন্য অস্বাস্থ্যকর হিসেবে বিবেচিত হয় ১০১ থেকে ১৫০ স্কোর। ১৫১ থেকে ২০০ পর্যন্ত 'অস্বাস্থ্যকর' হিসেবে বিবেচিত হয়। একইভাবে একিউআই স্কোর ২০১ থেকে ৩০০ এর মধ্যে থাকলে 'খুব অস্বাস্থ্যকর' এবং স্কোর ৩০১ থেকে ৪০০ এর মধ্যে থাকলে 'ঝুঁকিপূর্ণ' বলে বিবেচিত হয়।
ব্রাজিলের সান্তোস থেকে বার্সেলোনায় খেলতে এসেছিলেন নেইমার। তখন কাতালানদের মধ্যমণি আর্জেন্টাইন অধিনায়ক লিওনেল মেসি। দুই দেশের রাজনৈতিক বিরোধ চরমে। তবু সেসবকে পাশ কাটিয়ে দুজনে হয়ে ওঠেন বন্ধু।
ক্যাম্প ন্যু ছেড়ে নেইমার পাড়ি জমিয়েছিলেন প্যারিসে। তবুও বন্ধুত্ব ছিল অটুট। তার টানেই মেসিকে যখন বার্সা ছেড়ে দেয়, তখন এই ব্রাজিলিয়ান পার্ক দে প্রিন্সেসে ভেড়াতে মধ্যস্ততা করেন।
পিএসজির সঙ্গে চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়েছে মেসির। কিংবদন্তি এই ফুটবলার এবার ফুটবল ছেড়ে যাচ্ছেন সকার খেলতে। যুক্তরাষ্ট্রের ক্লাব ইন্টার মায়ামির হয়ে মাঠ মাতাবেন তিনি।
মেসি নিজে সেই ঘোষণা দেওয়ার আগ পর্যন্ত তার দলবদল নিয়ে চলছিল নানা নাটকীয়তা। সেই সব রহস্যময় দিনগুলোতে নেইমার কি জানতেন মেসির ঠিকানা হতে চলেছে কোনটা?
এক সাক্ষাৎকারে নেইমার বলেছেন, 'আমি জানতাম মেসি মায়ামিতে যাবে (হাসি)।'
তারপর নেইমার যোগ করেন, 'মেসি আমার সেরা বন্ধুদের একজন। সে আমাকে দারুণ সব মুহূর্ত উপহার দিয়েছে। আমি তার সঙ্গে খেলার সুযোগ পেয়েছি এটা আমার সৌভাগ্য। আমি জানতাম সে মায়ামিতে যাচ্ছে, এ নিয়ে আমার সঙ্গে তার কথাও হয়েছে। শহর ও জীবনযাত্রার কারণে মেসি সেখানে দারুণ সময় কাটাবে, এটা তাকে বলেছিলাম। আমি নিশ্চিত তার পদচারণায় দেশটির লিগে আসবে আমুল পরিবর্তন।'
ষাটের দশকে বাঙালির স্বাধিকার আন্দোলনের আগুন তরুণদের বুকে ছড়িয়ে দিয়েছিলেন তিনি। স্বাধীন বাংলা প্রতিষ্ঠান ক্ষেত্র তৈরি করতে গড়ে তুলেছিলেন ‘নিউক্লিয়াস’। স্বাধীনতার পর তিনি সমতাভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠার সংগ্রামের বাঁধভাঙা ঢেউ তুলেছিলেন। কিন্তু নব্বইয়ের দশকে সবকিছু থেকে দূরে আড়ালে চলে যান। রাজনীতিতে তাকে নিয়ে তৈরি হয়েছিল রহস্য। সেই রহস্য নায়ক সিরাজুল আলম খান চলে গেলেন চিররহস্যের দেশে।
মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম এ সংগঠক গতকাল শুক্রবার দুপুর আড়াইটার কিছু পর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।
সিরাজুল আলম খানের মৃত্যুর বিষয়টি দেশ রূপান্তরকে নিশ্চিত করেছেন হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাজমুল হক।
সিরাজুল আলম খানের ব্যক্তিগত সহকারী রুবেল দেশ রূপান্তরকে বলেন, অসুস্থ অবস্থায় তাকে রাজধানীর একটি প্রাইভেট হাসপাতালে প্রথমে ভর্তি করা হয়েছিল। পরে চিকিৎসকদের পরামর্শে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। অবস্থার অবনতি হলে গত ১ জুন নেওয়া হয় আইসিইউতে। এরপর গত বৃহস্পতিবার রাতে লাইফ সাপোর্ট দেওয়া হয়।
বঙ্গবন্ধুর আস্থাভাজন সিরাজুল আলম খানের জন্ম নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার আলীপুর গ্রামে, ১৯৪১ সালের ৬ জানুয়ারি। তার বাবা খোরশেদ আলম খান ছিলেন স্কুল পরিদর্শক। মা সৈয়দা জাকিয়া খাতুন গৃহিণী ছিলেন। ছয় ভাই ও তিন বোনের মধ্যে দ্বিতীয় সিরাজুল আলম খান।
১৯৬১ সালে ছাত্রলীগের সহসাধারণ সম্পাদক হন সিরাজুল আলম খান। ১৯৬৩ সালে তিনি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। তিনি ১৯৭২ সালে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) গঠন করেন।
সিরাজুল আলম খানের মৃত্যুর খবর পেয়ে হাসপাতালে ছুটে আসেন জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু, বাংলাদেশ জাসদের সভাপতি শরীফ নুরুল আম্বিয়া, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সভাপতি আ স ম আবদুর রব, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) সাধারণ সম্পাদক খালেকুজ্জামান, নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান (মান্না), জনসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, গণ অধিকার পরিষদের সদস্য সচিব নুরুল হক (নুর)।
সিরাজুল আলম খানের মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। তার আত্মার শান্তি কামনা করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানান তিনি। শোক জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ বিভিন্ন সংগঠন।
প্রয়াত সিরাজুল আলম খানের ঘনিষ্ঠ ও নাট্য পরিচালক সাকিল সৈকত দেশ রূপান্তরকে বলেন, সিরাজুল আলম খানের মরদেহ বিকেলে হাসপাতাল থেকে মোহাম্মদপুরের আল-মারকাজুলে নেওয়া হয়েছে। সেখানে গোসল শেষে রাতে শমরিতা হাসপাতালের হিমঘরে রাখা হবে। আজ শনিবার সকাল ১০টায় বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটে জানাজা শেষে নোয়াখালীতে নিয়ে যাওয়া হবে। সেখানে পুনরায় জানাজা শেষে বেগমগঞ্জের আলীপুরে মায়ের কবরের পাশে দাফন করা হবে রাজনীতির এ নায়ককে।
১৯৪১ সালে জন্ম নেওয়া এ কিংবদন্তি রাজনীতিককে বিগত কয়েক বছর ধরে নিয়মিত হাসপাতালে যেতে হয়েছে। দেশে এবং বিদেশে দীর্ঘ সময় চিকিৎসা নিয়েছেন তিনি।
জন্মের কয়েক বছর পর পিতার চাকরির সুবাদে সিরাজুল আলম খুলনায় চলে যান। ১৯৫৬ সালে খুলনা জিলা স্কুল থেকে এসএসসি ও ১৯৫৮ সালে ঢাকা কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। অনার্স ডিগ্রি অর্জনের পর কনভোকেশন মুভমেন্টে অংশ নেওয়ার কারণে তাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করা হয়।
স্বাধীনতার পক্ষে আন্দোলন-সংগ্রাম পরিচালনায় ১৯৬২ ছাত্রলীগ নেতা সিরাজুল আলম খান, আবদুর রাজ্জাক ও কাজী আরেফ আহমেদের নেতৃত্বে স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী পরিষদ বা স্বাধীনতার ‘নিউক্লিয়াস’ গঠিত হয়। পরে ছাত্র-তরুণদের আন্দোলন সংগঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন তারা। বঙ্গবন্ধুরও ঘনিষ্ঠ সাহচর্যে ছিলেন এ ছাত্রনেতারা। ছয় দফার সমর্থনে জনমত গঠনে ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করেন সিরাজুল আলম খান। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা বাতিল ও বঙ্গবন্ধুর মুক্তির দাবিতে আন্দোলন ও ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানে ছাত্র-শ্রমিকদের সম্পৃক্ত করতে প্রধান ভূমিকা পালন করেন তিনি।
বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পরপরই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাগ্নে শেখ ফজলুল হক মনির সঙ্গে বিরোধের জের ধরে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ ভেঙে দুই ভাগ হয়। এরপর ১৯৭২ সালে সিরাজুল আলম খানের উদ্যোগে রাজনৈতিক দল জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ প্রতিষ্ঠা হয়। তিনি কখনো নেতৃত্বে না এলেও জাসদ নেতাদের পরামর্শ দিয়ে তাদের ‘তাত্ত্বিক গুরু’ হিসেবে খ্যাতি পান। অনুসারী সবাই তাকে ‘দাদা ভাই’ নামেই ডাকতেন।
মূলত নব্বইয়ের দশকে সিরাজুল আলম খান কখনো জনসমক্ষে আসতেন না এবং বক্তৃতা-বিবৃতি দিতেন না; আড়ালে থেকে তৎপরতা চালাতেন বলে বাংলাদেশের রাজনীতিতে ‘রহস্য পুরুষ’ হিসেবে পরিচিতি পান। নব্বই পর্যন্ত একাধিকবার জেল-জুলুম খেটেছেন তিনি।
দাদা ভাইয়ের মৃত্যুত গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি) সভাপতি আ স ম আবদুর রব, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের চেয়ারপারসন অধ্যাপক আলতাফুন্নেসা, গণফোরাম একাংশে সভাপতি মোস্তফা মোহসিন মন্টু ও সাধারণ সম্পাদক সুব্রত চৌধুরী, লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান।
বাসায় তেলাপোকা মারার ওষুধ দেওয়ার পর বিষক্রিয়ায় মারা গেছে রাজধানীর বারিধারা এলাকার ব্যবসায়ী মোবারক হোসেন তুষারের দুই ছেলে। তার মেয়ে এখনো অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি। গত শনিবার ‘ডিসিএস অরগানাইজেন লিমিটেড’ নামের একটি পেস্ট কন্ট্রোল কোম্পানিকে দায়িত্ব দিয়েছিলেন ওই ব্যবসায়ী। প্রতিষ্ঠানটির কর্মীরা বাসায় ওষুধ দিয়ে ছয় ঘণ্টা পরে ঢুকে ঘর পরিষ্কার করতে বলেছিলেন। পরিবারটি ৯ ঘণ্টা পরে বাসায় ঢুকে বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হয়। এ সময় তাদের সবারই পেট খারাপ, বমির মতো উপসর্গ দেখা দেয়।
ওই পরিবারের বরাত দিয়ে পুলিশ জানিয়েছে, সেই পেস্ট কন্ট্রোল কোম্পানি পোকামাকড় নিধনের জন্য অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট (গ্যাস ট্যাবলেট) ব্যবহার করেছিল, যেটা থেকে বিষাক্ত গ্যাস তৈরি হয়। সেই গ্যাসের বিষক্রিয়াতেই তাদের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় মামলা হওয়ার পর ওই প্রতিষ্ঠানের ৫ কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
এদিকে রাজধানীতে গত পাঁচ বছরে এই বিষক্রিয়ায় বেশ কয়েকজন মানুষের মৃত্যু হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, উচ্চমাত্রার এই কীটনাশক বাসায় ব্যবহার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। অথচ বিভিন্নভাবে সাধারণ কীটনাশক হিসেবে দেদার বিক্রি হচ্ছে সারা দেশে।
সূত্র বলছে, রাজধানীসহ সারা দেশে কয়েক শতাধিক পেস্ট কন্ট্রোল প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব কোম্পানির প্রায় ৯৫ ভাগের কোনো অনুমোদন নেই। কৃষি ও পরিবেশ অধিদপ্তরের এসব দেখভাল করার কথা থাকলেও তারাও খুব একটা গুরুত্ব দিচ্ছে না।
পেস্ট কন্ট্রোল সার্ভিস প্রতিষ্ঠান সেবা নিন প্ল্যাটফর্ম লি.-এর চেয়ারম্যান শামসুল আলম বলেন, দেশে ব্যাঙের ছাতার মতো পেস্ট কন্ট্রোল প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠছে। অধিক মুনাফার আশায় তারা এক ধরনের নিষিদ্ধ ট্যাবলেট ব্যবহার করে। আবার অনেকে লিকুইড কেমিক্যাল ব্যবহার করে। কিন্তু কোন মাত্রায় এসব ব্যবহার করতে হয় তার প্রশিক্ষণ নেই। সরকারের পক্ষ থেকে এসব প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে আরও বেশি সতর্ক হওয়া উচিত।
রাজধানীর বেশ কিছু বাজার ঘুরে দেখা যায় অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট যত্রতত্র বিক্রি হচ্ছে। ফুটপাত থেকে শুরু করে দেয়াল লিখন ও অনলাইনের মাধ্যমে দেওয়া হচ্ছে চটকদার বিজ্ঞাপন। অথচ চাষাবাদ ছাড়া অন্য কাজে যার ব্যবহার নিষিদ্ধ। বদ্ধ ঘরে এই ধরনের কীটনাশক ব্যবহার করলে যে কারও বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
গতকাল রাজধানীর কারওয়ান বাজারে মাইকিং করে এসব কীটনাশক বিক্রি করছিলেন কাঞ্চন মিয়া। এ ধরনের কীটনাশক বিক্রির অনুমতি তার আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের অনুমতি লাগে না। দশ বছর ধরে এই ব্যবসা করি। কেউ তো কিছু বলে না। কোথা থেকে এসব পণ্য সংগ্রহ করা হয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, বেশিরভাগ পুরান ঢাকা থেকে সংগ্রহ করি। গাজীপুর সাভার থেকেও এসে দিয়ে যায়। এসব ব্যবহারে মানুষের মৃত্যুর ঝুঁকি রয়েছে তা জানেন না বলে জানান তিনি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন কীটনাশক জাতীয় একপ্রকার ওষুধের জেনেটিক বা গ্রুপ নাম হলো অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড। বাজারে অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট আকারে ফসটক্সিন, সেলফস, কুইকফস, কুইকফিউম, ডেসিয়াগ্যাস এক্সটি ইত্যাদি নামে পাওয়া যায়। অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট গ্যাস ট্যাবলেট নামেও পরিচিত। বাতাসের সংস্পর্শে এসে জীবনবিনাশী ভয়াবহ টক্সিক গ্যাস ফসফিন উৎপাদন করে। এই ট্যাবলেট সাধারণত গুদামজাত শস্যের পোকা দমন, ধান ক্ষেতের পোকা দমন, কলাগাছের পোকা দমন ও ইঁদুর দমনে ব্যবহার হয়ে থাকে। গত এক দশকে দেশে এই বিষাক্ত কীটনাশক মানুষের বাসাবাড়িতে ব্যবহার বাড়ছে। দেশের বাজারে ট্যাবলেট আকারে সহজলভ্য। রাজধানীতে ছারপোকা দমনে প্রায় যথেচ্ছ ব্যবহার হচ্ছে এই ট্যাবলেট।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে বালাইনাশক গ্রহণ করলে সেটা দ্রুত ফুসফুসে শোষিত হয় এবং রক্তে মিশে যায়। যদি পর্যাপ্ত পরিমাণ বালাইনাশক শ্বাসের মাধ্যমে গ্রহণ করা হয় তাহলে নাক, গলা ও ফুসফুস মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সরকারের যে দায়িত্বশীল প্রতিষ্ঠান রয়েছে এসব বিষয়ে তাদের পক্ষ থেকে কোন কোন কীটনাশক কোন মাত্রায় কোন কোন কীটপতঙ্গের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হবে সেটি নির্দিষ্ট করে নিশ্চিত করতে হবে। আমদানির সময়ও বিষয়টি খেয়াল রাখতে হবে। অথবা দেশেই যদি তৈরি করতে হয় তাহলে যথাযথ কর্র্তৃপক্ষের লাইসেন্স নিয়ে উৎপাদন করতে হবে। এটির গুণগত মান থাকছে কি না তারও পরীক্ষা করতে হবে।
পরিবেশ গবেষক পাভেল পার্থ বলেন, আমরা বিভিন্ন মাধ্যমে শুনেছি ওই বাসায় পেস্ট কন্ট্রোল প্রতিষ্ঠানটি অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ব্যবহার করেছে। যদিও আমরা এ বিষয়ে নিশ্চিত না। আমার মতে এটা আরও বেশি তদন্ত করা উচিত। সরকারের যে প্রতিষ্ঠান এসব বিক্রির অনুমোদন দেয় তাদের এই তদন্ত করে জানানো দরকার কী ধরনের কেমিক্যাল সেখানে ব্যবহার করা হয়েছিল। কারণ পেস্ট কন্ট্রোলের নামে কী ধরনের কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয় এটা জানাটা জরুরি।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে কোন ধরনের কীটনাশক কীভাবে ব্যবহার করা হবে তার কোনো নীতিমালা নেই। কীটনাশকগুলো সাধারণ কৃষিজমিতে ব্যবহৃত হয়। ঢাকা শহরে এরকম বিষ ব্যবহার নিষিদ্ধ করা উচিত। তাছাড়া রাস্তাঘাটে এসব জিনিস অহরহ বিক্রি হচ্ছে। এসবও তদন্তের আওতায় আনতে হবে।
আরও এক কর্মী গ্রেপ্তার : দুই শিশুর মৃত্যুর ঘটনায় টিটু মোল্লা নামে একজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তিনি বালাইনাশক কোম্পানিটির কর্মকর্তা। গত সোমবার রাতে তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ভাটারা থানার ওসি আবুল বাসার মুহাম্মদ আসাদুজ্জামান জানান, ওই ঘটনায় করা মামলায় এখন পর্যন্ত তিনজনকে গ্রেপ্তার করে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ।
একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবিরের মেয়ে অর্পিতা শাহরিয়ার কবির মুমুর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ।
বৃহস্পতিবার (৮ জুন) রাতে বনানীর বাসা থেকে ঝুলন্ত অবস্থায় মরদেহটি উদ্ধার করা হয়। রাতেই পরিবারের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করেছে পুলিশ।
তবে কী কারণে তিনি আত্মহত্যা করেছেন সে বিষয়ে কিছু জানা যায়নি।
শুক্রবার সকালে বনানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তাফিজুর রহমান জানান, বনানীর একটি বাসা থেকে অর্পিতা শাহরিয়ার কবির মুমুর মরদেহ উদ্ধার করা হয়, যা ঝুলন্ত অবস্থায় ছিল। পরে রাতেই পরিবারের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করা হয়েছে।
এর আগে, ২০২০ সালের জানুয়ারিতে স্ত্রী হারান শাহরিয়ার কবির।
নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান ও আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের সঙ্গে গতকাল মঙ্গলবার সকালে বৈঠক করেছেন ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস। এরপর দুপুরে বৈঠক করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে। এই বৈঠকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মহাপরিচালক উপস্থিত ছিলেন বলে জানা গেছে।
সরকারের গুরুত্বপূর্ণ তিন প্রতিনিধির সঙ্গে বৈঠকের বিষয়টি বেশ আলোচনার জন্ম দিয়েছে। এখানে মূলত আগামী নির্বাচনের ব্যাপারে দেশের রাজনীতিতে যে উত্তাপ দেখা দিয়েছে তা নিয়েই আলোচনা হয়েছে বলে জানা গেছে। তবে আনিসুল হক গণমাধ্যমে বলেছেন, তাদের এ বৈঠকে মার্কিন রাষ্ট্রদূত মূলত শ্রম আইন নিয়ে আলোচনা করেছেন। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের শ্রম আইন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের একটি পরামর্শ ছিল। বৈঠকে সেসব বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। একটি সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) অনুষ্ঠানে যোগ দিতে এ মাসেই জেনেভা যাওয়ার কথা রয়েছে।
পরে বেলা ১টা ১০ মিনিটে মার্কিন দূতাবাসে প্রবেশ করেন বিএনপি মহাসচিব। এরপর বেলা আড়াইটার দিকে তিনি দূতাবাস থেকে বের হন। রাতে মির্জা ফখরুল দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠান সামনে রেখে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যে ভিসানীতি ঘোষণা করেছে তার ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এই নীতি দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে সহায়ক হবে আমরা মনে করি বলে রাষ্ট্রদূতকে জানিয়েছি।’ তিনি বলেন, ‘রাষ্ট্রদূতকে আমি জানিয়েছি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে ছাড়া আওয়ামী লীগের অধীনে দেশে নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হবে না। দেশের জনগণও তাই মনে করে। এ ছাড়া নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার নিয়ে রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে আমাদের কোনো আলাপ হয়নি।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সম্প্রতি আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক বলেছিলেন, “নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করার আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করবেন।” তার এমন বক্তব্য নিয়ে আলোচনার ঝড় উঠলে পরে গণমাধ্যমে বিবৃতি দেয় আইন মন্ত্রণালয়। এরপর গতকাল মঙ্গলবার সকালে সচিবালয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক এবং প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের সঙ্গে বৈঠক করেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাড়া কীভাবে নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করা যায়, তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। দেশের সংবিধানে কী আছে তা-ও জানতে চেয়েছেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত।’
আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন ঘিরে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সরকারের দূরত্ব প্রকাশ্যে চলে এসেছে। কোনো ধরনের রাখঢাক ছাড়াই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ সরকারের মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ নেতারা যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনা করছেন। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আরও বেশি দৌড়ঝাঁপ শুরু করছেন। ফলে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ক্ষমতাসীনদের দূরত্ব এখন স্পষ্ট। আলোচনা আছে, সরকারবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে পশ্চিমা এ দেশটি হঠাৎ আরও ঘনিষ্ঠ হতে শুরু করেছে।
জানা গেছে, সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে এতদিন যুক্তরাষ্ট্রের মতপার্থক্য ছিল না। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন প্রত্যাশা করছে দেশটি। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগও এ নিয়ে কোনো দ্বিমত করেনি। এরই মধ্যে, ভিসানীতি ঘোষণা করে সরকারকে বড় চাপ দেওয়ার পূর্বাভাস দেয় যুক্তরাষ্ট্র। বিষয়টি নিয়ে সরকারি দল আওয়ামী লীগ ও মাঠের বিরোধী দল বিএনপি একে অন্যকে ঘায়েল করার চেষ্টা করে। তবে ভিসানীতি যে সরকারের ও আওয়ামী লীগের ওপরই বেশি চাপ তৈরি করেছে, সেটা ভেতরে-বাইরে আলোচনা আছে।
আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায় ও কূটনীতি-সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্র দেশ রূপান্তরকে জানিয়েছে, বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র তাদের অবস্থান পাল্টে নির্বাচনের স্বার্থে প্রয়োজনে সংবিধানের বাইরে যেতে হবে সরকারকে এমন প্রস্তাব দিতে চলেছে। ওই সূত্রগুলো দাবি করেছে, গত মাসের শেষের দিকে অথবা চলতি সপ্তাহে বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাস আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের বাসভবনে তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। পিটার হাস ওই বৈঠকে রাজনৈতিক সমঝোতায় না আসলে সব দলের অংশগ্রহণে জাতীয় সরকারের আদলে একটা কিছু করার বিকল্প প্রস্তাব দিয়েছেন। তা না হলে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের স্বার্থে সংবিধানসম্মত করে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের পদক্ষেপ নেওয়ার প্রস্তাব করেন। এ প্রস্তাব সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানেও দেওয়া হয়েছে। আনিসুল হকের সঙ্গে শ্রম আইন নিয়েও দীর্ঘ আলাপ করেন এ রাষ্ট্রদূত।
আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকজন নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, পিটার হাসের ওই প্রস্তাব নিয়ে সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ে গেলে তাতে বড় আপত্তি তোলা হয়। শুধু তাই নয়, যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা পাওয়া যাবে না এটা ধরেই দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরুর বার্তা দেওয়া হয়েছে সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে। তারা স্বীকার করেন যে, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান ক্রমেই আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে চলে যাচ্ছে। তবে নির্বাচনে যুক্তরাষ্ট্রের অসহযোগিতা করবে ধরে নিয়েই সরকারি দল আওয়ামী লীগ প্রস্তুতি নিচ্ছে।
পিটার হাস সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের ও মাঠের বিরোধী দল বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে একান্তে বৈঠক করেছেন। গুরুত্বপূর্ণ ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গেও নির্ধারিত-অনির্ধারিত বৈঠক করা শুরু করেছেন। গত সোমবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ব্রিফিংয়ে পিটার হাসকে উদ্দেশ্য করে প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেছেন, রাষ্ট্রদূতরা সীমা লঙ্ঘন করলে আইনি ব্যবস্থা নেবে সরকার।
আগামী নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সক্রিয় হয়ে ওঠার প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে জানিয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, পিটার হাসের দৌড়ঝাঁপ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘নাহি ছাড়ি’ অবস্থান আওয়ামী লীগের বিভিন্ন স্তরে দুশ্চিন্তা তৈরি হয়েছে।
সরকারের দুই মন্ত্রীও দেশ রূপান্তরের কাছে স্বীকার করেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সরকারের বিপক্ষে যেতে শুরু করেছে। ‘অন্যায় হস্তক্ষেপ’ বেড়েছে পিটার হাসের।
আওয়ামী লীগের কূটনীতিসম্পৃক্ত এক নেতা বলেন, সরকার বিকল্প হিসেবে শক্তিশালী দেশের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নে কাজ করে চলেছে। বিকল্প দেশের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে উঠলে নির্বাচন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রকে মাইনাস করে চলার এক ধরনের কৌশল গ্রহণ করা হবে। এ কৌশলে নির্বাচন সম্পন্ন হয়ে গেলে যুক্তরাষ্ট্রর সঙ্গে সম্পর্ক ঝালাই করা হবে নতুন পরিকল্পনা অনুযায়ী।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর আরেক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, ভিসানীতি মূলত সরকারের বিভিন্ন ক্ষেত্রে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। অনেকেই ভিসানীতিকে সব গেল বলে ধরে নিয়ে অবস্থান টলমলে করে তুলতে চায়। এরকম অবস্থা আওয়ামী লীগকে একটু চিন্তায় ফেলে দিয়েছে। দলের নেতাকর্মীরা যেন সাহস হারিয়ে না ফেলে, সেজন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনা করার কৌশল গ্রহণ করেছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগ নেতাদের সমালোচনা নিয়ে গুঞ্জন শুরু হয়েছে। এমন কথা শোনা যাচ্ছে যে, আওয়ামী লীগ কি তাদের অবস্থান থেকে সরতে শুরু করবে? আবার প্রশ্নও আছে যে, নির্বাচন কি হবে? জাতীয় সরকার আসবে খুব শিগগিরই, এমন গুঞ্জনও রয়েছে জোরালোভাবে। শুধু তাই নয়, বাতিল হওয়া নির্বাচন পদ্ধতি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনেই আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে এমন গুঞ্জনও শুরু হয়েছে। যদিও এসবে কোনো ভিত্তি রয়েছে মনে করেন না আওয়ামী লীগ নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা। তারা দাবি করেন, সংবিধান অনুযায়ীই নির্বাচন হবে। এ ইস্যুতে কোনো শক্তির সঙ্গেই আপস করবেন না আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে দলটির সভাপতিম-লীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, কোনো দেশের চাওয়ায় বাংলাদেশে আগামী নির্বাচন হবে না। দেশের মানুষের চাওয়া অনুযায়ী সংবিধানসম্মতভাবে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন হবে। তিনি বলেন, সবার মতো করেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য করতে বদ্ধপরিকর।
কূটনীতিসম্পৃক্ত আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের আরেক নেতা বলেন, দৃশ্যত যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সরকারের সঙ্গে দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে মনে করা হলেও সেপ্টেম্বরের আগে পশ্চিমা এ দেশটি তার চূড়ান্ত অবস্থান পরিষ্কার করবে না বলে তারা মনে করছেন। ওই নেতা বলেন, সেপ্টেম্বরে ভারত সফর রয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। মূলত সেই সফরেই বোঝা যাবে সরকার কোনদিকে যাবে। এ নেতা আরও বলেন, ‘আমাদের ডিপ্লোম্যাসি (পররাষ্ট্রনীতি) পরস্পরের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের নীতি। কূটনীতিতে প্রধানমন্ত্রী দেশি-বিদেশি অনেক নেতাকে ছাড়িয়ে গেছেন। সেই আস্থা-বিশ্বাসও প্রধানমন্ত্রীর ওপর আমাদের রয়েছে।’
এতদিন যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান পরিষ্কার হয়ে না ওঠায় সরকার ও আওয়ামী লীগ নেতারা দাবি করতেন, দেশটিকে তারা বোঝাতে পেরেছেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে সমালোচনা প্রমাণ করে না যে, ক্ষমতাধর দেশটির সঙ্গে আওয়ামী লীগের বোঝাপড়া ঠিক আছে। যুক্তরাষ্ট্র ভিসানীতি ঘোষণার পরই দেশটির অবস্থান আওয়ামী লীগের পক্ষে আছে এমন কথা কেউ আর বিশ্বাস করছে না।
আওয়ামী লীগের একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, আমেরিকাকে মাইনাস ধরেই এগিয়ে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দলটির শীর্ষ পর্যায়ের দুই নেতা আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান আগের চেয়ে বেশি স্পষ্ট হয়ে ওঠায় রাজনীতিতে তারা ‘ব্যাকফুটে’ চলে যাচ্ছেন কি না, তা নিয়ে আলোচনা চলছে দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের মধ্যে।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমি একটাই বুঝি, একটাই জানি, আগামী নির্বাচন সংবিধানসম্মতভাবেই হবে। এ জায়গা থেকে একটুও নড়বে না সরকার।’
একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবিরের মেয়ে অর্পিতা শাহরিয়ার কবির মুমুর (৪১) ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। মৃত্যুর আগে তিনি চিরকুট লিখে গেছেন। তবে সেখানে কি লেখা আছে তা নিশ্চিত করে জানা যায়নি।
বৃহস্পতিবার রাতে রাজধানীর মহাখালীর আমতলী এলাকার বাসা থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়। রাতেই পরিবারের দাবির প্রেক্ষিতে ময়নাতদন্ত ছাড়ায় মরদেহ হস্তান্তর করেছে পুলিশ। বিষয়টি দেশ রূপান্তরকে নিশ্চিত করেছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গুলশান বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) মো. জাহাঙ্গীর আলম। পুলিশের ধারণা, অর্পিতা গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন।
গুলশান বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মো. শহীদুল্লাহ সাংবাদিকদের বলেন, খবর পেয়ে পুলিশ বাসা থেকে লাশটি উদ্ধার করে। পরে স্বজনের অনুরোধে ময়নাতদন্ত ছাড়াই লাশ দাফনের অনুমতি দেওয়া হয়।
জানা গেছে, লন্ডনে আইন বিষয়ে পড়ালেখা করতেন অর্পিতা। ২০২০ সালের জানুয়ারিতে মা ফাতেমা কবিরের মৃত্যুর কারণে তিনি দেশে আসেন। এরপর দেশেই ছিলেন। মায়ের মৃত্যুর পর মানসিকভাবে অবসাদগ্রস্থ ছিলেন তিনি। বৃহস্পতিবার তার লণ্ডনে ফেরার কথা ছিল। মৃত্যুর আগে লিখে যাওয়া একটি চিরকুটে (সুইসাইড নোট) তিনি আত্মহত্যার বিষয়টি উল্লেখ করেছেন।
মেয়ের মৃত্যুতে শোকে বিবহবল লেখক–কলামিস্ট শাহরিয়ার কবির গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে পারেননি। তবে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সাধারণ সম্পাদক কাজী মুকুল বলেন, রাজধানীর মিরপুরের শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে অর্পিতাকে তাঁর মায়ের কবরে দাফন করা হয়েছে। রবিবার তাঁর কুলখানি অনুষ্ঠিত হবে।