
আসিতেছে শুভদিন,
দিনে দিনে বহু বাড়িয়াছে
দেনা শুধিতে হইবে ঋণ!
শুভ দিন এসে গেছে। ঋণ শোধও হয়ে গেছে। লুসাইল আইকনিক স্টেডিয়ামে রবিবার রাতে বহুদিনের জমে থাকা ঋণ শোধ করেছে ফুটবল। এই পাওয়ার অপেক্ষাতেই লিওনেল মেসি কাটিয়েছেন কত নির্ঘুম রাত। না পাওয়ার বেদনায় বারবার নীল হতে হয়েছে, হৃদয়ে ঘটেছে রক্তক্ষরণ। বালিশ ভিজেছে নোনা জলে। এ রাতেও কাঁদলেন তিনি। তবে সে জল অনেক অপেক্ষা শেষে আনন্দাশ্রু হয়ে ঝড়েছে। লিওনেল মেসি হেসেছেন, জগৎ হেসেছে। তিনি কেঁদেছেন, কেঁদে উঠেছে গোটা দুনিয়া। মুকুটে মহামূল্য সোনালি পালকটা যুক্ত হওয়ার পর আবেগে ভেসেছেন, ভাসিয়েছেনও। আমিও তাতে ভেসেছি। মরুর বিশ্বকাপ থেকে, মেসির বিশ্বকাপ থেকে ফিরছি মূল্যবান সব স্মৃতির অ্যালবাম নিয়েÑ যা রোমন্থনে ধরা দেবে অমূল্য সব মণি-মাণিক্য।
কাতার বিশ্বকাপ যেমন মেসিকে হাত ভরে দিয়েছে, আমারও প্রাপ্তিযোগ অনেক। আর সেটাও এই মেসিরই অবদান। একটু বুঝিয়ে বলি। কাতার বিশ্বকাপ কভার করব, এই স্বপ্নটা ২০১৮ সালের পর থেকেই দেখছিলাম। ফুটবল বিশ্বের সবচেয়ে বিজ্ঞাপন মেসির শেষ বিশ্বকাপ! এটা সামনে থেকে দেখতে না পারলে কী করে হয়? তাই স্বপ্নটাকে বাস্তব রূপ দিতেই হবে। সেটা করতে গিয়েই এসেছে বাধা। শুরুতে বিশ্বকাপের ছাড়পত্র মিলছিল না। সেটা মিলে যায় বাংলাদেশ স্পোর্টস প্রেস অ্যাসোসিয়েশনের কল্যাণে। আমার কর্মস্থল দেশ রূপান্তর পেছন থেকে দিয়েছে সাহস ও অতি প্রয়োজনীয় রসদ। দুয়ে মিলে স্বপ্নের প্রথম ধাপে পেরিয়ে যাওয়া আর ১৭ নভেম্বর দোহার মাটিতে পা রাখা। তার আগেই দোহা জয় করতে সদলবলে উপস্থিত মেসি। তখন থেকেই অনুভব করতে শুরু করি, অনেক আলোচনা, অনেক বিতর্কের এই বিশ্বকাপ অন্য কারও নয়। এটা শুধুই মেসির বিশ্বকাপ। হামাদ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে যখন দেখি ঝাঁকে ঝাঁকে আসতে শুরু করেছে আকাশি-সাদার দল, যখন তাদের কণ্ঠে শুনি মেসিকে নিয়ে বাঁধা গান, তখনই বুঝে যাই, এবার তিনি কিছু একটা করবেন।
এবার সত্যিকারের নেতা হতে নিজেকে বদলালেন মেসি। নিয়ম মেনে মেসির জাদুকরী পা জাদু দেখানো শুরু করল। পাশাপাশি ভদ্র-নম্র তকমাটা ড্রেসিং রুমে রেখে এসে নিলেন রুদ্রমূর্তি। স্বভাববিরুদ্ধ মেসি তর্কে জড়ালেন রেফারির সঙ্গে, প্রতিপক্ষের ডাগ আউটে গিয়ে দিয়ে আসলেন হুমকি, গোলের উদযাপনে করলেন বিচিত্র সব অঙ্গভঙ্গি যা মেসির সঙ্গে কখনই যায় না। তবে এবার যে তিনি স্বপ্নপূরণ করেই ছাড়বেন। আর সেটা বৃত্তে বন্দি থেকে হবে না। তাই তো তিনি ’৮৬-র ম্যারাডোনাকে নিজেতে ফিরিয়ে এনে হয়ে গেলেন মেসিডোনা। আর এ সবকিছুরই সাক্ষী হলাম, বিস্মিত হলাম এবং অবশ্যই মুগ্ধতায় ভরে উঠল হৃদয়।
আমার অতি প্রিয় একজন ক্রীড়ালেখক একবার লিখেছিলেন, ‘ঈশ্বর নেমে এলে ফুটবল মাঠ আর ফুটবলের মাঠ থাকে না। স্বর্গরূপ নেয়।’ লুসাইল যেন সেই রূপটাই ধারণ করেছিল রবিবার রাতে। সেই স্বর্গ দখলের লড়াইটা যেমন প্রত্যাশিত ছিল, তেমনটাই হলো। শেষের অঙ্কটা মিলিয়ে বিশ্বসেরা মেসির আর্জেন্টিনা।
এমবাপ্পে পারেননি শেষের অঙ্কটা মেলাতে। টানা দ্বিতীয়বারের মতো বিশ্বকাপ জেতা হয়নি। তাই তো স্বপ্নের সোনালি বুট জয়ের পরও ফরাসি বীরের চোখে-মুখে রাজ্যের বিষাদ। এমবাপ্পের শূন্য দৃষ্টি আমার এই ‘মেসির হাতে বিশ্বকাপ দেখতে চাওয়া’ মনকেও নাড়া দিয়েছে। খুব বুঝতে পারছি, মেসিতে মত্ত এই হৃদয়ের একটা বড় অংশ এখন এমবাপ্পের দখলে। আহা! কী ভয়ংকর সুন্দর ফুটবল খেলেন তিনি! ২৩ বছর বয়সেই বিশ্ব কাঁপাচ্ছেন। জানি না কত-শত কীর্তি নিজের করে নেবেন আসছে দিনগুলোতে। কোন উচ্চতায় শেষ হবে তার বর্ণিল ক্যারিয়ার! এমবাপ্পে আসছেন। তবে অমরত্ব পেতে মেসি কী করেননি এই আসরে? স্মৃতিতে বারবার ফিরে আসছে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৩৬ মিনিটে করা সেই জাদুকরি গোল। ফিরে আসছে সেমিফাইনালে ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে বল নিয়ে সেই ঐশ্বরিক ছুট। এ আসরের অন্যতম সেরা ক্রোয়াট ডিফেন্ডার জসকো ভার্দিওলকে বোকা বানিয়ে আলভারেজকে দিয়ে গোল করানো আজীবনের সুখস্মৃতি হয়ে থাকবে।
কেবল মেসি নয়, এই বিশ্বকাপ মনে থাকবে আরও অনেক ঘটনায়। পুরো গ্রুপ পর্বে অবিশ্বাস্য সব অঘটনের ঘটনা ভুলি কী করে? সৌদি আরবের রূপকথার শুরু, স্পেন-পর্তুগালকে হটিয়ে মরক্কোর সেমিফাইনালে চলে আসা, জাপানের লড়াকু ফুটবল, পর্তুগিজ রাজা ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর প্রস্থান; নতুন রাজা হয়ে গনসালো রামোসের হ্যাটট্রিকে আবির্ভাব, পাঁচবারের সেরা ব্রাজিলের বিষাদের সাগরে ডুব দেওয়া, নেইমারের চোট-ঝলক, রিচার্লিসনের অসামান্য গোল, এমিলিয়ানো মার্তিনেজের ঈগলের হাত, আলভারেজের মাকড়সার পা, সুয়ারেজের কান্নাÑ কোনো কিছুতেই কমতি ছিল না।
তারপরও একটা শূন্যতা নিয়েই ফিরতে হবে। এক মাসের দীর্ঘ চলার পথে দেখা মিলেছে কত-শত কিংবদন্তির। ফুটবল, ফুটবলের বাইরের অনেকের দেখা মিলেছে হাতছোঁয়া দূরত্বে। দূরের তারাদের খুব কাছ থেকে দেখে বিমোহিত হয়েছি। তবে যাকে দেখার আজন্ম স্বপ্ন ছিল, সেই ম্যারাডোনার দেখা পাইনি। দু’বছর আগে আকাশের তারা হয়ে গেছেন আর্জেন্টাইন ফুটবল ঈশ্বর। তাই এই বিশ্বকাপ ভীষণভাবে মিস করেছে গ্যালারির ম্যারাডোনাকে। পেলেকেও খুব মনে পড়েছে প্রতিটা সময়ে। সাও পাওলোর হাসপাতালে নানা ব্যধির সঙ্গে লড়াই করছেন তিনবারের বিশ্বজয়ী ব্রাজিল কিংবদন্তি। সুস্থ থাকলে মরুর বিশ্বকার রাঙাতে তিনিও হয়তো হাজির হতেন ভুবনজয়ী হাসি নিয়ে। তাতে এই বিশ্বকাপটা হতো আরও বর্ণিল। এই দুই মহাতারকার শূন্যতা অবশ্য কিছুটা পূরণ হয়েছে দু’দেশের সমর্থকদের প্রচেষ্টায়। তারা না থেকেও ছিলেন ভক্ত-সমর্থকদের হৃদয়ে। মনে পড়ে কোয়ার্টার ফাইনাল নিশ্চিত করার পর পেলের বিশাল ব্যানার নিয়ে নেইমারদের শুভ কামনা জানানোর দৃশ্য। এই দুই মহাতারকার মতো শূন্যতায় হৃদয় ভরিয়ে দিয়েছে প্রিয় ইতালির অনুপস্থিতি। চারবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন, বর্তমান ইউরোপ সেরা হয়েও বাছাই পর্ব উতরাতে না পেরে স্বপ্নের বিশ্বকাপে দর্শক হয়ে থাকতে হয়েছে আজ্জুরিদের। তাই যখনই দেল পিয়েরো, মাতেরাজ্জিরা হাতছোঁয়া দূরত্বে এসেছেন, তখনই মনটা বিষাদে ভরে উঠেছে।
সেসব শূন্যতা অবশ্য লহমায় দূর হয়েছে মেসির জাদুতে, অসামান্য এক ফাইনালের সাক্ষী হওয়ার আনন্দে। যে তৃপ্তি নিয়ে ফিরব নিজ ঠিকানায়। বাঁ পায়ের জাদুকর, এমবাপ্পের খুনে রূপের সঙ্গে কাতারের অসামান্য সব স্টেডিয়ামের মাধুর্যও সঙ্গী হবে ফিরতি পথে।
এই বিশ্বকাপ লিওনেল মেসির শেষ ছিল। তিনি নিজেই বলেছেন। তবে বিশ্বকাপের পরই কি অবসরের ঘোষণা দেবেন! প্রশ্ন ছিল এখানে। বিশ্বকাপের আগে মেসির অবসরের কথা শুনে লিসান্দ্রো মার্তিনেজ গর্জে উঠেছিলেন– ‘মেসির অবসর! পাগল নাকি। আমরা সবাই যুদ্ধে নামব (তাকে ধরে রাখতে)।’ যুদ্ধে আর নামতে হয়নি। বিশ্বজয়ের আনন্দের ফল্গুধারা ছোটার পর মন ঘুরে গেছে মেসির। আগের দুবার যেমন হতাশার চোরাগলিতে পরে ছেড়ে দিতে চেয়েছিলেন যুদ্ধ ময়দান। এবার জয়ের আবেশে এগিয়ে এসেছেন নেতৃত্ব নিতে। নিজেই বললেন, ‘অবসর নয়, চ্যাম্পিয়ন হিসেবে আরও কয়েকটি ম্যাচ খেলতে চাই।’ তাই জাদুকর থাকছেন, আকাশি-সাদা গায়ে নিয়ে আরও নামবেন মঞ্চে। মুগ্ধ করবেন বিশ্বকে। তখন ওইসব অর্জনের ট্যাগ ধরে তাকে ডাকা হবে না, সব এক পাশে রেখে তার নাম হবে ‘বিশ্বজয়ী’ মেসি।
ফাইনাল শেষে সোনালি ট্রফি নিয়ে মেসির উৎসব যেন শেষ হওয়ার নয়। মাঠে নেচেছেন, ড্রেসিংরুমে নেচেছেন, হোটেলে ফিরেও তার নাচ চলছিল। মেসিকে ঘিয়ে পুরো আর্জেন্টিনা দল উৎসবে মাতোয়ারা। এই একটি ট্রফির জন্য প্রায় ২০ বছর ধরে নিজেকে তৈরি করেছেন। আর্জেন্টিনার টিভি চ্যানেল টিওয়াইসি স্পোর্টসকে সেই কোটি টাকার প্রশ্ন– আপনি কি অবসর নিচ্ছেন? এর উত্তরে সবার প্রিয় কথাটাই বললেন মেসি, ‘এরপর কী হবে? আমি ফুটবলটা ভালোবাসি। জাতীয় দলের হয়ে কোপা আমেরিকা জিতেছি। এবার বিশ্বকাপ। আমি আরও কিছু ম্যাচ আর্জেন্টিনার জার্সিতে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হিসেবে খেলার অভিজ্ঞতাটা নিতে চাচ্ছি। আমি খুবই ভাগ্যবান যে ক্যারিয়ারের সবগুলো ট্রফিই জিততে পেরেছি। এই একটিই বাকি ছিল। আমি এই ট্রফিটা ওখানে (আর্জেন্টিনা) নিয়ে যেতে চাই এবং দেশের সবার সঙ্গে উপভোগ করতে চাই।’ তবে এটা তার শেষ বিশ্বকাপ কিনা এই প্রশ্নে মেসি আগের কথাটাই বললেন, ‘আগে যেমন বলেছি, এটাই আমার শেষ বিশ্বকাপ। এখন এই বিশ্বকাপ নিয়েই ভাবতে চাচ্ছি। ওরা (দেশের সমর্থক) আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে। আমরা দেশে ফিরছি ওদের সঙ্গে উদযাপন করতে। আমরা দারুণ কিছু অর্জন করেছি, আমি ঈশ্বরকে ধন্যবাদ জানাই এতসব কিছুর জন্য। এই ট্রফিটার জন্য, যার স্বপ্ন আমি দেখেছিলাম। আমি সতীর্থদের এবং আর্জেন্টিনার সবাইকেও ধন্যবাদ জানাচ্ছি। আর কী বলব এখন আমরা বিশ্বচ্যাম্পিয়ন।’
ফাইনালে দুই পিএসজি সতীর্থের লড়াই হয়ে উঠেছিল উপভোগ্য। মেসি নিজে করেছেন দুই গোল। তার সতীর্থ কিলিয়ান এমবাপ্পে এদিন করেছেন হ্যাটট্রিক। তাদের ফুটবল জাদুতে নির্ধারিত সময় ও অতিরিক্ত সময়ে ৩-৩ ব্যবধানে শেষ হলে খেলা গড়ায় টাইব্রেকারে। সেখানে ৪-২ গোলে ফ্রান্সকে পরাজিত করে শিরোপা জেতে আর্জেন্টিনা। যে শিরোপা জন্য মেসির এত অপেক্ষা ছিল। অপেক্ষা শেষের পর আরও একটি সংবাদ মাধ্যমে মেসি নিশ্চিত করেছেন এটাই তার ক্যারিয়ারের শেষ বছর, ‘অবশ্যই এই শিরোপা জয়ের মধ্য দিয়ে আমার ক্যারিয়ার শেষ করতে চাই, আমার আর পাওয়ার কিছু নেই। কারণ আমার আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার শেষ বছরগুলোতে চলে এসেছে।’
তবে আসলেই কি মেসিকে ছাড়বে আর্জেন্টিনা। ২০২৬ বিশ্বকাপেও চাইলে খেলতে পারেন মেসি। সম্ভাবনা যেমন উঠছে তেমনি চারদিক থেকে দাবিও আছে। আর্জেন্টিনা কোচ লিওনেল স্কালোনিও এই দাবির সঙ্গে একমত। গত বিশ্বকাপ শেষে মেসির জন্য ১০ নম্বর জার্সিটা যেমন আলাদা করে রেখেছিলেন ঠিক তেমনি ২০২৬-এও মেসির জায়গাটা আলাদা রাখবেন বলে জানান, ‘এখন থেকে, আমাদের উচিত ২০২৬ বিশ্বকাপেও তার জন্য একটি জায়গা বরাদ্দ রাখা। যদি ওই বিশ্বকাপেও ২৬ জনের দল হয়ৃ যাই হোক না কেন। এই সিদ্ধান্তটা সম্পূর্ণ মেসির। সে এই জায়গাটা অর্জন করেছে যে যা ইচ্ছে করতে পারবে। আমার জন্য আনন্দের হলো তাকে অনুশীলন করানো এবং করতে দেখা।’
স্কালোনি মেসির জন্য জায়গা রেখে দিচ্ছেন। পুরো বিশ্ব মেসিকে পরের বিশ্বকাপে চাইছে। বয়স ৩৫-এ তাই অবসরকে না বলতেই পারেন মেসি। ৪২ বছর বয়সে রজার মিলার যদি বিশ্বকাপ গোল পেয়ে থাকেন তবে মেসি ৩৯ বছরে খেলতে পারবেন না কেন?
ডিয়েগো ম্যারাডোনার কথাগুলো এখনো কানে বাজে। ২০১৮ বিশ্বকাপ ও ২০১৯ কোপা আমেরিকায় ব্যর্থ হওয়ার পর আর্জেন্টিনার দায়িত্ব হারিয়েছিলেন জর্জ সাম্পাওলি। এরপর মেসিদের কোচ হিসেবে ঘোষিত হয় তারই সহকারী লিওনেল স্কালোনির নাম। সেটা শুনে ভীষণ রেগে ওঠেন আর্জেন্টিনার সাবেক বস ম্যারাডোনা। বলেই দেন, ‘একে দিয়ে কিসসু হবে না।’ অথচ এই স্কালোনিই ৩৬ বছর পর আর্জেন্টাইনদের বিশ্বজয়ের নেপথ্যের নায়ক। মাত্র ৪৪ বছর বয়সে পুরো বিশ্বকাপ জুড়ে যেভাবে নিজের মস্তিষ্কের ব্যবহার করেছেন, তাতে আলবিসেলেস্তারা হয়ে উঠেছে স্কালোনেটা।
সাম্পাওলির বিদায়ের পর স্কালোনির পাশাপাশি উঠেছিল পাবলো আইমারের নামও। তবে ৪৪ বছরের স্কালোনির ওপরই ভরসা রাখে আর্জেন্টাইন ফুটবল সংস্থা। ম্যারাডোনার মতো এ নিয়ে কটূ কথা বলার লোকের অভাব হয়নি। ফুটবল ক্যারিয়ারটা খুব বেশি ঐশ্বর্যম-িত ছিল না। খেলা ছাড়ার পর সেভিয়ার সহকারী কোচের দায়িত্বে ছিলেন। এরপরই ডাক পড়ে সাম্পাওলির সহকারী হওয়ার। ব্যস এতটুকুই। এমন একজনকে মেসির মতো মহানায়কের দলের কোচ কেন বানানো হবে? দেশে কি যোগ্য লোকের আকাল পড়ে গেছে। ম্যারাডোনাদের ক্ষোভটা ছিল সেখানেই। সে সময় কেবল সয়েই যেতে হয়েছে। কখনই আর্জেন্টাইন ফুটবল ঈশ্বরের কথার জবাবে কিছু বলেননি। এমনকি রবিবার রাতে দলকে বিশ্বকাপ জেতানোর পরেও না। উল্টো ম্যারাডোনার প্রতি দেখিয়েছেন সম্মান, ‘অবশেষে আমরা শিরোপা জিততে পেরেছি। যার জন্য আমাদের অপেক্ষায় থাকতে হয়েছিল বহু দিন। আমি নিশ্চিত তিনি দূর থেকেই এই সাফল্য উদযাপন করেছেন। তিনি থাকলে প্রথম ব্যক্তি হিসেবে মাঠে নেমে এসে সবাইকে জড়িয়ে ধরতেন। অনেক উল্লাস করতেন। তাই বলে আমি বলব না যে তিনি নেই। তিনি আছেন এবং প্রতিটি মুহূর্ত উপভোগ করছেন।’
ম্যারাডোনাকে সেরার আসনে বসিয়ে স্কালোনি যেন সেই সমালোচনারই জবাব দিয়েছেন। লোকটা আসলে এরকমই। বড্ড বেশিই ঠা-া মাথার। আর এ কারণেই তিনি পেরেছেন আর্জেন্টিনাকে একটি সুখী পরিবারে রূপ দিতে। তার ছোঁয়াতেই মেসির নেতৃত্বে অনেক বেশি ঐক্যবদ্ধ আর্জেন্টিনা গত বছর জিতেছে কোপা আমেরিকা শিরোপা। সেটাও তিনি দেশকে উপহার দিয়েছিলেন ২৮ বছর পর। এরপর ফিনালিসিমায় ইউরোপ সেরা ইতালিকে উড়িয়ে দেওয়া, বিশ্বকাপ বাছাইয়ে অদম্য গতিতে এগিয়ে পৌঁছে যাওয়া কাতার বিশ্বকাপে। এখানেও অনেক পরীক্ষা দিতে হয়েছে। যখনই চ্যালেঞ্জ এসেছে, ঢাল হয়ে দাঁড়িয়ে সামলিয়েছেন সব। ফাইনালের কথাই ধরুন। চোটের কারণে আগের তিনটি ম্যাচে খেলেননি অ্যাঞ্জেল ডি মারিয়া। অথচ ফাইনালে তাকে নামালেন সেরা একাদশে। শুধু তাই নয়, সহজাত রাইট উইং পজিশন থেকে মারিয়াকে খেলালেন লেফট উইংয়ে। তাতেই মেসি, আলভারেজের সঙ্গে জমে ওঠে দারুণ রসায়ন। ফ্রান্সের রক্ষণে আর্জেন্টিনা হামলে পড়ল বাঁ দিক দিয়ে। আর ডান দিকে মলিনা, ডি পলরা সুযোগ পেল কিলিয়েন এমবাপ্পেকে বেঁধে ফেলার। কী দারুণ কৌশল! এরকম অনেক কিছুই ডাগআউট থেকে করেছেন স্কালোনি। কোচের কৌশলে অভ্যস্ত হয়ে আর্জেন্টিনা যত সময় গড়িয়েছে, হয়ে উঠেছে অদম্য। আর মেসিও নিজের বিশ্বকাপ রাঙাতে হাজির হয়েছিলেন ঈশ্বরের পায়ে।
দুই লিওনেলের রসায়নে আজ বিশ্বসেরার আসনে আর্জেন্টিনা। স্কালোনেটা গাড়ি ছুটেছে বলেই ম্যারাডোনাও নিশ্চয় নিজের বলা কথাটা তুলে নিয়েছেন দূর আকাশ থেকে।
তিন যুগ পর আর্জেন্টিনার বিশ্ব জয়। তাতে লুসাইলে রঙিন আলোর ঝলকানি। উৎসবের আমেজে মেতে ছিলেন লিওনেল মেসিরা। শিরোপা হাতে নিয়ে উদযাপন করছিলেন সতীর্থদের নিয়ে। তবে এত আয়োজনের মধ্যেও কিলিয়ান এমবাপ্পেকে ভর করে রাজ্যের হতাশা। দেশের রাষ্ট্রপতির আলিঙ্গনেও শান্তি খুঁজে পাচ্ছিলেন না, সতীর্থদের আশ্বাসেও না। একাকিত্বেই সুখ ধরা দিচ্ছিল না, তাই নিজেকে সংযত রাখতে না পেরে টুইট করেন, ‘আমরা ফিরে আসব আবার।’
রাশিয়াতে দুই দশক পর বিশ্বকাপের শিরোপা পুনরুদ্ধার করেছিল ফ্রান্স। সেই দলের সদস্য কিলিয়ান এমবাপ্পে তখন ছিলেন ১৯ বছরের তরুণ। চার বছর পর টুর্নামেন্ট যখন কাতারে, তরুণ এই ফুটবলার তখন দলের অন্যতম ভরসার নাম। সেই ভরসার প্রমাণও দিয়েছেন মাঠে। সুযোগ ছিল ব্রাজিলের পর টানা দ্বিতীয় বিশ্বকাপ জয়ের। কিন্তু লুসাইলে কাল ফাইনাল খেলায় ৮০ মিনিট পর্যন্ত পিছিয়ে ছিল ফরাসিরা। তখনই ত্রাতা হয়ে এসে এমবাপ্পে জোড়া গোল করে ফেরান সমতায়। পরে তার হ্যাটট্রিকে ভর করে খেলা গড়ায় টাইব্রেকারে।
তার এমন বীরত্বের পর স্বয়ং ফরাসি রাষ্ট্রপতি এমানুয়েল ম্যাক্রোঁ পুরস্কার বিতরণী মঞ্চে তাকে বুকে টেনে আগলে রাখতে চাইলেন। কিন্তু সেখানেও যেন শান্তি পাচ্ছিলেন না। হালভাঙা কোনো নাবিক দিশা হারালে যেমন অসহায়ত্ব ভর করে, তেমনই মনে হলো তাকে। পৃথিবীর যাবতীয় হতাশা এসে ভর করে যেন এমবাপ্পেকে। বেঞ্চে একা বসে থাকতে দেখা যায় তাকে। তবে তার ওপর আস্থা হারাচ্ছেন না সতীর্থরা।
ফ্রান্স দলের বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ক হুগো লরিস বলেছেন, ‘এমবাপ্পের নেতৃত্বে নতুন এক ফ্রান্স দলের যাত্রা শুরু হচ্ছে। যারা আগামীতে বিশ্ব ফুটবলে রাজত্ব করবে। কাতার বিশ্বকাপে সেটা স্পষ্টভাবেই প্রমাণিত হয়েছে। ফাইনালে আমরা হেরেছি ঠিকই তবে হাল ছেড়ে দিইনি।’
১৯৫৪ বিশ্বকাপে সেরা উদীয়মান খেলোয়াড়ের পুরস্কারটা পেয়েছিলেন পেলে। সেমিফাইনালে হ্যাটট্রিক, ফাইনালে জোড়া গোল। পেলের কিংবদন্তি হয়ে ওঠার শুরুটা ১৯৫৪ সালে, সেবারই প্রথম আনুষ্ঠানিকভাবে সেরা উদীয়মান খেলোয়াড়ের পুরস্কার চালু করেছিল ফিফা। ১৯৫৪ থেকে ২০২২, ১৭টা বিশ্বকাপের ১৭ জন পেয়েছেন এই পুরস্কার। সবশেষ কাতার বিশ্বকাপের সেরা উদীয়মান খেলোয়াড়ের পুরস্কারটা পেয়েছেন আর্জেন্টিনার এনজো ফার্নান্দেজ। তার সামনে পেলের মতো উদাহরণ যেমন আছে, তেমনি আছে আরও অনেক নাম যাদের ওপর অনেক প্রত্যাশা থাকলেও ফুল হয়ে ফুটতে পারেননি। এনজো বিশ্বকাপের শিরোপা পেয়ে গেছেন অভিষেক আসরেই, তাই আগামীতে তাকে ঘিরে প্রত্যাশাও থাকবে বেশি।
২১ বছর বয়সী এনজো সেন্ট্রাল মিডফিল্ডার হিসেবে খেলেন বেনফিকাতে। বিশ্বকাপে গোল করেছেন ১টি, মেক্সিকোর হয়ে। তবুও এনজো কেন পুরস্কারটা পেয়েছেন সেই প্রশ্নের উত্তর হচ্ছে, প্রথম যে দুটো ম্যাচে বদলি হিসেবে নেমেছিলেন দুটো ম্যাচেই তার নামার আগে ও পরে দলের শরীরী ভাষা আর খেলার ধরনই বদলে গিয়েছিল। আর্জেন্টিনা দলে লিওনেল মেসি থাকার পরও মাঝমাঠে মূল চালিকাশক্তি ছিলেন এনজো। কম বয়সেও চমৎকার পরিণত মাথা, মাঝমাঠের পরিশ্রমী খেলা জানান দেয় দম আছে ফুসফুসেও। আক্রমণে বল বাড়িয়েছেন, আক্রমণ প্রতিহত করতে প্রতিপক্ষকে চ্যালেঞ্জ করেছেন শুরুতেই। অস্ট্রেলিয়া এবং ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে দুই নকআউট ম্যাচের প্রতিটিতেই ১০০’র বেশি পাস খেলেছেন এনজো। তার খেলার ধরন এরই মধ্যে আকৃষ্ট করেছে ইউরোপের বড় ক্লাবগুলোকে। রিভারপ্লেটের যুবদলে খেলে উত্থান এনজোর, এরপর মূল দলে খেলেছেন তিন মৌসুম। পর্তুগিজ ক্লাব বেনফিকা এই জুনেই মাত্র ১০ মিলিয়ন ইউরো ট্রান্সফার ফি দিয়ে দলে নিয়েছিল এনজোকে। ৮ মিলিয়ন নগদ আর বাকি শর্তসাপেক্ষে। সেই এনজোই যে মাস ছয়েকের ভেতর বিশ্বকাপের সেরা উদীয়মান খেলোয়াড় হয়ে যাবেন, জানলে রিভারপ্লেট কর্র্তৃপক্ষ নিশ্চয়ই দামটা বাড়িয়ে চাইতেন!
নিউক্যাসল তারকা ও সাবেক ইংল্যান্ড অধিনায়ক অ্যালান শিয়েরার টুইট করেছেন, এনজোকে সাদাকালো জার্সিতে দেখতে ভালোই লাগবে! যদিও তার চুক্তি বেনফিকার সঙ্গে, তবে সেটা একটু অন্যরকম। এনজোর অর্থনৈতিক স্বত্বের ৭৫% বেনফিকার হাতে। এখন বেনফিকা চাইলে বিক্রিও করে দিতে পারে তাকে! এরই মধ্যে লিভারপুল নাকি যোগাযোগ করেছে আর বেনফিকা দর হেঁকেছে ১০০ মিলিয়ন পাউন্ড! ডেইলি মেইলের খবর, এনজোর জন্য ১০৫ মিলিয়ন পাউন্ডের বাই আউট ক্লজ রেখেছে বেনফিকা আর সেটা দিতে লিভারপুলও তৈরি। অর্থাৎ নগদ নারায়ণ ফেললে জানুয়ারিতেই আবার ক্লাব বদলাতে পারবেন এই আর্জেন্টাইন।
নিউক্যাসল কোচ এডি হোয়ে অবশ্য বলছেন, এই সময়ে এনজোর জন্য ১০০ মিলিয়ন পাউন্ডের দরটা একটু বেশিই হয়ে যায়, ‘আমি জানি তার কথা, আমি জানি সে কেমন খেলে, তবে তার জন্য অঙ্কটা একটু বেশিই মোটা হয়ে যায়।’ এই কোচের মতে, একটা বিশ্বকাপ আসরের ওপর সিদ্ধান্ত নেওয়া যায় না, ‘আমার মনে হয় একটা খেলোয়াড়কে এক বিশ্বকাপের পারফরম্যান্স দেখেই দলে নিয়ে নেওয়া যায় না। আমরা বলছি না যে আমরা বিশ্বকাপে ভালো করাদের দিকে তাকাব না, তবে সেটাই একমাত্র উপায় নয়।’
২০০৬ বিশ্বকাপের উদীয়মান খেলোয়ার লুকাস পোদলস্কির ক্লাব ক্যারিয়ারটা ভালো যায়নি, মার্ক ওভারমার্সও পারেননি প্রত্যাশা মেটাতে। আবার রাশিয়া বিশ্বকাপের উদীয়মান কিলিয়ান এমবাপ্পে চার বছরে আরও পরিণত। স্বীকৃতিটা পেয়েছেন এনজো ফার্নান্দেজ, পরের কীর্তিটা নিজেকেই করতে হবে।
২০১৪ বিশ্বকাপের পর এই আসরে সুযোগ পেয়েছিলেন। কিন্তু ভাগ্যের কী পরিহাস। বিশ্বকাপ শুরুর আগেই উরুর ইনজুরিতে ছিটকে যান। করিম বেনজেমা পরের বিশ্বকাপ খেলার স্বপ্ন দেখতেই পারতেন। কিন্তু সেই অপেক্ষা আর করলেন না। ভাগ্যের সঙ্গেই অভিমান করে ফ্রান্স জাতীয় দলের হয়ে খেলাই ছেড়ে দিলেন। ২০২২ বিশ্বকাপ ফাইনালের পরদিন আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারকে বিদায় বলে দিলেন বেনজেমা।
আসলে অভিমানটা ভাগ্যের সঙ্গে না জাতীয় দলের সঙ্গেই তা এক বিরাট প্রশ্ন হয়ে উঠেছে। কিছুদিন আগে ফাইনালে বেনজেমা খেলবেন কি না এমন গুঞ্জন উঠেছিল। রহস্যজনক টুইটার পোস্টে লিখেছিলেন, ‘এসব আমাকে আকৃষ্ট করে না।’ সেই পোস্টের কিছুদিন পর ফ্রান্স জাতীয় দলকে বিদায় বলা। এর আগে ফ্রান্স প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁর আমন্ত্রণে ফাইনাল দেখতেও যাননি বেনজেমা।
বেনজেমার অভিমান করার কারণও আছে। ফ্রান্স দলে ২৫ জন ফুটবলার নিয়েছেন কোচ দিদিয়ের দেশম। অথচ অনায়াসে ২৬ জনকে নেওয়া যেত। বেনজেমাকে দলে রাখলে একটা সময় পর এই ফরোয়ার্ডকে খেলাতে পারতেন। বেনজেমা সেমিফাইনালের আগেই ফিট হয়ে উঠেছিলেন। তাকে নিয়ে কোচ দেশমের আগ্রহ না থাকাতেই রাগটা হয়েছিল বেনজেমার! ফ্রান্সের ফাইনাল না দেখা, বিশ্বকাপের পরই অবসর নেওয়া এসবেরই ইঙ্গিত দেয়।
ভাড়া করা বিমানে উড়িয়ে নিয়েও মোস্তাফিজুর রহমানকে প্রথম ম্যাচে একাদশে রাখল না দিল্লি ক্যাপিটালস। আসরে তাদের শুরুটাও ভালো হলো না। লক্ষ্ণৌ সুপার জায়ান্টসের বিপক্ষে বড় ব্যবধানে হারল মোস্তাফিজবিহীন দিল্লি।
ঘরের মাঠে ৫০ রানের জয়ে আসর শুরু করল লক্ষ্ণৌ। ১৯৪ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে দিল্লি থামে ৯ উইকেটে ১৪৩ রানে। ৪ ওভারে মাত্র ১৪ রান খরচায় ৫ উইকেট নিয়ে লক্ষ্ণৌয়ের জয়ের নায়ক মার্ক উড।
এদিন দিল্লির ব্যাটিং ছিল পুরো ফ্লপ। দলের অধিনায়ক ডেভিড ওয়ার্নার ৪৮ বলে ৫৬ রান করেছেন। পাশাপাশি রাইলি রোশো ২০ বলে ৩০ রানের ইনিংস খেলেন। কিন্তু বাকিরা সম্পূর্ণ ব্যর্থ। ফলে যা হরার তাই হলো ম্যাচের ফল।
এর আগে স্বাগতিক দলের হয়ে ঝড় তোলেন কাইল মেয়ার্স। এই ক্যারিবীয়ান ৩৮ বলে ৭৩ রানের ইনিংস খেলেন। ২টি চারের সঙ্গে হাঁকান ৭টি ছক্কা। এ ছাড়া নিকোলস পুরান ২১ বলে ৩৬ রানের ইনিংস খেলেন। সুবাদে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৬ উইকেটে ১৯৩ রানের পুঁজি গড়ে লক্ষ্ণৌ।
গত অক্টোবরের পর আর্সেনালের জার্সিতে প্রথম গোলের দেখা পেলেন গাব্রিয়েল জেসুস। তার আবার জোড়া গোল। ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ডের জ্বলে ওঠার দিনে লিডস ইউনাইটেডকে উড়িয়ে ম্যানচেস্টার সিটির চেয়ে ফের আট পয়েন্টে এগিয়ে গেল আর্সেনাল।
ঘরের মাঠে শনিবার প্রিমিয়ার লিগের ম্যাচটি ৪-১ গোলে জিতে আর্সেনাল। স্পট কিকে দলকে প্রথম এগিয়ে দেন জেসুস। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে বেন হোয়াইট ব্যবধান দ্বিগুণ করেন। এর খানিক পরই জোড়া গোল পূর্ণ করেন জেসুস।
এরপর লিডস একটি গোল শোধ করলেও গ্রানিত জাকার গোলে বড় জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে স্বাগতিকরা।
আন্তর্জাতিক বিরতি থেকে ফেরার পর এটিই প্রথম ম্যাচ ছিল আর্সেনালের। বিরতিতে যাওয়ার আগে নিজেদের মাঠে একই ব্যবধানে তারা হারিয়েছিল ক্রিস্টাল প্যালেসকে।
এই জয়ে ২৯ ম্যাচে ৭২ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষস্থান আরও মজবুত করল গানাররা। ২০০৩-০৪ মৌসুমের পর প্রথমবার প্রিমিয়ার লিগ জয়ের স্বপ্ন দেখছে আর্সেনাল। তাদের সঙ্গে গত লিগের চ্যাম্পিয়ন ম্যানচেস্টার সিটির পয়েন্ট ব্যবধান ৮।
গানারদের চেয়ে এক ম্যাচ কম খেলে ৬৪ পয়েন্ট নিয়ে দুইয়ে সিটি। একই দিন তারাও নিজেদের মাঠে লিভারপুলকে উড়িয়ে দিয়েছে ৪-১ গোলে।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার সায়েদুল হক সুমন। তাকে প্রায়ই বিভিন্ন ভাইরাল ইস্যু নিয়ে ফেসবুক লাইভে কথা বলতে দেখা যায়। যুবলীগে পদ পেয়েও পরে অব্যাহতি পেয়েছেন। সাম্প্রতিক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলতে দেশ রূপান্তরের সাথে মুখোমুখী হয়েছিলেন ব্যারিস্টার সুমন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আব্দুল্লাহ আল তোফায়েল।
সামাজিক যোগাযাগ মাধ্যমে আপনি যে ভিডিও আপলোড করেন এর প্রধান উদ্দেশ্য কি টাকা ইনকাম করা?
বাংলাদেশে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে টাকা ইনকামের সুযোগ আসার কয়েক বছর আগে থেকেই আমি ভিডিও আপলোড করি। আমার প্রথম যে কয়েকটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছিল তখন মনিটাইজেশন নামে কোন শব্দের সাথে আমরা পরিচিত ছিলাম না। আমার ফেসবুক থেকে যে ইনকাম হয়, ব্যারিস্টারি থেকে যে আয় হয় এবং বিদেশে থাকা আমার পরিবারের মানুষেরা যে টাকা পাঠান তার সব আমি মানুষের জন্য খরচ করি। এর প্রমাণ হিসাবে দেশে বিদেশে আমার নামে কিংবা আমার পরিবারের কারও নামে কোন ফ্ল্যাট নেই।
সম্প্রতি ভাইরাল হওয়া স্যার ইস্যু নিয়ে আপনার অবস্থান কি?
স্যার ম্যাডাম মহোদয় এইগুলো নাম নাম মাত্র। আমার প্রশ্ন হচ্ছে কাজে কতটুকু এগোলাম আমরা। একজন মানুষ যে কাজে সরকারী অফিসে যান সেই কাজ টা যদি ঠিক মত হয় তাহলে কি নামে ডাকলেন সেটা কোন সমস্যা বলে আমার কাছে মনে হয়না। এই বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা কেবল সময়ের অপচয় মাত্র।
আপনি নমিনেশন চাইবেন আওয়ামী লীগ থেকে?
আমি আওয়ামী লীগ থেকে নমিনেশন চাইব। দল যদি আমাকে নমিনেশন দেয় আমি নির্বাচন করব। না হলে দল যাকে নমিনেশন দেবে আমি তার হয়ে কাজ করব।
যুবলীগ থেকে আপনাকে বহিষ্কারের পর আপনার কেমন লেগেছিল, আপনার অবস্থানে কি আপনি অনড়?
আমার কাছে একদম খারাপ লাগেনি। নেতা যাকে ইচ্ছে নিতে পারেন, আবার প্রয়োজন না হলে ফেলে দিতে পারেন। আমাকে যখন যুবলীগে নেওয়া হয়েছিল, তখন হয়তো আমাকে প্রয়োজন ছিল, এখন মনে হয় হয়তোবা আমি যেভাবে কাজ করি তা উনাদের পছন্দ না। তবে যে বক্তব্য দিয়েছিলাম সে বিষয়ে আমি অনড়। একজন ওসি কখনো নির্দিষ্ট এমপি কে খুশি করার জন্য স্লোগান দিতে পারেন না।
দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ে আপনাকে কথা বলতে কম দেখা যাচ্ছে কেন ?
দ্রব্যমূল্যের যে ঊর্ধ্বগতি তা বিশ্ব পরিস্থিতির অংশ। শ্রীলংকা, পাকিস্তানের মত দেশ দেউলিয়া হয়ে গেছে। আমরা টিকে আছি। আমাদের অধিকাংশ জিনিস আমদানি করতে হয়। তাই এ সমাধান আমাদের হাতে নেই। তবে আমি দ্রব্যমূল্যের বৃদ্ধি নিয়ে কথা না বললেও দুর্নীতি নিয়ে কিন্তু প্রতিদিন কথা বলতেছি। দুর্নীতি আর টাকা পাচার যদি বন্ধ করা যেত তাহলে জিনিস পত্রের দাম এত বাড়ত না। তাই বলতে পারেন দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলা আমার অন্য সবকিছুকে কাভার করে।
শোনা যায় অনেকেই রাজনীতি করে কানাডায় বাড়ি কিনছেন, এ বিষয়ে আপনি কি বলবেন?
রাজনীতিকে এখন ওনারা ধারণ করেন না। এমপি পদ টাকে তারা আরও সম্পদ উপার্জনের সিঁড়ি হিসেবে ব্যবহার করছেন। ওনারা মনে করেন পরেরবার এমপি মন্ত্রী হতে পারেন বা না পারেন টাকা বানিয়ে ফেলি যাতে আর অসুবিধা না হয়।
আব্দুস সালাম মুর্শেদিকে নিয়ে বানানো ভিডিও সরিয়ে ফেলতে হাইকোর্ট নির্দেশ দিয়েছেন।এটা কি আপনার পরাজয়?
সালাম মুর্শেদিকে নিয়ে আমি অনেকগুলো ভিডিও বানিয়েছি। এর মধ্যে মাত্র ২টা ভিডিও সড়াতে হয়েছে। মামলা চলাকালীন সময়ে মামলার মেরিট যেন নষ্ট না হয় এর জন্য ভিডিও সড়াতে বলা হয়েছে। এটাকে আমি পরাজয় মনে করি না।
বর্তমান সরকারকে অনেকে অনির্বাচিত বলেন, এ বিষয়ে আপনার অবস্থান কি?
সংবিধান মেনে একটা প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই তো আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসেছে। প্রক্রিয়া নিয়ে অনেকের প্রশ্ন থাকতে পারে। রাজনৈতিক বিষয়ে যা ঘটেছে বা ঘটছে তা সবাই দেখতে পাচ্ছেন। এ নিয়ে আমার আলাদা করে বলার কিছু নেই।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ইস্যুতে আপনার অবস্থান কি?
পারস্পরিক আস্থার অভাব হলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রয়োজন হয়। এখন প্রশ্ন হচ্ছে আমাদের দেশের রাজনীতিতে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ওপর বিশ্বাস কতটুকু সেটাও ভেবে দেখতে হবে। একটা সময় আওয়ামী লীগ এই দাবিতে আন্দোলন করেছিল তখন কিন্ত বিএনপি এই দাবি মেনে নেয়নি। তত্ত্বাবধায়ক সরকার দিলেই যে সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে বিষয়টা এমন নয়।
রাজনীতির চেয়ে সামাজিক ইস্যুতে আপনাকে বেশি কথা বলতে দেখা যায়। এটা কি সুবিধাজনক অবস্থান?
একজন সাধারণ মানুষ হিসাবেই আমার রাজনীতিতে আসা। আমার বাবা বা অন্য কেউ এমপি মন্ত্রী নয়। যে আমি এমনি এমনি রাজনীতিতে আসছি। আমি সামাজিক কাজ করতে করতে এ জায়গায় আসছি। আমি যদি রাজনীতিতে পুরোদমে প্রবেশ করি তখনও দেখবেন আমি সামাজিক বিষয় নিয়ে কথা বলব কাজ করব।
সাকিব আল হাসানকে নিয়ে আপনার অবস্থান?
একটা ভিডিওতে তিন লাখ টাকা সাকিবকে দেওয়া নিয়ে আমার মন্তব্যে ক্ষুব্ধ হয়ে সোনারগাঁ হোটেলের লবিতে সাকিব আমাকে মারতে আসেন। আমি মনে করি, সাকিবকে কোটি মানুষ অনুসরণ এখন তিনি যদি জুয়ার এম্বাসেডর হন টাকার লোভে মার্ডারের আসামীর দাওয়াতে যান তাহলে আমাদের দুর্ভাগ্য।
ফুটবল ফেডারেশন নিয়ে আপনার মন্তব্য কি?
আমি সরাসরি বলব বাংলাদেশের ফুটবল ধ্বংস করার কারিগর কাজী সালাউদ্দীন ও আব্দুস সালাম মোর্শেদি। তারা ফুটবল কে এগিয়ে নিয়ে যেতে না পারলেও নিজেরা এগিয়ে গিয়েছেন। ফুটবলকে সিঁড়ি করে তারা নিজেকে সমৃদ্ধ করছেন।
ফুটবল নিয়ে অনেক আগ্রহ আপনার , অগ্রগতি কতদূর?
আমার ক্লাবের অগ্রগতি অনেক। গত দেড় বছরে ১২ জন খেলোয়াড় ঢাকার বিভিন্ন লীগে খেলছেন। ৩ জন খেলোয়ার ব্রাজিলে প্রশিক্ষণের সুযোগ পেয়েছেন। পাশাপাশি সি টিমে থাকা ২/৩ জন ( যাদের বয়স ১২-১৩) আগামীতে জাতীয় দলে খেলবেন এটা আমি চ্যালেঞ্জ করে বলে দিতে পারি।
বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তির (এপিএ) লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করায় বিদ্যুৎ বিভাগের ১২টি প্রতিষ্ঠান নিজেরা সিদ্ধান্ত নিয়ে কর্মীদের ‘ইনসেনটিভ বোনাস’ প্রদান করলেও বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) ক্ষেত্রে এ সুবিধা দিতে অপারগতা জানিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। এ নিয়ে বঞ্চিত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে এক ধরনের অসন্তোষ বিরাজ করছে।
প্রতি অর্থবছরে মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো কী কী কাজ করবে তা নিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিবের সঙ্গে অন্য সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সচিবের মধ্যে স্বাক্ষরিত সমঝোতা দলিল হলো বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের নির্দেশনা মোতাবেক বিভিন্ন দপ্তর ও সংস্থাগুলোর প্রাতিষ্ঠানিক দক্ষতা বৃদ্ধি, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা জোরদার করার পাশাপাশি সুশাসন প্রতিষ্ঠা এবং সম্পদের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করতেই এ চুক্তি করা হয়।
সূত্রমতে, বিদ্যুৎ বিভাগের আওতাধীন বিভিন্ন সংস্থা ও কোম্পানির ২০২১-২২ অর্থবছরের বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তির (এপিএ) লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য গত ২৯ ডিসেম্বর এক সভায় ইনসেনটিভ বোনাসের সুপারিশ করা হলে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী তা অনুমোদন দেয়। গত ২ জানুয়ারি বিদ্যুৎ বিভাগের সহকারী সচিব মোহাম্মদ লুৎফর রহমান স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে এপিএ অর্জনের সামগ্রিক মূল্যায়নে প্রাপ্ত নম্বরের ভিত্তিতে ১৩টি প্রতিষ্ঠানকে ইনসেনটিভ বোনাস প্রদানের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়।
লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে শতকরা ৯৯ দশমিক ৩২ নম্বর পেয়ে প্রথম হয়েছে বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড। প্রতিষ্ঠানটিকে তার কর্মীদের ১ দশমিক ৫টি ইনসেনটিভ বোনাস দেওয়ার সুপারিশ করা হয়। এ ছাড়া ডিপিডিসি এবং ওজোপাডিকোকে ১ দশমিক ৫টি ইনসেনটিভের সুপারিশ করা হয় যাদের প্রাপ্ত নম্বর যথাক্রমে ৯৬ দশমিক ৬৯ এবং ৯৫ দশমিক ২৩। নর্থ ওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি, আশুগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন কোম্পানি লিমিটেড, কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেড এবং পিজিসিবি এ চারটি প্রতিষ্ঠানকে ১ দশমিক ২৫টি ইনসেনটিভ বোনাসের সুপারিশ করা হয়েছে। ১টি ইনসেনটিভ বোনাসপ্রাপ্তরা হলো বাংলাদেশ বিদ্যুতায়ন বোর্ড (৯২.০৮), নেসকো (৯২.২৫) এবং আরপিসিএল (৯৩)। এ ছাড়া ডেসকো, ইজিসিবি এবং বি-আর পাওয়ারজেন শূন্য দশমিক ৫টি ইনসেনটিভ বোনাসের জন্য সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান তাদের পরিচালনা বোর্ডের অনুমোদন নিয়ে সুপারিশ অনুযায়ী কর্মীদের বোনাস প্রদান করে। তবে পিডিবির কর্মীরা এখনো ইনসেনটিভ বোনাস পাননি। আদৌ তা পাবেন কি না তা নিয়েও অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।
ইনসেনটিভ বোনাস পরিশোধের অনুমোদনের প্রস্তাব অর্থ বিভাগে পাঠানোর অনুরোধ জানিয়ে গত ২ জানুয়ারি পিডিবির সচিব মোহাম্মদ সেলিম রেজা বিদ্যুৎ বিভাগে চিঠি পাঠান। এতে বলা হয়, ১টি ইনসেনটিভ বোনাস হিসেবে পিডিবির প্রত্যেক কর্মকর্তা ও কর্মচারীর এক মাসের মূল বেতনের সমপরিমাণ অর্থ পিডিবির রাজস্ব বাজেটে সংস্থান আছে।
বিদ্যুৎ বিভাগের পক্ষ থেকে অর্থ বিভাগের এ সংক্রান্ত চিঠি পাঠানোর পর গত ২১ মার্চ তা নাকচ করে দেয় অর্থ মন্ত্রণালয়। অর্থ বিভাগ তাদের চিঠিতে বলেছে, এপিএ অর্জনের জন্য কর্মসম্পাদন সূচক রয়েছে, যা সরকারের প্রতিটি সংস্থার ‘রুটিন’ কাজ। রুটিন কাজের জন্য ইনসেনটিভ বোনাস দাবি করা যৌক্তিক নয়।
চিঠিতে আরও বলা হয়, দেশে অনেক সংস্থা আছে, যাদের বেতনভাতাসহ অন্যান্য আনুষঙ্গিক ব্যয় সরকারের অনুদানে পরিচালিত হয়। এসব সংস্থা বা দপ্তরগুলো এপিএ লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করে থাকে। এখন যদি পিডিবিকে লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য বোনাস দেওয়া হয়, তাহলে প্রতিটি সংস্থা থেকে একই দাবি আসবে। এতে সরকারের আর্থিক ব্যবস্থাপনায় শৃঙ্খলা বিঘিœত হতে পারে। এ অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে পিডিবির ২০২১-২২ অর্থবছরের এপিএর লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের বিপরীতে ইনসেনটিভ বোনাস প্রদানে অপারগতা প্রকাশ করা হলো।
বিদ্যুৎ বিভাগের সাবেক সচিব ফাওজুল কবির খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, বিদ্যুৎ খাতের অগ্রগতি সন্তোষজনক না। তারপরও এ খাতের উন্নয়নে বিভিন্ন কোম্পানি বা সংস্থাকে ইনসেনটিভ বোনাস দেওয়া যেতে পারে তাদের কাজের পারফরম্যান্স বিবেচনায়। শুধু পুরস্কার দিলেই হবে না। পাশাপাশি কেউ যদি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ব্যর্থ হয় তাহলে শাস্তিও নিশ্চিত করতে হবে। তবেই কাজের গতি বাড়বে। বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তিতে যদি ইনসেনটিভ বোনাসের কথা উল্লেখ থাকে তাহলে তারা যদি লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করে তবে এটা তাদের প্রাপ্য।
এ বিষয়ে পিডিবির একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, এর আগেও তারা এপিএর লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করে বোনাস পেয়েছেন। এবারও বোনাসের আশায় বাড়তি কাজ করেছেন। হঠাৎ বোনাস না পাওয়ার খবর শুনে সবার ভেতর চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে।
প্রতিষ্ঠানের দুজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন, ‘বিদ্যুৎ বিভাগের আওতাধীন সব কোম্পানি এমনকি পিডিবির সমমনা প্রতিষ্ঠান আরইবি তাদের পরিচালনা পর্যদের সিদ্ধান্তে অন্তত এক মাস আগে এ বোনাস প্রদান করেছে। তাদের কর্মীদের ওই টাকা খরচও হয়ে গেছে। আর আমরা অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে অনুমোদন চাওয়ার নিয়ম রক্ষা করতে গিয়ে বিপাকে পড়েছি। অন্যরা পেলেও পিডিবির কর্মীরা কেন বঞ্চিত হবে? সবার জন্য একই নিয়ম থাকা দরকার।’
ক্ষোভ প্রকাশ করে একজন নির্বাহী প্রকৌশলী দেশ রূপান্তরকে বলেন, লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য আমাদের অনেক সময় অফিসের নির্ধারিত সময়ের বাইরেও কাজ করতে হয়। এ জন্য অনেক সময় পরিবারকে সময় দিতে পারি না। এরপরও যদি বোনাস থেকে বঞ্চিত করা হয় তাহলে কর্মীরা বাড়তি কাজ করতে উৎসাহ হারাবে।’
ঢাকা থেকে মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরের বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের ভাড়া ৫৩ হাজার টাকা। এ রুটের অন্যসব এয়ারলাইনস আরও কম দামে যাত্রী বহন করলেও বিমান করে না। খালি যাবে, তাও কম ভাড়ায় যাত্রী নেয় না বিমান।
ঢাকা থেকে বিমান কত বেশি ভাড়া নেয় তা স্পষ্ট বোঝা যায় নিকটতম প্রতিবেশী শহর কলকাতার দিকে চোখ বোলালে। কলকাতার নেতাজি সুভাষ বসু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বিমানের তিন ভাগের এক ভাগ ভাড়া দিয়ে কুয়ালালামপুর যাওয়া যায়।
ঢাকা থেকে বিভিন্ন গন্তব্যে উড়ে যাওয়া এয়ারলাইনসগুলোর মধ্যে বিমানের ভাড়া বেশি। বিমানের ভাড়া শুধু বেশিই নয়, এই এয়ারলাইনস ভাড়া বাড়ানোর নেতৃত্ব দেয় বলে অভিযোগ উঠেছে। প্রথমে বিমান ভাড়া বাড়ায় পরে প্রতিদ্বন্দ্বী অন্য এয়ারলাইনসগুলো সেই সুযোগ নেয়।
অন্য এয়ারলাইনসের তুলনায় বিমানের ভাড়া বেশি এ অভিযোগ ছিল মূলত জনশক্তি রপ্তানিকারক ও ট্রাভেল এজেন্টদের। তাদের সঙ্গে সম্প্রতি যোগ হয়েছেন সাধারণ যাত্রীরাও। কুয়ালালামপুর, রিয়াদ বা জেদ্দার মতো বাংলাদেশি শ্রমিকপ্রবণ শহরগুলোতে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস ব্যবহারকারীরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, দেশের বেসরকারি টেলিভিশন এমনকি খবরের কাগজগুলোতে যেচে এসে বলে যাচ্ছেন বিমান অনেক বেশি ভাড়া নিচ্ছে।
কীভাবে বিমান ভাড়া বাড়ায় জানতে চাইলে একজন জনশক্তি রপ্তানিকারক জানান, প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স অর্থনীতিতে কী ভূমিকা রাখে তা নতুন করে বলার দরকার নেই। তাদের কর্মস্থলে পাঠাতে বা ফিরিয়ে আনতে বিমানের বিশেষ কোনো উদ্যোগ নেই। বিমান কোনো দিন কোনো ঘোষণায় বলেনি ‘এ উদ্যোগটি শুধু রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের জন্য’। এই শ্রমজীবীদের জন্য বিমানের কোনো ছাড় নেই। বরং যখন যে ‘আদম বাজার’ চাঙ্গা হয় তখন সেখানে ভাড়া বাড়িয়ে দেয় বিমান। বর্তমানে মালয়েশিয়ায় প্রচুর শ্রমিক যাচ্ছে। সেখানে ভাড়া বাড়িয়েছে সংস্থাটি। শ্রমিক এবং ওমরাহর কারণে জেদ্দার টিকিটই পাওয়া যায় না। পাওয়া গেলেও তা অনেক বেশি দাম দিয়ে কিনতে হয়।
এ অবস্থা থেকে বিমান কীভাবে বের হয়ে আসতে পারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিমান নানা পলিসি নিতে পারে। বিকল্প রুট চালু করতে পারে। ট্রানজিট দিয়ে যাত্রীদের গন্তব্যে নিতে পারে। এতে যাত্রীরা কম দামে গন্তব্যে পৌঁছতে পারবে। বাংলাদেশের বেশিরভাগ যাত্রী যেহেতু শ্রমজীবী তাই তাদের গন্তব্যে পৌঁছানোর বিষয়টিই গুরুত্বপূর্ণ। কত সময় ট্রানজিট নিয়ে গেল তা মুখ্য নয়। ঠিক এ জায়গাটিতেই এগিয়ে আছে আমাদের নিকটবর্তী শহর কলকাতা। ঢাকার তুলনায় অনেক কম দামে কলকাতার যাত্রীরা গন্তব্যে পৌঁছতে পারেন। সেখান থেকে পরিচালিত এয়ারলাইনসগুলো সরাসরি বা এক-দুটি ট্রানজিট দিয়ে অনেক কমে যাত্রী বহন করে। বিমান কেন পারে না সেই প্রশ্নটি কেউ তুলছে না।
এক সপ্তাহ পর আগামী ৪ এপ্রিল ফ্লাই (যাত্রা) করার জন্য গতকাল সোমবার দুপুরে ঢাকা কুয়ালালামপুর রুটের বিমান টিকিটের দাম ছিল ৫৩ হাজার ২৭ টাকা। থাই এয়ারওয়েজ ৪১ হাজার ৭৬ টাকায়, ইন্ডিগো এয়ার ৪৩ হাজার ৬৪৪, ইউএস-বাংলা ৪৭ হাজার ১৯, এয়ার এশিয়া ৪৯ হাজার ৪৪৫, মালিন্দো এয়ারওয়েজ ৫৯ হাজার ১৯০ এবং মালয়েশিয়ান এয়ারলাইনসের ভাড়া ছিল ৬১ হাজার ৪৭২ টাকা।
অথচ কলকাতা থেকে এয়ার এশিয়া একই দিনে একই গন্তব্যে নন-স্টপ ফ্লাইটে মাত্র ১৭ হাজার ৩৭৯ টাকায় পৌঁছে দেওয়ার অফার ছিল অনলাইনে। এয়ারক্রাফটের মানভেদে একই দিনে বিভিন্ন সময়ে টিকিটটির দাম ২৬ হাজার টাকা পর্যন্ত ছিল। ইন্ডিগো এয়ার চেন্নাইয়ে একটি স্টপেজ দিয়ে ২০ হাজার ৩৩৭ টাকায় অফার দেয়। কলকাতা থেকে কুয়ালালামপুরে যাওয়ার জন্য এয়ার ইন্ডিয়ার টিকিটের দাম ছিল ২৯ হাজার ৬৩৯ টাকা। মুম্বাই এবং সিঙ্গাপুরে দুই স্টপেজ দিয়ে এয়ারলাইনসটি এ ভাড়া নির্ধারণ করে। মালয়েশিয়ান এয়ারলাইনস মুম্বাইয়ে এক স্টপেজ দিয়ে কলকাতা থেকে ৫৪ হাজার ৩২৬ টাকায় যাত্রীদের নিয়ে যায় কুয়ালালামপুর।
ঢাকা রিয়াদ রুটে আগামী ৩ এপ্রিলের এয়ার অ্যারাবিয়ার ভাড়া ৫৪ হাজার ৯৫১ টাকা। শারজায় একটি স্টপেজ দিয়ে তারা যাত্রীকে গন্তব্যে পৌঁছে দেবে। কলম্বোতে একটি স্টপেজ দিয়ে শ্রীলঙ্কান এয়ারলাইনস রিয়াদ নিয়ে যাবে ৫৬ হাজার ৫৪৫ টাকায়। জাজিরা কুয়েত সিটিতে এক স্টপেজ দিয়ে ৬৫ হাজার টাকায়, গালফ এয়ার বাহরাইনে এক স্টপেজ দিয়ে ৬৭ হাজার ৬৭৭ টাকায়, সৌদিয়া এয়ারলাইনস ৭১ হাজার ৭১১ টাকায় সরাসরি, কুয়েত এয়ারওয়েজ কুয়েত সিটিতে এক স্টপেজ দিয়ে ৭৩ হাজার ২৪৭ টাকায়, ওমান এয়ার মাস্কটে এক স্টপেজ দিয়ে ৭৪ হাজার ২৩২ টাকায়, ফ্লাই দুবাই দুবাইয়ে এক স্টপেজ দিয়ে ৭৪ হাজার ২৬৩ টাকায়, কাতার এয়ারওয়েজ দোহায় এক স্টপেজ দিয়ে ৮২ হাজার ৫৫৭ টাকায়, এমিরেটস দুবাইয়ে এক স্টপেজ দিয়ে ৮৪ হাজার ২৩১ টাকায় রিয়াদ নিয়ে যাচ্ছে। আর ঢাকা-রিয়াদ রুটে বিমানের ভাড়া ১ লাখ ৫৫ হাজার ১৪৭ টাকা। ৩ এপ্রিল কলকাতা থেকে রিয়াদ যাওয়ার ভাড়াও ঢাকা রিয়াদের তুলনায় অনেক কম।
কলকাতা থেকে মাত্র ৩৫ হাজার ৩২৪ টাকায় রিয়াদ নিয়ে যাচ্ছে এয়ার ইন্ডিয়া। মুম্বাইতে মাত্র একটি স্টপেজ দিয়ে তারা যাত্রীদের সেখানে পৌঁছে দিচ্ছে। ওইদিন সময়ভেদে তাদের ভাড়া ৪১ হাজার টাকা পর্যন্ত ওঠানামা করছে। এক স্টপেজ দিয়ে ফ্লাই দুবাই নিয়ে যাচ্ছে ৪১ হাজার ৫৬০ টাকায়। ইতিহাদ এয়ারওয়েজের ভাড়া ৪১ হাজার থেকে ৪২ হাজার টাকা। এয়ার ইন্ডিয়া দিল্লিতে একটি স্টপেজ দিয়ে ভাড়া নিচ্ছে ৪১ হাজার ৪১৯ টাকা। গালফ এয়ার মুম্বাই এবং বাহরাইনে দুই দফা স্টপেজ দিয়ে নিচ্ছে ৪৫ হাজার ৫৮৭ টাকা। ইন্ডিগো এয়ার দিল্লিতে এক স্টপেজ দিয়ে ভাড়া নিচ্ছে ৪৮ হাজার ১৮৭ টাকা। দুবাইতে এক দফা বিরতি দিয়ে এমিরেটস কলকাতা থেকে রিয়াদের ভাড়া নিচ্ছে ৫৪ হাজার ৬৪৬ টাকা। কাতার এয়ারওয়েজ ৫৯ হাজার ১৩৮ টাকায় এবং এমিরেটস ৬০ হাজার ১০৮ টাকায় একটি বিরতি দিয়ে কলকাতা থেকে রিয়াদ নিয়ে যাচ্ছে।
এসব রুটে বিমানের উচ্চমূল্য নির্ধারণই ভাড়া বৃদ্ধির মূল কারণ বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করেন। এর সঙ্গে আছে বিদেশি এয়ারলাইনসগুলোর ফ্লাইট কমানো এবং উচ্চ দামের সুযোগ নিতে গড়ে ওঠা সিন্ডিকেটের কারসাজি এবং ২০২৩ সালে ডলারের বর্ধিত বিনিময় দর। জেট ফুয়েলের দাম বৃদ্ধিও টিকিটের দাম বৃদ্ধির কারণ।
বিমানের এমডি শফিউল আজিম বিমান ভাড়া বৃদ্ধিতে নেতৃত্ব দেওয়ার বিষয়টি না মানলেও রিক্রুটিং এজেন্ট, ট্রাভেল এজেন্ট বা হজ এজেন্সির তরফ থেকে বরাবরই এ অভিযোগ করা হচ্ছে। অ্যাসোসিয়েশন অব ট্রাভেল এজেন্টস অব বাংলাদেশ (আটাব) সাবেক মহাসচিব মাজহার ইসলাম ভূঁইয়া দেশ রূপান্তরকে বলেন, যখন বিমান ভাড়া বাড়ায় তখন অন্য এয়ারলাইনসগুলোও ভাড়া বাড়ায়। বিমান যখন বাড়ায় তখন কোনো সীমা মানে না। তারা ইচ্ছামতো ভাড়া বাড়ায়।
৩৫ বছরের পেশাজীবনের কথা উল্লেখ করে মাজহারুল ইসলাম বলেন, বিমানের ভাড়ার সঙ্গে কুলাতে পারছি না। একজনকে বাইরে পাঠানোর সব খরচ অনুমান করা যায়, বিমান ভাড়া ছাড়া। কারণ ৫ ডলারের ভিত্তিভাড়া তারা ৩০ ডলার থেকে শুরু করে। বিমান ধারাবাহিকভাবে জ্বালানি খরচ বৃদ্ধির কথা বলে। কিন্তু জ্বালানি খরচ কমছে। যখন কমে তখন বিমান ভাড়া কমায় না। বিমান যেভাবে ভাড়া বাড়ায় তাতে ব্যবহারকারীদের নাভিশ্বাস উঠেছে। এ অবস্থায় সরকারের হস্তক্ষেপ দরকার বলে তিনি মনে করেন।
বিমানের ভাড়া প্রায় মহামারীর সময়ের মতো অবস্থায় চলে গেছে বলে জানিয়েছেন বিভিন্ন ট্রাভেল এজেন্টরা । বিশেষ করে বাংলাদেশ থেকে শ্রম আমদানিকারক দেশের গন্তব্যগুলোতে ভাড়া বেড়েছে। ঢাকা-জেদ্দা রুটে টিকিট পাওয়াই সৌভাগ্য। এ মাসের শুরুতে যে ভাড়া ছিল ৫০ হাজার তা এখন ৮০ হাজারেও পাওয়া যাচ্ছে না।
বিমান ভাড়া বৃদ্ধির সবচেয়ে বেশি খেসারত দিচ্ছেন প্রবাসী শ্রমিকরা। জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি)-ওয়েবসাইট তথ্য দিচ্ছে, চলতি বছরের প্রথম দুই মাসে ২ লাখ ১৩ হাজার শ্রমিক বিদেশে গেছে। যাদের বেশিরভাগই গেছেন মালয়েশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে।
গত বছরের শেষদিকে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার খোলা হয়। বাজার নতুন করে শুরু হওয়ার পর ঢাকা-কুয়ালালামপুর রুটে টিকিটের দাম আকস্মিকভাবে বেড়েছে। ব্যাংকক, কলম্বো বা অন্যান্য শহরে ট্রানজিট ফ্লাইট দিয়েও অনেক এয়ারলাইন কুয়ালালামপুরে যাত্রী বহন করছে। এতে টিকিটের দাম কমেছে ৩০-৪০ হাজার টাকা।
এবার হজ প্যাকেজে বিমান ভাড়া বেড়েছে প্রায় ৮০ হাজার টাকা। এ টাকা বাড়িয়ে হজ প্যাকেজ ঘোষণার পর সংশ্লিষ্টরা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। হজযাত্রী এবং হাবের ধারাবাহিক বিরোধিতা উপেক্ষা করে বিমান ভাড়া বাড়িয়ে যচ্ছে। এবারও বাড়িয়েছে। গত ১৯ মার্চ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হজবিষয়ক এক সভায় হাবের সিনিয়র সহসভাপতি ইয়াকুব শরাফতি হজে বিমান ভাড়া কমানোর অনুরোধ করেন। কিন্তু সেখানে উপস্থিত বিমানের এমডি ভাড়া কমানোর সুযোগ নেই বলে জানান। বৈঠকে হজে কেন বিমান ভাড়া বাড়নো হলো তার যৌক্তিকতা জনসমক্ষে তুলে ধরার নির্দেশনা দেওয়া হয় এমডিকে।
ইয়াকুব শরাফতি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘অনেক চেষ্টা করেছি হজের বিমান ভাড়া কমানোর জন্য। বিমান কোনোভাবেই কমাতে রাজি হয়নি।’
বিমানের বর্ধিত ভাড়ার সুযোগে সৌদিয়া দেশ থেকে অতিরিক্ত টাকা নিয়ে যাচ্ছে। কারণ বিমান যে ভাড়া নির্ধারণ করে সৌদিয়াও একই ভাড়ায় হজযাত্রী বহন করে। হজের চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশি হজযাত্রীদের অর্ধেক বহন করবে সৌদি আরবের এয়ারলাইনস।
আটাবের সাবেক মহাসচিব মাজহার ইসলাম ভূঁইয়া জানান, প্রধান এয়ারলাইনসগুলোর পাশাপাশি এয়ার অ্যারাবিয়ান, ফ্লাই দুবাই, সালাম এয়ারের মতো বাজেট ক্যারিয়ার বলে পরিচিত সংস্থাগুলো তাদের প্রিমিয়াম প্রতিযোগীদের তুলনায় কম ভাড়া নেওয়ার কথা। অথচ কোনো কোনো ক্ষেত্রে তাদের চেয়ে বেশি নিচ্ছে। বাজেট ক্যারিয়ার বলে পরিচিত সংস্থাগুলোও তাদের প্রিমিয়াম প্রতিযোগীদের চেয়ে মাত্র ৫০০ বা ১০০০ টাকা কম নিচ্ছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে প্রিমিয়াম প্রতিযোগীদের চেয়ে বেশি ভাড়া নিচ্ছে। অথচ সরকারের কাছে তাদের প্রজেকশন ছিল তারা বাংলাদেশ থেকে বিভিন্ন গন্তব্যে অর্ধেক মূল্যে যাত্রী নেবে। নিয়ন্ত্রক সংস্থার মনিটরিং কম থাকায় তারা ইচ্ছেমতো ভাড়া নিচ্ছে বলে মনে করেন তিনি।
সময়ের আলোচিত চিত্রনায়িকা নুসরাত ফারিয়া। একাধারে উপস্থাপিকা, নায়িকা এবং সংগীতশিল্পীও। সিনেমার বাইরে তিনটি গান প্রকাশ পেয়েছে তার। সে ধারাবাহিকতায় এবারের ঈদে নতুন গান নিয়ে আসছেন তিনি।
গানের শিরোনাম ‘বুঝি না তো তাই’। বাঁধনের লেখা এ গানটির সংগীতায়োজন করেছেন বলিউড র্যাপার মুমজি স্ট্রেঞ্জার। গানে কণ্ঠ দিয়েছেন ফারিয়া। বাবা যাদবের কোরিওগ্রাফিতে ভিডিওতে অংশ নিয়েছেন ফারিয়া ও মুমজি। আসছে ঈদে উন্মুক্ত হবে গানটি। গানটি প্রকাশ করবে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান ভেঙ্কটেশ ফিল্মস।
সম্প্রতি প্রকাশ পেয়েছে গানটির টিজার, যা দর্শকমহলে প্রশংসা কুড়াচ্ছে। এরমধ্যে সোমবার বিকেলে নিজের ফেসবুকে গান ভিডিওর দৃশ্যের একটি ছবি পোস্ট করেন এ গায়িকা। সেখানে ক্যাপশনে লিখেন, মাই হাইট ইজ ৫' ৩'' বাট অ্যাটিচিউড ৬' ১''।
গানটি প্রসঙ্গে নুসরাত ফারিয়া জানিয়েছিলেন, ‘নতুন এ গানটি বেশ আনন্দের সঙ্গে করেছি। আমার আগের তিনটি গানের মতো এটিও বেশ মজার। আমার বিশ্বাস এটি সবার পছন্দ হবে।’
উল্লেখ্য, ২০১৮ সালে ‘পটাকা’ গানের মাধ্যমে বাণিজ্যিক ঘরানার গানে প্রথম আত্মপ্রকাশ করেন নুসরাত ফারিয়া। এরপর ২০২০ ও ২০২১ সালে প্রকাশ পায় ‘আমি চাই থাকতে’ ও ‘হাবিবি’। আসছে ঈদুল ফিতরে এ অভিনেত্রী গায়িকা হিসাবে চতুর্থবার হাজির হচ্ছেন দর্শক শ্রোতাদের সামনে।
দেশে ইতিমধ্যে কিছু এলাকায় পরীক্ষামূলকভাবে ফাইভজি ইন্টারনেট সেবা চালু করেছে রাষ্ট্রায়ত্ত মোবাইল ফোন অপারেটর টেলিটক। অন্য অপারেটর গ্রামীণফোন, রবি ও বাংলালিংক একই সেবা চালুর প্রস্তুতি নিচ্ছে। তবে সব মোবাইল অপারেটরই দেশের বেশিরভাগ স্থানে ফোরজি সেবা চালু করেছে। আর সে হিসেবেই তারা ইন্টারনেট প্যাকেজের মূল্য নির্ধারণ করেছে। কিন্তু গ্রাহকরা ফোরজি ইন্টারনেট কিনলেও দেশের অনেক এলাকায় টুজি-থ্রিজি’র সেবা পাচ্ছেন। তারা অপারেটর কোম্পানিগুলোকে এ ব্যাপারে বারবার অভিযোগ জানালেও এর সুরাহা হচ্ছে না।
জানা গেছে, রাজধানীসহ বিভাগীয় শহরগুলোতে মোটামুটিভাবে গ্রাহকরা ফোরজি সেবা পাচ্ছেন। তবে এসব এলাকায়ও অনেক সময় ফোরজি থাকে না, থ্রিজিতে নেমে আসে নেটওয়ার্ক। তবে জেলা পর্যায়ে বেশিরভাগ সময়েই থাকে থ্রিজি। আর মফস্বল ও গ্রামাঞ্চলে বেশিরভাগ সময় সেই থ্রিজিও থাকে না, তখন টুজি নেটওয়ার্কই ভরসা হয়ে দাঁড়ায়। ফলে ইন্টারনেট প্যাকেজ যথাযথভাবে থাকার পর তা কাজ করে না, বাফারিং হয়। এতে গ্রাহকরা ত্যক্তবিরক্ত হয়ে উঠছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, মোবাইল অপারেটর কোম্পানিগুলো সারা দেশের ব্যবসা একত্রে হিসাব না করে এলাকাভিত্তিক ব্যবসার হিসাব-নিকাশ করার কারণেই এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। তারা দেখেন, কোন এলাকায় তাদের গ্রাহক সংখ্যা কত, সেখানে কত সিমে ইন্টারনেট চালু আছে। যদি দেখা যায়, তাদের হিসাব মতে তা সন্তোষজনক আছে তাহলে সেখানে ফোরজি সেবা চালুর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা বহাল রাখে। প্রয়োজনীয় সংখ্যক টাওয়ার নির্মাণ করে। কিন্তু যদি দেখে সন্তোষজনক গ্রাহক নেই তাহলে সেখানে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয় না, এতে সেই এলাকায় ফোরজি পাওয়া যায় না। অথচ শহর এলাকাগুলোতে তারা বেশি ব্যবসা করলেও সেটাকে হিসাবে ধরে না। কিন্তু মফস্বল এলাকা থেকে কল বাবদ প্রয়োজনের বেশি ব্যবসা হলেও তা ইন্টারনেটের সঙ্গে সমন্বয় করে না।
মোবাইল ফোন অপারেটর কোম্পানিগুলোর ফেসবুক পেইজে প্রতিনিয়ত অসংখ্য অভিযোগ জানান গ্রাহকরা। অভিযোগ অনুযায়ী, অপারেটরদের মধ্যে টেলিটকের নেটওয়ার্কই বেশি দুর্বল। টেলিটকের ফেসবুক পেজের এক পোস্টে মো. ফয়জুল ইসলাম লেখেন, ‘ভাই, নেটওয়ার্ক পাই না সকাল থেকে। মিরপুর-২ নম্বরে বাসা স্টেডিয়ামের পশ্চিম পাশে। আর আমার গ্রামের কথা না হয় বাদ দিলাম।’ আরাফাত আলী লেখেন, ‘২জিবি নেট কিনলে দেড় জিবি নষ্ট হয়। মেয়াদ ১৫ দিন তাও ফুরাতে পারি না। তাহলে বুঝেন নেটওয়ার্ক কত ভালো।’ কার্জন চাকমা লেখেন, ‘পাহাড়ি এলাকায় ফোরজি নিশ্চিত করুন। আমাদের পার্বত্য এলাকাগুলোতে টেলিটকের গ্রাহক সবচেয়ে বেশি, কিন্তু শুধু থ্রিজি-টুজিতে সীমাবদ্ধ।’ রাসেল আহমেদ লেখেন, ‘গাইবান্ধার সাদুল্লাপুর উপজেলার নলডাংগা গ্রামে থ্রিজি নেটওয়ার্ক তো নেই-ই। মাঝেমধ্যে টুজি’ও নেই। বুঝুন অবস্থাটা। আমাদের থ্রিজি সেবা দেওয়ার চেষ্টা করুন।’
টেলিটকের মহাব্যবস্থাপক (সিস্টেম অপারেশন) নুরুল মাবুদ চৌধুরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমরা ইতিমধ্যে ফাইভজি রেডিনেস প্রজেক্ট শুরু করেছি। যা শেষ হতে এক বছর বা তার কিছু বেশি সময় লাগতে পারে। এর ফলে আমাদের কাভারেজ এলাকাগুলোতে ফোরজি সেবা নিশ্চিত হবে। এছাড়া আমাদের কাভারেজ বাড়ানোরও বড় পরিকল্পনা রয়েছে।’
বাংলালিংকের পেজের একটি পোস্টে মাহাদী হাসান তালহা লেখেন, ‘আমার এলাকায় আপনাদের সিম ব্যবহার করতে হলে ফোন গাছের ডালে বেঁধে লাউডস্পিকার দিয়ে কথা বলা লাগে। এত্তো ফাস্ট কেন আপনাদের নেটওয়ার্ক।’ আকরাম হোসাইন লেখেন, ‘ভাই আপনাদের সবই ঠিক, তবে নেটওয়ার্ক সেøা।’
বাংলালিংকের চিফ করপোরেট অফিসার তৈমুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ফোরজি সেবার জন্য ২৩০০ মেগাহার্জের স্পেকটার্ম প্রয়োজন হয়। কিন্তু টুজিতে তা লাগে মাত্র ৯০০ মেগাহার্জ। আমরা ইতিমধ্যে ৯৫ শতাংশ কাভারেজ এলাকায় ফোরজি সেবা নিশ্চিত করেছি। তবে আমাদের আরও বেশি সাইট লাগবে। যদি সব অপারেটর মিলে আমরা টাওয়ার শেয়ার করতে পারি, তাহলে সব গ্রাহকের কাছে ভালো সেবা পৌঁছে দেওয়া সহজ হবে।’
রবির পেজে এক পোস্টে তানভীর আহমেদ লেখেন, ‘কলাপাড়া থানা শহরে যদি থ্রিজি নেটওয়ার্ক না পাওয়া যায়, এরচেয়ে দুঃখজনক কিছুই হতে পারে না।’ এইচএমএম ইসমাঈল লেখেন, ‘ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর থানার চম্পকনগর ইউনিয়নে রবি সিমের থ্রিজি নেই। অথচ অনেক বছর আগে রবি টাওয়ার বসানো হয়েছে। আমরা রবি সিম দিয়ে ইন্টারনেট চালাতে অক্ষম।’
রবির চিফ করপোরেট অ্যান্ড রেগুলটরি অফিসার শাহেদ আলম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমাদের কাভারেজ এলাকায় ফোরজি সেবা রয়েছে। তবে দেখা যায়, অনেক ফোন ফোরজি সাপোর্ট করে না। আর কাভারেজ এলাকা থেকে যতদূরে যাওয়া যাবে, নেটওয়ার্ক তত কমতে থাকবে। এছাড়া আমাদের কিছু জায়গায় নেটওয়ার্কের কাজ চলছে। পাশাপাশি নতুন কিছু টাওয়ার তৈরির কাজও আমাদের চলছে।’
গ্রামীণের পেইজে একটি পোস্টে রহিদুল ইসলাম লেখেন, ‘ভাই আমি যখন গ্রামে যাই তখন নেটওয়ার্কের ঝামেলা হয়।’ সাইদুর রহমান লেখেন, ‘এমন সার্ভিস হলে চলবে? কলরেট, ইন্টারনেটের দাম তো ঠিকই বেশি আপনাদের, বাকি সব অপারেটরদের থেকে।’
গত বছরের ২৮ এপ্রিল টেলিকম অপারেটররা বহুল প্রতীক্ষিত ‘আনলিমিটেড’ ও ‘মেয়াদবিহীন’ ইন্টারনেট ডাটা প্যাক চালু করেছে। তবে এতে গ্রাহকদের খুব বেশি সুবিধা হচ্ছে না। কারণ এজন্য প্যাকেজের দাম বাড়িয়েছে অপারেটররা। আর মেয়াদহীন ইন্টারনেট পেতে প্যাকেজের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে একই প্যাকেজ চালু করতে হবে। কিন্তু গ্রাহকের সব সময় একই ধরনের ইন্টারনেট প্যাকেজ নেওয়ার প্রয়োজন পড়ে না। ফলে অব্যবহৃতই থেকে যাচ্ছে গ্রাহকের কেনা ইন্টারনেট। এছাড়া মেয়াদবিহীন হিসেবে মোবাইল অপারেটররা যে প্যাকেজ ঘোষণা করেছে তার যৌক্তিকতা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে গ্রাহকদের।
বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) সূত্র জানায়, গত ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দেশে সচল সিমের সংখ্যা ১৮ কোটি ২০ লাখ ৬১ হাজার। এরমধ্যে গ্রামীণফোনের গ্রাহক সংখ্যা ৭ কোটি ৯০ লাখ ৯৫ হাজার, রবির ৫ কোটি ৫০ লাখ ১৪ হাজার, বাংলালিংকের ৪ কোটি ৮৫ হাজার এবং টেলিটকের ৬০ লাখ ৬৭ হাজার। আর গত ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দেশে মোট ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১২ কোটি ৫০ লাখ। এরমধ্যে মোবাইলে ইন্টারনেট ব্যবহার করেন ১১ কোটি ৩০ লাখ ১৩ হাজার এবং ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার (আইএসপি ও পিএসটিএন)-এর মাধ্যমে ইন্টারনেট ব্যবহার করেন ১১ লাখ ৮৭ হাজার গ্রাহক।