
রোহিত শর্মার নেতৃত্বে পূর্ণশক্তির দল নিয়েই তিনটি একদিনের আন্তর্জাতিক ম্যাচ ও বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের দুটো টেস্ট খেলতে আজ ঢাকায় পা রাখছে ভারতীয় ক্রিকেট দল। ২০১৬ সালের পর এবারই প্রথম বাংলাদেশে আসছে ভারত, ২০১৬ সালে তারা ঢাকা থেকে এশিয়া কাপের শিরোপাজয়ী হয়েই দেশে ফিরেছিল। তবে দ্বিপক্ষীয় ওয়ানডে সিরিজে বাংলাদেশে দুই দলের সবশেষ দেখা ২০১৫ সালে। মোস্তাফিজুর রহমানের দারুণ বোলিংয়ে যে ওয়ানডে সিরিজটা ২-১ ব্যবধানে জিতেছিল বাংলাদেশ।
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে ইংল্যান্ডের কাছে হেরে বিদায় নেওয়ার পর অস্ট্রেলিয়া থেকে নিউজিল্যান্ডে গিয়েছিলেন ভারতীয় ক্রিকেটাররা। সেখানে ৩ টি-টোয়েন্টি ও ৩ ওয়ানডের সিরিজ খেলার কথা থাকলেও ওয়ানডে সিরিজে একটি মাত্রই ম্যাচই গড়িয়েছে মাঠে, বাকি দুটো ভেসে গেছে বৃষ্টিতে। সেই একটি ওয়ানডেও হেরেছে ভারত।
ওয়ানডে দলে প্রথমে থাকলেও চোট থেকে সেরে না ওঠায় প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে রবীন্দ্র জাদেজার নাম। রোহিত শর্মা, লোকেশ রাহুল, বিরাট কোহলিদের সঙ্গে ঈশান কিষাণ, ঋষভ পান্থ, শ্রেয়াস আইয়ার, শিখর ধাওয়ানকে নিয়ে শক্তিশালী ব্যাটিং লাইনআপ ভারতের। পেসার হিসেবে আছেন দীপক চাহার, মোহাম্মদ শামি, মোহাম্মদ সিরাজ। শার্দূল ঠাকুর, ওয়াশিংটন সুন্দরদের মতো জাতীয় দলে অনিয়মিত ক্রিকেটারদের সঙ্গে শাহবাজ আহমেদ, রাহুল ত্রিপাঠি, রজত পাতিদারের মতো উঠতি ক্রিকেটাররাও আছেন বাংলাদেশ সফরের ওয়ানডে দলে।
আজ সন্ধ্যা ৬টা ৪০ মিনিটে মুম্বাই থেকে ঢাকায় এসে পৌঁছাবেন ভারতীয় ক্রিকেটাররা। শুক্র ও শনিবার অনুশীলনের পর রবিবার প্রথম ওয়ানডেতে শেরেবাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে বাংলাদেশের মুখোমুখি হবে ভারত। এরপর দু’দিনের বিশ্রাম/অনুশীলনের পর বুধবার হবে দ্বিতীয় ওয়ানডে। এরপর দু’দল যাবে চট্টগ্রামে, সেখানে ১০ ডিসেম্বর হবে সিরিজের শেষ ওয়ানডে। ১৭ ডিসেম্বর একই মাঠে শুরু হবে প্রথম টেস্ট। ২৩ ডিসেম্বর দ্বিতীয় টেস্ট শুরু হবে ঢাকায়।
‘কোনো সুযোগ নেই আমাদের, আমরা অনেক বয়স্ক হয়ে গেছি। আমাদের সেরা সুযোগ ছিল ২০১৮ বিশ্বকাপ। আমাদের দলটা ভালো তবে প্রায় সবারই বয়স বেড়েছে। আমরা নতুন বেশ কয়েকজন খেলোয়াড় পেয়েছি, তবে তারা আগের খেলোয়াড়দের মানের নয়। এবার আমরা মনে হয় শিরোপার দাবিদার নই, আমরা হিসাবের বাইরে।’ কদিন আগে এক সাক্ষাৎকারে এসব কথাবার্তা বলে বিতর্ক উসকে দেন কেভিন ডি ব্রুইনে।
এই বেলজিয়ান মিডফিল্ডারের বয়স মোটে ৩১ বছর। চার বছর আগে ক্রোয়েশিয়ার লুকা মদরিচ যখন বিশ্বকাপের ফাইনালে খেলেছিলেন, তখন বয়সটা ছিল ৩৩। ডি ব্রুইনের এখনকার বয়সের চেয়েও বছর দুয়েকের বড় ছিলেন তখন মদরিচ, নেতৃত্ব দিয়েছিলেন ক্রোয়েশিয়ার দ্বিতীয় সোনালি প্রজন্মকে। গতবারের রানার্সআপরা এবার আগের সেই ধার নিয়ে আসেনি বিশ্বকাপে এ কথাটা সত্যি, তবে একেবারে ফেলনাও হয়ে যায়নি। ইউরোপের বাছাই অঞ্চল এইচ থেকে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়েই সরাসরি কাতার বিশ্বকাপের টিকিট কেটেছে ক্রোয়েশিয়া, প্রথম ম্যাচটা সেøাভেনিয়ার কাছে হেরে যাওয়ার পর হারেনি পরের সাত ম্যাচে। ৩ গোল করেছেন মদরিচ। এটাই সম্ভাব্য শেষ বিশ্বকাপ কিনা, মরক্কোর বিপক্ষে ম্যাচের আগে এমন প্রশ্নে মদরিচের উত্তর ‘আমার তো ভালোই লাগছে। আমি রিয়াল মাদ্রিদে সবসময় খেলছি, যখনই খেলি তখনই ভালো লাগে।’
ডি ব্রুইনে-লুকা মদ্রিচ, দুজনের কথার পার্থক্যেই স্পষ্ট দুজনের মনোভাব। ম্যানচেস্টার সিটির মাঝমাঠের তারকা মনে করছেন বেলজিয়ামের সোনালি প্রজন্মের বিশ্বকাপ জয়ের সেরা সুযোগ ছিল চার বছর আগে, এখন দলটা বয়সের ভারে কাবু। অন্যদিকে ডি ব্রুইনের চেয়ে বয়সে বছর ছয়েকের বড় হয়েও মদরিচ মনে করছেন বয়স স্রেফ একটা সংখ্যা। ফুটবল দক্ষতায় দুজনের ভেতর খুব একটা ফারাক নেই, তবে বিশ্বকাপের মঞ্চে দলের সঙ্গে মানসিক সম্পৃক্ততার তারতম্য গড়ে দিতে পারে বড় ব্যবধান।
ডি ব্রুইনে-মদরিচ, দুজনেই খেলেন বিশ্বসেরা দুই ক্লাবে। মদচিরের নামের পাশে তিনটা লা লিগা আর পাঁচটা উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগের শিরোপা। ২০১৮ সালে ব্যালন ডি’অর, ফিফা দ্য বেস্ট, উয়েফার বর্ষসেরা... সবগুলো ব্যক্তিগত পুরস্কারই পেয়েছিলেন ক্রোয়াট মিডফিল্ডার। অন্যদিকে ডি ব্রুইনে ম্যানসিটির হয়ে চার মৌসুমে জিতেছেন ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের শিরোপা। এই বছর ব্যালন ডি’অরে বেলজিয়ান মিডফিল্ডার হয়েছেন তৃতীয়। করিম বেনজেমা ও সাদিও মানে ছিলেন যথাক্রমে বিজয়ী ও রানারআপ। দুজনে চোটের কারণে বিশ্বকাপে খেলতে পারছেন না, তাই অন্তত বলা যায় বিশ্বকাপ খেলতে আসা ফুটবলারদের ভেতর ফ্রান্স ফুটবল ম্যাগাজিনের চোখে সেরা খেলোয়াড় ডি ব্রুইনে।
তবে বেফাঁস মন্তব্যের জন্য তাকে বেশ সমালোচনাই শুনতে হচ্ছে। তবে বেলজিয়ামের কোচ রবার্তো মার্তিনেজ বলেছেন তার সেরা খেলোয়াড়ের এসব কথার কোনো প্রভাব দলে পড়বে না ‘বিশ্বকাপে এসে খেলোয়াড়দের প্রতিদিনই গণমাধ্যমে কথা বলতে হয়, যার ৯০ শতাংশই ইতিবাচক। বাকি এমন সব কিছু কথাবার্তা হবেই যেটা প্রসঙ্গের সঙ্গে যাবে না। একজন খেলোয়াড়ের অধিকার আছে নিজের মত প্রকাশের। কথা আমাদের জিততে সাহায্য করবে না।’
ডি ব্রুইনে একা নন, মরক্কোর সঙ্গে হারের পর ইডেন হ্যাজার্ডও বলেছেন ‘আমাদের রক্ষণভাগের খেলোয়াড়রা যে পৃথিবীর সবচেয়ে গতিশীল নন, সেটা প্রতিপক্ষ জানে।’ ছেড়ে কথা বলেননি ৩৫ বছর বয়সী ডিফেন্ডার ইয়ান ভেরটনগেনও, পাল্টা জবাব দিয়ে বলেছেন ‘আমার মনে হয় আমাদের আক্রমণভাগও খারাপ খেলেছে কারণ তারাও কম বুড়ো হয়নি। তারা যথেষ্ট সুযোগ তৈরি করতে পারেনি। আমরা একই ধাঁচে দুটো গোল খেয়েছি।’
কোচ, খেলোয়াড়দের কথাবার্তায় স্পষ্ট বেলজিয়াম দলে অন্তর্দ্বন্দ্বের সুর। গত বিশ্বকাপের রানার্সআপ আর তৃতীয় হওয়া দুই দলের দ্বৈরথটা জমজমাটই হওয়ার কথা, মরক্কোর কাছে বেলজিয়ানদের হার আঁচটা বাড়িয়ে দিয়েছে। কানাডার বিপক্ষে ম্যাচে ক্রোয়েশিয়ার চতুর্থ গোল করেছিলেন লভ্র মায়ের। বেলজিয়ামের বিপক্ষে ম্যাচের আগে তিনিও একমত, এই ম্যাচটা আসলে দুই সেরা মিডফিল্ডারের লড়াই ‘সে (কেভিন ডি ব্রুইনে) ওদের সেরা খেলোয়াড়, তাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়। আমার কাছে সে বিশ্বেরই অন্যতম সেরা খেলোয়াড়দের একজন।’ উলভসবুর্গের হয়ে একসঙ্গে খেলার অভিজ্ঞতা থেকে ইভান পেরিসিচ জানালেন, ‘আমি উলভসবুর্গে ওর (ডি ব্রুইনো) সঙ্গে খেলেছি আর এখানে লুকার (মদরিচ) সঙ্গে। খুব সম্ভবত ওরাই বিশ্বের সেরা দুই মিডফিল্ডার।’
পেরিসিচের মতের সঙ্গে অমিল হবে খুব কম মানুষেরই। ৩১ বছর বয়সেই ডি ব্রুইনে বুড়োটেভাব আর ৩৭ বছর বয়সেও তারুণ্য ধরে রাখা মদরিচের দ্বৈরথেই মাঝমাঠের দখল নেওয়ার চেষ্টায় লিপ্ত হবে বেলজিয়াম ও ক্রোয়েশিয়া। এই দ্বৈরথের জয়ীর দলই নিঃসন্দেহে জিতে নেবে ম্যাচও।
২৭ নভেম্বর জার্মানির ‘বন্ধু’ হয়ে আসে কোস্টারিকা। জাপানকে হারিয়ে জার্মানদের বিশ্বকাপ অভিযান টিকিয়ে রাখতে সহযোগিতা করে। কিন্তু আজ সেই ‘বন্ধুই শত্রু’। কোস্টারিকাকে হারিয়েই বিশ্বকাপে টিকে থাকতে হবে জার্মানদের। আবার ভিন্ন দৃষ্টিকোণও আছে। যাদের টিকিয়ে রেখেছিল, বিশ্বকাপে নিজেদের অব্যাহত রাখতে তাদেরই হারাতে হবে কোস্টারিকাকে। ‘ই’ গ্রুপে দু’দলের ম্যাচ তাই অলিখিত ফাইনাল। গ্রুপের অন্য ম্যাচ স্পেন-জাপানের জন্য বাঁচামরার লড়াই নয়। ড্র করলেও হচ্ছে দু’দলের। তখন হাতে হাত রেখে দুই প্রতিপক্ষ উঠে যাবে শেষ ১৬-তে। কিন্তু দুই দলেরই আছে ভিন্ন চিন্তা।
তালিকায় ৪ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে স্প্যানিশরা। ৩ পয়েন্ট নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে জাপান। কোস্টারিকার পয়েন্টও ৩। তবে ১ পয়েন্ট নিয়ে ধুঁকছে জার্মানি। পয়েন্ট ১ ও কোনো জয় না থাকলেও জার্মানদের আশা হারায়নি। আশাকে সত্যিতে রূপান্তর করতে জয়হীন কোনো পথ নেই জার্মানদের সামনে। একই অবস্থা কোস্টারিকারও। তবে দুই দলকেই বিদায় করে দিতে পারে একটি ড্র। স্পেন-জাপান ড্র করলে স্পেনের ৫ আর জাপানের ৪ পয়েন্ট হবে। তখন কোস্টারিকাকে ১-০ গোলে হারিয়ে ৪ পয়েন্ট পেলে গোলগড় সমান হবে জার্মানি ও জাপানের। লাভ হবে না। মুখোমুখি লড়াইয়ে জাপানের কাছে হেরে যাওয়ায় বিদায় নিতে হবে জার্মানিকে। তাই আজ স্পেন জার্মানির ‘বন্ধু’ হবে। জাপানকে হারালে আর জার্মানি কোস্টারিকাকে ২-০তে হারালে দুই ইউরোপিয়ান জায়ান্ট যাবে পরের রাউন্ডে। স্পেন হারলেও ক্ষতি নেই। অন্য দলের সঙ্গে পয়েন্ট সমান হলেও কোস্টারিকাকে ৭ গোল দেওয়ায় তাদের গোলগড় অনেক বেশি। আর কোস্টারিকা জার্মানিকে হারালে, ওদিকে স্পেন জাপানকে হারালে তারা পরের রাউন্ডে সঙ্গী হবে স্প্যানিশদের। এছাড়া নিজেদের ম্যাচ ড্র এবং স্পেন জাপানকে হারালেও চলবে কোস্টারিকার।
স্বাভাবিকভাবেই বড় দল হিসেবে জার্মানি জয় দিয়ে পরের রাউন্ডে যাওয়ার স্বপ্ন দেখছে। কিন্তু কোস্টারিকা কোচ লুইস ফার্নান্দো বড় হুঙ্কার ছেড়ে রেখেছেন। ফর্মের সঙ্গে আড়ি থাকা চারবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের একটুও ভয় পায় না বলে ফার্নান্দো বলেন ‘আমরা এখানে কাতারের বিভিন্ন দৃশ্যের সঙ্গে ছবি তুলতে আসিনি। প্রথম ম্যাচ বাজেভাবে হারলেও মনে রাখতে হবে আমরা কিন্তু দ্বিতীয় ম্যাচে জিতেছি। প্রতিপক্ষ জার্মানি বলেই আমাদের নিয়ে কেউ এখনই কিছু লিখে দিতে পারেন না। ওরা যে জাপানের কাছে হেরেছে, তাদের আমরা হারিয়েছি। তাহলে জার্মানি কেন নয়।
গত বিশ্বকাপেও শেষ ম্যাচের আগে এই অবস্থায় পড়েছিল জার্মানি। দ্বিতীয় রাউন্ডে যেতে হলে শেষ ম্যাচে দক্ষিণ কোরিয়ার বিপক্ষে জিততেই হতো। কিন্তু তখনকার চ্যাম্পিয়নরা ওই ম্যাচ হেরে যায় ২-০তে। এবারও একই অবস্থার সামনে দাঁড়িয়ে টমার মুলার সেই লজ্জার পুনরাবৃত্তি এড়াতে চাইছেন, ‘আমরা যথেষ্ট লজ্জিত হয়েছি, আর না। আমাদের অত উচ্চাভিলাষী হওয়ার সুযোগ নেই।’
কোস্টারিকার সঙ্গে জার্মানি মাত্র একবারই খেলেছে। ২০০৬ বিশ্বকাপে জিতেছে তারাই। শুধু কোস্টারিকা নয়, কনকাকাফ অঞ্চলের প্রতিপক্ষদের সঙ্গে আরও ৫ ম্যাচে জিতেছে জার্মানরা। তবুও কোস্টারিকানদের সঙ্গে জোড় গলায় কিছু বলতে পারছেন না মুলাররা। স্পেনের বিপক্ষে ড্র করা পারফরম না দেখালে শেষ ম্যাচের আগে আত্মবিশ্বাসও থাকত না দলটির। মুলার বলেন, ‘স্পেনের বিপক্ষে বিশ্বকে দেখিয়েছি আমরা কতটা শক্ত। ফুটবলবিশ্ব যখন জার্মানি-কোস্টারিকা ম্যাচে তাকায় তখন অবশ্যই আমাদের ফেভারিট হিসেবে ধরে নেয়। ফেভারিট মানে জিততেই হয়। আর আমরাও জানি এটাই আমাদের কাজ।’
এদিকে ড্র করলেও চলছে যে স্পেনের তারা জয়ের কথাই ভাবছে। কোচ লুইস এনরিকে সরাসরি জানলেন, ‘আপনারা অনেক হিসাব করতেই পারেন। এটা সবাই করবে। কিন্তু আমাদের জন্য বিষয়টা সহজ। যদি ধারাবাহিকতা রাখতে চাই তবে অবশ্যই জয় নিয়ে পরের রাউন্ডে যাওয়া এবং কোনো সন্দেহ নেই আমরা অবশ্যই নিজেদের ধারাবাহিক দেখতে চাই।’
স্পেন গ্রুপের শীর্ষ দল হয়ে দ্বিতীয় রাউন্ডে গেলে এবং ওই পর্বে জিতলে শক্ত বাধা অপেক্ষা করছে। কারণ জি গ্রুপ থেকে সেরা হয়ে কোয়ার্টার ফাইনালে স্পেনের সামনে পড়তে পারে ব্রাজিল। পাঁচবারের চ্যাম্পিয়নদের নিয়ে কোনো ভয় আছে কিনা এই প্রশ্নে অভিজ্ঞ মিডফিল্ডার কোকে বলেন, ‘অবশ্যই আমরা কোনো দলকেই ভয় পাই না। তবে আমরা এখনই কোয়ার্টার ফাইনাল নিয়ে ভাবছি না। এখন জাপানের বিপক্ষে গ্রুপের শেষ ম্যাচ এবং দ্বিতীয় রাউন্ডের ম্যাচ বাকি।’ এদিকে জার্মানিকে হারানো জাপান নিজেদের বিশ্বকাপ অভিযান ধরে রাখতে আরেকটি অঘটন দেখাতে চায়। দলের কোচ হাজিমে মোরিয়াসু বলেন, ‘স্পেন বিশ্বের অন্যতম সেরা দল। তারা এর প্রমাণ দিয়েছে দলগত পারফরম করে। আমরা ওদের এই বাধা টপকাতে চাই। আগে কী হয়েছে তা অতীত, কিন্তু অবশ্যই সেসব থেকে অনুপ্রেরণা নেওয়া যায়। আমরা আজো স্পেনকে হারিয়ে বড় পদক্ষেপ নিতে পারি।’
দেখতে দেখতে ১৩ দিন কেটে গেছে কাতার বিশ্বকাপের। এখন পর্যন্ত মরুর ছোট্ট দেশটি কেবল বিস্ময়ই উপহার দিয়ে যাচ্ছে। প্রায় ৩০০ বিলিয়ন ডলার ব্যয়ে তারা অসাধ্য সাধন করেছে। অবশ্য এ নিয়ে বিশ্ব মিডিয়া কম পেছনে লাগেনি। বিশ্বকাপের বাঁশি বেজে ওঠার আগ পর্যন্ত তারা চেষ্টা করেছে নানাভাবে কাতারকে আয়োজক হিসেবে ব্যর্থ প্রমাণ করার। মাঠে বল গড়ানোর পর থেকেই পেট্রো ডলারের বিশ্বকাপ দেখে অভিভূত বিশ্ববাসী। অথচ কাতারকে বিশ্বকাপের স্বাগতিক করে দেওয়া মানুষটিই থেকে যাচ্ছেন পর্দার আড়ালে। তিনি মোহাম্মদ বিন হাম্মাম। এমবিএইচ নামে ফুটবল দুনিয়ায় সমধিক পরিচিত। কম বয়সে আবাসন ব্যবসায় প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকেই কাতারের শাসক আল ঘানি পরিবারের ঘনিষ্ঠ মানুষটির ধ্যানজ্ঞানে পরিণত হয় ফুটবল। একে একে কাতার ও এশিয়ান ফুটবল কনফেডারেশনসের (এএফসি) সভাপতি হন। স্বপ্ন দেখেছিলেন ফিফা সভাপতি হয়ে বিশ্ব শাসন করার। সে স্বপ্ন পূরণ হয়নি। ঘুষ দিয়ে কাতারকে বিশ্বকাপ এনে দেওয়ার অভিযোগে ফিফা তাকে দিয়েছে আজীবন নিষেধাজ্ঞা। ফুটবল বিশ্বে ব্রাত্য হলেও ঠিকই স্বপ্নের বাস্তবায়ন করেছেন হাম্মাম।
ফিফাগেট কেলেঙ্কারির অন্যতম কুশীলব তিনি। ফিফার তৎকালীন সভাপতি সেপ ব্লাটার, উয়েফার বস মিশেল প্লাতিনিসহ ফিফার বেশ ক’জন শীর্ষ কর্মকর্তা, আফ্রিকান, ক্যারিবিয়ান এবং দক্ষিণ আমেরিকান বেশ কিছু দেশকে ভজিয়ে কাতারকে বিশ্বকাপের গ্যারান্টি পাইয়ে দেওয়ার অভিযোগে শাস্তি পেয়েছেন হাম্মাম। তবে বাঁকা পথেই হোক, মধ্যপ্রাচ্যে প্রথম বিশ্বকাপ আয়োজনের ছাড়পত্রটা ঠিকই আদায় করেছেন। তার ক্যারিশমাতেই কাতারের নাম লেখা হয়েছে ইতিহাসের পাতায়।
বিশ্ব ফুটবলের অভিজাত মহলে স্থান নেই কাতারের। নেই কোনো ফুটবল ঐতিহ্য। এত নেইয়ের মধ্যেও হাম্মামের ভাবনায় চলে আসে বিশ্বকাপ। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা লাভের পর থেকে কাতার শাসন করা আল থানি পরিবারের ঘনিষ্ঠ হওয়ায় সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নে পূর্ণ সমর্থন পান হাম্মাম। রাজপরিবারের পৃষ্ঠপোষকতা ছিল আল-রায়ান ফুটবল ক্লাবে। খেলাটির প্রতি হাম্মামের তীব্র অনুরাগ দেখে নব্বইয়ের দশকে আমির সেই ক্লাবের দায়িত্বে নিয়ে আসেন হাম্মামকে। ফুটবল নিয়ে বড় স্বপ্ন দেখার শুরু তখন থেকে। ধীরে ধীরে কাতার ফুটবল ফেডারেশন, পরে ২০০২ সালে এএফসি’র সভাপতি হন হাম্মাম। কেবল টাকার জোরে নয়, কূটনৈতিক মুন্সিয়ানা দেখিয়ে সাবেক সভাপতি ব্লাটারের সঙ্গে তার গড়ে ওঠে ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্ব। ফিফা মোড়লের সঙ্গে সুসম্পর্কই তার ভাবনায় নিয়ে আসে বিশ্বকাপ আয়োজক হওয়ার বিষয়টি। এক্ষেত্রে এএফসির সদস্য দেশগুলোর তো সমর্থন ছিলই, পেট্রো ডলারের জোরে বিভিন্ন মহাদেশের অনেক দেশের সমর্থন আদায় করে নেন। যার ফলে ২০১০ সালে ফিফার এক বিশেষ সভায় রাশিয়া ২০১৮ বিশ্বকাপ ও কাতার ২০২২ বিশ্বকাপ আয়োজক স্বত্ব জিতে নেয়।
পরে ফাঁস হওয়া ফিফার দুই শীর্ষ কর্তার মেইলে জানা যায়, হাম্মাম তার ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান কেমকোর মাধ্যমে আনুমানিক ৩.৬ মিলিয়ন ডলার বিভিন্ন সদস্য দেশের কর্তাদের ঘুষ দিয়ে ভোট নিশ্চিত করেন। আসলে বক্র পথে হাঁটা ছাড়া তার বিকল্পও ছিল না। যে সময় কাতার আয়োজক হওয়ার ইচ্ছে প্রকাশ করে, তখন তাদের ছিল না সেই মানের কোনো স্টেডিয়াম, অবকাঠামো। ছিল কেবল ধূসর মরুভূমি, উট আর মরুর তলে গ্যাস-তেলের বিশাল খনি। তবে ছিলেন হাম্মামের মতো একজন স্বপ্নদ্রষ্টা।
কাতার আয়োজক স্বত্ব পেলেও শেষ রক্ষা হয়নি হাম্মামের। পশ্চিমা মিডিয়ার একের পর এক রিপোর্ট এখতিয়ারে এনে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআই তদন্ত করে হাম্মামের বিরুদ্ধে ২৫টি অভিযোগের তথ্যপ্রমাণ পায়। এছাড়া ঘুষ কেলেঙ্কারিতে জড়ানোর দায়ে ফিফাসহ বিভিন্ন মহাদেশীয় সংস্থার ১৪ জন কর্তাকে গ্রেপ্তার করে এফবিআই। সে সময় পর্যন্ত ব্লাটার-হাম্মাম বন্ধুত্ব অটুট ছিল। তবে হাম্মাম যখন ফিফা সভাপতি পদে ব্লাটারকে সমর্থন জানালেন, তখন থেকেই দুজনের টানাপড়েন শুরু। পরে অবশ্য বিশ্বকাপ উপহার দেওয়ার বদৌলতে ব্লাটারের পুনর্বার নির্বাচিত হওয়ার পথ থেকে সরে এসেছিলেন হাম্মাম। তবে ব্লাটারও নানামুখী চাপে ২০১১ সালে নেওয়া দায়িত্বের পুরো মেয়াদ কাটাতে পারেননি। ২০১২ সালে তিনি নিজেই দায়িত্ব ছাড়েন। সে বছরই ফিফার এথিকস কমিটি ব্লাটারকে ২০২৮ সাল পর্যন্ত আর হাম্মামকে আজীবনের জন্য নিষিদ্ধ করে।
এখন হাম্মামের বয়স হয়ে গেছে ৭৩। ফুটবল সংশ্লিষ্ট কোনো কিছুতেই তাকে আর দেখা যায় না। তবে আগের মতোই তিনি আছেন আমির পরিবারের ঘনিষ্ঠজন হয়ে। তাকে নিয়ে প্রকাশ্যে কথা বলার লোকেরও বড্ড অভাব। বিষয়টি তুললেই স্থানীয় সাংবাদিকরা বিব্রত হয়ে এড়িয়ে যান। তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে একটি টিভির জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক বলেন, ‘হাম্মাম অসম্ভবকে সম্ভব করেছেন। তাই ভেতরে ভেতরে তার অবদান কেউই অস্বীকার করতে পারেন না। তিনি না থাকলে বিশ্বকাপ আয়োজক হওয়ার স্বপ্নটা যেমন সত্যি হতো না, তেমনই বিশ্বকাপের জন্যই দোহার এরকম উন্নতিও এত দ্রুত হতো না।’ কাতারি সাংবাদিকরা এড়িয়ে গেলেও ব্লাটারের সাবেক উপদেষ্টা গুইডো তগনোনি সরাসরিই বলেছেন, ‘যদি এমবিএইচ না থাকত, তবে ফিফার কল্পনাতেও কাতারে বিশ্বকাপ আয়োজনের বিষয়টি মাথায় আসত না। তিনি ছাড়া আর কার এমন দুঃসাহস আছে কাতারে বিশ্বকাপ নিয়ে আসার?’
ফুটবলটা হয়তো আর ভাবনায় ঠাঁই দেন না হাম্মাম। তবে আরবের শীতকালীন পশমি শালের ভাঁজের আদলে নির্মিত মনোমুগ্ধকর বিশ্বকাপ লোগোটিতে যখন চোখ পড়ে, তখন কি পুরনো দিনগুলো ভুলতে পারেন তিনি? হাম্মামের বিশ্বকাপ ভাবনাটা অজানাই থাকছে। তবে কাতারিদের হৃদয়ে তার জায়গাটা যে সম্মানের আসনে, সেই ভাবনাটা না জেনেও সবারই জানা।
সার্বিয়ার বিপক্ষে ম্যাচে গোড়ালির চোটে পড়ার পর থেকেই বলা হচ্ছিল ব্রাজিলের দ্বিতীয় ম্যাচ তো খেলবেনই না, প্রয়োজন না পড়লে ক্যামেরুনের বিপক্ষে শেষ ম্যাচও খেলবেন না দলের সেরা মুখ। রাইটব্যাক দানিলোর ক্ষেত্রেও তাই। সুইজারল্যান্ডের বিপক্ষে দ্বিতীয় ম্যাচে নকআউট নিশ্চিত করায় আগামীকালের শেষ গ্রুপ ম্যাচটায় দুজনকে মাঠে নামানোর চিন্তা নেই ব্রাজিলের। তবে নতুন একটা চিন্তা যোগ হয়েছে। লেফট ব্যাক অ্যালেক্স সান্দ্রোও খেলতে পারবেন না ক্যামেরুনের বিপক্ষে। থাইয়ের সমস্যা কাটিয়ে বিশ্বকাপ খেলতে এসেছিলেন জুভেন্তাস ডিফেন্ডার। সুইসদের বিপক্ষে খেলার ৮৬ মিনিটে তাকে মাঠ ছাড়তে দেখা যায়। সেলেসাওদের চিকিৎসক রদ্রিগো লাসমার বলেছেন, ‘অ্যালেক্স সান্দ্রো খেলার সময় বাঁ নিতম্বে ব্যথা অনুভব করে। এমআরআই করানো হয়ে। পেশিতে চোট ধরা পড়েছে। তিনি পরবর্তী ম্যাচে অংশগ্রহণ করতে পারবেন না। তবে তাকে চিকিৎসার মধ্যে রাখা হয়েছে যাতে যত দ্রুত সম্ভব তাকে আমরা সারিয়ে তুলতে পারি।’
নকআউট নিশ্চিত। ৬ পয়েন্ট আর ৩ গোল গড় নিয়ে জি গ্রুপের শীর্ষে ব্রাজিল। শেষ ম্যাচ ক্যামেরুনের সঙ্গে। তাই ম্যাচটায় অপেক্ষাকৃত কম অভিজ্ঞ, রিজার্ভ বেঞ্চকে পরখ করে দেখার সুযোগ তিতের। এদের মিলিতাওয়ের সঙ্গে এবার ব্রেমারকে নামাতে পারেন তিনি। রাইট উইংয়ে দানি আলভেজ, যাকে চমকে দিয়ে বিশ্বকাপ স্কোয়াডে শেষ মুহূর্তে রেখেছেন তিতে। সান্দ্রোর বদলি হিসেবে সুইসদের বিপক্ষে শেষ কয়েক মিনিট খেলা তেলেস তো আছেনই। সুইসদের বিপক্ষে জয়ের নায়ক কাসেমিরোর জায়গায় ফাবিনহোকে খেলাতে পারেন তিতে। তার সঙ্গে ব্রুনো গিমারেস। আর রদ্রিগো শেষ পর্যন্ত একাদশে নামার সুযোগ পেতে পারেন নেইমারের অ্যাটাকিং মিডফিল্ড বা প্লে মেকার পজিশনে। ডানে মার্তিনেল্লি আর আন্তোনি। আক্রমণে গ্যাব্রিয়েল জেসুস। এসব চিন্তা প্রতিপক্ষ ক্যামেরুন বলেই, যাদের কাছে আরও বড় প্রেক্ষাপটে আফ্রিকানদের কাছে একবারই হার ব্রাজিলের। সেটা ২০০২ সালে বিশ্বকাপ জেতার পরের বছর কনফেডারেশনস কাপের ম্যাচে। স্যামুয়েল ইতোর গোলে ক্যামেরুনের অবিশ্বাস্য সে জয়ী দলের অধিনায়ক রিগোবার্ট সং ক্যামেরুনের বর্তমান দলটির কোচ। এছাড়া ক্যামেরুনের ৬ ম্যাচের পাঁচটিতেই জিতেছে সেলেসাওরা। দুবার বিশ্বকাপ গ্রুপ পর্বে। ১৯৯৪-এ বিশ্বকাপের জয়ের পথে ক্যামেরুনকে হারিয়েছিল দুঙ্গারা ৩-০ গোলে। আরেকবার নিজেদের দেশের ২০১৪ বিশ্বকাপে ৪-১ গোলে, যার দুটি গোল করেছিলেন নেইমার।
জার্মানি কি তবে আবারও বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্ব থেকেই বিদায় নিতে যাচ্ছে? চার বারের চ্যাম্পিয়নদের নিয়ে এই শঙ্কাই আসলে কাজ করছে সবার মনে। আজ কোস্টারিকার বিপক্ষে গ্রুপের শেষ ম্যাচে যেমন শুধু জিতলেই হবে না, তাকিয়ে থাকতে হবে তাদের অন্য ম্যাচের দিকেও। জাপানের বিপক্ষে স্পেন যদি জিততে না পারে তাহলে হয়তো ভিন্ন কিছুই হতে পারে। তবে আমি বলব জার্মানি বিশ্বকাপে থাকছে। জার্মানি ও স্পেন দুই দলকেই আমি আজ নিজেদের ম্যাচে এগিয়ে রাখব।
স্পেন দুই ম্যাচে ৪ পয়েন্ট নিয়ে ‘ই’ গ্রুপে সবার ওপরে। দ্বিতীয় স্থানে থাকা জাপান ও তৃতীয় স্থানে থাকা কোস্টারিকার পয়েন্ট সমান ৩ পয়েন্ট করে। আর ১ পয়েন্ট নিয়ে সবার তলানিতে গতবার গ্রুপ পর্ব থেকেই বিদায় নেওয়া জার্মানি। সব মিলিয়ে জার্মানি আসলে এখন খাদের কিনারে। তবে স্পেনের বিপক্ষে পিছিয়ে গিয়েও যেভাবে পয়েন্ট আদায় করেছে দলটি, তা হান্স ফ্লিকের দলকে আত্মবিশ্বাসী করবে। ওই ম্যাচটিকে তো টুর্নামেন্টের অন্যতম সেরাও বলা হচ্ছে। কোস্টারিকার বিপক্ষে আজ তাই জার্মানিই ফেভারিট। এ ম্যাচে তারা টমাস মুলারকে ড্রপ করতে পারে। স্পেনের বিপক্ষে গোল করা নিকলাস ফুয়েলখুগ শুরুর একাদশে আসতে পারেন। লেরয় সানেও শুরুর একাদশে আসবেন বলে আমার মনে হয়। জামাল মুসিয়ালার কথা আমি আলাদা করে বলব। কী দারুণ এক খেলোয়াড়। ও বড় ভরসা হতে পারে দলটির জন্য।
কোস্টারিকা ফোরব্যাক নিয়ে টুর্নামেন্ট শুরু করেছিল। পরে তারা ফাইভ ব্যাকে চলে যায়। স্পেনের বিপক্ষে ০-৭ গোলে বিধ্বস্ত হলেও জাপানের বিপক্ষে দ্বিতীয় ম্যাচ ১-০ ব্যবধানে জিতে তারা। যেহেতু ওদের ড্র করলেও সম্ভাবনা থাকবে তাই জার্মানির বিপক্ষে আল্ট্রা ডিফেন্ডিং খেলবে ওরা। তবে সব কিছুর পরও আমি বলব জার্মানির এই ম্যাচ জেতা উচিত।
জার্মানিকে হারিয়ে জাপান দারুণ সম্ভাবনা তৈরি করেছিল। কিন্তু পরে নিজেদের ভুলেই সেই সম্ভাবনার পথটা তারা নষ্ট করেছে। জার্মানিকে হারানোর পর কোস্টারিকার কাছে তাদের হারটা আসলে মানা যায় না। স্পেনের বিপক্ষে আজকের ম্যাচটি নিঃসন্দেহে খুবই কঠিন হবে তাদের জন্য।
স্পেন কোস্টারিকার বিপক্ষে ৭-০ গোলের বড় জয়ে আসর শুরু করলেও জার্মানির সঙ্গে পরে ১-১ ড্র করে। টেবিলের শীর্ষে থাকায় কিছুটা সুবিধাজনক অবস্থানে তারা। ড্র করলেও হয়তো সুযোগ থাকবে। তবে জাপানের বিপক্ষে কিছুতেই হারতে চাইবে না তারা। শেষ ম্যাচে ভালো একটা জয় নিয়ে নক আউটে যেতে চাইবে তারা। স্পেন সিরিয়াস থাকলে জাপান সমস্যায় পড়বে। আমার মনে হয় ম্যাচটা স্পেন জিতে যাবে।
‘এফ’ গ্রুপে ক্রোয়েশিয়া ও বেলজিয়াম মুখোমুখি হচ্ছে। বেলজিয়াম দলের মধ্যে এবার মোটিভেশনের খুব অভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে। গত ম্যাচে একটা পর্যায়ে মরক্কো ৪-৪-২ ডিফেন্ডিং করছিল, বেলজিয়ামের খেলায় সেই সময় কোনো তাড়নাই দেখিনি। মনে হচ্ছে এই দলটার মধ্যে কোনো সমস্যা আছে। যেটা আমরা ২০১০ সালে দেখেছিলাম ফ্রান্স দলে। অনেক তারকা আছে, কিন্তু তাদের মধ্যে সংহতি নেই। তাই তারকা থাকাটা তাদের কাজে আসছে না। ক্রোয়েশিয়া প্রথম ম্যাচে মরক্কোর বিপক্ষে ড্র করলেও কানাডার বিপক্ষে ৪-১ ব্যবধানে জয় তুলে নেয়। ৪ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের টপে তারা। গত ম্যাচের পারফরম্যান্স ধরলে ক্রোয়েশিয়া কিছুটা ফেভারিট। তবে আমার ধারণা টাইট হবে ম্যাচটি।
মরক্কো ও কানাডার মধ্যকার গ্রুপের অন্য ম্যাচে মরক্কোই ফেভারিট। বিশেষ করে বেলজিয়ামের বিপক্ষে যেভাবে খেলেছে, সেটা ছিল দুর্দান্ত। এরপরও আমার মনে হচ্ছে মরক্কোকে পরীক্ষার মধ্যে পড়তে হবে এ ম্যাচে। যেহেতু কানাডার হারানোর কিছু নেই। বিশ্বকাপটা তাই শেষ করতে চাইবে তারা কিছু একটা অর্জন করে। সেই জায়গায় মরক্কোর জন্য কঠিন হবে ম্যাচ।
সংক্ষিপ্ত সফরে নেপাল হয়ে বিকেলে ঢাকায় এসেছেন মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাইফুদ্দিন নাসুসন ইসমাইল। আজ শনিবার (৪ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছালে তাকে স্বাগত জানান ঢাকায় নিযুক্ত মালয়েশিয়ার হাইকমিশনার হাজনা মো. হাশিম।
প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সফরটা আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তিনি শ্রমবাজারের জটিলতা নিয়ে আলাপ করবেন। কিভাবে দেশটিতে আমরা সহজে কর্মী পাঠাতে পারি; সেগুলো আলোচনায় উঠে আসবে। আমাদেরও কিছু প্রস্তাব রয়েছে। আমাদের কর্মীদের স্বার্থ আগে আমরা চাই, সবার জন্য বাজার খুলে দেওয়া হোক। নিয়োগকর্তার পছন্দমতো রিক্রুটিং এজেন্সি নিয়োগ— এটা আমরা চাই না। অভিবাসন ব্যয়
মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার গত কয়েক বছর ধরে অস্থির। দেশটিতে প্রত্যাশিত শ্রমিক পাঠাতে পারছে না বাংলাদেশ। এমন পরিস্থিতিতে শ্রমবাজারটির জটিলতা নিরসনে আলোচনা করতে সংক্ষিপ্ত সফরে নেপাল হয়ে ঢাকায় আসছেন মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাইফুদ্দিন নাসুসন ইসমাইল।
তার সফরে শ্রমবাজারটি গতিশীল করতে সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) পরিবর্তন, অতিরিক্ত অভিবাসন ব্যয় কমানোসহ দেশের সব বৈধ রিক্রুটিং এজেন্সির জন্য বাজার উন্মুক্ত করার প্রস্তাব দেবে ঢাকা।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে, ২৪ ঘণ্টার সফরে মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদ এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সঙ্গে বৈঠক করবেন। পাশাপাশি তিনি সেনাকল্যাণ সংস্থার সঙ্গেও একটি বৈঠক করবেন।
'পাঠান' মুক্তির আগে থেকেই অনুরাগীদের সঙ্গে শাহরুখের যোগাযোগের একটাই মাধ্যম, টুইটার। শনিবার ফের টুইটারে 'আস্ক এসআরকে' সেশনে ধরা দিলেন শাহরুখ। হালকা মেজাজে, খোলামেলা আড্ডায় মাতলেন অনুরাগীদের সঙ্গে। অনুরাগীদের প্রশ্ন উত্তর দিলেন। সেখানেই একজন টুইটার ব্যবহারকারীর উপদেশ- বয়স অনুযায়ী চরিত্রে অভিনয়ের করার। পাল্টা জবাব দেন শাহরুখও। বলেন, 'তিনি হিরো ছিলেন, আছেন, থাকবেন'।
অনুরাগীরা যেমন রয়েছেন, তেমনই ট্রোল করার লোকের সংখ্যাও কম নয় শাহরুখের সোশালে। বছর সাতান্নর 'তরুণ' এই অভিনেতাকে একজনের প্রশ্ন, 'আপনি কি এভাবেই হিরোর চরিত্রেই অভিনয় করবেন, নাকি কোনো দিন নায়ক-নায়িকার বাবার চরিত্র করার পরিকল্পনাও রয়েছে?' তাতে শাহরুখ যা জবাব দিয়েছেন, তা রীতিমত ছড়িয়ে পড়েছে সোশালে।
এমনিতেই রসিক মানুষ শাহরুখ। তবে কোন কথায় কাকে কী উত্তর দেবেন, তা ভালোই জানা তার। বাদশাহ লেখেন, 'তুই বাপ হ… আমি হিরোর চরিত্রেই ঠিক আছি।'
শনিবারের 'আস্ক এসআরক'-এ সেশনে, শাহরুখের কাছে জানতে চাওয়া হয় 'পাঠান'-এর মোট আয়ের পরিসংখ্যান। তাকেও ফেরাননি শাহরুখ। উত্তর দিয়ে লেখেন, 'ভালোবাসা ৫ হাজার কোটি ছাড়িয়ে গিয়েছে, ৩ হাজার কোটি প্রশংসা, ৩২৫০ কোটি হাগ, ২০০০ কোটি হাসি এখনও গণণা চলছে। তোমার অ্যাকাউন্ট্যান্ট কী বলছেন?'
'পাঠান' ঘিরে উন্মাদনা নজিরবিহীন। প্রেক্ষাগৃহের বাইরে এই ছবি দেখার ঢল। শাহরুখ অভিনীত ছবিটি লম্বা রেসের ঘোড়া, বলেছেন সিনেমা বিশেষজ্ঞরা। ৪ বছর পর শাহরুখ পর্দায় ফিরেছেন বলেই শুধু নয়, ৭ দিনে বক্স অফিসে ৭০০ কোটি টাকার ব্যবসা করেছে 'পাঠান', যা বলিউডে বছরের সেরা ব্লকবাস্টার হিসাবে গণ্য হতে চলেছে।
দুঃসময় পিছু ছাড়ছে না লিভারপুলের। প্রিমিয়ার লিগে টানা তিন ম্যাচে জয়হীন থেকে মাঠে নেমেছিল তারা। ভাঙতে চেয়েছিল ব্যর্থতার বৃত্ত। কিন্তু পারেনি, উল্টো উলভারহ্যাম্পটন ওয়ান্ডারার্সের ধরাশায়ী হয়েছে তারা। পয়েন্ট তালিকার তলানিতে থাকা দল হেরে গেছে বড় ব্যবধানে।
নিজেদের মাঠে শনিবার ৩-০ গোলে জিতেছে উলভস। লিভারপুলের বিপক্ষে লিগে আগের ১১ ম্যাচে হারের পর জয়ের স্বাদ পেয়েছে তারা।
শুরুর ১২ মিনিটে দুই গোল হজম করে দিশেহারা লিভারপুল ঘুরে দাঁড়ানোর পথই খুঁজে পায়নি। দ্বিতীয়ার্ধে হজম করেছে আরও একটি গোল। তার আগেই ছিটকে যায় ম্যাচ থেকে। দারুণ জয়ে উচ্ছ্বাসে মেতে উঠেন উলভসের ফুটবলাররা।
শুরু থেকে একের পর এক আক্রমণে লিভারপুলের রক্ষণ কাঁপাতে থাকে উলভস। দলটির সমর্থকরা আনন্দে মেতে ওঠার উপলক্ষ পেয়ে যায় পঞ্চম মিনিটে। আত্মঘাতী গোল করে লিভারপুল। বাইলাইনের কাছাকাছি গিয়ে হাং হি-চান শট নেওয়ার পরিস্থিতি না দেখে তিনি বক্সে বাড়ান বল, জোয়েল মাতিপের পায়ে লেগে বল পোস্ট ছুঁয়ে গোললাইন পেরিয়ে যায়। আলিসনের প্রাণপণ চেষ্টা যায় বিফলে।
দ্বাদশ মিনিটে আবারও গোল হজম করে বসে লিগে ধুঁকতে থাকা লিভারপুল। ইংলিশ ডিফেন্ডার ক্রেইগ ডসনের পায়ের জোরাল শটে বল খুঁজে নেয় জাল। উলভসের হয়ে অভিষেকেই গোল পেয়ে যান তিনি। ২-০ গোলের ব্যবধান নিয়ে বিরতিতে যায় উলভস।
বিরতির পরও চলে আক্রমণ আর পালটা আক্রমণ। ৭১তম মিনিটে মাঝমাঠে জো গোমেজ ও স্তেফান বাইচেতিস আটকাতে পারেননি জোয়াও মৌতিনিয়োকে। এই পর্তুগিজ মিডফিল্ডারের পাস ধরে বক্সে আড়াআড়ি ক্রস বাড়ান আদামা ত্রাওরো। নিখুঁত টোকায় বাকি কাজ সারেন রুবেন নেভেস। ম্যাচের ভাগ্যও লেখা হয়ে যায় অনেকটাই।
এই হারে লিগ টেবিলে সেরা চারে থাকার পথটা আরও কঠিন হয়ে গেল লিভারপুলের। ২০ ম্যাচে ২৯ পয়েন্ট নিয়ে দশম স্থানে আছে ইয়ুর্গেন ক্লপের দল। তাদের চেয়ে ১০ পয়েন্ট বেশি নিয়ে চার নম্বরে নিউক্যাসল ইউনাইটেড। ২১ ম্যাচে ২০ পয়েন্ট নিয়ে ১৫তম স্থানে উঠে এসেছে উলভস।
ছবি মুক্তির ১০ দিন পার। এখনও বক্স অফিসে 'পাঠান' রাজ। শুধু দেশের মাটিতেই নয়, বিদেশেও অব্যাহত 'পাঠান' ঝড়। বিশ্বজুড়ে ৭০০ কোটির বেশি ব্যবসা ইতিমধ্যেই করে ফেলেছে শাহরুখ খানের এই ছবি। এমনকি, ভারতের প্রতিবেশী দেশ পাকিস্তানেও 'পাঠান' জ্বরে ভুগছেন আমজনতা। নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও সে দেশে প্রেক্ষাগৃহে প্রদর্শিত হলো 'পাঠান'। খালি রইল না প্রেক্ষাগৃহের একটি আসনও, হাউসফুল সেই শো।
অন্য ভারতীয় ছবির মতোই পাকিস্তানে মুক্তির ছাড়পত্র পায়নি সিদ্ধার্থ আনন্দ পরিচালিত ছবি 'পাঠান'। তবে সে দেশের সিন্ধ সেন্সর বোর্ডের সেই নিষেধাজ্ঞাকে একপ্রকার বুড়ো আঙুল দেখিয়ে প্রেক্ষাগৃহে প্রদর্শন করল শাহরুখের ছবি। কানায় কানায় ভর্তি প্রেক্ষাগৃহ দেখল রুপালি পর্দায় 'বাদশাহ ম্যাজিক'।
পাকিস্তানি মুদ্রায় ৯০০ টাকার টিকিটেও হাউসফুল 'পাঠান'-এর শো। নিষেধাজ্ঞা থাকায় বেআইনিভাবেই জোগাড় করে দেখানো হলো 'ওয়াইআরএফ স্পাই ইউনিভার্স'-এর এই ছবি।
পাকিস্তানের 'ফায়ারওয়ার্ক ইভেন্ট' নামক এক সংস্থা আয়োজন করে 'পাঠান' ছবির প্রদর্শনের। ছবির টিকিটমূল্য রাখা হয় পাকিস্তানি মুদ্রায় ৯০০ টাকা। তাতেই ছবির টিকিট পাওয়ার জন্য কাউন্টারের বাইরে লম্বা লাইন পড়ে সিনেপ্রেমীদের। অল্প সময়ের মধ্যেই শো হাউসফুল ঘোষণা করে দেওয়া হয়। তবে পাকিস্তানি সেন্সর বোর্ডের কানে এ খবর যেতেই নড়েচড়ে বসে তারা। 'ফায়ারওয়ার্ক ইভেন্ট'কে অবিলম্বে 'পাঠান'-এর সব প্রদর্শন বন্ধের নির্দেশ দিয়ে বিবৃতি জারি করে সিন্ধ সেন্সর বোর্ড। কেউ যদি এর পরেও বেআইনিভাবে 'পাঠান' প্রদর্শন করে, তাহলে অপরাধের শাস্তিস্বরূপ তার ১ লাখ টাকা জরিমানা থেকে ৩ বছরের জেল পর্যন্ত হতে পারে, হুঁশিয়ারি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের।
সাভারের আশুলিয়ায় মহাসড়কের পাশের একটি ডোবা থেকে মো. ইমাম হোসেন (৪৬) নামে এক ব্যক্তির ভাসমান লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। শনিবার সন্ধ্যায় সাভার ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের পার্শ্ববর্তী ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের পশ্চিম পাশের ডোবা থেকে নিহতের ক্ষতবিক্ষত মরদেহটি উদ্ধার করা হয়।
নিহত ইমাম হোসেন জয়পুরহাট জেলার পাঁচবিবি উপজেলার ভালুকগড়ি গ্রামের আমিনুল ইসলামের ছেলে। তিনি পরিবার নিয়ে আশুলিয়ার জিরাবো পুকুরপাড় এলাকার ভাড়া বাসায় থেকে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতেন।
থানা পুলিশ জানায়, স্থানীয়দের খবরের ভিত্তিতে সন্ধ্যায় ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের পার্শ্ববর্তী একটি ডোবা থেকে লুঙ্গি এবং জ্যাকেট পরিহিত অজ্ঞাত এক ব্যক্তির ক্ষতবিক্ষত মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় পিবিআইকে খবর দেওয়া হলে তারা এসে মরদেহের পরিচয় শনাক্ত করে।
নিহতের পরিবারের বরাত দিয়ে আশুলিয়া থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আল-মামুন কবির বলেন, ইমাম হোসেন বৃহস্পতিবার অটোরিকশা নিয়ে বাড়ি থেকে বের হয়ে আর ফেরেননি। মরদেহটি উদ্ধারের খবর পেয়ে পরিবারের সদস্যরা থানায় এসে লাশ শনাক্ত করেন। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে দুর্বৃত্তরা তাকে শ্বাসরোধে হত্যা করে অটোরিকশা নিয়ে পালিয়ে গেছে এবং নিহতের মরদেহটি ডোবার মধ্যে ফেলে গেছে।
মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকায় শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় আশুলিয়া থানায় মামলা দায়েরের পাশাপাশি হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার এবং গায়েব হওয়া অটোরিকশাটি উদ্ধারে অভিযান চালানো হবে বলেও জানান পুলিশের এই কর্মকর্তা।
শ্রম পরিদর্শক পদে যোগ দেওয়ার ৩৪ বছর পর পদোন্নতি পেলেন মাহমুদুল হক। স্বপ্ন দেখতেন পদোন্নতির সিঁড়ি বেয়ে একসময় প্রতিষ্ঠানের সর্বোচ্চ পদে যাবেন। সেই স্বপ্ন আট বছরেই লুটিয়ে পড়ল জ্যেষ্ঠতার তালিকায়।
১৯৮৮ সালে যোগ দেওয়ায় ’৯৫ সালেই পদোন্নতি পাওয়ার কথা ছিল মাহমুদুল হকের। কর্তৃপক্ষের অবহেলা আর প্রতিষ্ঠানপ্রধানের অদূরদর্শিতা সে স্বপ্ন শুরুতেই বাধা পেল। এন্ট্রি পোস্টে যোগ দেওয়ার পর তার মতো অন্য কর্মচারীরা যখন পদোন্নতির স্বপ্নে বিভোর, তখন তাতে গা-ই করলেন না সেই সময়ের প্রতিষ্ঠানপ্রধান।
মাহমুদুল অপেক্ষায় রইলেন পরিবর্তিত পরিস্থিতির জন্য। সেই পরিবর্তন আসতে আসতে চাকরিতে কেটে গেল আঠারো বছর। আঠারোতে মানুষ প্রাপ্তবয়স্ক হয়। তিনিও ভাবলেন আঠারোতে তিনি না হয় ‘জব ম্যাচিউরিটি’তে পৌঁছালেন। চাকরির আঠারো বছরে পদোন্নতি পেলেও মন্দ হয় না।
কিন্তু অবাক ব্যাপার, কর্তৃপক্ষ পদোন্নতি দিল, তবে মাহমুদুলকে ছাড়া। পদোন্নতির প্রজ্ঞাপনে কোথাও তার নাম নেই। হতাশায় মুষড়ে পড়লেন তিনি। জুনিয়র কর্মকর্তারদের নাম আছে, অথচ তার নাম নেই। প্রতিষ্ঠানের নীতি-নির্ধারকদের দরজায় দরজায় ঘুরলেন ন্যায়বিচারের আশায়। কিন্তু তারা পাত্তাই দিলেন না বিষয়টি।
তারা আমলে না নিলেও মাহমুদুলের স্বপ্ন তো সেখানেই থেমে যাওয়ার নয়। সেই স্বপ্ন পুঁজি করে তিনি গেলেন আদালতে। সেই ভিন্ন জগৎটাও কম চ্যালেঞ্জিং ছিল না। প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনাল তার পক্ষে রায় দিল। মাহমুদুল আনন্দে আত্মহারা হলেন। কিন্তু সেই আনন্দ বেশি দিন স্থায়ী হলো না। সরকার আপিল করল প্রশাসনিক আপিল ট্রাইব্যুনালে। মামলার ফল উল্টে গেল। হতাশায় ভেঙে না পড়ে তিনি গেলেন উচ্চ আদালতে। আপিল বিভাগে সিভিল আপিল মামলা করলে প্রশাসনিক আপিল আদালতের রায় বাতিল হয়। প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনালের রায় বহাল থাকে।
জলে নেমে কুমিরের সঙ্গে লড়াই করার মতো মাহমুদুল হকও যেন সরকারের সঙ্গে লড়াই করতে নামলেন। আপিল বিভাগের রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ পিটিশন করল সরকারপক্ষ। একপর্যায়ে সরকার বুঝতে পারল কোনোভাবেই তারা এ মামলায় জিততে পারবে না। সরকারপক্ষে রিভিউ পিটিশন প্রত্যাহার করা হলো। আদালত সরকারের পদোন্নতির প্রজ্ঞাপনকে আইনের কর্তৃত্ববহির্ভূত বলে ঘোষণা করল। জুনিয়র কর্মকর্তাকে যেদিন থেকে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে এবং যতবার পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে, একইভাবে মাহমুদুল হককে পদোন্নতি দেওয়ার নির্দেশ দেয় আদালত। বকেয়া বেতন-ভাতাসহ সব পাওনা কড়ায়-গ-ায় পরিশোধের নির্দেশনা আসে।
আদালতের এই নির্দেশনা দেওয়া হয় ২০১৮ সালে। এরপর আদেশ বাস্তবায়ন করতে সরকারের লেগে যায় প্রায় চার বছর। ২০২২ সালের ১১ মে তাকে পদোন্নতি দেওয়া হয়। ৩৪ বছর পর পদোন্নতির প্রজ্ঞাপন পেয়ে স্তম্ভিত হয়ে গেলেন মাহমুদুল হক। আবারও তাকে ঠকিয়েছে সরকার। জুনিয়র কর্মকর্তা যুগ্ম মহাপরিদর্শক হলেও তাকে পদোন্নতি দেওয়া হয় তার দুই ধাপ নিচের সহকারী মহাপরিদর্শক পদে। উপমহাপরিদর্শক ও যুগ্ম মহাপরিদর্শক আরও ওপরের পদ। আদালতের নির্দেশনার সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।
কখনোই প্রজ্ঞাপন মাহমুদুল হকের জন্য ভালো বার্তা বয়ে আনেনি। পুরো চাকরিজীবন আদালতের বারান্দায় ঘুরে তিনি পৌঁছেছেন অবসরের প্রান্তসীমায়। আর তিন মাস পরে তিনি অবসরে যাবেন। যৌবন ও মধ্য বয়সের দিনগুলোতে আদালতে ঘুরে বেড়ানোর শক্তি ও সাহস থাকলেও মাহমুদুল হক এখন সেই সাহস দেখাতে দ্বিতীয়বার চিন্তা করছেন। পারবেন তো শেষ সময়ে এসে সরকারের অপরিণামদর্শী সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপসহীন মনোভাব দেখিয়ে শেষ পর্যন্ত লড়ে যেতে?
মাহমুদুল হকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে দেশ রূপান্তরকে জানিয়েছেন, তিনি আদালতের কাছেই জানতে চাইবেন, আদালতের বিচার না মানার শাস্তি কী।
পুরো ঘটনা শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা শুনিয়ে জানতে চাইলেন, কতজনের পক্ষে মাহমুদুল হকের মতো লড়াকু মনোভাব দেখানো সম্ভব?
সীমাহীন আনন্দ নিয়ে মানুষ সরকারি চাকরিতে যোগ দেয়। এরপরই তার মধ্যে যে স্বপ্নটি দানা বাঁধে তা হচ্ছে পদোন্নতি। কার কীভাবে পদোন্নতি হবে তা আইনকানুন, নিয়ম-নীতি দিয়ে পোক্ত করা। পুরো বিষয়টি কাচের মতো স্বচ্ছ। এরপরও পদোন্নতি হয় না। দিন, মাস, বছর পার হয়ে যায়, কাক্সিক্ষত পদোন্নতির দেখা মেলে না।
বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের (বিসিএস) ২৬টি ক্যাডারের মধ্যে হাতে গোনা কয়েকটি ক্যাডারে নিয়মিত পদোন্নতি হয়। বাকি ক্যাডারে হতাশা। তার চেয়েও কঠিন পরিস্থিতি নন-ক্যাডারে। ক্যাডার কর্মকর্তারা নিজের পদোন্নতির ষোলো আনা বুঝে নিয়ে ঠেকিয়ে দেন নন-ক্যাডার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পদোন্নতি। সংখ্যায় বেশি হওয়ায় নন-ক্যাডাররা একজন আরেকজনকে নানা ইস্যুতে আটকাতে গিয়ে পুরো প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করেন। সরকারের মোট কর্মকর্তা-কর্মচারীর প্রায় তিন-চতুর্থাংশ কর্মচারী। সেই হিসেবে সরকারের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনবলের পদোন্নতি হয় না। পে-কমিশন হলেই কর্মচারীদের পদোন্নতির জন্য করুণা উথলে ওঠে। এমনকি ব্লকপোস্টে যারা আছেন, তাদের জন্যও পদোন্নতির বিকল্প সুবিধা বাতলে দেওয়া হয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কর্মচারীদের পদোন্নতি উপেক্ষিতই থাকে।
যখন সময়মতো পদোন্নতি হয় না, তখন নানা ধরনের সমস্যা দেখা দিতে থাকে। এসব সমস্যা সংশ্লিষ্ট দপ্তর-অধিদপ্তরের চৌহদ্দি পেরিয়ে আমজনতাকেও প্রভাবিত করে। নন-ক্যাডার কর্মকর্তা আর সঙ্গে কর্মচারীরা যখন বুঝতে পারেন পদোন্নতির আশা তাদের নেই, তখন তারা দুহাতে টাকা কামানোর ধান্দায় মেতে ওঠেন। এতে করে ঘুষের সংস্কৃতি সমাজে ছড়িয়ে পড়ে। অকার্যকর পথে হাঁটে রাষ্ট্র। সাধারণ মানুষ টাকা ছাড়া তাদের কাছ থেকে কোনো সেবা পায় না, ব্যবসায়ীরা নতুন কোনো আইডিয়া নিয়ে ব্যবসায় আসেন না, ব্যবসাবান্ধব পরিস্থিতি না থাকায় মুখ ফিরিয়ে নেন দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীরা। প্রধানমন্ত্রীর বারবার আহ্বানেও বিনিয়োগকারীরা সাড়া দেন না। সাধারণ মানুষকে নিঃস্বার্থভাবে সেবা দেওয়ার বাণীতেও উদ্বুদ্ধ হন না সংশ্লিষ্টরা।
এই পরিস্থিতিতে অনিয়ম আটকে রাখার সব কৌশলই ব্যর্থ হচ্ছে। যথাযথ তদারকি না থাকায় বিভাগীয় ব্যবস্থা অকার্যকর হয়ে গেছে। ৩ লাখ ৫৩ হাজার ৩৫০টি অডিট আপত্তি ঝুলে থাকায় অডিট প্রতিষ্ঠানগুলোও আগ্রহ হারিয়ে নিজেরাই জড়িয়ে পড়ছে অনিয়মে। দন্তহীন বাঘে পরিণত হওয়ার তথ্য সাংবাদিকদের জানান দুর্নীতি দমন কমিশনের প্রধান নিজেই।
নন-ক্যাডার কর্মকর্তা ও কর্মচারীর পদোন্নতির বড় একটা অংশ আটকে রাখে মন্ত্রণালয়গুলো। এই আটকে রাখার কারণ হচ্ছে মন্ত্রণালয়ের নীতিনির্ধারকদের স্বার্থ। বিভিন্ন দপ্তর, অধিদপ্তরে নন-ক্যাডার কর্মকর্তাদের পদোন্নতি দিলে নিয়ম অনুযায়ী পদোন্নতিপ্রাপ্তদের ওপরের পদে বসাতে হবে। এতে মন্ত্রণালয়ের নীতিনির্ধারকদের এককালীন লাভ; অর্থাৎ টাকার বিনিময়ে একবার পদোন্নতি দেওয়া যাবে। কিন্তু পদোন্নতি না দিয়ে সংশ্লিষ্টদের চলতি দায়িত্ব দিলে বছরজুড়ে টাকা আয় করতে পারেন নীতিনির্ধারকরা। দপ্তর, অধিদপ্তরে বড় অঙ্কের টাকার বিনিময়ে চলতি দায়িত্ব দেওয়া হয়। চলতি দায়িত্বপ্রাপ্তদের আয় অনুসারে নীতিনির্ধারকদের মাসোহারা দিতে হয়। নন-ক্যাডারদের পদোন্নতি দেওয়া হলে মন্ত্রণালয়ের নীতিনির্ধারকদের নিয়মিত আয়ের উৎস বন্ধ হয়ে যায়। এ কারণে আইন বা বিধি-বিধানের ফাঁকফোকর গলিয়ে নন-ক্যাডার এবং কর্মচারীদের পদোন্নতি আটকে রাখার সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হয়।
সরকারি কর্মচারী সংহতি পরিষদের সভাপতি নিজামুল ইসলাম ভূঁইয়া মিলন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সচিবালয় এবং সারা দেশের সরকারি কর্মচারীদের পদোন্নতির মধ্যে একটু পার্থক্য আছে। নন-ক্যাডারের কিছু বিষয় ছাড়া সচিবালয়ের কর্মচারীরা সময়মতো পদোন্নতি পায়। কিন্তু সচিবালয়ের বাইরে পদোন্নতি হয় না বললেই চলে। সচিবালয়ে মাত্র ১০ হাজার কর্মচারী আছেন। সচিবালয়ের বাইরে আছেন ১০ লাখের বেশি। এসব কর্মচারীর পদোন্নতি নিয়ে বহু বছর ধরে চেষ্টা করছি। কিন্তু কোনো ফল পাইনি। সর্বশেষ মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ এ সমস্যা নিয়ে কাজ করার জন্য একটি কমিটি করে দিয়েছে। কমিটি কিছু সুপারিশ করেছে। ব্যস, ওই পর্যন্তই। এরপর এর কোনো অগ্রগতি নেই। যেখানে সরকারপ্রধান বলেন, চাকরিজীবনে সবাই যেন কমপক্ষে একটি পদোন্নতি পায়। সেখানে বহু কর্মচারী কোনো পদোন্নতি ছাড়াই অবসরে যাচ্ছেন। সরকারপ্রধানের নির্দেশনা উপেক্ষা করেন আমলারা। তাদের আগ্রহ কেনা-কাটায়, বিদেশ ভ্রমণে, নতুন জনবল নিয়োগে। এসব করলে তাদের লাভ। কর্মচারী পদোন্নতি দিতে তাদের কোনো আগ্রহ নেই। এর নিশ্চয়ই একটা শেষ আছে। বৈষম্যের পরিণতি কী হয়, তা অনেক দাম দিয়ে বিডিআর বিদ্রোহে আমরা দেখেছি।’
কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের নন-ক্যাডারদের পদোন্নতি ঝুলছে বছরের পর বছর। এই অধিদপ্তরের কয়েক শ কর্মকর্তা পাঁচ বছর আগেই পদোন্নতির যোগ্য হয়েছেন। নানা কায়দা-কানুন করে তাদের পদোন্নতি ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। অধিদপ্তরের মহাপরিদর্শক সংশ্লিষ্টদের জ্যেষ্ঠতা নির্ধারণ করে তাদের পদোন্নতির প্রক্রিয়া এগিয়ে নিলেও শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় নতুন করে জ্যেষ্ঠতার তালিকা করার নামে সময়ক্ষেপণ করছে। জ্যেষ্ঠতার তালিকা করার পর এখন তাদের পারিবারিক সদস্যদের তথ্য যাচাই-বাছাই করার জন্য একটি সংস্থাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। ওই সংস্থা নন-ক্যাডার কর্মকর্তাদের পরিবারের সদস্যদেরও তথ্য তালাশ করছে। তাদের আত্মীয়দের মধ্যে কে কোন দলের সমর্থক তার তথ্য নিচ্ছেন সংস্থার কর্মকর্তারা।
গত মাসে শেষ হওয়া জেলা প্রশাসক সম্মেলনে দায়িত্ব পালন করছিলেন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের একজন প্রশাসনিক কর্মকর্তা। ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনের সুরম্য ভবনে দায়িত্ব পালন করলেও ওই নন-ক্যাডার কর্মকর্তার মনের অবস্থাটা মনোহর ছিল না। কেমন আছেন জানতে চাইলে ওই নন-ক্যাডার কর্মকর্তা বলেন, ‘ভালো নেই। চাকরি করছি, পদোন্নতি নেই। ২০১৫ সালের আগে পদোন্নতি না পেলেও টাইমস্কেল ও সিলেকশন গ্রেড ছিল। তাও তুলে দেওয়া হয়েছে। তুলে দেওয়ার সময় বলা হয়েছিল সময়মতো পদোন্নতি হবে, ব্লকপোস্টধারীদের দেওয়া হবে বিশেষ আর্থিক সুবিধা। এসবের কোনোটাই হয়নি।’
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসে একটি প্রশাসনিক আদেশ খুবই পরিচিত। সেই প্রশাসনিক আদেশ ১৬/২০১৮ অনুযায়ী ৭০ ভাগ কর্মকর্তা সরাসরি নিয়োগ হবে। আর ৩০ ভাগ পদোন্নতির মাধ্যমে পূরণ করা হয়। ৭০ ভাগ কর্মকর্তা সরাসরি নিয়োগের ফলে বিমানে বর্তমানে প্রয়োজনের তুলনায় কর্মকর্তা বেশি। নীতিনির্ধারকদের নতুন জনবল নিয়োগে আগ্রহ বেশি। পুরনোদের পদোন্নতি দিয়ে ওপরের পদ পূরণের চেয়ে তারা নতুন নিয়োগে যান। ফলে কারও চাকরিজীবনে একবারও পদোন্নতি হয় না। নামমাত্র যে পদোন্নতি হয় তা অনিয়মে ভরপুর।
নন-ক্যাডার ছাড়াও ১৩তম গ্রেড থেকে ২০তম গ্রেড পর্যন্ত পদোন্নতি হয় না বললেই চলে। প্রতিটি দপ্তরে এসব গ্রেডের পদোন্নতি আটকে আছে। অথচ এসব গ্রেডেই বেশি লোক চাকরি করছেন। সরকারের মোট জনবল প্রায় ১৫ লাখ ৫৪ হাজার ৯২৭ জন। প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির ২৩ শতাংশ পদের মধ্যেও নন-ক্যাডার রয়েছেন। এ ছাড়া তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির ৭৭ শতাংশ পদই ১৩তম থেকে তার পরের গ্রেডের। এতে করে সহজেই বোঝা যায় সরকারের জনবলের বড় অংশই পদোন্নতির চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে। সরকারের জনবলের এই বিশাল অংশ যখন পদোন্নতি নিয়ে অনিশ্চয়তায় ভোগেন, তখন তারা নানা অনিয়মে ঝুঁকে পড়েন।
বেশির ভাগ দপ্তর, অধিদপ্তর পরিচালনা করেন বিভিন্ন ক্যাডারের কর্মকর্তারা। তারা তাদের প্রশাসনিক মন্ত্রণালয় থেকে প্রেষণে ক্যাডার কর্মকর্তাদের দপ্তর, অধিদপ্তরে পাঠান। প্রেষণে গিয়ে অনেক কর্মকর্তা শুধু রুটিন কাজটুকুই করতে চান। শূন্যপদে জনবল নিয়োগ বা পদোন্নতি রুটিন কাজ না হওয়ায় তা উপেক্ষিত থাকে। তা ছাড়া পদোন্নতি দিতে গিয়ে নানা জটিলতার সৃষ্টি হয়; বিশেষ করে মন্ত্রণালয় থেকে মন্ত্রী বা সচিব তাদের পছন্দের লোককে পদোন্নতি দেওয়ার জন্য সংস্থার প্রধানকে চাপ দেন। এই চাপ উপেক্ষা করার কোনো সুযোগ না থাকায় অযোগ্য লোককে পদোন্নতি দিতে হয় সংস্থার প্রধানকে। এই জটিলতা থেকে দূরে থাকার জন্য সংশ্লিষ্টদের পদোন্নতি দেওয়া থেকেও দূরে থাকেন সংস্থার প্রধানরা।
নন-ক্যাডার কর্মকর্তা এবং কর্মচারীদের পদোন্নতি না হওয়ার কারণ জানতে চাইলে খাদ্য অধিদপ্তরের ১৪ গ্রেডের একজন কর্মচারী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বাইরের লোকের ইচ্ছাটাই জাগে না আমাদের পদোন্নতি দিতে। আমাদের দপ্তরপ্রধান মহাপরিচালক প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তা। অতিরিক্ত মহাপরিচালকও অনেক সময় প্রশাসন ক্যাডার থেকে প্রেষণে আসেন। তাদের কেন ইচ্ছা জাগবে আমাদের পদোন্নতি নিয়ে। যদি এসব পদে ফুড ক্যাডারের কর্মকর্তা থাকতেন, তাহলে তারা খাদ্য বিভাগের সমস্যা বুঝতেন। তা ছাড়া নিয়োগ বিধি সংশোধনের নামে আমরা দীর্ঘদিন একই পদে আটকে আছি।’
গত বছরের ৩ ফেব্রুয়ারি সচিবালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা এবং ব্যক্তিগত কর্মকর্তারা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবের কাছে এক আবেদনে জানান, ‘বর্তমানে সচিবালয়ে প্রায় দুই হাজারের বেশি প্রশাসনিক ও ব্যক্তিগত কর্মকর্তা কর্মরত। এর বিপরীতে ক্যাডারবহির্ভূত সংরক্ষিত পদের সংখ্যা ২৬৭টি, যা খুবই নগণ্য। ফলে একই পদে ২০-২২ বছরের বেশি সময় কর্মরত থাকার পরও অনেকে পদোন্নতি পাচ্ছেন না। পদোন্নতি না পাওয়ায় সৃষ্ট হতাশার ফলে কর্মস্পৃহা নষ্ট হচ্ছে।’
সরকার এ সমস্যা থেকে কীভাবে বের হতে পারে জানতে চাইলে জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞ ফিরোজ মিয়া দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এসব সমস্যা সমাধানে সরকার সব সময়ই কাজ করে। কিন্তু এ চেষ্টা জটিলতার তুলনায় কম। এ বিষয়ে আরও এফোর্ট দিতে হবে।
বগুড়া-৪ (কাহালু-নন্দীগ্রাম) আসনের উপনির্বাচনে বেসরকারিভাবে ১১২ কেন্দ্রের ফলাফলে ৯৫১ ভোটের ব্যবধানে হেরে গেছেন বহুল আলোচিত স্বতন্ত্র প্রার্থী আশরাফুল হোসেন আলম ওরফে হিরো আলম। একতারা প্রতীক নিয়ে তিনি পেয়েছেন ১৯ হাজার ৪৮৬ ভোট। এ আসনে জয় পেয়েছেন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জাসদ (ইনু) সমর্থিত প্রার্থী অ্যাডভোকেট রেজাউল করিম তানসেন। মশাল প্রতীক নিয়ে তিনি পেয়েছেন ২০ হাজার ৪৩৭ ভোট।
বুধবার (১ ফেব্রুয়ারি) সকাল থেকে বগুড়ার দুইটিসহ মোট ৬ আসনে উপনির্বাচনের ভোট গ্রহণ শুরু হয়। ২০২২ সালের ১০ ডিসেম্বর বিএনপির এমপিরা পদত্যাগের ঘোষণা দিলে এ আসনগুলো শূন্য হয়।
তখন, বগুড়া-৬ (সদর) এবং বগুড়া-৪ (কাহালু-নন্দীগ্রাম) আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার ঘোষণা দেন হিরো আলম। নির্বাচন কমিশন একদফা তার প্রার্থিতা বাতিল করলেও পরে আদালতে গিয়ে প্রার্থিতা ফিরে পান তিনি।
নাগরিকত্ব বিষয়ক জটিলতার জেরে সুপ্রিম কোর্টের এক রায়ে দেশের উপপ্রধানমন্ত্রীর পদ ও পার্লামেন্টে আসন হারিয়েছেন নেপালের উপপ্রধানমন্ত্রী রবি লামিছানে। শুক্রবারের রায়ে আদালত জানিয়েছে, এই মুহূর্তে নেপালের নাগরিকত্বও নেই তার।
সুপ্রিম কোর্টের মুখপাত্র বিমল পৌদেল বার্তা সংস্থা এএফপিকে এ সম্পর্কে বলেন, ‘সুপ্রিম কোর্টের সাংবিধানিক বেঞ্চের রায় অনুযায়ী, ২০২২ সালের জাতীয় নির্বাচনে নাগরিকত্ব বিষয়ক আইন লঙ্ঘনের প্রমাণ পাওয়া গেছে রবি লামিছানের বিরুদ্ধে। এ কারণে এখন থেকে আর পার্লামেন্টের সদস্য নন তিনি।’
নেপালের এক সময়ের জনপ্রিয় টেলিভিশন ব্যক্তিত্ব রবি লামিছানে দেশটির রাজনৈতিক দল ন্যাশনাল ইনডিপেনডেন্ট পার্টির শীর্ষ নেতা। ২০২২ সালের ২০ নভেম্বর নেপালের পার্লামেন্ট প্রতিনিধিসভার নির্বাচনে তার দল ২০টি আসনে জয়ী হয়েছে। তারপর গত ডিসেম্বরে ক্ষমতাসীন জোট সরকারে নিজের দলসহ যোগ দিয়ে নেপালের উপপ্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হন লামিছান।
যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিত্ব ছিল লামিছানের; কিন্তু নেপালের সংবিধানে দ্বৈত নাগরিকত্ব স্বীকৃত না হওয়ায় ২০১৮ সালে মার্কিন নাগরিকত্ব ত্যাগ করে নির্বাচন করেছিলেন তিনি। শুক্রবারের রায়ে সুপ্রিম কোর্ট বলেছে, নিয়ম অনুযায়ী যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব ছেড়ে দেওয়ার পর নেপালের নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করার কথা ছিল লামিছানের; কিন্তু তা করেননি তিনি। ফলে এই মুহূর্তে নেপালের নাগরিকও নন লামিছান। এদিকে, শুক্রবার সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পর লামিছানের প্রতিক্রিয়া জানতে তার মন্ত্রণালয়ের দপ্তরে গিয়েছিলেন সাংবাদিকরা; কিন্তু লামিছানে তাদের বলেন, ‘যেহেতু এই মুহূর্তে আমি কোনো দেশেরই নাগরিক নই, তাই আদালতের সিদ্ধান্ত নিয়ে কোনো মন্তব্য করা আমার পক্ষে উচিত নয়, সম্ভবও নয়।’
বগুড়া-৪ (কাহালু-নন্দীগ্রাম) ও বগুড়া-৬ (সদর) আসনের উপনির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. আশরাফুল হোসেন হিরো আলম বুধবার (১ ফেব্রুয়ারি) দুপুর পর্যন্ত ভোটকেন্দ্র পরিদর্শন করে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বলেন, ‘সদরের কেন্দ্র সব দখল হয়্যা গ্যাছে। ডিসি-এসপিক কয়্যাও কোনো কাম হচ্চে না। সদরের আশা সব শ্যাষ। কাহালু-নন্দীগামের অনেক কেন্দ্র ঘুরে ঘুরে দেকছি। ভোট খুব সুষ্ঠু হচ্চে। মাঠের অবস্থা ভালো। কাহালু-নন্দীগ্রামে নিশ্চিত এমপি হচ্চি।’
এর আগে, সকালে সদর উপজেলার এরুলিয়া উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট দিতে যান তিনি। ভোট দেওয়ার পর হিরো আলম বলেন, ‘বগুড়া-৬ আসনে আগে থেকেই গোলযোগের আশঙ্কা করেছিলাম, সেটাই সত্যি হয়েছে। নির্বাচনি এজেন্টদের কেন্দ্র থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে। তবে বগুড়া-৪ আসনে ভোট সুষ্ঠু হচ্ছে। এভাবে সুষ্ঠু ভোট হলে এই আসনে আমিই বিজয়ী হবো।’
এদিকে বগুড়া-৬ আসনের উপনির্বাচনে কয়েকটি কেন্দ্রে নৌকা প্রার্থীর এজেন্ট বাদে অন্য এজেন্টদের ভোটকক্ষ থেকে বের করে দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। আজ সকালে হিরো আলমসহ তিনজন প্রার্থী এ অভিযোগ করেন। আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা তাদের এজেন্টদের বের করে দিয়েছেন বলে সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করা হয়।