
প্রায় একমাস ধরে চলা বিশ্বকাপ ফুটবল উৎসব শেষ হতে চলল। গত আসরের দুই ফাইনালিস্ট ফ্রান্স এবং ক্রোয়েশিয়া এখনো বিশ্বকাপে টিকে আছে। তাদের সঙ্গে ফেভারিট আর্জেন্টিনা আর আফ্রিকার ডার্ক হর্স মরক্কো আছে শেষ চারে। প্রথমবারের মতো কোনো আফ্রিকান দল হিসেবে বিশ্বকাপের শেষ চারে এসে ইতিহাস গড়েছে মরক্কো।
এই বিশ্বকাপে আমরা অনেক চমক দেখেছি। জার্মানি, বেলজিয়াম, ডেনমার্ক, উরুগুয়ের মতো দল বিশ্বকাপের প্রথম রাউন্ডেই ছিটকে গেছে। একে একে বিদায় নিয়েছে স্পেন, পর্তুগাল এবং তাদের পথ ধরে ব্রাজিলও। বিশ্বকাপ থেকে ব্রাজিলের ছিটকে যাওয়া বিশ্বজুড়ে তাদের অনেক সমর্থকের হৃদয় ভেঙে দিয়েছে। এখন বিশ্বকাপটা দক্ষিণ আমেরিকায় নিয়ে যাওয়ার চ্যালেঞ্জটা আর্জেন্টিনার, ফ্রান্স আর ক্রোয়েশিয়া চাইবে কাপটা ইউরোপেই রেখে দিতে আর মরক্কো চাইবে গোটা বিশ্বকেই তাক লাগিয়ে দিতে। ক্রোয়েশিয়া বিশ্বকাপে প্রথম খেলে ১৯৯৮ সালে এবং এরমধ্যেই তারা দুইবার বিশ্বকাপের শেষ চারে পৌঁছে গেছে। আগের বিশ্বকাপে তারা রানার্স আপ, এইবার তারা ফেভারিট ব্রাজিলকে বিদায় করে দিয়ে শেষ চারে জায়গা করে নিয়েছে। কোয়ার্টার ফাইনালে আমরা দেখেছি ১২০ মিনিটের বাঁচামরার লড়াই। ওদের পরের প্রতিপক্ষ আর্জেন্টিনা, যারা আসরের অন্যতম শক্তিশালী দল নেদারল্যান্ডসকে হারিয়ে এসেছে সেমিফাইনালে।
আর্জেন্টিনাও পৌঁছে গেছে শেষ চারে, আকাশি-নীলরা মেসির জন্য কাপটা জিততে চায়। এটাই মেসির জীবনের শেষ বিশ্বকাপ। তারা যদি শিরোপা জিততে পারে, তাহলে তারা হবে তিনটি বা তারও বেশি বিশ্বকাপ জেতা চতুর্থ দল।
আসরের শুরুর দিকে আর্জেন্টিনা অনেক ভুগেছে। তবে সেসব ভুলিয়ে দিয়ে মেসির নেতৃত্বে একদল তরুণ প্রতিভাবান ফুটবলারকে নিয়ে দারুণ খেলে পৌঁছে গেছে সেমিফাইনালে। আর্জেন্টিনার তরুণ কোচ লিওনেল স্কালোনি অভিজ্ঞ লুই ফন হালের বিপক্ষে একটা ট্যাকটিকাল লড়াই জিতেছে। তারা পেনাল্টি শুট আউটে আরও শক্তিশালী হয়েই মাঠে নেমেছিল আর নেদারল্যান্ডসকে হারিয়ে সেরা চারে জায়গা করে নিয়েছে। এবার মেসির জন্য কাপ জেতার লক্ষ্য থেকে আর্জেন্টিনা মাত্র দুই ম্যাচ দূরে।
একজন আর্জেন্টাইন হিসেবে আমি চাইব লিওনেল মেসির হাতেই বিশ্বকাপটা উঠুক। সেটাই হবে দুই বছর আগে আমাদের ছেড়ে চলে যাওয়া ম্যারাডোনার প্রতি সবচেয়ে বড় শ্রদ্ধাঞ্জলি।
৩২ দলের লড়াই এসে ঠেকেছে চারে। ৬৪ ম্যাচের বিশ্বকাপের বাকি আর মাত্র দুই ম্যাচ। যে চার দল টিকে আছে, তাদের খেলা হয়ে গেছে ৫টা করে ম্যাচ। আসর সেরার লড়াইয়ের মাঠও তাই হয়ে এসেছে ছোট, এখন বাকি চার ম্যাচে লড়াইটা মূলত চারজনের ভেতরই সীমাবদ্ধ।
ইউরোপের দুই, দক্ষিণ আমেরিকার এক ও প্রথমবার আফ্রিকার এক দল নিয়ে চার দলের লড়াই থেকে টিকবে দুই। ফাইনালে সোনালি ট্রফি উঠবে কোনো এক দলের হাতে। বিশ্বকাপে শেষের এই সময়টা তাই সবচেয়ে আগ্রহের, সবচেয়ে উপভোগেরও। সোনালি ট্রফির জন্য মাস জুড়ে হওয়া লড়াইয়ের যতি পড়বে এই অর্ধে। দলগত প্রাপ্তির সঙ্গে থাকবে ব্যক্তিগত সেরার স্বীকৃতি। সর্বোচ্চ গোলদাতার গোল্ডেন শু, সেরা খেলোয়াড়ের গোল্ডেন বল ও সেরা গোলরক্ষকের গোল্ডেন গ্লাভসÑ যা একসময় পরিচিত ছিল লেভ ইয়াশিন পুরস্কার নামেও।
বলা হচ্ছে চারের লড়াই অথচ সামনে শুধু দুই। গোল ও টুর্নামেন্ট সেরা তারকার তালিকায় শুধু আর্জেন্টিনা ও ফ্রান্সের ফুটবলার। অবশ্যই লিওনেল মেসি আর ফরাসি দুজন কিলিয়ান এমবাপ্পে ও অলিভিয়ের জিরু। মেসি একসঙ্গে দুই পুরস্কারের পিছে ছুটছেন। আসরে ৪ গোল তার। সেমিফাইনাল ও ফাইনালে আরও পেলে এগিয়ে যাবেন লক্ষ্যের দিকে। ওদিকে এবারের সর্বোচ্চ ৫ গোল নিয়ে গোল্ডেন শু’র লড়াইয়ে একটু এগিয়ে আছেন এমবাপ্পে। মাত্র ২৩ বছরেই বিশ্বকাপে ৯ গোল করে ফেলা এই তরুণ মেসির মতোই আরও দুটি ম্যাচে খেলার সুযোগ পাচ্ছেন। একই সুযোগ অলিভিয়ের জিরুরও। গত বিশ্বকাপে একটিও গোল করতে না পারা জিরু এবার ৪ গোলে গোল্ডেন বুটের লড়াইয়ে। ফ্রান্সের সর্বোচ্চ ৫৩ গোলের মালিকও এই পুরস্কারের দাবিদার। গোল্ডেন গ্লাভসের লড়াইয়েও তিনজন। তবে এবার ক্রোয়েশিয়া ও মরক্কোও আছে। ম্যাচ ও পেনাল্টি শুটে দুর্ভেদ্য দেয়াল হয়ে আর্জেন্টিনার এমিলিয়ানো মার্তিনেজ, ক্রোয়েশিয়ার ডমিনিক লিভাকোভিচ ও মরক্কোর ইয়াসিন বুনো তিনজনই সেরা গোলরক্ষক হওয়ার দাবি রাখেন। ফাইনাল শেষে যে তার পোস্টকে অক্ষত রাখবেন তার হাতেই উঠবে সুদৃশ্য ওই গ্লাভস।
ক্রোয়েশিয়া ও মরক্কো দলগত চেষ্টায় উঠে এসেছে এই পর্যায়ে। কোনো একের ঝলক তাদের কাছে খুব একটা অর্থ রাখে না। তাই গোল্ডেন বল ও বুটে এই দুই দলের ফুটবলারের নাম নেই। এ নিয়ে আক্ষেপও নেই ক্রোয়েশিয়া ও মরক্কোর। খেলাটা শেষ পর্যন্ত তো ওই দলগত ট্রফির জন্যই। ট্রফি জয়ের আনন্দে বাড়তি মাত্রা দিতে পারে ব্যক্তিগত সাফল্য। এই সাফল্যে ২০১৪ বিশ্বকাপের পর টুর্নামেন্ট সেরা খেলোয়াড়ের দৌড়ে সবচেয়ে এগিয়ে লিওনেল মেসি। ৩৫ বছর বয়স তাকে যে সেই ২৫-এ নিয়ে যাবে কে জানত। হীরের মতো ঝলক দিয়েই ৭ বারের বর্ষসেরা জ্বলে উঠেছেন ফুল পাওয়ারে। গোল করছেন-করাচ্ছেনও। শেষ বিশ্বকাপে সোনালি ট্রফির নেশায় মাতিয়ে চলেছেন আসর।
মেসির শ্রেষ্ঠত্ব বা সেরার প্রশ্নে সন্দেহ নেই কোনো। বিশ্বফুটবলে এখনকার সেরা তিনের দুজন বিদায় নিয়েছেন। আপন মহীমায় টিকে আছেন আর্জেন্টাইন কিংবদন্তি। সৌদি আরব, মেক্সিকো, অস্ট্রেলিয়া ও নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে ৪ গোলের পথে ছুঁয়েছেন কিংবদন্তি দিয়েগো ম্যারাডোনার বিশ্বকাপে ৮ গোলের রেকর্ড। বিশ্বকাপে তার মোট গোল হয়েছে ১০টি। আর অ্যাসিস্টেও করেছেন রেকর্ড। এই বিশ্বকাপে দুটি অ্যাসিস্ট করেছেন। নকআউটে একটি অ্যাসিস্ট গ্রুপ পর্বের পর মোট ৫টি অ্যাসিস্ট করে ছাড়িয়ে গেছেন ব্রাজিল কিংবদন্তি পেলেকে। বিশ্বকাপে গোল্ডেন বল হাতে উঠেছিল মেসির। যা তিনি নিজেই হয়তো চাননি। সেবার এই বিশ্বকাপের মতো উজ্জ্বল ছিলেন না। কিন্তু এই আসরের পারফরম্যান্স মেসিকে একটি ট্রফি তো এনে দেবেই। মেসি অবশ্যই সোনালি ট্রফিটাই চাইবেন। শীর্ষ পুরস্কারটি তার হাতে উঠলে গোল্ডেন বলও উঠবে। হতে পারে গোল্ডেন বুটও পেয়ে যাচ্ছেন। তখন ১৯৬২’র মানে গারিঞ্চা, ১৯৭৮’র মারিও কেম্পেস ও ১৯৮২’র পাওলো রসির পর এক আসরে বুট ও বলজয়ী চতুর্থ কিংবদন্তি হয়ে যাবেন তিনি।
গত বিশ্বকাপে চার গোল করেছিলেন এমবাপ্পে। এর মধ্যে পেলের পর কিশোর বয়সে বিশ্বকাপ ফাইনালে গোলের রেকর্ডও ছিল। এবার সেই রেকর্ডকে যেন ছাড়িয়ে যেতে উঠে পড়ে লেগেছেন এই তরুণ। বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে গোল করেছেন। পরের ম্যাচে ডেনমার্কের জালে দুটি। নকআউটে পোল্যান্ডের জালে আবারও দুই গোল। এই ৫-এ মোট ৩১ গোল নিয়ে ছুঁয়েছেন ফরাসি কিংবদন্তি জিনেদিন জিদানকে। কোয়ার্টারে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ছায়া হয়ে ছিলেন নিজের। কিন্তু সেমিফাইনালে এমন বিবর্ণ হতে চাইবেন না নিশ্চয়ই।
দিদিয়ের দেশমের জায়গায় ভিন্ন কেউ হলে জিরুকে এই বিশ্বকাপের দলেই রাখত না। গতবার শিরোপা জয়ের পথে একটিও স্কোর নেই এই নাম্বার নাইনের। অথচ দেশম বিশ্বাস রেখেছেন। বলেছিলেন তার দলে ফলস নাইন বলতে জিরু-ই আছে এবং সেই থাকবে। কোচের আস্থার প্রতিদান দারুণভাবে দিলেন জিরু। বিশ্বকাপের শুরুর ম্যাচেই অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে জোড়া গোল করেছেন। নকআউটে টানা দুই ম্যাচে পোস্ট খুঁজে পেয়েছেন। গোল্ডেন বুটের দৌড়ে তাই জিরুও ভালোভাবে আছেন।
ক্রোয়েশিয়া যদি শেষ পর্যন্ত দারুণ কিছু করে ফেলে, তাহলে গোল্ডেন বলটা উঠতে পারে লুকা মদ্রিচের হাতেও। মাঝমাঠের জেনারেল মদ্রিচ এবারও প্রায় একক কৃতিত্বেই বুড়িয়ে যাওয়া ক্রোয়েশিয়াকে নিয়ে এসেছেন সেমিফাইনালে। ব্রাজিলকেও হারিয়ে দেওয়া ক্রোয়েশিয়া যদি লাতিনের শেষ প্রতিনিধিকেও বিদায় করে দেয়, তাহলে নিঃসন্দেহে মদ্রিচই পাবেন সোনার বলটা।
২০০২ বিশ্বকাপে গোল্ডেন বলজয়ী ইতিহাসে একমাত্র গোলরক্ষক ছিলেন জার্মানির অলিভার কান। মার্তিনেজ, লিভাকোভিচ ও বুনো দুর্দান্ত খেললেও বল জয়ের সুযোগটা তাদের নেই। মেসি-এমবাপ্পেরা যে গোল-অ্যাসিস্টে তাদের চেয়ে এগিয়ে। তবে গ্লাভসের লড়াইটাও তো জমজমাট। সেমিফাইনালে মার্তিনেজ ও লিভাকোভিচের মুখোমুখি হওয়া এ লড়াই জমিয়ে তুলেছে আরও। এ দুজনের একজনকে গ্লাভসের মায়া ছাড়তে হবে পরের ম্যাচেই। তবে অন্যদিক থেকে বুনো হয়তো আশা টিকিয়ে রাখতে পারেন।
তবে বল, বুট ও গ্লাভসের এই সমীকরণে পরিসংখ্যান দিয়ে অঙ্কটাই শুধু মেলানো যায়। আসল লড়াই তো হবে মাঠে। ফাইনালের ফলের আগেই হয়তো স্পষ্ট হয়ে যাবে ব্যক্তিগত অর্জনের ট্রফি কোনটিতে কার নাম উঠছে।
খেলার সময় তখন গড়িয়েছিল ৮২ মিনিটে। ডি বক্সের ভেতরে মাউন্টকে তখন ফাউল করলেন থিও হার্নান্দেজ। ভিএআর চেক করে পেনাল্টি দিলেন রেফারি। কিন্তু ইংল্যান্ড অধিনায়ক হ্যারি কেইন নার্ভ ধরে রাখতে পারেননি। শটটি মারলেন গোলপোস্টের ওপর দিয়ে। সুযোগ ছিল সমতায় ফেরার, কিন্তু ইতিহাসে আক্ষেপ হয়ে থাকার মতো পেনাল্টি মিসে যে ম্যাচটাই ফসকে গেছে। তাতে কোয়ার্টার ফাইনাল থেকেই বিদায় নিতে হয় ইংলিশদের।
কাতার বিশ্বকাপে শিরোপায় চোখ ছিল ইংল্যান্ডের। সেই আত্মবিশ্বাস দেখা গিয়েছিল আগেরদিন ম্যাচ-পূর্ববর্তী সংবাদ সম্মেলনেও। কিন্তু পেনাল্টি মিসে যে কোয়ার্টার ফাইনালেই থেমে গেছে তাদের বিশ্বজয়ের স্বপ্ন। যেখানে আক্ষেপ হয়ে থাকবে ইংলিশ অধিনায়কের নাম।
কেইনের এই পেনাল্টি মিসই বিশ্বকাপে প্রথম নয়। এবারের বিশ্বকাপে তো এমন সুযোগ হাতছাড়া করার অসংখ্য নজির তৈরি হয়েছে ইতিমধ্যেই। টুর্নামেন্টের নকআউট পর্বে এমন মিস মনে করিয়ে দেয় ১৯৯৪ বিশ্বকাপের ফাইনালে পেনাল্টি মিস করা ইতালির রবার্তো বাজ্জিওকে।
সেবার ফাইনালে ব্রাজিলের প্রতিপক্ষ ছিল ইতালি। নির্ধারিত সময়ে গোলশূন্য সমতায় শেষ হলে খেলা গড়ায় টাইব্রেকারে। প্রথম চার শটে ৩ গোলে এগিয়েছিল ব্রাজিল। আর তিনটি শটের মধ্যে ২ গোল করেছিল ইতালি। চতুর্থ শট নিতে যান ইতালির রবার্তো বাজ্জিও। কিন্তু তিনিও যেন কেইনের মতোই নার্ভ হারিয়ে ফেলেছিলেন। শটটি ওপর দিয়ে মারলেন, ইতিহাসে আক্ষেপ হয়ে থাকার মতো এই পেনাল্টি মিসে শিরোপা নিশ্চিত হয় সেলেসাওদের। ‘দ্য ডিভাইন পনিটেইল’ এর হতাশার ছবিটাও তাতে স্থায়ী হয়ে যায় ফুটবল ভক্তদের মনে।
পেনাল্টি অবশ্য ইংলিশদের পুরনো শত্রু। বিশ্বকাপে তিনবার ইংলিশরা বাদ পড়েছে টাইব্রেকে হেরে। ১৯৯০ বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে পশ্চিম জার্মানির কাছে টাইব্রেকে হেরেছিল ইংল্যান্ড। ১৯৯৮ বিশ্বকাপের শেষ ষোলোতে টাইব্রেকে হারে ইংলিশরা। সেবার প্রতিপক্ষ ছিল আর্জেন্টিনা। ২০০৬ বিশ্বকাপে কোয়ার্টারে ইংল্যান্ড পর্তুগালের কাছে হারে টাইব্রেকারে। তবে সবশেষ ২০১৮ বিশ্বকাপে শেষ ষোলোতে কলম্বিয়াকে টাইব্রেকে হারিয়েছিল ইংল্যান্ড। রাশিয়াতে চতুর্থ হয়েছিল হ্যারি কেইন।
বাজ্জিওর মতোই হ্যারি কেইন ওপর দিয়ে শট মেরে গোলবঞ্চিত হন। একইভাবে ১৯৯৬ সালের ইউরোর সেমিফাইনালে পেনাল্টি মিস করেছিলেন ইংলিশদের বর্তমান কোচ গ্যারেথ সাউদগেট। আবার তার অধীনেই ২০২০ ইউরোর ফাইনালে মার্কাস রাশফোর্ড, জেডন সানচো ও বুকায়ো সাকা টাইব্রেকারে পেনালটি শট মিস করেছিলেন। আর সবশেষটা শনিবার রাতে ফ্রান্সের বিপক্ষে করলেন কেইন।
কেইনের নার্ভ হারানোর অন্যতম কারণ তার টটেনহামের সতীর্থ বন্ধু হুগো লরি। এ দুজনে ২০১৩ সাল থেকে এক ক্লাবে খেলছেন। একসঙ্গে ৩২৭ ম্যাচ খেলেছেন, যা হয়তো জাতীয় দলের সতীর্থদের সঙ্গেও খেলা সম্ভব হয় না। কেইন বল পায়ে কীভাবে দৌড়ায়, তার শট নেওয়ার অ্যাঙ্গেল কেমন হতে পারে, তা লরিসের চেয়ে বেশি অন্য কোনো গোলকিপারের জানার কথা না। সেটা মনে করেই হয়তো কেইন বোকা বানাতে চেয়েছিলেন বন্ধুকে। প্রথম প্রচেষ্টায় কেইন সফল হলেও একই ম্যাচে দ্বিতীয়বার প্রিয় বন্ধুর বিপক্ষে পেনাল্টি নিতে গিয়ে আর পারেননি।
ম্যাচের দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে আরও একটি পেনালটি পেয়েছিল ইংল্যান্ড। সেখানে লরিসকে পরাস্ত করে গোলের দেখা পেয়েছিলেন কেইনই। কিন্তু শেষটা আর পারেননি। তাতে ২-১ গোলে পরাজিত হয় ফ্রান্সের কাছে। পেনাল্টি থেকে গোল আদায় করে নিতে পারলে ম্যাচের ভাগ্যটাও হয়তো পালটে যেত। আর সেটাই অন্তজর্¦ালায় পোড়াচ্ছে হ্যারি কেইনকে।
ম্যাচ শেষে সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘অবশ্যই, ব্যথাটা তীব্র। সারা জীবন এই গ্লানি নিয়ে আমাকে বাঁচতে হবে। আমি প্রস্তুতি সব খেলার আগেই সমানভাবে নেই। আমি আত্মবিশ্বাসী ছিলাম, কিন্তু যেভাবে শটটা নিতে চেয়েছিলাম সেটা হয়নি। তবে এটা নিয়ে পড়ে থাকলে হবে না। দল হিসেবে আমরা ভালো খেলেছি, অবশ্যই প্রত্যেক খেলোয়াড়কে নিয়ে গর্বিত হতে হবে। এই দলটি ভবিষ্যতে ভালো কিছু করার সামর্থ্য রাখে।’
পেনাল্টি থেকে গোল করে সমতা ফিরিয়েছিলেন কেইন, তিনিই আবার পেনাল্টি মিস করে দ্বিতীয়বারের মতো সমতা ফেরানোর সুযোগ নষ্ট করলেন, বিদায় নিল ইংল্যান্ড। বাজ্জিও’র মতো কেইনকেও হয়তো বাকি জীবনটা এই আক্ষেপ বয়ে বেড়াতে হবে, বিশ্বকাপ শেষে যখন ক্লাবের হয়ে খেলায় ফিরবেন প্রতিবার লরির সঙ্গে দেখা হলেই যে কেইনের মনে পড়বে বিশ্বকাপে পেনাল্টি মিসের কথা!
পর্তুগাল ও মরক্কো ম্যাচে শেষ বাঁশি বাজার সঙ্গে সঙ্গে অশ্রুসিক্ত চোখে টানেলের দিকে গেছেন ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো। মাঠের একপ্রান্তে দেখা গেছে পর্তুগিজ খেলোয়াড়দের হতাশা; আরেকদিকে প্রথমবার সেমিফাইনালে ওঠার আনন্দে মাতোয়ারা মরক্কো। রোনালদোর সঙ্গে ৩৯ বছরের পেপেও কাতার বিশ্বকাপ রাঙাতে চেয়েছিলেন। সেটি হয়নি। অবশ্য ম্যাচের পর রেফারিকে নিয়ে ক্ষোভ ঝেড়েছেন পেপে। আর্জেন্টাইন রেফারিকে এই ম্যাচের দায়িত্ব দেওয়া মানতে পারছেন না পেপে।
পেপে বলেন, ‘আমরা একটি গোল খেয়েছি, যা প্রত্যাশিত ছিল না। তবে আগের রাতে যা হয়েছে এরপর এই ম্যাচে আর্জেন্টাইন রেফারিকে দায়িত্ব দেওয়া গ্রহণযোগ্য নয়। আমি যা দেখলাম তার প্রেক্ষিতে বলতে পারি, বিশ্বকাপটা তারা এখন চাইলে আর্জেন্টিনাকে দিয়ে দিতে পারে। আমি এটা এখন বলতেই পারি।’ নির্ধারিত সময়ের পর মাত্র ৮ মিনিট যোগ করা নিয়েও ক্ষোভ জানান পেপে। তিনি আরও বলেন, ‘দ্বিতীয়ার্ধে কিছু দেওয়া হলো না। মাত্র ৮ মিনিট অতিরিক্ত সময়। দ্বিতীয়ার্ধে শুধু আমরাই খেলার চেষ্টা করেছি। আমরা হতাশ। আমাদের জেতার মতো সামর্থ্য ছিল, তবে আমরা পারিনি।’
ব্রুনো ফার্নান্দেজও রেফারি নিয়ে সমালোচনা করেন। ‘এটি অদ্ভুত যে আমাদের ম্যাচে এমন এক রেফারি ছিলেন যার দেশ এখনো বিশ্বকাপে আছে। আমি কোনো পর্তুগিজ রেফারিকে দেখলাম না। তারা যদি চ্যাম্পিয়নস লিগের জন্য ভালো রেফারি হয়ে থাকে এখানের জন্যও তারা যোগ্য।’ ম্যাচে থাকা রেফারিরা বিশ্বকাপ পরিচালনার জন্য যোগ্য নন বলেও মনে করেন ব্রুনো। ‘তারা চ্যাম্পিয়ন্স লিগের নন, তারা এই ধরনের খেলায় অভ্যস্ত নন। এমন ম্যাচের জন্য তাদের গতি নেই। (তারা) পরিষ্কারভাবে আমাদের বিপক্ষে মাঠে নেমেছিল। প্রথমার্ধে আমাকে স্পষ্ট ফাউল করা হয়েছে, যেটা ছিল পেনাল্টি।’
এর আগে নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে রেফারিং নিয়ে সমালোচনা করেছিলেন আর্জেন্টাইন খেলোয়াড় এবং সমর্থকরা। সেই ম্যাচে ১৮টি কার্ড দেখান স্প্যানিশ রেফারি লাহোস। মেসি ও এমিলিয়ানো মার্তিনেজ প্রকাশ্যে রেফারির সমালোচনা করেছিলেন।
আগস্টের শুরুতে ভাহিদ হালিদহোদিচ যখন বরখাস্ত হলেন, এর পর থেকেই উঠে যায় প্রশ্ন। তিন মাসেরও কম সময় পর কাতার বিশ্বকাপ। তার আগে বসনিয়ান কোচের স্থলাভিষিক্ত কে হবেন? মরক্কোকে কে দেখাবেন দিশা? সংক্ষিপ্ত তালিকায় জাদরেল বেশ ক’জন ভিনদেশি কোচের সঙ্গে ছিল তার নাম। ফুটবল বিশেষজ্ঞরা ভিনদেশিতেই আস্থা রাখার পরামর্শ দিয়েছিলেন মরোক্কান ফুটবল সংস্থাকে। তবে সে পথে না হেঁটে এমএফএ দায়িত্ব দিল ওয়ালিদ রেগরাগুইকে। মরক্কোর সাবেক ফুটবলারকে গুরুদায়িত্ব দেওয়াটা পছন্দ হয়নি ফুটবল ক্রিটিকসদের। অনেকেই হেয় করেছেন ৪৬ বছর বয়সী কোচকে। এমনকি একজন তো তাকে ‘অ্যাভোকাডো হেড’ নাম দিয়ে বসেছিলেন। সমালোচকদের কেউই ভাবেননি এই অ্যাভোকাডো হেডের ছোঁয়াতেই আমূল বদলে যাবে মরক্কো। ইতিহাস গড়ে তারা নাম লেখাবে বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে!
প্রথম আফ্রিকান দল হিসেবে সেমিফাইনালে নাম লিখিয়ে মরক্কো গড়েছে ইতিহাস। একমাত্র অপরাজিত দল হিসেবে তারা পা রেখেছে শেষ চারে। ১৪ ডিসেম্বর তাদের সামনে বর্তমান বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ফ্রান্স। সেই ম্যাচে কী হতে পারে, তা সময় বল দেবে। কাতার বিশ্বকাপে শুরু থেকে আজ পর্যন্ত মরক্কো যেসব কীর্তি গড়ে চলেছে, তা তো সেই অ্যাভোকাডো হেডের ক্যারিশমায়। দলটিতে মেসি, রোনালদো, নেইমার, এমবাপ্পের মতো মহাতারকা নেই। এমনকি আফ্রিকার বড় বিজ্ঞাপন মোহাম্মদ সালাহ, সাদিও মানের মতোও তারকা নেই। অথচ তারা একের পর এক চমক সৃষ্টি করে চলেছে। কীভাবে ভোজবাজির মতো বদলে গেল মরক্কো? কোন জাদুবলে তারা সেয়ানে সেয়ানে টেক্কা দিচ্ছে বিশ্ব ফুটবল শাসন করাদের সঙ্গে? সেই উত্তরটা খুঁজতে বেশ ক’জন মরক্কো সমর্থকের সঙ্গে কথা হলো। তাদের প্রায় প্রত্যেকের এক জবাব, এই বদলের নায়ক ওয়ালিদ রেগরাগুই।
আটলান্টিক মহাসাগরের তীর ঘেঁষে গড়ে ওঠা মরক্কোকে আর দশটি আফ্রিকান দেশের সঙ্গে ঠিক মেলানো যাবে না। একটা সময় মরক্কো ছিল ফরাসি কলোনি। তবে আরবের প্রভাব হাজার বছর ধরেই ব্যাপক। ফলে এক মিশ্র সংস্কৃতির মানুষের বাস সেখানে। তাদের ভাষাও আরবি। মুসলিম রাষ্ট্র হলেও মধ্যপ্রাচ্যের মতো তারা ততটা রক্ষণশীল নয়। বরং কৃষি ও পর্যটন খাতকে অধিক প্রাধান্য দিয়ে অর্থনীতিকে শক্তিশালী করেছে। এ সুবাদেই অনেক ভিনদেশি ঘাঁটি গেড়েছে। ঐতিহ্য ও আধুনিকতার মিশেলে গড়ে ওঠা দেশটির মানুষ অত্যন্ত পরিবারমুখী। মরোক্কানরা সেই মিশ্র সংস্কৃতিরই বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়ে চলছেন দোহার স্টেডিয়াম, মেট্রো স্টেশন থেকে শুরু করে অলিতে-গলিতে। আরব ও আফ্রিকার সমান প্রভাব থাকায় সমর্থনটাই পাচ্ছে তারা। একে তো মুসলিম রাষ্ট্র বলে মধ্যপ্রাচ্যের মানুষ গলা ফাটাচ্ছে তাদের হয়ে। আবার আফ্রিকার নানা প্রান্তের মানুষও গর্বিত মরক্কোর কীর্তিতে। আর এই সীমাহীন আনন্দের উপলক্ষটা এনে দিয়েছেন রেগরাগুই মাত্র আড়াই মাস দলটির সঙ্গে কাজ করে।
এফ গ্রুপে মরক্কোর স্বপ্ন যাত্রার শুরুটা হয় গতবারের রানার্স-আপ ক্রোয়েশিয়াকে রুখে দিয়ে। পরের ম্যাচে বেলজিয়ামকে ২-০ গোলে হারিয়ে আরও বড় অঘটনের জন্ম দেয় তারা। গ্রুপের শেষ ম্যাচে কানাডাকে ২-১ এ হারিয়ে ১৯৮৬ সালের পর প্রথমবারের মতো গ্রুপের গেড়ো খুলতে পারে মরক্কো। সেটাও আবার গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হিসেবে। চমকের এখানেই শেষ নয় দ্বিতীয়পর্বে তারা টাইব্রেকারে ২০১০ বিশ্বকাপজয়ী স্পেনকে আর কোয়ার্টার ফাইনালে ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর স্বপ্ন ভেঙে দিয়ে পর্তুগালকে হারিয়ে সেমিফাইনাল নিশ্চিত করে। এবার তাদের ফ্রান্সকে চমকে দেওয়ার পালা।
যে বিশ্বাসে তারা স্থানীয় একজন কোচকে দলের দায়িত্ব দিয়েছিল, সেই একই বিশ্বাসে ভর করে সমর্থকরা মনে করেন এই দলের আরও অনেক কিছু অর্জনের সামর্থ্য আছে। ৩০ বছরের আহমেদ যেমন বললেন, ‘আসলে বিশ্বাসটাই সবচেয়ে বড় ব্যাপার। ওয়ালিদ রেগরাগুই সেই বিশ্বাসটাই বুকে ধারণ করে দলটাকে একেবারে বদলে দিয়েছেন। আমরা ১৯৭৬ সালে একবারই আফ্রিকা কাপ অব নেশন্স জিতেছিলাম। সেই দলেরই এক সদস্য কোচ হয়ে ২০০৪ সালে মরক্কোকে নিয়ে গিয়েছিলেন ফাইনালে। তবে তিউনিসিয়ার কাছে সেবার হেরে গিয়েছিলাম। সেই দলের সদস্য ছিলেন ওয়ালিদ। আপনি কাঁড়ি কাঁড়ি ডলার খরচ করে হাই প্রোফাইল বিদেশি কোচ নিয়োগ দিতে পারতেন। তবে তার সবকিছু বুঝি নিতেই অনেক সময় লেগে যেত। ওয়ালিদের সেই সমস্যাটা হয়নি। মরক্কোর ফুটবলের নারীনক্ষত্র তার জানা। খেলোয়াড়দের মস্তিষ্ক পড়ে ফেলার অসামান্য শক্তি আছে তার। মাত্র আড়াই মাসে তিনি দল নিয়ে অনেক কাজ করেছেন। তাতেই দলটা বদলে গেছে।’ পাস থেকে রাসুল খালিদ যোগ করলেন, ‘আমরা যে শীর্ষ পর্যায়েও লড়াই করতে জানি তা প্রথম বোঝা গেছে চার বছর আগে রাশিয়া বিশ্বকাপে। সেবার আমরা স্পেন আর পর্তুগালের সঙ্গে একই গ্রুপে ছিলাম। ইউরোপের দুই শক্তিশালী দলের সঙ্গে অনেক ভালো খেলেও শেষ পর্যন্ত হেরে যাই। সেবারের বুক চিতিয়ে লড়াইটাই আমাদের এবার অনেক উজ্জীবিত করেছে। আর আমাদের দলে বড় কোনো তারকা নেই। এ দলের সবাই রাজা। তাই দলটা অনেক বেশি ঐক্যবদ্ধ।’ এই ঐক্যের সংগীতটা বেঁধে দিয়েছেন ওয়ালিদ, ঠিক করে দিয়েছেন সুর-তাল-লয়। সেটাই তটস্থ করে হাকিম জিয়েচ, ইয়াসিন বোনো, এন-নেসরিরা গেয়ে চলেছেন বিজয় সংগীত। তাতেই সমালোচকদের মুখে চুন-কালিটা লেপে দিতে পারছেন মরক্কো কোচ। অ্যাভোকাডো ফলের ভেতরে একটা ছোট্ট ফুটবল ঢুকিয়ে, তা নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় পোজও দিয়েছেন, ‘এই নামটা আমার বেজায় পছন্দ। তবে এই অ্যাভোকাডোর ভেতরে বীজ নেই, আছে শুধুই ফুটবল।’ ওয়ালিদের চুলহীন মাথায় এখন কাজ করছে জন্মস্থানকে হারানোর ভাবনা। ফ্রান্সে জন্ম নেওয়া, বেড়ে ওঠা, ফুটবল ক্যারিয়ারের বড় একটা সময় কাটানোর অভিজ্ঞতা থেকেই তিনি এবার কষছেন এমবাপ্পেকে থামানোর ছক। মোহাম্মদদের মতো তরুণদের বিশ্বাস এই ওয়ালিদই পারবেন, মরক্কোকে স্বপ্নের ফাইনালে নিয়ে যেতে।
পর্তুগাল-মরক্কো ম্যাচ নিয়ে আমার কলামে লিখেছিলাম, ‘আরেকটা মরক্কো চমক হতেই পারে।’ হ্যাঁ, সেটাই হলো। তবে এবার আর চমক বলতে চাই না। যোগ্য দল হিসেবেই সেমিফাইনালে পা রাখল আফ্রিকার দেশটি। তাদের কৌশলের কাছে হার মানতে বাধ্য হলো পর্তুগাল।
পর্তুগাল যত সুযোগই তৈরি করুক, মরক্কোর মিডফিল্ডার বা ডিফেন্ডাররা কখনোই তাদের জায়গা দেয়নি। পরাস্ত হলেও সঙ্গে সঙ্গে বল কাড়ার চেষ্টা করেছে। হাল ছাড়েনি। প্রতিপক্ষ খেলোয়াড় যখন পরাস্ত হওয়ার পর ছেড়ে দেয়, তখন সিদ্ধান্ত নেওয়া যায় বল নিয়ে আমি কী করব। কিন্তু কেউ পরাস্ত হওয়ার পর পেছন পেছন আসতে থাকলে তখন আসলে পরের কাজটা ঠিকঠাক করা যায় না। সেই হিসাব করলে বলব মরক্কো সবসময় লড়াইয়ের মানসিকতায় ছিল। ওদের অধিনায়ক রোমান সাইস ব্যথা পাওয়ার পর বসে গেলেও খেলায় তার প্রভাব পড়েনি। সোফিয়ান আমরাবাত আবারও সবাইকে মুগ্ধ করেছে নিজের পারফরম্যান্সে।
এখন সেমিফাইনালে ফ্রান্সের মুখোমুখি হতে হবে মরক্কোকে। রোমান সাইস খেলতে না পারলে দলের জন্য সেটা বড় ধাক্কা হবে। তবে এখন আর হারানোর কিছু নেই তাদের। তাই ফ্রান্সকেও পরাস্ত করার চেষ্টা করবে তারা। বলতেই হয়, এই মরক্কো ভয়ের ফ্রান্সের জন্যও।
তবে এমনিতে হিসাবে করলে ফ্রান্স অবশ্যই এগিয়ে থেকে মাঠে নামবে। মরক্কোর ইতিহাস গড়া জয়ের দিনেই আরেক কোয়ার্টার ফাইনালে ইংল্যান্ডকে হারিয়েছে ফ্রান্স। ফ্রান্স-ইংল্যান্ড ম্যাচের বিশ্লেষণে যদি আসি, ইংল্যান্ড বল পজিশন বেশি রেখেছে। দুটি পেনাল্টি পেয়েছে ইংল্যান্ড। আমি বলব দুটিই তাদের বোকার মতো উপহার দিয়েছে ফ্রান্স। এই মানের খেলোয়াড়দের কাছ থেকে এটা আশা করার মতো না। হ্যারি কেইন অবশ্য দ্বিতীয় পেনাল্টিটা মিস করল। ওই মিসটা না হলে খেলা হয়তো অতিরিক্ত সময়ে গড়াত।
ফ্রান্স ও মরক্কোর মধ্যে ফাইনালে ওঠার লড়াই হবে। আরেক সেমিফাইনালে খেলবে আর্জেন্টিনা ও ক্রোয়েশিয়া। কোয়ার্টার ফাইনালে ক্রোয়াটদের বিপক্ষে ব্রাজিল তো প্রায়ই ম্যাচ বের করে নিয়েছিল। গত বিশ্বকাপের পারফরম্যান্সসহ যদি চিন্তা করি, ফ্রান্সের মতো ক্রোয়েশিয়াও দারুণ পেশাদার নৈপুণ্য দেখিয়ে যাচ্ছে। অভিজ্ঞ ও তারুণ্যের মিশ্রণটা খুব ভালো। মিডফিল্ড তো বিশ্বমানের। তবে এবারের আর্জেন্টিনাও আবার একেবারে ভিন্ন দল। বিশেষ করে লিওনেল মেসি তো অপ্রতিরোধ্য। প্রতিপক্ষ দল কোনো প্ল্যানেই তাকে আটকাতে পারছে না। পার্থক্য গড়ে দিচ্ছেন। তাই মেসির জন্য আর্জেন্টিনাই এগিয়ে থাকবে বলে আমি মনে করি।
নিজের বিদায়ী ম্যাচ বলেই কিনা জ্বলে উঠলেন সার্জিও রামোস। শুরুতেই পেয়ে যান গোলের দেখা। কিলিয়ান এমবাপ্পে আছেন তার আগের মতোই। তিনিও ডাবল লিড এনে দেন। তবে বিদায়ী ম্যাচে নিষ্প্রভ রইলেন লিওনেল মেসি। তাতেই কিনা শুরুতেই এগিয়ে যাওয়া ম্যাচটি হার দিয়ে শেষ করেছে পিএসজি।
লিগ ওয়ানের শেষ ম্যাচে ক্লেরমো ফুতের সঙ্গে ৩-২ গোলে হেরে গেছে প্যারিসিয়ানরা। তাতে রাঙানোর বদলে বিষাদভরা বিদায় হলো মেসি-রামোসদের।
আগেই লিগ শিরোপা নিশ্চিত করা পিএসজি মৌসুমে নিজেদের এই শেষ ম্যাচে দুটি পরিবর্তন নিয়ে মাঠে নেমেছিল। হুগো একিতেকে ও আশরাফ হাকিমিকে ফেরান কোচ ক্রিস্তফ গালতিয়ের।
শুরুতে গুছিয়ে উঠতে সময় লেগেছে পিএসজির। প্রথম ১০ মিনিটের পর ধীরে ধীরে নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ২১ মিনিটের মধ্যে এগিয়ে গিয়েছিল ২-০ গোলে। রামোস ১৬ মিনিটে হেড থেকে এবং তার ৫ মিনিট পর কিলিয়ান এমবাপ্পে পেনাল্টি থেকে গোল করেন।
২-০ গোলে পিছিয়ে পড়ে ক্লেরম ফুতের পাল্টা লড়াই শুরু করতে সময় নিয়েছে মাত্র ৩ মিনিট। ২৪ মিনিটে গোল করেন ক্লেরমঁর গাস্তিয়েন। এর প্রায় ১২ মিনিট পরই পেনাল্টি থেকে গোল করার সুযোগ নষ্ট করেন ক্লেরমঁ স্ট্রাইকার কেয়ি। পরে অবশ্য ৬৩ মিনিটে তাঁর গোলেই জিতেছে ক্লেরমঁ। প্রথমার্ধের যোগ করা সময়ে ক্লেরমঁর হয়ে সমতাসূচক গোলটি জেফানের।
বিরতির পর গোলের দারুণ একটি সুযোগ নষ্ট করেন মেসি। ৫৪ মিনিটে বাঁ প্রান্ত দিয়ে এমবাপ্পে ঢুকে পড়েন ক্লেরমঁর বিপদসীমায়। তাঁর ক্রস পেয়ে যান ডান প্রান্ত দিয়ে দৌড় বক্সে ঢোকা মেসি। সামনে গোলকিপার একা, কিন্তু মেসি অবিশ্বাস্যভাবে বলটা পোস্টের ওপর দিয়ে মারেন।
সতীর্থ গোলকিপার সের্হিও রিকোর সুস্থতা কামনা করে বিশেষ জার্সি পরে মাঠে দাঁড়িয়েছিলেন মেসি-এমবাপ্পেরা। ঘোড়ায় চড়তে গিয়ে দূর্ঘটনায় আহত হয়ে হাসপাতালে রয়েছেন রিকো। ম্যাচে বিশেষ জার্সি পরে খেলেছে পিএসজি। মেসি-রামোসদের জার্সির পেছনে রিকোর নাম লেখা ছিল।
৩৮ ম্যাচে ৮৫ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের শীর্ষে থেকে মৌসুম শেষ করল পিএসজি। ৮৪ পয়েন্ট নিয়ে দুইয়ে লেঁস। তৃতীয় মার্শেইয়ের সংগ্রহ ৭৩ পয়েন্ট। ৬৮ পয়েন্ট নিয়ে চারে ইউরোপা লিগ নিশ্চিত করা রেঁনে।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতিতে জোর করে হারানো হয়েছে।
গতকাল রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
এই নিয়ে ঘনিষ্ঠ অনেকের কাছে জানতে চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। ভিন্ন কোনো জটিলতার সৃষ্টি হলে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে গাজীপুরের যেকোনো আসন থেকে মনোনয়ন পাবেন তিনি। সে ক্ষেত্রে গাজীপুর সিটির ভোটে যে সংসদ সদস্য দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে কাজ করার তথ্য মিলবে তাকেই বাদ দেওয়া হবে। এ সিটি ভোটে হারের কারণ জানতে প্রধানমন্ত্রী নিজস্ব একটি সংস্থাকে নির্ভুল তথ্য দিতে নির্দেশ দিয়েছেন।
নির্বাচনকালীন সরকারে মন্ত্রীর দায়িত্বও পেতে পারেন আজমত, ওই সূত্র দাবি করে। সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
নতুন অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে ১৩ ধরনের জ্বালানি তেল ও পেট্রোলিয়াম পণ্যের ওপর থেকে বিদ্যমান ৫ শতাংশ আগাম কর প্রত্যাহারের পরিকল্পনা করেছে সরকার। অন্যদিকে উৎপাদন পর্যায়ে তরল করা পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) ভ্যাট ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে সাড়ে ৭ শতাংশ করা হয়েছে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে পেট্রোল, অকটেন ও ডিজেল আমদানিতে প্রতি লিটারে ১৩ দশমিক ৭৫ টাকা করে শুল্ক আরোপ করার প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এ ছাড়া অন্যান্য জ্বালানি জেট ফুয়েল, ফার্নেস অয়েল, লুব বেইজ অয়েল, কেরোসিনের ক্ষেত্রে প্রতি টনে ২৫ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। এত দিন এসব জ্বালানি তেল আমদানির ক্ষেত্রে ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ ছিল।
আমদানি করা পণ্যের যথাযথ মূল্য নির্ধারণে ২০২২-২৩ অর্থবছরে পণ্যের ট্যারিফ মূল্য ও ন্যূনতম মূল্য নির্ধারণ-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনে পেট্রোলিয়াম ও এর উপজাত দুটি হেডিংয়ের আওতায় ১২টি এইচএস কোডের বিপরীতে ট্যারিফ মূল্য এবং একটি হেডিংয়ের আওতায় একটি এইচএস কোডের বিপরীতে ন্যূনতম মূল্য বহাল আছে।
পেট্রোলিয়াম ও এর উপজাতগুলোর মূল্য আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিনিয়ত ওঠানামা করার কারণে অতি প্রয়োজনীয় এই পণ্যের মূল্য স্থিতিশীল রাখতে এ সুপারিশ করা হয়েছে।
এলপিজি সিলিন্ডারের বিষয়ে বাজেট বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী বলেন, এলপিজি সিলিন্ডার তৈরির কাঁচামাল ইস্পাতের পাত (স্টিল শিট) ও ওয়েল্ডিংয়ের তার আমদানির করছাড় সুবিধা তুলে নেওয়া হয়েছে। এলপিজি সিলিন্ডার উৎপাদনকারীরা কাঁচামালে শুল্ককর ছাড় ১২ বছর ধরে ভোগ করে আসছে। তাই রাজস্ব আহরণের স্বার্থে শুধু দুটি উপকরণে ছাড় তুলে নেওয়া হয়েছে। তবে অন্যান্য করছাড়ের মেয়াদ ২০২৫ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত বহাল থাকবে বলে।
পেট্রোলিয়াম তেল এবং বিটুমিনাস খনিজ থেকে প্রাপ্ত তেলের ওপর বিদ্যমান শুল্ক ৫ শতাংশ। নতুন বাজেট অনুযায়ী এসবের প্রতি ব্যারেলের দাম ১ হাজার ১১৭ টাকা (লিটার প্রতি ৭.০২ টাকা) হতে পারে। প্রতি টন ফার্নেস অয়েলের সুনির্দিষ্ট শুল্ক ৯ হাজার ১০৮ টাকা (লিটার প্রতি ৯.১০ টাকা) করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
নানা অব্যবস্থাপনায় এগোচ্ছে না প্রাথমিক শিক্ষা। প্রায় শতভাগ শিশু ভর্তির আওতায় এসেছে অনেক আগে। এরপর মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতের কাজ অনেকটাই আটকে আছে। খোদ সরকারি সংস্থার গবেষণায় উঠে এসেছে প্রাথমিকে চরম দুরবস্থার কথা। গবেষয়ণা প্রতিবেদন অনুযায়ী, কাক্সিক্ষত মানের চেয়ে শিশুরা অনেক পিছিয়ে আছে। কিছু শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু কাজ করার চেষ্টা করলেও কথায় কথায় তাদের ওপর নেমে আসছে শাস্তির খড়গ। মানের উন্নয়ন না হলেও ঠিকই অধিদপ্তরে বসে ছড়ি ঘোরাচ্ছেন কর্মকর্তারা।
প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের শিখন ঘাটতি নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহায়তায় সম্প্রতি এই গবেষণা করেছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। সেখানে দেখা যায়, করোনা সংক্রমণের আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা গড়ে ইংরেজি বিষয়ে যতটা শিখত, করোনাকালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের ফলে তা সাড়ে ১২ শতাংশ কমে গেছে। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের হার কমেছে প্রায় সাড়ে ১৬ শতাংশ। আর তৃতীয় শ্রেণির বাংলায় কমেছে ১৫ শতাংশের মতো।
গবেষণার তথ্য বলছে, করোনার আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ইংরেজিতে শিখন অর্জনের গড় হার ছিল প্রায় ৪৯ শতাংশ। করোনাকালে বন্ধের প্রভাবে এই হার কমে দাঁড়িয়েছে ৩৬ শতাংশ। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ^পরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের গড় হার ৫১ শতাংশের বেশি, যা আগে ছিল ৬৮ শতাংশের মতো। পঞ্চম শ্রেণির বাংলা, গণিত ও বিজ্ঞানেও ক্ষতি বেড়েছে।
এনসিটিবির সদস্য (প্রাথমিক শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক ড. এ কে এম রিয়াজুল হাসান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রাথমিক শিক্ষার ঘাটতি পূরণে এ ধরনের গবেষণার দরকার ছিল। আন্তর্জাতিক মানদ- বজায় রেখেই তা করা হয়েছে। আমরা এই গবেষণা প্রতিবেদন দু-এক দিনের মধ্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠাব। আমরা অন্তত এক বছরের জন্য রেমিডিয়াল ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেছি। মন্ত্রণালয় সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ নিচ্ছে।’
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, প্রাথমিক শিক্ষা দিন দিন পিছিয়ে পড়লেও সেদিকে তেমন একটা নজর নেই প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের। তারা ব্যস্ত আছে লাখ লাখ শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের বদলি-পদায়ন নিয়ে। কেউ কথা বললেই তার ওপর নেমে আসছে শাস্তি। ফলে শিক্ষকরাও দিন দিন তাদের আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন; কোনো রকমে দিন পার করছেন।
জানা যায়, প্রাথমিক শিক্ষায় উদ্ভাবনী ও অনন্য অবদানের জন্য ২০১৯ সালে সারা দেশের মধ্যে শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষক নির্বাচিত হন রাজবাড়ী জেলার স্বাবলম্বী ইসলামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. শফিকুল ইসলাম। একই বছর রাজধানীর মোহাম্মদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক খায়রুন নাহার লিপি শ্রেষ্ঠ সহকারী শিক্ষিক নির্বাচিত হন। সাধারণত আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী এসব শিক্ষকের হাতে পদক তুলে দেন। শিক্ষকদের পাশাপাশি সেরা শিক্ষার্থীদের পদক দেওয়া হয় একই অনুষ্ঠানে। কিন্তু করোনাকালে তাদের হাতে জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষক পদক তুলে দেওয়া যায়নি। গত ১২ মার্চ রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে তাদের হাতে এ পদক তুলে দেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন। তাই অনুষ্ঠানের কয়েক দিন আগে স্বাভাবিকভাবে তারা দাবি তুলেছিলেন, দেরি হলেও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে তারা পদক নেবেন; যা তাদের সারা জীবনের স্বপ্ন পূরণ করবে। কিন্তু সেটা না হওয়ায় তারা প্রতিমন্ত্রীর হাত থেকে ঠিকই পদক নেন। তবে এর ৬৮ দিনের মাথায় এই শ্রেষ্ঠ শিক্ষকদের প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবি তোলায় চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। একই ঘটনায় জয়পুরহাটের হিন্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. মাহবুবুর রহমানকেও সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। কারণ তার বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী এ পদক নিতে ১১ মার্চ ঢাকা এসেছিল। ওই শিক্ষকও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবিকে সমর্থন করেছিলেন। সাময়িক বরখাস্ত করা হলেও তাদের কাউকে শোকজ করা হয়নি; যা বিধিবহির্ভূত বলছেন শিক্ষকরা।
জানতে চাইলে ঢাকা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. আবদুল আজিজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সাময়িক বরখাস্তের পরবর্তী যে প্রক্রিয়া আছে, সেদিকেই আমরা যাব।’ এর বেশি কিছু তিনি বলতে রাজি হননি। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াতের সঙ্গে এসব ব্যাপারে কথা বলার জন্য গতকাল একাধিকবার চেষ্টা করলেও তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি।
বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক শিক্ষা গবেষণা পরিষদের সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে পদক নেওয়া একজন শিক্ষকের জীবনে সেরা প্রাপ্তি। এ জন্য শিক্ষকদের দাবি থাকতেই পারে, প্রত্যাশা থাকতেই পারে। তবে সবচেয়ে বড় কথা হলো, আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে কাউকে শাস্তি দেওয়া যায় না। শিক্ষকদের যেভাবে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে, তা মোটেও ঠিক হয়নি বলে আমার মনে হয়। এর প্রভাব অন্যান্য শিক্ষকের মধ্যেও পড়বে, এটাই স্বাভাবিক।’
শুধু তা-ই নয়, করোনাকালে বন্ধ থাকা প্রাথমিক শিক্ষা চালু রাখতে কিছু শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু অনলাইন প্ল্যাটফর্ম চালু করেন; যাতে অনলাইন ক্লাস, শিক্ষকদের মধ্যে আলোচনাসহ নানা কাজ করা হয়। এতে প্রতিটি ফেসবুক গ্রুপে লাখ থেকে হাজারো শিক্ষক যুক্ত হয়েছেন। এখনো সেসব গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে। কিন্তু সেই গ্রুপগুলোকেই এখন শায়েস্তা করার হাতিয়ার হিসেবে বেছে নিয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অপব্যবহারের অজুহাত দেখিয়ে অনলাইনে যুক্ত থাকা অনেক শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাকেই দেওয়া হচ্ছে কারণ দর্শানো নোটিস (শোকজ)। সরকার যেখানে শিক্ষকদের ডিজিটালি আপডেট হওয়ার কথা বলছে, সেখানে প্রায় অনেকটাই উল্টো পথে হাঁটছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।
শিক্ষকরা জানান, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে দীর্ঘদিন ধরে আসন গেড়ে বসেছেন কিছু কর্মকর্তা। অনেকেই ৬ থেকে ১২ বছর ধরে একই দপ্তরে চাকরি করছেন। তাদের যে দায়িত্বই থাক না কেন যত লাভজনক কাজ আছে, সেগুলোতেই তারা হাত দিচ্ছেন। যোগ্য কর্মকর্তাকে অধিদপ্তরে আনলে তাদের সরে যেতে হবে, এ জন্য তারা নানাভাবে ঊর্ধ্বতনদের ভুল বুঝিয়ে মাঠপর্যায়ে শাস্তি দিয়ে সবাইকে ভীত করে তুলছেন। এতে পিছিয়ে পড়ছে প্রাথমিক শিক্ষার মান।
প্রায় দুই বছর বন্ধ থাকার পর গত মার্চ-এপ্রিলে অনলাইনে প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলি করা হয়। যদিও নিয়ম ছিল, অনলাইনে নির্দিষ্ট মানদন্ড পূরণ ছাড়া কেউ বদলি হতে পারবেন না। কিন্তু তা মানেনি প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। ঢাকা ও ঢাকার বাইরে নিয়ম ভেঙে কয়েক শো শিক্ষকের বদলির আদেশ জারি করা হয়। আর এই বদলি-পদায়নে বড় অঙ্কের অর্থ লেনদেন হয়েছে বলে দাবি শিক্ষকদের; যা ভাগ-বাটোয়ারা হয়েছে মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের মধ্যে। আবার অনেক জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও থানা শিক্ষা কর্মকর্তাদের বদলিতেও সমন্বয়হীনতা দেখা দিচ্ছে। কাউকে ক্ষোভের বশবর্তী হয়েও অনেক দূরে বদলি করে দেওয়া হচ্ছে। এতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়ন।
জানা যায়, চলতি বছর থেকে প্রথম শ্রেণিতে চালু হয়েছে নতুন শিক্ষাক্রম। আর আগামী বছর থেকে দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণিতে এবং ২০২৫ সাল থেকে চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম চালু হবে। কিন্তু তা পড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নেই অধিদপ্তরের। শিক্ষকদের নামমাত্র প্রশিক্ষণেই দায়িত্ব শেষ করা হয়েছে। আসলে এই শিক্ষাক্রম শিক্ষার্থীরা কতটুকু আত্মস্থ করতে পারছে বা এ জন্য আর কী করা প্রয়োজন, সে ব্যাপারে তেমন নজর নেই।
এ ছাড়া এখনো প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষকরা বেতন পান ১১তম গ্রেডে ও সহকারী শিক্ষকরা পান ১৩তম গ্রেডে। দুই ধরনের প্রায় চার লাখ শিক্ষকই ১০ম গ্রেডে বেতনের দাবি করে আসছেন। এ ছাড়া সহকারী থানা শিক্ষা অফিসার ও সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসারাও দীর্ঘদিন ধরে নবম গ্রেডের দাবি করছেন। আর মাঠে কাজ করা এসব শিক্ষক ও কর্মকর্তার পদোন্নতিও নেই বললেই চলে। কিন্তু এগুলো সমাধানেও তেমন কোনো উদ্যোগ নেই মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের; যা প্রাথমিকের মান উন্নীতের ক্ষেত্রে বড় অন্তরায় বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
প্রবীণ শিক্ষক নেতা মো. সিদ্দিকুর রহমান আরও বলেন, ‘এখনো মফস্বলে বা দুর্গম অঞ্চলের অনেক স্কুলেই এক-দুজন শিক্ষক। অনেক স্কুলে শিক্ষকের পদ তিন-চার বছর ধরে শূন্য। শিক্ষক না থাকলে এর প্রভাব শিক্ষার্থীদের ওপরও পড়ে। এ ছাড়া সরকারি প্রাথমিকে সাধারণত দরিদ্র পরিবারের শিক্ষার্থীরা আসে। তাদের একটু আলাদা যতœ নেওয়া প্রয়োজন। সেগুলোও হচ্ছে না। শিক্ষকরাও তাদের বেতন-ভাতায় সন্তুষ্ট নন। সব মিলিয়ে আমরা প্রাথমিক শিক্ষায় কাক্সিক্ষত মান অর্জন করতে পারছি না।’
ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে গাজীপুর সিটি নির্বাচনে হেরে যাওয়া প্রার্থী আজমত উল্লা খানকে।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে থাইল্যান্ডের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতি জোর করে হারানো হয়েছে।
গত রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন তেমনি যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
দুই দশকেরও বেশি ক্যারিয়ারে অসংখ্য নাটক-টেলিছবি নির্মাণ করেছেন শিহাব শাহীন, উপহার দিয়েছেন হিট প্রোডাকশন। নিজেকে শুধু রোমান্টিক জনরায় আটকে না রেখে কাজ করেছেন বহুমাত্রিক ঘরানায়। নিজেকে প্রমাণ করেছেন সব্যসাচী নির্মাতা হিসেবে। নিজেকে শুধু টেলিভিশনেই আটকে রাখেননি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তিনিও পাল্টেছেন প্লাটফর্ম এবং সেখানেও দেখিয়েছেন নিজের মুন্সিয়ানা।
সর্বশেষ গেল ঈদে তুমুল সাড়া ফেলেছে তার নির্মিত স্পিন অফ সিরিজ ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’। সাফল্যের পর কিছুদিন আগেই অনুষ্ঠিত হয়ে গেল এর সাকসেস পার্টি যেখানে উপস্থিত ছিলেন টিমের কলাকুশলী থেকে শুরু করে অন্যান্য নির্মাতা ও শিল্পীরা। সেই ধারাবাহিকতায় এবার তিনি নিয়ে আসছেন সিরিজটির সিক্যুয়াল। শুধু তাই নয়, একসঙ্গে একাধিক সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে আসছেন জনপ্রিয় নির্মাতা।
শিহাব শাহীন বলেন, ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’ নিয়ে এতটা প্রত্যাশা ছিল না কিন্তু সে সাড়া পেয়েছি তা প্রত্যাশার চেয়েও বেশি। দর্শকরাই কাজটিকে গ্রহণ করেছেন আর তাই এখন এর সিক্যুয়াল নিয়ে আসার পরিকল্পনা করছি। স্পিন অফে দেখিয়েছি অ্যালেন স্বপনের পেছনের গল্প। সিন্ডিকেটে তাকে আমরা দেখিয়েছিলাম ২০২২ সালে, সে ঢাকায় আসার পর এর মাঝের সময়টার গল্পই থাকবে সিক্যুয়ালে। যেটার সংযোগ থাকতে পারে ‘সিন্ডিকেট ২’-তে। ঈদের পরপর এটার শুট করার সম্ভাবনা রয়েছে।
এই সিক্যুয়াল ছাড়াও আরও বেশ কিছু সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে সবকিছু চূড়ান্ত হয়েছে বলেও জানান এ নির্মাতা। তিনি বলেন, মোস্তফা সরয়ার ফারুকির তত্ত্বাবধানে ওটিটি প্লাটফর্ম চরকির ‘মিনিস্ট্রি অফ লাভ’ সিরিজের একটা কনটেন্ট করবো। এখনও কাস্টিং চূড়ান্ত হয়নি। এছাড়া হইচইয়ের একটি সিরিজ ও বিঞ্জের একটি ফিল্ম করা হবে। নাম চূড়ান্ত হয়নি। তবে দুটোতেই জিয়াউল ফারুক অপূর্ব থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
মাঝে শোনা গিয়েছিল, আফরান নিশোকে নিয়ে ‘সিন্ডিকেট ২’ নাকি হবে না, এটা কতটুকু সত্য? এমন প্রশ্নে শিহাব শাহীন বলেন, এটা ভূয়া তথ্য। ডিসেম্বরের শেষ দিকে ‘সিন্ডিকেট ২’ করবো তার আগে সেপ্টেম্বরে শুরু করবো ‘রসু খাঁ’।
জানা গেছে, আগামী সপ্তাহে অস্ট্রেলিয়া পাড়ি জমাচ্ছেন শিহাব শাহীন। দেশে ফিরবেন মাসের শেষ নাগাদ এরপর কাজে নামবেন।