
৩ ডিসেম্বর, ক্যামেরুনের কাছে হেরে ব্রাজিলের বিশ্বকাপ রোমাঞ্চ রঙ হারায়। একই দিন পেলে অসুস্থ হয়ে ভর্তি হন হাসপাতালে। কেমোথেরাপি কাজ করছিল না তার শরীরে। করোনার লক্ষণও ছিল। ব্রাজিলের ওপর অশনি কালো ছায়া ভর করে যেন। তার এক দিন পর ইনজুরিতে আক্রান্ত নেইমারের অনুশীলনে ফেরার খবর আসে। অনুশীলনও করেন। ওদিকে পেলের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র থেকে বের হওয়ার খবরও আসে। আর দক্ষিণ কোরিয়ার বিপক্ষে ম্যাচের আগে পেলের উজ্জীবনী টুইটার বার্তায় জেগে ওঠে ব্রাজিল। মাঠে সেই জেগে ওঠার প্রমাণ, জোগো বোনিতোর ছন্দে পাঁচবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা ফিরে স্বরূপে। ৪-১ গোলে জয়ের আনন্দে মিশে যান পেলে। অসুস্থ কিংবদন্তিকে উৎসর্গ করা হয় জয়। পেলে এই ম্যাচ হাসপাতাল থেকে দেখেছেন-হেসেছেন। নেইমার-ভিনিসিয়ুসরা তাকে হাসিয়েছেন। এবার চূড়ান্ত হাসিটা উপহার দেওয়ার পালা। অন্তত পেলের জন্য কাপ জিততে চায় ব্রাজিল শিবির।
সাও পাওলোর আলবার্ট আইনস্টাইন হাসপাতালে শুয়ে নিজের প্রথম বিশ^কাপকে ফিরিয়ে এনেছিলেন পেলে। ১৯৫৮ বিশ্বকাপে প্রথমবার শিরোপা জেতে ব্রাজিল। পেলেরও প্রথম ছিল। সেই আসরের একটি ছবি এখন টুইটারে ভাসছে। দেখা যায়, সুইডেনের রাস্তায় তরুণ পেলে হাঁটছেন। ওই ছবি পোস্ট করে পেলে লেখেন নিজের বাবাকে দেওয়া এক ওয়াদা পূরণের গল্প ‘১৯৫৮তে, বাবাকে দেওয়া ওয়াদা কীভাবে পূরণ করব এই ভেবে রাস্তায় হাঁটছিলাম। আমি জানি আজ এই দলের অনেকেই এমন ওয়াদা করে এসেছে এবং অবশ্যই নিজেদের প্রথম বিশ্বকাপের খোঁজে এসেছে। আমি এই ম্যাচটি (দক্ষিণ কোরিয়া) হাসপাতাল থেকে দেখব। তোমাদের প্রত্যেকের জন্য আওয়াজ তুলব। শুভ কামনা।’
পেলের এই বার্তা দারুণভাবে উজ্জীবিত করেছে নেইমারদের। ম্যাচ শেষে উৎসবের মাঝেও তাই পেলে রেখেছেন তারা সবার আগে। নেইমার পুরো সময় খেলেননি, আগে উঠে যাওয়ায় তার জন্য ওই ব্যানারটা নিয়ে আসা সহজ হয়েছে। সেই ব্যানারে ১৯৭০ বিশ্বকাপে পেলের একটি মুহূর্ত উদ্ভাসিত। ম্যাচশেষে স্টেডিয়াম ৯৭৪-এর মাঝমাঠে ব্রাজিলের সবাই দাঁড়িয়ে ওই ব্যানার হাতে ছবি তুলে কিংবদন্তিকে স্মরণ করেন। নেইমার ফুটবল সম্রাটের সুস্থতা কামনা করে বলেন, ‘এই মুহূর্তে পেলে যে অবস্থা দিয়ে যাচ্ছেন তা নিয়ে কথা বলা কঠিন। আশা করি উনি দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠবেন এবং আমরা তাকে সেরা জয়টা দিয়ে যেন শান্তি দিতে পারি।’ এরপরই দক্ষিণ কোরিয়ার বিপক্ষে জয় উৎসর্গ করেন পেলেকে। একই সঙ্গে তার জন্য চ্যাম্পিয়ন হওয়ার ইচ্ছার কথাও জানান, ‘তার এই মুহূর্তে মানসিক ও শারীরিক শক্তি দরকার। আমরা তার পাশে আছি। এই জয়টা তাকে উৎসর্গ করছি। কামনা করছি এই অবস্থাটা কাটিয়ে ওঠার মানসিক শক্তি যেন পান তিনি এবং পরে আমরা তাকে পেয়ে তার জন্য চ্যাম্পিয়ন হতে পারি।’ পেলের সুস্থতা কামনা করেছেন কোচ তিতেও ‘অসুস্থতার পর আমি যখন প্রথম পেলেকে দেখতেই যাই, তাকে দেখে আমার শরীর কাঁপছিল। অসুস্থতা ও কেমোথেরাপি কাজ না করার কথা শুনে ঠিক সেই রকম অনুভূতি হচ্ছিল আমার। আশা করি তিনি এখন আশঙ্কামুক্ত। আমাদের সবার ভালোবাসা তোমার জন্য আছে পেলে সুস্থ হয়ে উঠুন।’
নেইমার পরে জানান ইনজুরিতে পড়ে কি ভয়টাই পেয়েছিলেন। সারা রাত হাজারো চিন্তা ছিল তার মাথায়। ভেবেছিলেন আরও একটি বিশ্বকাপ খেলতে পারবেন না। সেই ভয় কাটিয়ে সুস্থ হয়ে ফেরা এবং বিশ্বকাপে নিজের সপ্তম গোল করা বিশেষ কিছু ছিল তার জন্য। রিচার্লিসনও জানালেন নেইমার ফিরে আসায় ব্রাজিলের ভারসাম্য ফিরেছে। নেইমার একা বিপক্ষের দুই-তিনজন খেলোয়াড়কে চাপে রাখেন তখন রিচার্লিসন-ভিনিদের জন্য জায়গা খালি হয় আর ব্রাজিল এগিয়ে যায়।
দক্ষিণ কোরিয়ার বিপক্ষে জয়ের পর রিচার্লিসন এক মজার তথ্য জানান। এই বিশ্বকাপে আর কিছু না হোক সাম্বা ফেরাতে নাচের ভা-ার নিয়ে এসেছেন তারা। জানালেন ১০ রকম নাচ শিখেছে পুরো দলের সদস্যরা। ১০ গোলের জন্য ১০টি। পরশু চার গোলে চারটি নাচ দিতে পেরেছেন আগে সার্বিয়া ও সুইজারল্যান্ডের বিপক্ষে ছিল তিনটি। এবার বাকিগুলোর পালা।
ঠিক এই নাচের বিষয়টাই উঠেছিল গত সেপ্টেম্বরে। এক বর্ণবাদী মন্তব্যের শিকার হয়ে ভিনি ভেঙে পড়েছিলেন। তাকে জাগিয়ে তুলতে এগিয়ে আসেন পেলে। বলেছিলেন, ‘ফুটবল হলো সর্বোচ্চ শান্তি, এটা একটা নাচ-শিল্প। এটাই সত্যিকারের পার্টি। আমরা কোনোরকম বর্ণবাদকে আমাদের হাসি বন্ধ করার সুযোগ দেব না। ভিনি তুমি নাচ, বাকি সব ভুলে যাও। উপভোগ কর।’ দক্ষিণ কোরিয়া ম্যাচের পর পেলের জন্য শুধু ভিনি নয় পুরো ব্রাজিল দলই নাচবে। ৮২ বছর বয়সী কিংবদন্তিকে বিশ্বকাপ উপহার দিতে চাইবে।
এ যেন সেই পুরনো ব্রাজিল! নান্দনিক ফুটবলের মায়াজালে সবাইকে আচ্ছন্ন করে রাখা...। খেলা শেষ হয়ে যাবে, কিন্তু রেশ থেকে যাবে বহুকাল। পরশু রাতে দক্ষিণ কোরিয়ার বিপক্ষে ব্রাজিলের পারফরম্যান্স ঠিক এমনই ছিল। নেইমার, রিচার্লিসন, ভিনিসিয়ুস জুনিয়রদের অসাধারণ আক্রমণাত্মক প্রদর্শনী দেখলাম। গোল স্কোরিংয়ের বিষয়টি তো ছিল দেখার মতো। প্রথমার্ধেই ৪-০ গোলে এগিয়ে যাওয়ার পর শেষ পর্যন্ত ৪-১ ব্যবধানে জয়। প্রত্যাশিতভাবেই কোয়ার্টার ফাইনালে পা রাখল তিতের দল।
প্রথমার্ধে ব্রাজিল ইচ্ছে করলে আরও গোল দিতে পারত বলে মনে হয়েছে। দ্বিতীয়ার্ধে তো কিছু কিছু খেলোয়াড়ের মধ্যে একটু স্বার্থপরতাই ছিল। নিজেই গোল করতে চাওয়া, তুলনায় ভালো পজিশনে থাকা খেলোয়াড়কে পাস না দেওয়ার মতো ব্যাপার ছিল। তবে প্রতিপক্ষের সঙ্গে ব্যবধানটা তারা বুঝিয়ে দিয়েছিল শুরুতেই। একের পর এক গোল আসতে থাকল তাই। চারটি গোলের মধ্যে রিচার্লিসনের গোলটার কথা আমি বিশেষ করে বলব। সেট পিসে মার্কিনিয়োস ও থিয়াগো সিলভার উপস্থিতি ছিল। সেট পিসের পরপরই ওই বলটা আসে। রিচার্লিসন তিনবার হেড করে বল পায়ে নেয়। এরপর মার্কিনিয়োসকে পাস দিয়ে রান করে। থিয়াগো সিলভা ওই রানটাই পিক করে বলটা দিয়ে। এরপর বাঁ পায়ের টোকায় নিখুঁত ফিনিশিং রিচার্লিসনের। অসাধারণ! দেখার মতো এক গোল!!
তবে এমন সুন্দর ম্যাচেও ব্রাজিলের একটা বিষয়ের কথা উল্লেখ করব, যা আমার চোখে একই সঙ্গে অনেক আনন্দের আবার চিন্তারও। অ্যালিসন অসম্ভব কিছু সেভ করেছে। ওপরের খেলোয়াড়দের প্রতি এটা তার বার্তা যে, ‘আমি আছি তোমাদের সাপোর্ট দিতে’, যা আনন্দের। তবে এই সুযোগগুলো কেন তৈরি হচ্ছে, এটা দুশ্চিন্তার। ট্রানজিশন সময়ে এটা হচ্ছে। এখনকার ব্রাজিলের খেলার ধরন হলো তাদের তিনজন ডিফেন্ডার সব সময় নিচে থেকে যাবে। এদের মিলিতাও, মার্কিনিয়োস ও থিয়াগো সিলভাকে এই ভূমিকায় দেখি। কোরিয়ার বিপক্ষে লেফটব্যাকে দানিলো খেলেছে। সে একটু ওপরে উঠছিল। বিল্ড আপের ক্ষেত্রে যখন দ্রুত ট্রানজিশন হয়, সেটা বিপদের হয়ে যায়। কোরিয়ান খেলোয়াড়রা বেশ দ্রুতগতির। ব্রাজিলকে এ ম্যাচে বিপদে ফেলছিল সেটাই। কোয়ার্টার ফাইনালে ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে খেলতে হবে ব্রাজিলকে। তারাও এই কৌশল নেবে। আর এসব ক্ষেত্রে দরকার হবে বৈক্তিগত নৈপুণ্য। ভিনিসিয়ুস জুনিয়র, নেইমার, রিচার্লিসনরা আছে। ব্রাজিলের অ্যাডভান্টেজ এখানেই। কোরিয়া চার গোল হজম করলেও কখনো হাল ছাড়েনি। এক পর্যায়ে ডাগআউটে সবার মধ্যে বেশ দুশ্চিন্তার ছাপ দেখা যাচ্ছিল। তবে দ্বিতীয়ার্ধে ওরা ফিরে এসেছে। একটা গোলও করেছে, চেষ্টা করে গেছে শেষ পর্যন্ত। ওদের জন্য অবশ্য এটা সফল বিশ্বকাপই। বিশেষ করে গ্রুপ পর্বে পর্তুগালকে হারিয়েছে।
তবে কোরিয়ানরা শুরুতে ব্রাজিলকে একটু হালকাভাবেই নিয়ে ফেলেছিল বলব। এটা তাদের বড্ড ভুল ছিল। ব্রাজিলকে সেভাবে সম্মান করেনি বলে আমার মনে হয়েছে। ব্রাজিলের যে আক্রমণভাগ, এ জন্য রক্ষণভাগকে আঁটসাঁট রাখতে হয়। কোরিয়া প্রথমার্ধে তা করেনি। আমার কাছে মনে হচ্ছিল কোনো পরিকল্পনা তাদের নেই। একটু বেশি আবেগি ছিল তারা। আর এটা হলে সিদ্ধান্তের বেলায় সমস্যা হওয়া খুব স্বাভাবিক। কারণ আবেগ দিয়ে কখনই ফুটবল হয় না। ব্রাজিল সপ্তম মিনিটে প্রথম গোল করল। ওই গোলের পর মনে হলো আরও বেশি আবেগী হয়ে পড়ল দক্ষিণ কোরিয়া। গোল শোধ করতে হবে, এই মনোভাব নিল। এটা ছিল মস্ত বড় ভুল।
চোট কাটিয়ে দুই ম্যাচ পর খেলতে নেমেছিল নেইমার। গোলও করল পেনাল্টি থেকে। বেশ ভালোই মনে হলো তাকে। খেলায় জড়তা তেমন ছিল না। পা থেকে দ্রুত বল ছেড়ে দেওয়ার ব্যাপার ছিল। কিছু কিছু সময় বল একটু বেশি রেখে ফেলছিল এবং হারাচ্ছিল। এটা হবেই, যেহেতু মাত্রই চোট থেকে উঠল। পরবর্তী ম্যাচে নিশ্চয়ই আরও স্বরূপে দেখা যাবে তাকে।
বহু দেশের, অনেক জাতির মাঝেই প্রচলিত আছে ১৩ সংখ্যাটা ‘অপয়া’। প্রাচীনদের অনেকেই বলেন, আনলাকি থার্টিনে কোনো নতুনের শুরু করতে নেই। সেদিন বিয়ে করতে নেই, ব্যবসা শুরু করতে নেই, এমনকি খুব প্রয়োজন না পড়লে ঘরের বাইর হতে নেই। সেই ১৩, অর্থাৎ আসছে ১৩ ডিসেম্বর যোগসূত্র এবারের বিশ্বকাপেরও। আর্জেন্টিনা-ব্রাজিল ম্যাচ হয়ে যেতে পারে সেমিফাইনাল। সেজন্য আগে মিলতে হবে দুটি ম্যাচের জটিল অঙ্ক। একটিতে আর্জেন্টিনার হারাতে হবে নেদারল্যান্ডসকে। অন্যটিতে ব্রাজিলের জিততে হবে ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে। যদি তাই হয় ১৩ ডিসেম্বর রাতে বিশ্বফুটবল দেখবে বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় একটি দলকে বীরের বেশে ফাইনালের মঞ্চে পা রাখতে। আরেক দলের ভাগ্যে জুটবে অপয়া ১৩’র ট্যাগ।
আর্জেন্টিনা আগেই উঠে গেছে কোয়ার্টারে। সোমবার রাতে দক্ষিণ কোরিয়ার বিপক্ষে ব্রাজিল জেতায় শেষ আট ছাপিয়ে সবার ভাবনায় এখন দুই লাতিন পরাশক্তির লড়াইয়ের ভাবনা চলে এসেছে। সেমিফাইনালে আর্জেন্টিনা সম্ভাব্য প্রতিপক্ষ হতে পারে, এ নিয়ে প্রশ্ন জেতেই ব্রাজিল স্ট্রাইকার রিচার্লিসন থামিয়ে দিলেন প্রশ্নকর্তাকে। কোরিয়াকে হারানোর পর টটেনহ্যাম তারকা বলেন, ‘আমরা এখন শুধুই ক্রোয়েশিয়াকে নিয়ে ভাবছি। সেমিফাইনাল পরের ধাপ। আগে তো আমাদের কোয়ার্টার ফাইনাল পেরুতে হবে।’
দু’দলের ভাবনায় না থাকলেও শুক্রবারের দুই ম্যাচ ছাপিয়ে ভক্ত-সমর্থকদের কল্পনায় ১৩’র সেই মহালড়াই। যার জন্য তাদের ঠিক ২২ বছরের অপেক্ষা। সেদিন কে কাকে কাঁদাবে, দুর্ভাগ্যের দিনটি কার জন্য উপস্থিত হবে, কার মেনে নিতে হবে বিদায়ের পরিণতি? এসব নিয়ে চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। চায়ের কাপে উঠেছে ঝড়। তর্ক-বিতর্কও হচ্ছে সমানে। মিডিয়াও বসে নেই। স্বপ্নের ম্যাচ নিয়ে তারাও ভক্তদের দিচ্ছে জ্বালানি। সামনে নিয়ে বসেছে দু’দলের অতীত লড়াইয়ের পরিসংখ্যান।
প্রাচীন দুটি দল মুখোমুখি হয়েছে সব মিলিয়ে ১০৭ বার। ৪০টি করে জয় আছে দু’দলের নামের পাশে। আর বাকি ২৩টি ম্যাচ ছিল অমীমাংসিত। বিশ্বকাপের মহামঞ্চে দু’দলের দেখা হয়েছে মাত্র চারবার। যার দু’বার জিতেছে ব্রাজিল, একবার আর্জেন্টিনা। অপরটি ড্র। গ্রুপ পর্বে কখনই ব্রাজিলকে হারাতে না পারা আর্জেন্টিনা ১৯৯০ ইতালি বিশ্বকাপের দ্বিতীয় পর্বে ১-০ গোলে জিতে ব্রাজিলকে বিদায় করেছিল। সেই ম্যাচটির কথা আজও মনে আছে। ব্রাজিল ইতালিতে এসেছিল অন্যতম ফেভারিট হিসেবে। গ্রুপ পর্বে অসামান্য ফুটবলে সেই সম্ভাবনার পালে জোর হাওয়া লেগেছিল। তবে দ্বিতীয় পর্বের ম্যাচে এসেই সব খেই হারায়। ম্যারাডোনার অসাধারণ পাস ধরে ক্যানিজিয়ার লক্ষ্যভেদের পর যে উদযাপনটি হয়েছিল, সেটাকে বিশ্বের অন্যতম সেরা উদযাপন দাবি করে অনেকেই। সেই বিদায় দেওয়ার প্রতিশোধটা নেওয়ার সুযোগ বিশ্বকাপের মঞ্চে পায়নি ব্রাজিল। দু’দলের সর্বশেষ লড়াইয়ে কাঁদতে হয়েছে নেইমারের ব্রাজিলকে। গত বছর কোপা আমেরিকার ফাইনালে ১-০ গোলে জিতেছিল মেসির আর্জেন্টিনা।
সে রাতে রিওডি জেনিরোর আকাশে উড়েছিল হাজারো সাদা-আকাশি ফানুস। মারাকানা আরেকবার দুঃখ হয়ে ধরা দিয়েছিল ব্রাজিলিয়ানদের কাছে। খুব কেঁদেছিলেন নেইমার। তাকে বুকে জড়িয়ে মেসির সান্ত্বনার ছবিটি ছুঁয়ে গিয়েছিল হাজারো ভক্তের হৃদয়। একই সঙ্গে আর্জেন্টিনা অধিনায়কের হাতে প্রথম কোনো শিরোপা উঠতে দেখাটাও ছিল বিশাল প্রাপ্তি। সেটাই যে আর্জেন্টিনার জার্সিতে মেসির প্রথম। মহাদেশ জয়ের পর ক্যারিয়ারের অস্তাচলে দাঁড়িয়ে মেসির মহাবিশ্ব জয়ের স্বপ্ন। সেই স্বপ্ন অবশ্য মøান হয়ে যেতে পারে আসছে সপ্তাহেই, হয় ৯ ডিসেম্বর, নয় তো ১৩ ডিসেম্বর। ৯-এ মেসিকে রিক্ত হাতে বিদায় দিতে ডি ইয়ং, মেমফিস ডিপেইদের লিখতে হবে আরেকটা ডাচ রূপকথা। অন্তত বিশ্বজুড়ে কোটি ভক্ত সে রাতে নিশ্চয় ডাচদের টোটাল জয়োগান শুনতে চাইবে না। একই জায়গায় দাঁড়িয়ে সে রাতে গত আসরের সেমিফাইনালিস্ট ক্রোয়েশিয়ার মুখোমুখি হবে ব্রাজিল। ক্রোয়াটরা অতিমানবীয় কিছু করে ফেললে হয়তো সে রাতেই করুণ সমাপ্তি ঘটবে নেইমারদের হেক্সা জয়ের অভিযান। ওরকম অলুক্ষণে কিছু যাতে না ঘটে সেটা নিশ্চিত করা এবং দুনিয়াকে আরেকটি লাতিন সুপারক্লাসিকো সাক্ষী হওয়ার দায়িত্ব দুই মহাতারকার। ইউরোপিয়ান দেয়াল ভাঙতে পিএসজির দুই তারকাকে ফের জ্বলতে হবে, বাকিদের দেখাতে হবে পথ। তবেই শুক্রবার রাতটা হবে মেসি-নেইমারময়। তাতেই ১৩ ডিসেম্বর আর্জেন্টিনা-ব্রাজিল ম্যাচের মহালড়াইয়ের ভাবনায় বুঁদ হবে সারা বিশ্বের সমর্থকরা।
কোরিয়ার বিপক্ষে আক্রমণের পসরা সাজিয়ে বড় জয়ে বীরদর্পে কোয়ার্টার ফাইনালে পা রাখে ব্রাজিল। প্রথমার্ধেই সেলেসাওরা চার গোলের লিড নেয়। পরে তারা ম্যাচটা জিতে নেয় ৪-১ ব্যবধানে। আর প্রতিটি গোলের পরেই ব্রাজিলিয়ানরা উদযাপনে নতুন মাত্রা যোগ করেছে সোমবার রাতে। অভিনব কায়দায় তারা গোলগুলো উদযাপন করেছে কবুতরের মতো নেচে। যে নাচে যোদ দিতে দেখা গিয়েছিল ব্রাজিল বস তিতেকেও। তবে ব্রাজিলের এমনধারা উদযাপন নিয়ে ম্যাচ শেষের পর থেকেই শুরু হয়েছে চাপান-উতোর। আইরিশ তারকা রয় কেন এই নাচের সমালোচনা করে শত্রুতে পরিণত হয়েছেন ব্রাজিলিয়ান সমর্থকদের কাছে। তাকে নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় চলছে...। ব্রাজিলিয়ান তাকে কখনই ক্ষমা করবে না, এমন হুমকিও দেওয়া হয়েছে। ব্রাজিলের কোচ থেকে শুরু করে খেলোয়াড়রা পর্যন্ত এই নাচ নিয়ে কথা বলেছেন। প্রফেসর তিতে তো বলেই দিয়েছেন শিষ্যদের এই নাচ বন্ধ করার সাধ্য তার নেই। তবে একজনের নাচ নিয়ে কথা বলায় আগ্রহ নেই। তিনি ব্রাজিলের বর্ষীয়ান ডিফেন্ডার দানি আলভেজ। তার ভাবনায় উঁকি দিচ্ছে ১৩ ডিসেম্বরের স্বপ্নের সেমিফাইনাল। যেখানে তাদের সম্ভাব্য প্রতিপক্ষ হতে পারে আর্জেন্টিনা। আর তার কাছে আর্জেন্টিনা মানেই মেসি।
বার্সেলোনার দীর্ঘদিনের সতীর্থ মেসির সঙ্গে আলভেজের গভীর বন্ধুত্ব। মেসির বিশ্বজয়ী হয়ে ওঠার পেছনে তরুণ বয়সের আলভেজের ভূমিকাও কম নয়। বার্সার জার্সিতে দুজনের বোঝাপড়াটাও ছিল অসাধারণ। ডান দিক থেকে তরুণ আলভেজের মাপা ক্রসে কত-শত গোল যে করেছেন মেসি, তার হিসাব নেই। দিনে দিনে দুজনেরই বয়স বেড়েছে। তিতের ব্রাজিল দলে ৩৯ বছরের আলভেজের জায়গা পাওয়া নিয়েও হয়েছে আলোচনা। অথচ বন্ধু মেসি এখনো আর্জেন্টিনার স্বপ্নদ্রষ্টা। তার কাঁধে ভর করে আর্জেন্টিনা দূর করতে চায় ৩৬ বছরের না পাওয়ার আক্ষেপ। ক্যারিয়ারের ক্রান্তিলগ্নে মেসিকে এভাবে জ্বলে উঠতে দেখে সত্যিই বিস্মিত ব্রাজিলের হয়ে ক্যামেরুনের বিপক্ষে অধিনায়কত্ব করা আলভেজ। সোমবার কোরিয়ার বিপক্ষেও বদলি হিসেবে নেমেছিলেন এই রাইটব্যাক। দীর্ঘদিন খেলার সুবাদেই মেসিকে তার চেয়ে ভালো করে চেনে না এই ব্রাজিল দলের বেশিরভাগ সদস্য। এমনকি নেইমারও না। তাই তো আলভেজ সতীর্থদের কাছে দিচ্ছেন সতর্কবার্তা, ‘সবকিছুই মেসির মাধ্যমে হচ্ছে। তার পায়ে যে কিছুই করে ফেলতে পারে। আমি মনে করি, এ মুহূর্তে সে ফর্মের তুঙ্গে অবস্থান করছে। সে এমন একজন, যাকে নিয়ে আপনাকে এই আসরে ভাবতেই হবে।’ এই ভাবনাটা তুলে রেখে সতীর্থদের শুক্রবারের কোয়ার্টার ফাইনালের জন্য প্রস্তুত হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন আলভেজ, ‘তবে সেমিফাইনাল নিয়ে এখনই ভাবার সময় আসেনি। কারণ এখন আমরা কোয়ার্টার ফাইনালে। ক্রোয়েশিয়ার প্রতি সম্মান দেখিয়েই আমাদের সেই ম্যাচে মনোযোগ দিতে হবে। দলটিতে অনেক ভালো ভালো খেলোয়াড় আছে এবং আমাদের ১১০ ভাগ সতর্ক হয়েই খেলতে হবে।’
জাপানকে টাইব্রেকারের ভাগ্য পরীক্ষায় হারিয়ে কোয়ার্টার ফাইনালে আসে গতবারের রানার্সআপ ক্রোয়েশিয়া। তাই আগে তিতের দলের সামনে ক্রোয়াট বাধা পেরুনোর চ্যালেঞ্জ।
ডিসেম্বরের সকালের সঙ্গে জুন মাসের সকালের অনেক তফাত। সূর্যকে ঘিরে ছুটে চলা কক্ষপথে পৃথিবীর অবস্থান আলাদা, তাই তাপমাত্রায় বিস্তর ব্যবধান। জুন মাসের সকাল মানেই বাড়তে থাকা রোদের তাপ, ডিসেম্বরের সকাল মানেই কুয়াশার ফাঁক দিয়ে হালকা রোদের দেখা। এত অমিল হলেও আজকের সকালটা মনে করিয়ে দিচ্ছে সাত বছর আগের এক জুন মাসের সকালকেই, যে দিনটা শুরু হয়েছিল প্রথমবার ভারতকে দেশের মাটিতে হারাতে পারার প্রবল প্রত্যাশা নিয়ে।
জুন মাসের ২১ তারিখে পৃথিবীর সর্বত্র দিন-রাত সমান হয়। তবে নিশ্চিত করেই বলা যায়, ২০১৫ সালের ২১ জুনের রাতটা বাংলাদেশের ৫৬ হাজার বর্গমাইলে সেদিন কেটেছিল চোখের পলকে অথবা দীর্ঘ বিনিদ্রায়। মোস্তাফিজুর রহমান, তার জীবনের দ্বিতীয় এক দিনের আন্তর্জাতিক ম্যাচে ভারতের শক্তিশালী ব্যাটিং দুর্গকে তাসের ঘরের মতো ধসিয়ে দিলেন দ্বিতীয়বারের মতো। ৪৩ রানে নিলেন ৬ উইকেট, রোহিত-বিরাট-শিখর-ধোনির ভারত অলআউট মাত্র ২০০ রানে। সাকিব আল হাসানের হাফসেঞ্চুরি আর বাকিদের ছোট-বড় অবদানে ৬ উইকেট হাতে রেখে ম্যাচ জিতল বাংলাদেশ, সিরিজের প্রথম দুই ওয়ানডে জিতে এক ম্যাচ হাতে রেখেই ভারতের বিপক্ষে সিরিজ জয়। যেকোনো ফরম্যাটে সেটাই ভারতের বিপক্ষে প্রথম সিরিজ জয় এবং এখন পর্যন্ত একমাত্র।
৭ ডিসেম্বর ২০২২-এর সকালটা শুরু সিরিজ জয়ের সংখ্যাটাকে দ্বিগুণ করার সম্ভাবনা নিয়ে। আজ ভারতকে হারাতে পারলেই পরপর দুই সফরেই ওয়ানডে সিরিজে প্রতিবেশীদের হারিয়ে দেওয়ার কীর্তি গড়বে বাংলাদেশ। প্রথম ওয়ানডেতে খাদের কিনারা থেকে ফিরে এসে জয়ের বন্দরে পৌঁছে যাওয়ার আত্মবিশ্বাস ছড়িয়ে গেছে সবার ভেতরেই। লিটন দাসের অধিনায়কত্বে নতুনত্বের ছাপ, সেই সঙ্গে বোলিংয়ে এবাদত হোসেন আর ব্যাটিংয়ে মেহেদী হাসান মিরাজ সব মিলিয়ে প্রথাগতদের ছাপিয়ে এগিয়ে আসছে বাংলাদেশের ক্রিকেটের পরের প্রজন্মের ক্রিকেটাররা।
প্রশান্তির সঙ্গে অবশ্য হাহাকারও আছে। বয়সভিত্তিক দলে মিরাজ ছিলেন অধিনায়ক, নাজমুল হোসেন শান্ত সহ-অধিনায়ক। মিরাজের ক্যারিয়ারটা এগিয়েছে তরতর করেই। শান্তর দলে থাকা নিয়ে সমালোচনা বিস্তর, প্রথম ওয়ানডেতে শান্ত প্রথম বলে আউট হওয়ার পর মিরপুর স্টেডিয়ামে হয়েছে উল্লাস! এই নিয়ে রাসেল ডমিঙ্গো বললেন ধৈর্য ধরতে, ‘শান্ত মাত্রই টি-২০ বিশ্বকাপে দুটো হাফসেঞ্চুরি করেছে। প্রথম ১২ টেস্টের পর জ্যাক ক্যালিসের গড় ছিল মাত্র ১২, এরপর সে বিশ্বের সেরা খেলোয়াড়দের একজন হয়েছে। শান্তকে নিয়মিত পারফর্ম করতে হবে ঠিক। কিন্তু বেশ কঠিন পরিস্থিতিতেই বেশ কয়েকবার ব্যাট করতে হয়েছে। তাকে সময় দিতে হবে।’
কুঁচকির চোটে তামিম ইকবাল না থাকায় ডানহাতি-বামহাতি সমন্বয়ের জন্যই শান্ত খেলছেন বলে জানিয়েছেন ডমিঙ্গো। আরেক চোট পাওয়া খেলোয়াড় তাসকিন আহমেদকেও দ্বিতীয় ওয়ানডেতে খেলাতে খুব একটা আগ্রহী নয় বাংলাদেশ, ‘তিন-চার দিন আগে তাসকিন একটা ইনজেকশন নিয়েছে আর গতকাল একটু জিম করেছে। আজ (মঙ্গলবার) সে পাঁচ-ছয় ওভার বল করেছে। সামনে অনেক ক্রিকেট আছে আর আমাদেরও আরও পেসারদের তুলে আনতে হবে, টেস্ট সিরিজও আছে সামনে। এই সময় আমার মনে হয় ওকে নিয়ে ঝুঁকি নেওয়া ঠিক হবে না।’
সেরা পেসার ও সেরা ব্যাটসম্যানকে ছাড়াই ভারতকে প্রথম ওয়ানডেতে হারিয়ে দিলেও সেটা ছিল কানের পাশ দিয়ে বেরিয়ে যাওয়া গুলি। ডমিঙ্গো তাই মানছেন, উন্নতি করতে হবে ব্যাটিংয়ে ‘আমরা বুঝতে পারছি যে ভারত ঘুরে দাঁড়াবে। আমাদের প্রথম ম্যাচের চেয়ে ভালো ক্রিকেট খেলতে হবে, বিশেষ করে ব্যাটিংটা ভালো করতে হবে। আগের ম্যাচের মতো রোজ এভাবে পার পাওয়া যাবে না।’
ভারতীয় দল থেকে শেষ মুহূর্তে ছিটকে গেছেন ঋষভ পান্থ, তাই মাঠে এসে লোকেশ রাহুল জেনেছেন উইকেট সামলাতে হবে তাকে। আজ হয়তো ঈশান কিষানকে দেখা যাবে দলে, সেই সঙ্গে উমরান মালিকেরও খেলার সম্ভাবনা আছে সিরিজ নির্ধারণী ওয়ানডেতে।
বেশ কিছুদিন ধরেই কোনো সুসংবাদ নেই বাংলাদেশের ক্রিকেটে। টি-২০ বিশ্বকাপে জিম্বাবুয়ে ও নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে জয়ে তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলে যদিও অনেকেই কৃতিত্ব দেখাতে চাইছেন। গড়পড়তা বছরের শেষটায় যদি ভারতের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ জেতা যায়, তাহলে হতে পারে মধুরেণ সমাপয়েৎ।
নাসের আল-খেলাইফির খুশির সীমা নেই। নিজ শহরে বিশ্বকাপ। এতদিন তিন মহাতারকার জ্বলে ওঠার অপেক্ষায় ছিলেন পিএসজির মালিক। শুরু থেকেই স্বমহিমায় জ্বলছেন আর্জেন্টিনার লিওনেল মেসি ও ফ্রান্সের কিলিয়ান এমবাপ্পে। আর চোট সারিয়ে মাঠে ফিরে সোমবার রাতে আলো ছড়ালেন ব্রাজিলের নেইমার। তাতেই কাতারের মরূদ্যানে শুরু হয়ে গেছে পিএসজি পার্টি। গোলে-ড্রিবলিংয়ে যারা রাঙাতে শুরু করেছেন অনেক বিতর্কের বিশ্বকাপ।
পেট্রো ডলারের জোরে তিন বিশ্বতারকাকে পিএসজির আঙিনায় নিয়ে আসার নায়ক খেলাইফি। ২০১১ সালে ফরাসি লিগের শীর্ষ ক্লাবটা কিনে নিয়েছিল তার মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান কাতার স্পোর্টস ইনভেস্টমেন্ট। এরপর থেকে একের পর এক চমক দিয়ে চলছেন ৪৯ বছরের ধনাঢ্য ব্যবসায়ী। সর্বশেষ চমক বার্সার মেসিকে পিএসজিতে নিয়ে আসা। আগে থেকেই ছিলেন এমবাপ্পে ও নেইমার। মেসির সংযুক্তি পিএসজির অ্যাটাকিং থার্ডকে বানিয়েছে বিশ্বের তর্কাতীত সেরা। চলতি মৌসুমে অ্যাটাকিংত্রয়ী ফ্রেঞ্চ লিগ মাতিয়ে চলেছেন। তিনজনে মিলে করেছেন ৪৬ গোল। এছাড়া দলকে নিয়ে গেছেন উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগের নকআউট পর্বে। দারুণ বোঝাপড়ায় প্রতিপক্ষের রক্ষণ ছিন্নভিন্ন করতে জুড়ি নেই এই ত্রয়ীর।
৩৫ বছরের মেসির নান্দনিক ফুটবল, নেইমারের ছন্দের সঙ্গে তরুণ এমবাপ্পের গতি ও নিখুঁত ফিনিশিং মিলিয়ে পিএসজির ফরোয়ার্ড লাইন ভয়ংকর সুন্দর। তবে খেলাইফির ঘর মাঝেমধ্যেই অশান্তিতে ভরে ওঠে। এমনিতে তিন তারকাই খেলেন দলের জন্য। তবে কখনো কখনো লেগে যায় স্বার্থের দ্বন্দ্ব। সম্প্রতি এটা বেশি হচ্ছে এমবাপ্পে আর নেইমারের মধ্যে। পেনাল্টি, ফ্রি-কিক নিয়ে হচ্ছে ভুল বোঝাবুঝি। প্রকাশ্যে মেসি কোনো পক্ষ না নিলেও নেইমারে তার দুর্বলতা ওপেন সিক্রেট। সব কিছু মিলিয়ে এই ত্রয়ীকে আগলে রাখা বড় চ্যালেঞ্জ খেলাইফি এবং এ মৌসুমে যোগ দেওয়া কোচ ক্রিস্তফ গালতিয়েরের জন্য। যদিও ক্লাব প্রধান ও দল প্রধান প্রকাশ্যে তিন তারকার প্রশংসায় পঞ্চমুখ। একই সঙ্গে দুজনই চাইছেন চলতি বিশ্বকাপে নিজ নিজ দলের হয়ে তিনজনই খেলুক অসামান্য ফুটবল।
এই চাওয়াটা পূরণ করতে মেসি আর এমবাপ্পে এর মধ্যেই আর্জেন্টিনার ও ফ্রান্সের ড্রাইভিং সিটে। চোটের কারণে গ্রুপের দুটি ম্যাচ খেলতে না পারা নেইমারও হাঁটছেন তাদের পেছন পেছন। দক্ষিণ কোরিয়ার বিপক্ষে গোলের পাশাপাশি পায়ের কারুকাজ আর সতীর্থদের আক্রমণ সাজিয়ে দিয়ে সোমবার রাতটা রঙিন করে তুলেছেন ব্রাজিল তারকা। আবার এই তিনজনের মধ্যেই চলছে একে অপরকে ছাড়িয়ে যাওয়ার লড়াই।
বয়সটা কেবলই সংখ্যা প্রমাণ করে আর্জেন্টিনাকে টেনে নিয়ে যাচ্ছেন বাঁ পায়ের জাদুকর মেসি। তার ছোঁয়ায় পুরো আর্জেন্টিনা এখন এক আদর্শ পরিবার। টানা তিন জয়ে তারা পৌঁছে গেছে কোয়ার্টার ফাইনালে। মেসিও মরুর বুকে অনিন্দ্যসুন্দর ফুল ফুটিয়ে যাচ্ছেন প্রতি ম্যাচে। বিশ্বকাপ আসরে এর মধ্যেই করেছেন ৯ গোল। সম্ভাব্য শেষ বিশ্বকাপে আর্জেন্টাইনদের ৩৬ বছরের শিরোপা হাহাকার মেটাতে যেন রবি হয়ে জ্বলছেন সাতবারের ব্যালন ডি’অর জয়ী। এ আসরে গোলসংখ্যায় মেসিকে ছাড়িয়ে গেছেন এমবাপ্পে। চার ম্যাচে করেছেন পাঁচ গোল। রাশিয়ায় ১৯ বছর বয়সে ফ্রান্সকে বিশ্বকাপ জেতানো এমবাপ্পে এখন আরও পরিণত এবং দুর্ধর্ষ। মোট গোলে মেসিকে ছুঁয়ে ফেলা ফরাসি তারকার এখন যে বয়স এবং ফর্ম, তাতে আরও অনেক রেকর্ডেই অনেককে পেছনে ফেলবেন।
ব্রাজিলও সোমবার রাতে নিশ্চিত করেছে কোয়ার্টার ফাইনাল। তবে এই আসাটা পুরোপুরি নেইমারনির্ভর নয়। সার্বিয়ার বিপক্ষে গোল না পেলেও খেলেছিলেন সহজাত ফুটবল। সেই ম্যাচে ৯ বার ফাউলের শিকার হয়ে গোড়ালিতে ভালোই চোট পান, যা তাকে খেলতে দেয়নি গ্রুপের শেষ দুই ম্যাচ। নেইমারকে ছাড়া ব্রাজিলকে অপ্রতিরোধ্য রূপ নিতে দেখা যায়নি। সুইজারল্যান্ডকে ১-০ গোলে হারালেও ক্যামেরুনের কাছে এই ব্যবধানে হেরেছিল সেলেসাওরা। দ্বিতীয় পর্বে অবশ্য নেইমার ফিরে ব্রাজিলকেও ফিরিয়ে এনেছেন কক্ষপথে। তার উপস্থিতিতে ব্রাজিলের আগ্রাসী আক্রমণভাগ ছিন্নভিন্ন করে দিয়েছে দক্ষিণ কোরিয়ার সব প্রতিরোধ। তিন বিশ্বকাপে নেইমারের গোলসংখ্যা সাত। গোলে এমবাপ্পে-মেসির থেকে পিছিয়ে থাকলেও নিজ দলে গুরুত্বের দিক থেকে একই জায়গায় ব্রাজিল তারকা।
তাই তো খেলাইফির এত আনন্দ। সিএনএনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে পিএসজির কর্ণধার প্রশংসায় ভাসিয়েছেন ত্রয়ীকে ‘মেসিকে নিয়ে আমি সবসময় গর্ব করি। আমরা হয়তো বিশ্বকাপ শেষেই তার সঙ্গে ভবিষ্যৎ নিয়ে আলোচনা করব।’ এমবাপ্পের ব্যাপারে, ‘তাকে দেখে সত্যিই কি মনে হচ্ছে সে অসুখী? সে তো একের পর এক ম্যাচে গোল করে চলেছে। দারুণ লড়াকু মনোভাব নিয়ে ফ্রান্সকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে।’ নেইমারেও বিশ্বকাপ মাতানোর আশা ছাড়েননি খেলাইফি, ‘সে আসলে একটু দুর্ভাগা। ও একজন অসাধারণ ফুটবলার এবং এরকম প্রতিভাকে আগলে রাখার দায়িত্ব গোটা বিশ্বের। তবেই বিশ্বকাপ রাঙাতে পারবে নেইমার।’ বিশ্বসেরা ত্রয়ীকে খুব কাছ থেকে দেখা পিএসজি কোচ গালতিয়েরের কথাটা তাৎপর্যপূর্ণ ‘মেসি অনন্য, ও ইতিহাসের সেরা খেলোয়াড়। এমবাপ্পে আর নেইমারকে আমি সমান্তরালেই রাখব। তবে বিশ্বকাপে নিজ নিজ দলের সাফল্যের চাবি তাদের হাতে। তাই তাদের মাঝে সেরার লড়াই হচ্ছে। আর সেটাও অনেক উপভোগ্য।’
এই লড়াইয়ে কে জিতবেন, সেটা সময় বলে দেবে। সেসব না ভেবে আসুন মেতে উঠি তিন তারকার পায়ের জাদুতে। অনেক প্রশ্নের, অনেক বিতর্কের কাতার বিশ্বকাপকে যারা রাঙিয়ে চলছেন শুধুই ফুটবলের রঙে।
ধারাবাহিকভাবে বিদ্যুৎ ও জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির কারণে কৃষকের উৎপাদন খরচ বেড়েই চলেছে। এ অবস্থায় চলতি বোরো মৌসুমে সেচে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ পাওয়া নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। তবে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহে সরকার নানারকম প্রস্তুতি নিয়েছে বলে দাবি করছে বিদ্যুৎ বিভাগ।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিদ্যুতের যে পরিস্থিতি তাতে গ্রীষ্মে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ কঠিন হয়ে দাঁড়াবে। বেশি দাম দিয়েও কৃষক ঠিকমতো বিদ্যুৎ না পেলে উৎপাদন ব্যাহত হবে। এতে দেশের খাদ্য নিরাপত্তা হুমকির মধ্যে পড়তে পারে।
কৃষি অর্থনীতিবিদ ড. জাহাঙ্গীর আলম খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, জ্বালানি তেল, সার ও বীজের দাম বেড়েছে। এখন আবার বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হলো। তার মানে চারদিক থেকে কৃষকের উৎপাদন খরচ বেড়েছে। এর ফলে কৃষকের ‘সিগনিফিকেন্ট লস’ হবে। এভাবে দাম বাড়িয়ে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। তিনি বলেন, বোরো উপকরণনির্ভর ফসল। কিন্তু উপকরণের দাম এভাবে বাড়তে থাকলে, কৃষক আগ্রহ হারিয়ে ফেললে; সে ঠিকমতো উপকরণ ব্যবহার করতে পারবে না। এতে উৎপাদন ব্যাহত হবে। উৎপাদন খারাপ হলে চালের ঘাটতি হবে। এমনিতেই এখন প্রায় ৭০ লাখ টন গম ও ভুট্টা আমদানি করতে হচ্ছে। এরমধ্যে যদি চাল আমদানি করতে হয়; তাহলে খাদ্য নিরাপত্তা ঝুঁকির মধ্যে পড়বে।
ড. জাহাঙ্গীর বলেন, ‘সারাবিশ্ব নানারকম সংকটে ভুগছে। এ অবস্থায় আমাদের অন্তত খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার সুযোগ রয়েছে। সেজন্য যে পরিমাণ দাম বেড়েছে সে পরিমাণ নগদ অর্থ সহায়তা দিতে হবে কৃষককে। ২০০৯-১০ সালের দিকে জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির কারণে এক কোটির বেশি কৃষককে ৮০০ থেকে ৯০০ টাকা সরাসরি নগদ সহায়তা দেওয়া হয়েছিল। এজন্য তারা ১০ টাকা দিয়ে ব্যাংক অ্যাকাউন্টও খুলেছিলেন। তাদের সেই অ্যাকাউন্ট এখনো আছে, কিন্তু সহায়তা দেওয়া হয় না। এখন যদি সেই সহায়তা দেওয়া হয় তাহলে কৃষক আবার উৎসাহ পাবে।’
বিদ্যুৎ বিভাগ জানায়, প্রতি বছর সেচ মৌসুমে (ফেব্রুয়ারি থেকে মে) বিদ্যুতের চাহিদা বেড়ে যায়। গত মৌসুমে বিদ্যুতের সর্বোচ্চ চাহিদা ছিল ১৪ হাজার ৭৮২ মেগাওয়াট। চলতি বছর সম্ভাব্য চাহিদা ধরা হয়েছে ১৬ হাজার মেগাওয়াট। গত বছরের তুলনায় এ বছর সেচ সংযোগের সংখ্যা ১ হাজার ৯১টি বেড়ে মোট ৪ লাখ ৬৫ হাজার ৪৫৯টি হয়েছে। এজন্য বিদ্যুৎ লাগবে ২ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট।
সেচ মৌসুমে অগ্রাধিকার দিয়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করা হবে বলে জানিয়েছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। সম্প্রতি তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিদ্যুতের চাহিদার সঙ্গে সমন্বয় রেখে উৎপাদনও বাড়ানো হচ্ছে। সেচ মৌসুমে বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য গ্যাস, ফার্নেস অয়েল ও ডিজেল সরবরাহ বৃদ্ধি করা, গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোতে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে গ্যাস সরবরাহ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সার্বিকভাবে পরিস্থিতি ভালো হবে।’
বিদ্যুৎ বিভাগ বলছে, সেচ মৌসুমে বিদ্যুৎকেন্দ্র চালাতে প্রতিদিন ১৬০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস, ৭৭ হাজার ৪০০ টন ফার্নেস অয়েল এবং ৬৬ হাজার ১০০ টন ডিজেলের চাহিদা নির্ধারণ করা হয়েছে। সূত্রমতে, বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) চাহিদা অনুযায়ী গ্যাসের সরবরাহ করা বাস্তবে খুব কঠিন ব্যাপার। গত বছর বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য পিডিবির দৈনিক গ্যাসের চাহিদা ১৬০০ মিলিয়ন ঘনফুট ছিল। বিপরীতে সরবরাহ করা হয়েছে এক হাজার মিলিয়ন ঘনফুট। এ বছর জ¦ালানির ঘাটতি আরও বেশি। তবে সরকার খোলাবাজার থেকে এলএনজি আমদানি করে ঘাটতি মেটানোর উদ্যোগ নিয়েছে। কিন্তু আমদানিকৃত গ্যাস দিয়ে চাহিদা অনুযায়ী কতটা বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যাবে তা নিয়ে কর্মকর্তাদের অনেকেই সন্দিহান।
পিডিবির তথ্যমতে, বর্তমানে দেশে বিদ্যুতের উৎপাদন ক্ষমতা ২২ হাজার ৭০০ মেগাওয়াট। কিন্তু উৎপাদন হচ্ছে ১০ হাজার থেকে ১০ হাজার ৩০০ মেগাওয়াট। গ্যাস ও কয়লা সংকটের কারণে সাড়ে ৩ হাজার থেকে ৪ হাজার মেগাওয়াট কম বিদ্যুৎ উৎপাদিত হচ্ছে। এ ছাড়া রক্ষণাবেক্ষণের কারণেও কিছু কেন্দ্র বন্ধ রয়েছে।
দেশে নির্মাণাধীন ও আমদানিকৃত বিদ্যুৎকেন্দ্রের অগ্রগতি পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, আগামী মার্চের শেষ দিকে ভারতের আদানি থেকে অতি উচ্চ দামে ৭৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আসার সম্ভাবনা রয়েছে।
এ ছাড়া মে মাসের দিকে চট্টগ্রামের এস আলম গ্রুপের নির্মাণাধীন তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রথম ইউনিট থেকে ৬১২ মেগাওয়াট এবং অন্যান্য কিছু ছোট বা মাঝারি বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ১৫০ থেকে ২০০ মেগাওয়াটের মতো বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যোগ হতে পারে। এপ্রিল-মে মাসের দিকে বিদ্যুতের চাহিদা সবচেয়ে বেশি হবে। তখন এসব কেন্দ্র সময়মতো উৎপাদনে এলেও ১৩ হাজার মেগাওয়াটের জোগান দেওয়া সম্ভব হবে। এর বাইরে উচ্চ মূল্যের জ্বালানি আমদানির মাধ্যমে কিছু কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন হতে পারে।
কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) জ্বালানি উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. এম শামসুল আলম মনে করেন, চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ সরবরাহ করার সক্ষমতা সরকারের নেই। কারণ বিদ্যুৎ উৎপাদনের জ্বালানি সরবরাহ করতে সরকারের ডলার খরচের যে সক্ষমতা দরকার তা সীমাবদ্ধ হয়ে গেছে। তিনি বলেন, ‘জ্বালানি খাতে সরকারের ভুলনীতি আর অন্যায্য ও লুণ্ঠনমূলক ব্যয়ের কারণে দাম বেড়েই চলেছে। সেই ব্যয় মেটাতে এখন বিদ্যুৎ জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি করে ভর্তুকি সমন্বয় করতে চাইছে। এই পরিস্থিতিতে উচ্চ দামে বিদেশ থেকে জ্বালানি আমদানি করে চাহিদামতো বিদ্যুৎ উৎপাদন করা অসম্ভব ব্যাপার।’
এদিকে ডলার সংকট এবং ঋণপত্র (এলসি) খোলার বিলম্বের কারণে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য জ্বালানি আমদানি উল্লেখযোগ্য হারে কমে গেছে। সরকারের কাছে বেসরকারি খাতের বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর মোটা অঙ্কের বিল পাওনা থাকলেও তারা ঠিকমতো না পাওয়ার কারণে প্রয়োজনীয় জ্বালানি আমদানি করতে পারছেন না। এতে বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে।
জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ও বুয়েটের অধ্যাপক ড. ইজাজ হোসেন দেশ রূপান্তরকে বলেন, এখন পর্যন্ত বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর নির্মাণকাজ এবং জ্বালানি আমদানির যে অগ্রগতি তাতে চাহিদার তুলনায় আগামী গ্রীষ্মে বিদ্যুতের ঘাটতি হবে আড়াই হাজার থেকে ৩ হাজার মেগাওয়াট। তবে সাশ্রয় নীতি অবলম্বনের মাধ্যমে ১ হাজার মেগাওয়াট এবং উচ্চ মূল্যের জ্বালানি আমদানির মাধ্যমে আরও ১ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুতের ঘাটতি পূরণ করতে পারে সরকার। এরপরও অন্তত ১ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুতের ঘাটতি থাকবে।
এদিকে দাম সমন্বয়ের নামে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনকে (বিইআরসি) পাশ কাটিয়ে গণশুনানি ছাড়াই নির্বাহী আদেশে জানুয়ারি মাসে ১৮ দিনে চার দফা গ্যাস-বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি করেছে সরকার। এর মধ্যে দু’দফায় অন্তত ১০ শতাংশ বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়েছে। এর আগে গত বছরের আগস্টে সেচে ব্যবহৃত ডিজেলের দাম লিটারপ্রতি ২৯ টাকা দাম বাড়ানো হয়। বিদ্যুৎ ও জ¦ালানির মূল্যবৃদ্ধির ফলে কৃষিতে উৎপাদন খরচ অনেক বেড়েছে।
কুমিল্লার নাঙলকোট উপজেলার বাসন্ডা গ্রামের বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম মজুমদার বলছিলেন, গত বছর এক বিঘা বা ৩৩ শতক জমিতে ধান চাষ করতে সেচের জন্য ২৭৫০ টাকা ব্যয় হয়েছে। বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির কারণে চলতি বোরো মৌসুমে এ ব্যয় বেড়ে অন্তত ৪ হাজার টাকা হবে। এর বাইরে অন্যান্য খরচও আনুপাতিক হারে অনেক বেড়েছে। ফলে এখন ধান চাষ করলে প্রতি বিঘা জমিতে অন্তত দেড় থেকে দুই হাজার টাকা লোকসান হচ্ছে।
ডিজেলচালিত ইঞ্জিনের মাধ্যমে জমিতে সেচ দেন কুষ্টিয়ার দৌলতপুর গ্রামের শিয়ালা গ্রামের কৃষক নাঈম। শনিবার রাতে টেলিফোনে তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধির কারণে প্রতিবিঘা জমিতে এ বছর সেচের ব্যয় বেড়েছে ১২০০ থেকে ১৪০০ টাকা। সার, বীজ ও অন্যান্য কৃষি উপকরণের দামও বেড়েছে।
এর আগে মূল্যবৃদ্ধির গণশুনানির সময় বিইআরসি কৃষক ও প্রান্তিক মানুষের কথা বিবেচনা করলেও নির্বাহী আদেশের সময় এসব কিছুই বিবেচনা করা হয় না।
অতীতে সামাজিক সুরক্ষার অংশ হিসেবে প্রতিমাসে ৫০ ইউনিট পর্যন্ত বিদ্যুৎ ব্যবহারকারীকে লাইফলাইন বা প্রান্তিক ব্যবহারকারী হিসেবে বিবেচনা করে তাদের বিদ্যুতের দাম তুলনামূলক কম বাড়াত কমিশন। দেশে এ ধরনের গ্রাহক রয়েছে ১ কোটি ৬৩ লাখ, যাদের অধিকাংশই কৃষক। কিন্তু সর্বশেষ বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির আদেশে এ সুবিধা বাতিল করা হয়েছে।
লাইফ লাইন শ্রেণির প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের বিল ছিল ৩.৭৫ টাকা। গত ডিসেম্বরে তা বাড়িয়ে ৩.৯৪ টাকা করেছিল মন্ত্রণালয়। সেখান থেকে এবার আরেক দফা বাড়িয়ে ৪.১৪ টাকা করা হয়েছে। ফলে গত দুই মাসের ব্যবধানে দরিদ্র মানুষকে এখন প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের জন্য ৩৯ পয়সা বাড়তি ব্যয় করতে হবে।
কৃষকের কথা বিবেচনা করে আগে সেচে ব্যবহৃত বিদ্যুতের দাম সবসময়েই তুলনামূলক সাশ্রয়ী রাখার চেষ্টা করা হতো। কিন্তু এখন কৃষকেরাও রেহাই পাচ্ছে না। গত ১২ ডিসেম্বর কৃষিতে ব্যবহৃত প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দাম ২১ পয়সা বাড়িয়ে ৪.৩৭ টাকা করা হয়। সেখান থেকে এবার আরও ২২ পয়সা বাড়িয়ে ৪.৫৯ টাকা করা হয়েছে।
রংপুরের একজন কৃষক আনোয়ার আলী খানিকটা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, দফায় দফায় যেভাবে সবকিছুর দাম বাড়ছে তাতে চাষি তো আর বেশিদিন বাঁচতে পারবে না। তিনি বলেন, ‘ধান চাষ করে এখন লাভ তো দূরের কথা খরচই ওঠে না। তাই আগের চেয়ে ধান চাষ কমিয়ে দিয়েছি। এখন সারা বছর খাওয়ার জন্য যতটুকু ধান দরকার ততটুকুই চাষ করি। তাতে লোকসান হলেও কী করব? ডাল-ভাত তো খাওয়া লাগবে।’
বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন ও পাকিস্তানের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী হিনা রাব্বানি খারের মধ্যে অনুষ্ঠিত বৈঠকে তারা দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যিক সম্পর্ক গতিশীল হওয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। শ্রীলঙ্কার ৭৫তম স্বাধীনতা দিবস উদযাপনে যোগ দিতে দেশটিতে সফরে আছেন মোমেন ও হিনা। গতকাল শনিবার সেখানে তাদের মধ্যে সাইডলাইন বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
রেডিও পাকিস্তান ও নিউজ নেটওয়ার্কের প্রতিবেদনে বলা হয়, বৈঠকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন ও পাকিস্তানের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী হিনা রাব্বানি খার পাকিস্তান-বাংলাদেশ দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা নিয়ে আলোচনা করেন। তারা বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিশেষ করে অর্থনীতি ও বাণিজ্যে পারস্পরিক উপকারী দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা নিয়ে আলোচনা করেন। পাকিস্তানের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী অর্থনৈতিক, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সংযোগ জোরদার করার এবং পর্যটন ও জনগণের মধ্যে যোগাযোগ বৃদ্ধির প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন। অনেক আন্তর্জাতিক ইস্যুতে বিশেষ করে মুসলিম উম্মাহ সংক্রান্ত বিষয়ে পাকিস্তান ও বাংলাদেশের মধ্যে মতের মিল রয়েছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি। বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা সহযোগিতা জোরদারের আশা : এদিকে গত শুক্রবার বিকেলে দেশটির প্রধানমন্ত্রী পদুজানা পেরামুনা পার্টির দিনেশ গুনাবর্ধনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন। এ সময় তারা দুই দক্ষিণ এশীয় প্রতিবেশীর মধ্যে চলমান সেক্টরাল সহযোগিতা আরও বাড়ানোর গুরুত্ব পুনর্ব্যক্ত করেন। বিশেষ করে বাণিজ্য সহজীকরণ, ব্যবসা ও বিনিয়োগ, পর্যটন ও সংযোগের ক্ষেত্রে সহযোগিতার ওপর জোর দেন তারা।
গতকাল পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানায়, এর আগে সেদিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন শ্রীলঙ্কার পররাষ্ট্রমন্ত্রী আলী সাবরির দেওয়া মধ্যাহ্নভোজে অংশ নেন। সন্ধ্যায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী মর্যাদাপূর্ণ ‘লক্ষ্মণ কাদিরগামার স্মারক বক্তৃতা’ শিরোনামে ‘শেয়ারড প্রসপারটি : এ ভিশন ফর সাউথ এশিয়া’ প্রদান করেন। সেখানে পররাষ্ট্রমন্ত্রী দক্ষিণ এশীয় সম্প্রদায়ের সম্মিলিত আকাক্সক্ষা এবং যৌথ সমৃদ্ধির জন্য দক্ষিণ এশিয়া সম্মিলিতভাবে যে লক্ষ্যগুলো অনুসরণ করতে পারে সে সম্পর্কে তার দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরেন। শ্রীলঙ্কার ঐতিহ্যবাহী পারফরমিং আর্ট সমন্বিত ঐতিহাসিক ইন্ডিপেন্ডেন্স হলে সাংস্কৃতিক উৎসব ‘লঙ্কারলঙ্কা’তে অংশগ্রহণ করেন।
কূটনৈতিক সূত্র জানায়, শ্রীলঙ্কার ৭৫তম স্বাধীনতা দিবস উদযাপনে অংশগ্রহণের জন্য দেশটিতে সফর করছেন ড. মোমেন। গত ৪ ফেব্রুয়ারি সকালে স্বাধীনতা দিবসের কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে যোগ দেন। এ সফরে তিনি প্রেসিডেন্ট রনিল বিক্রমাসিংহে, পররাষ্ট্রমন্ত্রী আলী সাবরি, নেপালের সদ্য পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করা বিমলা রায় পাওডেলের সঙ্গে এবং মালদ্বীপের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও পাকিস্তানের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী হিনা রাব্বানি খারের সঙ্গেও বৈঠক করেন। আশা করা হচ্ছে, সফর শেষে আজ ঢাকায় পৌঁছাবেন ড. মোমেন।
'পাঠান' মুক্তির আগে থেকেই অনুরাগীদের সঙ্গে শাহরুখের যোগাযোগের একটাই মাধ্যম, টুইটার। শনিবার ফের টুইটারে 'আস্ক এসআরকে' সেশনে ধরা দিলেন শাহরুখ। হালকা মেজাজে, খোলামেলা আড্ডায় মাতলেন অনুরাগীদের সঙ্গে। অনুরাগীদের প্রশ্ন উত্তর দিলেন। সেখানেই একজন টুইটার ব্যবহারকারীর উপদেশ- বয়স অনুযায়ী চরিত্রে অভিনয়ের করার। পাল্টা জবাব দেন শাহরুখও। বলেন, 'তিনি হিরো ছিলেন, আছেন, থাকবেন'।
অনুরাগীরা যেমন রয়েছেন, তেমনই ট্রোল করার লোকের সংখ্যাও কম নয় শাহরুখের সোশালে। বছর সাতান্নর 'তরুণ' এই অভিনেতাকে একজনের প্রশ্ন, 'আপনি কি এভাবেই হিরোর চরিত্রেই অভিনয় করবেন, নাকি কোনো দিন নায়ক-নায়িকার বাবার চরিত্র করার পরিকল্পনাও রয়েছে?' তাতে শাহরুখ যা জবাব দিয়েছেন, তা রীতিমত ছড়িয়ে পড়েছে সোশালে।
এমনিতেই রসিক মানুষ শাহরুখ। তবে কোন কথায় কাকে কী উত্তর দেবেন, তা ভালোই জানা তার। বাদশাহ লেখেন, 'তুই বাপ হ… আমি হিরোর চরিত্রেই ঠিক আছি।'
শনিবারের 'আস্ক এসআরক'-এ সেশনে, শাহরুখের কাছে জানতে চাওয়া হয় 'পাঠান'-এর মোট আয়ের পরিসংখ্যান। তাকেও ফেরাননি শাহরুখ। উত্তর দিয়ে লেখেন, 'ভালোবাসা ৫ হাজার কোটি ছাড়িয়ে গিয়েছে, ৩ হাজার কোটি প্রশংসা, ৩২৫০ কোটি হাগ, ২০০০ কোটি হাসি এখনও গণণা চলছে। তোমার অ্যাকাউন্ট্যান্ট কী বলছেন?'
'পাঠান' ঘিরে উন্মাদনা নজিরবিহীন। প্রেক্ষাগৃহের বাইরে এই ছবি দেখার ঢল। শাহরুখ অভিনীত ছবিটি লম্বা রেসের ঘোড়া, বলেছেন সিনেমা বিশেষজ্ঞরা। ৪ বছর পর শাহরুখ পর্দায় ফিরেছেন বলেই শুধু নয়, ৭ দিনে বক্স অফিসে ৭০০ কোটি টাকার ব্যবসা করেছে 'পাঠান', যা বলিউডে বছরের সেরা ব্লকবাস্টার হিসাবে গণ্য হতে চলেছে।
বিশ্বে জনপ্রিয় ফলগুলোর মধ্যে পেঁপে একটি। পুষ্টিগুণের জন্যই সবাই এই ফলটি বেশি পছন্দ করেন।
চিকিৎসক থেকে পুষ্টিবিদ— সকলেই এই ফলকে ‘মহৌষধ’ বলে থাকেন। শিশুদের প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তুলতে, বয়স্কদের অর্শের সমস্যায় আবার কম বয়সীদের ওজন কমানোর ডায়েটে পাকা পেঁপের স্থান সকলের আগে। বিভিন্ন ভিটামিন এবং খনিজের প্রাকৃতিক উৎস পাকা পেঁপে চোখের জন্যও উপকারী। বিটা ক্যারোটিনে ভরপুর পাকা পেঁপে ত্বকের স্বাস্থ্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
অ্যান্টি অক্সিডেন্টে ভরপুর
ভিটামিন সি এবং অ্যান্টি অক্সিড্যান্টে ভরপুর পাকা পেঁপে ক্যানসারের মতো দুরারোগ্য ব্যধির প্রতিরোধক। এ ছাড়াও পেঁপেতে ছড়েছে ক্যারোটিনয়েড, ভিটামিন সি এবং ই, যা ত্বকের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
হজমে সহায়ক
পেঁপে মুখের রুচি ফেরায়। সেই সঙ্গে খিদেও বাড়ায় এবং পেট পরিষ্কার রাখে। পেট পরিষ্কার থাকলে গ্যাস অম্বলের সমস্যাও নিয়ন্ত্রণে থাকে। শুধু তাই নয়, যাদের অর্শের সমস্যা রয়েছে, চিকিৎসকরা তাদের পেঁপে খাওয়ার পরামর্শ দেন।
প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তুলতে সক্ষম
পেঁপে কিন্তু শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। ১০০ শতাংশ ভিটামিন সি পাওয়া যায় এই পাকা পেঁপে থেকেই। শরীরে কোনও সংক্রমণ হলে, তা কমাতে চিকিৎসকরা পাকা পেঁপে খাওয়ার পরামর্শ দেন।
ওজন কমাতে
পাকা পেঁপেতে যথেষ্ট পরিমাণ ফাইবার থাকায় তা অন্ত্রের স্বাস্থ্য রক্ষা করে। পাশাপাশি বিপাক হারও বাড়িয়ে তোলে। এ ছাড়াও যারা ওজন কমাতে ডায়েট মেনে খাবার খেয়ে থাকেন, তাদের জন্যও ভাল পাকা পেঁপে।
হার্টের স্বাস্থ্যরক্ষা করে
হার্টের স্বাস্থ্য ভাল রাখতে পটাশিয়াম খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ উচ্চ রক্তচাপ এবং হৃদরোগ সংক্রান্ত যাবতীয় সমস্যা নিয়ন্ত্রণ করে এই যৌগ। প্রাকৃতিকভাবে পটাশিয়ামের উৎস হল পাকা পেঁপে।
সংক্ষিপ্ত সফরে নেপাল হয়ে বিকেলে ঢাকায় এসেছেন মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাইফুদ্দিন নাসুসন ইসমাইল। আজ শনিবার (৪ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছালে তাকে স্বাগত জানান ঢাকায় নিযুক্ত মালয়েশিয়ার হাইকমিশনার হাজনা মো. হাশিম।
প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সফরটা আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তিনি শ্রমবাজারের জটিলতা নিয়ে আলাপ করবেন। কিভাবে দেশটিতে আমরা সহজে কর্মী পাঠাতে পারি; সেগুলো আলোচনায় উঠে আসবে। আমাদেরও কিছু প্রস্তাব রয়েছে। আমাদের কর্মীদের স্বার্থ আগে আমরা চাই, সবার জন্য বাজার খুলে দেওয়া হোক। নিয়োগকর্তার পছন্দমতো রিক্রুটিং এজেন্সি নিয়োগ— এটা আমরা চাই না। অভিবাসন ব্যয়
মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার গত কয়েক বছর ধরে অস্থির। দেশটিতে প্রত্যাশিত শ্রমিক পাঠাতে পারছে না বাংলাদেশ। এমন পরিস্থিতিতে শ্রমবাজারটির জটিলতা নিরসনে আলোচনা করতে সংক্ষিপ্ত সফরে নেপাল হয়ে ঢাকায় আসছেন মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাইফুদ্দিন নাসুসন ইসমাইল।
তার সফরে শ্রমবাজারটি গতিশীল করতে সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) পরিবর্তন, অতিরিক্ত অভিবাসন ব্যয় কমানোসহ দেশের সব বৈধ রিক্রুটিং এজেন্সির জন্য বাজার উন্মুক্ত করার প্রস্তাব দেবে ঢাকা।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে, ২৪ ঘণ্টার সফরে মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদ এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সঙ্গে বৈঠক করবেন। পাশাপাশি তিনি সেনাকল্যাণ সংস্থার সঙ্গেও একটি বৈঠক করবেন।
শ্রম পরিদর্শক পদে যোগ দেওয়ার ৩৪ বছর পর পদোন্নতি পেলেন মাহমুদুল হক। স্বপ্ন দেখতেন পদোন্নতির সিঁড়ি বেয়ে একসময় প্রতিষ্ঠানের সর্বোচ্চ পদে যাবেন। সেই স্বপ্ন আট বছরেই লুটিয়ে পড়ল জ্যেষ্ঠতার তালিকায়।
১৯৮৮ সালে যোগ দেওয়ায় ’৯৫ সালেই পদোন্নতি পাওয়ার কথা ছিল মাহমুদুল হকের। কর্তৃপক্ষের অবহেলা আর প্রতিষ্ঠানপ্রধানের অদূরদর্শিতা সে স্বপ্ন শুরুতেই বাধা পেল। এন্ট্রি পোস্টে যোগ দেওয়ার পর তার মতো অন্য কর্মচারীরা যখন পদোন্নতির স্বপ্নে বিভোর, তখন তাতে গা-ই করলেন না সেই সময়ের প্রতিষ্ঠানপ্রধান।
মাহমুদুল অপেক্ষায় রইলেন পরিবর্তিত পরিস্থিতির জন্য। সেই পরিবর্তন আসতে আসতে চাকরিতে কেটে গেল আঠারো বছর। আঠারোতে মানুষ প্রাপ্তবয়স্ক হয়। তিনিও ভাবলেন আঠারোতে তিনি না হয় ‘জব ম্যাচিউরিটি’তে পৌঁছালেন। চাকরির আঠারো বছরে পদোন্নতি পেলেও মন্দ হয় না।
কিন্তু অবাক ব্যাপার, কর্তৃপক্ষ পদোন্নতি দিল, তবে মাহমুদুলকে ছাড়া। পদোন্নতির প্রজ্ঞাপনে কোথাও তার নাম নেই। হতাশায় মুষড়ে পড়লেন তিনি। জুনিয়র কর্মকর্তারদের নাম আছে, অথচ তার নাম নেই। প্রতিষ্ঠানের নীতি-নির্ধারকদের দরজায় দরজায় ঘুরলেন ন্যায়বিচারের আশায়। কিন্তু তারা পাত্তাই দিলেন না বিষয়টি।
তারা আমলে না নিলেও মাহমুদুলের স্বপ্ন তো সেখানেই থেমে যাওয়ার নয়। সেই স্বপ্ন পুঁজি করে তিনি গেলেন আদালতে। সেই ভিন্ন জগৎটাও কম চ্যালেঞ্জিং ছিল না। প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনাল তার পক্ষে রায় দিল। মাহমুদুল আনন্দে আত্মহারা হলেন। কিন্তু সেই আনন্দ বেশি দিন স্থায়ী হলো না। সরকার আপিল করল প্রশাসনিক আপিল ট্রাইব্যুনালে। মামলার ফল উল্টে গেল। হতাশায় ভেঙে না পড়ে তিনি গেলেন উচ্চ আদালতে। আপিল বিভাগে সিভিল আপিল মামলা করলে প্রশাসনিক আপিল আদালতের রায় বাতিল হয়। প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনালের রায় বহাল থাকে।
জলে নেমে কুমিরের সঙ্গে লড়াই করার মতো মাহমুদুল হকও যেন সরকারের সঙ্গে লড়াই করতে নামলেন। আপিল বিভাগের রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ পিটিশন করল সরকারপক্ষ। একপর্যায়ে সরকার বুঝতে পারল কোনোভাবেই তারা এ মামলায় জিততে পারবে না। সরকারপক্ষে রিভিউ পিটিশন প্রত্যাহার করা হলো। আদালত সরকারের পদোন্নতির প্রজ্ঞাপনকে আইনের কর্তৃত্ববহির্ভূত বলে ঘোষণা করল। জুনিয়র কর্মকর্তাকে যেদিন থেকে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে এবং যতবার পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে, একইভাবে মাহমুদুল হককে পদোন্নতি দেওয়ার নির্দেশ দেয় আদালত। বকেয়া বেতন-ভাতাসহ সব পাওনা কড়ায়-গ-ায় পরিশোধের নির্দেশনা আসে।
আদালতের এই নির্দেশনা দেওয়া হয় ২০১৮ সালে। এরপর আদেশ বাস্তবায়ন করতে সরকারের লেগে যায় প্রায় চার বছর। ২০২২ সালের ১১ মে তাকে পদোন্নতি দেওয়া হয়। ৩৪ বছর পর পদোন্নতির প্রজ্ঞাপন পেয়ে স্তম্ভিত হয়ে গেলেন মাহমুদুল হক। আবারও তাকে ঠকিয়েছে সরকার। জুনিয়র কর্মকর্তা যুগ্ম মহাপরিদর্শক হলেও তাকে পদোন্নতি দেওয়া হয় তার দুই ধাপ নিচের সহকারী মহাপরিদর্শক পদে। উপমহাপরিদর্শক ও যুগ্ম মহাপরিদর্শক আরও ওপরের পদ। আদালতের নির্দেশনার সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।
কখনোই প্রজ্ঞাপন মাহমুদুল হকের জন্য ভালো বার্তা বয়ে আনেনি। পুরো চাকরিজীবন আদালতের বারান্দায় ঘুরে তিনি পৌঁছেছেন অবসরের প্রান্তসীমায়। আর তিন মাস পরে তিনি অবসরে যাবেন। যৌবন ও মধ্য বয়সের দিনগুলোতে আদালতে ঘুরে বেড়ানোর শক্তি ও সাহস থাকলেও মাহমুদুল হক এখন সেই সাহস দেখাতে দ্বিতীয়বার চিন্তা করছেন। পারবেন তো শেষ সময়ে এসে সরকারের অপরিণামদর্শী সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপসহীন মনোভাব দেখিয়ে শেষ পর্যন্ত লড়ে যেতে?
মাহমুদুল হকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে দেশ রূপান্তরকে জানিয়েছেন, তিনি আদালতের কাছেই জানতে চাইবেন, আদালতের বিচার না মানার শাস্তি কী।
পুরো ঘটনা শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা শুনিয়ে জানতে চাইলেন, কতজনের পক্ষে মাহমুদুল হকের মতো লড়াকু মনোভাব দেখানো সম্ভব?
সীমাহীন আনন্দ নিয়ে মানুষ সরকারি চাকরিতে যোগ দেয়। এরপরই তার মধ্যে যে স্বপ্নটি দানা বাঁধে তা হচ্ছে পদোন্নতি। কার কীভাবে পদোন্নতি হবে তা আইনকানুন, নিয়ম-নীতি দিয়ে পোক্ত করা। পুরো বিষয়টি কাচের মতো স্বচ্ছ। এরপরও পদোন্নতি হয় না। দিন, মাস, বছর পার হয়ে যায়, কাক্সিক্ষত পদোন্নতির দেখা মেলে না।
বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের (বিসিএস) ২৬টি ক্যাডারের মধ্যে হাতে গোনা কয়েকটি ক্যাডারে নিয়মিত পদোন্নতি হয়। বাকি ক্যাডারে হতাশা। তার চেয়েও কঠিন পরিস্থিতি নন-ক্যাডারে। ক্যাডার কর্মকর্তারা নিজের পদোন্নতির ষোলো আনা বুঝে নিয়ে ঠেকিয়ে দেন নন-ক্যাডার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পদোন্নতি। সংখ্যায় বেশি হওয়ায় নন-ক্যাডাররা একজন আরেকজনকে নানা ইস্যুতে আটকাতে গিয়ে পুরো প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করেন। সরকারের মোট কর্মকর্তা-কর্মচারীর প্রায় তিন-চতুর্থাংশ কর্মচারী। সেই হিসেবে সরকারের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনবলের পদোন্নতি হয় না। পে-কমিশন হলেই কর্মচারীদের পদোন্নতির জন্য করুণা উথলে ওঠে। এমনকি ব্লকপোস্টে যারা আছেন, তাদের জন্যও পদোন্নতির বিকল্প সুবিধা বাতলে দেওয়া হয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কর্মচারীদের পদোন্নতি উপেক্ষিতই থাকে।
যখন সময়মতো পদোন্নতি হয় না, তখন নানা ধরনের সমস্যা দেখা দিতে থাকে। এসব সমস্যা সংশ্লিষ্ট দপ্তর-অধিদপ্তরের চৌহদ্দি পেরিয়ে আমজনতাকেও প্রভাবিত করে। নন-ক্যাডার কর্মকর্তা আর সঙ্গে কর্মচারীরা যখন বুঝতে পারেন পদোন্নতির আশা তাদের নেই, তখন তারা দুহাতে টাকা কামানোর ধান্দায় মেতে ওঠেন। এতে করে ঘুষের সংস্কৃতি সমাজে ছড়িয়ে পড়ে। অকার্যকর পথে হাঁটে রাষ্ট্র। সাধারণ মানুষ টাকা ছাড়া তাদের কাছ থেকে কোনো সেবা পায় না, ব্যবসায়ীরা নতুন কোনো আইডিয়া নিয়ে ব্যবসায় আসেন না, ব্যবসাবান্ধব পরিস্থিতি না থাকায় মুখ ফিরিয়ে নেন দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীরা। প্রধানমন্ত্রীর বারবার আহ্বানেও বিনিয়োগকারীরা সাড়া দেন না। সাধারণ মানুষকে নিঃস্বার্থভাবে সেবা দেওয়ার বাণীতেও উদ্বুদ্ধ হন না সংশ্লিষ্টরা।
এই পরিস্থিতিতে অনিয়ম আটকে রাখার সব কৌশলই ব্যর্থ হচ্ছে। যথাযথ তদারকি না থাকায় বিভাগীয় ব্যবস্থা অকার্যকর হয়ে গেছে। ৩ লাখ ৫৩ হাজার ৩৫০টি অডিট আপত্তি ঝুলে থাকায় অডিট প্রতিষ্ঠানগুলোও আগ্রহ হারিয়ে নিজেরাই জড়িয়ে পড়ছে অনিয়মে। দন্তহীন বাঘে পরিণত হওয়ার তথ্য সাংবাদিকদের জানান দুর্নীতি দমন কমিশনের প্রধান নিজেই।
নন-ক্যাডার কর্মকর্তা ও কর্মচারীর পদোন্নতির বড় একটা অংশ আটকে রাখে মন্ত্রণালয়গুলো। এই আটকে রাখার কারণ হচ্ছে মন্ত্রণালয়ের নীতিনির্ধারকদের স্বার্থ। বিভিন্ন দপ্তর, অধিদপ্তরে নন-ক্যাডার কর্মকর্তাদের পদোন্নতি দিলে নিয়ম অনুযায়ী পদোন্নতিপ্রাপ্তদের ওপরের পদে বসাতে হবে। এতে মন্ত্রণালয়ের নীতিনির্ধারকদের এককালীন লাভ; অর্থাৎ টাকার বিনিময়ে একবার পদোন্নতি দেওয়া যাবে। কিন্তু পদোন্নতি না দিয়ে সংশ্লিষ্টদের চলতি দায়িত্ব দিলে বছরজুড়ে টাকা আয় করতে পারেন নীতিনির্ধারকরা। দপ্তর, অধিদপ্তরে বড় অঙ্কের টাকার বিনিময়ে চলতি দায়িত্ব দেওয়া হয়। চলতি দায়িত্বপ্রাপ্তদের আয় অনুসারে নীতিনির্ধারকদের মাসোহারা দিতে হয়। নন-ক্যাডারদের পদোন্নতি দেওয়া হলে মন্ত্রণালয়ের নীতিনির্ধারকদের নিয়মিত আয়ের উৎস বন্ধ হয়ে যায়। এ কারণে আইন বা বিধি-বিধানের ফাঁকফোকর গলিয়ে নন-ক্যাডার এবং কর্মচারীদের পদোন্নতি আটকে রাখার সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হয়।
সরকারি কর্মচারী সংহতি পরিষদের সভাপতি নিজামুল ইসলাম ভূঁইয়া মিলন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সচিবালয় এবং সারা দেশের সরকারি কর্মচারীদের পদোন্নতির মধ্যে একটু পার্থক্য আছে। নন-ক্যাডারের কিছু বিষয় ছাড়া সচিবালয়ের কর্মচারীরা সময়মতো পদোন্নতি পায়। কিন্তু সচিবালয়ের বাইরে পদোন্নতি হয় না বললেই চলে। সচিবালয়ে মাত্র ১০ হাজার কর্মচারী আছেন। সচিবালয়ের বাইরে আছেন ১০ লাখের বেশি। এসব কর্মচারীর পদোন্নতি নিয়ে বহু বছর ধরে চেষ্টা করছি। কিন্তু কোনো ফল পাইনি। সর্বশেষ মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ এ সমস্যা নিয়ে কাজ করার জন্য একটি কমিটি করে দিয়েছে। কমিটি কিছু সুপারিশ করেছে। ব্যস, ওই পর্যন্তই। এরপর এর কোনো অগ্রগতি নেই। যেখানে সরকারপ্রধান বলেন, চাকরিজীবনে সবাই যেন কমপক্ষে একটি পদোন্নতি পায়। সেখানে বহু কর্মচারী কোনো পদোন্নতি ছাড়াই অবসরে যাচ্ছেন। সরকারপ্রধানের নির্দেশনা উপেক্ষা করেন আমলারা। তাদের আগ্রহ কেনা-কাটায়, বিদেশ ভ্রমণে, নতুন জনবল নিয়োগে। এসব করলে তাদের লাভ। কর্মচারী পদোন্নতি দিতে তাদের কোনো আগ্রহ নেই। এর নিশ্চয়ই একটা শেষ আছে। বৈষম্যের পরিণতি কী হয়, তা অনেক দাম দিয়ে বিডিআর বিদ্রোহে আমরা দেখেছি।’
কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের নন-ক্যাডারদের পদোন্নতি ঝুলছে বছরের পর বছর। এই অধিদপ্তরের কয়েক শ কর্মকর্তা পাঁচ বছর আগেই পদোন্নতির যোগ্য হয়েছেন। নানা কায়দা-কানুন করে তাদের পদোন্নতি ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। অধিদপ্তরের মহাপরিদর্শক সংশ্লিষ্টদের জ্যেষ্ঠতা নির্ধারণ করে তাদের পদোন্নতির প্রক্রিয়া এগিয়ে নিলেও শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় নতুন করে জ্যেষ্ঠতার তালিকা করার নামে সময়ক্ষেপণ করছে। জ্যেষ্ঠতার তালিকা করার পর এখন তাদের পারিবারিক সদস্যদের তথ্য যাচাই-বাছাই করার জন্য একটি সংস্থাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। ওই সংস্থা নন-ক্যাডার কর্মকর্তাদের পরিবারের সদস্যদেরও তথ্য তালাশ করছে। তাদের আত্মীয়দের মধ্যে কে কোন দলের সমর্থক তার তথ্য নিচ্ছেন সংস্থার কর্মকর্তারা।
গত মাসে শেষ হওয়া জেলা প্রশাসক সম্মেলনে দায়িত্ব পালন করছিলেন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের একজন প্রশাসনিক কর্মকর্তা। ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনের সুরম্য ভবনে দায়িত্ব পালন করলেও ওই নন-ক্যাডার কর্মকর্তার মনের অবস্থাটা মনোহর ছিল না। কেমন আছেন জানতে চাইলে ওই নন-ক্যাডার কর্মকর্তা বলেন, ‘ভালো নেই। চাকরি করছি, পদোন্নতি নেই। ২০১৫ সালের আগে পদোন্নতি না পেলেও টাইমস্কেল ও সিলেকশন গ্রেড ছিল। তাও তুলে দেওয়া হয়েছে। তুলে দেওয়ার সময় বলা হয়েছিল সময়মতো পদোন্নতি হবে, ব্লকপোস্টধারীদের দেওয়া হবে বিশেষ আর্থিক সুবিধা। এসবের কোনোটাই হয়নি।’
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসে একটি প্রশাসনিক আদেশ খুবই পরিচিত। সেই প্রশাসনিক আদেশ ১৬/২০১৮ অনুযায়ী ৭০ ভাগ কর্মকর্তা সরাসরি নিয়োগ হবে। আর ৩০ ভাগ পদোন্নতির মাধ্যমে পূরণ করা হয়। ৭০ ভাগ কর্মকর্তা সরাসরি নিয়োগের ফলে বিমানে বর্তমানে প্রয়োজনের তুলনায় কর্মকর্তা বেশি। নীতিনির্ধারকদের নতুন জনবল নিয়োগে আগ্রহ বেশি। পুরনোদের পদোন্নতি দিয়ে ওপরের পদ পূরণের চেয়ে তারা নতুন নিয়োগে যান। ফলে কারও চাকরিজীবনে একবারও পদোন্নতি হয় না। নামমাত্র যে পদোন্নতি হয় তা অনিয়মে ভরপুর।
নন-ক্যাডার ছাড়াও ১৩তম গ্রেড থেকে ২০তম গ্রেড পর্যন্ত পদোন্নতি হয় না বললেই চলে। প্রতিটি দপ্তরে এসব গ্রেডের পদোন্নতি আটকে আছে। অথচ এসব গ্রেডেই বেশি লোক চাকরি করছেন। সরকারের মোট জনবল প্রায় ১৫ লাখ ৫৪ হাজার ৯২৭ জন। প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির ২৩ শতাংশ পদের মধ্যেও নন-ক্যাডার রয়েছেন। এ ছাড়া তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির ৭৭ শতাংশ পদই ১৩তম থেকে তার পরের গ্রেডের। এতে করে সহজেই বোঝা যায় সরকারের জনবলের বড় অংশই পদোন্নতির চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে। সরকারের জনবলের এই বিশাল অংশ যখন পদোন্নতি নিয়ে অনিশ্চয়তায় ভোগেন, তখন তারা নানা অনিয়মে ঝুঁকে পড়েন।
বেশির ভাগ দপ্তর, অধিদপ্তর পরিচালনা করেন বিভিন্ন ক্যাডারের কর্মকর্তারা। তারা তাদের প্রশাসনিক মন্ত্রণালয় থেকে প্রেষণে ক্যাডার কর্মকর্তাদের দপ্তর, অধিদপ্তরে পাঠান। প্রেষণে গিয়ে অনেক কর্মকর্তা শুধু রুটিন কাজটুকুই করতে চান। শূন্যপদে জনবল নিয়োগ বা পদোন্নতি রুটিন কাজ না হওয়ায় তা উপেক্ষিত থাকে। তা ছাড়া পদোন্নতি দিতে গিয়ে নানা জটিলতার সৃষ্টি হয়; বিশেষ করে মন্ত্রণালয় থেকে মন্ত্রী বা সচিব তাদের পছন্দের লোককে পদোন্নতি দেওয়ার জন্য সংস্থার প্রধানকে চাপ দেন। এই চাপ উপেক্ষা করার কোনো সুযোগ না থাকায় অযোগ্য লোককে পদোন্নতি দিতে হয় সংস্থার প্রধানকে। এই জটিলতা থেকে দূরে থাকার জন্য সংশ্লিষ্টদের পদোন্নতি দেওয়া থেকেও দূরে থাকেন সংস্থার প্রধানরা।
নন-ক্যাডার কর্মকর্তা এবং কর্মচারীদের পদোন্নতি না হওয়ার কারণ জানতে চাইলে খাদ্য অধিদপ্তরের ১৪ গ্রেডের একজন কর্মচারী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বাইরের লোকের ইচ্ছাটাই জাগে না আমাদের পদোন্নতি দিতে। আমাদের দপ্তরপ্রধান মহাপরিচালক প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তা। অতিরিক্ত মহাপরিচালকও অনেক সময় প্রশাসন ক্যাডার থেকে প্রেষণে আসেন। তাদের কেন ইচ্ছা জাগবে আমাদের পদোন্নতি নিয়ে। যদি এসব পদে ফুড ক্যাডারের কর্মকর্তা থাকতেন, তাহলে তারা খাদ্য বিভাগের সমস্যা বুঝতেন। তা ছাড়া নিয়োগ বিধি সংশোধনের নামে আমরা দীর্ঘদিন একই পদে আটকে আছি।’
গত বছরের ৩ ফেব্রুয়ারি সচিবালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা এবং ব্যক্তিগত কর্মকর্তারা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবের কাছে এক আবেদনে জানান, ‘বর্তমানে সচিবালয়ে প্রায় দুই হাজারের বেশি প্রশাসনিক ও ব্যক্তিগত কর্মকর্তা কর্মরত। এর বিপরীতে ক্যাডারবহির্ভূত সংরক্ষিত পদের সংখ্যা ২৬৭টি, যা খুবই নগণ্য। ফলে একই পদে ২০-২২ বছরের বেশি সময় কর্মরত থাকার পরও অনেকে পদোন্নতি পাচ্ছেন না। পদোন্নতি না পাওয়ায় সৃষ্ট হতাশার ফলে কর্মস্পৃহা নষ্ট হচ্ছে।’
সরকার এ সমস্যা থেকে কীভাবে বের হতে পারে জানতে চাইলে জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞ ফিরোজ মিয়া দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এসব সমস্যা সমাধানে সরকার সব সময়ই কাজ করে। কিন্তু এ চেষ্টা জটিলতার তুলনায় কম। এ বিষয়ে আরও এফোর্ট দিতে হবে।
বগুড়া-৪ (কাহালু-নন্দীগ্রাম) আসনের উপনির্বাচনে বেসরকারিভাবে ১১২ কেন্দ্রের ফলাফলে ৯৫১ ভোটের ব্যবধানে হেরে গেছেন বহুল আলোচিত স্বতন্ত্র প্রার্থী আশরাফুল হোসেন আলম ওরফে হিরো আলম। একতারা প্রতীক নিয়ে তিনি পেয়েছেন ১৯ হাজার ৪৮৬ ভোট। এ আসনে জয় পেয়েছেন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জাসদ (ইনু) সমর্থিত প্রার্থী অ্যাডভোকেট রেজাউল করিম তানসেন। মশাল প্রতীক নিয়ে তিনি পেয়েছেন ২০ হাজার ৪৩৭ ভোট।
বুধবার (১ ফেব্রুয়ারি) সকাল থেকে বগুড়ার দুইটিসহ মোট ৬ আসনে উপনির্বাচনের ভোট গ্রহণ শুরু হয়। ২০২২ সালের ১০ ডিসেম্বর বিএনপির এমপিরা পদত্যাগের ঘোষণা দিলে এ আসনগুলো শূন্য হয়।
তখন, বগুড়া-৬ (সদর) এবং বগুড়া-৪ (কাহালু-নন্দীগ্রাম) আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার ঘোষণা দেন হিরো আলম। নির্বাচন কমিশন একদফা তার প্রার্থিতা বাতিল করলেও পরে আদালতে গিয়ে প্রার্থিতা ফিরে পান তিনি।
বগুড়া-৪ (কাহালু-নন্দীগ্রাম) ও বগুড়া-৬ (সদর) আসনের উপনির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. আশরাফুল হোসেন হিরো আলম বুধবার (১ ফেব্রুয়ারি) দুপুর পর্যন্ত ভোটকেন্দ্র পরিদর্শন করে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বলেন, ‘সদরের কেন্দ্র সব দখল হয়্যা গ্যাছে। ডিসি-এসপিক কয়্যাও কোনো কাম হচ্চে না। সদরের আশা সব শ্যাষ। কাহালু-নন্দীগামের অনেক কেন্দ্র ঘুরে ঘুরে দেকছি। ভোট খুব সুষ্ঠু হচ্চে। মাঠের অবস্থা ভালো। কাহালু-নন্দীগ্রামে নিশ্চিত এমপি হচ্চি।’
এর আগে, সকালে সদর উপজেলার এরুলিয়া উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট দিতে যান তিনি। ভোট দেওয়ার পর হিরো আলম বলেন, ‘বগুড়া-৬ আসনে আগে থেকেই গোলযোগের আশঙ্কা করেছিলাম, সেটাই সত্যি হয়েছে। নির্বাচনি এজেন্টদের কেন্দ্র থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে। তবে বগুড়া-৪ আসনে ভোট সুষ্ঠু হচ্ছে। এভাবে সুষ্ঠু ভোট হলে এই আসনে আমিই বিজয়ী হবো।’
এদিকে বগুড়া-৬ আসনের উপনির্বাচনে কয়েকটি কেন্দ্রে নৌকা প্রার্থীর এজেন্ট বাদে অন্য এজেন্টদের ভোটকক্ষ থেকে বের করে দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। আজ সকালে হিরো আলমসহ তিনজন প্রার্থী এ অভিযোগ করেন। আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা তাদের এজেন্টদের বের করে দিয়েছেন বলে সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করা হয়।
আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৭ লাখ ৫০ হাজার ১৯৪ কোটি টাকা খরচের হিসাব ধরে বাজেট প্রস্তাব প্রণয়নের কাজ শুরু করেছে সরকার। যা চলতি অর্থবছরের তুলনায় ৭২ হাজার ১৩০ কোটি টাকা বেশি। অভ্যন্তরীণ সম্পদ থেকে খরচের বেশিরভাগ অর্থ জোগাড়ের পরিকল্পনা করা হয়েছে। এ লক্ষ্যমাত্রা প্রায় ১৯ শতাংশ বাড়ানো হবে। আসছে জুনের প্রথমভাগে জাতীয় সংসদে আগামী অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাব উপস্থাপন করা হবে। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
আগামী বাজেট হবে জাতীয় নির্বাচনের আগে বর্তমান সরকারের চলতি মেয়াদের শেষ বাজেট। তাই এখানে নেওয়া কোনো পদক্ষেপে যেন আওয়ামী লীগ সরকার সমালোচনার মুখে না পড়ে এ জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়সহ সংশ্লিষ্টদের থাকছে বিশেষ নজর। এ ছাড়া রয়েছে অর্থনৈতিক সংকট। তাই সংকট ও নির্বাচন দুটোই মাথায় রাখতে হচ্ছে সরকারের নীতিনির্ধারকদের।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, আগামী অর্থবছরের বাজেট নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে এরই মধ্যে মন্ত্রণালয়ে মোটাদাগে একটি রূপরেখা পাঠানো হয়েছে। নতুন পরিকল্পনার পাশাপাশি গত তিন মেয়াদে সরকার কী কী উন্নয়ন করেছে আগামী বাজেট প্রস্তাবে তা মনে করিয়ে দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। গত ডিসেম্বরের শেষের দিকে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি এবং উচ্চপর্যায়ের সরকারি নীতিনির্ধারকদের উপস্থিতিতে অর্থ মন্ত্রণালয়ের ‘বাজেট মনিটরিং ও সম্পদ কমিটির বৈঠকে’ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে পাঠানো আগামী বাজেটের রূপরেখা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আর গত সপ্তাহে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে (এনবিআর) চিঠি পাঠিয়ে অভ্যন্তরীণ সম্পদ থেকে রাজস্ব আদায়ের কৌশল নির্ধারণে কাজ শুরু করতে বলা হয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, যে হিসাব ধরে অর্থ মন্ত্রণালয় বাজেট প্রস্তাব প্রস্তুতির কাজ শুরু করেছে তা কয়েক দফা খতিয়ে দেখা হবে। অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে চূড়ান্ত করে প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানো হবে। তিনি প্রয়োজনীয় সংশোধন, যোগ-বিয়োগ করে আবারও অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠাবেন। বাজেট প্রস্তাব চূড়ান্ত হওয়ার আগেও অনেক কিছু পরিবর্তন হয়ে থাকে।
ডলার সংকটে পণ্য আমদানির জন্য ঋণপত্র বা এলসি খুলতে পারছেন না সাধারণ ব্যবসায়ীরা। চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম থাকায় পণ্যের দাম বাড়ছে। কাঁচামাল সংকটে বিপাকে শিল্প খাত। ব্যাংক খাতে অস্থিরতা। নতুন চাকরির সুসংবাদ নেই বললেই চলে। দফায় দফায় জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি। খুব শিগগিরই এসব সংকট কেটে যাবে বলে মনে করছেন না অর্থনীতিবিদরা। অর্থ সংগ্রহ করতে গিয়ে ঋণদাতা সংস্থার কঠিন শর্তের বেড়াজালে আছে সরকার। এমন পরিস্থিতিতেই আগামী অর্থবছরের বাজেট তৈরির কাজ শুরু হয়েছে।
অর্থ মন্ত্রণালয় ও এনবিআর সূত্র জানিয়েছে, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে সৃষ্ট বৈশি^ক অস্থিরতা মোকাবিলায় সরকার কী কী পদক্ষেপ নেবে তা আগামী বাজেটে স্পষ্ট করা হবে। দেশের চলমান অর্থনৈতিক সংকট দূর করতে একগুচ্ছ পরিকল্পনার কথাও বলা হবে। তবে শত সংকটের মধ্যেও আগামী বাজেটে ব্যবসায়ীদের দাবি অনুযায়ী যতটা সুবিধা দেওয়া সম্ভব তা দিতে সরকারের ঊর্ধ্বতন পর্যায় থেকে বাজেট প্রস্তুত কমিটির কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বিশেষভাবে কাঁচামাল আমদানিতে রাজস্ব ছাড় দিতে হিসাব কষা হচ্ছে।
দেশের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ডলার সংকটে আমদানি রপ্তানি প্রায় বন্ধ। ব্যবসা-বাণিজ্যে সংকটকাল চলছে। এমন পরিস্থিতিতে আগামী বাজেটে আমাদের দাবি অনুযায়ী নগদ সহায়তা দিতে হবে। রাজস্ব ছাড় দিতে হবে। কর অবকাশ ও কর অব্যাহতি বাড়াতে দিতে হবে।’
ঋণদাতা সংস্থা আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) দেওয়া সংস্কারের শর্ত মানার অঙ্গীকার করে সরকার ঋণ পেয়েছে। শর্ত পালনে ব্যর্থ হলে ঋণের যেকোনো কিস্তি আটকে দিতে পারে প্রতিষ্ঠানটি। পর্যায়ক্রমে প্রতি অর্থবছরের বাজেটে এসব সংস্কার প্রস্তাব অন্তর্ভুক্ত করে বাস্তবায়ন করা হবে। আসছে বাজেটে শর্ত মানার চেষ্টা থাকবে। বিশেষভাবে অতীতের মতো ঢালাওভাবে কর অব্যাহতি দেওয়া হবে না। আর্থিক খাতের সংস্কারের কিছু ঘোষণা থাকবে। বিশেষভাবে ব্যাংক খাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় জোর দেওয়া হবে। আইএমএফের সুপারিশে এরই মধ্যে ভ্যাট আইন চূড়ান্ত হয়েছে। আয়কর আইন মন্ত্রিসভার বৈঠকে অনুমোদন হয়েছে। শুল্ক আইন মন্ত্রণালয়ে ভেটিংয়ে আছে। এ তিন আইন অনুযায়ী রাজস্ব আদায়ের কৌশল নির্ধারণ করা হবে। আসছে বাজেটে টেকসই অর্থনৈতিক সংস্কারের অংশ হিসেবে সরকারি আর্থিক ব্যবস্থাপনা শক্তিশালী করার কথা বলা হবে। জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় কিছু উদ্যোগের কথা শোনানো হবে।
পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ঋণদাতা সংস্থার শর্ত মানার কথা বলা হলেও সব আগামী বাজেটে একবারে অন্তর্ভুক্ত করা যাবে না। পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়ন করতে হবে। না হলে অর্থনীতির গতি কমে যাবে।’
আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটে এনবিআর-বহির্ভূত খাত এবং এনবিআর খাতের জন্য মোট আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হতে পারে ৪ লাখ ৮৬ হাজার কোটি টাকা। এনবিআরের রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা চলতি অর্থবছরের চেয়ে ১৯ শতাংশ বাড়িয়ে ধরা হতে পারে। এতে লক্ষ্যমাত্রা ৪ লাখ ৫০ হাজার কোটি টাকা হবে। এনবিআর এ লক্ষ্যমাত্রা কমানোর জোরালো আবেদন করেছে। কিন্তু তা আমলে আনেননি অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। নতুন অর্থবছরে মোট রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে প্রায় ৩৫ শতাংশ বা ১ লাখ ৫৭ হাজার ৫০০ কোটি টাকা ভ্যাট বা মূল্য সংযোজন কর (মূসক) হিসেবে, ৩৪ শতাংশ বা ১ লাখ ৫৩ হাজার কোটি টাকা আয়কর হিসেবে এবং ৩১ শতাংশ বা বাকি ১ লাখ ৩৯ হাজার ৫০০ কোটি টাকা শুল্ক হিসেবে সংগ্রহ করার কথা বলা হতে পারে বলে জানা গেছে।
এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল মজিদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রার কথা শুধু বললেই হবে না। কীভাবে অর্জিত হবে, সেটি নিয়ে সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা না থাকলে প্রতিবারের মতো ঘাটতি থাকবে। রাজস্ব ঘাটতি হলে অর্থনীতিতে আয় ব্যয়ের ভারসাম্য নষ্ট হয়। তাই এনবিআরের লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবসম্মত হওয়া উচিত।’
এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, আগামী অর্থবছরের জন্য নির্ধারিত এ লক্ষ্যমাত্রা পূরণে এনবিআর উৎসে করের আওতা বাড়ানোর পরিকল্পনা করেছে। সম্পদশালীদের ওপর নজর বাড়ানো হবে। শুধু বেশি সম্পদ থাকার কারণে অতিরিক্ত কর গুনতে হবে। সারচার্জ বহাল রাখা হবে। সুপারট্যাক্স গ্রুপকে উচ্চহারে গুনতে হবে কর। আগামী অর্থবছরেও অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগের সুবিধা থাকবে। অর্থ পাচারোধে আইনের শাসন কঠোর করা হবে। অর্থ পাচার আটকাতে প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ানো হবে। করপোরেট কর কমানোর দাবি থাকলেও তা মানা হবে না। অন্যদিকে নির্বাচনের আগের বাজেট হওয়ায় করমুক্ত আয় সীমা বাড়ানোর বিষয়টি বিবেচনা করতে খোদ অর্থমন্ত্রী বললেও রাজস্ব আদায় কমে যাবে এমন যুক্তি দেখিয়ে এনবিআর রাজি নয় বলে জানিয়ে দিয়েছে। কমানো হবে শিল্পের অধিকাংশ কাঁচামাল আমদানি শুল্ক। ডলারের ওপর চাপ কমাতে বেশি ব্যবহৃত পণ্য আমদানিতে রাজস্ব ছাড় দেওয়া হবে। বিলাসবহুল পণ্য আমদানি কমাতে সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা হবে। তৈরি পোশাক খাতের সব সুবিধা বহাল রাখা হবে। শিল্পের অন্যান্য খাতেও কতটা সুবিধা বাড়ানো যায় তা নিয়ে এনবিআর হিসাব করছে।
অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে দেওয়া বাজেট প্রস্তুতিবিষয়ক প্রতিবেদনে উল্লেখ আছে, আগামী অর্থবছরের বাজেটে উন্নয়ন প্রকল্পে ২ লাখ ৬৫ হাজার কোটি এবং ঘাটতি ২ লাখ ৬৪ হাজার ১৯৪ কোটি টাকা বরাদ্দ ধরা হতে পারে। আগামী অর্থবছরে জিডিপির ৬ শতাংশ ঘাটতি ধরে ২ লাখ ৬৪ হাজার ১৯৪ কোটি টাকা নির্ধারণ করা হতে পারে। মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি ৭ দশমিক ৫ শতাংশ ধরা হতে পারে বলে জানা যায়। ঋণদাতা সংস্থার কাছ থেকে ভর্তুকি কমানোর চাপ থাকলেও আগামীবার এ খাতে বেশি ব্যয় ধরা হতে পারে। এ খাতে ১ লাখ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হতে পারে। চলতি অর্থবছরে ভর্তুকি ব্যয় আছে ৮৬ হাজার কোটি টাকা।
উল্লেখ্য, গত সোমবার রাতে আইএমএফ বাংলাদেশকে ঋণ অনুমোদন করে। ঋণদাতা সংস্থাটির কাছ থেকে বাংলাদেশ ছয় কিস্তিতে তিন বছরে ৪৭০ কোটি ডলার পাচ্ছে। ঋণ প্রস্তাব অনুমোদনের দিন আইএমএফ ২০২৭ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের অর্থনীতির বিভিন্ন সূচক নিয়ে পূর্বাভাস দেয়। সংস্থাটি বলছে, ২০২১-২২ অর্থবছরে দেশের প্রবৃদ্ধি ছিল ৭ দশমিক ২ শতাংশ। চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি হতে পারে ৫ দশমিক ৫ শতাংশ। এরপর ২০২৩-২৪ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি বেড়ে হতে পারে ৬ দশমিক ৫ শতাংশ এবং ২০২৪-২৫ অর্থবছরে তা হতে পারে ৭ দশমিক ১ শতাংশ।
এতে রিজার্ভ সম্পর্কে বলা হয়, চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছর শেষে দেশের বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভ কমে দাঁড়াবে ৩ হাজার কোটি ডলার। তবে ২০২৩-২৪ অর্থবছর থেকে তা ধারাবাহিকভাবে বাড়বে এবং ২০২৬-২৭ অর্থবছর শেষে প্রথমবারের মতো রিজার্ভ ৫ হাজার কোটি ডলার ছাড়িয়ে যেতে পারে।