
৩২ দলের লড়াই এসে ঠেকেছে চারে। ৬৪ ম্যাচের বিশ্বকাপের বাকি আর মাত্র দুই ম্যাচ। যে চার দল টিকে আছে, তাদের খেলা হয়ে গেছে ৫টা করে ম্যাচ। আসর সেরার লড়াইয়ের মাঠও তাই হয়ে এসেছে ছোট, এখন বাকি চার ম্যাচে লড়াইটা মূলত চারজনের ভেতরই সীমাবদ্ধ।
ইউরোপের দুই, দক্ষিণ আমেরিকার এক ও প্রথমবার আফ্রিকার এক দল নিয়ে চার দলের লড়াই থেকে টিকবে দুই। ফাইনালে সোনালি ট্রফি উঠবে কোনো এক দলের হাতে। বিশ্বকাপে শেষের এই সময়টা তাই সবচেয়ে আগ্রহের, সবচেয়ে উপভোগেরও। সোনালি ট্রফির জন্য মাস জুড়ে হওয়া লড়াইয়ের যতি পড়বে এই অর্ধে। দলগত প্রাপ্তির সঙ্গে থাকবে ব্যক্তিগত সেরার স্বীকৃতি। সর্বোচ্চ গোলদাতার গোল্ডেন শু, সেরা খেলোয়াড়ের গোল্ডেন বল ও সেরা গোলরক্ষকের গোল্ডেন গ্লাভসÑ যা একসময় পরিচিত ছিল লেভ ইয়াশিন পুরস্কার নামেও।
বলা হচ্ছে চারের লড়াই অথচ সামনে শুধু দুই। গোল ও টুর্নামেন্ট সেরা তারকার তালিকায় শুধু আর্জেন্টিনা ও ফ্রান্সের ফুটবলার। অবশ্যই লিওনেল মেসি আর ফরাসি দুজন কিলিয়ান এমবাপ্পে ও অলিভিয়ের জিরু। মেসি একসঙ্গে দুই পুরস্কারের পিছে ছুটছেন। আসরে ৪ গোল তার। সেমিফাইনাল ও ফাইনালে আরও পেলে এগিয়ে যাবেন লক্ষ্যের দিকে। ওদিকে এবারের সর্বোচ্চ ৫ গোল নিয়ে গোল্ডেন শু’র লড়াইয়ে একটু এগিয়ে আছেন এমবাপ্পে। মাত্র ২৩ বছরেই বিশ্বকাপে ৯ গোল করে ফেলা এই তরুণ মেসির মতোই আরও দুটি ম্যাচে খেলার সুযোগ পাচ্ছেন। একই সুযোগ অলিভিয়ের জিরুরও। গত বিশ্বকাপে একটিও গোল করতে না পারা জিরু এবার ৪ গোলে গোল্ডেন বুটের লড়াইয়ে। ফ্রান্সের সর্বোচ্চ ৫৩ গোলের মালিকও এই পুরস্কারের দাবিদার। গোল্ডেন গ্লাভসের লড়াইয়েও তিনজন। তবে এবার ক্রোয়েশিয়া ও মরক্কোও আছে। ম্যাচ ও পেনাল্টি শুটে দুর্ভেদ্য দেয়াল হয়ে আর্জেন্টিনার এমিলিয়ানো মার্তিনেজ, ক্রোয়েশিয়ার ডমিনিক লিভাকোভিচ ও মরক্কোর ইয়াসিন বুনো তিনজনই সেরা গোলরক্ষক হওয়ার দাবি রাখেন। ফাইনাল শেষে যে তার পোস্টকে অক্ষত রাখবেন তার হাতেই উঠবে সুদৃশ্য ওই গ্লাভস।
ক্রোয়েশিয়া ও মরক্কো দলগত চেষ্টায় উঠে এসেছে এই পর্যায়ে। কোনো একের ঝলক তাদের কাছে খুব একটা অর্থ রাখে না। তাই গোল্ডেন বল ও বুটে এই দুই দলের ফুটবলারের নাম নেই। এ নিয়ে আক্ষেপও নেই ক্রোয়েশিয়া ও মরক্কোর। খেলাটা শেষ পর্যন্ত তো ওই দলগত ট্রফির জন্যই। ট্রফি জয়ের আনন্দে বাড়তি মাত্রা দিতে পারে ব্যক্তিগত সাফল্য। এই সাফল্যে ২০১৪ বিশ্বকাপের পর টুর্নামেন্ট সেরা খেলোয়াড়ের দৌড়ে সবচেয়ে এগিয়ে লিওনেল মেসি। ৩৫ বছর বয়স তাকে যে সেই ২৫-এ নিয়ে যাবে কে জানত। হীরের মতো ঝলক দিয়েই ৭ বারের বর্ষসেরা জ্বলে উঠেছেন ফুল পাওয়ারে। গোল করছেন-করাচ্ছেনও। শেষ বিশ্বকাপে সোনালি ট্রফির নেশায় মাতিয়ে চলেছেন আসর।
মেসির শ্রেষ্ঠত্ব বা সেরার প্রশ্নে সন্দেহ নেই কোনো। বিশ্বফুটবলে এখনকার সেরা তিনের দুজন বিদায় নিয়েছেন। আপন মহীমায় টিকে আছেন আর্জেন্টাইন কিংবদন্তি। সৌদি আরব, মেক্সিকো, অস্ট্রেলিয়া ও নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে ৪ গোলের পথে ছুঁয়েছেন কিংবদন্তি দিয়েগো ম্যারাডোনার বিশ্বকাপে ৮ গোলের রেকর্ড। বিশ্বকাপে তার মোট গোল হয়েছে ১০টি। আর অ্যাসিস্টেও করেছেন রেকর্ড। এই বিশ্বকাপে দুটি অ্যাসিস্ট করেছেন। নকআউটে একটি অ্যাসিস্ট গ্রুপ পর্বের পর মোট ৫টি অ্যাসিস্ট করে ছাড়িয়ে গেছেন ব্রাজিল কিংবদন্তি পেলেকে। বিশ্বকাপে গোল্ডেন বল হাতে উঠেছিল মেসির। যা তিনি নিজেই হয়তো চাননি। সেবার এই বিশ্বকাপের মতো উজ্জ্বল ছিলেন না। কিন্তু এই আসরের পারফরম্যান্স মেসিকে একটি ট্রফি তো এনে দেবেই। মেসি অবশ্যই সোনালি ট্রফিটাই চাইবেন। শীর্ষ পুরস্কারটি তার হাতে উঠলে গোল্ডেন বলও উঠবে। হতে পারে গোল্ডেন বুটও পেয়ে যাচ্ছেন। তখন ১৯৬২’র মানে গারিঞ্চা, ১৯৭৮’র মারিও কেম্পেস ও ১৯৮২’র পাওলো রসির পর এক আসরে বুট ও বলজয়ী চতুর্থ কিংবদন্তি হয়ে যাবেন তিনি।
গত বিশ্বকাপে চার গোল করেছিলেন এমবাপ্পে। এর মধ্যে পেলের পর কিশোর বয়সে বিশ্বকাপ ফাইনালে গোলের রেকর্ডও ছিল। এবার সেই রেকর্ডকে যেন ছাড়িয়ে যেতে উঠে পড়ে লেগেছেন এই তরুণ। বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে গোল করেছেন। পরের ম্যাচে ডেনমার্কের জালে দুটি। নকআউটে পোল্যান্ডের জালে আবারও দুই গোল। এই ৫-এ মোট ৩১ গোল নিয়ে ছুঁয়েছেন ফরাসি কিংবদন্তি জিনেদিন জিদানকে। কোয়ার্টারে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ছায়া হয়ে ছিলেন নিজের। কিন্তু সেমিফাইনালে এমন বিবর্ণ হতে চাইবেন না নিশ্চয়ই।
দিদিয়ের দেশমের জায়গায় ভিন্ন কেউ হলে জিরুকে এই বিশ্বকাপের দলেই রাখত না। গতবার শিরোপা জয়ের পথে একটিও স্কোর নেই এই নাম্বার নাইনের। অথচ দেশম বিশ্বাস রেখেছেন। বলেছিলেন তার দলে ফলস নাইন বলতে জিরু-ই আছে এবং সেই থাকবে। কোচের আস্থার প্রতিদান দারুণভাবে দিলেন জিরু। বিশ্বকাপের শুরুর ম্যাচেই অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে জোড়া গোল করেছেন। নকআউটে টানা দুই ম্যাচে পোস্ট খুঁজে পেয়েছেন। গোল্ডেন বুটের দৌড়ে তাই জিরুও ভালোভাবে আছেন।
ক্রোয়েশিয়া যদি শেষ পর্যন্ত দারুণ কিছু করে ফেলে, তাহলে গোল্ডেন বলটা উঠতে পারে লুকা মদ্রিচের হাতেও। মাঝমাঠের জেনারেল মদ্রিচ এবারও প্রায় একক কৃতিত্বেই বুড়িয়ে যাওয়া ক্রোয়েশিয়াকে নিয়ে এসেছেন সেমিফাইনালে। ব্রাজিলকেও হারিয়ে দেওয়া ক্রোয়েশিয়া যদি লাতিনের শেষ প্রতিনিধিকেও বিদায় করে দেয়, তাহলে নিঃসন্দেহে মদ্রিচই পাবেন সোনার বলটা।
২০০২ বিশ্বকাপে গোল্ডেন বলজয়ী ইতিহাসে একমাত্র গোলরক্ষক ছিলেন জার্মানির অলিভার কান। মার্তিনেজ, লিভাকোভিচ ও বুনো দুর্দান্ত খেললেও বল জয়ের সুযোগটা তাদের নেই। মেসি-এমবাপ্পেরা যে গোল-অ্যাসিস্টে তাদের চেয়ে এগিয়ে। তবে গ্লাভসের লড়াইটাও তো জমজমাট। সেমিফাইনালে মার্তিনেজ ও লিভাকোভিচের মুখোমুখি হওয়া এ লড়াই জমিয়ে তুলেছে আরও। এ দুজনের একজনকে গ্লাভসের মায়া ছাড়তে হবে পরের ম্যাচেই। তবে অন্যদিক থেকে বুনো হয়তো আশা টিকিয়ে রাখতে পারেন।
তবে বল, বুট ও গ্লাভসের এই সমীকরণে পরিসংখ্যান দিয়ে অঙ্কটাই শুধু মেলানো যায়। আসল লড়াই তো হবে মাঠে। ফাইনালের ফলের আগেই হয়তো স্পষ্ট হয়ে যাবে ব্যক্তিগত অর্জনের ট্রফি কোনটিতে কার নাম উঠছে।
খেলার সময় তখন গড়িয়েছিল ৮২ মিনিটে। ডি বক্সের ভেতরে মাউন্টকে তখন ফাউল করলেন থিও হার্নান্দেজ। ভিএআর চেক করে পেনাল্টি দিলেন রেফারি। কিন্তু ইংল্যান্ড অধিনায়ক হ্যারি কেইন নার্ভ ধরে রাখতে পারেননি। শটটি মারলেন গোলপোস্টের ওপর দিয়ে। সুযোগ ছিল সমতায় ফেরার, কিন্তু ইতিহাসে আক্ষেপ হয়ে থাকার মতো পেনাল্টি মিসে যে ম্যাচটাই ফসকে গেছে। তাতে কোয়ার্টার ফাইনাল থেকেই বিদায় নিতে হয় ইংলিশদের।
কাতার বিশ্বকাপে শিরোপায় চোখ ছিল ইংল্যান্ডের। সেই আত্মবিশ্বাস দেখা গিয়েছিল আগেরদিন ম্যাচ-পূর্ববর্তী সংবাদ সম্মেলনেও। কিন্তু পেনাল্টি মিসে যে কোয়ার্টার ফাইনালেই থেমে গেছে তাদের বিশ্বজয়ের স্বপ্ন। যেখানে আক্ষেপ হয়ে থাকবে ইংলিশ অধিনায়কের নাম।
কেইনের এই পেনাল্টি মিসই বিশ্বকাপে প্রথম নয়। এবারের বিশ্বকাপে তো এমন সুযোগ হাতছাড়া করার অসংখ্য নজির তৈরি হয়েছে ইতিমধ্যেই। টুর্নামেন্টের নকআউট পর্বে এমন মিস মনে করিয়ে দেয় ১৯৯৪ বিশ্বকাপের ফাইনালে পেনাল্টি মিস করা ইতালির রবার্তো বাজ্জিওকে।
সেবার ফাইনালে ব্রাজিলের প্রতিপক্ষ ছিল ইতালি। নির্ধারিত সময়ে গোলশূন্য সমতায় শেষ হলে খেলা গড়ায় টাইব্রেকারে। প্রথম চার শটে ৩ গোলে এগিয়েছিল ব্রাজিল। আর তিনটি শটের মধ্যে ২ গোল করেছিল ইতালি। চতুর্থ শট নিতে যান ইতালির রবার্তো বাজ্জিও। কিন্তু তিনিও যেন কেইনের মতোই নার্ভ হারিয়ে ফেলেছিলেন। শটটি ওপর দিয়ে মারলেন, ইতিহাসে আক্ষেপ হয়ে থাকার মতো এই পেনাল্টি মিসে শিরোপা নিশ্চিত হয় সেলেসাওদের। ‘দ্য ডিভাইন পনিটেইল’ এর হতাশার ছবিটাও তাতে স্থায়ী হয়ে যায় ফুটবল ভক্তদের মনে।
পেনাল্টি অবশ্য ইংলিশদের পুরনো শত্রু। বিশ্বকাপে তিনবার ইংলিশরা বাদ পড়েছে টাইব্রেকে হেরে। ১৯৯০ বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে পশ্চিম জার্মানির কাছে টাইব্রেকে হেরেছিল ইংল্যান্ড। ১৯৯৮ বিশ্বকাপের শেষ ষোলোতে টাইব্রেকে হারে ইংলিশরা। সেবার প্রতিপক্ষ ছিল আর্জেন্টিনা। ২০০৬ বিশ্বকাপে কোয়ার্টারে ইংল্যান্ড পর্তুগালের কাছে হারে টাইব্রেকারে। তবে সবশেষ ২০১৮ বিশ্বকাপে শেষ ষোলোতে কলম্বিয়াকে টাইব্রেকে হারিয়েছিল ইংল্যান্ড। রাশিয়াতে চতুর্থ হয়েছিল হ্যারি কেইন।
বাজ্জিওর মতোই হ্যারি কেইন ওপর দিয়ে শট মেরে গোলবঞ্চিত হন। একইভাবে ১৯৯৬ সালের ইউরোর সেমিফাইনালে পেনাল্টি মিস করেছিলেন ইংলিশদের বর্তমান কোচ গ্যারেথ সাউদগেট। আবার তার অধীনেই ২০২০ ইউরোর ফাইনালে মার্কাস রাশফোর্ড, জেডন সানচো ও বুকায়ো সাকা টাইব্রেকারে পেনালটি শট মিস করেছিলেন। আর সবশেষটা শনিবার রাতে ফ্রান্সের বিপক্ষে করলেন কেইন।
কেইনের নার্ভ হারানোর অন্যতম কারণ তার টটেনহামের সতীর্থ বন্ধু হুগো লরি। এ দুজনে ২০১৩ সাল থেকে এক ক্লাবে খেলছেন। একসঙ্গে ৩২৭ ম্যাচ খেলেছেন, যা হয়তো জাতীয় দলের সতীর্থদের সঙ্গেও খেলা সম্ভব হয় না। কেইন বল পায়ে কীভাবে দৌড়ায়, তার শট নেওয়ার অ্যাঙ্গেল কেমন হতে পারে, তা লরিসের চেয়ে বেশি অন্য কোনো গোলকিপারের জানার কথা না। সেটা মনে করেই হয়তো কেইন বোকা বানাতে চেয়েছিলেন বন্ধুকে। প্রথম প্রচেষ্টায় কেইন সফল হলেও একই ম্যাচে দ্বিতীয়বার প্রিয় বন্ধুর বিপক্ষে পেনাল্টি নিতে গিয়ে আর পারেননি।
ম্যাচের দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে আরও একটি পেনালটি পেয়েছিল ইংল্যান্ড। সেখানে লরিসকে পরাস্ত করে গোলের দেখা পেয়েছিলেন কেইনই। কিন্তু শেষটা আর পারেননি। তাতে ২-১ গোলে পরাজিত হয় ফ্রান্সের কাছে। পেনাল্টি থেকে গোল আদায় করে নিতে পারলে ম্যাচের ভাগ্যটাও হয়তো পালটে যেত। আর সেটাই অন্তজর্¦ালায় পোড়াচ্ছে হ্যারি কেইনকে।
ম্যাচ শেষে সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘অবশ্যই, ব্যথাটা তীব্র। সারা জীবন এই গ্লানি নিয়ে আমাকে বাঁচতে হবে। আমি প্রস্তুতি সব খেলার আগেই সমানভাবে নেই। আমি আত্মবিশ্বাসী ছিলাম, কিন্তু যেভাবে শটটা নিতে চেয়েছিলাম সেটা হয়নি। তবে এটা নিয়ে পড়ে থাকলে হবে না। দল হিসেবে আমরা ভালো খেলেছি, অবশ্যই প্রত্যেক খেলোয়াড়কে নিয়ে গর্বিত হতে হবে। এই দলটি ভবিষ্যতে ভালো কিছু করার সামর্থ্য রাখে।’
পেনাল্টি থেকে গোল করে সমতা ফিরিয়েছিলেন কেইন, তিনিই আবার পেনাল্টি মিস করে দ্বিতীয়বারের মতো সমতা ফেরানোর সুযোগ নষ্ট করলেন, বিদায় নিল ইংল্যান্ড। বাজ্জিও’র মতো কেইনকেও হয়তো বাকি জীবনটা এই আক্ষেপ বয়ে বেড়াতে হবে, বিশ্বকাপ শেষে যখন ক্লাবের হয়ে খেলায় ফিরবেন প্রতিবার লরির সঙ্গে দেখা হলেই যে কেইনের মনে পড়বে বিশ্বকাপে পেনাল্টি মিসের কথা!
পর্তুগাল ও মরক্কো ম্যাচে শেষ বাঁশি বাজার সঙ্গে সঙ্গে অশ্রুসিক্ত চোখে টানেলের দিকে গেছেন ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো। মাঠের একপ্রান্তে দেখা গেছে পর্তুগিজ খেলোয়াড়দের হতাশা; আরেকদিকে প্রথমবার সেমিফাইনালে ওঠার আনন্দে মাতোয়ারা মরক্কো। রোনালদোর সঙ্গে ৩৯ বছরের পেপেও কাতার বিশ্বকাপ রাঙাতে চেয়েছিলেন। সেটি হয়নি। অবশ্য ম্যাচের পর রেফারিকে নিয়ে ক্ষোভ ঝেড়েছেন পেপে। আর্জেন্টাইন রেফারিকে এই ম্যাচের দায়িত্ব দেওয়া মানতে পারছেন না পেপে।
পেপে বলেন, ‘আমরা একটি গোল খেয়েছি, যা প্রত্যাশিত ছিল না। তবে আগের রাতে যা হয়েছে এরপর এই ম্যাচে আর্জেন্টাইন রেফারিকে দায়িত্ব দেওয়া গ্রহণযোগ্য নয়। আমি যা দেখলাম তার প্রেক্ষিতে বলতে পারি, বিশ্বকাপটা তারা এখন চাইলে আর্জেন্টিনাকে দিয়ে দিতে পারে। আমি এটা এখন বলতেই পারি।’ নির্ধারিত সময়ের পর মাত্র ৮ মিনিট যোগ করা নিয়েও ক্ষোভ জানান পেপে। তিনি আরও বলেন, ‘দ্বিতীয়ার্ধে কিছু দেওয়া হলো না। মাত্র ৮ মিনিট অতিরিক্ত সময়। দ্বিতীয়ার্ধে শুধু আমরাই খেলার চেষ্টা করেছি। আমরা হতাশ। আমাদের জেতার মতো সামর্থ্য ছিল, তবে আমরা পারিনি।’
ব্রুনো ফার্নান্দেজও রেফারি নিয়ে সমালোচনা করেন। ‘এটি অদ্ভুত যে আমাদের ম্যাচে এমন এক রেফারি ছিলেন যার দেশ এখনো বিশ্বকাপে আছে। আমি কোনো পর্তুগিজ রেফারিকে দেখলাম না। তারা যদি চ্যাম্পিয়নস লিগের জন্য ভালো রেফারি হয়ে থাকে এখানের জন্যও তারা যোগ্য।’ ম্যাচে থাকা রেফারিরা বিশ্বকাপ পরিচালনার জন্য যোগ্য নন বলেও মনে করেন ব্রুনো। ‘তারা চ্যাম্পিয়ন্স লিগের নন, তারা এই ধরনের খেলায় অভ্যস্ত নন। এমন ম্যাচের জন্য তাদের গতি নেই। (তারা) পরিষ্কারভাবে আমাদের বিপক্ষে মাঠে নেমেছিল। প্রথমার্ধে আমাকে স্পষ্ট ফাউল করা হয়েছে, যেটা ছিল পেনাল্টি।’
এর আগে নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে রেফারিং নিয়ে সমালোচনা করেছিলেন আর্জেন্টাইন খেলোয়াড় এবং সমর্থকরা। সেই ম্যাচে ১৮টি কার্ড দেখান স্প্যানিশ রেফারি লাহোস। মেসি ও এমিলিয়ানো মার্তিনেজ প্রকাশ্যে রেফারির সমালোচনা করেছিলেন।
আগস্টের শুরুতে ভাহিদ হালিদহোদিচ যখন বরখাস্ত হলেন, এর পর থেকেই উঠে যায় প্রশ্ন। তিন মাসেরও কম সময় পর কাতার বিশ্বকাপ। তার আগে বসনিয়ান কোচের স্থলাভিষিক্ত কে হবেন? মরক্কোকে কে দেখাবেন দিশা? সংক্ষিপ্ত তালিকায় জাদরেল বেশ ক’জন ভিনদেশি কোচের সঙ্গে ছিল তার নাম। ফুটবল বিশেষজ্ঞরা ভিনদেশিতেই আস্থা রাখার পরামর্শ দিয়েছিলেন মরোক্কান ফুটবল সংস্থাকে। তবে সে পথে না হেঁটে এমএফএ দায়িত্ব দিল ওয়ালিদ রেগরাগুইকে। মরক্কোর সাবেক ফুটবলারকে গুরুদায়িত্ব দেওয়াটা পছন্দ হয়নি ফুটবল ক্রিটিকসদের। অনেকেই হেয় করেছেন ৪৬ বছর বয়সী কোচকে। এমনকি একজন তো তাকে ‘অ্যাভোকাডো হেড’ নাম দিয়ে বসেছিলেন। সমালোচকদের কেউই ভাবেননি এই অ্যাভোকাডো হেডের ছোঁয়াতেই আমূল বদলে যাবে মরক্কো। ইতিহাস গড়ে তারা নাম লেখাবে বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে!
প্রথম আফ্রিকান দল হিসেবে সেমিফাইনালে নাম লিখিয়ে মরক্কো গড়েছে ইতিহাস। একমাত্র অপরাজিত দল হিসেবে তারা পা রেখেছে শেষ চারে। ১৪ ডিসেম্বর তাদের সামনে বর্তমান বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ফ্রান্স। সেই ম্যাচে কী হতে পারে, তা সময় বল দেবে। কাতার বিশ্বকাপে শুরু থেকে আজ পর্যন্ত মরক্কো যেসব কীর্তি গড়ে চলেছে, তা তো সেই অ্যাভোকাডো হেডের ক্যারিশমায়। দলটিতে মেসি, রোনালদো, নেইমার, এমবাপ্পের মতো মহাতারকা নেই। এমনকি আফ্রিকার বড় বিজ্ঞাপন মোহাম্মদ সালাহ, সাদিও মানের মতোও তারকা নেই। অথচ তারা একের পর এক চমক সৃষ্টি করে চলেছে। কীভাবে ভোজবাজির মতো বদলে গেল মরক্কো? কোন জাদুবলে তারা সেয়ানে সেয়ানে টেক্কা দিচ্ছে বিশ্ব ফুটবল শাসন করাদের সঙ্গে? সেই উত্তরটা খুঁজতে বেশ ক’জন মরক্কো সমর্থকের সঙ্গে কথা হলো। তাদের প্রায় প্রত্যেকের এক জবাব, এই বদলের নায়ক ওয়ালিদ রেগরাগুই।
আটলান্টিক মহাসাগরের তীর ঘেঁষে গড়ে ওঠা মরক্কোকে আর দশটি আফ্রিকান দেশের সঙ্গে ঠিক মেলানো যাবে না। একটা সময় মরক্কো ছিল ফরাসি কলোনি। তবে আরবের প্রভাব হাজার বছর ধরেই ব্যাপক। ফলে এক মিশ্র সংস্কৃতির মানুষের বাস সেখানে। তাদের ভাষাও আরবি। মুসলিম রাষ্ট্র হলেও মধ্যপ্রাচ্যের মতো তারা ততটা রক্ষণশীল নয়। বরং কৃষি ও পর্যটন খাতকে অধিক প্রাধান্য দিয়ে অর্থনীতিকে শক্তিশালী করেছে। এ সুবাদেই অনেক ভিনদেশি ঘাঁটি গেড়েছে। ঐতিহ্য ও আধুনিকতার মিশেলে গড়ে ওঠা দেশটির মানুষ অত্যন্ত পরিবারমুখী। মরোক্কানরা সেই মিশ্র সংস্কৃতিরই বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়ে চলছেন দোহার স্টেডিয়াম, মেট্রো স্টেশন থেকে শুরু করে অলিতে-গলিতে। আরব ও আফ্রিকার সমান প্রভাব থাকায় সমর্থনটাই পাচ্ছে তারা। একে তো মুসলিম রাষ্ট্র বলে মধ্যপ্রাচ্যের মানুষ গলা ফাটাচ্ছে তাদের হয়ে। আবার আফ্রিকার নানা প্রান্তের মানুষও গর্বিত মরক্কোর কীর্তিতে। আর এই সীমাহীন আনন্দের উপলক্ষটা এনে দিয়েছেন রেগরাগুই মাত্র আড়াই মাস দলটির সঙ্গে কাজ করে।
এফ গ্রুপে মরক্কোর স্বপ্ন যাত্রার শুরুটা হয় গতবারের রানার্স-আপ ক্রোয়েশিয়াকে রুখে দিয়ে। পরের ম্যাচে বেলজিয়ামকে ২-০ গোলে হারিয়ে আরও বড় অঘটনের জন্ম দেয় তারা। গ্রুপের শেষ ম্যাচে কানাডাকে ২-১ এ হারিয়ে ১৯৮৬ সালের পর প্রথমবারের মতো গ্রুপের গেড়ো খুলতে পারে মরক্কো। সেটাও আবার গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হিসেবে। চমকের এখানেই শেষ নয় দ্বিতীয়পর্বে তারা টাইব্রেকারে ২০১০ বিশ্বকাপজয়ী স্পেনকে আর কোয়ার্টার ফাইনালে ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর স্বপ্ন ভেঙে দিয়ে পর্তুগালকে হারিয়ে সেমিফাইনাল নিশ্চিত করে। এবার তাদের ফ্রান্সকে চমকে দেওয়ার পালা।
যে বিশ্বাসে তারা স্থানীয় একজন কোচকে দলের দায়িত্ব দিয়েছিল, সেই একই বিশ্বাসে ভর করে সমর্থকরা মনে করেন এই দলের আরও অনেক কিছু অর্জনের সামর্থ্য আছে। ৩০ বছরের আহমেদ যেমন বললেন, ‘আসলে বিশ্বাসটাই সবচেয়ে বড় ব্যাপার। ওয়ালিদ রেগরাগুই সেই বিশ্বাসটাই বুকে ধারণ করে দলটাকে একেবারে বদলে দিয়েছেন। আমরা ১৯৭৬ সালে একবারই আফ্রিকা কাপ অব নেশন্স জিতেছিলাম। সেই দলেরই এক সদস্য কোচ হয়ে ২০০৪ সালে মরক্কোকে নিয়ে গিয়েছিলেন ফাইনালে। তবে তিউনিসিয়ার কাছে সেবার হেরে গিয়েছিলাম। সেই দলের সদস্য ছিলেন ওয়ালিদ। আপনি কাঁড়ি কাঁড়ি ডলার খরচ করে হাই প্রোফাইল বিদেশি কোচ নিয়োগ দিতে পারতেন। তবে তার সবকিছু বুঝি নিতেই অনেক সময় লেগে যেত। ওয়ালিদের সেই সমস্যাটা হয়নি। মরক্কোর ফুটবলের নারীনক্ষত্র তার জানা। খেলোয়াড়দের মস্তিষ্ক পড়ে ফেলার অসামান্য শক্তি আছে তার। মাত্র আড়াই মাসে তিনি দল নিয়ে অনেক কাজ করেছেন। তাতেই দলটা বদলে গেছে।’ পাস থেকে রাসুল খালিদ যোগ করলেন, ‘আমরা যে শীর্ষ পর্যায়েও লড়াই করতে জানি তা প্রথম বোঝা গেছে চার বছর আগে রাশিয়া বিশ্বকাপে। সেবার আমরা স্পেন আর পর্তুগালের সঙ্গে একই গ্রুপে ছিলাম। ইউরোপের দুই শক্তিশালী দলের সঙ্গে অনেক ভালো খেলেও শেষ পর্যন্ত হেরে যাই। সেবারের বুক চিতিয়ে লড়াইটাই আমাদের এবার অনেক উজ্জীবিত করেছে। আর আমাদের দলে বড় কোনো তারকা নেই। এ দলের সবাই রাজা। তাই দলটা অনেক বেশি ঐক্যবদ্ধ।’ এই ঐক্যের সংগীতটা বেঁধে দিয়েছেন ওয়ালিদ, ঠিক করে দিয়েছেন সুর-তাল-লয়। সেটাই তটস্থ করে হাকিম জিয়েচ, ইয়াসিন বোনো, এন-নেসরিরা গেয়ে চলেছেন বিজয় সংগীত। তাতেই সমালোচকদের মুখে চুন-কালিটা লেপে দিতে পারছেন মরক্কো কোচ। অ্যাভোকাডো ফলের ভেতরে একটা ছোট্ট ফুটবল ঢুকিয়ে, তা নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় পোজও দিয়েছেন, ‘এই নামটা আমার বেজায় পছন্দ। তবে এই অ্যাভোকাডোর ভেতরে বীজ নেই, আছে শুধুই ফুটবল।’ ওয়ালিদের চুলহীন মাথায় এখন কাজ করছে জন্মস্থানকে হারানোর ভাবনা। ফ্রান্সে জন্ম নেওয়া, বেড়ে ওঠা, ফুটবল ক্যারিয়ারের বড় একটা সময় কাটানোর অভিজ্ঞতা থেকেই তিনি এবার কষছেন এমবাপ্পেকে থামানোর ছক। মোহাম্মদদের মতো তরুণদের বিশ্বাস এই ওয়ালিদই পারবেন, মরক্কোকে স্বপ্নের ফাইনালে নিয়ে যেতে।
প্রায় একমাস ধরে চলা বিশ্বকাপ ফুটবল উৎসব শেষ হতে চলল। গত আসরের দুই ফাইনালিস্ট ফ্রান্স এবং ক্রোয়েশিয়া এখনো বিশ্বকাপে টিকে আছে। তাদের সঙ্গে ফেভারিট আর্জেন্টিনা আর আফ্রিকার ডার্ক হর্স মরক্কো আছে শেষ চারে। প্রথমবারের মতো কোনো আফ্রিকান দল হিসেবে বিশ্বকাপের শেষ চারে এসে ইতিহাস গড়েছে মরক্কো।
এই বিশ্বকাপে আমরা অনেক চমক দেখেছি। জার্মানি, বেলজিয়াম, ডেনমার্ক, উরুগুয়ের মতো দল বিশ্বকাপের প্রথম রাউন্ডেই ছিটকে গেছে। একে একে বিদায় নিয়েছে স্পেন, পর্তুগাল এবং তাদের পথ ধরে ব্রাজিলও। বিশ্বকাপ থেকে ব্রাজিলের ছিটকে যাওয়া বিশ্বজুড়ে তাদের অনেক সমর্থকের হৃদয় ভেঙে দিয়েছে। এখন বিশ্বকাপটা দক্ষিণ আমেরিকায় নিয়ে যাওয়ার চ্যালেঞ্জটা আর্জেন্টিনার, ফ্রান্স আর ক্রোয়েশিয়া চাইবে কাপটা ইউরোপেই রেখে দিতে আর মরক্কো চাইবে গোটা বিশ্বকেই তাক লাগিয়ে দিতে। ক্রোয়েশিয়া বিশ্বকাপে প্রথম খেলে ১৯৯৮ সালে এবং এরমধ্যেই তারা দুইবার বিশ্বকাপের শেষ চারে পৌঁছে গেছে। আগের বিশ্বকাপে তারা রানার্স আপ, এইবার তারা ফেভারিট ব্রাজিলকে বিদায় করে দিয়ে শেষ চারে জায়গা করে নিয়েছে। কোয়ার্টার ফাইনালে আমরা দেখেছি ১২০ মিনিটের বাঁচামরার লড়াই। ওদের পরের প্রতিপক্ষ আর্জেন্টিনা, যারা আসরের অন্যতম শক্তিশালী দল নেদারল্যান্ডসকে হারিয়ে এসেছে সেমিফাইনালে।
আর্জেন্টিনাও পৌঁছে গেছে শেষ চারে, আকাশি-নীলরা মেসির জন্য কাপটা জিততে চায়। এটাই মেসির জীবনের শেষ বিশ্বকাপ। তারা যদি শিরোপা জিততে পারে, তাহলে তারা হবে তিনটি বা তারও বেশি বিশ্বকাপ জেতা চতুর্থ দল।
আসরের শুরুর দিকে আর্জেন্টিনা অনেক ভুগেছে। তবে সেসব ভুলিয়ে দিয়ে মেসির নেতৃত্বে একদল তরুণ প্রতিভাবান ফুটবলারকে নিয়ে দারুণ খেলে পৌঁছে গেছে সেমিফাইনালে। আর্জেন্টিনার তরুণ কোচ লিওনেল স্কালোনি অভিজ্ঞ লুই ফন হালের বিপক্ষে একটা ট্যাকটিকাল লড়াই জিতেছে। তারা পেনাল্টি শুট আউটে আরও শক্তিশালী হয়েই মাঠে নেমেছিল আর নেদারল্যান্ডসকে হারিয়ে সেরা চারে জায়গা করে নিয়েছে। এবার মেসির জন্য কাপ জেতার লক্ষ্য থেকে আর্জেন্টিনা মাত্র দুই ম্যাচ দূরে।
একজন আর্জেন্টাইন হিসেবে আমি চাইব লিওনেল মেসির হাতেই বিশ্বকাপটা উঠুক। সেটাই হবে দুই বছর আগে আমাদের ছেড়ে চলে যাওয়া ম্যারাডোনার প্রতি সবচেয়ে বড় শ্রদ্ধাঞ্জলি।
পর্তুগাল-মরক্কো ম্যাচ নিয়ে আমার কলামে লিখেছিলাম, ‘আরেকটা মরক্কো চমক হতেই পারে।’ হ্যাঁ, সেটাই হলো। তবে এবার আর চমক বলতে চাই না। যোগ্য দল হিসেবেই সেমিফাইনালে পা রাখল আফ্রিকার দেশটি। তাদের কৌশলের কাছে হার মানতে বাধ্য হলো পর্তুগাল।
পর্তুগাল যত সুযোগই তৈরি করুক, মরক্কোর মিডফিল্ডার বা ডিফেন্ডাররা কখনোই তাদের জায়গা দেয়নি। পরাস্ত হলেও সঙ্গে সঙ্গে বল কাড়ার চেষ্টা করেছে। হাল ছাড়েনি। প্রতিপক্ষ খেলোয়াড় যখন পরাস্ত হওয়ার পর ছেড়ে দেয়, তখন সিদ্ধান্ত নেওয়া যায় বল নিয়ে আমি কী করব। কিন্তু কেউ পরাস্ত হওয়ার পর পেছন পেছন আসতে থাকলে তখন আসলে পরের কাজটা ঠিকঠাক করা যায় না। সেই হিসাব করলে বলব মরক্কো সবসময় লড়াইয়ের মানসিকতায় ছিল। ওদের অধিনায়ক রোমান সাইস ব্যথা পাওয়ার পর বসে গেলেও খেলায় তার প্রভাব পড়েনি। সোফিয়ান আমরাবাত আবারও সবাইকে মুগ্ধ করেছে নিজের পারফরম্যান্সে।
এখন সেমিফাইনালে ফ্রান্সের মুখোমুখি হতে হবে মরক্কোকে। রোমান সাইস খেলতে না পারলে দলের জন্য সেটা বড় ধাক্কা হবে। তবে এখন আর হারানোর কিছু নেই তাদের। তাই ফ্রান্সকেও পরাস্ত করার চেষ্টা করবে তারা। বলতেই হয়, এই মরক্কো ভয়ের ফ্রান্সের জন্যও।
তবে এমনিতে হিসাবে করলে ফ্রান্স অবশ্যই এগিয়ে থেকে মাঠে নামবে। মরক্কোর ইতিহাস গড়া জয়ের দিনেই আরেক কোয়ার্টার ফাইনালে ইংল্যান্ডকে হারিয়েছে ফ্রান্স। ফ্রান্স-ইংল্যান্ড ম্যাচের বিশ্লেষণে যদি আসি, ইংল্যান্ড বল পজিশন বেশি রেখেছে। দুটি পেনাল্টি পেয়েছে ইংল্যান্ড। আমি বলব দুটিই তাদের বোকার মতো উপহার দিয়েছে ফ্রান্স। এই মানের খেলোয়াড়দের কাছ থেকে এটা আশা করার মতো না। হ্যারি কেইন অবশ্য দ্বিতীয় পেনাল্টিটা মিস করল। ওই মিসটা না হলে খেলা হয়তো অতিরিক্ত সময়ে গড়াত।
ফ্রান্স ও মরক্কোর মধ্যে ফাইনালে ওঠার লড়াই হবে। আরেক সেমিফাইনালে খেলবে আর্জেন্টিনা ও ক্রোয়েশিয়া। কোয়ার্টার ফাইনালে ক্রোয়াটদের বিপক্ষে ব্রাজিল তো প্রায়ই ম্যাচ বের করে নিয়েছিল। গত বিশ্বকাপের পারফরম্যান্সসহ যদি চিন্তা করি, ফ্রান্সের মতো ক্রোয়েশিয়াও দারুণ পেশাদার নৈপুণ্য দেখিয়ে যাচ্ছে। অভিজ্ঞ ও তারুণ্যের মিশ্রণটা খুব ভালো। মিডফিল্ড তো বিশ্বমানের। তবে এবারের আর্জেন্টিনাও আবার একেবারে ভিন্ন দল। বিশেষ করে লিওনেল মেসি তো অপ্রতিরোধ্য। প্রতিপক্ষ দল কোনো প্ল্যানেই তাকে আটকাতে পারছে না। পার্থক্য গড়ে দিচ্ছেন। তাই মেসির জন্য আর্জেন্টিনাই এগিয়ে থাকবে বলে আমি মনে করি।
ঢাকাসহ সারা দেশে তীব্র দাবদাহ চলছে। দফায় দফায় বিদ্যুৎ থাকছে না বাসা-বাড়ি, অফিস আদালত ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ সর্বত্র। এ নিয়ে চলছে আলোচনা-সমালোচনা। বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনার ঝড় বইছে।
বিদ্যুৎ সমস্যা নিয়ে একটি মহল পরিস্থিতি ঘোলা করার চেষ্টায় আছে বলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাদের কাছে তথ্য এসেছে। আর ওই তথ্য পেয়ে পুলিশ সদর দপ্তর নড়েচড়ে বসেছে। পুলিশের মহাপরিদর্শকসহ শীর্ষ কর্তারা বৈঠক করেছেন। যেকোনো পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সোমবার পুলিশের সব রেঞ্জ অফিস ও ইউনিট প্রধানদের কাছে বিশেষ নির্দেশনা পাঠিয়েছে পুলিশ সদর দপ্তর।
বিশেষ বার্তা পেয়ে ইউনিট প্রধান, রেঞ্জ ডিআইজি ও ৬৪ জেলার পুলিশ সুপাররা আলাদাভাবে বৈঠক করেছেন। বিদ্যুৎ সমস্যার সমাধান না হওয়া পর্যন্ত কঠোর নিরাপত্তা দিতে বলা হয়েছে। এ বিষয়ে ইতিমধ্যে কাজও শুরু করে দিয়েছে পুলিশ।
জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, বিদ্যুতের সমস্যা দ্রুত সমাধান করতে সরকার নানাভাবে চেষ্টা করছে। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে সমস্যার সমাধান হবে বলে আশা করছি। এরই মধ্যে যেকোনো পরিস্থিতি এড়াতে আমরা সতর্ক আছি। বিদ্যুৎ স্টেশনগুলো নিরাপত্তার আওতায় আনা হচ্ছে। এই জন্য আমরা আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
পুলিশ সদর দপ্তরের এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, সোমবার পুলিশ সদর দপ্তর থেকে পুলিশের সব ইউনিট, রেঞ্জ ডিআইজি ও পুলিশ সুপারদের কাছে বিদ্যুৎ স্টেশনে নিরাপত্তা দেওয়ার পাশাপাশি নজরদারি বাড়াতে চিঠি পাঠানো হয়েছে। একটি মহল লোডশেডিংয়ের অজুহাতে দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করতে চাচ্ছে বলে আমরা তথ্য পেয়েছি। যেসব এলাকায় বেশি বিদ্যুৎ আসা-যাওয়া করছে তারও একটি তালিকা তৈরি করা হয়েছে।
কয়েকটি জেলার পুলিশ সুপার দেশ রূপান্তরকে জানিয়েছেন, পুলিশ সদর দপ্তরের চিঠি পাওয়ার পর আমরা বিশেষ বৈঠক করছি। এলাকায় বিদ্যুৎ আসা-যাওয়া করছে তা সত্য। এ জন্য আমরা বেশ সতর্ক আছি। বিদ্যুৎ অফিস ও স্টেশনগুলোর বিষয়ে থানার ওসিদের দিক-নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা দেশ রূপান্তরকে বলেন, লোডশেডিংয়ের অজুহাত তুলে বড় ধরনের হামলা চালাতে পারে একটি বিশেষ মহল। প্রতিটি বিদ্যুৎকেন্দ্রে বাড়তি পুলিশের পাশাপাশি গোয়েন্দা নজরদারি রাখার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়। একই সঙ্গে থানার ওসিদের নানা দিকনির্দেশনা দিচ্ছেন জেলার পুলিশ সুপাররা। এমনকি বাড়তি ফোর্সও প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
তা ছাড়া রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোও নজরদারির আওতায় আনা হয়েছে।
বিদ্যুৎ অফিসের পাশাপাশি ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় কঠোর নিরাপত্তার বলয় গড়ে তুলতে ৫০ থানার ওসিদের বিশেষ নির্দেশনা দিয়েছেন ডিএমপি কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক।
খন্দকার গোলাম ফারুক দেশ রূপান্তরকে জানান, বিদ্যুৎ সমস্যা নিয়ে যাতে কেউ অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি তৈরি করতে না পারে সে জন্য আমরা সতর্ক আছি। বিদ্যুৎ স্টেশনগুলোর পাশাপাশি রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলো বাড়তি নিরাপত্তার আওতায় আনা হয়েছে। ইতিমধ্যে সবাইকে সেই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, বিদ্যুৎসহ যেকোনো সমস্যা নিয়ে কোন মহল যাতে কোন ধরনের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে না পারে সে জন্য বিশেষ নজরদারি করা হচ্ছে। আশা করি বড় ধরনের কোন ঘটনা ঘটবে না। তারপরও পুলিশ সতর্ক আছে।
সূত্র জানায়, লোডশেডিংকে পুঁজি করে কেউ যাতে অপ্রীতিকর কোনো পরিস্থিতি সৃষ্টির সুযোগ নিতে না পারে, সে বিষয়ে নজর রাখতে বলা হয়েছে। নির্দেশনার পর সারা দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদনকেন্দ্র, বিদ্যুৎ অফিস, সাবস্টেশনসহ কেপিআই স্থাপনায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা আগের চেয়ে বৃদ্ধি করা হয়েছে। গোয়েন্দা কার্যক্রম ও পুলিশি টহল বাড়ানো হয়েছে। বিদ্যুৎ বিতরণের দায়িত্বে থাকা সমিতি বা কোম্পানিগুলোর পক্ষ থেকেও পুলিশকে চিঠি দিয়ে বাড়তি নিরাপত্তাও চাওয়া হয়েছে।
মূল্যস্ফীতি নিয়ে অস্বস্তিতে ছিল বিশ্বের প্রায় সব দেশই। অধিকাংশ দেশই তাদের মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে এসেছে। প্রতিবেশী ভারত ও শ্রীলঙ্কার নিয়ন্ত্রণহীন মূল্যস্ফীতির কথা প্রায় সবারই জানা, তারাও ইতিমধ্যে তাদের মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের মধ্যে নিয়ে এসেছে। তবে ব্যতিক্রম শুধু বাংলাদেশ। কোনোভাবেই নিত্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে আনতে পারছে না সরকার। ফলাফল ভোক্তা মূল্যসূচকে (সিপিআই) বা মূল্যস্ফীতিতে ১২ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ রেকর্ড। মে মাসে মূল্যস্ফীতি বেড়ে ৯ দশমিক ৯৪ শতাংশ। গতকাল সোমবার বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) সিপিআই ইনডেক্সে এ হালনাগাদ তথ্য প্রকাশ করে।
গত ১ জুন ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট ঘোষণা করে সরকার। এ বাজেটের মূল কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল আগামী অর্থবছরে সরকার কীভাবে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করবে। কিন্তু মূল্যস্ফীতি কমানোর জন্য বাজেট প্রস্তাবে কোনো পদক্ষেপ না থাকলেও লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৬ শতাংশের মধ্যে রাখার। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি পরাবাস্তব বাজেট। মূল্যস্ফীতি ৬ শতাংশের মধ্যে রাখা আসলে সম্ভব নয়। গত ১১ মাসে দেশের গড় মূল্যস্ফীতি ৮ দশমিক ৮৪ শতাংশ।
হালনাগাদ তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, মে মাসে মূল্যস্ফীতি বেড়ে ৯ দশমিক ৯৪ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। এর আগে ২০১১ সালের মে মাসে সর্বোচ্চ মূল্যস্ফীতি ছিল ১০ দশমিক ২০ শতাংশ। সে হিসাবে মূল্যস্ফীতি ১২ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। যদিও চলতি অর্থবছরের ১১ মাসে গড় মূল্যস্ফীতি প্রায় ৯ শতাংশ।
মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়ার অর্থ হলো, আগের বছরের মে মাসে যে পণ্য গড়ে ১০০ টাকা কিনতে হয়েছে, এ বছরের মে মাসে তা কিনতে হচ্ছে গড়ে ১০৯ টাকা ৯৪ পয়সায়। আরও পরিষ্কারভাবে বললে, ধরুন আগের বছরের একই সময়ে ৫০০ টাকার একটি নোটে কোনো ব্যক্তি পাঁচটি পণ্য কিনতে পেরেছিলেন। এ বছরের একই সময়ে মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়ায় এখন একই টাকায় তিনটি পণ্য কিনতে পারছেন। অর্থাৎ মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়ায় মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমে যায়।
খাদ্যে মূল্যস্ফীতি ১ বছরে বেড়েছে ১১.৩২ শতাংশ : ২০২২ সালের মে মাসে খাদ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৮ দশমিক ৩০ শতাংশ, অথচ এ বছরের মে মাসে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক ২৪ শতাংশে। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে মূল্যস্ফীতির হার বেড়েছে ১১ দশমিক ৩২ শতাংশ। এ বছরের এপ্রিল মাসেও খাদ্যে মূল্যস্ফীতি ছিল ৮ দশমিক ০৪ শতাংশ।
খাদ্যবহির্ভূত পণ্যে এক বছরে মূল্যস্ফীতি বেড়েছে ৬৪ শতাংশ : বিবিএসের তথ্য বলছে, সদ্য শেষ হওয়া মে মাসে খাদ্যবহির্ভূত পণ্যের মূল্যস্ফীতি বেড়ে ৯ দশমিক ৯৬ শতাংশ হয়েছে। ২০২২ সালের মে মাসে খাদ্যবহির্ভূত পণ্যের মূল্যস্ফীতি ছিল ৬ দশমিক ০৮ শতাংশ। অর্থাৎ বছরের ব্যবধানে খাদ্যবহির্ভূত পণ্যের মূল্যস্ফীতি বেড়েছে ৬৩ দশমিক ৮২ শতাংশ বা ৬৪ শতাংশ।
গ্রামের চেয়ে শহরের মূল্যস্ফীতি বেশি : এক বছর আগেও শহরের মূল্যস্ফীতি গ্রামের চেয়ে কম ছিল। কারণ গ্রামের চেয়ে শহরে পণ্য মজুদের আধুনিক ব্যবস্থা আছে। তবে সরকারি উদ্যোগে শহরের মতো গ্রামেও কিছু স্থানে খাদ্যগুদামের ব্যবস্থা তৈরি হওয়ায় এখন শহরের তুলনায় গ্রামে মূল্যস্ফীতি কমেছে। মে মাসে শহর এলাকায় গড় মূল্যস্ফীতি ছিল ৯ দশমিক ৯৭ শতাংশ, একই সময়ে গ্রামে মূল্যস্ফীতি ৯ দশমিক ৮৫ শতাংশ।
বিশ্বে কমেছে মূল্যস্ফীতি, বাংলাদেশে বাড়ছে : গত শনিবার মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্সের (এমসিসিআই) বাজেট-পরবর্তী আলোচনায় বিশ্বব্যাংকের সাবেক অর্থনীতিবিদ ও পলিসি রিসার্স ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) ভাইস চেয়ারম্যান সাদিক আহমেদ মূল্যস্ফীতি ইস্যুতে বলেন, বিশ্বের প্রায় সব দেশ সফলভাবে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে এনেছে। শুধু বাংলাদেশ এ ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম। উদাহরণ হিসেবে তিনি উল্লেখ করেন, থাইল্যান্ডে ২০২২ সালের জুনে মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৭ দশমিক ৭ শতাংশ, গত এপ্রিলে তা নেমে এসেছে ২ দশমিক ৭ শতাংশে। অর্থাৎ আগের তুলনায় দেশটিতে মূল্যস্ফীতি কমেছে ৬৫ শতাংশ। যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশে ২০২২ সালের জুনে মূল্যস্ফীতি ছিল ৯ দশমিক ১ শতাংশ। সেখান থেকে ৪৬ শতাংশ মূল্যস্ফীতি কমিয়ে ৪ দশমিক ৯ শতাংশে আনতে সক্ষম হয়েছে তারা। ইউরোপীয় ইউনিয়নের গত অক্টোবর মাসের মূল্যস্ফীতি ছিল ১০ দশমিক ৬ শতাংশ, সেখান থেকে ৩৪ শতাংশ কমিয়ে ৭ শতাংশে আনতে সক্ষম হয়েছে ইইউ।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে নীতি সুদহার বাড়িয়ে দিয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের জন্য নীতি সুদহার বাড়িয়ে দেয়। তবে বাংলাদেশ এ ধরনের সংকট মোকাবিলায় শুরুর দিকে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। উল্টো গত বছর আগস্টে এক ঘোষণাতেই জ্বালানি তেলের দাম ৫১ শতাংশ বাড়ানো হয়। ওই মাসেই মূল্যস্ফীতি বেড়ে ৯ দশমিক ৫২ শতাংশে দাঁড়িয়েছিল। বাংলাদেশ দেরিতে হলেও নীতি সুদহার বাড়িয়েছে। বর্তমানে এ সুদহার ৬ দশমিক ২ শতাংশ। তবে নীতি সুদহার বাড়িয়েও মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়েছে সরকার।
মূল্যস্ফীতি নিয়ে আভাস দিয়ে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল দাবি করেছে, বিশে^র দেশে দেশে মূল্যস্ফীতির যে হার, তা সামষ্টিক অর্থনীতির জন্য হুমকি। মূল্যস্ফীতির এই হার ১২ বছর বা এক যুগের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় ২০০৭-০৮ সালে বিশ্ববাজারে সব ধরনের পণ্যের দাম বাড়ায় মূল্যস্ফীতি বাড়তে বাড়তে ১৪ শতাংশ ছাড়িয়ে গিয়েছিল।
২০০৯ সালের প্রথম দিকে আওয়ামী লীগ সরকার যখন দায়িত্ব নেয়, তখনো মূল্যস্ফীতি ১০ শতাংশের ওপর ছিল। পরে অবশ্য তা কমতে কমতে সহনীয় পর্যায়ে নেমে আসে। দীর্ঘদিন ৫ থেকে ৬ শতাংশের মধ্যে ওঠানামা করেছে।
৩০ জুন শেষ হতে যাওয়া ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে সার্বিক মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৭ দশমিক ৪৮ শতাংশ। ঠিক এরকম এক সময়ে গত বছর ৫ আগস্ট সরকার জ্বালানি তেলের দাম ৪২ থেকে ৫১ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ায়। এর পরপরই বাড়ানো হয় সব ধরনের পরিবহন ভাড়া। এ দুইয়ের প্রভাবে বেড়ে যায় প্রায় সব পণ্যের দাম। ফলে পরের মাস আগস্টে মূল্যস্ফীতি এক লাফে বেড়ে ৯ দশমিক ৫২ শতাংশে ওঠে।
যদিও সেপ্টেম্বর থেকে তা কমতে থাকে। ওই মাসে মূল্যস্ফীতি কমে ৯ দশমিক ১০ শতাংশে আসে। জানুয়ারিতে তা আরও কমে ৮ দশমিক ৫৭ শতাংশে নেমে আসে। তবে রোজাকে সামনে রেখে নিত্যপণ্যের দাম বাড়তে থাকায় বাড়তে থাকে মূল্যস্ফীতি। ফেব্রুয়ারি মাসে তা বেড়ে হয় ৮ দশমিক ৭৮ শতাংশ। মার্চ মাসে হয় ৯ দশমিক ৩৩ শতাংশ। এপ্রিলে তা সামান্য কমে ৯ দশমিক ২৪ শতাংশে নেমে এসেছিল।
মজুরি সূচক বেড়েছে : বিবিএসের তথ্য বলছে, গত কয়েক মাস ধরেই মজুরি সূচক অল্প অল্প করে বাড়ছে। অক্টোবরে এ হার ছিল ৬ দশমিক ৯১ শতাংশ। যা মে মাসে এসে দাঁড়ায় ৭ দশমিক ৩২ শতাংশে।
দেশের একমাত্র পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্র রাঙামাটির কাপ্তাইয়ে হাইড্রোলিক পাওয়ার স্টেশনে তীব্র পানির সংকটে বিদ্যুৎ উৎপাদন সর্বনিম্ন পর্যায়ে পৌঁছেছে। অনাবৃষ্টি এবং তীব্র তাপদাহে কাপ্তাই হ্রদের পানি শুকিয়ে যাওয়ার ফলে এই সংকট দেখা দিয়েছে। ৫টি ইউনিটের মধ্যে কোনরকমে মাত্র ১টি ইউনিট সচল রেখে সর্বনিম্ন ২৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে।
মঙ্গলবার (৬ জুন) সকালে কাপ্তাই পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক এটিএম আবদুজ্জাহের জানান, হ্রদের পানি কমে যাওয়ায় কাপ্তাই পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্রে বিদ্যুৎ উৎপাদন অনেকটা ব্যাহত হচ্ছে।
তিনি জানান, পানির অভাবে কেন্দ্রের সব ক’টি ইউনিট সচল রাখা সম্ভব হচ্ছে না। এতে বিদ্যুৎ উৎপাদন সর্বনিম্ন পর্যায়ে ঠেকেছে। তিনি আরও জানান, কেন্দ্রের ৫টি ইউনিটের মধ্যে বর্তমানে ১ নম্বর ইউনিটটি চালু রাখা হয়েছে। এই ইউনিট হতে মাত্র ২৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে। অথচ এই কেন্দ্রের পাঁচটি ইউনিট সচল থাকলে প্রায় ২৪২ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করে জাতীয় গ্রিডে পাঠানো হয়। সেখানে এখন বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে মাত্র ২৫ মেগাওয়াট।
এটিএম আব্দুজ্জাহের বলেন, বছরের এই সময়ে কখনই পানি এতো নিচে থাকে না। এ বছর এখনো বৃষ্টিপাত শুরু না হওয়ায় খুবই বিপাকে পড়তে হয়েছে আমাদের। বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য মাত্র একটি ইউনিট চালু আছে। আমরাও বৃষ্টির দিকে তাকিয়ে আছি।
কাপ্তাই বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কন্ট্রোল রুমের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে দায়িত্বরত প্রকৌশলী জানান, গত মঙ্গলবার সকাল ১০টা পর্যন্ত কাপ্তাই হ্রদের পানির পরিমাণ ৭৩ দশমিক ৬২ ফুট (মিন সি লেভেল) ছিল। রুলকার্ভ অনুযায়ী এসময় হ্রদে পানি থাকার কথা ৭৮ দশমিক ২০ ফুট এমএসএল (মিন সি লেভেল)। পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রচুর বৃষ্টিপাত না হলে এই সংকট হতে উত্তরণ সম্ভব নয় বলে জানান প্রকৌশলীরা।
সংশ্লিষ্টরা আরও জানায়, অনাবৃষ্টি, বন উজার হওয়া, কাপ্তাই হ্রদে নাব্যতা সংকটের কারণে পানি তলানিতে চলে যাওয়ায় বিদ্যুৎ উৎপাদনে এমন বিপর্যয় ঘটেছে। সঙ্গতকারণে গ্রাহকদের চাহিদা মেটাতে হিমশিম খাচ্ছে কর্তৃপক্ষ।
এদিকে পানি কমে যাওয়ার ফলে শুধুমাত্র বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে তা নয়, কাপ্তাই হ্রদের ওপর নির্ভরশীল বহু মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়েছে। হ্রদের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কয়েকটি উপজেলার সাথে নৌপথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। ফলে মানুষের দুর্ভোগও বৃদ্ধি পাচ্ছে।
কাপ্তাই হ্রদের পাশে বসবাসকারী নুরুল ইসলাম জানান, ভারী বৃষ্টিপাত না হলে হ্রদে পানি বাড়ার সম্ভাবনা নেই। তাই দ্রুত সময়ে কাপ্তাই হ্রদে ড্রেজিং করা প্রয়োজন। ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে কাপ্তাই হ্রদের গভীরতা যেমন বাড়বে তেমনি এই সমস্যা থেকে কিছুটা সমাধান পাওয়া যাবে।
বিলাইছড়ি বাজারের ব্যবসায়ী ইসমাঈল হোসেন জানান, বিলাইছড়িতে নৌপথ বন্ধ মানেই জীবন ও জীবিকার দুর্বিষহ অবস্থা। আমরা বিলাইছড়িবাসীই সম্ভবত সবচেয়ে বেশি কষ্ট পাচ্ছি হ্রদের পানি কমে যাওয়ায়। বৃষ্টি হতে যত দেরি হবে আমাদের কষ্ট তত বেশি দীর্ঘায়িত হবে।
তিনি বলেন, হ্রদের পানি অস্বাভাবিক কমে যাওয়ায় বাজারের পণ্য পরিবহন ব্যয় অনেক বেড়ে গেছে। বড় বোটতো আসতেই পারছে না, ছোট ছোট বোটে পণ্য পরিবহনে সময়ক্ষেপণ হচ্ছে, পর্যাপ্ত পণ্যও আনা যাচ্ছে না। আবার অনেক দূর থেকে পণ্য বাজারে তুলতে শ্রমিকদের বাড়তি মজুরি দিতে হচ্ছে। একই সঙ্গে সাপ্তাহিক বাজারও এখন ঠিকমতো জমছে না। কারণ দূর থেকে মানুষজন আসতে পারছে না। এখন বৃষ্টি হওয়া ছাড়া পানি বাড়ার তো আর কোনো সম্ভাবনা নেই।
অবশেষে বন্ধ হয়ে গেল দেশের সর্ববৃহৎ পটুয়াখালীর পায়রায় ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন। গতকাল সোমবার দুপুরে কেন্দ্রটির দ্বিতীয় ইউনিটের বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। কয়লা সংকটে গত ২৫ মে বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির প্রথম ইউনিট বন্ধ হয়। ২০২০ সালে বাণিজ্যিকভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন করার পর এবারই প্রথম কয়লা সংকটে প্রতিষ্ঠানটির উৎপাদন বন্ধ হলো।
চীন ও বাংলাদেশের যৌথ বিনিয়োগের এই বিদ্যুৎ প্রতিষ্ঠানটিকে কয়লা ক্রয়ে ঋণ দিয়ে আসছে চায়না ন্যাশনাল মেশিনারি ইমপোর্ট অ্যান্ড এক্সপোর্ট কোম্পানি (সিএমসি)। এপ্রিল পর্যন্ত কয়লার ৩৯০ মিলিয়ন ডলার বকেয়া বিল পরিশোধ না করায় কয়লা সরবরাহ বন্ধ করে দেয় সিএমসি। পরে ১০০ মিলিয়ন ডলার পরিশোধ করা হলে কয়লা আমদানির এলসি খোলার শর্ত দেয় চীনা প্রতিষ্ঠান। গতকাল পর্যন্ত ৯৮ মিলিয়ন ডলার পরিশোধ করা হয়েছে। এ মাসের শেষদিকে কয়লা দেশে আসার কথা রয়েছে।
কয়লার অভাবে দেশের সবচেয়ে বড় এবং নির্ভরযোগ্য বিদ্যুৎকেন্দ্রটি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় লোডশেডিংয়ের মাত্রা বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি এক মাসে লোকসান হবে অন্তত ৩০০ কোটি টাকা। আর্থিক ক্ষতির পাশাপাশি লোডশেডিংয়ের কারণে জনদুর্ভোগ ও কারখানার উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার বিষয়টি বিবেচনায় নিলে পুরো ক্ষতির পরিমাণ আরও বেশি।
এদিকে উৎপাদিত বিদ্যুতের দামের বাইরে শুধু কয়লাবাবদ পিডিবির কাছে কেন্দ্রটির বকেয়ার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩০০ মিলিয়ন ডলার। ছয় মাসেরও বেশি সময় ধরে থাকা এ বকেয়ার টাকা পরিশোধের জন্য দফায় দফায় চিঠি দিয়েও তা পরিশোধ করা হয়নি। অভিযোগ উঠেছে, আন্তঃমন্ত্রণালয়ের সমন্বয়হীনতা এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের অবহেলার কারণেই কেন্দ্রটি বন্ধ হয়ে গেছে। যদিও সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলো নিজেদের দায় অস্বীকার করে বলছে, বৈশি^ক মন্দার পরিস্থিতিতে ডলার সংকটের কারণেই এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
চুক্তি অনুযায়ী, উৎপাদিত বিদ্যুতের দামের পাশাপাশি কেন্দ্রভাড়া বাবদ প্রতি মাসে পিডিবিকে ২৪৭ কোটি টাকা দিতে হবে। এখন বিদ্যুৎ উৎপাদন না করলেও নির্ধারিত কেন্দ্রভাড়া পরিশোধ করতে হবে পিডিবিকে। সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, পিডিবির চাহিদা অনুযায়ী নিরবচ্ছিন্নভাবে গড়ে প্রতিদিন ১ হাজার ২৪৪ মেগাওয়াট করে প্রায় তিন কোটি ইউনিট বিদ্যুৎ সরবরাহ করে আসছিল কেন্দ্রটি। প্রতি মাসে এর পরিমাণ ছিল ৯০ কোটি ইউনিট। গড়ে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের বিক্রয়মূল্য ছিল ৫ টাকা ৩০ পয়সা থেকে ৬ টাকার মতো।
প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ বিক্রি করে প্রতিষ্ঠানটির নিট মুনাফার প্রকৃত জানা না গেলেও নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে জানান, সব ধরনের ব্যয় বাদ দিয়ে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতে তাদের নিট মুনাফা হতো ৫ থেকে ৬ শতাংশ। প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের গড়মূল্য সাড়ে ৫ টাকা এবং মুনাফা সাড়ে ৫ শতাংশ বিবেচনায় নিয়ে প্রতিষ্ঠানটির এক মাসে মুনাফার পরিমাণ প্রায় ৩০ কোটি টাকা। কেন্দ্রটি বন্ধ থাকায় এ মুনাফা থেকে বঞ্চিত হবে বিসিপিসিএল। এদিকে কয়লা কেনার জন্য সাড়ে ৬ শতাংশ সুদে ঋণ নেয় প্রতিষ্ঠানটি। গত ছয় মাসের বেশি সময় কয়লার বিল বকেয়া থাকায় সুদের পরিমাণও বেড়ে যাবে। বাড়তি এ সুদের অর্থ বিসিপিসিএলকেই পরিশোধ করতে হবে।
বর্তমানে বিভিন্ন কেন্দ্র থেকে পিডিবির বিদ্যুৎ ক্রয়ের প্রতি ইউনিটের গড়মূল্য প্রায় ১১ টাকা ৫০ পয়সা। যদিও পিডিবি এ বিদ্যুৎ লোকসান দিয়ে বিতরণ কোম্পানির কাছে বিক্রি করছে ৮ টাকা ১০ পয়সায়। পায়রা থেকে এক মাস বিদ্যুৎ কিনতে না পারলে পিডিবির লোকসান আরও বাড়বে।
সূত্রমতে, কয়লা দেশে পৌঁছানো এবং কেন্দ্র চালু করতে সব মিলে অন্তত এক মাসের মতো সময় লাগবে। কোনো কারণে যদি কয়লা আসতে আরও দেরি হয়, তাহলে ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়বে।
বিসিপিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী এএম খোরশেদুল আলম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রটি বিশে^র সেরা কেন্দ্রগুলোর মধ্যে অন্যতম। এক সুইচে চালু করার পর নিরবচ্ছিন্নভাবে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হলেও বৈশি^ক কারণে ডলার সংকটে বন্ধ হয়ে গেছে। এটা আমাদের জন্য খুবই কষ্টদায়ক। তবে এ সময়ে আমরা বসে না থেকে কেন্দ্রের মেইনটেনেন্সের কাজটি করে ফেলব, যাতে দীর্ঘদিন আর মেইনটেনেন্স করা না লাগে।’
কেন্দ্রটি বন্ধের ফলে কী পরিমাণ আর্থিক ক্ষতি হবে তা জানতে চাইলে প্ল্যান্ট ম্যানেজার শাহ আবদুল মওলা দেশ রূপান্তরকে বলেন ‘আমরা এমনিতেই বকেয়া বিল পাচ্ছি না। এটাই বড় ক্ষতি। অন্যান্য ক্ষতির পাশাপাশি কেন্দ্রটি বন্ধের কারণে সাশ্রয়ী দামে দেশের মানুষ বিদ্যুৎ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হবে। এ কেন্দ্র থেকে প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ সাড়ে ৫ থেকে ৬ টাকা দরে বিক্রি করা হচ্ছে। সাশ্রয়ী দামে বিদ্যুৎ দিতে না পেরে কমফোর্ড ফিল করছি না।’
জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. ইজাজ হোসেন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘কেন্দ্র ভাড়ার পাশাপাশি লোডশেডিংয়ে মানুষের ভোগান্তি এবং কারখানার উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার বিষয়টি বিবেচনায় নিলেও এ ক্ষতির পরিমাণ অপূরণীয়। আর লোডশেডিং না দিয়ে সরকার যদি বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে চায়, তাহলে তেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র চালানো ছাড়া কোনো উপায় নেই এই মুহূর্তে। সে ক্ষেত্রে প্রতি ইউনিটে ৪ টাকার ওপর লোকসান হবে।’ তিনি বলেন, ‘ডলার ছাড় ঠিকই হচ্ছে। কিন্তু কেন্দ্রটি বন্ধ হওয়ার আগেই ডলার ছাড় করা উচিত ছিল। এতে বিরাট ক্ষতি হলো। এ ক্ষেত্রে দুটো বিষয় হতে পারে। একটি হলো যারা ডলার ছাড় করছেন তারা বিদ্যুৎ খাতের গুরুত্ব বুঝতে পারছেন না অথবা দেশের পরিস্থিতি আসলেই ভয়াবহ। তবে দেশের উন্নয়নে বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতকে অবশ্যই প্রাধান্য দেওয়া উচিত।’
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র জাকির হোসেন চৌধুরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রের ডলার ব্যবস্থা করার দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের। আর বাংলাদেশ ব্যাংককে রিজার্ভ থেকে ডলার দেওয়া হয় ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা মেনে। এ ক্ষেত্রে খাতের গুরুত্ব বুঝে ডলার ছাড় করা হয়। তবে দেশের প্রয়োজনে ডলার ছাড় করার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের কোনো ধরনের গাফিলতি নেই।’
সিনেমায় অভিনয় করতে গিয়ে প্রেম এরপর বিয়ে। দেড় বছরের দাম্পত্য জীবনে আট মাস ধরে চিত্রনায়িকা পরীমণি ও শরিফুল রাজের বনিবনা হচ্ছে না বলেই শোনা যাচ্ছে। চলছে টানাপোড়েন এবং সেই সংসার এখন ভাঙনের পথে। রাজের ফেসবুক থেকে অভিনেত্রী তানজিন তিশা, নাজিফা তুষি ও সুনেরাহ বিনতে কামালের কিছু ছবি ও ভিডিও প্রকাশ্যে আসার পর রাজের সঙ্গে পরীমণির মতপার্থক্য প্রকাশ্যে আসে। সব ছাপিয়ে যা এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে।
রবিবার একটি গণমাধ্যমের ‘লাইভ’ অনুষ্ঠানে এসে শরিফুল রাজ জানান, আপাতত তারা সেপারেশনে আছেন এবং তাদের আর একসাথে হওয়ার কোন সুযোগ নেই। পরীকে তিনি শ্রদ্ধা করেন জানিয়ে সবশেষে পরীমণির উদ্দেশ্যে রাজ বলেন, ‘বেবি, আই লাভ ইউ। যা-ই হোক না কেন, আনন্দে থেকো। আমরা আমাদের সন্তানকে ভালো রাখব।’
রাজের এমন মন্তব্যের উত্তর দিতে সোমবার রাতে গণমাধ্যমটির লাইভে এসে রাজের উদ্দেশ্যে পরীমণি বলেন, ‘গরু মেরে জুতা দান করার কোনো দরকার নেই। কেউ রেসপেক্ট করলে সেটা তার কার্যকলাপ দেখেই বোঝা যায়, মুখ ফুটে বলতে হয় না। আমাকে পাবলিকলি অপমান করে এরপর রেসপেক্ট দেখানোর কোনো দরকার নেই। আর আমার বাচ্চাকে নিয়ে এসব ইমোশনালি কোনো কথা শুনতে চাই না। এসব ইমোশনালি কথা মানুষকে গিলিয়ে লাভ নেই। মানুষ বুঝে।’
ফাঁস হওয়া ভিডিওগুলো পরী বলেন, ‘এত বছর ধরে তারা বন্ধু অথচ আমি জানতাম না। এসব সামনে আসার পর জানতে পারলাম। আর রাজ যতটা তার বন্ধুদের ইমেজ নিয়ে কনসার্ন তার পরিবার নিয়ে এতটাও কনসার্ন না।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি এমনিতে অনেক শান্তশিষ্ট। অনেকটা সাপের মতো, লেজে পাড়া না দিলে চুপচাপ থাকি কিন্তু আমার লেজে পাড়া দিলেই আমি ফুঁস করে উঠি আর তখন কামড় দিবই।’
সবশেষে পরী বলেন, ‘আমি চাই এসবের শেষ হোক। আমি আজকে এখানে এসে এসব বলতাম না। তুমিই (রাজ) আমাকে বাধ্য করেছ। এরকম অসুস্থ মানুষের সঙ্গে আমি আর থাকতে চাই না। আমি চাই ২৪ ঘণ্টার মধ্যে রাজ আমাকে ডিভোর্স দিক।’
নতুন অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে ১৩ ধরনের জ্বালানি তেল ও পেট্রোলিয়াম পণ্যের ওপর থেকে বিদ্যমান ৫ শতাংশ আগাম কর প্রত্যাহারের পরিকল্পনা করেছে সরকার। অন্যদিকে উৎপাদন পর্যায়ে তরল করা পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) ভ্যাট ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে সাড়ে ৭ শতাংশ করা হয়েছে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে পেট্রোল, অকটেন ও ডিজেল আমদানিতে প্রতি লিটারে ১৩ দশমিক ৭৫ টাকা করে শুল্ক আরোপ করার প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এ ছাড়া অন্যান্য জ্বালানি জেট ফুয়েল, ফার্নেস অয়েল, লুব বেইজ অয়েল, কেরোসিনের ক্ষেত্রে প্রতি টনে ২৫ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। এত দিন এসব জ্বালানি তেল আমদানির ক্ষেত্রে ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ ছিল।
আমদানি করা পণ্যের যথাযথ মূল্য নির্ধারণে ২০২২-২৩ অর্থবছরে পণ্যের ট্যারিফ মূল্য ও ন্যূনতম মূল্য নির্ধারণ-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনে পেট্রোলিয়াম ও এর উপজাত দুটি হেডিংয়ের আওতায় ১২টি এইচএস কোডের বিপরীতে ট্যারিফ মূল্য এবং একটি হেডিংয়ের আওতায় একটি এইচএস কোডের বিপরীতে ন্যূনতম মূল্য বহাল আছে।
পেট্রোলিয়াম ও এর উপজাতগুলোর মূল্য আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিনিয়ত ওঠানামা করার কারণে অতি প্রয়োজনীয় এই পণ্যের মূল্য স্থিতিশীল রাখতে এ সুপারিশ করা হয়েছে।
এলপিজি সিলিন্ডারের বিষয়ে বাজেট বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী বলেন, এলপিজি সিলিন্ডার তৈরির কাঁচামাল ইস্পাতের পাত (স্টিল শিট) ও ওয়েল্ডিংয়ের তার আমদানির করছাড় সুবিধা তুলে নেওয়া হয়েছে। এলপিজি সিলিন্ডার উৎপাদনকারীরা কাঁচামালে শুল্ককর ছাড় ১২ বছর ধরে ভোগ করে আসছে। তাই রাজস্ব আহরণের স্বার্থে শুধু দুটি উপকরণে ছাড় তুলে নেওয়া হয়েছে। তবে অন্যান্য করছাড়ের মেয়াদ ২০২৫ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত বহাল থাকবে বলে।
পেট্রোলিয়াম তেল এবং বিটুমিনাস খনিজ থেকে প্রাপ্ত তেলের ওপর বিদ্যমান শুল্ক ৫ শতাংশ। নতুন বাজেট অনুযায়ী এসবের প্রতি ব্যারেলের দাম ১ হাজার ১১৭ টাকা (লিটার প্রতি ৭.০২ টাকা) হতে পারে। প্রতি টন ফার্নেস অয়েলের সুনির্দিষ্ট শুল্ক ৯ হাজার ১০৮ টাকা (লিটার প্রতি ৯.১০ টাকা) করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের জন্য নতুন অর্থবছরে (২০২৩-২৪) ৩৪ হাজার ৮১৯ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। এর মধ্যে বিদ্যুৎ খাতে ৩৩ হাজার ৮২৫ কোটি ১০ লাখ টাকা এবং জ্বালানি খাতে ৯৯৪ কোটি ৩১ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করা নতুন বাজেটে এই বরাদ্দের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
চলতি অর্থবছরে (২০২২-২৩) বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতে বরাদ্দ ছিল ২৬ হাজার ৬৬ কোটি টাকা। পরবর্তী সময়ে সংশোধিত বাজেটে তা বেড়ে দাঁড়ায় ২৭ হাজার ৮৯ কোটি টাকা। অর্থাৎ নতুন অর্থবছরে এ খাতে বরাদ্দ বাড়ছে ৭ হাজার ৭৩০ কোটি টাকা।
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তাফা কামাল বাজেট বক্তৃতায় বলেন, উৎপাদন ও বিতরণ সক্ষমতা সম্প্রসারণের ফলে দেশের শতভাগ জনগোষ্ঠী বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় এসেছে। বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ২০০৯ সালে ৪ হাজার ৯৪২ মেগাওয়াট থেকে বর্তমানে ২৬ হাজার ৭০০ মেগাওয়াটে উন্নীত হয়েছে। জ্বালানির ব্যবহার বহুমুখীকরণের জন্য গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পাশাপাশি কয়লা, তরল জ্বালানি, দ্বৈত জ্বালানি, পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানিভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, রামপালে কয়লাভিত্তিক ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রকল্পের প্রথম ইউনিট ও পায়রা ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রকল্পে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হয়েছে। মাতারবাড়ীতে ১২০০ মেগাওয়াট আল্ট্রা-সুপার ক্রিটিক্যাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের কাজ চলছে। সরকারি-বেসরকারি যৌথ উদ্যোগে মোট ১২ হাজার ৯৪ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ৩৩টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণাধীন এবং ২ হাজার ৪১৬ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ১৭টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের চুক্তি প্রক্রিয়াধীন আছে। এছাড়া, ১০ হাজার ৪৪৩ মেগাওয়াট ক্ষমতার আরও ৩৪টি বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে।
মুস্তফা কামাল বলেন, ‘২০৪১ সালের মধ্যে পাশর্^বর্তী দেশগুলো থেকে প্রায় ৯ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির পরিকল্পনা রয়েছে। বর্তমানে ভারত থেকে ১১৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির পাশাপাশি ঝাড়খ-ে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ৭৪৮ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হয়েছে। নেপালের জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির চুক্তি চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। ভুটান থেকে বিদ্যুৎ আমদানির জন্য বাংলাদেশ, ভুটান ও ভারতের মধ্যে একটি ত্রিপক্ষীয় সমঝোতা স্মারক সই হতে যাচ্ছে শিগগিরই। তিনি বলেন, ‘সব মিলিয়ে আমরা ২০৩০ সালের মধ্যে ৪০ হাজার মেগাওয়াট এবং ২০৪১ সালের মধ্যে ৬০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন নিশ্চিত করতে পারব বলে আশা করছি।’
অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘সরকার ২০৩০ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ১০ শতাংশ নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। এছাড়া ২০৪১ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ৪০ শতাংশ পরিচ্ছন্ন জ্বালানি থেকে সংগ্রহ করতে চাই। এরসঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে, ৬০ লাখ সোলার সিস্টেম স্থাপনের মাধ্যমে অফ গ্রিড এলাকায় বসবাসকারী জনগণকে বিদ্যুৎ সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। কার্বন নিঃসরণ কমাতে ডিজেলচালিত পাম্পের জায়গায় সৌরচালিত পাম্প স্থাপন করার অংশ হিসেবে সেচকাজে ইতিমধ্যে ২ হাজার ৫৭০টি পাম্প স্থাপন করা হয়েছে। বর্তমানে নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে ৮৯৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে। সর্বোপরি, রাশিয়ার সহায়তায় রূপপুরে ২৪০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে।’
উৎপাদিত বিদ্যুৎ জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে গত ১৪ বছরে ৬ হাজার ৬৪৪ সার্কিট কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন স্থাপন করা হয়েছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, সঞ্চালন লাইন ১৪ হাজার ৬৪৪ কিলোমিটারে উন্নীত হয়েছে। এছাড়া বিতরণ লাইন ৩ লাখ ৬৯ হাজার থেকে ৬ লাখ ৬৯ হাজার কিলোমিটারে বৃদ্ধি করা হয়েছে। বিদ্যুতের সিস্টেমলস ১৪ শতাংশ থেকে নেমে এসেছে ৭ দশমিক ৭ শতাংশে। ২০৩০ সালের মধ্যে সঞ্চালন লাইনের পরিমাণ ২৮ হাজার কিলোমিটারে সম্প্রসারিত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিদ্যুতের অপব্যবহার রোধের লক্ষ্যে গত ৫ বছরে প্রায় ৫৩ লাখ প্রি-পেইড স্মার্ট মিটার স্থাপন করা হয়েছে।
অর্থমন্ত্রী কামাল বলেন, ২০০৯ সালের তুলনায়, জ্বালানি তেলের মজুদ ক্ষমতা ৮ লাখ ৯৪ হাজার মেট্রিক টন থেকে বৃদ্ধি করে ২০২১-২২ অর্থবছরে ১৩ লাখ ৬০ হাজার টন করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে এই মজুদ ক্ষমতা ৩০ দিনের পরিবর্তে ৬০ দিনে বাড়ানোর বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি উদ্বোধন করা ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী পাইপলাইনের মাধ্যমে আমদানি করা জ্বালানি তেল (ডিজেল) দেশের উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলায় এবং সৈয়দপুরে ১৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রে সরবরাহ করা সম্ভব হবে।
তিনি বলেন, ‘একমাত্র তেল শোধনাগার ইস্টার্ন রিফাইনারির পরিশোধন ক্ষমতা ১৫ লাখ টন থেকে ৪৫ লাখ টনে উন্নীত করার চেষ্টা চলছে। পায়রা সমুদ্রবন্দর এলাকায় একটি বৃহৎ সমন্বিত তেল শোধনাগার স্টোরেজ ট্যাংক নির্মাণের সিদ্ধান্ত আছে। সম্প্রতি ভোলার ইলিশা গ্যাসক্ষেত্রে প্রায় ২০০ বিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের মজুদ আবিষ্কৃত হয়েছে। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার সময় প্রতিদিন গ্যাসের উৎপাদন ছিল ১ হাজার ৭৪৪ মিলিয়ন ঘনফুট, যা বেড়ে হয়েছে প্রায় ২ হাজার ৩০০ মিলিয়ন ঘনফুট। তেল ও গ্যাস অনুসন্ধান কোম্পানি বাপেক্সের সক্ষমতা বাড়ানোর পর দৈনিক গ্যাস উৎপাদন ৯৮৪ মিলিয়ন ঘনফুট বেড়েছে। ২০২৪ সালের মধ্যে আরও ৪৬টি কূপ খনন করা হবে। এতে অতিরিক্ত ৬১৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস জাতীয় গ্রিডে যোগ হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
মুস্তাফা কামাল বলেন, ‘সমুদ্রে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য বিপুল বিনিয়োগ প্রয়োজন হওয়ায় আমরা বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিচ্ছি। ক্রমবর্ধমান জ্বালানির চাহিদা মেটাতে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস আমদানি এবং স্পট মার্কেট থেকেও কেনা হচ্ছে। এছাড়া কক্সবাজারের মাতারবাড়ীতে প্রতিদিন ১ হাজার মিলিয়ন ঘনফুট ক্ষমতাসম্পন্ন ল্যান্ড বেইজড এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।’
বাজেট বক্তৃতায় আরও বলা হয়, ২০০৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত ১ হাজার ১৫৮ কিলোমিটার গ্যাস সঞ্চালন পাইপলাইন নির্মাণ করা হয়েছে। বর্তমানে দেশের উত্তরাঞ্চল ও অন্যান্য এলাকায় ২১৪ কিলোমিটার পাইপলাইন নির্মাণের কাজ চলছে। ২০২৬ সালের মধ্যে পায়রা ও ভোলা থেকে গ্যাস সঞ্চালনের জন্য আরও ৪২৫ কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। গ্যাসের সরবরাহ বাড়ানোর পাশাপাশি অপচয় রোধে প্রি-পেইড মিটার স্থাপনের কাজও চলছে।
চলতি অর্থবছরের চেয়ে আগামী অর্থবছরের সামগ্রিক বাজেট আকারে ১২ দশমিক ৩৪ শতাংশ বড় হলেও আগামী বছরের শিক্ষা-বাজেট দশমিক ৪৪ শতাংশ কমেছে। তবে টাকার অঙ্কে শিক্ষার দুই মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দ ৬ হাজার ৭১৩ কোটি টাকা বেড়েছে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরে শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাতে মোট বাজেটের ১৩ দশমিক ৭ শতাংশ বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। শুধু শিক্ষা খাত হিসাব করলে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা এবং মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষায় বরাদ্দ ১১ দশমিক ৫৭ শতাংশ। টাকার অঙ্কে তা ৮৮ হাজার ১৬২ কোটি। চলতি অর্থবছরে শিক্ষায় বরাদ্দ ছিল ১২ দশমিক ০১ শতাংশ বা ৮১ হাজার ৪৪৯ কোটি টাকা।
ইউনেস্কো, শিক্ষাবিদ বা অংশীজনরা অনেক দিন ধরেই শিক্ষায় জিডিপির কমপক্ষে ৪ শতাংশ বরাদ্দের কথা বলছেন। এটাকে তারা বরাদ্দ হিসেবে না দেখে আগামী দিনের বিনিয়োগ হিসেবে দেখতে বলছেন। গত কয়েক বছর ধরে শিক্ষায় বরাদ্দ ১২ শতাংশের আশপাশে ঘুরপাক খাচ্ছিল। জিডিপির হিসাবে তা ছিল ২ শতাংশের কাছাকাছি। চলতি অর্থবছরে শিক্ষা খাতে মোট বরাদ্দ জিডিপির ১ দশমিক ৮৩ শতাংশ, ২০২১-২২ অর্থবছরে ছিল ২ দশমিক ০৮ শতাংশ। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে তা কমে দাঁড়াচ্ছে জিডিপির ১ দশমিক ৭৬ শতাংশ।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধূরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আগামী বাজেটে যে লক্ষ্য ধরা হয়েছে, তার সঙ্গে শিক্ষায় বরাদ্দের সংগতি নেই। বাজেটে স্মার্ট বাংলাদেশের কথা বলা হয়েছে। এজন্য দক্ষ ও শিক্ষিত জনগোষ্ঠী প্রয়োজন। কিন্তু এ জনগোষ্ঠী তৈরির জন্য প্রয়োজন শিক্ষা খাতে বিনিয়োগ। বরাবরের মতো এবারও শুভংকরের ফাঁকি লক্ষ করছি। শিক্ষার সঙ্গে প্রযুক্তি মিলিয়ে আকার বড় করা হলেও চলতি অর্থবছরের চেয়েও বরাদ্দ কমেছে। নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নেও বাজেটে দিকনির্দেশনা দেখছি না।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ড. ছিদ্দিকুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘শিক্ষায় জিডিপির ২ শতাংশের নিচে বরাদ্দ কাক্সিক্ষত নয়। আগামী অর্থবছরে অন্তত ১৪ থেকে ১৫ শতাংশ বরাদ্দ দিলে ভালো হতো। কারিগরি ও ভোকেশনাল শিক্ষায় আরও বেশি নজর দেওয়া উচিত ছিল। সেটা আগামী অর্থবছরের বাজেটে দেখা যায়নি।’
তিনি বলেন, ‘আগামী বছরের বাজেটে মিড ডে মিলের জন্য বরাদ্দ রাখার কথা বলা হয়েছে, যা খুবই ভালো। যোগ্য শিক্ষক নিয়োগ ও তাদের যথাযথ প্রশিক্ষণে জোর দিতে হবে। শিক্ষায় বরাদ্দের সঠিক ব্যবহারের বিষয়ে গুরুত্ব দিতে হবে।’
আগামী অর্থবছরে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জন্য ৩৪ হাজার ৭২২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরে তা ছিল ৩১ হাজার ৭৬১ কোটি টাকা। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের জন্য ৪২ হাজার ৮৩৮ কোটি এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের জন্য ১০ হাজার ৬০২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের জন্য ৩৯ হাজার ৯৬১ কোটি এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের জন্য ৯ হাজার ৭২৭ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছিল সরকার।
বাজেট ঘিরে প্রতি বছরই বেসরকারি শিক্ষকদের অন্যতম দাবি থাকে শিক্ষাব্যবস্থার জাতীয়করণ, এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের পূর্ণাঙ্গ বাড়ি ভাড়া ও শতভাগ উৎসব-ভাতা প্রদান। নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তকরণের প্রক্রিয়া চলমান রাখাও তাদের অন্যতম দাবি। কিন্তু সেসব বিষয়ে বাজেটে স্পষ্ট কিছু উল্লেখ নেই। তবে এমপিওভুক্তির জন্য মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগে আগামী অর্থবছরে ৩০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে বলে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।
দুই দশকেরও বেশি ক্যারিয়ারে অসংখ্য নাটক-টেলিছবি নির্মাণ করেছেন শিহাব শাহীন, উপহার দিয়েছেন হিট প্রোডাকশন। নিজেকে শুধু রোমান্টিক জনরায় আটকে না রেখে কাজ করেছেন বহুমাত্রিক ঘরানায়। নিজেকে প্রমাণ করেছেন সব্যসাচী নির্মাতা হিসেবে। নিজেকে শুধু টেলিভিশনেই আটকে রাখেননি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তিনিও পাল্টেছেন প্লাটফর্ম এবং সেখানেও দেখিয়েছেন নিজের মুন্সিয়ানা।
সর্বশেষ গেল ঈদে তুমুল সাড়া ফেলেছে তার নির্মিত স্পিন অফ সিরিজ ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’। সাফল্যের পর কিছুদিন আগেই অনুষ্ঠিত হয়ে গেল এর সাকসেস পার্টি যেখানে উপস্থিত ছিলেন টিমের কলাকুশলী থেকে শুরু করে অন্যান্য নির্মাতা ও শিল্পীরা। সেই ধারাবাহিকতায় এবার তিনি নিয়ে আসছেন সিরিজটির সিক্যুয়াল। শুধু তাই নয়, একসঙ্গে একাধিক সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে আসছেন জনপ্রিয় নির্মাতা।
শিহাব শাহীন বলেন, ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’ নিয়ে এতটা প্রত্যাশা ছিল না কিন্তু সে সাড়া পেয়েছি তা প্রত্যাশার চেয়েও বেশি। দর্শকরাই কাজটিকে গ্রহণ করেছেন আর তাই এখন এর সিক্যুয়াল নিয়ে আসার পরিকল্পনা করছি। স্পিন অফে দেখিয়েছি অ্যালেন স্বপনের পেছনের গল্প। সিন্ডিকেটে তাকে আমরা দেখিয়েছিলাম ২০২২ সালে, সে ঢাকায় আসার পর এর মাঝের সময়টার গল্পই থাকবে সিক্যুয়ালে। যেটার সংযোগ থাকতে পারে ‘সিন্ডিকেট ২’-তে। ঈদের পরপর এটার শুট করার সম্ভাবনা রয়েছে।
এই সিক্যুয়াল ছাড়াও আরও বেশ কিছু সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে সবকিছু চূড়ান্ত হয়েছে বলেও জানান এ নির্মাতা। তিনি বলেন, মোস্তফা সরয়ার ফারুকির তত্ত্বাবধানে ওটিটি প্লাটফর্ম চরকির ‘মিনিস্ট্রি অফ লাভ’ সিরিজের একটা কনটেন্ট করবো। এখনও কাস্টিং চূড়ান্ত হয়নি। এছাড়া হইচইয়ের একটি সিরিজ ও বিঞ্জের একটি ফিল্ম করা হবে। নাম চূড়ান্ত হয়নি। তবে দুটোতেই জিয়াউল ফারুক অপূর্ব থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
মাঝে শোনা গিয়েছিল, আফরান নিশোকে নিয়ে ‘সিন্ডিকেট ২’ নাকি হবে না, এটা কতটুকু সত্য? এমন প্রশ্নে শিহাব শাহীন বলেন, এটা ভূয়া তথ্য। ডিসেম্বরের শেষ দিকে ‘সিন্ডিকেট ২’ করবো তার আগে সেপ্টেম্বরে শুরু করবো ‘রসু খাঁ’।
জানা গেছে, আগামী সপ্তাহে অস্ট্রেলিয়া পাড়ি জমাচ্ছেন শিহাব শাহীন। দেশে ফিরবেন মাসের শেষ নাগাদ এরপর কাজে নামবেন।
স্বাস্থ্য খাতে চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটের চেয়ে আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে বরাদ্দ বেড়েছে। প্রস্তাবিত বাজেটে এই খাতে এবার বরাদ্দ ১ হাজার ১৮৯ কোটি টাকা বা ৩ দশমিক ২২ শতাংশ বাড়লেও মোট বাজেটের তুলনায় তা কমেছে শূন্য দশমিক ৪ শতাংশ। চলতি অর্থবছরে খাতটিতে বরাদ্দ ছিল মোট বাজেটের ৫ দশমিক ৪ শতাংশ। আগামী বাজেটে তা ৫ শতাংশে নেমে এসেছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে জাতীয় সংসদে ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেট পেশ করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। বাজেটে স্বাস্থ্যসেবা এবং স্বাস্থ্য-শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ খাতে ৩৮ হাজার ৫২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করেন। ২০২২-২৩ অর্থবছরে সংশোধিত বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ ছিল ৩৬ হাজার ৮৬৩ কোটি টাকা।
প্রস্তাবিত বাজেটে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে ২৯ হাজার ৪৩১ কোটি টাকা, যা আগের বছরের তুলনায় মাত্র ১৫০ কোটি টাকা বেশি। এর মধ্যে পরিচালন ব্যয় ১৭ হাজার ২২১ কোটি টাকা ও উন্নয়ন ব্যয় ১২ হাজার ২১০ কোটি টাকা। এছাড়া স্বাস্থ্য-শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটে ৮ হাজার ৬২১ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এই বরাদ্দ থেকেই নতুন মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠার ব্যয় নির্বাহ করা হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক সৈয়দ আবদুল হামিদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, এবার টাকার অঙ্কে গত বছরের তুলনায় (বর্তমান ২০২২-২৩ অর্থবছর) ১ হাজার একশ কোটির মতো বেড়েছে। কিন্তু বাজেট শেয়ারে সেটা কমেছে। সামগ্রিক বাজেটের গ্রোথ বা বৃদ্ধি ১২ শতাংশ, কিন্তু স্বাস্থ্যের বাজেটের বৃদ্ধি ৩ শতাংশ। তারমানে রাষ্ট্রীয় বাজেটে স্বাস্থ্য খাতের গুরুত্ব কমেছে। সেই কারণে ৫ দশমিক ৪ শতাংশ থেকে ৫ শতাংশে নেমে এসেছে।
এই স্বাস্থ্য অর্থনীতিবিদ বলেন, এবার কমার যৌক্তিক কারণ আছে। সেটা হলো স্বাস্থ্য বিভাগের সেক্টর প্রোগ্রামে উন্নয়ন বাজেট থেকে অর্থ আসে। সেই সেক্টর প্রোগ্রাম এই অর্থবছরে শেষ হয়ে প্রস্তাবিত অর্থবছর থেকে নতুন সেক্টর প্রোগ্রাম শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু চলমান সেক্টর প্রোগ্রাম সময়মতো বাস্তবায়ন করতে না পারায় সেটার সময় আরও এক বছর বাড়ানো হয়েছে। এই এক বছরের জন্য নতুন বাজেট থাকে না, পুরনো বাজেট থেকেই ব্যয় করতে হয়। ফলে বরাদ্দ না বাড়িয়ে পাঁচ বছরের বাজেট যদি ছয় বছরে গিয়ে ঠেকে, তাহলে প্রতি বছর টাকা কমে যায়। মূলত এ কারণে এবার টাকা কমে গেছে।
সরকার স্বাস্থ্য খাতে এবারও কিছু থোক বরাদ্দ রাখতে পারত বলে মনে করেন স্বাস্থ্য অর্থনীতির এই শিক্ষক। তিনি বলেন, কভিড ছাড়াও আমাদের অনেক জরুরি খাত আছে। এখন ডেঙ্গু চলছে। এটি ইমার্জেন্সি হয়ে যাবে। ফলে এটার জন্য যে ফান্ড দেওয়া আছে হাসপাতালে, রোগী বাড়লে সেটা দিয়ে হবে না। এরকম ইমার্জেন্সি আরও আসতে পারে। এরকম একটা থোক বরাদ্দ রাখলে স্বাস্থ্যের ইমার্জেন্সিতে সেখান থেকে ব্যয় করা যেত। কিন্তু সেটাও নেই। তার মানে কভিডের শিক্ষা থেকে আমরা কিছুই শিখিনি। প্রস্তাবিত বাজেটে সেটার প্রতিফলন নেই।
সামগ্রিকভাবে বাজেটে রোগীদের স্বাস্থ্যসেবার খরচ বেড়ে যাবে বলেও মনে করছেন এই স্বাস্থ্য অর্থনীতিবিদ। তিনি বলেন, এতে স্বাস্থ্যসেবা ও ওষুধসহ সামগ্রিকভাবে স্বাস্থ্য খাত নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার যথেষ্ট কারণ আছে।
যদিও এবারের বাজেটে ওষুধ, চিকিৎসাসামগ্রী ও স্বাস্থ্য সুরক্ষাসামগ্রী উৎপাদনে প্রয়োজনীয় কাঁচামাল আমদানিতে বিদ্যমান রেয়াতি সুবিধা অব্যাহত রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। এ ছাড়া ক্যানসার রোগীদের চিকিৎসা আরও সুলভ করার জন্য ক্যানসার চিকিৎসায় ব্যবহৃত ওষুধ, আইভি ক্যানুলা উৎপাদনের অন্যতম প্রধান উপাদান সিলিকন টিউবসহ আরও কিছু বিদ্যমান ওষুধের কাঁচামাল আমদানিতে রেয়াতি সুবিধা অব্যাহত রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। তামাক জাতীয় পণ্য যেমন তরল নিকোটিন, ট্রান্সডারমাল ইউস নিকোটিন পণ্যের বিপরীতে ১৫০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপ করার প্রস্তাব করা হয়েছে।